hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রোযার ফযীলত ও শিক্ষা আমাদের করণীয়

লেখকঃ মোঃ আব্দুল কাদের

১২
রমযানের মূল শিক্ষাসমূহ ১.তাকওয়া
তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ হল, বেঁচে থাকা, ভয় করা।

পারিভাষিক অর্থ হলো- ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সকল আদেশ মানা ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা। [মেরকাত শরহে মেশকাত- মোল্লা আলী কারী (রহ.)।] অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করতে হবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানতে হবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার চেষ্টা করতে হবে। সকল ফরয, ওয়াজিব পালন করে হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার নাম হচ্ছে তাকওয়া।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: ‘তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করা, তাঁর নাফরমানী না করা; আল্লাহকে স্মরণ করা, তাঁকে ভুলে না যাওয়া এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ও তাঁর কুফরী না করা। [সাপ্তাহিক আদ্দাওয়াহ, ১০-২-১৯৯৪, রিয়াদ, সৌদি আরব।]

ওমর ইবন আবদুল আযীয (র.) বলেছেন: ‘দিনে রোযা রাখা কিংবা রাত্রে জাগরণ করা অথবা দুটোর আংশিক আমলের নাম তাকওয়া নয়। বরং তাকওয়া হচ্ছে, আল্লাহ যা ফরয করেছেন তা পালন করা এবং তিনি যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। এরপর আল্লাহ যাকে কল্যাণ দান করেন সেটা এক কল্যাণের সাথে অন্য কল্যাণের সম্মিলন। [প্রাগুক্ত।]

ইবনুল কাইয়েম (রহ.) বলেন: তাকওয়ার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে আর যত কিছু বলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এটাই সর্বোত্তম সংজ্ঞা। আল্লামা যাহাবী বলেছেন, এটা তাকওয়ার চমৎকার ও সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা। শাইখ নাসেরুদ্দিন আলবানী বলেছেন: এ বর্ণনা ত্বলক ইবন হাবীবের সংজ্ঞা থেকে অধিকতর বিশুদ্ধ।

প্রখ্যাত তাবে‘ঈ ত্বলক ইবন হাবীব (রহ.) বলেছেন: ‘আল্লাহর প্রতি তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর আলোর রৌশনীতে তাঁর হুকুমের আনুগত্য করা ও সওয়াবের আশা করা এবং আল্লাহর আলোর রৌশনীতে তাঁর শাস্তিকে ভয় করে তাঁর নাফরমানী ত্যাগ করা। [প্রাগুক্ত]

তাকওয়া হচ্ছে একজন মুমিনের কাম্য গুণ। এই গুণ না থাকলে মুমিন হওয়ার কোনো অর্থ নেই। কারণ, যে মুমিন আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মানে না সে আল্লাহকে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে না। ভয় করলে, অবশ্যই সে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানতো। তাকওয়া অর্জনের জন্য কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান দরকার। সেজন্য কুরআন ও হাদীস পড়তে হবে ও বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যারা কুরআন-হাদীস পড়ে না তাদের পক্ষে তাকওয়া অর্জন করা খুবই কষ্টকর।

তাকওয়ার ব্যাপারে অনেক ভুল বোঝাবুঝি আছে। কিছু লোক আছে যারা ইসলামের ফরয, ওয়াজিব ও হারাম সম্পর্কে ভালভাবে ওয়াকিফহাল নন, তারা বিশেষ কিছু সুন্নত ও নফল কাজ করে নিজেদেরকে মোত্তাকী এবং অন্যদেরকে মোত্তাকী নয় বলে মনে করেন। তারা হাতে তসবীহ, মাথায় টুপি-পাগড়ী, গায়ে লম্বা জামা এবং পেশাব-পায়খানায় ঢিলা ব্যবহার করাকে তাকওয়ার মাপকাঠি মনে করেন। অথচ এগুলো সুন্নত ও মোস্তাহাবের বেশী কিছু নয়। কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের অগণিত ফরয-ওয়াজিব রয়েছে যেগুলো তারা পালন করেননা এবং সেগুলোর খবরও রাখেন না। যেমন পর্দাহীনতা, সুদ, ঘুষ, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ, দাওয়াতে দ্বীন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব ইত্যাদি পালনের ব্যাপারে তারা উদাসীন।

পক্ষান্তরে, যারা এসব কাজ করেন এবং সেজন্য জান-মাল উৎসর্গ করেন তাদেরকে তারা মোত্তাকী বলতে নারাজ। অথচ তারাই সত্যিকার অর্থে মুত্তাকী। তারাই রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিতে জান-মালের সর্বাত্মক কোরবানী করে তাকওয়া চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা দেখান। তারা বিজয়ী গাজী কিংবা শহীদ হন। এরাই যদি মোত্তাকী না হন, তাহলে যারা এতো সস্তা আমল করে এবং কঠিন আমল থেকে দূরে থাকে তারা মোত্তাকী হন কোনো যুক্তিতে? তাকওয়াতো শুধু কিছু সুন্নাত ও সীমিত ফরয কাজ আদায়ের নাম নয়। মুত্তাকী হতে হলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক নীতিসহ শিক্ষা ও অন্যান্য সকল বিষয়ে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মানতে হবে।

এক ধরনের ভণ্ড পীর-ফকির ও দরবেশ আছে যারা বহু অনৈসলামী কাজ করে নিজেদেরকে মুত্তাকী এবং আল্লাহর ওলী বলে প্রকাশ করে। তাদের হাতে তাসবীহ ও লাঠি, মুখে গাজা এবং পরনে বিভিন্ন ধরনের কাপড় থাকে। কবর পূজা তাদের প্রধান কাজ। এগুলো তাকওয়াতো দূরের কথা; বরং তার থেকে হাজার মাইল দূরের জিনিস। কেননা, তাকওয়ার অর্থ হল, সকল ফরয-ওয়াজিব মানা এবং হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। পক্ষান্তরে, তারা হারাম কাগুলো সব করে এবং ফরয-ওয়াজিব থেকে দূরে থাকে। এরা জাহান্নামের ইন্ধন ছাড়া আর কি?

ওমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যুর সময় নিজ পুত্র আব্দুল্লাহকে অসীয়ত করেন, তুমি তাকওয়া অর্জন করো, যে তাকওয়া অর্জন করলে আল্লাহ তোমাকে বাঁচাবেন, যে আল্লাহকে ঋণ দেবে (দান করবে) তিনি তাকে বিনিময় দেবেন, যে তাঁর শুকরিয়া আদায় করবে, আল্লাহ তাকে বাড়িয়ে দেবেন।

‘ওমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আপনি কি কাঁটাযুক্ত পথে চলেছেন? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হ্যাঁ। উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কিভাবে চলেছেন? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, গায়ে যেন কাঁটা না লাগে সে জন্য চেষ্টা করেছি ও সতর্কভাবে চলেছি। উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘এটাই হচ্ছে তাকওয়ার উদাহরণ।’ [তারবিয়াতুল আওলাদ ফিল ইসলাম, আব্দুল্লাহ নাসের আলওয়ান, প্রঃ ১৯৮১ দারুস সালাম, বৈরুত।]

ফলে দেখা যাচ্ছে, উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে, তাকওয়ার উদাহরন হচ্ছে, কণ্টকাকীর্ণ সরু গিরিপথে চলা। যার দুই দিকেই কাঁটা এবং যে পথে সামনে চলতে হলে সাবধানে না চললে গায়ে কাঁটা লাগার সম্ভাবনা আছে। সমাজে হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ ও শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে কাঁটার সাথে তুলনা করা যায়। আর সামনে অগ্রসর হওয়াকে তাকওয়া বলা হয়। কাঁটার মাঝে চলতে হলে কাঁটা সরিয়ে চলতে হবে। তাহলে কাঁটাবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মুমিনকেও অনুরূপভাবে কাঁটা সরিয়ে নিষ্কণ্টক পথে চলতে হবে। তাহলে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মুত্তাকী হওয়া যায়।

বাইম মাছ যেমন কাদার মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার গায়ে কাদা লাগে না, একজন মুমিনও সমাজে পাপ-পঙ্কিলতা এবং আল্লাহর নাফরমানীর কলুষিত পরিবেশে বাস করা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলেন। পরিবেশের তালে গা ভাসিয়ে দেয়ার পরিবর্তে তিনি আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে কলুষমুক্ত থাকেন। তিনি স্রোতের বিপরীতে চলে এবং সমাজে ন্যায় ও কল্যাণের স্রোতধারা প্রবাহিত করেন।

সাওম ফরয করার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: ‘সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’ এখানে ‘সম্ভবতঃ’ শব্দটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রোযার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া। কিন্তু রোযা রাখলেই সবাই তাকওয়া অর্জন করতে পারে না। অনেক রোযাদারের রোযা, রাত্রি জাগরণ এবং ক্ষুধা-পিপাসার কষ্ট ছাড়া অন্য কিছু নয়। অর্থাৎ তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারে না যদিও তারা রোযা রেখেছে। এর কারণ কি? কারণ হচ্ছে, তারা না তাকওয়ার অর্থ বুঝেন, আর না বুঝেন রমযানের উদ্দেশ্য। বুঝেন না বলেই রোযা শেষ হওয়ার পর কিংবা রমযানের মধ্যেই তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করেন এবং নিষিদ্ধ কাজ করে থাকেন। রোযা তাদের জীবনকে বিশুদ্ধ বা সংশোধিত করতে পারেনি। রোযার মাধ্যমে তাদের জীবন এবং আমলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই তারা রোযার আকাংখিত ফল লাভ করতে সক্ষম হননি। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন: ‘সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’ অর্থাৎ তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা থাকলে তা অর্জন করা সম্ভব। যাদের চেষ্টা নেই, তারা তা অর্জন করতে পারে না।

অন্যদিকে, যারা রোযার মাধ্যমে নিজেদের জীবন ও আমলের পরিবর্তন এনেছেন এবং রোযার আগে যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অমান্য করতেন, তারা রোযার মাধ্যমে এবং রোযার পর আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন করা শুরু করেছেন, তারাই রমযানের মূল উদ্দেশ্য ‘তাকওয়া’ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের জন্যই রয়েছে রমযানের অনেক পুরষ্কার। হাদীসে রোযাদারের জন্য যে সকল ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তারাই তা লাভ করবেন।

বস্তুত তাকওয়া আগের ও পরের সবার জন্য আল্লাহর অচিয়ত। আল্লাহ সকল যুগের লোকদেরকে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَلَقَدۡ وَصَّيۡنَا ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَإِيَّاكُمۡ أَنِ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ ﴾ [ النساء : ١٣١ ]

‘আমি তোমাদের পূর্বের আহলে কিতাবদের এই উপদেশ দিয়েছিলাম আর এখন তোমাদেরকেও উপদেশ দিচ্ছি যে তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সূরা নিসা: ১৩১)

তাকওয়া অবলম্বন করলে দুনিয়া ও আখেরাতে অনেক ফায়দা আছে। এখন আমরা সে সকল ফায়দা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন