মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পর সাহাবীগণই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে হুবহু অনুসরণ করতেন। যেসব কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসতেন তাঁরাও সেসব কারণে হাসতেন এবং যেসব কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ কাঁদতেন তাঁরাও সেসব কারণে কাঁদতেন। তাঁদের কান্না কোন লোক দেখানো কান্না ছিল না। বরং তাঁরা উক্ত বিষয়ের মর্ম অনুধাবন করেই কাঁদতেন। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো :
জাহান্নামের ভয়ে উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) কান্না করতেন :
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন এক খুতবা দিলেন, যেমনটি এর আগে আমি আর কোনদিন শুনিনি। এ সময় তিনি বললেন, আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তাহলে খুব কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথাগুলো শ্রবণ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীগণ কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেলেন। তখন শুধু তাঁদের গুন গুন করে কান্নার শব্দই শোনা যাচ্ছিল। এ সময় এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে প্রশ্ন করল, (হে আল্লাহর নবী!) আমার পিতা কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা অমুক। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো- এমন বিষয়ে তোমরা প্রশ্ন করো না, যা প্রকাশ করা হলে তোমাদের খারাপ লাগবে (সূরা মায়েদা- ১০১)। [সহীহ বুখারী, হা/৪৬২১; ইবনে মাজাহ, হা/৪১৯১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৬৮।]
ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ালেন। তারপর এমন হৃদয়বিদারক ভাষণ প্রদান করলেন, যাতে আমাদের চোখসমূহ অশ্রু প্রবাহিত করতে লাগল এবং অন্তরসমূহ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেল। [সুনানে দারেমী, হা/৯৫; শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৫১৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫; তিরমিযী, হা/২৬৭৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭১৮৫।]
উত্তম কাজে ব্যাঘাত ঘটার কারণে আয়েশা (রাঃ) কান্না করতেন :
অনেক সাহাবী এমন ছিলেন যে, তারা কোন সওয়াবের কাজ সম্পন্ন করতে না পারার কারণে মনে কষ্ট পেতেন এবং কান্না করতেন। যেমনিভাবে কা‘বা ঘর তাওয়াফ করার পূর্বেই আয়েশা (রাঃ) এর মাসিক শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি কান্না করেছিলেন। হাদীসে এসেছে,
কাসিম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে, বিদায় হজ্জে আমরা কেবল হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। যখন আমরা ‘সারিফ’ নামক স্থানে উপস্থিত হলাম, তখন আমার হায়েয দেখা দেয়। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার কাছে আসলেন তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি আমার কান্না দেখে বললেন, তোমার কী হয়েছে? হায়েয দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটা এমন একটা বিষয় যা আল্লাহ আদম (আঃ) এর প্রত্যেকটি মেয়ের উপর অত্যাবশ্যক করেছেন। তাই তোমার জন্য নির্দেশ হলো, অন্য হাজীগণ হজ্জের যেসব কাজ করে তুমিও তাই করো। তবে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। আয়েশা (রাঃ) আরো বলেন, সেদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বীয় স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/২৯৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৯৬৩।]
একটি পাপের কথা স্মরণ করে আয়েশা (রাঃ) কান্না করতেন :
আয়েশা (রাঃ) এর ভাতিজা আউফ ইবনে মালিক ইবনে তুফায়েল বর্ণনা করেন, একদা আয়েশা (রাঃ) ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর মধ্যে কোন একটি বিষয় নিয়ে বিবাদ হয়। তখন আয়েশা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এর সাথে কথা না বলার কসম করে বসেন। অথচ ইসলামে এক মুসলিমের সাথে অপর মুসলিমের তিন দিনের বেশি কথা না বলে থাকাটা একেবারেই নিষিদ্ধ। যখন এ বিষয়টি তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তখন তিনি কসম ভঙ্গ করেন এবং এরূপ অন্যায়ের কারণে অনেক ক্রন্দন করেন। এরপর থেকে যখনই তার এ কথা স্মরণ হতো তখনই তিনি ক্রন্দন করতেন। [সহীহ বুখারী, হা/৬০৭৩; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৫৬৬২; বায়হাকী, হা/১১৯৭১।]
সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রাগ দেখে কেঁদে দিতেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত দূত। তাঁর ভালোবাসার মধ্যেই ছিল আল্লাহর ভালোবাসা। তাছাড়া তিনিই ছিলেন সাহাবীগণের কাছে সবচেয়ে প্রিয় পাত্র। সাহাবীগণ তাঁকে নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কোন কষ্ট অথবা রাগ তাঁরা সহ্য করতে পারতেন না। কাজেই সাহাবীগণ যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে রাগান্বিত হতে দেখতেন তখন খুবই ভয় পেতেন এবং অনেক সময় কেঁদে দিতেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ কোন একদিন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে বের হলেন এবং যুহরের সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে কিয়ামতের বিবরণ দিলেন এবং বললেন, কিয়ামতের পূর্বে বড় বড় কিছু বিষয় আছে। তারপর যে ব্যক্তি আমার কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পছন্দ করে, সে যেন উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করে। আল্লাহর কসম! এখানে আমি যতক্ষণ আছি তোমরা আমাকে যেসব বিষয়েই জিজ্ঞেস করবে, আমি সেসব বিষয়েই তোমাদেরকে জানাব। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন লোকেরা খুব কান্নাকাটি শুরু করে দিল এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ বার বার বলতে লাগলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমাকে জিজ্ঞেস করো। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন তাদের মাঝে এক লোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বাসস্থান কোথায়? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তরে বললেন, তোমার বাসস্থান হলো জাহান্নাম। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রাঃ) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমার বাবা কে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমার বাবা হুজাফা। রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বার বার বলতে লাগলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমাকে জিজ্ঞেস করো। এ সময় উমর (রাঃ) দু’হাঁটু গেড়ে বসে বললেন, সন্তুষ্টচিত্তে আমরা আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে জীবনব্যবস্থা (দ্বীন) হিসেবে এবং মুহাম্মাদ ﷺ-কে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করেছি। উমর (রাঃ) এ কথা বলতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপ হয়ে গেলেন। তারপর নবী ﷺ প্রথমে বললেন, ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন, এইমাত্র এ দেয়ালের পাশে আমার সামনে জান্নাত এবং জাহান্নামকে হাযির করা হলো, তখন আমি নামায পড়ছিলাম। আমি আজকের দিনের মতো ভালো ও মন্দকে আর কখনো (এত স্পষ্টভাবে) দেখিনি। [সহীহ বুখারী, হা/৭২৯৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৫৯।]
জিহাদে যাওয়ার সুযোগ না পেলে সাহাবীরা কান্না করতেন :
আখিরাতে মুক্তি লাভের জন্য সবচেয়ে উত্তম পথ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ করা। যারা এ পথে থাকবে পরকালে তারা মুক্তি লাভ করতে পারবে। এজন্যই সাহাবীগণ সর্বদা এ পথে বের হওয়ার জন্য সদা প্রসত্মুত থাকতেন এবং কোন সময় যদি কোন কারণে বের হতে না পারতেন, তাহলে খুবই দুঃখ পেতেন- এমনকি ক্রন্দন করতেন। যেমনটি ঘটেছিল তাবুক যুদ্ধের ক্ষেত্রে। সে সময় সাহাবীগণ এতই অভাবের মধ্যে ছিলেন যে, অনেকে বাহন অথবা অস্ত্রের ঘাটতির কারণে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এ কারণে তারা ক্রন্দন করেছিলেন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
তাদেরও কোন অপরাধ নেই, যারা তোমার নিকট বাহনের জন্য আসলে তুমি বলেছিলে, আমি তোমাদের জন্য কোন বাহন পাচ্ছি না। অতঃপর তারা অর্থ ব্যয়ে অক্ষম হওয়ার কারণে দুঃখে চোখের পানি ফেলে ফিরে গেল। (সূরা তাওবা- ৯২)
সাহাবীগণ নবী ﷺ এর সুন্নাতের বিপরীত কাজ দেখলে কাঁদতেন :
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুপস্থিতিতে তাঁর সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে তাঁকে ভালোবাসার প্রধান নিদর্শন। যার কারণে সাহাবীগণ সর্বদা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাতসমূহকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন। যখনই তারা এগুলোর মধ্যে কোন ব্যতিক্রম লক্ষ্য করতেন তখনই খুব কষ্ট অনুভব করতেন এবং কেঁদে ফেলতেন। হাদীসে এসেছে,
ইমাম যুহরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা দামেশকে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর সাথে দেখা করতে গেলাম এমতাবস্থায় তিনি কাঁদছিলেন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে যা কিছু দেখেছি একমাত্র এই নামায ছাড়া আর কিছুই (আসলরূপে) দেখতে পাচ্ছি না। অথচ এ নামাযও এখন নষ্ট করা হচ্ছে (মুস্তাহাব ওয়াক্তে আদায় হচ্ছে না)। [সহীহ বুখারী, হা/৫৩০।]
দুনিয়ার ভোগবিলাস বেশি হলে ভয়ে সাহাবীরা ক্রন্দন করতেন :
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য আখিরাত এবং কাফিরদের জন্য দুনিয়াকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার কারণে দুনিয়াতে মুমিনগণ যতই ভালো কাজ করুক না কেন তার প্রতিদান আখিরাতেই দেয়া হবে। পক্ষান্তরে কাফিররা যদি কোন ভালো কাজ করে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। আর এর উত্তম নিদর্শন হলো অধিক ধন-সম্পদ ও আরাম-আয়েশ। ফলে সাহাবীগণ যখন নিজেদের মধ্যে এ ধরনের কোন নিদর্শন দেখতে পেতেন তখন এ আশঙ্কা করে কাঁদতেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর কোনরূপ অসমত্মুষ্ট হয়েছেন কি না। হাদীসে এসেছে,
সা‘দ ইবনে ইবরাহীম (রহ.) তাঁর পিতা ইবরাহীম থেকে বর্ণনা করেন। একদিন আবদুর রহমান ইবনে আওফের জন্য খাবার উপস্থিত করা হলো, তখন তিনি সিয়ামরত অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, মুস‘আব ইবনে উমায়েরকে শহীদ করা হয়েছে, অথচ তিনি ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাঁকে তাঁর একটি চাদর দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছে। তা দ্বারা যদি তাঁর মাথা ঢাকা হতো, তাহলে পা দু’টি বের হয়ে যেত। আর যদি পা দু’টি ঢাকা হতো, তাহলে মাথা বের হয়ে যেত। (বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা হয়, তিনি এ কথাও বলেছেন যে,) হামযাও শহীদ হয়েছেন, অথচ তিনিও ছিলেন আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর আমাদের জন্য দুনিয়ার সম্পদ ব্যাপক করা হয়েছে। অথবা তিনি বলেন, আমাদেরকে দেয়া হয়েছে দুনিয়ার এক বড় অংশ। তাই আমার এ ধারণা হচ্ছে যে, আমাদের প্রতিদান আগে ভাগেই আমাদেরকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বলে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। এমনকি খাবারও পরিহার করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২৭৫; বায়হাকী, হা/৬৯৩১।]
সাহাবীগণ ধন-সম্পদের ছড়াছড়ি দেখে কান্না করতেন :
দুনিয়াতে মানুষের জন্য ধন-সম্পদ হচ্ছে ফেতনাস্বরূপ। আবার এই ধন-সম্পদই হচ্ছে তাদের জীবিকা। সুতরাং ধন-সম্পদ ছাড়া যেমনিভাবে দুনিয়াতে স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করা যায় না, ঠিক তেমনিভাবে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ জমিয়ে রাখাও ভালো নয়। কেননা এর কারণে মানুষ দুনিয়ার দিকে আকর্ষিত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহকে ভুলে যায়। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও সাহাবীগণকে অনুরূপ নির্দেশই প্রদান করেছিলেন। ফলে যখন সাহাবীগণ ধন-সম্পদের অধিক ছড়াছড়ি লক্ষ্য করতেন, তখন খুবই ব্যথিত হতেন এবং কেঁদে দিতেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
আবু সুফিয়ান তার কিছু শাইখ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা সা‘দ (রাঃ) সালমান (রাঃ)-কে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গেলেন। সেসময় তিনি তাকে কান্না অবস্থায় পেলেন। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন, তুমি কান্না করছ কেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ তো তোমার উপর সমত্মুষ্ট অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি হাউজে কাউসারে তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবেন। তখন সালমান (রাঃ) তাকে বললেন, বিষয়টি এমন নয়। আমি মৃত্যুর ভয়ে কান্না করছি না এবং দুনিয়ার কোন লোভের জন্যও কান্না করছি না। আমি কান্না করছি এজন্য যে, নবী ﷺ আমাদের থেকে দুনিয়া ও মৃত্যুর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দুনিয়াতে তোমাদের কারো অবস্থা এ রকম হবে যেমন একজন পথিক যতটুকু পাথেয় নিয়ে সফরে রওয়ানা দেয়; অথচ আমার পাশে এই উন্নতমানের বালিশগুলো পড়ে আছে এবং এই দামি দামি জিনিসগুলো পড়ে আছে। তখন সা‘দ (রাঃ) তাকে বললেন, হে আবু আবদুল্লাহ! তুমি আমাদেরকে একটি অঙ্গীকার দাও, যা তোমার পরে আমরা পালন করব। তখন তিনি বললেন, হে সা‘দ! যখন তুমি কোন আশা পোষণ কর তখন আল্লাহকে স্মরণ করো, যখন তোমার হাতে কোন কিছু ব্যয় কর, তখনও আল্লাহকে স্মরণ করো এবং যখন তুমি বিচার-ফায়সালা কর, তখনও আল্লাহকে স্মরণ করো। [শু‘আবুল ঈমান, হা/১০৩৯৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৮৯১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হা/৩৫৪৫৩।]
ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে উম্মে আয়মান (রাঃ) এর কান্না :
ওহী হচ্ছে বান্দার সাথে আল্লাহর যোগাযোগ করার প্রধান মাধ্যম। আল্লাহ তা‘আলা এ মাধ্যমটি কেবল নবী-রাসূলদের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মৃত্যুর সাথে সাথেই ওহীর দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আর ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সাহাবী কান্না করেছিলেন । হাদীসে এসেছে,
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রাঃ) উমর (রাঃ)-কে বললেন, ‘‘চলো উম্মে আয়মানের নিকট তার সাথে দেখা করতে যাই, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-ও তার সাথে দেখা করতেন। ফলে যখন আমরা তার নিকট গেলাম, তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন।’’ অতঃপর তাঁরা উভয়ে বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আল্লাহ তা‘আলার নিকট যা কিছু আছে তা তাঁর রাসূলের জন্য সর্বাধিক উত্তম। উম্মে আয়মান (রাঃ) বললেন, আমি এজন্য কাঁদছি না যে, আমি জানি না আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে তা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য উত্তম; বরং আমি এজন্য কাঁদছি যে, আকাশ হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল। উম্মে আয়মানের এ কথা তাঁদেরকে আবেগাপ্লুত করে তুলল। ফলে তাঁরাও তার সঙ্গে কাঁদতে শুরু করলেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২৪৫৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৩৫; মুসনাদে আবু ই‘আলা, হা/৬৯; মিশকাত, হা/৫৯৬৭।]
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন নরম মনের মানুষ; তাই তিনি অধিক হারে ক্রন্দন করতেন :
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন খুবই নরম মনের মানুষ। তিনি আল্লাহর ভয়ে অধিক হারে ক্রন্দন করতেন। বিশেষ করে তিনি যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন, তখন তিনি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। হাদীসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রোগ যখন অত্যন্ত বেড়ে গেল, তখন তাঁকে নামাযের জামা‘আত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। অতঃপর তিনি বললেন, আবু বকরকে বলো- সে যেন লোকদের নিয়ে নামায পড়ে নেয়। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবু বকর (রাঃ) অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের লোক। তিনি যখন কুরআন পড়েন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন। অতঃপর তিনি (নবী ﷺ) বললেন, তাঁকেই নামায পড়াতে বলো। আয়েশা (রাঃ) সে একই কথা দ্বিতীয়বার বললেন। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ ﷺ) আবার বললেন, তাকেই নামায পড়াতে বলো। তোমরা তো দেখি ইউসুফ (আঃ) এর সাথিদের মতো। [সহীহ বুখারী, হা/৬৮২; সহীহ মুসলিম, হা/৪১৮; তিরমিযী, হা/৩৬৭২; ইবনে মাজাহ, হা/১২৩২; বায়হাকী, হা/১৬৩৫৯; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৬৮৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫৯৫৯।]
উরওয়া ইবনে যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন আমার পিতা-মাতাকে চিনতে শিখেছি, তখন থেকেই তাদেরকে দ্বীন পালন করতে দেখেছি। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা আমাদের বাড়িতে আসতেন। অতঃপর এক সময় (আমার পিতা) আবু বকর (রাঃ) এর মনে (মসজিদ তৈরির) আকাঙ্ক্ষা হলো, তাই তিনি নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় (রাস্তার পার্শেব) একখানা মসজিদ তৈরি করেন। সেখানে তিনি নামায আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করতেন। মুশরিকদের স্ত্রীগণ ও ছেলে-মেয়েরা (সেখানে এসে) তাঁর অবস্থা দেখে আশ্চর্যবোধ করত। আবু বকর (রাঃ) ছিলেন অধিক ক্রন্দনকারী একজন ব্যক্তি। কুরআন তিলাওয়াতকালে তিনি কান্না সামলাতে পারতেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৬।**]
তওবা কবুল হওয়ার কথা স্মরণ করে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) কান্না করতেন :
তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ)সহ বিশিষ্ট তিনজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে মুনাফিকদের মতো কোন মিথ্যা অজুহাত পেশ না করে নিজেদের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দীর্ঘ ৫০ দিন পর্যন্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করে তাদের তওবা কবুল করেন। এরপর থেকে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) যখনই উক্ত ঘটনাটি স্মরণ করতেন তখনই কেঁদে ফেলতেন। এতদ্বসংক্রান্ত ঘটনাটি বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কে ভুল ধারণা’’।
উমর (রাঃ) নামাযে কাঁদতেন :
উমর (রাঃ) ছিলেন খুবই কঠিন হৃদয়ের মানুষ। তবুও তিনি ছিলেন আল্লাহর ব্যাপারে খুবই ভীতু। কুরআন তিলাওয়াত করার সময় তিনিও কেঁদে ফেলতেন। সহীহ বুখারীতে তা‘লীক সূত্রে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ (রহ.) বলেন, আমি পেছনের কাতার হতে উমর (রাঃ) এর চাপা কান্নার আওয়াজ শুনেছি। তিনি তখন ‘‘আমি আমার দুঃখ ও বেদনার অভিযোগ একমাত্র আল্লাহর নিকটেই পেশ করছি’’ (সূরা ইউসুফ- ৮৬) এ আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন। [তা‘লীক সূত্রে সহীহ বুখারীর ‘‘ بَابُ إِذَا بَكٰي اَلإِمَامُ فِيْ الصَّلَاةِ ’’ অধ্যায়ে এসেছে; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হা/৭৩১৫; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৩৭৩; ইবনে মাজাহ, হা/৪২৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৫৪; মুসনাদুল বাযযার, হা/৪৪৪; মিশকাত, হা/১৩২।]
উসমান (রাঃ) কবরের পাশে গিয়ে কান্না করতেন :
উসমান (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জামাতা। রাসূলুল্লাহ ﷺ তার কাছে পর পর দুই মেয়েকে বিবাহ দিয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন খুবই আল্লাহভীরু। তিনি প্রায়ই কবরের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে কাঁদতেন। হাদীসে এসেছে,
উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) এর ক্রীতদাস হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমনভাবে কান্না করতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। তখন তাকে বলা হতো, আপনি জান্নাত এবং জাহান্নামের আলোচনা হলেও এত কান্না করেন না, অথচ কবরের কথা শুনলে এত কান্না করেন। তখন তিনি বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, কবর হচ্ছে পরকালের প্রথম ঘাঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি সেখানে নাজাত পাবে, অন্যান্য পরীক্ষায় নাজাত পাওয়া তার জন্য সহজ হবে। আর যে এ ঘাঁটিতে নাজাত পাবে না, অন্যান্য ঘাঁটিতে নাজাত পাওয়া তার জন্য আরো কঠিন হয়ে যাবে। উসমান (রাঃ) বলেন, আমি কবরের চেয়ে ভয়ঙ্কর আর কোন দৃশ্য দেখিনি। [তিরমিযী, হা/২৩০৮; নাসাঈ, হা/৪২৬৭।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/179/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।