মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ইসলাম ভঙ্গের তৃতীয় কারণ কাফিরদেরকে কাফির মনে না করা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/10/6
অর্থাৎ যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যমত পোষণ করেছেন, তার কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। যেমন- ইহুদী, নাসারা ও মুশরিকদের কুফরীর ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহর কোন দ্বিমত নেই। তাই কোন কোন মুসলিম এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলে অথবা তাদেরকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করলে সে নিজেই কুফরী মতবাদে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে কেউ যদি এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করে যে, ইহুদী-খ্রিস্টান-ইসলাম এই তিন ধর্মই সঠিক ও সত্য; প্রতিটি ধর্মই তার অনুসারীকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়; তাই যার যে ধর্ম পছন্দ হয়, সে তা গ্রহণ করতে পারে, তাতে কোন অসুবিধা নেই, তাহলে তারও ইসলাম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এরূপ আক্বীদা-বিশ্বাসের কারণে ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
প্রথমতঃ এ ধরনের আক্বীদা-বিশ্বাস ইসলামের মূলমন্ত্র لَا اِلٰهَ اِلَّا الله (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্যিকার ইলাহ নেই)- এর অর্থ ও দাবিকে বিনষ্ট করে দেয়। কেননা এর প্রধান দাবি হচ্ছে, সকল প্রকার বাতিল ইলাহ তথা তাগুতকে অস্বীকার করা। আর সকল প্রকার তাগুতকে অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে, তাগুতী সকল মতবাদ ও কর্মকান্ডকেও বর্জন করা। যদি এ কাজটি যথাযথভাবে করা না হয়, তাহলে ধরে নেয়া যায় যে, সে প্রকৃতপক্ষে তাগুতকে অস্বীকার করেনি এবং সে নিজের ঈমানের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি স্পষ্টভাবে কাফির, তার কুফরীর ব্যাপারে যদি সন্দেহ পোষণ করা হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রেও ধরে নিতে হয় যে, সে প্রকৃতপক্ষে ঈমান আনয়ন করেনি এবং তার অন্তরে এখনও কুফর বিদ্যমান রয়েছে।
অনুরূপভাবে لَا اِلٰهَ اِلَّا الله (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্যিকার ইলাহ নেই)- এর দ্বিতীয় দাবিটি হচ্ছে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এ দাবিটি মূলত প্রথমোক্ত দাবির উপরই নির্ভরশীল। যখন কারো মধ্যে প্রথমোক্ত দাবিটি পাওয়া যাবে না, তখন তার মধ্যে এই দাবিটিও বিদ্যমান থাকে না।
অপরদিকে এই কালিমাটি হচ্ছে ইসলামের অন্যতম একটি মাপমাঠি এবং আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার একমাত্র মজবুত রশি। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল, যা কখনো ছিড়বে না। (সূরা বাকারা- ২৫৬)
অত্র আয়াতটি মূলত পূর্বে উল্লেখিত কালেমারই ভাবার্থ। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি তাগুতকে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার না করেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের দাবি করে, তাহলে সে কখনো আয়াতে বর্ণিত মজবুত রশিটি ধারণ করতে পারবে না অর্থাৎ সে মুসলিমদের কাতারে থাকতে পারবে না।
দ্বিতীয়তঃ এ আক্বীদা-বিশ্বাসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উক্ত ব্যক্তির মধ্যে কাফিরদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা বিদ্যমান রয়েছে এবং কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী লোকদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা মায়েদা- ৫১)
অত্র আয়াত থেকে জানা যায় যে, যারাই কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারা তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হয়। অপর আয়াতে আল্লাহ এরূপ বান্দাদের সাথে ঈমানদারদের সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহ্র সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। (সুরা আল ইমরান ৩:২৮)
উল্লেখ্য যে, কাফিরদের সাথে বন্ধু স্থাপন করার ক্ষতিকর দিকগুলোর ব্যাপারে উপরোক্ত দিকটি ছাড়াও আরো অনেক দিক রয়েছে, যা মানুষের ইসলাম ভঙ্গ হওয়ারই দাবি রাখে। যেমন-
১. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে, তারা তার ঈমানের বিচ্যূতি ঘটিয়ে তাকে কাফিরে পরিণত করে ছাড়বে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে পশ্চাদপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা আলে ইমরান- ১৪৯)
জ্ঞান (কুরআন) আসার পর আপনি যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
(সূরা বাক্বারাহ- ১৪৫)
২. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে, জিহাদে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মানসিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কেননা বন্ধুত্বের টান মানুষকে বন্ধুর বিরুদ্ধে কঠোর হতে বাধা দেয়। আর কঠোরতা ছাড়া কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা সম্ভব নয়। অথচ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এবং তাদের প্রতি প্রয়োজানুসারে অধিক কঠোরতা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন,
হে মু’মিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ করো এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রাখো, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
(সূরা তওবা- ১২৩)
৩. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে অনেক সময় ইসলাম বিরোধী কাজ করতে বাধ্য হতে হয়। কেননা বন্ধুত্বের দাবি হচ্ছে বন্ধুর কথাবার্তা ও কাজকর্মকে সমর্থন দেয়া এবং প্রয়োজনে তাকে সহযোগিতা করা। ইসলামের বিরুদ্ধে কোন মতবাদকে সমর্থন করা অথবা কাউকে সহযোগিতা করাটা হচ্ছে ইসলাম ভঙ্গের অন্যতম কারণ। ইসলাম ভঙ্গের ৬নং কারণের মধ্যে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে- ইনশাআল্লাহ।
৪. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর আর্দশের বিচূতি ঘটে। কেননা তিনি কাফিরদের সাথে শত্রুতা পোষণ করতেন। যেমন- কুরআন মাজীদে এসেছে,
তোমাদের জন্যে ইবরাহীম (আঃ) ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই; আমরা তোমাদের সাথে কুফরী করি। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আন। (সূরা মুমতাহিনা- ৪)
৫. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে,
বাহয ইবনে হাকীম (রাঃ) থেকে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে শিরকে লিপ্ত হলে আল্লাহ তার কোন আমলই গ্রহণ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মুশরিকদের থেকে পৃথক হয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে। [নাসাঈ, হা/২৫৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/২৫৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২০০৫৫।]
৬. কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে মুসলিমদের পক্ষ থেকে ঘোষিত জান ও মালের জিম্মাদারিত্ব হারাতে হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এসব নামধারি মুসলিম থেকে সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত। যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন :
যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তাদেরকে আপনি এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা ভাই কিংবা তাদের জাতি-গোষ্ঠীর কেউ হয়।
(সূরা মুজাদালা- ২২)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের কাজকর্মগুলোকে সমর্থন দেয়া, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন না করা, তাদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদেরকে কাফির না বলা অথবা তাদেরকে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করা ইত্যাদি প্রতিটি কর্মই আল্লাহর নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান যুগের অনেক মুসলিম এই অপরাধে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এসব দিক থেকে এদের মধ্যে এবং জাহেলী যুগের মুশরিকদের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। পার্থক্য শুধু এতটুকুতেই যে, জাহেলী যুগের মুশরিকরা নিজেদের মুশরিক হওয়ার বিষয়টি নিজেরাই সাক্ষ্য প্রদান করে বেড়াত। আর বর্তমান যুগের মুশরিকরা নিজেদের মুশরিক হিসেবে স্বীকার করে না। কিন্তু কাজে কর্মে তারা পূর্ব যুগের মুশরিকদেরকে ছাড়িয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন। আমীন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।