বিতর নামাযের শেষ রাকাতে ক্বেরাত পড়ার পর রুকূর পূর্বে অথবা রুকূ থেকে উঠার পর- উভয় অবস্থায় দুআ ক্বনূত পড়া জায়েয।

রুকূর পূর্বে ক্বনূত পড়ার দলীলঃ উবাই বিন কাহব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

 أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُوتِرُ فَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ 

রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়তেন, তখন রুকূর পূর্বে ক্বনূত পড়তেন। [. ইবনে মাজাহ্, অধ্যায়ঃ নামায প্রতিষ্ঠা করা ও তাতে সুন্নাত, অনুচ্ছেদঃ রুকূর পূর্বে বা পরে ক্বনূতের বর্ণনা। হা/১১৮২। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ ক্বিয়ামুল্লায়ল ও নফল নামায, অধ্যায়ঃ বিতরের ক্ষেত্রে উবাই বিন কা’বের হাদীছ বর্ণনায় বর্ণনাকারীদের বাক্যের মধ্যে বিভিন্নতা। হা/১৬৮১। হাদীছটি ছহীহ, দ্রঃ ইরউয়াউল গালীল হা/৪২৬।]

আলক্বমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওইবনে মাসঊদ (রাঃ) ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীগণ বিতর নামাযে রুকূর পূর্বে ক্বনূত পড়তেন।হ [. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৩০২। বর্ণনাটি ছহীহ দ্রঃ ইরউয়াউল গালীল ২/১৬৬।]

রুকূর পর ক্বনূত পড়ার দলীলঃ আবদুর রহামান বিন আবদুল আলক্বারী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন লোকদেরকে এক ইমামের পিছনে একত্রিত করলেন, তখন লোকেরা বিতরের ক্বনূতে কাফেরদের প্রতি লাহনত করতেন, অতঃপর দুআ শেষ করে তাকবীর দিয়ে সিজদা করতেন।হ [. হাদীছটির প্রথমাংশ ছহীহ বুখারীতে রয়েছে, অধ্যায়ঃ তারাবীহ্ নামায, অনুচ্ছেদঃ রামাযানে ক্বিয়াম করার ফযীলত হা/২০১০। শেষাংশ রয়েছে ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে ২/১৫৫-১৫৬ শায়খ আলবানী এর সনদকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ ছালাতু তারাবীহ্ ৪১-৪২ পৃঃ]

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয নামাযে ক্বনূত পড়ার সময় কখনো রুকূর আগে কখনো রুকূর পরে করেছেন।

আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন,

 قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَهْرًا بَعْدَ الرُّكُوعِ يَدْعُو عَلَى أَحْيَاءٍ مِنَ الْعَرَبِ 

রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাস রুকূর পর ক্বনূত পাঠ করেছেন, তাতে তিনি আরবের কয়েকটি গোত্রের উপর বদদুআ করছেন। [. বুখারী, অধ্যায়ঃ বিতর, অনুচ্ছেদঃ রুকুর আগে ও পরে ক্বনূত পাঠ করা। হা/ ১০০২। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ মুসলমানদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে সকল নামাযে ক্বনূত পাঠ করা মুস্তাহাব, হা/৬৭৭।]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজর নামাযের ক্বেরাত পাঠ শেষে তাকবীর দিয়ে রুকূ করতেন। রুকূ থেকে উঠে ওসামিয়্যাল্লাহুলিমান হামিদাহ্‌ রাব্বানা লাকাল্‌ হামদ্‌হ বলে- দাঁড়ানো অবস্থাতেই তিনি দুআ পড়তেন, ওআল্লাহুম্মা আন্‌জেল্‌ ওয়ালিদ বিন ওয়ালিদ ....। [. মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ মুসলমানদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে সকল নামাযে ক্বনূত পাঠ করা মুস্তাহাব, হা/১০৮২।]

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ ওয়াক্ত নামায যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাযে লাগাতার একমাস ক্বনূত পাঠ করেছেন। প্রত্যেক নামাযের শেষ রাকাতে ওসাম্যিাল্লাহুলিমান হামিদাহ্‌হ বলার পর তিনি দুআ করতেন। সে সময় তিনি বানী সুলাইম গোত্রের কয়েকটি গোষ্ঠি- রিহল, যাকওয়ান ও ঊছাই-এর উপর বদদুআ করতেন। আর পিছনের মুছল্লীগণ তাঁর দুআয় আমীন বলতেন। [. আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ বিতর, অনুচ্ছেদঃ নামাযে ক্বনূত পাঠ করা, হা/১২৩১। শায়খ আলবানী হাদীছটির সনদকে হাসান বলেন, দ্রঃ ছহীহ আবু দাউদ, ১/২৭০।]

আনাস বিন মালেক (রাঃ) ফজরের নামাযে ক্বনূত পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেন, ওআমরা রুকূর আগে ও পরে ক্বনূত পাঠ করতাম।হ [. ইবনু মাজাহ্, অধ্যায়ঃ নামায প্রতিষ্ঠা করা, অনুচ্ছেদঃ রুকুর আগে-পরে ক্বনূতের বিবরণ হা/ ১১৭৩। শায়খ আলবানী হাদীছটির সনদকে হাসান বলেন, দ্রঃ ছহীহ ইবনু মাজাহ্ ১/১৯৫। ইরউয়াউল গালীল ২/১৬০।]

শায়খ আলবানী বলেন, ওহাসান সনদে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবু বকর, ওমর ও উছমান (রাঃ) রুকূর পর ক্বনূত পাঠ করতেন।হ [. ইরউয়াউল গালীল ২/১৬৪।]

সারকথা, দুআ ক্বনূত রুকূর আগে বা পরে যে কোন সময় পাঠ করা যায়। এতে কোন দোষ নেই। যখন যেভাবে ইচ্ছা পাঠ করতে পারবে।