মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সকল প্রশংসা মহাজ্ঞানী, মহাপ্রজ্ঞাবান, সর্বোচ্চ, মহান আল্লাহর জন্য। তিনি তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তা নিপুণভাবে নিরূপণ করেছেন। তিনি তাঁর শরীয়তের বিধানাবলিকে আপন প্রজ্ঞানুযায়ী সুদৃঢ় করেছেন সৃষ্টির জন্য সুস্পষ্ট ও শিক্ষা হিসেবে। আমি তাঁর প্রশংসা করি তাঁর পূর্ণাঙ্গ গুণাবলির উপর। আমি তাঁর শুকরিয়া আদায় করি তাঁর পরিপূর্ণ নেয়ামতসমূহের উপর।
আর আমি সাক্ষ্য দেই যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর এবং প্রশংসাও তাঁর। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রাসূল। আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন তাঁর ওপর, তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবীবৃন্দ এবং সবার প্রত্যাবর্তন ও ফিরে যাওয়ার দিন পর্যন্ত সুন্দরভাবে তাঁদের আদর্শের সকল অনুসারীর ওপর।
ভাইয়েরা আমার! সম্মানিত মাস রমযান গত হতে চলেছে, তার সামান্য অংশই বাকী আছে; সুতরাং যে ব্যক্তি এটা যথাযথ মূল্যায়নের সাথে অতিবাহিত করেছে সে যেন আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে অতঃপর এটা কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করে। আর যে এটা অলসতায় অতিবাহিত করেছে, সে যেন আল্লাহর নিকট তওবা করে এবং নিজ ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য আল্লাহর তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, কারণ মৃত্যুর পূর্বে ওযর পেশ করা গ্রহণযোগ্য হবে।
ভাইয়েরা আমার! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এই মাসের শেষে আপনাদের উপর যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন; আর এটা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঈদের নামাযের পূর্বেই।
আজকের মজলিসে এ যাকাতুল ফিতর বিষয়ে কথা বলব। এর বিধান, হেকমত, শ্রেণী, পরিমাণ, ওয়াজিব হওয়ার সময়, প্রদানের সময় ও স্থান সম্পর্কে আলোচনা করব।
যাকাতুল ফিতরের বিধান বা হুকুম:
যাকাতুল ফিতর প্রদান করা ফরয। এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মুসলিমের উপর অপরিহার্য বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহর রাসূল যা ফরয করেছেন অথবা করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন সেগুলোও যা আল্লাহ ফরয করেছেন ও নির্দেশ দিয়েছেন তার হুকুম রাখে। অর্থাৎ তা মানাও অবশ্যম্ভাবী।
‘যে রাসূলের হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে তা থেকে বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাই নি।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০}
‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মুমিনদের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ওই দিকে ফিরাবো যে সে ফিরতে চায় এবং আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। তা নিকৃষ্টতম গন্তব্যস্থল।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫}
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে স্বাধীন, গোলাম, নারী, পুরুষ, ছোট-বড় সকল মুসলিমের ওপর এক সা‘ খেজুর, বা এক সা‘ যব যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন।’ [বুখারী: ১৫০৩; মুসলিম: ৯৮৪।]
* পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর দেয়া ওয়াজিব নয়, কিন্তু কেউ যদি আদায় করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ,
* ‘উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পেটের বাচ্চার পক্ষ হতে ফিতরা আদায় করতেন।
ফিতরা নিজের পক্ষ থেকে এবং যাদের ভরণ-পোষণ তার দায়িত্বে রয়েছে যেমন-স্ত্রী ও এমন নিকটাত্মীয় যাদের নিজেদের ফিতরা নিজেদের দেওয়ার সামর্থ নেই সন্তান তাদের পক্ষ থেকেও আদায় করা আবশ্যক। আর যদি তারা নিজেদের ফিতরা নিজেরা দেওয়ার সামর্থ রাখে তবে নিজেদের যাকাতুল ফিতর নিজেরাই আদায় করা উত্তম। কারণ ওয়াজিব হওয়ার সম্বোধন তাদেরকেই মৌলিকভাবে করা হয়েছে।
আর যাকাতুল ফিতর কেবল তাদের উপরই আবশ্যক যার ঈদের দিন ও রাত্রের খরচ সম্পাদনের পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকবে। যদি এক সা‘ এর চেয়ে কম পরিমাণ সম্পদও কারও অতিরিক্ত থাকে তবে তাকে তা-ই যাকাতুল ফিতর হিসেবে প্রদান করতে হবে। কারণ,
‘আমি যখন তোমাদের কোনো বিষয়ে আদেশ করি, তোমরা তখন তা সাধ্যানুযায়ী পালন করো।’ [বুখারী: ৭২৮৮; মুসলিম: ১৩৩৭।]
যাকাতুল ফিতর প্রবর্তনের হিকমত বা রহস্য:
বস্তুত: যাকাতুল ফিতরের হিকমত অত্যন্ত স্পষ্ট। কারণ:
এর দ্বারা দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি সদয় ব্যবহার করা হয়; যাতে তারা ঈদের দিনে ভিক্ষা করা থেকে বিরত থেকে ঈদের দিনগুলোতে ধনীদের সাথে ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে; ফলে ঈদ হবে সার্বজনীন। তাছাড়া এর মধ্যে বদান্যতা ও সহমর্মিতার মত মহৎ চরিত্র দ্বারা গুণান্বিত হওয়া যায়। চওয়ার প্রয়োজন না হয়
সিয়াম পালনকারীর সিয়ামে যে শৈথিল্য বা ত্রুটি-বিচ্যুতি ব গুনাহ হয়ে থাকে, এর মাধ্যমে সিয়াম পালনকারীকে তা থেকে পবিত্র করা যায়।
যাকাতুল ফিতর আদায়ের দ্বারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হয়। তিনি নিজ দয়ায় বান্দাকে পূর্ণ একমাস সিয়াম পালনের তাওফীক দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে কিয়ামেরও সুযোগ দিয়েছেন এবং এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব কিছু সৎ কাজেরও সুযোগ দিয়েছেন।
* আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন অনর্থক ও অশ্লীল কথা-বার্তা দ্বারা সিয়ামের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকীনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা যাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হবে।’ [আবু দাউদ: ১৬০৯; ইবন মাজাহ: ১৮২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪০৯।]
যাকাতুল ফিতরের শ্রেণী বিভাগ:
মানুষের সাধারণ খাদ্য জাতীয় বস্তু; যেমন-খেজুর, আটা, চাল, কিসমিস, পনির ইত্যাদি। অথবা এর বাইরে সাধারণত যা মানুষের খাদ্য হিসেবে পরিগণিত তাও দেওয়া যাবে।
* বুখারী ও মুসলিমে ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামানায় আমরা যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা‘ খাদ্য দ্বারা। তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনির এবং খেজুর।’ [বুখারী: ১৫০৮; মুসলিম: ৯৮৫।]
অতএব, পশুর খাদ্য দ্বারা যাকাতুল ফিতর আদায় করলে, আদায় হবে না। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসকীনদের খাদ্যদ্রব্য হিসেবে যাকাতুল ফিতর ফরয করেছেন জীব-জন্তুর খাদ্য হিসেবে নয়।
তাছাড়া কাপড়, বিছানা-কার্পেট, পানপাত্র, খাদ্য-রসদ ইত্যাদি যা মানুষের খাদ্য বলে বিবেচিত নয় তা দ্বারা দিলে তাও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য দ্বারা দেওয়া ফরয করেছেন সুতরাং রাসূল যেটা নির্ধারণ করেছেন সেটা অতিক্রম করা যাবে না।
অনুরূপ খাদ্যের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমেও আদায় করা যাবে না। কারণ,
তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আদেশের বিপরীত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন:
‘যে আমাদের এ দ্বীনে এমন কিছু আবিষ্কার করবে, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।’ এটি ইমাম মুসলিম সংকলন করেছেন। তবে এর মূল কথা বুখারী-মুসলিম উভয়টিতেই রয়েছে।’ [বুখারী: ২৬৯৭; মুসলিম: ১৭১৮।]
তাছাড়া খাদ্যমূল্য প্রদান সাহাবীগণের আমলের পরিপন্থী। কারণ, তারা খাদ্যজাতীয় বস্তু দ্বারাই যাকাতুল ফিতর আদায় করতেন।
* আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِّينَ من بعدي»
‘তোমরা অপরিহার্যভাবে আমার সুন্নাতকে আকড়ে ধরো এবং আমার পরবর্তীতে সঠিক পথে পরিচালিত ও হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত বা আদর্শ অনুসরণ করে চলো।’ [আহমাদ ৪/১২৬, ১২৭; আবু দাউদ: ৪৬০৭; তিরমিযী: ২৬৭৬; ইবন মাজাহ: ৪২, ৪৩।]
তাছাড়া যাকাতুল ফিতর সুনির্দিষ্ট প্রকার নির্ধারণ করে-দেওয়া ইবাদত। বিধায় তা সুনির্দিষ্ট বস্তুর বাইরে অন্য কিছু দ্বারা আদায় করলে গ্রহণযোগ্য হবে না। যেমনিভাবে সুনির্দিষ্ট সময়ের পরে বের করলে তা যথেষ্ট হয় না।
তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতর বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যদ্রব্য দ্বারা নির্ধারণ করেছেন, আর সে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সমান নয়। সুতরাং মূল্যই যদি ধর্তব্য হয়, তাহলে নির্দিষ্ট কোনো এক প্রকারের এক সা‘ পরিমাণ নির্ধারিত হতো এবং অন্যান্য প্রকার থেকে একই মূল্যের সমান নির্ধারিত হতো।
আর মূল্য প্রদান করলে যাকাতুল ফিতর প্রকাশ্য ইবাদাত থেকে পরিণত হয় গোপন ইবাদতে। যেহেতু এক সা‘ খাদ্য প্রদান করলে তা মুসলিমদের মাঝে প্রকাশ্য হয়, ছোট-বড় সকলেই তা জানতে পারে, স্বচক্ষে তার পরিমাপ ও বণ্টন দেখে এবং তারা পরস্পর তা গ্রহণ করে। কিন্তু মূল্য হলে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে তা গোপনে আদান-প্রদান হয়ে যায়।
যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ:
যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের এক সা‘। যার ওজন: উন্নত মানের গমের চার শত আশি মিসকাল গম। আর গ্রামের ওজনে ‘দুই কেজি ৪০ গ্রাম’ গম। যেহেতু এক মিসকাল সমান সোয়া চার গ্রাম, তাই ৪৮০ মিসকাল সমান ২০৪০ গ্রাম।
অতএব রাসূলে যুগের সা‘ জানতে ইচ্ছা করলে, তাকে দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম গম ওজন করে এমন পাত্রে রাখতে হবে, যা মুখ পর্যন্ত ভরে যাবে। অতঃপর তা দ্বারা পরিমাপ করতে হবে।
যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময়:
ঈদের রাতে সূর্যাস্তের সময় জীবিত থাকলে তাদের ওপর যাকাতুল ফিতর আদায় করা আবশ্যক; নতুবা নয়।
সুতরাং কেউ সুর্যাস্তের এক মিনিট পূর্বে মারা গেলে তার ওপর ওয়াজিব হবে না।
আর এক মিনিট পরে মারা গেলে অবশ্যই তার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে।
যদি কোনো শিশু সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পর ভূমিষ্ট হয়, তার ওপরও আবশ্যক হবে না। তবে আদায় করা সুন্নাত হবে। যার আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে।
আর সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পূর্বে ভূমিষ্ট হলে তার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে।
যাকাতুল ফিতর আবশ্যক হওয়ার সময় রামযানের শেষ দিনের সূর্যাস্তের পর এজন্য নির্ধারণ করা হয়েছে যে, তখন থেকে ফিতর তথা খাওয়ার মাধ্যমে রমযানের সিয়াম সমাপ্ত হয়। এ কারণেই একে রমযানের যাকাতুল ফিতর বা সিয়াম ভাঙ্গার যাকাত বলা হয়। এতে বুঝা গেল যে, ফিতর তথা সিয়াম শেষ হওয়ার সময়টাই যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার সময়।
যাকাতুল ফিতর আদায়ের সময়:
যাকাতুল ফিতর আদায়ের দুটি সময় রয়েছে:
১. ফযীলতপূর্ণ সময় ও ২. জায়েয সময়।
ফযীলতপূর্ণ সময়: ঈদের দিন সকালে ঈদের সালাতের পূর্বে। কারণ;
* সহীহ বুখারীতে আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ঈদের সালাত পড়তে যাওয়ার পূর্বে যাকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ নিয়েছেন।’ [বুখারী: ১৫০৩; মুসলিম: ৯৮৬।] অনুরূপভাবে হাদিসটি ইমাম মুসলিম ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন।
ইবন ‘উয়াইনা স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে ‘আমর ইবন দীনারের সূত্রে ইকরিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মানুষ ঈদের দিন যাকাতুল ফিতর ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করবে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর সালাম আদায় করে।’ {সূরা আ‘লা, আয়াত: ১৪-১৫}
সুতরাং ঈদুল ফিতরের সালাত একটু বিলম্ব করে পড়া উত্তম; যাতে মানুষ যাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারে।
জায়েয সময়: ঈদের একদিন দু’দিন পূর্বে যাকাতুল ফিতর আদায় করা।
* সহীহ বুখারীতে নাফে‘ বর্ণনা করেন, ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের এবং ছেট-বড় সন্তানদের পক্ষ হতেও যাকাতুল ফিতর প্রদান করতেন। এমনকি তিনি আমার সন্তানদের যাকাতুল ফিতরও প্রদান করতেন। তিনি যারা যাকাতুল ফিতর গ্রহণ করত তাদেরকেই প্রদান করতেন। আর তারা ঈদের একদিন বা দু’দিন পূর্বে যাকাতুল ফিতর দিতেন। [বুখারী: ১৫১১।]
ঈদের সালাতের পর আদায় করা জায়েয নেই। তাই বিনা কারণে সালাতের পর পর্যন্ত বিলম্ব করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না কারণ তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশের পরিপন্থী।
‘ঈদের সালাতের পূর্বে আদায় করলে তা যাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের সালাতের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হবে।’ [আবু দাউদ: ১৬০৯; ইবন মাজাহ: ১৮২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৪০৯।]
আর যদি কোনো সঙ্গত কারণবশত বিলম্ব করে, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। যেমন সে এমন স্থানে আছে যে তার কাছে আদায় করার মত কোনো বস্তু নেই বা এমন কোনো ব্যক্তিও নেই, যে এর হকদার। অথবা হঠাৎ তার কাছে ঈদের সালাতের সংবাদ পৌঁছল যে কারণে সে সালাতের পূর্বে আদায় করার সুযোগ পেল না অথবা সে কোন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছিল, আর সে আদায় করতে ভুলে গেছে। এমতাবস্থায় সালাতের পর আদায় করলে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ সে অপারগ।
ওয়াজিব হচ্ছে, যাকাতুল ফিতর তার প্রাপকের হাতে সরাসরি বা উকিলে মাধ্যমে যথাসময়ে সালাতের পূর্বে পৌঁছানো। যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে প্রদানের নিয়ত করে, কিন্তু যাকাতুল ফিতর বের করার সময় তার সঙ্গে বা তার কোনো ওকিল বা প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ না ঘটে তাহলে অন্য কোনো যাকাতুল ফিতরের উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রদান করবে। কোনো ক্রমেই নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্ব করবে না।
যাকাতুল ফিতর প্রদানের স্থান:
যাকাতুল ফিতর প্রদানের সময় ফিতরা প্রদানকারী যে এলাকায় সে অবস্থান করছে সে এলাকার গরীবরাই এর হকদার; সে (ফিতরা প্রদানকারী) উক্ত এলাকার স্থায়ী অধিবাসী হোক বা অস্থায়ী হোক। বিশেষ করে যদি সম্মানিত স্থান হয় যেমন মক্কা বা মদীনা অথবা সেখানকার ফকীররা এর প্রতি বেশি মুখাপেক্ষী হয় তবে সেখানে বের করাই নির্দিষ্ট। কিন্তু যদি সে এমন এলাকায় থাকে যেখানে কোনো হকদার না থাকে বা হকদার চেনা অসম্ভব হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে একজন উকিল নিযুক্ত করবে যে উকিল উপযুক্ত ব্যক্তি খুঁজে তার যাকাতুল ফিতর আদায় করে দেবে।
যাকাতুল ফিতরের হকদার:
সদকাতু ফিতরের হকদার হচ্ছে (১) দরিদ্র, (২) ঋণগ্রস্ত, যারা তা আদায়ে অক্ষম। সুতরাং তাদেরকে প্রয়োজন পরিমাণ দেয়া যাবে।
একটি যাকাতুল ফিতর অনেক ফকীরকে দেওয়া জায়েয।
আবার অনেকগুলো যাকাতুল ফিতর এক মিসকীনকেও দেয়া যাবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু তাদের কতটুকু দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করেন নি।
এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, যদি একদল লোক তাদের যাকাতুল ফিতর ওজন করার পর একটি পাত্রে জমা করে, তারপর সেখান থেকে পুনরায় পরিমাপ ছাড়া বণ্টন করে তবে তা আদায় হয়ে যাবে।
কিন্তু ফকীরকে জানিয়ে দেয়া উচিৎ যে, তাকে তারা যা দিচ্ছে তার পরিমাণ তারা জানে না; যাতে করে (ফকীর) নিজে কাউকে দিতে গিয়ে তার পরিমাপ না জেনে ধোঁকায় না পড়ে।
আর ফকীরের জন্য বৈধ, কারো থেকে যাকাতুল ফিতর গ্রহণের পর নিজের পক্ষ থেকে বা পরিবারের অন্য সদস্যদের পক্ষ থেকে পরিমাপ করার পর যাকাতুল ফিতর প্রদান করা। অথবা তা পরিপূর্ণ আছে বলে দাতার কথায় বিশ্বাস করে পরিমাপ ছাড়াই প্রদান করা।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী আনুগত্য করার তাওফীক দিন। আমাদের আত্মা, কথা ও কাজ পরিশুদ্ধ করে দিন। আমাদেরকে খারাপ আকীদা-বিশ্বাস, খারাপ কথা ও খারাপ কাজ থেকে পবিত্র করুন। নিশ্চয় আপনি উত্তম দানশীল ও করুণাময়।
হে আল্লাহ! আপনি সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর সকল পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/126/30
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।