HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলামে ইবাদত ভাব ও তাৎপর্য
লেখকঃ ইকবাল হোছাইন মাছুম
প্রজ্ঞার দাবি হল সকল কাজে কোন না কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকা, অনুদ্দিষ্ট কাজ ও অনর্থ এড়িয়ে চলা। সেই নীতিতে বিচার করলে অবশ্যই মানতে হবে মহা প্রজ্ঞাময় রাব্বুল আলামিন কোনো কিছুই বিনা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি। তাঁর সকল কর্মেই রয়েছে অপার হিকমত। সুতরাং এই কায়েনাত ও তাতে বিদ্যমান কোনো কিছুই উদ্দেশ্যহীন নয়। কিছুই তিনি অযথা-অনর্থক সৃষ্টি করেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন,
(আরবি)
আর আসমান, জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা আছে তা আমি অনর্থক সৃষ্টি করিনি। এটা কাফেরদের ধারণা, সুতরাং কাফেরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। [ সূরা সাদ: ২৭]
আরও ইরশাদ হছ্ছে,
(আরবি)
আর আমি আসমানসমূহ, জমিন এবং এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এ দু’টোকে যথাযথভাবেই সৃষ্টি করেছি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। [ সূরা দুখান : ৩৮-৩৯]
জিন-ইনসানের সৃষ্টিও এই ধারার বাইরে নয়। বরং প্রজ্ঞাময় সৃষ্টাকর্তা তাদেরকে যে মহান উদ্দেশ্যে এই বসুন্ধরায় পাঠিয়েছেন সে সম্বন্ধে স্পষ্ট করে বলছেন,
(আরবি)
আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে কোনো রিজক চাই না, আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে। [ সূরা জারিয়াত : ৫৬-৫৭]
সুতরাং সৃষ্টির উদ্দেশ্য, তাঁর ইবাদত করা এবং তাঁর আরোপিত নির্দেশ বাস্তবায়ন করা।
মহান আল্লাহ পৃথিবীতে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। যাতে তারা আপন রবের দিশা লাভ করতে পারে। ধারণা নিতে পারে তাঁর সম্বন্ধে যথাযথভাবে। তাঁরা এসে এ দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত নির্ভুলভাবে। জিন ও মানুষকে তাদের রব ও প্রতিপালক আল্লাহ সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছেন। কেন তিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীতে তাদেরকে পাঠানোর উদ্দেশ্যই বা কি, সে ব্যাপারে তাদের বুঝিয়েছেন স্বার্থকভাবে। তাদের অনেকে নবী-রাসূলদের দেখানো হেদায়াত গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে আবার অনেকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের দুর্ভোগ নিশ্চিত করেছে। বান্দার বিরুদ্ধে আল্লাহর হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত।
প্রিয় পাঠক, মহান আল্লাহর বাণী ও তার আবেদনের প্রতি একটু চিন্তা করুন। দেখুন তিনি কি বলেছেন,
(আরবি)
আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।
আরো বলেছেন,
(আরবি)
আর তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো এবং তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না। [সূরা নিসা : ৩৬]
(আরবি)
আর আসমান, জমিন এবং এ দুয়ের মধ্যে যা আছে তা আমি অনর্থক সৃষ্টি করিনি। এটা কাফেরদের ধারণা, সুতরাং কাফেরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। [ সূরা সাদ: ২৭]
আরও ইরশাদ হছ্ছে,
(আরবি)
আর আমি আসমানসমূহ, জমিন এবং এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এ দু’টোকে যথাযথভাবেই সৃষ্টি করেছি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। [ সূরা দুখান : ৩৮-৩৯]
জিন-ইনসানের সৃষ্টিও এই ধারার বাইরে নয়। বরং প্রজ্ঞাময় সৃষ্টাকর্তা তাদেরকে যে মহান উদ্দেশ্যে এই বসুন্ধরায় পাঠিয়েছেন সে সম্বন্ধে স্পষ্ট করে বলছেন,
(আরবি)
আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে। আমি তাদের কাছে কোনো রিজক চাই না, আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে। [ সূরা জারিয়াত : ৫৬-৫৭]
সুতরাং সৃষ্টির উদ্দেশ্য, তাঁর ইবাদত করা এবং তাঁর আরোপিত নির্দেশ বাস্তবায়ন করা।
মহান আল্লাহ পৃথিবীতে সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। যাতে তারা আপন রবের দিশা লাভ করতে পারে। ধারণা নিতে পারে তাঁর সম্বন্ধে যথাযথভাবে। তাঁরা এসে এ দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত নির্ভুলভাবে। জিন ও মানুষকে তাদের রব ও প্রতিপালক আল্লাহ সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছেন। কেন তিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীতে তাদেরকে পাঠানোর উদ্দেশ্যই বা কি, সে ব্যাপারে তাদের বুঝিয়েছেন স্বার্থকভাবে। তাদের অনেকে নবী-রাসূলদের দেখানো হেদায়াত গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে আবার অনেকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের দুর্ভোগ নিশ্চিত করেছে। বান্দার বিরুদ্ধে আল্লাহর হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত।
প্রিয় পাঠক, মহান আল্লাহর বাণী ও তার আবেদনের প্রতি একটু চিন্তা করুন। দেখুন তিনি কি বলেছেন,
(আরবি)
আর আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।
আরো বলেছেন,
(আরবি)
আর তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো এবং তার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করো না। [সূরা নিসা : ৩৬]
ইবাদত একটি ব্যাপক অর্থবোধক ব্যাপার। যার মূল হচ্ছে, দীন ও ধর্মকে একমাত্র আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করা। যাবতীয় বন্দেগি হবে কেবলমাত্র তাঁরই নিমিত্তে। মন নিবিষ্ট থাকবে তাঁরই প্রতি ভয়, আগ্রহ ও ভালবাসায়। সকল ইবাদত উদযাপিত হবে তাঁরই জন্য, আপনার নামাজ তাঁর জন্য, রোজা তাঁরই জন্য, দোয়া তাঁরই নিকট, আপনি বাধিত হবেন তাঁরই কাছে, আপনার ভয় তাঁরই জন্য, ভালবাসা-কামনা-বাসনা, নির্ভরতা-তাওয়াক্কুল সবই তাঁর উপর। আপনার মানসিক ভীতি ও শ্রদ্ধা শুধু তাঁরই প্রতি। মন তাঁর ভক্তি ও ভালবাসায়ই থাকবে পরিপূর্ণ। কারণ,
(আরবি)
আর এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, আবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লহ তো সমুচ্চ, সুমহান। [সূরা হজ্জ : ৬২]
ইসলামি শরিয়তে ইবাদত একটি ব্যাপক ব্যাপার। যা দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতের যাবতীয় কল্যাণকে শামিল করে আছে। যার তাত্বিকতাকে ভাষায় এভাবে ব্যক্ত করা যায়,
هي اسم جامع لكل ما يحبه الله ويرضاه من الأقوال والأعمال الظاهرة والباطنة .
অর্থাৎ, ইবাদত বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ এমন কথা ও কাজ যা মহান আল্লাহ ভালবাসেন ও পছন্দ করেন।
প্রতিটি মুসলিমকে যথার্থভাবেই জানা উচিত বরং তারা জানেও বটে যে, সে নিছক আল্লাহর বান্দা ও গোলাম। তার সার্বিক প্রচেষ্টা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, কি ভাবে সেই দাসত্বের পরিচয় তুলে ধরা যায়। আর এর মধ্যেই তার মর্যাদা ও সম্মান। সুতরাং সে আল্লাহর নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করবে, নিষেধাবলী পরিহার করবে, তাঁর নির্ধারিত সীমার ভেতর অবস্থান করবে এবং আরোপিত দায়িত্ব পালন করবে।
(আরবি)
আর এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, আবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লহ তো সমুচ্চ, সুমহান। [সূরা হজ্জ : ৬২]
ইসলামি শরিয়তে ইবাদত একটি ব্যাপক ব্যাপার। যা দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতের যাবতীয় কল্যাণকে শামিল করে আছে। যার তাত্বিকতাকে ভাষায় এভাবে ব্যক্ত করা যায়,
هي اسم جامع لكل ما يحبه الله ويرضاه من الأقوال والأعمال الظاهرة والباطنة .
অর্থাৎ, ইবাদত বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ এমন কথা ও কাজ যা মহান আল্লাহ ভালবাসেন ও পছন্দ করেন।
প্রতিটি মুসলিমকে যথার্থভাবেই জানা উচিত বরং তারা জানেও বটে যে, সে নিছক আল্লাহর বান্দা ও গোলাম। তার সার্বিক প্রচেষ্টা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, কি ভাবে সেই দাসত্বের পরিচয় তুলে ধরা যায়। আর এর মধ্যেই তার মর্যাদা ও সম্মান। সুতরাং সে আল্লাহর নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করবে, নিষেধাবলী পরিহার করবে, তাঁর নির্ধারিত সীমার ভেতর অবস্থান করবে এবং আরোপিত দায়িত্ব পালন করবে।
মহান আল্লাহর অপার করুণা তিনি মানবজাতির জন্য নানাবিধ ইবাদতের অনুমোদন দিয়েছেন। কিছু ইবাদত দিয়েছেন যা মন ও অনুভূতি দিয়ে পালন করতে হয়, যাকে ইবাদতে কলবিয়া বলা হয়। সবকিছু একেবারে আল্লাহর নিমিত্তে পালন করার মানসিক সঙ্কল্প, তাঁর সন্তুষ্টি ও কৃপা লাভের আশা পোষণ করা ইত্যাদি, এসবই কলবি ইবাদত। কিছু আছে শারীরিক ইবাদত, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে যা সম্পাদন করতে হয়। যাকে ইবাদতে বাদানিয়্যা বলে। দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, রমজানের সিয়াম পালন এরই অন্তর্ভুক্ত। আরো আছে অর্থ-সম্পদ কেন্দ্রিক ইবাদত। সম্পদের মাধ্যমে যা আদায় করতে হয়। যেমন জাকাত, উশর ও সদকা-ফিতরা ইত্যাদি যা একজন বান্দা স্বীয় প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে আদায় করে থাকে। আবার কিছু ইবাদত আছে যা সম্পাদন করতে অর্থ ও শরীর উভয়ের প্রয়োজন হয়। যেমন হজ্জ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ইত্যাদি।
মহান আল্লাহর আরও কৃপা, তিনি যেমনি করে ফরজ ইবাদতের অনুমোদন দিয়েছেন তেমনি প্রতিটি ফরজের পাশাপাশি অনুমোদন দিয়েছেন নফলেরও। নফল সালাত, নফল সওম, নফল জাকাত, নফল হজ্জ ও উমরা। এ সবই আমাদের ঈমানের মুজবুতির জন্য, নেক আমলের আধিক্য ও দরজাত বুলন্দির সুযোগ সৃষ্টির জন্য। সবই মহান রবের অন্তহীন কৃপা। অপার রহমত ও দয়া। তাঁর গুণগান করে শেষ করা যাবে না, তিনি তেমনই যেমন বর্ণনা করেছেন তিনি নিজে।
মহান আল্লাহর আরও কৃপা, তিনি যেমনি করে ফরজ ইবাদতের অনুমোদন দিয়েছেন তেমনি প্রতিটি ফরজের পাশাপাশি অনুমোদন দিয়েছেন নফলেরও। নফল সালাত, নফল সওম, নফল জাকাত, নফল হজ্জ ও উমরা। এ সবই আমাদের ঈমানের মুজবুতির জন্য, নেক আমলের আধিক্য ও দরজাত বুলন্দির সুযোগ সৃষ্টির জন্য। সবই মহান রবের অন্তহীন কৃপা। অপার রহমত ও দয়া। তাঁর গুণগান করে শেষ করা যাবে না, তিনি তেমনই যেমন বর্ণনা করেছেন তিনি নিজে।
মহান আল্লাহর বিশলতা পরিমাপ করা সৃষ্টির পক্ষে অসম্ভব। কারণ সৃষ্টির জ্ঞান সীমিত, তার উপলব্ধি-অনুভূতি সবই সীমিত। এই সীমিত জ্ঞান-অনুভূতি দ্বারা মহান ও অসীম আল্লাহকে আয়ত্ব করা কিভাবে সম্ভব? তাই বান্দার একমাত্র ফলপ্রসূ কাজ হচ্ছে তার হুকুম তামিল করা। কোনো দিকে না তাকিয়ে তাকে সর্বান্তকরণে মান্য করা। প্রমাণিত ইবাদতগুলো পালন করে যাওয়া। মানুষের পক্ষে যেহেতু তাঁর বড়ত্বের সীমা সম্বন্ধে জানা অসম্ভব তাই তাঁর সম্মান ও শানের সাথে প্রযোজ্য ইবাদত কি হতে পারে সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসাও সম্ভব নয়। সুতরাং সে নিজ হতে কোনো ইবাদত আবিষ্কারের যোগ্য নয়। তার দাসত্বের বহি:প্রকাশ কেবল মহামহীমের নির্দেশ নি:শর্ত পালন করার মধ্যেই সীমিত। আর সেই নির্দেশই হচ্ছে ইবাদত। মানুষ যেমনি ইবাদত নিজ হতে আবিষ্কার করতে পারে না যৌক্তিক কারণে, সেই একই কারণে ঐ ইবাদত পালনের পদ্ধতি নিরূপণ করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই এ ক্ষেত্রেও তাকে মহান আল্লাহর দেয়া পদ্ধতির উপর নির্ভর করতে হবে। যাতে ইবাদত আদায়ের পদ্ধতিও মহান আল্লাহর শানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
সুতরাং আমাদেরকে বুঝতে হবে, মহান আল্লাহ প্রদত্ত্ব এই শরিয়ত পরিপূর্ণ। তাতে সংযোজন ও বিয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম আর তোমাদের জন্য দীন হিসাবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। [সূরা মায়েদা : ৩]
আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় ইবাদত কবুল হবার জন্য মৌলিক শর্ত দু’টি।
এক.
ইবাদত ও আমল হতে হবে কেবলমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। রিয়া-লৌকিকতা ও খ্যাতি অর্জনের মোহমুক্ত।
ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে। [সূরা বায়্যিনাহ : ৫]
দুই.
ইবাদত সম্পাদিত হতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে- আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
(আরবি)
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর আর যা হতে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও। [ সূরা হাশর : ৭ ]
এই শর্তদ্বয় কিংবা যে কোনো একটির অনুপস্থিতে আদয়কৃত ইবাদত কবুল হবে না। বরং বাতিল বলে বিবেচিত হবে। কারণ আল্লাহর অনুমোদন কিংবা রাসূলুল্লাহর সুন্নত এড়িয়ে যে ইবাদত সম্পাদন করা হবে তা হবে প্রবৃত্তির অনুকরণ ও বিদআত।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
(আরবি)
অত:পর তারা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত করেন না। [ সূরা কাসাস:৫০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
وإياكم و محدثات الأمور، فإن كل بدعة ضلالة . ( رواه أبو داود و الترمذي وقال : حديث حسن صحيح )
তোমরা (অপ্রমাণিত) নতুন নতুন বিষয়াদি হতে সতর্ক থাকবে, কারণ প্রত্যেক বিদআতই বিভ্রান্তি ও গোমরাহী। [ বর্ণনায় আবু দাউদ ও তিরমিজি, তিনি মন্তব্য করেছেন হাদিসটি হাসান সহিহ]
সুতরাং আমাদেরকে বুঝতে হবে, মহান আল্লাহ প্রদত্ত্ব এই শরিয়ত পরিপূর্ণ। তাতে সংযোজন ও বিয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম আর তোমাদের জন্য দীন হিসাবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। [সূরা মায়েদা : ৩]
আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় ইবাদত কবুল হবার জন্য মৌলিক শর্ত দু’টি।
এক.
ইবাদত ও আমল হতে হবে কেবলমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। রিয়া-লৌকিকতা ও খ্যাতি অর্জনের মোহমুক্ত।
ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে। [সূরা বায়্যিনাহ : ৫]
দুই.
ইবাদত সম্পাদিত হতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে- আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
(আরবি)
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর আর যা হতে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও। [ সূরা হাশর : ৭ ]
এই শর্তদ্বয় কিংবা যে কোনো একটির অনুপস্থিতে আদয়কৃত ইবাদত কবুল হবে না। বরং বাতিল বলে বিবেচিত হবে। কারণ আল্লাহর অনুমোদন কিংবা রাসূলুল্লাহর সুন্নত এড়িয়ে যে ইবাদত সম্পাদন করা হবে তা হবে প্রবৃত্তির অনুকরণ ও বিদআত।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
(আরবি)
অত:পর তারা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহর দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালিম কওমকে হিদায়াত করেন না। [ সূরা কাসাস:৫০]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
وإياكم و محدثات الأمور، فإن كل بدعة ضلالة . ( رواه أبو داود و الترمذي وقال : حديث حسن صحيح )
তোমরা (অপ্রমাণিত) নতুন নতুন বিষয়াদি হতে সতর্ক থাকবে, কারণ প্রত্যেক বিদআতই বিভ্রান্তি ও গোমরাহী। [ বর্ণনায় আবু দাউদ ও তিরমিজি, তিনি মন্তব্য করেছেন হাদিসটি হাসান সহিহ]
প্রাত্যহিক জীবনে নানা প্রয়োজনে আমাদেরকে বিভিন্ন কাজ করতে হয়। আঞ্জাম দিতে হয় নানান ক্ষেত্রে নানান দায়িত্ব । সাংসারিক জীবনে পিতা-মাতার খেদমত, স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ । সামাজিক জীবনে পাড়া-পরশীর খোঁজ-খবর, দরিদ্র-অসহায়দের সমস্য সমাধান, আর্ত মানবতার সেবা। রাষ্ট্রীয় জীবনে একটি সুন্দর দেশ গঠন কল্পে কত ভূমিকা রাখতে হয় আমাদেরকে । তদ্রুপ ব্যক্তি জীবনে নিজ প্রয়োজনে অনেক কাজই আমাদের করতে হয়। এসব প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিয়তের মাধ্যমে আমরা সাওয়াব ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের কাজে পরিণত করতে পারি। পারি আমাদের পূণ্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ বিষয়ে সুন্দর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
সুতরাং একজন মুসলিম পিতা-মাতার খেদমতের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে, হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال : جاء رجل إلى نبي الله صلى الله عليه وسلم فاستأذنه في الجهاد، فقال : أ حي والداك ؟ قال : نعم، قال : فيهما فجاهد .
( رواه البخاري ومسلم وأبو داود والترمذي والنسائي .)
আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, জনৈক লোক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি প্রার্থনা করল, নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। নবীজী তাকে বললেন, তুমি গিয়ে তাদের পেছনে জিহাদ কর। (অর্থাৎ, তাদের খেদমতে চেষ্টা-শ্রম ব্যয় কর)
[বর্ণনায় বোখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাসায়ি]
সুপ্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করে দেখুন এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার খেদমতকে ময়দানের জিহাদের সাথে তুলনা করেছেন। সুতরাং কেউ খাঁটি নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মাতা-পিতার খেদমত করলে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদের সাওয়াব পাবে।
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার চেষ্টা করা আল্লাহর ইবাদত, কারণ এর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য করণীয় পালন করছেন। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-পম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। [সূরা নিসা : ১]
অনুরূপভাবে সন্তানাদি ও সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যয় করাও আল্লাহর ইবাদত এবং সাওয়াব যোগ্য কাজ। রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.-কে লক্ষ্য করে বলছেন,
إنك لن تنفق نفقة يبتغي به وجه الله إلا أجرت عليها، حتى ما تضع في في امرأتك . رواه البخاري ومسلم .
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তুমি যে ব্যয়ই করবে, তাতে সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। এমনকি যে অন্ন তুমি নিজ স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে, তাতেও। [বোখারি ও মুসলিম]
আপনার ছেলে-মেয়েদেরকে আল্লাহ মুখী করে তোলার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ ইবাদত বলে গণ্য হবে, কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের বাস্তবায়ন হয়। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
হে ঈমানদারবৃন্দ, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজ পরিজনদেরকে আগুন হতে রক্ষা কর...। [ সূরা তাহরিম: ৬]
প্রিয় মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ, জীবিকার প্রয়োজনে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে থাকি। এটি একান্তই আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। বেঁচে থাকতে হলে কিছু না কিছু তো করতেই হবে। এক্ষেত্রে আমরা যদি একে আল্লাহর আনুগত্য হিসাবে গ্রহণ করি, তাঁর নির্দেশের বাস্তবায়ন হিসাবে নেই তাহলে এই অবশ্য প্রয়োজনীয় পেশাটিই ইবাদতে পরিণত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
অত:পর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অন্বেষণ কর, আর আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। [সূরা জুমুআ : ১০]
একইভাবে আপনার বিবাহ-শাদি, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা বজায় রাখা, দৃষ্টির অবনতি সব কিছুই ইবাদত।
সুতরাং, আমাদের ইবাদত কেবলমাত্র কিছু আরকান-আহকাম বাস্তবায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সামগ্রিক বিচারে আবশ্যিক বিষয়াদি পালন করা এবং নিষেধাবলী পরিহার করাই হচ্ছে ইবাদত।
সম্মনিত ভ্রাতৃবৃন্দ, যখনই আপনি নীচু ও নিষিদ্ধ কাজ পরিহার করবেন আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় অনুগত চিত্তে তখনই সেটি ইবাদত হিসাবেই পরিগ্রহ হবে। এ কারণেই জনৈক মনীষী তাকওয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,
أن تعمل بطاعة الله، على نور من الله، ترجو بذلك ثواب الله، وأن تترك معصية الله، على نور من الله، تخاف عقاب الله .
অর্থাৎ, তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের আশায় তাঁর নির্দেশ ও অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁর আনুগত্য করা এবং আল্লাহর শাস্তির ভয়ে তাঁর নির্দেশনার আলোকে অপরাধ ও অবাধ্যতা পরিত্যাগ করা।
সুতরাং একজন মুসলিম তার যাবতীয় কাজকে কেবলমাত্র নিয়তের মাধ্যমে ইবাদতে পরিগণিত করতে পারে। মানবতার কল্যাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় যে কাজই সে করবে সেটিই ইবাদত বলে গণ্য হবে। দেখুন মানবতার কল্যাণে সামন্য একটু ভূমিকা রাখলে আল্লাহ তাআলা কত অপরিসীম পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ما من مسلم يغرس غرسا ولا يزرع زرعا فيأكل منه إنسان أو طائر إلا كان لغارسه الأول أجر . أخرجه البخاري ومسلم عن أنس رضي الله عنه .
কোনো মুসলিম বৃক্ষ রোপন করলে কিংবা ক্ষেত-কৃষি করলে, তা হতে যদি কোনো মানুষ কিংবা পাখি কিছু খায় এর বিনিময়ে প্রথম রোপনকারীর জন্য সাওয়াব রয়েছে। [বর্ণনায় বোখারি ও মুসলিম]
সুবহানাল্লাহ! আমাদের রব কত সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন আমাদের জন্য। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কিছু অপসারন করা থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় কাজে ভূমিকা রাখা, আর রাতে বিনিদ্র থেকে সেজদায় রত থাকা সবই ইবাদত। বড়ই সৌভাগ্যবান যারা তাদের সময়কে এমন মূল্যবান কাজে অতিবাহিত করতে পেরেছে।
সুতরাং একজন মুসলিম পিতা-মাতার খেদমতের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে, হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما قال : جاء رجل إلى نبي الله صلى الله عليه وسلم فاستأذنه في الجهاد، فقال : أ حي والداك ؟ قال : نعم، قال : فيهما فجاهد .
( رواه البخاري ومسلم وأبو داود والترمذي والنسائي .)
আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, জনৈক লোক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি প্রার্থনা করল, নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ। নবীজী তাকে বললেন, তুমি গিয়ে তাদের পেছনে জিহাদ কর। (অর্থাৎ, তাদের খেদমতে চেষ্টা-শ্রম ব্যয় কর)
[বর্ণনায় বোখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাসায়ি]
সুপ্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করে দেখুন এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার খেদমতকে ময়দানের জিহাদের সাথে তুলনা করেছেন। সুতরাং কেউ খাঁটি নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মাতা-পিতার খেদমত করলে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদের সাওয়াব পাবে।
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার চেষ্টা করা আল্লাহর ইবাদত, কারণ এর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য করণীয় পালন করছেন। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-পম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। [সূরা নিসা : ১]
অনুরূপভাবে সন্তানাদি ও সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যয় করাও আল্লাহর ইবাদত এবং সাওয়াব যোগ্য কাজ। রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.-কে লক্ষ্য করে বলছেন,
إنك لن تنفق نفقة يبتغي به وجه الله إلا أجرت عليها، حتى ما تضع في في امرأتك . رواه البخاري ومسلم .
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তুমি যে ব্যয়ই করবে, তাতে সাওয়াব প্রাপ্ত হবে। এমনকি যে অন্ন তুমি নিজ স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে, তাতেও। [বোখারি ও মুসলিম]
আপনার ছেলে-মেয়েদেরকে আল্লাহ মুখী করে তোলার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ ইবাদত বলে গণ্য হবে, কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের বাস্তবায়ন হয়। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
হে ঈমানদারবৃন্দ, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজ পরিজনদেরকে আগুন হতে রক্ষা কর...। [ সূরা তাহরিম: ৬]
প্রিয় মুসলিম ভ্রাতৃবৃন্দ, জীবিকার প্রয়োজনে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্যকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে থাকি। এটি একান্তই আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। বেঁচে থাকতে হলে কিছু না কিছু তো করতেই হবে। এক্ষেত্রে আমরা যদি একে আল্লাহর আনুগত্য হিসাবে গ্রহণ করি, তাঁর নির্দেশের বাস্তবায়ন হিসাবে নেই তাহলে এই অবশ্য প্রয়োজনীয় পেশাটিই ইবাদতে পরিণত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
অত:পর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অন্বেষণ কর, আর আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। [সূরা জুমুআ : ১০]
একইভাবে আপনার বিবাহ-শাদি, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা বজায় রাখা, দৃষ্টির অবনতি সব কিছুই ইবাদত।
সুতরাং, আমাদের ইবাদত কেবলমাত্র কিছু আরকান-আহকাম বাস্তবায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সামগ্রিক বিচারে আবশ্যিক বিষয়াদি পালন করা এবং নিষেধাবলী পরিহার করাই হচ্ছে ইবাদত।
সম্মনিত ভ্রাতৃবৃন্দ, যখনই আপনি নীচু ও নিষিদ্ধ কাজ পরিহার করবেন আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় অনুগত চিত্তে তখনই সেটি ইবাদত হিসাবেই পরিগ্রহ হবে। এ কারণেই জনৈক মনীষী তাকওয়ার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,
أن تعمل بطاعة الله، على نور من الله، ترجو بذلك ثواب الله، وأن تترك معصية الله، على نور من الله، تخاف عقاب الله .
অর্থাৎ, তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের আশায় তাঁর নির্দেশ ও অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁর আনুগত্য করা এবং আল্লাহর শাস্তির ভয়ে তাঁর নির্দেশনার আলোকে অপরাধ ও অবাধ্যতা পরিত্যাগ করা।
সুতরাং একজন মুসলিম তার যাবতীয় কাজকে কেবলমাত্র নিয়তের মাধ্যমে ইবাদতে পরিগণিত করতে পারে। মানবতার কল্যাণে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় যে কাজই সে করবে সেটিই ইবাদত বলে গণ্য হবে। দেখুন মানবতার কল্যাণে সামন্য একটু ভূমিকা রাখলে আল্লাহ তাআলা কত অপরিসীম পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ما من مسلم يغرس غرسا ولا يزرع زرعا فيأكل منه إنسان أو طائر إلا كان لغارسه الأول أجر . أخرجه البخاري ومسلم عن أنس رضي الله عنه .
কোনো মুসলিম বৃক্ষ রোপন করলে কিংবা ক্ষেত-কৃষি করলে, তা হতে যদি কোনো মানুষ কিংবা পাখি কিছু খায় এর বিনিময়ে প্রথম রোপনকারীর জন্য সাওয়াব রয়েছে। [বর্ণনায় বোখারি ও মুসলিম]
সুবহানাল্লাহ! আমাদের রব কত সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন আমাদের জন্য। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কিছু অপসারন করা থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় কাজে ভূমিকা রাখা, আর রাতে বিনিদ্র থেকে সেজদায় রত থাকা সবই ইবাদত। বড়ই সৌভাগ্যবান যারা তাদের সময়কে এমন মূল্যবান কাজে অতিবাহিত করতে পেরেছে।
স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্যেই সৃষ্টির কল্যণ ও কামিয়াবি, আমরাও সেই ধারার বাইরে নই। সুতরাং আমাদের কামিয়াবি ও কল্যাণ যেহেতু আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই তাই সুবিবেচনার দাবী হল সেই ইবাদত নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যাওয়া, কখনো বিরক্ত ও নিরাসক্ত না হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
আর তুমি মৃত্যু আসা অবধি আপন রবের ইবাদত কর। [সূরা হিজর:৯৯]
ইবাদতেই আমাদের কল্যাণ, এটিই কামিয়াবির একমাত্র রাস্তা, তাই তা আদায় করতে হবে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায়, সর্বাধিক সুন্দর পদ্ধতিতে। শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন ও রুটিনের অনুসরণই যাতে বিবেচ্য না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে। আর সেই ইবাদতের মাধ্যমেই মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জিত হবে। প্রশান্ত হবে মন। শীতল হবে চক্ষু। উদ্বেলিত হবে অন্তর তৃপ্তি ও আনন্দে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সহচর বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন,
أرحنا بالصلاة . أخرجه أحمد
আমাদেরকে সালাতের মাধ্যমে প্রশান্তি দাও। [ বর্ণনায় আহমদ]
আরও বলছেন,
جعلت قرة عيني في الصلاة . أخرجه النسائي من حديث أنس رضي الله عنه
আমাদের চোখের শীতলতা (প্রশান্তি) রাখা হয়েছে নামাজের মধ্যে। [নাসায়ি]
অর্থাৎ সালাতের মাধ্যমে আমার মন প্রশান্তি লাভ করে, জুড়িয়ে যায় চোখ ।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও তাহমিদ (আল হামদুলিল্লাহ) বলার সাওয়াব প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছিলেন,
وفي بضع أحدكم صدقة،
আর তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনসম্ভোগও একটি সদকা। তখন তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের কেউ তার (যৌন) চাহিদা পূরণ করল আর তাতে সাওয়াব রয়েছে?! তখন নবীজী বললেন,
أرأيتم لو وضعها في الحرام كان عليه وزر، فكذلك إذا وضعها في الحلال كان له أجر .
আচ্ছা, তোমরা কি বল, যদি সে এই চাহিদা হারাম জায়গায় চরিতার্থ করত তাহলে কি তার পাপ হতো না, অনুরূপভাবে যখন হালালভাবে পূরণ করবে তাতে সাওয়াব প্রাপ্ত হবে।
প্রিয় পাঠক, দেখুন, সম্ভোগ-উপভোগ সেটিই আনুগত্য-ইবাদত। আর তাতেই সাওয়াব ও পুরস্কার। সুবহানাল্লাহ, কত মহান আমাদের মাবুদ, কত দয়ালু তিনি, কতইনা করুণাময় আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের রব। তাই তাঁর ইবাদত-আনুগত্য করতে হবে, প্রশান্ত চিত্তে। একান্ত আন্তরিকতায়। সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা, পরিপূর্ণ ভক্তি ও আগ্রহের সাথে। প্রাপ্তির আশায়, একান্ত ভালবাসায়...।
(আরবি)
আর তুমি মৃত্যু আসা অবধি আপন রবের ইবাদত কর। [সূরা হিজর:৯৯]
ইবাদতেই আমাদের কল্যাণ, এটিই কামিয়াবির একমাত্র রাস্তা, তাই তা আদায় করতে হবে সর্বোচ্চ আন্তরিকতায়, সর্বাধিক সুন্দর পদ্ধতিতে। শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন ও রুটিনের অনুসরণই যাতে বিবেচ্য না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে। আর সেই ইবাদতের মাধ্যমেই মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জিত হবে। প্রশান্ত হবে মন। শীতল হবে চক্ষু। উদ্বেলিত হবে অন্তর তৃপ্তি ও আনন্দে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রিয় সহচর বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন,
أرحنا بالصلاة . أخرجه أحمد
আমাদেরকে সালাতের মাধ্যমে প্রশান্তি দাও। [ বর্ণনায় আহমদ]
আরও বলছেন,
جعلت قرة عيني في الصلاة . أخرجه النسائي من حديث أنس رضي الله عنه
আমাদের চোখের শীতলতা (প্রশান্তি) রাখা হয়েছে নামাজের মধ্যে। [নাসায়ি]
অর্থাৎ সালাতের মাধ্যমে আমার মন প্রশান্তি লাভ করে, জুড়িয়ে যায় চোখ ।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও তাহমিদ (আল হামদুলিল্লাহ) বলার সাওয়াব প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেছিলেন,
وفي بضع أحدكم صدقة،
আর তোমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনসম্ভোগও একটি সদকা। তখন তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের কেউ তার (যৌন) চাহিদা পূরণ করল আর তাতে সাওয়াব রয়েছে?! তখন নবীজী বললেন,
أرأيتم لو وضعها في الحرام كان عليه وزر، فكذلك إذا وضعها في الحلال كان له أجر .
আচ্ছা, তোমরা কি বল, যদি সে এই চাহিদা হারাম জায়গায় চরিতার্থ করত তাহলে কি তার পাপ হতো না, অনুরূপভাবে যখন হালালভাবে পূরণ করবে তাতে সাওয়াব প্রাপ্ত হবে।
প্রিয় পাঠক, দেখুন, সম্ভোগ-উপভোগ সেটিই আনুগত্য-ইবাদত। আর তাতেই সাওয়াব ও পুরস্কার। সুবহানাল্লাহ, কত মহান আমাদের মাবুদ, কত দয়ালু তিনি, কতইনা করুণাময় আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমাদের রব। তাই তাঁর ইবাদত-আনুগত্য করতে হবে, প্রশান্ত চিত্তে। একান্ত আন্তরিকতায়। সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা, পরিপূর্ণ ভক্তি ও আগ্রহের সাথে। প্রাপ্তির আশায়, একান্ত ভালবাসায়...।
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে, মহান আল্লাহর ইবাদতেই বান্দার যাবতীয় কল্যাণ নিহিত। বান্দার সফলতা ও স্বার্থকতা তাঁর আনুগত্যের মধ্যেই। তবে তা হতে হবে সহনীয় মাত্রায়। নিজ সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে। ইবাদতে আগ্রহ থাকা আবশ্যক। তাই চাপ নিয়ে ইবাদত করতে রাসূলুল্লাহ নিরুৎসাহিত করেছেন কঠিনভাবে। তিনি বলেন,
إياكم والغلو، فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو . رواه الإمام أحمد والترمذي وابن ماجة من حديث ابن عباس رضي الله عنهما .
তোমরা অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি হতে সতর্ক থাকো, কেননা বাড়াবাড়ি তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। [আহমদ, তিরমিজি ও ইবন মাজাহ]
বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না বরং এটি একটি ধ্বংসাত্মক প্রবণতা। তাই নবীজী বারবার উম্মতকে সতর্ক করেছেন। এক হাদিসে এসেছে,
وعن ابن مسعودٍ رضي اللَّه عنه أن النبيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : « هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ » قالَهَا ثلاثاً ، رواه مسلم .
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অযথা কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি একথাটি তিন বার বলেছেন। [সহিহ মুসলিম]
অন্য এক হাদিসে এসেছে,
عن أَبِي هريرة رضي اللَّه عنه أن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ ، ولنْ يشادَّ الدِّينُ إلاَّ غَلَبه فسدِّدُوا وقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا ، واسْتعِينُوا بِالْغدْوةِ والرَّوْحةِ وشَيْءٍ مِن الدُّلْجةِ » رواه البخاري .
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহর দীন সহজ। যে ব্যক্তি এ দীনকে কঠিন করেছে তার উপর তা চেপে বসেছে। অতএব তোমরা সোজা পথে চল। মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর সকাল, সন্ধ্যায় ও শেষ রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। [সহিহ বোখারি]
আমরা সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস সম্বন্ধে জানি, তিনি সারা দিন রোজা রাখতেন ও সারা রাত ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন,
« أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيْلَ ؟ » قلت : بلَى يَا رسول اللَّهِ . قال : « فَلا تَفْعل : صُمْ وأَفْطرْ ، ونَمْ وقُمْ فَإِنَّ لجَسَدكَ علَيْكَ حقًّا ، وإِنَّ لعيْنَيْكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لزَوْجِكَ علَيْكَ حَقًّا ، وَإِنَّ لزَوْركَ عَلَيْكَ حَقًّا ، وإِنَّ بحَسْبكَ أَنْ تَصْومَ فِي كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أَيَّامٍ ، فَإِنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنةٍ عشْرَ أَمْثَالِهَا ، فَإِذن ذلك صِيَامُ الدَّهْرِ» فشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ ، قُلْتُ : يا رسول اللَّه إِنّي أَجِدُ قُوَّةً، قال : « صُمْ صِيَامَ نَبِيِّ اللَّهِ داوُدَ وَلا تَزدْ عَلَيْهِ» قلت : وما كَان صِيَامُ داودَ؟ قال : « نِصْفُ الدهْرِ » فَكَان عَبْدُ اللَّهِ يقول بعْد مَا كَبِر : يالَيْتَنِي قَبِلْتُ رُخْصةَ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم .
আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে, তুমি নাকি দিনভর রোজা রাখ আর রাতভর ইবাদতে ব্যস্ত থাক? আমি বললাম, হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তখন নবীজী বললেন, তুমি এমনটি করবে না। রোজা রাখবে ও ছেড়ে দিবে। অনুরূপ ঘুমাবে ও জেগে ইবাদত করবে। কারণ তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার দুই চোখের হক আছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার উপর তোমার স্বাক্ষাতপ্রার্থীদের হক আছে। তোমার জন্য বরং মাসে তিন দিনের রোজাই যথেষ্ট। কারণ একটি নেক আমলের বিনিময়ে তোমাকে দশগুণ সাওয়াব দেয়া হবে। আর তখন এটা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য হবে। কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম আর আমার জন্য তা কঠিন করে দেওয়া হল। আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আরও সামর্থ রাখি। তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহর নবী দাউদ-এর মত রোজা রাখ। এর বেশি করতে যেও না। আমি বললাম দাউদ আ.-এর রোজা কেমন ছিল? তিনি বললেন, অর্ধ বছর। বৃদ্ধ বয়সে আব্দুল্লাহ বিন আমর আফসুস করে বলতেন, হায়! আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া ছাড় গ্রহণ করতাম। [ বোখারি ও মুসলিম]
সুতরাং, ইবাদত নিজ সামর্থ অনুযায়ীই করা দরকার। ইবাদতের হক আদায় করে নিজের মনের প্রফুল্লতা বজায় রেখে যতটুকুন করা যায় ততটুকুনই উত্তম। এর বাইরেরটা বাড়াবাড়ি, যা কখনোই শরিয়ত কারো কাছ থেকে চায় না। ইবাদতে বাড়াবাড়ি এক সময় বান্দাকে ইবাদতের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ ও বিরক্ত করে তুলে।
বাড়াবাড়ির মত বিদআত-খোরাফাতকেও সর্বাত্মকভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। শরিয়ত যার নির্দেশ ও অনুমোদন দেয়নি তা পালন করার মাঝে ক্ষতি ছাড়া কোনোই কল্যাণ নেই। আহলে কিতাবদেরকে আল্লাহ তাআলা এজন্য তিরস্কার করেছেন এই বলে,
(আরবি)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারাই বৈরাগ্যবাদের প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের উপর লিপিবদ্ধ করে দেইনি। তারপর তাও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। [সূরা হাদিদ:২৭]
সুতরাং ইবাদতের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি যেমন পরিত্যাজ্য অনুরূপ নব প্রবর্তন-বিদআতও, তাতে বান্দা বিরক্ত ও ইবাদতের প্রতি অনাসক্ত হয়ে যায়, এক সময় ইবাদতই ত্যাগ করে বসে। তাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ইবাদত হচ্ছে সেটি যা বান্দা নিয়মিতভাবে আদায় করে পরিমাণে কম হলেও। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إن أحب الأعمال إلى الله ما داوم صاحبه عليه وإن قل . إخرجه البخاري ومسلم عن عائشة رضي الله عنها .
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল বান্দা যেটি নিয়মিতভাবে পালন করে, পরিমাণে কম হলেও। [বোখারি ও মুসলিম]
সুতরাং একদিন অনেক আর বাকি দিন মোটেও না, এরচেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য ও উত্তম হলো প্রতিদিন কিছু কিছু করা। ইবাদত তো অনেক, তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত নিজ নিজ সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিদিনই নিজ রবের ইবাদতে মশগুল থাকা। যেহেতু আনুগত্যই আল্লাহর চাহিদা তাই এই আনুগত্যের বহি:প্রকাশ প্রতিদিনই হবে সেটিই বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
নিশ্চয় যারা বলে, আল্লাহই আমাদের রব, অত:পর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাজিল হয় (এবং বলে) তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল। আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু এবং আখিরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরো থাকবে যা তোমরা দাবি করবে। পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ। [সূরা ফুসসিলাত: ৩০-৩২]
إياكم والغلو، فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو . رواه الإمام أحمد والترمذي وابن ماجة من حديث ابن عباس رضي الله عنهما .
তোমরা অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি হতে সতর্ক থাকো, কেননা বাড়াবাড়ি তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। [আহমদ, তিরমিজি ও ইবন মাজাহ]
বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না বরং এটি একটি ধ্বংসাত্মক প্রবণতা। তাই নবীজী বারবার উম্মতকে সতর্ক করেছেন। এক হাদিসে এসেছে,
وعن ابن مسعودٍ رضي اللَّه عنه أن النبيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : « هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ » قالَهَا ثلاثاً ، رواه مسلم .
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অযথা কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি একথাটি তিন বার বলেছেন। [সহিহ মুসলিম]
অন্য এক হাদিসে এসেছে,
عن أَبِي هريرة رضي اللَّه عنه أن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ ، ولنْ يشادَّ الدِّينُ إلاَّ غَلَبه فسدِّدُوا وقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا ، واسْتعِينُوا بِالْغدْوةِ والرَّوْحةِ وشَيْءٍ مِن الدُّلْجةِ » رواه البخاري .
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহর দীন সহজ। যে ব্যক্তি এ দীনকে কঠিন করেছে তার উপর তা চেপে বসেছে। অতএব তোমরা সোজা পথে চল। মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর সকাল, সন্ধ্যায় ও শেষ রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। [সহিহ বোখারি]
আমরা সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস সম্বন্ধে জানি, তিনি সারা দিন রোজা রাখতেন ও সারা রাত ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন,
« أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيْلَ ؟ » قلت : بلَى يَا رسول اللَّهِ . قال : « فَلا تَفْعل : صُمْ وأَفْطرْ ، ونَمْ وقُمْ فَإِنَّ لجَسَدكَ علَيْكَ حقًّا ، وإِنَّ لعيْنَيْكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لزَوْجِكَ علَيْكَ حَقًّا ، وَإِنَّ لزَوْركَ عَلَيْكَ حَقًّا ، وإِنَّ بحَسْبكَ أَنْ تَصْومَ فِي كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أَيَّامٍ ، فَإِنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنةٍ عشْرَ أَمْثَالِهَا ، فَإِذن ذلك صِيَامُ الدَّهْرِ» فشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ ، قُلْتُ : يا رسول اللَّه إِنّي أَجِدُ قُوَّةً، قال : « صُمْ صِيَامَ نَبِيِّ اللَّهِ داوُدَ وَلا تَزدْ عَلَيْهِ» قلت : وما كَان صِيَامُ داودَ؟ قال : « نِصْفُ الدهْرِ » فَكَان عَبْدُ اللَّهِ يقول بعْد مَا كَبِر : يالَيْتَنِي قَبِلْتُ رُخْصةَ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم .
আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে, তুমি নাকি দিনভর রোজা রাখ আর রাতভর ইবাদতে ব্যস্ত থাক? আমি বললাম, হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ। তখন নবীজী বললেন, তুমি এমনটি করবে না। রোজা রাখবে ও ছেড়ে দিবে। অনুরূপ ঘুমাবে ও জেগে ইবাদত করবে। কারণ তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার দুই চোখের হক আছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে, তোমার উপর তোমার স্বাক্ষাতপ্রার্থীদের হক আছে। তোমার জন্য বরং মাসে তিন দিনের রোজাই যথেষ্ট। কারণ একটি নেক আমলের বিনিময়ে তোমাকে দশগুণ সাওয়াব দেয়া হবে। আর তখন এটা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য হবে। কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম আর আমার জন্য তা কঠিন করে দেওয়া হল। আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আরও সামর্থ রাখি। তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহর নবী দাউদ-এর মত রোজা রাখ। এর বেশি করতে যেও না। আমি বললাম দাউদ আ.-এর রোজা কেমন ছিল? তিনি বললেন, অর্ধ বছর। বৃদ্ধ বয়সে আব্দুল্লাহ বিন আমর আফসুস করে বলতেন, হায়! আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া ছাড় গ্রহণ করতাম। [ বোখারি ও মুসলিম]
সুতরাং, ইবাদত নিজ সামর্থ অনুযায়ীই করা দরকার। ইবাদতের হক আদায় করে নিজের মনের প্রফুল্লতা বজায় রেখে যতটুকুন করা যায় ততটুকুনই উত্তম। এর বাইরেরটা বাড়াবাড়ি, যা কখনোই শরিয়ত কারো কাছ থেকে চায় না। ইবাদতে বাড়াবাড়ি এক সময় বান্দাকে ইবাদতের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ ও বিরক্ত করে তুলে।
বাড়াবাড়ির মত বিদআত-খোরাফাতকেও সর্বাত্মকভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। শরিয়ত যার নির্দেশ ও অনুমোদন দেয়নি তা পালন করার মাঝে ক্ষতি ছাড়া কোনোই কল্যাণ নেই। আহলে কিতাবদেরকে আল্লাহ তাআলা এজন্য তিরস্কার করেছেন এই বলে,
(আরবি)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারাই বৈরাগ্যবাদের প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের উপর লিপিবদ্ধ করে দেইনি। তারপর তাও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। [সূরা হাদিদ:২৭]
সুতরাং ইবাদতের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি যেমন পরিত্যাজ্য অনুরূপ নব প্রবর্তন-বিদআতও, তাতে বান্দা বিরক্ত ও ইবাদতের প্রতি অনাসক্ত হয়ে যায়, এক সময় ইবাদতই ত্যাগ করে বসে। তাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ইবাদত হচ্ছে সেটি যা বান্দা নিয়মিতভাবে আদায় করে পরিমাণে কম হলেও। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إن أحب الأعمال إلى الله ما داوم صاحبه عليه وإن قل . إخرجه البخاري ومسلم عن عائشة رضي الله عنها .
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল বান্দা যেটি নিয়মিতভাবে পালন করে, পরিমাণে কম হলেও। [বোখারি ও মুসলিম]
সুতরাং একদিন অনেক আর বাকি দিন মোটেও না, এরচেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য ও উত্তম হলো প্রতিদিন কিছু কিছু করা। ইবাদত তো অনেক, তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত নিজ নিজ সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিদিনই নিজ রবের ইবাদতে মশগুল থাকা। যেহেতু আনুগত্যই আল্লাহর চাহিদা তাই এই আনুগত্যের বহি:প্রকাশ প্রতিদিনই হবে সেটিই বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
নিশ্চয় যারা বলে, আল্লাহই আমাদের রব, অত:পর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে নাজিল হয় (এবং বলে) তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল। আমরা দুনিয়ার জীবনে তোমাদের বন্ধু এবং আখিরাতেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে তোমাদের জন্য আরো থাকবে যা তোমরা দাবি করবে। পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়নস্বরূপ। [সূরা ফুসসিলাত: ৩০-৩২]
আল্লাহ তাআলার উবুদিয়ত তথা দাসত্ব প্রতিটি বান্দার অবশ্য করণীয়। এ দাসত্ব বান্দার মর্যাদার নিদর্শন, সম্মানের মুকুট। বরং পৃথিবীর সকল অর্জন ও সামগ্রীর মধ্যে সবচে মূল্যবান অর্জন এটি। একজন মানুষ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে পারে কিন্তু মর্যাদার বিচারে বান্দার সব বৈশিষ্ট্য উবুদিয়তের বৈশিষ্ট্যের কাছে একেবারে গৌণ। তাই তো আমরা দেখতে পাই পৃথিবীর সর্বাধিক সম্মানিত ও সফল ব্যক্তিত্ব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন সম্বোধন করা হল তখন এই উবুদিয়তের গুণ উল্লেখ করেই করা হলো। এটি স্পষ্ট প্রমাণ যে বান্দার সকল অর্জনের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ অর্জন হলো উবুদিয়তের অর্জন। ইসরা ও মিরাজ যেটি রাসূলুল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হবার অন্যতম অনুষঙ্গ, সেই মাহেন্দ্রক্ষণের বর্ণনার সময়ও পবিত্র কোরআনে আবদিয়তের গুণটি উল্লেখিত হয়েছে, ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশেপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [ সূরা আল ইসরা:১]
পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর অন্যতম দান ও শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত। সেই নেয়ামত প্রদানের জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্বাচন করেছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখের সময়ও তিনি আবদিয়তের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, মনে হচ্ছে তাঁর এই গুণটিই আল্লাহর নিকট এই মহা নেয়ামত পাওয়ার জন্য উপযুক্ত গুণ। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
তিনি বরকতময় যিনি তাঁর বান্দার উপর ফোরকান নাজিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে। [সূরা আল-ফোরকান : ১]
রাতে নিদ্রা ত্যাগ করে মহান আল্লাহর সমীপে নিজেকে নিবেদন করা বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মহানবীর সেই বৈশিষ্ট্য বর্ণনার সময়ও আবদিয়তের বিষয়টি সম্মুখে আনা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
আর নিশ্চয় আল্লাহর বান্দা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়াল, তখন তারা ( কাফেররা) তার নিকট ভিড় জমাল। [ সূরা জিন : ১৯]
এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনলে অতি সহজে হৃদয়ঙ্গম করা যায় যে, উবুদিয়ত বান্দার সম্মানের মুকুট, শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। তাই সকল কথায় ও কাজে মহান আল্লাহর দাসত্বকে ধারণ করে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির রাস্তায় অগ্রসর হওয়া উচিত। এতেই রয়েছে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও শান্তি। যারা বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনের মাধ্যমে মহানবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উলুহিয়্যাতের মর্যাদায় উন্নীত করে তাঁকে যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছে এবং তার সঠিক মূল্যায়ন করছে বলে দাবি করছে তারা বাস্তবিক পক্ষেই এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন গুণ বিষয়ে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁকে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানজনক অভিধায় সম্ভাষণ করেছেন, আর তা উবুদিয়ত তথা দাসত্বের সম্ভাষণ।
ومما زادني شرفا وعزا وكدت بأخمصي أطأ الثريا
دخولي تحت قولك يا عبادي وأن صيرت أحمد لي نبيا
মর্যাদার শীর্ষচূড়া ছাড়িয়ে আমি,
যেন সুরাইয়া সেতারা
পদতলে মোর।
পেয়েছি খুঁজে নিজেকে আমি
তব সম্বোধন-ইয়া ইবাদি-র
অভ্যন্তর,
ক্ষুদ্র আমি আরও গর্বিত আজি
পেয়ারা আহমাদকে পাঠিয়েছো
বানিয়ে আমার পয়গম্বর ।
(আরবি)
পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশেপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। [ সূরা আল ইসরা:১]
পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর অন্যতম দান ও শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত। সেই নেয়ামত প্রদানের জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্বাচন করেছেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখের সময়ও তিনি আবদিয়তের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, মনে হচ্ছে তাঁর এই গুণটিই আল্লাহর নিকট এই মহা নেয়ামত পাওয়ার জন্য উপযুক্ত গুণ। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
তিনি বরকতময় যিনি তাঁর বান্দার উপর ফোরকান নাজিল করেছেন যেন সে জগতবাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে। [সূরা আল-ফোরকান : ১]
রাতে নিদ্রা ত্যাগ করে মহান আল্লাহর সমীপে নিজেকে নিবেদন করা বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মহানবীর সেই বৈশিষ্ট্য বর্ণনার সময়ও আবদিয়তের বিষয়টি সম্মুখে আনা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
আর নিশ্চয় আল্লাহর বান্দা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়াল, তখন তারা ( কাফেররা) তার নিকট ভিড় জমাল। [ সূরা জিন : ১৯]
এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনলে অতি সহজে হৃদয়ঙ্গম করা যায় যে, উবুদিয়ত বান্দার সম্মানের মুকুট, শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন। তাই সকল কথায় ও কাজে মহান আল্লাহর দাসত্বকে ধারণ করে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির রাস্তায় অগ্রসর হওয়া উচিত। এতেই রয়েছে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও শান্তি। যারা বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনের মাধ্যমে মহানবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উলুহিয়্যাতের মর্যাদায় উন্নীত করে তাঁকে যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছে এবং তার সঠিক মূল্যায়ন করছে বলে দাবি করছে তারা বাস্তবিক পক্ষেই এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক মর্যাদা সম্পন্ন গুণ বিষয়ে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁকে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানজনক অভিধায় সম্ভাষণ করেছেন, আর তা উবুদিয়ত তথা দাসত্বের সম্ভাষণ।
ومما زادني شرفا وعزا وكدت بأخمصي أطأ الثريا
دخولي تحت قولك يا عبادي وأن صيرت أحمد لي نبيا
মর্যাদার শীর্ষচূড়া ছাড়িয়ে আমি,
যেন সুরাইয়া সেতারা
পদতলে মোর।
পেয়েছি খুঁজে নিজেকে আমি
তব সম্বোধন-ইয়া ইবাদি-র
অভ্যন্তর,
ক্ষুদ্র আমি আরও গর্বিত আজি
পেয়ারা আহমাদকে পাঠিয়েছো
বানিয়ে আমার পয়গম্বর ।
ইবাদত, মহান আল্লাহর অন্যতম নিয়ামত। কেবল বঞ্চিতরাই এ সত্য অনুভব করতে ব্যর্থ হয়েছে। আপনি ভোগবাদিদের জিজ্ঞেস করুন, যারা এ পৃথিবীর যাবতীয় স্বাদ-মজা আস্বাদন করেছে, কি আস্বাদন করল। যারা বিলাস বহুল গাড়ীতে চলাফেরা করেছে, কি চড়ল। যারা রকমারী পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করেছে, কি পরিধান করল। তারা দুনিয়ার বিলাস সামগ্রীর সব কিছু উপভোগ করেছে, কিন্তু...
মহান আল্লাহর ভাষায়,
(আরবি)
কিন্তু যারা কুফুরি করে তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং তারা আহার করে যেমন চতুষ্পদ জন্তুরা আহার করে। আর জাহান্নামই তাদের বাসস্থান। [সূরা মুহাম্মাদ:১২]
এরপর কি? যদি ঈমানের মাধ্যমে মনের বিষন্নতা দূর করতেই ব্যর্থ হল। আল্লাহর আনুগত্য-দাসত্ব ও তাঁর প্রতি ঈমান ও অগাধ বিশ্বাসের মাধ্যমে নিজেকে মর্যাদার সুউচ্চ আসনে সমাসীন করতেই না পারল। যদি দৈনন্দিন পাঁচ বার সালাতের মাধ্যমে তাঁর সাথে সম্পর্ক নিবিড় থেকে নিবিড়তর করে লাভবান হতে না পারল। যদি এসবের মাধ্যমে নিজের জীবনকে কাজে লাগাতে না পারল তাহলে এর অর্থ হল, সে তার মূল জীবনকেই হত্যা করল। ঈমান আর আকিদার জীবনই তো মূল জীবন। অর্থবহ জীবন। চিন্তার জীবন।
ঈমান ভিন্ন আবার মানুষ কে? আকিদা ছাড়া আবার মানবতা কি? আল্লাহর ইবাদত ছাড়া মনুষত্ব কি? চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, ভোগ-বিলাসিতায় আচ্ছন্ন মানুষের তুলনায় আখিরাত মুখি জীবনবোধ সম্পন্ন-ইবাদতগুজার ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে বেশি সুস্থ। অধিক সুখি। আর মান-মর্যাদার বিবেচনায় তো বলতেই নেই। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
إنا كنا أذل قوم فأعزنا الله بالإسلام، فمهما نطلب العز بغير ما أعزنا الله أذلنا الله .
আমরা ছিলাম সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জাতি, ইসলামের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট জাতিতে পরিণত করেছেন। সুতরাং যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন তাকে বাদ দিয়ে যখনই আমরা অন্য কোথাও খুঁজতে যাব আল্লাহ আমাদের বেইজ্জত করে দেবেন।
সুতরাং ইজ্জত রয়েছে ইসলামের মধ্যে। মর্যাদা, সম্মান ও মানব জীবনের স্বার্থকতা হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশের কাছে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার মধ্যে। প্রকৃত মানুষ তারাই যারা নিজ মালিকের প্রভুত্বকে বরণ করে নিয়েছে সানন্দচিত্তে, তাঁর দাসত্বকে গ্রহণ করেছে গর্বের সাথে। তারাই প্রকৃত স্বাধীন, তারাই সম্মানী, তারাই মর্যাদাবান আর তারাই প্রকৃত জীবনবোধ সম্পন্ন সফল মানুষ। আল্লাহ আমাদেরকে এই প্রকৃতির উপর স্থির থাকার তাওফিক দান করুন।
মহান আল্লাহর ভাষায়,
(আরবি)
কিন্তু যারা কুফুরি করে তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং তারা আহার করে যেমন চতুষ্পদ জন্তুরা আহার করে। আর জাহান্নামই তাদের বাসস্থান। [সূরা মুহাম্মাদ:১২]
এরপর কি? যদি ঈমানের মাধ্যমে মনের বিষন্নতা দূর করতেই ব্যর্থ হল। আল্লাহর আনুগত্য-দাসত্ব ও তাঁর প্রতি ঈমান ও অগাধ বিশ্বাসের মাধ্যমে নিজেকে মর্যাদার সুউচ্চ আসনে সমাসীন করতেই না পারল। যদি দৈনন্দিন পাঁচ বার সালাতের মাধ্যমে তাঁর সাথে সম্পর্ক নিবিড় থেকে নিবিড়তর করে লাভবান হতে না পারল। যদি এসবের মাধ্যমে নিজের জীবনকে কাজে লাগাতে না পারল তাহলে এর অর্থ হল, সে তার মূল জীবনকেই হত্যা করল। ঈমান আর আকিদার জীবনই তো মূল জীবন। অর্থবহ জীবন। চিন্তার জীবন।
ঈমান ভিন্ন আবার মানুষ কে? আকিদা ছাড়া আবার মানবতা কি? আল্লাহর ইবাদত ছাড়া মনুষত্ব কি? চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, ভোগ-বিলাসিতায় আচ্ছন্ন মানুষের তুলনায় আখিরাত মুখি জীবনবোধ সম্পন্ন-ইবাদতগুজার ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে বেশি সুস্থ। অধিক সুখি। আর মান-মর্যাদার বিবেচনায় তো বলতেই নেই। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
إنا كنا أذل قوم فأعزنا الله بالإسلام، فمهما نطلب العز بغير ما أعزنا الله أذلنا الله .
আমরা ছিলাম সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জাতি, ইসলামের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট জাতিতে পরিণত করেছেন। সুতরাং যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে মর্যাদাবান করেছেন তাকে বাদ দিয়ে যখনই আমরা অন্য কোথাও খুঁজতে যাব আল্লাহ আমাদের বেইজ্জত করে দেবেন।
সুতরাং ইজ্জত রয়েছে ইসলামের মধ্যে। মর্যাদা, সম্মান ও মানব জীবনের স্বার্থকতা হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশের কাছে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার মধ্যে। প্রকৃত মানুষ তারাই যারা নিজ মালিকের প্রভুত্বকে বরণ করে নিয়েছে সানন্দচিত্তে, তাঁর দাসত্বকে গ্রহণ করেছে গর্বের সাথে। তারাই প্রকৃত স্বাধীন, তারাই সম্মানী, তারাই মর্যাদাবান আর তারাই প্রকৃত জীবনবোধ সম্পন্ন সফল মানুষ। আল্লাহ আমাদেরকে এই প্রকৃতির উপর স্থির থাকার তাওফিক দান করুন।
ইবাদয় বিষয়ক আলোচনা থেকে আশাকরি আমরা এর মর্ম সম্বন্ধে মোটামুটি ধারণা পেয়েছি যে, জীবনের সার্বিক পর্বে আল্লাহর রেজামন্দি ও সন্তুষ্টির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ-অনুকরণে যাবতীয় কার্যাদি পরিচালনা করাই হচ্ছে ইবাদত। এক কথায় জীবন পরিচলানায় আল্লাহ তাআলার দাসত্বকে বরণ করে নেয়ার নামই ইবাদত। সুতরাং ইবাদত কেবলমাত্র কিছু নিয়মতান্ত্রিক ও আনুষ্ঠানিক বিষয়াদির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং জীবনের প্রতিটি পর্ব ও অনুষঙ্গের সাথে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই কোনো নিয়মতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতার সাথে তাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা ইবাদত সম্বন্ধে অজ্ঞানতারই বহি:প্রকাশ। অতীব পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইবাদতের এই মর্ম বুঝতে ভুল করেছে এবং এর সঠিক জ্ঞান থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। এসব লোকদের তিনভাগে ভাগ করা যায়।
এক.
এরা ইবাদতকে আংশিকভাবে বুঝেছে। ইবাদত সম্বন্ধে তাদের বুঝ অসম্পূর্ণ। তাদের মতে ইবাদত আল্লাহ প্রদত্ত কতিপয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর বাইরে কোনো ইবাদত নেই। যেমন সালাত, সওম, হজ্জ, জাকাত ইত্যাদি। সুতরাং এসব কাজে আল্লাহর দাসত্ব চলবে অন্যসব কাজে বান্দা মুক্ত-স্বাধীন। এসব লোক মসজিদে তো আল্লাহর ইবাদতকারী। তাঁর বিধানকে মান্যকারী। কিন্তু মসজিদ হতে বের হলেই সুদ, জিনা ব্যভিচার, মদ্যপান ইত্যাদি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। কাজের সাথী-সঙ্গী, অধীনস্থ কর্মচারিদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তাদের স্ত্রী-সন্তানরা বেপর্দায় ঘুরে বেড়ায়। এরা মসজিদে আল্লাহর সাথে একরকম চেহারায় অবতীর্ণ হয় আর মসজিদের বাইরে আল্লাহ ও মানুষের সাথে মিলিত হয় ভিন্ন চেহারায়। সূরা বাকারায় বর্ণিত রোজা সংক্রান্ত আল্লাহর নিম্নোক্ত বিধান তো বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে... [সূরা বাকারা:১৮৩] কিন্তু একই সূরায়, একই আঙ্গিকে বর্ণিত কিসাস সংক্রান্ত বিধান অমান্য করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
মুমিনগণ, তোমাদের উপর কিসাস ফরজ করা হয়েছে... [সূরা বাকারা:১৭৮]
সূরা মায়েদায় বর্ণিত ওজু ও সালাত সংক্রান্ত নির্দেশ তো পালন করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। [সূরা মায়েদা:৬]
কিন্তু একই সূরা বর্ণিত বিচার ও শাসন সংক্রান্ত বিধান অমান্য করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
আর যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান মতে ফয়সালা করে না, তারাই কাফের। [সূরা মায়েদা:৪৪]
এইটি ইবাদত সম্বন্ধে অসম্পূর্ণ বুঝ। ভুল ধারণা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
(আরবি)
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন। [সূরা বাকারা: ৮৫]
এটি ইবাদত সম্বন্ধে একটি অন্যায় ও ভ্রান্ত ধারণা।
দুই.
এরা ইবাদত আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিমিত্তে সম্পাদন করে। গাইরুল্লাহর বিধানের আনুগত্য করে। গাইরুল্লাহর নামে জবেহ করে। গাইরুল্লাহর নামে শপথ করে। গাইরুল্লাহর সম্মানার্থে বাইতুল্লাহ ব্যতীত অন্য ঘরের তাওয়াফ করে। গাইরুল্লাহর নামে মানত করে। গাইরুল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। বিপদ ও রোগ মুক্তির জন্য গাইরুল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। তাদের সাহায্য প্রার্থনা করে। নিজ প্রয়োজন ও আরাধনা গাইরুল্লাহর প্রতি ন্যস্ত করে। গাইরুল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে। পৃথিবীর রাজা-বাদশা ও মানুষের প্রতি আকাশ-জমিনের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর চেয়েও বেশি আস্থা পোষণ করে। তাদের কেউ কেউ বলে,
إذا تعاسرت الأمور فعليكم بأصحاب القبور .
উপায় যদি নাই দেখ, কবর ওয়ালার দামান ধর।
আবার এমন কথাও কেউ কেউ বলে, আমরা আব্দুল কাদের জিলানির উরশ করি, যিনি জলে-স্থলে সবার ডাকে সাড়া দেন। অথচ মহান আল্লাহ বলছেন,
(আরবি)
বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহ্বানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন আর তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। [সূরা নমল:৬২]
সুতরাং জলে-স্থলে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির আহ্বানে সাড়াদানকারী আল্লাহর সাথে আর কোনো ইলাহ আছে কি? মহান আল্লাহ বলছেন,
(আরবি)
আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোনো কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা আনআম:১৭]
তিন.
এদের অবস্থা হল, এরা ইবাদত আল্লাহর উদ্দেশ্যেই সম্পাদন করে। তাঁর সন্তুষ্টিই তাদের কামনা। এদের ইখলাসে কোনো ত্রুটি নেই। কিন্তু ইবাদতটি সম্পাদন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিদ পদ্ধতি ভিন্ন অন্য পদ্ধতিতে। রাসূল অনুসৃত পন্থা ভিন্ন অন্য পন্থায়। তাদের ইবাদতও প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহর কাছে এসব ইবাদতের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নাই। কোনোভাবে তা কবুল করা হবে না। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। [সূরা কাহফ:১১০]
সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد .
যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যাগ করা হবে।
সুতরাং যেই ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত দীনের উপর কিছু বাড়ালো, তাঁর দেওয়া বিধানের সাথে নিজের পক্ষ থেকে সংযোজন করল সে কি ইবাদত ও দাসত্বের পরিপূর্ণ হক আদায় করল? দাসত্বে নিজের পক্ষ থেকে সংযোজন-বিয়োজনের চিন্তা করা যায়? তাহলে তা কবুল হবার আশা করা যায় কিভাবে?
এমনিকরে যারা লেন-দেন, আচার-আচরণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে, যাদের কাজ-কর্ম নাজায়েজ পদ্ধতি হতে মুক্ত ও নিরাপদ নয়, যারা মানুষকে ধোকা দেয়, তাদের উপর জুলুম করে, তারা কি দাসত্ব ও ইবাদতের হক আদায় করতে পারল?
যারা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিল, এর বিলাস সামগ্রী দ্বারা প্রতারিত হল, ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করল তারা কি দাসত্বের দায়িত্ব পুরোপুরি আদায় করতে পারল? এসব কিছু কেয়ামতের দিন তাদের আফসুস ও অনুতাপের কারণ হবে। যেদিন রাজাধিরাজ মহান আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হবে আর তিনি বিলাস সামগ্রী ও মাল-সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবেন, কোথা হতে তা উপার্জন করেছ এবং কোথায় ব্যয় করেছ? যারা আল্লাহর অবাধ্যতায়, অন্যায়-অনৈতিক কাজে সময় ব্যয় করেছে এবং নিজের জীবন শেষ করেছে খেলাধুলা ও রং তামাশায় তারা কি দাসত্বে হক আদায় করল? যেসব মূল্যবান সময় এসব অহেতুক কাজে ব্যয় করল এ সময়গুলোর ইবাদতের অংশ কোথায় ? আল্লাহ তাদেরকে জীবন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবেন কি কাজে তা শেষ করেছ, আরো জিজ্ঞেস করবেন তাদের ব্যয়িত সময় সম্বন্ধে, সে বিষয়টি কি তারা ভুলে গেছে ? এরা এবং এদের মত যারা তারা আল্লাহর ইবাদত ত্যাগ করেছে। আর নিজ প্রবৃত্তি ও শয়তানের দাসত্ব গ্রহণ করেছে। আল্লাহ তাআলা শয়তান ও প্রবৃত্তি পুজা থেকে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নি:সন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদত কর। এটিই সরল পথ। [সূরা ইয়াসিন:৬০-৬১]
(আরবি)
তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং তিনি তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তার চোখের উপর স্থাপন করেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে তাকে হেদায়াত করবে? তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [সূরা আল জাসিয়া: ২৩]
এক.
এরা ইবাদতকে আংশিকভাবে বুঝেছে। ইবাদত সম্বন্ধে তাদের বুঝ অসম্পূর্ণ। তাদের মতে ইবাদত আল্লাহ প্রদত্ত কতিপয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর বাইরে কোনো ইবাদত নেই। যেমন সালাত, সওম, হজ্জ, জাকাত ইত্যাদি। সুতরাং এসব কাজে আল্লাহর দাসত্ব চলবে অন্যসব কাজে বান্দা মুক্ত-স্বাধীন। এসব লোক মসজিদে তো আল্লাহর ইবাদতকারী। তাঁর বিধানকে মান্যকারী। কিন্তু মসজিদ হতে বের হলেই সুদ, জিনা ব্যভিচার, মদ্যপান ইত্যাদি অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। কাজের সাথী-সঙ্গী, অধীনস্থ কর্মচারিদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তাদের স্ত্রী-সন্তানরা বেপর্দায় ঘুরে বেড়ায়। এরা মসজিদে আল্লাহর সাথে একরকম চেহারায় অবতীর্ণ হয় আর মসজিদের বাইরে আল্লাহ ও মানুষের সাথে মিলিত হয় ভিন্ন চেহারায়। সূরা বাকারায় বর্ণিত রোজা সংক্রান্ত আল্লাহর নিম্নোক্ত বিধান তো বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে... [সূরা বাকারা:১৮৩] কিন্তু একই সূরায়, একই আঙ্গিকে বর্ণিত কিসাস সংক্রান্ত বিধান অমান্য করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
মুমিনগণ, তোমাদের উপর কিসাস ফরজ করা হয়েছে... [সূরা বাকারা:১৭৮]
সূরা মায়েদায় বর্ণিত ওজু ও সালাত সংক্রান্ত নির্দেশ তো পালন করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। [সূরা মায়েদা:৬]
কিন্তু একই সূরা বর্ণিত বিচার ও শাসন সংক্রান্ত বিধান অমান্য করে। আল্লাহ বলেন,
(আরবি)
আর যারা আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান মতে ফয়সালা করে না, তারাই কাফের। [সূরা মায়েদা:৪৪]
এইটি ইবাদত সম্বন্ধে অসম্পূর্ণ বুঝ। ভুল ধারণা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
(আরবি)
তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন। [সূরা বাকারা: ৮৫]
এটি ইবাদত সম্বন্ধে একটি অন্যায় ও ভ্রান্ত ধারণা।
দুই.
এরা ইবাদত আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিমিত্তে সম্পাদন করে। গাইরুল্লাহর বিধানের আনুগত্য করে। গাইরুল্লাহর নামে জবেহ করে। গাইরুল্লাহর নামে শপথ করে। গাইরুল্লাহর সম্মানার্থে বাইতুল্লাহ ব্যতীত অন্য ঘরের তাওয়াফ করে। গাইরুল্লাহর নামে মানত করে। গাইরুল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। বিপদ ও রোগ মুক্তির জন্য গাইরুল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। তাদের সাহায্য প্রার্থনা করে। নিজ প্রয়োজন ও আরাধনা গাইরুল্লাহর প্রতি ন্যস্ত করে। গাইরুল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে। পৃথিবীর রাজা-বাদশা ও মানুষের প্রতি আকাশ-জমিনের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর চেয়েও বেশি আস্থা পোষণ করে। তাদের কেউ কেউ বলে,
إذا تعاسرت الأمور فعليكم بأصحاب القبور .
উপায় যদি নাই দেখ, কবর ওয়ালার দামান ধর।
আবার এমন কথাও কেউ কেউ বলে, আমরা আব্দুল কাদের জিলানির উরশ করি, যিনি জলে-স্থলে সবার ডাকে সাড়া দেন। অথচ মহান আল্লাহ বলছেন,
(আরবি)
বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহ্বানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন আর তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে? তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক। [সূরা নমল:৬২]
সুতরাং জলে-স্থলে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির আহ্বানে সাড়াদানকারী আল্লাহর সাথে আর কোনো ইলাহ আছে কি? মহান আল্লাহ বলছেন,
(আরবি)
আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোনো কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা আনআম:১৭]
তিন.
এদের অবস্থা হল, এরা ইবাদত আল্লাহর উদ্দেশ্যেই সম্পাদন করে। তাঁর সন্তুষ্টিই তাদের কামনা। এদের ইখলাসে কোনো ত্রুটি নেই। কিন্তু ইবাদতটি সম্পাদন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিদ পদ্ধতি ভিন্ন অন্য পদ্ধতিতে। রাসূল অনুসৃত পন্থা ভিন্ন অন্য পন্থায়। তাদের ইবাদতও প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহর কাছে এসব ইবাদতের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নাই। কোনোভাবে তা কবুল করা হবে না। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে। [সূরা কাহফ:১১০]
সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد .
যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যাগ করা হবে।
সুতরাং যেই ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত দীনের উপর কিছু বাড়ালো, তাঁর দেওয়া বিধানের সাথে নিজের পক্ষ থেকে সংযোজন করল সে কি ইবাদত ও দাসত্বের পরিপূর্ণ হক আদায় করল? দাসত্বে নিজের পক্ষ থেকে সংযোজন-বিয়োজনের চিন্তা করা যায়? তাহলে তা কবুল হবার আশা করা যায় কিভাবে?
এমনিকরে যারা লেন-দেন, আচার-আচরণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে, যাদের কাজ-কর্ম নাজায়েজ পদ্ধতি হতে মুক্ত ও নিরাপদ নয়, যারা মানুষকে ধোকা দেয়, তাদের উপর জুলুম করে, তারা কি দাসত্ব ও ইবাদতের হক আদায় করতে পারল?
যারা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিল, এর বিলাস সামগ্রী দ্বারা প্রতারিত হল, ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করল তারা কি দাসত্বের দায়িত্ব পুরোপুরি আদায় করতে পারল? এসব কিছু কেয়ামতের দিন তাদের আফসুস ও অনুতাপের কারণ হবে। যেদিন রাজাধিরাজ মহান আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হবে আর তিনি বিলাস সামগ্রী ও মাল-সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবেন, কোথা হতে তা উপার্জন করেছ এবং কোথায় ব্যয় করেছ? যারা আল্লাহর অবাধ্যতায়, অন্যায়-অনৈতিক কাজে সময় ব্যয় করেছে এবং নিজের জীবন শেষ করেছে খেলাধুলা ও রং তামাশায় তারা কি দাসত্বে হক আদায় করল? যেসব মূল্যবান সময় এসব অহেতুক কাজে ব্যয় করল এ সময়গুলোর ইবাদতের অংশ কোথায় ? আল্লাহ তাদেরকে জীবন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করবেন কি কাজে তা শেষ করেছ, আরো জিজ্ঞেস করবেন তাদের ব্যয়িত সময় সম্বন্ধে, সে বিষয়টি কি তারা ভুলে গেছে ? এরা এবং এদের মত যারা তারা আল্লাহর ইবাদত ত্যাগ করেছে। আর নিজ প্রবৃত্তি ও শয়তানের দাসত্ব গ্রহণ করেছে। আল্লাহ তাআলা শয়তান ও প্রবৃত্তি পুজা থেকে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নি:সন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদত কর। এটিই সরল পথ। [সূরা ইয়াসিন:৬০-৬১]
(আরবি)
তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং তিনি তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। আর তার চোখের উপর স্থাপন করেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পর কে তাকে হেদায়াত করবে? তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [সূরা আল জাসিয়া: ২৩]
প্রিয় বন্ধুগণ, বান্দা তার রবের ইবাদত করবে, তবে কত দিন? তার শেষ সীমানা কোথায় ? এই প্রশ্নের জবাব মহান রব নিজেই দিচ্ছেন, বলছেন,
(আরবি)
আর ইয়াকিন (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর। [সূরা হিজর: ৯৯]
এই আয়াত সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে মানুষের স্বীয় রবের ইবাদত ও কর্তব্য পালন কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। ইবাদত ও দায়িত্ব সম্পাদন এবং আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। একমাত্র মৃত্যুই এই দায়িত্ব পালনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। এছাড়া আর কিছুতে এ থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর মৃত্যু হল সেই তিক্ত বাস্তবতা যা কোনো প্রকৃতিই সানন্দে গ্রহণ করতে চায় না। তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন না করে কোনো প্রাণিরই গত্যন্তর নেই। এইটি এমন এক বাস্তবাতা যা মহান আল্লাহ সকলের জন্য অবধারিত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
(আরবি)
প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [আনকাবুত:৫৭]
আয়াতে বর্ণিত ইয়াকিন অর্থ মৃত্যু। প্রাজ্ঞ মুফাসসির বৃন্দ এমন মতামতই ব্যক্ত করেছেন। সহিহ বোখারিতে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবি উসমান বিন মাজউন রা. এর মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
أما هو فقد أتاه اليقين، ولكني أرجو الله له الخير .
আর সে, তার তো ইয়াকিন এসে গিয়েছে। তবে আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করছি। ইয়াকিন দ্বারা হাদিসে মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে, বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট। ইমাম বোখারি রহ. এখানে ইয়াকিন শব্দটি মৃত্যু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে মর্মে বিপুল সংখ্যক সাহাবি ও তাবিয়িদের মতামত উদ্ধৃত করেছেন। যেমন কাতাদাহ, হাসান বসরি, ইকরিমা, মুজাহিদ, সালিম প্রমুখ।
আল-কোরআনেও এমনটিই বর্ণিত হয়েছে, ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করতাম না। আর আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সাথে (বেহুদা আলাপে) মগ্ন থাকতাম। আর আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে। [সূরা মুদ্দাসসির:৪২-৪৭]
মহান আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা, হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে তোমার প্রকৃত দাস হিসাবে গ্রহণ করে নাও। জীবনের প্রতিটি লমহা তোমার দাসত্বে অতিবাহিত করার তাওফিক দান কর। কিয়ামত দিবসে তোমার নির্বাচিত দাসদের সাথে আমাদের হাশর করে দিও।
{বইটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত একটি খোতবার ভাবানুবাদ}
সমাপ্ত
(আরবি)
আর ইয়াকিন (মৃত্যু) আসা পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর। [সূরা হিজর: ৯৯]
এই আয়াত সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে মানুষের স্বীয় রবের ইবাদত ও কর্তব্য পালন কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। ইবাদত ও দায়িত্ব সম্পাদন এবং আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। একমাত্র মৃত্যুই এই দায়িত্ব পালনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। এছাড়া আর কিছুতে এ থেকে বিরত থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর মৃত্যু হল সেই তিক্ত বাস্তবতা যা কোনো প্রকৃতিই সানন্দে গ্রহণ করতে চায় না। তবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন না করে কোনো প্রাণিরই গত্যন্তর নেই। এইটি এমন এক বাস্তবাতা যা মহান আল্লাহ সকলের জন্য অবধারিত করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
(আরবি)
প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [আনকাবুত:৫৭]
আয়াতে বর্ণিত ইয়াকিন অর্থ মৃত্যু। প্রাজ্ঞ মুফাসসির বৃন্দ এমন মতামতই ব্যক্ত করেছেন। সহিহ বোখারিতে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবি উসমান বিন মাজউন রা. এর মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
أما هو فقد أتاه اليقين، ولكني أرجو الله له الخير .
আর সে, তার তো ইয়াকিন এসে গিয়েছে। তবে আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করছি। ইয়াকিন দ্বারা হাদিসে মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে, বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট। ইমাম বোখারি রহ. এখানে ইয়াকিন শব্দটি মৃত্যু অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে মর্মে বিপুল সংখ্যক সাহাবি ও তাবিয়িদের মতামত উদ্ধৃত করেছেন। যেমন কাতাদাহ, হাসান বসরি, ইকরিমা, মুজাহিদ, সালিম প্রমুখ।
আল-কোরআনেও এমনটিই বর্ণিত হয়েছে, ইরশাদ হচ্ছে,
(আরবি)
কিসে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা সালাত আদায়কারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করতাম না। আর আমরা অনর্থক আলাপকারীদের সাথে (বেহুদা আলাপে) মগ্ন থাকতাম। আর আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। অবশেষে আমাদের কাছে মৃত্যু আগমন করে। [সূরা মুদ্দাসসির:৪২-৪৭]
মহান আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা, হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে তোমার প্রকৃত দাস হিসাবে গ্রহণ করে নাও। জীবনের প্রতিটি লমহা তোমার দাসত্বে অতিবাহিত করার তাওফিক দান কর। কিয়ামত দিবসে তোমার নির্বাচিত দাসদের সাথে আমাদের হাশর করে দিও।
{বইটি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহিত একটি খোতবার ভাবানুবাদ}
সমাপ্ত
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন