মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
পঞ্চদশ আসর: সিয়াম ভঙ্গের শর্তাবলি এবং যে কাজে সিয়াম ভাঙে না আর সাওম পালনকারীর জন্য যা করা জায়েয
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/126/17
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা, মহীয়ান সহিষ্ণু সত্যবাদী, দয়ালু সম্মানিত রিযিকদাতা, সাত রাস্তা তথা আসমানকে কোনো প্রকার খুঁটি ও লগ্নি ছাড়াই উপরে উঠিয়েছেন, যমীনকে সুঊচ্চ পাহাড় দ্বারা সুস্থিরভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাঁর সৃষ্টির কাছে দলীল-প্রমাণাদি ও মৌলিক তত্ত্বের মাধ্যমে পরিচিত হয়েছেন, সকল সৃষ্টিকুলের রিযিকের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন, মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সবেগে স্খলিত পানি থেকে, তাকে শরীয়ত দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন যাতে সে সম্পর্ক ঠিক রাখে, যেগুলো তাঁর মনঃপুত হয় না এমন ভুল-ভ্রান্তি তার থেকে মার্জনা করেছেন। আমি তার প্রশংসা করি যতক্ষণ নির্বাক চুপ থাকে আর যতক্ষণ কোনো কথক কথা বলে।
আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, এটা নিষ্ঠাবানের সাক্ষ্য কোনো মুনাফিকের সাক্ষ্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল যার দাওয়াত উপর-নীচ সকল স্থানকে ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করে। আল্লাহ তাঁর উপর সালাত পেশ করুন, অনুরূপ তাঁর সাথী আবু বকরের উপর, যিনি উপযুক্ত বিচক্ষণতার সাথে মুরতাদদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, আর ‘উমারের ওপর, যিনি কাফেরদের মাথাব্যাথার কারণ হয়েছিলেন এবং বন্ধ দরজা খুলেছিলেন, আর ‘উসমানের উপর, যার সম্মানকে পাষণ্ড-সীমালঙ্ঘনকারী ব্যতীত কেউ নষ্ট করেনি, অনুরূপভাবে ‘আলীর ওপর, যিনি তাঁর বীরত্বের কারণে সংকীর্ণ পথেও হাটতে সক্ষম ছিলেন। তদ্রূপ রাসূলের সকল পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবী যাদের প্রত্যেকেই অন্যদের উপর পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠত্ব। আর আল্লাহ তাদের যথাযথ সালামও প্রদান করুন।
আমার ভাইয়েরা! পূর্বে আমরা সিয়াম ভঙ্গের কারণসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। হায়েয ও নেফাস ছাড়া সিয়াম ভঙ্গের অন্যান্য কারণসমূহ যেমন, সহবাস করা, সরাসরি বীর্যপাত ঘটানো, খাদ্য কিংবা এ জাতীয় কিছু খাওয়া বা ব্যবহার করা এবং শিঙ্গা লাগানো ও বমি করা এ সব কিছু দ্বারা কেবল তখনই সাওম ভঙ্গ হবে যখন তা জেনে শুনে, স্মরণ করে ও স্বপ্রণোদিত হয়ে করে।
সুতরাং বোঝা গেল যে, সাওম ভঙ্গ হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে:
প্রথম শর্ত: সিয়াম ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা
তাই যদি না জেনে উপরোক্ত বিষয়ের কোনো একটিতে লিপ্ত হয়, তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। কারণ,
‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পাকড়াও করবেন না, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা কোনো ভুল করে বসি।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৮৬} তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, “অবশ্যই আমি তা কবুল করেছি”। [মুসলিম: ১২৬।]
‘আর তোমরা ভুলে যা কর, তাতে কোনো অপরাধ নেই। অবশ্য ইচ্ছাপূর্বক তোমাদের হৃদয় যা করছে তার ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫}
না জানার কারণে সাওম না ভাঙ্গার বিষয়টি ব্যাপক, হতে পারে সে শরীয়তের হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ। যেমন, সে ধারণা করে যে এ জিনিসটা সাওম ভাঙ্গবে না, ফলে তা করে বসে। অথবা কাজ করা অবস্থায় বা সময়ে সেটি তার অজানা ছিল। যেমন, সে ধারণা করে যে, ফজর বা সুবহে সাদিক এখনও উদিত হয়নি, ফলে সে খাওয়া-পিনা চালিয়ে যায় অথচ ফজর উদিত হয়ে গেছে। কিংবা সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে মনে করে খেয়ে ফেলল অথচ সূর্য তখনও অস্ত যায় নি। এসব কারণে সাওম ভঙ্গ হবে না। কারণ,
* সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
«لما نزلت هذه الآية ﴿حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ﴾ عمدت إلى عقالين أحدهما أسود والآخر أبيض فجعلتهما تحت وسادتي وجعلت أنظر إليهما فلما تبين لي الأبيض من الأسود أمسكت فلما أصبحتُ غدوتُ إلى رسول الله صلى الله عليهِ وسلم فأخبرتُهُ بالذي صنعتُ، فقال النبي صلى الله عليه وسلم : إن وسادك إذن لعريض إن كان الخيط الأبيض والأسود تحت وسادك، إنما ذلك بياض النهار وسواد الليل» .
“যতক্ষণ না স্পষ্টভাবে দেখা যায় কালো রেখা থেকে শুভ্র রেখা” তখন আমি দু’টি সুতা নিলাম, একটা কালো অপরটি সাদা। উভয়টাকে আমার বালিশের নীচে রাখলাম এবং উভয়ের দিকে তাকাতাম। অতঃপর যখন আমার নিকট কালো সূতা থেকে শুভ্র সুতাটা পরিস্কার ভাবে দেখা গেল তখন আমি পানাহার থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে যা করলাম সে ঘটনা জানালাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার বালিশ তো বেশ বড় ও প্রশস্ত, যদি তোমার বালিশের নীচে থাকে শ্রভ্র ও কালো সুতা। এটা তো দিনের শুভ্রতা ও রাতের কৃষ্ণতা।” [বুখারী: ১৯১৬; মুসলিম: ১০৯০।]
এ হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, ‘আদী রাদিয়াল্লাহু আনহু সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পরও খেয়েছেন। দুটো রেখা পরিস্কার দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তিনি পানাহার পরিত্যাগ করেন নি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সাওমটি কাযা করার নির্দেশও দেননি; কারণ তিনি এর হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন।
* অনুরূপ সহীহ বুখারীতে আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা এর হাদীসে এসেছে। তিনি বলেন,
«أفطرنا في عهد النبي صلى الله عليه وسلم يوم غيم ثم طلعت الشمس» .
“আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ইফতার করেছিলাম এক মেঘলা দিনে তারপর সূর্য দেখা গিয়েছিল।” [বুখারী: ১৯৫৯।]
এখানে তিনি উল্লেখ করেননি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সাওমটি কাযা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন; কারণ তাদের সময় অজানা ছিল। আর কাযার নির্দেশ যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েই থাকতেন তবে তা অবশ্যই বর্ণিত হতো; কেননা এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা বর্ণনার ক্ষেত্রে মানুষের হিম্মতের অভাব হতো না।
বরং শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ তার ‘হাকিকাতুস সিয়াম’ নামক রেসালায় বলেন,
«إنه نقلَ هِشَامُ بنُ عُرْوَةَ أحدُ رواة الحَدِيثِ عن أبيه عروة : أنهم لم يؤمروا بالقضاء» .
এ হাদীস বর্ণনাকারীদের অন্যমত হিশাম ইবনে ‘উরওয়াহ তার পিতা ‘উরওয়াহ থেকে বর্ণনা করেন, “তাদেরকে কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয় নি।” [হাকীকাতুস সিয়াম, পৃ. ৩৪, ৩৫। বুখারীর পূর্বোক্ত বর্ণনায় এসেছে, হিশামকে বলা হলো, তাদেরকে কী কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? তিনি বললেন, কাযার কী প্রয়োজন? আর মা‘মার বলেন, আমি হিশামকে বলতে শুনেছি, “আমি জানি না তারা তা কাযা করেছিল কি না?”]
কিন্তু যখনই জানতে পারবে যে, দিন এখনও বাকী রয়েছে এবং সূর্য অস্ত যায়নি, তখন থেকে (দিনের অবশিষ্টাংশ) সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর ভক্ষণ করে এ মনে করে যে সুবহে সাদিক এখনো উদিত হয় নি। অতঃপর তার নিকট স্পষ্ট হলো যে, সুবহে সাদিক উদিত হয়ে গেছে, তাহলে তার রোযা সহীহ হবে, তার উপর কাযা আবশ্যক হবে না। কারণ সে সময়ের ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল। আর আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য পানাহার ও সহবাসকে সুবহে সাদিক স্পষ্ট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত হালাল করেছেন। আর অনুমতি দেয়া বৈধ জিনিসের কাযা করার নির্দেশ দেয়া হয় না।
দ্বিতীয় শর্ত: সিয়ামের কথা স্মরণ থাকা
সুতরাং যদি সিয়াম পালনকারী নিজ সিয়ামের কথা ভুলে সাওম ভঙ্গকারী কোনো কাজ করে ফেলে তাহলে তার সিয়াম শুদ্ধ হবে, তাকে আর সেটা কাযা করতে হবে না। যেমনটি সূরা বাকারার আয়াতে গত হয়েছে।
‘যে সিয়াম পালনকারী ভুলে পানাহার করল, সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।’ [বুখারী: ১৯৩৩; মুসলিম: ১১৫৫।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক সাওম পরিপূর্ণ করার নির্দেশ প্রদান সে সাওম সহীহ হওয়ার স্পষ্ট দলীল। আর ভুলে যাওয়া ব্যক্তির খাওয়ানো ও পান করানোর সম্পর্ক আল্লাহর দিকে করা প্রমাণ করে যে এর উপর কোনো পাকড়াও বা জবাবদিহিতা নেই।
কিন্তু যখনই স্মরণ হবে কিংবা কেউ স্মরণ করিয়ে দেবে তখনই: সেটা থেকে বিরত থাকবে এবং মুখে কিছু থাকলে তাও নিক্ষেপ করবে; কারণ এখন তার ওযর দূরীভূত হয়েছে।
আর যখন কেউ দেখবে যে, সাওম পালনকারী ব্যক্তি খাচ্ছে কিংবা পান করছে, তখন তার উচিত হবে সাওম পালনকারীকে সতর্ক করে দেওয়া। কারণ,
“তোমরা সদাচারণ ও তাকওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতা কর।” [সূরা আল-মায়েদাহ: ২]
তৃতীয় শর্ত: স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিয়াম ভঙ্গ করা
অর্থাৎ সিয়াম ভঙ্গকারী নিজের পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী যদি সিয়াম ভঙ্গকারী কিছু করে তবেই কেবল তার সিয়াম নষ্ট হবে। অন্যথায় যদি সিয়াম পালনকারীকে জোর-জবরদস্তি করে সিয়াম ভঙ্গ করানো হয় তবে তার সিয়াম বিশুদ্ধ হবে, তার আর সেটা কাযা করা লাগবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কুফুরীর হুকুমকে সে ব্যক্তি থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন যাকে কুফুরী করতে জোর করে বাধ্য করা হয়েছে, যখন তার অন্তর ঈমানের ওপর অটল থাকে।
“কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহ্র সাথে কুফরী করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহ্র গযব এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি ; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচলিত।” {সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০৬}
সুতরাং যদি আল্লাহ তা‘আলা জোর-জবরদস্তি ও বাধ্য করার কারণে কুফরির হুকুমও তুলে দিয়েছেন তাহলে কুফরির চেয়ে ছোট অপরাধ তো উঠে যাবেই।
‘নিশ্চয় আল্লাহ আমার উম্মতের ভুল, বিস্মৃতি এবং বাধ্য হয়ে করা বিষয় ক্ষমা করেছেন।’ [ইবন মাজাহ: ২০৪৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৭১৭৫।]
আর যদি কোনো লোক তার স্ত্রীকে সহবাস করতে বাধ্য করে অথচ সে সাওম পালনকারিনী, তাহলে মহিলার সাওম শুদ্ধ হবে। তাকে সেটার কোনো কাযা করতে হবে না। যদিও লোকটির জন্য বৈধ নয় স্ত্রীকে সাওম অবস্থায় সহবাসে বাধ্য করা। হ্যাঁ, যদি কোনো মহিলা তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল সাওম পালন করে সেটা ভিন্ন কথা।
যদি কোনো ধুলা-বালি উড়ে গিয়ে সাওম পালনকারীর পেটের ভিতরে চলে যায় কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে পেটের মধ্যে কোনো কিছু ঢুকে কিংবা কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে পেটের ভেতর কিছু পানি প্রবেশ করে, তবে তার সাওম বিশুদ্ধ হবে। তার উপর কাযা করতে হবে না।
আর চোখে সুরমা ও ঔষধ ব্যবহার করলে সাওম ভঙ্গ হবে না। যদিও এর স্বাদ সে কণ্ঠনালীতে পায়। কারণ এটা খাদ্য ও পানীয় নয় এবং সমপর্যায়েরও নয়।
কানের মধ্যে ফোটা ফোটা করে ঔষধ দিলেও সাওম ভাঙ্গবে না। আর কোনো ক্ষত স্থানে ঔষধ দিলেও সাওম ভঙ্গ হয় না। যদিও সে ঔষধের স্বাদ কন্ঠনালীতে পায়। কারণ এটা খাদ্য নয় পানীয় নয়- এবং উভয়ের সমপর্যায়েরও নয়।
* শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তার ‘‘হাকীকাতুস সিয়াম’’ গ্রন্থে বলেন, আমরা জানি, কুরআন ও সুন্নায় এমন কিছু নেই যা প্রমাণ করে যে এ বস্তুগুলো দ্বারা সাওম ভঙ্গ হবে, তাই আমরা জানলাম যে, এগুলো সাওম ভঙ্গকারী নয়।’ [হাকীকাতুস সিয়াম পৃ. ৪০, ৪১।]
* তিনি আরো বলেন, সিয়াম মুসলিমদের দ্বীনে এমন একটি বিষয় যা সাধারণ মানুষ ও বিশেষ মানুষ সকলেরই জানা দরকার। যদি এসব বিষয় আল্লাহ ও তার রাসূল সিয়াম অবস্থায় হারাম করে থাকতেন এবং এর দ্বারা সাওম নষ্ট হতো, তবে অবশ্যই এটা বর্ণনা করা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর আবশ্যক হতো। আর যদি তিনি এটা উল্লেখ করতেন তাহলে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমও তা জেনে যেতেন এবং তারা তা গোটা উম্মতকে পৌঁছিয়ে দিতেন যেমনি ভাবে তারা পুরা শরীয়তকে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যখন কোনো আলেম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে না কোনো সহীহ, দ্ব‘য়ীফ, মুসনাদ, কিংবা মুরসাল কোনো প্রকার হাদীসই বর্ণনা করেন নি, তখন জানা গেলো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলোর কোনো কিছুই উল্লেখ করেন নি। আর সুরমার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস অর্থাৎ ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরামদায়ক সুরমা ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন,
«ليتقه الصائم»
“রোযাদার যেন এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকে।” এটা দুর্বল হাদীস। ইমাম আবু দাউদ তার সুনান গ্রন্থে এটাকে সংকলন করেছেন। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ এটা বর্ণনা করেন নি। ইমাম আবূ দাউদ বলেন, আমাকে ইয়াহইয়াহ ইবনে মা‘ঈন বলেন, এ হাদীসটি মুনকার।’ [হাকীকাতুস সিয়াম পৃ. ৩৭, ৩৮।]
* শাইখুল ইসলাম আরো বলেন, ‘যে সব হুকুম-আহকাম জাতির জন্য জানা জরুরী, অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি অসাল্লামকে তা সাধারণভাবে বর্ণনা করতে হতো। আর অবশ্যই উম্মতরা এটা বর্ণনা করতো। অতঃপর যখন এটা এটা পাওয়া গেল না, তখন বুঝা গেল যে, এটা তাঁর দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বিষয় নয়।’ শাইখের বক্তব্য এখানেই শেষ। শাইখের এ বক্তব্য অত্যন্ত সুদৃঢ় যা সুস্পষ্ট দলীল ও প্রতিষ্ঠিত নিয়ম-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
আর খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে যখন না গিলা হয় তখন তাতে সাওম ভঙ্গ হবে না। আর কোন সুঘ্রাণ ও ধুপের ঘ্রাণেও সাওম ভঙ্গ হবে না। কিন্তু ধুপের ধোঁয়া নাকে গ্রহণ করবে না। কারণ তার অনেক অংশবিশেষ আছে যা ঊর্ধে উঠে থাকে; হয়তো বা তার কিছু পাকস্থলীতে পৌঁছে যাবে। অনুরূপভাবে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়াতেও সাওম ভঙ্গ হয় না; কিন্তু তাতে অতিরঞ্জিত করবে না। কারণ কখনো কিছু পানি পেটের ভিতরে ঢুকে যেতে পারে।
* যেমন হাদীসে এসেছে, লাকীত ইবন সুবরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أسبغ الوضوء وخلل بين الأصابع وبالغ في الاستنشاق إلا أن تكون صائما»
“উত্তম রূপে অজু করো এবং আঙ্গুলের মাঝে খিলাল করো আর ভালো ভাবে নাকে পানি দাও- অবশ্য সাওম পালনকারী হলে নয়।” [আহমাদ ৪/৩২-৩৩, ২১১; আবু দাউদ ২৩৬৬; তিরমিযী ৭৮৮; নাসাঈ ১/৮৭; ইবন মাজাহ: ৪০৭।]
সাওম পালনকারী মেসওয়াক করলে সাওম ভঙ্গ হবে না। বরং সাওম ভঙ্গকারীদের মত সাওম পালনকারীর জন্যও দিনের প্রথম ও শেষ ভাগে মেসওয়াক করা সুন্নাত। কারণ,
* নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لولا أن أشق على أمتي لأمرتهم بالسواك عند كل صلاة»
“যদি আমার উম্মতের ওপর কষ্টকর না হতো, তাহলে অবশ্যই প্রত্যেক সালাতের সময় মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” [বুখারী: ৮৮৭; মুসলিম: ২৫২।]
এটা সাওম পালনকারী ও সাওম ভঙ্গকারী সকলের জন্য সব সময় প্রযোজ্য হুকুম।
* অনুরূপভাবে ‘আমের ইবন রাবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«رأيت النبي صلى الله عليه وسلم ما لا أحصى يتسوك وهو صائم»
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাওম অবস্থায় অগণিত বার মেসওয়াক করতে দেখেছি”। [মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৪৫; আবু দাউদ ২৩৬৪; তিরমিযী: ৭২৫। (দুর্বল সনদে)]
সাওম পালনকারীর জন্য পেস্ট বা দাতের মাজন দিয়ে দাঁত পরিস্কার করা উচিত নয়। কারণ এর শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে, ফলে আশংকা করা হয় যে, মুখের লালার সাথে খাদ্যনালীর ভিতরে এর কোনো কিছু ঢুকে যাবে। মিসওয়াক ব্যবহার সেটার বিকল্প হতে পারে এবং সে অবস্থা থেকে বেঁচে থাকা যায়।
আর সাওম পালনকারীর এমন কিছু করা জায়েয যা তাকে প্রচণ্ড গরম ও পিপাসা থেকে কিছুটা হালকা করবে। যেমন, পানি দ্বারা ঠাণ্ডা হওয়া বা অনুরূপ কিছু। কারণ,
* ইমাম মালেক ও ইমাম আবূ দাউদ কোনো এক সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন,
«رأيت النبي صلى الله عليه وسلم بالعرج ( اسم موضع ) يصب الماء على رأسه وهو صائم من العطش، أو من الحر»
“আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আরজ’ নামক স্থানে সাওম পালনরত অবস্থায় পিপাসা কিংবা গরমের কারণে তার পবিত্র মাথা মোবারকে পানি ঢালতে দেখেছি।” [মুওয়াত্তা ইমাম মালিক: ২/২৯৪; আবু দাউদ: ২৩৬৫।]
* ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি কাপড় ভিজিয়ে নিজের উপর সাওম পালনরত অবস্থায় রেখেছেন।
* আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর একটি খোদাই করা পাথর ছিল এটা কূপের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল। তিনি যখন সাওম পালনরত অবস্থায় গরম অনুভব করতেন, তখন তাতে অবতরণ করতেন। আল্লাহ ভালো জানেন, মনে হচ্ছে যেন এটা পানিতে পরিপূর্ণ থাকত।
* হাসান বলেন, সাওম পালনকারীর জন্য কুলি করা ও ঠান্ডা হওয়ায় কোনো অসুবিধা নেই।
এ বর্ণনাগুলো ইমাম বুখারী তা‘লীক হিসেবে সহীহ বুখারীতে উল্লেখ করেছেন।
প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ! আল্লাহর দীন ভালোভাবে জানুন, যাতে জেনে-শুনে আল্লাহর ইবাদত করতে পারেন। কারণ যারা জানে এবং যারা জানে না তারা সমান হতে পারে না। আর
‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।’ [বুখারী: ৭১; মুসলিম: ১০৩৭।]
হে আল্লাহ! আমাদেরকে দীন বুঝা এবং সেটার উপর আমলের তাওফীক দিন। আর আমাদেরকে দীনের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত রাখুন। আমাদেরকে মুমিন হিসেবে মৃত্যু দিন এবং নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আর হে দয়ালুদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দয়ালু আপনার একান্ত দয়ায় আমাদেরকে ও আমাদের মা-বাবা এবং সকল মুসলিমকে ক্ষমা করুন।
আর আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/126/17
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।