মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি অজস্র দানকারী তার জন্য যে তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর কাছে প্রত্যাশা করে; যিনি কঠোর শাস্তি প্রদানকারী যে তার যিকর থেকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তাঁর অবাধ্যাচরণ করে। নিজ দয়ায় তিনি যাকে চান নির্বাচিত করে কাছে টেনে নেন এবং নৈকট্য দান করেন আবার নিজ ইনসাফের ভিত্তিতেই তিনি যাকে চান দূরে ঠেলে দেন ফলে তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দেন যেদিকে সে ফিরতে চায়। তিনি নাযিল করেছেন কুরআন সৃষ্টিকুলের জন্য রহমতস্বরূপ এবং পথিকদের জন্য আলোকবর্তিকা হিসেবে, সুতরাং যে একে আঁকড়ে ধরবে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছবে, আর যে এর সীমারেখা অতিক্রম করে এবং অধিকার বিনষ্ট করে, সে তার দুনিয়া ও আখিরাত সবই হারায়।
আমি তাঁর প্রশংসা করি তিনি যত অনুগ্রহ ও দান করেছেন তার ওপর। তাঁর শুকরিয়া আদায় করি দীনী ও দুনিয়াবী সব নেয়ামতের ওপর। আর শুকরিয়াকারী কত অধিক লাভের যোগ্য হয় ও কত অধিকপ্রাপ্ত হয়!
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; তিনি তাঁর গুণাবলিতে পরিপূর্ণ, সমকক্ষতা ও সাদৃশ্যতা থেকে বহু উর্ধ্বে। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে তিনি সকল সৃষ্টির মধ্য নির্বাচিত ও মনোনীত করেছেন।
আল্লাহ সালাত পেশ করুন তাঁর ওপর, তাঁর পরিবার-পরিনজন, সাহাবী ও অনাগত সকল সুন্দর অনুসারীর ওপর- যতদিন প্রভাত ফুটে বের হবে এবং তার কিরণ আলোকিত করবে। আর যথাযথ সালামও তাদের প্রতি বর্ষণ করুন।
আমার ভাইয়েরা!
পঞ্চম আসরে আলোচিত হয়েছে যে, কুরআন তিলাওয়াত দুই প্রকার:
প্রথমত: কুরআনের শাব্দিক পঠন, যার আলোচনা ইতোপূর্বে [দেখুন, পৃষ্ঠা নং] করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: হুকমী বা প্রায়োগিক পঠন অর্থাৎ কুরআনের বিধানকে তেলাওয়াত করা। আর তার অর্থ হচ্ছে, কুরআনপ্রদত্ত যাবতীয় সংবাদকে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করা, সকল আদিষ্ট বিষয় পালন ও নিষিদ্ধ বিষয় পরিত্যাগ করার মাধ্যমে তার বিধানাবলিকে মেনে নেওয়া।
বস্তুত এ প্রকারই হচ্ছে কুরআন নাযিলের বৃহত্তম লক্ষ্য। যেমন,
‘আমরা আপনার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে।’ {সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯}
এ জন্য সালাফে সালেহীন রহ. কুরআন তিলাওয়াতের এ পদ্ধতির উপর চলে কুরআন শিক্ষা করেছেন, এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন এবং মজবুত আক্বীদা-বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এর যাবতীয় বিধানাবলিকে ইতিবাচক ধারায় বাস্তবায়িত করেছেন। আবূ আব্দুর রহমান আসসুলামী রহ. বলেন:
حدَّثَنا الذين كانوا يُقرِؤوننا القرآن، عثمان بنُ عفانَ وعبدُالله بنُ مسعودٍ، وغيرهما، أنَّهم كانَوا إذا تعلَّمُوا منَ النبيِّ صلى الله عليه وسلّم عَشرَ آياتٍ لم يتجاوزوها حتى يتعلَّموها وما فِيها من الْعلْم والْعَمَل، قالوا : فَتعلَّمنَا القرآنَ والعلمَ والعملَ جميعاً .
‘উসমান ইবন আফ্ফান, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ প্রমুখ যারা আমাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন তারা বলেছেন, তারা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দশটি আয়াত শিখতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভালোভাবে না শিখতেন ও তাতে যে সকল জ্ঞান ও আমল করার কথা রয়েছে তা বাস্তবায়ণ না করতেন ততক্ষণ পর্যন্ত সামনে অগ্রসর হতেন না। তারা বলেন, আমরা এভাবেই কুরআন, জ্ঞান ও আমল সবই শিখেছি।” [তাফসীর ইবন জারীর আত-ত্বাবারী: ১/৮০; ইবন তাইমিয়া, মাজমূ‘ ফাতাওয়া: ৭/১৬৮।]
আর এটাই হলো কুরআন তিলাওয়াতের ওই প্রকার যার ওপর সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য নির্ভর করে।’
‘অতঃপর যখন তোমাদের কাছে আমার পক্ষ থেকে হিদায়াত আসবে, তখন যে আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না এবং দুর্ভাগাও হবে না। আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, ‘হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, ‘এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলি এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। আর এভাবেই আমি প্রতিফল দান করি তাকে, যে বাড়াবাড়ি করে এবং তার রবের নিদর্শনাবলিতে ঈমান আনে না। আর আখিরাতের আযাব তো অবশ্যই কঠোরতর ও অধিকতর স্থায়ী।’ {সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ১২৩-১২৭}
এ আয়াতসমূহে আল্লাহ তা‘আলা যা যা বর্ণনা করেছেন তা হলো:
রাসূলগণের নিকট পাঠানো হেদায়াত অনুসরণকারীদের প্রতিদান। আর সে মহান হেদায়াত হলো, আল-কুরআন। সঙ্গে সঙ্গে হেদায়াত বিমুখদের শাস্তির কথাও বর্ণনা করেছেন। হেদায়াত অনুসারীদের বড় প্রাপ্তি হল তারা পথভ্রষ্ট হবে না ও দুর্ভাগা হবে না। তাদের থেকে ভ্রষ্টতা ও দুর্ভাগ্য দূর করার অর্থ হচ্ছে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্য ও পূর্ণ হেদায়াত সাব্যস্ত করা।
পক্ষান্তরে অহংকারবশত কুরআন নির্দেশিত আমল বিমুখদের শাস্তি হল, দুনিয়া ও আখেরাতে তারা দুর্ভাগা ও হতভাগা হওয়া। তাদের জীবন হবে খুবই সংকীর্ণ।
সে দুনিয়াতে: দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা তথা সমস্যা সঙ্কুল অবস্থায় থাকবে। তার কোনো বিশুদ্ধ আকীদা নেই, নেই কোনো সৎ আমল।
‘তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল।’ {সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ১৭৯}
আর সে কবরে: থাকবে সংকীর্ণ অবস্থায়। তার কবর হবে সংকুচিত। এমনকি তার এক পাঁজরের হাড় অন্য পাঁজরে মিলে যাবে। আর সে হাশরের দিন হবে অন্ধ, ফলে কিছুই দেখতে পাবে না।
‘আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব।’ {সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত: ৯৭}
তারা যেহেতু দুনিয়াতে সত্যের ব্যাপারে অন্ধ, সত্য শ্রবণ থেকে বধির ও সত্য বলা থেকে বিরত ছিল, আর তারা বলত:
‘আপনি আমাদেরকে যার প্রতি আহ্বান করছেন সে বিষয়ে আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত, আমাদের কানের মধ্যে রয়েছে বধিরতা আর আপনার ও আমাদের মধ্যে রয়েছে অন্তরায়।’ {সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৫} সেহেতু আল্লাহ তা‘আলা আখিরাতে তাদেরকে সেরূপ প্রতিদানই দেবেন যেরূপ তারা দুনিয়াতে করেছিল। আর আল্লাহ তাদেরকে ওইভাবে ধ্বংস করবেন, যেভাবে তারা আল্লাহর শরীয়তকে ধ্বংস করেছে।
‘আর কেউ পাপ নিয়ে আসলে তবে যারা মন্দকর্ম করেছে তাদের শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে যা তারা করেছে।’ {সূরা আল-ক্বাসাস, আয়াত: ৮৪}
* সহীহ বুখারীতে সামুরা ইবন জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো সালাত আদায় করতেন (অন্য বর্ণনায় এসেছে, যখন ফজরের সালাত আদায় করতেন) তখন তিনি আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং জিজ্ঞাসা করতেন,
‘তোমাদের কেউ কি আজ রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছ? বর্ণনাকারী বলেন, যদি কেউ দেখত তাহলে বর্ণনা করত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, মাশাআল্লাহ। এরূপ তিনি একদিন আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আজ রাতে কোনো স্বপ্ন দেখেছ? আমরা বললাম না। তখন তিনি বললেন, আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখলাম, দু’জন লোক আমার নিকট এল (তারপর তিনি দুই ব্যক্তির বিবরণ দিলেন অতঃপর হাদীসে এসেছে), আমরা চলতে চলতে একজন শায়িত ব্যক্তির কাছে পৌঁছলাম, সেখানে এক ব্যক্তিকে পাথর হাতে তার শিয়রে দাঁড়ানো দেখতে পেলাম। যখন সে ওই পাথরটি শায়িত ব্যক্তির মাথায় নিক্ষেপ করে, তখন পাথরটি তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দূরে ছিটকে যায়। পুনরায় পাথরটি নিয়ে আসার পূর্বেই তার মাথাটি আবার পূর্বের ন্যায় হয়ে যায়। অতঃপর সে তার নিকট ফিরে এসে পূর্বের ন্যায় একই আচরণ করে। আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কী? তারা দু’জন বলল, সামনে অগ্রসর হোন। (তিনি হাদীসটি বর্ণনা করলেন, তাতে রয়েছে) যে লোকটির নিকট আমি এসেছিলাম এং যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে কুরআন শিক্ষা করেছে, অথচ সে অনুযায়ী আমল করে নি। আর সে ফরয সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে যেতো।’ [বুখারী: ১৩৮৬ ও ৭০৪৭। উপরোক্ত বর্ণনাটিতে দু’টি হাদীসের সমন্বয় রয়েছে। [সম্পাদক]]
‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের ভূখণ্ডে (মক্কা-মদীনায়) তার ইবাদত করার ব্যাপারে নিরাশ হয়েছে। তবে সে এটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকবে যে তোমরা তুচ্ছ মনে করে তার ইবাদত ছাড়াও এমন কিছু কাজ করবে যাতে তার অনুসরণ হয়ে যাবে। সুতরাং শয়তানের ব্যাপারে তোমরা সাবধান হও। হে মানুষ সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি, যদি তা আঁকড়ে ধর, তাহলে তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো: আল্লাহর কিতাব এব তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।” [হাকিম: ৩/১০৯, ১৪৮। ৩১৮, সহীহ সূত্রে বর্ণিত।]
* ‘আমর ইবন শু‘আইব তার বাবা থেকে, তার বাবা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘কিয়ামতের দিন কুরআনকে এক ব্যক্তির আকার দেয়া হবে। অতঃপর একজন লোকের সামনে তাকে উপস্থিত করা হবে। সে কুরআন বহণ করেছিল ও তার নির্দেশ লঙ্ঘন করেছিল। তখন কুরআনকে তার বিরুদ্ধে বাদী হিসেবে দাঁড় করানো হবে। তখন কুরআন বলবে, হে আমার প্রভু! আপনি তাকে আমার বহনকারী বনিয়েছিলেন, অথচ সে কতইনা নিকৃষ্ট বহনকারী ছিল। সে আমার সীমালঙ্ঘন করেছে, আমার ফরযসমূহ নষ্ট করেছে ও আমার নাফরমানি করেছে এবং আনুগত্য পরিত্যাগ করেছে। কুরআন অনবরত তার রিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করে তাকে লাঞ্ছিত করতেই থাকবে। পরিশেষে তাকে বলা হবে, তোমার ব্যাপারে কুরআনের এ অভিযোগ। তখন কুরআন তাকে আপন হাতে ধরে নিয়ে অধঃমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।’ [ইবন আবী শায়বা: ৬/১২৯, নং ৩০০৪৪। অনুরূপ আবু নু‘আইম তার হিলইয়া গ্রন্থে ২/২২০। আর হাইসামী তার মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৭/১৬১ গ্রন্থে সেটা উল্লেখ করেছেন।]
* সহীহ মুসলিমে আবূ মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«َالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ » .
‘কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল হবে।’ [মুসলিম: ২২৩।]
* অনুরূপ ‘আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন,
‘কুরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি কুরআনকে সম্মুখে রাখবে, কুরআন তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে কুরআনকে পেছনে রাখবে, কুরআন তাকে তাড়িয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।’ [ইবন আবী শায়বা: ৬/১৩১, নং ৩০০৫৪। তবে এ মওকুফ হাদীসটি সহীহ সনদে সহীহ ইবন হিব্বান ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে জাবের রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। [সম্পাদক]]
সুতরাং হে ব্যক্তি! কুরআন যার বিপক্ষে বাদী হিসাবে দাঁড়াবে, কিভাবে তুমি তোমার পক্ষে তার সুপারিশের আশা কর? ওই লোকের জন্য আফসোস! যার সুপারিশকারী বিচার দিবসে তার বিপক্ষে বাদী হয়ে যাবে।
আল্লাহর বান্দাগণ! এটা আল্লাহর কিতাব, যা আপনাদের সামনে তিলাওয়াত করে শোনানো হচ্ছে। এটা ওই কুরআন, যদি তা কোনো পাহাড়ের উপর নাযিল হত তাহলে দেখতেন তা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। তদ্যপি কোনো কান শুনছে না, কোনো চোখ কাঁদছে না, কোনো অন্তর ভীত হচ্ছে না। কুরআনের নির্দেশকেও তো পালন করা হচ্ছে না যে সেটার বিনিময়ে তার সুপারিশের আশা করা যাবে। হৃদয়সমূহ তাকওয়াশূন্য জনমানবহীন মরুভূমিতুল্য, যাতে পাপের কালিমা স্তুপাকারে জড়িয়ে আছে। ফলে সে না পায় দেখতে আর না শুনতে।
আমাদের সামনে কত আয়াত পড়া হচ্ছে, অথচ আমাদের হৃদয় পাথরের মত কিংবা এর চেয়েও বেশি কঠিন। আর আমাদের সামনে কত রমযান মাস এসে চলে গেছে, অথচ আমাদের অবস্থা হতভাগ্যদের মতই রয়েই গেছে। না কোনো যুবক অশোভন কামনা থেকে বিরত হচ্ছে। না কোনো বৃদ্ধ মন্দ কাজ পরিহার করে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ওই সম্প্রদায়ের তুলনায় আমরা কোথায় আছি, যারা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর ডাক শোনা মাত্রই সাড়া দিত? আর যখন তাদের সামনে কুরআনের আয়াত পাঠ করা হতো, তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠত? তারাই ওই লোক যাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করেছেন, তারা আল্লাহর হক চিনতে পেরেছে। ফলে তারা স্বচ্ছতা অবলম্বন করতে সক্ষম হয়েছে।
‘কুরআন তিলাওয়াতকারীর উচিৎ তাকে যেন চেনা যায় তার রাতে (সালাতে) যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। তার দিনে (সাওমে) যখন মানুষ খাওয়া-দাওয়া করে। তার ক্রন্দনে, যখন মানুষ হাসে। তার তাকওয়ায়, যখন মানুষ ভালো-মন্দ মিশিয়ে ফেলে। তার নীরবতায়, যখন মানুষ খারাপ কিছু কিংবা পরনিন্দায় লিপ্ত থাকে। তার বিনয় ও নম্রতায়, যখন মানুষ অহংকার করে। তার চিন্তা ও পেরেশানীতে, যখন মানুষ হইহুল্লোড় করে। [ইবন রাজাব, লাতায়েফুল মা‘আরিফ পৃ. ৩২১।]
কবির ভাষায়:
১। হে আত্মা! নেককার লোকজন সফলকাম হয়েছে তাকওয়ার মাধ্যমে। তারা সত্য দেখেছে অথচ আমার হৃদয় অন্ধ।
২। তাদের সৌন্দর্য কতই না বেশি যে, রাত তাদের ঢেকে ফেলেছে অথচ তরকারাজির আলোর ওপর তাদের আলো প্রধান্য পেয়েছে।
৩। তারা রাতে মধুর সুরে যিকির করেছে। মূলত তাদের জীবন যিকিরের মাধ্যমে ধন্য হয়েছে।
৪। যিকিরের জন্য তাদের অন্তর সর্বদাই প্রস্তুত হয়ে আছে। তাদের চোখের পানি যেন সুসজ্জিত মনি-মুক্তা।
৫। স্বীয় আলোয় তাদের রাতের শেষাংশ আলোকিত হয়েছে, আর ক্ষমা লাভই হলো উত্তম সৌভাগ্য।
৬। তারা অনর্থক কাজ থেকে নিজেদের সিয়ামকে মুক্ত রেখেছে এবং বিনয়ী হয়ে রাতে যিকিরে মগ্ন থেকেছে।
৭। ধিক হে আত্মা! পা ফসকে যাবার পূর্বে তুমি কি তা লাভের জন্য জাগ্রত হবে না?
৮। কামনা বাসনায় কেটেছে অতীত, তাই সময় থাকতে দ্বীন আঁকড়ে ধর ও সুযোগ গ্রহণ কর। [এ কবিতাসমূহ ইবন রাজাব এর গ্রন্থ লাতায়েফুল মা‘আরিফ থেকে নেওয়া হয়েছে। পৃ. ৩২৩, ৩২৪। ঈষৎ পরিবর্তিত।]
প্রিয় ভাইসকল! সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই কুরআনকে হেফয করুন এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন থেকে তার বিধানসমূহের সীমারেখা হেফাযত করুন। জেনে রাখুন, কুরআন আপনাদের পক্ষে বা বিপক্ষে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য দেবে। কুরআন অবতীর্ণের শুকরিয়া এটা নয় যে, তার প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করব। আল্লাহর বিধানসমূহের সম্মান এটা নয় যে, এগুলোকে উপহাস করব।
‘আর সেদিন যালিম নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে কোনো পথ অবলম্বন করতাম! ‘হায় আমার দুর্ভোগ, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী (কুরআন) থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক। আর রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে। আর এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য থেকে শত্রু বানিয়েছি। আর পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার রবই যথেষ্ট।’ {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ২৭-৩১}
হে আল্লাহ! আমাদের যথাযথভাবে কুরআন তিলাওয়াতের সুযোগ দিন। আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা এর মাধ্যমে সফলতা ও সৌভাগ্য অর্জন করেছে।
হে আল্লাহ! আমাদের তৌফিক দিন কুরআনের অর্থ ও শব্দ বুঝে তা প্রতিষ্ঠাকারী হওয়ার, তার সীমারেখার হেফাযতকারী ও তার যথাযথ সম্মানের খেয়ালকারী হওয়ার।
হে আল্লাহ আমাদের কুরআনের গভীর জ্ঞানী করুন, যারা হবে কুরআনের সুস্পষ্ট ও অস্পষ্ট আয়াতসমূহে বিশ্বাসী, তার সংবাদ সত্যায়নকারী এবং হুকুমসমূহ বাস্তবায়নকারী। হে রহমতের আঁধার, আপন রহমতে আমাদের, আমাদের পিতা-মাতা ও সকল মুসলিমকে ক্ষমা করে দিন।
আর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/126/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।