HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
ইসলাম ভঙ্গের ১০টি কারণ
লেখকঃ মোহাম্মদ ইমাম হুসাইন কামরুল
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরামের উপর।
আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত আমাদের জীবন একেবারেই গুরুত্বহীন। কেননা ইসলাম না থাকাবস্থায় আমরা যত উত্তম আমলই করি না কেন আল্লাহ তা‘আলার কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর যে আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, সেটির প্রতিদান পাওয়াও সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদের উত্তম আমলসমূহের যথাযথ প্রতিদান পেতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের ইসলামকে ঠিক রাখা আবশ্যক। আর ইসলামকে ঠিক রাখতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে যে, কী কী কারণে ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা না রাখলে কারো পক্ষে ইসলামে টিকে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সমাজে ইসলামের আনুষাঙ্গিক অনেক বিষয়ে অতি গুরুত্বের সাথে আলোচনা-সমালোচনা ও শিক্ষা প্রদান করা হলেও এই বিষয়ে জানা এবং জানানোর ব্যাপারে তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। এমনকি প্রকাশনা জগতেও এ ব্যাপারে খুবই নাজুক অবস্থা। অনলাইনে বা অফলাইনে আরবি ভাষায় এ বিষয়ে বেশ কিছু রচনা পাওয়া গেলেও বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে তেমন বই-পুস্তক নেই বললেই চলে। যার কারণে দেখা যাচ্ছে, মানুষ এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত কেবল অজ্ঞতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। তারা কিছু আনুষ্ঠানিক আমল করার মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার দাবি করছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেসব প্রচেষ্টার ফলাফল বরাবরই নিষ্ফল প্রমাণিত হচ্ছে। তারা নিজেরাই ইসলাম ভঙ্গকারী কর্মের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে। অতএব বর্তমান মুসলিম সমাজের জন্য এসব বিষয়ে সতর্ক হওয়াটা বেশি জরুরি। মুসলিম জাতির এ দূরবস্থা থেকে দূর করার প্রচেষ্টাই হলো বইটি প্রণয়নের মূল লক্ষ্য।
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আলিমগণ মতামত পোষণ করেছেন যে, ১০টি কারণে যে কোন ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই আমরা এই বইটিতে উক্ত ১০টি বিষয় উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করে দিয়েছি। যাতে করে পাঠক অতি সহজেই এ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হন। আশা করা যায়, মুসলিম ভাই-বোনেরা এই বইটি পাঠ করে ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নেবেন এবং নিজেদের ঈমান ও ইসলামকে হেফাযত করার সুযোগ পাবেন- ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে বইটি প্রকাশনার কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন, আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাদের সকলের উত্তম বিনিময় কামনা করছি এবং এ দু‘আ করছি যে, আল্লাহ তা‘আলা যেন মুসলিম উম্মাহর হেদায়াতের জন্য এই বইটিকে অসীলা হিসেবে কবুল করে নেন এবং আমাদের সবাইকে পরকালীন আযাব থেকে মুক্তি দান করেন। আমীন
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
০১৯১২- ১৭ ৫৩ ৯৬
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরামের উপর।
আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইসলাম। ইসলাম ব্যতীত আমাদের জীবন একেবারেই গুরুত্বহীন। কেননা ইসলাম না থাকাবস্থায় আমরা যত উত্তম আমলই করি না কেন আল্লাহ তা‘আলার কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর যে আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, সেটির প্রতিদান পাওয়াও সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদের উত্তম আমলসমূহের যথাযথ প্রতিদান পেতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের ইসলামকে ঠিক রাখা আবশ্যক। আর ইসলামকে ঠিক রাখতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে যে, কী কী কারণে ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা না রাখলে কারো পক্ষে ইসলামে টিকে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সমাজে ইসলামের আনুষাঙ্গিক অনেক বিষয়ে অতি গুরুত্বের সাথে আলোচনা-সমালোচনা ও শিক্ষা প্রদান করা হলেও এই বিষয়ে জানা এবং জানানোর ব্যাপারে তেমন কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। এমনকি প্রকাশনা জগতেও এ ব্যাপারে খুবই নাজুক অবস্থা। অনলাইনে বা অফলাইনে আরবি ভাষায় এ বিষয়ে বেশ কিছু রচনা পাওয়া গেলেও বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে তেমন বই-পুস্তক নেই বললেই চলে। যার কারণে দেখা যাচ্ছে, মানুষ এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত কেবল অজ্ঞতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। তারা কিছু আনুষ্ঠানিক আমল করার মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার দাবি করছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেসব প্রচেষ্টার ফলাফল বরাবরই নিষ্ফল প্রমাণিত হচ্ছে। তারা নিজেরাই ইসলাম ভঙ্গকারী কর্মের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে। অতএব বর্তমান মুসলিম সমাজের জন্য এসব বিষয়ে সতর্ক হওয়াটা বেশি জরুরি। মুসলিম জাতির এ দূরবস্থা থেকে দূর করার প্রচেষ্টাই হলো বইটি প্রণয়নের মূল লক্ষ্য।
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আলিমগণ মতামত পোষণ করেছেন যে, ১০টি কারণে যে কোন ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যায়। তাই আমরা এই বইটিতে উক্ত ১০টি বিষয় উল্লেখ করার সাথে সাথে কুরআন ও হাদীসের আলোকে সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করে দিয়েছি। যাতে করে পাঠক অতি সহজেই এ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হন। আশা করা যায়, মুসলিম ভাই-বোনেরা এই বইটি পাঠ করে ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নেবেন এবং নিজেদের ঈমান ও ইসলামকে হেফাযত করার সুযোগ পাবেন- ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে বইটি প্রকাশনার কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন, আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাদের সকলের উত্তম বিনিময় কামনা করছি এবং এ দু‘আ করছি যে, আল্লাহ তা‘আলা যেন মুসলিম উম্মাহর হেদায়াতের জন্য এই বইটিকে অসীলা হিসেবে কবুল করে নেন এবং আমাদের সবাইকে পরকালীন আযাব থেকে মুক্তি দান করেন। আমীন
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
০১৯১২- ১৭ ৫৩ ৯৬
মানুষের দ্বারা সাধারণত অনেক সময় ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের পাপকর্ম সংঘটিত হয়ে থাকে। কিন্তু যে কোন পাপকর্মের মাধ্যমেই তার ইসলাম ভঙ্গ হয় না; এগুলোর মাধ্যমে সে ফাসিক হিসেবে গণ্য হয়, বান্দার গোনাহের পাল্লা ভারি হয় এবং এর কারণে সে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হয়। তবে কতিপয় পাপ রয়েছে, যা বান্দাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় এবং সে মুরতাদ হিসেবে গণ্য হয়। এরূপ বান্দা তাওবা করে পুনরায় ইসলামে ফিরে না আসলে পরকালে চিরস্থায়ী জাহান্নামের শাস্তির উপযুক্ত হবে। নিম্নে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
اَلنَّاقِضُ الْاَوَّلُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
اَلنَّاقِضُ الْاَوَّلُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করা অথবা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে সমকক্ষ দাঁড় করানো- চাই সেটা ইবাদাতের ক্ষেত্রে হোক অথবা প্রার্থনার ক্ষেত্রে অথবা ভয়-ভীতির ক্ষেত্রে অথবা ভালোবাসার ক্ষেত্রে অথবা আনুগত্যের ক্ষেত্রে অথবা অন্যান্য যে কোন ক্ষেত্রেই হোক না কেন। এ ক্ষেত্রে মূলনীতিটি হচ্ছে, যেসব বিষয় শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট, সেসব বিষয়ে তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করলে ব্যক্তির ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে এবং সে মুশরিক হিসেবে গণ্য হবে। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ﴾
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (ফলে) তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা– ৭২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤى اِثْمًا عَظِيْمًا﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করার গুনাহ (একনিষ্ঠ তাওবা ব্যতীত) ক্ষমা করেন না; তবে এটা ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে তো মহাপাপে জড়িয়ে মিথ্যা রচনা করল। (সূরা নিসা- ৪৮)
শিরক মূলত তিন প্রকার। যথা:
(ক) اَلشِّرْكُ فِى الرُّبُوْبِيَّةِ তথা আল্লাহর ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বে শিরক।
(খ) اَلشِّرْكُ فِى الْاَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ তথা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে শিরক।
(গ) اَلشِّرْكُ فِى الْاُلُوْهِيَّةِ তথা আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক।
কোন ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাওয়াটা সাব্যস্ত করার জন্য এই তিন প্রকার শিরকই হচ্ছে মূলভিত্তি। ইসলাম ভঙ্গের অন্যান্য যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলোও মূলত কোন না কোনভাবে এই তিন প্রকারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর যা কিছু শিরকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সেটি মূলত তাওহীদ তথা আল্লাহর তা‘আলা একত্ববাদের সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা তাওহীদের ঠিক বিপরীত ক্ষেত্রটিই হচ্ছে শিরক ও কুফর। নিম্নে উপরোক্ত তিন প্রকার শিরক সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হলো :
(ক) اَلشِّرْكُ فِى الرُّبُوْبِيَّةِ তথা আল্লাহর ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বে শিরক :
অর্থাৎ এমন বিশ্বাস পোষণ করা, যার দ্বারা আল্লাহর রুবূবিয়্যাত তথা আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্বে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা হয়। অতএব যে ব্যক্তি দাবি করবে যে, এসব বিষয়ে আল্লাহর সাথে তার অথবা অন্য কোন সৃষ্টির কোনরূপ অংশ রয়েছে, তাহলে তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। মিশরের রাজা ফিরাউন দাবি করেছিল, اَنَا رَبُّكُمُ الْاَعْلٰى অর্থাৎ আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ রব- (সূরা নাযিয়াত- ২৪)। ফিরাউনের এ দাবিটি ছিল তাওহীদের মারাত্মক পরিপন্থী এবং এই প্রকার শিরকের আওতাধীন। যার কারণে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ পতিত হয়েছিল এবং সে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ফিরাউন যে গুণের দাবি করেছিল সেটি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। আল্লাহর উক্ত গুণটি নিজের জন্য দাবি করাটাই ছিল তার মূল অপরাধ। অতএব বর্তমানে যুগেও কেউ যদি ইসলামী সীমারেখার বাইরে গিয়ে ফিরাউনের মতো নির্দিষ্ট ভূখন্ডের কর্তৃত্বের অধিকারী হয়ে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মনে করে অথবা জনগণের রিযিকদাতা বা বিধানদাতা মনে করে অথবা জনগণের কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক মনে করে, তাহলে সেও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে এবং ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে আরো একটি উদাহরণ হচ্ছে, নমরূদের মিথ্যা দাবি। সে দাবি করেছিল যে, সে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন। আল্লাহ তা‘আলা এই বিতর্কের কথাসমূহ কুরআন মাজীদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّهٖۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَۘ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَّ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَاۤ اُحْيِيْ وَاُمِيْتُؕ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আপনি কি তার দিকে লক্ষ্য করেননি, যে ইবরাহীমের সাথে তার রব সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল? এজন্য যে, তাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করেছিলেন। যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, আমার রব তো তিনি যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলেছিল, আমিই জীবন এবং মৃত্যু দিয়ে থাকি। এবার ইবরাহীম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত করেন। সুতরাং তুমি সেটাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করে নিয়ে আসো। অতঃপর সে কাফির হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা– ২৫৮)
খ. اَلشِّرْكُ فِى الْاَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ তথা আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর ক্ষেত্রে শিরক :
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য যেসব নাম ও গুণাবলি নির্ধারণ করেছেন, সেগুলোর সাথে সৃষ্টির কোন গুণাবলীর তুলনা করা। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ৩ ভাবে শিরক সংঘটিত হয়। যেমন-
১. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি অথবা এর কিছু অংশ অস্বীকার করা।
২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে তার অর্থকে অস্বীকার করা অথবা তার সঠিক অর্থকে বিকৃত করা অথবা ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা তার মূল অর্থকে সরিয়ে ফেলা অথবা আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলি থেকে দূরে রাখা। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
৩. সৃষ্টির সাথে আল্লাহর কোন গুণাবলির তুলনা করা অথবা আল্লাহকে এমন গুণে গুণান্বিত করা, যা তাঁর সাথে মানায় না। যেমন- একথা বলা যে, আল্লাহর হাত আমাদের হাতের মত। অথবা এ আক্বিদা পোষণ করা যে, আল্লাহর যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যেও অনুরূপ গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
গ. اَلشِّرْكُ فِى الْاُلُوْهِيَّةِ তথা আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক :
অর্থাৎ যেসব কর্মকান্ড আল্লাহর ইবাদাত হিসেবে সাব্যস্ত হয়, সেগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা। যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দু‘আ করা, অন্য কাউকে সিজদা করা, অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, অন্যের নামে মান্নত মানা, অন্যকে আল্লাহর মত ভয় করা, ভালোবাসা, আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য আইনের কাছে বিচার চাওয়া এবং বিচার করা ইত্যাদি। ইসলাম ভঙ্গের অধিকাংশ কারণ এই প্রকার শিরকেরই আওতাভুক্ত।
اَلنَّاقِضُ الثَّانِي ْ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
﴿اِنَّهٗ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَاْوَاهُ النَّارُؕ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ اَنْصَارٍ﴾
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। (ফলে) তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা– ৭২)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿اِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِه وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ يَّشَآءُۚ وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤى اِثْمًا عَظِيْمًا﴾
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করার গুনাহ (একনিষ্ঠ তাওবা ব্যতীত) ক্ষমা করেন না; তবে এটা ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে তো মহাপাপে জড়িয়ে মিথ্যা রচনা করল। (সূরা নিসা- ৪৮)
শিরক মূলত তিন প্রকার। যথা:
(ক) اَلشِّرْكُ فِى الرُّبُوْبِيَّةِ তথা আল্লাহর ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বে শিরক।
(খ) اَلشِّرْكُ فِى الْاَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ তথা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে শিরক।
(গ) اَلشِّرْكُ فِى الْاُلُوْهِيَّةِ তথা আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক।
কোন ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাওয়াটা সাব্যস্ত করার জন্য এই তিন প্রকার শিরকই হচ্ছে মূলভিত্তি। ইসলাম ভঙ্গের অন্যান্য যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলোও মূলত কোন না কোনভাবে এই তিন প্রকারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর যা কিছু শিরকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সেটি মূলত তাওহীদ তথা আল্লাহর তা‘আলা একত্ববাদের সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা তাওহীদের ঠিক বিপরীত ক্ষেত্রটিই হচ্ছে শিরক ও কুফর। নিম্নে উপরোক্ত তিন প্রকার শিরক সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হলো :
(ক) اَلشِّرْكُ فِى الرُّبُوْبِيَّةِ তথা আল্লাহর ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বে শিরক :
অর্থাৎ এমন বিশ্বাস পোষণ করা, যার দ্বারা আল্লাহর রুবূবিয়্যাত তথা আল্লাহর কর্তৃত্ব, ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্বে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা হয়। অতএব যে ব্যক্তি দাবি করবে যে, এসব বিষয়ে আল্লাহর সাথে তার অথবা অন্য কোন সৃষ্টির কোনরূপ অংশ রয়েছে, তাহলে তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। মিশরের রাজা ফিরাউন দাবি করেছিল, اَنَا رَبُّكُمُ الْاَعْلٰى অর্থাৎ আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ রব- (সূরা নাযিয়াত- ২৪)। ফিরাউনের এ দাবিটি ছিল তাওহীদের মারাত্মক পরিপন্থী এবং এই প্রকার শিরকের আওতাধীন। যার কারণে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধ পতিত হয়েছিল এবং সে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ফিরাউন যে গুণের দাবি করেছিল সেটি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। আল্লাহর উক্ত গুণটি নিজের জন্য দাবি করাটাই ছিল তার মূল অপরাধ। অতএব বর্তমানে যুগেও কেউ যদি ইসলামী সীমারেখার বাইরে গিয়ে ফিরাউনের মতো নির্দিষ্ট ভূখন্ডের কর্তৃত্বের অধিকারী হয়ে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মনে করে অথবা জনগণের রিযিকদাতা বা বিধানদাতা মনে করে অথবা জনগণের কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক মনে করে, তাহলে সেও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে এবং ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে আরো একটি উদাহরণ হচ্ছে, নমরূদের মিথ্যা দাবি। সে দাবি করেছিল যে, সে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন। আল্লাহ তা‘আলা এই বিতর্কের কথাসমূহ কুরআন মাজীদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-
اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِيْ حَآجَّ اِبْرَاهِيْمَ فِيْ رَبِّهٖۤ اَنْ اٰتَاهُ اللهُ الْمُلْكَۘ اِذْ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ رَبِّيَّ الَّذِيْ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ قَالَ اَنَاۤ اُحْيِيْ وَاُمِيْتُؕ قَالَ اِبْرَاهِيْمُ فَاِنَّ اللهَ يَأْتِيْ بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِيْ كَفَرَؕ وَاللهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
আপনি কি তার দিকে লক্ষ্য করেননি, যে ইবরাহীমের সাথে তার রব সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল? এজন্য যে, তাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করেছিলেন। যখন ইবরাহীম বলেছিলেন, আমার রব তো তিনি যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। তখন সে বলেছিল, আমিই জীবন এবং মৃত্যু দিয়ে থাকি। এবার ইবরাহীম বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্ব দিকে উদিত করেন। সুতরাং তুমি সেটাকে পশ্চিম দিক থেকে উদয় করে নিয়ে আসো। অতঃপর সে কাফির হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা বাক্বারা– ২৫৮)
খ. اَلشِّرْكُ فِى الْاَسْمَاءِ وَالصِّفَاتِ তথা আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীর ক্ষেত্রে শিরক :
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য যেসব নাম ও গুণাবলি নির্ধারণ করেছেন, সেগুলোর সাথে সৃষ্টির কোন গুণাবলীর তুলনা করা। এ ক্ষেত্রে সাধারণত ৩ ভাবে শিরক সংঘটিত হয়। যেমন-
১. আল্লাহর নাম ও গুণাবলি অথবা এর কিছু অংশ অস্বীকার করা।
২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে তার অর্থকে অস্বীকার করা অথবা তার সঠিক অর্থকে বিকৃত করা অথবা ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা তার মূল অর্থকে সরিয়ে ফেলা অথবা আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলি থেকে দূরে রাখা। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤيْ اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ﴾
যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেয়া হবে। (সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
৩. সৃষ্টির সাথে আল্লাহর কোন গুণাবলির তুলনা করা অথবা আল্লাহকে এমন গুণে গুণান্বিত করা, যা তাঁর সাথে মানায় না। যেমন- একথা বলা যে, আল্লাহর হাত আমাদের হাতের মত। অথবা এ আক্বিদা পোষণ করা যে, আল্লাহর যেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যেও অনুরূপ গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
গ. اَلشِّرْكُ فِى الْاُلُوْهِيَّةِ তথা আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক :
অর্থাৎ যেসব কর্মকান্ড আল্লাহর ইবাদাত হিসেবে সাব্যস্ত হয়, সেগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা। যেমন- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দু‘আ করা, অন্য কাউকে সিজদা করা, অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, অন্যের নামে মান্নত মানা, অন্যকে আল্লাহর মত ভয় করা, ভালোবাসা, আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য আইনের কাছে বিচার চাওয়া এবং বিচার করা ইত্যাদি। ইসলাম ভঙ্গের অধিকাংশ কারণ এই প্রকার শিরকেরই আওতাভুক্ত।
اَلنَّاقِضُ الثَّانِي ْ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ এরূপ মনে করা যে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অথবা নিজের গোনাহ মাফের জন্য সরাসরি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করাটা যথেষ্ট নয়; বরং এ কাজের জন্য এমন কোন সুপারিশকারীর প্রয়োজন রয়েছে, যাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারলে তারা আল্লাহর নিকট তার ব্যাপারে সুপারিশ করবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তার সুপারিশ কবুল করবেন। আল্লাহর ব্যাপারে এরূপ ধারণা পোষণ করলে নিঃসন্দেহে ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা-
প্রথমতঃ এসব আক্বীদা-বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতার সাথে অন্য কারো ক্ষমতাকে সাদৃশ্য করা হয় অথবা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে অন্য কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা হয়। সুতরাং এ দিক থেকে বিষয়টি তাওহীদে রুবূবিয়াতের পরিপূর্ণ লঙ্ঘন।
দ্বিতীয়তঃ এসব আক্বীদা-বিশ্বাস গাইরুল্লাহকে উপাস্যে পরিণত করে। ফলে মানুষ কবর, মাযারসহ বিভিন্ন ধরনের মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত হয়। সুতরাং এ দিকে থেকে বিষয়টি তাওহীদুল উলুহিয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
পূর্বযুগ থেকে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের ঈমান এই পদ্ধতিতে ভঙ্গ করে আসছে। মূর্তিপূজাও ঠিক এসব ধারণার ভিত্তিতেই আবিস্কৃত হয়েছিল। মক্কার মুশরিকরাও অনুরূপ আক্বিদা-বিশ্বাস পোষণ করত। আর এসব ধারণার উপর নির্ভর করেই তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস খন্ডন করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
﴿وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِؕ قُلْ اَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ﴾
তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দেবে, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা ইউনুস- ১৮)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَ مَانَعْبُدُهُمْ اِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَاۤ اِلَى اللهِ زُلْفٰىۤ اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِىْ مَا هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِىْ مَنْ هُوَ كٰذِبٌ كَفَّارٌ﴾
যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদাত এজন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা যুমার- ৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَقَدْ جِئْتُمُوْنَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكْتُمْ مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَآءَ ظُهُوْرِكُمْۚ وَمَا نَرٰى مَعَكُمْ شُفَعَآءَكُمُ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ اَنَّهُمْ فِيْكُمْ شُرَكَآءُؕ لَقَدْ تَّقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَّا كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ﴾
তোমরা তো আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছিলাম। আর তোমাদেরকে আমি যা দিয়েছিলাম তা তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। তোমরা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে শরীক মনে করতে, তোমাদের সেই সুপারিশকারীদেরকেও তো তোমাদের সাথে দেখছি না। অবশ্যই তোমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও নিষ্ফল হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগের অনেক মানুষ নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও মক্কার মুশরিকদের অনুরূপ আক্বীদা পোষণ করে থাকে। আর এর উপরই ভিত্তি করে তারা গড়ে তুলেছে মাজার, দর্গাসহ বিভিন্ন ধরনের আস্তানা। অতএব এদের ব্যাপারে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এরা কোনভাবেই মুসলিম নয়; বরং মুশরিক। এই প্রক্রিয়ায় যারা মুশরিকে পরিণত রয়েছে তাদের স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, আল্লাহ তা‘আলা একক সত্তা। আর সর্বদিক থেকে এককত্বের অধিকারী। কোন দিক থেকে তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। চাই সেটা সত্তাগত দিক থেকে হোক অথবা উপাস্য হিসেবে হোক অথবা প্রার্থনা শ্রবণ করা ও তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রেই হোক।
কিয়ামতের দিন তিনি যেসব বান্দাকে শাফায়াত করার সুযোগ দিবেন, সেটি হবে সম্পূর্ণ তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সেদিন তাঁর অনুমতি ব্যতীত কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ﴾
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا لِمَنْ اَذِنَ لَهٗ﴾
আল্লাহর কাছে কারো সুপারিশ উপকারে আসবে না; তবে তিনি যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত। (সূরা সাবা- ২৩)
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿يَوْمَئِذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَرَضِيَ لَهٗ قَوْلًا﴾
সেদিন দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ কোন কাজে আসবে না।
(সূরা ত্বা-হা- ১০৯)
তাদের আরো স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন শুধুমাত্র তার জন্যই শাফা‘আত করা হবে। যে কারো জন্য সুপারিশ করার ইখতিয়ার কারো থাকবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَمْ مِّنْ مَّلَكٍ فِى السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ يَّاْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَرْضٰى﴾
আকাশসমূহে কত ফেরেশতা রয়েছে! তাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং তিনি যার প্রতি সন্তুষ্ট তার ব্যাপারে অনুমতি না দেন। (সূরা নাজম- ২৬)
আরো স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, সুপারিশ একমাত্র তারাই প্রাপ্ত হবে, যারা কোন প্রকার কুফর বা শিরকের সাথে যুক্ত নয়। বরং তারা যথাযথভাবে আল্লাহর একত্ববাদের উপর বিশ্বাসী। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ﴾
কোন নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা কোন মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী।
(সূরা তওবা- ১১৩)
আরো স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, মুশরিক হওয়ার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সবেচেয়ে প্রিয় বান্দা, যাকে তিনি খলীল হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, তিনি তথা ইবরাহীম (আঃ)-ও নিজের পিতার জন্য সুপারিশের অনুমতি পাবেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : يَلْقٰى إِبْرَاهِيْمُ أَبَاهُ اٰزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَعَلٰى وَجْهِ اٰزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ فَيَقُوْلُ لَه إِبْرَاهِيْمُ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لَا تَعْصِنِيْ فَيَقُوْلُ أَبُوْهُ فَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيْكَ فَيَقُوْلُ إِبْرَاهِيْمُ يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِيْ أَنْ لَا تُخْزِيَنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ فَأَىُّ خِزْىٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَدِ فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالٰى إِنِّيْ حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ ثُمَّ يُقَالُ يَا إِبْرَاهِيْمُ مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيْخٍ مُلْتَطِخٍ فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِه فَيُلْقٰى فِي النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ) তার পিতা আযরের সাক্ষাৎ পাবেন। আযরের মুখমন্ডলে মলিনতা থাকবে। তখন ইবরাহীম (আঃ) তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার চাইতে অধিক অপমান আমার জন্য আর কী হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কী? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। তখন দেখতে পাবেন তার পিতার স্থানে সমস্ত শরীরে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। অতঃপর এটাকে চারপাশ দিয়ে বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৫০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩১০; মিশকাত, হা/৫৫৩৮।]
অতএব শাফায়াতের নামে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার জন্য অথবা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অথবা আল্লাহর কাছে নিজেদের গোনাহসমূহ মাফ করানোর জন্য অথবা পরকালীন মুক্তি লাভ করার জন্য যে কোন ভ্রান্ত মাধ্যম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলিমের জন্য একান্ত জরুরি।
اَلنَّاقِضُ الثَّالِثُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
প্রথমতঃ এসব আক্বীদা-বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতার সাথে অন্য কারো ক্ষমতাকে সাদৃশ্য করা হয় অথবা আল্লাহর সার্বভৌমত্বে অন্য কাউকে শরীক সাব্যস্ত করা হয়। সুতরাং এ দিক থেকে বিষয়টি তাওহীদে রুবূবিয়াতের পরিপূর্ণ লঙ্ঘন।
দ্বিতীয়তঃ এসব আক্বীদা-বিশ্বাস গাইরুল্লাহকে উপাস্যে পরিণত করে। ফলে মানুষ কবর, মাযারসহ বিভিন্ন ধরনের মূর্তিপূজার দিকে ধাবিত হয়। সুতরাং এ দিকে থেকে বিষয়টি তাওহীদুল উলুহিয়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত।
পূর্বযুগ থেকে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের ঈমান এই পদ্ধতিতে ভঙ্গ করে আসছে। মূর্তিপূজাও ঠিক এসব ধারণার ভিত্তিতেই আবিস্কৃত হয়েছিল। মক্কার মুশরিকরাও অনুরূপ আক্বিদা-বিশ্বাস পোষণ করত। আর এসব ধারণার উপর নির্ভর করেই তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা করত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস খন্ডন করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
﴿وَيَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُوْلُوْنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنْدَ اللهِؕ قُلْ اَتُنَبِّئُوْنَ اللهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِى السَّمَاوَاتِ وَلَا فِى الْاَرْضِؕ سُبْحَانَهٗ وَتَعَالٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ﴾
তারা আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলো, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দেবে, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। (সূরা ইউনুস- ১৮)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَالَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِه ۤ اَوْلِيَآءَ مَانَعْبُدُهُمْ اِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَاۤ اِلَى اللهِ زُلْفٰىۤ اِنَّ اللهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِىْ مَا هُمْ فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِىْ مَنْ هُوَ كٰذِبٌ كَفَّارٌ﴾
যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং বলে যে, আমরা তাদের ইবাদাত এজন্যই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। নিশ্চয় আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) তাদের মধ্যে তাদের পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা যুমার- ৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَقَدْ جِئْتُمُوْنَا فُرَادٰى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍ وَّتَرَكْتُمْ مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَآءَ ظُهُوْرِكُمْۚ وَمَا نَرٰى مَعَكُمْ شُفَعَآءَكُمُ الَّذِيْنَ زَعَمْتُمْ اَنَّهُمْ فِيْكُمْ شُرَكَآءُؕ لَقَدْ تَّقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنْكُمْ مَّا كُنْتُمْ تَزْعُمُوْنَ﴾
তোমরা তো আমার নিকট নিঃসঙ্গ অবস্থায় এসেছ, যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছিলাম। আর তোমাদেরকে আমি যা দিয়েছিলাম তা তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ। তোমরা যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে শরীক মনে করতে, তোমাদের সেই সুপারিশকারীদেরকেও তো তোমাদের সাথে দেখছি না। অবশ্যই তোমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে এবং তোমরা যা ধারণা করেছিলে তাও নিষ্ফল হয়েছে। (সূরা আন‘আম- ৯৪)
উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগের অনেক মানুষ নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও মক্কার মুশরিকদের অনুরূপ আক্বীদা পোষণ করে থাকে। আর এর উপরই ভিত্তি করে তারা গড়ে তুলেছে মাজার, দর্গাসহ বিভিন্ন ধরনের আস্তানা। অতএব এদের ব্যাপারে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এরা কোনভাবেই মুসলিম নয়; বরং মুশরিক। এই প্রক্রিয়ায় যারা মুশরিকে পরিণত রয়েছে তাদের স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, আল্লাহ তা‘আলা একক সত্তা। আর সর্বদিক থেকে এককত্বের অধিকারী। কোন দিক থেকে তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। চাই সেটা সত্তাগত দিক থেকে হোক অথবা উপাস্য হিসেবে হোক অথবা প্রার্থনা শ্রবণ করা ও তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রেই হোক।
কিয়ামতের দিন তিনি যেসব বান্দাকে শাফায়াত করার সুযোগ দিবেন, সেটি হবে সম্পূর্ণ তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সেদিন তাঁর অনুমতি ব্যতীত কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ﴾
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا لِمَنْ اَذِنَ لَهٗ﴾
আল্লাহর কাছে কারো সুপারিশ উপকারে আসবে না; তবে তিনি যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যতীত। (সূরা সাবা- ২৩)
অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿يَوْمَئِذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَرَضِيَ لَهٗ قَوْلًا﴾
সেদিন দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ কোন কাজে আসবে না।
(সূরা ত্বা-হা- ১০৯)
তাদের আরো স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন শুধুমাত্র তার জন্যই শাফা‘আত করা হবে। যে কারো জন্য সুপারিশ করার ইখতিয়ার কারো থাকবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكَمْ مِّنْ مَّلَكٍ فِى السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا اِلَّا مِنْ ۢبَعْدِ اَنْ يَّاْذَنَ اللهُ لِمَنْ يَّشَآءُ وَيَرْضٰى﴾
আকাশসমূহে কত ফেরেশতা রয়েছে! তাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং তিনি যার প্রতি সন্তুষ্ট তার ব্যাপারে অনুমতি না দেন। (সূরা নাজম- ২৬)
আরো স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, সুপারিশ একমাত্র তারাই প্রাপ্ত হবে, যারা কোন প্রকার কুফর বা শিরকের সাথে যুক্ত নয়। বরং তারা যথাযথভাবে আল্লাহর একত্ববাদের উপর বিশ্বাসী। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْاۤ اُولِيْ قُرْبٰى مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحَابُ الْجَحِيْمِ﴾
কোন নবী এবং ঈমানদারদের জন্য এটা উচিত নয় যে, তারা কোন মুশরিকদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়; তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পরও যে, তারা জাহান্নামবাসী।
(সূরা তওবা- ১১৩)
আরো স্মরণ রাখার প্রয়োজন যে, মুশরিক হওয়ার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সবেচেয়ে প্রিয় বান্দা, যাকে তিনি খলীল হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, তিনি তথা ইবরাহীম (আঃ)-ও নিজের পিতার জন্য সুপারিশের অনুমতি পাবেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : يَلْقٰى إِبْرَاهِيْمُ أَبَاهُ اٰزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَعَلٰى وَجْهِ اٰزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ فَيَقُوْلُ لَه إِبْرَاهِيْمُ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لَا تَعْصِنِيْ فَيَقُوْلُ أَبُوْهُ فَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيْكَ فَيَقُوْلُ إِبْرَاهِيْمُ يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِيْ أَنْ لَا تُخْزِيَنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ فَأَىُّ خِزْىٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَدِ فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالٰى إِنِّيْ حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ ثُمَّ يُقَالُ يَا إِبْرَاهِيْمُ مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيْخٍ مُلْتَطِخٍ فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِه فَيُلْقٰى فِي النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ) তার পিতা আযরের সাক্ষাৎ পাবেন। আযরের মুখমন্ডলে মলিনতা থাকবে। তখন ইবরাহীম (আঃ) তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর কাছে আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার চাইতে অধিক অপমান আমার জন্য আর কী হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কী? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। তখন দেখতে পাবেন তার পিতার স্থানে সমস্ত শরীরে রক্তমাখা একটি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। অতঃপর এটাকে চারপাশ দিয়ে বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৫০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯৩৬; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩১০; মিশকাত, হা/৫৫৩৮।]
অতএব শাফায়াতের নামে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার জন্য অথবা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অথবা আল্লাহর কাছে নিজেদের গোনাহসমূহ মাফ করানোর জন্য অথবা পরকালীন মুক্তি লাভ করার জন্য যে কোন ভ্রান্ত মাধ্যম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলিমের জন্য একান্ত জরুরি।
اَلنَّاقِضُ الثَّالِثُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, তার কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। যেমন- ইহুদী, নাসারা ও মুশরিকদের কুফরীর ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর কোন দ্বিমত নেই। তাই কোন কোন মুসলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলে অথবা তাদেরকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করলে সে নিজেই কুফরী মতবাদে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করে যে, ইহুদী-খ্রিস্টান-ইসলাম এই তিন ধর্মই সঠিক ও সত্য; প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়; তাই যার যে ধর্ম পছন্দ হয়, সে তা গ্রহণ করতে পারে, তাতে কোন অসুবিধা নেই, তাহলে তারও ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ আক্বীদা-বিশ্বাসের কারণে ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
প্রথমতঃ এ ধরনের আক্বীদা-বিশ্বাস ইসলামের মূলমন্ত্র لَا اِلٰهَ اِلَّا الله (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্যিকার ইলাহ নেই)- এর অর্থ ও দাবিকে বিনষ্ট করে দেয়। কেননা এর প্রধান দাবি হচ্ছে, সকল প্রকার বাতিল ইলাহ তথা তাগুতকে অস্বীকার করা। আর সকল প্রকার তাগুতকে অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে, তাগুতী সকল মতবাদ ও কর্মকান্ডকেও বর্জন করা। যদি এ কাজটি যথাযথভাবে করা না হয়, তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, সে প্রকৃতপক্ষে তাগুতকে অস্বীকার করেনি এবং সে নিজের ঈমানের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি স্পষ্টভাবে কাফির, তার কুফরীর ব্যাপারে যদি সন্দেহ পোষণ করা হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রেও ধরে নিতে হয় যে, সে প্রকৃতপক্ষে ঈমান আনয়ন করেনি এবং তার অন্তরে এখনও কুফর বিদ্যমান রয়েছে।
অনুরূপভাবে لَا اِلٰهَ اِلَّا الله (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্যিকার ইলাহ নেই)- এর দ্বিতীয় দাবিটি হচ্ছে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এ দাবিটি মূলত প্রথমোক্ত দাবির উপরই নির্ভরশীল। যখন কারো মধ্যে প্রথমোক্ত দাবিটি পাওয়া যাবে না, তখন তার মধ্যে এই দাবিটিও বিদ্যমান থাকে না।
অপরদিকে এই কালিমাটি হচ্ছে ইসলামের অন্যতম একটি মাপমাঠি এবং আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার একমাত্র মজবুত রশি। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى
সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল, যা কখনো ছিড়বে না। (সূরা বাকারা- ২৫৬)
অত্র আয়াতটি মূলত পূর্বে উল্লেখিত কালেমারই ভাবার্থ। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি তাগুতকে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার না করেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের দাবি করে, তাহলে সে কখনো আয়াতে বর্ণিত মজবুত রশিটি ধারণ করতে পারবে না অর্থাৎ সে মুসলিমদের কাতারে থাকতে পারবে না।
দ্বিতীয়তঃ এ আক্বীদা-বিশ্বাসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তির মধ্যে কাফিরদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা বিদ্যমান রয়েছে এবং কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ وَّمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী লোকদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৫১)
অত্র আয়াত থেকে জানা যায় যে, যারাই কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হয়। অপর আয়াতে আল্লাহ এরূপ বান্দাদের সাথে ঈমানদারদের সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
﴿لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكَافِرِيْنَ أَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِيْ شَيْءٍ﴾
মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহ্র সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। (সুরা আল ইমরান ৩:২৮)
উল্লেখ্য যে, কাফিরদের সাথে বন্ধু স্থাপন করার ক্ষতিকর দিকগুলোর ব্যাপারে উপরোক্ত দিকটি ছাড়াও আরো অনেক দিক রয়েছে, যা মানুষের ইসলাম ভঙ্গ হওয়ারই দাবি রাখে। যেমন-
১. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে, তারা তার ঈমানের বিচ্যূতি ঘটিয়ে তাকে কাফিরে পরিণত করে ছাড়বে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
অপর আয়াতে বলেন,
﴿وَلَنْ تَرْضٰى عَنْكَ الْيَهُوْدُ وَلا النَّصَارٰى حَتّٰى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ﴾
ইহুদী ও খ্রিস্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের মতাদর্শ অনুসরণ করেন। (সূরা বাক্বারাহ- ১২০)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَآءَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ إِنَّكَ إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ﴾
জ্ঞান (কুরআন) আসার পর আপনি যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
(সূরা বাক্বারাহ- ১৪৫)
২. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে, জিহাদে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মানসিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কেননা বন্ধুত্বের টান মানুষকে বন্ধুর বিরুদ্ধে কঠোর হতে বাধা দেয়। আর কঠোরতা ছাড়া কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা সম্ভব নয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এবং তাদের প্রতি প্রয়োজানুসারে অধিক কঠোরতা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً وَّاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে মু’মিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ করো এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রাখো, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
(সূরা তওবা- ১২৩)
৩. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে অনেক সময় ইসলাম বিরোধী কাজ করতে বাধ্য হতে হয়। কেননা বন্ধুত্বের দাবি হচ্ছে বন্ধুর কথাবার্তা ও কাজকর্মকে সমর্থন দেয়া এবং প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করা। ইসলামের বিরুদ্ধে কোন মতবাদকে সমর্থন করা অথবা কাউকে সহযোগিতা করাটা হচ্ছে ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। ইসলাম ভঙ্গের ৬নং কারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
৪. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর আর্দশের বিচূতি ঘটে। কেননা তিনি কাফিরদের সাথে শত্রুতা পোষণ করতেন। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَآٰءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰى تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗۤ
তোমাদের জন্যে ইবরাহীম (আঃ) ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই; আমরা তোমাদের সাথে কুফরী করি। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আন। (সূরা মুমতাহিনা- ৪)
৫. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيْمٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ جَدِّه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْ مُشْرِكٍ أَشْرَكَ بَعْدَ مَا أَسْلَمَ، عَمَلًا حَتّٰى يُفَارِقَ الْمُشْرِكِيْنَ إِلَى الْمُسْلِمِيْنَ
বাহয ইবনে হাকীম (রাঃ) থেকে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ তার কোন আমলই গ্রহণ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে। [নাসাঈ, হা/২৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০০৫৫।]
৬. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুসলিমদের পক্ষ থেকে ঘোষিত জান ও মালের জিম্মাদারিত্ব হারাতে হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এসব নামধারি মুসলিম থেকে সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন :
أَنَا بَرِىءٌ مِّنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيْمُ بَيْنَ أَظْهُرِ الْمُشْرِكِيْنَ
আমি ঐ মুসলিম থেকে দায়মুক্ত, যারা মুশকিরদের মধ্যে বসবাস করে। [আবু দাউদ, হা/২৬৪৭।]
৭. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে দ্বীনের ক্ষেত্রে সন্তানের কাছে পিতা-মাতা তার আনুগত্যের অধিকার হারিয়ে ফেলে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِ
হে মু’মিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের মুকাবিলার কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। (সূরা তাওবা- ২৩)
৮. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুমিনদের কাতার থেকে ছিন্ন হয়ে যেতে হবে। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়।
(সূরা মুজাদালা- ২২)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের কাজকর্মগুলোকে সমর্থন দেয়া, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন না করা, তাদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদেরকে কাফির না বলা অথবা তাদেরকে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করা ইত্যাদি প্রতিটি কর্মই আল্লাহর নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান যুগের অনেক মুসলিম এই অপরাধে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এসব দিক থেকে এদের মধ্যে এবং জাহেলী যুগের মুশরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। পার্থক্য শুধু এতটুকুতেই যে, জাহেলী যুগের মুশরিকরা নিজেদের মুশরিক হওয়ার বিষয়টি নিজেরাই সাক্ষ্য প্রদান করে বেড়াত। আর বর্তমান যুগের মুশরিকরা নিজেদের মুশরিক হিসেবে স্বীকার করে না। কিন্তু কাজে কর্মে তারা পূর্ব যুগের মুশরিকদেরকে ছাড়িয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন। আমীন
اَلنَّاقِضُ الرَّابِعُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
প্রথমতঃ এ ধরনের আক্বীদা-বিশ্বাস ইসলামের মূলমন্ত্র لَا اِلٰهَ اِلَّا الله (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্যিকার ইলাহ নেই)- এর অর্থ ও দাবিকে বিনষ্ট করে দেয়। কেননা এর প্রধান দাবি হচ্ছে, সকল প্রকার বাতিল ইলাহ তথা তাগুতকে অস্বীকার করা। আর সকল প্রকার তাগুতকে অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে, তাগুতী সকল মতবাদ ও কর্মকান্ডকেও বর্জন করা। যদি এ কাজটি যথাযথভাবে করা না হয়, তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, সে প্রকৃতপক্ষে তাগুতকে অস্বীকার করেনি এবং সে নিজের ঈমানের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি স্পষ্টভাবে কাফির, তার কুফরীর ব্যাপারে যদি সন্দেহ পোষণ করা হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রেও ধরে নিতে হয় যে, সে প্রকৃতপক্ষে ঈমান আনয়ন করেনি এবং তার অন্তরে এখনও কুফর বিদ্যমান রয়েছে।
অনুরূপভাবে لَا اِلٰهَ اِلَّا الله (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্যিকার ইলাহ নেই)- এর দ্বিতীয় দাবিটি হচ্ছে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এ দাবিটি মূলত প্রথমোক্ত দাবির উপরই নির্ভরশীল। যখন কারো মধ্যে প্রথমোক্ত দাবিটি পাওয়া যাবে না, তখন তার মধ্যে এই দাবিটিও বিদ্যমান থাকে না।
অপরদিকে এই কালিমাটি হচ্ছে ইসলামের অন্যতম একটি মাপমাঠি এবং আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার একমাত্র মজবুত রশি। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى
সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল, যা কখনো ছিড়বে না। (সূরা বাকারা- ২৫৬)
অত্র আয়াতটি মূলত পূর্বে উল্লেখিত কালেমারই ভাবার্থ। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি তাগুতকে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার না করেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের দাবি করে, তাহলে সে কখনো আয়াতে বর্ণিত মজবুত রশিটি ধারণ করতে পারবে না অর্থাৎ সে মুসলিমদের কাতারে থাকতে পারবে না।
দ্বিতীয়তঃ এ আক্বীদা-বিশ্বাসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তির মধ্যে কাফিরদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা বিদ্যমান রয়েছে এবং কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰۤى اَوْلِيَآءَ بَعْضُهُمْ اَوْلِيَآءُ بَعْضٍ وَّمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَاِنَّهٗ مِنْهُمْ اِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী লোকদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৫১)
অত্র আয়াত থেকে জানা যায় যে, যারাই কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হয়। অপর আয়াতে আল্লাহ এরূপ বান্দাদের সাথে ঈমানদারদের সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
﴿لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكَافِرِيْنَ أَوْلِيَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِيْ شَيْءٍ﴾
মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহ্র সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। (সুরা আল ইমরান ৩:২৮)
উল্লেখ্য যে, কাফিরদের সাথে বন্ধু স্থাপন করার ক্ষতিকর দিকগুলোর ব্যাপারে উপরোক্ত দিকটি ছাড়াও আরো অনেক দিক রয়েছে, যা মানুষের ইসলাম ভঙ্গ হওয়ারই দাবি রাখে। যেমন-
১. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে, তারা তার ঈমানের বিচ্যূতি ঘটিয়ে তাকে কাফিরে পরিণত করে ছাড়বে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
অপর আয়াতে বলেন,
﴿وَلَنْ تَرْضٰى عَنْكَ الْيَهُوْدُ وَلا النَّصَارٰى حَتّٰى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ﴾
ইহুদী ও খ্রিস্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের মতাদর্শ অনুসরণ করেন। (সূরা বাক্বারাহ- ১২০)
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَآءَهُمْ مِّنْ ۢبَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الْعِلْمِ إِنَّكَ إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِيْنَ﴾
জ্ঞান (কুরআন) আসার পর আপনি যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
(সূরা বাক্বারাহ- ১৪৫)
২. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে, জিহাদে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মানসিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কেননা বন্ধুত্বের টান মানুষকে বন্ধুর বিরুদ্ধে কঠোর হতে বাধা দেয়। আর কঠোরতা ছাড়া কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা সম্ভব নয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এবং তাদের প্রতি প্রয়োজানুসারে অধিক কঠোরতা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً وَّاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
হে মু’মিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ করো এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রাখো, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
(সূরা তওবা- ১২৩)
৩. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে অনেক সময় ইসলাম বিরোধী কাজ করতে বাধ্য হতে হয়। কেননা বন্ধুত্বের দাবি হচ্ছে বন্ধুর কথাবার্তা ও কাজকর্মকে সমর্থন দেয়া এবং প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করা। ইসলামের বিরুদ্ধে কোন মতবাদকে সমর্থন করা অথবা কাউকে সহযোগিতা করাটা হচ্ছে ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। ইসলাম ভঙ্গের ৬নং কারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
৪. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর আর্দশের বিচূতি ঘটে। কেননা তিনি কাফিরদের সাথে শত্রুতা পোষণ করতেন। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِيْۤ اِبْرَاهِيْمَ وَالَّذِيْنَ مَعَهٗۤ اِذْ قَالُوْا لِقَوْمِهِمْ اِنَّا بُرَآٰءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَآءُ اَبَدًا حَتّٰى تُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَحْدَهٗۤ
তোমাদের জন্যে ইবরাহীম (আঃ) ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই; আমরা তোমাদের সাথে কুফরী করি। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আন। (সূরা মুমতাহিনা- ৪)
৫. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيْمٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ جَدِّه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْ مُشْرِكٍ أَشْرَكَ بَعْدَ مَا أَسْلَمَ، عَمَلًا حَتّٰى يُفَارِقَ الْمُشْرِكِيْنَ إِلَى الْمُسْلِمِيْنَ
বাহয ইবনে হাকীম (রাঃ) থেকে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ তার কোন আমলই গ্রহণ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে। [নাসাঈ, হা/২৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০০৫৫।]
৬. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুসলিমদের পক্ষ থেকে ঘোষিত জান ও মালের জিম্মাদারিত্ব হারাতে হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এসব নামধারি মুসলিম থেকে সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন :
أَنَا بَرِىءٌ مِّنْ كُلِّ مُسْلِمٍ يُقِيْمُ بَيْنَ أَظْهُرِ الْمُشْرِكِيْنَ
আমি ঐ মুসলিম থেকে দায়মুক্ত, যারা মুশকিরদের মধ্যে বসবাস করে। [আবু দাউদ, হা/২৬৪৭।]
৭. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে দ্বীনের ক্ষেত্রে সন্তানের কাছে পিতা-মাতা তার আনুগত্যের অধিকার হারিয়ে ফেলে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوْاۤ اٰبَآءَكُمْ وَاِخْوَانَكُمْ اَوْلِيَآءَ اِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْاِيْمَانِ
হে মু’মিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের মুকাবিলার কুফরীকে ভালোবাসে, তবে তাদেরকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। (সূরা তাওবা- ২৩)
৮. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুমিনদের কাতার থেকে ছিন্ন হয়ে যেতে হবে। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়।
(সূরা মুজাদালা- ২২)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের কাজকর্মগুলোকে সমর্থন দেয়া, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন না করা, তাদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদেরকে কাফির না বলা অথবা তাদেরকে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করা ইত্যাদি প্রতিটি কর্মই আল্লাহর নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান যুগের অনেক মুসলিম এই অপরাধে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এসব দিক থেকে এদের মধ্যে এবং জাহেলী যুগের মুশরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। পার্থক্য শুধু এতটুকুতেই যে, জাহেলী যুগের মুশরিকরা নিজেদের মুশরিক হওয়ার বিষয়টি নিজেরাই সাক্ষ্য প্রদান করে বেড়াত। আর বর্তমান যুগের মুশরিকরা নিজেদের মুশরিক হিসেবে স্বীকার করে না। কিন্তু কাজে কর্মে তারা পূর্ব যুগের মুশরিকদেরকে ছাড়িয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন। আমীন
اَلنَّاقِضُ الرَّابِعُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন সেই দ্বীন সম্পর্কে অথবা দ্বীনের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা। এরূপ করাটা মূলত কাফেরদের একটি বিশেষ স্বভাব। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগের কাফিররাও মুসলিমদের সাথে এরূপ ব্যবহার করত। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُوا مِنَ الَّذِينَ اٰمَنُوا يَضْحَكُونَ ‐ وَإِذَا مَرُّوا بِهِمْ يَتَغَامَزُونَ ‐ وَإِذَا انْقَلَبُوا إِلَى أَهْلِهِمُ انْقَلَبُوا فَكِهِينَ ‐ وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوا إِنَّ هٰؤُلَاءِ لَضَالُّونَ ‐ وَمَا أُرْسِلُوا عَلَيْهِمْ حَافِظِينَ ‐ فَالْيَوْمَ الَّذِينَ اٰمَنُوا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُونَ ‐ عَلَى الْأَرَائِكِ يَنْظُرُونَ ‐ هَلْ ثُوِّبَ الْكُفَّارُ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ‐
যারা অপরাধী তারা মু’মিনদরকে উপহাস করতো। তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেতো, তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করতো; আর যখন তারা তাদের আপনজনের নিকট ফিরে আসতো, তখন ফিরতো উৎফুল্ল হয়ে। আর যখন তাদেরকে দেখতো তখন বলতো, নিশ্চয়ই এরা পথভ্রষ্ট। তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি! সুতরাং আজ মু’মিনগণ উপহাস করছে কাফিরদেরকে নিয়ে, সুসজ্জিত আসনে বসে তারা অবলোকন করছে। কাফেররা তো কেবল তাদের কর্মফলই ভোগ করে থাকে। (সূরা মুতাফফিফীন- ২৯-৩৬)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফেরদের এই কর্মের কথা উল্লেখ করার সাথে সাথে কিয়ামতের দিন তাদের পরিণতির ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। অপর আয়াতে তিনি এ বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
﴿قُلْ اَبِاللهِ وَاٰيَاتِهٖ وَرَسُوْلِهٖ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ ‐ لَا تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ اِنْ نَّعْفُ عَنْ طَآئِفَةٍ مِّنْكُمْ نُعَذِّبْ طَآئِفَةً ۢبِأَنَّهُمْ كَانُوْا مُجْرِمِيْنَ﴾
হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতসমূহের সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে? এখন কোন ওজর পেশ করো না। কেননা তোমরা ঈমান আনার পর কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের একদলকে ক্ষমা করি তবে আমি অপর দলকে শাস্তি প্রদান করব। কেননা তারা অপরাধী। (সূরা তাওবা- ৬৫, ৬৬)
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাকে সরাসরি কুফর হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি ইসলামের কোন বিষয়ে শুধুমাত্র ঠাট্টা-বিদ্রূপের কারণে ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
১. ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে প্রমাণিত হয় যে, সে ইসলামের উক্ত বিষয়টির সাথে একমত নয়। সে ইসলামের উক্ত বিষয়ে কেবল অপছন্দই করে না; বরং সে উক্ত বিষয়টি অস্বীকার করে থাকে। অথচ ইসলামের কোন বিষয় অপছন্দ করা এবং তা অস্বীকার করাটা ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। ৭নং কারণের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
২. ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে এটাও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান তার কাছে যথার্থ ও সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচিত নয়; বরং অন্য কোন জীবনবিধান আরো বেশি যথার্থ ও উপযুক্ত। এটিও ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। ৯নং কারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
৩. ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে এটাও প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং সে অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ এটিও ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম কারণ। ১০নং কারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
অতএব বলা যায় যে, ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপে লিপ্ত হওয়াটা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন ছোট-খাট অপরাধ নয়; বরং ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংসী মারাত্মক অপরাধের আওতাভুক্ত। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে অনেক মানুষ মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও ইসলামের কিছু কিছু বিষয়ে এ ধরনের হঠকারিতায় লিপ্ত হয়ে থাকে। অথচ তারা এটাকে ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার কোন কারণ মনে করে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে এ ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তওফীক দান করুন। আমীন
اَلنَّاقِضُ الْخَامِسُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
إِنَّ الَّذِينَ أَجْرَمُوا كَانُوا مِنَ الَّذِينَ اٰمَنُوا يَضْحَكُونَ ‐ وَإِذَا مَرُّوا بِهِمْ يَتَغَامَزُونَ ‐ وَإِذَا انْقَلَبُوا إِلَى أَهْلِهِمُ انْقَلَبُوا فَكِهِينَ ‐ وَإِذَا رَأَوْهُمْ قَالُوا إِنَّ هٰؤُلَاءِ لَضَالُّونَ ‐ وَمَا أُرْسِلُوا عَلَيْهِمْ حَافِظِينَ ‐ فَالْيَوْمَ الَّذِينَ اٰمَنُوا مِنَ الْكُفَّارِ يَضْحَكُونَ ‐ عَلَى الْأَرَائِكِ يَنْظُرُونَ ‐ هَلْ ثُوِّبَ الْكُفَّارُ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ‐
যারা অপরাধী তারা মু’মিনদরকে উপহাস করতো। তারা যখন তাদের নিকট দিয়ে যেতো, তখন চোখ টিপে কটাক্ষ করতো; আর যখন তারা তাদের আপনজনের নিকট ফিরে আসতো, তখন ফিরতো উৎফুল্ল হয়ে। আর যখন তাদেরকে দেখতো তখন বলতো, নিশ্চয়ই এরা পথভ্রষ্ট। তাদেরকে তো এদের সংরক্ষকরূপে পাঠানো হয়নি! সুতরাং আজ মু’মিনগণ উপহাস করছে কাফিরদেরকে নিয়ে, সুসজ্জিত আসনে বসে তারা অবলোকন করছে। কাফেররা তো কেবল তাদের কর্মফলই ভোগ করে থাকে। (সূরা মুতাফফিফীন- ২৯-৩৬)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কাফেরদের এই কর্মের কথা উল্লেখ করার সাথে সাথে কিয়ামতের দিন তাদের পরিণতির ব্যাপারে ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। অপর আয়াতে তিনি এ বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
﴿قُلْ اَبِاللهِ وَاٰيَاتِهٖ وَرَسُوْلِهٖ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ ‐ لَا تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ اِيْمَانِكُمْ اِنْ نَّعْفُ عَنْ طَآئِفَةٍ مِّنْكُمْ نُعَذِّبْ طَآئِفَةً ۢبِأَنَّهُمْ كَانُوْا مُجْرِمِيْنَ﴾
হে নবী! আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতসমূহের সাথে ও তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে? এখন কোন ওজর পেশ করো না। কেননা তোমরা ঈমান আনার পর কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের একদলকে ক্ষমা করি তবে আমি অপর দলকে শাস্তি প্রদান করব। কেননা তারা অপরাধী। (সূরা তাওবা- ৬৫, ৬৬)
এই আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাকে সরাসরি কুফর হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এরূপ কাজ করবে তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি ইসলামের কোন বিষয়ে শুধুমাত্র ঠাট্টা-বিদ্রূপের কারণে ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
১. ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে প্রমাণিত হয় যে, সে ইসলামের উক্ত বিষয়টির সাথে একমত নয়। সে ইসলামের উক্ত বিষয়ে কেবল অপছন্দই করে না; বরং সে উক্ত বিষয়টি অস্বীকার করে থাকে। অথচ ইসলামের কোন বিষয় অপছন্দ করা এবং তা অস্বীকার করাটা ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। ৭নং কারণের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
২. ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে এটাও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর দেয়া জীবনবিধান তার কাছে যথার্থ ও সর্বোত্তম হিসেবে বিবেচিত নয়; বরং অন্য কোন জীবনবিধান আরো বেশি যথার্থ ও উপযুক্ত। এটিও ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। ৯নং কারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
৩. ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে এটাও প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং সে অন্য কোন জীবন-ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ এটিও ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম কারণ। ১০নং কারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
অতএব বলা যায় যে, ইসলামের কোন বিষয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপে লিপ্ত হওয়াটা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কোন ছোট-খাট অপরাধ নয়; বরং ঈমান ও ইসলাম বিধ্বংসী মারাত্মক অপরাধের আওতাভুক্ত। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে অনেক মানুষ মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও ইসলামের কিছু কিছু বিষয়ে এ ধরনের হঠকারিতায় লিপ্ত হয়ে থাকে। অথচ তারা এটাকে ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার কোন কারণ মনে করে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে এ ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তওফীক দান করুন। আমীন
اَلنَّاقِضُ الْخَامِسُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ যাদু বা মন্ত্রের মাধ্যমে কারো কল্যাণ অথবা অকল্যাণ করার চেষ্টা করা। এটি দুইভাবে হাতে পারে : (১) এমন কিছু আমলের মাধ্যমে, যা মানুষের দেহ অথবা মনের ভেতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যাতে মানুষ অসুস্থ হয়, মরে যায় অথবা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় অথবা কোন কাজ করে ভুলে যায়। এরূপ যাদুকে হাক্বীক্বী যাদু বলা হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে এ প্রকারের যাদু করা হয়েছিল। (২) এমন কিছু আমলের মধ্যেম, যে যাদু চোখ এবং দৃষ্টিশক্তির উপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে কোন বস্তুকে বাস্তবতার বিপরীত দেখা যায়। এরূপ যাদুকে তাখঈলী যাদু বলা হয়। ফিরাউনের যাদুকররা মূসা (আঃ) এর সাথে এ প্রকারের যাদু করেছিল। কুরআনে এসেছে,
﴿فَاِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ اِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ اَنَّهَا تَسْعٰى﴾
অতঃপর তাদের যাদুর প্রভাবে মূসার কাছে মনে হলো, যেন তাদের রশি ও লাঠিগুলো ছোটাছুটি করছে। (সূরা ত্বা-হা- ৬৬)
﴿فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا سَحَرُوْاۤ اَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوْهُمْ وَجَآءُوْا بِسِحْرٍ عَظِيْمٍ﴾
যখন তারা নিজেদের যাদু ছাড়ল, তখন তা দ্বারা লোকদের চোখে যাদু করল এবং তাদের আতঙ্কিত করে তুলল। (সূরা আ‘রাফ- ১১৬)
তবে যেভাবেই হোক না কেন যে ব্যক্তি এই কাজে লিপ্ত হবে, তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা এটি স্পষ্ট কুফর। এতে অনেক বড় ধরনের শিরক ও কুফর মিশ্রিত রয়েছে। আল্লাহর কালাম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নায় এ কাজটিকে কুফর হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوْتَ وَمَارُوْتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ اَحَدٍ حَتّٰى يَقُوْلَاۤ اِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُوْنَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُوْنَ بِهٖ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهٖ وَمَا هُمْ بِضَآرِّيْنَ بِهٖ مِنْ اَحَدٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ وَيَتَعَلَّمُوْنَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوْا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهٗ فِى الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَّلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهٖۤ اَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ ‐ وَلَوْ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَمَثُوْبَةٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ خَيْرٌ لَّوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ﴾
সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদুবিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারূত-মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিত। তবে তারা উভয়ে কাউকে তা ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষা দিত না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এ কথা না বলত যে, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ। অতএব, তুমি কুফরী করো না; অথচ তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করত যা দ্বারা স্বামী ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়। তবে তারা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারত না। আর তারা শিক্ষা করত এমন বিষয়, যা তাদের ক্ষতি করে এবং কোন উপকার করে না। আর নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। আর যার বিনিময়ে তারা নিজেদেরকে বিক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট যদি তারা তা জানত। আর যদি তারা ঈমান আনত এবং ভয় করত, তবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণ লাভ করত, যদি তারা এটা বুঝত! (সূরা বাকারা- ১০২, ১০৩)
অনুরূপভাবে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা, (২) যাদু করা, (৩) অন্যায়ভাবে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছে, (৪) সূদ খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৬৬; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯।]
অপর হাদীসে যাদুকরদেরকে হত্যা করা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ جُنْدُبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : حَدُّ السَّاحِرِ ضَرْبُهٗ بِالسَّيْفِ
জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তরবারি দিয়ে তার গর্দান কেটে ফেলা। [বায়হাকী, হা/১৬৯৪২; তিরমিযী, হা/১৪৬০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮০৭৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৬৫; মিশকাত, হা/৩৫৫১; শাইখ আলবানী হাদীসটির সনদকে যঈফ বলেছেন।]
এসব আয়াত ও হাদীসের প্রতি দৃষ্টি রেখেই আলেমগণ যাদুকরদেরকে মুরতাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদেরকে হত্যা করার হুকুম প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য যে, যাদুর কারণে কোন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
১. যাদুকররা যাদুমন্ত্র পাঠ করার সময় এমন কিছু বাক্য উচ্চারণ করে, যা স্পষ্ট শিরক ও কুফরের অন্তর্ভুক্ত। সেসব বাক্য উচ্চারণ করার পর কোন ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে না।
২. যাদুকররা যাদু করার সময় এমন কিছু কাজ করে, যা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্ট শিরক ও কুফর হিসেবে পরিগণিত। আর সেগুলো এমন পর্যায়ের গোনাহ, যা তাদেরকে সরাসরি ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যেমন- কুরআনের আয়াত উল্টো করে লিখা, কুরআনের অপমান করা, শয়তানের আনুগত্য করা, শয়তানের নামে পশু জবাই করা ইত্যাদি।
৩. অনেক যাদুকর গায়েবী খবর জানে বলে দাবি করে থাকে। আবার অনেকে যাদুকরদের ব্যাপারেও অনুরূপ বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে। অথচ এরূপ বৈশিষ্ট্যের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ তা‘আলা। তাঁকে ছাড়া অন্য কেউ এ ব্যাপারে অবগত নয়। সুতরাং এ ধরনের দাবি করা এবং কারো এ ব্যাপারে অনুরূপ বিশ্বাস স্থাপন করাটা স্পষ্ট শিরক। এরূপ শিরকের ফলে যে কোন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।
اَلنَّاقِضُ السَّادِسُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
﴿فَاِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ اِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ اَنَّهَا تَسْعٰى﴾
অতঃপর তাদের যাদুর প্রভাবে মূসার কাছে মনে হলো, যেন তাদের রশি ও লাঠিগুলো ছোটাছুটি করছে। (সূরা ত্বা-হা- ৬৬)
﴿فَلَمَّاۤ اَلْقَوْا سَحَرُوْاۤ اَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوْهُمْ وَجَآءُوْا بِسِحْرٍ عَظِيْمٍ﴾
যখন তারা নিজেদের যাদু ছাড়ল, তখন তা দ্বারা লোকদের চোখে যাদু করল এবং তাদের আতঙ্কিত করে তুলল। (সূরা আ‘রাফ- ১১৬)
তবে যেভাবেই হোক না কেন যে ব্যক্তি এই কাজে লিপ্ত হবে, তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা এটি স্পষ্ট কুফর। এতে অনেক বড় ধরনের শিরক ও কুফর মিশ্রিত রয়েছে। আল্লাহর কালাম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নায় এ কাজটিকে কুফর হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَاتَّبَعُوْا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِيْنُ عَلٰى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلٰكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوْتَ وَمَارُوْتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ اَحَدٍ حَتّٰى يَقُوْلَاۤ اِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُوْنَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُوْنَ بِهٖ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهٖ وَمَا هُمْ بِضَآرِّيْنَ بِهٖ مِنْ اَحَدٍ اِلَّا بِاِذْنِ اللهِ وَيَتَعَلَّمُوْنَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُوْا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهٗ فِى الْاٰخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَّلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهٖۤ اَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ ‐ وَلَوْ اَنَّهُمْ اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَمَثُوْبَةٌ مِّنْ عِنْدِ اللهِ خَيْرٌ لَّوْ كَانُوْا يَعْلَمُوْنَ﴾
সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত, তারা তারই অনুসরণ করছে। সুলায়মান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা লোকদেরকে যাদুবিদ্যা এবং যা বাবেল শহরে হারূত-মারূত ফেরেশতাদ্বয়ের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছিল তা শিক্ষা দিত। তবে তারা উভয়ে কাউকে তা ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষা দিত না যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এ কথা না বলত যে, আমরা পরীক্ষাস্বরূপ। অতএব, তুমি কুফরী করো না; অথচ তারা উভয়ের নিকট তা শিক্ষা করত যা দ্বারা স্বামী ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়। তবে তারা আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারত না। আর তারা শিক্ষা করত এমন বিষয়, যা তাদের ক্ষতি করে এবং কোন উপকার করে না। আর নিশ্চয় তারা জ্ঞাত আছে যে, অবশ্য যে কেউ ওটা ক্রয় করেছে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। আর যার বিনিময়ে তারা নিজেদেরকে বিক্রয় করেছে তা নিকৃষ্ট যদি তারা তা জানত। আর যদি তারা ঈমান আনত এবং ভয় করত, তবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণ লাভ করত, যদি তারা এটা বুঝত! (সূরা বাকারা- ১০২, ১০৩)
অনুরূপভাবে হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা, (২) যাদু করা, (৩) অন্যায়ভাবে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছে, (৪) সূদ খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া। [সহীহ বুখারী, হা/২৭৬৬; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯।]
অপর হাদীসে যাদুকরদেরকে হত্যা করা নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ جُنْدُبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ -- : حَدُّ السَّاحِرِ ضَرْبُهٗ بِالسَّيْفِ
জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তরবারি দিয়ে তার গর্দান কেটে ফেলা। [বায়হাকী, হা/১৬৯৪২; তিরমিযী, হা/১৪৬০; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮০৭৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৬৬৫; মিশকাত, হা/৩৫৫১; শাইখ আলবানী হাদীসটির সনদকে যঈফ বলেছেন।]
এসব আয়াত ও হাদীসের প্রতি দৃষ্টি রেখেই আলেমগণ যাদুকরদেরকে মুরতাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদেরকে হত্যা করার হুকুম প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য যে, যাদুর কারণে কোন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
১. যাদুকররা যাদুমন্ত্র পাঠ করার সময় এমন কিছু বাক্য উচ্চারণ করে, যা স্পষ্ট শিরক ও কুফরের অন্তর্ভুক্ত। সেসব বাক্য উচ্চারণ করার পর কোন ব্যক্তি মুসলিম থাকতে পারে না।
২. যাদুকররা যাদু করার সময় এমন কিছু কাজ করে, যা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্ট শিরক ও কুফর হিসেবে পরিগণিত। আর সেগুলো এমন পর্যায়ের গোনাহ, যা তাদেরকে সরাসরি ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যেমন- কুরআনের আয়াত উল্টো করে লিখা, কুরআনের অপমান করা, শয়তানের আনুগত্য করা, শয়তানের নামে পশু জবাই করা ইত্যাদি।
৩. অনেক যাদুকর গায়েবী খবর জানে বলে দাবি করে থাকে। আবার অনেকে যাদুকরদের ব্যাপারেও অনুরূপ বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে। অথচ এরূপ বৈশিষ্ট্যের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ তা‘আলা। তাঁকে ছাড়া অন্য কেউ এ ব্যাপারে অবগত নয়। সুতরাং এ ধরনের দাবি করা এবং কারো এ ব্যাপারে অনুরূপ বিশ্বাস স্থাপন করাটা স্পষ্ট শিরক। এরূপ শিরকের ফলে যে কোন ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়।
اَلنَّاقِضُ السَّادِسُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের পক্ষ নেয়া এবং তাদেরকে সহযোগিতা করা। যদি কোন ব্যক্তি অপর কারো কুফরী কর্মে সহযোগিতা করে আর যদি সেই কুফরী কর্মটি এমন হয় যে, সেটি মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়, তাহলে উক্ত কুফরী কর্মে সহযোগিতা করার কারণেও যে কোন মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। ফলে সে মুরতাদ হিসেবে পরিগণিত হবে এবং তার উপর মুরতাদের বিধান প্রযোজ্য হবে। মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার সহযোগীরা এই পদ্ধতিতেই ইসলাম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। তারা মৌখিকভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দিলেও কার্যক্রমে সর্বদা কাফির-মুশরিকদের পক্ষ অবলম্বন করত এবং তাদেরকে সহযোগিতা করত। আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে বলেন,
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়।
(সূরা মুজাদালা- ২২)
কাফিরদেরকে সহযোগিতার অপরাধে উপরোক্ত মূলনীতি ছাড়াও আরো কয়েকটি দিক থেকেও যে কোন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
১. ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার অর্থ হচ্ছে, উক্ত কুফরী কর্মে ঐক্যমত পোষণ করা অথবা উক্ত কুফরী কর্মে সন্তুষ্ট থাকা। অথচ কোন কুফরী কর্মের প্রতি এরূপ মনোবাসনা রাখাটাই হচ্ছে একটি বড় ধরনের কুফরী এবং এর বিপরীতে যে কোন কুফরী কর্মের প্রতি ঘৃণা পোষণ করাটাই হচ্ছে ঈমানের দাবি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ
যদি তারা আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি এবং তাঁর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস রাখত, তবে তারা কখনোই তাদেরকে (কাফিরদেরকে) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না; কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসেক। (সূরা মায়েদা- ৮১)
২. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা বা তাদের সাথে মিত্রতা বজায় রাখা। ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার কারণ হিসেবে ইতিপূর্বে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৩. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা যেসব কুফরী কাজ করে থাকে সেগুলো করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। সুযোগ পেলে সেও উক্ত কর্মে সরাসরি লিপ্ত হবে। কোন কুফরী কর্মের ব্যাপারে এরূপ মনোবাসনা রাখাটা একটি বড় ধরনের ভ্রষ্টতা। আল্লাহ এরূপ করতে সরাসরি নিষেধ করে দিয়েছেন এবং এর শেষ পরিণতির কথাও জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে (জাহান্নামের) অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হুদ- ১১৩)
৪. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করে কাফিরদের আনুগত্যকে মেনে নেয়া। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
৫. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করা। কেননা কাফিররা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রোহ করে থাকে। আর সে কাফিরদেরকে সহযোগিতা করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কীভাবে পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাতের আশা করা যেতে পারে?
৬. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করলে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা কমে যায়। এমতাবস্থায় তারা শুধু কাফিরদের উপরই নির্ভর করে। ফলে তারা নিজেদের ছোট-বড় যে কোন প্রয়োজনে বা বিপদে কাফিরদের সাহায্য-সহযোগিতা কমনা করে। অতঃপর কাফিররা যদি তাদেরকে এমন কোন শর্তের ভিত্তিতে সাহায্য-সহযোগিতা করে, যা ঈমান ও ইসলামের দাবির বর্হিভুত, তাহলে তারা সেটা মেনে নিতেও কষ্ট অনুভব করে না। আর যাদের ঈমান এই পর্যায়ে চলে যায়, তাদেরকে কীভাবে মুসলিম হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে?
اَلنَّاقِضُ السَّابِعُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
﴿لَا تَجِدُ قَوْمًا يُّؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَوْ كَانُوْاۤ اٰبَآءَهُمْ اَوْ اَبْنَآءَهُمْ اَوْ اِخْوَانَهُمْ اَوْ عَشِيْرَتَهُمْ﴾
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়।
(সূরা মুজাদালা- ২২)
কাফিরদেরকে সহযোগিতার অপরাধে উপরোক্ত মূলনীতি ছাড়াও আরো কয়েকটি দিক থেকেও যে কোন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
১. ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার অর্থ হচ্ছে, উক্ত কুফরী কর্মে ঐক্যমত পোষণ করা অথবা উক্ত কুফরী কর্মে সন্তুষ্ট থাকা। অথচ কোন কুফরী কর্মের প্রতি এরূপ মনোবাসনা রাখাটাই হচ্ছে একটি বড় ধরনের কুফরী এবং এর বিপরীতে যে কোন কুফরী কর্মের প্রতি ঘৃণা পোষণ করাটাই হচ্ছে ঈমানের দাবি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ
যদি তারা আল্লাহর প্রতি, নবীর প্রতি এবং তাঁর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস রাখত, তবে তারা কখনোই তাদেরকে (কাফিরদেরকে) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না; কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসেক। (সূরা মায়েদা- ৮১)
২. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা বা তাদের সাথে মিত্রতা বজায় রাখা। ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার কারণ হিসেবে ইতিপূর্বে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৩. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, তারা যেসব কুফরী কাজ করে থাকে সেগুলো করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। সুযোগ পেলে সেও উক্ত কর্মে সরাসরি লিপ্ত হবে। কোন কুফরী কর্মের ব্যাপারে এরূপ মনোবাসনা রাখাটা একটি বড় ধরনের ভ্রষ্টতা। আল্লাহ এরূপ করতে সরাসরি নিষেধ করে দিয়েছেন এবং এর শেষ পরিণতির কথাও জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَلَا تَرْكَنُوْاۤ اِلَى الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ
যারা যুলুম করেছে তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না, তাহলে (জাহান্নামের) অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক থাকবে না এবং তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হবে না। (সূরা হুদ- ১১৩)
৪. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করে কাফিরদের আনুগত্যকে মেনে নেয়া। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اِنْ تُطِيْعُوا الَّذِيْنَ كَفَرُوْا يَرُدُّوْكُمْ عَلٰۤى اَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوْا خَاسِرِيْنَ
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
৫. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করা। কেননা কাফিররা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিদ্রোহ করে থাকে। আর সে কাফিরদেরকে সহযোগিতা করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কীভাবে পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাতের আশা করা যেতে পারে?
৬. কাফিরদের কোন কাজে সহযোগিতা করলে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতা কমে যায়। এমতাবস্থায় তারা শুধু কাফিরদের উপরই নির্ভর করে। ফলে তারা নিজেদের ছোট-বড় যে কোন প্রয়োজনে বা বিপদে কাফিরদের সাহায্য-সহযোগিতা কমনা করে। অতঃপর কাফিররা যদি তাদেরকে এমন কোন শর্তের ভিত্তিতে সাহায্য-সহযোগিতা করে, যা ঈমান ও ইসলামের দাবির বর্হিভুত, তাহলে তারা সেটা মেনে নিতেও কষ্ট অনুভব করে না। আর যাদের ঈমান এই পর্যায়ে চলে যায়, তাদেরকে কীভাবে মুসলিম হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে?
اَلنَّاقِضُ السَّابِعُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর পক্ষ হতে যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন সেই দ্বীনকে বা দ্বীনের কোন বিষয়কে অপছন্দ করা। যেমন- এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাসূল ﷺ এর আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মতাদর্শ উত্তম বা রাসূল ﷺ এর আনীত জীবনব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ ভাল অথবা এরূপ মন্তব্য করা যে, ইসলাম একটি পুরাতন ধর্মবিশ্বাস; বর্তমান যুগের জন্য এর বিধি-বিধানসমূহ উপযুক্ত নয়। এই যুগের জন্য গণতন্ত্র অথবা রাজতন্ত্র অথবা সমাজতন্ত্র অথবা ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি সমাজ ব্যবস্থাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
অথবা এরূপ মনে করা যে, ইসলামের একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার বিধান যথোপযুক্ত নয়; বরং এটি নারী-পুরুষের সমধিকারের দাবি বহির্ভুত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই নারী-পুরুষ সকলকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি বিধান দিয়েছেন যে,
وَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِى الْيَتَامٰى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
যদি তোমরা ভয় কর যে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী দু’জন, তিনজন অথবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। (সূরা নিসা- ৩)
অনুরূপভাবে কেউ যদি মনে করে যে, মুহাম্মাদ ﷺ যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন, তার থেকে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যে দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন সেগুলোই উত্তম অথবা সেগুলোর কোন একটি উত্তম, তাহলে তারও ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা মুহাম্মাদ ﷺ এর দ্বীনটি হচ্ছে পূর্বের সমস্ত দ্বীনকে রহিতকারী। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه ! لَوْ كَانَ مُوْسٰى بَيْنَ أَظْهَرُكُمْ، ثُمَّ اتَّبَعْتُمُوْهُ وَتَرْكْتُمُوْنِيْ؛ لَضَلَلْتُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ! যদি মুসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে আসেন আর তোমরা তার আনুগত্য কর এবং আমাকে ছেড়ে দাও, তাহলে তোমরা সুদূর ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হবে।
(মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/৮১০)
অতএব রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগমনের পর ইসলাম ছাড়া পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী অন্য কোন দ্বীন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
অতএব যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (আঃ) এর আনীত জীবনাদর্শ সম্পর্কে এরূপ ধারণা পোষণ করবে, নিশ্চিতভাবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কারণ পরিলক্ষিত হয়। যেমন :
১. এরূপ বিশ্বাস পোষণ করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনে না করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলামকে পরিপূর্ণ ও যথোপযুক্ত জীবনবিধান হিসেবে মেনে না নিবে, সে একদিকে কুরআনের এই আয়াতকে অস্বীকার করে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে; অপরদিকে অন্যান্য অপূর্ণাঙ্গ দ্বীনের অনুসরণ করে ভ্রষ্টতা থেকে আরো ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হবে।
২. এরূপ বিশ্বাস পোষণ করার অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনাদর্শকে সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে বিশ্বাস না করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
অতএব যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনাদর্শকে সর্বত্তোম আদর্শ হিসেবে মানে না, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও পরকালের উপরও বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপরও যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে না, সে কখনো মুসলিম হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না।
৩. এরূপ বিশ্বাস পোষণ করার করার অর্থ হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ যা কিছু বলতেন, সেগুলো মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসত। যেমনিভাবে কুরআন মাজীদে এসেছে,
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কোন কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
অতএব যে ব্যক্তি এভাবে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়ে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে কাফির হয়ে যায়।
اَلنَّاقِضُ الثَّا مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِى الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবে না; আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ৮৫)
অথবা এরূপ মনে করা যে, ইসলামের একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার বিধান যথোপযুক্ত নয়; বরং এটি নারী-পুরুষের সমধিকারের দাবি বহির্ভুত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই নারী-পুরুষ সকলকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি বিধান দিয়েছেন যে,
وَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِى الْيَتَامٰى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَآءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
যদি তোমরা ভয় কর যে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী দু’জন, তিনজন অথবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। (সূরা নিসা- ৩)
অনুরূপভাবে কেউ যদি মনে করে যে, মুহাম্মাদ ﷺ যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন, তার থেকে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ যে দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন সেগুলোই উত্তম অথবা সেগুলোর কোন একটি উত্তম, তাহলে তারও ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা মুহাম্মাদ ﷺ এর দ্বীনটি হচ্ছে পূর্বের সমস্ত দ্বীনকে রহিতকারী। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِه ! لَوْ كَانَ مُوْسٰى بَيْنَ أَظْهَرُكُمْ، ثُمَّ اتَّبَعْتُمُوْهُ وَتَرْكْتُمُوْنِيْ؛ لَضَلَلْتُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ! যদি মুসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে আসেন আর তোমরা তার আনুগত্য কর এবং আমাকে ছেড়ে দাও, তাহলে তোমরা সুদূর ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হবে।
(মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/৮১০)
অতএব রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আগমনের পর ইসলাম ছাড়া পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী অন্য কোন দ্বীন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
অতএব যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (আঃ) এর আনীত জীবনাদর্শ সম্পর্কে এরূপ ধারণা পোষণ করবে, নিশ্চিতভাবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কারণ পরিলক্ষিত হয়। যেমন :
১. এরূপ বিশ্বাস পোষণ করার অর্থ হচ্ছে, ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনে না করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলামকে পরিপূর্ণ ও যথোপযুক্ত জীবনবিধান হিসেবে মেনে না নিবে, সে একদিকে কুরআনের এই আয়াতকে অস্বীকার করে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে; অপরদিকে অন্যান্য অপূর্ণাঙ্গ দ্বীনের অনুসরণ করে ভ্রষ্টতা থেকে আরো ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হবে।
২. এরূপ বিশ্বাস পোষণ করার অর্থ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনাদর্শকে সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে বিশ্বাস না করা। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের দিনকে ভয় করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে, তাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব- ২১)
অতএব যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনাদর্শকে সর্বত্তোম আদর্শ হিসেবে মানে না, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও পরকালের উপরও বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপরও যথাযথভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে না, সে কখনো মুসলিম হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না।
৩. এরূপ বিশ্বাস পোষণ করার করার অর্থ হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহর অবাধ্য হওয়া। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ যা কিছু বলতেন, সেগুলো মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসত। যেমনিভাবে কুরআন মাজীদে এসেছে,
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى – اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْيٌ يُّوْحٰى
তিনি প্রবৃত্তি হতে কোন কথা বলেন না। এটা তো এক ওহী, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়। (সূরা নাজম- ৩, ৪)
অতএব যে ব্যক্তি এভাবে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার বিষয়ে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে সে কাফির হয়ে যায়।
اَلنَّاقِضُ الثَّا مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ পৃথিবীর অন্যান্য বিষয় বা বস্তুর ক্ষেত্রে যেরূপ ভালোবাসা প্রদর্শন করা হয়, আল্লাহর ক্ষেত্রেও অনুরূপ বা তার থেকেও কম ভালোবাসা প্রদর্শন করা অথবা আল্লাহকে যতটুকু পরিমাণ ভালোবাসা উচিত, অন্য কোন বিষয় বা বস্তুকে ততটুকু পরিমাণ ভালোবাসা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ﴾
মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে তেমনি ভালোবাসে যেমনটি কেবল আল্লাহকেই ভালোবাসা উচিত। আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়ন করে, তারা তো তাঁকেই সর্বাধিক ভালোবাসবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
উল্লেখ্য যে, বিষয়টি ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে। যেমন-
১. আল্লাহ তা‘আলা একক ইলাহ। তিনি সর্বদিক থেকেই একক। তার কোন শরীক নেই। সুতরাং বান্দার পক্ষ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি একক এবং এ ক্ষেত্রেও তাঁর কোন শরীক নেই। সুতরাং এমতাবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর ন্যায় অপর কাউকে ভালোবাসে, তাহলে সেটি শিরক হিসেবেই পরিগণিত হয়। আর যে কোনভাবে শিরকে পতিত হওয়াটাই হচ্ছে ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ।
২. আল্লাহর ন্যায় অন্য কাউকে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর ভালোবাসায় কোনরূপ অসম্পূর্ণতা বজায় রাখা। আর আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় কোনরূপ অসম্পূর্ণতা বজায় থাকলে, যে কোন বান্দার পক্ষে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান পালন করা কঠিন হয়ে যায়- এমনকি অনেক সময় তা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেমন- যথাযথভাবে সালাত আদায় করা যায় না, অন্তরে কাফিরদের প্রতি ঘৃণা জাগ্রত হয় না, জিহাদের গমন করার মানসিকতা সৃষ্টি হয় না, মানুষের প্রতি অন্যায় করার ব্যাপারে দ্বিধাবোধ হয় না, হালাল-হারাম যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায় না, গুনাহের প্রতি ঘৃণাবোধ জাগ্রত হয় না, তওবা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয় না। বরং এর বিপরীতে অন্তরে এমন কিছু বিশ্বাস ও মনোভাব জাগ্রত হয়, যা সাধারণত একজন কাফির ও মুশরিকদের অন্তরে বিদ্যমান থাকে। যেমন- আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর মনোনীত ইসলামী বিধি-বিধানের প্রতি সীমাহীন বিদ্বেষ, আল্লাহর দ্বীনের বিভিন্ন বিধান পালনে অনিহা, শিরক ও কুফরী কর্মকান্ডের প্রতি আগ্রহ, কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা এবং তাদেরকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এসব বিষয় যে কোন ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার আলামত বহন করে থাকে। অতএব কোন ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসায় কমতি থাকলে অথবা আল্লাহর ভালোবাসার মধ্যে অন্য কাউকে শরীক করলে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
اَلنَّاقِضُ التَّاسِعُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
﴿وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّتَّخِذُ مِنْ دُوْنِ اللهِ اَنْدَادًا يُّحِبُّوْنَهُمْ كَحُبِّ اللهِؕ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ﴾
মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে তেমনি ভালোবাসে যেমনটি কেবল আল্লাহকেই ভালোবাসা উচিত। আর যারা (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়ন করে, তারা তো তাঁকেই সর্বাধিক ভালোবাসবে। (সূরা বাক্বারা- ১৬৫)
উল্লেখ্য যে, বিষয়টি ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে। যেমন-
১. আল্লাহ তা‘আলা একক ইলাহ। তিনি সর্বদিক থেকেই একক। তার কোন শরীক নেই। সুতরাং বান্দার পক্ষ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি একক এবং এ ক্ষেত্রেও তাঁর কোন শরীক নেই। সুতরাং এমতাবস্থায় কেউ যদি আল্লাহর ন্যায় অপর কাউকে ভালোবাসে, তাহলে সেটি শিরক হিসেবেই পরিগণিত হয়। আর যে কোনভাবে শিরকে পতিত হওয়াটাই হচ্ছে ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ।
২. আল্লাহর ন্যায় অন্য কাউকে ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর ভালোবাসায় কোনরূপ অসম্পূর্ণতা বজায় রাখা। আর আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় কোনরূপ অসম্পূর্ণতা বজায় থাকলে, যে কোন বান্দার পক্ষে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান পালন করা কঠিন হয়ে যায়- এমনকি অনেক সময় তা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যেমন- যথাযথভাবে সালাত আদায় করা যায় না, অন্তরে কাফিরদের প্রতি ঘৃণা জাগ্রত হয় না, জিহাদের গমন করার মানসিকতা সৃষ্টি হয় না, মানুষের প্রতি অন্যায় করার ব্যাপারে দ্বিধাবোধ হয় না, হালাল-হারাম যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায় না, গুনাহের প্রতি ঘৃণাবোধ জাগ্রত হয় না, তওবা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয় না। বরং এর বিপরীতে অন্তরে এমন কিছু বিশ্বাস ও মনোভাব জাগ্রত হয়, যা সাধারণত একজন কাফির ও মুশরিকদের অন্তরে বিদ্যমান থাকে। যেমন- আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর মনোনীত ইসলামী বিধি-বিধানের প্রতি সীমাহীন বিদ্বেষ, আল্লাহর দ্বীনের বিভিন্ন বিধান পালনে অনিহা, শিরক ও কুফরী কর্মকান্ডের প্রতি আগ্রহ, কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা এবং তাদেরকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি। নিঃসন্দেহে এসব বিষয় যে কোন ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার আলামত বহন করে থাকে। অতএব কোন ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর ভালোবাসায় কমতি থাকলে অথবা আল্লাহর ভালোবাসার মধ্যে অন্য কাউকে শরীক করলে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যাবে।
اَلنَّاقِضُ التَّاسِعُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর পক্ষ হতে যে জীবনব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন তার পরিবর্তে অন্য কোন জীবনব্যবস্থাকে উত্তম মনে করা। যেমন- গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ইহুদীবাদ, খ্রিস্টবাদ, হিন্দুত্ববাদ ইত্যাদি। অতএব যদি কোন ব্যক্তি মৌখিকভাবে দাবি করে যে, ‘‘আমি মুসলিম’’ অথবা বলে যে, ‘‘আমার রব আল্লাহ, আমার নবী মুহাম্মাদ ﷺ এবং আমার দ্বীন ইসলাম’’ অথচ সে জীবন-যাপন করে গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র অথবা অনুরূপ অন্য কোন জীবনব্যবস্থা চর্চার মাধ্যমে, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, সে তার উক্ত মৌখিক দাবিসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়; বরং সে মৌখিকভাবে দাবিকৃত বিষয়সমূহ অপছন্দ করে এবং এর বিপরীতে সে যেটা কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করে আসছে, সেগুলোকে উত্তম মনে করে। সুতরাং এরূপ ব্যক্তিকে মুসলিম হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না।
অনুরূপভাবে যদি কেউ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করা সত্ত্বেও ইসলামের কিছু কিছু বিধান যেমন- রজমের আইন, যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসী বানানোর আইন, জিযিয়া-করের আইন, জিহাদের আইন, পর্দার আইন ইত্যাদি বিষয়সমূহের ব্যাপারে মনে করে যে, এগুলো উত্তম নয়; বরং এর বিপরীতে বিভিন্ন দেশে যেসব আইন প্রচলিত রয়েছে সেগুলো অথবা সেগুলোর কোন একটি উত্তম, তাহলে তার মুসলিম দাবি করাটাও এক ধরনের ভ্রান্তি হিসেবে পরিগণিত হবে।
অনুরূপভাবে কেউ যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও এমন কোন আদালতে বিচার প্রার্থনা করে, যেটা আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান অনুযায়ী পরিচালত নয়; বরং মানুষের তৈরি আইন অনুযায়ী পরিচালিত, তাহলে তার মুসলিম হিসেবে দাবি করাটিও মিথ্যা হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদের এসব লোকের চিত্র তুলে ধরে বলেন,
ألَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَّكْفُرُوْا بِه وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
অনুরূপভাবে কেউ যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন সংবিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, সে ইসলামী সংবিধানকে অপছন্দ করে এবং যে কাজে লিপ্ত আছে সেটিকেই পছন্দ করে থাকে। এরূপ ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তিন ধরনের হুকুম প্রদান করেছেন। যেমন- এক আয়াতে তিনি এদেরকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে মীমাংসা করে না তারাই কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
অপর আয়াতে তিনি এদেরকে যালিম হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না- তারা যালিম (অন্যায়কারী)। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
অপর আয়াতে তিনি এদেরকে ফাসিক হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না- তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
একই অপরাধের কারণে একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন তিনটি হুকুম প্রদান করার রহস্য হচ্ছে, প্রথমতঃ তার এ কাজটি আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করার শামিল। কাজেই এটি কুফরী। দ্বিতীয়তঃ তার এ কাজটি ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতির বিরোধী। কারণ আল্লাহ যথার্থ ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতি অনুযায়ীই হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই আল্লাহর হুকুম থেকে সরে এসে যখন সে ফায়সালা করল তখন সে আসলে যুলুম করল। তৃতীয়তঃ বান্দা হওয়া সত্ত্বেও যখনই সে নিজের প্রভুর আইন অমান্য করে নিজের বা অন্যের মনগড়া আইন প্রবর্তন করল, তখনই সে দাসত্ব ও আনুগত্যের গন্ডীর বাইরে চলে গেল। আর এটিই হলো অবাধ্যতা বা ফাসিকী। এ কুফর, যুলুম ও ফিসক তার নিজের ধরন অনুযায়ী অনিবার্যভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্যেরই বাস্তব রূপ। সুতরাং যেখানেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হবে, সেখানেই এ তিনটি বিষয় বিদ্যমান থাকবে।
উল্লেখ্য যে, ইসলামের কোন বিষয় অপছন্দনীয় হওয়ার কারণে ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার দিকগুলো হচ্ছে–
১. আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। যেমন তিনি বলেন,
﴿إِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلَامُ ﴾
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।
(সূরা আলে ইমরান- ১৯)
অতএব ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবন-বিধান অথবা সেগুলোর কোন একটি আইনও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন- অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা আল ইমরান- ৮৫)
অতএব যে জীবনবিধান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সেই জীবনবিধান বাদ দিয়ে যেসব জীবনবিধান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় সেগুলোর কোন একটির অনুসরণ করাটা নিশ্চিত গোমরাহী। এরূপ কাজ একমাত্র আল্লাহদ্রোহী তথা কাফের-মুশরিকরাই করে থাকে।
২. পৃথিবীর বুকে একমাত্র ইসলামই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনব্যবস্থা। কেননা এতে রয়েছে মানব জীবনের সকল বিষয়ের যথার্থ সমাধান, যা মানবরচিত অন্য কোন জীবনব্যবস্থার মধ্যে নেই। সুতরাং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ঘোষণা দিয়ে বলেন,
﴿اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
৩. ইসলামের কোন বিষয় অপছন্দ করলে যে কোন ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের বিপরীত বিষয়গুলো স্থান নেয়। যেমন- আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার কমতি, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা হ্রাস, বিভিন্ন প্রকার ইবাদাতে অনিহা প্রকাশ ইত্যাদি। অবশেষে এক পর্যায়ে এসব বিষয় একত্রিত হয়ে ব্যক্তির অন্তর আল্লাহদ্রোহীতায় রূপ নেয়। তখন সে সরাসরি ইসলাম ত্যাগ করার ঘোষণা দেয়।
اَلنَّاقِضُ العَاشِرُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অনুরূপভাবে যদি কেউ নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করা সত্ত্বেও ইসলামের কিছু কিছু বিধান যেমন- রজমের আইন, যুদ্ধবন্দীদেরকে দাস-দাসী বানানোর আইন, জিযিয়া-করের আইন, জিহাদের আইন, পর্দার আইন ইত্যাদি বিষয়সমূহের ব্যাপারে মনে করে যে, এগুলো উত্তম নয়; বরং এর বিপরীতে বিভিন্ন দেশে যেসব আইন প্রচলিত রয়েছে সেগুলো অথবা সেগুলোর কোন একটি উত্তম, তাহলে তার মুসলিম দাবি করাটাও এক ধরনের ভ্রান্তি হিসেবে পরিগণিত হবে।
অনুরূপভাবে কেউ যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও এমন কোন আদালতে বিচার প্রার্থনা করে, যেটা আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান অনুযায়ী পরিচালত নয়; বরং মানুষের তৈরি আইন অনুযায়ী পরিচালিত, তাহলে তার মুসলিম হিসেবে দাবি করাটিও মিথ্যা হিসেবে গণ্য হবে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদের এসব লোকের চিত্র তুলে ধরে বলেন,
ألَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ اٰمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَّكْفُرُوْا بِه وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلَالًا ۢبَعِيْدًا
তুমি কি তাদেরকে দেখনি যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস করে, অথচ তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। (সূরা নিসা- ৬০)
অনুরূপভাবে কেউ যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন সংবিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে, তাহলে ধরে নিতে হবে যে, সে ইসলামী সংবিধানকে অপছন্দ করে এবং যে কাজে লিপ্ত আছে সেটিকেই পছন্দ করে থাকে। এরূপ ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তিন ধরনের হুকুম প্রদান করেছেন। যেমন- এক আয়াতে তিনি এদেরকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে মীমাংসা করে না তারাই কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
অপর আয়াতে তিনি এদেরকে যালিম হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الظَّالِمُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন যারা সে অনুযায়ী বিচার-মীমাংসা করে না- তারা যালিম (অন্যায়কারী)। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
অপর আয়াতে তিনি এদেরকে ফাসিক হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللهُ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ
যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়াসালা করে না- তারা ফাসিক। (সূরা মায়েদা- ৪৭)
একই অপরাধের কারণে একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন তিনটি হুকুম প্রদান করার রহস্য হচ্ছে, প্রথমতঃ তার এ কাজটি আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করার শামিল। কাজেই এটি কুফরী। দ্বিতীয়তঃ তার এ কাজটি ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতির বিরোধী। কারণ আল্লাহ যথার্থ ইনসাফ ও ভারসাম্যনীতি অনুযায়ীই হুকুম দিয়েছিলেন। কাজেই আল্লাহর হুকুম থেকে সরে এসে যখন সে ফায়সালা করল তখন সে আসলে যুলুম করল। তৃতীয়তঃ বান্দা হওয়া সত্ত্বেও যখনই সে নিজের প্রভুর আইন অমান্য করে নিজের বা অন্যের মনগড়া আইন প্রবর্তন করল, তখনই সে দাসত্ব ও আনুগত্যের গন্ডীর বাইরে চলে গেল। আর এটিই হলো অবাধ্যতা বা ফাসিকী। এ কুফর, যুলুম ও ফিসক তার নিজের ধরন অনুযায়ী অনিবার্যভাবে আল্লাহর হুকুম অমান্যেরই বাস্তব রূপ। সুতরাং যেখানেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করা হবে, সেখানেই এ তিনটি বিষয় বিদ্যমান থাকবে।
উল্লেখ্য যে, ইসলামের কোন বিষয় অপছন্দনীয় হওয়ার কারণে ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার দিকগুলো হচ্ছে–
১. আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। যেমন তিনি বলেন,
﴿إِنَّ الدِّيْنَ عِنْدَ اللهِ الْإِسْلَامُ ﴾
নিশ্চয় আল্লাহর কাছে মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।
(সূরা আলে ইমরান- ১৯)
অতএব ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবন-বিধান অথবা সেগুলোর কোন একটি আইনও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন- অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ﴾
কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তা কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সূরা আল ইমরান- ৮৫)
অতএব যে জীবনবিধান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সেই জীবনবিধান বাদ দিয়ে যেসব জীবনবিধান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় সেগুলোর কোন একটির অনুসরণ করাটা নিশ্চিত গোমরাহী। এরূপ কাজ একমাত্র আল্লাহদ্রোহী তথা কাফের-মুশরিকরাই করে থাকে।
২. পৃথিবীর বুকে একমাত্র ইসলামই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনব্যবস্থা। কেননা এতে রয়েছে মানব জীবনের সকল বিষয়ের যথার্থ সমাধান, যা মানবরচিত অন্য কোন জীবনব্যবস্থার মধ্যে নেই। সুতরাং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ঘোষণা দিয়ে বলেন,
﴿اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা- ৩)
৩. ইসলামের কোন বিষয় অপছন্দ করলে যে কোন ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের বিপরীত বিষয়গুলো স্থান নেয়। যেমন- আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার কমতি, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসা হ্রাস, বিভিন্ন প্রকার ইবাদাতে অনিহা প্রকাশ ইত্যাদি। অবশেষে এক পর্যায়ে এসব বিষয় একত্রিত হয়ে ব্যক্তির অন্তর আল্লাহদ্রোহীতায় রূপ নেয়। তখন সে সরাসরি ইসলাম ত্যাগ করার ঘোষণা দেয়।
اَلنَّاقِضُ العَاشِرُ مِنْ نَّوَاقِضِ الْإِسْلَامِ
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দুনিয়াতে যে দ্বীন তথা জীবনবিধান দান করেছেন, সেই জীবনবিধান থেকে বিমুখ হয়ে যাওয়া অথবা এর কোন একটি আইনের বিরোধিতা করা। এটি হচ্ছে কোন ব্যক্তির ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ও স্পষ্ট ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার দিকসমূহ হলো :
১. আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াটা হচ্ছে কুফরীর আলামত। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন আয়াত নাযিল করতেন অথবা রাসূলুল্লাহ ﷺ যখনই তাদের কাছে দাওয়াত দিতেন, তখন সাথে সাথেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিত। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ ثُمَّ اَعْرَضَ عَنْهَاۤ اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ﴾
যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দেয়া হয়েছে অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়েছে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা সাজদা- ২২)
আর এর বিপরীতে মুমিন ব্যক্তির আলামত হচ্ছে, আল্লাহর বিধি-বিধান শোনার সাথে সাথেই গ্রহণ করে নেয়া। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‐ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ﴾
মুমিনদের উক্তি তো এই- যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম; মূলত তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই কৃতকার্য।
(সূরা নূর- ৫১, ৫২)
২. আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন আযাবের সম্মুখীন করবেন, যা সাধারণত একজন কাফির ব্যক্তির ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِۤيْ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَاۚ وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
যে আমার স্মরণ (কুরআন) হতে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার জীবন যাপন সংকুচিত হয়ে যাবে। আর আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। অতঃপর সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই আমার আয়াতসমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি সেটা ভুলে গিয়েছিলে; সুতরাং আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হলো। আর এভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাস্তি আরো কঠিন ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ১২৪-১২৭)
অতএব কোন ব্যক্তি মুসলিম দাবি করার পরও যদি ইসলামের কোন বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। চাই সেটা আকীদার ক্ষেত্রে অথবা ইবাদাতের ক্ষেত্রে হোক অথবা মুয়ামালাত বা লেনদেনের ক্ষেত্রে হোক অথবা চারিত্রিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে হোক। এ ধরনের প্রতিটি কাজই সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে এসব কুফরী থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন
১. আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াটা হচ্ছে কুফরীর আলামত। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন আয়াত নাযিল করতেন অথবা রাসূলুল্লাহ ﷺ যখনই তাদের কাছে দাওয়াত দিতেন, তখন সাথে সাথেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিত। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّهٖ ثُمَّ اَعْرَضَ عَنْهَاۤ اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ﴾
যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দিয়ে উপদেশ দেয়া হয়েছে অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়েছে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সূরা সাজদা- ২২)
আর এর বিপরীতে মুমিন ব্যক্তির আলামত হচ্ছে, আল্লাহর বিধি-বিধান শোনার সাথে সাথেই গ্রহণ করে নেয়া। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ اِذَا دُعُوْاۤ اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهٖ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ اَنْ يَّقُوْلُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‐ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ﴾
মুমিনদের উক্তি তো এই- যখন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়ার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তখন তারা বলে, আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য করলাম; মূলত তারাই সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই কৃতকার্য।
(সূরা নূর- ৫১, ৫২)
২. আল্লাহর দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন আযাবের সম্মুখীন করবেন, যা সাধারণত একজন কাফির ব্যক্তির ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِيْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِيْشَةً ضَنْكًا وَّنَحْشُرُهٗ يَوْمَ الْقِيَامَةِ اَعْمٰى ‐ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِۤيْ اَعْمٰى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْرًا ‐ قَالَ كَذٰلِكَ اَتَتْكَ اٰيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَاۚ وَكَذٰلِكَ الْيَوْمَ تُنْسٰى ‐ وَكَذٰلِكَ نَجْزِيْ مَنْ اَسْرَفَ وَلَمْ يُؤْمِنْ ۢبِاٰيَاتِ رَبِّهٖؕ وَلَعَذَابُ الْاٰخِرَةِ اَشَدُّ وَاَبْقٰى
যে আমার স্মরণ (কুরআন) হতে বিমুখ হবে, অবশ্যই তার জীবন যাপন সংকুচিত হয়ে যাবে। আর আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। অতঃপর সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালে? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই আমার আয়াতসমূহ তোমার নিকট এসেছিল, কিন্তু তুমি সেটা ভুলে গিয়েছিলে; সুতরাং আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হলো। আর এভাবেই আমি তাকে প্রতিফল দেই, যে বাড়াবাড়ি করে ও তার প্রতিপালকের নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আর পরকালের শাস্তি আরো কঠিন ও অধিক স্থায়ী। (সূরা ত্বা-হা, ১২৪-১২৭)
অতএব কোন ব্যক্তি মুসলিম দাবি করার পরও যদি ইসলামের কোন বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। চাই সেটা আকীদার ক্ষেত্রে অথবা ইবাদাতের ক্ষেত্রে হোক অথবা মুয়ামালাত বা লেনদেনের ক্ষেত্রে হোক অথবা চারিত্রিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে হোক। এ ধরনের প্রতিটি কাজই সুস্পষ্ট কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে এসব কুফরী থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন
ইসলাম ভঙ্গের উদাহরণসমূহকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। কেননা যে কোন ব্যক্তির ঈমান এই তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে ভঙ্গ হয়ে থাকে। সেগুলো হলো- (১) বিশ্বাসের মাধ্যমে, (২) উক্তির মাধ্যমে এবং (৩) কর্মের মাধ্যমে। নিম্নে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো :
(ক) বিশ্বাসের মাধ্যমে ইসলাম ভঙ্গের উদাহরণসমূহ :
এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা যে,
১. আল্লাহ বলতে কিছু নেই অথবা আল্লাহর কোন অস্তিত্ব নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা সত্তাগতভাবে সর্বত্র বিরাজমান।
৩. পৃথিবীর ব্যবস্থাপনায় আল্লাহর কোন হাত নেই; বরং পৃথিবী নিজে নিজেই পরিচালিত হচ্ছে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কিছু কিছু জীব-জন্তু সৃষ্টি করে অন্যায় করেছেন অথবা সেগুলোর সৃষ্টিকে নিষ্প্রয়োজন মনে করা।
৫. যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছাতেই সবকিছু সংঘটিত হয়, সুতরাং মানুষের অন্যায় কর্মের কারণে যদি আল্লাহ শাস্তি দেন তাহলে সেটি তিনি অন্যায় করবেন।
৬. ফেরেশতা বলতে কিছু নেই।
৭. ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা।
৮. মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর নবী ও রাসূল নন।
৯. মুহাম্মাদ ﷺ শেষ নবী নন; বরং তাঁর পরেও আরো নবী আগমন করবে।
১০. মুহাম্মদ ﷺ ১১টি বিবাহ করে অন্যায় করেছেন।
১১. মুহাম্মাদ ﷺ কর্তৃক আয়েশা (রাঃ)-কে বিবাহ করাটা ছিল অমানবিক।
১২. মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর ওহী বলতে কিছুই আগমন করত না; বরং তাঁর উপর কোন বিশেষ জিনের আছর পড়ত।
১৩. মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবনাদর্শ সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ নয় অথবা তাঁর জীবনাদর্শ বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য নয়।
১৪. কুরআন আল্লাহর বাণী নয়।
১৫. কুরআনের মধ্যে কোনরূপ ভুল রয়েছে।
১৬. কুরআনের অমুক অমুক বিধান যথার্থ নয়।
১৭. কুরআন পূর্বযুগের লোকদের জন্য প্রযোজ্য ছিল; এটি বর্তমান যুগের জন্য অনুপযুক্ত।
১৮. কিয়ামত, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, সৎকর্মের পুরস্কার, অসৎকর্মের শাস্তি বলতে কিছুই নেই; এগুলো কল্পনামাত্র।
১৯. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মিরাজ স্বশরীরে নয়; বরং স্বপ্নযুগে সংঘটিত হয়েছিল।
২০. রাসূলুল্লাহ ﷺ মিরাজে গমন করেননি।
২১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত অথবা যাকাত আদায় করা অথবা রোযা রাখা অথবা হজ্জ পালন করা ইসলামের কতিপয় অহেতুক কর্ম। এগুলো পালন করা মুসলিমদের জন্য ফরজ নয়।
২২. এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই এই বস্তুসমূহ হালাল; অথচ ইসলাম সেগুলোকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। যেমন- মদ, জুয়া, শুকর ইত্যাদি। অথবা এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই এই বস্তুসমূহ হারাম, অথচ ইসলাম সেগুলোকে স্পষ্টভাবে হালাল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,
اَلاِنْسَانُ مَتٰى حَلَّـلَ الْحَرَامَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ اَوْحَرَّمَ الْحَلَالَ الْمُجُمَعَ عَلَيْهِ اَوْبَدَّلَ الشَّرْعَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ كَانَ كَافِرًا بِاتِّفَاقِ الْفُقَهَاءِ
যখন কোন ব্যক্তি ইজমাকৃত হারামকে হালাল করবে কিংবা ইজমাকৃত হালালকে হারাম করে দেবে অথবা ইজমাকৃত শরীয়াতের কোন বিধানকে পরিবর্তন করবে, তবে সে সকল ফকীহগণের মতে কাফির ও মুরতাদ। [(মাজমাউল ফাতাওয়া ৩/২৬৭)]
(খ) উক্তি বা কথার মাধ্যমে ইসলাম ভঙ্গের উদাহরণসমূহ :
১. উপরোক্ত বিশ্বাসসমূহ মুখের ভাষায় প্রকাশ করা।
২. সরাসরি আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর অবাধ্যতার ঘোষণা প্রদান করা।
৩. আল্লাহ তা‘আলাকে, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে, ফেরেশতাদেরকে অথবা ইসলামকে গালি দেয়া।
৪. আল্লাহ তা‘আলা অথবা তাঁর কোন কথা অথবা কুরআনের কোন আয়াত অথবা তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।
৫. এ কথা বলা যে, রাষ্ট্রীয় বিষয়ের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই অথবা ইসলামের বিধান সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় অথবা বর্তমান যুগে ইসলাম প্রযোজ্য নয়।
৬. এ কথা বলা যে, ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মুসলিমদেরকে পিছিয়ে দিয়েছে অথবা তাদের দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।
৭. গাইরুল্লাহকে আহবান করা।
(গ) কর্মের মাধ্যমে ইসলাম ভঙ্গের উদাহরণসমূহ :
১. পূর্বোক্ত বিশ্বাস ও কথার বিষয়গুলো আমলে পরিণত করা।
২. কাফিরদের শি‘আর তথা যেসব চিহ্ন কাফিরদের আলামত বহন করে সেসব চিহ্ন ধারণ করা। যেমন- গলায় ক্রুশ ঝুলানো, ক্রুশ অঙ্কিত পোষাক পরিধান করা, অগ্নিপূজকদের টুপি, হিন্দুদের ধুতি পরিধান করা অথবা কপালে তিলক লাগানো।
৩. আল্লাহর শরীয়াতকে পরিবর্তন করা, মানবরচিত আইন প্রণয়ন করা, এটাকে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হুকুমের স্থানে স্থান দেয়া।
৪. ইসলামের কোন নিদর্শনের অবমাননা করা। যেমন- মসজিদের অবমাননা করা, কুরআন মাজীদের অবমাননা করা।
৫. কাফিরদের জন্য উপাসনালয় তৈরি করা অথবা কাফিরদেরকে তাদের ইবাদাতে সহযোগিতা করা।
৬. এমন কোন কাজ করা, যে ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত যে, এটা একমাত্র কাফিরই করতে পারে।
৭. কাফির ও মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব পোষণ করা, বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়া।
৮. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এককভাবে নির্ধারণ না করা। যেমন- আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান দ্বারা ফায়সালা করা।
৯. আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করা অথবা আল্লাহর ইবাদাত করার সাথে সাথে অন্য কারো ইবাদাত করা।
১০. আল্লাহ যেভাবে মানুষের লাভ ও ক্ষতি করতে পারেন সেভাবে অন্য কাউকে লাভ-ক্ষতির অধিকারী মনে করা।
১১. আল্লাহর শেখানো পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করা।
১২. রুকূ, সিজদা, রোযা, তাওয়াফ, কুরবানী, মান্নত ও বিনয় প্রকাশ ইত্যাদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা।
১৩. পরিপূর্ণরূপে সালাত পরিত্যাগ করা।
১৪. কবরে তাওয়াফ করা এবং মূর্তিকে সিজদা করা।
(ক) বিশ্বাসের মাধ্যমে ইসলাম ভঙ্গের উদাহরণসমূহ :
এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা যে,
১. আল্লাহ বলতে কিছু নেই অথবা আল্লাহর কোন অস্তিত্ব নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা সত্তাগতভাবে সর্বত্র বিরাজমান।
৩. পৃথিবীর ব্যবস্থাপনায় আল্লাহর কোন হাত নেই; বরং পৃথিবী নিজে নিজেই পরিচালিত হচ্ছে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কিছু কিছু জীব-জন্তু সৃষ্টি করে অন্যায় করেছেন অথবা সেগুলোর সৃষ্টিকে নিষ্প্রয়োজন মনে করা।
৫. যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছাতেই সবকিছু সংঘটিত হয়, সুতরাং মানুষের অন্যায় কর্মের কারণে যদি আল্লাহ শাস্তি দেন তাহলে সেটি তিনি অন্যায় করবেন।
৬. ফেরেশতা বলতে কিছু নেই।
৭. ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা।
৮. মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর নবী ও রাসূল নন।
৯. মুহাম্মাদ ﷺ শেষ নবী নন; বরং তাঁর পরেও আরো নবী আগমন করবে।
১০. মুহাম্মদ ﷺ ১১টি বিবাহ করে অন্যায় করেছেন।
১১. মুহাম্মাদ ﷺ কর্তৃক আয়েশা (রাঃ)-কে বিবাহ করাটা ছিল অমানবিক।
১২. মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর ওহী বলতে কিছুই আগমন করত না; বরং তাঁর উপর কোন বিশেষ জিনের আছর পড়ত।
১৩. মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবনাদর্শ সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ নয় অথবা তাঁর জীবনাদর্শ বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য নয়।
১৪. কুরআন আল্লাহর বাণী নয়।
১৫. কুরআনের মধ্যে কোনরূপ ভুল রয়েছে।
১৬. কুরআনের অমুক অমুক বিধান যথার্থ নয়।
১৭. কুরআন পূর্বযুগের লোকদের জন্য প্রযোজ্য ছিল; এটি বর্তমান যুগের জন্য অনুপযুক্ত।
১৮. কিয়ামত, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, সৎকর্মের পুরস্কার, অসৎকর্মের শাস্তি বলতে কিছুই নেই; এগুলো কল্পনামাত্র।
১৯. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মিরাজ স্বশরীরে নয়; বরং স্বপ্নযুগে সংঘটিত হয়েছিল।
২০. রাসূলুল্লাহ ﷺ মিরাজে গমন করেননি।
২১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত অথবা যাকাত আদায় করা অথবা রোযা রাখা অথবা হজ্জ পালন করা ইসলামের কতিপয় অহেতুক কর্ম। এগুলো পালন করা মুসলিমদের জন্য ফরজ নয়।
২২. এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই এই বস্তুসমূহ হালাল; অথচ ইসলাম সেগুলোকে স্পষ্টভাবে হারাম ঘোষণা করেছে। যেমন- মদ, জুয়া, শুকর ইত্যাদি। অথবা এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, এই এই বস্তুসমূহ হারাম, অথচ ইসলাম সেগুলোকে স্পষ্টভাবে হালাল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,
اَلاِنْسَانُ مَتٰى حَلَّـلَ الْحَرَامَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ اَوْحَرَّمَ الْحَلَالَ الْمُجُمَعَ عَلَيْهِ اَوْبَدَّلَ الشَّرْعَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ كَانَ كَافِرًا بِاتِّفَاقِ الْفُقَهَاءِ
যখন কোন ব্যক্তি ইজমাকৃত হারামকে হালাল করবে কিংবা ইজমাকৃত হালালকে হারাম করে দেবে অথবা ইজমাকৃত শরীয়াতের কোন বিধানকে পরিবর্তন করবে, তবে সে সকল ফকীহগণের মতে কাফির ও মুরতাদ। [(মাজমাউল ফাতাওয়া ৩/২৬৭)]
(খ) উক্তি বা কথার মাধ্যমে ইসলাম ভঙ্গের উদাহরণসমূহ :
১. উপরোক্ত বিশ্বাসসমূহ মুখের ভাষায় প্রকাশ করা।
২. সরাসরি আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর অবাধ্যতার ঘোষণা প্রদান করা।
৩. আল্লাহ তা‘আলাকে, রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে, ফেরেশতাদেরকে অথবা ইসলামকে গালি দেয়া।
৪. আল্লাহ তা‘আলা অথবা তাঁর কোন কথা অথবা কুরআনের কোন আয়াত অথবা তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।
৫. এ কথা বলা যে, রাষ্ট্রীয় বিষয়ের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই অথবা ইসলামের বিধান সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় অথবা বর্তমান যুগে ইসলাম প্রযোজ্য নয়।
৬. এ কথা বলা যে, ইসলাম ধর্মের শিক্ষা মুসলিমদেরকে পিছিয়ে দিয়েছে অথবা তাদের দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।
৭. গাইরুল্লাহকে আহবান করা।
(গ) কর্মের মাধ্যমে ইসলাম ভঙ্গের উদাহরণসমূহ :
১. পূর্বোক্ত বিশ্বাস ও কথার বিষয়গুলো আমলে পরিণত করা।
২. কাফিরদের শি‘আর তথা যেসব চিহ্ন কাফিরদের আলামত বহন করে সেসব চিহ্ন ধারণ করা। যেমন- গলায় ক্রুশ ঝুলানো, ক্রুশ অঙ্কিত পোষাক পরিধান করা, অগ্নিপূজকদের টুপি, হিন্দুদের ধুতি পরিধান করা অথবা কপালে তিলক লাগানো।
৩. আল্লাহর শরীয়াতকে পরিবর্তন করা, মানবরচিত আইন প্রণয়ন করা, এটাকে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হুকুমের স্থানে স্থান দেয়া।
৪. ইসলামের কোন নিদর্শনের অবমাননা করা। যেমন- মসজিদের অবমাননা করা, কুরআন মাজীদের অবমাননা করা।
৫. কাফিরদের জন্য উপাসনালয় তৈরি করা অথবা কাফিরদেরকে তাদের ইবাদাতে সহযোগিতা করা।
৬. এমন কোন কাজ করা, যে ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত যে, এটা একমাত্র কাফিরই করতে পারে।
৭. কাফির ও মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব পোষণ করা, বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা এবং কথা ও কাজের মাধ্যমে তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়া।
৮. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এককভাবে নির্ধারণ না করা। যেমন- আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান দ্বারা ফায়সালা করা।
৯. আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করা অথবা আল্লাহর ইবাদাত করার সাথে সাথে অন্য কারো ইবাদাত করা।
১০. আল্লাহ যেভাবে মানুষের লাভ ও ক্ষতি করতে পারেন সেভাবে অন্য কাউকে লাভ-ক্ষতির অধিকারী মনে করা।
১১. আল্লাহর শেখানো পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার চেষ্টা করা।
১২. রুকূ, সিজদা, রোযা, তাওয়াফ, কুরবানী, মান্নত ও বিনয় প্রকাশ ইত্যাদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা।
১৩. পরিপূর্ণরূপে সালাত পরিত্যাগ করা।
১৪. কবরে তাওয়াফ করা এবং মূর্তিকে সিজদা করা।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত কারণসমূহ যার মধ্যে পাওয়া যাবে তার ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ ব্যক্তি যদি কখনো নিজের ভুল বুঝতে পারে, তাহলে তার জন্য কর্তব্য হচ্ছে, নিজের ভুলের জন্য লজ্জিত হওয়া, তারপর একনিষ্ঠভাবে তওবা ও ইস্তেগফার করে নিজের ইসলামকে দ্রুত নবায়ন করে নেয়া এবং পরবর্তীতে আর যেন তা সংঘটিত না হয়, সে জন্য দৃঢ় সংকল্প করা। এই কাজগুলো যথাযথভাবে করলে আশা করা যায়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ بَعْدِ ذٰلِكَ وَاَصْلَحُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
‘‘তবে যারা পাপ করার পর তওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তাদের ক্ষেত্রে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।’’ (সূরা আলে ইমরান- ৮৯)
হাদীসে এসেছে, নবী ﷺ বলেছেন,
مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য ওঠার আগেই তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।’’ (মুসলিম হা/ ৭০৩৬)
اِلَّا الَّذِيْنَ تَابُوْا مِنْ بَعْدِ ذٰلِكَ وَاَصْلَحُوْا فَاِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
‘‘তবে যারা পাপ করার পর তওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তাদের ক্ষেত্রে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।’’ (সূরা আলে ইমরান- ৮৯)
হাদীসে এসেছে, নবী ﷺ বলেছেন,
مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্য ওঠার আগেই তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।’’ (মুসলিম হা/ ৭০৩৬)
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন