hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রমযান মাসের ৩০ আসর

লেখকঃ শায়খ মুহাম্মদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ.

তৃতীয় আসর: সিয়ামের বিধান
সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি দান করলে আটকানোর কেউ নেই এবং যিনি নিয়ে নিলে দান করার মতো কেউ নেই, শ্রমদাতাদের জন্য তাঁর আনুগত্য শ্রেষ্ঠ কামাই, তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য তাঁর তাকওয়া সর্বোচ্চ বংশপদবী। তিনি নিজ বন্ধুদের অন্তরসমূহকে ঈমানের জন্য প্রস্তুত ও তাতে তা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন, তাদের জন্য তাঁর আনুগত্যের পথে যাবতীয় ক্লান্তিকে সহজ করে দিয়েছেন; ফলে তাঁর সেবার পথে তারা ন্যূনতম শ্রান্তিবোধ করে না। হতভাগারা যখন বক্রপথ অনুসরণ করেছে তখন তিনি তাদের জন্য দুর্ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন, ফলে তারা নিপতিত হয়েছে নিশ্চিত ধ্বংসের চোরাবালিতে। তারা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তার সাথে কুফরী করেছে ফলে তিনি তাদের দগ্ধ করেছেন লেলিহান আগুনে। আমি প্রশংসা করি তাঁর, তিনি যা আমাদের দান করেছেন এবং অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য।

আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে একমাত্র তিনি ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই; তাঁর কোনো অংশীদার নেই, বাহিনীসমূহকে পরাজিত করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন। আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করি যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে আল্লাহ মনোনীত করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন।

দরূদ বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, তাঁর সঙ্গী আবূ বকর সিদ্দীকের ওপর যিনি মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন, উমরের ওপর যাকে দেখে শয়তান ভেগে যায় এবং পলায়ন করে, উসমানের ওপর যিনি দুই নূরের অধিকারী (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একেরপর এক দুই মেয়ের জামাতা) শ্রেষ্ঠ আল্লাহভীরু ও উৎকৃষ্ট বংশীয় ব্যক্তি, আলীর ওপর যিনি তাঁর জামাই এবং বংশগত দিক থেকে চাচাতো ভাই এবং তাঁর অবশিষ্ট সব সাহাবীর ওপর যারা দীনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গর্ব ও অর্জন কামাই করেছেন আর সকল তাবেঈ-অনুসারীর ওপর যারা তাঁদের সর্বোত্তম অনুসরণ করে পূর্ব-পশ্চিমকে আলোকিত করেছেন। অনুরূপ যথাযথ সালামও বর্ষণ করুন।

আমার ভাইয়েরা! নিশ্চয় রমযানের সিয়াম ইসলামের অন্যতম রুকন ও গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

* আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ أَيَّامٗا مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥۚ وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٤ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [ البقرة : ١٨٣، ١٨٥ ]

‘হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান। রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ {সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত: ১৮৩-১৮৫}

* হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ، شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ»

‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি, এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকারের কোনো মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, বাইতুল্লাহর হজ করা এবং রমযানের সিয়াম পালন করা।’ [বুখারী: ৮; মুসলিম: ১৬।] বুখারী ও মুসলিম।

মুসলিমে ‘রমযানের রোযা রাখা’ এরপর ‘বাইতুল্লায় হজ করা’ এভাবে এসেছে।

রমযানের সিয়ামের ব্যাপারে সকল মুসলিম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, এটা ফরয। এটা ইসলামে স্পষ্টত অকাট্য ইজমা।

সুতরাং যে ব্যক্তি সিয়াম ফরয হওয়াকে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। তখন তাকে তাওবা করতে বলা হবে। যদি তাওবা করে, সিয়ামের ফরযিয়্যাত স্বীকার করে তবে ভালো কথা অন্যথায় কাফির ও মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে। তাকে মৃত্যুর পর গোসল দেয়া হবে না এবং কাফন পরানো হবে না, তার নামাযে জানাযা পড়া হবে না এবং তার জন্য রহমতের দো‘আ করা হবে না। তাকে মুসলিমদের করবস্থানে দাফন করা হবে না। কেবল দূরবর্তী কোনো স্থানে তার জন্য কবর খনন করা হবে এবং দাফন করা হবে, যাতে মানুষ তার গলিত লাশের দুর্গন্ধে কষ্ট না পায় এবং তাকে দেখে তার পরিবার পরিজনও যেন দুঃখ না পায়।

রমযানের সিয়াম দ্বিতীয় হিজরীতে ফরয হয়েছে। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বছর রমযানের সিয়াম পালন করেছেন।

সিয়াম ফরয হয়েছে দুটি পর্যায়ে:

প্রথম পর্যায়: প্রথমে সিয়াম পালন কিংবা খাদ্য গ্রহণ উভয়ের অনুমতি ছিল। তবে সিয়াম পালন উত্তম ছিল।

দ্বিতীয় পর্যায়: পরে সিয়াম পালন বাধ্যতামূলক করা হয়।

* বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে এসেছে, সালমা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন এ আয়াত নাযিল হল:

﴿ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ ﴾ [ البقرة : ١٨٤ ]

‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪} তখন যার ইচ্ছা সে সিয়াম ভঙ্গ করে ফিদয়া প্রদান করত। কিন্তু যখন পরবর্তী আয়াত নাযিল হল, তখন তা রহিত হয়ে গেল [বুখারী, ৪৫০৭; মুসলিম, ১১৪৫।]।

অর্থাৎ নিম্নের আয়াতের মাধ্যমে পূর্ববর্তী আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেল। আয়াতটি এই:

﴿فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]

‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫} এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা সিয়াম পালনকে বাধ্যতামূলক করে অবকাশ রহিত করে দেন।

আর সিয়াম ততক্ষণ ফরয হবে না, যতক্ষণ রমযান মাস প্রমাণিত না হয়। তাই মাস শুরু হওয়ার আগেই সাওম শুরু করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاَ يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَوْمَهُ، فَلْيَصُمْ ذَلِكَ اليَوْمَ»

‘তোমাদের কেউ যেন রমযানের আগের এক বা দুই দিন সিয়াম পালন না করে, তবে পূর্ব থেকে কারো সিয়াম পালনের অভ্যাস থাকলে, সে ওই সিয়াম পালন করতে পারবে।’ [বুখারী: ১৯১৪; অনুরূপ মুসলিম: ১০৮২।]

দু’টি বিষয়ের কোনো একটি ঘটলে রমযানের আগমন বুঝা যাবে:

প্রথম বিষয়: নতুন চাঁদ দেখা গেলে।

যেমন আল্লাহর বাণী:

﴿ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ ﴾ [ البقرة : ١٨٥ ]

‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫}

হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلَالَ فَصُومُوا»

‘যখন তোমরা রমযানের চাঁদ দেখবে, তখন সিয়াম পালন করবে।’ [বুখারী: ১৯০৫; মুসলিম: ১০৮১।]

তবে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য চাঁদ দেখা শর্ত নয়; বরং একজন নির্ভরযোগ্য পুরুষ সাক্ষ্য দিলে সকলের ওপর সিয়াম পালন জরুরী হবে।

চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার শর্ত হলো:

সাক্ষ্যদাতা ব্যক্তি প্রাপ্ত বয়স্ক, বুদ্ধিমান, মুসলিম, দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন এবং তার আমানতদারীতার কারণে বিশ্বস্ত হতে হবে তথা তার সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে।

- অতএব, নাবালেগের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ সে বিশ্বস্ত নয়।

- আর পাগলের সাক্ষ্যও নাবালেগের মত গ্রহণযোগ্য নয়।

- কাফিরের সাক্ষ্য দ্বারাও মাহে রমযান সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হবে না।

- কারণ আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : إِنِّي رَأَيْتُ الْهِلَالَ، قَالَ الْحَسَنُ فِي حَدِيثِهِ يَعْنِي رَمَضَانَ، فَقَالَ : «أَتَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ» ، قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : «أَتَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ؟» ، قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : «يَا بِلَالُ، أَذِّنْ فِي النَّاسِ فَلْيَصُومُوا غَدًا»

‘ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, একজন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে এসে বলল, নিশ্চয়ই আমি (রমযানের) চাঁদ দেখেছি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই? সে উত্তরে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বেলাল! তুমি ঘোষণা দিয়ে দাও, লোকেরা যেন আগামীকাল সিয়াম পালন করে।’ [তিরমিযী: ৬১৯; আবূ দাউদ: ২৩৪০; ইবন মাজাহ: ১৬৫২। তবে শায়খ আলবানী হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। দেখুন: ইরওয়াউল গালীল: ৯০৭।]

- আর যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রসিদ্ধ কিংবা অধিক তাড়াহুড়া করে এমন কিংবা দৃষ্টিশক্তি এমন দুর্বল ও ক্ষীণ যে তার দ্বারা চাঁদ দেখা অসম্ভব, এ ধরনের ব্যক্তির সংবাদ গ্রহণযোগ্য হবে না। তাদের দ্বারা মাহে রমযানের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাবে না। কারণ তাদের সত্যতার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে অথবা মিথ্যার দিকটাই অধিক প্রাধান্য পাওয়া স্বাভাবিক।

বিশ্বস্ত একজনের সাক্ষ্য দ্বারাই রমযান মাস প্রবেশ করা সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হবে। যেমন আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

تَرَاءَى النَّاسُ الْهِلَالَ، فَأَخْبَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي رَأَيْتُهُ «فَصَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَمَرَ النَّاسَ بِصِيَامِهِ»

“লোকেরা চাঁদ দেখল, পরক্ষণে আমি রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাঁদ দেখার সংবাদ দিলে তিনি সিয়াম পালন করলেন এবং লোকদের সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন।’ [দারেমী: ১৭৩৩; হাকিম: ১৫৪১। মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ।]

আর যে ব্যক্তি নিশ্চিতভাবে চাঁদ দেখে, তার উচিৎ প্রশাসনকে অবহিত করা।

এমনিভাবে যে শাওয়াল ও জিলহজের চাঁদ দেখবে, তারও উচিৎ প্রশাসনকে অবহিত করা। কারণ এর সাথে সাওম, ফিতর ও হজ এর ফরয আদায় হওয়া নির্ভরশীল। আর “যা না হলে ফরয আদায় করা সম্ভব হয় না তাও ফরয হিসেবে বিবেচিত”।

কোনো ব্যক্তি যদি একা এত দূরে চাঁদ দেখে যে, দূরত্বের কারণে তার পক্ষে প্রশাসনের কাছে সংবাদ পৌঁছানো সম্ভ্রম না হয়। তাহলে সে নিজে সিয়াম পালন করবে এবং প্রশাসনের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর সাধ্যমত চেষ্টা করবে।

যখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেডিও বা এ জাতীয় কিছুর মাধ্যমে চাঁদ দেখার ঘোষণা প্রদান করা হয়, রামযান মাস আগমনের জন্য বা রমযান মাস শেষ হওয়ার ব্যাপারে সেটা অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক। কারণ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসা শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে যার উপর আমল করা ফরয।

এ জন্যই যখন রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রমযান মাস প্রবেশ করার বিষয়টি সাব্যস্ত হলো তখন তিনি বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মাস সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন; যাতে তারা সাওম পালন করে। আর তিনি সে ঘোষণাকে তাদের জন্য সাওম পালনের বাধ্যকারী বিধান হিসেবে গণ্য করলেন।

* তাই শরয়ী পদ্ধতি অনুযায়ী চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সেটাই ধর্তব্য হবে, চন্দ্রের বিবিধ উদয়াস্থলের বিষয়টি ধর্তব্য হবে না, কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম রাখার বিধানটি চাঁদ দেখার সাথে সংশ্লিষ্ট করেছেন, চাঁদের বিবিধ উদয়াস্থলের সাথে সম্পৃক্ত করেন নি। তিনি বলেন:

«إِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَصُومُوا، وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا »

‘যখন তোমরা (রামযানের) চাঁদ দেখ, তখন সিয়াম পালন কর এবং যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখ, তখন সিয়াম ভঙ্গ কর।’ [বুখারী: ১৯০০; মুসলিম: ১০৮০।]

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:

« وَإِنْ شَهِدَ شَاهِدَانِ مُسْلِمَانِ، فَصُومُوا وَأَفْطِرُوا»

‘যদি দু‘জন মুসলিম (চাঁদ দেখে) সাক্ষ্য দেয়, তখন সিয়াম পালন কর এবং ভঙ্গ কর।’ [আহমদ ৪/৩২১, নং ১৮৮৯৫; নাসাঈ ১/৩০০-৩০১।]

দ্বিতীয় বিষয়: রমযান তথা নতুন মাস সাব্যস্ত হওয়ার জন্য দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, আগের মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করা।

কেননা চান্দ্র মাস কখনো ত্রিশদিনের বেশি বা ২৯ দিনের কম হতে পারে না। আরবী মাস কখনো কখনো ধারাবাহিকভাবে দু’মাস, তিনমাস অথবা চারমাস পর্যন্ত ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে। আবার কখনো দু’মাস, তিনমাস অথবা চারমাস পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ঊনত্রিশ দিনের হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণত এক মাস, দু মাস পূর্ণ ত্রিশ দিন হলেও তৃতীয় মাস কম অর্থাৎ ঊনত্রিশ দিনের হয়ে থাকে।

সুতরাং কোনো মাসের ত্রিশদিন পূর্ণ হলে, শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী পরবর্তী মাসটি এসে গেছে বলে গণ্য হবে। যদিও চাঁদ দেখা না যায়।

* কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি বলেন:

«صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ، فَإِنْ غُمِّيَ عَلَيْكُمُ الشَّهْرُ فَعُدُّوا ثَلَاثِينَ»

‘তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম পালন করা এবং চাঁদ দেখে সিয়াম ভঙ্গ কর। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তখন ওই মাস ত্রিশ দিন হিসাবে গণনা কর।’ [মুসলিম: ১০৮১।]

* ইমাম বুখারীর শব্দ হচ্ছে,

« فَإِنْ غُبِّيَ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاَثِينَ»

‘চাঁদ যদি অজ্ঞাত থাকে, তাহলে শাবান মাসটি ত্রিশদিন পূর্ণ কর।’ [বুখারী: ১৯০৯।]

* সহীহ ইবনে খুযাইমা গ্রন্থে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَفَّظُ مِنْ شَعْبَانَ مَا لَا يَتَحَفَّظُ مِنْ غَيْرِهِ، ثُمَّ يَصُومُ لِرُؤْيَةِ رَمَضَانَ، فَإِنْ غُمَّ عَلَيْهِ عَدَّ ثَلَاثِينَ يَوْمًا ثُمَّ صَامَ»

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসকে যত বেশি হিসাব করতেন, অন্য মাসকে তত বেশি হিসাব করতেন না। এরপর তিনি চাঁদ দেখে রমযানের সিয়াম পালন করতেন। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান মাসকে ত্রিশ দিন হিসাব করে সিয়াম পালন করতেন।’ [ইবন খুযাইমা: ১/২০৩; আবূ দাউদ: ২৩২৫; দারা কুতনী ২/১৫৬।]

এসব হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নতুন চাঁদ দেখার পূর্বে সিয়াম পালন শুরু করা যাবে না, অতঃপর যদি চাঁদ দেখা না যায় তবে শাবান মাসকে ত্রিশ দিন পূর্ণ করতে হবে। অবশ্য শাবানের সে ত্রিশতম দিনটিতে কোনোভাবেই সাওম রাখা যাবে না, চাই রাতে আকাশ পরিষ্কার থাকুক বা মেঘাচ্ছন্ন। কারণ:

* আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«مَنْ صَامَ اليَوْمَ الَّذِي يَشُكُّ فِيهِ النَّاسُ فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

‘যে ব্যক্তি সন্দেহের দিন সিয়াম পালন করল, সে আবূল কাসেম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাফরমানী করল।’ [আবূদাউদ: ২৩৩৪; তিরমিযী: ৬৮৬; নাসায়ী: ২১৮৮; আর বুখারী মু‘আল্লাকসূত্রে বর্ণনা করেছেন ৪/১১৯ ফাতহুল বারীসহ।]

হে আল্লাহ! আমাদেরকে হেদায়াত অনুসরণের তাওফীক দান করুন এবং ধ্বংস ও দুর্ভাগ্যের উপকরণ-উপায়াদি থেকে দূরে রাখুন। আমাদের এ রমযান মাসকে আমাদের জন্য কল্যাণ ও বরকতময় করুন। আর এ মাসে আমাদের আপনার আনুগত্য করার তাওফীক দিন এবং আপনার অবাধ্যতার পথ থেকে দূরে রাখুন। হে রাহমানুর রাহীম! অনুগ্রহ করে আমাদের, আমাদের মাতা-পিতা ও সকল মুসলিমকে ক্ষমা করুন।

হে আল্লাহ! সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কেরাম ও কিয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁদের সুন্দরভাবে অনুসরণকারীদের ওপর।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন