HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

স্ত্রী নির্বাচন

লেখকঃ মফিজুল ইসলাম

যেসকল নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা আবশ্যক
যেসকল নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা আবশ্যক তাদের বৈশিষ্ট্য হলো-

১. পুণ্যবতী ও দ্বীনদার হওয়া :

স্মরণ রেখ হে যুবক! স্ত্রী তোমার সহধর্মিণী, অর্ধাঙ্গিনী, জীবন সঙ্গিনী, ঘরের রাণী, হৃদয়ের প্রশামিত্মদায়িনী, সমত্মানের জননী ও পরকালের কাজে সহায়তা-উৎসাহ দানকারিণী। কাজেই তাকে হতে হবে দ্বীনদার-পরহেজগার। অধিকাংশক্ষেত্রে সুন্দরী নারী, উচ্চতর ডিগ্রী ধারিণী, উচ্চ বংশীয় মর্যাদার অধিকারিণী, অর্থশীল কোন নারী আদৌ কোন মুত্তাকী ব্যক্তির স্ত্রী হতে পারে না। মহান আলস্নাহ বলেন,

﴿اَلزَّانِيْ لَا يَنْكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَّالزَّانِيَةُ لَا يَنْكِحُهَاۤ إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَّحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ﴾

‘‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা শিরককারিণী এবং ব্যভিচারিণী কেবল ব্যভিচারী অথবা শিরককারী পুরুষকে বিবাহ করে থাকে। কিন্তু মুমিন পুরুষদের জন্য তা হারাম’’ (সূরা নূর ২৪ঃ ৩)।

রাসূল ﷺ বলেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ

‘‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ আছে সে যেন বিবাহ করে’’। [বুখারী তা. পা. হা. একা. ১৬/১, হা :১৪০০]

কোন্ বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে সে ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেন,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَحَسَبِهَا وَدِيْنِهَا وَجَمَالِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিবাহ করা হয়। সেগুলো হলো: তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারীতা। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীতাকেই প্রাধান্য দেবে; নতুবা ক্ষতিগ্রসত্ম হবে। [বুখারী, কিতাবু নিকাহ অধ্যায় ৬৭/১৬; হা ৫০৯০, মুসলিম ১৭/১৫ হা : ১৪৬৬ আহম্মদহ হা; ৯৫২৬; ই ফা ৪৭১৯]

উক্ত চারটি গুণের মধ্যে সর্বশেষ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রে গণ্য ও সর্বাধিক গুরম্নত্বপূর্ণ। নবী ﷺ এর আলোচ্য নির্দেশের সারকথা হলো, দ্বীনদারী গুণসম্পন্ন কনে পাওয়া গেলে সর্বাগ্রে তাকেই স্ত্রীরূপে নির্বাচন করতে হবে। তাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন গুণসম্পন্ন নারীকে বিবাহ করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয়। [সুবুলুস সালাম ৪র্থ খন্ড, পৃ:৪৩০]

দ্বীনদারীসহ বাকি তিনটি গুণ কারো স্ত্রীর মধ্যে পাওয়া গেলে তার জন্য তো সোনায় সোহাগা।

সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) কতৃক বর্ণিত। আলস্নাহর রাসূল ﷺ বলেন, পুরুষের জন্য সুখ ও সৌভাগ্যের বিষয় হলো চারটি; সতীসাধ্বী নারী, প্রশসত্ম বাড়ি, সৎ প্রতিবেশী এবং সচল সওয়ারী (গাড়ি)। আর দুঃখ ও দুর্ভাগ্যের বিষয়ও চারটি; অসৎ প্রতিবেশী, অসতী নারী, অচল সওয়ারী ও সংকীর্ণ বাড়ি। [সিলসিলা সহীহা ১ম খন্ড, পৃ: ২২]

নবী ﷺ আরো বলেন,

اَلدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ

‘‘গোটা দুনিয়াটাই হচ্ছে উপভোগের সামগ্রী। আর দুনিয়ার উপভোগের সামগ্রীর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে পুণ্যবতী স্ত্রী’’। [সহীহ মুসলিম হাঃ ১৪৬৭]

নবী ﷺ বলেন,

أَفْضَلُهٗ لِسانٌ ذَاكرٌ وَقَلْبٌ شَاكِرٌ وَزَوْجَةٌ مُؤْمِنَةٌ تُعِيْنُهٗ عَلٰى إِيْمَانِهٖ

‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো যিকরকারী জিহবা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হৃদয় এবং তার ঈমানের কাজে সহায়িকা স্ত্রী’’। [তিরমিযী হাঃ ৩০৯৪, মেশকাত হাঃ ২২৭৭]

পুণ্যবতী দ্বীনদার স্ত্রী যদি আপনি নির্বাচন করতে ভুল করেন, তাহলে আপনি পারিবারিক জীবনে দুঃখ ও হতাশার সাগরে ভেলার মতো ভেসে বেড়াবেন; যা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যাবে।

২. আকীদা বিশুদ্ধ ও কুসংস্কারমুক্ত হওয়া :

এদেশের মাটিতে এমন অনেক নারী-পুরুষ রয়েছে যাদের আকীদা বিশুদ্ধ নয়। যেমন তাদের ভ্রামত্ম আকীদা হলো- আলস্নাহ নিরাকার, আলস্নাহ সর্বত্র বিরাজমান, মানুষের কলবে আলস্নাহ আছেন, নবী ﷺ নূরের তৈরি, তিনি এখনও কবরে জীবিত এবং তারা ভন্ডপীরের কারামতিতে, খানকা, মাযার বা কবর থেকে ফায়দা লাভে বিশ্বাসী। অনেকে আবার শিরক ও নানা কুসংস্কারে বিশ্বাসী। যেমন- বাইরে বের হওয়ার সময় শিশুর কপালের এক পাশে কালো ফোঁটা দিলে শিশু বদনযর লাগা থেকে রক্ষা পায়, গলায় তাবিজ ঝুলালে বিপদাপদ থেকে মুক্তি পায়, নাপাক অবস্থায় কোন কাজই করা যায় না, ভাঙ্গা আয়না দেখলে আয়ু কমে যায়, রাতে অপরকে টাকা দিতে নেই, নখ কাটতে নেই ইত্যাদি।

বিশুদ্ধ আকীদার গুরুত্ব পেশ করে শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুলস্নাহ বিন বায (রহ.) বলেন, কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, যার আকীদা বিশুদ্ধ হবে না তার সকল আমল বাতিল বলে গণ্য হবে।

তিনি আরো বলেন,

اَلْعَقِيْدَةُ الصَّحِيْحَةُ هِيَ اَصْلُ الدِّيْنِ الْاِسْلَامِ

‘বিশুদ্ধ আকীদা হলো দ্বীন ইসলামের ভিত্তি’। [শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুলস্নাহ বিন বায (রহ.) আল-আকীদাতুছ সহীহা ওয়ামা ইউযাদ্দুহা (রিয়াদ:দারম্নল ক্বাসেম ১৪১৫হি.),পৃ.৩ ভূমিকা দ্রঃ।]

কাজেই যে নারীর সঠিক দ্বীন নেই সে কীভাবে আলস্নাহভীরম্ন মানুষের জীবন সঙ্গিনী হতে পারে?

৩. শিরকী আকীদামুক্ত হওয়া :

সারা দেশে আজ ব্যাপক হারে শিরকের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। কবরপূজা, মূর্তিপূজা, মূর্তির প্রতিকৃতির পূজা, খানকাপূজা, সেখানে গিয়ে তাদের নামে মানত করা, সমত্মান চাওয়া, বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করা, পীর/গুরম্নর পায়ে সিজদা করা- এ সকল জঘন্য শিরকের কাজে নারী-পুরম্নষ ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এ সকল শিরকী কর্ম হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাপ।

আবু বকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবীগণ বলেন,

يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الْكَبَائِرُ؟ قَالَ : الْإِشْرَاكُ بِاللهِ

হে আলস্নাহর রাসূল! বড় (পাপ) কী? তিনি বললেন, ‘‘আলস্নাহর সাথে (কাউকে) শরীক (অংশীদার স্থাপন) করা’’। [বুখারী হা:৫৯৭৬; মুসলিম হা:৮৭]

মহান আলস্নাহ বলেন,

﴿إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ﴾

‘‘নিশ্চয় শিরক হলো সবচেয়ে বড় যুলুম’’ (সূরা লুকমান ৩১ঃ ১৩)।

﴿إِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ﴾

নিশ্চয় যে ব্যক্তি আলস্নাহর সাথে শরীক (অংশীদার) স্থাপন করবে, আলস্নাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার স্থান হবে জাহানণাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবে না’’ (সূরা মায়েদা ৫ঃ ৭২)।

রাসূল ﷺ বলেন,

مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক (অংশীদার স্থাপন) করে মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। [মুসলিম হা:২৭৯, ঈমান অধ্যায়; অনুচ্ছেদ-৪২]

পৃথিবীর অসংখ্য নারী আজ শিরকের বেড়াজালে আবদ্ধ। আর শিরককারীই হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। [বুখারী হা: ৪২৭; মুসলিম হা:১২০৯]

শিরকী গুনাহে লিপ্ত এমন একজন নিকৃষ্ট নারী কীভাবে আপনার স্ত্রী হতে পারে?

তাই স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিরকমুক্ত ও তাওহীদপন্থী রমণীকে প্রাধান্য দেয়া জরম্নরি।

৪. বিদআতমুক্ত হওয়া :

দ্বীনের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো বিদআত। বিদআতকারী ও বিদআতকারিণীর উপর এবং তাদেরকে আশ্রয় দানকারীর উপর সকলের পক্ষ থেকে লানত। যেমন হাদীসে এসেছে, রাসূল ﷺ বলেন,

مَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا قَالَ اِبْنُ أَنَسٍ : أَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا

‘যে ব্যক্তি এ দ্বীনে কোন বিদআত করবে কিংবা কোন বিদআতিকে আশ্রয় দেবে, তার উপর আলস্নাহর অভিশাপ ও ফেরেশতা এবং সকল মানুষের (অভিশাপ)। কিয়ামতের দিন আলস্নাহ তা‘আলা তার ফরয অথবা নফল কোন ইবাদাত কবুল করবেন না’। [বুখারী, কুরআন ও সুন্নাহ শক্তভাবে ধরে থাকা অধ্যায় ৯৬/৬, হা:৭৩০৬, ১৮৬৭; মুসলিম ৮৫ অধ্যায় হা.একা.হা:৩২১৪-৪৬৩/১৩৬৬]

প্রিয় পাঠক! আপনি গভীরভাবে লক্ষ করম্নন বিদআতকারী বা কারিণীর উপর রয়েছে মহান আলস্নাহর, ফেরেশতাদের এবং সকল মানুষের অভিশাপ। তাই বিদআতকারিণী অভিশপ্ত নারী কি আপনার স্ত্রী হতে পারে?

উলেস্নখ্য যে, বিদআতকারিণীকে বিবাহ করা যাবে না একথা বলছি না। তবে একথা বলছি যে, সে হলো অভিশপ্ত। যার উপর আলস্নাহর অভিশাপ তার কাছ থেকে কীভাবে কল্যাণ পাওয়া যেতে পারে?

নবী ﷺ বলেন, ‘তোমাদেরকে দুর্বলদের কারণেই সাহায্য করা হয় এবং রম্নযী (খাদ্য) দেয়া হয়’। [নাসাঈ, হা/৩১৭৮, আহমাদ হা: ১৪৯৬]

দুই শ্রেণির দুর্বলদের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ‘তারা হলো ইয়াতিম ও নারী’। [ইবনে মাজাহ্ হা:৩৬৭৮; আহমাদ হা:৯৩৭৪]

অত্র হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, (স্ত্রী) নারীদের কারণে আলস্নাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও রম্নযী পাওয়া যায়। কিন্তু যে নারীর উপর আলস্নাহর অভিশাপ তার মাধ্যমে কীভাবে রম্নযী ও সাহায্য আসতে পারে?

৫. সালাত ও সিয়াম পালনকারিণী হওয়া :

আলস্নাহ তা‘আলা সকল নর-নারীকে সালাত ও সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন সূরা বাকারার আয়াত নং ৪৩, ৮৩, ১১০, ১১৭, ১৮৩, ২৭৭।

অত্র সূরা ও আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা সালাত ও সিয়াম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। যে নারী আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনে সচেষ্ট, আশা করা যায় সে আপনার নির্দেশ পালন করবে। আলস্নাহর এ নির্দেশ পালনে নারীদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। যেমন রাসূল ﷺ বলেন,

اَلْمَرْءَةُ إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا : ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ

‘যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, রমাযান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার লজ্জাস্থান (ব্যভিচার থেকে) হেফাযত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তাকে বলা হবে- তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা’। [আহমাদ হা:১৬৬১; সহীহুল জামে হা:৬৬০৩; সহীহ তারগীব হা:১৯৩২]

জান্নাতি নারীর বৈশিষ্ট্য হলো- সালাত আদায় করা, সিয়াম পালন করা, লজ্জাস্থানের হেফাযত করা ও স্বামীর আনুগত্যশীল হওয়া। এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নারীকে আনন্দ ও প্রাচুর্যময় জীবনের জন্য স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা অতীব গুরম্নত্বপূর্ণ।

৬. পরহেযগার-মুত্তাকী হওয়া :

শস্য-শ্যামল সুন্দর-রঙ্গময় এই পৃথিবীতে শিক্ষিতা, সম্পদশালিনী ও সুন্দরী নারীর অভাব নেই। কিন্তু পরহেযগার-মুত্তাকী নারীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আজ যুবকদের বিবাহের জন্য পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন নারী খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন নারী-পুরম্নষ আলস্নাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর আনুগত্যশীল হয়। ফলে তারা আলস্নাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। আলস্নাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ﴾

‘‘তোমাদের মধ্যে আলস্নাহর নিকট সেই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে ব্যক্তি অধিক আলস্নাহভীরম্ন’’ (সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩)।

নারীদের মধ্যে যারা পরহেযগার-আলস্নাহভীরম্ন তাদেরকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত; চাই সে সুন্দরী, অসুন্দরী বা গরীব হোক। আলস্নাহভীরু নারী আপনার সম্মান, ইজ্জত ও সম্পদের কোন ক্ষতি করবে না; কারণ সে প্রত্যেকটি কাজেই আলস্নাহকে ভয় করে। জেনে রাখা ভালো যে, মুত্তাকী ব্যক্তিদের জন্যই আলস্নাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে কল্যাণ নেমে আসে। আলস্নাহ বলেন,

﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرٰۤى اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ﴾

‘‘গ্রামবাসী যদি ঈমান আনত এবং মুত্তাকী হত, তাহলে তাদের উপর আমি আকাশ ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতাম’’ (সূরা আ‘রাফ ৭ঃ ৯৬)।

৭. ধৈর্যশীলা হওয়া :

দাম্পত্য জীবনে সুখের মাধ্যম হলো একজন ধৈর্যশীল স্ত্রী। দাম্পত্য জীবন বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। এতে রয়েছে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, বিপদাপদ, রাগ, সহনশীলতা ইত্যাদি। স্বামীর সংসারের সকল দুঃখ-কষ্ট, বেদনাদায়ক কথা-বার্তা, বিপদাপদ যে নারী ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারে, আর বলে-

﴿إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ﴾

‘‘নিশ্চয় আলস্নাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’’ (সূরা বাকারা ২ঃ ১৫৩)।

ফলে দুঃখ পেলে ধৈর্য ধরব, সুখ পেলে সবার মাঝে বিলিয়ে দেব। ধৈর্যশীল নারীই পারেন একটি পরিবারকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই ধৈর্যশীল হলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অনাবিল শামিত্ম এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে ধৈর্যশীলতার বিনিময়ে জান্নাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَجَزَاهُمْ بِمَا صَبَرُوْا جَنَّةً وَّحَرِيْرًا﴾

‘‘আলস্নাহ তাদের ধৈর্যের বিনিময়ে দেবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক’’

(সূরা দাহর ৭৬ঃ ১২)।

৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর প্রতি আনুগত্যশীলা হওয়া :

আলস্নাহ বলেন,

﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ﴾

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহর আনুগত্য করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৫৯)।

যে নারী আলস্নাহর নির্দেশানুযায়ী সকল ক্ষেত্রে আলস্নাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে; তাকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা চিরকল্যাণকর। কেননা আলস্নাহ তাদের সৎকর্মের বিনিময়ে তাদেরকে পবিত্র জীবন দান করবেন। আলস্নাহ বলেন,

﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثٰى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهٗ حَيَاةً طَيِّبَةً وَّلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾

‘‘মুমিন পুরম্নষ অথবা নারীর মধ্যে যে সৎকাজ করবে অবশ্যই আমি তাকে আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কাজের বিনিময়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব’’ (সূরা নাহল ১৬ঃ ৯৭)।

৯. লজ্জাশীলা হওয়া :

প্রিয় পাঠক! স্মরণ রাখবেন- সংসার জীবনে সুখী হওয়ার জন্য প্রয়োজন লজ্জাশীল স্ত্রীর। কারণ লজ্জাশীল স্ত্রীর মধ্যে রয়েছে ঈমান। অবশ্যই লজ্জাশীলতা ও ঈমান একই সূত্রে গাঁথা। একটি চলে গেলে অপরটি চলে যায়। মহানবী ﷺ বলেন, اَلْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِّنَ الْإِيْمَانِ ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ’। [বুখারী হা: ২৪,৬১১৮, মুসলিম হা:৩৬]

তিনি আরো বলেন, লজ্জাশীলতা ঈমানের অমত্মর্ভুক্ত এবং ঈমান হবে জান্নাত। [আহমাদ হা:১০৫১৯; তিরমিযী হা:২০০৯]

ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, اَلْحَيَاءُ لَايَاْ تِيْ اِلَّا بِخَيْرٍ ‘লজ্জা মঙ্গলই বয়ে আনে’। [বুখারী হা: ৬১১৭, মুসলিম হা: ৩৭]

লজ্জাশীলতা হলো নারীর ভূষণ। লজ্জা থাকলে নারী উলঙ্গ হয় না।

আরবি কবি বলেন, ‘‘লজ্জা থাকলে নারী উলঙ্গ হয় না।’’ আরবি কবি আরো বলেন, ‘‘লজ্জাশীল মানুষ অপরকে শ্রদ্ধা করে।’’

আপনার নির্বাচিত স্ত্রীর মধ্যে যদি লজ্জা থাকে তাহলে সে আপনাকে মান্য করবে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে। আর নির্লজ্জ নারীরাই হয় অশস্নীলভাষী, প্রকাশ্যে পাপাচারিণী, নোংরা ফিল্ম দেখতে অভ্যস্ত, পাতলা বা টাইট-ফিট খোলামেলা পোশাক পরিহিতা, স্বামীর সাথে জোর গলায় বাক-বিতন্ডাকারিণী, স্বামীর আদেশ অমান্যকারিণী, সমাজে অশামিত্ম সৃষ্টিকারিণী ইত্যাদি। এমন নির্লজ্জ মহিলাকে কি আদৌ স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক?

১০. দ্বীনের কাজে সাহায্যকারিণী :

মহানবী ﷺ বলেন,

مَنْ رَزَقَهُ اللهُ امْرَأَةً صَالِحَةً فَقَدْ أَعَانَهٗ عَلٰى شَطْرِ دِيْنِهٖ فَلْيَتَّقِ اللهَ فِي الشَّطْرِ الْبَاقِيْ

‘আলস্নাহ যাকে পুণ্যবতী স্ত্রী দান করেছেন, তিনি তার অর্ধেক দ্বীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে তার আলস্নাহকে ভয় করা উচিত। [বায়হাকী, সহীহ তারগীর ১৯১৬]

দ্বীনের কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজন একজন পুণ্যবতী আদর্শ নারী। যে তার স্বামীকে আখিরাতের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। স্ত্রী হলো স্বামীর জীবনসঙ্গী। আর সঙ্গী যদি হয় ফরয, সুন্নাত, নফল ও শরীয়তের যাবতীয় বিধান পালনকারিণী তাহলে এর একটি প্রভাব স্বামীর উপর পড়াই স্বাভাবিক। যেমন একজন বেনামাযী ব্যক্তি তার স্ত্রীর তাহাজ্জুদের সালাত ও দু’আর প্রভাবে অনুরূপ সালাত আদায়কারী হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,

رَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَإِنْ أَبٰى نَضَحَتْ فِيْ وَجْهِهِ الْمَاءَ

‘নবী ﷺ বলেন, আলস্নাহ সেই মহিলাকে রহম করম্নন, যে রাতে উঠে সালাত পড়ে ও তার স্বামীকে জাগায়। সে জাগতে অস্বীকার করলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। [আবু দাউদ হা:১৩০৮,১৪৫০]

এমন বৈশিষ্ট্যের স্ত্রী কতইনা হিতাকাঙ্ক্ষী, ঐ স্ত্রীর চেয়ে- যে বেলা উঠার ২-৪ ঘণ্টা পর শয়তানের প্রস্রাব কানে নিয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়! আখিরাতের কাজে সহযোগী নারীই পারে আপনার পরিবারকে জান্নাতী পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে। তাই স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী স্ত্রীকেই প্রাধান্য দিন।

দ্বীনদার এবং আখিরাতপ্রিয় স্ত্রীর কাছ থেকে সুন্দর বাণী শোনা যায়। যেমন-

আবু দারদা (রাঃ) তার বিশাল খেজুরের বাগান জান্নাতের একটি খেজুর গাছের বিনময়ে বিক্রি করার কথা শুনে তার স্ত্রী বলেছিল, ‘‘আপনি বড় লাভজনক ব্যবসা করেছেন।’’ [হাকেম হাঃ২১৯৪]

আলস্নাহ বলেন,

﴿وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى وَلَا تَعَاوَنُوْا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ﴾

‘‘সৎকাজ ও তাকওয়ার (আল্লাহভীরুতার) ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে সহযোগীতা করো, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে কাউকে সাহায্য করো না’’

(সূরা মায়িদাহ ৫ঃ ২)।

﴿وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ يَّأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾

‘‘মুমিন পুরম্নষ ও মুমিন নারী পরস্পরের হিতাকাঙ্ক্ষী। তারা পরস্পরকে কল্যাণ কাজের নির্দেশ করে এবং অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে’’ (সূরা তাওবা ৯ঃ ৭১)।

১১. বিপদাপদে সান্ত্বনাদানকারিণী :

মানুষের জীবন দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা, বিপদাপদ ইত্যাদিতে ভরপুর। বিপদের সময় যদি সান্ত্বনা পাওয়া যায় তাহলে বিপদ অনেকটা হালকা হয়ে যায়। তাই এমন স্ত্রী গ্রহণ করা আবশ্যক, যে বিপদাপদে হবে সান্ত্বনাদানকারিণী।

রাসূল ﷺ যখন হেরা গুহা থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ফিরে আসেন, তখন স্ত্রী খাদীজা তাঁকে সান্ত্বনা ও সাহস দিয়ে বলেন, আলস্নাহর কসম! তিনি আপনাকে কিছুতেই লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা আপনি তো আত্মীয়তার সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন, সত্য কথা বলেন, অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচন করেন এবং বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করেন। [বুখারী হা:৩,৩৩৯২,৪৯৫৩,৪৯৫৫,৪৯৫৬,৪৯৫৭,৬৯৮২; মুসলিম হা:১/৭৩ হা:১৬০২৫; আহমাদ হা:২৬০১৮]

সুতরাং ঐ ব্যক্তি হবে সৌভাগ্যবান, যে নির্বাচন করতে পারবে এমন গুণবতী স্ত্রী। জগতে এমন অনেক স্ত্রী রয়েছে যারা বিপদে সান্ত্বনার বাণী শোনানো তো দূরের কথা বরং তারা (স্ত্রীরা) বিপদে আরো বেশি আতঙ্ক-ত্রাশ সৃষ্টি করে। এমন স্ত্রী গ্রহণ করা থেকে সতর্ক থাকা জরম্নরি।

১২. সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর নাম স্মরণকারিণী :

মহান আলস্নাহ বলেন,

﴿يَاۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا وَّسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَّأَصِيْلًا﴾

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আলস্নাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো’’ (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৪১,৪২)।

যে মুমিন নর-নারী অধিক হারে আলস্নাহকে স্মরণ করতে পারে ও তাঁর ইবাদাত করতে পারে তারাই সফলকাম। মহান আলস্নাহ বলেন,

﴿وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيْرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ﴾

‘‘তোমরা অধিক হারে আলস্নাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’’ (সূরা জুমু‘আ ৬২ঃ ১০)।

সফলকাম মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো, আলস্নাহকে অধিক হারে স্মরণ করা এবং তাঁর হুকুম-আহকাম মান্য করা। তাই আলস্নাহ বলেন,

﴿ وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَهٗ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ﴾

‘‘তুমি নিজেকে তাদের সংস্পর্শে আবদ্ধ রাখো, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সমুত্মষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে থাকে এবং তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না’’ (সূরা কাহফ ১৮ঃ ২৮)

যে নারী সর্বদা আলস্নাহকে স্মরণকারী; তাকে যদি আপনি জীবন সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন, তাহলে আপনি ইহকালে ও পরকালে লাভবান হতে পারবেন। আলস্নাহ বলেন,

﴿وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَّالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّأَجْرًا عَظِيْمًا﴾

‘‘আলস্নাহকে অধিক স্মরণকারী পুরম্নষ ও নারী; এদের জন্য আলস্নাহ ক্ষামা ও মহাপ্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন’’ (সূরা আহযাব ৩৩ঃ ৩৫)।

১৩. স্বামী ও তার ছেলে-মেয়ের জন্য দু‘আকারিণী :

স্ত্রী হিসেবে এমন নারীকে প্রাধান্য দিন, যে আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার জন্য ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন চির সুখের স্থান জান্নাত লাভের প্রার্থনা করতে পারে।

আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলতেন,

دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيْهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ عِنْدَ رَأْسِهٖ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لِأَخِيْهِ بِخَيْرٍ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهٖ : اٰمِيْنَ وَلَكَ بِمِثْلٍ

‘‘কোন মুসলিম তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য নেক দু‘আ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দু‘আ করে তখনই তার সাথে নিয়োজিত ফেরেশতা বলে, আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ’’। [মুসলিম হা:২৭৩২, ২৭৩৩; আবু দাউদ হা:১৫৩৪; ইবনু মাজাহ হা:২৮৯৫; আহমাদ হা:২১২০০]

অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, স্ত্রী/স্বামী যদি স্বামীর/স্ত্রীর জন্য অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণের জন্য দু‘আ করে, তাহলে আলস্নাহ তা কবুল করবেন এবং স্ত্রীর/স্বামীর জন্য অনুরূপ কল্যাণ রয়েছে যে কল্যাণের সে দু‘আ করবে।

রাসূল ﷺ বলেন,

ثَلاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لَا شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلٰى وَلَدِه

‘তিনটি দু‘আ এমন আছে যা কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই ১.মাযলুমের দু‘আ, ২.মুসাফিরের দু‘আ ও ৩. সমত্মানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ।’ [’তিরমিযি হা:৩৪৪৮;ইবনু মাজাহ হা:৩৮৬২; সিলসিলাহ ছহীহাহ ৫৯৬]

অতএব এমন স্ত্রী গ্রহণ করা কতই না উত্তম! যে তার স্বামী ও ছেলে-মেয়ের জন্য কল্যাণের দু‘আ করতে পারে।

১৪. গৃহকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তকারিণী :

আদর্শ গৃহ গড়ার প্রথম সোপান হলো- গৃহে একজন আর্দশবান সতীসাধ্বী স্ত্রী নির্বাচন করা, যে গৃহকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন বিভিন্ন আমল করার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালাবে; যেন পরিবারটি একটি শামিত্মপূর্ণ পরিবারে পরিণত হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘শয়তান হলো মানুষের প্রকাশ্য শত্রম্ন’’। [সূরা আ‘রাফ ৭:২২; ২:১৬৮,২০৮; ৬:১৪২; ৩৫:৬; ১৭:৫৩]

‘‘সে ডান দিক দিয়ে, বাম দিক দিয়ে, সামনে দিয়ে, পেছন দিয়ে (মানুষকে প্ররোচিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে)’’। [সূরা আ‘রাফ ৭:১৭]

এই শয়তান একটি পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা চালায়। যেমন রাসূল ﷺ বলেন, ‘শয়তান পনির উপর সিংহাসন স্থাপন করে তার চেলা-পেলাকে সমাজে পাঠিয়ে দেয় ... তাদের মধ্যে তার কাছে সর্বোত্তম সে, যে একটি পরিবার ভেঙ্গে দিতে সক্ষম’। [মুসলিম হা:২৮১৩; সিলসিলাহ সহীহাহ হা:৩২৬১]

তাই একটি পরিবারকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা জরুরি।

কীভাবে একটি গৃহ শয়তানের প্রভাব হতে মুক্ত থাকবে সে ব্যাপারে রাসূল ﷺ বলেন,

لَا تَجْعَلُوْا بُيُوْتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِيْ تُقْرَأُ فِيْهِ سُوْرَةُ الْبَقَرَةِ

তোমাদের ঘরসমূহকে কবর বানিও না। অবশ্যই শয়তান সেই গৃহ হতে পলায়ন করে, যে গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়’। [মুসলিম হা. এ. হা:১৭০৯-(২১২/৭৮০; ই,ফা. হা:১৬৯৪]

তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করো। কারণ যে গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেই গৃহে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না’। [সহীহুল জামে হা: ১১৭০]

নবী ﷺ বলেন, ‘‘ঘুমানোর সময় যে ‘আয়তুল কুরসী’ পড়ে ঘুমাবে সে সারা রাত শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে’’।

তাই গৃহকে শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে এমন স্ত্রী নির্বাচন করা আবশ্যক, যে আপনার গৃহে সালাত আদায়, কুরআন তেলাওয়াত; বিশেষ করে সূরা বাকারা তেলাওয়াতের মাধ্যমে শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে প্রচেষ্টা করবে।

লক্ষ্য করুন! আপনি যদি কুরআনের শিক্ষাবর্জিত একজন পার্থিব শিক্ষিতা নারীকে স্ত্রী হিসেবে প্রাধান্য দেন, তাহলে সে কী আপনার গৃহ শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হবে? বরং সে আরো গৃহে শয়তানের প্রসার ঘটাবে। পৃথিবীতে আজ হাজারও স্ত্রী আছে যারা ভোরে নিজেরা ঘুম থেকে জাগে না এবং ছেলে, মেয়ে বা স্বামীকেও ঘুম থেকে জাগায় না। বরং সূর্য ওঠার পর শয়তানের প্রস্রাব কানে নিয়ে, মলিন চেহারা, হতাশার ছাপ, খিটখিটে মেজাজ নিয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়।

আবদুলস্নাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ এর কাছে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যে সকাল পর্যমত্ম ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এবং সালাতের জন্য জাগ্রত হয়নি। তখন তিনি বললেন,

ذَاكَ رَجُلٌ بَالَ الشَّيْطَانُ فِيْ أُذُنَيْهِ

‘‘সে এমন ব্যক্তি, শয়তান যার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে’’। [বুখারী হা: ১১৪৪; মুসলিম হা: ১৮৫৩; মিশকাত হা: ১২২১]

একদা রাত্রি বেলায় রাসূল ﷺ ঘুম থেকে জেগে বললেন,

سُبْحَانَ اللهِ مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الْفِتَنِ وَمَاذَا فُتِحَ مِنَ الْخَزَائِنِ أَيْقِظُوْا صَوَاحِبَاتِ الْحُجَرِ فَرُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الْاٰخِرَةِ

‘সুবহানালস্নাহ! কত ফিতনা যে আজ রাতে নাযিল হয়েছে! কত ভান্ডার যে আজ খোলা হয়েছে! তোমরা বাসায় (ঘুমিয়ে) থাকা ব্যক্তিদেরকে জাগিয়ে দাও। বস্তুতঃ দুনিয়ার অনেক কাপড় পরিহিতা মহিলা আখিরাতে উলঙ্গ থাকবে’। [বুখারী হা: ১১৫]

নারী জাতির ভেবে দেখা উচিত, যারা আজ লেপ-কাঁথা গায়ে দিয়ে আরামের বিছানায় ঘুমিয়ে বিলাসিতায় সকাল কাটাচ্ছে, পরকালে তাদেরকে কোটি কোটি মানুষ, জিন ও ফেরেশতার সামনে উলঙ্গ থাকতে হবে না তো? অতএব আপনার স্ত্রী এমন হওয়া চাই, যে হবে কুরআন তেলাওয়াতকারিণী ও শরীয়তের অন্যান্য ইবাদাত পালনকারিণী এবং সকলপ্রকার বাদ্যযন্ত্র পরিহারকারিণী। কারণ যে গৃহে টিভি ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজে, সেই গৃহে শয়তান অবস্থান করে। আর এই শয়তানই আপনার মাঝে ও আপনার স্ত্রীর মাঝে অশামিত্মর আগুন জ্বালাতে পারে, যে আগুনে আপনি পুড়ে শেষ হয়ে যাবেন। যার বাসত্মব প্রমাণ আজ এই রঙ্গিন পৃথিবীতে ভুরি ভুরি রয়েছে।

১৫. যিনি হবেন ছেলে-মেয়ের জন্য আদর্শ মা :

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّهٗ كَانَ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُولُ اللهِ : مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلَّا يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهٖ وَيُنَصِّرَانِهٖ وَيُمَجِّسَانِهٖ

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলতেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক মানবসমত্মান ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদি, খ্রিস্টান অথবা অগ্নিপূজক করে গড়ে তুলে’’। [বুখারী মা.শা.হা:১২৯২,পৃ.৪৫৬; মুসলিম মা.শা.হা:২২-২৬৫৪ মিশকাত হা: ৯০]

অত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, পিতা-মাতার প্রভাবেই সমত্মান প্রভাবিত হয়। এজন্যই ইসলাম প্রত্যেক পুরম্নষকে স্ত্রী নির্বাচনের সময় দ্বীনদার, পরহেযগার, উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং সতীসাধ্বী রমণীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে। মহান আলস্নাহ বলেন,

﴿وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِيْنَ حَتّٰى يُؤْمِنُوْا وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّلَوْ أَعْجَبَكُمْ﴾

‘‘মুশরিক নারীদেরকে তোমরা ঈমান না আনা পর্যমত্ম বিবাহ করো না। মুশরিক নারী তোমাদেরকে মুগ্ধ করলেও মুমিন কৃতদাসী তার চেয়ে উত্তম’’

(সূরা বাকারা ২ঃ ২২১)।

অত্র আয়াতে ঈমানদার একজন দাসীকে ঈমানহীন স্বাধীন নারীর তুলনায় উত্তম বলা হয়েছে। সুতরাং স্ত্রী নির্বাচন করার সময় কেবলমাত্র রূপ-সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নয়, বরং ঈমানদার-ধার্মিক, আলস্নাহভীরম্ন ও চরিত্রবান স্ত্রী একামত্ম অপরিহার্যর্- যাতে অনাগত সমত্মান একজন আদর্শবান মাতার সাহচর্য পেয়ে আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে।

রাসূল ﷺ বলেন, (ভালো নারী হলো সেই) ‘‘যে নারী তার সমত্মানের প্রতি স্নেহশীল এবং স্বামীর মর্যাদার উত্তম রক্ষাকারিণী’’। [বুখারী হা: ৩৪৩৪,৫০৮২]

মনে রাখবেন, প্রকৃত শিক্ষিতা মা তিনি- যিনি তার সমত্মানকে দুনিয়ার কল্যাণকর বিদ্যা ও জাহান্নাম থেকে বাঁচা এবং জান্নাত লাভের বিদ্যা শিক্ষা দেন। মা হওয়ার জন্য কেবল জন্ম দেয়াই যথেষ্ট নয়, বরং সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমত্মান প্রতিপালন করাই মুখ্য। মায়ের কর্তব্য যে নারী পালন করে না, মা হওয়ার যোগ্যতা তার কোথায়? কারণ পশু-পাখিও বাচ্চা জন্ম দেয়। পশু-পাখি আর এমন মায়ের মাঝে পার্থক্য কোথায়? অধিকাংশ সমত্মান-সমত্মতি তাদের পিতা-মাতার অবহেলা ও উত্তম প্রশিক্ষণের ত্রম্নটির কারণে নষ্ট হয়। সুতরাং আদর্শ সমত্মান তৈরির জন্য চাই আদর্শ মা। সকল নারীই মা হতে পারে; কিন্তু আদর্শ মা খুব কম নরীই হতে পারে। কাজেই আপনি এমন আদর্শ স্ত্রী নির্বাচন করম্নন, যে আপনার ছেলে-মেয়েকে সাদাকাতুল জারিয়া হিসেবে গড়ে তুলবে। আদর্শহীন, দুর্নীতিবাজ অফিসার, প্রফেসর, মাস্টার, এম.পি-মন্ত্রী ও সূদী ব্যাংকের হিসাব রক্ষক হিসেবে নয়। উলেস্নখ্য যে, এক্ষেত্রে শুধু স্ত্রীই যে ভূমিকা পালন করবে তা নয়, বরং স্বামীও জোরালো ভূমিকা রাখবে।

১৬. যিনি আপনাকে মুগ্ধ করতে পারেন :

হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ - سُئِلَ أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ : اَلَّتِىْ تَسُرُّهٗ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا وَتُطِيْعُهٗ إِذَا أَمَرَهَا وَلَا تُخَالِفُهٗ فِىْ نَفْسِهَا وَلَا مَالِهَا

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ নারী উত্তম? তিনি বললেন- ‘‘ঐ নারী, যার প্রতি তার স্বামী দৃষ্টিপাত করলে সে তাকে খুশি করে, তার স্বামী কোন আদেশ করলে সে তা পালন করে এবং সে নিজের জীবন ও সম্পদের ব্যাপারে তার স্বামীর মতের বিরম্নদ্ধাচরণ করে না’। [সিলসিলাহ সহীহাহ হা: ১৮৩৮]

মুখ বাঁকা করে, মলিন চেহারা নিয়ে, নাক সিঁটকিয়ে যে নারী কথা বলে এমন নারীকে নয়; বরং যে আপনাকে তার আচরণ দিয়ে মুগ্ধ করতে পারে তাকেই স্ত্রী হিসেবে প্রাধান্য দেয়া উচিত।

১৭. যিনি শুধু আপনার জন্যই রূপচর্চা করবেন ও সুসজ্জিতা হবেন :

নারীর রূপ-লাবণ্যের প্রতি পুরম্নষ চির দিনই আকর্ষিত। এ আকর্ষণ আরো বেড়ে যায় যখন তারা সজ্জিতা হয়। এমন অনেক নারীই রয়েছে যারা বিবাহের অনুষ্ঠানে, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সময় সুসজ্জিতা হয়। আর এ ধরনের সাজ-গোজে রয়েছে যেনার মতো ভয়াবহ পাপ। পক্ষামত্মরে স্বামীকে সন্তুষ্ট করার জন্য খুব কম নারীই সুসজ্জিতা হয়। নারীর এমন অবৈধ রূপচর্চার ফলে ব্যয় হয় হাজার-হাজার টাকার প্রসাধনী, পরিবারে নেমে আসে অশামিত্ম এবং স্বামী-স্ত্রীর সুগভীর সম্পর্কের মাঝে পড়ে যায় ভাটা। কিন্তু স্ত্রী যদি শুধু স্বামীর জন্য সুসজ্জিতা হতো, তাহলে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসত অনাবিল শামিত্ম। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই রক্ষা পেত যিনার মতো ভয়ঙ্কর পাপ থেকে।

১৮. যিনি হবেন প্রেম বিনিময়কারিণী :

রাসূল ﷺ বলেন,

خَيْرُ نِسَائِكُمُ الْوَدُوْدُ الْوَلُوْدُ الْمَوَاتِيَةُ الْمُوَاسِيَةُ إِذَا اتَّقَيْنَ اللهَ

‘‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্ত্রী সে, যে প্রেমময়ী, অধিক সমত্মানদাত্রী, (স্বামীর) সহমত অবলম্বনকারী, স্বামীকে বিপদাপদে সান্ত্বনাদানকারী এবং আলস্নাহকে ভয়কারী’’। [বায়হাকী মা.শা. হা:১৩৮৬০,পৃ.৮৪,খন্ড-৭]

তিনি আরো বলেন,

نِسَائِكُمْ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ الْوَلُوْدَ الْوَدُوْدُ

‘তোমাদের ঐ স্ত্রীরাও জান্নাতী হবে, যে অধিক প্রণয়নী, সমত্মানদাত্রী’’ । [সিলসিলা সহীহাহ হাঃ ২৮৭]

অসংখ্য নারী আজ অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে ব্যসত্ম। কাজেই স্মরণ রাখা ভালো যে, যারাই অবৈধ প্রেম-ভালবাসা চর্চায় নিমগ্ন, তারা তার স্বামীর ভালোবাসার ব্যাপারে বড়ই বেপরোয়া। যে নারী কেবল তার স্বামীর সাথে প্রেম বিনিময় করে, দাম্পত্য জীবনের জন্য এমন নারী কতই না গুরম্নত্ববহ।

১৯. যিনি আপনার অবর্তমানে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হবেন না :

মোবাইলে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হওয়ার কারণে আজ শত শত পরিবার ভেঙ্গে খান-খান হয়ে যাচ্ছে। দাম্পত্য জীবন তুষের আগুনের ন্যায় দাউ-দাউ করে জ্বলছে। কাজেই আপনার অবর্তমানে পরকীয় প্রেমে লিপ্ত হবে না এমন স্ত্রী নির্বাচন করম্নন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এই পরকীয় প্রেমকে স্পষ্ট হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,

﴿وَلَا تَقْرَبُوْا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ﴾

‘‘আর তোমরা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতার নিকটবর্তী হয়ো না’’।

(সূরা আন‘আম ৬ঃ ১৫২)

তিনি আরো বলেন,

﴿قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ﴾

‘‘বলো, নিশ্চয় আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় অশ্লীলতা,পাপ কাজ ও অন্যায় বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ করেছেন’’। (সূরা আ‘রাফ ৭ঃ ৩৩)

২০. যিনি হবেন স্বামীর অনুগত :

মহান আলস্নাহ বলেন,

﴿اَلرِّجَالُ قَوَّامُوْنَ عَلَى النِّسَآءِ﴾

‘‘পুরম্নষ হলো নারীর কর্তা’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩৪)।

অত্র আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে- স্বামীর অনুগত হবে স্ত্রী, যেমনিভাবে নেতার অনুগত হয় সাধারণ জনগণ। সতীসাধ্বী নারীর বৈশিষ্ট্য হলো, স্বামীর অনুগত হওয়া। যেমন মহান আলস্নাহ বলেন,

﴿فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللهُ﴾

‘‘সতীসাধ্বী স্ত্রীরা (আলস্নাহ ও স্বামীর প্রতি ) অনুগত থাকে এবং পুরম্নষের অনুপস্থিতিতে তারা তা (অর্থাৎ তাদের লজ্জাস্থান ও স্বামীর সম্পদ) সংরক্ষণ করে, যা আলস্নাহ সংরক্ষণ করতে আদেশ করেছেন’’ (সূরা নিসা ৪ঃ ৩৪)।

কিন্তু অনেক হতভাগা নারী আছে যারা অহংকারী এবং যারা স্বামীর বৈধ ব্যাপারেও অনুগত হয় না। অথচ আলস্নাহর নবী ﷺ বলেন,

‘নারী যখন স্বামীর (বৈধ) কথামতো চলে অর্থাৎ তার অনুগত হয়, সে (নারী) জান্নাতের যেকোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে’। [আহমাদ হা:১৬৬১; ছহীহুল জামে হা:৬৬০; ছহীহ আত-তারগীব হা:১৯৩২]

আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য হলো, স্বামীর অনুগত হওয়া। জীবনে স্ত্রী অনেক পাওয়া যায়; কিন্তু স্বামীর অনুগত স্ত্রী পাওয়া আজ-কাল দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবুও স্বামীর অনুগত হয় এমন স্ত্রী খোঁজা আবশ্যক। মনে রাখবেন, আপনার স্ত্রী শিক্ষা, প্রফেসর বা ব্যাংক কর্ম-কর্তা যে পেশার নারীই হোক না কেন, সে যদি আপনার অনুগত না হয়, তাহলে পরিবার থেকে শামিত্ম বিলীন হয়ে যাবে।

২১. যিনি হবেন স্বামীর চাহিদা পূরণকারিণী :

দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য ও পাপ থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর চাহিদা পূরণকারী স্ত্রীর প্রয়োজন। যে স্বামীকে ঘরের বাইরে কর্মের মেহনতে জ্বলতে হয় আবার ঘরে স্ত্রীর কাছেও জ্বলতে হয়, তার আর সুখ কোথায়? অথচ আলস্নাহ বলেন,

﴿وَمِنْ اٰيَاتِهٖۤ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْاۤ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّرَحْمَةً إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ﴾

‘‘আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জন্য সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন; যাতে তোমরা তাদের কাছে শামিত্ম পাও। আর তিনি তোমাদের মাঝে তৈরি করে দিয়েছেন অনুগ্রহ ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলি’’

(সূরা রূম ৩০ঃ ২১)।

পৃথিবীতে এমন অনেক স্ত্রী আছে যারা স্বামীর প্রচন্ড পিপাসায় এক গস্নাস পানি দিতেও অবহেলা প্রদর্শন করে, অন্যান্য চাহিদা পূরণ করা তো দূরের কথা। তাহলে কীভাবে সে প্রশামিত্মদানকারিণী হলো? অথচ হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهٗ إلٰى فِرَاشِهٖ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيْءَ فَبَاتَ غَضْبَانَ لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتّٰى تُصْبِحَ

‘‘আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে অতঃপর সে (স্বামী) রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফেরেশতাগণ ঐ স্ত্রীকে সকাল পর্যমত্ম অভিশম্পাত করতে থাকেন’। [বুখারী হা: ৩২৩৭,৫১৯৩,৫১৯৪; মুসলিম হা: ১৪৩৬; আবু দাউদ হা: ২১৪১; মুসনাদ আহমাদ হা: ৭৪২২]

অপর হাদীসে এসেছে,

عَنْ طَلْقِ بْنِ عَلِىٍّ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ يَقُوْلُ : إِذَا الرَّجُلُ دَعَا زَوْجَتَهٗ لِحَاجَتِهٖ فَلْتُجِبْهُ وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُّوْرِ

তলক ইবনে আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার প্রয়োজনে আহবান করে, তখন সে যেন (ততক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে চুলার কাছে (রম্নটি ইত্যাদি) পাকানোর কাজে ব্যসত্ম থাকে’। [তিরমিযী হাঃ ১১৬০]

আধুনিক যুগের অনেক নারীর ব্যাপারে শোনা যায় যে, তারা অনেক সময় অকারণে স্বামীর সঙ্গ দেয়ার ক্ষেত্রে বেপরোয়া হয়। যার ফলে স্বামী লিপ্ত হয় পরকীয় প্রেমে, এর ফলে দাম্পত্য জীবনে ধ্বস নামে। আবার অনেক ধার্মিক স্ত্রী আছেন যারা রাতে সালাতের জন্য উঠতে পারবে না এবং দিনে নফল সিয়াম পালনে কষ্ট হবে বলে স্বামীর সঙ্গ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অথচ রাসূল ﷺ বলেন,

لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ أَنْ تَصُوْمَ وَزَوْجُهَا شَاهِدٌ، إِلَّا بِإِذْنِهٖ

‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোন নারীর জন্য নফল সিয়াম রাখা বৈধ নয়’। [বুখারী হা: ৫১৯৫,২০৬৬,৫১৯২,৫৩৬০; মুসলিম হা: ১০২৬; আবু দাউদ হা: ১৬৮৭; মুসনাদ আহমাদ হা: ২৭৪০৫]

তাই স্বামীর চাহিদা পূরণের ব্যাপারে সচেতন এমন নারীকেই স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা আবশ্যক। যাতে দাম্পত্য জীবন অশামিত্ম থেকে মুক্ত থাকে।

২২. যিনি হবেন আমানতদার :

স্ত্রী হলো স্বামীর সংসারের রাণী। যার হাতে ন্যসত্ম থাকে সংসারের সকল দায়িত্ব। তাই এমন আমানতদার স্ত্রী নির্বাচন করা জরুরি, যিনি হবেন স্বামীর ধন-সম্পদ, ইজ্জত-সম্মান ও সমত্মানের আমানতের হেফাযতকারিণী। স্মরণ রাখা ভালো যে, আমানতের খিয়ানতকারীর জন্য রয়েছে পরকালে অপমানজনক শাসিত্ম।

২৩. যিনি হবেন স্বামীর ঘর পরিপাটিকারিণী :

স্বামীর ঘর-সংসার সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যময় রাখা আদর্শবান নারীর অন্যতম গুণ। আদর্শ পরিবার গড়ার জন্য এমন গুণের নারী বড় সহায়ক। আর বাড়ির আঙ্গিনা নোংরা করে রাখা হলো ইয়াহুদিদের বৈশিষ্ট্য। যেমন রাসূল ﷺ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহের আঙ্গিনা (সম্মুখভাগকে) পরিচ্ছন্ন করে রাখো। কারণ নোংরা আঙ্গিনা হলো ইয়াহুদিদের আঙ্গিনা। [সহীহুল জামে হা:৩৯৪১]

২৪. যিনি স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাইরে যাবেন না :

স্বামী বেঁচে থাকতে হাটে-বাজারে বা মার্কেটে যাওয়া কোন আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য নয়। তবে যদি যেতেই হয়, তাহলে স্বামীর অনুমতি নিয়ে এবং শরীয়তসম্মত পন্থায় যেতে পারবে। অবৈধ কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর কাছে অনুমতি চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। যারা ধর্ম-নৈতিকতাকে কবর দিয়ে, উচ্চশিক্ষিতা হয়ে, মোটা অংকের টাকার চাকুরি করে স্বামীর তোয়াক্কা না করে যেখানে সেখানে ঘুরা-ফেরা করে তারা কি কখনো আদর্শ নারী হতে পারে?

সুতরাং এমন বৈশিষ্ট্যের নারীকে স্ত্রী নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকুন।

২৫. যিনি অনুমতি নিয়ে কর্ম সম্পাদন করেন :

পারস্পরিক সম্মতিসূচক কর্মে রয়েছে পরম আনন্দ। তাই আপনার স্ত্রী এমন হওয়া উচিত, যিনি আপনার পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে সকল কাজ সম্পাদন করবেন। এমনকি আপন মা-বাবা, ভাই-বোনকে কিছু দিতে হলেও আপনার অনুমতি নেবেন।

২৬. যার শিক্ষা-দীক্ষা আছে :

শামিত্মময় পরিবার গড়ার জন্য প্রয়োজন একজন সুশিক্ষিতা স্ত্রী। যার মধ্যে থাকবে ইহকালীন কল্যাণকর জ্ঞান ও পরকালীন জান্নাত লাভের জ্ঞান। শুধু ইহকালীন জ্ঞানে পারদর্শী এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ কোথায়? কেননা নবী ﷺ বলেন,

‘‘চার শ্রেণির মানুষ জাহান্নামী। তন্মধ্যে এক শ্রেণি হলো- সেই দুর্বল ব্যক্তি, যার (পাপ ও অন্যায়) থেকে বাঁচার জ্ঞান নেই’’। [মুসলিম হাঃ ৭৩৮৬]

প্রিয় স্ত্রী সন্ধানী বন্ধু! আপনি গভীরভাবে ভেবে দেখুন, আপনার নির্বাচিত স্ত্রী যদি দুনিয়ার সকল বিদ্যায় পারদর্শী হয় আর যদি শরীয়তে কোন্টা হালাল কোন্টা হারাম, কোন্ কাজ বৈধ আর কোন্ কাজ অবৈধ, কোন্ কাজে নেকী আর কোন্ কাজে পাপ, কোন্টা ন্যায় আর কোন্টা অন্যায় ইত্যাদি পার্থক্য করে বেঁচে থাকতে না পারে, তবে এমন ধর্মজ্ঞানহীন বৈশিষ্ট্যের শিক্ষিতা স্ত্রী নির্বাচন করে আপনি কী কল্যাণ লাভ করবেন?

মনে রাখবেন, দুনিয়ার অধিকাংশ নারী আজ পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিতা হচ্ছে। যার ফলে স্বামীর কী অধিকার রয়েছে তা তারা বুঝতে পারে না। ফলে সংসারে নেমে আসে অশামিত্ম। আবার পার্থিব শিক্ষায় শিক্ষিত নারী সমত্মানদেরকেও বঞ্চিত করে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা থেকে। ফলে সমত্মান-সমত্মতি সাদাকায়ে জারিয়ার পরিবর্তে গুনাহে জারিয়ার পাত্র হচ্ছে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে শরীয়তসম্মত আমল না থাকার কারণে ছেলে-মেয়ে যেমন জাহান্নামে যাবে, ঠিক তেমনি পিতা-মাতা তাদেরকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা না দেয়ার কারণে, তাদেরকে গোমরাহ করার দরম্নন সমত্মানরা তাদের অভিভাবক অর্থাৎ পিতা-মাতাকে পায়ের তলায় পিষ্ট করবে- যাতে তারা অধমদের মধ্যে গণ্য হবে’’ (সূরা হা-মীম-সাজদাহ ৪১ঃ ২৯)।

যে পিতা-মাতা তাদের সমত্মানদেরকে প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা দেয় না তারাই হলো অধম। কাজেই স্ত্রী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এমন নারীকে প্রাধান্য দিন, যিনি হবেন ইহকালীন ও পরকালীন উভয় বিদ্যায় পারদর্শী।

২৭. যিনি হবেন হিসাবী :

বেহিসাবী মানুষ কোনদিন ইহকালে ও পরকালে প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারে না। হিসাবী ব্যক্তিই হয় সম্মানিত ও কল্যাণপ্রাপ্ত। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয়ে হিসাবী মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। কেননা অনেক বেহিসাবী স্ত্রী আছে যারা স্বামীর আয় বুঝে ব্যয় করে না। ফলে স্বামীকে সংসার চালাতে বিপাকে পড়তে হয়, সমাজ বুঝে চলতে পারে না বলে তাকে অপমানিত হতে হয়।

২৮. যিনি হবেন কৃতজ্ঞশীলা :

যাকে আপনি স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাকে অবশ্যই আলস্নাহর কৃতজ্ঞশীলা হতে হবে। কারণ যে সৃষ্টিকর্তা আলস্নাহর দেয়া পৃথিবীতে থেকে, তাঁর দেয়া নিয়ামত ভোগ করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে না, সে আপনার দেয়া কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট হবে না। জগতে অনেক স্ত্রী আছে, যারা স্বামীর খেয়ে-পরে অপরের কাছে গিয়ে তার দোষ-ত্রম্নটি বর্ণনা করে। এক্ষেত্রে স্মরণ রাখবেন ইসমাঈল (আঃ) এর কথা, যিনি আলস্নাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়কারী স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে বহাল রেখেছিলেন। আর পিতার পরামর্শক্রমে অকৃতজ্ঞ, দুঃখ-কষ্ট ও অভাব প্রকাশকারিণী স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন।

২৯. যিনি স্বামীর হক বুঝবেন :

শরীয়তসম্মত স্বামীর যে হক রয়েছে সে সম্পর্কে অবগত এবং তা মানতে প্রস্তুত এমন নারীকে স্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করম্নন, যাতে দাম্পত্য জীবনে ফাটল না ধরে।

৩০. যিনি বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করবেন :

জগত সংসারে অনেক স্ত্রী আছে যারা স্বামীর বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনকে মূল্যায়ন করে না, স্বামীকে কুপরামর্শ দিয়ে তার জন্মদাতা পিতা-মাতাকে ঘর-বাড়ি ছাড়তে কিংবা টাকা-পয়সা না দিতে বাধ্য করে। এমন নারীকে নয়; বরং আপনাকে মান্যকারিণী, আপনার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণকারিণী হবে এমন নারীকেই স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন