hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রমযান মাসের ৩০ আসর

লেখকঃ শায়খ মুহাম্মদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ.

১১
নবম আসর: সিয়াম পালনের হিকমত বা তাৎপর্যসমূহ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রাত ও দিনের বিবর্তন ঘটান, মাস ও বছরের আবর্তন ঘটান; যিনি বাদশা, মহাপবিত্র, ত্রুটিমুক্ত; বড়ত্ব, স্থায়ীত্ব ও অমরত্বে অনন্য; যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি ও মানবিক তুলনা থেকে পবিত্র; শিরার ভেতরস্থ ও অস্থির অভ্যন্তরস্থ জিনিসও দেখেন; ক্ষীণস্বর ও সূক্ষ্ম বিষয়াদিও শোনেন; অধিক দাতা দয়ালু ইলাহ্‌, ক্ষমতাবান ও কঠিন প্রতিশোধ গ্রহণকারী রব; তিনি সকল বিষয় নির্ধারণ করেন অতঃপর তাকে সর্বোত্তম নিয়মে পরিচালনা করেন; তিনি শরীয়তের বিধানাবলি প্রবর্তন করেছেন অতঃপর তাকে সুপ্রষ্ঠিত ও নিখুঁত করেছেন; তাঁর ক্ষমতায় বাতাস প্রবাহিত হয় এবং মেঘমালা পরিভ্রমণ করে; তারই দয়া ও প্রজ্ঞানুসারে দিন ও রাতের আবর্তন ঘটে। আমি গুণকীর্তন করি তাঁর মহান গুণাবলির ও চমৎকার নেয়ামতরাজির ওপর, আর শুকরিয়া আদায় করি অধিক নেয়ামত প্রার্থনাকারী ও তা লাভ করার ইচ্ছাপোষণকারী ব্যক্তির শুকরিয়া।

আর আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে একমাত্র আল্লাহ্‌ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তাঁকে জ্ঞান বা কল্পনায় বেষ্টন করা সম্ভব নয়। আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যিনি শ্রেষ্ঠতম মানব।

আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন তাঁর ওপর, তাঁর সাথী আবূ বকরের ওপর যিনি ইসলাম গ্রহণে ছিলেন অগ্রগামী, উমরের ওপর যাকে দেখে শয়তান পলায়ন করত, উসমানের ওপর যিনি কঠিন যুদ্ধে (তাবুকের যুদ্ধে) রসদ সরবরাহ করেছেন, আলীর ওপর যিনি বিশাল সাগর ও দুর্বার সিংহের মতো এবং তাঁর সকল পরিবারসদস্য, সাহাবী ও অনাগতকালের সুন্দর আনুসারীদের ওপর।

আল্লাহর বান্দাগণ! জেনে রাখুন নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ যা সৃজন করেছেন আর যে বিধান প্রবর্তন করেছেন সব কিছুতেই তাঁর পরিপূর্ণ হুকুম ও হিকমত বিদ্যমান। তিনি সৃজন ও বিধান প্রবর্তনে প্রজ্ঞাময়। তিনি তার বান্দাদের খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করেন নি, তিনি তাদের অনর্থক ছেড়ে দেন নি এবং শরীয়তকে বেহুদা প্রবর্তন করেন নি। বরং আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বিরাট কর্মযজ্ঞ আঞ্জাম দেবার নিমিত্তে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে বড় ধরনের কিছু করার জন্য প্রস্তুত করেছেন। তাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে সরল-সঠিক পথ বাৎলে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য শরীয়ত প্রবর্তন করেছেন, যার মাধ্যমে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তাদের ইবাদত পূর্ণতা লাভ করে। বান্দাদের জন্য প্রবর্তিত এমন কোনো ইবাদত নেই যার পেছনে পরিপূর্ণ হিকমত নেই। যারা এ হিকমত জানার প্রচেষ্টা করেছে তারা তা জেনেছে আর যারা অজ্ঞ থাকার ইচ্ছা করেছে তারা অজ্ঞ থেকেছে। আমাদের কোনো ইবাদতের হিকমত না জানা তার হিকমত না থাকার প্রমাণ নয়। বরং তা আল্লাহর হিকমতজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের ব্যর্থতা ও অক্ষমতার দলীল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা বলেছেন:

﴿ وَمَآ أُوتِيتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِيلٗا ٨٥ ﴾ [ الاسراء : ٨٥ ]

‘তোমাদেরকে ইলমের সামান্য কিছু দেয়া হয়েছে।’ {সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৮৫}

আল্লাহ তা‘আলা ইবাদতসমূহ প্রবর্তন করেছেন আর লেনদেন ব্যবস্থাপনা চালু করেছেন তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভিপ্রায়ে। যাতে পরিষ্কার হয়ে যায় কে আসল রবের দাসত্ব করে আর কে প্রবৃত্তির।

অতএব যে ব্যক্তি এই শরীয়ত ও বিধিবিধানকে প্রশস্ত বক্ষে ও প্রশান্ত মনে গ্রহণ করেছে সেই তো আসল প্রভুর গোলাম। সে তাঁর শরীয়তে সন্তুষ্ট আর নিজ রবের আনুগত্যকে সে প্রাধান্য দেয় আপন প্রবৃত্তির ওপর।

আর যে নিজ আগ্রহ ও অভিরুচির বাইরে কোনো ইবাদত গ্রহণ করে না এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিধান বা রীতিনীতির অনুসরণ করে না, সে হলো প্রবৃত্তির গোলাম। সে আল্লাহর শরীয়তে অসন্তুষ্ট এবং তার রবের আনুগত্যবিমুখ। সে তার প্রবৃত্তির আনুগত হয়েছে তাকে বানায়নি অনুগত। সে চায় আল্লাহর শরীয়ত তার রুচির অনুকূল হবে, অথচ তার জ্ঞান কতই না অপূর্ণ এবং তার প্রজ্ঞা কতই না স্বল্প। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :

﴿وَلَوِ ٱتَّبَعَ ٱلۡحَقُّ أَهۡوَآءَهُمۡ لَفَسَدَتِ ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهِنَّۚ بَلۡ أَتَيۡنَٰهُم بِذِكۡرِهِمۡ فَهُمۡ عَن ذِكۡرِهِم مُّعۡرِضُونَ ٧١﴾ [ المؤمنون : ٧١ ]

‘আর যদি হক তাদের প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করতো তাহলে অবশ্যই বিশাল আকাশ ও যমীন ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে যেত। বরং আমরা তাদের কাছে তাদের উপদেশ নিয়ে এসেছি, কিন্তু তারা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ {সূরা আল-মু’মিনূন, আয়াত: ৭১}

আর আল্লাহর হিকমত হলো, তিনি ইবাদতকে বিভিন্ন ধরনের বানিয়েছেন যাতে ইবাদত (মনেপ্রাণে) গ্রহণ ও এর প্রতি সন্তোষ হওয়া স্পষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَلِيُمَحِّصَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ﴾ [ ال عمران : ١٤١ ]

‘যাতে তিনি ঈমানদারকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাছাই করতে পারেন।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪১}

কেননা মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমন রয়েছেন যিনি এ প্রকার ইবাদতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন এবং তা পালন করেন অথচ অন্য প্রকার ইবাদতের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন এবং তাতে উদাসীনতা দেখান। তাই আল্লাহ তা‘আলা ইবাদতের মধ্যে নানা বৈচিত্র্য রেখেছেন:

কোনো কোনো ইবাদতকে সম্পৃক্ত করেছেন দেহের সঙ্গে, যেমন সালাত।

কোনো কোনো ইবাদতের সম্পর্ক নফসের প্রিয় সম্পদ ব্যয়ের সঙ্গে, যেমন যাকাত।

কোনো কোনো ইবাদতে শরীর ও সম্পদ উভয়ই সম্পৃক্ত, যেমন হজ ও জিহাদ।

কোনো কোনো ইবাদত সম্পৃক্ত লোভনীয় ও প্রিয়বস্তু থেকে নফসকে বিরত রাখার সঙ্গে, যেমন সিয়াম।

সুতরাং আল্লাহর বান্দা যখন বিচিত্র ইবাদত কোনো ধরনের অসন্তুষ্টি ও সীমালংঘন ছাড়াই পরিপূর্ণভাবে পালন করে, এতে করে সে তার রবের আনুগত্যে, তাঁর নির্দেশ পালনার্থে এবং তাঁর শরীয়তে সন্তুষ্ট হয়ে কষ্ট সহ্য করে, আমল করে, প্রিয় বস্তু ব্যয় করে এবং তার প্রবৃত্তি যা কামনা করে তা থেকে বিরত থাকে। এটা বান্দার পক্ষ থেকে তার রবের প্রতি পরিপূর্ণ দাসত্ব, পূর্ণ আনুগত্য ও ভালোবাসা ও সম্মান করার প্রমাণ বহন করে। এর মাধ্যমে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর দাসত্বের গুণ পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়।

উল্লেখিত বিষয়গুলো স্পষ্ট হবার পর জানবার বিষয় হলো, সাওমেরও অনেক হিকমত ও তাৎপর্য রয়েছে যা একে ইসলামের একটি রুকন ও ফরয হওয়া দাবী করে।

সিয়াম ফরয হওয়ার হিকমত ও তাৎপর্য:

সিয়াম পালনের রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা ও হিকমত। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আলোচনা করা হলো।

প্রথম হিকমত: ঈমানে নিষ্ঠা ও দাসত্বের পূর্ণতা লাভ

সিয়াম আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম ইবাদত। বান্দা পানাহার, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি লোভনীয় ও প্রিয় বস্তু ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী হয়। এর দ্বারা তার ঈমানের সততা, দাসত্বের পূর্ণতা, আল্লাহ তা‘আলাকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসা ও তাঁর কাছে যা কিছু আছে এগুলোর ব্যাপারে তাঁর ওপর অত্যাধিক নির্ভরতা প্রকাশ পায়। কেননা মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো বস্তু ত্যাগ করেনা, যতক্ষণ তার কাছে এর চেয়েও বড় বস্তু না থাকে। যখন মুমিন এটা জানল যে, আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও লোভনীয় কামবৃত্তি ত্যাগ করে সিয়াম পালন করার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি নিহিত, তখন সে তার প্রবৃত্তির ওপর আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়। ফলে অধিক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সে তা ত্যাগ করে। কেননা আল্লাহ তা‘আলার জন্য তা ছেড়ে দেয়ার মাঝে সে আত্মপ্রশান্তি ও স্বাদ অনুভব করে। এজন্যই এমন অনেক মুমিন রয়েছে যদি তাদেরকে বিনা ওজরে রমযানের একটি সিয়াম ভাঙ্গার জন্য প্রহার করা হয় বা বন্দি করা হয়, তবুও সে সিয়াম ত্যাগ করবে না। এটাই হলো সিয়ামের বড় হিকমত।

দ্বিতীয় হিকমত: তাকওয়া অর্জন

সিয়াম পালনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করা যায় এটা সিয়ামের অন্যতম হিকমত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩}

কারণ, সিয়াম পালনকারীকে ভালো কাজ করা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

* যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ والجهلَ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ»

‘যে সিয়াম অবস্থায় মিথ্যা বলা ও তদনুযায়ী আমল করা এবং মূর্খতা ত্যাগ করতে পারলো না, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ [বুখারী: ১৯০৩।]

যখন কোনো ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় কোনো পাপাচারের ইচ্ছা করে তৎক্ষণাৎ সে যেন স্মরণ করে যে, সে সিয়াম পালনকারী। তাহলে তার জন্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে।

* এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়ামরত ব্যক্তিকে এ কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সঙ্গে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয় তাহলে সে বলে “আমি সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি।” এটা সাওম পালনকারীকে সাবধান করার জন্য যে, তাকে গালি-গালাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আর তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, সে সাওম পালনরত অবস্থায় আছে সুতরাং তাকে কটূক্তি ও গালাগালির জবাব প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।

তৃতীয় হিকমত: আল্লাহর স্মরণ ও তার সৃষ্টিতে চিন্তার জন্য একান্ত হওয়া।

এটাও সিয়ামের হিকমত যে, সিয়াম পালনকারীর হৃদয় আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ ও ধ্যানে মগ্ন থাকে। কেননা প্রবৃত্তির দাসত্ব ও অধিক ভোজন উদাসীনতাকে অবধারিত করে। আর ক্ষেত্রবিশেষ অন্তরকে কঠোর করে ও চোখকে সত্য দর্শনে অন্ধ বানিয়ে দেয়।

* এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার কমানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন:

«مَا مَلَأَ ابْنُ آدَمَ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ، حَسْبُ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ، فَثُلُثُ طَعَامٍ، وَثُلُثُ شَرَابٍ، وَثُلُثٌ لِنَفْسِهِ»

‘আদম সন্তান পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। অথচ আদম সন্তানের জন্য মেরুদণ্ড সোজা থাকে এমন কয়েক লোকমা খাদ্যই যথেষ্ট। অগত্যা যদি খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, অপর তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং বাকী তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।’ [আহমাদ ৪/১৩২; নাসাঈ, আল-কুবরা, ৮/৫০৯; তিরমিযী ২৩৮০; ইবন মাজাহ: ৩৩৪৯। মু্স্তাদরাকে হাকিম ৪/১২১। আর যাহাবী তা সমর্থন করেছেন।]

* সহীহ মুসলিমে এসেছে, হানযালাহ্‌ আল-উসাইদী রাদিয়াল্লাহু আনহু, তিনি ছিলেন ওহী লিখকদের একজন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একদিন বললেন, হানযালাহ মুনাফেকী করেছে। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন:

«وَمَا ذَاكَ؟» قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ «نَكُونُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّة حَتَّى كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ، فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ فنَسِينَا كَثِيرًا» ... الحديث

অর্থাৎ হে হানযালা! সেটা কী রকম? তিনি উত্তরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যখন আপনার নিকট থাকি আপনি আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের স্মরণ করিয়ে দেন যেন আমরা তা স্বচক্ষে দেখি। অতঃপর যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে চলে যাই তখন স্ত্রী-সন্তানাদি ও জমি-জমা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি; তখন অনেক কিছু-ই (আখেরাতের কথা) ভুলে যাই।’

এ হাদীসে রয়েছে, “হে হানযালা! এক ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও এক ঘণ্টা।” তিন বার বললেন।” [মুসলিম: ২৭৫০। (অর্থাৎ কিছু সময় আল্লাহর জন্য অবশ্যই থাকবে, হ্যাঁ কিছু সময় তোমার দুনিয়ার জন্যও ব্যয় হবে।) [অনুবাদক]]

* আবূ সুলাইমান আদ-দারানী রহ. বলেন-

أن النفس إذا جاعت وعطشت صفا القلب ورق وإذا شبعت عمي القلب

“যখন নফস ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকে তখন অন্তর স্বচ্ছ এবং কোমল থাকে। আর যখন খাবারে পরিপূর্ণ ও পরিতৃপ্ত থাকে তখন অন্তর অন্ধ থাকে।”

চতুর্থ হিকমত: ধনী ব্যক্তি কর্তৃক নেয়ামত উপলব্ধি

সিয়ামের অন্যতম একটি হিকমত হলো, এর মাধ্যমে ধনী ব্যক্তি তার প্রতি আল্লাহর দেয়া ধন সম্পদের মর্যাদা বুঝতে পারে। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা তাকে খাদ্য, পানীয় ও স্ত্রীর মত নেয়ামত প্রদান করেছেন, যা থেকে সৃষ্টি জগতের অনেকেই বঞ্চিত রয়েছে। ফলে সে এসব নেয়ামতের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে, সুখ স্বাচ্ছন্দের জন্য শুকরিয়া আদায় করে এবং এর মাধ্যমে সে তার ওই সকল ভাইদের কথা স্মরণ করে যারা ক্ষুধার্ত ও অসহায় অবস্থায় রাত যাপন করে। ফলে সে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, যদ্বারা তারা নিজেদের লজ্জা নিবারণ করবে ও ক্ষুধা মিটাবে।

* এজন্যই “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানব সমাজের বড় দানশীল। তিনি আরও বেশি দানশীল হয়ে যেতেন যখন রমযান আসত আর জিব্রাইল ‘আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন ও তাঁর সাথে কুরআন পাঠ করতেন।” [বুখারী: ৬; মুসলিম: ২৩০৮।]

পঞ্চম হিকমত: আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ লাভ

সিয়ামের অন্যতম হিকমত হলো এর মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুশীলন, তার ওপর কর্তৃত্ব অর্জন এবং তা দমনের মাধ্যম; যাতে করে নফসের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাসহ তাকে কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথে পরিচালিত করতে পারে। এটা নিশ্চিত যে, নফস মন্দ কাজেরই পথ নির্দেশ করে। তবে আল্লাহ যাকে দয়া করেন সে ব্যতিত। সুতরাং মানুষ যখন আত্মাকে লাগামমুক্ত করে দেয়, তখন তাকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করে। পক্ষান্তরে যখন সে তার ওপর কর্তৃত্ববান হয় ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, তখন সুউচ্চ স্থানে ও অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হয়।

ষষ্ঠ হিকমত: কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ ও অহংকার থেকে মুক্তি

সিয়ামের অন্যতম হিকমত হচ্ছে, কুপ্রবৃত্তিকে নিষ্ক্রিয় ও অহংকার থেকে মুক্ত করা; যাতে সে সত্যের প্রতি বিনয়ী ও সৃষ্টির প্রতি কোমল হয়। কেননা পরিতৃপ্ত হওয়া, আনন্দ উল্লাস করা ও নারীর সঙ্গে অধিক মেলামেশা করা, এর প্রত্যেকটিই মানুষদেরকে মন্দ, গর্ব, অহংকার, সৃষ্টির উপর দাম্ভিকতা ও হক গ্রহণ না করার দিকে ধাবিত করে। কেননা নফস যখন মনে করে যে তার এগুলো প্রয়োজন তখন সে এগুলো অর্জনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর সে যখন সেটা অর্জনে সমর্থ হয় তখন সে মনে করে যে সে কাঙ্ক্ষিত বস্তু পেয়ে গেছে, ফলে সে গর্হিত আনন্দ পায় ও তা নিয়ে অহংকার করে, যা পরবর্তীতে তার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রকৃতপক্ষে এ অবস্থা থেকে সে-ই নিরাপদ থাকতে পারে, আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন।

সপ্তম হিকমত: রক্ত চলাচলের পথ সংকুচিত হওয়া

সিয়ামের আরও হিকমত হলো, ক্ষুধা তৃষ্ণার কারণে মানুষের রক্ত চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে দেহের অভ্যন্তরে শয়তানের চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়।

* কেননা “শয়তান আদম সন্তানের রক্তের সঙ্গে শিরা উপশিরা দিয়ে চলাচল করে।” যেমনটি বুখারী ও মুসলিমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে,

«إِنَّ الشَّيْطَانَ يَجْرِي مِنَ الإِنْسَانِ مَجْرَى الدَّمِ »

‘নিশ্চয় শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় বিচরণ করে।’ [বুখারী: ২০২৩; মুসলিম: ২১৭৫।]

মূলত সিয়ামের মাধ্যমে মানুষ শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিরাপদ থাকে এবং ক্রোধ ও কামপ্রবৃত্তির উন্মত্ততা হ্রাস পায়। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন:

«يا مَعْشَرَ الشَّبَاب ! مَنِ اسْتَطَاعَ البَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»

‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে, ব্যক্তি বিবাহ করতে সক্ষম, সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি অবনত রাখে ও লজ্জাস্থান হেফাজত করে। আর যে বিবাহ করতে সক্ষম নয়, সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়াম তাকে কামভাব থেকে বিরত রাখবে।’ [বুখারী: ১৯০৫, ৪০৬৬; মুসলিম: ১৪০০।]

অষ্টম হিকমত: বহুবিধ স্বাস্থ্যগত উপকার

সিয়ামের আরও একটি হিকমত হলো এর দ্বারা বহুবিধ স্বাস্থ্যগত উপকার হয়, যা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আহার নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম দানের মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং শরীরের অন্যান্য বাড়তি ক্ষতিকর বস্তু ও জলীয় পদার্থ হ্রাস করে।

আহ সিয়াম সাধনার মাঝে আল্লাহ তা‘আলার কত মহান ও চমৎকার হিকমত বিদ্যমান! আর তাঁর বিধি-বিধান সৃষ্টিকূলের জন্য কতই না উপযোগী, উপকারী এবং বাস্তবসম্মত।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের দীনের গভীর প্রজ্ঞা ও শরীয়তের রহস্যাবলির জ্ঞান দান করুন। দ্বীন- দুনিয়ার যাবতীয় কাজ বিশুদ্ধ করে দিন। হে দয়াময়! স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে, আমাদের পিতা-মাতাকে ও সকল মুসলিমকে ক্ষমা করুন।

আর আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন