HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামে ইবাদাত

লেখকঃ কামাল উদ্দিন মোল্লা

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ইসলামে ইবাদাত

লেখক : কামাল উদ্দিন মোল্লা

সম্পাদনা : নুমান বিন আবুল বাশার

জ্বীন-ইনসান সৃষ্টির তাৎপর্য
আল্লাহ তাআলা বাতিল বা নিরর্থক বিষয় থেকে পবিত্র। আল্লাহ বলেন-

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ ﴿ الحجر : 85

আমি নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা আছে তা তাৎপর্যহীন সৃষ্টি করিনি।

আল্লাহ বলেন-

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلًا ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ ﴿ ص :27﴾

আমি আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী কোন কিছু অযথা সৃষ্টি করিনি। এটা কাফেরদের ধারণা। অতএব কাফেরদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ অর্থাৎ জাহান্নাম।

এজন্য আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি জ্বীন-ইনসানকে নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ বলেন—

أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ ﴿المؤمنون :115﴾

‘তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?

বরং আল্লাহ তাআলা তাদের সৃষ্টি করেছেন মহৎ লক্ষ্যে ও বিরাট তাৎপর্যের উদ্দেশ্যে। যা প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তাআলা তার বাণীতে বলেছেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ﴿56﴾ مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ ﴿57﴾ إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ ﴿الذاريات : 56-58

‘আমার ইবাদাতের জন্যই আমি মানব ও জ্বীন জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে। আল্লাহ তাআলাইতো জীবিকা দাতা শক্তির আধার,পরাক্রান্ত।’

আল্লাহ তাআলা বলেন —

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿البقرة :21

‘হে মানব সমাজ তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর। যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পারবে।’

ইবাদতের অর্থ
ইবাদতের আভিধানিক অর্থ: অনুগত হওয়া, নত হওয়া, অনুসরণকরা। পারিভাষিক অর্থ: ঐ সকল কাজ যা আল্লাহ পছন্দ করেন ও খুশি হন। তা প্রকাশ্যে করা হোক কিংবা গোপনে, কথায় কিংবা কাজে।

প্রকাশ্য কথা : যেমন: কালেমা উচ্চারণ করা, দোয়া, যিকির, ইস্তেগফার ইত্যাদি।

গোপনীয় কথা : আত্মার সত্যায়ন ও যে সব বিষয় আত্মার স্বীকৃতি প্রয়োজন সে সব বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করা। যেমন আল্লাহর প্রতি ঈমান, ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান, আসমানি কিতাবসমূহের উপর ঈমান, রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, শেষ দিবস ও তাক্বদীরের ভালোমন্দের উপর ঈমান আনায়ন করা।

প্রকাশ্য কাজ : যেমন: সালাত কায়েম করা এবং যাকাত আদায় করা, হজ্ব এবং জিহাদ করা, অত্যাচারীতের সাহায্য করা ইত্যাদি।

গোপনীয় কাজ : ইখলাস, মুহাববত, ভীতি, আশা-ভরসা, তাওবা এবং বিনয় ইত্যাদি।

আল কোরআনে ইবাদতঃ
আল-কোরআনে ইবাদত দুইটি অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

العبودية العامة সাধারণ দাসত্ব: অর্থাৎ আল্লাহর রাজত্ব ও বড়ত্বের দাসত্ব। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন—

إِنْ كُلُّ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا آَتِي الرَّحْمَنِ عَبْدًا ﴿ مريم : 93﴾

‘নভোমন্ডলে এবং ভূমন্ডলে এমন কেউ নেই যে দয়াময় আল্লাহর কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না।’

এ আয়াতের আলোকে সৃষ্টিজগতের নেককার, পাপী, মুমিন, কাফের সকলেই আল্লাহর দাস। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, তারা অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহ দাসত্ব করে। তবে এর মধ্যে বেশীর ভাগ হবে মুশরিক। যেমন আল্লাহ বলেন,-—

وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ ﴿ يوسف :106

‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।’

আল্লাহ বলেন,

وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ ﴿ يوسف :103﴾

‘তুমি যতই চাওনা কেন অধিকাংশ মানুষই ঈমান স্থাপনকারী নয়।

العبودية الخاصة বিশেষ ইবাদত বা ইচ্ছাধীন ইবাদত : ইখতিয়ার বা ইচ্ছাধীন,আনুগত্য এবং মুহাববত । যে ইবাদত মানুষ নিজের ইচ্ছায় সম্পাদন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا ﴿ الفرقان :63﴾

‘রাহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে ‘সালাম’।’

আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَبَشِّرْ عِبَادِ الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ﴿18﴾ الزمر : 17-18

‘অতএব সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদেরকে যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অত:পর যা উত্তম তার অনুসরণ করে।’

এ প্রকার বন্দেগীতে মুমিনগণ অন্তর্ভুক্ত। কোন কাফির এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।

সাধারণ ইবাদত এবং বিশেষ ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নিম্নরূপ:
সাধারণ ইবাদত (ইবাদতে আম্মাহ) এর মাঝে সকল সৃষ্টিজগত অর্ন্তভূক্ত। আর বিশেষ ইবাদত (ইবাদতে খাচ্ছাহ) এর মধ্যে শুধুমাত্র ঈমানদারগণ অর্ন্তভূক্ত হবে। অতএব মুমিনরা কাফিরদের সাথে সাধারণ বন্দেগীতেও অর্ন্তভূক্ত। ইবাদতে খাচ্ছাহ এর মাঝে মুমিনরা কাফির থেকে পৃথক।

সাধারণ ইবাদতে সকলেই অর্ন্তভূক্ত। কেউই তার বাহিরে নয়। আর ইবাদতে খাচ্ছাহ ইচ্ছাধীন, স্বাধীন।

কিয়ামতে শাস্তি এবং পুরষ্কার হবে ইবাদতে খাচ্ছাহর উপর। কারণ ইবাদতের মধ্যে এটাই হচ্ছে উদ্দেশ্য। এ জন্য আমরা দেখি সাধারণ ইবাদত (উবুদিয়্যাতে আম্মাহ) কাউকে ঈমানের মধ্যে প্রবেশ করাতে পারে না। আবার কাউকে কুফুর থেকেও বাহির করতে পারে না।

ইবাদতের ভিত্তি হচ্ছে আনুগত্য :
অর্থাৎ ইবাদতের মধ্যে আসল হচ্ছে আনুগত্য। এর মানে হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং তার রাসূলের সুন্নতে যে বিষয় প্রমাণিত নয় তা ইবাদত হিসাবে মনে করা কোন মাখলূকের জন্য বৈধ নয়। প্রমাণ: নবী (সা:) বলেন: من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد . ( صحيح البخاري :2499 ‘যে ব্যক্তি কোন কাজ করল অথচ ঐ কাজে আমার কোন অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখাত।’

অন্য বর্ণনায় এসেছে নবী কারীম সা. বলেন: যে ব্যক্তি আমার শরীয়তে কোন নতুন আবিষ্কার করল, যা শরীয়ত সমর্থন করে না, তা প্রত্যাখ্যাত।

এজন্য আমরা দেখতে পাই এক দল সাহাবীদের কাজকে রাসূল সা. প্রত্যাখ্যান করেছেন । যারা রাসূল সা. এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর নিজেদের ইবাদতকে খুবই কম মনে করল। আর বলল, যার পূর্বাপর সকল গুনাহ মাফ তিনি এতো ইবাদত করেন? একজন বলে উঠল, আমি আজীবন পুরো রাত নামাজ পড়ব। অপর জন বলল, আমি সারা বছর রোজা পালন করব, কখনো রোজা ছাড়ব না। অন্যজন বলল, আমি বিবাহ করবো না। চিরকুমার থাকব। অত:পর নবীজী আসলেন এবং বললেন, তোমরা এ ধরণের কথা বলছিলে? আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের চেয়ে অনেক বেশী আল্লাহকে ভয় করি। অথচ রোজা রাখি, রোজা ত্যাগ করি, নামাজ আদায় করি, নিদ্রা যাই, বিবাহ করি। (এসবই আমার আদর্শ) অতএব যে আমার আদর্শের বিপরিত করে সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য নয়।

এতে আমরা বুঝতে পারি যে, তারা কতবড় বিপদের মধ্যে আছে, যারা ঐ সকল ইবাদতে জড়িত যা নবী সা. করেন নাই। যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে এবং নবী সা. এর অনুসরণ করে। যদিও তারা মনে করে থাকে তাদের ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। মূলত: আল্লাহর কাছে এ ধরণের ইবাদতের কোন মূল্য নেই। বরং নবী সা. এর শরীয়তের বিরুদ্ধাচারণ করার কারণে এটা তাদের জন্য শাস্তির কারণ হবে।

ব্যাপক অর্থে ইবাদত

মানব সৃষ্টির তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহ ভীতি অর্জন করা। এটা ঠিক নয় পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, বছরের নির্দিষ্ট দিনে রোজা পালন, জান-মাল পবিত্র করার জন্য সম্পদের সামান্য জাকাত প্রদান, সারা জীবনে একবার হজ্ব পালনের মধ্যে ইবাদতকে সীমাবদ্ধ। এগুলো অবশ্যই বড় ইবাদতের মধ্যে গণ্য। কিন্তু এ কথা সত্য, উল্লেখিত ইবাদতগুলো পালনে একজন মানুষের জীবনের খুব কম সময়ই ব্যয় হয়। কোন বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষ কি এটা মেনে নিবে? যে, সে তার জীবনের বেশীর ভাগ সময় আল্লাহর ইবাদত ছাড়াই অতিবাহিত করবে ? অথচ সে জানে যে, আল্লাহ তাকে ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।

অনেক মানুষ এমন আছেন যারা ইবাদতকে ইসলামের আনুষ্ঠানিক কতিপয় কাজ মনে করে, শুধুমাত্র আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের বিষয় বলে ধারণা করে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে। এমন দাবী যারা পোষন করেন কুরআনুল কারীম তাদের এ দৃষ্টিভংগিকে বাতিল দাবী বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ ﴿ النحل :89﴾

‘আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাজিল করেছি, যেটি এমন যে, তাতে প্রত্যেক বস্ত্তর সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।’

এমনিভাবে আল্লাহর নবীর জন্য যে দিকনির্দেশনা আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন, তাতে ইবাদতে ব্যাপকতাকে আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ﴿162﴾ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ ﴿163﴾ الأنعام

‘আপনি বলুন, আমার সালাত, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তার কোন শরীক, আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি, আর আত্নসমর্পনকারীদের মধ্যে আমি হলাম প্রথম।’

ইসলামের ইমাম ও বিদ্বানগন যুগে যুগে ইসলামী শরয়ীয়তে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তাতেও প্রমাণ হয় যে ইবাদত সীমিত গন্ডির কোন বিষয় অথবা আনুষ্ঠানিক বস্ত্ত নয়। প্রখ্যাত সাহাবী আবু জর আল গিফারী রা. এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রাসূল সকল বিষয় আমাদেরকে শিক্ষা দান করেছেন। এমনকি আকাশে উড়ন্ত পাখীর দুটি ডানা কিভাবে নড়াচড়া করে তার গুঢ় রহস্য কি, তাও আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

জীবনের বাকে বাকে প্রয়োজনীয় সকল বিষয় ওলামায়ে কেরাম ইসলামী শরীয়তের দিক নির্দেশনা দিয়েও প্রমাণ করেছেন যে ইবাদত সীমিত গন্ডির মধ্যে অথবা আনুষ্ঠানিক বস্ত্ত নয়।

ইবাদতের ব্যাপকতা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর বিস্তৃতি ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানী ব্যক্তিও তা জানেন। এমনকি এ সম্পর্কে অমুসলিম লোকও সাক্ষী দিয়েছে। জনৈক ব্যক্তি সালমান ফারসী রা. কে বললেন, তোমাদেরকে তোমাদের নবী সব বিষয়ে জ্ঞান দিয়েছেন। এমনকি কিভাবে পেশাব, পায়খানা করবে তাও। সালমান রা. জবাব দিলেন, হ্যাঁ, নবী সা. আমাদের নিষেধ করেছেন.কেবলামুখী হয়ে পেশাব- পায়খানা করতে, তিনটি হতে কম ঢিলা ব্যবহার করতে, ডান হাত দিয়ে ইস্তেঞ্জা করতে, হাড্ডি অথবা শুকনা গোবর দিয়ে ইস্তেঞ্জা করতে।

ইবাদতের মৌলিক ভিত্তিসমূহ:
ইবাদতের তিনটি রুকন বা ভিত্তি আছে। যা ছাড়া ইবাদত সঠিক হয় না।

পূর্ণাঙ্গ আল্লাহর মহববত:
আল্লাহর মুহাববত হচ্ছে ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি। যে ভিত্তির উপর ইসলাম ধর্মে ইবাদত প্রতিষ্ঠিত হয় তা হলো আল্লাহর মুহাববত। পাখীর সাথে তার মাথার যে সম্পর্ক, ইবাদতের সাথে আল্লাহর মুহববতের সে রকমই সম্পর্ক। অতএব যে পাখীর মাথা নেই সেই পাখীর প্রাণ নেই। যে ইবাদতে আল্লাহর মুহাববত নেই সেই ইবাদতের অস্তিত্ব নেই।

মুহাববত দ্বারা বিদআতীদের মিথ্যা মুহাববত, দার্শনিকদের কাল্পনিক মুহাববত অথবা সূফীদের মুহাববতের দাবী উদ্দেশ্য নয়। বরং যে মুহাববতে বিনয়ী এবং আল্লাহর মহত্ব ও তাঁর আনুগত্য প্রকাশ পায় তা হল সত্যিকার মুহাববত। বান্দা তার প্রেমাষ্পদের জন্য উৎসর্গ হতে সদা প্রস্ত্তত থাকবে। যা আল্লাহর পছন্দ তা তারও পছন্দ। যা আল্লার অপছন্দ তা তারও অপছন্দ। আল্লাহর আদেশসমূহ সে বাস্তবায়ন করে এবং নিষেধগুলো বর্জন করে। আল্লাহর প্রিয়জনকে বন্ধু বলে মনে করে। আর শত্রুকে শত্রু বলে মনে করে। আর কোন বস্ত্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির করণ তা জানার একমাত্র পথ হলো রাসূলের পথ অনুসরণ করা। এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেছেন

إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّه ( ال عمران : 31)

‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন।’

মুখে ভালোবাসার দাবি, অন্তরে তীব্র পিপাসা আ,, কিন্তু কুরআনুল কারীম এবং হাদীসে রাসূলে যা এসেছে, তার অনুসরণ থেকে দূরে থাকলে কিয়ামত দিবসে ঐ ভালোবাসা তার কোন উপকারে আসবে না। এটা হবে ভালবাসার নামে আল্লাহর সাথে মিথ্যা এবং প্রতারণা মাত্র।

আল্লামা ইবনুল কাসীর রহ. বলেন, এ আয়াত ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফয়সালাকারী যে দাবী করে আল্লাহর মুহাববতের, অথচ সে মুহাম্মাদ সা. এর সুন্নাহ অনুসরণ করে না। তার দাবীতে সে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত হবে। যতক্ষণ না সে শরীয়তে মুহাম্মদীর এবং নবী সা. এর অনুসরণে সকল কথা ও কাজ না করবে। যেমন বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে, রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের শরীয়ত অনুমোদিত নয় এমন কাজ করল, তা প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালোবাসেন। অর্থাৎ এর দ্বারা তোমরা যা চাও, তার চেয়ে বড়টা তোমাদের অর্জন হবে। তা হলো তোমরা আল্লাহকে নয়, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন। হাসান বসরী রহ. বলেন, কতিপয় লোক দাবী করে তারা আল্লাহকে ভালবাসে। এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করেছেন। বলেছেন, যদি আল্লাহর ভালোবাসা চাও রাসূলকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।

আশা করা
মানুষ রাসুলের অনুসরণ করে আল্লাহর জন্য যে সব ইবাদত করবে, তাতে সে আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা করবে। আল্লাহ বিশাল দান ও অগণিত অনুগ্রহে সে আনন্দিত হবে। এ অনুগ্রহ ও নেয়ামতসমূহের জন্যও সে আল্লাহর রহমত কামনা করবে। আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ آَمَنُوا وَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَةَ اللَّهِ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴿ البقرة :218﴾

‘এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে, আর আল্লাহর পথে জেহাদ করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুনাময়।’

আল্লাহ তাআলা বলেন,

مَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ اللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ اللَّهِ لَآَتٍ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ﴿ العنكبوت :5﴾

‘যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে (সে জেনে রাখুক) আল্লাহর সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’

যখন বান্দা কো্ন গুনাহ করে বসে পাপাচারে সীমা লঙ্ঘণ করে, তাকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হবে না এবং আল্লাহর ক্ষমা হতে হতাশ হতে পারে না। বরং তাকে দ্রুত তাওবা করতে হবে, গুনাহ হতে আল্লাহর নিকট মুক্তির আশায়। আল্লাহ বলেন-

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿ الزمر : 53﴾

‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,

أنا عند ظن عبدي بي فليظن بي ما شاء ( سنن الدارمى : 2615)

‘আমি আমার বান্দার ধারণামত হয়ে থাকি। অতএব সে আমাকে যেমন চায় ধারণা করুক।’

বান্দার জন্য উচিত আল্লাহর রহমত, সাওয়াব এবং ক্ষমা কামনার সাথে সাথে শরীয়ত মত আমল করা, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধকে বাস্তবে রূপ দানে সাধনা করা। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿الكهف :110

‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।’

কারণ আমল ছাড়া বড় বড় আশা করা ধোকাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়।

আশা তিন প্রকার

তন্মধ্যে দুইটি প্রশংসনীয়। অপরটি নিন্দনীয়। প্রথমটি হল : আল্লাহর দিক নির্দেশনা মত আল্লাহর আনুগত্যকারী ব্যক্তির আশা। আল্লাহর ক্ষমা, অনুগ্রহ, দয়া, মর্যাদার আশাবাদী হওয়া।

দ্বিতীয়টি হল: কোন গুনাহের পর তাওবাকারী ব্যক্তির আশা। সেও আল্লাহর ক্ষমা ,অনুগ্রহ, দয়া, মর্যাদার আশাবাদী হবে। এই দুইটি আশা প্রশংসনীয়।

তৃতীয়টি হল : গুনাহ পাপাচারে ডুবে থাকা ব্যক্তির আশা। সে আশা করে আমি যা করছি আল্লাহ তা ক্ষমা করে দিবেন। সে কোন কাজ ব্যতীত আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। এটা আল্লাহর সাথে প্রতারণার শামিল এবং অবাস্তব বাসনা মাত্র। এ প্রকারের আশা নিন্দনীয়।

১০
আল্লাহর ভয়
আল্লাহকে ভয় করা প্রত্যেকের উপর ফরজ। আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا ذَلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ . ﴿ ال عمران :175﴾

‘নিশ্চয়ই এরাই সে শয়তান শুধুমাত্র তার বন্ধুদের থেকে তোমাদের ভয় দেখায়। কিন্তু যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক তবে তাদের ভয় করো না আমাকেই ভয় কর।’

আল্লাহর বাণী : إِيَّايَ فَارْهَبُونِ ﴿البقرة :40﴾.

‘আমাকেই ভয় কর।’

আল্লাহ বলেন—

إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ ﴿57﴾ وَالَّذِينَ هُمْ بِآَيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ ﴿58﴾ وَالَّذِينَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ ﴿59﴾ وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آَتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ ﴿60﴾ أُولَئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ ﴿61 ا﴾ المؤمنون

‘নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত। যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে। যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করেনা। এবং যারা যা দান করবার তা দান করে ভীত কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে যে তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে। তারাই দ্রুত কল্যাণ অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।’

আম্মাজান আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ তাআলার বর্ণনা

وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آَتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ . . . .

‘এবং যারা যা দান করবার তা দান করে ভীত কম্পিত হৃদয়ে ... এ আয়াত কি যে ব্যভিচার, মদ্যপান এবং ও চুরি করে তার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে? নবী সা. বললেন, হে সিদ্দীকের কন্যা! না ঐ ব্যক্তির জন্য অবতীর্ণ হয়নি। বরং ঐ ব্যক্তির জন্য অবতীর্ণ হয়েছে যে রোজা পালন করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, আর এই ভয়ে থাকে যে, যদি আমার এ আমলসমূহ কবুল না হয়। হাসান বসরী রহ. এ সম্পর্কে বলেন: তারা আনুগত্য এবং বিনয়ের সাথেই আল্লাহর ইবাদত করেছে, তার পর ও তাদের মাঝে ভীতি কাজ করে যে, কবুল না হলে তো শাস্তি পেতে হবে।

মুমিনদের মধ্যে বিরাজ করে কল্যাণ এবং ভীতি। আর মুনাফিকদের মধ্যে বিরাজ করে খারাবী এবং বাসনা।

ইসলামী শরীয়ত বান্দার নিকট ঐ ভীতি কামনা করে যা তার মধ্যে এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্ত্তসমূহ লঙ্ঘন করার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কারণ এ সীমা ছাড়িয়ে গেলে আল্লাহর রহমত হতে নৈরাশ্য এবং হতাশা জন্ম নিতে পারে। আর আল্লাহ থেকে নিরাশ বা হতাশ হওয়া কাফিরদের বৈশিষ্ট্য। কারণ এতে আল্লাহর উপর খারাপ ধারণা জন্ম হয়।

১১
আশা এবং ভীতির মাঝামাঝি অবস্থান
বান্দার জন্য অবশ্যই করনীয় হচ্ছে আশা এবং ভীতির মধ্যে অবস্থান করা। শুধু আশাহীন ভীতির মধ্যে থাকাই নিরাশা এবং হতাশা। আল্লাহ বলেন,

إِنَّهُ لَا يَيْئَسُ مِنْ رَوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ . ﴿يوسف :87

‘নিশ্চয় আল্লাহর রহমত হতে কাফের সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেউ হতাশ হয় না।’

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:—

وَمَنْ يَقْنَطُ مِنْ رَحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ . ﴿الحجر :56

‘পালনকর্তার রহমত হতে পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয়?’

আল্লাহ ভীতি ছাড়া শুধু তার রহমতের আশা হচ্ছে, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করা যা আত্মপ্রবঞ্চনা মাত্র। আল্লাহ তাআলা বলেন—

أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ ﴿الأعراف :99

‘আল্লাহ তাআলার পাকড়াও হতে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে।’

এ জাতীয় বিশুদ্ধ অনেক বর্ণনা এসেছে যাতে বান্দাদের আশা এবং আল্লাহ-ভীতি উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করে চলার জন্য আহবান করা হয়েছে। এবং আল্লাহ তাআলা তাদের প্রশংসা করেছেন, যারা উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য করে চলে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا ﴿ ألإسراء :57﴾

‘তারা যাদেরকে আহবান করে তারাইতো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে তাদের মধ্যে কে কত নিকট হতে পারে এবং তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে; তোমার প্রতিপালকের শাস্তি ভয়াবহ।’

আল্লাহ তাআলা বলেন—

أَمْ مَنْ هُوَ قَانِتٌ آَنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآَخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ ﴿الزمر :9﴾

‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সেজদার মাধ্যমে অথবা দাড়িয়ে ইবাদত করে পরকালের ভয় রাখে এবং তার পালন কর্তার রহমত প্রত্যাশা করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন—

تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا . ﴿ألسجدة :16

‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে ভয় ও আশায়। ভয়ে।’

বান্দা যখন আশা এবং ভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করবে, তখন তার উচিত তার মনের অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখা। যখন আল্লাহ তাআলার ভয় প্রবল হয়ে উঠে এবং তার রহমত হতে নিরাশ হয়। যেমন রোগ হলে এবং গোনাহ করলে তখন তার কাজ হলো উভয়ের মাঝে তুলনা করা এবং ভয়ের প্রবলতা কমানো। আর যখন আশার দিকটা প্রবল হয়ে উঠে এবং আল্লাহ তাআলার পাকড়াওকে পরোয়া করে না। যেমন, সুস্থতা, এবং ইবাদত বন্দেগী করার পর তখনো সে উভয়ের মাঝে তুলনা করবে এবং আশার প্রবলতা কাটিয়ে উঠবে। যদি আল্লাহ তাআলার রহমত হতে নিরাশ হওয়ার অথবা আল্লাহর পাকড়াও থেকে উদাসীন হবার ভয় না হয়, তবেই উভয়ের মাঝে তার সমতা হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে।

এই তিনটি রুকুনের মান নির্ণয় হয় মানুষের আত্মা থেকে:

মানষের হৃদয় আল্লাহ তাআলার প্রকৃতিতে পাখীর মত। মুহাববত তার মাথা, আশা এবং ভয় তার দুইটি ডানা, যখন মাথা এবং ডানাদুটি ভালো থাকবে, পাখীর উড্ডয়নও ভালো থাকবে। মাথা কেটে ফেলা হলে পাখীর মৃত্যু ঘটবে। আর দুটি ডানা নষ্ট হলে পাখিটি শিকারীর লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত হবে। বান্দার উচিত এই তিনটি রুকুন সম্মিলিতভাবে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে প্রতিফলন ঘটানো। একটা বা দুইটার প্রতিফলন বাকিটা বর্জন বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলার এক প্রিয় বান্দা বলেছেন: ‘যে শূধু মাত্র আল্লাহ তাআলার মুহাববতেই বন্দেগী করে সে হলো জিন্দিক বা নাস্তিক; যে শুধু মাত্র আল্লাহ তাআলার আশার মধ্যে বন্দেগী করে সে হলো মুরজী, যে শুধু মাত্র আল্লাহ তাআলার ভীতির মধ্যে বন্দেগী করে সে হলো হারুরী; যে আল্লাহ তাআলার বন্দেগী করে মুহাববত, আশা এবং ভীতির মধ্যে থেকে, সে হলো একত্ববাদে বিশ্বাসী ঈমানদার। আল্লাহ তাআলার ভয় ছাড়া মুহাববত সামান্য কিছু পাপ থেকে বাঁচাতে পারে। আশাহীন বন্দেগী মিথ্যা দাবি মাত্র। এই জন্য যারা ভয় পোষণ করে না, শুধু মুহাববতের দাবী করে তারা বেপরোয়া গোনাহে জড়িয়ে পড়ে। যেমন ইয়াহুদী সম্প্রদায়। তারা বলে:

نحن أبناء الله و أحبائه .

‘আমরাই আল্লাহ তাআলার প্রিয় সন্তান। তার প্রিয় জন।’ অথচ পাপাচার কাজে সারা পৃথিবীর শীর্ষে তারা। এজন্য আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় নবী সা. কে বললেন: তাদের বলতে,

فَلِمَ يُعَذِّبُكُمْ بِذُنُوبِكُمْ ( المائدة : 18)

‘তাহলে তোমাদের পাপাচারের জন্য তিনি তোমাদের শাস্তি দিবেন কেন ?

এমনিভাবে শুধু মাত্র আশা করার মধ্যে শিথিলতার জন্ম দেয়। এক পর্যায়ে সে আল্লাহ তাআলার কৌশলকে আল্লাহর পক্ষে তার জন্য আশ্রয় মনে করে এবং পাপাচার ও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়।

এমনিভাবে শুধু মাত্র ভীতি বান্দাকে নিরাশ এবং হতাশার দিকে নিয়ে যায়, এবং আল্লাহ তাআলার ব্যাপারে ভুল ধারণা জন্ম দেয়। অতএব বান্দা তার ইবাদত-বন্দেগীসহ সকল কাজে আল্লাহ তাআলার মুহাববত, আশা, ভীতির সম্মিলন ঘটাবে এবং এটাই তাওহীদ, এটাই ঈমান।

১২
ইবাদত কবুলের শর্তসমূহ
ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত আছে। এশর্তগুলো ছাড়া ইবাদতের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। যদি দুইটি অনুপস্থিত থাকে তবে ইবাদত শুদ্ধ হয় না।

এশর্ত গুলো নিম্নরূপ:

الصدق فى العزيمة : সংকল্পে সততা। সততা দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য বান্দা আল্লাহ তাআলার আদেশ বাস্তবায়নের এবং নিষিদ্ধ কাজ বর্জনে তার শক্তি-সামর্থ কাজে লাগাবে। আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাতের প্রস্ত্ততি নেয়া। আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অলসতা, দূর্বলতা ছেড়ে দেয়া। দৃঢ়ভাবে পরহেজগারীর লাগাম টেনে ধরতে হবে, যাতে হারাম কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآَتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآَتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ ﴿ البقرة : 177﴾

‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহ তাআলার উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেস্তাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রাসূলদের উপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে তারই মুহাববতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য। আর যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং যারা কৃত ওয়াদা রক্ষা করে এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকরে, তারাই হল সত্যাশ্রয়ী। আর তারাই হলো মুত্তাকী।

আর আল্লাহ তাআলা তার মুমিন বান্দাদের কথা এবং কাজে অমিলের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿2﴾ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ ﴿3 الصف

‘হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না তা বল কেন ? তোমরা যা করনা তা বলা আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই অসন্তোষজনক।’

সততা হলো ঈমানের মূল। ঈমানদাররা নিয়্যত, কাজ ও কথায় সত্যাবাদী হয়। যেমন মিথ্যা হলো নিফাকের মূল; মুনাফিকরা নিয়্যত, কাজ এবং কথায় মিথ্যাবাদী হয় । আল্লাহ তাআলা সত্যবাদীদের সততার জন্য পুরস্কৃত করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لِيَجْزِيَ اللَّهُ الصَّادِقِينَ بِصِدْقِهِمْ ﴿الأحزاب :24﴾

‘এটা এই জন্যে যাতে আল্লাহ তাআলা সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদীতার কারণে প্রতিদান দেন।’

মুনাফিকদের এ বলে ধমকি দেন যে, তাদেরকে জাহান্নামের সর্ব নিম্ন স্তরে রেখে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন—

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ ( النساء : 145)

‘নি:সন্দেহে মুনাফিকরা রয়েছে জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে।

আল্লাহ তাআলার জন্য ইখলাসঃ ইখলাস বা আন্তরিকতা বিষয় কোরআন ও হাদীসে অনেক বর্ণনা এসেছে। তন্মধ্যে—

وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ﴿ البينة :5﴾

‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাuঁট মনে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে।’

আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿110﴾

‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে, এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।’

আল্লাহ তাআলা তার নবীকে সম্বোধন করে বলেন,

قُلِ اللَّهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًا لَهُ دِينِي ﴿14﴾ فَاعْبُدُوا مَا شِئْتُمْ مِنْ دُونِهِ ( الزمر : 14-15)

‘বলুন, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করি। অতএব তোমরা তাঁর পরিবর্তে যার ইচ্ছা তার ইবাদত কর।’

আল্লাহ তাআলা বলেন—

إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ ﴿2﴾ أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ ﴿3﴾ الزمر

‘আমি আপনার নিকট এই কিতাব যথার্থরূপে নাযিল করেছি। অতএব আপনি একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত আল্লাহ তাআলারই নিমিত্তে।’

ওমর ইবনে খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন,

إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل إمرئ ما نوى، فمن كانت هجرته إلى الله ورسوله فهجرته إلى الله ورسوله، ومن كانت لدنيا يصيبها أو امرأة ينكحها فهجرته إلى ما هاجر إليه . ( صحيح البخاري :1)

‘নি:সন্দেহে যাবতীয় আমলের ফলাফল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেককে জন্য তার নিয়্যত অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া হবে। যার হিজরত আল্লাহ তাআলা এবং তার রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হবে, সে হিজরত আল্লাহ তাআলা এবং তার রাসূলের সন্তুষ্টি হিসেবেই গণ্য হয়। যার হিজরত দুনিয়া অর্জন অথবা কোন মহিলা বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হবে, সে যার উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে সে হিসেবেই গণ্য হবে।

আবু হোরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন,

إن الله تعالى لا ينظر إلى صوركم و أموالكم، ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم . ( صحيح مسلم : 4651)

‘আল্লাহ তাআলা কারো আকৃতি অথবা সম্পদের দিকে তাকান না। তবে তার কাজ এবং অন্তরের দিকে তাকান।’

আবু মুসা আল আশয়ারী রা. হতে বর্ণিত—

سئل رسول الله عن الرجل يقاتل شجاعة، ويقاتل حمية، ويقاتل رياء، أي ذلك في سبيل الله ؟ فقال : من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا، فهو في سبيل الله . ( صحيح البخاري : 6904)

তিনি বলেন রাসূল সা. কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ঐ সকল ব্যক্তি সর্ম্পকে যারা লড়াই করে বীরত্ব প্রকাশের জন্য, লড়াই করে অহমিকা প্রদর্শনের জন্য, লড়াই করে.লোক দেখানো ভাবনা নিয়ে। তাদের মধ্যে কে আল্লাহ তাআলা জন্য লড়াই করল ? রাসূল সা. বললেন, যে লড়াই করে আল্লাহ তাআলার কালেমা (বানী) উচু করার জন্য সেই আল্লাহ তাআলার পথে লড়াই করে।

প্রকৃত একনিষ্ঠতা হচ্ছে বান্দার বাসনা হবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি এবং পরকালে শান্তি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন—

وَمَا لِأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى ﴿19﴾ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَى ﴿20﴾ الليل

‘এবং তার প্রতি কারও অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়, বরং শুধু তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায়।’

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَنْ نُرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَدْحُورًا ﴿18﴾ وَمَنْ أَرَادَ الْآَخِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُورًا ﴿19﴾ الإ سراء

‘যে কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করে, আমি তাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি। পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করে দেই, তারা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। আর যারা ঈমান নিয়ে পরকাল কামনা করে এবং এর জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, তাদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।

আমল বিশুদ্ধ হবার জন্য প্রয়োজন সকল প্রকার মনের রোগ হতে অন্তরকে পরিষ্কার করা। যেমন অহংকার, ধোকা, গীবত ইত্যাদি। এমনিভাবে মানুষের মন্তব্য পর্যবেক্ষণের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার থেকেও নিজেকে পরিস্কার করা। মানুষের প্রশংসা অর্জন, অনিষ্ঠ থেকে রক্ষা পাওয়া তাদের খেদমত বা ভালবাসা অর্জন করার উদ্দেশ্য পরিহার করতে হবে। কারণ এই সবই হচ্ছে মাখলুকের নিকট মুখাপেক্ষী হওয়া। যা অবশ্যই শিরক। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

أنا أغنى الشركاء عن الشرك، من عمل عملا أشرك فيه غيري فهو للذي أشرك به وأنا منه بريئ . ( ابن ماجة : 4192)

‘আমি শিরককারীদের শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করল, এবং তাতে আমার সাথে কাউকে শরীক করল, তা হবে ঐ ব্যক্তির জন্য যার সাথে সে শরীক করল। আর আমি এ মুশরিক থেকে দায়মুক্ত।

ইবাদত: যেমন সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্ব, ত্বাওয়াফ, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি। এগুলো কবুল হওয়া এবং বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য ইখলাস শর্ত। আর যদি আদত বা অভ্যাসগত হয়, যেমন পানাহার, নিদ্রা, উপার্জনকরা ইত্যাদি। তাহলে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার জন্য ইখলাস শর্ত।

শরীয়ত সম্মত হওয়াঃ আমল কবুল হওয়ার জন্য রাসূল সা. এর অনুকরণ অনুসরণ প্রয়োজন। অতএব বান্দা ইবাদত করবে, রাসূল সা. ইসলামে যে আদেশ নিষেধ নিয়ে এসেছেন তারই আলোকে। আল্লাহ তাআলা বলেন—

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿ أل عمران : 85﴾

‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম খোজ করে, কম্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালেও সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত।’

রাসূল সা. বলেছেন, যে লোক আমাদের শরীয়তে নতুন কিছু অন্তর্ভূক্ত করল, তা প্রত্যাখাত। অতএব এই তিনটি শর্ত ছাড়া ইবাদতের কোন কাঠামো দাড় করানো সম্ভব নয়। নিয়্যত বা সংকল্পে সত্যাবাদী হওয়া ইবাদতের অস্তিত্বের জন্য শর্ত। আল্লাহ তাআলার জন্য ইখলাস এবং সুন্নাতের মোতাবেক হওয়া ইবাদত শুদ্ধ এবং কবুল হওয়ার জন্য শর্ত। অতএব কবুল ইবাদতের উপস্থিতি আশা করা যাবে, যদি ঐ তিনটি শর্ত একত্রে পাওয়া যায়। নিয়্যত একনিষ্ঠতা বা ইখলাস, সংকল্পে সত্যতা ছাড়া, ইবাদত কবুলের আশা করা নির্বুদ্ধিতা এবং বাসনা ছাড়া ছাড়া আর কিছু নয়। সংকল্পে সত্যতা, নিয়্যতের বিশুদ্ধতা ছাড়া ইখলাসের তারতম্যে ইবাদত ছোট অথবা বড় শিরকে পরিণত হয়ে যায়। ইবাদতের উদ্দেশ্য যদি গায়রুল্লাহ হয়, তাহলে তা হবে মোনাফেকী। ইবাদতের শেষে যদি রিয়া বা লোকদেখানো ভাবনা চলে আসে, আর তার শুরুতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পরকাল উদ্দেশ্য ছিল, তাহলেও ইবাদত প্রকারভেদে ছোট শিরক হয়ে যায়। নিয়্যতের বিশুদ্ধতা, সংকল্পে সত্যতা থাকারও পরও যদি আমল সুন্নত মোতাবিক না হয়, তা হলে তা হবে বিদআত এবং শরীয়তে নবআবিষ্কৃত-কুসংস্কার। যা ইসলামে নি:সন্দেহে প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ আমাদের সকলকে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করুন। কোন কাজ প্রকাশ পায় না দৃঢ় সংকল্প ছাড়া, আবার ইখলাস এবং সুন্নাতে রাসূলের অনুসরণ ছাড়া কাজটা কবুলও হয় না। এজন্য

قال القضيل بن عياض في قوله تعالي : ليبلوكم أيكم أحسن عملا : هوأخلصه وأصوبه، قالوا يا أبا علي : ما أخلصه وأصوبه؟ فقال : إن العمل إذاكان خالصا ولم يكن صوابا لم يقبل، وإذا كان صوابا ولم يكن خالصا لم يقبل، حتى يكون خالصا صوابا، والخالص أن يكون لله، والصواب أن يكون على السنة، ثم قرأ قوله تعالى : فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿الكهف :110

ফুদাইল বিন আয়াজ আল্লাহর বাণী ليبلوكم أيكم أحسن عملا অর্থঃ ‘যাতে তোমাদের পরীক্ষা করেন কে তোমাদের কর্মে শ্রেষ্ঠ।’ (আল- মুলক: ২) এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ : هوأخلصه وأصوبه তা একনিষ্ঠ ও সঠিক। তাকে প্রশ্ন করা হল এর দ্বারা আপনার উদ্দেশ্য কি? উত্তরে বললেন: আমলে ইখলাছ আছে কিন্তু সঠিক ভাবে আদায় হয় নাই তাহলে কবুল হবে না। আবার সঠিক ভাবে আদায় হচ্ছে কিন্তু এখলাছ নাই। তাহলেও কবুল হবে না। কবুল হওয়ার জন্য দুইটি বস্ত্ত প্রয়োজন ইখলাছ ও বিশুদ্ধতা, ইখলাছ মানে হচ্ছে ইবাদত হবে আল্লাহর জন্য। আর বিশুদ্ধতা মানে হচ্ছে ইবাদত হবে রাসুল সা. এর সুন্নাত অনুযায়ী। অতঃপর তিনি আল্লাহর বাণী পাঠ করেন। যার অর্থঃ ‘যে তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের আশা করে সে যেন বিশুদ্ধ আমল করে এবং তার প্রভুর এবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ সূরা : ক্বাহাফ: ১১০

১৩
এবাদতের প্রকার
উপরে উলেখিত বর্ণনা মতে এবাদত মানব জীবনের সকল দিককে আওতাভূক্ত করে। এবাদত পাঁচ প্রকারে প্রকাশিত হয়:

আত্মিক এবাদত :

এই এবাদত অন্য সকল ইবাদতের মূল, এতে ত্রুটি দেখা দিলে শিরকে আকবর অথবা শিরকে আছগরে প্রবেশের সম্ভাবনা বেশী থাকে। আত্মিক এবাদত এ জন্য বলা হয়, কারণ এটা আত্মার স্বীকৃত ও তার কাজ। আত্মিক এবাদতের মধ্যে বড় এবং মূল ইবাদত হচ্ছে এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তাআলাই এই জগতের প্রতিপালক। রাজত্ব তার জন্য, সৃষ্টি তার জন্য, কর্তৃত্ব তার জন্য, এবং এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুনাবলী রয়েছে। যে গুনাবলী সৌন্দর্য্যের, পরিপূর্ণতার, কর্তৃত্বের। এবং এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ একজন। তার কোন অংশীদার নাই। তিনিই উপাসনার যোগ্য তিনি ছাড়া অন্য কেহ উপাসনা পাবার যোগ্য নয়।

আত্মিক ইবাদতের মধ্যে রয়েছে ইখলাছ, মুহাববত, ভয়, আশা, তাওয়াক্কুল (ভরসা) ইত্যাদি।

কোন আত্মিক ইবাদতই আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য উৎসর্গ বৈধ নয়। সেটা প্রেরিত নবী, সম্মানিত ফেরেস্তা, আল্লাহর অলী, পাথর, গাছ, সূর্য্য, চন্দ্র, নেতা, কোন সংবিধান, দল, বা অন্য যে কোন কিছুর জন্য হোকনা কেন।

মৌখিক এবাদত:

মৌখিক ইবাদত এ জন্য বলা হয় কারণ তা মূখের কথা ও শব্দ দ্বারা আদায় হয়ে থাকে। এই মৌখিক ইবাদতের মধ্যে বড় ইবাদত হচ্ছে তাওহিদী কালেমার উচ্চারণ। যে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করে অথচ কোন বাধা না থাকা সত্বেও তাওহিদী কালেমা উচ্চারণ করে না, সে মুসলমান বলে গণ্য হবে না এবং মৌখিক স্বীকৃতীবিহীন ইসলাম তার জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিবে না। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—

أمرت أن أقاتل الناس حتى يقولوا لاإله إلا الله، فإذا قالوها وصلوا صلاتنا، واستقبلوا قبلتنا، وذبحوا ذبيحتنا، فقد حرمت علينا دماؤهم وأموالهم إلا بحقها، وحسابهم على الله تعالى . ( صحيح البخاري : 24)

‘আমি অদৃষ্ট হয়েছি মানুষের সাথে যুদ্ধ করার যতক্ষণ না তারা বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ যদি তারা লাইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে এবং নামায পড়ে আমাদের কেবলাকে কেবলা হিসাবে গ্রহণ করে। আমাদের পদ্ধতিতে পশু জবেহ করে, তাহলে তার প্রাণ ও সম্পদ আমাদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায় এই কালেমার স্বার্থে। অবশ্য তাদের (অন্তরের সত্যাসত্যের) ফায়সালা আল্লাহর হাতে।

যারা এই কালেমা উচ্চারণ করলো তবে অন্তরে বিশ্বাস করলনা, যেমন মুনাফিক। এ কালেমার উচ্চারণ তার প্রাণ ও সম্পদের নিরাপত্তা দিবে। কিন্তু তার চুরান্ত ফয়সালা আল্লাহর হাতে। মৌখিক ইবাদতের মধ্যে আরো আছে যিকির, দোয়া, আউজুবিল্লাহ বলা, বিসমিল্লাহ বলা, ইস্তেগফার করা ইত্যাদি।

শারিরিক ইবাদত :

এ সকল ইবাদতকে শারীরিক ইবাদত এ জন্য বলে যে, ইবাদতগুলো শরীরের মাধ্যমে আদায় হয়, শারীরিক এবাদতের মধ্যে রয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায, রোযা, তাওয়াফ, স্বশরীরে আল্লাহর পথে জিাহাদ।

আর্থিক ইবাদত:

এটা হল ঐ সকল ইবাদত যা শুধু সম্পদের মাধ্যমে আদায় হয়। যেমন যাকাত, ফিৎরা, আল্লাহর পথে দান ইত্যাদি।

আর্থিক ও শারিরিক ইবাদত:

যে সকল ইবাদত দৈহিক শ্রম ও সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যেমন হজ্ব, ওমরাহ পালন, জিহাদ ইত্যাদি।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন