মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সকল প্রশংসা শক্তিমান, সুদৃঢ়, বিজয়ী, শক্তিশালী, সুউচ্চ আল্লাহর জন্য, ক্ষীণতর স্বরও যার শ্রবণের বাইরে নয়; গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়াও যার দৃষ্টিতে গোপন নয়। তাঁর বড়ত্বের সামনে প্রতাপশালী বাদশাও বিনীত হয়। তাঁর ক্ষমতার সম্মুখে চক্রান্তকারীর চক্রান্ত বিফল হয়। ভুলকারীর ওপর তিনি যেমন চান তাঁর ফয়সালা বাস্তবায়ন করেন। তিনি যাকে চান সৃষ্টিকূলের মধ্য থেকে তাকে নির্বাচিত করেন। আর এরাই বামপন্থী দল আর ওরাই ডানপন্থী। কর্মসম্পাদনকারীদের কর্মসম্পাদনের আগেই এ সম্পর্কে ভাগ্যলিপি চূড়ান্ত হয়েছে। যদি এ শ্রেণীকরণ না হত তবে মুজাহিদদের জিহাদ বিফলে যেত এবং কাফেরদের মধ্য থেকে ঈমানদারদের কিংবা বিশ্বাসীদের মধ্য থেকে সন্দেহবাদীদের চেনা যেত না। এ বিন্যাসকরণ না হলে অপরাধীতে জাহান্নাম পূর্ণ হত না। {আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দান করতাম। কিন্তু আমার কথাই সত্যে পরিণত হবে যে, ‘নিশ্চয় আমি জিন ও মানুষ উভয় দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব’।} ওই হলো আল্লাহর হিকমত হে আমার ভাই আর তিনি সকল প্রজ্ঞাবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান। আমি পবিত্র সে সত্তার প্রশংসা করি শোকরগুযারদের অনুরূপ প্রশংসা। তাঁর কাছে প্রার্থনা করি ধৈর্যশীলদের অনুরূপ সাহায্য। আমি তাঁর কাছে অপমানজনক শাস্তি থেকে পরিত্রাণ চাই।
আমি সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তিনিই সত্য ও প্রকাশ্য মালিক। আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও সুনির্বাচিত বিশ্বস্ত রাসূল।
আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষিত করুন তাঁর ওপর, তাঁর সাহাবী আবূ বকরের ওপর যিনি দীনের ক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে তাঁর প্রথম অনুসারী, উমরের ওপর যিনি আল্লাহর নির্দেশের ক্ষেত্রে দৃঢ় ও অনড়, উসমানের ওপর যিনি রাসূলের দুই কন্যার স্বামী ও উত্তম জোড়ার অধিকারী, আলীর ওপর যিনি বিদ্যার সাগর ও মুক্ত বক্ষের অধিকারী এবং জাহান্নামের অগ্নির কারণসমূহ থেকে পবিত্র। আর রাসূলের সব পরিবার-পরিজন, পুণ্যাত্মা সব সাহাবী ও কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর দীনের সকল অনুসারীর ওপর।
মুসলিম ভাইগণ! জেনে নিন যে, জাহান্নামে প্রবেশের কিছু কারণ রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মজীদে ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে বর্ণনা করেছেন, যাতে করে মানুষ তা থেকে সাবধান হয় ও তা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে।
এ কারণসমূহ দু’ভাগে বিভক্ত:
প্রথম: এমন কারণ যা মানুষকে কাফির বানায়। এ রকম কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ঈমান থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যায় এবং তা তার জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম অবধারিত করে।
দ্বিতীয়: এমন কারণ যদ্বারা মানুষ ফাসিক হয়। এরকম অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তি ন্যায়-পরায়ণতা থেকে পাপাচারী হয়ে পড়ে; এবং তা তাকে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করার উপযোগী বানিয়ে দেয়; যদিও তাকে সেখানে চিরস্থায়ী করে না।
প্রথম শ্রেণীর লোকদের প্রকারভেদ:
১ম প্রকার: আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা
যা সংঘটিত হয় আল্লাহর রুবূবিয়্যাত, উলূহিয়্যাত এবং আসমা ওয়াস-সিফাতের মধ্যে শির্ক করার মাধ্যমে। যেমন- এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর সঙ্গে দ্বিতীয় কোনো স্রষ্টা আছে, সৃষ্টির ব্যাপারে তার সংশ্লিষ্টতা আছে অথবা সে এককভাবে কিছু সৃষ্টি করতে পারে। তেমনি এ ধারণা পোষণ করা যে, আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহ রয়েছে যে ইবাদত পাওয়ার উপযোগী অথবা আল্লাহর সাথে অন্য কারও ইবাদত করা, ফলে তার জন্য কিছু ইবাদত নিবেদিত করা অথবা এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর মত অন্য কারও সে রকম জ্ঞান, ক্ষমতা কিংবা সম্মান রয়েছে; এ জাতীয় যে কোনো বিশ্বাসই শিরকে আকবার বড় শির্ক; যা ঐ ধরণের বিশ্বাসীকে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী বানাবে।
‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৭২}
২য় প্রকার: আল্লাহর সঙ্গে কুফুরী করা অথবা তাঁর ফেরেশতাগণ অথবা রাসূলগণ অথবা কিয়ামত দিবস অথবা তাকদিরের ভালো-মন্দকে অস্বীকার করা।
সুতরাং যারাই উপর্যুক্ত বিষয়সমূহের কোনো কিছু মিথ্যা মনে করবে কিংবা অস্বীকার করবে অথবা সন্দেহ পোষণ করবে সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে এবং চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে।
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের মধ্যে ঈমানের ব্যাপারে পার্থক্য করতে চায়, আর আমরা কতিপয় রাসূলে ঈমান রাখি ও কতিপয় রাসূলকে অস্বীকার করি; বস্তুত এরা মধ্যবর্তী কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়, প্রকৃতপক্ষে এরাই নিরেট কাফের। আর আমরা কাফেরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৫০-১৫১}
‘নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের ওপর লা‘নত করেছেন ও তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন প্রস্তুত করে রেখেছেন। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। সেখানে কোনো বন্ধু বা কোনো সাহায্যকারী পাবে না। যেদিন তাদের চেহারা আগুনে উলট পালট করা হবে সেদিন তারা বলবে, হায় আফসোস! যদি আমরা আল্লাহ ও রাসূলের অনুসরণ করতাম! আমরা তো আমাদের নেতাদের ও বড়দের অনুসারী ছিলাম। তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে। হে আমাদের রব! আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদের প্রতি মহা অভিসম্পাত করুন।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬৪-৬৮}
৩য় প্রকার: ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির কোনো একটি ফরযকে অস্বীকার করা।
সুতরাং যে কেউ আল্লাহর একত্ববাদ ফরয হওয়া অস্বীকার করে অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান অস্বীকার করে অথবা তাঁর রিসালত সকল মানুষের জন্য হওয়াকে অস্বীকার করে অথবা পাঁচ সালাতের ফরয, অথবা যাকাত অথবা রমযানের সিয়াম অথবা হজ অস্বীকার করে, সে কাফির ব্যক্তি হবে। কারণ; সে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুসলিমদের ঐকমত্য তথা ইজমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে।
ঠিক তদ্রুপ কেউ যদি আল্লাহর সঙ্গে শির্ক হারাম হওয়াকে অস্বীকার করে অথবা যাদের হত্যা করা আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন তাদের হত্যা করা হারাম মনে করতে অস্বীকার করল অথবা যিনা-ব্যভিচার অথবা পুং মৈথুন অথবা মদ পান ইত্যাদি যেগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নায় প্রকাশ্য ভাষ্য রয়েছে সেগুলোকে হারাম মানতে অস্বীকার করল সেও কাফের হয়ে যাবে; কারণ সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যারোপকারী। কিন্তু যদি সে নও মুসলিম হয়, আর এ গুলোর কোনো কিছুকে অজ্ঞতার কারণে অস্বীকার করে বসে, তবে যতক্ষণ না সেটা জানবে ততক্ষণ কাফের হবে না। তবে যদি জানার পর অস্বীকার করে তবে সেও কাফের হয়ে যাবে।
৪র্থ প্রকার: আল্লাহ তা‘আলা অথবা তাঁর দ্বীন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।
‘আর যদি আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বলুন, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’? তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কাফের হয়ে গেছ।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৬৫-৬৬}
আর আয়াতে বর্ণিত ‘ইস্তেহযা’ বা বিদ্রূপ করার অর্থ হচ্ছে, ঠাট্টা করা, ব্যঙ্গ করা। এটা আল্লাহ, তাঁর দ্বীন ও রাসূলের সাথে বড় ধরণের অপমানজনক কাজ ও বড় ধরণের অপদস্থ ও অসম্মান প্রকাশ। মহান আল্লাহ তা থেকে বহু উর্ধ্বে।
৫ম প্রকার: আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর দ্বীন ও তাঁর রাসূলকে গালি দেয়া
গালি দ্বারা উদ্দেশ্য, দোষ-ত্রুটি তালাশ করা, ভুল বের করে বেড়ানো এবং এমনভাবে উল্লেখ করা যা দ্বারা তাদের অপমান, খাটো করা অথবা সম্মানহানি ইত্যাদি বুঝায়; যথা- লা‘নত দেওয়া কিংবা তাদের খারাপ ভাষায় কথা বলা ও খারাপ গুণে গুণান্বিত করা ইত্যাদি।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ অথবা তাঁর রাসূলকে গালি দেবে করে সে কাফির বলে বিবেচিত হবে; প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সার্বিকভাবে সে কাফের। চাই সে গালি দেয়াকে হালাল মনে করুক বা হারাম মনে করুক অথবা বিশ্বাসের কথাটি ভুলে শৈথিল্য প্রদর্শন করেই বলুক।... আর আমাদের আলেমগণ আরও বলেন, যদি ওই কথা কেউ ঠাট্টা করে অথবা ঐকান্তিকভাবে বলে, সর্বাবস্থায় সে কাফির হয়ে যাবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক ও অকাট্য কথা।
ইমাম ইসহাক ইবন রাহওয়াই থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: ‘সকল মুসলিমের এ বিষয়ে ইজমা‘ তথা ঐকমত্য যে, যে কেউ আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে গালি দেবে অথবা আল্লাহ তা‘আলা যা নাযিল করেছেন তার সামান্যতম অংশকেও প্রতিহত করতে চাইবে সে কাফির বলে বিবেচিত হবে। যদিও সে আল্লাহ যা নাযিল করেছে তা স্বীকারকারী বলে মুখে দাবি করে থাকুক।’
শাইখুল ইসলাম আরও বলেন, ‘অন্যান্য নবীকে গালি দেওয়ার বিধান আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেওয়ার বিধানের মতই। তাই যদি কেউ কুরআনে যাদেরকে নবী হিসেবে নাম নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরকে গালি দেয়, অথবা যাদের নবুওয়তের বিষয়টি প্রসিদ্ধ হয় যেমন রাসূলের হাদীসে তাদের উল্লেখ এসেছে যে একজন নবী এমন করেছেন অথবা এমন বলেছেন এটা শুনে কেউ যদি তাঁকে নবী জানার পরও গালি দেয় তবে সেও ওই হুকুমের অন্তর্গত। অর্থাৎ কাফের হয়ে যাবে।
তবে নবীগণ ব্যতীত অন্যদের গালি দেওয়া: যদি এ গালি দ্বারা রাসূলকেই গালি দেওয়া উদ্দেশ্য হয়, যেমন কেউ রাসূলের সাহাবীগণকে গালি দিল, যার দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাটো করা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সেও কাফির হিসেবে ধর্তব্য হবে। কারণ রাসূলের সাথে থাকার কারণেই তাদেরকে গালি দেওয়া হচ্ছে।
এর উদাহরণ হচ্ছে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচার ইত্যাদির অপবাদ দেওয়া (নাউযু বিল্লাহ)। এর মাধ্যমে এ ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে; কারণ এর দ্বারা খোদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অপমান ও তাকে গালি দেওয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ٱلۡخَبِيثَٰتُ لِلۡخَبِيثِينَ﴾ [ النور : ٢٦ ]
‘দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য।’ {সূরা আন-নূর, আয়াত: ২৬}
৬ষ্ঠ প্রকার: আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত বিচার-ফয়সালা করা; এ বিশ্বাসে যে, এটি বেশি বাস্তব এবং মানুষের জন্য আল্লাহর আইন থেকে অধিক কল্যাণকর
* সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে সেটাকে বেশি বাস্তব এবং মানুষের জন্য আল্লাহর আইন থেকে অধিক কল্যাণকর বিশ্বাস পোষণ করে বিচার ফয়সালা করবে সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
‘যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধান অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না তারাই কাফির।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৪৪}
* তদ্রুপ কেউ যদি মনে করে গায়রুল্লাহর (মানুষের) ফয়সালা আল্লাহর ফায়সালা থেকে শ্রেষ্ঠ অথবা মনে করে যে, মানুষের ফয়সালা আল্লাহর ফয়সালার সমান অথবা সে মনে করল যে আল্লাহর বিধান ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা বিচার-ফয়সালা দেওয়া জায়েয; এসব অবস্থায়ও সে কাফির হবে; যদিও সে ঐ বিচার না করে। কারণ, এর মাধ্যমে সে আল্লাহর বাণীতে মিথ্যারোপ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের তলদেশে থাকবে। আপনি তাদের কোনো সাহায্যকারী পাবেন না।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪৫}
এই দল (মুনাফিকরা) পূর্বের দল হতে নিকৃষ্টতম। সুতরাং এদের শাস্তি কাফিরদের থেকেও বেশি হবে। তারা জাহান্নামের নিম্নতম স্থানে অবস্থান করবে। কেননা এরা কুফরী, ধোঁকাবাজী এবং আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে ঠাট্টা করাসহ বিবিধ পাপে জড়িত।
‘মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর ওপর শেষ দিবসের ওপর, বাস্তবে তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহকে ও মুমিনগণকে ধোঁকা দেয়। বস্তুত তারা নিজেদের ধোঁকা দেয় কিন্তু তারা তা বুঝে না। তাদের অন্তরে রোগ রয়েছে। আর আল্লাহ তাদের রোগ বৃদ্ধি করে দেন। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদের মিথ্যা বলার কারণে। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা জমিনে ফেৎনা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে আমরা মীমাংসাকারী। জেনে রাখ! তারাই প্রকৃত ফেৎনা সৃষ্টিকারী কিন্তু তারা বুঝে না। আর যখন তাদের বলা হয়, তোমরা সে রকম ঈমান আন, যেভাবে অন্য লোকজন ঈমান এনেছে। তখন তারা বলে, আমরা কি ঈমান আনব বোকাদের মত? মনে রেখ, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা কিন্তু তারা তা বোঝে না। আর তারা যখন ঈমানদারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি। আমরা তো মুসলিমদের সঙ্গে শুধু উপহাস করছি। বরং আল্লাহই তাদের সঙ্গে উপহাস করেন আর তাদের অবকাশ দেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান পেরেশান থাকে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৮-১৫}
মুনাফিকদের অনেকগুলি আলামত বা নিদর্শন আছে:
আল্লাহর যা নাযিল করেছেন তাতে সন্দেহ করা, যদিও সে নিজেকে ঈমানদার বলে প্রকাশ করে। যেমন,
‘নিঃসন্দেহে তারাই আপনার কাছে অব্যাহতি চায় যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহ বাতিক হয়ে পড়েছে। সুতরাং সন্দেহের অবর্তে তারা ঘুরপাক খাচ্ছে।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৪৫}
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া হুকুম-আহকাম ও বিধি-বিধান অপছন্দ করা। যেমন,
‘আপনি কি তাদের দেখেন নি যারা দাবি করে যে, তারা আপনার এবং আপনার পূর্ববর্তীদের ওপর অবতীর্ণ বিষয়ে ঈমান এনেছে, তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়ে ত্বাগুতের কাছে নিয়ে যেতে চায় (মীমাংসার জন্য)। অথচ তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে তারা যেন ত্বাগুতকে অমান্য করে। আর শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্টতায় বহু দূর নিয়ে যেতে চায়। আর যখন আপনি তাদের বলেন, যা আল্লাহ নাযিল করেছে এবং তিনি যা রাসূলের প্রতি নাযিল করেছেন সে দিকে আস, তখন আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যাচ্ছে।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬০-৬১}
ইসলামের বিজয় এবং মুসলিমদের সাহায্য করাকে অপছন্দ করা এবং মুসলিমদের অপমান-লাঞ্ছনায় খুশি হওয়া। যেমন,
‘আপনাকে কোনো কল্যাণ স্পর্শ করলে তাদের তা মন্দ লাগে, পক্ষান্তরে আপনার কোনো বিপদ এলে তারা বলে, আমরা পূর্ব থেকেই নিজেদের কাজ সামলে নিয়েছি এবং তারা উল্লাসিত মনে ফিরে যায়।’ {সূরা আত-তওবা, আয়াত: ৫০}
‘যখন তারা তোমাদের সঙ্গে মিশে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয় তখন তোমাদের ওপর আক্রোশবশত আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা নিজ আক্রোশেই মরতে থাক। নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের কথা সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। তোমাদের যদি কোনো ক্যল্যাণ হয়, তাহলে তাদের মন্দ লাগে আর তোমাদের যদি কোনো অকল্যাণ হয়, তাহলে তারা আনন্দিত হয়। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনোই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সবই আল্লাহর আয়ত্বে রয়েছে।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৯-১২০}
মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ ও ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা এবং মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য তৈরী করা এবং এটা করতে পছন্দ করা। যেমন,
‘যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত, তবে তোমাদের মধ্যে ফাসাদই বৃদ্ধি করত এবং তোমাদের মাঝে ছুটোছুটি করত, তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির অনুসন্ধানে। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাদের কথা অধিক শ্রবণকারী।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৪৭}
ইসলামের দুশমন ও কাফের নেতৃবৃন্দকে ভালোবাসা, তাদের প্রশংসা করা এবং তাদের ইসলাম বিরোধী মতাদর্শ প্রচার-প্রসার করা। যেমন,
‘আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেন নি যারা আল্লাহর গজবে নিপতিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। তারা মুসলিমদের দলভুক্ত নয় অনুরূপভাবে তারা তাদেরও দলভুক্ত নয়; আর তারা জেনে শুনে মিথ্যা শপথ করে।’ {সূরা আল-মুজাদালাহ্, আয়াত: ১৪}
মুমিনদের নিয়ে টিপ্পনী কাটা, তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে দোষ খুঁজে বেড়ানো। যেমন,
‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদকা দেয় এবং যারা নিজ শ্রম ছাড়া কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে। অতঃপর তারা তাদের নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহ্ তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেন; আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৭৯}
অর্থাৎ যারা অধিক ইবাদত করতে তাদেরকে মুনাফিকরা রিয়াকারী বা প্রদর্শনকারী বলত। আর যারা অক্ষম ছিল তাদেরকে শৈথিল্যকারী বলে দোষ দিত।
ঘৃণা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে মুমিনদের ডাকে সাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকা। যেমন,
‘যখন তাদের বলা হয় তোমরা এসো! আল্লাহর রাসূল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আর আপনি তাদের দেখবেন তারা দম্ভভরে ফিরে যায়।’ {সূরা আল-মুনাফিকূন, আয়াত: ৫}
‘অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সঙ্গে। বস্তুত তারা নিজেরা নিজেদের প্রতারিত করে। তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন অলসভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায়; আর তারা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪২}
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত করেন আর তাদের জন্য রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। আর যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহণ করে।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৭-৫৮}
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুনাফিকের নিদর্শনাবলী আলোচিত হলো, আমরা এগুলো উল্লেখ করেছি; যাতে এগুলো থেকে সাবধান করা যায় এবং এ পথের পথিক হওয়া থেকে নিজের অন্তরকে পবিত্র রাখা যায়।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে নিফাক থেকে আপনার কাছে আশ্রয় দিন। আমাদেরকে যেরূপ ঈমান থাকলে আপনি সন্তুষ্ট হোন সেরূপ ঈমান নসীব করুন।
হে সৃষ্টিকুলের রব! আপনি আমাদের, আমাদের পিতা-মাতা এবং সকল মুসলিমকে ক্ষমা করে দিন।
আর আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীগণের ওপর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/126/28
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।