hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রোযার ফযীলত ও শিক্ষা আমাদের করণীয়

লেখকঃ মোঃ আব্দুল কাদের

১৭
৪.রমযান দয়া ও দান-সদকার মাস
রমযান দয়া ও করুণার মাস। এই মাসে উপবাসরত মুসলিমরা অভাবী লোকদের দুঃখ সরাসরি অনুভব করতে পারে। রোযাদার হবে সর্বাধিক দয়ালু। ক্ষুধা, পিপাসা ও কষ্টের দাবী হচ্ছে, অন্য মুসলিম ভাইয়ের অভাব দূর করা। হে রোযাদার! অগণিত মানুষ ক্ষুধা ও জঠরজ্বালায় শিকার, তাদের প্রতি নজর দাও, সহস্র লোক কাপড়হীন, তাদেরকে বস্ত্র দাও।

হাদীসে এই মাসকে রহমত, ক্ষমা ও মুক্তির মাস বলা হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহই মানুষকে রহম করেন এই মাসে। তাই রোযাদারকেও অন্যের প্রতি দয়া ও রহমতের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

দয়া ও রহমত হচ্ছে আল্লাহর একটি বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছে তার অন্তরে এই রহমত দান করেন। আল্লাহ দয়ালু লোকের উপর রহমত নাযিল করেন। আল্লাহ নিজেও দয়ালু এবং মেহেরবান। তিনি বান্দাদেরকে দয়া প্রদর্শনের আহবান জানিয়ে বলেন, তারাও যেন ধৈর্য এবং দয়ার উপদেশ দান করে।

মানুষের অন্তরে দয়া না থাকার অনেক কারণ আছে। সেগুলো হচ্ছে নিম্নরূপ:

ক.অতিরিক্ত গুনাহ ও নাফরমানীর কারণে অন্তরে মরিচা পড়ে। ফলে, তা কঠোর বা পাষাণ হৃদয়ে পরিণত হয়। আল্লাহ ইহুদীদের পাপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন: ‘তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেছে পাথরের মতো কিংবা এর চাইতেও বেশী।’ (সূরা বাকারা: ৭৪)

তাদের সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেছেন:

‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে আমরা তাদের উপর অভিশাপ নাযিল করি এবং তাদের অন্তরকে শক্ত করে দেই।’ (সূরা আল মায়েদা: ১৩)

খ.অতিরিক্ত ভোগবিলাসের কারণেও অন্তর শক্ত হয়ে যায়। সেই জন্যই রমযানের আগমন, যেন মানুষের ক্ষুন্নিবৃত্তি ও ভোগবিলাসের উপর লাগাম দিতে পারে।

রমযানে সকল পর্যায়ের লোকের উপর দয়া ও মেহেরবানীর অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পিত হয়। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের জনগণের সাথে নম্রতা ও দয়া প্রদর্শন করা উচিৎ।

শিক্ষক ছাত্রের সাথে নরম ও ভদ্র ব্যবহার করবেন, দয়া ও মেহেরবানী প্রদর্শন করবেন। পরবর্তীতে ছাত্ররাও শিক্ষক হয়ে দয়াবান হবে। অনুরূপভাবে, নামাযের ইমাম মুসল্লীর প্রতি দয়াবান হবেন। তিনি দীর্ঘ কেরাত পড়ে তাদেরকে কষ্ট দেবেন না।

অনুরূপভাবে, দা‘ঈকে দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সাথে দয়া দেখাতে হবে। তিনি যেন তাদের কাউকে কষ্ট না দেন। আল্লাহ মূসা ও হারূন (আ:) কে ফেরাউনের কাছে দাওয়াতের নির্দেশ দিয়ে বলেন: ‘তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। সম্ভবত সে হেদায়াত গ্রহণ ও আল্লাহকে ভয় করতে পারে।’ (সূরা তা-হা: ৪০)

পিতা সন্তানের সাথে সদয় আচরণ করবেন। তাদের সাথে কঠোর ব্যবহার করলে এর পরিণতি খারাপ হয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

" ما كان الرفق في شئ إلا زانه ، ولا نزع من شئ إلا شانه "

‘কোন জিনিসের নম্রতা তাকে সুন্দর বানায় এবং নম্রতা প্রত্যাহার করা হলে তা মন্দে পরিণত হয়।’ [কানযুল উম্মাল,খ৩,পৃ৩৮,হাদীস নং৫৩৬৭।]

সাহাবায়ে কেরাম অভাবী ও গরীবদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কোনো ফকীর মিসকীন ছাড়া ইফতার করতেন না। তিনি ইফতারের জন্য কোনো গরীব লোক না পেলে সেই রাতে না খেয়ে থাকতেন। তিনি খানা খাওয়ার সময় কোনো গরীব লোক সাহায্য প্রার্থনা করলে নিজের ভাগের খাবারটুকু দান করে দিতেন। কোনো সময় ঘরে ফিরে দেখতেন যে আর কোনো খাবার নেই। তখন তিনি না খেয়ে রাত কাটিয়ে দিতেন।

একবার ইমাম আহমদ (র) রোযা ছিলেন। তাঁর জন্য ইফতারের উদ্দেশ্যে দুটো রুটি তৈরি করা হয়। ভিক্ষুক আসায় তিনি তা ভিক্ষুককে দিয়ে দেন এবং নিজে না খেয়ে রাত কাটিয়ে দেন।

রমযান সকল নেক কাজের জন্য অধিক সওয়াবের মাস। দান-সদকা রমযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও করণীয়। রোযার উপবাসের মাধ্যমে গরীব-দুঃখী মানুষের কষ্ট বুঝার পর তা দূর করার জন্য বাস্তব ব্যবস্থা হলো দান-সদকাহ করা। আর এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মাসে বড় দাতা হওয়া সত্ত্বেও রমযানে তিনি আরো বেশী দান করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত,

" كان رسول الله صلى الله عليه و سلم أجد الناس و كان أجود ما يكون في رمضان حين يلقاه الملك جبريل عليه السلام و كان يلقاه جبريل في كل ليلة من رمضان فيدارسه القرآن قال : فلرسول الله صلى الله عليه و سلم أجود بالخير من الريح المرسلة "

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিতেই সর্বাধিক দানকারী ছিলেন। কিন্তু তিনি রমযানে জিবরীল (আ) এর সাথে সাক্ষাতের পর প্রবাহমান বাতাসের মতো উন্মুক্ত হস্ত ও অধিকতর দাতা হয়ে যেতেন।’ [শুআবুল ঈমান,খ২,পৃ ৪১৩,হাদীস নং ২২৪৬।]

অতএব, ‘রমযানের দান-সদকাহ সর্বোত্তম।’ যে কোনো ইবাদতের সওয়াব নীচে ১০ থেকে শুরু হয় এবং উপরের দিকে ৭শ বা আরো অধিক সম্প্রসারিত। কিন্তু একমাত্র আল্লাহর পথে দানের সওয়াব নীচে ৭শ থেকে শুরু হয় এবং উপরের দিকে আরো বেশী। ১০ থেকে শুরু হয় না। এটা দান-সদকার বৈশিষ্ট্য। এ মর্মে আল্লাহ কুরআনে বলেন:

﴿ مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنۢبُلَةٖ مِّاْئَةُ حَبَّةٖۗ وَٱللَّهُ يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١ ﴾ [ البقرة : ٢٦١ ]

‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের অর্থ-সম্পদ দান করে তাদের দানের উদাহরণ হলো একটি বীজের মতো, যা থেকে ৭টি শিষ বা ছড়া জন্মায়। প্রত্যেকটি ছড়ায় একশ দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা আরো বেশী দান করেন। আল্লাহ অতি দানশীল ও সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা: ১৬১)

বেশী সওয়াবের আশায় রমযানে বেশী বেশী দান করা উচিৎ। কেননা, অন্য ইবাদতে এত বেশী সওয়াব নেই। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ ءَامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَأَنفِقُواْ مِمَّا جَعَلَكُم مُّسۡتَخۡلَفِينَ فِيهِۖ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وأَنفَقُواْ لَهُمۡ أَجۡرٞ كَبِيرٞ ٧ ﴾ [ الحديد : ٧ ]

‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো এবং তিনি তোমাদেরকে যে সম্পদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন- তা থেকে ব্যয় করো।’ (সূরা হাদীদ: ৭)

এ আয়াতে সম্পদের মালিক আল্লাহ মানুষকে সম্পদের প্রতিনিধি বানিয়ে তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা যেন সম্পদ আঁকড়ে ধরে না রাখি। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ وَأَنفِقُواْ مِن مَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنِيٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠ ﴾ [ المنافقون : ١٠ ]

‘আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় করো। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার রব, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি দান-সদকাহ করতাম এবং নেক লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সূরা মুনাফেকুন: ১০)

মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ إِن تُقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعِفۡهُ لَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ ١٧ ﴾ [ التغابن : ١٧ ]

‘তোমরা যদি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কর্জে হাসানা দাও, তাহলে আল্লাহ তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন, আল্লাহ শোকর গুজার ও ধৈর্যশীল।’ (সূরা তাগাবুন: ১৭)

এ আয়াতেও দান করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে

দান-সদকা দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ إِن تُبۡدُواْ ٱلصَّدَقَٰتِ فَنِعِمَّا هِيَۖ وَإِن تُخۡفُوهَا وَتُؤۡتُوهَا ٱلۡفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّ‍َٔاتِكُمۡۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ٢٧١ ﴾ [ البقرة : ٢٧١ ]

‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তাহলে তা কতইনা উত্তম। আর যদি তা গোপনে গরীব ও অভাবীদেরকে দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের আমলের বেশী খবর রাখেন।’ (সূরা বাকারা: ২৭১)

দান-সাদকাহ দ্বারা সম্পদ কমে না, বান্দা যখন দানের হাত বাড়ায়, তখন তা অভাবীর হাতে পড়ার আগে প্রথমে আল্লাহর হাতে পড়ে, যে অভাবমুক্ত ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়, আল্লাহ তার জন্য অভাবের দরজা খুলে দেন।

দান করলে সম্পদ কমে যাওয়ার ভয় থাকে। বরং সম্পদ কমে না। আল্লাহ তা আরো বাড়িয়ে দেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

" ظِلُّ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَدَقَتُهُ "

‘হাশরের দিন দান-সাদকাহ বান্দার জন্য ছায়া হবে।’ [সহীহ ইবনে খোযাইমা,খ ৪,পৃ.৯৫,হাদীস নং২৪৩২।]

সেদিন প্রখর তাপের মধ্যে ছায়ার প্রয়োজন হবে অত্যধিক।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

" فاتقوا النار ولوبشق تمرة "

‘তোমরা খেজুরের একটি টুকরা দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচো।’ [সহীহ মুসলিম,খ২,পৃ.৭০৩, হাদীস নং ১০১৬।]

দান করলে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা যায় বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন।

মু‘আয ইবন জাবাল থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

" ألا أدلك على أبواب الخير ؟ الصوم جنة والصدقة تطفئ الخطيئة كما يطفئ الماء النار "

‘আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাগুলো সম্পর্কে বলবো না? আমি বললাম হাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বলেন, রোযা হলো ঢালস্বরূপ। পানি যেমনি আগুন নিভায়, দান-সাদকাহ তেমনি গুনাহ নিভায়।’ [ইমাম নববী, আল আরবাউন,খ.১,পৃ.২৯।]

এ হাদীসে দান-সাদকাহ দ্বারা গুনাহ মাফ হয় বলে জানা যায়।

গরীবরাও দান করবে, যদিও তা সামান্যই হোক না কেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করেন,

" أَيُّكُمْ مَالُ وَارِثِهِ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا مِنَّا أَحَدٌ إِلَّا مَالُهُ أَحَبُّ إِلَيْهِ قَالَ فَإِنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ وَمَالُ وَارِثِهِ مَا أَخَّرَ "

“তোমাদের কার কাছে নিজের মাল-সম্পদ অপেক্ষা ওয়ারিসের মাল-সম্পদ অধিক প্রিয়? সাহাবারা বলেন, আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার কাছে আপন সম্পদ অধিকতর প্রিয় নয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিজ সম্পদ বলতে বুঝায় যা সে ব্যয় করেছে, আর যা রয়ে যাবে সেটাতো ওয়ারিসের সম্পদ।’ [বুখারী,খ১৬,পৃ ২৫১,হাদীস নং ৬৪৪২।]

এ হাদীসে কুক্ষিগত সম্পদকে ওয়ারিসের সম্পদ বলা হয়েছে। কেননা, ব্যক্তির মৃত্যুর পর ওয়ারিসরা তার মালিক হবে, ব্যক্তি নিজে তার মালিক নয়। অথচ, মানুষ নিজের জন্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে কম, আর সম্পদের মায়ার কারণে রেখে যায় বেশী- যা তার কোনো কাজে আসবে না। যেটা দ্বারা ওয়ারিসরাই উপকৃত হবে।

দান-সাদকার মধ্যে সাদকাহ জারিয়াহ উত্তম। সদকাহ জারিয়াহ হলো, যার ফলাফল দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। যেমন: মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, রাস্তাঘাট ও পুল তৈরি ইত্যাদি।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার কাছে যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকে তাহলে আমি তা তিন দিনের মধ্যে ব্যয় করা ছাড়া আনন্দ পাবো না। তবে ঋণ পরিশোধের জন্য রাখা অংশ ব্যতীত। [. সাপ্তাহিক দাওয়াহ-২১শে নভেম্বর-২০০২, রিয়াদ।]

সাহাবী আবদুর রহমান ইবন আওফ একবার মদীনার গরীব লোকদের মধ্যে ৭শ উটের বোঝাইকৃত বিশাল সম্পদ দান করেন।

রমযানে আমাদের নেককার পূর্বসূরীদের মসজিদগুলোতে পর্যাপ্ত ইফতার সরবরাহ করা হতো। তারা এর মাধ্যমে বিরাট সওয়াব লাভ করেন।

আজও আমাদের উচিৎ গরীব-মিসকীনদেরকে ইফতার করানো।

হাদীসে কুদসীতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন: ব্যয় করো, আমিও তোমার জন্য ব্যয় করবো [. প্রাগুক্ত।]।

অন্য হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

ثَلاَثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ قَالَ : مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ، وَلاَ ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلِمَةً فَصَبَرَ عَلَيْهَا إِلاَّ زَادَهُ اللَّهُ عِزًّا، وَلاَ فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلاَّ فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا

“তিনটি বিষয়ে আমি শপথ করে বলছি, দান দ্বারা সম্পদ কমে না। আর যখনই কোনো মানুষের উপর যুলূম হওয়ার পরে সে সবর করে তখনই আল্লাহ সেটার কারণে তার সম্মান বাড়িয়ে দেন, আর যখনই কোনো বান্দা যাচ্ঞার পথ উন্মুক্ত করবে তখনই আল্লাহ তার জন্য অভাবের দরজা উন্মুক্ত করবেন অথবা অনুরূপ কথা বলেছেন।”

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

إِنَّمَا الدُّنْيَا لِأَرْبَعَةِ نَفَرٍ، عَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالًا وَعِلْمًا فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَيَعْلَمُ لِلَّهِ فِيهِ حَقًّا، فَهَذَا بِأَفْضَلِ المَنَازِلِ، وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ عِلْمًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالًا فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ يَقُولُ : لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ بِعَمَلِ فُلَانٍ فَهُوَ بِنِيَّتِهِ فَأَجْرُهُمَا سَوَاءٌ، وَعَبْدٍ رَزَقَهُ اللَّهُ مَالًا وَلَمْ يَرْزُقْهُ عِلْمًا، فَهُوَ يَخْبِطُ فِي مَالِهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ لَا يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَلَا يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَلَا يَعْلَمُ لِلَّهِ فِيهِ حَقًّا، فَهَذَا بِأَخْبَثِ المَنَازِلِ، وَعَبْدٍ لَمْ يَرْزُقْهُ اللَّهُ مَالًا وَلَا عِلْمًا فَهُوَ يَقُولُ : لَوْ أَنَّ لِي مَالًا لَعَمِلْتُ فِيهِ بِعَمَلِ فُلَانٍ فَهُوَ بِنِيَّتِهِ فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ "

“দুনিয়ায় চার ধরনের লোক আছে। ১. এক বান্দাকে আল্লাহ এলেম ও সম্পদ দিয়েছেন। সে এ ব্যাপারে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে তাকওয়ার অনুসরণ করে, আত্মীয়তার অধিকার পূরণ করে এবং সম্পদে যাদের হক আছে সে হক আদায় করে, তার মর্যাদা সর্বোত্তম। ২. অন্য বান্দাকে আল্লাহ এলেম দিয়েছেন, কিন্তু সম্পদ দেননি। সে সত্য নিয়তে বলে, যদি আমার সম্পদ থাকতো, তাহলে আমি অমুক অমুক নেক কাজ করতাম। তার নিয়তের কারণে উভয়ের মর্যাদা সমান হবে। ৩. আরেক বান্দাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু এলেম দেননি, সে এলেম না থাকার কারণে সম্পদের মধ্যে ডুবে আছে, আল্লাহকে ভয় করে তাঁর আদেশ-নিষেধ পালন না করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে না এবং সম্পদে আল্লাহর যে অধিকার আছে তা পূরণ করে না। এ ব্যক্তি হলো সর্বনিকৃষ্ট। ৪. এক বান্দাকে আল্লাহ অর্থ ও এলেম কিছুই দেননি। সে বলে, যদি আমার অর্থ-সম্পদ থাকতো, তাহলে আমি অমুক (গুনাহের) কাজ করতাম। তার নিয়তের কারণে উভয় ব্যক্তির সমান গুনাহ হবে [. তিরমিযী, হাদীস নং ২৩২৫। সহীহ সনদে।]।

মোটকথা, দানের বহু উপকারিতা আছে। এতে গুনাহ মাফ হয়, মর্যাদা বাড়ে, জাহান্নাম থেকে আড়াল হয়, সম্পদ বাড়ে ও বরকত নাযিল হয়, হাশরের ময়দানে ছায়া হবে, অমঙ্গলের দরজা বন্ধ হয়, খারাপ মৃত্যু থেকে বাঁচা যায়। দান করলে ফেরেশতারা বিনিময়ের জন্য দো‘আ করে ইত্যাদি। তাছাড়া দানের মাধ্যমে সর্বাধিক সওয়াব পাওয়া যায় যা আর কোনো ইবাদতে নেই। দানের সর্বনিম্ন সওয়াব হলো ৭শ গুণ। দানের দ্বারা অভাবী মানুষ তৃপ্ত হয় এবং তারা দাতার জন্য দো‘আ করে। ফেরেশতারা পর্যন্ত দো‘আ করে। সুতরাং দানের কি অসীম মর্যাদা!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন