HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কান্নার ফযীলত
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَه ‐ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّانَبِىَّ بَعْدَه ‐ وَعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক ঐ নবীর উপর, যাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা ও তাঁর আদর্শকে বাসত্মবায়ন করার তাওফীক দান করুন। আমীন
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক ঐ নবীর উপর, যাঁর পরে আর কোন নবী আসবেন না এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা ও তাঁর আদর্শকে বাসত্মবায়ন করার তাওফীক দান করুন। আমীন
১. আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর চোখ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ عَيْنَانِ لَا تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, দু’প্রকার চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি হচ্ছে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী চোখ; আর অপরটি হচ্ছে আল্লাহর পথে পাহারাদানকারী চোখ। [তিরমিযী, হা/১৬৩৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৩৪৬।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَا يَلِجُ النَّارَ أَحَدٌ بَكٰى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتّٰى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ فِيْ مَنْخِرَيْ إِمْرِئٍ أَبَدًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যেমনিভাবে স্তন থেকে দুধ বের করে পুনরায় তা স্তনে প্রবেশ করানো যায় না। কোন ব্যক্তির শরীরে আল্লাহর পথের ধুলাবালি আর জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো মিলিত হবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/ ১০৫৬৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৬৭; নাসাঈ, হা/৩১০৭; তিরমিযী, হা/১৬৩৩।]
عَنْ أَبِىْ رَيْحَانَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - حُرِّمَتِ النَّارُ عَلٰى عَيْنٍ دَمَعَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَ حُرِّمَتِ النَّارُ عَلٰى عَيْنٍ سَهِرَتْ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ
আবু রায়হানা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ চোখের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করা হয়েছে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। আর ঐ চোখের জন্যও জাহান্নামের আগুন হারাম, যে চোখ আল্লাহর পথে (জিহাদে বা পাহারায়) রাত্রি জাগরণ করে। [বায়হাকী, হা/১৮৯১১; সুনানে দারেমী, হা/২৪৫৫; নাসাঈ, হা/৩১১৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৫২]
২. আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রু আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় :
عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ قَطْرَةٌ مِنْ دُمُوْعٍ فِيْ خَشْيَةِ اللهِ وَقَطْرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الأَثَرَانِ فَأَثَرٌ فِي سَبِيْلِ اللهِ وَأَثَرٌ فِيْ فَرِيْضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللهِ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে প্রিয় জিনিস আর কিছুই নেই। দু’টি ফোঁটার মধ্যে একটি হলো আল্লাহর ভয়ে নির্গত চোখের পানি এবং অন্যটি হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে প্রবাহিত রক্তবিন্দু। আর দু’টি চিহ্নের মধ্যে একটি হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার চিহ্ন এবং অন্যটি আল্লাহর ফরযগুলোর মধ্য থেকে কোন ফরয আদায় করার চিহ্ন। [তিরমিযী, হা/১৬৬৯।]
৩. নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করলে নাজাত পাওয়া যায় :
পাপের জন্য ক্রন্দন করাটা হচ্ছে একটি উত্তম কাজ। এর মধ্যে মুক্তি রয়েছে বলে রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلٰى خَطِيئَتِكَ
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বললাম, কীসের মধ্যে মুক্তি রয়েছে? তিনি বললেন, তোমার জিহবাকে সংযত রাখো, ঘরে অবস্থান করো এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করো। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৮৯; শু‘আবুল ঈমান, হা/৮০৫; তিরমিযী, হা/২৪০৬।]
৪. আল্লাহকে স্মরণ করে ক্রন্দনকারীরা আরশের ছায়ায় স্থান পাবে :
কিয়ামতের দিন যখন সূর্য মানুষের মাথার খুব কাছাকাছি অবস্থান করবে এবং যেদিন কোন ছায়া থাকবে না, তখন আল্লাহ তা‘আলা সাত শ্রেণীর বান্দাকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। তাদের মধ্যে এক প্রকার ব্যক্তি হচ্ছে ঐসব লোক, যারা আল্লাহর আযাবের কথা স্মরণ করে চোখের পানি ফেলে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّه يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّه اَلْإِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّه وَرَجُلٌ قَلْبُه مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ إِمْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ أَخْفٰى حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُه وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সে দিন সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তারা হলো,
(১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ,
(২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদাতে রত থাকে,
(৩) যার অন্তর মসজিদের সাথে ঝুলমত্ম থাকে,
(৪) ঐ দু’ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর খুশির জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই কেবল পরস্পরে ভালোবাসায় মিলিত অথবা পৃথক হয়,
(৫) ঐ ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী উচ্চ বংশীয় ভদ্র মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নিজের দিকে আকৃষ্ট করে তখন সে বলে, আমি আল্লাহর আযাবকে ভয় করি,
(৬) যে ব্যক্তি গোপনে দান সাদাকা করে। এমনকি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী খরচ করছে,
(৭) ঐ ব্যক্তি যার দু’চোখ নির্জনে আল্লাহর স্মরণকালে অশ্রুসিক্ত হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; বায়হাকী, হা/৪৭৬৭; নাসাঈ, হা/৫৩৮০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৩৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৪৮৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৩।]
৫. অনেক সম্পদ দান করার চেয়েও কান্নার মর্যাদা বেশি :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ : لَأَنْ أَدْمَعَ دَمْعَةً مِنْ خَشْيَةِ اللهِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِأَلْفِ دِيْنَارٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করাটা আমার কাছে এক হাজার দিনার সাদাকা করা থেকেও অধিক প্রিয়। [শু‘আবুল ঈমান, হা/৮৪২।]
وَقَالَ كَعْبٌ : لَأَنْ أَبْكِيَ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ أَحَبُّ إِليَّ مِنْ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِوَزْنِيْ ذَهَبًا
কা‘ব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করাটা আমার সমপরিমাণে স্বর্ণ সাদাকা করার চেয়েও আমার নিকট অধিক প্রিয়। [ইবনে আবি শায়বা; আবু নুয়ঈম, হিলয়াতুল আওলিয়া গ্রন্থে; এবং ইবনুল জাওযি, সিফাতুস সাফওয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।]
৬. জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে চলা :
﴿وَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ – قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِۤيْ اَهْلِنَا مُشْفِقِيْنَ – فَمَنَّ اللهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُوْمِ – اِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوْهُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيْمُ﴾
জান্নাতীরা একে অন্যের মুখোমুখি হয়ে বলাবলি করবে, দুনিয়ায় থাকতে আমরা খুবই ভীত ছিলাম (যে, জান্নাত পাব কি না)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। ইতিপূর্বে দুনিয়ায় আমরা আল্লাহকে ডাকতাম এবং তাঁর ইবাদাত করতাম। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সৌজন্যপরায়ণ এবং দয়ালু। (সূরা তূর, ২৫–২৮)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ عَيْنَانِ لَا تَمَسُّهُمَا النَّارُ عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, দু’প্রকার চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। একটি হচ্ছে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী চোখ; আর অপরটি হচ্ছে আল্লাহর পথে পাহারাদানকারী চোখ। [তিরমিযী, হা/১৬৩৯; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৪৩৪৬।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَا يَلِجُ النَّارَ أَحَدٌ بَكٰى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتّٰى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ فِيْ مَنْخِرَيْ إِمْرِئٍ أَبَدًا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যেমনিভাবে স্তন থেকে দুধ বের করে পুনরায় তা স্তনে প্রবেশ করানো যায় না। কোন ব্যক্তির শরীরে আল্লাহর পথের ধুলাবালি আর জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো মিলিত হবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হা/ ১০৫৬৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬৬৭; নাসাঈ, হা/৩১০৭; তিরমিযী, হা/১৬৩৩।]
عَنْ أَبِىْ رَيْحَانَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - حُرِّمَتِ النَّارُ عَلٰى عَيْنٍ دَمَعَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَ حُرِّمَتِ النَّارُ عَلٰى عَيْنٍ سَهِرَتْ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ
আবু রায়হানা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ঐ চোখের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করা হয়েছে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। আর ঐ চোখের জন্যও জাহান্নামের আগুন হারাম, যে চোখ আল্লাহর পথে (জিহাদে বা পাহারায়) রাত্রি জাগরণ করে। [বায়হাকী, হা/১৮৯১১; সুনানে দারেমী, হা/২৪৫৫; নাসাঈ, হা/৩১১৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৪৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৫২]
২. আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রু আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় :
عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ لَيْسَ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأَثَرَيْنِ قَطْرَةٌ مِنْ دُمُوْعٍ فِيْ خَشْيَةِ اللهِ وَقَطْرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأَمَّا الأَثَرَانِ فَأَثَرٌ فِي سَبِيْلِ اللهِ وَأَثَرٌ فِيْ فَرِيْضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ اللهِ
আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চেয়ে প্রিয় জিনিস আর কিছুই নেই। দু’টি ফোঁটার মধ্যে একটি হলো আল্লাহর ভয়ে নির্গত চোখের পানি এবং অন্যটি হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে প্রবাহিত রক্তবিন্দু। আর দু’টি চিহ্নের মধ্যে একটি হলো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার চিহ্ন এবং অন্যটি আল্লাহর ফরযগুলোর মধ্য থেকে কোন ফরয আদায় করার চিহ্ন। [তিরমিযী, হা/১৬৬৯।]
৩. নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করলে নাজাত পাওয়া যায় :
পাপের জন্য ক্রন্দন করাটা হচ্ছে একটি উত্তম কাজ। এর মধ্যে মুক্তি রয়েছে বলে রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلٰى خَطِيئَتِكَ
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বললাম, কীসের মধ্যে মুক্তি রয়েছে? তিনি বললেন, তোমার জিহবাকে সংযত রাখো, ঘরে অবস্থান করো এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করো। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৮৯; শু‘আবুল ঈমান, হা/৮০৫; তিরমিযী, হা/২৪০৬।]
৪. আল্লাহকে স্মরণ করে ক্রন্দনকারীরা আরশের ছায়ায় স্থান পাবে :
কিয়ামতের দিন যখন সূর্য মানুষের মাথার খুব কাছাকাছি অবস্থান করবে এবং যেদিন কোন ছায়া থাকবে না, তখন আল্লাহ তা‘আলা সাত শ্রেণীর বান্দাকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। তাদের মধ্যে এক প্রকার ব্যক্তি হচ্ছে ঐসব লোক, যারা আল্লাহর আযাবের কথা স্মরণ করে চোখের পানি ফেলে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّه يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّه اَلْإِمَامُ الْعَادِلُ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ رَبِّه وَرَجُلٌ قَلْبُه مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ إِمْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ أَخْفٰى حَتّٰى لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُه وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاه
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না, সে দিন সাত শ্রেণীর ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তারা হলো,
(১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ,
(২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদাতে রত থাকে,
(৩) যার অন্তর মসজিদের সাথে ঝুলমত্ম থাকে,
(৪) ঐ দু’ব্যক্তি যারা কেবল আল্লাহর খুশির জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে এবং আল্লাহর জন্যই কেবল পরস্পরে ভালোবাসায় মিলিত অথবা পৃথক হয়,
(৫) ঐ ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী উচ্চ বংশীয় ভদ্র মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নিজের দিকে আকৃষ্ট করে তখন সে বলে, আমি আল্লাহর আযাবকে ভয় করি,
(৬) যে ব্যক্তি গোপনে দান সাদাকা করে। এমনকি তার বাম হাত জানে না ডান হাত কী খরচ করছে,
(৭) ঐ ব্যক্তি যার দু’চোখ নির্জনে আল্লাহর স্মরণকালে অশ্রুসিক্ত হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৬৬০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/২৩৯১; বায়হাকী, হা/৪৭৬৭; নাসাঈ, হা/৫৩৮০; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৩৫৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৪৪৮৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৬৩।]
৫. অনেক সম্পদ দান করার চেয়েও কান্নার মর্যাদা বেশি :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ : لَأَنْ أَدْمَعَ دَمْعَةً مِنْ خَشْيَةِ اللهِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِأَلْفِ دِيْنَارٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করাটা আমার কাছে এক হাজার দিনার সাদাকা করা থেকেও অধিক প্রিয়। [শু‘আবুল ঈমান, হা/৮৪২।]
وَقَالَ كَعْبٌ : لَأَنْ أَبْكِيَ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ أَحَبُّ إِليَّ مِنْ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِوَزْنِيْ ذَهَبًا
কা‘ব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করাটা আমার সমপরিমাণে স্বর্ণ সাদাকা করার চেয়েও আমার নিকট অধিক প্রিয়। [ইবনে আবি শায়বা; আবু নুয়ঈম, হিলয়াতুল আওলিয়া গ্রন্থে; এবং ইবনুল জাওযি, সিফাতুস সাফওয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।]
৬. জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে চলা :
﴿وَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ – قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِۤيْ اَهْلِنَا مُشْفِقِيْنَ – فَمَنَّ اللهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُوْمِ – اِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوْهُؕ اِنَّهٗ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيْمُ﴾
জান্নাতীরা একে অন্যের মুখোমুখি হয়ে বলাবলি করবে, দুনিয়ায় থাকতে আমরা খুবই ভীত ছিলাম (যে, জান্নাত পাব কি না)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। ইতিপূর্বে দুনিয়ায় আমরা আল্লাহকে ডাকতাম এবং তাঁর ইবাদাত করতাম। নিশ্চয় আল্লাহ অতি সৌজন্যপরায়ণ এবং দয়ালু। (সূরা তূর, ২৫–২৮)
নবী ﷺ তাঁর মেয়েকে দাফন করার সময় কান্না করেছেন :
যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কন্যা উম্মে কুলসুম (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তখন তিনি তার কবরের পাশে ছিলেন এবং তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ شَهِدْنَا بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ وَرَسُوْلُ اللهِ جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ فَقَالَ هَلْ فِيْكُمْ مِنْ أَحَدٍ لَمْ يُقَارِفِ اللَّيْلَةَ فَقَالَ أَبُوْ طَلْحَةَ أَنَا قَالَ فَانْزِلْ فِيْ قَبْرِهَا فَنَزَلَ فِيْ قَبْرِهَا
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী ﷺ এর মেয়ে (উম্মে কুলসুম) এর জানাযায় উপস্থিত হয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ কবরের পাশে বসা ছিলেন। আমি দেখলাম, তাঁর দু’চোখ থেকে পানি ঝরছে। অতঃপর তিনি সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে এ রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করেনি? আবু তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আছি। তিনি তাকে বললেন, তুমি তার কবরে নামো। তখন তিনি তার কবরে নামলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৪২; বায়হাকী, হা/৭২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪০৭; মিশকাত, হা/১৭১৫।]
কারো মৃত্যুর অবস্থা দেখলে নবী ﷺ এর চক্ষু হতে পানি বের হতো :
আবু উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, নবী ﷺ এর মেয়ে তাঁর (নবী ﷺ এর) কাছে খবর পাঠালেন যে, আমার একটি ছেলে মুমূর্ষ; সুতরাং আপনি আমাদের নিকট আসুন। নবী ﷺ সালাম দিয়ে খবর পাঠালেন যে, আল্লাহ যা গ্রহণ করেন তা তাঁরই এবং সেটাও তাঁরই যা তিনি দান করেন। বস্তুতঃ প্রত্যেক জিনিসের জন্য তাঁর নিকট একটা নির্ধারিত সময়সূচী রয়েছে। অতএব সে যেন পূর্ণ ধৈর্য ধারণ করে এবং পুরস্কারের প্রত্যাশা রাখে।
অতঃপর তিনি (নবী ﷺ এর মেয়ে) আবার এ শপথ দিয়ে পাঠালেন যে, নবী ﷺ যেন অবশ্যই তার নিকট আসেন। অতঃপর তিনি রওয়ানা হলে সা‘দ ইবনে উবাদাহ, মু‘আয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা‘ব, যায়েদ ইবনে সাবেত (রাঃ) এবং আরো অনেকেই তাঁর সঙ্গী হলেন। ছেলেটিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কোলে তুলে দেয়া হলো, তখন তার জীবন চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় উসামা এ কথাও বলেছেন, যেন তার শ্বাস মশকের মতো (শব্দ হচ্ছিল)। আর নবী ﷺ এর চক্ষু দু’টি হতে পানি বের হতে লাগল। সা‘দ বলে উঠলেন, এটা কী হে আল্লাহর রাসূল? উত্তরে তিনি বললেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার দয়া-মমতা, যা আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক বান্দার অন্তরে রেখেছেন। স্মরণ রাখবে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে দয়াশীলদেরকেই অনুগ্রহ করেন। [[দ্র.হা. ৫৬৫৫, ৬৬০২, ৬৬৫৫, ৭৩৭৭, ৭৪৪৮] (আধুনিক প্রকা. ১২০১, ই. ফাউন্ডেশন ১২০৯)]
মায়ের কবর যিয়ারত করার সময় নবী ﷺ কান্না করেছেন :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করতে গেলেন। সেখানে তিনি কাঁদলেন এবং আশেপাশের সবাইকে কাঁদালেন। তিনি বললেন, আমি আমার প্রভুর নিকট মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তবে তার কবর যিয়ারত করার জন্য অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। [(ই.ফা. ২১২৮, ই.সে. ২১৩১)]
শুকরিয়া আদায় করার জন্য নবী ﷺ কান্না করতেন :
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে অনেক নিয়ামত প্রদান করেছেন, তা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। আর এ নিয়ামতগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলোর অনুপুস্থিতিতে আমাদের পক্ষে পৃথিবীতে বসবাস করা অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহর এসব নিয়ামতের কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করা উচিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর এসব নিয়ামতের কথা স্মরণ করে নামায আদায়ের সময় অধিক ক্রন্দন করতেন। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, হে আয়েশা! আমাকে ছেড়ে দাও- আমি আমার প্রতিপালকের ইবাদাত করব। আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! যেমনিভাবে আমি আপনার নৈকট্য লাভ করাকে ভালোবাসি, তেমনিভাবে আপনার আনন্দিত হওয়ার বিষয়গুলোকেও ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ অযু করলেন এবং নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর তিনি তাতে কান্না শুরু করে দিলেন, এমনকি তাঁর গাল ভিজে গেল। তারপর তিনি আরো কান্না করলেন, এমনকি তাঁর দাড়ি ভিজে গেল। তারপর তিনি আরো কান্না করলেন, এমনকি এতে জমিন ভিজে গেল।
অতঃপর বেলাল (রাঃ) ফজরের নামাযের আযান দেয়ার জন্য অনুমতি চাইতে আসলেন এবং তিনি তাঁকে কান্না অবস্থায় পেলেন। তখন তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তা‘আলা তো আপনার পূর্বের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, আমি কি শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? তারপর তিনি বললেন, আজ আমার উপর এমন একটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যে ব্যক্তি এটা পড়বে অথচ এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না তার জন্য ধ্বংস। আয়াতটি হচ্ছে-
﴿إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ﴾
নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টির মধ্যে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনের মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। [সূরা আলে ইমরান- ১৯, সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২০।]
নামায আদায় করার সময় নবী ﷺ কান্না করতেন :
নামায হচ্ছে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। আর এ সময় যদি ক্রন্দন করা হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তা অধিক মূল্যায়ন করেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রায়ই নামাযের মধ্যে ক্রন্দন করতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شِخِّيْرٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ وَهُوَ يُصَلِّيْ وَلِجَوْفِه أَزِيْرٌ كَأَزِيْرِ الْمِرْجَلِ يَعْنِيْ يَبْكِيْ
আবদুল্লাহ ইবনে শিখখির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে দেখি তিনি নামায আদায় করছেন এবং (আল্লাহর ভয়ে) কান্নার দরুন তাঁর পেট থেকে হাঁড়ির মতো আওয়াজ বের হচ্ছে। [নাসাঈ, হা/১২১৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৫৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৫৫।]
কুরআন পাঠ শ্রবণ করে নবী ﷺ কান্না করতেন :
কুরআন হচ্ছে আল্লাহর বাণী। এর কোন কোন জায়গায় রয়েছে আল্লাহর রহমতের আলোচনা, আবার কোথাও ভয়াবহ শাস্তির আলোচনা এবং কোথাও কিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা। কুরআন পাঠকারীর উচিত এসব আয়াত তিলাওয়াতকালে ক্রন্দন করা এবং আল্লাহর কাছে এর থেকে আশ্রয় চেয়ে প্রার্থনা করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরআন শ্রবণকালে ক্রন্দন করতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ لِيَ النَّبِيُّ اِقْرَأْ عَلَيَّ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ نَعَمْ فَقَرَأْتُ سُوْرَةَ النِّسَاءِ حَتّٰى أَتَيْتُ إِلٰى هٰذِهِ الْاٰيَةِ ﴿ فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا﴾ قَالَ حَسْبُكَ الْاٰنَ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমার সম্মুখে (কুরআন) পাঠ করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সম্মুখে (কুরআন) পাঠ করব? অথচ এটা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। সুতরাং আমি সূরা ‘নিসা’ তিলাওয়াত করলাম, যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম; ‘‘অতঃপর চিন্তা করো যে, আমি যখন প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং এসকল ব্যাপারে তোমাকে (হে মুহাম্মাদ!) সাক্ষী হিসেবে পেশ করব তখন তারা কী করবে’’। নবী ﷺ বললেন, আপাতত এতটুকুই যথেষ্ট। অতঃপর আমি তাঁর চেহারার দিকে তাকালাম এবং দেখতে পেলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৫০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪৮; আবু দাউদ, হা/৩৬৭০; তিরমিযী, হা/৩০২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৫; মিশকাত, হা/২১৯৫।]
যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কন্যা উম্মে কুলসুম (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তখন তিনি তার কবরের পাশে ছিলেন এবং তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ شَهِدْنَا بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ وَرَسُوْلُ اللهِ جَالِسٌ عَلَى الْقَبْرِ فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَدْمَعَانِ فَقَالَ هَلْ فِيْكُمْ مِنْ أَحَدٍ لَمْ يُقَارِفِ اللَّيْلَةَ فَقَالَ أَبُوْ طَلْحَةَ أَنَا قَالَ فَانْزِلْ فِيْ قَبْرِهَا فَنَزَلَ فِيْ قَبْرِهَا
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী ﷺ এর মেয়ে (উম্মে কুলসুম) এর জানাযায় উপস্থিত হয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ কবরের পাশে বসা ছিলেন। আমি দেখলাম, তাঁর দু’চোখ থেকে পানি ঝরছে। অতঃপর তিনি সাহাবীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে এ রাতে স্ত্রীর সাথে সহবাস করেনি? আবু তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আছি। তিনি তাকে বললেন, তুমি তার কবরে নামো। তখন তিনি তার কবরে নামলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৪২; বায়হাকী, হা/৭২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৪০৭; মিশকাত, হা/১৭১৫।]
কারো মৃত্যুর অবস্থা দেখলে নবী ﷺ এর চক্ষু হতে পানি বের হতো :
আবু উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, নবী ﷺ এর মেয়ে তাঁর (নবী ﷺ এর) কাছে খবর পাঠালেন যে, আমার একটি ছেলে মুমূর্ষ; সুতরাং আপনি আমাদের নিকট আসুন। নবী ﷺ সালাম দিয়ে খবর পাঠালেন যে, আল্লাহ যা গ্রহণ করেন তা তাঁরই এবং সেটাও তাঁরই যা তিনি দান করেন। বস্তুতঃ প্রত্যেক জিনিসের জন্য তাঁর নিকট একটা নির্ধারিত সময়সূচী রয়েছে। অতএব সে যেন পূর্ণ ধৈর্য ধারণ করে এবং পুরস্কারের প্রত্যাশা রাখে।
অতঃপর তিনি (নবী ﷺ এর মেয়ে) আবার এ শপথ দিয়ে পাঠালেন যে, নবী ﷺ যেন অবশ্যই তার নিকট আসেন। অতঃপর তিনি রওয়ানা হলে সা‘দ ইবনে উবাদাহ, মু‘আয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা‘ব, যায়েদ ইবনে সাবেত (রাঃ) এবং আরো অনেকেই তাঁর সঙ্গী হলেন। ছেলেটিকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কোলে তুলে দেয়া হলো, তখন তার জীবন চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় উসামা এ কথাও বলেছেন, যেন তার শ্বাস মশকের মতো (শব্দ হচ্ছিল)। আর নবী ﷺ এর চক্ষু দু’টি হতে পানি বের হতে লাগল। সা‘দ বলে উঠলেন, এটা কী হে আল্লাহর রাসূল? উত্তরে তিনি বললেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার দয়া-মমতা, যা আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক বান্দার অন্তরে রেখেছেন। স্মরণ রাখবে, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে দয়াশীলদেরকেই অনুগ্রহ করেন। [[দ্র.হা. ৫৬৫৫, ৬৬০২, ৬৬৫৫, ৭৩৭৭, ৭৪৪৮] (আধুনিক প্রকা. ১২০১, ই. ফাউন্ডেশন ১২০৯)]
মায়ের কবর যিয়ারত করার সময় নবী ﷺ কান্না করেছেন :
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করতে গেলেন। সেখানে তিনি কাঁদলেন এবং আশেপাশের সবাইকে কাঁদালেন। তিনি বললেন, আমি আমার প্রভুর নিকট মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তবে তার কবর যিয়ারত করার জন্য অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। [(ই.ফা. ২১২৮, ই.সে. ২১৩১)]
শুকরিয়া আদায় করার জন্য নবী ﷺ কান্না করতেন :
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে অনেক নিয়ামত প্রদান করেছেন, তা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। আর এ নিয়ামতগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলোর অনুপুস্থিতিতে আমাদের পক্ষে পৃথিবীতে বসবাস করা অসম্ভব। সুতরাং আল্লাহর এসব নিয়ামতের কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করা উচিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর এসব নিয়ামতের কথা স্মরণ করে নামায আদায়ের সময় অধিক ক্রন্দন করতেন। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, হে আয়েশা! আমাকে ছেড়ে দাও- আমি আমার প্রতিপালকের ইবাদাত করব। আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! যেমনিভাবে আমি আপনার নৈকট্য লাভ করাকে ভালোবাসি, তেমনিভাবে আপনার আনন্দিত হওয়ার বিষয়গুলোকেও ভালোবাসি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ অযু করলেন এবং নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর তিনি তাতে কান্না শুরু করে দিলেন, এমনকি তাঁর গাল ভিজে গেল। তারপর তিনি আরো কান্না করলেন, এমনকি তাঁর দাড়ি ভিজে গেল। তারপর তিনি আরো কান্না করলেন, এমনকি এতে জমিন ভিজে গেল।
অতঃপর বেলাল (রাঃ) ফজরের নামাযের আযান দেয়ার জন্য অনুমতি চাইতে আসলেন এবং তিনি তাঁকে কান্না অবস্থায় পেলেন। তখন তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কাঁদছেন কেন? আল্লাহ তা‘আলা তো আপনার পূর্বের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, আমি কি শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না? তারপর তিনি বললেন, আজ আমার উপর এমন একটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যে ব্যক্তি এটা পড়বে অথচ এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না তার জন্য ধ্বংস। আয়াতটি হচ্ছে-
﴿إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ﴾
নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টির মধ্যে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনের মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন। [সূরা আলে ইমরান- ১৯, সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬২০।]
নামায আদায় করার সময় নবী ﷺ কান্না করতেন :
নামায হচ্ছে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। আর এ সময় যদি ক্রন্দন করা হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তা অধিক মূল্যায়ন করেন। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রায়ই নামাযের মধ্যে ক্রন্দন করতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شِخِّيْرٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ وَهُوَ يُصَلِّيْ وَلِجَوْفِه أَزِيْرٌ كَأَزِيْرِ الْمِرْجَلِ يَعْنِيْ يَبْكِيْ
আবদুল্লাহ ইবনে শিখখির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে দেখি তিনি নামায আদায় করছেন এবং (আল্লাহর ভয়ে) কান্নার দরুন তাঁর পেট থেকে হাঁড়ির মতো আওয়াজ বের হচ্ছে। [নাসাঈ, হা/১২১৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৭৪; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৫৩; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৯৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৩৫৫।]
কুরআন পাঠ শ্রবণ করে নবী ﷺ কান্না করতেন :
কুরআন হচ্ছে আল্লাহর বাণী। এর কোন কোন জায়গায় রয়েছে আল্লাহর রহমতের আলোচনা, আবার কোথাও ভয়াবহ শাস্তির আলোচনা এবং কোথাও কিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা। কুরআন পাঠকারীর উচিত এসব আয়াত তিলাওয়াতকালে ক্রন্দন করা এবং আল্লাহর কাছে এর থেকে আশ্রয় চেয়ে প্রার্থনা করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ কুরআন শ্রবণকালে ক্রন্দন করতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ قَالَ لِيَ النَّبِيُّ اِقْرَأْ عَلَيَّ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ اَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ نَعَمْ فَقَرَأْتُ سُوْرَةَ النِّسَاءِ حَتّٰى أَتَيْتُ إِلٰى هٰذِهِ الْاٰيَةِ ﴿ فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ ۢبِشَهِيْدٍ وَّجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِيْدًا﴾ قَالَ حَسْبُكَ الْاٰنَ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী ﷺ আমাকে বললেন, তুমি আমার সম্মুখে (কুরআন) পাঠ করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সম্মুখে (কুরআন) পাঠ করব? অথচ এটা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, হ্যাঁ। সুতরাং আমি সূরা ‘নিসা’ তিলাওয়াত করলাম, যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম; ‘‘অতঃপর চিন্তা করো যে, আমি যখন প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব এবং এসকল ব্যাপারে তোমাকে (হে মুহাম্মাদ!) সাক্ষী হিসেবে পেশ করব তখন তারা কী করবে’’। নবী ﷺ বললেন, আপাতত এতটুকুই যথেষ্ট। অতঃপর আমি তাঁর চেহারার দিকে তাকালাম এবং দেখতে পেলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে। [সহীহ বুখারী, হা/৫০৫০; সহীহ মুসলিম, হা/২৪৮; আবু দাউদ, হা/৩৬৭০; তিরমিযী, হা/৩০২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬০৬; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৩৫; মিশকাত, হা/২১৯৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পর সাহাবীগণই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে হুবহু অনুসরণ করতেন। যেসব কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসতেন তাঁরাও সেসব কারণে হাসতেন এবং যেসব কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ কাঁদতেন তাঁরাও সেসব কারণে কাঁদতেন। তাঁদের কান্না কোন লোক দেখানো কান্না ছিল না। বরং তাঁরা উক্ত বিষয়ের মর্ম অনুধাবন করেই কাঁদতেন। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো :
জাহান্নামের ভয়ে উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) কান্না করতেন :
عَنْ زِيَادِ بْنِ أَبِيْ سَوْدَةَ قَالَ كَانَ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ عَلٰى سُوْرِ بَيْتِ الْمَقْدَسِ الشَّرْقِيِّ يَبْكِيْ فَقَالَ بَعْضُهُمْ مَا يُبْكِيْكَ يَا أَبَا الْوَلِيْدِ فَقَالَ مِنْ هَا هُنَا أَخْبَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ أَنَّه رَأٰى جَهَنَّمَ
যিয়াদ ইবনে আবু সাওদা (রহ.) বলেন, উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের ছাদের পূর্ব পাশে বসে কান্না করছিলেন। লোকেরা তাঁকে বলল, হে আবুল ওয়ালিদ আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, রাসূল ﷺ এখান থেকে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, তিনি জাহান্নাম দেখেছেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৪৬৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৮৫।]
নবী ﷺ এর বক্তব্য শুনে সাহাবীরা কান্না করতেন :
عَنْ أَنَسٍ قَالَ خَطَبَ رَسُوْلُ اللهِ خُطْبَةً مَا سَمِعْتُ مِثْلَهَا قَطُّ قَالَ لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا قَالَ فَغَطّٰى أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ وُجُوْهَهُمْ لَهُمْ خَنِيْنٌ فَقَالَ رَجُلٌ مَنْ أَبِيْ قَالَ فُلَانٌ فَنَزَلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ ﴿ لَا تَسْأَلُوْا عَنْ أَشْيَآءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ ﴾
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক খুতবা দিলেন, যেমনটি এর আগে আমি আর কোনদিন শুনিনি। এ সময় তিনি বললেন, আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে খুব কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথাগুলো শ্রবণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেলেন। তখন শুধু তাঁদের গুন গুন করে কান্নার শব্দই শোনা যাচ্ছিল। এ সময় এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে প্রশ্ন করল, (হে আল্লাহর নবী!) আমার পিতা কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা অমুক। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো- এমন বিষয়ে তোমরা প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশ করা হলে তোমাদের খারাপ লাগবে (সূরা মায়েদা- ১০১)। [সহীহ বুখারী, হা/৪৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৬৮।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ صَلّٰى لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلاَةَ الْفَجْرِ ثُمَّ وَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيْغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ালেন। তারপর এমন হৃদয়বিদারক ভাষণ প্রদান করলেন, যাতে আমাদের চোখসমূহ অশ্রু প্রবাহিত করতে লাগল এবং অন্তরসমূহ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেল। [সুনানে দারেমী, হা/৯৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৫১৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫; তিরমিযী, হা/২৬৭৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮৫।]
উত্তম কাজে ব্যাঘাত ঘটার কারণে আয়েশা (রাঃ) কান্না করতেন :
অনেক সাহাবী এমন ছিলেন যে, তারা কোন সওয়াবের কাজ সম্পন্ন করতে না পারার কারণে মনে কষ্ট পেতেন এবং কান্না করতেন। যেমনিভাবে কা‘বা ঘর তাওয়াফ করার পূর্বেই আয়েশা (রাঃ) এর মাসিক শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি কান্না করেছিলেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ الْقَاسِمِ قَالَ سَمِعْتُ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا تَقُوْلُ خَرَجْنَا لاَ نَرٰى إِلاَّ الْحَجَّ فَلَمَّا كُنَّا بِسَرِفَ حِضْتُ فَدَخَلَ عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ وَأَنَا أَبْكِيْ فَقَالَ مَا لَكِ ؟ أَنَفِسْتِ؟ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ إِنَّ هٰذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ فَاقْضِيْ مَا يَقْضِي الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ قَالَتْ وَضَحّٰى رَسُوْلُ اللهِ عَنْ نِسَائِه بِالْبَقَرِ
কাসিম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে, বিদায় হজ্জে আমরা কেবল হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। যখন আমরা ‘সারিফ’ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম, তখন আমার হায়েয দেখা দেয়। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি আমার কান্না দেখে বললেন, তোমার কী হয়েছে? হায়েয দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটা এমন একটা বিষয় যা আল্লাহ আদম (আঃ) এর প্রত্যেকটি মেয়ের উপর অত্যাবশ্যক করেছেন। তাই তোমার জন্য নির্দেশ হলো, অন্য হাজীগণ হজ্জের যেসব কাজ করে তুমিও তাই করো। তবে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৬৩।]
একটি পাপের কথা স্মরণ করে আয়েশা (রাঃ) কান্না করতেন :
আয়েশা (রাঃ) এর ভাতিজা আউফ ইবনে মালিক ইবনে তুফায়েল বর্ণনা করেন, একদা আয়েশা (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর মধ্যে কোন একটি বিষয় নিয়ে বিবাদ হয়। তখন আয়েশা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর সাথে কথা না বলার কসম করে বসেন। অথচ ইসলামে এক মুসলিমের সাথে অপর মুসলিমের তিন দিনের বেশি কথা না বলে থাকাটা একেবারেই নিষিদ্ধ। যখন এ বিষয়টি তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তখন তিনি কসম ভঙ্গ করেন এবং এরূপ অন্যায়ের কারণে অনেক ক্রন্দন করেন। এরপর থেকে যখনই তার এ কথা স্মরণ হতো তখনই তিনি ক্রন্দন করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৬২; বায়হাকী, হা/১১৯৭১।]
সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাগ দেখে কেঁদে দিতেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত দূত। তাঁর ভালোবাসার মধ্যেই ছিল আল্লাহর ভালোবাসা। তাছাড়া তিনিই ছিলেন সাহাবীগণের কাছে সবচেয়ে প্রিয় পাত্র। সাহাবীগণ তাঁকে নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কোন কষ্ট অথবা রাগ তাঁরা সহ্য করতে পারতেন না। কাজেই সাহাবীগণ যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে রাগান্বিত হতে দেখতেন তখন খুবই ভয় পেতেন এবং অনেক সময় কেঁদে দিতেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ خَرَجَ حِيْنَ زَاغَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى الظُّهْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَذَكَرَ السَّاعَةَ وَذَكَرَ أَنَّ بَيْنَ يَدَيْهَا أُمُورًا عِظَامًا ثُمَّ قَالَ مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْأَلَ عَنْ شَىْءٍ فَلْيَسْأَلْ عَنْهُ فَوَاللهِ لاَ تَسْأَلُوْنِيْ عَنْ شَىْءٍ إِلاَّ أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ مَا دُمْتُ فِيْ مَقَامِيْ هٰذَا قَالَ أَنَسٌ فَأَكْثَرَ النَّاسُ الْبُكَاءَ وَأَكْثَرَ رَسُوْلُ اللهِ أَنْ يَقُوْلَ " سَلُوْنِي " فَقَالَ أَنَسٌ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ أَيْنَ مَدْخَلِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ " النَّارُ " فَقَامَ عَبْدُ اللهِ بْنُ حُذَافَةَ فَقَالَ مَنْ أَبِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ " أَبُوْكَ حُذَافَةُ " . قَالَ ثُمَّ أَكْثَرَ أَنْ يَقُوْلَ " سَلُوْنِيْ سَلُوْنِيْ " . فَبَرَكَ عُمَرُ عَلٰى رُكْبَتَيْهِ فَقَالَ رَضِيْنَا بِاللهِ رَبًّا وَّبِالإِسْلاَمِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً قَالَ فَسَكَتَ رَسُوْلُ اللهِ حِيْنَ قَالَ عُمَرُ ذٰلِكَ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ " وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِه لَقَدْ عُرِضَتْ عَلَىَّ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ اٰنِفًا فِيْ عُرْضِ هٰذَا الْحَائِطِ وَأَنَا أُصَلِّيْ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ فِي الْخَيْرِ وَالشَّرِّ "
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন একদিন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে বের হলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে কিয়ামতের বিবরণ দিলেন এবং বললেন, কিয়ামতের পূর্বে বড় বড় কিছু বিষয় আছে। তারপর যে ব্যক্তি আমার কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পছন্দ করে, সে যেন উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। আল্লাহর কসম! এখানে আমি যতক্ষণ আছি তোমরা আমাকে যেসব বিষয়েই জিজ্ঞেস করবে, আমি সেসব বিষয়েই তোমাদেরকে জানাব। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন লোকেরা খুব কান্নাকাটি শুরু করে দিল এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ বার বার বলতে লাগলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমাকে জিজ্ঞেস করো। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন তাদের মাঝে এক লোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাসস্থান কোথায়? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তরে বললেন, তোমার বাসস্থান হলো জাহান্নাম। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রাঃ) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বাবা কে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমার বাবা হুজাফা। রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বার বার বলতে লাগলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমাকে জিজ্ঞেস করো। এ সময় উমর (রাঃ) দু’হাঁটু গেড়ে বসে বললেন, সন্তুষ্টচিত্তে আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে জীবনব্যবস্থা (দ্বীন) হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ-কে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেছি। উমর (রাঃ) এ কথা বলতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপ হয়ে গেলেন। তারপর নবী ﷺ প্রথমে বললেন, ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন, এইমাত্র এ দেয়ালের পাশে আমার সামনে জান্নাত এবং জাহান্নামকে হাযির করা হলো, তখন আমি নামায পড়ছিলাম। আমি আজকের দিনের মতো ভালো ও মন্দকে আর কখনো (এত স্পষ্টভাবে) দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৫৯।]
জিহাদে যাওয়ার সুযোগ না পেলে সাহাবীরা কান্না করতেন :
আখিরাতে মুক্তি লাভের জন্য সবচেয়ে উত্তম পথ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ করা। যারা এ পথে থাকবে পরকালে তারা মুক্তি লাভ করতে পারবে। এজন্যই সাহাবীগণ সর্বদা এ পথে বের হওয়ার জন্য সদা প্রসত্মুত থাকতেন এবং কোন সময় যদি কোন কারণে বের হতে না পারতেন, তাহলে খুবই দুঃখ পেতেন- এমনকি ক্রন্দন করতেন। যেমনটি ঘটেছিল তাবুক যুদ্ধের ক্ষেত্রে। সে সময় সাহাবীগণ এতই অভাবের মধ্যে ছিলেন যে, অনেকে বাহন অথবা অস্ত্রের ঘাটতির কারণে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ কারণে তারা ক্রন্দন করেছিলেন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا عَلَى الَّذِيْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوْا وَّاَعْيُنُهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَلَّا يَجِدُوْا مَا يُنْفِقُوْنَ﴾
তাদেরও কোন অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসলে তুমি বলেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না। অতঃপর তারা অর্থ ব্যয়ে অক্ষম হওয়ার কারণে দুঃখে চোখের পানি ফেলে ফিরে গেল। (সূরা তাওবা- ৯২)
সাহাবীগণ নবী ﷺ এর সুন্নাতের বিপরীত কাজ দেখলে কাঁদতেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুপস্থিতিতে তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে তাঁকে ভালোবাসার প্রধান নিদর্শন। যার কারণে সাহাবীগণ সর্বদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতসমূহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন। যখনই তারা এগুলোর মধ্যে কোন ব্যতিক্রম লক্ষ্য করতেন তখনই খুব কষ্ট অনুভব করতেন এবং কেঁদে ফেলতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ الزُّهْرِيِّ يَقُوْلُ دَخَلْتُ عَلٰى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ بِدِمَشْقَ وَهُوَ يَبْكِيْ فَقُلْتُ مَا يُبْكِيْكَ فَقَالَ لَا أَعْرِفُ شَيْئًا مِمَّا أَدْرَكْتُ إِلَّا هٰذِهِ الصَّلَاةَ وَهٰذِهِ الصَّلَاةُ قَدْ ضُيِّعَتْ
ইমাম যুহরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা দামেশকে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর সাথে দেখা করতে গেলাম এমতাবস্থায় তিনি কাঁদছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে যা কিছু দেখেছি একমাত্র এই নামায ছাড়া আর কিছুই (আসলরূপে) দেখতে পাচ্ছি না। অথচ এ নামাযও এখন নষ্ট করা হচ্ছে (মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় হচ্ছে না)। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩০।]
দুনিয়ার ভোগবিলাস বেশি হলে ভয়ে সাহাবীরা ক্রন্দন করতেন :
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য আখিরাত এবং কাফিরদের জন্য দুনিয়াকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার কারণে দুনিয়াতে মুমিনগণ যতই ভালো কাজ করুক না কেন তার প্রতিদান আখিরাতেই দেয়া হবে। পক্ষান্তরে কাফিররা যদি কোন ভালো কাজ করে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। আর এর উত্তম নিদর্শন হলো অধিক ধন-সম্পদ ও আরাম-আয়েশ। ফলে সাহাবীগণ যখন নিজেদের মধ্যে এ ধরনের কোন নিদর্শন দেখতে পেতেন তখন এ আশঙ্কা করে কাঁদতেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর কোনরূপ অসমত্মুষ্ট হয়েছেন কি না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ أَبِيْهِ إِبْرَاهِيْمَ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ عَوْفٍ أُتِيَ بِطَعَامٍ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ : قُتِلَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي كُفِّنَ فِي بُرْدِه إِنْ غُطِّيَ رَأْسُه بَدَتْ رِجْلاَهُ وَإِنْ غُطِّيَ رِجْلاَهُ بَدَا رَأْسُه وَأُرَاهُ قَالَ : وَقُتِلَ حَمْزَةُ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي ثُمَّ بُسِطَ لَنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا بُسِطَ أَوْ قَالَ : أُعْطِيْنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا أُعْطِيْنَا وَقَدْ خَشِيْنَا أَنْ تَكُوْنَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ لَنَا ثُمَّ جَعَلَ يَبْكِيْ حَتّٰى تَرَكَ الطَّعَامَ .
সা‘দ ইবনে ইবরাহীম (রহ.) তাঁর পিতা ইবরাহীম থেকে বর্ণনা করেন। একদিন আবদুর রহমান ইবনে আওফের জন্য খাবার উপস্থিত করা হলো, তখন তিনি সিয়ামরত অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, মুস‘আব ইবনে উমায়েরকে শহীদ করা হয়েছে, অথচ তিনি ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাঁকে তাঁর একটি চাদর দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছে। তা দ্বারা যদি তাঁর মাথা ঢাকা হতো, তাহলে পা দু’টি বের হয়ে যেত। আর যদি পা দু’টি ঢাকা হতো, তাহলে মাথা বের হয়ে যেত। (বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা হয়, তিনি এ কথাও বলেছেন যে,) হামযাও শহীদ হয়েছেন, অথচ তিনিও ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর আমাদের জন্য দুনিয়ার সম্পদ ব্যাপক করা হয়েছে। অথবা তিনি বলেন, আমাদেরকে দেয়া হয়েছে দুনিয়ার এক বড় অংশ। তাই আমার এ ধারণা হচ্ছে যে, আমাদের প্রতিদান আগে ভাগেই আমাদেরকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। এমনকি খাবারও পরিহার করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৭৫; বায়হাকী, হা/৬৯৩১।]
সাহাবীগণ ধন-সম্পদের ছড়াছড়ি দেখে কান্না করতেন :
দুনিয়াতে মানুষের জন্য ধন-সম্পদ হচ্ছে ফেতনাস্বরূপ। আবার এই ধন-সম্পদই হচ্ছে তাদের জীবিকা। সুতরাং ধন-সম্পদ ছাড়া যেমনিভাবে দুনিয়াতে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ জমিয়ে রাখাও ভালো নয়। কেননা এর কারণে মানুষ দুনিয়ার দিকে আকর্ষিত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহকে ভুলে যায়। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও সাহাবীগণকে অনুরূপ নির্দেশই প্রদান করেছিলেন। ফলে যখন সাহাবীগণ ধন-সম্পদের অধিক ছড়াছড়ি লক্ষ্য করতেন, তখন খুবই ব্যথিত হতেন এবং কেঁদে দিতেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ عَنْ أَشْيَاخِه قَالَ دَخَلَ سَعْدٌ عَلٰى سَلْمَانَ يَعُوْدُه قَالَ فَبَكٰى فَقَالَ لَه سَعْدٌ مَا يُبْكِيْكَ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَهُوَ عَنْكَ رَاضٍ وَتَرُدُّ عَلَيْهِ الْحَوْضُ وَتَلْقٰى أَصْحَابَكَ قَالَ فَقَالَ سَلْمَانُ أَمَا أَنِّي لَا أَبْكِيْ وَلَا حَرَصًا عَلَى الدُّنْيَا وَلٰكِنَّ رَسُوْلَ اللهِ عَهِدَ إِلَيْنَا عَهْدًا حَيًّا وَمَيِّتًا قَالَ لِتَكُنْ بُلْغَةَ أَحَدِكُمْ مِنَ الدُّنْيَا مِثْلَ زَادِ الرَّاكِبِ وَحَوْلَيْ هٰذِهِ الْأَسَاوِدَةِ قَالَ فَإِنَّمَا حَوْلَه إِجَانَةٌ وَجُفْنَةٌ وَمُطَهَّرَةٌ فَقَالَ لَه سَعْدٌ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ أَعْهِدْ إِلَيْنَا بِعَهْدٍ نَأْخُذُ بِه بَعْدَكَ قَالَ فَقَالَ يَا سَعْدُ اذْكُرِ اللهَ عِنْدَ هَمِّكَ إِ ذَا هَمَمْتَ وَعِنْدَ يَدِكَ إِذَا قَسَّمْتَ وَعِنْدَ حُكْمِكَ إِذَا حَكَمْتَ
আবু সুফিয়ান তার কিছু শাইখ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা সা‘দ (রাঃ) সালমান (রাঃ)-কে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গেলেন। সেসময় তিনি তাকে কান্না অবস্থায় পেলেন। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন, তুমি কান্না করছ কেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ তো তোমার উপর সমত্মুষ্ট অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি হাউজে কাউসারে তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবেন। তখন সালমান (রাঃ) তাকে বললেন, বিষয়টি এমন নয়। আমি মৃত্যুর ভয়ে কান্না করছি না এবং দুনিয়ার কোন লোভের জন্যও কান্না করছি না। আমি কান্না করছি এজন্য যে, নবী ﷺ আমাদের থেকে দুনিয়া ও মৃত্যুর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দুনিয়াতে তোমাদের কারো অবস্থা এ রকম হবে যেমন একজন পথিক যতটুকু পাথেয় নিয়ে সফরে রওয়ানা দেয়; অথচ আমার পাশে এই উন্নতমানের বালিশগুলো পড়ে আছে এবং এই দামি দামি জিনিসগুলো পড়ে আছে। তখন সা‘দ (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবু আবদুল্লাহ! তুমি আমাদেরকে একটি অঙ্গীকার দাও, যা তোমার পরে আমরা পালন করব। তখন তিনি বললেন, হে সা‘দ! যখন তুমি কোন আশা পোষণ কর তখন আল্লাহকে স্মরণ করো, যখন তোমার হাতে কোন কিছু ব্যয় কর, তখনও আল্লাহকে স্মরণ করো এবং যখন তুমি বিচার-ফায়সালা কর, তখনও আল্লাহকে স্মরণ করো। [শু‘আবুল ঈমান, হা/১০৩৯৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৮৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৫৪৫৩।]
ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উম্মে আয়মান (রাঃ) এর কান্না :
ওহী হচ্ছে বান্দার সাথে আল্লাহর যোগাযোগ করার প্রধান মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা এ মাধ্যমটি কেবল নবী-রাসূলদের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুর সাথে সাথেই ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আর ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সাহাবী কান্না করেছিলেন । হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ بَعْدَ وَفَاةِ رَسُوْلِ اللهِ - - لِعُمَرَ انْطَلِقْ بِنَا إِلٰى أُمِّ أَيْمَنَ نَزُوْرُهَا كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - - يَزُوْرُهَا . فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَيْهَا بَكَتْ فَقَالاَ لَهَا مَا يُبْكِيْكِ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُوْلِه - - فَقَالَتْ مَا أَبْكِىْ أَنْ لاَ أَكُوْنَ أَعْلَمُ أَنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُوْلِه - - وَلٰكِنْ أَبْكِىْ أَنَّ الْوَحْىَ قَدِ انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ . فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى الْبُكَاءِ فَجَعَلاَ يَبْكِيَانِ مَعَهَا .
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রাঃ) উমর (রাঃ)-কে বললেন, ‘‘চলো উম্মে আয়মানের নিকট তার সাথে দেখা করতে যাই, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও তার সাথে দেখা করতেন। ফলে যখন আমরা তার নিকট গেলাম, তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন।’’ অতঃপর তাঁরা উভয়ে বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আল্লাহ তা‘আলার নিকট যা কিছু আছে তা তাঁর রাসূলের জন্য সর্বাধিক উত্তম। উম্মে আয়মান (রাঃ) বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আমি জানি না আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য উত্তম; বরং আমি এজন্য কাঁদছি যে, আকাশ হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল। উম্মে আয়মানের এ কথা তাঁদেরকে আবেগাপ্লুত করে তুলল। ফলে তাঁরাও তার সঙ্গে কাঁদতে শুরু করলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৪৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৩৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৯; মিশকাত, হা/৫৯৬৭।]
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন নরম মনের মানুষ; তাই তিনি অধিক হারে ক্রন্দন করতেন :
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন খুবই নরম মনের মানুষ। তিনি আল্লাহর ভয়ে অধিক হারে ক্রন্দন করতেন। বিশেষ করে তিনি যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন, তখন তিনি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ لَمَّا اشْتَدَّ بِرَسُوْلِ اللهِ وَجَعُهُ قِيْلَ لَه فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ مُرُوْا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ قَالَتْ عَائِشَةُ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيْقٌ إِذَا قَرَأَ غَلَبَهُ الْبُكَاءُ قَالَ مُرُوْهُ فَيُصَلِّيْ فَعَاوَدَتْهُ قَالَ مُرُوْهُ فَيُصَلِّيْ إِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রোগ যখন অত্যন্ত বেড়ে গেল, তখন তাঁকে নামাযের জামা‘আত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। অতঃপর তিনি বললেন, আবু বকরকে বলো- সে যেন লোকদের নিয়ে নামায পড়ে নেয়। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন কুরআন পড়েন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। অতঃপর তিনি (নবী ﷺ) বললেন, তাঁকেই নামায পড়াতে বলো। আয়েশা (রাঃ) সে একই কথা দ্বিতীয়বার বললেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) আবার বললেন, তাকেই নামায পড়াতে বলো। তোমরা তো দেখি ইউসুফ (আঃ) এর সাথিদের মতো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৮; তিরমিযী, হা/৩৬৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১২৩২; বায়হাকী, হা/১৬৩৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৫৯।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ قَالَتْ لَمْ أَعْقِلْ أَبَوَيَّ إِلَّا وَهُمَا يَدِيْنَانِ الدِّيْنَ وَلَمْ يَمُرَّ عَلَيْنَا يَوْمٌ إِلَّا يَأْتِيْنَا فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ طَرَفَيِ النَّهَارِ بُكْرَةً وَّعَشِيَّةً ثُمَّ بَدَا لِأَبِيْ بَكْرٍ فَابْتَنٰى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِه فَكَانَ يُصَلِّيْ فِيْهِ وَيَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ فَيَقِفُ عَلَيْهِ نِسَاءُ الْمُشْرِكِيْنَ وَأَبْنَاؤُهُمْ يَعْجَبُوْنَ مِنْهُ وَيَنْظُرُوْنَ إِلَيْهِ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ رَجُلًا بَكَّاءً لَا يَمْلِكُ عَيْنَيْهِ إِذَا قَرَأَ الْقُرْاٰنَ
উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন আমার পিতা-মাতাকে চিনতে শিখেছি, তখন থেকেই তাদেরকে দ্বীন পালন করতে দেখেছি। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা আমাদের বাড়িতে আসতেন। অতঃপর এক সময় (আমার পিতা) আবু বকর (রাঃ) এর মনে (মসজিদ তৈরির) আকাঙ্ক্ষা হলো, তাই তিনি নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় (রাস্তার পার্শেব) একখানা মসজিদ তৈরি করেন। সেখানে তিনি নামায আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের স্ত্রীগণ ও ছেলে-মেয়েরা (সেখানে এসে) তাঁর অবস্থা দেখে আশ্চর্যবোধ করত। আবু বকর (রাঃ) ছিলেন অধিক ক্রন্দনকারী একজন ব্যক্তি। কুরআন তিলাওয়াতকালে তিনি কান্না সামলাতে পারতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৬।**]
তওবা কবুল হওয়ার কথা স্মরণ করে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) কান্না করতেন :
তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ)সহ বিশিষ্ট তিনজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে মুনাফিকদের মতো কোন মিথ্যা অজুহাত পেশ না করে নিজেদের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দীর্ঘ ৫০ দিন পর্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করে তাদের তওবা কবুল করেন। এরপর থেকে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) যখনই উক্ত ঘটনাটি স্মরণ করতেন তখনই কেঁদে ফেলতেন। এতদ্বসংক্রান্ত ঘটনাটি বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কে ভুল ধারণা’’।
উমর (রাঃ) নামাযে কাঁদতেন :
উমর (রাঃ) ছিলেন খুবই কঠিন হৃদয়ের মানুষ। তবুও তিনি ছিলেন আল্লাহর ব্যাপারে খুবই ভীতু। কুরআন তিলাওয়াত করার সময় তিনিও কেঁদে ফেলতেন। সহীহ বুখারীতে তা‘লীক সূত্রে এসেছে,
وَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ شَدَّادٍ سَمِعْتُ نَشِيْجَ عُمَرَ وَأَنَا فِي اٰخِرِ الصُّفُوْفِ يَقْرَأُ ﴿إِنَّمَاۤ أَشْكُوْ بَثِّيْ وَحُزْنِيۤ إِلَى اللهِ﴾
আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ (রহ.) বলেন, আমি পেছনের কাতার হতে উমর (রাঃ) এর চাপা কান্নার আওয়াজ শুনেছি। তিনি তখন ‘‘আমি আমার দুঃখ ও বেদনার অভিযোগ একমাত্র আল্লাহর নিকটেই পেশ করছি’’ (সূরা ইউসুফ- ৮৬) এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন। [তা‘লীক সূত্রে সহীহ বুখারীর ‘‘ بَابُ إِذَا بَكٰي اَلإِمَامُ فِيْ الصَّلَاةِ ’’ অধ্যায়ে এসেছে; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৩১৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৩৭৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪৪; মিশকাত, হা/১৩২।]
উসমান (রাঃ) কবরের পাশে গিয়ে কান্না করতেন :
উসমান (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জামাতা। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার কাছে পর পর দুই মেয়েকে বিবাহ দিয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন খুবই আল্লাহভীরু। তিনি প্রায়ই কবরের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে কাঁদতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ هَانِئٍ مَوْلٰى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ : كَانَ عُثْمَانُ إِذَا وَقَفَ عَلٰى قَبْرٍ بَكٰى حتّٰى يَبَلَّ لِحْيَتَهٗ قَالَ فَيُقَالُ لَهٗ : تُذْكَرُ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَلَا تَبْكِى وَتَبْكِى مِنْ هٰذَا قَالَ فَقَالَ : إِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ : إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الْاٰخِرَةِ ، فَمَنْ نَجَا مِنْهُ فَمَا بَعْدَهٗ أَيْسَرُ مِنْهُ وَمَنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهٗ أَشَدُّ مِنْهُ . قَالَ وَقَالَ عُثْمَانُ : مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ إِلَّا وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) এর ক্রীতদাস হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমনভাবে কান্না করতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। তখন তাকে বলা হতো, আপনি জান্নাত এবং জাহান্নামের আলোচনা হলেও এত কান্না করেন না, অথচ কবরের কথা শুনলে এত কান্না করেন। তখন তিনি বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, কবর হচ্ছে পরকালের প্রথম ঘাঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি সেখানে নাজাত পাবে, অন্যান্য পরীক্ষায় নাজাত পাওয়া তার জন্য সহজ হবে। আর যে এ ঘাঁটিতে নাজাত পাবে না, অন্যান্য ঘাঁটিতে নাজাত পাওয়া তার জন্য আরো কঠিন হয়ে যাবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি কবরের চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কোন দৃশ্য দেখিনি। [তিরমিযী, হা/২৩০৮; নাসাঈ, হা/৪২৬৭।]
জাহান্নামের ভয়ে উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) কান্না করতেন :
عَنْ زِيَادِ بْنِ أَبِيْ سَوْدَةَ قَالَ كَانَ عُبَادَةُ بْنُ الصَّامِتِ عَلٰى سُوْرِ بَيْتِ الْمَقْدَسِ الشَّرْقِيِّ يَبْكِيْ فَقَالَ بَعْضُهُمْ مَا يُبْكِيْكَ يَا أَبَا الْوَلِيْدِ فَقَالَ مِنْ هَا هُنَا أَخْبَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ أَنَّه رَأٰى جَهَنَّمَ
যিয়াদ ইবনে আবু সাওদা (রহ.) বলেন, উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের ছাদের পূর্ব পাশে বসে কান্না করছিলেন। লোকেরা তাঁকে বলল, হে আবুল ওয়ালিদ আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, রাসূল ﷺ এখান থেকে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, তিনি জাহান্নাম দেখেছেন। [সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৪৬৪; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৮৫।]
নবী ﷺ এর বক্তব্য শুনে সাহাবীরা কান্না করতেন :
عَنْ أَنَسٍ قَالَ خَطَبَ رَسُوْلُ اللهِ خُطْبَةً مَا سَمِعْتُ مِثْلَهَا قَطُّ قَالَ لَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا أَعْلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيْلًا وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيْرًا قَالَ فَغَطّٰى أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ وُجُوْهَهُمْ لَهُمْ خَنِيْنٌ فَقَالَ رَجُلٌ مَنْ أَبِيْ قَالَ فُلَانٌ فَنَزَلَتْ هٰذِهِ الْاٰيَةُ ﴿ لَا تَسْأَلُوْا عَنْ أَشْيَآءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ ﴾
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক খুতবা দিলেন, যেমনটি এর আগে আমি আর কোনদিন শুনিনি। এ সময় তিনি বললেন, আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে খুব কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথাগুলো শ্রবণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেলেন। তখন শুধু তাঁদের গুন গুন করে কান্নার শব্দই শোনা যাচ্ছিল। এ সময় এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে প্রশ্ন করল, (হে আল্লাহর নবী!) আমার পিতা কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা অমুক। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো- এমন বিষয়ে তোমরা প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশ করা হলে তোমাদের খারাপ লাগবে (সূরা মায়েদা- ১০১)। [সহীহ বুখারী, হা/৪৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৬৮।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ صَلّٰى لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلاَةَ الْفَجْرِ ثُمَّ وَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيْغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُوْنُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوْبُ
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ালেন। তারপর এমন হৃদয়বিদারক ভাষণ প্রদান করলেন, যাতে আমাদের চোখসমূহ অশ্রু প্রবাহিত করতে লাগল এবং অন্তরসমূহ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেল। [সুনানে দারেমী, হা/৯৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৫১৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫; তিরমিযী, হা/২৬৭৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮৫।]
উত্তম কাজে ব্যাঘাত ঘটার কারণে আয়েশা (রাঃ) কান্না করতেন :
অনেক সাহাবী এমন ছিলেন যে, তারা কোন সওয়াবের কাজ সম্পন্ন করতে না পারার কারণে মনে কষ্ট পেতেন এবং কান্না করতেন। যেমনিভাবে কা‘বা ঘর তাওয়াফ করার পূর্বেই আয়েশা (রাঃ) এর মাসিক শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি কান্না করেছিলেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ الْقَاسِمِ قَالَ سَمِعْتُ عَائِشَةَ رَضِىَ الله عَنْهَا تَقُوْلُ خَرَجْنَا لاَ نَرٰى إِلاَّ الْحَجَّ فَلَمَّا كُنَّا بِسَرِفَ حِضْتُ فَدَخَلَ عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ وَأَنَا أَبْكِيْ فَقَالَ مَا لَكِ ؟ أَنَفِسْتِ؟ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ إِنَّ هٰذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللهُ عَلٰى بَنَاتِ اٰدَمَ فَاقْضِيْ مَا يَقْضِي الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوْفِيْ بِالْبَيْتِ قَالَتْ وَضَحّٰى رَسُوْلُ اللهِ عَنْ نِسَائِه بِالْبَقَرِ
কাসিম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে, বিদায় হজ্জে আমরা কেবল হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। যখন আমরা ‘সারিফ’ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম, তখন আমার হায়েয দেখা দেয়। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি আমার কান্না দেখে বললেন, তোমার কী হয়েছে? হায়েয দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটা এমন একটা বিষয় যা আল্লাহ আদম (আঃ) এর প্রত্যেকটি মেয়ের উপর অত্যাবশ্যক করেছেন। তাই তোমার জন্য নির্দেশ হলো, অন্য হাজীগণ হজ্জের যেসব কাজ করে তুমিও তাই করো। তবে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৬৩।]
একটি পাপের কথা স্মরণ করে আয়েশা (রাঃ) কান্না করতেন :
আয়েশা (রাঃ) এর ভাতিজা আউফ ইবনে মালিক ইবনে তুফায়েল বর্ণনা করেন, একদা আয়েশা (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর মধ্যে কোন একটি বিষয় নিয়ে বিবাদ হয়। তখন আয়েশা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর সাথে কথা না বলার কসম করে বসেন। অথচ ইসলামে এক মুসলিমের সাথে অপর মুসলিমের তিন দিনের বেশি কথা না বলে থাকাটা একেবারেই নিষিদ্ধ। যখন এ বিষয়টি তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তখন তিনি কসম ভঙ্গ করেন এবং এরূপ অন্যায়ের কারণে অনেক ক্রন্দন করেন। এরপর থেকে যখনই তার এ কথা স্মরণ হতো তখনই তিনি ক্রন্দন করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৬২; বায়হাকী, হা/১১৯৭১।]
সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাগ দেখে কেঁদে দিতেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত দূত। তাঁর ভালোবাসার মধ্যেই ছিল আল্লাহর ভালোবাসা। তাছাড়া তিনিই ছিলেন সাহাবীগণের কাছে সবচেয়ে প্রিয় পাত্র। সাহাবীগণ তাঁকে নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কোন কষ্ট অথবা রাগ তাঁরা সহ্য করতে পারতেন না। কাজেই সাহাবীগণ যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে রাগান্বিত হতে দেখতেন তখন খুবই ভয় পেতেন এবং অনেক সময় কেঁদে দিতেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ خَرَجَ حِيْنَ زَاغَتِ الشَّمْسُ فَصَلَّى الظُّهْرَ فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَذَكَرَ السَّاعَةَ وَذَكَرَ أَنَّ بَيْنَ يَدَيْهَا أُمُورًا عِظَامًا ثُمَّ قَالَ مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْأَلَ عَنْ شَىْءٍ فَلْيَسْأَلْ عَنْهُ فَوَاللهِ لاَ تَسْأَلُوْنِيْ عَنْ شَىْءٍ إِلاَّ أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ مَا دُمْتُ فِيْ مَقَامِيْ هٰذَا قَالَ أَنَسٌ فَأَكْثَرَ النَّاسُ الْبُكَاءَ وَأَكْثَرَ رَسُوْلُ اللهِ أَنْ يَقُوْلَ " سَلُوْنِي " فَقَالَ أَنَسٌ فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ أَيْنَ مَدْخَلِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ " النَّارُ " فَقَامَ عَبْدُ اللهِ بْنُ حُذَافَةَ فَقَالَ مَنْ أَبِيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ " أَبُوْكَ حُذَافَةُ " . قَالَ ثُمَّ أَكْثَرَ أَنْ يَقُوْلَ " سَلُوْنِيْ سَلُوْنِيْ " . فَبَرَكَ عُمَرُ عَلٰى رُكْبَتَيْهِ فَقَالَ رَضِيْنَا بِاللهِ رَبًّا وَّبِالإِسْلاَمِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً قَالَ فَسَكَتَ رَسُوْلُ اللهِ حِيْنَ قَالَ عُمَرُ ذٰلِكَ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ " وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِه لَقَدْ عُرِضَتْ عَلَىَّ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ اٰنِفًا فِيْ عُرْضِ هٰذَا الْحَائِطِ وَأَنَا أُصَلِّيْ فَلَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ فِي الْخَيْرِ وَالشَّرِّ "
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন একদিন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে বের হলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে কিয়ামতের বিবরণ দিলেন এবং বললেন, কিয়ামতের পূর্বে বড় বড় কিছু বিষয় আছে। তারপর যে ব্যক্তি আমার কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পছন্দ করে, সে যেন উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। আল্লাহর কসম! এখানে আমি যতক্ষণ আছি তোমরা আমাকে যেসব বিষয়েই জিজ্ঞেস করবে, আমি সেসব বিষয়েই তোমাদেরকে জানাব। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন লোকেরা খুব কান্নাকাটি শুরু করে দিল এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ বার বার বলতে লাগলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমাকে জিজ্ঞেস করো। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন তাদের মাঝে এক লোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাসস্থান কোথায়? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তরে বললেন, তোমার বাসস্থান হলো জাহান্নাম। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রাঃ) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বাবা কে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমার বাবা হুজাফা। রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বার বার বলতে লাগলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমাকে জিজ্ঞেস করো। এ সময় উমর (রাঃ) দু’হাঁটু গেড়ে বসে বললেন, সন্তুষ্টচিত্তে আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে জীবনব্যবস্থা (দ্বীন) হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ-কে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেছি। উমর (রাঃ) এ কথা বলতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপ হয়ে গেলেন। তারপর নবী ﷺ প্রথমে বললেন, ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন, এইমাত্র এ দেয়ালের পাশে আমার সামনে জান্নাত এবং জাহান্নামকে হাযির করা হলো, তখন আমি নামায পড়ছিলাম। আমি আজকের দিনের মতো ভালো ও মন্দকে আর কখনো (এত স্পষ্টভাবে) দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৫৯।]
জিহাদে যাওয়ার সুযোগ না পেলে সাহাবীরা কান্না করতেন :
আখিরাতে মুক্তি লাভের জন্য সবচেয়ে উত্তম পথ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ করা। যারা এ পথে থাকবে পরকালে তারা মুক্তি লাভ করতে পারবে। এজন্যই সাহাবীগণ সর্বদা এ পথে বের হওয়ার জন্য সদা প্রসত্মুত থাকতেন এবং কোন সময় যদি কোন কারণে বের হতে না পারতেন, তাহলে খুবই দুঃখ পেতেন- এমনকি ক্রন্দন করতেন। যেমনটি ঘটেছিল তাবুক যুদ্ধের ক্ষেত্রে। সে সময় সাহাবীগণ এতই অভাবের মধ্যে ছিলেন যে, অনেকে বাহন অথবা অস্ত্রের ঘাটতির কারণে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ কারণে তারা ক্রন্দন করেছিলেন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا عَلَى الَّذِيْنَ اِذَا مَاۤ اَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَاۤ اَجِدُ مَاۤ اَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوْا وَّاَعْيُنُهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا اَلَّا يَجِدُوْا مَا يُنْفِقُوْنَ﴾
তাদেরও কোন অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসলে তুমি বলেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না। অতঃপর তারা অর্থ ব্যয়ে অক্ষম হওয়ার কারণে দুঃখে চোখের পানি ফেলে ফিরে গেল। (সূরা তাওবা- ৯২)
সাহাবীগণ নবী ﷺ এর সুন্নাতের বিপরীত কাজ দেখলে কাঁদতেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুপস্থিতিতে তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে তাঁকে ভালোবাসার প্রধান নিদর্শন। যার কারণে সাহাবীগণ সর্বদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতসমূহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন। যখনই তারা এগুলোর মধ্যে কোন ব্যতিক্রম লক্ষ্য করতেন তখনই খুব কষ্ট অনুভব করতেন এবং কেঁদে ফেলতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنِ الزُّهْرِيِّ يَقُوْلُ دَخَلْتُ عَلٰى أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ بِدِمَشْقَ وَهُوَ يَبْكِيْ فَقُلْتُ مَا يُبْكِيْكَ فَقَالَ لَا أَعْرِفُ شَيْئًا مِمَّا أَدْرَكْتُ إِلَّا هٰذِهِ الصَّلَاةَ وَهٰذِهِ الصَّلَاةُ قَدْ ضُيِّعَتْ
ইমাম যুহরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা দামেশকে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর সাথে দেখা করতে গেলাম এমতাবস্থায় তিনি কাঁদছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে যা কিছু দেখেছি একমাত্র এই নামায ছাড়া আর কিছুই (আসলরূপে) দেখতে পাচ্ছি না। অথচ এ নামাযও এখন নষ্ট করা হচ্ছে (মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় হচ্ছে না)। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩০।]
দুনিয়ার ভোগবিলাস বেশি হলে ভয়ে সাহাবীরা ক্রন্দন করতেন :
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য আখিরাত এবং কাফিরদের জন্য দুনিয়াকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার কারণে দুনিয়াতে মুমিনগণ যতই ভালো কাজ করুক না কেন তার প্রতিদান আখিরাতেই দেয়া হবে। পক্ষান্তরে কাফিররা যদি কোন ভালো কাজ করে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। আর এর উত্তম নিদর্শন হলো অধিক ধন-সম্পদ ও আরাম-আয়েশ। ফলে সাহাবীগণ যখন নিজেদের মধ্যে এ ধরনের কোন নিদর্শন দেখতে পেতেন তখন এ আশঙ্কা করে কাঁদতেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর কোনরূপ অসমত্মুষ্ট হয়েছেন কি না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ أَبِيْهِ إِبْرَاهِيْمَ أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ عَوْفٍ أُتِيَ بِطَعَامٍ وَكَانَ صَائِمًا فَقَالَ : قُتِلَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي كُفِّنَ فِي بُرْدِه إِنْ غُطِّيَ رَأْسُه بَدَتْ رِجْلاَهُ وَإِنْ غُطِّيَ رِجْلاَهُ بَدَا رَأْسُه وَأُرَاهُ قَالَ : وَقُتِلَ حَمْزَةُ وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي ثُمَّ بُسِطَ لَنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا بُسِطَ أَوْ قَالَ : أُعْطِيْنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا أُعْطِيْنَا وَقَدْ خَشِيْنَا أَنْ تَكُوْنَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ لَنَا ثُمَّ جَعَلَ يَبْكِيْ حَتّٰى تَرَكَ الطَّعَامَ .
সা‘দ ইবনে ইবরাহীম (রহ.) তাঁর পিতা ইবরাহীম থেকে বর্ণনা করেন। একদিন আবদুর রহমান ইবনে আওফের জন্য খাবার উপস্থিত করা হলো, তখন তিনি সিয়ামরত অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, মুস‘আব ইবনে উমায়েরকে শহীদ করা হয়েছে, অথচ তিনি ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাঁকে তাঁর একটি চাদর দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছে। তা দ্বারা যদি তাঁর মাথা ঢাকা হতো, তাহলে পা দু’টি বের হয়ে যেত। আর যদি পা দু’টি ঢাকা হতো, তাহলে মাথা বের হয়ে যেত। (বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা হয়, তিনি এ কথাও বলেছেন যে,) হামযাও শহীদ হয়েছেন, অথচ তিনিও ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর আমাদের জন্য দুনিয়ার সম্পদ ব্যাপক করা হয়েছে। অথবা তিনি বলেন, আমাদেরকে দেয়া হয়েছে দুনিয়ার এক বড় অংশ। তাই আমার এ ধারণা হচ্ছে যে, আমাদের প্রতিদান আগে ভাগেই আমাদেরকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। এমনকি খাবারও পরিহার করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৭৫; বায়হাকী, হা/৬৯৩১।]
সাহাবীগণ ধন-সম্পদের ছড়াছড়ি দেখে কান্না করতেন :
দুনিয়াতে মানুষের জন্য ধন-সম্পদ হচ্ছে ফেতনাস্বরূপ। আবার এই ধন-সম্পদই হচ্ছে তাদের জীবিকা। সুতরাং ধন-সম্পদ ছাড়া যেমনিভাবে দুনিয়াতে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ জমিয়ে রাখাও ভালো নয়। কেননা এর কারণে মানুষ দুনিয়ার দিকে আকর্ষিত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহকে ভুলে যায়। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও সাহাবীগণকে অনুরূপ নির্দেশই প্রদান করেছিলেন। ফলে যখন সাহাবীগণ ধন-সম্পদের অধিক ছড়াছড়ি লক্ষ্য করতেন, তখন খুবই ব্যথিত হতেন এবং কেঁদে দিতেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ سُفْيَانَ عَنْ أَشْيَاخِه قَالَ دَخَلَ سَعْدٌ عَلٰى سَلْمَانَ يَعُوْدُه قَالَ فَبَكٰى فَقَالَ لَه سَعْدٌ مَا يُبْكِيْكَ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ وَهُوَ عَنْكَ رَاضٍ وَتَرُدُّ عَلَيْهِ الْحَوْضُ وَتَلْقٰى أَصْحَابَكَ قَالَ فَقَالَ سَلْمَانُ أَمَا أَنِّي لَا أَبْكِيْ وَلَا حَرَصًا عَلَى الدُّنْيَا وَلٰكِنَّ رَسُوْلَ اللهِ عَهِدَ إِلَيْنَا عَهْدًا حَيًّا وَمَيِّتًا قَالَ لِتَكُنْ بُلْغَةَ أَحَدِكُمْ مِنَ الدُّنْيَا مِثْلَ زَادِ الرَّاكِبِ وَحَوْلَيْ هٰذِهِ الْأَسَاوِدَةِ قَالَ فَإِنَّمَا حَوْلَه إِجَانَةٌ وَجُفْنَةٌ وَمُطَهَّرَةٌ فَقَالَ لَه سَعْدٌ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ أَعْهِدْ إِلَيْنَا بِعَهْدٍ نَأْخُذُ بِه بَعْدَكَ قَالَ فَقَالَ يَا سَعْدُ اذْكُرِ اللهَ عِنْدَ هَمِّكَ إِ ذَا هَمَمْتَ وَعِنْدَ يَدِكَ إِذَا قَسَّمْتَ وَعِنْدَ حُكْمِكَ إِذَا حَكَمْتَ
আবু সুফিয়ান তার কিছু শাইখ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা সা‘দ (রাঃ) সালমান (রাঃ)-কে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গেলেন। সেসময় তিনি তাকে কান্না অবস্থায় পেলেন। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন, তুমি কান্না করছ কেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ তো তোমার উপর সমত্মুষ্ট অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি হাউজে কাউসারে তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবেন। তখন সালমান (রাঃ) তাকে বললেন, বিষয়টি এমন নয়। আমি মৃত্যুর ভয়ে কান্না করছি না এবং দুনিয়ার কোন লোভের জন্যও কান্না করছি না। আমি কান্না করছি এজন্য যে, নবী ﷺ আমাদের থেকে দুনিয়া ও মৃত্যুর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দুনিয়াতে তোমাদের কারো অবস্থা এ রকম হবে যেমন একজন পথিক যতটুকু পাথেয় নিয়ে সফরে রওয়ানা দেয়; অথচ আমার পাশে এই উন্নতমানের বালিশগুলো পড়ে আছে এবং এই দামি দামি জিনিসগুলো পড়ে আছে। তখন সা‘দ (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবু আবদুল্লাহ! তুমি আমাদেরকে একটি অঙ্গীকার দাও, যা তোমার পরে আমরা পালন করব। তখন তিনি বললেন, হে সা‘দ! যখন তুমি কোন আশা পোষণ কর তখন আল্লাহকে স্মরণ করো, যখন তোমার হাতে কোন কিছু ব্যয় কর, তখনও আল্লাহকে স্মরণ করো এবং যখন তুমি বিচার-ফায়সালা কর, তখনও আল্লাহকে স্মরণ করো। [শু‘আবুল ঈমান, হা/১০৩৯৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৮৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৫৪৫৩।]
ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উম্মে আয়মান (রাঃ) এর কান্না :
ওহী হচ্ছে বান্দার সাথে আল্লাহর যোগাযোগ করার প্রধান মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা এ মাধ্যমটি কেবল নবী-রাসূলদের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুর সাথে সাথেই ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আর ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সাহাবী কান্না করেছিলেন । হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ بَعْدَ وَفَاةِ رَسُوْلِ اللهِ - - لِعُمَرَ انْطَلِقْ بِنَا إِلٰى أُمِّ أَيْمَنَ نَزُوْرُهَا كَمَا كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - - يَزُوْرُهَا . فَلَمَّا انْتَهَيْنَا إِلَيْهَا بَكَتْ فَقَالاَ لَهَا مَا يُبْكِيْكِ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُوْلِه - - فَقَالَتْ مَا أَبْكِىْ أَنْ لاَ أَكُوْنَ أَعْلَمُ أَنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لِرَسُوْلِه - - وَلٰكِنْ أَبْكِىْ أَنَّ الْوَحْىَ قَدِ انْقَطَعَ مِنَ السَّمَاءِ . فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى الْبُكَاءِ فَجَعَلاَ يَبْكِيَانِ مَعَهَا .
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রাঃ) উমর (রাঃ)-কে বললেন, ‘‘চলো উম্মে আয়মানের নিকট তার সাথে দেখা করতে যাই, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও তার সাথে দেখা করতেন। ফলে যখন আমরা তার নিকট গেলাম, তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন।’’ অতঃপর তাঁরা উভয়ে বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আল্লাহ তা‘আলার নিকট যা কিছু আছে তা তাঁর রাসূলের জন্য সর্বাধিক উত্তম। উম্মে আয়মান (রাঃ) বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আমি জানি না আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য উত্তম; বরং আমি এজন্য কাঁদছি যে, আকাশ হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল। উম্মে আয়মানের এ কথা তাঁদেরকে আবেগাপ্লুত করে তুলল। ফলে তাঁরাও তার সঙ্গে কাঁদতে শুরু করলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৪৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৩৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৯; মিশকাত, হা/৫৯৬৭।]
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন নরম মনের মানুষ; তাই তিনি অধিক হারে ক্রন্দন করতেন :
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন খুবই নরম মনের মানুষ। তিনি আল্লাহর ভয়ে অধিক হারে ক্রন্দন করতেন। বিশেষ করে তিনি যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন, তখন তিনি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ لَمَّا اشْتَدَّ بِرَسُوْلِ اللهِ وَجَعُهُ قِيْلَ لَه فِي الصَّلَاةِ فَقَالَ مُرُوْا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ قَالَتْ عَائِشَةُ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيْقٌ إِذَا قَرَأَ غَلَبَهُ الْبُكَاءُ قَالَ مُرُوْهُ فَيُصَلِّيْ فَعَاوَدَتْهُ قَالَ مُرُوْهُ فَيُصَلِّيْ إِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রোগ যখন অত্যন্ত বেড়ে গেল, তখন তাঁকে নামাযের জামা‘আত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। অতঃপর তিনি বললেন, আবু বকরকে বলো- সে যেন লোকদের নিয়ে নামায পড়ে নেয়। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন কুরআন পড়েন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। অতঃপর তিনি (নবী ﷺ) বললেন, তাঁকেই নামায পড়াতে বলো। আয়েশা (রাঃ) সে একই কথা দ্বিতীয়বার বললেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) আবার বললেন, তাকেই নামায পড়াতে বলো। তোমরা তো দেখি ইউসুফ (আঃ) এর সাথিদের মতো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৮; তিরমিযী, হা/৩৬৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১২৩২; বায়হাকী, হা/১৬৩৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৫৯।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ قَالَتْ لَمْ أَعْقِلْ أَبَوَيَّ إِلَّا وَهُمَا يَدِيْنَانِ الدِّيْنَ وَلَمْ يَمُرَّ عَلَيْنَا يَوْمٌ إِلَّا يَأْتِيْنَا فِيْهِ رَسُوْلُ اللهِ طَرَفَيِ النَّهَارِ بُكْرَةً وَّعَشِيَّةً ثُمَّ بَدَا لِأَبِيْ بَكْرٍ فَابْتَنٰى مَسْجِدًا بِفِنَاءِ دَارِه فَكَانَ يُصَلِّيْ فِيْهِ وَيَقْرَأُ الْقُرْاٰنَ فَيَقِفُ عَلَيْهِ نِسَاءُ الْمُشْرِكِيْنَ وَأَبْنَاؤُهُمْ يَعْجَبُوْنَ مِنْهُ وَيَنْظُرُوْنَ إِلَيْهِ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ رَجُلًا بَكَّاءً لَا يَمْلِكُ عَيْنَيْهِ إِذَا قَرَأَ الْقُرْاٰنَ
উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন আমার পিতা-মাতাকে চিনতে শিখেছি, তখন থেকেই তাদেরকে দ্বীন পালন করতে দেখেছি। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা আমাদের বাড়িতে আসতেন। অতঃপর এক সময় (আমার পিতা) আবু বকর (রাঃ) এর মনে (মসজিদ তৈরির) আকাঙ্ক্ষা হলো, তাই তিনি নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় (রাস্তার পার্শেব) একখানা মসজিদ তৈরি করেন। সেখানে তিনি নামায আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের স্ত্রীগণ ও ছেলে-মেয়েরা (সেখানে এসে) তাঁর অবস্থা দেখে আশ্চর্যবোধ করত। আবু বকর (রাঃ) ছিলেন অধিক ক্রন্দনকারী একজন ব্যক্তি। কুরআন তিলাওয়াতকালে তিনি কান্না সামলাতে পারতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৬।**]
তওবা কবুল হওয়ার কথা স্মরণ করে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) কান্না করতেন :
তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ)সহ বিশিষ্ট তিনজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে মুনাফিকদের মতো কোন মিথ্যা অজুহাত পেশ না করে নিজেদের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দীর্ঘ ৫০ দিন পর্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করে তাদের তওবা কবুল করেন। এরপর থেকে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) যখনই উক্ত ঘটনাটি স্মরণ করতেন তখনই কেঁদে ফেলতেন। এতদ্বসংক্রান্ত ঘটনাটি বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কে ভুল ধারণা’’।
উমর (রাঃ) নামাযে কাঁদতেন :
উমর (রাঃ) ছিলেন খুবই কঠিন হৃদয়ের মানুষ। তবুও তিনি ছিলেন আল্লাহর ব্যাপারে খুবই ভীতু। কুরআন তিলাওয়াত করার সময় তিনিও কেঁদে ফেলতেন। সহীহ বুখারীতে তা‘লীক সূত্রে এসেছে,
وَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ شَدَّادٍ سَمِعْتُ نَشِيْجَ عُمَرَ وَأَنَا فِي اٰخِرِ الصُّفُوْفِ يَقْرَأُ ﴿إِنَّمَاۤ أَشْكُوْ بَثِّيْ وَحُزْنِيۤ إِلَى اللهِ﴾
আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ (রহ.) বলেন, আমি পেছনের কাতার হতে উমর (রাঃ) এর চাপা কান্নার আওয়াজ শুনেছি। তিনি তখন ‘‘আমি আমার দুঃখ ও বেদনার অভিযোগ একমাত্র আল্লাহর নিকটেই পেশ করছি’’ (সূরা ইউসুফ- ৮৬) এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন। [তা‘লীক সূত্রে সহীহ বুখারীর ‘‘ بَابُ إِذَا بَكٰي اَلإِمَامُ فِيْ الصَّلَاةِ ’’ অধ্যায়ে এসেছে; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৩১৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৩৭৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪৪; মিশকাত, হা/১৩২।]
উসমান (রাঃ) কবরের পাশে গিয়ে কান্না করতেন :
উসমান (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জামাতা। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার কাছে পর পর দুই মেয়েকে বিবাহ দিয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন খুবই আল্লাহভীরু। তিনি প্রায়ই কবরের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে কাঁদতেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ هَانِئٍ مَوْلٰى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ قَالَ : كَانَ عُثْمَانُ إِذَا وَقَفَ عَلٰى قَبْرٍ بَكٰى حتّٰى يَبَلَّ لِحْيَتَهٗ قَالَ فَيُقَالُ لَهٗ : تُذْكَرُ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَلَا تَبْكِى وَتَبْكِى مِنْ هٰذَا قَالَ فَقَالَ : إِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ - - يَقُوْلُ : إِنَّ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنَازِلِ الْاٰخِرَةِ ، فَمَنْ نَجَا مِنْهُ فَمَا بَعْدَهٗ أَيْسَرُ مِنْهُ وَمَنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهٗ أَشَدُّ مِنْهُ . قَالَ وَقَالَ عُثْمَانُ : مَا رَأَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ إِلَّا وَالْقَبْرُ أَفْظَعُ مِنْهُ
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) এর ক্রীতদাস হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমনভাবে কান্না করতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। তখন তাকে বলা হতো, আপনি জান্নাত এবং জাহান্নামের আলোচনা হলেও এত কান্না করেন না, অথচ কবরের কথা শুনলে এত কান্না করেন। তখন তিনি বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, কবর হচ্ছে পরকালের প্রথম ঘাঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি সেখানে নাজাত পাবে, অন্যান্য পরীক্ষায় নাজাত পাওয়া তার জন্য সহজ হবে। আর যে এ ঘাঁটিতে নাজাত পাবে না, অন্যান্য ঘাঁটিতে নাজাত পাওয়া তার জন্য আরো কঠিন হয়ে যাবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি কবরের চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কোন দৃশ্য দেখিনি। [তিরমিযী, হা/২৩০৮; নাসাঈ, হা/৪২৬৭।]
প্রত্যেক যুগের নবী-রাসূলগণ আল্লাহর বাণী শুনে কান্নায় লুটিয়ে পড়তেন :
পূর্বযুগে প্রেরিত নবী-রাসূল ও তাঁদের উম্মতের মুমিন বান্দাগণের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটত। তাদের সামনে যখন আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হতো তখন তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয়ে কাঁদতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُ الرَّحْمٰنِ خَرُّوْا سُجَّدًا وَّبُكِيًّا﴾
যখন তাদের নিকট দয়াময়ের আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হতো, তখন তারা ক্রন্দন করতে করতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। (সূরা মারইয়াম- ৫৮)
আহলে কিতাবের সত্যনিষ্ঠ লোকেরা কুরআন শুনে কান্না করত :
﴿وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ ‐ وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ اَنْ يُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِيْنَ﴾
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করো। আর আমাদের জন্য এমন কী কারণ থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না? হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যাশা করি যে, আপনি আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৩, ৮৪)
হিজরতের কয়েক বৎসর পর একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ৭০ জন লোক রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে কুরআনের বাণী শুনে অতিশয় মুগ্ধ হয়ে কান্না-কাটি করতে থাকে এবং চোখের পানি ফেলতে থাকে। তখন তাদের মুখে ‘‘রববানা- আ-মান্না’’ (হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনলাম) উচ্চারিত হতে থাকে। উক্ত আয়াতে তাদের অবস্থার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত :
﴿قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا﴾
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতিপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
মূসা (আঃ) এর ভাষণ শুনে তাঁর উম্মতের লোকেরা কান্না করত :
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ ... قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مُوْسٰى رَسُوْلُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ ذَكَّرَ النَّاسَ يَوْمًا حَتّٰى إِذَا فَاضَتِ الْعُيُوْنُ وَرَقَّتِ الْقُلُوْبُ
সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,... রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একদিন আল্লাহর রাসূল মূসা (আঃ) লোকদের মধ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তৃতার প্রভাবে লোকদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। অতঃপর তারা ভীষণ কান্নাকাটি করল। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১৫৭।]
পূর্বযুগে প্রেরিত নবী-রাসূল ও তাঁদের উম্মতের মুমিন বান্দাগণের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটত। তাদের সামনে যখন আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হতো তখন তারা আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয়ে কাঁদতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِذَا تُتْلٰى عَلَيْهِمْ اٰيَاتُ الرَّحْمٰنِ خَرُّوْا سُجَّدًا وَّبُكِيًّا﴾
যখন তাদের নিকট দয়াময়ের আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হতো, তখন তারা ক্রন্দন করতে করতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। (সূরা মারইয়াম- ৫৮)
আহলে কিতাবের সত্যনিষ্ঠ লোকেরা কুরআন শুনে কান্না করত :
﴿وَاِذَا سَمِعُوْا مَاۤ اُنْزِلَ اِلَى الرَّسُوْلِ تَرٰۤى اَعْيُنَهُمْ تَفِيْضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوْا مِنَ الْحَقِّۚ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِيْنَ ‐ وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ اَنْ يُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِيْنَ﴾
রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে যখন তারা তা শ্রবণ করে, তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে দেখবে। তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের তালিকাভুক্ত করো। আর আমাদের জন্য এমন কী কারণ থাকতে পারে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তার প্রতি ঈমান আনয়ন করব না? হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যাশা করি যে, আপনি আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। (সূরা মায়েদা- ৮৩, ৮৪)
হিজরতের কয়েক বৎসর পর একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ৭০ জন লোক রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে কুরআনের বাণী শুনে অতিশয় মুগ্ধ হয়ে কান্না-কাটি করতে থাকে এবং চোখের পানি ফেলতে থাকে। তখন তাদের মুখে ‘‘রববানা- আ-মান্না’’ (হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনলাম) উচ্চারিত হতে থাকে। উক্ত আয়াতে তাদের অবস্থার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত :
﴿قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا﴾
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতিপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
মূসা (আঃ) এর ভাষণ শুনে তাঁর উম্মতের লোকেরা কান্না করত :
عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ ... قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مُوْسٰى رَسُوْلُ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ ذَكَّرَ النَّاسَ يَوْمًا حَتّٰى إِذَا فَاضَتِ الْعُيُوْنُ وَرَقَّتِ الْقُلُوْبُ
সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,... রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, একদিন আল্লাহর রাসূল মূসা (আঃ) লোকদের মধ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তৃতার প্রভাবে লোকদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। অতঃপর তারা ভীষণ কান্নাকাটি করল। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭২৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১১৫৭।]
কুরআন মাজীদ হচ্ছে আল্লাহর বাণী। এ কুরআনের মধ্যে পৃথিবীর সকল জ্ঞান নিহিত রয়েছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে ইসলামের বিধিবিধান তেমন রয়েছে বিভিন্ন ইতিহাস, আল্লাহর রহমতের বর্ণনা এবং আরো রয়েছে কিয়ামত ও জাহন্নামের বর্ণনা। এজন্য যে ব্যক্তি কুরআনের মর্ম বুঝে তা পাঠ করবে তার চোখ দিয়ে পানি বের হওয়া স্বাভাবিক। কুরআন পাঠ করে অশ্রু বিসর্জন করা কুরআনের একটি দাবি। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন পাঠ করে কান্না করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন,
﴿اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ – - وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ – - وَاَنْتُمْ سَامِدُوْنَ﴾
তোমরা কি এর (কুরআনের) কথায় বিস্ময় বোধ করছ? হাসাহাসি করছ অথচ কাঁদছ না? তোমরা তো বড়ই উদাসীন। (সূরা নাজম, ৫৯-৬১)
প্রকৃত আলেমগণ আল্লাহর বাণী শুনে কাঁদেন :
মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ তা‘আলাকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে জ্ঞানীরা। তাদের সামনে যখন আল্লাহর নিদর্শনাবলি উপস্থাপন করা হয় তখন তারা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, এমনকি সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,
﴿قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا﴾
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতিপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হতো, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
মুমিনদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয় :
যখন কারো হৃদয় কম্পিত হয়, তখন তার মধ্যে কান্নার ভাব দেখা দেয়। মুমিনদের সামনে যখন আল্লাহ তা‘আলার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ﴾
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; (তারাই প্রকৃত মুমিন।) (সূরা আনফাল- ২, ৩)
﴿اَفَمِنْ هٰذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ – - وَتَضْحَكُوْنَ وَلَا تَبْكُوْنَ – - وَاَنْتُمْ سَامِدُوْنَ﴾
তোমরা কি এর (কুরআনের) কথায় বিস্ময় বোধ করছ? হাসাহাসি করছ অথচ কাঁদছ না? তোমরা তো বড়ই উদাসীন। (সূরা নাজম, ৫৯-৬১)
প্রকৃত আলেমগণ আল্লাহর বাণী শুনে কাঁদেন :
মানুষের মধ্য থেকে আল্লাহ তা‘আলাকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে জ্ঞানীরা। তাদের সামনে যখন আল্লাহর নিদর্শনাবলি উপস্থাপন করা হয় তখন তারা আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, এমনকি সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,
﴿قُلْ اٰمِنُوْا بِهٖۤ اَوْ لَا تُؤْمِنُوْاؕ اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا ‐ - وَيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا﴾
বলো, তোমরা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর বা না কর, নিশ্চয় ইতিপূর্বে যাদেরকে এর জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখনই এটা পাঠ করা হতো, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
মুমিনদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয় :
যখন কারো হৃদয় কম্পিত হয়, তখন তার মধ্যে কান্নার ভাব দেখা দেয়। মুমিনদের সামনে যখন আল্লাহ তা‘আলার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَاِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ اٰيَاتُهٗ زَادَتْهُمْ اِيْمَانًا وَّعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ﴾
নিশ্চয় মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে কম্পিত হয় এবং তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়। আর তারা তাদের প্রতিপালকের ওপরই নির্ভর করে থাকে। যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে; (তারাই প্রকৃত মুমিন।) (সূরা আনফাল- ২, ৩)
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ أَنَّه قَالَ لِجِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَا لِيْ لَمْ أَرَ مِيْكَائِيْلَ ضَاحِكًا قَطُّ قَالَ مَا ضَحِكَ مِيْكَائِيْلُ مُنْذُ خُلِقَتِ النَّارُ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা জিবরাঈল (আঃ)-কে বললেন, মিকাঈলকে কখনো হাসতে দেখি না কেন? তখন তিনি বললেন, যখন থেকে জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে তখন থেকে মিকাঈল হাসেন নাই। [হাসান : মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৬৬৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৫১১।]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِيْ مَرَرْتُ عَلٰى جِبْرِيْلَ فِي الْمَلأِ الأَعْلٰى كَالْحِلْسِ الْبَالِيْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মিরাজের রাত্রিতে জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে যখন আমি উপরের ফেরেশতাদেরকে অতিক্রম করছিলাম। তখন জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর ভয়ে নিজেকে পুরাতন মোটা রেশমি চাদরে পেঁচিয়ে ফেললেন। [সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৮৯; জামেউল আহাদীস, হা/১৮৮১২।]
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা জিবরাঈল (আঃ)-কে বললেন, মিকাঈলকে কখনো হাসতে দেখি না কেন? তখন তিনি বললেন, যখন থেকে জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে তখন থেকে মিকাঈল হাসেন নাই। [হাসান : মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৩৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৬৬৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৫১১।]
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِيْ مَرَرْتُ عَلٰى جِبْرِيْلَ فِي الْمَلأِ الأَعْلٰى كَالْحِلْسِ الْبَالِيْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মিরাজের রাত্রিতে জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে যখন আমি উপরের ফেরেশতাদেরকে অতিক্রম করছিলাম। তখন জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর ভয়ে নিজেকে পুরাতন মোটা রেশমি চাদরে পেঁচিয়ে ফেললেন। [সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৮৯; জামেউল আহাদীস, হা/১৮৮১২।]
জাহান্নামীরা জাহান্নামে কান্না করবে :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِنَّ أَهْلَ النَّارِ لَيَبْكُوْنَ حَتّٰى لَوْ أُجْرِيَتِ السُّفُنُ فِيْ دُمُوْعِهِمْ لَجَرَتْ وَأَنَّهُمْ لَيَبْكُوْنَ الدَّمَ يَعْنِيْ مَكَانَ الدَّمْعِ
আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, নিশ্চয় জাহান্নামীরা কাঁদতে থাকবে; এমনকি যদি তাদের চোখের অশ্রুতে নৌকা প্রবাহিত করা হয় তাহলে তা প্রবাহিত হবে। আর কান্না করতে করতে তাদের চোখ থেকে অশ্রুর পরিবর্তে রক্ত পড়তে থাকবে। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৫২৬৮; কানযুল উম্মাল, হা/৩৯৫২৭।]
পাপী ব্যক্তি কবরে চিৎকার করবে :
عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : اَلْعَبْدُ إِذَا وُضِعَ فِيْ قَبْرِه وَتُوُلِّيَ وَذَهَبَ أَصْحَابُه حَتّٰى إِنَّه لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَأَقْعَدَاهُ فَيَقُوْلَانِ لَه : مَا كُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هٰذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ ؟ فَيَقُوْلُ : أَشْهَدُ أَنَّه عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُه . فَيُقَالُ : اُنْظُرْ إِلٰى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ أَبْدَلَكَ اللهُ بِه مَقْعَدًا مِّنَ الْجَنَّةِ قَالَ النَّبِيُّ : فَيَرَاهُمَا جَمِيْعًا وَأَمَّا الْكَافِرُ أَوِ الْمُنَافِقُ فَيَقُوْلُ : لَا أَدْرِيْ كُنْتُ أَقُوْلُ مَا يَقُوْلُ النَّاسُ فَيُقَالُ : لَا دَرَيْتَ وَلَا تَلَيْتَ ثُمَّ يُضْرَبُ بِمِطْرَقَةٍ مِّنْ حَدِيْدٍ ضَرْبَةً بَيْنَ أُذُنَيْهِ فَيَصِيْحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيْهِ إِلَّا الثَّقَلَيْنِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মানুষকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার বন্ধু-বান্ধব সেখান থেকে ফিরে চলে যায়, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে বসান। তারপর তারা তাকে মুহাম্মাদ ﷺ-কে দেখিয়ে বলেন, এ লোকটি সম্পর্কে তুমি কী বলতে? সে তখন বলবে, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, তিনি আল্লাহর দাস ও তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার জায়গাটি দেখে নাও। সেটির পরিবর্তে আল্লাহ জান্নাতে তোমাকে একটি জায়গা দান করেছেন। নবী ﷺ বলেন, তারপর স্থান দু’টি সে একসঙ্গে প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তুত্মুত্মুত কাফির ও মুনাফিক বলবে, আমি জানি না; অন্যান্য মানুষর যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জানতেও না পড়তেও না। এরপর লোহার একটি মুগুর দিয়ে তার উভয় কানের মাঝখানে এমন জোরে আঘাত করা হবে যে, সে ভয়ানক চিৎকার করতে থাকবে। জিন ও মানুষ ব্যতীত নিকটবর্তী সবাই তার এ কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবে। [আধুনিক প্রকা. ১২৫০, ই. ফাউন্ডেশন ১২৫৭**]
জাহান্নামীরা জাহান্নামে চিৎকার করতে থাকবে :
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضٰى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوْا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَا كَذٰلِكَ نَجْزِيْ كُلَّ كَفُوْرٍ ‐ وَهُمْ يَصْطَرِخُوْنَ فِيْهَا رَبَّنَاۤ أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا يَتَذَكَّرُ فِيْهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ النَّذِيْرُ فَذُوْقُوْا فَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ نَّصِيْرٍ﴾
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের ব্যাপারে মৃত্যুর ফায়সালা হবে না আবার তাদের শাস্তিও হালকা করা হবে না। প্রত্যেক কাফিরকে আমি এভাবেই শাস্তি দেব। জাহান্নামে তারা চিৎকার দিতে থাকবে আর বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এর থেকে বের করুন। এবার আমরা সৎকাজ করব। আগে যা পাপ করেছি এবার তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদেরকে যে জীবন দিয়েছিলাম তাই যথেষ্ট ছিল; আর তোমাদের কাছে ভীতি প্রদর্শনকারীও এসেছিল। অতএব তোমরা শাস্তি ভোগ করো। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা ফাতির : ৩৬, ৩৭)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ قَيْسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِنَّ أَهْلَ النَّارِ لَيَبْكُوْنَ حَتّٰى لَوْ أُجْرِيَتِ السُّفُنُ فِيْ دُمُوْعِهِمْ لَجَرَتْ وَأَنَّهُمْ لَيَبْكُوْنَ الدَّمَ يَعْنِيْ مَكَانَ الدَّمْعِ
আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, নিশ্চয় জাহান্নামীরা কাঁদতে থাকবে; এমনকি যদি তাদের চোখের অশ্রুতে নৌকা প্রবাহিত করা হয় তাহলে তা প্রবাহিত হবে। আর কান্না করতে করতে তাদের চোখ থেকে অশ্রুর পরিবর্তে রক্ত পড়তে থাকবে। [মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৮৭৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৫২৬৮; কানযুল উম্মাল, হা/৩৯৫২৭।]
পাপী ব্যক্তি কবরে চিৎকার করবে :
عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : اَلْعَبْدُ إِذَا وُضِعَ فِيْ قَبْرِه وَتُوُلِّيَ وَذَهَبَ أَصْحَابُه حَتّٰى إِنَّه لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَأَقْعَدَاهُ فَيَقُوْلَانِ لَه : مَا كُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هٰذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ ؟ فَيَقُوْلُ : أَشْهَدُ أَنَّه عَبْدُ اللهِ وَرَسُوْلُه . فَيُقَالُ : اُنْظُرْ إِلٰى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ أَبْدَلَكَ اللهُ بِه مَقْعَدًا مِّنَ الْجَنَّةِ قَالَ النَّبِيُّ : فَيَرَاهُمَا جَمِيْعًا وَأَمَّا الْكَافِرُ أَوِ الْمُنَافِقُ فَيَقُوْلُ : لَا أَدْرِيْ كُنْتُ أَقُوْلُ مَا يَقُوْلُ النَّاسُ فَيُقَالُ : لَا دَرَيْتَ وَلَا تَلَيْتَ ثُمَّ يُضْرَبُ بِمِطْرَقَةٍ مِّنْ حَدِيْدٍ ضَرْبَةً بَيْنَ أُذُنَيْهِ فَيَصِيْحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيْهِ إِلَّا الثَّقَلَيْنِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, মানুষকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তার বন্ধু-বান্ধব সেখান থেকে ফিরে চলে যায়, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে বসান। তারপর তারা তাকে মুহাম্মাদ ﷺ-কে দেখিয়ে বলেন, এ লোকটি সম্পর্কে তুমি কী বলতে? সে তখন বলবে, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, তিনি আল্লাহর দাস ও তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার জায়গাটি দেখে নাও। সেটির পরিবর্তে আল্লাহ জান্নাতে তোমাকে একটি জায়গা দান করেছেন। নবী ﷺ বলেন, তারপর স্থান দু’টি সে একসঙ্গে প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তুত্মুত্মুত কাফির ও মুনাফিক বলবে, আমি জানি না; অন্যান্য মানুষর যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি জানতেও না পড়তেও না। এরপর লোহার একটি মুগুর দিয়ে তার উভয় কানের মাঝখানে এমন জোরে আঘাত করা হবে যে, সে ভয়ানক চিৎকার করতে থাকবে। জিন ও মানুষ ব্যতীত নিকটবর্তী সবাই তার এ কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবে। [আধুনিক প্রকা. ১২৫০, ই. ফাউন্ডেশন ১২৫৭**]
জাহান্নামীরা জাহান্নামে চিৎকার করতে থাকবে :
﴿وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضٰى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوْا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِّنْ عَذَابِهَا كَذٰلِكَ نَجْزِيْ كُلَّ كَفُوْرٍ ‐ وَهُمْ يَصْطَرِخُوْنَ فِيْهَا رَبَّنَاۤ أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِيْ كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا يَتَذَكَّرُ فِيْهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ النَّذِيْرُ فَذُوْقُوْا فَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ نَّصِيْرٍ﴾
যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের ব্যাপারে মৃত্যুর ফায়সালা হবে না আবার তাদের শাস্তিও হালকা করা হবে না। প্রত্যেক কাফিরকে আমি এভাবেই শাস্তি দেব। জাহান্নামে তারা চিৎকার দিতে থাকবে আর বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এর থেকে বের করুন। এবার আমরা সৎকাজ করব। আগে যা পাপ করেছি এবার তা করব না। আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদেরকে যে জীবন দিয়েছিলাম তাই যথেষ্ট ছিল; আর তোমাদের কাছে ভীতি প্রদর্শনকারীও এসেছিল। অতএব তোমরা শাস্তি ভোগ করো। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা ফাতির : ৩৬, ৩৭)
ধ্বংস প্রাপ্ত জাতির জন্য :
পৃথিবীতে যেসব জাতি ধ্বংস হয়েছে, তাদের কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করা বৈধ নয়। কেননা তারা আল্লাহর আযাবে ধ্বংস হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿كَمْ تَرَكُوْا مِنْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَزُرُوْعٍ وَّمَقَامٍ كَرِيْمٍ ‐ وَنَعْمَةٍ كَانُوْا فِيْهَا فَاكِهِيْنَ ‐ كَذٰلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا اٰخَرِيْنَ ‐ فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَآءُ وَالْاَرْضُ وَمَا كَانُوْا مُنْظَرِيْنَ﴾
তারা ছেড়ে গিয়েছিল কত উদ্যান ও কত ঝর্ণাধারা, কত শস্যক্ষেত্র ও সুবিশাল প্রাসাদ এবং কতই না বিলাসবহুল উপকরণ, যা তাদেরকে আনন্দ দিত। অনুরূপভাবে আমি অন্য এক সম্প্রদায়কে এর উত্তরাধিকারী বানালাম। অতঃপর আকাশ এবং পৃথিবী কেউই তাদের জন্য অশ্রুপাত করেনি এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হয়নি। (সূরা দুখান : ২৫- ২৯)
মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন করা :
মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন করা কোনভাবেই বৈধ নয়। এটা জাহেলী যুগের নারীদের অভ্যাস। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর থেকে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ بَايَعْنَا النَّبِيَّ فَقَرَأَ عَلَيْنَا ﴿أَنْ لَّا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْئًا﴾ وَنَهَانَا عَنْ النِّيَاحَةِ فَقَبَضَتِ امْرَأَةٌ مِنَّا يَدَهَا فَقَالَتْ فُلَانَةُ أَسْعَدَتْنِيْ وَأَنَا أُرِيْدُ أَنْ أَجْزِيَهَا فَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا فَذَهَبَتْ ثُمَّ رَجَعَتْ فَمَا وَفَتِ امْرَأَةٌ إِلَّا أُمُّ سُلَيْمٍ وَأُمُّ الْعَلَاءِ وَابْنَةُ أَبِيْ سَبْرَةَ امْرَأَةُ مُعَاذٍ
উম্মে আতীয়্যাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট বাইআত নিলাম এবং তিনি আমাদের সামনে ‘‘তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না’’- এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন; আর তিনি আমাদেরকে (মৃত ব্যক্তির জন্য) উচ্চকণ্ঠে ক্রন্দন ও বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন। তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক স্বীয় হাত চেপে ধরে বলল, অমুক স্ত্রীলোক (বিলাপ করে কান্নাকাটি করার ব্যাপারে) আমাকে সহায়তা করে এবং আমি তার প্রতিদান দিতে চাই। জবাবে তখন নবী ﷺ কিছুই বললেন না। সুতরাং উক্ত স্ত্রীলোকটি চলে গেল এবং পুনরায় ফিরে এসে নবী ﷺ এর হাতে বাইআত প্রদান করল। কিন্তুত্মুত্মুত উম্মে সুলাইম, উম্মে আলা, আবু সাবরার কন্যা মু‘আয এর স্ত্রী ব্যতীত কেউ তার অঙ্গীকার পূর্ণ করেনি। [সহীহ বুখারী, হা/৭২১৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৩৫৫।]
যে ব্যক্তি (শোকার্ত হয়ে) বুকের জামা ছিঁড়ে ফেলে সে আমাদের দলভুক্ত নয় :
عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنْ النَّبِيِّ قَالَ لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُوْدَ وَشَقَّ الْجُيُوْبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলী যুগের মতো উচ্চ আওয়াজে বিলাপ করে। [সহীহ বুখারী, হা/১২৯৭-৯৮, ৩৫১৯; সহীহ মুসলিম, হা/১০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৫৮; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫২৫২; নাসাঈ, হা/১৮৫৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৩৬৬; মিশকাত, হা/১৭২৫।]
অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে কান্না করা :
কোন অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে ক্রন্দন করা বৈধ নয়। যেমনভাবে ইউসুফ (আঃ) এর ব্যাপারে তার ভাইয়েরা পিতার সাথে মিথ্যা ক্রন্দন করেছিল। কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿وَجَآءُوْاۤ اَبَاهُمْ عِشَآءً يَّبْكُوْنَ ‐ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَاۤ اِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوْسُفَ عِنْدَ مَتَاعِنَا فَاَكَلَهُ الذِّئْبُۚ وَمَاۤ اَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَّنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِيْنَ – وَجَآءُوْا عَلٰى قَمِيْصِهٖ بِدَمٍ كَذِبٍ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًاؕ فَصَبْرٌ جَمِيْلٌؕ وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلٰى مَا تَصِفُوْنَ﴾
তারা রাত্রির প্রথম প্রহরে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার নিকট আসল। তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমরা দৌঁড়ের প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের নিকট রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর নেকড়ে বাঘ তাঁকে খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী হয়ে থাকি। তারা তাঁর জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। তিনি বললেন, না বরং তোমরা নিজেরা তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে নিয়েছ। সুতরাং (এখন আমার জন্য) পূর্ণ ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল। (সূরা ইউসুফ : ১৬ - ১৮)
পৃথিবীতে যেসব জাতি ধ্বংস হয়েছে, তাদের কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করা বৈধ নয়। কেননা তারা আল্লাহর আযাবে ধ্বংস হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿كَمْ تَرَكُوْا مِنْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ وَزُرُوْعٍ وَّمَقَامٍ كَرِيْمٍ ‐ وَنَعْمَةٍ كَانُوْا فِيْهَا فَاكِهِيْنَ ‐ كَذٰلِكَ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا اٰخَرِيْنَ ‐ فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَآءُ وَالْاَرْضُ وَمَا كَانُوْا مُنْظَرِيْنَ﴾
তারা ছেড়ে গিয়েছিল কত উদ্যান ও কত ঝর্ণাধারা, কত শস্যক্ষেত্র ও সুবিশাল প্রাসাদ এবং কতই না বিলাসবহুল উপকরণ, যা তাদেরকে আনন্দ দিত। অনুরূপভাবে আমি অন্য এক সম্প্রদায়কে এর উত্তরাধিকারী বানালাম। অতঃপর আকাশ এবং পৃথিবী কেউই তাদের জন্য অশ্রুপাত করেনি এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হয়নি। (সূরা দুখান : ২৫- ২৯)
মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন করা :
মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন করা কোনভাবেই বৈধ নয়। এটা জাহেলী যুগের নারীদের অভ্যাস। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর থেকে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ بَايَعْنَا النَّبِيَّ فَقَرَأَ عَلَيْنَا ﴿أَنْ لَّا يُشْرِكْنَ بِاللهِ شَيْئًا﴾ وَنَهَانَا عَنْ النِّيَاحَةِ فَقَبَضَتِ امْرَأَةٌ مِنَّا يَدَهَا فَقَالَتْ فُلَانَةُ أَسْعَدَتْنِيْ وَأَنَا أُرِيْدُ أَنْ أَجْزِيَهَا فَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا فَذَهَبَتْ ثُمَّ رَجَعَتْ فَمَا وَفَتِ امْرَأَةٌ إِلَّا أُمُّ سُلَيْمٍ وَأُمُّ الْعَلَاءِ وَابْنَةُ أَبِيْ سَبْرَةَ امْرَأَةُ مُعَاذٍ
উম্মে আতীয়্যাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট বাইআত নিলাম এবং তিনি আমাদের সামনে ‘‘তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না’’- এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন; আর তিনি আমাদেরকে (মৃত ব্যক্তির জন্য) উচ্চকণ্ঠে ক্রন্দন ও বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন। তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক স্বীয় হাত চেপে ধরে বলল, অমুক স্ত্রীলোক (বিলাপ করে কান্নাকাটি করার ব্যাপারে) আমাকে সহায়তা করে এবং আমি তার প্রতিদান দিতে চাই। জবাবে তখন নবী ﷺ কিছুই বললেন না। সুতরাং উক্ত স্ত্রীলোকটি চলে গেল এবং পুনরায় ফিরে এসে নবী ﷺ এর হাতে বাইআত প্রদান করল। কিন্তুত্মুত্মুত উম্মে সুলাইম, উম্মে আলা, আবু সাবরার কন্যা মু‘আয এর স্ত্রী ব্যতীত কেউ তার অঙ্গীকার পূর্ণ করেনি। [সহীহ বুখারী, হা/৭২১৫; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৩৫৫।]
যে ব্যক্তি (শোকার্ত হয়ে) বুকের জামা ছিঁড়ে ফেলে সে আমাদের দলভুক্ত নয় :
عَنْ عَبْدِ اللهِ عَنْ النَّبِيِّ قَالَ لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُوْدَ وَشَقَّ الْجُيُوْبَ وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, বুকের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলী যুগের মতো উচ্চ আওয়াজে বিলাপ করে। [সহীহ বুখারী, হা/১২৯৭-৯৮, ৩৫১৯; সহীহ মুসলিম, হা/১০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৬৫৮; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৫২৫২; নাসাঈ, হা/১৮৫৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৩৬৬; মিশকাত, হা/১৭২৫।]
অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে কান্না করা :
কোন অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে ক্রন্দন করা বৈধ নয়। যেমনভাবে ইউসুফ (আঃ) এর ব্যাপারে তার ভাইয়েরা পিতার সাথে মিথ্যা ক্রন্দন করেছিল। কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿وَجَآءُوْاۤ اَبَاهُمْ عِشَآءً يَّبْكُوْنَ ‐ قَالُوْا يَاۤ اَبَانَاۤ اِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوْسُفَ عِنْدَ مَتَاعِنَا فَاَكَلَهُ الذِّئْبُۚ وَمَاۤ اَنْتَ بِمُؤْمِنٍ لَّنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِيْنَ – وَجَآءُوْا عَلٰى قَمِيْصِهٖ بِدَمٍ كَذِبٍ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ اَنْفُسُكُمْ اَمْرًاؕ فَصَبْرٌ جَمِيْلٌؕ وَاللهُ الْمُسْتَعَانُ عَلٰى مَا تَصِفُوْنَ﴾
তারা রাত্রির প্রথম প্রহরে কাঁদতে কাঁদতে তাদের পিতার নিকট আসল। তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমরা দৌঁড়ের প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের মালপত্রের নিকট রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর নেকড়ে বাঘ তাঁকে খেয়ে ফেলেছে; কিন্তু আপনি তো আমাদেরকে বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী হয়ে থাকি। তারা তাঁর জামায় মিথ্যা রক্ত লেপন করে এনেছিল। তিনি বললেন, না বরং তোমরা নিজেরা তোমাদের জন্য একটি কাহিনী সাজিয়ে নিয়েছ। সুতরাং (এখন আমার জন্য) পূর্ণ ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয়, তোমরা যা বলছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যস্থল। (সূরা ইউসুফ : ১৬ - ১৮)
বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম (রহ.) তাঁর লিখিত ‘‘যাদুল মা‘আদ’’ গ্রন্থে কান্নাকে কয়েকটি প্রকারে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ভয়ের কারণে কাঁদা :
কিছু কান্না আছে, যা ভয়ের কারণে হয়ে থাকে। যখন মানুষ কোন কারণে অধিক ভয় পায় তখন তারা কেঁদে দেয়। যেমন- আল্লাহর শাস্তির ভয়, মরণের ভয়, কঠিন বিপদের ভয় ইত্যাদি।
দয়া ও নম্রতার কারণে কাঁদা :
কিছু কান্না আছে, যা অধিক দয়া ও নম্রতার কারণে মানুষের মনের ভেতর থেকে বের হয়ে থাকে। যেমন- সন্তানের কষ্ট দেখে পিতা-মাতার কান্না, কোন মুসলিম ভাইয়ের কষ্ট দেখে অপর মুসলিম ভাইয়ের কান্না ইত্যাদি।
ভালোবাসার জন্য কাঁদা :
কিছু কান্না রয়েছে, যা মানুষ ভালোবাসা প্রদর্শন করণার্থে করে থাকে। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনে সাহাবীদের কান্না।
আনন্দের কারণে কাঁদা :
কিছু কিছু মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়েও কেঁদে ফেলে। যেমন- কঠিন বিপদের অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য পেয়ে বান্দার কান্না, হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার খুশিতে কান্না ইত্যাদি।
আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে কাঁদা :
অনেক সময় মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণেও কেঁদে থাকে। আর এটা প্রায় মানুষের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
চিন্তার কারণে কাঁদা :
কিছু কিছু মানুষ অধিক চিন্তার কারণেও কেঁদে থাকে। যেমন- প্রিয় মানুষের স্মৃতির কথা চিন্তা করে কান্না, আসন্ন বিপদাপদের কথা চিন্তা করে কান্না ইত্যাদি।
দুর্বলতার কারণে কাঁদা :
দুর্বলতা মানুষকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দেয়। এক সময় তা কান্নায় রূপ নেয়। যেমন- মানসিক চাপের কারণে কান্না, আর্থিক দুর্বলতার কারণে কান্না, ক্ষমতার দুর্বলতার কারণে কান্না ইত্যাদি।
অর্থপ্রাপ্তির জন্য কাঁদা :
এরূপ কান্না হচ্ছে কৃত্রিম। কিছু কিছু মানুষ অর্থ পাওয়ার উদ্দেশ্যে কান্নার ভান করে থাকে। যেমন- ভিক্ষাবৃত্তির জন্য কান্না, অভিনয় করে অর্থপ্রাপ্তির জন্য কান্না, কান্নার জন্য ভাড়াটিয়া মহিলার কান্না ইত্যাদি।
দেখাদেখি কাঁদা :
কিছু কিছু মানুষ রয়েছে, যারা অন্যের কান্না দেখলেই কেঁদে দেয়; অথচ তারা নিজেরা জানে না যে, কী কারণে সে কান্না করছে।
ভয়ের কারণে কাঁদা :
কিছু কান্না আছে, যা ভয়ের কারণে হয়ে থাকে। যখন মানুষ কোন কারণে অধিক ভয় পায় তখন তারা কেঁদে দেয়। যেমন- আল্লাহর শাস্তির ভয়, মরণের ভয়, কঠিন বিপদের ভয় ইত্যাদি।
দয়া ও নম্রতার কারণে কাঁদা :
কিছু কান্না আছে, যা অধিক দয়া ও নম্রতার কারণে মানুষের মনের ভেতর থেকে বের হয়ে থাকে। যেমন- সন্তানের কষ্ট দেখে পিতা-মাতার কান্না, কোন মুসলিম ভাইয়ের কষ্ট দেখে অপর মুসলিম ভাইয়ের কান্না ইত্যাদি।
ভালোবাসার জন্য কাঁদা :
কিছু কান্না রয়েছে, যা মানুষ ভালোবাসা প্রদর্শন করণার্থে করে থাকে। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনে সাহাবীদের কান্না।
আনন্দের কারণে কাঁদা :
কিছু কিছু মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়েও কেঁদে ফেলে। যেমন- কঠিন বিপদের অবস্থায় আল্লাহর সাহায্য পেয়ে বান্দার কান্না, হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার খুশিতে কান্না ইত্যাদি।
আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে কাঁদা :
অনেক সময় মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণেও কেঁদে থাকে। আর এটা প্রায় মানুষের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে।
চিন্তার কারণে কাঁদা :
কিছু কিছু মানুষ অধিক চিন্তার কারণেও কেঁদে থাকে। যেমন- প্রিয় মানুষের স্মৃতির কথা চিন্তা করে কান্না, আসন্ন বিপদাপদের কথা চিন্তা করে কান্না ইত্যাদি।
দুর্বলতার কারণে কাঁদা :
দুর্বলতা মানুষকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দেয়। এক সময় তা কান্নায় রূপ নেয়। যেমন- মানসিক চাপের কারণে কান্না, আর্থিক দুর্বলতার কারণে কান্না, ক্ষমতার দুর্বলতার কারণে কান্না ইত্যাদি।
অর্থপ্রাপ্তির জন্য কাঁদা :
এরূপ কান্না হচ্ছে কৃত্রিম। কিছু কিছু মানুষ অর্থ পাওয়ার উদ্দেশ্যে কান্নার ভান করে থাকে। যেমন- ভিক্ষাবৃত্তির জন্য কান্না, অভিনয় করে অর্থপ্রাপ্তির জন্য কান্না, কান্নার জন্য ভাড়াটিয়া মহিলার কান্না ইত্যাদি।
দেখাদেখি কাঁদা :
কিছু কিছু মানুষ রয়েছে, যারা অন্যের কান্না দেখলেই কেঁদে দেয়; অথচ তারা নিজেরা জানে না যে, কী কারণে সে কান্না করছে।
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করাটাও হচ্ছে একটি বিশেষ নিয়ামত। তবে কিছু কারণ রয়েছে, যা মানুষকে কান্না থেকে বিরত রাখে। নিম্নে উক্ত বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. বেশি কথা বলা :
এ কথা স্পষ্ট যে, বেশি কথা বলা মূর্খতার পরিচায়ক। কেননা মূর্খরা আল্লাহ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে না এবং তাকে ভয় করে না। সুতরাং তাদের পক্ষে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করাও সম্ভব হয় না। আর এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা অতিরিক্ত কথা বলাকে অপছন্দ করেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ الشَّعْبِيِّ حَدَّثَنِيْ كَاتِبُ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ كَتَبَ مُعَاوِيَةُ إِلَى الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنْ اكْتُبْ إِلَيَّ بِشَيْءٍ سَمِعْتَهُ مِنْ النَّبِيِّ فَكَتَبَ إِلَيْهِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلَاثًا قِيْلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ
শা‘বী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে মুগীরা ইবনে শু‘বার লেখক হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার মুয়াবিয়া (রাঃ) মুগীরা ইবনে শু‘বাকে পত্র লিখলেন যে, আমাকে এমন কিছু (কথা) লিখে প্রেরণ করো যা তুমি নবী ﷺ হতে শুনেছ। তখন তিনি (মুগীরা) তাকে (মুয়াবিয়াকে) লিখলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি কাজ পছন্দ করেন না। (১) অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, (২) সম্পদ নষ্ট করা, (৩) এবং বেশি বেশি প্রশ্ন করা। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮০; বায়হাকী, হা/১১৬৭৪; সুনানে দারেমী, হা/২৮০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৪৭; মিশকাত, হা/৪৯১৫।]
২. বেশি বেশি হাসাহাসি করা :
মানুষ অনেকটাই হাসিপ্রবণ। হাসাহাসির মধ্যে ডুবে থাকতে তারা বেশি পছন্দ করে। কিন্তুত্মুত্মুত্মু অতিরিক্ত হাসাহাসি করা তাদের জন্য ক্ষতির বড় কারণ। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে বেশি হাসাহাসি করা থেকে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَا تُكْثِرُوا الضِّحْكَ فَإِنَّ الضِّحْكَ تُمِيْتُ الْقَلْبَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বেশি হাসাহাসি করো না। কেননা অতিরিক্ত হাসাহাসি অন্তরকে মেরে ফেলে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৩; তিরমিযী, হা/২৩০৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৫৪৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬২৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০৮১; মিশকাত, হা/৫১৭১।]
অত্র হাদীসে বর্ণিত অন্তর মরে যাওয়া বলতে ঐ অন্তরকে বুঝানো হয়েছে, যা সর্বদা কঠোরতা অবলম্বন করে এবং যে অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না। আর যে অন্তর এরূপ পর্যায়ে চলে যায়, সে অন্তরে কখনো কান্না আসতে পারে না।
একদা হাসান এক যুবকের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সে সময় ঐ যুবক মজলিসে বসে হাসাহাসির মধ্যে মগ্ন ছিল। তখন তিনি তাকে বললেন, হে যুবক! তুমি কি পুলসিরাত পার হয়েছ? সে বলল, না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান যে, তোমার গমন জান্নাতের দিকে হচ্ছে নাকি জাহান্নামের দিকে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন, তাহলে এই হাসি কিসের? এরপর থেকে ঐ যুবককে আর হাসতে দেখা যায়নি। [আবু তারেক, আল-বুকা মিন খাসিয়াতিল্লাহ, পৃ: ১৪।]
৩. বেশি আহার করা :
আহার করাটা হচ্ছে মানুষের জীবনধারণের প্রধান মাধ্যম। তবে অতিরিক্ত আহার করাটা ক্ষতির অন্যতম কারণ। কেননা এরূপ আহার করলে মানুষ ক্রমেই এর দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তার কাছে ঈমান ও ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। বিশর ইবনে হারিস (রহ.) বলেন- দুটি অভ্যাস আছে, যা অন্তরকে কঠিন করে দেয়। একটি হচ্ছে, বেশি কথা বলা। অপরটি হচ্ছে বেশি আহার করা। [আবু তারেক, আল-বুকা মিন খাসিয়াতিল্লাহ, পৃ: ১৪।]
হাদীসে এসেছে,
عَنْ مَيْمُوْنَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ، وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ .
মায়মূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি এক নাড়িতে আহার করে। আর কাফির সাত নাড়িতে আহার করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৪৭; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৯৩; তিরমিযী, হা/১৮১৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১৮।]
মুহাদ্দীসগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, মুমিন ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ কম থাকে। এজন্য সে অল্প খেয়েও তৃপ্তি লাভ করে। আর কাফির ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ বেশি থাকে। এজন্য সে বেশি খেলেও তৃপ্ত হয় না।
৪. বেশি পাপ করা :
পাপ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। যারা নিয়মিত পাপ কাজ করে থাকে, তাদের অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়, এমনকি সেটা তাদের অন্তর ছেয়ে ফেলে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا أَخْطَأَ خَطِيْئَةً نُكِتَتْ فِيْ قَلْبِهٖ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فَإِذَا هُوَ نَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ وتَابَ سَقَلَ قَلْبُه وَإِنْ عَادَ زِيْدَ فِيْهَا حَتّٰى تَعْلُوْ قَلْبُه وَهُوَ الرَّانُ الَّذِيْ ذَكَرَ اللهُ ﴿ كَلَّا بَلْ رَانَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ﴾
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বান্দা যখন কোন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যখন সে তা হতে বিরত হয়, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তখন তার অন্তর খালি হয়। কিন্তুত্মুত্মুত যদি সে আবার পাপ করে তাহলে ঐ দাগ আরো বাড়তে থাকে। এমনকি ঐ দাগে তার অন্তর ছেয়ে যায়। আর এটাই হচ্ছে সেই দাগ যার কথা কুরআনের এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সাবধান! তারা যে পাপ অর্জন করেছে তার ফলে তাদের অন্তরে মরিচা ধরে গেছে’’ (সূরা মুতাফফিফীন- ১৪)। [তিরমিযী, হা/৩৩৩৪।]
মূলত যেসব অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়, সেসব অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না। বরং সেসব অন্তর সর্বদা আল্লাহর অবাধ্যতায় মত্ত থাকে। তাই এসব অন্তরও আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে না। এজন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নিজেদের পাপের কারণে বেশি বেশি কান্নাকাটি করতে বলেছেন, যাতে করে আমাদের হৃদয় নরম হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ : قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ ؟ قَالَ أمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانِكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلٰى خَطِيْئَتِكَ
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল ﷺ এর সাথে সাক্ষাতের সময় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নাজাতের পথ কী? তিনি বললেন, তুমি তোমার জিহবাকে আয়ত্তে রাখবে, নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রাখবে এবং তোমার পাপের জন্য কান্নাকাটি করবে। [তিরমিযী, হা/২৪০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৮৮; মিশকাত, হা/৪৮৮৭।]
৫. খারাপ লোকদের সঙ্গী হওয়া :
আল্লাহর ভয়ে কান্না না আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে খারাপ লোকদের সাথে চলাফেরা করা। যারা সর্বদা আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যস্ত থাকে, তারা তাদের বন্ধুকে সেদিকেই আহবান করে। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে এমন লোক কখনো খারাপ লোকদের সঙ্গী হতে পারে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ مُوسٰى عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيْرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيْرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيْحًا خَبِيْثَةً
আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, সৎসঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হলো এমন দু’ব্যক্তির মতো- যার একজন হলো মিশকে আম্বর বহনকারী এবং অন্যজন হলো কামারের হাঁপড় চালনাকারী। মিশকে আম্বরওয়ালা হয় তোমাকে নিজের থেকেই কিছুটা দিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার থেকে কিনে নেবে অথবা তুমি তার থেকে এমনিতেই সুঘ্রাণ লাভ করবে। অপর দিকে কামারের হাঁপড় চালনাকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার থেকে এমনিতেই দুর্গন্ধ পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৬৬০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬১।]
১. বেশি কথা বলা :
এ কথা স্পষ্ট যে, বেশি কথা বলা মূর্খতার পরিচায়ক। কেননা মূর্খরা আল্লাহ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখে না এবং তাকে ভয় করে না। সুতরাং তাদের পক্ষে আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করাও সম্ভব হয় না। আর এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা অতিরিক্ত কথা বলাকে অপছন্দ করেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ الشَّعْبِيِّ حَدَّثَنِيْ كَاتِبُ الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ كَتَبَ مُعَاوِيَةُ إِلَى الْمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنْ اكْتُبْ إِلَيَّ بِشَيْءٍ سَمِعْتَهُ مِنْ النَّبِيِّ فَكَتَبَ إِلَيْهِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلَاثًا قِيْلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ
শা‘বী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে মুগীরা ইবনে শু‘বার লেখক হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার মুয়াবিয়া (রাঃ) মুগীরা ইবনে শু‘বাকে পত্র লিখলেন যে, আমাকে এমন কিছু (কথা) লিখে প্রেরণ করো যা তুমি নবী ﷺ হতে শুনেছ। তখন তিনি (মুগীরা) তাকে (মুয়াবিয়াকে) লিখলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি কাজ পছন্দ করেন না। (১) অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, (২) সম্পদ নষ্ট করা, (৩) এবং বেশি বেশি প্রশ্ন করা। [সহীহ বুখারী, হা/১৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৮০; বায়হাকী, হা/১১৬৭৪; সুনানে দারেমী, হা/২৮০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৪৭; মিশকাত, হা/৪৯১৫।]
২. বেশি বেশি হাসাহাসি করা :
মানুষ অনেকটাই হাসিপ্রবণ। হাসাহাসির মধ্যে ডুবে থাকতে তারা বেশি পছন্দ করে। কিন্তুত্মুত্মুত্মু অতিরিক্ত হাসাহাসি করা তাদের জন্য ক্ষতির বড় কারণ। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে বেশি হাসাহাসি করা থেকে নিষেধ করেছেন। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ لَا تُكْثِرُوا الضِّحْكَ فَإِنَّ الضِّحْكَ تُمِيْتُ الْقَلْبَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমরা বেশি হাসাহাসি করো না। কেননা অতিরিক্ত হাসাহাসি অন্তরকে মেরে ফেলে। [ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯৩; তিরমিযী, হা/২৩০৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৯৫৪৩; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬২৪০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪০৮১; মিশকাত, হা/৫১৭১।]
অত্র হাদীসে বর্ণিত অন্তর মরে যাওয়া বলতে ঐ অন্তরকে বুঝানো হয়েছে, যা সর্বদা কঠোরতা অবলম্বন করে এবং যে অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না। আর যে অন্তর এরূপ পর্যায়ে চলে যায়, সে অন্তরে কখনো কান্না আসতে পারে না।
একদা হাসান এক যুবকের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সে সময় ঐ যুবক মজলিসে বসে হাসাহাসির মধ্যে মগ্ন ছিল। তখন তিনি তাকে বললেন, হে যুবক! তুমি কি পুলসিরাত পার হয়েছ? সে বলল, না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান যে, তোমার গমন জান্নাতের দিকে হচ্ছে নাকি জাহান্নামের দিকে? সে বলল, না। এরপর তিনি বললেন, তাহলে এই হাসি কিসের? এরপর থেকে ঐ যুবককে আর হাসতে দেখা যায়নি। [আবু তারেক, আল-বুকা মিন খাসিয়াতিল্লাহ, পৃ: ১৪।]
৩. বেশি আহার করা :
আহার করাটা হচ্ছে মানুষের জীবনধারণের প্রধান মাধ্যম। তবে অতিরিক্ত আহার করাটা ক্ষতির অন্যতম কারণ। কেননা এরূপ আহার করলে মানুষ ক্রমেই এর দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তার কাছে ঈমান ও ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। বিশর ইবনে হারিস (রহ.) বলেন- দুটি অভ্যাস আছে, যা অন্তরকে কঠিন করে দেয়। একটি হচ্ছে, বেশি কথা বলা। অপরটি হচ্ছে বেশি আহার করা। [আবু তারেক, আল-বুকা মিন খাসিয়াতিল্লাহ, পৃ: ১৪।]
হাদীসে এসেছে,
عَنْ مَيْمُوْنَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : اَلْمُؤْمِنُ يَأْكُلُ فِي مِعًى وَاحِدٍ، وَالْكَافِرُ يَأْكُلُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ .
মায়মূনা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি এক নাড়িতে আহার করে। আর কাফির সাত নাড়িতে আহার করে। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৬৪৭; সহীহ বুখারী, হা/৫৩৯৩; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৯৩; তিরমিযী, হা/১৮১৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৭১৮।]
মুহাদ্দীসগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, মুমিন ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ কম থাকে। এজন্য সে অল্প খেয়েও তৃপ্তি লাভ করে। আর কাফির ব্যক্তির খাবারের প্রতি লোভ বেশি থাকে। এজন্য সে বেশি খেলেও তৃপ্ত হয় না।
৪. বেশি পাপ করা :
পাপ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। যারা নিয়মিত পাপ কাজ করে থাকে, তাদের অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়, এমনকি সেটা তাদের অন্তর ছেয়ে ফেলে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا أَخْطَأَ خَطِيْئَةً نُكِتَتْ فِيْ قَلْبِهٖ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فَإِذَا هُوَ نَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ وتَابَ سَقَلَ قَلْبُه وَإِنْ عَادَ زِيْدَ فِيْهَا حَتّٰى تَعْلُوْ قَلْبُه وَهُوَ الرَّانُ الَّذِيْ ذَكَرَ اللهُ ﴿ كَلَّا بَلْ رَانَ عَلٰى قُلُوْبِهِمْ مَّا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ﴾
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, বান্দা যখন কোন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যখন সে তা হতে বিরত হয়, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে তখন তার অন্তর খালি হয়। কিন্তুত্মুত্মুত যদি সে আবার পাপ করে তাহলে ঐ দাগ আরো বাড়তে থাকে। এমনকি ঐ দাগে তার অন্তর ছেয়ে যায়। আর এটাই হচ্ছে সেই দাগ যার কথা কুরআনের এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সাবধান! তারা যে পাপ অর্জন করেছে তার ফলে তাদের অন্তরে মরিচা ধরে গেছে’’ (সূরা মুতাফফিফীন- ১৪)। [তিরমিযী, হা/৩৩৩৪।]
মূলত যেসব অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়, সেসব অন্তর আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না। বরং সেসব অন্তর সর্বদা আল্লাহর অবাধ্যতায় মত্ত থাকে। তাই এসব অন্তরও আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে না। এজন্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নিজেদের পাপের কারণে বেশি বেশি কান্নাকাটি করতে বলেছেন, যাতে করে আমাদের হৃদয় নরম হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ قَالَ : قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ ؟ قَالَ أمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانِكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلٰى خَطِيْئَتِكَ
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূল ﷺ এর সাথে সাক্ষাতের সময় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! নাজাতের পথ কী? তিনি বললেন, তুমি তোমার জিহবাকে আয়ত্তে রাখবে, নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রাখবে এবং তোমার পাপের জন্য কান্নাকাটি করবে। [তিরমিযী, হা/২৪০৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৮৮; মিশকাত, হা/৪৮৮৭।]
৫. খারাপ লোকদের সঙ্গী হওয়া :
আল্লাহর ভয়ে কান্না না আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে খারাপ লোকদের সাথে চলাফেরা করা। যারা সর্বদা আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যস্ত থাকে, তারা তাদের বন্ধুকে সেদিকেই আহবান করে। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে এমন লোক কখনো খারাপ লোকদের সঙ্গী হতে পারে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ مُوسٰى عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيْرِ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيْرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيْحًا خَبِيْثَةً
আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, সৎসঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হলো এমন দু’ব্যক্তির মতো- যার একজন হলো মিশকে আম্বর বহনকারী এবং অন্যজন হলো কামারের হাঁপড় চালনাকারী। মিশকে আম্বরওয়ালা হয় তোমাকে নিজের থেকেই কিছুটা দিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার থেকে কিনে নেবে অথবা তুমি তার থেকে এমনিতেই সুঘ্রাণ লাভ করবে। অপর দিকে কামারের হাঁপড় চালনাকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার থেকে এমনিতেই দুর্গন্ধ পাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৫৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/৬৮৬০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৬৬০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬১।]
আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে জানা :
আল্লাহর ভয়ে কান্না করার প্রধান উপায় হচ্ছে, আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হওয়া। কেননা যে ব্যক্তি এরূপ করবে, তার মনে আল্লাহর ভয় জেগে উঠবে এবং সে তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। ফলে তার অন্তর নরম হয়ে যাবে এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরবে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি তার প্রতিপালক সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, তাহলে তার অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং তার চক্ষু শুকিয়ে যায়। তাছাড়া যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে পরিত্যাগ করেন, তখন সেই বান্দা থেকে তাঁর ভয়ে ক্রন্দন করার বৈশিষ্ট্যটি ছিনিয়ে নেন। ফলে তার অন্তর কঠিন হয়ে যায়।
আল্লাহ অসীম অনুগ্রহের মালিক। তার রহমতের শেষ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেছেন সেদিন রহমতকে একশত ভাগে ভাগ করে একভাগ সমস্ত সৃষ্টিকে দিয়েছেন, আর বাকি নিরানববই ভাগ নিজের কাছে রেখেছেন। আল্লাহর নিকট যে রহমত আছে যদি কোন কাফির তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তাহলে সে জান্নাতের ব্যাপারে নিরাশ হতো না। (অপরপক্ষে) আল্লাহর কাছে যে শাস্তি রয়েছে কোন মুমিন যদি তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করত না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৯।]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ﴾
আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
﴿وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِ﴾
আর তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা কাহফ- ৫৮)
﴿وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
আর আমার অনুগ্রহ প্রত্যেক বস্তুর উপর বিস্তৃত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারণ করব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
আল্লাহকে ভালোবাসা এবং তাঁর ব্যাপারে ভয় ও আশা পোষণ করা :
ঈমানের বিষয়সমূহ হচ্ছে, ভালোবাসা, ভয় এবং আশা। আর এ তিনটি গুণই প্রত্যেক মুসলিমকে ক্রন্দন করার দিকে আহবান করে। কেননা ভালোবাসার ব্যক্তি তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করে থাকে, ভয়কারী ব্যক্তি পৃথক হওয়ার ভয়েই ক্রন্দন করে থাকে, আবার আশা পোষণকারী ব্যক্তি আকাঙ্খিত জিনিস পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করে থাকে।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসবে সে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করবে সে আল্লাহর থেকে পৃথক হওয়ার ভয়েই ক্রন্দন করবে, আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা পোষণ করবে সে তা পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَادْعُوْهُ خَوْفًا وَّطَمَعًاؕ اِنَّ رَحْمَتَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ﴾
তোমরা ভয় ও আশা নিয়েই একমাত্র আল্লাহকে ডাকো; নিশ্চয় আল্লাহর রহমত নেক লোকদের অতি নিকটে। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ইসলামের হুকুম-আহকাম মেনে চলা :
ইসলামের হুকুম-আহকাম মানুষকে তাকওয়ার দিকেই ধাবিত করে। আর তাকওয়া অর্জন করতে পারলেই অন্তরে ক্রন্দনের ভাব সৃষ্টি হয়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে চাইলে অবশ্যই ইসলামের সকল হুকুম-আহকাম মেনে চলা জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَه وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ ‐ وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমরা যখন তার কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না, যারা বলে- শ্রবণ করলাম; বস্তুত তারা শ্রবণ করে না। (সূরা আনফাল- ২০, ২১)
আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে চিন্তা করা :
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর নিদর্শন। এসব নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে আল্লাহর পরিচয়, তার ক্ষমতা, তার দয়া ও কোমলতা ইত্যাদি বিষয় পরিষ্ফুটিত হয়ে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি অন্তর নরম হয়ে যায় এবং তাকওয়া বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা খুবই জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَلْوَانُهَاؕ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ -‐ وَّمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ﴾
তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘোর কালো। আর এভাবে মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৭, ২৮)
আল্লাহর অনুগ্রহ সম্পর্কে চিন্তা করা :
পৃথিবীটা আল্লাহর অনুগ্রহের ভান্ডার। তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহের কাছে একেবারেই অসহায়। আল্লাহর এসব অনুগ্রহের কথা চিন্তা-ভাবনা করলেও অন্তর তাঁর প্রতি বিনয়ী হয়ে উঠে। আর বিনয়ী অন্তরেই কান্নার ভাব জাগ্রত হয়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে সর্বদাই তাঁর অনুগ্রহের কথা চিমত্মা করা উচিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ ‐ يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ‐ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِه ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ‐ وَمَا ذَرَاَ لَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُخْتَلِفًا اَلْوَانُهٗؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ ‐ وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيَّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ‐ وَعَلَامَاتٍؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ ‐ اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ‐ وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاؕ اِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তিনিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তিনি তোমাদের জন্য তার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। আর তিনি নানা রঙের বস্তু তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। তিনিই সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস আহার করতে পার এবং তা হতে সংগ্রহ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। তোমরা দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। আর এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পায়। তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়। সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো হবেন যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে সেটার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল, ১০-১৮)
খারাপ সঙ্গী বর্জন করা :
আল্লাহর ভয়ের অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে, খারাপ সঙ্গী বর্জন করে সৎ সঙ্গীদের নিকবর্তী হওয়া। কেননা খারাপ সঙ্গী সর্বদা আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান করে। পক্ষান্তরে সৎসঙ্গী আল্লাহভীতির দিকে আহবান করে এবং এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবা- ১১৯)
হালাল খাদ্য খাওয়া :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার উপায় হিসেবে হালাল খাদ্য ভক্ষণ করার ভূমিকাও অপরিসীম। কেননা ইবাদাত কবুলের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল খাদ্য ভক্ষণ করা। হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলে মানুষের অন্তর ক্রমেই হারামের দিকে ঝুকে পড়ে। আর মানুষ যখন হারামের দিকে ঝুকে যায় তখন তার অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় উঠে যায়। ফলে তার পক্ষে কান্না করা সম্ভব হয় না। হাদীসে এসেছে
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَّإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ ﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ﴾ وَقَالَ ﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ﴾ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَّمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَّمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَّغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোনকিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুমিনদেরকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’’ (সূরা মু’মিনূন- ৫১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তোমরা পবিত্র জিনিস খাও।’’ (সূরা বাকারা- ১৭২)
অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোমলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হয়েছে; সুতরাং কিভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? [সহীহ মুসলিম, হা/ ২৩৯৩; মিশকাত, হা/ ২৭৬০।]
উপদেশ শ্রবণ করা :
যেসব বিষয় মানুষকে প্রভাবিত করে, তার মধ্যে উপদেশ শ্রবণ করাও হচ্ছে অন্যতম। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মানুষকে কঠিন ভাষায় উপদেশ প্রদান করতেন, তখন সাহাবীগণ খুবই প্রভাবিত হতেন এবং কান্না করতেন। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি উপদেশ শ্রবণ করা প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرٰى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
আর তুমি উপদেশ প্রদান করো, কেননা উপদেশ দেওয়ার মধ্যে মুমিনদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। (সূরা যারিয়াত- ৫৫)
ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, ইসলাম সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জন করা। কেননা জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে থাকে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ ﴾
নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৮)
কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার একটি উত্তম উপায় হলো, বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা। কেননা এরূপ করলে আল্লাহর পরিচয় ব্যক্তির অন্তরে স্পষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে আল্লাহর ভয় অন্তরের মধ্যে গেঁথে যায়। আর এ কারণেই প্রকৃত আলেমদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত শুনে ক্রন্দন করা। আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী সৎ আলেমদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا – وَّيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا﴾
নিশ্চয় ইতিপূর্বে যাদেরকে (কিতাবের) জ্ঞান দেয়া হয়েছে, যখনই তাদের নিকট তা (কুরআন) পাঠ করা হয়, তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র। আর আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
বিনয়ী হওয়া :
বিনয়ী হওয়াটা আল্লাহভীরু লোকদের অন্যতম গুণ। একমাত্র বিনয়ী ব্যক্তির পক্ষেই আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَيْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ﴾
আমি যদি এ কুরআন পর্বতের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা হাশর- ২১)
কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা করা :
কিয়ামতের দিনের পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ। পৃথিবীতে আগত সকল মানুষকে এ সময় একত্রিত করা হবে এবং সকলকে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার প্রদান করা হবে। যার কারণে সকলেই নিজ নিজ আমলনামা নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকবে। সেদিন বিচারকের আসনে বসবেন আল্লাহ তা‘আলা নিজেই। আর তিনি কারো প্রতি অবিচার করবেন না। কিয়ামতের দিনের এসব কঠিন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলেও অন্তরে আল্লার ভয় সৃষ্টি হয় এবং কান্নার ক্ষেত্র তৈরি হয়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা করাও অত্যাবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ – يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّاۤ اَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ ﴾
হে মানুষ সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। নিশ্চয় কিয়ামতের কম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা সেটা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক সত্মন্যদানকারিণী তার শিশুকে দুধ পান করাতে ভুলে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে এবং মানুষকে দেখবে মাতাল অবস্থায়, যদিও তারা মাতাল নয়। বস্তুত আল্লাহর শাসিত্ম খুবই কঠিন। (সূরা হজ্জ- ১, ২)
মৃত্যুকে স্মরণ করা :
মৃত্যু একটি চিরসত্য বিষয়, যার কবলে প্রত্যেকটি প্রাণীকেই পড়তে হবে। আর তা মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ডকে থামিয়ে দেবে এবং এমন জীবনের সূচনা হবে যেখানে বিপদে কোন সাহায্যকারী থাকবে না । তাই এই ভয়াবহ যাত্রার কথা স্মরণ করলেই অমত্মর নরম হবে এবং কান্না চলে আসবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ صَفِيَّةَ أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ عَائِشَةَ تَشْكُوْ إِلَيْهَا الْقَسْوَةَ فَقَالَتْ : " أَكْثِرِيْ ذِكْرَ الْمَوْتِ يَرِقُّ قَلْبَكَ وَتَقْدُرِيْنَ عَلٰى حَاجَتِكَ " قَالَتْ : فَفَعَلَتْ فَوَجَدَتْ أَنَّ قَلْبَهَا رَقَّ ، فَجَاءَتْ تَشْكُرُ لِعائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا
সাফিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা একজন মহিলা আয়েশা (রাঃ) এর নিকট এসে অমত্মর কঠিন হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করল। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) বললেন, তুমি বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো তাহলে তোমার অমত্মর নরম হবে এবং তুমি তোমার প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হবে। সাফিয়া (রাঃ) বলেন, অতঃপর মহিলাটি তাই করল। ফলে তার অমত্মর নরম হয়ে গেল। তারপর সে আয়েশা (রাঃ)-কে কৃতজ্ঞতা জানাতে তাঁর বাড়ি আসল।
কবর যিয়ারত করা :
কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। এর দ্বারা মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ হয় এবং হৃদয় বিগলিত হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ فَزُوْرُوْهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْاٰخِرَةَ
ইবনে বুরায়দা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করো; কেননা তা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। [আবু দাউদ, হা/৩২৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৩০৫; তিরমিযী, হা/১০৫৪; নাসাঈ, হা/৪৪২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০০৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১৬৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪৩৫; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৬৭০৮; মিশকাত, হা/১৭৬২।]
জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করা :
জাহান্নামের আগুনের ভয়ে ক্রন্দন করাটা আল্লাহ ভীতির অন্যতম পরিচয়। যাদের অন্তরে ঈমানের দৃঢ়তা রয়েছে এবং যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে থাকে, কেবল তাদের পক্ষেই এ ধরনের ক্রন্দন করা সম্ভব। কেননা তারা জানে যে, দুনিয়ার আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ বেশি উত্তপ্ত। হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّيْنَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের ব্যবহৃত আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবীরা বললেন, জ্বালানোর জন্য তো এ আগুনই যথেষ্ট। নবী ﷺ বললেন, তা সত্ত্বেও পৃথিবীর আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ বেশি শক্তিশালী। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৬৫; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮০৪; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৪৪; তিরমিযী, হা/২৫৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০৩৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৪৬২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৯৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৬৬৬; মুসনাদে আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, হা/১২৯; মিশকাত, হা/৫৬৬৫।]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا﴾
বলো, জাহান্নামের আগুন আরো প্রচন্ড গরম। (সূরা তাওবা- ৮১)
অতএব আমাদের উচিত জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ক্রন্দন করা এবং এর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
পাপ থেকে বেঁচে থাকা :
ইতিপূর্বেই বর্ণিত হয়েছে, বেশি বেশি পাপ করাটা কান্না না আসার অন্যতম কারণ। সুতরাং যথাসম্ভব পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারলেই অন্তরে কান্নার স্থান তৈরি হবে।
قَالَ مَكْحُوْلٌ رَحِمَهُ اللهُ : " أَرَقُّ النَّاسِ قُلُوْبًا أَقَلُّهُمْ ذُنُوْبًا " .
মাকহুল (রহ.) বলেন, যার পাপ যত কম হয়, তার হৃদয় তত নরম হয়।**
কান্না না আসলে কান্নার ভান করা :
অনেকে এমন রয়েছে যে, তারা ক্রন্দন করার মূল্য অনুভব করে; কিন্তু কান্না করতে পারে না। তাদের উচিত সময়-সুযোগ পেলেই কান্নার ভান করা। হাদীসে এসেছে,
عَنِ بْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ قَالَ جَلَسْنَا إِلٰى عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو فِي الْحِجْرِ فَقَالَ أبْكُوْا فَإِنْ لَمْ تَجِدُوْا بُكَاءً فَتَبَاكُوْا لَوْ تَعْلَمُوْنَ الْعِلْمَ لَصَلّٰى أَحَدُكُمْ حَتّٰى يَنْكَسِرَ ظَهْرُه وَلَبَكٰى حَتّٰى يَنْقَطِعَ صَوْتُه
ইবনে আবু মুলাইকা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এর সাথে হিজর নামক স্থানে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা কান্না করো। যদি তোমরা এতে সক্ষম না হও, তাহলে কান্না করার ভান করো। কেননা প্রকৃত বিষয় যদি তোমরা জানতে তবে তোমাদের কেউ কেউ এমন দীর্ঘ করে নামায আদায় করত যে, তার পৃষ্ঠদেশ ভেঙে যেত এবং এতই কান্না করত যে, তার কণ্ঠ বন্ধ হয়ে যেত। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭২৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩২৮।]
আল্লাহর ভয়ে কান্না করার প্রধান উপায় হচ্ছে, আল্লাহর পরিচয় ও তাঁর গুণাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হওয়া। কেননা যে ব্যক্তি এরূপ করবে, তার মনে আল্লাহর ভয় জেগে উঠবে এবং সে তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। ফলে তার অন্তর নরম হয়ে যাবে এবং চোখ দিয়ে পানি ঝরবে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি তার প্রতিপালক সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, তাহলে তার অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং তার চক্ষু শুকিয়ে যায়। তাছাড়া যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে পরিত্যাগ করেন, তখন সেই বান্দা থেকে তাঁর ভয়ে ক্রন্দন করার বৈশিষ্ট্যটি ছিনিয়ে নেন। ফলে তার অন্তর কঠিন হয়ে যায়।
আল্লাহ অসীম অনুগ্রহের মালিক। তার রহমতের শেষ নেই। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট থেকে শুনেছি যে, আল্লাহ যেদিন রহমত সৃষ্টি করেছেন সেদিন রহমতকে একশত ভাগে ভাগ করে একভাগ সমস্ত সৃষ্টিকে দিয়েছেন, আর বাকি নিরানববই ভাগ নিজের কাছে রেখেছেন। আল্লাহর নিকট যে রহমত আছে যদি কোন কাফির তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তাহলে সে জান্নাতের ব্যাপারে নিরাশ হতো না। (অপরপক্ষে) আল্লাহর কাছে যে শাস্তি রয়েছে কোন মুমিন যদি তার পরিমাণ সম্পর্কে জানত, তবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করত না। [সহীহ বুখারী, হা/৬৪৬৯।]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ﴾
আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা আলে ইমরান- ৭৪)
﴿وَرَبُّكَ الْغَفُوْرُ ذُو الرَّحْمَةِ﴾
আর তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সূরা কাহফ- ৫৮)
﴿وَرَحْمَتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍؕ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكَاةَ وَالَّذِيْنَ هُمْ بِاٰيَاتِنَا يُؤْمِنُوْنَ﴾
আর আমার অনুগ্রহ প্রত্যেক বস্তুর উপর বিস্তৃত। সুতরাং আমি সেটা তাদের জন্য নির্ধারণ করব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। (সূরা আ‘রাফ- ১৫৬)
আল্লাহকে ভালোবাসা এবং তাঁর ব্যাপারে ভয় ও আশা পোষণ করা :
ঈমানের বিষয়সমূহ হচ্ছে, ভালোবাসা, ভয় এবং আশা। আর এ তিনটি গুণই প্রত্যেক মুসলিমকে ক্রন্দন করার দিকে আহবান করে। কেননা ভালোবাসার ব্যক্তি তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করে থাকে, ভয়কারী ব্যক্তি পৃথক হওয়ার ভয়েই ক্রন্দন করে থাকে, আবার আশা পোষণকারী ব্যক্তি আকাঙ্খিত জিনিস পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করে থাকে।
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসবে সে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করবে সে আল্লাহর থেকে পৃথক হওয়ার ভয়েই ক্রন্দন করবে, আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা পোষণ করবে সে তা পাওয়ার জন্যই ক্রন্দন করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَادْعُوْهُ خَوْفًا وَّطَمَعًاؕ اِنَّ رَحْمَتَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ﴾
তোমরা ভয় ও আশা নিয়েই একমাত্র আল্লাহকে ডাকো; নিশ্চয় আল্লাহর রহমত নেক লোকদের অতি নিকটে। (সূরা আ‘রাফ- ৫৬)
ইসলামের হুকুম-আহকাম মেনে চলা :
ইসলামের হুকুম-আহকাম মানুষকে তাকওয়ার দিকেই ধাবিত করে। আর তাকওয়া অর্জন করতে পারলেই অন্তরে ক্রন্দনের ভাব সৃষ্টি হয়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে চাইলে অবশ্যই ইসলামের সকল হুকুম-আহকাম মেনে চলা জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَه وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ ‐ وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ قَالُوْا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُوْنَ﴾
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমরা যখন তার কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না, যারা বলে- শ্রবণ করলাম; বস্তুত তারা শ্রবণ করে না। (সূরা আনফাল- ২০, ২১)
আল্লাহর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে চিন্তা করা :
আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহর নিদর্শন। এসব নিদর্শন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে আল্লাহর পরিচয়, তার ক্ষমতা, তার দয়া ও কোমলতা ইত্যাদি বিষয় পরিষ্ফুটিত হয়ে যায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি অন্তর নরম হয়ে যায় এবং তাকওয়া বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা খুবই জরুরি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَخْرَجْنَا بِهٖ ثَمَرَاتٍ مُّخْتَلِفًا اَلْوَانُهَاؕ وَمِنَ الْجِبَالِ جُدَدٌ ۢبِيْضٌ وَّحُمْرٌ مُّخْتَلِفٌ اَلْوَانُهَا وَغَرَابِيْبُ سُوْدٌ -‐ وَّمِنَ النَّاسِ وَالدَّوَآبِّ وَالْاَنْعَامِ مُخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ كَذٰلِكَؕ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ﴾
তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ- সাদা, লাল ও ঘোর কালো। আর এভাবে মানুষ, বিভিন্ন প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুও বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৭, ২৮)
আল্লাহর অনুগ্রহ সম্পর্কে চিন্তা করা :
পৃথিবীটা আল্লাহর অনুগ্রহের ভান্ডার। তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। আমরা তাঁর অনুগ্রহের কাছে একেবারেই অসহায়। আল্লাহর এসব অনুগ্রহের কথা চিন্তা-ভাবনা করলেও অন্তর তাঁর প্রতি বিনয়ী হয়ে উঠে। আর বিনয়ী অন্তরেই কান্নার ভাব জাগ্রত হয়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে সর্বদাই তাঁর অনুগ্রহের কথা চিমত্মা করা উচিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿هُوَ الَّذِيْۤ اَنْزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ ‐ يُنْۢبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُوْنَ وَالنَّخِيْلَ وَالْاَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ ‐ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَؕ وَالنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ ۢبِاَمْرِه ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّعْقِلُوْنَ ‐ وَمَا ذَرَاَ لَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُخْتَلِفًا اَلْوَانُهٗؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّذَّكَّرُوْنَ ‐ وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيَّا وَّتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَهَاۚ وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيْهِ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ ‐ وَاَلْقٰى فِى الْاَرْضِ رَوَاسِيَ اَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ وَاَنْهَارًا وَّسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ‐ وَعَلَامَاتٍؕ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ ‐ اَفَمَنْ يَّخْلُقُ كَمَنْ لَّا يَخْلُقُؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ ‐ وَاِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَاؕ اِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ﴾
তিনিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক। তিনি তোমাদের জন্য তার দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তুন, খেজুর, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে। আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন। আর তিনি নানা রঙের বস্তু তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ করে। তিনিই সমুদ্রকে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস আহার করতে পার এবং তা হতে সংগ্রহ করতে পার রত্নাবলি, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর। তোমরা দেখতে পাও যে, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। আর এটা এজন্য যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পায়। তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার এবং পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়। সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মতো হবেন যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে সেটার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা নাহল, ১০-১৮)
খারাপ সঙ্গী বর্জন করা :
আল্লাহর ভয়ের অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে, খারাপ সঙ্গী বর্জন করে সৎ সঙ্গীদের নিকবর্তী হওয়া। কেননা খারাপ সঙ্গী সর্বদা আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান করে। পক্ষান্তরে সৎসঙ্গী আল্লাহভীতির দিকে আহবান করে এবং এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা তাওবা- ১১৯)
হালাল খাদ্য খাওয়া :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার উপায় হিসেবে হালাল খাদ্য ভক্ষণ করার ভূমিকাও অপরিসীম। কেননা ইবাদাত কবুলের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল খাদ্য ভক্ষণ করা। হারাম খাদ্য ভক্ষণ করলে মানুষের অন্তর ক্রমেই হারামের দিকে ঝুকে পড়ে। আর মানুষ যখন হারামের দিকে ঝুকে যায় তখন তার অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় উঠে যায়। ফলে তার পক্ষে কান্না করা সম্ভব হয় না। হাদীসে এসেছে
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَّإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ ﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوْا صَالِحًا إِنِّىْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ﴾ وَقَالَ ﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُلُوْا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ﴾ ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهٗ حَرَامٌ وَّمَشْرَبُهٗ حَرَامٌ وَّمَلْبَسُهٗ حَرَامٌ وَّغُذِىَ بِالْحَرَامِ فَأَنّٰى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া কোনকিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুমিনদেরকেও একই নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র জিনিস খাও এবং নেক আমল করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবগত আছি।’’ (সূরা মু’মিনূন- ৫১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে তোমরা পবিত্র জিনিস খাও।’’ (সূরা বাকারা- ১৭২)
অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে দীর্ঘ সফর করে, এলোমেলো কেশবিশিষ্ট, ধূলোমলিন শরীর, সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার রব! হে আমার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারামের দ্বারা সে প্রতিপালিত হয়েছে; সুতরাং কিভাবে তার দু‘আ কবুল হবে? [সহীহ মুসলিম, হা/ ২৩৯৩; মিশকাত, হা/ ২৭৬০।]
উপদেশ শ্রবণ করা :
যেসব বিষয় মানুষকে প্রভাবিত করে, তার মধ্যে উপদেশ শ্রবণ করাও হচ্ছে অন্যতম। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন মানুষকে কঠিন ভাষায় উপদেশ প্রদান করতেন, তখন সাহাবীগণ খুবই প্রভাবিত হতেন এবং কান্না করতেন। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে অবশ্যই বেশি বেশি উপদেশ শ্রবণ করা প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرٰى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِيْنَ﴾
আর তুমি উপদেশ প্রদান করো, কেননা উপদেশ দেওয়ার মধ্যে মুমিনদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। (সূরা যারিয়াত- ৫৫)
ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, ইসলাম সম্পর্কে অধিক জ্ঞান অর্জন করা। কেননা জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে থাকে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُؕ اِنَّ اللهَ عَزِيْزٌ غَفُوْرٌ ﴾
নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী ও পরম ক্ষমাশীল। (সূরা ফাতির- ২৮)
কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা :
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করার একটি উত্তম উপায় হলো, বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা এবং তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা। কেননা এরূপ করলে আল্লাহর পরিচয় ব্যক্তির অন্তরে স্পষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে আল্লাহর ভয় অন্তরের মধ্যে গেঁথে যায়। আর এ কারণেই প্রকৃত আলেমদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত শুনে ক্রন্দন করা। আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী সৎ আলেমদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا يُتْلٰى عَلَيْهِمْ يَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدًا – - وَيَقُوْلُوْنَ سُبْحَانَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًا – وَّيَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ يَبْكُوْنَ وَيَزِيْدُهُمْ خُشُوْعًا﴾
নিশ্চয় ইতিপূর্বে যাদেরকে (কিতাবের) জ্ঞান দেয়া হয়েছে, যখনই তাদের নিকট তা (কুরআন) পাঠ করা হয়, তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র। আর আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হবেই। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে। (সূরা বনী ইসরাঈল, ১০৭-১০৯)
বিনয়ী হওয়া :
বিনয়ী হওয়াটা আল্লাহভীরু লোকদের অন্যতম গুণ। একমাত্র বিনয়ী ব্যক্তির পক্ষেই আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَوْ اَنْزَلْنَا هٰذَا الْقُرْاٰنَ عَلٰى جَبَلٍ لَّرَاَيْتَهٗ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللهِ﴾
আমি যদি এ কুরআন পর্বতের উপর অবতীর্ণ করতাম তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা হাশর- ২১)
কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা করা :
কিয়ামতের দিনের পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ। পৃথিবীতে আগত সকল মানুষকে এ সময় একত্রিত করা হবে এবং সকলকে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার প্রদান করা হবে। যার কারণে সকলেই নিজ নিজ আমলনামা নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকবে। সেদিন বিচারকের আসনে বসবেন আল্লাহ তা‘আলা নিজেই। আর তিনি কারো প্রতি অবিচার করবেন না। কিয়ামতের দিনের এসব কঠিন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলেও অন্তরে আল্লার ভয় সৃষ্টি হয় এবং কান্নার ক্ষেত্র তৈরি হয়। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতে হলে কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা করাও অত্যাবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ – يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّاۤ اَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ ﴾
হে মানুষ সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। নিশ্চয় কিয়ামতের কম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা সেটা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক সত্মন্যদানকারিণী তার শিশুকে দুধ পান করাতে ভুলে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতী গর্ভপাত করে ফেলবে এবং মানুষকে দেখবে মাতাল অবস্থায়, যদিও তারা মাতাল নয়। বস্তুত আল্লাহর শাসিত্ম খুবই কঠিন। (সূরা হজ্জ- ১, ২)
মৃত্যুকে স্মরণ করা :
মৃত্যু একটি চিরসত্য বিষয়, যার কবলে প্রত্যেকটি প্রাণীকেই পড়তে হবে। আর তা মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ডকে থামিয়ে দেবে এবং এমন জীবনের সূচনা হবে যেখানে বিপদে কোন সাহায্যকারী থাকবে না । তাই এই ভয়াবহ যাত্রার কথা স্মরণ করলেই অমত্মর নরম হবে এবং কান্না চলে আসবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ صَفِيَّةَ أَنَّ امْرَأَةً أَتَتْ عَائِشَةَ تَشْكُوْ إِلَيْهَا الْقَسْوَةَ فَقَالَتْ : " أَكْثِرِيْ ذِكْرَ الْمَوْتِ يَرِقُّ قَلْبَكَ وَتَقْدُرِيْنَ عَلٰى حَاجَتِكَ " قَالَتْ : فَفَعَلَتْ فَوَجَدَتْ أَنَّ قَلْبَهَا رَقَّ ، فَجَاءَتْ تَشْكُرُ لِعائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا
সাফিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা একজন মহিলা আয়েশা (রাঃ) এর নিকট এসে অমত্মর কঠিন হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করল। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) বললেন, তুমি বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করো তাহলে তোমার অমত্মর নরম হবে এবং তুমি তোমার প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হবে। সাফিয়া (রাঃ) বলেন, অতঃপর মহিলাটি তাই করল। ফলে তার অমত্মর নরম হয়ে গেল। তারপর সে আয়েশা (রাঃ)-কে কৃতজ্ঞতা জানাতে তাঁর বাড়ি আসল।
কবর যিয়ারত করা :
কবর যিয়ারত করা সুন্নাত। এর দ্বারা মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ হয় এবং হৃদয় বিগলিত হয়। হাদীসে এসেছে,
عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ - - نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ فَزُوْرُوْهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْاٰخِرَةَ
ইবনে বুরায়দা (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করো; কেননা তা আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। [আবু দাউদ, হা/৩২৩৭; সহীহ মুসলিম, হা/২৩০৫; তিরমিযী, হা/১০৫৪; নাসাঈ, হা/৪৪২৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০০৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩১৬৮; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪৩৫; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৬৭০৮; মিশকাত, হা/১৭৬২।]
জাহান্নামের আগুনের কথা স্মরণ করা :
জাহান্নামের আগুনের ভয়ে ক্রন্দন করাটা আল্লাহ ভীতির অন্যতম পরিচয়। যাদের অন্তরে ঈমানের দৃঢ়তা রয়েছে এবং যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করে থাকে, কেবল তাদের পক্ষেই এ ধরনের ক্রন্দন করা সম্ভব। কেননা তারা জানে যে, দুনিয়ার আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ বেশি উত্তপ্ত। হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : نَارُكُمْ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِيْنَ جُزْءًا مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً قَالَ فُضِّلَتْ عَلَيْهِنَّ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّيْنَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের ব্যবহৃত আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবীরা বললেন, জ্বালানোর জন্য তো এ আগুনই যথেষ্ট। নবী ﷺ বললেন, তা সত্ত্বেও পৃথিবীর আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ বেশি শক্তিশালী। [সহীহ বুখারী, হা/৩২৬৫; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮০৪; সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৪৪; তিরমিযী, হা/২৫৮৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০০৩৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৭৪৬২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪৩৯৮; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৬৬৬; মুসনাদে আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, হা/১২৯; মিশকাত, হা/৫৬৬৫।]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ اَشَدُّ حَرًّا﴾
বলো, জাহান্নামের আগুন আরো প্রচন্ড গরম। (সূরা তাওবা- ৮১)
অতএব আমাদের উচিত জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ক্রন্দন করা এবং এর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
পাপ থেকে বেঁচে থাকা :
ইতিপূর্বেই বর্ণিত হয়েছে, বেশি বেশি পাপ করাটা কান্না না আসার অন্যতম কারণ। সুতরাং যথাসম্ভব পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে পারলেই অন্তরে কান্নার স্থান তৈরি হবে।
قَالَ مَكْحُوْلٌ رَحِمَهُ اللهُ : " أَرَقُّ النَّاسِ قُلُوْبًا أَقَلُّهُمْ ذُنُوْبًا " .
মাকহুল (রহ.) বলেন, যার পাপ যত কম হয়, তার হৃদয় তত নরম হয়।**
কান্না না আসলে কান্নার ভান করা :
অনেকে এমন রয়েছে যে, তারা ক্রন্দন করার মূল্য অনুভব করে; কিন্তু কান্না করতে পারে না। তাদের উচিত সময়-সুযোগ পেলেই কান্নার ভান করা। হাদীসে এসেছে,
عَنِ بْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ قَالَ جَلَسْنَا إِلٰى عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو فِي الْحِجْرِ فَقَالَ أبْكُوْا فَإِنْ لَمْ تَجِدُوْا بُكَاءً فَتَبَاكُوْا لَوْ تَعْلَمُوْنَ الْعِلْمَ لَصَلّٰى أَحَدُكُمْ حَتّٰى يَنْكَسِرَ ظَهْرُه وَلَبَكٰى حَتّٰى يَنْقَطِعَ صَوْتُه
ইবনে আবু মুলাইকা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এর সাথে হিজর নামক স্থানে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমরা কান্না করো। যদি তোমরা এতে সক্ষম না হও, তাহলে কান্না করার ভান করো। কেননা প্রকৃত বিষয় যদি তোমরা জানতে তবে তোমাদের কেউ কেউ এমন দীর্ঘ করে নামায আদায় করত যে, তার পৃষ্ঠদেশ ভেঙে যেত এবং এতই কান্না করত যে, তার কণ্ঠ বন্ধ হয়ে যেত। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭২৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩২৮।]
কান্না করার উপযুক্ত সময় হলো তাহাজ্জুদের সময়। রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেন। জান্নাতী বান্দাদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তারা শেষ রাত্রে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
﴿وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا﴾
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ عَسٰىۗ اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا﴾
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
﴿اَلَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ إِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ --- اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَار﴾
(জান্নাতী লোকদের গুণাবলী হচ্ছে) যারা বলে, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন এবং জাহান্নাম থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৬, ১৭)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاٰخِرُ فَيَقُوْلُ مَنْ يَدْعُونِىْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ وَمَنْ يَسْأَلُنِىْ فَأُعْطِيَهٗ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِىْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রতি রাতেই যখন রাতের একতৃতীয়াংশ বাকী থাকে তখন আমাদের মহান রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ডেকে বলেন, কে আমাকে ডাকবে- আমি উত্তর দেব, কে আমার কাছে কিছু চাইবে- আমি তাকে দান করব। কে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে- আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৯৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮; আবু দাউদ, হা/১৩১৭, তিরমিযী, হা/৩৪৯৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৭৬৮; ৪৭৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৬;।]
বান্দা যদি চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তার দিকে মনোযোগ দেন। বান্দা যখন তার কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য অথবা বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, তখন আল্লাহর রহমত তার দিকে অগ্রসর হয়।
﴿اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ ‐ اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ ‐ كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ ‐ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ﴾
সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে, যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয় তারা ইতিপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত এবং রাত্রির শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থনা করত। (সূরা যারিয়াত, ১৫-১৮)
﴿وَالَّذِيْنَ يَبِيْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّقِيَامًا﴾
তারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করে। (সূরা ফুরক্বান- ৬৪)
﴿وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهٖ نَافِلَةً لَّكَ عَسٰىۗ اَنْ يَّبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا﴾
রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বনী ইসরাঈল- ৭৯)
﴿اَلَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ إِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ --- اَلصَّابِرِيْنَ وَالصَّادِقِيْنَ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْمُنْفِقِيْنَ وَالْمُسْتَغْفِرِيْنَ بِالْاَسْحَار﴾
(জান্নাতী লোকদের গুণাবলী হচ্ছে) যারা বলে, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন এবং জাহান্নাম থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, দানকারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী। (সূরা আলে ইমরান- ১৬, ১৭)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالٰى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقٰى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْاٰخِرُ فَيَقُوْلُ مَنْ يَدْعُونِىْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهٗ وَمَنْ يَسْأَلُنِىْ فَأُعْطِيَهٗ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِىْ فَأَغْفِرَ لَهٗ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রতি রাতেই যখন রাতের একতৃতীয়াংশ বাকী থাকে তখন আমাদের মহান রব দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ডেকে বলেন, কে আমাকে ডাকবে- আমি উত্তর দেব, কে আমার কাছে কিছু চাইবে- আমি তাকে দান করব। কে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে- আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’’ [সহীহ বুখারী, হা/৭৪৯৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮০৮; আবু দাউদ, হা/১৩১৭, তিরমিযী, হা/৩৪৯৮; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৭৭৬৮; ৪৭৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৬৬;।]
বান্দা যদি চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তার দিকে মনোযোগ দেন। বান্দা যখন তার কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য অথবা বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, তখন আল্লাহর রহমত তার দিকে অগ্রসর হয়।
আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের অমত্মরকে নরম করে দিতে পারেন। কারণ মানুষের অমত্মর আল্লাহর হাতে রয়েছে। তাই মন নরম হওয়ার জন্য এবং শক্ত হৃদয় থেকে আশ্রয় চেয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ ﷺ অমত্মর কঠিন হওয়া থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বদা আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। এজন্য তিনি এ দু‘আটি পাঠ করতেন,
اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللّٰهُمَّ اٰتِ نَفْسِىْ تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا اللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
উচ্চারণ :**
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই অপারগতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা, বার্ধক্যতা এবং কবরের শাস্তি থেকে। হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে পরহেযগারিতা দান করুন এবং আমার অমত্মরকে সংশোধন করে দিন। আপনি একমাত্র সর্বোত্তম সংশোধনকারী এবং আপনিই একমাত্র তার মালিক ও আশ্রয়স্থল। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এমন ইলম হতে যা কোন উপকারে আসবে না ও এমন অন্তঃকরণ থেকে যা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না; এমন আত্মা থেকে যা কখনও তৃপ্ত হয় না। আর এমন দু‘আ থেকে যা কবুল করা হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮১; আবু দাউদ, হা/১৫৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩২৭।]
اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللّٰهُمَّ اٰتِ نَفْسِىْ تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا اللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
উচ্চারণ :**
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই অপারগতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা, বার্ধক্যতা এবং কবরের শাস্তি থেকে। হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে পরহেযগারিতা দান করুন এবং আমার অমত্মরকে সংশোধন করে দিন। আপনি একমাত্র সর্বোত্তম সংশোধনকারী এবং আপনিই একমাত্র তার মালিক ও আশ্রয়স্থল। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই এমন ইলম হতে যা কোন উপকারে আসবে না ও এমন অন্তঃকরণ থেকে যা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয় না; এমন আত্মা থেকে যা কখনও তৃপ্ত হয় না। আর এমন দু‘আ থেকে যা কবুল করা হয় না। [সহীহ মুসলিম, হা/৭০৮১; আবু দাউদ, হা/১৫৫০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৩২৭।]
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন