hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রোযার ফযীলত ও শিক্ষা আমাদের করণীয়

লেখকঃ মোঃ আব্দুল কাদের

১৫
২.রমযান তাওবা-এস্তেগফারের মাস
তাওবা শব্দের অর্থ প্রত্যাবর্তন করা। গুনাহগার বান্দা তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর নাফরমানী থেকে আল্লাহর দিকে পুনরায় ফিরে আসে। বান্দা যত গুনাহই করুক না কেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা ও মাফ করেন। বান্দার গুনাহ যত বড় তাঁর রহমত এর চাইতেও বড়। তাই নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আল্লাহ পবিত্র কুরআন মাজীদে বলেছেন:

﴿يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [ الزمر : ٥٣ ]

“হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করেন। নিঃসন্দেহে, তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। (সূরা আয যুমার-৫৩)

এ আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া নিষিদ্ধ বা কুফরী।

রমযান মাস হচ্ছে, তাওবা ও ক্ষমার মওসুম-রহমত, নাজাত ও মাগফেরাতের মাস। এ মাস তাওবার জন্য মহামূল্যবান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا» .

“আল্লাহ দিনে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য রাত্রে নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন এবং রাত্রে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য দিনে নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন। কেয়ামতের আগে পশ্চিমে সূর্যোদয় পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে। আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফের জন্য রীতিমত অপেক্ষা করেন। বান্দা মাফ চাইলেই মাফ পেতে পারে। [সহীহ মুসলিম,খ.৮,পৃ.৯৯,হাদীস নং৭১৬৫।]

গুনাহ মাফের জন্য এর চাইতে বড় প্রতিশ্রুতি আর কি হতে পারে? আল্লাহ আরও বলেন:

﴿ وَهُوَ ٱلَّذِي يَقۡبَلُ ٱلتَّوۡبَةَ عَنۡ عِبَادِهِۦ وَيَعۡفُواْ عَنِ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِ وَيَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُونَ ٢٥ ﴾ [ الشورا : ٢٥ ]

“তিনি সেই সত্তা যিনি বান্দার তাওবা কবুল করেন, তাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তোমরা যা করো সবকিছু তিনি জানেন।” (সূরা আশ-শূরা-২৫)

তিনি বান্দার তাওবা কবুল করেন। কিন্তু শর্ত হলো এখলাসের সাথে তাওবা করতে হবে এবং এরপর ইচ্ছাকৃতভাবে আর সেই গুনাহ পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ أُوْلَٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَجَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ ١٣٦ ﴾ [ ال عمران : ١٣٥، ١٣٦ ]

“যারা অশ্লীল কাজ করে ফেললো কিংবা নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে ফেললো, নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহকে স্মরণ করলো; আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যিনি গুনাহ মাফ করে এবং তারা জেনে শুনে কৃত গুনাহর পুনরাবৃত্তি করে না। তাদের পুরস্কার হলো, আল্লাহর ক্ষমা এবং এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত-তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আমলকারীদের পুরস্কার কতই না উত্তম।” ( সূরা আলে ইমরান-১৩৫-১৩৬)

তাওবার পর্যায়গুলো নিম্নরূপ:

-গুনাহের স্বীকৃতি দেয়া

-গুনাহের জন্য লজ্জিত হওয়া

-তাওবা করা ও মাফ চাওয়া

-পুনরায় সেই গুনাহ না করার ওয়াদা করা

-সকল পর্যায়ে পূর্ণ এখলাস ও আন্তরিকতা থাকা

-ওয়াদার উপর টিকে থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।

রমযান আসলে বহু লোক ভাল মানুষ হয়ে যান, নেক কাজে ব্যস্ত থাকেন ও গুনার কাজ থেকে দূরে থাকেন। রীতিমত জামাআতে নামায পড়েন, তারাবী পড়েন, রোযা রাখেন, কুরআন পড়েন, দান-সদকা করেন, ঘুষ, মিথ্যা এবং গালি পালাজ কিংবা নিন্দা অপবাদ থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু রমযান চলে গেলে তারা আবার রমযান পূর্ব পশুত্বের দিকে ফিরে যান। তাহলে, তাওবা ও ক্ষমার দাবী পূরণ হলো কোথায়? তারা যদি আবার আল্লাহর নাফরমানী ও গুনাহের মধ্যে লিপ্ত হন, তাহলে ক্ষমা, রহমত ও মাগফেরাত কিভাবে লাভ করবেন? তাওবার উপর টিকে থাকা অত্যন্ত জরুরী।

বন্ধুগণ! ক্ষমার জন্য এর চাইতে বড় আহবান আর কি হতে পারে? বোখারী শরীফে আরেকটি ঘটনার উল্লেখ আছে। ঘটনাটি হলো, আগের উম্মাতের এক ব্যক্তি ৯৯টি হত্যার গুণাহ মাফ সম্ভব কিনা তা জানার জন্য একজন আবেদের কাছে যান। আলেম ব্যক্তিটি ‘না’ বলেন। তখন হত্যাকারী একেও হত্যা করে হত্যার সংখ্যা ১০০ পূর্ণ করেন। তারপর ১০০ হত্যার গুনাহ মাফ সম্ভব কিনা তা জানার জন্য এক আলেমের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সেখানে গেলে তিনি তাকে বলেন যে তাওবার দরজা অবশ্যই উন্মুক্ত, তবে তুমি যেখানে থাক সেখান থেকে হিজরত করে যেখানে ভালো লোকরা থাকে সেখানে চলে যাও। পথে তার মৃত্যু উপস্থিত হলে নেক ও পাপী লোকের মৃত্যুদানকারী ফেরেশতাদের মধ্যে কে তার রূহ হরণ করবে তা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে তার তাওবার গন্তব্যস্থল কাছে না প্রস্থানস্থল কাছে তা মাপার নির্দেশ আসে। জরীপে তাওবার নিকটবর্তী হওয়ায় নেক লোকের রূহ হরণকারী ফেরেশতারা তার রূহ হরণ করেন। এই ঘটনা তাওবার মর্ম ও মাহাত্ম্য কি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্যিকারভাবে তাওবা করার তাওফিক দিন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:

«من أحب أن تسره صحيفته فليكثر فيها من الاستغفار»

‘যে ব্যক্তি নিজ আমলনামা দেখে খুশি হতে চায় সে যেন বেশী করে গুনাহ মাফ চায়।’ [বায়হাকী-শুআ‘বুল ঈমান, আলবানী একে বিশুদ্ধ হাদীস বলেছেন,সহীহ কুনুযিস সুন্নাহ,খ১,পৃ.৮০।]

মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠ ﴾ [ النساء : ١١٠ ]

‘কেউ খারাপ কাজ করে কিংবা নিজের উপর জুলুম করে যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও মেহেরবান দেখতে পাবে।’ (সূরা নিসা: ১১০)

আল্লাহ আরো বলেন:

﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ ﴾ [ ال عمران : ١٣٥ ]

‘যারা অশ্লীল কাজ করে কিংবা নিজের উপর জুলুম করে, এরপর আল্লাহকে স্মরণ করে, নিজেদের গুনাহ মাফ চায় এবং তারা জেনেশুনে কৃত গুনাহর পুনরাবৃত্তি করে না। আল্লাহ ছাড়া কে আছে গুনাহ মাফ করবে?’ অর্থাৎ আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সূরা আলে ইমরান: ১৩৫)

মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمۡ وَأَنتَ فِيهِمۡۚ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ مُعَذِّبَهُمۡ وَهُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ٣٣ ﴾ [ الانفال : ٣٣ ]

‘আপনি তাদের মধ্যে মওজুদ থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদেরকে আজাব দেবেন না, যারা গুনাহ মাফ চায়, আল্লাহ তাদের উপরও আজাব দেন না।’ (সূরা আনফাল: ৩৩)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«وَاللَّهِ إِنِّي لَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً»

‘আল্লাহর কসম, আমি দিনে আল্লাহর কাছে ৭০ বারের অধিক তাওবাহ-এস্তেগফার করি।’ [মুসনাদে আহমাদ,খ১৪,পৃ১৯১,হাদীসনং ৮৪৯৩।]

নিষ্পাপ নবী দিনে ৭০ বারের বেশী তাওবা করলে পাপী উম্মাহর সদস্যদের কমপক্ষে ৭০ এবং আরো বেশী তাওবাহ করা উচিৎ।

মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ فَقُلۡتُ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ إِنَّهُۥ كَانَ غَفَّارٗا ١٠ يُرۡسِلِ ٱلسَّمَآءَ عَلَيۡكُم مِّدۡرَارٗا ١١ وَيُمۡدِدۡكُم بِأَمۡوَٰلٖ وَبَنِينَ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ جَنَّٰتٖ وَيَجۡعَل لَّكُمۡ أَنۡهَٰرٗا ١٢ ﴾ [ نوح : ١٠، ١٢ ]

‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টি ধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’ (সূরা নূহ: ৯-১২)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«من قال استغفر الله الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه، غفرت ذنوبه وإن كان قد فر من الزحف»

‘যে ব্যক্তি বলে যে, আমি আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ চাই, তিনি ছাড়া আর কোনো সত্যিকার মা‘বুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও ধারক এবং আমি তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবো। তাহলে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে যদিও সে জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসুক না কেন।’ [সহীহ মীন কুনুযিস সুন্নাহ,খ.১,পৃ.৭৯।] জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা কবীরা গুনাহ। তা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সাইয়েদুল এস্তেগফার পড়ে এবং এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দিনে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী হবে; আর যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে তা পড়ে সকাল হওয়ার আগে রাত্রে মারা যায়, সেও জান্নাতবাসী হবে।

সাইয়েদুল এস্তেগফার হল-

«سيد الاستغفار أن يقول العبد " اللهم أنت ربي لا إله إلا أنت، خلقتني وأنا عبدك، وأنا على عهدك ووعدك ما استطعت أعوذ بك من شر ما صنعت، أبؤ لك بنعمتكَ عليّ وأبوء بذنبي فاغفر لي، إنه لا يغفر الذنوب إلا أنت»

‘হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া আর কোনো সত্যিকারের মা‘বুদ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা, সাধ্যমত আপনার ওয়াদা-অঙ্গীকারের উপর টিকে রয়েছি, আমার মন্দ কাজ থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই, আমার উপর আপনার নেয়ামতকে স্বীকার করি, আমার গুনাহ স্বীকার করি, আমাকে মাফ করুন, নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।’ [প্রাগুক্ত।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: “বান্দা যখন তাওবা করে তখন আল্লাহ তার উপর ভীষণ খুশী হন। যেমন তোমাদের কারো সওয়ারী যদি মরুভূমিতে হারিয়ে যায়, এর পিঠে যদি তোমাদের খাদ্য ও পানীয় থাকে, এটাকে তালাশ করে না পেয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে কোনো গাছের নীচে হতাশ হয়ে শুয়ে পড়ে এবং তখন যদি হঠাৎ সওয়ারীটি এসে তার কাছে হাজির হয়, সে তখন এর লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে ভুলে বলে ফেলে ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আল্লাহ তোমাদের এই আনন্দ অপেক্ষা আরো বেশী খুশী হন।” [সহীহ মুসলিম,খ১,পৃ.৮২,হাদীস নং৩০৫।]

তাই সর্বদা তাওবা-এস্তেগফার করা দরকার।

তাওবা-এস্তেগফারকারীদের জন্য স্বয়ং আল্লাহর আরশ বহনকারী ফেরেশতা ও এর চারপাশের ফেরেশতারা এই বলে দো‘আ করে যে, ‘যারা তাওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব! আপনি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতিদেরকে আপনার প্রতিশ্রুতি চিরকাল বসবাসের জান্নাতে প্রবেশ করান। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় এবং আপনি তাদেরকে অমঙ্গল ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন। আপনি যাকে সেদিন অমঙ্গল থেকে রক্ষা করেন, তাদের প্রতি অনুগ্রহই করবেন। এটাই মহাসাফল্য।’ (সূরা মুমিন: ৭-৯)

তাওবা-এস্তেগফারের মর্যাদা আল্লাহর আরশ বহনকারী ফেরেশতাসহ অন্যান্য ফেরেশতাদের কাছেও অনেক বেশী। ফেরেশতারা নিষ্পাপ। তাদের দো‘আ কবুল হয়। তাওবা করলে ফেরেশতারা তাওবাকারীর পরিবার ও সন্তানদেরকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য দো‘আ করেন। রমযান মুমিনের জন্য কত বড় সৌভাগ্য!

মুমিনের প্রতিটি বিষয়ই কল্যাণকর। ত্রুটি করাও কল্যাণকর হতে পারে যদি মানুষ এরপর তাওবা করে বিনীত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। মুমিনের প্রত্যেকটি জিনিসই কল্যাণকর। আর এটা মুমিন ছাড়া আর কারো জন্য নয়। সে সুখ ও আনন্দ পেলে শুকরিয়া আদায় করে, সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর দুঃখ ও কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করে; সেটাও তার জন্য কল্যাণকর।

গুনাহ ও ত্রুটি তখন কল্যাণকর হবে, যখন তা মানুষকে অধিক অধিক সওয়াবের কাজ এবং তাওবা-এস্তেগফারের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এ জন্য কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে তাওবার সাথে সাথে আরো কিছু নেক কাজ করা কর্তব্য। তা সেই গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন:

﴿ ۚ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِۚ ١١٤ ﴾ [ هود : ١١٤ ]

‘নিশ্চয়ই নেক কাজ পাপ ও গুনাহ দূর করে দেয়।’ (সূরা হূদ: ১১৪)

তাই পাপ কাজ করলে নফল নামায, রোযা, দান-সদকা, মা-বাপের সেবা, স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি অধিক স্নেহ-মমতা, দ্বীনের দাওয়াত ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে বাড়ানো, উপদেশ দান ও সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের প্রতিরোধ করা যেতে পারে। সওয়াবের কাজ করলে ১০ থেকে ৭০০ গুণ এবং গুনাহর কাজ করলে মাত্র ১টা গুনাহর পরিবর্তে ১টা গুনাহ লেখা হয়। তাই নেক কাজ গুনাহকে দূর করে দিতে সক্ষম।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا هَمَّ عَبْدِى بِحَسَنَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبْتُهَا لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ وَإِذَا هَمَّ بِسَيِّئَةٍ وَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ أَكْتُبْهَا عَلَيْهِ فَإِنْ عَمِلَهَا كَتَبْتُهَا سَيِّئَةً وَاحِدَةً»

‘আমার বান্দা যখন নেক কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমল করেনি, আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি। আর যদি আমল করে তাহলে ১০ থেকে ৭০০ গুণ সওয়াব লিখি। যদি গুনাহর কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখনও তা করেনি, আমি লিখি না। কিন্তু যদি কাজটি করে ফেলে, তাহলে আমি কেবল ১টি গুনাহ লিখি।’ [সহীহ মুসলিম,খ১,পৃ৮২,হাদীস নং ৩৫০।]

শুধু তাই নয়, সঠিক তাওবাসহ সত্যিকার ঈমান এবং নেক কাজ করলে আল্লাহ সে গুনাহকে সওয়াবে পরিণত করে দেন। তাওবাকারীর কত বিরাট সৌভাগ্য!

মহান আল্লাহ বলেন:

﴿ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّ‍َٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ ﴾ [ الفرقان : ٦٩ ]

‘কিন্তু যারা তাওবা করেন, ঈমান আনে এবং নেক আমল করে আল্লাহ তাদের গুনাহকে নেক দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সূরা ফোরকান: ৬৯)

মানুষ গুনাহ না করলে আল্লাহ অন্য জাতি সৃষ্টি করতেন

গুনাহ বা ত্রুটি-বিচ্যুতি কাম্য নয়। তারপরও গুনাহ সংঘটিত হয়ে যায়। মুমেনের ঈমান ও তাকওয়া যত বেশি হোক না কেন, গুনাহ থেকে বাঁচা সম্ভব হয় না। কেবলমাত্র নবী-রাসূলগণ ব্যতিক্রম। গুনাহ করাও ভাগ্যের লিখন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ حَظَّهُ مِنْ الزِّنَا أَدْرَكَ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ فَزِنَا الْعَيْنِ النَّظَرُ وَزِنَا اللِّسَانِ الْمَنْطِقُ وَالنَّفْسُ تَمَنَّى وَتَشْتَهِي وَالْفَرْجُ يُصَدِّقُ ذَلِكَ كُلَّهُ وَيُكَذِّبُه» .

‘আল্লাহ আদম সন্তানের ভাগ্যে যেনার অংশ লিখে রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িয়ে পড়বে। চোখের যেনা হলো দেখা এবং জিহবার যেনা হলো বলা, প্রবৃত্তি কামনা-বাসনা করে এবং যৌনাঙ্গ তাকে হয় সম্পূর্ণ সত্যায়িত করে আর না হয় মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।’ [বুখারী,খ ১৫,পৃ ৫৩৫,হাদীস নং ৬২৪৩।]

ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় না। গুনাহ করার পর গর্ব-অহংকার না করে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে গুনাহ মাফ চাওয়া ও তাওবা করা দরকার। তাওবা করলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন। বান্দা গুনাহ করবে, আল্লাহ তা জানেন। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এক হাদীসে এসেছে:

« وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا لَذَهَبَ اللَّهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُونَ فَيَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ » .

‘আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, তোমরা গুনাহ না করলে আল্লাহ তোমাদের পরিবর্তে অন্য একটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যারা গুনাহ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে এবং তিনি তাদেরকে মাফ করবেন।’ [সহীহ মুসলিম,খ ৮,পৃ৯৪,হাদীস নং ৭১৪১।]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ভাল সনদ সহকারে আরেক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«لو لم تكونوا تذنبون خشيت عليكم ما هو أكبر من ذلك العجب العجب»

‘তোমরা গুনাহ না করলে তোমাদের ব্যাপারে আমার আরো বড় আশংকা হয় যে তোমার আত্মম্ভরিতার বিরাট গুনায় নিমজ্জিত হবে।’ [বায়হাকী, শুআবুল ঈমান,খ৫,পৃ.৪৫৩,হাদীস নং ৭২৫৫। শাইখ আল-আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, সহীহুল জামে‘।]

আসলে বান্দা গুনাহ না করলে আল্লাহর غفور (ক্ষমাকারী) নাম কিভাবে হবে? মোটকথা, গুনাহের মধ্যে টিকে থাকা যাবে না। ভুল হবে, ভুল হলে ক্ষমা চাইতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন