মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার কুদরতের সামনে প্রতিটি বান্দা বিনীত হয়; যার মাহাত্ম্যের কাছে প্রতিটি রুকু-সিজদাকারী বিগলিত হয়; যার মুনাজাতের স্বাদ গ্রহণের জন্য তাহাজ্জুদগুযার জেগে থাকে এবং বিনিদ্র রজনী যাপন করে; যার নেকীর প্রত্যাশায় মুজাহিদ নিজের জীবন ব্যয় করে এবং প্রচেষ্টা চালায়। পবিত্র সত্তা তিনি, যিনি এমন কথা বলেন যা সৃষ্টিকুলের কথার সঙ্গে তুলনা থেকে উর্ধ্বে ও বহুদূরে; তাঁর কথার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাঁর নবীর ওপর অবতীর্ণকৃত কিতাব, যা আমরা দিনরাত পড়ি ও বারবার আওড়াই। বারবার পড়ায় তা পুরনো হয় না, বিরক্তি আসে না আর যাকে কখনও অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়েও দেওয়া যায় না। আমি তাঁর প্রশংসা করি এমন ব্যক্তির ন্যায় যে তাঁর দুয়ারে অবস্থানের প্রত্যাশা করে কোনোরূপ বিতাড়নের শংকা ছাড়াই।
আর আমি সাক্ষ্য দেই যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই- ওই ব্যক্তির সাক্ষ্য যে আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠ এবং তাঁর অনুগত বান্দা। আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল, যিনি ইবাদতের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পাথেয় সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহ সালাত বর্ষণ করুন তাঁর ওপর; তাঁর সঙ্গী আবূ বকর সিদ্দীকের ওপর, যার শত্রুদের অন্তর অনিঃশেষ ক্ষতে পূর্ণ হয়েছে; ‘উমরের ওপর, যিনি অবিরাম ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন; উসমানের ওপর, যিনি নিঃশঙ্ক চিত্তে শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়েছেন; আলীর ওপর, যিনি আপন তলোয়ার দিয়ে বিরামহীন কাফেরদের ক্ষেত নিমূল করেছেন। আর রাসূলের সকল পরিবার-পরিজন ও সাহাবীর ওপর, অনন্তকালব্যাপী বিরামহীন। আর তিনি তাদের উপর যথাযথ সালামও পেশ করুন।
আমার ভাইয়েরা! এই যে কুরআন, যা আপনাদের কাছে আছে, আপনারা তিলাওয়াত করছেন, শুনছেন, মুখস্থ করছেন এবং লিপিবদ্ধ করছেন, তা আপনাদের রব ও সৃষ্টিকুলের রব ও পূর্ববর্তী-পরবর্তীদের মা‘বুদের বাণী; এটা তাঁর সুদৃঢ় রশি, তাঁর সরল পথনির্দেশ, বরকতময় উপদেশবাণী ও সুস্পষ্ট নূর। মহান আল্লাহর সম্মান ও মাহাত্মের সাথে যেভাবে মানায় সেভাবে আল্লাহু তা‘আলা এ কুরআন দ্বারা বাস্তবিকই কথা বলেছেন। তিনি কুরআনকে নৈকট্যশীল সম্মানিত ফেরেশতাদের একজন জিব্রাইল আমীনের নিকট প্রেরণ করেছেন। তিনি এরপর এ কুরআন নিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওসাল্লামের হৃদয়ে নাযিল করেছেন। যাতে তিনি সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায় মানুষকে সতর্ককারীদের অন্তর্ভু্ক্ত হতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা বড় বড় বিশেষণে কুরআনকে বিশেষায়িত করেছেন যাতে আপনারা কুরআনের যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান করতে পারেন। যেমন,
‘রমযান মাস যাতে নাযিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত ও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫}
* ‘অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট নূর ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ হেদায়াত দান করবেন তথা শান্তির পথ জান্নাতের দিকে পথনির্দেশ করবেন- তাকে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে।’ {সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ১৫-১৬}
* আর এ কুরআন আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়ন এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে।’ {সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩৭}
* ‘আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কুরআন দান করেছি। আপনি চক্ষু তুলে ঐ বস্তুর দিকে দেখবেন না, যা আমি তাদের মধ্যে কয়েক প্রকার লোককে ভোগ করার জন্য দিয়েছি। তাদের জন্য পেরেশান হবেন না। আর ঈমানদারদের জন্যে স্বীয় বাহু নত করুন।’ {সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৮৭-৮৮}
* ‘আমরা আপনার নিকট কিতাবটি নাযিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।’ {সূরা আন-নাহল, আয়াত:৮৯}
* ‘নিশ্চয় এ কুরআন যেটা যথার্থ ও সঠিক সে দিকেই পথনির্দেশ করে এবং ঈমানদারদের সুসংবাদ প্রদান করে, যারা নেক কাজ করে। নিঃসন্দেহে তাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।’ {সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৯-১০}
* আর আমরা নাযিল করি এমন কুরআন যা রোগের নিরাময় এবং মু’মিনদের জন্য রহমতস্বরূপ। আর এটা জালিমদেরকে ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করে না।’ {সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮২}
* আপনি বলে দিন! যদি মানব ও জ্বিন জাতি সবাই মিলে একত্রিত হয় যে, তারা এ কুরআন অনুরূপ কিছু আনয়ন করবে- তারা এ কুরআনের অনুরূপ কিছুই আনয়ন করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হোক।’ {সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৮৮}
* ‘আমরা আপনার ওপর কুরআনকে এ জন্য নাযিল করিনি যে, আপনি দুঃখ-কষ্ট করবেন। অবশ্য এটা উপদেশবাণী স্বরূপ যে আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য এটা নাযিল হয়েছে। সুউচ্চ আকাশ ও যমীনকে যিনি সৃষ্টি করেছেন এমন সত্তার পক্ষ থেকে।’ {সূরা ত-হা, আয়াত: ২-৪}
* ‘বরকতময় সেই সত্তা যিনি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী কুরআন তাঁর বান্দাহর প্রতি নাযিল করেছেন; যাতে তিনি বা তা সৃষ্টিকুলের জন্য সতর্ককারী হয়।’ {সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ১}
* ‘নিশ্চয়ই এ কুরআন তো সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। বিশ্বস্ত ফেরেস্তা (জিব্রাঈল) একে নিয়ে অবতরণ করেছে, আপনার অন্তরে যাতে আপনি ভীতি প্রদর্শন কারীদের অন্যতম হোন, সুষ্পষ্ট আরবী ভাষায়। নিশ্চয়-ই এর উল্লেখ আছে পূর্ববর্তী কিতাব সমূহে। তাদের জন্যে এটা কি নিদর্শন নয় যে, বনী-ইসরাইলের আলেমগণ এটা অবগত আছেন।’ {সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ১৯২-১৯৭}
* ‘এটা তো কেবল এক উপদেশবাণী ও প্রকাশ্য কুরআন। যাতে তিনি সতর্ক করতে পারেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।’ {সূরা ইয়াসীন, আয়াত: ৬৯-৭০}
* ‘আমরা আপনার নিকট অবতীর্ণ করেছি এক বরকতপূর্ণ কিতাব; যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করতে পারে, আর জ্ঞানীরা যেন উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।’ {সূরা ছোয়াদ, আয়াত: ২৯}
﴿ قُلۡ هُوَ نَبَؤٌاْ عَظِيمٌ ٦٧ ﴾ [ص: ٦٧ ]
* ‘আপনি বলে দিন! এটা তথা এ কুরআন এক মহা সংবাদ।’ {সূরা ছোয়াদ, আয়াত: ২৭}
* ‘আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কুরআন নাযিল করেছেন। যা সামঞ্জস্যপূর্ণ বারবার পঠিত গ্রন্থ। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার ওপর, যারা তাদের রবকে ভয় করে, এরপর এদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন।’ {সূরা আয-যুমার, আয়াত: ২৩}
* ‘নিশ্চয়ই কুরআন তাদের নিকট আগমন করার পর যারা তা অস্বীকার করে। (তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে)। এটা অবশ্যই মহিমাময় গ্রন্থ।’ বাতিল তার সামনে বা পিছনে দিয়ে আসতে পারে না, এটা তো প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।’ {সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪১-৪২}
“এমনিভাবে আমরা আপনার নিকট রুহ প্রেরণ করেছি আমাদের আদেশক্রমে। আপনি জানতেন না কিতাব কি এবং ঈমান কী? কিন্তু আমরা একে করেছি নূর। যার দ্বারা আমরা আমার বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করি।’ {সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৫২}
* ‘অতএব আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি। নিশ্চয় এটা মহা শপথ যদি তোমরা জানতে। নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক সংরক্ষিত গ্রন্থে তথা লওহে মাহফুযে। যারা পাক-পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। এটা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।’ {সূরা আল-ওয়াকি‘আ, আয়াত: ৭৫-৮০}
* ‘যদি আমরা নাযিল করতাম এ কুরআনকে পাহাড়ের ওপর তাহলে অবশ্যই আপনি দেখতে পেতেন পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহর ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য উপস্থাপন করি; যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।’ {সূরা আল-হাশর, আয়াত: ২১}
* ‘বরং এটা সম্মানিত কুরআন। যা লওহে মাহফুয বা সংরক্ষিত ফলকে রয়েছে।’ {সূরা আল-বুরূজ, আয়াত: ২১-২২}
এ সমস্ত মহান গুণাবলি যা কুরআনের ব্যাপারে উল্লেখ করলাম, আর যেসব গুণাবলি উল্লেখ করিনি, সবই এ কুরআনের মাহাত্ম্য, কুরআনকে সম্মান করার আবশ্যকতা, আদবের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তা তিলাওয়াতের সময় উপহাস, ঠাট্টা-বিদ্রূপ থেকে বিরত থাকার ওপর স্পষ্ট দলীল বহন করে।
কুরআন কিছু তিলাওয়াতের আদব:
নিয়্যাত খালেস করা:
আর কুরআন তেলাওয়াতের আদব হলো আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিয়্যাতকে খালিস করা। কারণ কুরআন তিলাওয়াত একটি মহৎ ইবাদত। এর ফযীলত ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে।
‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর এবং এ তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা কর। এ আমল কর ওই সম্প্রদায়ের আগমনের পূর্বে, যারা কুরআন তীরের মত সোজা করে পড়বে, কুরআন দ্রুত পড়বে তথা এর দ্বারা দুনিয়ার প্রতিদান তালাশ করবে। তারা কুরআন ধীরস্থিরভাবে তিলাওয়াত করবে না।’ [আহমাদ ৩/৩৫৭, নং ১৪৮৫৫; আবু দাউদ: ৮৩০।]
উপস্থিত-মন নিয়ে তিলাওয়াত করা:
যা পড়বে তা নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করবে এবং এর অর্থ অনুধাবনের চেষ্টা করবে এবং সে সময় তার অন্তরটা বিনয়ী হবে এবং সে নিজের অন্তরকে এমনভাবে হাযির করবে যেন এ কুরআনে আল্লাহ তার সঙ্গে সংলাপ করছেন। কারণ কুরআন তো মহান আল্লাহর বাণী।
পবিত্র অবস্থায় তিলাওয়াত করা:
এটা আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ। অপবিত্র ব্যক্তি, অর্থ যার ওপর গোসল ফরয, এমন ব্যক্তি গোসল না করা পর্যন্ত কুরআন পাঠ করবে না। সম্ভব হলে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। যদি পানি না পাওয়া যায় কিংবা রোগের কারণে পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হয় তাহলে তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করবে। অবশ্য অযু বা গোসল ফরয এমন ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করতে পারবে এবং কুরআনে আছে এমন দো‘আ পাঠ করতে পারবে তবে কুরআন পাঠের নিয়্যত করবে না। যেমন বলবে:
‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে হেদায়াত দান করার পর আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দিবেন না। আর আপনি আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে দান করুন রহমত।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮}
নোংরা জায়গা কিংবা মনোযোগ কাড়বে না এমন জনসমাগমস্থানে কুরআন তিলাওয়াত না করা:
নোংরা কিংবা এমন স্থান যেখানে তিলাওয়াত শোনার মত পর্যাপ্ত একাগ্রতার অভাব সেখানে কুরআন তিলাওয়াত কুরআনকে অপমান করার শামিল। টয়লেটে কিংবা পেশাব-পায়খানার জন্য বরাদ্দকৃত স্থানে কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয নেই। কারণ এসব স্থানে কুরআন তিলাওয়াত করা কুরআনুল কারীমের মর্যাদার সঙ্গে মানানসই নয়।
তিলাওয়াতের তিলাওয়াতের শুরুতে তা‘আউউয পড়া:
কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো, তিলাওয়াতের শুরুতে তা‘আউউয তথা (আউযুবিল্লাহি মিনাশ-শায়ত্বানির রজীম) পড়া। কেননা আল্লাহ বলেছেন :
‘যখন আপনি কুরআন পাঠ করবেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবেন।’ {সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৮}
যাতে করে শয়তান কুরআন তিলাওয়াত থেকে কিংবা তিলাওয়াত পরিপূর্ণ করা থেকে বাঁধা না দিতে পারে। আর সূরার মাঝখান থেকে তিলাওয়াত শুরু করলে বিসমিল্লাহ পড়বে না। সূরার শুরু থেকে পাঠ করলে বিসমিল্লাহ বলবে। অবশ্য সূরা তাওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়বে না। কারণ এ সূরার সূচনায় বিসমিল্লাহ নেই।
কারণ কুরআন লিপিবদ্ধ করার সময় সাহাবীগণের এ বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল। সূরা তাওবা কি সম্পূর্ণ আলাদা সূরা নাকি এটা সূরা আনফালের অংশ। তখন তারা উভয় সূরার মাঝে বিসমিল্লাহ লিখা বাদ দিয়েছেন।
কণ্ঠ সুন্দর করা এবং সুর দিয়ে তিলাওয়াত করা:
* কারণ, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছে, আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
‘আল্লাহ তা‘আলা কোনো কিছুর প্রতি এরকমভাবে শ্রবণ করেন না যেভাবে তিনি সুন্দর স্বরবিশিষ্ট নবীর পড়াকে শ্রবণ করেন। যিনি তাকে প্রদত্ত কুরআন তথা কিতাবকে উচ্চসুরে সুর দিয়ে পড়েন।’ [বুখারী: ৫০২৩, ৫০২৪; মুসলিম: ৭৯২।]
* অনুরূপ সহীহ বুখারী ও মুসলিমে জুবাইর ইবন মুত‘য়িম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْمَغْرِبِ بِالطُّورِ فَمَا سَمِعْتُ أَحَدًا أَحْسَنَ أو قراءة منه
‘আমি মাগরিব সালাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সূরা তুর পড়তে শুনেছি। এত সুন্দর কণ্ঠ ও কিরাত আমি আর কারো থেকে শুনি নি।’ [বুখারী: ৭৬৫; মুসলিম: ৪৬৩।]
অবশ্য যদি পাঠকের আশপাশে এমন কেউ থাকে যে উচ্চ স্বরে কিরাত পাঠ করলে কষ্ট পায়, যেমন ঘুমন্ত ব্যক্তি এবং সালাত আদায়রত ব্যক্তি ইত্যাদি, তাহলে এমন উচ্চ আওয়াজে পড়বে না যা তার জন্য বিরক্তিকর কিংবা কষ্টদায়ক দেয়। কারণ,
* আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনের নিকট বের হলেন তখন তারা উচ্চ কিরাতে সালাত আদায় করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
‘সালাত আদায়কারী তার রবের নিকট কাকুতি মিনতি করে প্রার্থনা করে সে যেন লক্ষ্য করে তার প্রার্থনা সে কিভাবে করবে। আর কুরআন পাঠের সময় তোমাদের একজন অপরের ওপর যেন উচ্চ না করে।’ [মুওয়াত্তা মালিক ১/৮০।] ইবন আবদিল বার বলেন, হাদীসটি সহীহ।
‘আর আপনি কুরআনকে তারতীলের সঙ্গে তথা ধীরস্থিরভাবে থেমে থেমে সুন্দররূপে তিলাওয়াত করুন।’ {সূরা আল-মুযযাম্মিল, আয়াত: ৪}
কুরআন তিলাওয়াত করবে ধীরস্থিরভাবে, দ্রুত নয়; কারণ ধীরস্থিরভাবে তিলাওয়াত, শব্দ ও অক্ষর সঠিকভাবে উচ্চারণ এবং কুরআনের অর্থ অনুধাবনে অধিক সহায়ক।
* সহীহ বুখারীতে এসেছে:
«عن أنس بن مالك رضي الله عنه أنه سُئِلَ أَنَسٌ عَنْ قِرَاءَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ كَانَتْ مَدًّا ثُمَّ قَرَأَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ يَمُدُّ بِبِسْمِ اللَّهِ وَيَمُدُّ بِالرَّحْمَنِ وَيَمُدُّ بِالرَّحِيمِ»
‘আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর নবী ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কেরাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তখন তিনি বললেনঃ তার কেরাত ছিল দীর্ঘ আকারের। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম টেনে টেনে পড়তেন। এরপর তিনি পড়লেন بسم الله الرحمن الرحيم তিনি بسم الله বিসমিল্লাহকে দীর্ঘ করলেন। الرحمن আর রাহমানকে দীর্ঘ করলেন। الرحيم আর রাহীমকে দীর্ঘ করলেন।’ [বুখারী: ৫০৪৬।]
* তেমনি উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিরাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন:
«كان يقطع قراءته آية آية-بسم الله الرحمن الرحيم-الحمد لله رب العالمين-الرحمن الرحيم-مالك يوم الدين»
‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি একটি আয়াত করে আলাদা আলাদা ভাবে পড়তেন। তিনি পড়তেন - بسم الله الرحمن الرحيم তার পর ( الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ) তারপর ( الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ) ও তারপর ( مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ ) এভাবে আলাদা ভাবে পড়তেন।’ [আহমাদ ৬/৩০২; আবু দাউদ: ৪০০১; তিরমিযী: ২৯২৭।]
‘তোমরা একে (কুরআন) নষ্ট খেজুরের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ো না কিংবা কবিতার মতো গতিময় ছন্দেও পড়ো না। বরং এর যেখানে বিস্ময়ের কথা আছে সেখানে থামো এবং তা দিয়ে হৃদয়কে আন্দোলিত করো। আর সূরার সমাপ্তিতে পৌঁছা যেন তোমাদের কারো লক্ষ্য না হয়।’ [ইবন আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ: ২/২৫৬, নং ৮৭৩৩।]
অবশ্য এমন দ্রুত পাঠে কোনো সমস্যা নেই যেখানে কোনো অক্ষর বিলুপ্ত করলে বা ছুটে গেলে শাব্দিক কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় না কিংবা যেখানে ইদগাম করা বিশুদ্ধ নয় সেখানে ইদগাম করলে শাব্দিক কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় না এবং অর্থেরও কোনো পরিবর্তন হয় না। আর যদি এতে শাব্দিক ত্রুটি বিচ্যুতি হয় তাহলে হারাম হবে কারণ এটা কুরআনকে পরিবর্তন করার শামিল।
তিলাওয়াতে সিজদায় গিয়ে সিজদা করা:
কুরআন তিলাওয়াতকারী যখন অযু অবস্থায় থাকেন তখন দিন কিংবা রাত্রি যে কোনো সময় সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করলে সিজদা আদায় করতে হবে।
সিজদা আদায়ের নিয়ম হলো: সিজদার জন্য প্রথমে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যাবে এবং সিজদায় গিয়ে বলবে: سبحان ربى الأعلى এবং দো‘আ করবে। অতঃপর সিজদা থেকে তাকবীর ও সালাম ছাড়াই মাথা উঠাবে। কারণ তেলাওয়াতে সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর ও সালাম দেওয়ার কোনো বর্ণনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পাওয়া যায় না। তবে যদি তিলাওয়াতে সিজদাটি সালাতের মধ্যে হয় তখন সিজদা দেওয়ার সময় এবং সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময়ও তাকবীর দিবে। কেননা,
তিনি যখনই মাথা অবনত করতেন এবং উত্তোলন করতেন তখনই তাকবীর বলতেন; আর তিনি (আবু হুরায়রা রা.) বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিই করতেন।’ [মুসলিম: ৩৯২।]
* অনুরূপ আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
«رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يكبر في كل رفع وخفض وقيام وقعود»
‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাথা উঠানো, মাথা অবনত করা, দাঁড়ানো ও বসা এ প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহু আকবার বলতে শুনেছি।’ [আহমাদ ১/৪৪২, ৪৪৩; নাসাঈ ৩/৬২; তিরমিযী: ১১৪৮।]
আর এটা সালাতের সিজদা ও সালাতে তিলাওয়াতে সিজদা উভয়কেই শামিল করে।
এ হলো কুরআন তিলাওয়াতের কতিপয় আদব। সুতরাং আপনারা এসব আদবের প্রতি যথাযথ লক্ষ্য রেখে তিলাওয়াত করবেন এবং আল্লাহর মেহেরবানী ও করুণা অন্বেষণ করবেন।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনি আপনার সম্মানিত বস্তুগুলোর সম্মান করার, আপনার দানগুলো আহরণ করে সফলতা লাভের, আপনার জান্নাতসমূহের ওয়ারিস হওয়ার তাওফীক দিন। আর হে পরম করুণাময়! আপনি আমাদেরকে, আমাদের পিতা-মাতা ও সকল মুসলিমকে স্বীয় রহমতে ক্ষমা করুন।
আর আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবীদের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করুন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/126/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।