HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে ২শতাধিক প্রশ্নোত্তর সহ নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ
লেখকঃ হাফেয বিন আহমাদ আল-হাকামী
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، أما بعد :
দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের জন্যে সর্বপ্রথম সঠিক আকীদাহ গ্রহণ অপরিহার্য। এ জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মক্কী জীবনের সম্পূর্ণ সময় মুশরিকদের বাতিল আকীদাহ বর্জন করে নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং এ পথে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কারণ ইসলামে আকীদাহীন আমলের কোন মূল্য নেই। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ সমাজের মুসলমানগণ সঠিক আকীদা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তারা বহু সমস্যার সম্মুখীন। মুসলমানদের অধঃপতনের মূল কারণ হল দ্বীনের সঠিক আকীদা ও শিক্ষা বর্জন করে শির্ক, সূফীবাদ ও বিদআতে জড়িয়ে পড়া। বাংলাভাষী মুসলিম অঞ্চলগুলোতেও বয়ে যাচ্ছে শির্ক-বিদআতের সয়লাব। আমাদের সমাজে যারা আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার দাবী করে তাদের অধিকাংশই সঠিক আকীদাহ হতে অনেক দূরে। শুধু তাই নয়, কবর পূজার মদমত্তে পাগল হয়ে যারা পরনের কাপড়টুকুও ধরে রাখতে পারেনা তাদেরকেও সুন্নী বলে আখ্যায়িত করা হয়!!! আর এ কারণেই বিভ্রান্ত হচ্ছে আমাদের সমাজের অসংখ্য সরল প্রাণ মুসলমান।
এমন পরিস্থিতে কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে এমন বই-পুস্তক জরুরী, যা মানুষের আকীদাহ সংশোধনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখবে। ইমাম হাফেয বিন আহমাদ আল-হাকামী (রঃ) (মৃত ১৯৫৮ খৃষ্টাব্দ) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহ বর্ণনায় দুই শতাধিক প্রশ্নোত্তর সম্বলিত ‘‘আ’লামুস্ সুন্নাহ্ আল-মানসূরা’’ আরবী ভাষায় নামে একটি চমৎকার কিতাব রচনা করেছেন। বইটিকে নাজাতপ্রাপ্ত দলের আকীদা বর্ণনার ক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ বলা যেতে পারে। কারণ তাতে আকীদার মূল বিষয়গুলো অতি সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকটি মাসআলার সাথে দলীলও উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে পাঠকদের কাছে আকীদার বিষয়গুলো সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। লেখক এখানে শুধু আহ্লুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাযহাব বর্ণনা করেছেন। আকীদার বিভিন্ন মাসআলায় তিনি বিদআতীদের কথার প্রতিবাদ করেছেন। তাদের বাতিল কথাগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন নি। কারণ এ ব্যাপারে আলেমগণ ইতিপূর্বে বিশাল বিশাল পুস্তক রচনা করেছেন।
বিভিন্ন ভাষায় কিতাবটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাই বাংলা ভাষী মুসলিম ভাইদের এ ধরণের বইয়ের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বইটি বাংলায় অনুবাদের কাজে হাত দেই। অল্প সময়ের মধ্যে অনুবাদের কাজও শেষ হয়ে যায়।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে যথা সময়ে পুস্তকটি পাঠকের হাতে তুলে দিতে পেরে তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি। বনী আদমের প্রতিটি কাজেই ভুল থেকে যায়। তাই বইটিতে কোন ভুল-ভ্রান্তি নজরে আসলে জানিয়ে বাধিত করবেন, যাতে করে পরবর্তীতে তা সংশোধন করা যায়।
হে আল্লাহ! এই বইয়ের লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক ও ছাপানোর কাজে সহযোগিতাকারী, তত্বাবধানকারী এবং পাঠক-পাঠিকাদের সবাইকে উত্তম বিনিময় দানে ভূষিত কর। সকলকে মার্জনা কর এবং এ কাজটিকে তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কবূল কর। আমীন
আব্দুল্লাহ্ শাহেদ আল-মাদানী
মোবাইলঃ- ০১৭৩২৩২২১৫৯
সৌদি আরব- +৯৬৬৫০৩০৭৬৩৯০
ঈ-মেইলঃ- ashahed1975@gmail.com
দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের জন্যে সর্বপ্রথম সঠিক আকীদাহ গ্রহণ অপরিহার্য। এ জন্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মক্কী জীবনের সম্পূর্ণ সময় মুশরিকদের বাতিল আকীদাহ বর্জন করে নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এবং এ পথে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কারণ ইসলামে আকীদাহীন আমলের কোন মূল্য নেই। বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ সমাজের মুসলমানগণ সঠিক আকীদা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে তারা বহু সমস্যার সম্মুখীন। মুসলমানদের অধঃপতনের মূল কারণ হল দ্বীনের সঠিক আকীদা ও শিক্ষা বর্জন করে শির্ক, সূফীবাদ ও বিদআতে জড়িয়ে পড়া। বাংলাভাষী মুসলিম অঞ্চলগুলোতেও বয়ে যাচ্ছে শির্ক-বিদআতের সয়লাব। আমাদের সমাজে যারা আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার দাবী করে তাদের অধিকাংশই সঠিক আকীদাহ হতে অনেক দূরে। শুধু তাই নয়, কবর পূজার মদমত্তে পাগল হয়ে যারা পরনের কাপড়টুকুও ধরে রাখতে পারেনা তাদেরকেও সুন্নী বলে আখ্যায়িত করা হয়!!! আর এ কারণেই বিভ্রান্ত হচ্ছে আমাদের সমাজের অসংখ্য সরল প্রাণ মুসলমান।
এমন পরিস্থিতে কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে এমন বই-পুস্তক জরুরী, যা মানুষের আকীদাহ সংশোধনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখবে। ইমাম হাফেয বিন আহমাদ আল-হাকামী (রঃ) (মৃত ১৯৫৮ খৃষ্টাব্দ) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহ বর্ণনায় দুই শতাধিক প্রশ্নোত্তর সম্বলিত ‘‘আ’লামুস্ সুন্নাহ্ আল-মানসূরা’’ আরবী ভাষায় নামে একটি চমৎকার কিতাব রচনা করেছেন। বইটিকে নাজাতপ্রাপ্ত দলের আকীদা বর্ণনার ক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ বলা যেতে পারে। কারণ তাতে আকীদার মূল বিষয়গুলো অতি সহজ ও সংক্ষিপ্তভাবে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেকটি মাসআলার সাথে দলীলও উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে পাঠকদের কাছে আকীদার বিষয়গুলো সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। লেখক এখানে শুধু আহ্লুস্ সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাযহাব বর্ণনা করেছেন। আকীদার বিভিন্ন মাসআলায় তিনি বিদআতীদের কথার প্রতিবাদ করেছেন। তাদের বাতিল কথাগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন নি। কারণ এ ব্যাপারে আলেমগণ ইতিপূর্বে বিশাল বিশাল পুস্তক রচনা করেছেন।
বিভিন্ন ভাষায় কিতাবটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাই বাংলা ভাষী মুসলিম ভাইদের এ ধরণের বইয়ের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বইটি বাংলায় অনুবাদের কাজে হাত দেই। অল্প সময়ের মধ্যে অনুবাদের কাজও শেষ হয়ে যায়।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে যথা সময়ে পুস্তকটি পাঠকের হাতে তুলে দিতে পেরে তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি। বনী আদমের প্রতিটি কাজেই ভুল থেকে যায়। তাই বইটিতে কোন ভুল-ভ্রান্তি নজরে আসলে জানিয়ে বাধিত করবেন, যাতে করে পরবর্তীতে তা সংশোধন করা যায়।
হে আল্লাহ! এই বইয়ের লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক ও ছাপানোর কাজে সহযোগিতাকারী, তত্বাবধানকারী এবং পাঠক-পাঠিকাদের সবাইকে উত্তম বিনিময় দানে ভূষিত কর। সকলকে মার্জনা কর এবং এ কাজটিকে তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কবূল কর। আমীন
আব্দুল্লাহ্ শাহেদ আল-মাদানী
মোবাইলঃ- ০১৭৩২৩২২১৫৯
সৌদি আরব- +৯৬৬৫০৩০৭৬৩৯০
ঈ-মেইলঃ- ashahed1975@gmail.com
উত্তরঃ বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব হচ্ছে, তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তাদের থেকে যে বিষয়ের অঙ্গীকার নিয়েছেন, যে বিষয় দিয়ে রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়টির জন্যই আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়া-আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ের জন্যেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে, দাড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে, আমলনামা প্রদান করা হবে। এ বিষয়টির কারণেই কেউ সৌভাগ্যবান হবে আবার কেউ হবে হতভাগা। এ অনুযায়ী কিয়ামতের দিন নূর বন্টিত হবে। সে দিন আল্লাহ যাকে নূর দান করবেন না, তার কোন নূর থাকবে না।
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা মানুষ ও জিন জাতিকে পৃথিবীতে তাঁর একত্ববাদ ও এবাদত প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لاَعِبِينَ * مَا خَلَقْنَاهُمَا إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
‘‘আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবতী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বুঝে না’’। (সূরা আদ্ দুখানঃ ৩৮-৩৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا
‘‘আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে তা অযথা সৃষ্টি করি নি। এটা কাফেরদের ধারণা মাত্র’’। (সূরা সোয়াদাঃ ২৭) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
‘‘আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না’’। (সূরা জাসিয়াঃ ২২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ
‘‘আর আমি মানব এবং জিনকে কেবল আমার দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছি’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لاَعِبِينَ * مَا خَلَقْنَاهُمَا إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
‘‘আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবতী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বুঝে না’’। (সূরা আদ্ দুখানঃ ৩৮-৩৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا
‘‘আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে তা অযথা সৃষ্টি করি নি। এটা কাফেরদের ধারণা মাত্র’’। (সূরা সোয়াদাঃ ২৭) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
‘‘আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না’’। (সূরা জাসিয়াঃ ২২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ
‘‘আর আমি মানব এবং জিনকে কেবল আমার দাসত্ব করার জন্য সৃষ্টি করেছি’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)
উত্তরঃ আব্দ দ্বারা যদি অধিনস্ত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আসমান-যমীনের সকল জ্ঞানবান ও জ্ঞানহীন, তাজা-শুকনা, চলমান-স্থির, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কাফের-মুমিন, সৎ-অসৎ সব কিছুই উদ্দেশ্য। সবই আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালিত, তাঁর অধিনস্ত, তাঁর পরিচালনাধীন। প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট একটি গন্তব্যস্থল রয়েছে। সেখানে গিয়ে তার যাত্রা শেষ হবে। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট একটি সময়ের উদ্দেশ্যে চলমান। তার জন্যে নির্ধারিত সীমা ছেড়ে একটি সরিষার দানা পরিমাণ স্থানও অতিক্রম করতে পারবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
‘‘আর এটি হল মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর নির্ধারণ’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮)
আর আব্দ দ্বারা যদি এবাদতকারী, অনুগত ও প্রিয় উদ্দেশ্য হয় তাহলে আব্দ অর্থ হবে আল্লাহর সম্মানিত মুমিন ব্যক্তিগণ। তারা হবেন আল্লাহর পরহেজগার বন্ধু। তাদের কোন ভয় নেই। আর তারা চিন্তিতও হবে না।
ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
‘‘আর এটি হল মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর নির্ধারণ’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮)
আর আব্দ দ্বারা যদি এবাদতকারী, অনুগত ও প্রিয় উদ্দেশ্য হয় তাহলে আব্দ অর্থ হবে আল্লাহর সম্মানিত মুমিন ব্যক্তিগণ। তারা হবেন আল্লাহর পরহেজগার বন্ধু। তাদের কোন ভয় নেই। আর তারা চিন্তিতও হবে না।
উত্তরঃ আমলের মধ্যে যখন দু’টি বস্ত্ত পরিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যাবে তখন তা এবাদতে পরিণত হবে। (১) আল্লাহকে পরিপূর্ণরূপে ভালবাসা এবং (২) আল্লাহর সামনে পরিপূর্ণভাবে বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
‘‘আর যারা ঈমানদার, তারা আল্লাহ্কে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ
‘‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ তাদের পালনকর্তার ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকে’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৫৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ
‘‘তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ৯০)
وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ
‘‘আর যারা ঈমানদার, তারা আল্লাহ্কে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ
‘‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ তাদের পালনকর্তার ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকে’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৫৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ
‘‘তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ৯০)
উত্তরঃ বান্দা কর্তৃক আল্লাহকে ভালবাসার প্রমাণ হল, সে আল্লাহর প্রিয় বস্ত্তকে ভালবাসবে এবং আল্লাহ যা অপছন্দ করেন, সে তা অপছন্দ করবে। আল্লাহর আদেশ মেনে চলবে এবং তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহর বন্ধুদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর শত্রুদেরকে শত্রু মনে করবে। এ জন্যই আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করা ঈমানের সবচেয়ে মজবুত হাতল।
উত্তরঃ আল্লাহ যা পছন্দ করেন ও ভালবাসেন, তা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন আদেশের মাধ্যমে এবং যা অপছন্দ করেন তা জানিয়ে দিয়েছেন নিষেধের মাধ্যমে। সুতরাং রাসূল প্রেরণ এবং আসমানী কিতাব নাযিলের মাধ্যমে বান্দাগণ আল্লাহর পছন্দনীয় আমলসমূহ জানতে পেরেছে। এর মাধ্যমেই তাদের নিকট আল্লাহর অকাট্য দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তাঁর পরিপূর্ণ হিকমত প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
رُسُلاً مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ
‘‘সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। যাতে রাসূলগণকে প্রেরণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন সুযোগ না থাকে’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৫) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘‘বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী ও দয়ালু’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১)
رُسُلاً مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ
‘‘সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। যাতে রাসূলগণকে প্রেরণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন সুযোগ না থাকে’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৫) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘‘বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী ও দয়ালু’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১)
উত্তরঃ এবাদতের শর্ত হচ্ছে তিনটি। (১) ‘সিদকুল আযীমাহ’ তথা এবাদত করার সুদৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা। আর এটি হচ্ছে এবাদতের অস্থিত্বের শর্ত। (২) নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া। (৩) আল্লাহ তা’আলা যে শরীয়ত (দ্বীন) অনুযায়ী এবাদত করতে বলেছেন, এবাদতটি সেই শরীয়ত অনুযায়ী হওয়া। শেষ দু’টি হচ্ছে এবাদত কবুল হওয়ার শর্ত।
উত্তরঃ তা হচ্ছে এবাদত করতে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে অলসতা পরিহার করা এবং কথা ও কাজে পরিপূর্ণ মিল থাকা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لاَ تَفْعَلُونَ * كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না তা বল কেন? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষ জনক’’। (সূরা আস্ সাফঃ ২-৩)
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لاَ تَفْعَلُونَ * كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না তা বল কেন? তোমরা যা কর না তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষ জনক’’। (সূরা আস্ সাফঃ ২-৩)
উত্তরঃ নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়ার অর্থ হচ্ছে বান্দা তার প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا أُمِرُوا إلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
‘‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে’’। (সূরা আল-বাইয়্যিনাহঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا لأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى * إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الأَعْلَى
‘‘এবং তাঁর উপর কারও এমন কোন অনুগ্রহ নেই, যার বিনিময় প্রদান করা হচ্ছে; বরং তার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই’’। (সূরা আল-লাইলঃ ১৯-২০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لاَ نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلاَ شُكُورًا
‘‘তারা বলেঃ আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তোমাদেরকে আহার প্রদান করি। তোমাদের পক্ষ হতে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’’। (সূরা আল-ইনসানঃ ৯) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ
‘‘যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে এর কিছু দিয়ে দেই। আর পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না’’। (সূরা শুরাঃ ২০) এ মর্মে আরো আয়াত রয়েছে।
وَمَا أُمِرُوا إلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
‘‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে’’। (সূরা আল-বাইয়্যিনাহঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا لأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى * إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الأَعْلَى
‘‘এবং তাঁর উপর কারও এমন কোন অনুগ্রহ নেই, যার বিনিময় প্রদান করা হচ্ছে; বরং তার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই’’। (সূরা আল-লাইলঃ ১৯-২০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لاَ نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلاَ شُكُورًا
‘‘তারা বলেঃ আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তোমাদেরকে আহার প্রদান করি। তোমাদের পক্ষ হতে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’’। (সূরা আল-ইনসানঃ ৯) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ
‘‘যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে এর কিছু দিয়ে দেই। আর পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না’’। (সূরা শুরাঃ ২০) এ মর্মে আরো আয়াত রয়েছে।
উত্তরঃ সেটি হচ্ছে, দ্বীনে হানীফ তথা মিল্লাতে ইবরাহীম। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الأِسْلاَمُ
‘‘আল্লাহর নিকট ইসলাম হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا
‘‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কোন দ্বীন তালাশ করছে? অথচ আসমান-যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তারই অনুগত’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلاَّ مَنْ سَفِهَ نَفْسَهُ
‘‘দ্বীনে ইবরাহীম থেকে কেবল সেই ব্যক্তিই মুখ ফিরিয়ে নেয়, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৩০) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنْ الْخَاسِرِينَ
‘‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তা কখনও তার নিকট থেকে গ্রহণ করা হবেনা। আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৫) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنْ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ
‘‘তাদের কি এমন শরীক আছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন নির্ধারণ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ্ দেন নি?’’ (সূরা শুরাঃ ২১)
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الأِسْلاَمُ
‘‘আল্লাহর নিকট ইসলাম হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا
‘‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কোন দ্বীন তালাশ করছে? অথচ আসমান-যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তারই অনুগত’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلاَّ مَنْ سَفِهَ نَفْسَهُ
‘‘দ্বীনে ইবরাহীম থেকে কেবল সেই ব্যক্তিই মুখ ফিরিয়ে নেয়, যে নিজেকে বোকা প্রতিপন্ন করে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৩০) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنْ الْخَاسِرِينَ
‘‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তা কখনও তার নিকট থেকে গ্রহণ করা হবেনা। আর আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৮৫) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنْ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ
‘‘তাদের কি এমন শরীক আছে, যারা তাদের জন্য এমন দ্বীন নির্ধারণ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ্ দেন নি?’’ (সূরা শুরাঃ ২১)
উত্তরঃ ইসলাম হলো তাওহীদ (একত্ববাদ) ও আনুগত্যের সহিত এক আল্লাহ্র নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পন করা এবং শিরক থেকে সম্পর্কচ্ছেদ ঘোষণা করা। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে নিজেকে সোপর্দ করে, তার চাইতে উত্তম দ্বীন আর কারো নিকট আছে কি?’’ (সূরা নিসাঃ ১২৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى
‘‘আর যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ন হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ্ অভিমুখী করে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল’’। (সূরা লুকমানঃ ২২) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرْ الْمُخْبِتِينَ
‘‘তোমাদের সত্য মা’বুদ হচ্ছেন মাত্র একজন (আল্লাহ)। সুতরাং তোমরা তাঁরই জন্য অনুগত হও। আপনি বিনয়ীদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন’’। (সূরা হজ্জঃ ৩৪)
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে নিজেকে সোপর্দ করে, তার চাইতে উত্তম দ্বীন আর কারো নিকট আছে কি?’’ (সূরা নিসাঃ ১২৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى
‘‘আর যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ন হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ্ অভিমুখী করে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল’’। (সূরা লুকমানঃ ২২) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرْ الْمُخْبِتِينَ
‘‘তোমাদের সত্য মা’বুদ হচ্ছেন মাত্র একজন (আল্লাহ)। সুতরাং তোমরা তাঁরই জন্য অনুগত হও। আপনি বিনয়ীদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন’’। (সূরা হজ্জঃ ৩৪)
১৬
প্রশ্নঃ (১৪) ইসলাম শব্দটি যখন এককভাবে ব্যবহৃত হবে, তখন দ্বীনের সকল স্তরকে অন্তর্ভূক্ত করার দলীল কী?উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الأِسْلاَمُ
‘‘আল্লাহর নিকট ইসলাম হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন’’। (আল-ইমরানঃ ১৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ
‘‘গরীব অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছে। আর অচিরেই যেভাবে তার সূচনা হয়েছিল, সে রকম গরীব [- আলেমগণ গরীব শব্দের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উক্তি তুলে ধরা হলঃ ১) ইসলাম প্রথমে মদীনা থেকে বিস্তার লাভ করেছে। কিয়ামতের পূর্বে আবার মদীনায় ফেরত যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ إِنَّ الْإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا ‘‘সাপ যেমন তার গর্তে আশ্রয় নেয় ঈমানও ঠিক সেভাবে (শেষ যামানায়) মদীনায় আশ্রয় নিবে’’। বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হজ্জ।২) অল্প কয়েকজন লোকের মাধ্যমে ইসলামের সূচনা হয়েছে। কিয়ামতের পূর্বে আবার ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা কমে পূর্বের ন্যায় হয়ে যাবে। ( تأويل مختلف الحديث 1/32। ৩) ইসলামের প্রথম যুগে অল্প কয়েকজন লোকের ভিতরে ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় ছিল। কিয়ামতের পূর্বে আবার ইসলাম সে অবস্থায় ফেরত যাবে।] অবস্থায় ফেরত আসবে’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
أَفْضَلُ الإِسْلاَمِ إِيْمَانٌ بِاللّهِ
‘‘ইসলামের সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা’’। [- মুসনাদে আহমাদ (৪/১১৪)।]
إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الأِسْلاَمُ
‘‘আল্লাহর নিকট ইসলাম হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন’’। (আল-ইমরানঃ ১৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
بَدَأَ الْإِسْلَامُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ
‘‘গরীব অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছে। আর অচিরেই যেভাবে তার সূচনা হয়েছিল, সে রকম গরীব [- আলেমগণ গরীব শব্দের বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি উক্তি তুলে ধরা হলঃ ১) ইসলাম প্রথমে মদীনা থেকে বিস্তার লাভ করেছে। কিয়ামতের পূর্বে আবার মদীনায় ফেরত যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ إِنَّ الْإِيمَانَ لَيَأْرِزُ إِلَى الْمَدِينَةِ كَمَا تَأْرِزُ الْحَيَّةُ إِلَى جُحْرِهَا ‘‘সাপ যেমন তার গর্তে আশ্রয় নেয় ঈমানও ঠিক সেভাবে (শেষ যামানায়) মদীনায় আশ্রয় নিবে’’। বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হজ্জ।২) অল্প কয়েকজন লোকের মাধ্যমে ইসলামের সূচনা হয়েছে। কিয়ামতের পূর্বে আবার ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা কমে পূর্বের ন্যায় হয়ে যাবে। ( تأويل مختلف الحديث 1/32। ৩) ইসলামের প্রথম যুগে অল্প কয়েকজন লোকের ভিতরে ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় ছিল। কিয়ামতের পূর্বে আবার ইসলাম সে অবস্থায় ফেরত যাবে।] অবস্থায় ফেরত আসবে’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
أَفْضَلُ الإِسْلاَمِ إِيْمَانٌ بِاللّهِ
‘‘ইসলামের সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা’’। [- মুসনাদে আহমাদ (৪/১১৪)।]
উত্তরঃ জিবরীল (আঃ) যখন দ্বীন সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, তখন উত্তরে তিনি বললেনঃ
الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً )
‘‘ইসলাম হচ্ছে (১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল। (২) ছালাত কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) রামাযানে ছিয়াম পালন করা। (৫) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
‘‘ইসলামের রুকন হচ্ছে পাঁচটি। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তাঁর রাসূল। (২) ছালাত (নামায) কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা। (৫) রামাযানের রোযা পালন করা। এখানেও ইসলামের রুকন পাঁচটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হজ্জকে রামাযানের রোজার পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً )
‘‘ইসলাম হচ্ছে (১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রাসূল। (২) ছালাত কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) রামাযানে ছিয়াম পালন করা। (৫) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
‘‘ইসলামের রুকন হচ্ছে পাঁচটি। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তাঁর রাসূল। (২) ছালাত (নামায) কায়েম করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা। (৫) রামাযানের রোযা পালন করা। এখানেও ইসলামের রুকন পাঁচটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হজ্জকে রামাযানের রোজার পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ এ দু’টি তথা আল্লাহ্কে এক বলে সাক্ষ্য দেয়া এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসাবে সাক্ষ্য দেয়া বাক্য পাঠ করা ব্যতীত কোন বান্দা ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘‘তারাই তো মুমিন, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করে’’। (আন-নূরঃ ৬২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
‘‘আমাকে মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে যে পর্যন্ত না তারা এ কথার স্বীকৃতি দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘‘তারাই তো মুমিন, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করে’’। (আন-নূরঃ ৬২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
‘‘আমাকে মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে যে পর্যন্ত না তারা এ কথার স্বীকৃতি দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ ‘‘আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই।’’ একথার সাক্ষ্য দেয়ার দলীল হলো, আল্লাহ্র বাণীঃ
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ وَالْمَلاَئِكَةُ وَأُوْلُوا الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘‘আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই। ফেরেস্তাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৮) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
‘‘হে নবী! আপনি জেনে নিন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلاَّ اللَّهُ
‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৬২) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِنْ وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَهٍ
‘‘আল্লাহ তা’আলা কাউকে সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেন নি। আর তাঁর সাথে অন্য মাবুদও নেই’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৯১) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
قُلْ لَوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُولُونَ إِذًا لأبْتَغَوْا إِلَى ذِي الْعَرْشِ سَبِيلاً
‘‘হে নবী! আপনি বলে দিন যে, তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্য কোন উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা অন্বেষণ করত’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৪২)
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ وَالْمَلاَئِكَةُ وَأُوْلُوا الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘‘আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই। ফেরেস্তাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৮) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
‘‘হে নবী! আপনি জেনে নিন যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلاَّ اللَّهُ
‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৬২) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِنْ وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَهٍ
‘‘আল্লাহ তা’আলা কাউকে সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেন নি। আর তাঁর সাথে অন্য মাবুদও নেই’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৯১) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
قُلْ لَوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُولُونَ إِذًا لأبْتَغَوْا إِلَى ذِي الْعَرْشِ سَبِيلاً
‘‘হে নবী! আপনি বলে দিন যে, তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্য কোন উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা অন্বেষণ করত’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৪২)
উত্তরঃ এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ এবাদতের যোগ্য হওয়ার কথা অস্বীকার করে শুধু আল্লাহর জন্য এবাদত সাব্যস্ত করা। তাঁর এবাদতে কোন অংশীদার নেই। যেমন তাঁর রাজ্যে কারও কোন অংশ নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ
‘‘এটা এ কারণেও যে, আল্লাহই সত্য। আর তাঁকে ব্যতীত লোকেরা যাকে আহবান করে তা বাতিল। আর আল্লাহ তা’আলা সবার উচ্চে, মহান’’। (সূরা হজ্জঃ ৬২)
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ
‘‘এটা এ কারণেও যে, আল্লাহই সত্য। আর তাঁকে ব্যতীত লোকেরা যাকে আহবান করে তা বাতিল। আর আল্লাহ তা’আলা সবার উচ্চে, মহান’’। (সূরা হজ্জঃ ৬২)
২১
প্রশ্নঃ (১৯) যে সমস্ত শর্ত ব্যতীত ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ) পাঠ করাতে কোন লাভ নেই সেগুলো কি কি?উত্তরঃ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর শর্ত হচ্ছে সাতটি। (১) এই কালেমার অর্থ অবগত হওয়া। এর অর্থ হলো- এক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। এখানে দুটি দিক রয়েছেঃ একটি নেতিবাচক অপরটি ইতিবাচক। নেতিবাচক দিকটি হলো ( لا إله ) (নেই কোন মা’বুদ)। এই বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহ ব্যতীত যত বস্ত্তর উপাসনা করা হয় তার সব কিছুই অস্বীকার করা হয়েছে।
ইতিবাচক দিকটি হলো ( إلا الله ) আল্লাহ ছাড়া- এর মাধ্যমে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদতকেই সুদৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
(২) অন্তর দিয়ে উক্ত অর্থের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা।
(৩) এর অর্থের প্রতি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্যভাবে মস্তক অবনত করা ও অনুগত থাকা।
(৪) পরিপূর্ণভাবে তা গ্রহণ করে নেয়া। এর চাহিদা ও দাবীর কোন অংশকেই প্রত্যাখ্যান না করা।
(৫) একনিষ্ঠভাবে তা পাঠ করা।
(৬) অন্তরের গভীর থেকে তা সত্য বলে মেনে নেয়া। শুধু জবানের মাধ্যমে নয়।
(৭) এই পবিত্র কালেমাকে এবং তার অনুসারীদেরকে অন্তর দিয়ে ভালবাসা। এই কালেমার কারণেই কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা আবার কাউকে শত্রু মনে করা।
ইতিবাচক দিকটি হলো ( إلا الله ) আল্লাহ ছাড়া- এর মাধ্যমে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদতকেই সুদৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
(২) অন্তর দিয়ে উক্ত অর্থের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা।
(৩) এর অর্থের প্রতি প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্যভাবে মস্তক অবনত করা ও অনুগত থাকা।
(৪) পরিপূর্ণভাবে তা গ্রহণ করে নেয়া। এর চাহিদা ও দাবীর কোন অংশকেই প্রত্যাখ্যান না করা।
(৫) একনিষ্ঠভাবে তা পাঠ করা।
(৬) অন্তরের গভীর থেকে তা সত্য বলে মেনে নেয়া। শুধু জবানের মাধ্যমে নয়।
(৭) এই পবিত্র কালেমাকে এবং তার অনুসারীদেরকে অন্তর দিয়ে ভালবাসা। এই কালেমার কারণেই কাউকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা আবার কাউকে শত্রু মনে করা।
২২
প্রশ্নঃ (২০) ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ)এর সাক্ষ্য দেয়ার পূর্বে তার অর্থ সম্পর্কে অবগত হওয়া যে শর্ত, কুরআন ও সুন্নাহ্ হতে তার দলীল কী?উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
إِلاَّ مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُم يَعْلَمُوْنَ
‘‘তবে যারা সত্য স্বীকার করে এবং তারা অবগতও বটে’’। (সূরা যখরুফঃ ৮৬) অর্থাৎ তারা জবানের মাধ্যমে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ উচ্চারণ করার পূর্বে অন্তর দিয়ে তার অর্থ উপলব্ধি করে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ )
‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যে, সে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করত যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
إِلاَّ مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُم يَعْلَمُوْنَ
‘‘তবে যারা সত্য স্বীকার করে এবং তারা অবগতও বটে’’। (সূরা যখরুফঃ ৮৬) অর্থাৎ তারা জবানের মাধ্যমে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ উচ্চারণ করার পূর্বে অন্তর দিয়ে তার অর্থ উপলব্ধি করে থাকে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ )
‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করল এমন অবস্থায় যে, সে অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করত যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ দলীল হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمْ الصَّادِقُونَ
‘‘মু’মিন তো তারাই, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়নের পর সন্দেহ পোষণ করে না। এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ’’। (সূরা হুজরাতঃ ১৫) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّة
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘এক আল্লাহ্ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’। যে কোন বান্দা এই দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্যদানকারী অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তাতে কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ না করবে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রাকে বললেনঃ
فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ )
‘‘এই দেয়ালের পিছনে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হবে এবং অন্তরের বিশ্বাসের সাথে সে যদি এই সাক্ষ্য দেয় যে, ‘‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই’’ তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দাও’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمْ الصَّادِقُونَ
‘‘মু’মিন তো তারাই, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়নের পর সন্দেহ পোষণ করে না। এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ’’। (সূরা হুজরাতঃ ১৫) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّة
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘এক আল্লাহ্ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’। যে কোন বান্দা এই দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্যদানকারী অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তাতে কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ না করবে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রাকে বললেনঃ
فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطِ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ )
‘‘এই দেয়ালের পিছনে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হবে এবং অন্তরের বিশ্বাসের সাথে সে যদি এই সাক্ষ্য দেয় যে, ‘‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই’’ তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দাও’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
২৪
প্রশ্নঃ (২২) ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ)এর অন্যতম শর্ত হচ্ছে, এর অর্থের প্রতি অনুগত থাকা। কুরআন ও হাদীছ থেকে এর দলীল কী?উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى
‘‘আর যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ন হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমুখী করে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল’’। (সূরা লুকমানঃ ২২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لا يؤمن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به
‘‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনীত জীবন বিধানের পূর্ণ অনুসারী হবে। [- হাদীছটি দুর্বল। কারণ তার সনদে রয়েছে দুর্বল রাবী নুআইম বিন হাম্মাদ। ইমাম নাসির উদ্দীন আলবানী (রঃ) বলেনঃ হাদীছের সনদ দুর্বল। যিলালুল জান্নাত হাদীছ নং-১৫, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ১৬৭। তবে হাদীছের অর্থ সঠিক। কারণ এর সমর্থনে কুরআনের অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীছ রয়েছে।] এই মর্মে আরো অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَلْيَحْذَرْ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘‘অতএব, যারা তাঁর নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, ফিতনা (বিপর্যয়) তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে আক্রমণ করবে’’। (সূরা নূরঃ ৬৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘‘আপনার প্রভুর শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ফয়সালাকারী মেনে নিবে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে তাদের মনে কোন প্রকার সংকীর্ণতা পাবে না এবং আপনার ফয়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিবে’’। (সূরা নিসাঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
‘‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণের ক্ষমতা নেই। (সূরা আহযাবঃ ৩৬) এ ছাড়া আরো অনেক দলীল রয়েছে।
وَمَنْ يُسْلِمْ وَجْهَهُ إِلَى اللَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى
‘‘আর যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ন হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমুখী করে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল’’। (সূরা লুকমানঃ ২২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لا يؤمن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به
‘‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনীত জীবন বিধানের পূর্ণ অনুসারী হবে। [- হাদীছটি দুর্বল। কারণ তার সনদে রয়েছে দুর্বল রাবী নুআইম বিন হাম্মাদ। ইমাম নাসির উদ্দীন আলবানী (রঃ) বলেনঃ হাদীছের সনদ দুর্বল। যিলালুল জান্নাত হাদীছ নং-১৫, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ১৬৭। তবে হাদীছের অর্থ সঠিক। কারণ এর সমর্থনে কুরআনের অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীছ রয়েছে।] এই মর্মে আরো অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَلْيَحْذَرْ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘‘অতএব, যারা তাঁর নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, ফিতনা (বিপর্যয়) তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে আক্রমণ করবে’’। (সূরা নূরঃ ৬৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘‘আপনার প্রভুর শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ফয়সালাকারী মেনে নিবে। অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে তাদের মনে কোন প্রকার সংকীর্ণতা পাবে না এবং আপনার ফয়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিবে’’। (সূরা নিসাঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا
‘‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণের ক্ষমতা নেই। (সূরা আহযাবঃ ৩৬) এ ছাড়া আরো অনেক দলীল রয়েছে।
২৫
প্রশ্নঃ (২৩) ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ)এর অন্যতম শর্ত হচ্ছে, এর মর্মার্থকে কবুল করে নেয়া। কুরআন ও সুন্নাহ্ থেকে এর দলীল কী?উত্তরঃ যারা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ )এর মর্মার্থকে কবুল করে নেয় নি, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
احْشُرُوا الَّذِينَ ظَلَمُوا وَأَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ إلى قوله- إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ * وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوا آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ
‘‘একত্রিত কর যালেমদেরকে, তাদের দোসরদেরকে এবং এরা যাদের এবাদত করত (তাদেরকেও)। -------তাদেরকে যখন বলা হত তোমরা বলঃ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই) তখন তারা অহংকার করত এবং তারা বলতঃ আমরা কি একজন পাগল কবির কথায় আমাদের মা’বুদদেরকে পরিত্যাগ করব? (সূরা আস্ সাফ্ফাতঃ ২২-৩৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
مَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ مِنَ الْهُدَى وَالْعِلْمِ كَمَثَلِ الْغَيْثِ الْكَثِيرِ أَصَابَ أَرْضًا فَكَانَ مِنْهَا نَقِيَّةٌ قَبِلَتِ الْمَاءَ فَأَنْبَتَتِ الْكَلأَْ وَالْعُشْبَ الْكَثِيرَ وَكَانَتْ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ الْمَاءَ فَنَفَعَ اللَّهُ بِهَا النَّاسَ فَشَرِبُوا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا وَأَصَابَتْ مِنْهَا طَائِفَةً أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ لاَ تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلَأً فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللَّهِ وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأْسًا وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللَّهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ )
‘‘মহান আল্লাহ আমাকে যে হেদায়াত এবং ইল্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, তার উদাহরণ হল ঐ বৃষ্টির ন্যায় যা কোন যমিনে বর্ষিত হল। উক্ত যমিনের কিছু অংশ ছিল খুবই ভাল ও উর্বর। সে যমিন পানি ধারণ করে প্রচুর ঘাস, তৃণলতা ও শাক-সব্জি উৎপন্ন করল। যমিনের অন্য অংশ ছিল খুবই শক্ত। তা পানি ধারণ করে রাখল। উহা দ্বারা আল্লাহ মানুষের উপকার করলেন। মানুষেরা তা পান করল, চতুষ্পদ জন্তুকে পান করালো এবং চাষাবাদও করল। সেই বৃষ্টির কিছু পানি যমিনের এমন এক অংশে পতিত হল, যা ছিল পাথরযুক্ত ময়দান। সে পানি ধরে রাখতে পারে না এবং কোন তৃণলতাও উৎপন্ন করতে পারেনা।
সুতরাং এটিই হল ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন বুঝতে সক্ষম হয়েছে এবং আমাকে আল্লাহ যে হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন, তা দ্বারা উপকৃত হয়েছে। তাই সে নিজে উহা শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে।
এই বৃষ্টির উদাহরণ ঐ ব্যক্তির জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে, যে ব্যক্তি দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের জন্য চেষ্টা করেনি এবং আমাকে আল্লাহ যে হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তা কবূলও করেনি। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।]
احْشُرُوا الَّذِينَ ظَلَمُوا وَأَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ إلى قوله- إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ * وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُوا آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ
‘‘একত্রিত কর যালেমদেরকে, তাদের দোসরদেরকে এবং এরা যাদের এবাদত করত (তাদেরকেও)। -------তাদেরকে যখন বলা হত তোমরা বলঃ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই) তখন তারা অহংকার করত এবং তারা বলতঃ আমরা কি একজন পাগল কবির কথায় আমাদের মা’বুদদেরকে পরিত্যাগ করব? (সূরা আস্ সাফ্ফাতঃ ২২-৩৬) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
مَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ مِنَ الْهُدَى وَالْعِلْمِ كَمَثَلِ الْغَيْثِ الْكَثِيرِ أَصَابَ أَرْضًا فَكَانَ مِنْهَا نَقِيَّةٌ قَبِلَتِ الْمَاءَ فَأَنْبَتَتِ الْكَلأَْ وَالْعُشْبَ الْكَثِيرَ وَكَانَتْ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ الْمَاءَ فَنَفَعَ اللَّهُ بِهَا النَّاسَ فَشَرِبُوا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا وَأَصَابَتْ مِنْهَا طَائِفَةً أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ لاَ تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلَأً فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللَّهِ وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللَّهُ بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأْسًا وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللَّهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ )
‘‘মহান আল্লাহ আমাকে যে হেদায়াত এবং ইল্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, তার উদাহরণ হল ঐ বৃষ্টির ন্যায় যা কোন যমিনে বর্ষিত হল। উক্ত যমিনের কিছু অংশ ছিল খুবই ভাল ও উর্বর। সে যমিন পানি ধারণ করে প্রচুর ঘাস, তৃণলতা ও শাক-সব্জি উৎপন্ন করল। যমিনের অন্য অংশ ছিল খুবই শক্ত। তা পানি ধারণ করে রাখল। উহা দ্বারা আল্লাহ মানুষের উপকার করলেন। মানুষেরা তা পান করল, চতুষ্পদ জন্তুকে পান করালো এবং চাষাবাদও করল। সেই বৃষ্টির কিছু পানি যমিনের এমন এক অংশে পতিত হল, যা ছিল পাথরযুক্ত ময়দান। সে পানি ধরে রাখতে পারে না এবং কোন তৃণলতাও উৎপন্ন করতে পারেনা।
সুতরাং এটিই হল ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন বুঝতে সক্ষম হয়েছে এবং আমাকে আল্লাহ যে হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন, তা দ্বারা উপকৃত হয়েছে। তাই সে নিজে উহা শিক্ষা করেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে।
এই বৃষ্টির উদাহরণ ঐ ব্যক্তির জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে, যে ব্যক্তি দ্বীনী জ্ঞান অর্জনের জন্য চেষ্টা করেনি এবং আমাকে আল্লাহ যে হেদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তা কবূলও করেনি। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।]
উত্তরঃ কুরআন ও হাদীছে ইখলাসের অসংখ্য দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
أَلاَ لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ
‘‘জেনে রাখুন! আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠাপূর্ণ দ্বীন’’ (এবাদত)। (সূরা যুমারঃ ৩)
فَاعْبُدْ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ
‘‘অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন’’। (সূরা যমারঃ ২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ )
‘‘যে ব্যক্তি অন্তর থেকে নিষ্ঠার সাথে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার শাফাআত পেয়ে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ )
‘‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক ও কিতাবুস সালাত।]
أَلاَ لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ
‘‘জেনে রাখুন! আল্লাহর জন্যই নিষ্ঠাপূর্ণ দ্বীন’’ (এবাদত)। (সূরা যুমারঃ ৩)
فَاعْبُدْ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ
‘‘অতএব আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন’’। (সূরা যমারঃ ২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ )
‘‘যে ব্যক্তি অন্তর থেকে নিষ্ঠার সাথে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার শাফাআত পেয়ে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
فَإِنَّ اللَّهَ قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ يَبْتَغِي بِذَلِكَ وَجْهَ اللَّهِ )
‘‘যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক ও কিতাবুস সালাত।]
২৭
প্রশ্নঃ (২৫) অন্তরের গভীর থেকে (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর মর্মকে সত্য বলে মেনে নেয়ার পক্ষে কুরআন ও হাদীছের দলীল কি?উত্তরঃ অন্তরের গভীর থেকে ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর মর্মকে সত্য বলে মেনে না নেয়া পর্যন্ত কোন ব্যক্তিই মুমিন হিসাবে গণ্য হবে না। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছের দলীলসমূহ গণনা করে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُونَ * وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ
‘‘মানুষ কি মনে করে যে, তারা এ কথা বলেই রেহাই পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যাবাদীদেরকে’’। (সূরা আনকাবুতঃ ২-৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلاَّ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ )
‘‘যে ব্যক্তি অন্তর থেকে সত্য মনে করে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর্ রাসূলুল্লাহ্’ পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা কোন একজন গ্রাম্য লোককে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দিলেন। গ্রাম্য লোকটি ফেরত যাওয়ার সময় বললঃ আল্লাহর শপথ! আমি এর চেয়ে বেশীও করবনা কমও করবনা। তার কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
( أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ )
‘‘লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তাহলে অবশ্যই সফলকাম হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ যাকাত ইসলামের রুকন।]
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُونَ * وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ
‘‘মানুষ কি মনে করে যে, তারা এ কথা বলেই রেহাই পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যাবাদীদেরকে’’। (সূরা আনকাবুতঃ ২-৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ إِلاَّ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ )
‘‘যে ব্যক্তি অন্তর থেকে সত্য মনে করে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর্ রাসূলুল্লাহ্’ পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা কোন একজন গ্রাম্য লোককে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দিলেন। গ্রাম্য লোকটি ফেরত যাওয়ার সময় বললঃ আল্লাহর শপথ! আমি এর চেয়ে বেশীও করবনা কমও করবনা। তার কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
( أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ )
‘‘লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তাহলে অবশ্যই সফলকাম হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ যাকাত ইসলামের রুকন।]
২৮
প্রশ্নঃ (২৬) (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ-লা-ইলাহা ইললাল্লাহ)এর মর্মার্থকে ভালবাসা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অন্যতম শর্ত। কুরআন ও হাদীছ থেকে এর কোন দলীল আছে কী?উত্তরঃ ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর মর্মার্থকে অন্তর দিয়ে ভালবাসা ও তা কবুল করে নেয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অন্যতম শর্ত। কুরআন ও হাদীছ শরীফে এ মর্মে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্যে থেকে যদি কেউ স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যায়, তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে’’। (সূরা মায়িদাঃ ৫৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ )
‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হবে। (১) যার মধ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ভালবাসা অন্যান্য সকল বস্ত্ত হতে অধিক পরিমাণে থাকবে। (২) যে ব্যক্তি কোন মানুষকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ভালবাসে। (৩) যে ব্যক্তি ঈমান গ্রহণের পর কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে তেমনই অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ঈমানের স্বাদ।]
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের মধ্যে থেকে যদি কেউ স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যায়, তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে’’। (সূরা মায়িদাঃ ৫৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ )
‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে সক্ষম হবে। (১) যার মধ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ভালবাসা অন্যান্য সকল বস্ত্ত হতে অধিক পরিমাণে থাকবে। (২) যে ব্যক্তি কোন মানুষকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ভালবাসে। (৩) যে ব্যক্তি ঈমান গ্রহণের পর কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে তেমনই অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ঈমানের স্বাদ।]
২৯
প্রশ্নঃ (২৭) (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর কারণে কারও সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে আবার এরই কারণেই কারও সাথে শত্রুতা পোষণ করতে হবে- এ কথার দলীল কি?উত্তরঃ এ কথার দলীল হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ) ---إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। ---তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনগণ’’। (সূরা মায়িদাঃ ৫১-৫৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنْ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الإِيمَانِ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা কুফরকে ঈমানের উপর প্রাধান্য দেয়’’। (সূরা তাওবাঃ ২৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لاَ تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
‘‘যারা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না’’। (সূরা মুজাদালাঃ ২২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না’’ (সূরা মুমতাহানাঃ ১) এভাবে---সূরার শেষ পর্যন্ত।
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ) ---إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। ---তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনগণ’’। (সূরা মায়িদাঃ ৫১-৫৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنْ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الإِيمَانِ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা কুফরকে ঈমানের উপর প্রাধান্য দেয়’’। (সূরা তাওবাঃ ২৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لاَ تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
‘‘যারা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না’’। (সূরা মুজাদালাঃ ২২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না’’ (সূরা মুমতাহানাঃ ১) এভাবে---সূরার শেষ পর্যন্ত।
৩০
প্রশ্নঃ (২৮) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার দলীল কি?উত্তরঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার পক্ষে অনেক দলীল বিদ্যমান। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُوا عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمْ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
‘‘আল্লাহ মু’মিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং আল্লাহর কিতাব ও হিকমত (জ্ঞান) শিক্ষা দেন। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৬৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী। মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়’’। (সূরা তাওবাঃ ১২৮) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ
‘‘আল্লাহ অবগত আছেন যে, নিশ্চয়ই আপনি তাঁর রাসূল’’। (সূরা মুনাফিকুনঃ ১)
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُوا عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمْ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
‘‘আল্লাহ মু’মিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের থেকে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং আল্লাহর কিতাব ও হিকমত (জ্ঞান) শিক্ষা দেন। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৬৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী। মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়’’। (সূরা তাওবাঃ ১২৮) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِنَّكَ لَرَسُولُهُ
‘‘আল্লাহ অবগত আছেন যে, নিশ্চয়ই আপনি তাঁর রাসূল’’। (সূরা মুনাফিকুনঃ ১)
৩১
প্রশ্নঃ (২৯) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ কী?উত্তরঃ জবানের উক্তি মোতাবেক অন্তরের গভীর থেকে দৃঢ়ভাবে এ কথা বিশ্বাস করা যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং সমগ্র মানব ও জিন জাতির প্রতি তার প্রেরিত রাসূল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرً
‘‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে’’। (সূরা আহযাবঃ ৪৫-৪৬) সুতরাং তিনি অতীতের যে সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন এবং আগামীতে যেসমস্ত ঘটনা ঘটবে বলে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। এমনিভাবে তিনি যা হালাল করেছেন তা হালাল হিসাবে মেনে নেয়া এবং যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসাবে বিশ্বাস করা, তিনি যা আদেশ করেছেন তা অবনত মস্তকে মেনে নেয়া, যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা, তার শরীয়তের অনুসরণ করা, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তার সুন্নাতের অনুসরণ করা, তাঁর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা আবশ্যক। এ বিশ্বাস রাখা যে, তাঁর আনুগত্য মানেই আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর নাফরমানীর অর্থই আল্লাহর নাফরমানী। কেননা তিনিই আল্লাহর পক্ষ হতে আল্লাহর রেসালাত মানব জাতির নিকট পৌঁছিয়েছেন। দ্বীনকে তাঁর মাধ্যমে পরিপূর্ণ করার পূর্বে এবং দ্বীনের যাবতীয় আহকাম পরিপূর্ণরূপে পৌঁছানোর পূর্বে আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেন নি। তিনি তাঁর উম্মাতকে এমন একটি সুস্পষ্ট ও পরিস্কার ময়দানে রেখে গেছেন যাতে দিন এবং রাত একই সমান। বদনসীব ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক ব্যতীত অন্য কেউ এই রাজ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলতে পারে না। [-লেখক এখানে ইরবায বিন সারিয়া হতে বর্ণিত একটি মারফু হাদীছের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। হাদীছটির বিস্তারিত বিবরণ এই যে, ইরবায বিন সারিয়া বলেনঃ একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এমন একটি নসীহত করলেন, যাতে আমাদের চোখের পানি ঝরে পড়ল এবং আমাদের অন্তর বিগলিত হল। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটি বিদায়ী ভাষণ। সুতরাং আপনি আমাদের কিসের আদেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এমন একটি সুস্পষ্ট ও পরিস্কার ময়দানে রেখে যাচ্ছি, যাতে দিন এবং রাত একই সমান। বদনসীব ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক ব্যতীত অন্য কেউ এই রাজ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলতে পারে না। আর জেনে রাখঃ فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ‘‘আমার পরে তোমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে। তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম)] এই অধ্যায়ে আরো মাসআলা রয়েছে। যার বিবরণ সামনে আসবে ইন-শাআল্লাহ।
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرً
‘‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে’’। (সূরা আহযাবঃ ৪৫-৪৬) সুতরাং তিনি অতীতের যে সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন এবং আগামীতে যেসমস্ত ঘটনা ঘটবে বলে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। এমনিভাবে তিনি যা হালাল করেছেন তা হালাল হিসাবে মেনে নেয়া এবং যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসাবে বিশ্বাস করা, তিনি যা আদেশ করেছেন তা অবনত মস্তকে মেনে নেয়া, যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা, তার শরীয়তের অনুসরণ করা, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তার সুন্নাতের অনুসরণ করা, তাঁর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা আবশ্যক। এ বিশ্বাস রাখা যে, তাঁর আনুগত্য মানেই আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর নাফরমানীর অর্থই আল্লাহর নাফরমানী। কেননা তিনিই আল্লাহর পক্ষ হতে আল্লাহর রেসালাত মানব জাতির নিকট পৌঁছিয়েছেন। দ্বীনকে তাঁর মাধ্যমে পরিপূর্ণ করার পূর্বে এবং দ্বীনের যাবতীয় আহকাম পরিপূর্ণরূপে পৌঁছানোর পূর্বে আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেন নি। তিনি তাঁর উম্মাতকে এমন একটি সুস্পষ্ট ও পরিস্কার ময়দানে রেখে গেছেন যাতে দিন এবং রাত একই সমান। বদনসীব ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক ব্যতীত অন্য কেউ এই রাজ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলতে পারে না। [-লেখক এখানে ইরবায বিন সারিয়া হতে বর্ণিত একটি মারফু হাদীছের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। হাদীছটির বিস্তারিত বিবরণ এই যে, ইরবায বিন সারিয়া বলেনঃ একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এমন একটি নসীহত করলেন, যাতে আমাদের চোখের পানি ঝরে পড়ল এবং আমাদের অন্তর বিগলিত হল। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটি বিদায়ী ভাষণ। সুতরাং আপনি আমাদের কিসের আদেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এমন একটি সুস্পষ্ট ও পরিস্কার ময়দানে রেখে যাচ্ছি, যাতে দিন এবং রাত একই সমান। বদনসীব ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক ব্যতীত অন্য কেউ এই রাজ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলতে পারে না। আর জেনে রাখঃ فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ ‘‘আমার পরে তোমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে। তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম)] এই অধ্যায়ে আরো মাসআলা রয়েছে। যার বিবরণ সামনে আসবে ইন-শাআল্লাহ।
৩২
প্রশ্নঃ (৩০) ‘‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল’’ একথার সাক্ষ্য দেয়ার শর্ত কি? ‘‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল’’- এ কথার সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কি لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّهُ-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহএর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে?উত্তরঃ পূর্বেই বলা হয়েছে, কোন বান্দা لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং ( محمد رسول الله ) মুহাম্মদ আল্লাহ্র রাসূল এ দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কেউ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। এ দু’টি বিষয়ের একটি অপরটির জন্য আবশ্যক। তাই لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহএর সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যে শর্তসমূহ আবশ্যক, محمد رسول الله - মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহএর সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষেত্রেও সে শর্তসমূহ আবশ্যক।
উত্তরঃ নামায ও যাকাত ফরজ হওয়ার দলীলগুলো সকলের নিকট অতি সুস্পষ্ট। এগুলো বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি দলীল উল্লেখ করা হল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاَ وَآتَوْا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ
‘‘তারা যদি তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও’’। (সূরা তাওবাঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاَ وَآتَوْا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
‘‘অবশ্য তারা যদি তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। (সূরা তাওবাঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
‘‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। বস্ত্ততঃ এটাই হচ্ছে সুদৃঢ় ধর্ম পথ’’।
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاَ وَآتَوْا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ
‘‘তারা যদি তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও’’। (সূরা তাওবাঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاَ وَآتَوْا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ
‘‘অবশ্য তারা যদি তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই। (সূরা তাওবাঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
‘‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। বস্ত্ততঃ এটাই হচ্ছে সুদৃঢ় ধর্ম পথ’’।
উত্তরঃ রোজা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারীতা (তাকওয়া) অর্জন করতে পার’’। (সূরা বাকারাঃ ১৮৩) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
‘‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) জনৈক গ্রাম্য লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললঃ আমাকে বলুনঃ আল্লাহ আমার উপর রোজা থেকে কি ফরজ করেছেন? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
( شَهْرَ رَمَضَانَ إِلاََّنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا (
‘‘তোমার উপর রামাযান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে তুমি এর চেয়ে বেশী নফল রোজা রাখতে পার’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمْ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারীতা (তাকওয়া) অর্জন করতে পার’’। (সূরা বাকারাঃ ১৮৩) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمْ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
‘‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) জনৈক গ্রাম্য লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললঃ আমাকে বলুনঃ আল্লাহ আমার উপর রোজা থেকে কি ফরজ করেছেন? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
( شَهْرَ رَمَضَانَ إِلاََّنْ تَطَّوَّعَ شَيْئًا (
‘‘তোমার উপর রামাযান মাসের রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে তুমি এর চেয়ে বেশী নফল রোজা রাখতে পার’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ হজ্জ ফরজ হওয়ার দলীল হল আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ
‘‘এবং তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পরিপূর্ণভাবে পালন কর’’। (সূরা বাকারাঃ ১৯৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنْ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنْ الْعَالَمِينَ
‘‘আর আল্লাহর জন্য মানুষের উপর পবিত্র ঘরের হজ্জ করা (অবশ্য) কর্তব্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা অস্বীকার করে (তাহলে সে জেনে রাখুক) আল্লাহ্ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরওয়া করেন না’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৯৭) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ فَحُجُّوا )
‘‘হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ কর’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হজ্জ।] এ ছাড়া হাদীছে জিবরীল এবং ইবনে উমার (রাঃ)এর বর্ণিত হাদীছেও হজ্জ ফরজ হওয়ার দলীল বিদ্যমান, যা ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ
‘‘এবং তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পরিপূর্ণভাবে পালন কর’’। (সূরা বাকারাঃ ১৯৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنْ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنْ الْعَالَمِينَ
‘‘আর আল্লাহর জন্য মানুষের উপর পবিত্র ঘরের হজ্জ করা (অবশ্য) কর্তব্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা অস্বীকার করে (তাহলে সে জেনে রাখুক) আল্লাহ্ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরওয়া করেন না’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৯৭) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ فَرَضَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ فَحُجُّوا )
‘‘হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ কর’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হজ্জ।] এ ছাড়া হাদীছে জিবরীল এবং ইবনে উমার (রাঃ)এর বর্ণিত হাদীছেও হজ্জ ফরজ হওয়ার দলীল বিদ্যমান, যা ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।
৩৭
প্রশ্নঃ (৩৫) যদি কেউ ইসলামের রুকনসমূহ স্বীকার করে; কিন্তু অলসতা বশতঃ কিংবা অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তা প্রত্যাখ্যান করে তবে তার হুকুম কী?উত্তরঃ অলসতা করে কেউ যদি নামায ত্যাগ করে, তবে তাকে তাওবা করতে বলা হবে। সে যদি তাওবা করে, তবে তার তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে। আর তাওবা না করলে তাকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করতে হবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاَ وَآتَوْا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ
‘‘তারা যদি তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও’’। (সূরা তাওবাঃ ৫) সহীহ হাদীছে এসেছেঃ
أمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ
‘‘আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে যে পর্যন্ত না তারা এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং নামায কায়েম করবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] এ মর্মে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
আর যাকাতের ব্যাপারে কথা হল সে যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে ইমাম তার নিকট থেকে জোর করে যাকাত আদায় করবে এবং তার মাল থেকে শাস্তি মূলক অতিরিক্ত কিছু জরিমানও আদায় করে নিবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( وَمَنْ مَنَعَهَا فَإِنَّا آخِذُوهَا وَشَطْرَ مَالِهِ معهَا )
‘‘যে ব্যক্তি যাকাত দিতে অস্বীকার করবে, আমরা তার নিকট থেকে জোর করে তা আদায় করে নিব এবং তার সাথে জরিমানাস্বরূপ তার অর্ধেক মাল নিয়ে নিব’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত। ইমাম আলবানী এই হাদীছটিকে হাসান বলেছেন। সহীহুল জামে, (২/১০১)]
আর যদি যাকাত অস্বীকারকারীগণ সংঘবদ্ধ হয় এবং তারা যদি শক্তিশালী হয়ে থাকে, তাহলে ইমামের উপর আবশ্যক হল, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাকাত দিতে বাধ্য করবে। পূর্বের আয়াতসমূহ এবং হাদীছ এর সুস্পষ্ট দলীল। আবু বকর (রাঃ) এবং সমস্ত সাহাবী তাই করেছেন।
আর রোজা না রাখার শাস্তির ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে শাসক বা তার প্রতিনিধি তাকে এমন শাস্তি দিতে পারবে, যাতে সে এবং অন্যরা শিক্ষা পায়।
আর হজ্জের ব্যাপারে কথা এই যে, বান্দার মৃত্যু পর্যন্ত হজ্জ আদায় করার সময়। মৃত্যুর মাধ্যমেই এটি ছুটে যেতে পারে। তাই হজ্জ ফরজ হলে তা দ্রুত আদায় করে নেওয়া আবশ্যক। অলসতা করে কেউ হজ্জ না করে মৃত্যু বরণ করলে পরকালে তার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির ধমকি এসেছে। তবে হজ্জ না করলে দুনিয়াতে কোন শাস্তির দলীল পাওয়া যায় না।
فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاَ وَآتَوْا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ
‘‘তারা যদি তাওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও’’। (সূরা তাওবাঃ ৫) সহীহ হাদীছে এসেছেঃ
أمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ
‘‘আমাকে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে যে পর্যন্ত না তারা এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং নামায কায়েম করবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] এ মর্মে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
আর যাকাতের ব্যাপারে কথা হল সে যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে ইমাম তার নিকট থেকে জোর করে যাকাত আদায় করবে এবং তার মাল থেকে শাস্তি মূলক অতিরিক্ত কিছু জরিমানও আদায় করে নিবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( وَمَنْ مَنَعَهَا فَإِنَّا آخِذُوهَا وَشَطْرَ مَالِهِ معهَا )
‘‘যে ব্যক্তি যাকাত দিতে অস্বীকার করবে, আমরা তার নিকট থেকে জোর করে তা আদায় করে নিব এবং তার সাথে জরিমানাস্বরূপ তার অর্ধেক মাল নিয়ে নিব’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত। ইমাম আলবানী এই হাদীছটিকে হাসান বলেছেন। সহীহুল জামে, (২/১০১)]
আর যদি যাকাত অস্বীকারকারীগণ সংঘবদ্ধ হয় এবং তারা যদি শক্তিশালী হয়ে থাকে, তাহলে ইমামের উপর আবশ্যক হল, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাকাত দিতে বাধ্য করবে। পূর্বের আয়াতসমূহ এবং হাদীছ এর সুস্পষ্ট দলীল। আবু বকর (রাঃ) এবং সমস্ত সাহাবী তাই করেছেন।
আর রোজা না রাখার শাস্তির ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে শাসক বা তার প্রতিনিধি তাকে এমন শাস্তি দিতে পারবে, যাতে সে এবং অন্যরা শিক্ষা পায়।
আর হজ্জের ব্যাপারে কথা এই যে, বান্দার মৃত্যু পর্যন্ত হজ্জ আদায় করার সময়। মৃত্যুর মাধ্যমেই এটি ছুটে যেতে পারে। তাই হজ্জ ফরজ হলে তা দ্রুত আদায় করে নেওয়া আবশ্যক। অলসতা করে কেউ হজ্জ না করে মৃত্যু বরণ করলে পরকালে তার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির ধমকি এসেছে। তবে হজ্জ না করলে দুনিয়াতে কোন শাস্তির দলীল পাওয়া যায় না।
উত্তরঃ ঈমান হচ্ছে স্বীকারোক্তি এবং আমলের নাম। অর্থাৎ অন্তর ও জবানের স্বীকারোক্তি এবং অন্তর, জবান ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মকে ঈমান বলা হয়। আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজের মাধ্যমে তা কমে যায়। ঈমানের মধ্যে মু’মিনগণ পরস্পর সমান নয়; বরং তাদের একজন অপরজনের চেয়ে কম বা বেশী মর্যাদার অধিকারী।
উত্তরঃ এ ব্যাপারে যথেষ্ট দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمْ الإيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ
‘‘কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তোমাদের অন্তরে ঈমানের মুহাববত সৃষ্টি এবং তা তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন’’ (সূরা হুজরাতঃ ৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘‘তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন কর’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৫৮) এটিই হচ্ছে ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং ( محمد رسول الله - মুহাম্মাদুর্ রাসূলুল্লাহ) এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ। এ দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কোন বান্দাই ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। বিশ্বাসের দিক থেকে উপরোক্ত দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়া অন্তরের কাজ এবং উচ্চারণের দিক থেকে বিচার করলে এ দু’টি জবানের কাজ। অন্তর এবং জবানের স্বীকারোক্তি ও আমল এক সাথে পাওয়া না গেলে ঈমান হবে মূল্যহীন। আমলের অপর নাম যে ঈমান সে দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ
‘‘আল্লাহ তোমাদের ঈমানকে নষ্ট করবেন না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৪৩) অর্থাৎ কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে তোমাদের আদায়কৃত নামাযকে নষ্ট করবেন না। আল্লাহ তা’আলা এখানে নামাযকে ঈমান বলে নামকরণ করেছেন। আর নামায হল অন্তর, জবান এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মের সমষ্টিগত নাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেহাদ, লাইলাতুল কদরের এবাদত, রামাযানের রোজা, তারাবীর নামায এবং গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দান করে দেয়া এবং অন্যান্য আমলকে ঈমান হিসাবে গণ্য করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ
أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ )
‘‘কোন্ আমলটি উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা। [-বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمْ الإيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ
‘‘কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তোমাদের অন্তরে ঈমানের মুহাববত সৃষ্টি এবং তা তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন’’ (সূরা হুজরাতঃ ৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ
‘‘তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন কর’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৫৮) এটিই হচ্ছে ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং ( محمد رسول الله - মুহাম্মাদুর্ রাসূলুল্লাহ) এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ। এ দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কোন বান্দাই ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। বিশ্বাসের দিক থেকে উপরোক্ত দু’টি বিষয়ের সাক্ষ্য দেয়া অন্তরের কাজ এবং উচ্চারণের দিক থেকে বিচার করলে এ দু’টি জবানের কাজ। অন্তর এবং জবানের স্বীকারোক্তি ও আমল এক সাথে পাওয়া না গেলে ঈমান হবে মূল্যহীন। আমলের অপর নাম যে ঈমান সে দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ
‘‘আল্লাহ তোমাদের ঈমানকে নষ্ট করবেন না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৪৩) অর্থাৎ কিবলা পরিবর্তনের পূর্বে বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে তোমাদের আদায়কৃত নামাযকে নষ্ট করবেন না। আল্লাহ তা’আলা এখানে নামাযকে ঈমান বলে নামকরণ করেছেন। আর নামায হল অন্তর, জবান এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মের সমষ্টিগত নাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জেহাদ, লাইলাতুল কদরের এবাদত, রামাযানের রোজা, তারাবীর নামায এবং গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ দান করে দেয়া এবং অন্যান্য আমলকে ঈমান হিসাবে গণ্য করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলঃ
أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ )
‘‘কোন্ আমলটি উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা। [-বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মতে সৎকাজের মাধ্যমে বান্দার ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং পাপ কাজের মাধ্যমে ঈমান কমে যায়। এব্যাপারে কুরআন ও সহীহ হাদীছে অসংখ্য দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ
‘‘যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বৃদ্ধি পায়’’। (সূরা ফাতহঃ ৪) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
‘‘আমি তাদের হেদায়াতকে (ঈমানকে) বাড়িয়ে দিয়েছিলাম’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১৩) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَيَزِيدُ اللَّهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى
‘‘যারা সঠিক পথপ্রাপ্ত আল্লাহ তাদের হেদায়াতকে (ঈমানকে) আরও বাড়িয়ে দেন’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৭৬) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى
‘‘যারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের ঈমান আরও বেড়ে যায়’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ১৭) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا
‘‘এবং ঈমানদারদের ঈমান যাতে আরও বৃদ্ধি পায়’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৩১) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا
‘‘অতএব যারা ঈমানদার এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে’’। (সূরা তাওবাঃ ১২৪) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
الَّذِينَ قَالَ لَهُمْ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا
‘‘যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মুকাবেলা করার জন্য লোকেরা (কাফের সৈনিকরা) সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর। তখন তাদের ঈমান আরও বেড়ে যায়’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৭৩) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا
‘‘এতে তাদের ঈমান ও আত্ম সমর্পণই বৃদ্ধি পেল’’ (সূরা আহযাবঃ ২২) এ রকম আরও অনেক আয়াত রয়েছে, যাতে প্রমাণিত হয় যে, ঈমান বাড়ে ও কমে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لو أنكم تكونون في كل حالة كحالتكم عندي لصافحتكم الملائكة أو كما قال )
‘‘আমার কাছে থাকাবস্থায় তোমাদের (ঈমানের) যে অবস্থা হয়, তোমরা যদি সব সময় সে অবস্থায় থাকতে পারতে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত’’। [- লেখক যে শব্দে হাদীছটি উল্লেখ করেছেন আমি সে শব্দে হাদীছটি খুঁজে পাইনি। তবে হাদীছটি অন্যান্য সূত্রে উক্ত অর্থে শাব্দিক পরিবর্তনসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।]
সহীহ মুসলিম শরীফে হানযালা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার আমার সাথে আবু বকর (রাঃ)এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে হানযালা! কেমন আছ? হানযালা বলেনঃ আমি বললামঃ হানযালা মুনাফেক হয়ে গেছে। আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! কেমন কথা বলছ? হানযালা বলেনঃ আমি বললামঃ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট থাকাবস্থায় তিনি যখন আমাদের সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন তখন আমাদের অবস্থা এমন হয়, আমরা যেন জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখছি। আমরা যখন তাঁর নিকট থেকে বের হয়ে এসে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে মিলিত হই এবং সাংসারিক কাজ-কর্মে জড়িয়ে পড়ি তখন আমরা সেগুলো ভুলে যাই। আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমাদের অবস্থাও তো একই রকম হয়। সুতরাং আমি এবং আবু বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট প্রবেশ করে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা মুনাফেক হয়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার নিকট থাকাবস্থায় আপনি যখন আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা শুনান তখন আমাদের অবস্থা এমন হয়, আমরা যেন জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখছি। আমরা যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে এসে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে মিলিত হই এবং সাংসারিক কাজ-কর্মে জড়িয়ে পড়ি তখন আমরা সেগুলো ভুলে যাই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
( وَالَّذِيْ نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ثَلَاثَ مَرَّاتٍ )
‘‘ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, আমার নিকট থাকাবস্থায় এবং যিকিরের মজলিসে তোমরা যে অবস্থায় থাক সবসময় তোমরা যদি সেরকম থাকতে পারতে তাহলে ফেরেস্তাগণ তোমাদের ঘরে এসে এবং রাস্তায় চলার সময় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত’’। তবে হে হানযালা! কখনও এ রকম হবে আবার কখনও ঐ রকম হবে। কথাটি তিনি তিনবার বললেন’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবাহ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ, মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং-৩০৪-৩০৫, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহ্দ। তবে সকল ক্ষেত্রে হাদীছের শব্দ এক নয়। কিন্তু হাদীছের বিষয় বস্ত্ত একই।] মোটকথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে থাকাবস্থায় এবং যিকিরের মজলিসে থাকাকালে যদি পরকালের কথা বেশী মনে পড়ে, অন্তর ভীত ও আখেরাতমুখী থাকে এবং মজলিস থেকে বের হয়ে গেলে যদি উক্ত অবস্থার কমতি লক্ষ করা যায় তাহলেই বান্দা মুনাফেক হয়ে যায়না। আল্লাহ তা’আলার বৈধ পন্থায় মানুষ কিছু সময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আনন্দে কাটাবে, ধন-সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আর বাকী সময় আল্লাহর এবাদতে কাটাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সে ক্ষেত্রেও আল্লাহর স্মরণ থেকে যেন গাফিল না হয়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْخَاسِرُونَ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে। যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত’’। (সূরা মুনাফিকূনঃ ৯)
لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَعَ إِيمَانِهِمْ
‘‘যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বৃদ্ধি পায়’’। (সূরা ফাতহঃ ৪) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَزِدْنَاهُمْ هُدًى
‘‘আমি তাদের হেদায়াতকে (ঈমানকে) বাড়িয়ে দিয়েছিলাম’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১৩) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَيَزِيدُ اللَّهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى
‘‘যারা সঠিক পথপ্রাপ্ত আল্লাহ তাদের হেদায়াতকে (ঈমানকে) আরও বাড়িয়ে দেন’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৭৬) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى
‘‘যারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের ঈমান আরও বেড়ে যায়’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ১৭) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا
‘‘এবং ঈমানদারদের ঈমান যাতে আরও বৃদ্ধি পায়’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৩১) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا
‘‘অতএব যারা ঈমানদার এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে’’। (সূরা তাওবাঃ ১২৪) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
الَّذِينَ قَالَ لَهُمْ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا
‘‘যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মুকাবেলা করার জন্য লোকেরা (কাফের সৈনিকরা) সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর। তখন তাদের ঈমান আরও বেড়ে যায়’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৭৩) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيمَانًا وَتَسْلِيمًا
‘‘এতে তাদের ঈমান ও আত্ম সমর্পণই বৃদ্ধি পেল’’ (সূরা আহযাবঃ ২২) এ রকম আরও অনেক আয়াত রয়েছে, যাতে প্রমাণিত হয় যে, ঈমান বাড়ে ও কমে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لو أنكم تكونون في كل حالة كحالتكم عندي لصافحتكم الملائكة أو كما قال )
‘‘আমার কাছে থাকাবস্থায় তোমাদের (ঈমানের) যে অবস্থা হয়, তোমরা যদি সব সময় সে অবস্থায় থাকতে পারতে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত’’। [- লেখক যে শব্দে হাদীছটি উল্লেখ করেছেন আমি সে শব্দে হাদীছটি খুঁজে পাইনি। তবে হাদীছটি অন্যান্য সূত্রে উক্ত অর্থে শাব্দিক পরিবর্তনসহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।]
সহীহ মুসলিম শরীফে হানযালা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার আমার সাথে আবু বকর (রাঃ)এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে হানযালা! কেমন আছ? হানযালা বলেনঃ আমি বললামঃ হানযালা মুনাফেক হয়ে গেছে। আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! কেমন কথা বলছ? হানযালা বলেনঃ আমি বললামঃ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট থাকাবস্থায় তিনি যখন আমাদের সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন তখন আমাদের অবস্থা এমন হয়, আমরা যেন জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখছি। আমরা যখন তাঁর নিকট থেকে বের হয়ে এসে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে মিলিত হই এবং সাংসারিক কাজ-কর্মে জড়িয়ে পড়ি তখন আমরা সেগুলো ভুলে যাই। আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমাদের অবস্থাও তো একই রকম হয়। সুতরাং আমি এবং আবু বকর (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট প্রবেশ করে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! হানযালা মুনাফেক হয়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার নিকট থাকাবস্থায় আপনি যখন আমাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা শুনান তখন আমাদের অবস্থা এমন হয়, আমরা যেন জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখছি। আমরা যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে এসে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে মিলিত হই এবং সাংসারিক কাজ-কর্মে জড়িয়ে পড়ি তখন আমরা সেগুলো ভুলে যাই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
( وَالَّذِيْ نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ثَلَاثَ مَرَّاتٍ )
‘‘ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, আমার নিকট থাকাবস্থায় এবং যিকিরের মজলিসে তোমরা যে অবস্থায় থাক সবসময় তোমরা যদি সেরকম থাকতে পারতে তাহলে ফেরেস্তাগণ তোমাদের ঘরে এসে এবং রাস্তায় চলার সময় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত’’। তবে হে হানযালা! কখনও এ রকম হবে আবার কখনও ঐ রকম হবে। কথাটি তিনি তিনবার বললেন’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবাহ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ, মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং-৩০৪-৩০৫, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহ্দ। তবে সকল ক্ষেত্রে হাদীছের শব্দ এক নয়। কিন্তু হাদীছের বিষয় বস্ত্ত একই।] মোটকথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে থাকাবস্থায় এবং যিকিরের মজলিসে থাকাকালে যদি পরকালের কথা বেশী মনে পড়ে, অন্তর ভীত ও আখেরাতমুখী থাকে এবং মজলিস থেকে বের হয়ে গেলে যদি উক্ত অবস্থার কমতি লক্ষ করা যায় তাহলেই বান্দা মুনাফেক হয়ে যায়না। আল্লাহ তা’আলার বৈধ পন্থায় মানুষ কিছু সময় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আনন্দে কাটাবে, ধন-সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আর বাকী সময় আল্লাহর এবাদতে কাটাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সে ক্ষেত্রেও আল্লাহর স্মরণ থেকে যেন গাফিল না হয়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْخَاسِرُونَ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে। যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত’’। (সূরা মুনাফিকূনঃ ৯)
উত্তরঃ মু’মিনদের সকলের ঈমান এক সমান নয়। কারো ঈমান বড় আবার কারো ঈমান ছোট বা দুর্বল হয়ে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকরের ঈমান সমান নয়, আবু বকর (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবীদের ঈমানও সমান নয়। এমনিভাবে সাহাবী ও তাদের পরবর্তী যুগের মুমিনদের ঈমান একই রকম নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ * أُوْلَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ إلى قوله : وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ
‘‘অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল-------এবং যারা ডান দিকে থাকবে। ডান দিকের লোকেরা কতই না ভাগ্যবান’’। (সূরা ওয়াকীয়াঃ ১০-২৭) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ الْمُقَرَّبِينَ * فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّةُ نَعِيمٍ * وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ * فَسَلاَمٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ
‘‘যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয় তবে তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম রিযিক এবং নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত। আর যদি সে ডান পাশের লোকদের একজন হয়, তবে তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্য ডান পার্শ্বের লোকদের পক্ষ থেকে সাল্লাম’’। (সূরা ওয়াকীয়াঃ ৮৮-৯১) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللَّهِ
‘‘তবে তাদের কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী, কেউ মধ্যপন্থী আবার কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণের কাজে অগ্রগামী’’। (সূরা ফাতিরঃ ৩২) শাফাআতের হাদীছে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إنّ اللَّه يُخْرِجُ مِنَ النَّارِ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ وَزْنُ دِينَارٍ مِنْ الْإِيمَانِ ثُمَّ قَالَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ وَزْنُ نِصْفِ دِينَارٍ مِنْ الْإِيمَانِ )
‘‘যার অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। অতঃপর যার অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান থাকবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করবেন’’। [- নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ من الخير ما يزن شَعِيرَةً وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ من الخير ما يزن بُرَّة وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ من الخير ما يزن ذَرَّةً )
‘‘যে ব্যক্তি ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পাঠ করবে এবং তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ ঈমান রয়েছে সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। যে ব্যক্তি ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পাঠ করবে এবং তার অন্তরে একটি গম পরিমাণ ঈমান রয়েছে সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। অনুরূপভাবে ঐ ব্যক্তিও জাহান্নাম থেকে বের হবে যে ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পাঠ করবে অথচ তার অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে। [- বুখারী, মুসলিমঃ অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ * أُوْلَئِكَ الْمُقَرَّبُونَ إلى قوله : وَأَصْحَابُ الْيَمِينِ مَا أَصْحَابُ الْيَمِينِ
‘‘অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল-------এবং যারা ডান দিকে থাকবে। ডান দিকের লোকেরা কতই না ভাগ্যবান’’। (সূরা ওয়াকীয়াঃ ১০-২৭) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ الْمُقَرَّبِينَ * فَرَوْحٌ وَرَيْحَانٌ وَجَنَّةُ نَعِيمٍ * وَأَمَّا إِنْ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ * فَسَلاَمٌ لَكَ مِنْ أَصْحَابِ الْيَمِينِ
‘‘যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয় তবে তার জন্য রয়েছে আরাম, উত্তম রিযিক এবং নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত। আর যদি সে ডান পাশের লোকদের একজন হয়, তবে তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্য ডান পার্শ্বের লোকদের পক্ষ থেকে সাল্লাম’’। (সূরা ওয়াকীয়াঃ ৮৮-৯১) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِنَفْسِهِ وَمِنْهُمْ مُقْتَصِدٌ وَمِنْهُمْ سَابِقٌ بِالْخَيْرَاتِ بِإِذْنِ اللَّهِ
‘‘তবে তাদের কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী, কেউ মধ্যপন্থী আবার কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণের কাজে অগ্রগামী’’। (সূরা ফাতিরঃ ৩২) শাফাআতের হাদীছে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إنّ اللَّه يُخْرِجُ مِنَ النَّارِ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ وَزْنُ دِينَارٍ مِنْ الْإِيمَانِ ثُمَّ قَالَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ وَزْنُ نِصْفِ دِينَارٍ مِنْ الْإِيمَانِ )
‘‘যার অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। অতঃপর যার অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান থাকবে, তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করবেন’’। [- নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ من الخير ما يزن شَعِيرَةً وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ من الخير ما يزن بُرَّة وَيَخْرُجُ مِنَ النَّارِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَفِي قَلْبِهِ من الخير ما يزن ذَرَّةً )
‘‘যে ব্যক্তি ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পাঠ করবে এবং তার অন্তরে একটি যব পরিমাণ ঈমান রয়েছে সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। যে ব্যক্তি ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পাঠ করবে এবং তার অন্তরে একটি গম পরিমাণ ঈমান রয়েছে সেও জাহান্নাম থেকে বের হবে। অনুরূপভাবে ঐ ব্যক্তিও জাহান্নাম থেকে বের হবে যে ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ পাঠ করবে অথচ তার অন্তরে একটি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান রয়েছে। [- বুখারী, মুসলিমঃ অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
৪২
প্রশ্নঃ (৪০) ঈমান শব্দটি এককভাবে উল্লেখিত হলে তা দ্বারা পূর্ণ দ্বীন উদ্দেশ্য- এর পক্ষে কোন দলীল আছে কি?উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেনঃ
آمُرُكُمْ بِالإِيمَانِ بِاللَّهِ وَحْدَهُ قَالَ : أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ قَالُوا : اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ : شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامُ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ وَصِيَامُ رَمَضَانَ وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ الْمَغْنَمِ الْخُمُسَ )
‘‘আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট আগমণ করল, তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ দিচ্ছি। তারপর তিনি বললেনঃ ‘‘এক আল্লাহর প্রতি ঈমান কাকে বলে তোমরা কি জান? তারা বললঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এক আল্লাহর প্রতি ঈমানের অর্থ হল এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রামাযানের রোযা রাখা এবং গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ প্রদান করা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
آمُرُكُمْ بِالإِيمَانِ بِاللَّهِ وَحْدَهُ قَالَ : أَتَدْرُونَ مَا الإِيمَانُ بِاللَّهِ وَحْدَهُ قَالُوا : اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ : شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامُ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءُ الزَّكَاةِ وَصِيَامُ رَمَضَانَ وَأَنْ تُعْطُوا مِنَ الْمَغْنَمِ الْخُمُسَ )
‘‘আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিদল যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট আগমণ করল, তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ দিচ্ছি। তারপর তিনি বললেনঃ ‘‘এক আল্লাহর প্রতি ঈমান কাকে বলে তোমরা কি জান? তারা বললঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এক আল্লাহর প্রতি ঈমানের অর্থ হল এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রামাযানের রোযা রাখা এবং গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ প্রদান করা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ জিবরীল ফেরেশতা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেনঃ আমাকে বলুনঃ ঈমান কাকে বলে? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) তখন বললেনঃ উহা হল (১) তুমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি (২) তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি (৩) তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি (৪) তাঁর রাসুলদের প্রতি (৫) আখিরাত বা শেষ দিবসের প্রতি এবং (৬) তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ
‘‘তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত কর তাতে কোন পূণ্য নেই; বরং পূণ্য তার, যে ব্যক্তি আল্লাহ্, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৭৭) তাকদীর সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
‘‘আমি প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে’’। (সূরা কামারঃ ৪৯) আমরা ঈমানের প্রত্যেকটি রুকনের দলীল পৃথকভাবে অচিরেই উল্লেখ করব; ইনশা-আল্লাহ।
لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ
‘‘তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল পূর্ব বা পশ্চিম দিকে প্রত্যাবর্তিত কর তাতে কোন পূণ্য নেই; বরং পূণ্য তার, যে ব্যক্তি আল্লাহ্, পরকাল, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৭৭) তাকদীর সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
‘‘আমি প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে’’। (সূরা কামারঃ ৪৯) আমরা ঈমানের প্রত্যেকটি রুকনের দলীল পৃথকভাবে অচিরেই উল্লেখ করব; ইনশা-আল্লাহ।
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমান আনয়নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা হচ্ছে, অন্তরের গভীর থেকে আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। অতীতে তার কোন সমকক্ষ ছিলনা, ভবিষ্যতেও তার কোন সমকক্ষ হতে পারবে না। তিনিই প্রথম। তার পূর্বে কেউ ছিল না। তিনিই সর্বশেষ; তাঁর পর কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তিনিই প্রকাশমান। তাঁর চেয়ে প্রকাশমান আর কেউ নেই। তিনিই অপ্রকাশমান। আর কোন কিছুই তাঁর জ্ঞান থেকে গোপন নয়। অর্থাৎ অপ্রকাশ্য সকল বস্ত্ত সম্পর্কে তিনি পূর্ণ অবগত আছেন। তিনি চিরজীবন্ত, সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী, একক এবং অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
‘‘হে নবী! আপনি বলুনঃ তিনিই আল্লাহ একক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয় নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’।
এমনিভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমান অর্থ এ কথারও স্বীকারোক্তি প্রদান করা যে, আল্লাহ তাঁর এবাদত, তাঁর প্রভুত্ব, এবং তাঁর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
‘‘হে নবী! আপনি বলুনঃ তিনিই আল্লাহ একক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয় নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’।
এমনিভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমান অর্থ এ কথারও স্বীকারোক্তি প্রদান করা যে, আল্লাহ তাঁর এবাদত, তাঁর প্রভুত্ব, এবং তাঁর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই।
উত্তরঃ প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজ তথা সকল প্রকার এবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোন বস্ত্তর এবাদতকে অস্বীকার করার নাম তাওহীদে উলূহিয়্যাহ। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ
‘‘আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া তোমরা অন্য কারো এবাদত করবে না’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
‘‘তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না’’। (সূরা নিসাঃ ৩৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمْ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي )
‘‘আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই। অতএব, আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর’’। (সূরা তোহাঃ ১৪) এটিই ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর সরল ও সঠিক ব্যাখ্যা।
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ
‘‘আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া তোমরা অন্য কারো এবাদত করবে না’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا
‘‘তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করো না’’। (সূরা নিসাঃ ৩৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمْ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي )
‘‘আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই। অতএব, আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর’’। (সূরা তোহাঃ ১৪) এটিই ( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ -লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)এর সরল ও সঠিক ব্যাখ্যা।
উত্তরঃ তাওহীদে উলূহিয়্যাহর বিপরীত হচ্ছে শির্ক। শির্ক দুই প্রকার। (১) শির্কে আক্বার তথা বড় শির্ক। এটি তাওহীদে উলুহিয়্যার সম্পূর্ণ বিপরীত, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। (২) শির্কে আস্গার বা ছোট শির্ক। এটি পরিপূর্ণ তাওহীদের পরিপন্থী। তবে ইহা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না।
উত্তরঃ শির্কে আক্বার হচ্ছে, বান্দা কর্তৃক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে আল্লাহর সাথে এমনভাবে শরীক স্থির করা যে, বান্দা তাকে বিশ্ব জাহানের প্রভু আল্লাহর সমতুল্য করে দেয়, তাকে আল্লাহর ন্যায় ভালবাসে, আল্লাহকে ভয় করার মতই তাকে ভয় করে, তার কাছে আশ্রয় গ্রহণ করে, তাকে আহবান করে, তাকে ভয় করে, তার কাছে আশা করে, তার দিকে মনোনিবেশ করে, তার উপর ভরসা করে, আল্লাহর নাফরমানীর ক্ষেত্রেও তার আনুগত্য করে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির ক্ষেত্রেও তাকে অনুসরণ করে। এই প্রকার শির্কের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তার সাথে অংশী স্থাপন করাকে মার্জনা করেন না। অবশ্য তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে মহাপাপে জড়িয়ে মিথ্যা রচনা করল’’। (সূরা নিসাঃ ৪৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়’’। (সূরা নিসাঃ ১১৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
‘‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন, তার স্থান হবে জাহান্নাম, আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্য কারী থাকবে না’’। (সূরা মায়েদাঃ ৭২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنْ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল। অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোন স্থানে নিক্ষেপ করল’’। (সূরা হজ্জঃ ৩১) এ ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক আয়াত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
فَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
‘‘বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, তারা আল্লাহর এবাদত করবে এবং তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, যে ব্যক্তি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করে না, তাকে শাস্তি না দেয়া’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
শির্কে আক্বার তথা বড় শির্কে লিপ্ত হলে বান্দা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে প্রকাশ্যভাবে এই শির্কে লিপ্ত হোক, যেমন মক্কার কুরাইশ বংশের কাফের সম্প্রদায়ের শির্ক কিংবা গোপনে লিপ্ত হোক, যেমন প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা প্রদানকারী এবং কুফর গোপনকারী ধোঁকাবাজ মুনাফেক সম্প্রদায়ের শির্ক। আল্লাহ তা’আলা মুনাফেকদের শাস্তি সম্পর্কে বলেনঃ
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الأَسْفَلِ مِنْ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا * إلاَّ الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُوْلَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ
‘‘নিশ্চয়ই মুনাফেকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আপনি তাদের জন্য কখনও সাহায্যকারী পাবেন না। কিন্তু যারা তাওবা করে নিয়েছে, নিজেদের অবস্থা সংশোধন করেছে, আল্লাহর পথকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে এবং আল্লাহর জন্য তাদের দ্বীনকে বিশুদ্ধ করে নিয়েছে তারা মু’মিনদের সাথেই থাকবে’’। (সূরা নিসাঃ (১৪৫-১৪৬)
إِنَّ اللَّهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তার সাথে অংশী স্থাপন করাকে মার্জনা করেন না। অবশ্য তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে মহাপাপে জড়িয়ে মিথ্যা রচনা করল’’। (সূরা নিসাঃ ৪৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়’’। (সূরা নিসাঃ ১১৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
‘‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন, তার স্থান হবে জাহান্নাম, আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্য কারী থাকবে না’’। (সূরা মায়েদাঃ ৭২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنْ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল। অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোন স্থানে নিক্ষেপ করল’’। (সূরা হজ্জঃ ৩১) এ ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক আয়াত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
فَإِنَّ حَقَّ اللَّهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوهُ وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَحَقَّ الْعِبَادِ عَلَى اللَّهِ أَنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
‘‘বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, তারা আল্লাহর এবাদত করবে এবং তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, যে ব্যক্তি তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করে না, তাকে শাস্তি না দেয়া’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
শির্কে আক্বার তথা বড় শির্কে লিপ্ত হলে বান্দা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে প্রকাশ্যভাবে এই শির্কে লিপ্ত হোক, যেমন মক্কার কুরাইশ বংশের কাফের সম্প্রদায়ের শির্ক কিংবা গোপনে লিপ্ত হোক, যেমন প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা প্রদানকারী এবং কুফর গোপনকারী ধোঁকাবাজ মুনাফেক সম্প্রদায়ের শির্ক। আল্লাহ তা’আলা মুনাফেকদের শাস্তি সম্পর্কে বলেনঃ
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الأَسْفَلِ مِنْ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا * إلاَّ الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُوْلَئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ
‘‘নিশ্চয়ই মুনাফেকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আপনি তাদের জন্য কখনও সাহায্যকারী পাবেন না। কিন্তু যারা তাওবা করে নিয়েছে, নিজেদের অবস্থা সংশোধন করেছে, আল্লাহর পথকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে এবং আল্লাহর জন্য তাদের দ্বীনকে বিশুদ্ধ করে নিয়েছে তারা মু’মিনদের সাথেই থাকবে’’। (সূরা নিসাঃ (১৪৫-১৪৬)
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন কৃত আমল মানুষকে দেখানোর জন্য সুন্দর করার নাম শির্কে আসগার [- শির্কে আসগার মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। তবে এটি আমলকে নষ্ট করে দেয়। কেননা উক্ত রিয়াকারী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই তার উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে। কখনও এমন কাজ বড় শির্কের পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।]। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
‘‘সুতরাং যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১১০)
ছোট শির্কের কতিপয় উদাহরণঃ
ক) রিয়া তথা লোক দেখানো আমলঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالَ الرِّيَاءُ )
‘‘আমি তোমাদের উপর সব চাইতে বেশী ভয় করছি ছোট শির্কের। তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ তা হল রিয়া তথা লোক দেখানো আমল। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাখ্যায় বলেনঃ কোন মানুষ নামায আদায়ের জন্যে দাঁড়াল। যখন দেখল যে, লোকজন তার নামাযকে দেখছে, তখন সালাতকে আরো সুন্দরভাবে আদায় করে’’। [- ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহ্দ। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেনঃ হাদীছ নং- ৩২।]
খ) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করাঃ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা ছোট শির্ক। যেমন পিতার নামে, মূর্তির নামে, কাবার নামে, আমানতের নামে বা আরো অন্যান্য বস্ত্তর নামে শপথ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ وَلاَ بِأُمَّهَاتِكُمْ وَلاَ بِالأَنْدَادِ )
‘‘তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা ও বাতিল মাবুদদের নামে শপথ করো না’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ আইমান, নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ দেখুন সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭২৪৯] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( لاتقولوا والكعبة ولكن قولوا ورب الكعبة )
‘‘তোমরা এ কথা বল না যে, কাবার শপথ; বরং তোমরা বল কাবার প্রভুর শপথ’’। [- নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, হাদীছ নং- ২৯৫২।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( وَلاَ تَحْلِفُوا إِلاَّ بِاللَّهِ )
‘‘তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করো না’’। [- এটি পূর্বে বর্ণিত হাদীছেরই অংশ বিশেষ।] তিনি আরো বলেনঃ
( مَنْ حَلَفَ بِالأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا )
‘‘যে ব্যক্তি আমানতের শপথ করল সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ৯৪।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ )
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল, সে কুফরী করল অথবা শির্ক করল’’। [- আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান।]
গ) ছোট শির্কের আরেকটি উদাহরণ হলঃ যেমন এ কথা বলা, যা আল্লাহ্ চেয়েছেন এবং আপনি চেয়েছেন। যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলঃ আল্লাহ্ যা চান এবং আপনি যা চান, তাকে তিনি বললেনঃ তুমি কি আমাকে আল্লাহর শরীক স্থাপন করলে? বরং তিনি একাই যা চান, তাই করেন’’। [- আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৯।]
ঘ) ছোট শির্কের আরেকটি উদাহরণ হলঃ এভাবে বলা যে, যদি আল্লাহ্ এবং আপনি না থাকতেন! তাহলে আমার বিপদ হত। আমার তো শুধু আল্লাহ্ এবং আপনি ছাড়া আর কেউ নেই কিংবা এ কথা বলা যে, আমি আল্লাহ এবং আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি, ইত্যাদি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আরো বলেনঃ
( لاَ تَقُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ فُلاَنٌ وَلَكِنْ قُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فُلاَنٌ )
‘‘তোমরা এ কথা বল না যে, আল্লাহ যা চান এবং অমুক যা চায়; বরং তোমরা বল আল্লাহ যা চান অতঃপর অমুক যা চায়’’। [- আবু দাউদ ও মুসনাদে ইমাম আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৭।]
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
‘‘সুতরাং যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১১০)
ছোট শির্কের কতিপয় উদাহরণঃ
ক) রিয়া তথা লোক দেখানো আমলঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالَ الرِّيَاءُ )
‘‘আমি তোমাদের উপর সব চাইতে বেশী ভয় করছি ছোট শির্কের। তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ তা হল রিয়া তথা লোক দেখানো আমল। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাখ্যায় বলেনঃ কোন মানুষ নামায আদায়ের জন্যে দাঁড়াল। যখন দেখল যে, লোকজন তার নামাযকে দেখছে, তখন সালাতকে আরো সুন্দরভাবে আদায় করে’’। [- ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহ্দ। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেনঃ হাদীছ নং- ৩২।]
খ) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করাঃ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা ছোট শির্ক। যেমন পিতার নামে, মূর্তির নামে, কাবার নামে, আমানতের নামে বা আরো অন্যান্য বস্ত্তর নামে শপথ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ وَلاَ بِأُمَّهَاتِكُمْ وَلاَ بِالأَنْدَادِ )
‘‘তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা ও বাতিল মাবুদদের নামে শপথ করো না’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ আইমান, নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ দেখুন সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭২৪৯] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( لاتقولوا والكعبة ولكن قولوا ورب الكعبة )
‘‘তোমরা এ কথা বল না যে, কাবার শপথ; বরং তোমরা বল কাবার প্রভুর শপথ’’। [- নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, হাদীছ নং- ২৯৫২।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( وَلاَ تَحْلِفُوا إِلاَّ بِاللَّهِ )
‘‘তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করো না’’। [- এটি পূর্বে বর্ণিত হাদীছেরই অংশ বিশেষ।] তিনি আরো বলেনঃ
( مَنْ حَلَفَ بِالأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا )
‘‘যে ব্যক্তি আমানতের শপথ করল সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ৯৪।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ )
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল, সে কুফরী করল অথবা শির্ক করল’’। [- আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান।]
গ) ছোট শির্কের আরেকটি উদাহরণ হলঃ যেমন এ কথা বলা, যা আল্লাহ্ চেয়েছেন এবং আপনি চেয়েছেন। যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলঃ আল্লাহ্ যা চান এবং আপনি যা চান, তাকে তিনি বললেনঃ তুমি কি আমাকে আল্লাহর শরীক স্থাপন করলে? বরং তিনি একাই যা চান, তাই করেন’’। [- আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৯।]
ঘ) ছোট শির্কের আরেকটি উদাহরণ হলঃ এভাবে বলা যে, যদি আল্লাহ্ এবং আপনি না থাকতেন! তাহলে আমার বিপদ হত। আমার তো শুধু আল্লাহ্ এবং আপনি ছাড়া আর কেউ নেই কিংবা এ কথা বলা যে, আমি আল্লাহ এবং আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি, ইত্যাদি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আরো বলেনঃ
( لاَ تَقُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ فُلاَنٌ وَلَكِنْ قُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فُلاَنٌ )
‘‘তোমরা এ কথা বল না যে, আল্লাহ যা চান এবং অমুক যা চায়; বরং তোমরা বল আল্লাহ যা চান অতঃপর অমুক যা চায়’’। [- আবু দাউদ ও মুসনাদে ইমাম আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৭।]
৫০
প্রশ্নঃ (৪৮) উপরের প্রশ্নের উত্তর থেকে বুঝা গেল যে ‘‘আল্লাহ যা চান এবং আপনি যা চান’’ বলা নিষিদ্ধ, কিন্তু ‘‘আল্লাহ যা চান অতঃপর আপনি যা চান’’- এ কথা বলা জায়েয। এখন কথা হলঃ ‘‘এবং ও অথবা’’- এ দু’টি শব্দে মধ্যে পার্থক্যটা কী?উত্তরঃ শব্দ দু’টির মধ্যে পার্থক্য এই যে, ( وَ -ওয়াও) শব্দ দ্বারা দু’টি বিষয়কে এক সাথে মিলিত করলে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বুঝায় অর্থাৎ স্রষ্টা ও সৃষ্টি পরস্পর সমতুল্য হওয়া বুঝায়। সুতরাং যে ব্যক্তি বললঃ ( ماشاء الله وشئت ) অর্থাৎ যা আল্লাহ চান এবং আপনি চান, সে বান্দার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার সাথে মিলিয়ে সমান করে দিল। তবে ( ثم -ছুম্মা) এর মাধ্যমে দু’টি বস্ত্তকে একত্রিত করলে এ রকম কোন সন্দেহ থাকে না। সুতরাং যে ব্যক্তি বললঃ ( ماشاء الله ثم شئت ) অর্থাৎ আল্লাহ্ যা চান অতঃপর আপনি যা চান, সে এ কথা স্বীকার করল যে, বান্দার ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগামী ও পরে হয়ে থাকে। তা কেবল আল্লাহর ইচ্ছার পরেই কার্যকরী হয়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا تَشَاءُونَ إلاَّ أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ
‘‘আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না’’। (সূরা আল-ইনসানঃ ৩০)
وَمَا تَشَاءُونَ إلاَّ أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ
‘‘আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না’’। (সূরা আল-ইনসানঃ ৩০)
উত্তরঃ তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ হল দৃঢ়ভাবে এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা’আলা সব কিছুর প্রতিপালক, তিনিই সব কিছুর মালিক, সৃষ্টি কর্তা, ব্যবস্থাপক ও পরিচালক। তার রাজত্বে কোন অংশীদার নেই। তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। তাঁর ফয়সালাকে কেউ পরিবর্তন করতে পারে না, তার আদেশ প্রত্যাখ্যান করার মত কেউ নেই, তাঁর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তাঁর অনুরূপ আর কেউ নেই, নেই তাঁর কোন সমতুল্য। তাঁর প্রতিপালনাধীন কোন বিষয়ের বিরোধী কেউ নেই এবং তাঁর নাম ও গুণাবলীতেও তাঁর কোন শরীক নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ
‘‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন আলো ও অন্ধকার অতঃপর কাফেররা তাদের প্রতিপালকের সাথে শিরক করে’’। (সূরা আন-আমঃ ১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘‘যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহরই জন্য যিনি বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা।’’ (সূরা ফাতিহাঃ ১) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ قُلْ اللَّهُ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لاَ يَمْلِكُونَ لأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ قُل اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘বলুন! কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক? বলুনঃ আল্লাহ। বলুনঃ তবে কি তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছো, যারা নিজেদের লাভ ও ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়? আপনি বলুনঃ অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান? অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক? তবে কি তারা আল্লাহর এমন শরীক স্থাপন করেছে যারা তাঁর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে যে কারণে সৃষ্টি তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুনঃ আল্লাহ সকল বস্ত্তর স্রষ্টা; তিনি একক ও পরাক্রমশালী’’। (সূরা রা’দঃ ১৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَفْعَلُ مِنْ ذَلِكُمْ مِنْ شَيْءٍ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘‘আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযিক দিয়েছেন। তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পরে তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমাদের শরীকদের এমন কেউ আছে কি যে এ সবের কোন একটি করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান’’। (সূরা রোমঃ ৪০) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
هَذَا خَلْقُ اللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ
‘‘এটা আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং তিনি ছাড়া অন্যরা যা সৃষ্টি করেছে তা আমাকে দেখাও’’। (সূরা লুকমানঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمْ الْخَالِقُونَ * أَمْ خَلَقُوا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بَل لاَ يُوقِنُونَ
‘‘তারা কি কোন কিছু ব্যতীতই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? না কি তারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না’’। (সূরা তুরঃ ৩৫-৩৬) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا
‘‘ তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এতোদু’ভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবারই প্রতিপালক; সুতরাং তুমি তাঁরই এবাদত কর এবং তাঁর এবাদতে প্রতিষ্ঠিত থাক। তুমি কি তাঁর সমমান সম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়ামঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
‘‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শূরাঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَقُلْ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنْ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا
‘‘যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য যিনি সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর রাজত্বে কোন অংশীদার নেই। তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না যে কারণে তাঁর কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন। সুতরাং আপনি তাঁর যথাযত বড়ত্ব ঘোষণা করুন’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لاَ يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ * وَلاَ تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ حَتَّى إِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ قَالُوا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا الْحَقَّ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ
‘‘বলুনঃ তোমরা আহবান কর তাদেরকে যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে। তারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছুর মালিক নয়, এতোদু’ভয়ে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহর সহায়কও নয়। যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয় তাঁর জন্যে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ আল্লাহর নিকট ফলপ্রসু হবে না। পরে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়ে যাবে তখন তারা পরস্পরে বলবেঃ তোমাদের প্রতিপালক কী বললেন? তারা বলবেঃ তিনি সত্য বলেছেন। তিনি সর্বোচ্চ, মহান’’। (সূরা সাবাঃ ২২-২৩)
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ
‘‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন আলো ও অন্ধকার অতঃপর কাফেররা তাদের প্রতিপালকের সাথে শিরক করে’’। (সূরা আন-আমঃ ১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘‘যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহরই জন্য যিনি বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা।’’ (সূরা ফাতিহাঃ ১) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ قُلْ اللَّهُ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُمْ مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لاَ يَمْلِكُونَ لأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ قُل اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘বলুন! কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক? বলুনঃ আল্লাহ। বলুনঃ তবে কি তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছো, যারা নিজেদের লাভ ও ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়? আপনি বলুনঃ অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান? অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক? তবে কি তারা আল্লাহর এমন শরীক স্থাপন করেছে যারা তাঁর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে যে কারণে সৃষ্টি তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুনঃ আল্লাহ সকল বস্ত্তর স্রষ্টা; তিনি একক ও পরাক্রমশালী’’। (সূরা রা’দঃ ১৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَفْعَلُ مِنْ ذَلِكُمْ مِنْ شَيْءٍ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘‘আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযিক দিয়েছেন। তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পরে তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমাদের শরীকদের এমন কেউ আছে কি যে এ সবের কোন একটি করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র ও মহান’’। (সূরা রোমঃ ৪০) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
هَذَا خَلْقُ اللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِنْ دُونِهِ
‘‘এটা আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং তিনি ছাড়া অন্যরা যা সৃষ্টি করেছে তা আমাকে দেখাও’’। (সূরা লুকমানঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمْ الْخَالِقُونَ * أَمْ خَلَقُوا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بَل لاَ يُوقِنُونَ
‘‘তারা কি কোন কিছু ব্যতীতই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা? না কি তারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না’’। (সূরা তুরঃ ৩৫-৩৬) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا
‘‘ তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এতোদু’ভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সবারই প্রতিপালক; সুতরাং তুমি তাঁরই এবাদত কর এবং তাঁর এবাদতে প্রতিষ্ঠিত থাক। তুমি কি তাঁর সমমান সম্পন্ন কাউকে জান? (সূরা মারইয়ামঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
‘‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’’। (সূরা শূরাঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَقُلْ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنْ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا
‘‘যাবতীয় প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য যিনি সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর রাজত্বে কোন অংশীদার নেই। তিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না যে কারণে তাঁর কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন। সুতরাং আপনি তাঁর যথাযত বড়ত্ব ঘোষণা করুন’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لاَ يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ * وَلاَ تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ حَتَّى إِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ قَالُوا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا الْحَقَّ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ
‘‘বলুনঃ তোমরা আহবান কর তাদেরকে যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে উপাস্য মনে করতে। তারা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছুর মালিক নয়, এতোদু’ভয়ে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহর সহায়কও নয়। যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয় তাঁর জন্যে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ আল্লাহর নিকট ফলপ্রসু হবে না। পরে যখন তাদের অন্তর থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়ে যাবে তখন তারা পরস্পরে বলবেঃ তোমাদের প্রতিপালক কী বললেন? তারা বলবেঃ তিনি সত্য বলেছেন। তিনি সর্বোচ্চ, মহান’’। (সূরা সাবাঃ ২২-২৩)
উত্তরঃ তাওহীদে রুবুবিয়্যার বিপরীত হল, মহাবিশ্ব পরিচালনার কোন কিছুতে আল্লাহ তা’আলার সাথে অন্য কোন পরিচালক ও ব্যবস্থাপক আছে বলে বিশ্বাস করা। যেমন সৃষ্টি করা, ধ্বংস করা, জীবন দান করা, মৃত্যু দান করা, কল্যাণ দান করা, অকল্যাণ করা ইত্যাদি। এমনিভাবে তাঁর নাম ও গুণাবলীর দাবীগুলোতে তাঁর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী স্থির করা। যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে বলে বিশ্বাস করা কিংবা অন্য কাউকে আল্লাহর ন্যায় মহান ও বড় মনে করা ইত্যাদি। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
مَا يَفْتَحْ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلاَ مُمْسِكَ لَهَا وَمَا يُمْسِكْ فَلاَ مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ * يَاأَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ
‘‘আল্লাহ মানুষের জন্যে অনুগ্রহের মধ্যে থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরাবার কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন, তাঁর পরে কেউ তা প্রেরণ করতে পারে না। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। হে লোক সকল! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে?’’ (সূরা ফাতিরঃ ২-৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَادَّ لِفَضْلِهِ
‘‘আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তবে তিনি ব্যতীত কেউ তা মোচনকারী নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর কোন অনুগ্রহকে রহিত করার মতও কেউ নেই’’। (সূরা ইউনুসঃ ১০৭) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِي اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ قُلْ حَسْبِي اللَّهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ
‘‘বলুনঃ তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সে অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? বলুনঃ আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীগণ তারই উপর নির্ভর করে’’। (সূরা যুমারঃ ৩৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ
‘‘তাঁর কাছেই রয়েছে গায়েব বা অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা অবগত নয়’’। (সূরা আন-আমঃ ৫৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلاَّ اللَّهُ
‘‘হে নবী আপনি বলে দিন! আকাশ এবং জমিনে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের সংবাদ জানে না’’। (সূরা নামলঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إلاَّ بِمَا شَاءَ
‘‘তার জ্ঞানসীমা থেকে কোন কিছুই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারেনা কিন্তু তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছে কুদসীতে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
( العظمة إزاري والكبرياء ردائي فمن نازعني واحدا منهما أسكنته ناري )
‘‘বড়ত্ব আমার লুঙ্গি এবং অহংকার আমার চাদর। কেউ যদি এ দু’টি থেকে একটি আমার নিকট থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়, আমি তাকে আমার জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতবিুল বির্ ওয়াস্ সিলাত।]
مَا يَفْتَحْ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلاَ مُمْسِكَ لَهَا وَمَا يُمْسِكْ فَلاَ مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ * يَاأَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ
‘‘আল্লাহ মানুষের জন্যে অনুগ্রহের মধ্যে থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরাবার কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন, তাঁর পরে কেউ তা প্রেরণ করতে পারে না। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। হে লোক সকল! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে?’’ (সূরা ফাতিরঃ ২-৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلاَ رَادَّ لِفَضْلِهِ
‘‘আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তবে তিনি ব্যতীত কেউ তা মোচনকারী নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর কোন অনুগ্রহকে রহিত করার মতও কেউ নেই’’। (সূরা ইউনুসঃ ১০৭) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِي اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ قُلْ حَسْبِي اللَّهُ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ
‘‘বলুনঃ তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ যদি আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাক তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সে অনুগ্রহ রোধ করতে পারবে? বলুনঃ আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীগণ তারই উপর নির্ভর করে’’। (সূরা যুমারঃ ৩৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ
‘‘তাঁর কাছেই রয়েছে গায়েব বা অদৃশ্য জগতের চাবিকাঠি। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা অবগত নয়’’। (সূরা আন-আমঃ ৫৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَيْبَ إِلاَّ اللَّهُ
‘‘হে নবী আপনি বলে দিন! আকাশ এবং জমিনে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের সংবাদ জানে না’’। (সূরা নামলঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إلاَّ بِمَا شَاءَ
‘‘তার জ্ঞানসীমা থেকে কোন কিছুই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারেনা কিন্তু তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছে কুদসীতে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
( العظمة إزاري والكبرياء ردائي فمن نازعني واحدا منهما أسكنته ناري )
‘‘বড়ত্ব আমার লুঙ্গি এবং অহংকার আমার চাদর। কেউ যদি এ দু’টি থেকে একটি আমার নিকট থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়, আমি তাকে আমার জাহান্নামে নিক্ষেপ করব’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতবিুল বির্ ওয়াস্ সিলাত।]
উত্তরঃ তাওহীদুল্ আসমা ওয়াস্ সিফাতের অর্থ হল, আল্লাহ নিজেকে যে সমস্ত নামে নামকরণ করেছেন এবং তাঁর কিতাবে নিজেকে যে সমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে যে সমস্ত সুন্দর নামে এবং সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা। তার ধরণ বর্ণনা করা ব্যতীত যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবের অনেক স্থানে কোন প্রকার ধরণ বর্ণনা করা ব্যতীত স্বীয় গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না’’। (সূরা তোহাঃ ১১০) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
‘‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لاَ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
‘‘তাকে তো কারও দৃষ্টি পরিবেষ্টন করতে পারে না। আর তিনি সকল দৃষ্টি পরিবেষ্টনকারী। তিনি অতি সুক্ষ্মদর্শী, সুবিজ্ঞ’’। (সূরা আন-আমঃ ১০৩) তিরমিযী শরীফে উবাই বিন কা’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললঃ আমাদের সামনে আপনার রবের বংশ পরিচয় বর্ণনা করুন। তখন আল্লাহ তা’আলা এই সূরাটি নাযিল করেনঃ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)
‘‘বলুনঃ তিনি আল্লাহ্ একক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তাকে জন্মও দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’। ‘সামাদ’ হচ্ছে যিনি কাউকে জন্ম দেন নি বা যাকে কেউ জন্ম দেয়নি। কারণ জন্মগ্রহণকারী সকল বস্ত্তই মরণশীল। আর মরণশীল প্রতিটি বস্ত্তই উত্তরাধিকারী রেখে যায়। আর আল্লাহ তা’আলা মরণশীল নন, তিনি কাউকে উত্তরাধিকারী নির্ধারণকারী নন। ‘আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’ অর্থাৎ কেউ তাঁর সমকক্ষ, সমান মর্যাদা সম্পন্ন এবং কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয় ।
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না’’। (সূরা তোহাঃ ১১০) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
‘‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لاَ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
‘‘তাকে তো কারও দৃষ্টি পরিবেষ্টন করতে পারে না। আর তিনি সকল দৃষ্টি পরিবেষ্টনকারী। তিনি অতি সুক্ষ্মদর্শী, সুবিজ্ঞ’’। (সূরা আন-আমঃ ১০৩) তিরমিযী শরীফে উবাই বিন কা’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললঃ আমাদের সামনে আপনার রবের বংশ পরিচয় বর্ণনা করুন। তখন আল্লাহ তা’আলা এই সূরাটি নাযিল করেনঃ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)
‘‘বলুনঃ তিনি আল্লাহ্ একক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তাকে জন্মও দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’। ‘সামাদ’ হচ্ছে যিনি কাউকে জন্ম দেন নি বা যাকে কেউ জন্ম দেয়নি। কারণ জন্মগ্রহণকারী সকল বস্ত্তই মরণশীল। আর মরণশীল প্রতিটি বস্ত্তই উত্তরাধিকারী রেখে যায়। আর আল্লাহ তা’আলা মরণশীল নন, তিনি কাউকে উত্তরাধিকারী নির্ধারণকারী নন। ‘আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’ অর্থাৎ কেউ তাঁর সমকক্ষ, সমান মর্যাদা সম্পন্ন এবং কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয় ।
উত্তরঃ কুরআন ও হাদীছে আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম থাকার কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ
‘‘আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তার বিকৃত করে’’। (সূরা আরাফঃ ১৮০) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
قُلْ ادْعُوا اللَّهَ أَوْ ادْعُوا الرَّحْمنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
‘‘বলুনঃ তোমরা আল্লাহ্কে ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর বা ‘রাহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর না কেন, তাঁর রয়েছে অনেক সুন্দর নাম’’। সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১১০) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ لَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
‘‘আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। সব সৌন্দর্য মন্ডিত নাম তাঁরই। (সূরা তোহাঃ ৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ )
‘‘আল্লাহর এমন নিরানববইটি নাম রয়েছে যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্ত করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( أَسْأَلُكَ أللَّهُمَّ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي )
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সেই প্রত্যেক নামের উসীলা দিয়ে আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, যে নামের মাধ্যমে আপনি নিজের নাম করণ করেছেন বা আপনার কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন বা আপনার কোন বান্দাকে শিক্ষা দিয়েছেন অথবা যে নামগুলোকে আপনি নিজের জ্ঞান ভান্ডারে সংরক্ষিত করে রেখেছেন, কুরআনকে আমার অন্তরের শান্তিতে পরিণত করে দিন। [- মুসনাদে আহমাদ, ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- (১/১৯৯)।]
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ
‘‘আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তার বিকৃত করে’’। (সূরা আরাফঃ ১৮০) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
قُلْ ادْعُوا اللَّهَ أَوْ ادْعُوا الرَّحْمنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
‘‘বলুনঃ তোমরা আল্লাহ্কে ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর বা ‘রাহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর না কেন, তাঁর রয়েছে অনেক সুন্দর নাম’’। সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১১০) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ لَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
‘‘আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। সব সৌন্দর্য মন্ডিত নাম তাঁরই। (সূরা তোহাঃ ৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ )
‘‘আল্লাহর এমন নিরানববইটি নাম রয়েছে যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্ত করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( أَسْأَلُكَ أللَّهُمَّ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي )
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সেই প্রত্যেক নামের উসীলা দিয়ে আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, যে নামের মাধ্যমে আপনি নিজের নাম করণ করেছেন বা আপনার কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন বা আপনার কোন বান্দাকে শিক্ষা দিয়েছেন অথবা যে নামগুলোকে আপনি নিজের জ্ঞান ভান্ডারে সংরক্ষিত করে রেখেছেন, কুরআনকে আমার অন্তরের শান্তিতে পরিণত করে দিন। [- মুসনাদে আহমাদ, ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- (১/১৯৯)।]
উত্তরঃ কুরআন মজীদে আল্লাহর অনেক গুণ বাচক নাম উল্লেখিত হয়েছে। নিম্নে কতিপয় উদাহরণ পেশ করা হল। যেমন আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
‘‘আল্লাহ তা’আলা علي -আলী (সমুন্নত), এবং كَبِير কাবীর (মহীয়ান)’’। (সূরা নিসাঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ لَطِيف লতীফ (সুক্ষ্ণ দর্শী) এবং خَبِير খাবীর (সর্ব বিষয় অবহিত)’’। (সূরা আহযাবঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا قَدِيْرًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ عليم (মহাজ্ঞাণী قَدِيْر ( (সর্বশক্তিমান)’’ (সূরা ফাতিরঃ ৪৪) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا )
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ سميع (শ্রবণকারী) ও بصير (দর্শনকারী)’’। (সূরা নিসাঃ ৫৮) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا
‘‘(নিশ্চয়ই আল্লাহ عَزِيز (মহাপরাক্রমশালী) ও حَكِيم (প্রজ্ঞাময়)’’। (সূরা নিসাঃ ৫৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ غَفُور (ক্ষমাশীল) ও رَحِيم (দয়াময়)’’ (সূরা নিসাঃ ২৩) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘‘নিশ্চয়ই তিনি رَءُوف (দয়াশীল) ও رَحِيم (দয়াময়)’’। (সূরা তাওবাঃ ১১৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
( وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ
‘‘আর আল্লাহ غَنِيّ (সম্পদশালী) ও حَليْم (সহিষ্ণু)’’ (সূরা বাকারাঃ ২৬৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
( إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
‘‘নিশ্চয়ই তিনি প্রশংসার যোগ্য حَمِيد ও مَجِيدٌ (মহামহিমান্বিত)’’। (সূরা হুদঃ ৭৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘আর আল্লাহ সকল সর্ব বিষয়ে قَدِيرٌ (শক্তিমান) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ
‘‘নিশ্চয়ই আমার প্রভু قَرِيب (একান্ত নিকটবর্তী) مُجِيب (ডাকে সাড়া দানকারী)’’। (সূরা হুদঃ ৬১) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর رَقِيب (তত্ত্বাবধানকারী)’’। (সূরা নিসাঃ ১) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلاً
‘‘আর وكيلً (কার্য সম্পাদনকারী) হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট’’। (সূরা নিসাঃ ৮১) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا
‘‘এবং আল্লাহই حَسِيب (হিসাব গ্রহণকারী) হিসাবে যথেষ্ট’’। (সূরা নিসাঃ ৬) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُقِيتًا
‘‘বস্ত্ততঃ আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে مُقِيت (ক্ষমতাশীল)’’। (সূরা নিসাঃ ৮৫) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
( أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
‘‘তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে شَهِيْد (সাক্ষী)’’। (সূরা হামীম সাজদাহঃ ৫৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُحِيطٌ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ের مُحِيط (পরিবেষ্টনকারী)’’। (সূরা ফুস্সিলাতঃ ৫৪) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
‘‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য إله )উপাস্য( নেই। তিনি حَيُّ (চিরজীবন্ত) ও قَيُّوم (সব কিছুর ধারক)। (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
هُوَ الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
‘‘তিনিই الأَوَّلُ (প্রথম)। তিনিই الآخِرُ (সর্বশেষ) তিনিই الظَّاهِرُ (প্রকাশমান) তিনিই الْبَاطِنُ (অপ্রকাশমান)। আর তিনি সর্ব বিষয়ে عَلِيم (মহাজ্ঞাণী)’’। (সূরা হাদীদঃ ৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ * هُوَ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إلاَّ هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلاَمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ * هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ (অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছু সম্পর্কে অবগত), তিনি رحْمَنُ (পরম করুনাময়) رَحِيمُ ও (অসীম দয়ালু)। ‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি مَلِك (মালিক), قُدُّوس (অতি পবিত্র) سَلَام (পরিপূর্ণ শান্তিদাতা) مؤْمِن (নিরাপত্তা দানকারী), مُهَيْمن (রক্ষক), عَزِيز (মহাপরাক্রমশালী), جَبَّار (প্রতাপশীল), مُتَكَبِّر (অতী মহিমান্বিত)। তারা যাকে শরীক সাব্যস্ত করে আল্লাহ তা’আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, خَالِق (সৃষ্টিকারী), بَارِي (উদ্ভাবক), مُصَوِّر (রূপদাতা), সকল উত্তম নাম তাঁরই। আর তিনি عَزِيز (মহাপরাক্রমশালী) ও حَكِيم (প্রজ্ঞাময়)’’। (সূরা হাশরঃ ২২-২৪)
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
‘‘আল্লাহ তা’আলা علي -আলী (সমুন্নত), এবং كَبِير কাবীর (মহীয়ান)’’। (সূরা নিসাঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ لَطِيف লতীফ (সুক্ষ্ণ দর্শী) এবং خَبِير খাবীর (সর্ব বিষয় অবহিত)’’। (সূরা আহযাবঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا قَدِيْرًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ عليم (মহাজ্ঞাণী قَدِيْر ( (সর্বশক্তিমান)’’ (সূরা ফাতিরঃ ৪৪) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا )
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ سميع (শ্রবণকারী) ও بصير (দর্শনকারী)’’। (সূরা নিসাঃ ৫৮) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا
‘‘(নিশ্চয়ই আল্লাহ عَزِيز (মহাপরাক্রমশালী) ও حَكِيم (প্রজ্ঞাময়)’’। (সূরা নিসাঃ ৫৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ غَفُور (ক্ষমাশীল) ও رَحِيم (দয়াময়)’’ (সূরা নিসাঃ ২৩) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘‘নিশ্চয়ই তিনি رَءُوف (দয়াশীল) ও رَحِيم (দয়াময়)’’। (সূরা তাওবাঃ ১১৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
( وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ
‘‘আর আল্লাহ غَنِيّ (সম্পদশালী) ও حَليْم (সহিষ্ণু)’’ (সূরা বাকারাঃ ২৬৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
( إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
‘‘নিশ্চয়ই তিনি প্রশংসার যোগ্য حَمِيد ও مَجِيدٌ (মহামহিমান্বিত)’’। (সূরা হুদঃ ৭৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘আর আল্লাহ সকল সর্ব বিষয়ে قَدِيرٌ (শক্তিমান) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُجِيبٌ
‘‘নিশ্চয়ই আমার প্রভু قَرِيب (একান্ত নিকটবর্তী) مُجِيب (ডাকে সাড়া দানকারী)’’। (সূরা হুদঃ ৬১) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর رَقِيب (তত্ত্বাবধানকারী)’’। (সূরা নিসাঃ ১) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَكَفَى بِاللَّهِ وَكِيلاً
‘‘আর وكيلً (কার্য সম্পাদনকারী) হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট’’। (সূরা নিসাঃ ৮১) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا
‘‘এবং আল্লাহই حَسِيب (হিসাব গ্রহণকারী) হিসাবে যথেষ্ট’’। (সূরা নিসাঃ ৬) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَكَانَ اللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ مُقِيتًا
‘‘বস্ত্ততঃ আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে مُقِيت (ক্ষমতাশীল)’’। (সূরা নিসাঃ ৮৫) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
( أَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
‘‘তোমার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ে شَهِيْد (সাক্ষী)’’। (সূরা হামীম সাজদাহঃ ৫৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُحِيطٌ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ের مُحِيط (পরিবেষ্টনকারী)’’। (সূরা ফুস্সিলাতঃ ৫৪) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
‘‘আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য إله )উপাস্য( নেই। তিনি حَيُّ (চিরজীবন্ত) ও قَيُّوم (সব কিছুর ধারক)। (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
هُوَ الأَوَّلُ وَالآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
‘‘তিনিই الأَوَّلُ (প্রথম)। তিনিই الآخِرُ (সর্বশেষ) তিনিই الظَّاهِرُ (প্রকাশমান) তিনিই الْبَاطِنُ (অপ্রকাশমান)। আর তিনি সর্ব বিষয়ে عَلِيم (মহাজ্ঞাণী)’’। (সূরা হাদীদঃ ৩) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ * هُوَ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إلاَّ هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلاَمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ * هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ
‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ (অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছু সম্পর্কে অবগত), তিনি رحْمَنُ (পরম করুনাময়) رَحِيمُ ও (অসীম দয়ালু)। ‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি مَلِك (মালিক), قُدُّوس (অতি পবিত্র) سَلَام (পরিপূর্ণ শান্তিদাতা) مؤْمِن (নিরাপত্তা দানকারী), مُهَيْمن (রক্ষক), عَزِيز (মহাপরাক্রমশালী), جَبَّار (প্রতাপশীল), مُتَكَبِّر (অতী মহিমান্বিত)। তারা যাকে শরীক সাব্যস্ত করে আল্লাহ তা’আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, خَالِق (সৃষ্টিকারী), بَارِي (উদ্ভাবক), مُصَوِّر (রূপদাতা), সকল উত্তম নাম তাঁরই। আর তিনি عَزِيز (মহাপরাক্রমশালী) ও حَكِيم (প্রজ্ঞাময়)’’। (সূরা হাশরঃ ২২-২৪)
উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পবিত্র জবানীতেও আল্লাহর অনেক সুন্দর নাম বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ
( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَلِيمُ الْحَلِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ )
‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। যিনি عليم (মহাজ্ঞাণী), حَليْم (সহিষ্ণু)। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। যিনি আরশে আযীমের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক এবং যিনি মর্যাদাবান আরশের মালিক’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত।] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )এর বাণীঃ
( يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ يَا بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ )
‘‘ইয়া হাইয়্যু! (চিরঞ্জিব) ইয়া কাইয়্যুমু! (রক্ষক), ইয়া যাল যালালি ওয়াল ইকরাম! (মহা সম্মানের অধিকারী) ইয়া বাদীউস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরযি! (আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ
( بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ )
‘‘আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে পৃথিবী ও আকাশের কোন জিনিষ ক্ষতি সাধন করতে পারে না, এবং তিনিই سَمِيع (সর্বশ্রোতা) ও عَلِيم (সর্বজ্ঞ)’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দুআ। হাকেম সহীহ বলেছেন, (১/৫১৪)।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ
( اللَّهُمَّ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ )
‘‘হে আল্লাহ! অদৃশ্য ও দৃশ্য জগত সম্পর্কে অবগত, আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, সব কিছুর প্রতিপালক ( رب ) ও মালিক ( مَالِك )’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। তিনি বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ, ইমাম হাকেম তার মুসতাদরাকে বর্ণনা করে সহীহ বলেছেন, (১/৫৩) ইমাম যাহাবীও তাতে একমত পোষণ করেছেন।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আয় বলতেনঃ
( اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ وَرَبَّ الأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللَّهُمَّ أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ
‘‘হে আল্লাহ! আকাশমন্ডলী, পৃথিবী, আরশে আযীমের رَبّ (অধিপতি)। হে আমাদের ও সকল বস্ত্তর প্রতিপালক! হে فَالِقُ الحَبِّ والنَّوَى (দানা ও বীজ উৎপাদনকারী) তাওরাত, ইনজীল ও কুরআন অবতীর্ণকারী। আমি তোমার নিকট প্রত্যেক অনিষ্টকারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার ললাটের কেশগুচ্ছ তুমি ধারণ করে আছ।
হে আল্লাহ! আপনিই أَوَّل (প্রথম)। আপনার পূর্বে কেউ ছিল না। আপনিই أَخِر (সর্বশেষ), আপনার পর কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আপনিই ظَاهِر (প্রকাশমান), আপনার চেয়ে প্রকাশমান আর কেউ নেই। আপনিই بَاطِن (অপ্রকাশমান), কোন কিছুই আপনার জ্ঞান থেকে অপ্রকাশ্য নয়’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র ওয়াদ্ দু’আ।] অর্থাৎ অপ্রকাশ্য সকল বস্ত্ত সম্পর্কে আপনি পূর্ণ অবগত আছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ
‘‘হে আল্লাহ! আপনার জন্যে সমস্ত প্রশংসা। আপনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মাঝের সব কিছুর نُوْر (নূর)। আপনার জন্যে সমস্ত প্রশংসা। আপনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মাঝের সব কিছুর قَيُّوم (রক্ষক)’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দু’আঃ
( اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এ কথার সাক্ষ্যের উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই। আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জম্ম দেন নি এবং কেউ যাকে জন্মও দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সহীহুত্ তারগীব ওয়াত্ তারগীব, হাদীছ নং- ১৬৪০]
( يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ )
‘‘ইয়া مُقَلِّب الْقُلُوْب (হে অন্তর পরিবর্তনকারী)! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান।]
( لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ الْعَلِيمُ الْحَلِيمُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ )
‘‘আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। যিনি عليم (মহাজ্ঞাণী), حَليْم (সহিষ্ণু)। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। যিনি আরশে আযীমের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক এবং যিনি মর্যাদাবান আরশের মালিক’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত।] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )এর বাণীঃ
( يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ يَا بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ )
‘‘ইয়া হাইয়্যু! (চিরঞ্জিব) ইয়া কাইয়্যুমু! (রক্ষক), ইয়া যাল যালালি ওয়াল ইকরাম! (মহা সম্মানের অধিকারী) ইয়া বাদীউস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরযি! (আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ
( بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ )
‘‘আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে পৃথিবী ও আকাশের কোন জিনিষ ক্ষতি সাধন করতে পারে না, এবং তিনিই سَمِيع (সর্বশ্রোতা) ও عَلِيم (সর্বজ্ঞ)’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব, ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দুআ। হাকেম সহীহ বলেছেন, (১/৫১৪)।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ
( اللَّهُمَّ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ )
‘‘হে আল্লাহ! অদৃশ্য ও দৃশ্য জগত সম্পর্কে অবগত, আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, সব কিছুর প্রতিপালক ( رب ) ও মালিক ( مَالِك )’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। তিনি বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ, ইমাম হাকেম তার মুসতাদরাকে বর্ণনা করে সহীহ বলেছেন, (১/৫৩) ইমাম যাহাবীও তাতে একমত পোষণ করেছেন।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আয় বলতেনঃ
( اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ وَرَبَّ الأَرْضِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَيْءٍ فَالِقَ الْحَبِّ وَالنَّوَى وَمُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْفُرْقَانِ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْءٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهِ اللَّهُمَّ أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ
‘‘হে আল্লাহ! আকাশমন্ডলী, পৃথিবী, আরশে আযীমের رَبّ (অধিপতি)। হে আমাদের ও সকল বস্ত্তর প্রতিপালক! হে فَالِقُ الحَبِّ والنَّوَى (দানা ও বীজ উৎপাদনকারী) তাওরাত, ইনজীল ও কুরআন অবতীর্ণকারী। আমি তোমার নিকট প্রত্যেক অনিষ্টকারীর অনিষ্ট হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার ললাটের কেশগুচ্ছ তুমি ধারণ করে আছ।
হে আল্লাহ! আপনিই أَوَّل (প্রথম)। আপনার পূর্বে কেউ ছিল না। আপনিই أَخِر (সর্বশেষ), আপনার পর কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আপনিই ظَاهِر (প্রকাশমান), আপনার চেয়ে প্রকাশমান আর কেউ নেই। আপনিই بَاطِن (অপ্রকাশমান), কোন কিছুই আপনার জ্ঞান থেকে অপ্রকাশ্য নয়’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র ওয়াদ্ দু’আ।] অর্থাৎ অপ্রকাশ্য সকল বস্ত্ত সম্পর্কে আপনি পূর্ণ অবগত আছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ
‘‘হে আল্লাহ! আপনার জন্যে সমস্ত প্রশংসা। আপনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মাঝের সব কিছুর نُوْر (নূর)। আপনার জন্যে সমস্ত প্রশংসা। আপনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মাঝের সব কিছুর قَيُّوم (রক্ষক)’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দু’আঃ
( اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এ কথার সাক্ষ্যের উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি যে, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই। আপনি একক ও অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জম্ম দেন নি এবং কেউ যাকে জন্মও দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সহীহুত্ তারগীব ওয়াত্ তারগীব, হাদীছ নং- ১৬৪০]
( يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ )
‘‘ইয়া مُقَلِّب الْقُلُوْب (হে অন্তর পরিবর্তনকারী)! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান।]
উত্তরঃ আল্লাহর সুন্দর নামগুলো তিনটি বিষয়ের প্রমাণ বহন করে। (১) সরাসরি আল্লাহর সত্বার অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে। (২) উক্ত নামগুলো হতে প্রাপ্ত সিফাত তথা গুণাবলীর উপর প্রমাণ বহন করে। (৩) উক্ত নামগুলো হতে প্রাপ্ত নয়, এমন অন্যান্য সিফাতের উপরও প্রমাণ বহন করে।
উত্তরঃ উদাহরণ স্বরূপ আল্লাহ্ তা’আলার রাহমান ও রাহীম নাম দ্বয় উল্লেখ করা যেতে পারে। এ দু’টি নাম তার দ্বারা নামকরণকৃত সত্ববা তথা সরাসরি আল্লাহর সত্ববাকে বুঝায়। আর এ দু’টি নাম তা থেকে নির্গত সিফাতকে (গুণকে) অন্তর্ভূক্ত করে। আর তা হচ্ছে আল্লাহর সীমাহীন রহমত। এমনিভাবে এ দু’টি নাম তা থেকে নির্গত নয়, এমন অনেক সিফাতকেও আবশ্যক করে। যেমন জীবন, ক্ষমতা ইত্যাদি। অন্যান্য সকল সিফাতের ব্যাপারে একই কথা।
অপর পক্ষে মাখলুকের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেখা যায় কখনও কোন মানুষের নাম রাখা হয় حَكيْم (মহাজ্ঞানী) অথচ সে একেবারেই মূর্খ, কারো নাম রাখা হয় حَكَمْ (ন্যায় বিচারক) অথচ সে যালেম, কারো নাম রাখা হয় عَزِيْز (সম্মানিত) অথচ সে লাঞ্জিত, কোন কোন মানুষের নাম রাখা হয় شَرِيف (অভিজাত) অথচ সে ইতর, কারো নাম রাখা হয় كَرِيْم (মর্যাদাবান) অথচ সে নিকৃষ্ট, কারো নাম রাখা হয় صَالِح (সৎকর্মপরায়ণ) অথচ সে অসৎকর্মপরায়ণ, কারো নাম রাখা হয় سَعِيْد (সৌভাগ্যবান) অথচ সে নিতান্ত হতভাগা। অনুরূপভাবে কারো নাম রাখা হয় أَسَدْ (বাঘ) অথচ সে বাঘের মত সাহসী নয়, কারো নাম রাখা حَنْظَلَة (তিক্ত) অথচ সে খুবই মিষ্টভাষী, কারো নাম রাখা হয় عَلْقَمَة (এক প্রকার তিক্তফল) অথচ তার ব্যবহার তিক্ত নয়।
অপর পক্ষে আল্লাহর সুন্দর নামগুলো যে অর্থ ও তাৎপর্য বহন করে তা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্ তা’আলার মধ্যে বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ্ তা’আলার রহমত সর্বত্র সকল সৃষ্টিকে ঘিরে আছে বলেই তাঁর নাম الرَّحْمَن الرَّحِيْم )) রাহমান ও রাহীম। তিনি সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন বলেই তাঁর নাম খালেক ( خَالِقْ ) সৃষ্টিকর্তা। তিনি সর্ব বিষয় অবগত আছেন বলেই তাঁর নাম عَلِيْم )) মহাজ্ঞানী। আল্লাহর সকল নামের ক্ষেত্রে একই কথা।
সুতরাং জানা গেল যে, আল্লাহর সত্ত্বা সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। তিনি সেরকমই যেমন তিনি নিজের বর্ণনা দিয়েছেন। মানুষ যতই তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করুক না কেন, তিনি তার অনেক উর্ধেব।
অপর পক্ষে মাখলুকের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেখা যায় কখনও কোন মানুষের নাম রাখা হয় حَكيْم (মহাজ্ঞানী) অথচ সে একেবারেই মূর্খ, কারো নাম রাখা হয় حَكَمْ (ন্যায় বিচারক) অথচ সে যালেম, কারো নাম রাখা হয় عَزِيْز (সম্মানিত) অথচ সে লাঞ্জিত, কোন কোন মানুষের নাম রাখা হয় شَرِيف (অভিজাত) অথচ সে ইতর, কারো নাম রাখা হয় كَرِيْم (মর্যাদাবান) অথচ সে নিকৃষ্ট, কারো নাম রাখা হয় صَالِح (সৎকর্মপরায়ণ) অথচ সে অসৎকর্মপরায়ণ, কারো নাম রাখা হয় سَعِيْد (সৌভাগ্যবান) অথচ সে নিতান্ত হতভাগা। অনুরূপভাবে কারো নাম রাখা হয় أَسَدْ (বাঘ) অথচ সে বাঘের মত সাহসী নয়, কারো নাম রাখা حَنْظَلَة (তিক্ত) অথচ সে খুবই মিষ্টভাষী, কারো নাম রাখা হয় عَلْقَمَة (এক প্রকার তিক্তফল) অথচ তার ব্যবহার তিক্ত নয়।
অপর পক্ষে আল্লাহর সুন্দর নামগুলো যে অর্থ ও তাৎপর্য বহন করে তা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্ তা’আলার মধ্যে বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ্ তা’আলার রহমত সর্বত্র সকল সৃষ্টিকে ঘিরে আছে বলেই তাঁর নাম الرَّحْمَن الرَّحِيْم )) রাহমান ও রাহীম। তিনি সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন বলেই তাঁর নাম খালেক ( خَالِقْ ) সৃষ্টিকর্তা। তিনি সর্ব বিষয় অবগত আছেন বলেই তাঁর নাম عَلِيْم )) মহাজ্ঞানী। আল্লাহর সকল নামের ক্ষেত্রে একই কথা।
সুতরাং জানা গেল যে, আল্লাহর সত্ত্বা সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। তিনি সেরকমই যেমন তিনি নিজের বর্ণনা দিয়েছেন। মানুষ যতই তাঁর গুণাগুণ বর্ণনা করুক না কেন, তিনি তার অনেক উর্ধেব।
৫৯
প্রশ্নঃ (৫৭) বিভিন্ন অর্থকে শামিল করার দিক থেকে আসমায়ে হুস্না তথা আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ কত প্রকার ও কি কি?উত্তরঃ বিভিন্ন অর্থকে শামিল করার দিক থেকে আসমায়ে হুস্না তথা আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ চার প্রকার। যথাঃ
প্রথমঃ এমন একটি খাস বা নির্দিষ্ট নাম, যা অন্যান্য সকল আসমায়ে হুসনার অর্থকে শামিল করে। আর সেই খাস নামটি হচ্ছেঃ আল্লাহ ( الله )। এ জন্যই অন্যান্য সকল নাম ‘আল্লাহ্’ নামের পরে সিফাত হিসাবে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ
‘‘তিনিই আল্লাহ خَالِق (সৃষ্টিকারী), بَارِي (উদ্ভাবক) এবং مُصَوِّر (রূপদাতা)’’। (সূরা হাশরঃ ২৪) এখানে ‘সৃষ্টিকারী’, ‘উদ্ভাবক’ এবং ‘রূপদাতা’- এই তিনটি নাম ‘আল্লাহ্’ নামের অনুগামী হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু ‘আল্লাহ্’ নামটি অন্য কোন নামের অনুগামী হিসাবে উল্লেখ হয় না।
দ্বিতীয়ঃ আল্লাহর এমন কতিপয় নাম রয়েছে, যা আল্লাহ্ তা’আলার সত্বাগত সিফাতকে আবশ্যক করে। যেমন আল্লাহ্ তা’আলার سَمِيْع ‘শ্রবণকারী’ নামটি তাঁর শ্রবণ করা গুণটিকে আবশ্যক করে, যা সমস্ত আওয়াজকে শামিল করে। তাঁর নিকট প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব আওয়াজই সমান। তাঁর আর একটি নাম البصير ‘বাসীর’ অর্থাৎ সর্বদ্রষ্টা। এই নামটি আল্লাহর ‘দৃষ্টি’ গুণকে অন্তর্ভূক্ত করে। তিনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল বস্ত্তই দেখেন। চাই সেটি অতি সূক্ষ্ম হোক বা প্রকাশমান হোক।
আল্লাহর আরেকটি গুণবাচক নামক হচ্ছে عليم ‘মহাজ্ঞানী’। তাঁর জ্ঞান সমস্ত বিষয়কে বেষ্টন করে আছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لاَ يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ وَلاَ أَصْغَرُ مِنْ ذَلِكَ وَلاَ أَكْبَرُ
‘‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনুপরিমাণ কোন কিছুই তাঁর অগোচর নয়; কিংবা তার চেয়ে ক্ষুদ্র অথবা বড় কিছু’’। (সূরা সাবাঃ ৩)
তাঁর আরেকটি নাম হল قَدِيرٌ (শক্তিমান) এটি সকল বিষয়ের উপর আল্লাহর ক্ষমতা থাকার প্রমাণ বহন করে। চাই সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে হোক অথবা কোন কিছু ধ্বংস করার ব্যাপারে হোক।
তৃতীয়ঃ কিছু কিছু নাম আছে, যা আল্লাহর কর্মগত গুণাগুণের প্রমাণ বহন করে। যেমঃ خَالِق (সৃষ্টিকারী), رَازِقْ (রিযিকদাতা), بَارِي (উদ্ভাবক), مُصَوِّر (রূপদাতা) ইত্যাদি।
চতুর্থঃ আরো এমন কতিপয় নাম রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা’আলা সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র। যেমন قُدُّوس (সমস্ত ত্রুটি হতে অতীব পবিত্র) سَلَام (সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত)
প্রথমঃ এমন একটি খাস বা নির্দিষ্ট নাম, যা অন্যান্য সকল আসমায়ে হুসনার অর্থকে শামিল করে। আর সেই খাস নামটি হচ্ছেঃ আল্লাহ ( الله )। এ জন্যই অন্যান্য সকল নাম ‘আল্লাহ্’ নামের পরে সিফাত হিসাবে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ
‘‘তিনিই আল্লাহ خَالِق (সৃষ্টিকারী), بَارِي (উদ্ভাবক) এবং مُصَوِّر (রূপদাতা)’’। (সূরা হাশরঃ ২৪) এখানে ‘সৃষ্টিকারী’, ‘উদ্ভাবক’ এবং ‘রূপদাতা’- এই তিনটি নাম ‘আল্লাহ্’ নামের অনুগামী হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু ‘আল্লাহ্’ নামটি অন্য কোন নামের অনুগামী হিসাবে উল্লেখ হয় না।
দ্বিতীয়ঃ আল্লাহর এমন কতিপয় নাম রয়েছে, যা আল্লাহ্ তা’আলার সত্বাগত সিফাতকে আবশ্যক করে। যেমন আল্লাহ্ তা’আলার سَمِيْع ‘শ্রবণকারী’ নামটি তাঁর শ্রবণ করা গুণটিকে আবশ্যক করে, যা সমস্ত আওয়াজকে শামিল করে। তাঁর নিকট প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব আওয়াজই সমান। তাঁর আর একটি নাম البصير ‘বাসীর’ অর্থাৎ সর্বদ্রষ্টা। এই নামটি আল্লাহর ‘দৃষ্টি’ গুণকে অন্তর্ভূক্ত করে। তিনি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল বস্ত্তই দেখেন। চাই সেটি অতি সূক্ষ্ম হোক বা প্রকাশমান হোক।
আল্লাহর আরেকটি গুণবাচক নামক হচ্ছে عليم ‘মহাজ্ঞানী’। তাঁর জ্ঞান সমস্ত বিষয়কে বেষ্টন করে আছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لاَ يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ وَلاَ أَصْغَرُ مِنْ ذَلِكَ وَلاَ أَكْبَرُ
‘‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনুপরিমাণ কোন কিছুই তাঁর অগোচর নয়; কিংবা তার চেয়ে ক্ষুদ্র অথবা বড় কিছু’’। (সূরা সাবাঃ ৩)
তাঁর আরেকটি নাম হল قَدِيرٌ (শক্তিমান) এটি সকল বিষয়ের উপর আল্লাহর ক্ষমতা থাকার প্রমাণ বহন করে। চাই সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে হোক অথবা কোন কিছু ধ্বংস করার ব্যাপারে হোক।
তৃতীয়ঃ কিছু কিছু নাম আছে, যা আল্লাহর কর্মগত গুণাগুণের প্রমাণ বহন করে। যেমঃ خَالِق (সৃষ্টিকারী), رَازِقْ (রিযিকদাতা), بَارِي (উদ্ভাবক), مُصَوِّر (রূপদাতা) ইত্যাদি।
চতুর্থঃ আরো এমন কতিপয় নাম রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা’আলা সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র। যেমন قُدُّوس (সমস্ত ত্রুটি হতে অতীব পবিত্র) سَلَام (সমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত)
উত্তরঃ আল্লাহ্ তা’আলার জন্য ব্যবহৃত হওয়ার দিক থেকে গুণবাচক নামগুলো দুই প্রকার। যথাঃ (১) যে সমস্ত নাম আল্লাহর জন্য এককভাবে অথবা অন্য একটি গুণবাচক নামের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়। আর এগুলো ঐ সমস্ত নাম, তা যেভাবেই বলা হোক না কেন, তার দ্বারা আল্লাহর সিফাতে কামাল তথা পরিপূর্ণ গুণ বুঝায়। যেমন حَيُّ (চিরঞ্জীব) قَيُّوم (সব কিছুর ধারক), الأَحَد (একক), الصَّمَدُ (অমুখাপেক্ষী)। তা ছাড়া এ ধরণের আরো অনেক গুনবাচক নাম রয়েছে। [- অর্থাৎ الله الحَيّ অথবা الله الحَيّ القَيُّوم এবং الله الأَحَد অথবা الله الأَحَد الصَمد সকলভাবেই ব্যবহার করা জায়েয।]
(২) যে সমস্ত নাম তার বিপরীত অর্থবোধক নাম উল্লেখ ছাড়া আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা শোভা পায় না। সেগুলো যদি এককভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে পূর্ণতার স্থলে অপূর্ণতা ও ত্রুটি বুঝায়। যেমন الضَّار النّاَفِع (ক্ষতিকারক ও কল্যাণকারী), الخَافِض الرَّافِع (নিচুকারী ও উত্তোলনকারী), الْمَانِع الْمُعْطِي (দাতা ও প্রতিরোধকারী), المُعِزُّ المُذِلُّّ (সম্মানদাতা ও অপমানকারী) ইত্যাদি।
সুতরাং এককভাবে শুধু الضَّار , الخَافِض , الْمَانِع এবং المُعِزُّ ব্যবহার করা জায়েয নেই। কুরআন বা হাদীছের কোথাও এগুলোর কোন একটিও এককভাবে ব্যবহৃত হয়নি। অনুরূপ আল্লাহ্ তা’আলার مُنْتَفِم তথা প্রতিশোধগ্রহণকারী নামটিও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত বর্ণিত হয়নি। যেমন আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
( إِنَّا مِنْ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ )
‘‘নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি’’। (সূরা সিজদাঃ ২২) অথবা তা থেকে নির্গত সিফাতের দিকে ذو (যূ) শব্দ সম্বোধন ব্যতীত ব্যবহার করা হয়নি। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ
‘‘আর আল্লাহ্ পরাক্রান্ত ও প্রতিশোধগ্রহণকারী’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৪)
(২) যে সমস্ত নাম তার বিপরীত অর্থবোধক নাম উল্লেখ ছাড়া আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা শোভা পায় না। সেগুলো যদি এককভাবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে পূর্ণতার স্থলে অপূর্ণতা ও ত্রুটি বুঝায়। যেমন الضَّار النّاَفِع (ক্ষতিকারক ও কল্যাণকারী), الخَافِض الرَّافِع (নিচুকারী ও উত্তোলনকারী), الْمَانِع الْمُعْطِي (দাতা ও প্রতিরোধকারী), المُعِزُّ المُذِلُّّ (সম্মানদাতা ও অপমানকারী) ইত্যাদি।
সুতরাং এককভাবে শুধু الضَّار , الخَافِض , الْمَانِع এবং المُعِزُّ ব্যবহার করা জায়েয নেই। কুরআন বা হাদীছের কোথাও এগুলোর কোন একটিও এককভাবে ব্যবহৃত হয়নি। অনুরূপ আল্লাহ্ তা’আলার مُنْتَفِم তথা প্রতিশোধগ্রহণকারী নামটিও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত বর্ণিত হয়নি। যেমন আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
( إِنَّا مِنْ الْمُجْرِمِينَ مُنتَقِمُونَ )
‘‘নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি’’। (সূরা সিজদাঃ ২২) অথবা তা থেকে নির্গত সিফাতের দিকে ذو (যূ) শব্দ সম্বোধন ব্যতীত ব্যবহার করা হয়নি। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ
‘‘আর আল্লাহ্ পরাক্রান্ত ও প্রতিশোধগ্রহণকারী’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৪)
৬১
প্রশ্নঃ (৫৯) পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, আল্লাহর সিফাতসমূহ দুই প্রকার। সিফাতে যাতিয়া বা সত্বাগত গুণ ও সিফাতে ফে’লীয়া বা কর্মগত গুণ। কুরআন মজীদ থেকে সিফাতে যাতিয়ার কতিপয় উদাহরণ দিন?উত্তরঃ কুরআন মজীদ থেকে নিম্নে কতিপয় সিফাতে যাতিয়ার দৃষ্টান্ত পেশ করা হলঃ
وَقَالَتْ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ
‘‘আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক! এ কথা বলার কারণে তাদের প্রতি অভিসম্পাত; বরং তাঁর উভয় হস্ত উন্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।’’ (সূরা মায়িদাঃ ৬৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
‘‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা ব্যতীত’’। (সূরা আর্ রাহমানঃ ২৬-২৭) আল্লাহ তা’আলা মূসা (আঃ)কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِي
‘‘আমি আমার নিকট হতে আপনার উপর ভালবাসা ঢেলে দিলাম, যাতে আপনি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হন’’। (সূরা তোহাঃ ৩৯) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ
‘‘তিনি কতই না সুন্দর দেখেন ও শুনেন’’। (সূরা কাহ্ফঃ ২৬) আল্লাহ তা’লা মূসা ও তাঁর ভাই হারূন (আঃ)কে লক্ষ্য করে বলেনঃ
قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى
‘‘আল্লাহ বললেনঃ তোমরা ভয় কর না, আমি তোমাদের সাথে আছি। আমি শুনি ও দেখি। (সূরা তোহাঃ ৪৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে পরিবেষ্টিত করতে পারে না’’। (সূরা তোহাঃ ১১০) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا
‘‘আর আল্লাহ তা’আলা মুসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪)
وَإِذْ نَادَى رَبُّكَ مُوسَى أَنْ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আপনার প্রভু মুসাকে ডেকে বললেনঃ তুমি যালিম সম্প্রদায়ের নিকট যাও’’। (সূরা শুআরাঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা আদম ও হাওয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ
‘‘তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি কি এ বৃক্ষ সম্পর্কে তোমাদেরকে নিষেধ করি নি?’’। (সূরা আ’রাফঃ ২২) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ مَاذَا أَجَبْتُمْ الْمُرْسَلِينَ
‘‘আর সে দিন আল্লাহ্ তাদেরকে ডেকে বলবেনঃ তোমরা রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছিলে?’’। (সূরা কাসাসঃ ৬৫) এ ছাড়াও আরো উদাহরণ রয়েছে।
وَقَالَتْ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ
‘‘আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক! এ কথা বলার কারণে তাদের প্রতি অভিসম্পাত; বরং তাঁর উভয় হস্ত উন্মুক্ত। তিনি যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।’’ (সূরা মায়িদাঃ ৬৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
‘‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা ব্যতীত’’। (সূরা আর্ রাহমানঃ ২৬-২৭) আল্লাহ তা’আলা মূসা (আঃ)কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِي
‘‘আমি আমার নিকট হতে আপনার উপর ভালবাসা ঢেলে দিলাম, যাতে আপনি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হন’’। (সূরা তোহাঃ ৩৯) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ
‘‘তিনি কতই না সুন্দর দেখেন ও শুনেন’’। (সূরা কাহ্ফঃ ২৬) আল্লাহ তা’লা মূসা ও তাঁর ভাই হারূন (আঃ)কে লক্ষ্য করে বলেনঃ
قَالَ لَا تَخَافَا إِنَّنِي مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى
‘‘আল্লাহ বললেনঃ তোমরা ভয় কর না, আমি তোমাদের সাথে আছি। আমি শুনি ও দেখি। (সূরা তোহাঃ ৪৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে পরিবেষ্টিত করতে পারে না’’। (সূরা তোহাঃ ১১০) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا
‘‘আর আল্লাহ তা’আলা মুসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪)
وَإِذْ نَادَى رَبُّكَ مُوسَى أَنْ ائْتِ الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আপনার প্রভু মুসাকে ডেকে বললেনঃ তুমি যালিম সম্প্রদায়ের নিকট যাও’’। (সূরা শুআরাঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা আদম ও হাওয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ
‘‘তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি কি এ বৃক্ষ সম্পর্কে তোমাদেরকে নিষেধ করি নি?’’। (সূরা আ’রাফঃ ২২) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَيَوْمَ يُنَادِيهِمْ فَيَقُولُ مَاذَا أَجَبْتُمْ الْمُرْسَلِينَ
‘‘আর সে দিন আল্লাহ্ তাদেরকে ডেকে বলবেনঃ তোমরা রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছিলে?’’। (সূরা কাসাসঃ ৬৫) এ ছাড়াও আরো উদাহরণ রয়েছে।
উত্তরঃ সুন্নাত হতে সিফাতে যাতিয়ার কতিপয় উদাহরণ বর্ণনা করা হল। আবু মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( حِجَابُهُ النُّورُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَتْ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَى إِلَيْهِ بَصَرُهُ مِنْ خَلْقِهِ )
‘‘তাঁর পর্দা হচ্ছে নূর। তিনি যদি তা উন্মুক্ত করেন, তবে তাঁর চোখের দৃষ্টি যতদূর যাবে, ততদূর পর্যন্ত সকল মাখলুক তাঁর চেহারার আলোতে জ্বলে যাবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] অন্য হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ يَمِينَ اللَّهِ مَلأَى لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَنْقُصْ مَا فِي يَمِينِهِ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْفَيْضُ أَوِ الْقَبْضُ يَرْفَعُ وَيَخْفِضُ )
‘‘আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। রাত দিন খরচ করার পরও তাতে কোন কমতি হয় না। তোমরা কি বলতে পারবে আসমান-যমীন সৃষ্টি করার সময় হতে এ পর্যন্ত কত খরচ করেছেন? তাঁর ডান হাতে যা আছে, তা হতে কিছুই কমেনি। তাঁর আরশ পানির উপর। তাঁর অপর হাতে রয়েছে দাড়িপাল্লা। তিনি উহা উঠান এবং নামান’’। দাজ্জালের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ اللَّهَ لاَ يَخْفَى عَلَيْكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ )
‘‘সে সময় আল্লাহর পরিচয় তোমাদের নিকট অস্পষ্ট থাকবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্ধ নন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] এ কথা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চোখের দিকে ইঙ্গিত করলেন। ইস্তেখারার হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’আর মধ্যে আল্লাহর সিফাতে যাতিয়া তথা সতবাগত গুণাবালীর বিবরণ এসেছে। তিনি বলতেনঃ
( اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ )
‘‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার জ্ঞানের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে ভালটা এবং আপনার শক্তির বদৌলতে আপনার কাছে শক্তি কামনা করছি। আর আপনার কাছেই আপনার মহা কল্যাণ কামনা করছি। নিশ্চয় আপনি শক্তির অধিকারী কিন্তু আমি মোটেও শক্তি রাখিনা, আর আপনি সবই জানেন অথচ আমি কিছুই জানিনা, আর আপনি তো অদৃশ্যেরও জ্ঞানী’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ দাওয়াত।] কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন, তাঁর সাহাবীগণ উচ্চস্বরে দু’আ করছে। তখন তিনি বললেনঃ
( فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا قَرِيبًا )
‘‘তোমরা বধির ও অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। তোমরা এমন এক সত্বাকে ডাকছ, যিনি শ্রবণকারী, সর্বদ্রষ্টা ও তোমাদের অতি নিকটে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إذا أراد الله أن يوحي بالأمر تكلم بالوحي )
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা যখন কোন বিষয় অবতীর্ণ করতে চান, তখন অহীর মাধ্যমে কথা বলেন’’। [- ইবনে খুজায়মা, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ। তবে হাদীছটি যঈফ। দেখুনঃ ইমাম আলবানী রচিত কিতাবুস্ সুন্নাত, (১/২৭৭) হাদীছ নং- ৫১৫)] পুনরুত্থানের হাদীছে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يَقُولُ اللَّهُ : يَا آدَمُ فَيَقُولُ : لَبَّيْكَ )
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেনঃ আমি উপস্থিত আছি’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] এমনিভাবে কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে বানদাদের সাথে এবং জান্নাতবাসীদের সাথে আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন। এ মর্মে অসংখ্য হাদীছ রয়েছে।
( حِجَابُهُ النُّورُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَتْ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَى إِلَيْهِ بَصَرُهُ مِنْ خَلْقِهِ )
‘‘তাঁর পর্দা হচ্ছে নূর। তিনি যদি তা উন্মুক্ত করেন, তবে তাঁর চোখের দৃষ্টি যতদূর যাবে, ততদূর পর্যন্ত সকল মাখলুক তাঁর চেহারার আলোতে জ্বলে যাবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] অন্য হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ يَمِينَ اللَّهِ مَلأَى لاَ يَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَنْقُصْ مَا فِي يَمِينِهِ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الأُخْرَى الْفَيْضُ أَوِ الْقَبْضُ يَرْفَعُ وَيَخْفِضُ )
‘‘আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ। রাত দিন খরচ করার পরও তাতে কোন কমতি হয় না। তোমরা কি বলতে পারবে আসমান-যমীন সৃষ্টি করার সময় হতে এ পর্যন্ত কত খরচ করেছেন? তাঁর ডান হাতে যা আছে, তা হতে কিছুই কমেনি। তাঁর আরশ পানির উপর। তাঁর অপর হাতে রয়েছে দাড়িপাল্লা। তিনি উহা উঠান এবং নামান’’। দাজ্জালের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ اللَّهَ لاَ يَخْفَى عَلَيْكُمْ إِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ )
‘‘সে সময় আল্লাহর পরিচয় তোমাদের নিকট অস্পষ্ট থাকবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অন্ধ নন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] এ কথা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চোখের দিকে ইঙ্গিত করলেন। ইস্তেখারার হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’আর মধ্যে আল্লাহর সিফাতে যাতিয়া তথা সতবাগত গুণাবালীর বিবরণ এসেছে। তিনি বলতেনঃ
( اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ )
‘‘হে আল্লাহ্! আমি আপনার জ্ঞানের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে ভালটা এবং আপনার শক্তির বদৌলতে আপনার কাছে শক্তি কামনা করছি। আর আপনার কাছেই আপনার মহা কল্যাণ কামনা করছি। নিশ্চয় আপনি শক্তির অধিকারী কিন্তু আমি মোটেও শক্তি রাখিনা, আর আপনি সবই জানেন অথচ আমি কিছুই জানিনা, আর আপনি তো অদৃশ্যেরও জ্ঞানী’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ দাওয়াত।] কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন, তাঁর সাহাবীগণ উচ্চস্বরে দু’আ করছে। তখন তিনি বললেনঃ
( فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِبًا تَدْعُونَ سَمِيعًا بَصِيرًا قَرِيبًا )
‘‘তোমরা বধির ও অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না। তোমরা এমন এক সত্বাকে ডাকছ, যিনি শ্রবণকারী, সর্বদ্রষ্টা ও তোমাদের অতি নিকটে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إذا أراد الله أن يوحي بالأمر تكلم بالوحي )
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা যখন কোন বিষয় অবতীর্ণ করতে চান, তখন অহীর মাধ্যমে কথা বলেন’’। [- ইবনে খুজায়মা, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ। তবে হাদীছটি যঈফ। দেখুনঃ ইমাম আলবানী রচিত কিতাবুস্ সুন্নাত, (১/২৭৭) হাদীছ নং- ৫১৫)] পুনরুত্থানের হাদীছে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يَقُولُ اللَّهُ : يَا آدَمُ فَيَقُولُ : لَبَّيْكَ )
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেনঃ আমি উপস্থিত আছি’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] এমনিভাবে কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে বানদাদের সাথে এবং জান্নাতবাসীদের সাথে আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন। এ মর্মে অসংখ্য হাদীছ রয়েছে।
উত্তরঃ কুরআন মজীদে আল্লাহর অসংখ্য সিফাতে ফে’লীয়ার বর্ণনা রয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। নিম্নে কতিপয় সিফাতের উদাহরণ পেশ করা হল। আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَوَاتٍ
‘‘অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৯) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَنْ يَأْتِيَهُمْ اللَّهُ فِي ظُلَلٍ مِنْ الْغَمَام
‘‘তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা সাদা মেঘমালা ছায়াতলে তাদের নিকট সমাগত হবেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২১০ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّموَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ
‘‘তারা আল্লাহর যথাযথ সম্মান করে না। সমস্ত পৃথিবী কিয়ামতের দিন থাকবে তার হাতের মুষ্ঠিতে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে ভাজকৃত তাঁর ডান হাতে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৭) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
قَالَ يَاإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَاسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنْ الْعَالِينَ
‘‘আল্লাহ্ বললেনঃ হে ইবলীস! আমি নিজ হাতে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাঁর সম্মুখে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে? না তুমি তাঁর চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?’’ (সূরা সোয়াদঃ ৭৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِكُلِّ شَيْءٍ
‘‘আর আমি মুসার জন্য ফলকের উপর প্রত্যেক প্রকারের উপদেশ এবং সর্ববিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا
‘‘অতঃপর যখন তাঁর প্রতিপালক পাহাড়ের উপর আলোক সম্পাৎ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৩) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ )
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই করেন’’। (সূরা হজ্জঃ ১৮)
ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَوَاتٍ
‘‘অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৯) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَنْ يَأْتِيَهُمْ اللَّهُ فِي ظُلَلٍ مِنْ الْغَمَام
‘‘তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা সাদা মেঘমালা ছায়াতলে তাদের নিকট সমাগত হবেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২১০ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّموَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ
‘‘তারা আল্লাহর যথাযথ সম্মান করে না। সমস্ত পৃথিবী কিয়ামতের দিন থাকবে তার হাতের মুষ্ঠিতে এবং আকাশমন্ডলী থাকবে ভাজকৃত তাঁর ডান হাতে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৭) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
قَالَ يَاإِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَاسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنْ الْعَالِينَ
‘‘আল্লাহ্ বললেনঃ হে ইবলীস! আমি নিজ হাতে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাঁর সম্মুখে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে? না তুমি তাঁর চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?’’ (সূরা সোয়াদঃ ৭৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِكُلِّ شَيْءٍ
‘‘আর আমি মুসার জন্য ফলকের উপর প্রত্যেক প্রকারের উপদেশ এবং সর্ববিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا
‘‘অতঃপর যখন তাঁর প্রতিপালক পাহাড়ের উপর আলোক সম্পাৎ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৩) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ )
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই করেন’’। (সূরা হজ্জঃ ১৮)
উত্তরঃ কুরআন মাজীদের ন্যায় হাদীছেও আল্লাহ্ তাআলার সিফাতে ফে’লীয়ার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يَتَنَزَّلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه )
‘‘আমাদের মহান প্রভু আল্লাহ্ তা’আলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ কে আমার নিকট দু’আ করবে? আমি তার দু’আ কবুল করবো। কে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দান করব। কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত।] শাফা’আতের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( فَيَأْتِيهِمُ اللَّهُ فِي صُورَتِهِ الَّتِي يَعْرِفُونَ فَيَقُولُ أَنَا رَبُّكُمْ فَيَقُولُونَ أَنْتَ رَبُّنَا )
‘‘অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের নিকট সেই আকৃতিতে আসবেন, যাতে তারা চিনতে পারবে। আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রভু। তারা বলবেঃ আপনি আমাদের প্রভু’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
এখানে সিফাতে ফে’লীয়া দ্বারা আল্লাহর আগমণ উদ্দেশ্য। আল্লাহর আকৃতি উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং ভালভাবে বুঝা উচিৎ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إن اللَّهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الأرْضَ وَتَكُوْنُ َالسَّموَاتُ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا المَلِكِ )
‘‘কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে তাঁর ডান হাতে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমিই বাদশা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَ بِيَدِهِ عَلَى نَفْسِهِ إِنَّ رَحْمَتِي تَغْلِبُ غَضَبِي )
‘‘আল্লাহ তা’আলা যখন সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করলেন, তখন নিজ হাতে লিখে দিলেন যে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওহীদ, মুসলিমঃ অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা।] আদম ও মুসা (আঃ)এর পরস্পর ঝগড়ার হাদীছে এসেছেঃ
( فَقَالَ آدَمُ أَنْتَ مُوسَى اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِكَلاَمِهِ وَخَطَّ لَكَ التَّوْرَاةَ بِيَدِهِ )
‘‘অতঃপর আদম (আঃ) বললেনঃ আপনি মুসা। আপনাকে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্যে হতে মনোনিত করেছেন এবং নিজ হাতে তিনি আপনার জন্য তাওরাত কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।]
এখানে আল্লাহর বাক্যালাপ ও তাঁর হাত- এটি সিফাতে জাতিয়া তথা সতবাগত গুণ। কথা বলা একই সাথে আল্লাহর সিফাতে জাতিয়া (সত্বাগত গুণ) ও সিফাতে ফে’লীয়া (কর্মগত গুণ)। আর তাওরাত লিখা আল্লাহর কর্মগত গুণ।
( إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ )
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা রাতের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করে রাখেন, যাতে দিনের বেলায় অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তিগণ তাওবা করে। এমনিভাবে দিনের বেলা স্বীয় হাত প্রসারিত করে দেন, যাতে রাতের বেলার অপরাধীগণ তাওবা করে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওবা।]
( يَتَنَزَّلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه )
‘‘আমাদের মহান প্রভু আল্লাহ্ তা’আলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ কে আমার নিকট দু’আ করবে? আমি তার দু’আ কবুল করবো। কে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে? আমি তাকে দান করব। কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত।] শাফা’আতের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( فَيَأْتِيهِمُ اللَّهُ فِي صُورَتِهِ الَّتِي يَعْرِفُونَ فَيَقُولُ أَنَا رَبُّكُمْ فَيَقُولُونَ أَنْتَ رَبُّنَا )
‘‘অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের নিকট সেই আকৃতিতে আসবেন, যাতে তারা চিনতে পারবে। আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাদের প্রভু। তারা বলবেঃ আপনি আমাদের প্রভু’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
এখানে সিফাতে ফে’লীয়া দ্বারা আল্লাহর আগমণ উদ্দেশ্য। আল্লাহর আকৃতি উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং ভালভাবে বুঝা উচিৎ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إن اللَّهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الأرْضَ وَتَكُوْنُ َالسَّموَاتُ بِيَمِينِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا المَلِكِ )
‘‘কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে তাঁর ডান হাতে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমিই বাদশা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ كَتَبَ بِيَدِهِ عَلَى نَفْسِهِ إِنَّ رَحْمَتِي تَغْلِبُ غَضَبِي )
‘‘আল্লাহ তা’আলা যখন সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করলেন, তখন নিজ হাতে লিখে দিলেন যে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর জয়লাভ করেছে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওহীদ, মুসলিমঃ অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা।] আদম ও মুসা (আঃ)এর পরস্পর ঝগড়ার হাদীছে এসেছেঃ
( فَقَالَ آدَمُ أَنْتَ مُوسَى اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِكَلاَمِهِ وَخَطَّ لَكَ التَّوْرَاةَ بِيَدِهِ )
‘‘অতঃপর আদম (আঃ) বললেনঃ আপনি মুসা। আপনাকে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্যে হতে মনোনিত করেছেন এবং নিজ হাতে তিনি আপনার জন্য তাওরাত কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।]
এখানে আল্লাহর বাক্যালাপ ও তাঁর হাত- এটি সিফাতে জাতিয়া তথা সতবাগত গুণ। কথা বলা একই সাথে আল্লাহর সিফাতে জাতিয়া (সত্বাগত গুণ) ও সিফাতে ফে’লীয়া (কর্মগত গুণ)। আর তাওরাত লিখা আল্লাহর কর্মগত গুণ।
( إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ )
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা রাতের বেলা তাঁর হাত প্রসারিত করে রাখেন, যাতে দিনের বেলায় অপরাধে লিপ্ত ব্যক্তিগণ তাওবা করে। এমনিভাবে দিনের বেলা স্বীয় হাত প্রসারিত করে দেন, যাতে রাতের বেলার অপরাধীগণ তাওবা করে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাওবা।]
৬৫
প্রশ্নঃ (৬৩) আল্লাহ্ তা’আলার প্রত্যেক সিফাতে ফে’লীয়া হতে কি নাম নির্ধারণ করা জায়েয? না কি নামগুলো আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে?উত্তরঃ প্রত্যেক সিফাতে ফে’লীয়া হতে নাম নির্বাচন করা জায়েয নেই। কেননা নামগুলো আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাঁর নাম সেগুলোই, যা তিনি কুরআন মজীদে উল্লেখ করেছেন কিংবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ হাদীছে বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ্ তা’আলা যে সমস্ত কর্ম নিজের সতবার জন্য সাব্যস্ত করেছেন, তাতে রয়েছে তাঁর পরিপূর্ণতা ও প্রশংসার বর্ণনা। তবে আল্লাহ তা’আলা সর্বদা ঐ কর্মগুলো দ্বারা নিজেকে বৈশিষ্টমন্ডিত করেন নি এবং সেগুলো থেকে আল্লাহর নাম নির্বাচন করাও জায়েয নেই। আল্লাহর কর্মসমূহের মধ্যে এমন কতিপয় কর্ম রয়েছে, যা দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা সদা গুণান্বিত। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ
‘‘আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তোমাদেরকে রিযিক দিয়েছেন অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করবেন’’। (সূরা রূমঃ ৪০)
উক্ত কর্মগুলো থেকে আল্লাহ্ তা’আলা নিজেকে خَالِق (সৃষ্টিকারী), رَازِق (রিযিক দাতা), المُحِيْ (জীবন দানকারী) এবং المُمِيت (মৃত্যু দাতা) হিসাবে নাম করণ করেছেন।
অপর পক্ষে আল্লাহ তাআলার এমন কতিপয় কর্ম রয়েছে, যা স্বীয় সত্ত্বার জন্য প্রতিদান ও অন্য একটি ক্রিয়ার মুকাবেলায় ব্যবহার করেছেন। সুতরাং যেখানে তিনি তা ব্যবহার করেছেন, সেখানে উক্ত ক্রিয়া ব্যবহার করার কারণে তাঁর পূর্ণতা ও প্রশংসা বুঝায়; অন্যত্র নয়। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ المُنَافِقِيْن يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ
‘‘নিশ্চয়ই মুনাফেকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে এবং তিনিও তাদেরকে ঐ প্রতারণা প্রত্যার্পণ করেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৪২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
‘‘এবং তারা ষড়যন্ত্র করেছিল আর আল্লাহও সুক্ষ্ম কৌশল করলেন। আল্লাহই শ্রেষ্ঠতম কৌশলী’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫৪) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
نَسُوا اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ
‘‘তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে। সুতরাং আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গিয়েছেন’’। (সূরা তাওবাঃ ৬৭) কিন্তু স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, উক্ত ক্রিয়াসমূহ আয়াতে বর্ণিত স্থানসমূহ ব্যতীত অন্য কোন স্থানে আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা জায়েয নেই। সুতরাং এ কথা বলা যাবে না যে, আল্লাহ ষড়যন্ত্র করেন, প্রতারণা করেন এবং ঠাট্টা করেন। অনুরূপভাবে এ সমস্ত ক্রিয়া থেকে আল্লাহর নাম বাহির করাও জায়েয নেই। সুতরাং বলা যাবে না যে, তিনি مَاكِر (ষড়যন্ত্রকারী), مُخَادِع (প্রতারণাকারী) এবং مُسْتَهْزِي (বিদ্রুপকারী)। কোন জ্ঞানবান মুসলিম এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করতে পারে না। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় সতবাকে ষড়যন্ত্র, কৌশল এবং প্রতারণা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত করেন নি। তবে যারা অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র, কৌশল এবং প্রতারণা করে থাকে, প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহও তাদের সাথে ষড়যন্ত্র, কৌশল এবং প্রতারণা করে থাকেন। ইহা জানা কথা যে, মানুষ যদি ইনসাফের সাথে উপরোক্ত কাজগুলোর শাস্তি দেয়, তাহলে সকলেই তাকে ভাল মনে করে। যিনি সকল বস্ত্তর সৃষ্টিকারী, মহাজ্ঞানী, ন্যায়বিচারক এবং প্রজ্ঞাময় তিনি যদি উপরোক্ত নিকৃষ্ট কাজগুলোর শাস্তি ও বিনিময় প্রদান করেন তাহলে তাঁর এ কাজগুলো উত্তমভাবেই প্রশংসনীয় হবে। [- তবে স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহর কোন কর্ম ও গুণ মানুষের কোন কর্ম ও গুণের মত নয়। তাঁর জন্য যেমন কৌশল, প্রতারণা ও ঠাট্টা প্রযোজ্য, তিনি সেভাবেই গোনাহগারদের সাথে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেন।]
আল্লাহ্ তা’আলা যে সমস্ত কর্ম নিজের সতবার জন্য সাব্যস্ত করেছেন, তাতে রয়েছে তাঁর পরিপূর্ণতা ও প্রশংসার বর্ণনা। তবে আল্লাহ তা’আলা সর্বদা ঐ কর্মগুলো দ্বারা নিজেকে বৈশিষ্টমন্ডিত করেন নি এবং সেগুলো থেকে আল্লাহর নাম নির্বাচন করাও জায়েয নেই। আল্লাহর কর্মসমূহের মধ্যে এমন কতিপয় কর্ম রয়েছে, যা দ্বারা আল্লাহ্ তা’আলা সদা গুণান্বিত। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ
‘‘আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তোমাদেরকে রিযিক দিয়েছেন অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করবেন’’। (সূরা রূমঃ ৪০)
উক্ত কর্মগুলো থেকে আল্লাহ্ তা’আলা নিজেকে خَالِق (সৃষ্টিকারী), رَازِق (রিযিক দাতা), المُحِيْ (জীবন দানকারী) এবং المُمِيت (মৃত্যু দাতা) হিসাবে নাম করণ করেছেন।
অপর পক্ষে আল্লাহ তাআলার এমন কতিপয় কর্ম রয়েছে, যা স্বীয় সত্ত্বার জন্য প্রতিদান ও অন্য একটি ক্রিয়ার মুকাবেলায় ব্যবহার করেছেন। সুতরাং যেখানে তিনি তা ব্যবহার করেছেন, সেখানে উক্ত ক্রিয়া ব্যবহার করার কারণে তাঁর পূর্ণতা ও প্রশংসা বুঝায়; অন্যত্র নয়। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ المُنَافِقِيْن يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ
‘‘নিশ্চয়ই মুনাফেকরা আল্লাহর সাথে প্রতারণা করে এবং তিনিও তাদেরকে ঐ প্রতারণা প্রত্যার্পণ করেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৪২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
‘‘এবং তারা ষড়যন্ত্র করেছিল আর আল্লাহও সুক্ষ্ম কৌশল করলেন। আল্লাহই শ্রেষ্ঠতম কৌশলী’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫৪) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
نَسُوا اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ
‘‘তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে। সুতরাং আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গিয়েছেন’’। (সূরা তাওবাঃ ৬৭) কিন্তু স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, উক্ত ক্রিয়াসমূহ আয়াতে বর্ণিত স্থানসমূহ ব্যতীত অন্য কোন স্থানে আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা জায়েয নেই। সুতরাং এ কথা বলা যাবে না যে, আল্লাহ ষড়যন্ত্র করেন, প্রতারণা করেন এবং ঠাট্টা করেন। অনুরূপভাবে এ সমস্ত ক্রিয়া থেকে আল্লাহর নাম বাহির করাও জায়েয নেই। সুতরাং বলা যাবে না যে, তিনি مَاكِر (ষড়যন্ত্রকারী), مُخَادِع (প্রতারণাকারী) এবং مُسْتَهْزِي (বিদ্রুপকারী)। কোন জ্ঞানবান মুসলিম এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করতে পারে না। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় সতবাকে ষড়যন্ত্র, কৌশল এবং প্রতারণা ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত করেন নি। তবে যারা অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র, কৌশল এবং প্রতারণা করে থাকে, প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহও তাদের সাথে ষড়যন্ত্র, কৌশল এবং প্রতারণা করে থাকেন। ইহা জানা কথা যে, মানুষ যদি ইনসাফের সাথে উপরোক্ত কাজগুলোর শাস্তি দেয়, তাহলে সকলেই তাকে ভাল মনে করে। যিনি সকল বস্ত্তর সৃষ্টিকারী, মহাজ্ঞানী, ন্যায়বিচারক এবং প্রজ্ঞাময় তিনি যদি উপরোক্ত নিকৃষ্ট কাজগুলোর শাস্তি ও বিনিময় প্রদান করেন তাহলে তাঁর এ কাজগুলো উত্তমভাবেই প্রশংসনীয় হবে। [- তবে স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহর কোন কর্ম ও গুণ মানুষের কোন কর্ম ও গুণের মত নয়। তাঁর জন্য যেমন কৌশল, প্রতারণা ও ঠাট্টা প্রযোজ্য, তিনি সেভাবেই গোনাহগারদের সাথে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেন।]
৬৬
প্রশ্নঃ (৬৪) আল্লাহ্ তা’আলার নাম العَلِي (সমুন্নত) ও الأَعْلَى(সর্বোচ্চ) এবং এ অর্থে অন্যান্য নাম যেমন الظَاهِر (প্রকাশমান), القَاهِر (পরাক্রমশালী) এবং المُتَعَالِي (সুউচ্চ) ইত্যাদি কোন্ জিনিষের প্রমাণ বহন করে?উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআ’লার নাম العَلِي ও الأَعْلَى ঐ সমস্ত সিফাতের প্রমাণ বহন করে, যা তা থেকে নির্গত। আর তা সকল দিক থেকেই আল্লাহ্ তা’আলা মাখলুকের উপরে হওয়ার প্রমাণ বহন করে। তিনি আরশের উপর সমুন্নত, সমস্ত মাখলুকের উপরে বিরাজমান, স্বীয় সতবায় মাখলুক থেকে আলাদা, মাখলুকের সকল অবস্থা পর্যবেক্ষণকারী, তাদের সকল অবস্থা সম্পর্কে অবগত এবং জ্ঞানের মাধ্যমে সবকিছুকে বেষ্টন করে আছেন এবং সৃষ্টিজীবের কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়।
অনুরূপভাবে তিনি ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির দিক থেকে সকল মাখলুকের উপরে হওয়ার অর্থ হলঃ তাঁকে পরাজিত করার বা তাঁর উপর বিজয়লাভকারী কেউ নেই, তাঁর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, নেই কোন বিরোধী এবং তাঁকে প্রতিহত করার মতও কেউ নেই। প্রত্যেক বস্ত্তই তাঁর মহত্বের সামনে মস্তক অবনতকারী, তাঁর সম্মানের সামনে সকল বস্ত্তই পদদলিত, তাঁর বড়ত্বের সামনে সকলেই অক্ষম ও অসহায় এবং সব কিছুই তাঁর পরিচালনা ও ক্ষমতাধীন এবং কেউ তাঁর আয়ত্তের বাইরে নয়।
তাঁর মর্যাদা অতি উঁচু হওয়ার অর্থ এই যে, সকল প্রকার পরিপূর্ণ গুণ তাঁর জন্য নির্ধারিত, সকল প্রকার দোষ ও ত্রুটি থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। তিনি অতি সম্মানিত, বরকতময় ও সুউচ্চ।
অনুরূপভাবে তিনি ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির দিক থেকে সকল মাখলুকের উপরে হওয়ার অর্থ হলঃ তাঁকে পরাজিত করার বা তাঁর উপর বিজয়লাভকারী কেউ নেই, তাঁর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, নেই কোন বিরোধী এবং তাঁকে প্রতিহত করার মতও কেউ নেই। প্রত্যেক বস্ত্তই তাঁর মহত্বের সামনে মস্তক অবনতকারী, তাঁর সম্মানের সামনে সকল বস্ত্তই পদদলিত, তাঁর বড়ত্বের সামনে সকলেই অক্ষম ও অসহায় এবং সব কিছুই তাঁর পরিচালনা ও ক্ষমতাধীন এবং কেউ তাঁর আয়ত্তের বাইরে নয়।
তাঁর মর্যাদা অতি উঁচু হওয়ার অর্থ এই যে, সকল প্রকার পরিপূর্ণ গুণ তাঁর জন্য নির্ধারিত, সকল প্রকার দোষ ও ত্রুটি থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। তিনি অতি সম্মানিত, বরকতময় ও সুউচ্চ।
উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআ’লা যে উপরে সমুন্নত, এ ব্যাপারে কুরআনের সুস্পষ্ট দলীলগুলো গণনা করে শেষ করা যাবে না। উপরে বর্ণিত নামগুলো এবং এ অর্থে বর্ণিত অন্যান্য নামগুলো থেকে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
‘‘দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা তোহাঃ ৫) এ অর্থে কুরআন মজীদে সাতটি আয়াত রয়েছে। (১) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
‘‘দয়াময় আল্লাহ্ আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা তোহাঃ ৫)
(২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكُمْ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। (সূরা আ’রাফঃ ৫৪) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكُمْ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা ইউনূসঃ ৩)
(৩) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘আল্লাহই ঊর্ধবদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন বিনা স্তম্ভে। তোমরা এটা দেখছো। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা রা’দঃ ২)
(৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمَانُ
‘‘অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। তিনি পরম দয়াময়। (সূরা ফুরকানঃ ৫৯)
(৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘আল্লাহই আকাশ-যমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সকল বস্ত্ত ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা সাজদাহঃ ৫৪)
৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘আল্লাহই আকাশ-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। (সূরা হাদীদঃ ৪) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
أَأَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمْ الأَرْضَ
‘‘তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়ে গেছো যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?। (সূরা মুল্কঃ ১৬) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ
‘‘তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, যিনি তাদের উপরে আছেন’’। (সূরা নাহ্লঃ ৫০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ
‘‘তাঁরই দিকে পবিত্র বাক্যসমূহ আরোহণ করে এবং সৎকর্ম তাকে উন্নীত করে’’। (সূরা ফাতিরঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
تَعْرُجُ الْمَلاَئِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ
‘‘ফেরেশতা এবং রূহ (জিবরীল) তাঁর দিকে উর্ধ্বগামী হয়’’। (সূরা মাআরেজঃ ৪)
يُدَبِّرُ الأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন’’। (সূরা সিজদাহঃ ৫) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِذْ قَالَ اللَّهُ يَاعِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ
‘‘যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মৃত্যু দান করব। অতঃপর তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নিবো’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫৫) আল্লাহ্ তা’আলা উপরে আছেন- এ মর্মে আরো অনেক দলীল রয়েছে।
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
‘‘দয়াময় আল্লাহ আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা তোহাঃ ৫) এ অর্থে কুরআন মজীদে সাতটি আয়াত রয়েছে। (১) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
‘‘দয়াময় আল্লাহ্ আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা তোহাঃ ৫)
(২) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكُمْ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। (সূরা আ’রাফঃ ৫৪) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكُمْ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা ইউনূসঃ ৩)
(৩) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘আল্লাহই ঊর্ধবদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন বিনা স্তম্ভে। তোমরা এটা দেখছো। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা রা’দঃ ২)
(৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمَانُ
‘‘অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। তিনি পরম দয়াময়। (সূরা ফুরকানঃ ৫৯)
(৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘আল্লাহই আকাশ-যমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সকল বস্ত্ত ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন’’। (সূরা সাজদাহঃ ৫৪)
৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
‘‘আল্লাহই আকাশ-যমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। (সূরা হাদীদঃ ৪) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
أَأَمِنتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمْ الأَرْضَ
‘‘তোমরা কি নিরাপত্তা পেয়ে গেছো যে, আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?। (সূরা মুল্কঃ ১৬) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ
‘‘তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, যিনি তাদের উপরে আছেন’’। (সূরা নাহ্লঃ ৫০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ
‘‘তাঁরই দিকে পবিত্র বাক্যসমূহ আরোহণ করে এবং সৎকর্ম তাকে উন্নীত করে’’। (সূরা ফাতিরঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
تَعْرُجُ الْمَلاَئِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ
‘‘ফেরেশতা এবং রূহ (জিবরীল) তাঁর দিকে উর্ধ্বগামী হয়’’। (সূরা মাআরেজঃ ৪)
يُدَبِّرُ الأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ
‘‘আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন’’। (সূরা সিজদাহঃ ৫) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِذْ قَالَ اللَّهُ يَاعِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ
‘‘যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মৃত্যু দান করব। অতঃপর তোমাকে আমার দিকে উঠিয়ে নিবো’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫৫) আল্লাহ্ তা’আলা উপরে আছেন- এ মর্মে আরো অনেক দলীল রয়েছে।
উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা উপরে আছেন-হাদীছ শরীফে এ ব্যাপারে অগণিত দলীল রয়েছে।
(১) আওআলের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( والعرش فوق ذلك والله فوق العرش وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ )
‘‘তার উপর আল্লাহর আরশ। আর আল্লাহ্ আরশের উপরে। তিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন’’। [- তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর, মুসনাদে আহমাদ, (১/২০৬)। আলেমগণ হাদীছটি সহীহ ও যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। ইমাম ইবনে তাইমীয়া এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যেম হাদীছটি সহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিজী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হাদীছ নং- ১২৪৭।]
আওআলের হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খোলা ময়দানে বসা ছিলাম। তখন আমাদের মাথার উপর দিয়ে একটি মেঘখন্ড অতিক্রম করার সময় তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এটি কী? আমরা বললামঃ এটি একটি মেঘের খন্ড। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব কতটুকু? আমরা বললামঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ উভয়ের মধ্যে রয়েছে পাঁচশত বছরের দূরত্ব। এমনি প্রত্যেক আকাশ ও তার পরবর্তী আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশত বছরের পথ। এভাবে সপ্তম আকাশের উপর রয়েছে একটি সাগর। সাগরের গভীরতা হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। সাগরের উপরে রয়েছে আটটি জংলী পাঠা। তাদের হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত দূরত্ব আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। তারা আল্লাহর আরশ পিঠে বহন করে আছে। আরশ এত বিশাল যে, তার উপরের অংশ থেকে নীচের অংশের দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। আর আল্লাহ্ তাআলা হচ্ছেন আরশের উপরে।
(২) সা’দ বিন মুআয যখন বনী কুরায়যার ব্যাপারে ফয়সালা দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তুমি তাদের ব্যাপারে সেই ফয়সালা করেছ, যা সাত আসমানের উপর থেকে আল্লাহ্ তা’আলা করেছেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাগাযী।]
(৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জনৈক দাসীকে বললেনঃ আল্লাহ্ কোথায়? দাসী বললঃ আকাশে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দাসীর মালিককে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মু’মিন’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।]
(৪) আল্লাহ্ তা’আলা আকাশের উপরে। মি’রাজের ঘটনায় বর্ণিত হাদীছগুলো তার সুস্পষ্ট দলীল।
(৫) পালাক্রমে ফেরেশতাদের দুনিয়াতে আগমণের হাদীছেও আল্লাহ্ তা’আলা আকাশের উপরে বিরাজমান হওয়ার দলীল রয়েছে। হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ )
‘‘তোমাদের নিকট রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতা পালাক্রমে আগমণ করে থাকে। তারা ফজর ও আসরের নামাযের সময় একসাথে একত্রিত হয়। অতঃপর তোমাদের কাছে যে দলটি ছিল, তারা উপরে উঠে যায়। মহান আল্লাহ জানা সত্ত্বেও তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তাঁরা বলেনঃ আমরা তাদেরকে নামায অবস্থায় ছেড়ে এসেছি এবং যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখন তারা নামাযেই ছিল। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلَا يَصْعَدُ إلَى اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ )
‘‘যে ব্যক্তি বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ হতে একটি খেজুর পরিমাণ সম্পদ দান করে, আর আল্লাহর নিকট তো পবিত্র ব্যতীত কোন কিছুই উর্ধ্বমুখী হয় না, আল্লাহ্ ঐ দান স্বীয় ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা দানকারীর জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ দান পাহাড় সমুতল্য হয়ে যায়’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِذَا قَضَى اللَّهُ الأَمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتِ الْمَلاَئِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَالسِّلْسِلَةِ عَلَى صَفْوَانٍ )
‘‘আল্লাহ তা’আলা যখন আকাশে কোন বিষয়ে ফয়সালা করেন, তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর উক্ত ফয়সালার প্রতি অনুগত হয়ে তাদের পাখাসমূহ এমনভাবে নাড়াতে থাকেন যার ফলে শক্ত পাথরে শিকল দিয়ে প্রহার করলে যে ধরণের আওয়াজ হয় সে রকম আওয়াজ হতে থাকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] আল্লাহ তাআ’লা আকাশের উপরে- জাহমীয়া ফির্কা ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করেনি।
(১) আওআলের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( والعرش فوق ذلك والله فوق العرش وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ )
‘‘তার উপর আল্লাহর আরশ। আর আল্লাহ্ আরশের উপরে। তিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন’’। [- তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর, মুসনাদে আহমাদ, (১/২০৬)। আলেমগণ হাদীছটি সহীহ ও যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। ইমাম ইবনে তাইমীয়া এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যেম হাদীছটি সহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিজী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হাদীছ নং- ১২৪৭।]
আওআলের হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খোলা ময়দানে বসা ছিলাম। তখন আমাদের মাথার উপর দিয়ে একটি মেঘখন্ড অতিক্রম করার সময় তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এটি কী? আমরা বললামঃ এটি একটি মেঘের খন্ড। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব কতটুকু? আমরা বললামঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ উভয়ের মধ্যে রয়েছে পাঁচশত বছরের দূরত্ব। এমনি প্রত্যেক আকাশ ও তার পরবর্তী আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশত বছরের পথ। এভাবে সপ্তম আকাশের উপর রয়েছে একটি সাগর। সাগরের গভীরতা হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। সাগরের উপরে রয়েছে আটটি জংলী পাঠা। তাদের হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত দূরত্ব আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। তারা আল্লাহর আরশ পিঠে বহন করে আছে। আরশ এত বিশাল যে, তার উপরের অংশ থেকে নীচের অংশের দূরত্ব হচ্ছে আকাশ ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। আর আল্লাহ্ তাআলা হচ্ছেন আরশের উপরে।
(২) সা’দ বিন মুআয যখন বনী কুরায়যার ব্যাপারে ফয়সালা দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তুমি তাদের ব্যাপারে সেই ফয়সালা করেছ, যা সাত আসমানের উপর থেকে আল্লাহ্ তা’আলা করেছেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাগাযী।]
(৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জনৈক দাসীকে বললেনঃ আল্লাহ্ কোথায়? দাসী বললঃ আকাশে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দাসীর মালিককে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মু’মিন’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।]
(৪) আল্লাহ্ তা’আলা আকাশের উপরে। মি’রাজের ঘটনায় বর্ণিত হাদীছগুলো তার সুস্পষ্ট দলীল।
(৫) পালাক্রমে ফেরেশতাদের দুনিয়াতে আগমণের হাদীছেও আল্লাহ্ তা’আলা আকাশের উপরে বিরাজমান হওয়ার দলীল রয়েছে। হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ )
‘‘তোমাদের নিকট রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতা পালাক্রমে আগমণ করে থাকে। তারা ফজর ও আসরের নামাযের সময় একসাথে একত্রিত হয়। অতঃপর তোমাদের কাছে যে দলটি ছিল, তারা উপরে উঠে যায়। মহান আল্লাহ জানা সত্ত্বেও তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তাঁরা বলেনঃ আমরা তাদেরকে নামায অবস্থায় ছেড়ে এসেছি এবং যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখন তারা নামাযেই ছিল। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلَا يَصْعَدُ إلَى اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ )
‘‘যে ব্যক্তি বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ হতে একটি খেজুর পরিমাণ সম্পদ দান করে, আর আল্লাহর নিকট তো পবিত্র ব্যতীত কোন কিছুই উর্ধ্বমুখী হয় না, আল্লাহ্ ঐ দান স্বীয় ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা দানকারীর জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ দান পাহাড় সমুতল্য হয়ে যায়’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِذَا قَضَى اللَّهُ الأَمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتِ الْمَلاَئِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَالسِّلْسِلَةِ عَلَى صَفْوَانٍ )
‘‘আল্লাহ তা’আলা যখন আকাশে কোন বিষয়ে ফয়সালা করেন, তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর উক্ত ফয়সালার প্রতি অনুগত হয়ে তাদের পাখাসমূহ এমনভাবে নাড়াতে থাকেন যার ফলে শক্ত পাথরে শিকল দিয়ে প্রহার করলে যে ধরণের আওয়াজ হয় সে রকম আওয়াজ হতে থাকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] আল্লাহ তাআ’লা আকাশের উপরে- জাহমীয়া ফির্কা ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করেনি।
৬৯
প্রশ্নঃ (৬৭) সালাফে সালেহীন তথা পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল ইমামগণ الاستواء অর্থাৎ আরশের উপর আল্লাহ্ তা’আলার সমুন্নত হওয়া সম্পর্কে কি বলেছেন?উত্তরঃ সালাফে সালেহীনের সমস্ত ইমাম এ ব্যাপারে একমত যে, আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া একটি জানা বিষয়। এর পদ্ধতি কেউ অবগত নয়। তার উপরে ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। তবে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা বিদ্আত। আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদের জন্য রিসালাত এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিল ওয়া সাল্লাম তা উম্মাতের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তা বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়া। পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ ইমামগণ সকল আসমা ও সিফাতের (নাম ও গুণাবলীর) আয়াত ও হাদীছসমূহের ক্ষেত্রে এ কথাই বলেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَالرَّاسِخُوْنَ فِيْ الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا
‘‘আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলেনঃ আমরা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। সবই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
آمَنَّا بِاللَّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
‘‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলমান’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫২)
وَالرَّاسِخُوْنَ فِيْ الْعِلْمِ يَقُوْلُوْنَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا
‘‘আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলেনঃ আমরা তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। সবই আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
آمَنَّا بِاللَّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
‘‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলমান’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৫২)
উত্তরঃ আল্লাহর ক্ষমতা সবার উপরে এ মর্মে অনেক দলীল বিদ্যমান। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ
‘‘তিনিই পরাক্রান্ত ও বিজয়ী স্বীয় বান্দাদের উপর’’। (সূরা আনআমঃ ১৩) এই আয়াতটি আল্লাহর ক্ষমতা সবার উপর এবং আল্লাহ্ স্বীয় সত্বায় সকল সৃষ্টির উপরে উভয়ের প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
سُبْحَانَهُ هُوَ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘তিনি পবিত্র। তিনিই আল্লাহ্। তিনি এক ও পরাক্রমশালী’’। (সূরা যুমারঃ ৪) তিনি আরো বলেনঃ
لِمَنْ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
‘‘আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর’’। (সূরা গাফেরঃ ১৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنذِرٌ وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلاَّ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘বলুন! আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আর এক পরাক্রমশালী আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা সোয়াদঃ ৬৫) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلاَّ هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا
‘‘পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই, যা তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়’’। (সূরা হুদঃ ৫৬) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
يَامَعْشَرَ الْجِنِّ وَالإِنسِ إِنْ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ فَانفُذُوا لاّ تَنفُذُونَ إِلاَّ بِسُلْطَانٍ
‘‘হে জিন ও মানব জাতি! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায় তবে অতিক্রম কর। কিন্তু তোমরা তা পারবে না, শক্তি ব্যতিরেকে’’। (সূরা আর্ রাহমানঃ ৩৩) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ
‘‘তিনিই পরাক্রান্ত ও বিজয়ী স্বীয় বান্দাদের উপর’’। (সূরা আনআমঃ ১৩) এই আয়াতটি আল্লাহর ক্ষমতা সবার উপর এবং আল্লাহ্ স্বীয় সত্বায় সকল সৃষ্টির উপরে উভয়ের প্রমাণ বহন করে। আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
سُبْحَانَهُ هُوَ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘তিনি পবিত্র। তিনিই আল্লাহ্। তিনি এক ও পরাক্রমশালী’’। (সূরা যুমারঃ ৪) তিনি আরো বলেনঃ
لِمَنْ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
‘‘আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর’’। (সূরা গাফেরঃ ১৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنذِرٌ وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلاَّ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘বলুন! আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আর এক পরাক্রমশালী আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা সোয়াদঃ ৬৫) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلاَّ هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا
‘‘পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই, যা তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়’’। (সূরা হুদঃ ৫৬) আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেনঃ
يَامَعْشَرَ الْجِنِّ وَالإِنسِ إِنْ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنفُذُوا مِنْ أَقْطَارِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ فَانفُذُوا لاّ تَنفُذُونَ إِلاَّ بِسُلْطَانٍ
‘‘হে জিন ও মানব জাতি! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায় তবে অতিক্রম কর। কিন্তু তোমরা তা পারবে না, শক্তি ব্যতিরেকে’’। (সূরা আর্ রাহমানঃ ৩৩) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
উত্তরঃ হাদীছে এ বিষয়ের উপর যথেষ্ট দলীল রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا )
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী সকল প্রাণীর অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। এগুলোর সবই আপনার পূর্ণ আয়ত্তাধীন’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ )
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা এবং আপনার এক বান্দা ও বান্দীর পুত্র। আমার কপাল আপনার হাতে। আমার উপর আপনার হুকুম কার্যকর হয়। আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালাই ইনসাফপূর্ণ’’। [- মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দুআ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআয়ে কুনূতে বলেতেনঃ
( إِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ )
‘‘কেননা আপনিই তো নির্ধারক, আপনার উপর কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। আপনি যাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন কেউ তাঁকে অপমানিত করতে পারে না। আপনি যার শত্রুতা করেছেন সে কখনও সম্মানিত হতে পারে না’’। [- নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দুআ।] এ ছাড়াও আরো হাদীছ রয়েছে।
( أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا )
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী সকল প্রাণীর অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। এগুলোর সবই আপনার পূর্ণ আয়ত্তাধীন’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِي بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ )
‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা এবং আপনার এক বান্দা ও বান্দীর পুত্র। আমার কপাল আপনার হাতে। আমার উপর আপনার হুকুম কার্যকর হয়। আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালাই ইনসাফপূর্ণ’’। [- মুসনাদে আহমাদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দুআ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআয়ে কুনূতে বলেতেনঃ
( إِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ )
‘‘কেননা আপনিই তো নির্ধারক, আপনার উপর কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। আপনি যাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন কেউ তাঁকে অপমানিত করতে পারে না। আপনি যার শত্রুতা করেছেন সে কখনও সম্মানিত হতে পারে না’’। [- নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দুআ।] এ ছাড়াও আরো হাদীছ রয়েছে।
৭২
প্রশ্নঃ (৭০) আল্লাহর শান তথা মর্যাদা সবার উপরে- এর দলীল কি? আল্লাহ্ তা’আলাকে কোন্ কোন্ জিনিষ হতে পাক ও পবিত্র বিশ্বাস করতে হবে?উত্তরঃ মনে রাখা উচিৎ যে, আল্লাহ্ তা’আলার এই নামগুলো যেমন قُدُّوس - কুদ্দুস, سَلَام - সাল্লাম, الكبير আল-কাবীর, المتعال - আল-মুতাআল এবং এ অর্থে অন্যান্য যত নাম আছে ও তার সমস্ত পরিপূর্ণ গুণ তাঁর উচ্চ মর্যাদার প্রমাণ বহন করে।
সুতরাং আল্লাহর পরিপূর্ণ রাজত্বের মধ্যে অন্য কারো কোন অংশ নেই, আল্লাহর কোন সাহায্যকারী নেই বা তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট কোন সুপারিশকারী অথবা তাঁর বিরুদ্ধে আশ্রয় দাতা নেই।
তাঁর মহাত্ম, মহিমা, রাজত্ব ও প্রতাপ সমুচ্চ। সুতরাং তাঁর কোন বিরোধী নেই, তাঁকে পরাজিত করার বা তাঁর উপর বিজয়লাভকারী কেউ নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত নন, যে কারণে তাঁর কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি কাউকে সঙ্গিনী, সন্তান, পিতা, সাদৃশ্য ও সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করার অনেক উর্ধে ও পবিত্র এবং এ সব হতে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী ।
পরিপূর্ণতায় তিনি সমুন্নত, তাঁর হায়াত পরিপূর্ণ, তিনি চিরন্তন এবং তাঁর ক্ষমতা সকলের উর্ধে। তিনি মৃত্যু, নিদ্রা, তন্দ্রা, ক্লান্তি এবং অপারগতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞান গাফিলতী ও ভ্রান্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আসমান ও যমীনে একটি সরিষার দানা পরিমাণ জিনিষও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়।
তাঁর বিচক্ষণতা পরিপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। অযথা কোন জিনিষ সৃষ্টি করা এবং সৃষ্টিকে আদেশ-নিষেধ, পুনরুত্থান ও প্রতিদান দেয়া ব্যতীত ছেড়ে দেয়া থেকেও তিনি পবিত্র।
তাঁর ইনসাফ পরিপূর্ণ। তিনি কাউকে বিন্দু পরিমাণ যুলুম করা ও কারো নেকী থেকে সামান্য পরিমাণ কমানো থেকেও পবিত্র। তিনি সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী। তিনি পানাহার থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। কোন বিষয়ে অপরের প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়া থেকেও পবিত্র।
তিনি নিজেকে যেসমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন বা তাঁর রাসূল তাঁকে যেসমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার উপমা পেশ করা ও তা বাতিল করা হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র।
তিনি পবিত্র, ক্ষমতাবান, সম্মানিত, বরকতময়, ও সমুন্নত। তার এবাদত, প্রভুত্ব ও সুন্দর নাম ও মহা গুণাবলীর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল বস্ত্ত হতে মুক্ত। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَى فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘‘আকাশ ও পৃথিবীতে তাঁরই জন্যে রয়েছে সুমহান দৃষ্টান্ত এবং তিনিই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা রূমঃ ২৭) মোটকথা উপরোক্ত বিষয়ে কুরআন ও হাদীছের দলীলসমূহ সকলেরই জ্ঞাত এবং তার সংখ্যা অপরিসীম।
সুতরাং আল্লাহর পরিপূর্ণ রাজত্বের মধ্যে অন্য কারো কোন অংশ নেই, আল্লাহর কোন সাহায্যকারী নেই বা তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট কোন সুপারিশকারী অথবা তাঁর বিরুদ্ধে আশ্রয় দাতা নেই।
তাঁর মহাত্ম, মহিমা, রাজত্ব ও প্রতাপ সমুচ্চ। সুতরাং তাঁর কোন বিরোধী নেই, তাঁকে পরাজিত করার বা তাঁর উপর বিজয়লাভকারী কেউ নেই এবং তিনি দুর্দশাগ্রস্ত নন, যে কারণে তাঁর কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি কাউকে সঙ্গিনী, সন্তান, পিতা, সাদৃশ্য ও সমকক্ষ হিসাবে গ্রহণ করার অনেক উর্ধে ও পবিত্র এবং এ সব হতে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী ।
পরিপূর্ণতায় তিনি সমুন্নত, তাঁর হায়াত পরিপূর্ণ, তিনি চিরন্তন এবং তাঁর ক্ষমতা সকলের উর্ধে। তিনি মৃত্যু, নিদ্রা, তন্দ্রা, ক্লান্তি এবং অপারগতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞান গাফিলতী ও ভ্রান্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আসমান ও যমীনে একটি সরিষার দানা পরিমাণ জিনিষও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়।
তাঁর বিচক্ষণতা পরিপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। অযথা কোন জিনিষ সৃষ্টি করা এবং সৃষ্টিকে আদেশ-নিষেধ, পুনরুত্থান ও প্রতিদান দেয়া ব্যতীত ছেড়ে দেয়া থেকেও তিনি পবিত্র।
তাঁর ইনসাফ পরিপূর্ণ। তিনি কাউকে বিন্দু পরিমাণ যুলুম করা ও কারো নেকী থেকে সামান্য পরিমাণ কমানো থেকেও পবিত্র। তিনি সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী। তিনি পানাহার থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। কোন বিষয়ে অপরের প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়া থেকেও পবিত্র।
তিনি নিজেকে যেসমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন বা তাঁর রাসূল তাঁকে যেসমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন, তার উপমা পেশ করা ও তা বাতিল করা হতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র।
তিনি পবিত্র, ক্ষমতাবান, সম্মানিত, বরকতময়, ও সমুন্নত। তার এবাদত, প্রভুত্ব ও সুন্দর নাম ও মহা গুণাবলীর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সকল বস্ত্ত হতে মুক্ত। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلَى فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘‘আকাশ ও পৃথিবীতে তাঁরই জন্যে রয়েছে সুমহান দৃষ্টান্ত এবং তিনিই পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা রূমঃ ২৭) মোটকথা উপরোক্ত বিষয়ে কুরআন ও হাদীছের দলীলসমূহ সকলেরই জ্ঞাত এবং তার সংখ্যা অপরিসীম।
৭৩
প্রশ্নঃ (৭১) আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ আল্লাহ তা‘আলার নিরানববইটি নাম রয়েছে, যে উহা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’- একথার অর্থ কি?উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উক্ত বাণীটিকে কয়েকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
(১) এখানে ( أحصاها ) গণনা করার অর্থ হল তা মুখস্থ করা, এগুলোর উসীলা দিয়ে দু’আ করা এবং এই নামগুলো দিয়ে আল্লাহ প্রশংসা করা।
(২) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে থেকে কতিপয় নামের মধ্যে এমন গুণাবলী বিদ্যমান, যা দ্বারা বান্দা গুণান্বিত হতে পারে। যেমন رَحِيْم (রাহীম) ও كَرِيْم (কারীম)। এদু’টি নামের অর্থ হচ্ছে দয়াবান ও করুণাময়। বান্দা এসকল গুণে নিজেকে গুণান্বিত করার চেষ্টা করবে। তবে বান্দার ক্ষেত্রে যে ধরণের দয়া ও করুণা প্রযোজ্য, বান্দা সে রকমই দয়াবান ও করুণাময় হতে পারে। আর আল্লাহ্ যেমন মহান, বড়, তাঁর করুণা এবং রহমতও তত বড়।
আর যেসমস্ত নাম আল্লাহ্ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট, যেমন আল-জাববার, আল-আযীম ও আল-মুতাকাবিবর তা স্বীকার করা ও তার মর্মার্থের সামনে মস্তক অবনত করা এবং ঐ সমস্ত গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করা থেকে বান্দা নিজেকে দূরে রাখবে।
আর যেসমস্ত নামের মধ্যে ক্ষমা, দয়া, করুণা ও দান করার অঙ্গীকার রয়েছে, বান্দার উচিত সে সমস্ত গুণাবলী দ্বারা নিজেকে বৈশিষ্টমন্ডিত করার চেষ্টা করা।
আর যেসমস্ত নামের মধ্যে কঠিন শাস্তির ধমকি রয়েছে, যেমন পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী, কঠিন শাস্তি দাতা, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, বান্দার উচিত ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া।
(৩) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর অন্য এক অর্থ এই যে, অন্তর দিয়ে আল্লাহর সিফাতগুলো উপলদ্ধি করবে এবং ইবাদতের মাধ্যমে তার হক আদায় করবে। এর উদাহরণ হল, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ সৃষ্টিকুলের উপরে এবং আরশের উপরে বিরাজমান এবং এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে সমস্ত মাখলুককে ঘিরে আছেন সে এই সিফাতটির দাবী অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার অন্তরে এমন একজন অমুখাপেক্ষী সতবার আহবান অনুভব করবে, যার কারণে বান্দা তাঁর দিকে ছুটে যেতে চাইবে, তাঁর নিকটই মুনাজাত করবে। একজন নগণ্য চাকর যেমন প্রতাপশালী বাদশার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সে ঠিক তেমনভাবে তাঁর সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সে অনুভব করবে যে, তার সমস্ত কথা ও কাজ আল্লাহর কাছে পেশ করা হচ্ছে। তাই সে তার এমন কথা ও কাজ আল্লাহর কাছে পেশ হওয়া থেকে লজ্জাবোধ করবে, যার কারণে সে আল্লাহর নিকট অপমানিত ও লজ্জিত হতে পারে। সে প্রতি নিয়ত বিশ্বের প্রতিটি স্থানে বিভিন্ন প্রকার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা সহকারে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অবতরণ প্রত্যক্ষ করবে। তাঁর রাজত্বের মধ্যে তিনি ব্যতীত অন্য কারো সামান্যতম কর্তৃত্ব করার অধিকার নেই। যেভাবে ইচ্ছা তিনি সেভাবেই তাঁর হুকুম-আহকাম কার্যকর করেন। যেমন কাউকে জীবিত করা, কাউকে মৃত্যু দান করা, কাউকে সম্মানিত করা, কাউকে অপমানিত করা, কাউকে নীচে নামানো, কাউকে উপরে উঠানো, কাউকে দান করা, কাউকে বঞ্চিত করা, কারো মুসীবত দূর করা, মুসীবতে ফেলে কাউকে পরীক্ষা করা এবং মানুষের মধ্যে কালের আবর্তন-বিবর্তন ঘটানো ইত্যাদি। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنْ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ
‘‘তিনি আকাশ থেকে যমীন পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন। অতঃপর প্রতিটি বিষয় তাঁর দিকেই উর্ধমুখী হবে এমন একদিনে যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান’’। (সূরা সিজদাহঃ ৫)
সুতরাং যে বান্দা ঈমান ও এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর উপরোক্ত গুণাবলীর হক পূর্ণরূপে আদায় করবে, সে সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতি নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করবে এবং আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন। এমনিভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিপূর্ণ জ্ঞান, শ্রবণ, দৃষ্টি, জীবন ও সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি গুণাবলী উপলদ্ধি করতে সক্ষম হবে, তাঁর জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। তবে এই নেয়ামত কি সকলেই অর্জন করতে পারে? কখনই নয়। এটি শুধু আল্লাহর নৈকট্যশীল এবং সৎকর্মের দিকে প্রতিযোগিতাকারীদের জন্যেই অর্জিত হয়ে থাকে।
(১) এখানে ( أحصاها ) গণনা করার অর্থ হল তা মুখস্থ করা, এগুলোর উসীলা দিয়ে দু’আ করা এবং এই নামগুলো দিয়ে আল্লাহ প্রশংসা করা।
(২) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে থেকে কতিপয় নামের মধ্যে এমন গুণাবলী বিদ্যমান, যা দ্বারা বান্দা গুণান্বিত হতে পারে। যেমন رَحِيْم (রাহীম) ও كَرِيْم (কারীম)। এদু’টি নামের অর্থ হচ্ছে দয়াবান ও করুণাময়। বান্দা এসকল গুণে নিজেকে গুণান্বিত করার চেষ্টা করবে। তবে বান্দার ক্ষেত্রে যে ধরণের দয়া ও করুণা প্রযোজ্য, বান্দা সে রকমই দয়াবান ও করুণাময় হতে পারে। আর আল্লাহ্ যেমন মহান, বড়, তাঁর করুণা এবং রহমতও তত বড়।
আর যেসমস্ত নাম আল্লাহ্ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট, যেমন আল-জাববার, আল-আযীম ও আল-মুতাকাবিবর তা স্বীকার করা ও তার মর্মার্থের সামনে মস্তক অবনত করা এবং ঐ সমস্ত গুণাবলী দ্বারা গুণান্বিত করা থেকে বান্দা নিজেকে দূরে রাখবে।
আর যেসমস্ত নামের মধ্যে ক্ষমা, দয়া, করুণা ও দান করার অঙ্গীকার রয়েছে, বান্দার উচিত সে সমস্ত গুণাবলী দ্বারা নিজেকে বৈশিষ্টমন্ডিত করার চেষ্টা করা।
আর যেসমস্ত নামের মধ্যে কঠিন শাস্তির ধমকি রয়েছে, যেমন পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী, কঠিন শাস্তি দাতা, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, বান্দার উচিত ঐ সমস্ত ক্ষেত্রে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া।
(৩) আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর অন্য এক অর্থ এই যে, অন্তর দিয়ে আল্লাহর সিফাতগুলো উপলদ্ধি করবে এবং ইবাদতের মাধ্যমে তার হক আদায় করবে। এর উদাহরণ হল, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ সৃষ্টিকুলের উপরে এবং আরশের উপরে বিরাজমান এবং এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে সমস্ত মাখলুককে ঘিরে আছেন সে এই সিফাতটির দাবী অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার অন্তরে এমন একজন অমুখাপেক্ষী সতবার আহবান অনুভব করবে, যার কারণে বান্দা তাঁর দিকে ছুটে যেতে চাইবে, তাঁর নিকটই মুনাজাত করবে। একজন নগণ্য চাকর যেমন প্রতাপশালী বাদশার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সে ঠিক তেমনভাবে তাঁর সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সে অনুভব করবে যে, তার সমস্ত কথা ও কাজ আল্লাহর কাছে পেশ করা হচ্ছে। তাই সে তার এমন কথা ও কাজ আল্লাহর কাছে পেশ হওয়া থেকে লজ্জাবোধ করবে, যার কারণে সে আল্লাহর নিকট অপমানিত ও লজ্জিত হতে পারে। সে প্রতি নিয়ত বিশ্বের প্রতিটি স্থানে বিভিন্ন প্রকার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা সহকারে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অবতরণ প্রত্যক্ষ করবে। তাঁর রাজত্বের মধ্যে তিনি ব্যতীত অন্য কারো সামান্যতম কর্তৃত্ব করার অধিকার নেই। যেভাবে ইচ্ছা তিনি সেভাবেই তাঁর হুকুম-আহকাম কার্যকর করেন। যেমন কাউকে জীবিত করা, কাউকে মৃত্যু দান করা, কাউকে সম্মানিত করা, কাউকে অপমানিত করা, কাউকে নীচে নামানো, কাউকে উপরে উঠানো, কাউকে দান করা, কাউকে বঞ্চিত করা, কারো মুসীবত দূর করা, মুসীবতে ফেলে কাউকে পরীক্ষা করা এবং মানুষের মধ্যে কালের আবর্তন-বিবর্তন ঘটানো ইত্যাদি। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنْ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ
‘‘তিনি আকাশ থেকে যমীন পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন। অতঃপর প্রতিটি বিষয় তাঁর দিকেই উর্ধমুখী হবে এমন একদিনে যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান’’। (সূরা সিজদাহঃ ৫)
সুতরাং যে বান্দা ঈমান ও এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর উপরোক্ত গুণাবলীর হক পূর্ণরূপে আদায় করবে, সে সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতি নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করবে এবং আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট হবেন। এমনিভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিপূর্ণ জ্ঞান, শ্রবণ, দৃষ্টি, জীবন ও সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি গুণাবলী উপলদ্ধি করতে সক্ষম হবে, তাঁর জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। তবে এই নেয়ামত কি সকলেই অর্জন করতে পারে? কখনই নয়। এটি শুধু আল্লাহর নৈকট্যশীল এবং সৎকর্মের দিকে প্রতিযোগিতাকারীদের জন্যেই অর্জিত হয়ে থাকে।
উত্তরঃ তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাতের বিপরীত হচ্ছে, আল্লাহর নাম, গুণাবলী ও আয়াতসমূহ অস্বীকার করা এবং তার মধ্যে إلحاد ইলহাদ বা পরিবর্তন করা। ইলহাদ তিন প্রকার। যথাঃ
(১) আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মুশরিকদের ইলহাদ। তারা আল্লাহর নামগুলো স্বীয় স্থান থেকে পরিবর্তন করেছে এবং তার মধ্যে বাড়িয়ে বা তার মধ্যে হতে কিছু কমিয়ে তা দ্বারা তাদের দেবতাদের নাম রেখেছে। যেমন আল্লাহর নাম ‘ اله -ইলাহ’ হতে ( لات -লাত) বানিয়েছে, عزيز )-আযীয( হতে عزى )-উয্যা) বানিয়েছে এবং ( منان -মান্নান) হতে ( منات -মানাত) বানিয়েছে।
(২) মুশাবিবহা তথা উপমা পেশকারী সম্প্রদায়ের ইলহাদ। তারা আল্লাহ্ তাআলার সিফাতগুলোর ধরণ বর্ণনা করেছে এবং সেগুলোকে মাখলুকের সিফাতের মতই বলেছে। আর এটি হচ্ছে মুশরিকদের ইলহাদের বিপরীত। মুশরিকরা তাদের দেবতাসমূহকে মহান রাববুল আলামীনের সমকক্ষ মনে করত। আর এরা আল্লাহ্কে মাখলুকের স্তরে নামিয়ে দিয়েছে এবং আল্লাহর সিফাতগুলো মানুষের সিফাতের মত বলে আখ্যা দিয়েছে। আল্লাহ্ এদের কথার অনেক উর্ধে।
(৩) মুআত্তিলা সম্প্রদায় তথা আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারীদের ইলহাদ। এরা দুই প্রকার। তাদের একদল আল্লাহ্ তাআলার নামগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। কিন্তু আল্লাহর সুন্দর নামগুলো যেসমস্ত পরিপূর্ণ সিফাত বা গুণকে আবশ্যক করে, তা অস্বীকার করেছে। ফলে তারা আল্লাহ্কে রহমতহীন রাহমান অর্থাৎ দয়াহীন দয়াবান, জ্ঞানহীন জ্ঞানী, শ্রবণ শক্তিহীন শ্রবণকারী, দৃষ্টিহীন দ্রষ্টা এবং ক্ষমতাহীন ক্ষমতাবান হিসাবে নির্ধারণ করেছে। বাকি নামগুলোর ক্ষেত্রেও অনুরূপ করেছে।
তাদের অন্য একটি দল সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর নামগুলোকে ও তাঁর সিফাতে কামালিয়াগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের কথা হচ্ছে আল্লাহর নাম ও সিফাত কোনটিই নেই। তাদের কথা শুধু অস্তিত্বহীন বস্ত্তর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
আল্লাহ্ তাআলা নাস্তিক ও যালেমদের এ সমস্তত কথার অনেক উর্ধে ও পবিত্র। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا
‘‘তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবার পালনকর্তা। সুতরাং তাঁরই এবাদত করুন এবং তাতে দৃঢ় থাকুন। আপনি কি তার সমান কাউকে জানেন’’? (সূরা মারইয়ামঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْرُ
‘‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন’’। (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টিত করতে পারেনা ’’। (সূরা তোহাঃ ১১০)
(১) আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মুশরিকদের ইলহাদ। তারা আল্লাহর নামগুলো স্বীয় স্থান থেকে পরিবর্তন করেছে এবং তার মধ্যে বাড়িয়ে বা তার মধ্যে হতে কিছু কমিয়ে তা দ্বারা তাদের দেবতাদের নাম রেখেছে। যেমন আল্লাহর নাম ‘ اله -ইলাহ’ হতে ( لات -লাত) বানিয়েছে, عزيز )-আযীয( হতে عزى )-উয্যা) বানিয়েছে এবং ( منان -মান্নান) হতে ( منات -মানাত) বানিয়েছে।
(২) মুশাবিবহা তথা উপমা পেশকারী সম্প্রদায়ের ইলহাদ। তারা আল্লাহ্ তাআলার সিফাতগুলোর ধরণ বর্ণনা করেছে এবং সেগুলোকে মাখলুকের সিফাতের মতই বলেছে। আর এটি হচ্ছে মুশরিকদের ইলহাদের বিপরীত। মুশরিকরা তাদের দেবতাসমূহকে মহান রাববুল আলামীনের সমকক্ষ মনে করত। আর এরা আল্লাহ্কে মাখলুকের স্তরে নামিয়ে দিয়েছে এবং আল্লাহর সিফাতগুলো মানুষের সিফাতের মত বলে আখ্যা দিয়েছে। আল্লাহ্ এদের কথার অনেক উর্ধে।
(৩) মুআত্তিলা সম্প্রদায় তথা আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারীদের ইলহাদ। এরা দুই প্রকার। তাদের একদল আল্লাহ্ তাআলার নামগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। কিন্তু আল্লাহর সুন্দর নামগুলো যেসমস্ত পরিপূর্ণ সিফাত বা গুণকে আবশ্যক করে, তা অস্বীকার করেছে। ফলে তারা আল্লাহ্কে রহমতহীন রাহমান অর্থাৎ দয়াহীন দয়াবান, জ্ঞানহীন জ্ঞানী, শ্রবণ শক্তিহীন শ্রবণকারী, দৃষ্টিহীন দ্রষ্টা এবং ক্ষমতাহীন ক্ষমতাবান হিসাবে নির্ধারণ করেছে। বাকি নামগুলোর ক্ষেত্রেও অনুরূপ করেছে।
তাদের অন্য একটি দল সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর নামগুলোকে ও তাঁর সিফাতে কামালিয়াগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের কথা হচ্ছে আল্লাহর নাম ও সিফাত কোনটিই নেই। তাদের কথা শুধু অস্তিত্বহীন বস্ত্তর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
আল্লাহ্ তাআলা নাস্তিক ও যালেমদের এ সমস্তত কথার অনেক উর্ধে ও পবিত্র। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا
‘‘তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবার পালনকর্তা। সুতরাং তাঁরই এবাদত করুন এবং তাতে দৃঢ় থাকুন। আপনি কি তার সমান কাউকে জানেন’’? (সূরা মারইয়ামঃ ৬৫) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْرُ
‘‘কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন’’। (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টিত করতে পারেনা ’’। (সূরা তোহাঃ ১১০)
৭৫
প্রশ্নঃ (৭৩) প্রত্যেক প্রকারের তাওহীদের একটি কি অন্যটিকে আবশ্যক করে? তাওহীদের কোন এক প্রকারের বিরোধী বিষয় কি সকল প্রকার তাওহীদের পরিপন্থী?উত্তরঃ হ্যাঁ, তাওহীদের সকল প্রকারই একটি অন্যটির জন্য আবশ্যক। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন একটিতে শরীক করবে, সে অবশিষ্ট প্রকারগুলোতেও মুশরিক হিসাবে গণ্য হবে। তার উদাহরণ হল, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের কাছে দু’আ করা এবং অন্যের কাছে এমন কিছু প্রার্থনা করা, যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ দিতে পারে না। মনে রাখা দরকার যে, দু’আ শুধু এবাদতই নয়; বরং এবাদতের মূল। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো কাছে দু’আ করা তাওহীদের উলুহিয়্যাহ তথা এবাদতের মধ্যে শির্ক। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারে, এ বিশ্বাস রেখে কারো কাছে কোন কল্যাণ প্রার্থনা করা বা অকল্যাণ দূর করার আবেদন করা তাওহীদে রুবুবিয়াতে শির্ক করার অন্তর্ভূক্ত। কেননা এ বিশ্বাসের মাধ্যমে সে আল্লাহর রাজত্বে অন্য কাউকে কর্তৃত্ব করার অধিকার প্রদান করল। সে এই বিশ্বাসের কারণেই আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের কাছে দু’আ করে যে, সে যার কাছে দুআ করছে, সে দূরে, নিকটে, সকল সময়ে, সকল স্থানেই তার দু’আ শুনছে। আর এটিই হচ্ছে তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাতের ক্ষেত্রে শির্ক। কেননা সে আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্যের জন্যে এমন শ্রবণশক্তি নির্ধারণ করল, যা সকল বস্ত্তকে বেষ্টন করে আছে। দূরত্ব বা নিকটত্ব তার শ্রবণকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে না। সুতরাং আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নিকট দু’আ করাতে তাওহীদে উলুহিয়্যায় শির্ক, তাওহীদে রুবুবিয়ায় শির্ক এবং তাওহীদুল আস্মা ওয়াস্ সিফাতেও শির্ক তথা তাওহীদের সকল প্রকারেই শির্ক হয়ে গেল।
উত্তরঃ ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক- এ মর্মে কুরআন ও হাদীছে অসংখ্য দলীল বিদ্যমান। আমরা এখানে কয়েকটি দলীল বর্ণনা করব। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَالْمَلاَئِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَنْ فِي الأَرْضِ )
‘‘ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং জগৎবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন’’। সূরা শুরাঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ لاَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ
‘‘যারা তোমার প্রভুর সান্ন্যিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর এবাদত করতে অহংকার করেনা এবং স্মরণ করেন তারা তাঁরই গুণাগুণ ও মহিমা প্রকাশ করেন এবং তারা তাঁকেই সিজদা করেন’’। (সূরা আ’রাফঃ ২০৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِلَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِلْكَافِرِينَ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্তাগণের, তাঁর রাসূলগণের, জিবরীলের এবং মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব কাফেরের শত্রু’’। (সূরা বাকারাঃ ৯৮)
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়নের ব্যাপরে হাদীছে জিবরীল অন্যতম। যা ইতিপিূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেনঃ আমাকে ঈমান সম্পর্কে কিছু বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ
( أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ )
‘‘তুমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে (১) আল্লাহ পাকের উপর (২) তাঁর ফেরেস্তাদের উপর (৩) তাঁর কিতাবসমূহের উপর (৪) তাঁর রাসূলদের উপর (৫) আখিরাত বা শেষ দিবসের উপর এবং (৬) তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إنَّ اللَّه تَعَالى خَلَقَهُم مِنْ نُوْرٍ )
‘‘ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ্ তাআলা নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহদ। এটি একটি হাদীছের অংশ বিশেষ। হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এইযেঃ خُلِقَتْ الْمَلَائِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে নূর থেকে। জিনদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়া বিহীন অগ্নি থেকে। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ বস্ত্ত থেকে যার বিবরণ তোমাদের কাছে পেশ করা হয়েছে।] ফেরেশতাদের ব্যাপারে আরো অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
وَالْمَلاَئِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَنْ فِي الأَرْضِ )
‘‘ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং জগৎবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন’’। সূরা শুরাঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ لاَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ
‘‘যারা তোমার প্রভুর সান্ন্যিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর এবাদত করতে অহংকার করেনা এবং স্মরণ করেন তারা তাঁরই গুণাগুণ ও মহিমা প্রকাশ করেন এবং তারা তাঁকেই সিজদা করেন’’। (সূরা আ’রাফঃ ২০৬) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِلَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِلْكَافِرِينَ
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্তাগণের, তাঁর রাসূলগণের, জিবরীলের এবং মিকাঈলের শত্রু হয়, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব কাফেরের শত্রু’’। (সূরা বাকারাঃ ৯৮)
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়নের ব্যাপরে হাদীছে জিবরীল অন্যতম। যা ইতিপিূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। জিবরীল (আঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেনঃ আমাকে ঈমান সম্পর্কে কিছু বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ
( أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ )
‘‘তুমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে (১) আল্লাহ পাকের উপর (২) তাঁর ফেরেস্তাদের উপর (৩) তাঁর কিতাবসমূহের উপর (৪) তাঁর রাসূলদের উপর (৫) আখিরাত বা শেষ দিবসের উপর এবং (৬) তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إنَّ اللَّه تَعَالى خَلَقَهُم مِنْ نُوْرٍ )
‘‘ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ্ তাআলা নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহদ। এটি একটি হাদীছের অংশ বিশেষ। হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এইযেঃ خُلِقَتْ الْمَلَائِكَةُ مِنْ نُورٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ وَخُلِقَ آدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে নূর থেকে। জিনদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়া বিহীন অগ্নি থেকে। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে ঐ বস্ত্ত থেকে যার বিবরণ তোমাদের কাছে পেশ করা হয়েছে।] ফেরেশতাদের ব্যাপারে আরো অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
উত্তরঃ ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হচ্ছে তাদের অস্তিত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা এবং আরো বিশ্বাস করা যে, তারা আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের অন্যতম সৃষ্টি। তারা আল্লাহর প্রতিপালনাধীন এবং তাঁরই অধিনস্ত। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
عِبَادٌ مُكْرَمُونَ * لاَ يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ
‘‘তারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। আল্লাহর আগে বেড়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ২৬-২৭) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لاَ يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
‘‘তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হন, তাই করেন’’। (সূরা তাহ্রীমঃ ৬) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لاَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلاَ يَسْتَحْسِرُونَ * يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لاَ يَفْتُرُونَ
‘‘তারা অহংকার বশে তাঁর এবাদত করতে বিমুখ হয় না এবং তাঁরা ক্লান্তি বোধ করে না। তারা দিবারাত্রি তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করেন এবং তাঁরা ক্লান্ত হন না’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ১০-২০) অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর এবাদত করতে বিরক্তি ও ক্লান্তি বোধ করে না।
عِبَادٌ مُكْرَمُونَ * لاَ يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ
‘‘তারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। আল্লাহর আগে বেড়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ২৬-২৭) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لاَ يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
‘‘তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না এবং তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হন, তাই করেন’’। (সূরা তাহ্রীমঃ ৬) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لاَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلاَ يَسْتَحْسِرُونَ * يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لاَ يَفْتُرُونَ
‘‘তারা অহংকার বশে তাঁর এবাদত করতে বিমুখ হয় না এবং তাঁরা ক্লান্তি বোধ করে না। তারা দিবারাত্রি তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করেন এবং তাঁরা ক্লান্ত হন না’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ১০-২০) অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর এবাদত করতে বিরক্তি ও ক্লান্তি বোধ করে না।
৭৮
প্রশ্নঃ (৭৬) ফেরেশতাদেরকে আললাহ যে উদ্দেশ্যে তৈরী করেছেন এবং তাদেরকে যে কাজে নিয়োজিত করেছেন, সে অনুসারে কয়েক প্রকার ফেরেশতার বর্ণনা দিন?উত্তরঃ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের দিক থেকে ফেরেশতাগণ কয়েকভাবে বিভক্ত। (১) ফেরেশতাদের কেউ রাসূলদের নিকট অহী নিয়ে আসার দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি হলেন রূহুল আমীন জিবরীল (আঃ)।
(২) কেউ বৃষ্টি বর্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি হলেন মীকাঈল (আঃ)।
(৩) কেউ শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত। যেমন ইসরাফীল (আঃ)।
(৪) কেউ আবার রূহ কবয করার দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি হলেন মালাকুল মাওত ও তাঁর সাথীগণ।
(৫) কোন কোন ফেরেশতা বান্দার আমলসমূহ লিখার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তাঁরা হলেন কিরামুন কাতিবুন।
(৬) তাদের কেউ বান্দাকে তার সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিক থেকে হেফাজতের দায়িত্বে নিয়োজিত। তারা হলেন পরপর আগমণকারী ফেরেশতাগণ।
(৭) তাদের কেউ জান্নাত ও তার নেয়ামতের দায়িত্বে নিয়োজিত। যেমন রিযওয়ান ফেরেশতা ও তাঁর সাথীগণ।
(৮) তাদের কেউ জাহান্নাম ও তার আযাবের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত। তিনি হলেন মালেক এবং দোযখের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ। তাদের নের্তৃস্থানীয়দের সংখ্যা উনিশজন।
(৯) তাদের কেউ কেউ কবরের আযাবের দায়িত্বে নিয়োজিত। তারা হলেন মুনকার ও নাকীর।
(১০) তাদের কেউ আল্লাহর আরশ বহনের দায়িত্বে নিয়োজিত।
(১১) তাদের কাউকে ‘কারুবীয়ূন’ বলা হয়। তাঁরা আল্লাহর আরশের চারপাশে সদা তাসবীহ পাঠের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
(১২) তাদের কেউ মার্তৃগর্ভে রূহ ফুৎকার, মার্তৃগর্ভে মানব দেহ গঠন এবং তাতে যা লিখতে বলা হয় তা লিখার দায়িত্বে নিয়োজিত।
(১৩) তাদের কেউ কেউ বাইতুল মা’মুরে প্রবেশ করেন। তাতে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে। যারা একবার প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে, কিয়ামতের পূর্বে দ্বিতীয়বার আর তারা তাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।
(১৪) কিছু ফেরেশতা এমন আছেন, যারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করে এবং যিকিরের মজলিস খুঁজে বেড়ায়।
(১৫) অগণিত ফেরেশতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁরা কখনও ক্লান্তি বোধ করে না।
(১৬) আরো এমন ফেরেশতা আছেন, যারা রুকূ ও সিজদায় পড়ে আছে। তারা কখনও মাথা উত্তোলন করে না।
উল্লেখিত ফেরেশতাগণ ছাড়াও আরো অসংখ্য ফেরেশতা আছে। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلاَّ هُوَ وَمَا هِيَ إلاَّ ذِكْرَى لِلْبَشَرِ
‘‘আপনার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এটা তো (জাহান্নামের বর্ণনা) মানুষের জন্য উপদেশ ছাড়া অন্য কিছু নয়’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৩১) ফেরেশতাদের প্রকারভেদ এবং তাদের কাজ সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাতে আরো অগণিত দলীল রয়েছে।
(২) কেউ বৃষ্টি বর্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি হলেন মীকাঈল (আঃ)।
(৩) কেউ শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত। যেমন ইসরাফীল (আঃ)।
(৪) কেউ আবার রূহ কবয করার দায়িত্বে নিয়োজিত। তিনি হলেন মালাকুল মাওত ও তাঁর সাথীগণ।
(৫) কোন কোন ফেরেশতা বান্দার আমলসমূহ লিখার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তাঁরা হলেন কিরামুন কাতিবুন।
(৬) তাদের কেউ বান্দাকে তার সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিক থেকে হেফাজতের দায়িত্বে নিয়োজিত। তারা হলেন পরপর আগমণকারী ফেরেশতাগণ।
(৭) তাদের কেউ জান্নাত ও তার নেয়ামতের দায়িত্বে নিয়োজিত। যেমন রিযওয়ান ফেরেশতা ও তাঁর সাথীগণ।
(৮) তাদের কেউ জাহান্নাম ও তার আযাবের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত। তিনি হলেন মালেক এবং দোযখের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাগণ। তাদের নের্তৃস্থানীয়দের সংখ্যা উনিশজন।
(৯) তাদের কেউ কেউ কবরের আযাবের দায়িত্বে নিয়োজিত। তারা হলেন মুনকার ও নাকীর।
(১০) তাদের কেউ আল্লাহর আরশ বহনের দায়িত্বে নিয়োজিত।
(১১) তাদের কাউকে ‘কারুবীয়ূন’ বলা হয়। তাঁরা আল্লাহর আরশের চারপাশে সদা তাসবীহ পাঠের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
(১২) তাদের কেউ মার্তৃগর্ভে রূহ ফুৎকার, মার্তৃগর্ভে মানব দেহ গঠন এবং তাতে যা লিখতে বলা হয় তা লিখার দায়িত্বে নিয়োজিত।
(১৩) তাদের কেউ কেউ বাইতুল মা’মুরে প্রবেশ করেন। তাতে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে। যারা একবার প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে, কিয়ামতের পূর্বে দ্বিতীয়বার আর তারা তাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।
(১৪) কিছু ফেরেশতা এমন আছেন, যারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করে এবং যিকিরের মজলিস খুঁজে বেড়ায়।
(১৫) অগণিত ফেরেশতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁরা কখনও ক্লান্তি বোধ করে না।
(১৬) আরো এমন ফেরেশতা আছেন, যারা রুকূ ও সিজদায় পড়ে আছে। তারা কখনও মাথা উত্তোলন করে না।
উল্লেখিত ফেরেশতাগণ ছাড়াও আরো অসংখ্য ফেরেশতা আছে। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلاَّ هُوَ وَمَا هِيَ إلاَّ ذِكْرَى لِلْبَشَرِ
‘‘আপনার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এটা তো (জাহান্নামের বর্ণনা) মানুষের জন্য উপদেশ ছাড়া অন্য কিছু নয়’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৩১) ফেরেশতাদের প্রকারভেদ এবং তাদের কাজ সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাতে আরো অগণিত দলীল রয়েছে।
উত্তরঃ আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ঈমানের অন্যতম রুকন। এ মর্মে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং ঐ কিতাবের প্রতি, যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন। এবং ঐ কিতাবের প্রতি যা পূর্বে অবতীর্ন করেছিলেন। (সূরা নিসাঃ ১৩৬) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ
‘‘তোমরা বলঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের বংশধরের প্রতি এবং মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে সেগুলোর উপর। তাদের কারো মাঝে পার্থক্য করি না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৩৬) এ ছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আল্লাহর এই বাণীটিই যথেষ্ট। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ
‘‘বলুনঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি’’। (সূরা শুরাঃ ১৫)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং ঐ কিতাবের প্রতি, যা তিনি তাঁর রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছেন। এবং ঐ কিতাবের প্রতি যা পূর্বে অবতীর্ন করেছিলেন। (সূরা নিসাঃ ১৩৬) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَى وَعِيسَى وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِنْ رَبِّهِمْ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ
‘‘তোমরা বলঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাদের বংশধরের প্রতি এবং মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে যা দান করা হয়েছে সেগুলোর উপর। তাদের কারো মাঝে পার্থক্য করি না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৩৬) এ ছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আল্লাহর এই বাণীটিই যথেষ্ট। আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ
‘‘বলুনঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি’’। (সূরা শুরাঃ ১৫)
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে যে সমস্ত কিতাবের নাম উল্লেখ করেছেন, তা হচ্ছে তাওরাত, ইনজীল, যাবুর, ইবরাহীম (আঃ)এর পুস্তিকাসমূহ এবং মুসা (আঃ)এর পুস্তিকাসমূহের কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি কিতাবগুলোর কথা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ * نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالإنْجِيلَ * مِنْ قَبْلُ
‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি সত্যতার সাথে আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের। তিনি ইতিপূর্বে তাওরাত ও ইনজীল অবতীর্ণ করেছিলেন’’। (সূরা আল ইমরানঃ ২-৩) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَآتَيْنَا دَاوُدَ زَبُورًا
‘‘আর আমি দাউদকে যাবুর প্রদান করেছি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৩) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَى * وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّى
‘‘এবং তাকে কি জানানো হয় নি যা আছে মুসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে। যিনি পূর্ণ করেছিলেন স্বীয় অঙ্গীকার’’। (সূরাঃ নাজ্মঃ ৩৬-৩৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
‘‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে’’। (সূরা হাদীদঃ ২৫) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ
‘‘বলুনঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি’’। (সূরা শুরাঃ ১৫) মোট কথা এই যে, আল্লাহ তা’আলা যে সমস্ত আসমানী কিতাবের কথা সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। আর যেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিও ঈমান আনয়ন আবশ্যক। সুতরাং এ ব্যাপারে আমরা তাই বলব, যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ
‘‘বলুনঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি’’। (সূরা শুরাঃ ১৫)
اللَّهُ لاَ إِلَهَ إلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ * نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنْزَلَ التَّوْرَاةَ وَالإنْجِيلَ * مِنْ قَبْلُ
‘‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তিনি সত্যতার সাথে আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের। তিনি ইতিপূর্বে তাওরাত ও ইনজীল অবতীর্ণ করেছিলেন’’। (সূরা আল ইমরানঃ ২-৩) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَآتَيْنَا دَاوُدَ زَبُورًا
‘‘আর আমি দাউদকে যাবুর প্রদান করেছি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৩) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَى * وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّى
‘‘এবং তাকে কি জানানো হয় নি যা আছে মুসার কিতাবে এবং ইবরাহীমের কিতাবে। যিনি পূর্ণ করেছিলেন স্বীয় অঙ্গীকার’’। (সূরাঃ নাজ্মঃ ৩৬-৩৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ
‘‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে নাযিল করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে’’। (সূরা হাদীদঃ ২৫) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ
‘‘বলুনঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি’’। (সূরা শুরাঃ ১৫) মোট কথা এই যে, আল্লাহ তা’আলা যে সমস্ত আসমানী কিতাবের কথা সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। আর যেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিও ঈমান আনয়ন আবশ্যক। সুতরাং এ ব্যাপারে আমরা তাই বলব, যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ
‘‘বলুনঃ আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাতে বিশ্বাস করি’’। (সূরা শুরাঃ ১৫)
উত্তরঃ আল্লাহর কিতাবের প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হল, এ দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে সমস্ত আসমানী কিতাবই মহান আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহ তা’আলা এ সমস্ত কিতাবের মাধ্যমে কথা বলেছেন।
(১) আল্লাহর তা’আলার কতক কালাম ফেরেশতার মাধ্যম ব্যতীত পর্দার অন্তরাল থেকে শ্রবণ করা হয়েছে। [- যেমন আল্লাহ তা’আলা মিরাজের রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে কথা বলেছেন।]
(২) আল্লাহর কিছু কালাম ফেরেশতাগণ মানব জাতির রাসূলদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।
(৩) আল্লাহর এমন কিছু কালাম রয়েছে, যা তিনি নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلاَّ وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولاً فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ
‘‘কোন মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন; কিন্তু অহীর মাধ্যমে ছাড়া অথবা পর্দার আড়াল থেকে অথবা তিনি এমন কোন দূত প্রেরণ করবেন, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করবেন’’। (সূরা শুরাঃ ৫১) আল্লাহ তা’আলা মুসা (আঃ)কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالاَتِي وَبِكَلاَمِي
‘‘আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও আমার সাথে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্যে হতে মনোনিত করেছি’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৪) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا
‘‘আর আল্লাহ তা’আলা মুসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪) আল্লাহ তা’আলা তাওরাত কিতাব সম্পর্কে বলেনঃ
وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الأَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْعِظَةً وَتَفْصِيلاً لِكُلِّ شَيْءٍ
‘‘অতএব আমি ফলকের উপর প্রত্যেক প্রকারের উপদেশ এবং সর্ব বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৫) ঈসা (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَآتَيْنَاهُ الإِنْجِيلَ
‘‘আর আমি তাঁকে ইনজীল প্রদান করেছি’’। (সূরা মায়িদাঃ ৪৬) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَآتَيْنَا دَاوُدَ زَبُورًا
‘‘আর আমি দাউদকে যাবুর প্রদান করেছি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৩) আল্লাহ তা’আলা কুরআন সম্পর্কে বলেনঃ
لَكِنِ اللَّهُ يَشْهَدُ بِمَا أَنْزَلَ إِلَيْكَ أَنْزَلَهُ بِعِلْمِهِ وَالْمَلاَئِكَةُ يَشْهَدُونَ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا
‘‘কিন্তু আল্লাহ আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তিনি যে সজ্ঞানেই অবতীর্ণ করেছেন সে ব্যাপারে তিনি নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী এবং সাক্ষ্য দানে আল্লাহই যথেষ্ট’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৬) আল্লাহ তা’আলা কুরআনের ব্যাপারে আরো বলেনঃ
وَقُرْآنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَى مُكْثٍ وَنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيلاً
‘‘এবং আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড খন্ডভাবে। যাতে আপনি মানুষের কাছে তা পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১০৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ * نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الأَمِينُ * عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ * بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ
‘‘নিশ্চয়ই ইহা (কুরআন) বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। জিবরীল (আঃ) তা নিয়ে অবতরণ করেছেন আপনার অন্তরে। যাতে আপনি সতর্ককারী হতে পারেন। অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়’’। (সূরা শুআরাঃ ১৯২-১৯৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالذِّكْرِ لَمَّا جَاءَهُمْ وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيزٌ * لاَ يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلاَ مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
‘‘নিশ্চয়ই যারা তাদের নিকট কুরআন আসার পর তা অস্বীকার করে (তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে) অবশ্যই এটা এক মহিমাময় কিতাব। কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না, অগ্র হতেও নয়, পশ্চাৎ হতেও নয়। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসনীয় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ’’। (সূরা ফুস্সিলাতঃ ৪১-৪২) এ মর্মে আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
(১) আল্লাহর তা’আলার কতক কালাম ফেরেশতার মাধ্যম ব্যতীত পর্দার অন্তরাল থেকে শ্রবণ করা হয়েছে। [- যেমন আল্লাহ তা’আলা মিরাজের রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে কথা বলেছেন।]
(২) আল্লাহর কিছু কালাম ফেরেশতাগণ মানব জাতির রাসূলদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।
(৩) আল্লাহর এমন কিছু কালাম রয়েছে, যা তিনি নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلاَّ وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولاً فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ
‘‘কোন মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন; কিন্তু অহীর মাধ্যমে ছাড়া অথবা পর্দার আড়াল থেকে অথবা তিনি এমন কোন দূত প্রেরণ করবেন, যে দূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করবেন’’। (সূরা শুরাঃ ৫১) আল্লাহ তা’আলা মুসা (আঃ)কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالاَتِي وَبِكَلاَمِي
‘‘আমি তোমাকে আমার রিসালাত ও আমার সাথে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্যে হতে মনোনিত করেছি’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৪) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا
‘‘আর আল্লাহ তা’আলা মুসার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪) আল্লাহ তা’আলা তাওরাত কিতাব সম্পর্কে বলেনঃ
وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الأَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْعِظَةً وَتَفْصِيلاً لِكُلِّ شَيْءٍ
‘‘অতএব আমি ফলকের উপর প্রত্যেক প্রকারের উপদেশ এবং সর্ব বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৪৫) ঈসা (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَآتَيْنَاهُ الإِنْجِيلَ
‘‘আর আমি তাঁকে ইনজীল প্রদান করেছি’’। (সূরা মায়িদাঃ ৪৬) আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَآتَيْنَا دَاوُدَ زَبُورًا
‘‘আর আমি দাউদকে যাবুর প্রদান করেছি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৩) আল্লাহ তা’আলা কুরআন সম্পর্কে বলেনঃ
لَكِنِ اللَّهُ يَشْهَدُ بِمَا أَنْزَلَ إِلَيْكَ أَنْزَلَهُ بِعِلْمِهِ وَالْمَلاَئِكَةُ يَشْهَدُونَ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا
‘‘কিন্তু আল্লাহ আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছেন, তিনি যে সজ্ঞানেই অবতীর্ণ করেছেন সে ব্যাপারে তিনি নিজেও সাক্ষী এবং ফেরেশতাগণও সাক্ষী এবং সাক্ষ্য দানে আল্লাহই যথেষ্ট’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৬) আল্লাহ তা’আলা কুরআনের ব্যাপারে আরো বলেনঃ
وَقُرْآنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَى مُكْثٍ وَنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيلاً
‘‘এবং আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খন্ড খন্ডভাবে। যাতে আপনি মানুষের কাছে তা পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ১০৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَإِنَّهُ لَتَنْزِيلُ رَبِّ الْعَالَمِينَ * نَزَلَ بِهِ الرُّوحُ الأَمِينُ * عَلَى قَلْبِكَ لِتَكُونَ مِنَ الْمُنْذِرِينَ * بِلِسَانٍ عَرَبِيٍّ مُبِينٍ
‘‘নিশ্চয়ই ইহা (কুরআন) বিশ্ব জগতের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। জিবরীল (আঃ) তা নিয়ে অবতরণ করেছেন আপনার অন্তরে। যাতে আপনি সতর্ককারী হতে পারেন। অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়’’। (সূরা শুআরাঃ ১৯২-১৯৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالذِّكْرِ لَمَّا جَاءَهُمْ وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيزٌ * لاَ يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلاَ مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
‘‘নিশ্চয়ই যারা তাদের নিকট কুরআন আসার পর তা অস্বীকার করে (তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে) অবশ্যই এটা এক মহিমাময় কিতাব। কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না, অগ্র হতেও নয়, পশ্চাৎ হতেও নয়। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসনীয় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ’’। (সূরা ফুস্সিলাতঃ ৪১-৪২) এ মর্মে আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
উত্তরঃ কুরআন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। আল্লাহ তাআ’লা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের তুলনায় কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে বলেনঃ
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ
‘‘আর আমি এ কিতাবকে সত্যতার সাথে আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের এবং ঐ সব কিতাবের সংরক্ষকও বটে’’। (সূরা মায়িদাঃ ৪৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا كَانَ هَذَا الْقُرْآنُ أَنْ يُفْتَرَى مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لاَ رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ তা বানিয়ে নিবে। এটা তো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী যা ইতিপূর্বে নাযিল হয়েছে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ হতে নাযিল হয়েছে। (সূরা ইউনুসঃ ৩৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
‘‘এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং সমস্ত কিছুর বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত’’। (সূরা ইউসুফঃ ১১১)
মুফাস্সিরগণ বলেনঃ কুরআন হচ্ছে, পূর্বেকার কিতাবসমূহের সাক্ষী ও সত্যায়নকারী। অর্থাৎ সেগুলোর মধ্যে যে সত্য ও সঠিক কথা আছে, তা সত্যায়ন করে এবং তাতে যে বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনিভাবে পূর্বের কিতাবগুলোতে যেসমস্ত বিবরণ আছে কুরআন হয়ত রহিত করে অথবা তাতে যেসমস্ত সঠিক কথা আছে সেগুলোকে বহাল ও প্রতিষ্ঠিত রাখে। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِهِ هُمْ بِهِ يُؤْمِنُونَ * وَإِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ
‘‘এর (কুরআনের) পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে। যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এটা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে আগত সত্য। আমরা এর পূর্বেও ছিলাম মুসলমান’’। (সূরা কাসাসঃ ৫২-৫৩)
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ
‘‘আর আমি এ কিতাবকে সত্যতার সাথে আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের এবং ঐ সব কিতাবের সংরক্ষকও বটে’’। (সূরা মায়িদাঃ ৪৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا كَانَ هَذَا الْقُرْآنُ أَنْ يُفْتَرَى مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لاَ رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ তা বানিয়ে নিবে। এটা তো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী যা ইতিপূর্বে নাযিল হয়েছে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা আপনার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ হতে নাযিল হয়েছে। (সূরা ইউনুসঃ ৩৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
‘‘এটা কোন মনগড়া কথা নয়, কিন্তু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং সমস্ত কিছুর বিবরণ, হেদায়াত ও রহমত’’। (সূরা ইউসুফঃ ১১১)
মুফাস্সিরগণ বলেনঃ কুরআন হচ্ছে, পূর্বেকার কিতাবসমূহের সাক্ষী ও সত্যায়নকারী। অর্থাৎ সেগুলোর মধ্যে যে সত্য ও সঠিক কথা আছে, তা সত্যায়ন করে এবং তাতে যে বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনিভাবে পূর্বের কিতাবগুলোতে যেসমস্ত বিবরণ আছে কুরআন হয়ত রহিত করে অথবা তাতে যেসমস্ত সঠিক কথা আছে সেগুলোকে বহাল ও প্রতিষ্ঠিত রাখে। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِهِ هُمْ بِهِ يُؤْمِنُونَ * وَإِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا آمَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِنْ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ
‘‘এর (কুরআনের) পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে। যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এটা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে আগত সত্য। আমরা এর পূর্বেও ছিলাম মুসলমান’’। (সূরা কাসাসঃ ৫২-৫৩)
উত্তরঃ কুরআনের প্রতি মুসলিম উম্মাতের করণীয় হল প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কুরআনের অনুসরণ করা, কুরআনকে আঁকড়ে ধরা এবং তার হক আদায় করা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَهَذَا كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوا
‘‘আর আমি এই কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তোমরা এটার অনুসরণ করে চল এবং ভয় কর’’। (সূরা আনআমঃ ১৫৫) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ
‘‘তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ কর। আর তোমরা আল্লাহ্কে ছেড়ে অন্য কোন আওলীয়ার (বন্ধুদের) অনুসরণ করো না’’। (সূরা আ’রাফঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَالَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِالْكِتَابِ وَأَقَامُوا الصَّلاَةَ إِنَّا لاَ نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ
‘‘আর যারা কিতাবকে আঁকড়ে ধরে থাকে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে, নিশ্চয়ই আমি বিনষ্ট করব না সৎকর্মশীলদের কর্মফল’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৭০) এখানে সমস্ত আসমানী কিতাব উদ্দেশ্য। এ মর্মে আরো আয়াত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ
‘‘তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর এবং দৃঢ়ভাবে তা আঁকড়িয়ে ধর’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়েলুস্ সাহাবাহ।] আলী (রাঃ) অন্য এক মারফু হাদীছে বলেনঃ
أَلاَ إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتَنٌ فَقُلْتُ مَا الْمَخْرَجُ مِنْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ كِتَابُ اللَّهِ
‘‘অচিরেই ফিতনার আগমণ ঘটবে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তা থেকে বাঁচার উপায় কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর কিতাব’’। [- আহমাদ, দারেমী। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি ফাযায়েলে কুরআনে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছ এই সনদ ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটি যঈফুল জামেতে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছটি খুবই দুর্বল, হাদীছ নং- ২০৮০।]
وَهَذَا كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوا
‘‘আর আমি এই কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তোমরা এটার অনুসরণ করে চল এবং ভয় কর’’। (সূরা আনআমঃ ১৫৫) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ
‘‘তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ কর। আর তোমরা আল্লাহ্কে ছেড়ে অন্য কোন আওলীয়ার (বন্ধুদের) অনুসরণ করো না’’। (সূরা আ’রাফঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَالَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِالْكِتَابِ وَأَقَامُوا الصَّلاَةَ إِنَّا لاَ نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ
‘‘আর যারা কিতাবকে আঁকড়ে ধরে থাকে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে, নিশ্চয়ই আমি বিনষ্ট করব না সৎকর্মশীলদের কর্মফল’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৭০) এখানে সমস্ত আসমানী কিতাব উদ্দেশ্য। এ মর্মে আরো আয়াত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ
‘‘তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর এবং দৃঢ়ভাবে তা আঁকড়িয়ে ধর’’। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়েলুস্ সাহাবাহ।] আলী (রাঃ) অন্য এক মারফু হাদীছে বলেনঃ
أَلاَ إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتَنٌ فَقُلْتُ مَا الْمَخْرَجُ مِنْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ كِتَابُ اللَّهِ
‘‘অচিরেই ফিতনার আগমণ ঘটবে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তা থেকে বাঁচার উপায় কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর কিতাব’’। [- আহমাদ, দারেমী। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি ফাযায়েলে কুরআনে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছ এই সনদ ব্যতীত অন্য কোন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটি যঈফুল জামেতে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছটি খুবই দুর্বল, হাদীছ নং- ২০৮০।]
উত্তরঃ আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে ধারণ করার অর্থ হল, তা মুখস্থ করা, দিন রাত তা তেলাওয়াত করা, কুরআনের আয়াতগুলো নিয়ে গবেষণা করা, তার হালালকৃত বিষয়কে হালাল মনে করা, হারামকে হারাম মনে করা, তার হুকুমগুলো বাস্তবায়ন করা, তার ধমকিপূর্ণ কথাগুলো ভয় করা, তার উপমা ও দৃষ্টান্তগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা, তার ঘটনাবলী থেকে উপদেশ গ্রহণ করা, কুরআনের মুহকাম (সুস্পষ্ট) আয়াতগুলো অনুযায়ী আমল করা, মুতাশাবেহ তথা অস্পষ্ট আয়াতগুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করা, তার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করা, অতিরঞ্জিতকারীদের বিকৃতি ও কুরআন দ্বারা বাতিলপন্থীদের ব্যবসা প্রতিহত করা, কুরআনের সমস্ত বিষয় বাস্তবায়ন করা এবং সজ্ঞানে কুরআনের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়া ইত্যাদি।
উত্তরঃ কুরআন প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর কালাম বা বাণী। অক্ষরসমূহ এবং তার অর্থ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে। এ নয় যে, আল্লাহর কালাম বলতে শুধু কুরআনের শব্দগুলোকে বুঝায়। এমনিভাবে শব্দ ব্যতীত শুধু অর্থগুলোর নাম আল্লাহর কালাম নয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে কথা বলেছেন এবং তাঁর নবীর উপর অহী আকারে তা নাযিল করেছেন। মু’মিনগণ তা বিশ্বাস করেছে।
সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কুরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে তা শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহর কালাম হওয়া থেকে বের হয়ে যায়না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু এ সব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে যা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখুলক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কুরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কানসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু কান দিয়ে কুরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ * فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ
‘‘নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে’’। (সূরা ওয়াকিয়াহঃ ৭৭-৭৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
بَلْ هُوَ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ فِي صُدُورِ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلاَّ الظَّالِمُونَ
‘‘বস্ত্ততঃ যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে এটা স্পষ্ট নিদর্শন। যালিমরা ব্যতীত কেউ আমার নিদর্শন অস্বীকার করে না’’। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৯) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ لاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ
‘‘এবং আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অহী স্বরূপ যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা আপনি তেলাওয়াত করুন। আল্লাহর বাক্যসমূহ পরিবর্তন করার কেউ নেই’’। (সূরা কাহ্ফঃ ২৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلاَمَ اللَّهِ
‘‘আর যদি মুশরিকদের মধ্য হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দান কর, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়’’। (সূরা তাওবাঃ ৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ ‘‘তোমরা সর্বদা কুরআনের মধ্যে গবেষণা কর’’। [- তাবরানী, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, (৭/১৬৫)] এ ব্যাপারে আরো অনেক দলীল রয়েছে।
সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে কুরআন বা কুরআনের কোন অংশ মাখলুক সে কাফের। তার কুফরী এত বড় যে, তাকে সম্পূর্ণরূপে ইসলাম থেকে বের করে দিবে। কেননা কুরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহর কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং যে বলবে আল্লাহর কোন সিফাত বা গুণ মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে বলা হবে। ফিরে আসলে তো ভাল, অন্যথায় তাকে কাফের হিসাবে হত্যা করা হবে। মুসলমানদের যেসমস্ত হক ও আহকাম রয়েছে তাতে তার কোন অংশ নেই। [- এ ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে লেখকের আরেকটি অনন্য গ্রন্থ ‘মাআরেজুল কবুল’ প্রথম খন্ড ১৮৮ থেকে ২০৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠ করুন।]
সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কুরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে তা শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহর কালাম হওয়া থেকে বের হয়ে যায়না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু এ সব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে যা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখুলক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কুরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কানসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু কান দিয়ে কুরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ * فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ
‘‘নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে’’। (সূরা ওয়াকিয়াহঃ ৭৭-৭৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
بَلْ هُوَ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ فِي صُدُورِ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلاَّ الظَّالِمُونَ
‘‘বস্ত্ততঃ যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে এটা স্পষ্ট নিদর্শন। যালিমরা ব্যতীত কেউ আমার নিদর্শন অস্বীকার করে না’’। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৯) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ لاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ
‘‘এবং আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অহী স্বরূপ যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা আপনি তেলাওয়াত করুন। আল্লাহর বাক্যসমূহ পরিবর্তন করার কেউ নেই’’। (সূরা কাহ্ফঃ ২৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلاَمَ اللَّهِ
‘‘আর যদি মুশরিকদের মধ্য হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দান কর, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়’’। (সূরা তাওবাঃ ৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ ‘‘তোমরা সর্বদা কুরআনের মধ্যে গবেষণা কর’’। [- তাবরানী, মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, (৭/১৬৫)] এ ব্যাপারে আরো অনেক দলীল রয়েছে।
সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে কুরআন বা কুরআনের কোন অংশ মাখলুক সে কাফের। তার কুফরী এত বড় যে, তাকে সম্পূর্ণরূপে ইসলাম থেকে বের করে দিবে। কেননা কুরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহর কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং যে বলবে আল্লাহর কোন সিফাত বা গুণ মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে বলা হবে। ফিরে আসলে তো ভাল, অন্যথায় তাকে কাফের হিসাবে হত্যা করা হবে। মুসলমানদের যেসমস্ত হক ও আহকাম রয়েছে তাতে তার কোন অংশ নেই। [- এ ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে লেখকের আরেকটি অনন্য গ্রন্থ ‘মাআরেজুল কবুল’ প্রথম খন্ড ১৮৮ থেকে ২০৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠ করুন।]
উত্তরঃ আল্লাহর ইল্ম (জ্ঞান) যেমন আল্লাহর সতবাগত গুণ, তেমনি আল্লাহর কালামও তাঁর সত্ত্বার সাথে সম্পর্ক রাখার দিক থেকে এবং এর দ্বারা আল্লাহ তা’আলার গুণান্বিত হওয়ার দিক থেকে সিফাতে যাতিয়া বা সত্বাগত গুণ। আল্লাহর কালাম আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত। তিনি স্বীয় ইল্ম থেকেই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। সুতরাং তিনি যা অবতীর্ণ করেছেন, তা সম্পর্কে তিনিই বেশী অবগত।
আল্লাহর কথা যেহেতু তাঁর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত, তাই এটি কর্মগত সিফাতও বটে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إذا أراد الله أن يوحي بالأمر تكلم بالوحي )
‘‘আল্লাহ্ তাআ’লা যখন কোন বিষয় অবতীর্ণ করতে চান, তখন অহীর মাধ্যমে কথা বলেন’’। [- ইবনে খুজায়মা, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ। তবে হাদীছটি যঈফ। দেখুন ইমাম আলবানী রচিত কিতাবুস্ সুন্নাত, (১/২৭৭, হাদীছ নং- ৫১৫)] এ জন্যই সালফে সালেহীন তথা পূর্বযুগের সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ আল্লাহর কালাম সম্পর্কে বলেনঃ নিশ্চয়ই এটা একই সাথে সত্বাগত ও কর্মগত গুণ। সুতরাং আল্লাহ্ তাআ’লা অতীতে সর্বদা কথা বলার গুণে গুণান্বিত ছিলেন, বর্তমানেও আছেন এবং অনন্তকাল পর্যন্ত তিনি এ গুণে গুণান্বিত থাকবেন। তবে কথা বলা তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা কথা বলেন। তিনি যাকে শুনাতে চান, তিনি সেই কথা শুনেন। তাঁর কথা তাঁর সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। তাঁর কথার কোন সীমা ও শেষ নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قُلْ لَوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا
‘‘হে নবী আপনি বলুনঃ আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করবার জন্যে সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে । সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১০৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَلَوْ أَنَّمَا فِي الأَرْضِ مِنْ شَجَرَةٍ أَقْلاَمٌ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِنْ بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ
‘‘পৃথিবীর সমস্ত গাছ যদি কলম হয় এবং এই সমুদ্রের সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও আল্লাহর বাণী (গুণাবলী) লিখে শেষ করা যাবে না’’। (সূরা লুকমানঃ ২৭) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلاً لاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
‘‘আপনার প্রতিপালকের বাণী সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে। তাঁর বাণী পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি শ্রবণকারী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা আন-আমঃ ১১৫)
আল্লাহর কথা যেহেতু তাঁর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত, তাই এটি কর্মগত সিফাতও বটে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إذا أراد الله أن يوحي بالأمر تكلم بالوحي )
‘‘আল্লাহ্ তাআ’লা যখন কোন বিষয় অবতীর্ণ করতে চান, তখন অহীর মাধ্যমে কথা বলেন’’। [- ইবনে খুজায়মা, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ। তবে হাদীছটি যঈফ। দেখুন ইমাম আলবানী রচিত কিতাবুস্ সুন্নাত, (১/২৭৭, হাদীছ নং- ৫১৫)] এ জন্যই সালফে সালেহীন তথা পূর্বযুগের সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ আল্লাহর কালাম সম্পর্কে বলেনঃ নিশ্চয়ই এটা একই সাথে সত্বাগত ও কর্মগত গুণ। সুতরাং আল্লাহ্ তাআ’লা অতীতে সর্বদা কথা বলার গুণে গুণান্বিত ছিলেন, বর্তমানেও আছেন এবং অনন্তকাল পর্যন্ত তিনি এ গুণে গুণান্বিত থাকবেন। তবে কথা বলা তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা কথা বলেন। তিনি যাকে শুনাতে চান, তিনি সেই কথা শুনেন। তাঁর কথা তাঁর সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। তাঁর কথার কোন সীমা ও শেষ নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قُلْ لَوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَنْ تَنْفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا
‘‘হে নবী আপনি বলুনঃ আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করবার জন্যে সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে । সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১০৯) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَلَوْ أَنَّمَا فِي الأَرْضِ مِنْ شَجَرَةٍ أَقْلاَمٌ وَالْبَحْرُ يَمُدُّهُ مِنْ بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ
‘‘পৃথিবীর সমস্ত গাছ যদি কলম হয় এবং এই সমুদ্রের সাথে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও আল্লাহর বাণী (গুণাবলী) লিখে শেষ করা যাবে না’’। (সূরা লুকমানঃ ২৭) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلاً لاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
‘‘আপনার প্রতিপালকের বাণী সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে। তাঁর বাণী পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি শ্রবণকারী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা আন-আমঃ ১১৫)
৮৭
প্রশ্নঃ (৮৫) واقفة (ওয়াকেফা) সম্প্রদায় কারা? তাদের হুকুম কী? [- ফির্কায়ে ওয়াকেফিয়া ইসলামী আকীদার অনেক বিষয়ে মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করে। তারা অনেক ক্ষেত্রেই বলে থাকে, আমরা এটাও বলিনা ওটাও বলিনা। যেমন কুরআন মাখলুক না মাখলুক নয়? পাপী মু’মিনরা জাহান্নামে যাবে কি না? ইত্যাদি। এটি একটি জাহেল ও গোমরাহ সম্প্রদায়। মিনহাজুস সুন্নাহ (৫/২৮৪-২৯৪)]উত্তরঃ যারা কুরআনের ব্যাপারে এ কথা বলে যে, আমরা এ কথা বলব না যে, কুরআন আল্লাহর কালাম এবং এও বলব না যে, তা মাখলুক, তারা ফির্কায়ে ওয়াকেফার অন্তর্ভূক্ত। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ তাদের মধ্যে যারা তর্কশাস্ত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞ, সে জাহ্মী [- যারা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে বিশ্বাস করে না তাদেরকে জাহ্মীয়া বলা হয়।]। আর যে তর্কশাস্ত্র সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে না; বরং এ ব্যাপারে তার জ্ঞান অতি নগণ্য, তার কাছে দলীল-প্রমাণ পেশ করা হবে। সে যদি তাওবা করে এবং বিশ্বাস পোষণ করে যে, কুরআন আল্লাহ্ তা’আলার কালাম, মাখলুক নয়, তবে তো খুবই ভাল। অন্যথায় সে জাহ্মীয়াদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে।
৮৮
প্রশ্নঃ (৮৬) যে ব্যক্তি বলেঃ ( لََفْظ) লফযের মাধ্যমে আমার কুরআন পড়া মাখলুক অর্থাৎ কুরআন পাঠ করার সময় আমার মুখ থেকে উচ্চারিত বাক্যগুলো মাখলুক, তার হুকুম কি?উত্তরঃ উক্ত বাক্যটি অস্বীকার করা বা সমর্থন করা কোনটিই জায়েয নেই। কেননা لَفْظ কথাটির দু’টি অর্থ আছে। (১) মুখ দিয়ে উচ্চারণ করা। এটি বান্দার কাজ। (২) মুখ দিয়ে উচ্চারণকৃত কালাম। আর তা হচ্ছে কুরআন।
উপরোক্ত কথাটি যদি কুরআন মাখলুক হওয়ার মত পোষণকারীর মুখ থেকে বের হয়, তাহলে দ্বিতীয় অর্থ বুঝাবে। তখন অর্থ এই হবে যে, আমি যেই শব্দগুলো জবানের মাধ্যমে আদায় করছি, তা মাখলুক। অর্থাৎ কুরআন। তার কথাটি জাহ্মীয়াদের কথার মতই হবে, যারা শব্দের মাধ্যমে পাঠকৃত কুরআনকে মাখলুক বলে।
আর তা যদি তাদের মুখ থেকে বের হয়, যারা বলে শব্দের মাধ্যমে পাঠকৃত কুরআন মাখলুক নয়, তবে প্রথম অর্থ হবে, যা বান্দার কর্ম। আর এটি হবে এত্তেহাদী সম্প্রদায়ের বিদআতসমূহের অন্যতম একটি বিদআত।
এ জন্যই সালফে সালেহীন তথা পূর্বযুগের সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ বলেনঃ যে ব্যক্তি এ কথা বলবে যে, শব্দের মাধ্যমে আমার পাঠকৃত কুরআন মাখলুক, সে কুরআনকে মাখলুকই বলল এবং সে জাহ্মী। আর যে বলবে শব্দের মাধ্যমে পাঠকৃত কুরআন মাখলুক নয়, সে বিদআতী।
মোটকথা এই যে, কুরআনকে মাখলুক হিসাবে সাব্যস্ত করা কিংবা তাকে মাখলুক সাব্যস্ত না করা- কোন ক্ষেত্রেই উপরোক্ত বাক্যটি ব্যবহার করা জায়েয নয়।
উপরোক্ত কথাটি যদি কুরআন মাখলুক হওয়ার মত পোষণকারীর মুখ থেকে বের হয়, তাহলে দ্বিতীয় অর্থ বুঝাবে। তখন অর্থ এই হবে যে, আমি যেই শব্দগুলো জবানের মাধ্যমে আদায় করছি, তা মাখলুক। অর্থাৎ কুরআন। তার কথাটি জাহ্মীয়াদের কথার মতই হবে, যারা শব্দের মাধ্যমে পাঠকৃত কুরআনকে মাখলুক বলে।
আর তা যদি তাদের মুখ থেকে বের হয়, যারা বলে শব্দের মাধ্যমে পাঠকৃত কুরআন মাখলুক নয়, তবে প্রথম অর্থ হবে, যা বান্দার কর্ম। আর এটি হবে এত্তেহাদী সম্প্রদায়ের বিদআতসমূহের অন্যতম একটি বিদআত।
এ জন্যই সালফে সালেহীন তথা পূর্বযুগের সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিগণ বলেনঃ যে ব্যক্তি এ কথা বলবে যে, শব্দের মাধ্যমে আমার পাঠকৃত কুরআন মাখলুক, সে কুরআনকে মাখলুকই বলল এবং সে জাহ্মী। আর যে বলবে শব্দের মাধ্যমে পাঠকৃত কুরআন মাখলুক নয়, সে বিদআতী।
মোটকথা এই যে, কুরআনকে মাখলুক হিসাবে সাব্যস্ত করা কিংবা তাকে মাখলুক সাব্যস্ত না করা- কোন ক্ষেত্রেই উপরোক্ত বাক্যটি ব্যবহার করা জায়েয নয়।
উত্তরঃ কুরআন ও হাদীছে রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নের অসংখ্য দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً * أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا * وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ أُولَئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ
‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের পার্থক্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে যে, আমরা কতিপয় রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি এবং কতিপয়কে অবিশ্বাস করি এবং তারা এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, ওরাই প্রকৃত পক্ষে অবিশ্বাসী এবং আমি অবিশ্বাসীদের জন্যে অবমাননাকর শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের কোন একজনের মধ্যে পার্থক্য করে না, আল্লাহ তাদেরকেই তাদের প্রতিদান প্রদান করবেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৫০-১৫২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( آمنت بالله ورسله )
‘‘আমি আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদব। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً * أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا * وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ أُولَئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ
‘‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের পার্থক্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে যে, আমরা কতিপয় রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি এবং কতিপয়কে অবিশ্বাস করি এবং তারা এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়, ওরাই প্রকৃত পক্ষে অবিশ্বাসী এবং আমি অবিশ্বাসীদের জন্যে অবমাননাকর শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের কোন একজনের মধ্যে পার্থক্য করে না, আল্লাহ তাদেরকেই তাদের প্রতিদান প্রদান করবেন’’। (সূরা নিসাঃ ১৫০-১৫২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( آمنت بالله ورسله )
‘‘আমি আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করলাম’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদব। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
উত্তরঃ রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হল, এ দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক জাতির নিকট তাদের মধ্যে হতেই কোন না কোন রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা তাদের জাতির লোকদেরকে এককভাবে আল্লাহর এবাদতের প্রতি আহবান জানাতেন এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের এবাদত করতে নিষেধ করতেন। তাঁরা সকলেই ছিলেন সত্যবাদী ও সত্যবাদী বলে সমর্থিত, সৎকর্মপরায়ণ, সৎপথপ্রাপ্ত, সম্মানিত, মুত্তাকী, আমানতদার, সৎপথ প্রদর্শনকারী, এবং তাঁরা তাদের প্রভুর পক্ষ হতে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শনাবলী দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত। তাদেরকে আল্লাহ্ তা’আলা যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তারা তার সবই পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। তারা কোন কিছু গোপন করেন নি, পরিবর্তন করেন নি এবং তারা নিজেদের তরফ হতে একটি অক্ষরও বৃদ্ধি বা কম করেন নি। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلاَّ الْبَلاَغُ الْمُبِينُ
‘‘রাসূলদের কর্তব্য তো শুধু পরিস্কারভাবে (আল্লাহর বাণী) পৌঁছিয়ে দেয়া’’। (সূরা নাহলঃ ৩৫) সমস্ত নবী-রাসূলই সুস্পষ্ট হকের উপর ছিলেন। আল্লাহ তা’আলা ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন, মুসা (আঃ)এর সাথে কথা বলেছেন এবং ইদরীছ (আঃ)কে উচ্চ আসনে উন্নিত করেছেন। ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁর কালেমা, যা তিনি মারইয়ামের প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর রূহ। [- ঈসা (আঃ) আল্লাহর কালেমা- এ কথার অর্থ এই যে, আল্লাহ্ তাঁকে স্বীয় কালেমা ( -كُنْ فَيَكُوْن কুন ফায়াকুন) অর্থাৎ হয়ে যাও- এর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর ‘রূহ’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিকৃত রূহসমূহের অন্তর্ভূক্ত। তিনি আল্লাহ্ বা আল্লাহর পুত্র নন। যেমনটি ধারণা করে খৃষ্টান সম্প্রদায়।] আল্লাহ তা’আলা কতক রাসূলকে কতকের উপর সম্মানিত করেছেন এবং কারো মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلاَّ الْبَلاَغُ الْمُبِينُ
‘‘রাসূলদের কর্তব্য তো শুধু পরিস্কারভাবে (আল্লাহর বাণী) পৌঁছিয়ে দেয়া’’। (সূরা নাহলঃ ৩৫) সমস্ত নবী-রাসূলই সুস্পষ্ট হকের উপর ছিলেন। আল্লাহ তা’আলা ইবরাহীম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন, মুসা (আঃ)এর সাথে কথা বলেছেন এবং ইদরীছ (আঃ)কে উচ্চ আসনে উন্নিত করেছেন। ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁর কালেমা, যা তিনি মারইয়ামের প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর রূহ। [- ঈসা (আঃ) আল্লাহর কালেমা- এ কথার অর্থ এই যে, আল্লাহ্ তাঁকে স্বীয় কালেমা ( -كُنْ فَيَكُوْن কুন ফায়াকুন) অর্থাৎ হয়ে যাও- এর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর ‘রূহ’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিকৃত রূহসমূহের অন্তর্ভূক্ত। তিনি আল্লাহ্ বা আল্লাহর পুত্র নন। যেমনটি ধারণা করে খৃষ্টান সম্প্রদায়।] আল্লাহ তা’আলা কতক রাসূলকে কতকের উপর সম্মানিত করেছেন এবং কারো মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
৯১
প্রশ্নঃ (৮৯) রাসূলগণ যে বিষয়ের আদেশ দিতেন এবং যা থেকে নিষেধ করতেন সে ক্ষেত্রে কি সকলের দাওয়াত এক ছিল?উত্তরঃ এবাদতের মূল বুনিয়াদের ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল রাসূলের দাওয়াত ছিল এক। আর তা হচ্ছে তাওহীদ। তাওহীদের মর্ম হচ্ছে অন্তরে বিশ্বাস, জবানের কথা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্ম অর্থাৎ সকল প্রকার এবাদত একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার জন্য নির্ধারণ করা এবং আল্লাহ্ ছাড়া যেসব বিষয়ের এবাদত করা হয়, তা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করা।
তবে আহকাম ও ফারায়েজের ক্ষেত্রে কথা এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা কোন কোন উম্মতের উপর এমন কিছু নামায-রোজা ফরজ করেন, যা অন্যদের উপর ফরজ করেন না। আবার কতক উম্মাতের উপর এমন কিছু বিষয় হারাম করেন, যা অন্যদের উপর হারাম করেন না। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তা করেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
‘‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম’’। (সূরা মুল্কঃ ২)
তবে আহকাম ও ফারায়েজের ক্ষেত্রে কথা এই যে, আল্লাহ্ তা’আলা কোন কোন উম্মতের উপর এমন কিছু নামায-রোজা ফরজ করেন, যা অন্যদের উপর ফরজ করেন না। আবার কতক উম্মাতের উপর এমন কিছু বিষয় হারাম করেন, যা অন্যদের উপর হারাম করেন না। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তা করেন। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
‘‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম’’। (সূরা মুল্কঃ ২)
উত্তরঃ এ ব্যাপারে কুআনের দলীলগুলো দুইভাগে বিভক্ত। সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত। সংক্ষিপ্ত দলীলগুলো যেমন আল্লাহর বাণীঃ
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولاً أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
‘‘এবং প্রত্যেক জাতির নিকট আমি একজন করে রাসূল প্রেরণ করেছি এই কথার দাওয়াত দেয়ার জন্য যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক’’। (সূরা নাহ্ল- ৩৬) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلاَّ نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدُونِ
‘‘আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তার প্রতি এ প্রত্যাদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই এবাদত কর’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ২৫) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِنْ دُونِ الرَّحْمَنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ
‘‘আপনার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে আপনি জিজ্ঞেস করুন। আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ স্থির করেছিলাম যাদের এবাদত করা যায়?’’ (সূরাঃ যুখরুফঃ ৪৫) এ ছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
আর বিস্তারিত দলীলগুলো হচ্ছে যেমন আল্লাহর বাণীঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
‘‘আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট, তিনি বলেছিলেনঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা মু’মিনূনঃ ২৩) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ
‘‘আর আমি সামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা হুদঃ ৬১) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
‘‘আর আমি আদ সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা হুদঃ ৫০) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
‘‘আর আমি মাদায়েনের অধিবাসীর প্রতি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা হুদঃ ৮৪) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاءٌ مِمَّا تَعْبُدُونَ * إِلاَّ الَّذِي فَطَرَنِي
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন ইবরাহীম তাঁর পিতা এবং সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমরা যাদের উপাসনা কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে শুধু তারই সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন’’। (সূরা যুখরুফঃ ২৬-২৭) কুরআনে আল্লাহ্ তাআ’লা মুসা (আঃ)এর কথা উল্লেখ করে বলেনঃ
إِنَّمَا إِلَهُكُمُ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إلاَّ هُوَ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
‘‘তোমাদের মা’বুদ তো শুধুমাত্র আল্লাহই, যিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই। তার জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত’’। (সূরা তোহাঃ ৯৮) আল্লাহ্ তাআ’লা ঈসা (আঃ)এর কথা উল্লেখ করে বলেনঃ
وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
‘‘মাসীহ (ঈসা) বললেনঃ হে বনী ইসরাঈলগণ! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। যিনি আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন, তার স্থান হবে জাহান্নাম’’। (সূরা মায়েদাঃ ৭২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنْذِرٌ وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلاَّ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘হে নবী আপনি বলুনঃ আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। এক পরাক্রমশালী আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা সোয়াদঃ ৬৫) এ ছাড়া রয়েছে আরো অনেক আয়াত।
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولاً أَنِ اُعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
‘‘এবং প্রত্যেক জাতির নিকট আমি একজন করে রাসূল প্রেরণ করেছি এই কথার দাওয়াত দেয়ার জন্য যে, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক’’। (সূরা নাহ্ল- ৩৬) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلاَّ نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنَا فَاعْبُدُونِ
‘‘আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তার প্রতি এ প্রত্যাদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই এবাদত কর’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ২৫) আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ
وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رُسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِنْ دُونِ الرَّحْمَنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ
‘‘আপনার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে আপনি জিজ্ঞেস করুন। আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ স্থির করেছিলাম যাদের এবাদত করা যায়?’’ (সূরাঃ যুখরুফঃ ৪৫) এ ছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
আর বিস্তারিত দলীলগুলো হচ্ছে যেমন আল্লাহর বাণীঃ
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
‘‘আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের নিকট, তিনি বলেছিলেনঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা মু’মিনূনঃ ২৩) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ
‘‘আর আমি সামুদ জাতির প্রতি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা হুদঃ ৬১) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
‘‘আর আমি আদ সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা হুদঃ ৫০) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ
‘‘আর আমি মাদায়েনের অধিবাসীর প্রতি তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বললেনঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা হুদঃ ৮৪) আল্লাহ্ তাআলা বাণীঃ
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاءٌ مِمَّا تَعْبُدُونَ * إِلاَّ الَّذِي فَطَرَنِي
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন ইবরাহীম তাঁর পিতা এবং সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমরা যাদের উপাসনা কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে শুধু তারই সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন’’। (সূরা যুখরুফঃ ২৬-২৭) কুরআনে আল্লাহ্ তাআ’লা মুসা (আঃ)এর কথা উল্লেখ করে বলেনঃ
إِنَّمَا إِلَهُكُمُ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إلاَّ هُوَ وَسِعَ كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا
‘‘তোমাদের মা’বুদ তো শুধুমাত্র আল্লাহই, যিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই। তার জ্ঞান সর্ববিষয়ে ব্যাপ্ত’’। (সূরা তোহাঃ ৯৮) আল্লাহ্ তাআ’লা ঈসা (আঃ)এর কথা উল্লেখ করে বলেনঃ
وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
‘‘মাসীহ (ঈসা) বললেনঃ হে বনী ইসরাঈলগণ! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। যিনি আমার প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করবে তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন, তার স্থান হবে জাহান্নাম’’। (সূরা মায়েদাঃ ৭২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا أَنَا مُنْذِرٌ وَمَا مِنْ إِلَهٍ إِلاَّ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘‘হে নবী আপনি বলুনঃ আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। এক পরাক্রমশালী আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা’বুদ নেই’’। (সূরা সোয়াদঃ ৬৫) এ ছাড়া রয়েছে আরো অনেক আয়াত।
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
‘‘তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট শরীয়ত ও নির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণ করেছি। আর আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই তোমাদের সকলকে একই উম্মত করে দিতেন; কিন্তু তিনি এরূপ করেন নি। যাতে তোমাদেরকে যে বিষয় প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। সুতরাং তোমরা কল্যাণসমূহের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও। (সূরা মায়িদাঃ ৪৮) আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا ))এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ এখানে শরীয়ত ও পন্থা বলতে সুন্নাত ও জীবন চলার পথ উদ্দেশ্য। মুজাহিদ, ইকরিমা, হাসান বসরী, কাতাদা, যাহ্হাক, সুদ্দী এবং আবু ইসহাক সুবাই-ঈ থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত আছে। [- দেখুনঃ তাফসীরে জামেউল আয়ান, ৬/২৭১)] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
وَالْأَنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ لِعَلَّاتٍ أُمَّهَاتُهُمْ شَتَّى وَدِينُهُمْ وَاحِدٌ
‘‘নবীগণ পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। তাদের মাতা বিভিন্ন; কিন্তু দ্বীন একটিই। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আম্বীয়া।] এখানে দ্বীন বলতে তাওহীদ উদ্দেশ্য, যা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা সকল রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং প্রত্যেক আসমানী কিতাবের মূল বিষয় হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।
তবে শরীয়তের ব্যাপারে কথা হল, প্রত্যেক শরীয়তের আদেশ-নিষেধ এবং হালাল-হারাম ছিল ভিন্ন ভিন্ন । আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
‘‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম’’। (সূরা মুল্কঃ ২)
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَكِنْ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
‘‘তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য নির্দিষ্ট শরীয়ত ও নির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণ করেছি। আর আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই তোমাদের সকলকে একই উম্মত করে দিতেন; কিন্তু তিনি এরূপ করেন নি। যাতে তোমাদেরকে যে বিষয় প্রদান করেছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। সুতরাং তোমরা কল্যাণসমূহের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও। (সূরা মায়িদাঃ ৪৮) আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا ))এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ এখানে শরীয়ত ও পন্থা বলতে সুন্নাত ও জীবন চলার পথ উদ্দেশ্য। মুজাহিদ, ইকরিমা, হাসান বসরী, কাতাদা, যাহ্হাক, সুদ্দী এবং আবু ইসহাক সুবাই-ঈ থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত আছে। [- দেখুনঃ তাফসীরে জামেউল আয়ান, ৬/২৭১)] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
وَالْأَنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ لِعَلَّاتٍ أُمَّهَاتُهُمْ شَتَّى وَدِينُهُمْ وَاحِدٌ
‘‘নবীগণ পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। তাদের মাতা বিভিন্ন; কিন্তু দ্বীন একটিই। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আম্বীয়া।] এখানে দ্বীন বলতে তাওহীদ উদ্দেশ্য, যা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা সকল রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং প্রত্যেক আসমানী কিতাবের মূল বিষয় হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।
তবে শরীয়তের ব্যাপারে কথা হল, প্রত্যেক শরীয়তের আদেশ-নিষেধ এবং হালাল-হারাম ছিল ভিন্ন ভিন্ন । আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
‘‘যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম’’। (সূরা মুল্কঃ ২)
উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা কুরআনে আমাদের জন্য অনেক নবী-রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আমাদের উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য এ সমস্ত ঘটনাই যথেষ্ট। তারপরও আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلاً لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
‘‘আর নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট ইতিপূর্বে বহু রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করেছি এবং আরো অনেক রাসূল রয়েছে, যাদের অবস্থা আপনার নিকট বর্ণনা করিনি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪) সুতরাং যাদের বিবরণ বিস্তারিতভাবে এসেছে, তাদের সকলের প্রতি বিস্তারিতভাবেই বিশ্বাস করি। আর যাদের আলোচনা সংক্ষেপে এসেছে, তাদের প্রতি সেভাবেই বিশ্বাস করি।
وَرُسُلاً قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِنْ قَبْلُ وَرُسُلاً لَمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ
‘‘আর নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট ইতিপূর্বে বহু রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করেছি এবং আরো অনেক রাসূল রয়েছে, যাদের অবস্থা আপনার নিকট বর্ণনা করিনি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৪) সুতরাং যাদের বিবরণ বিস্তারিতভাবে এসেছে, তাদের সকলের প্রতি বিস্তারিতভাবেই বিশ্বাস করি। আর যাদের আলোচনা সংক্ষেপে এসেছে, তাদের প্রতি সেভাবেই বিশ্বাস করি।
উত্তরঃ যাদের নাম কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে তারা হচ্ছেনঃ আদম, নূহ, ইদরীস, হুদ, সালেহ, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, লুত, শুআইব, ইউনুস, মুসা, হারুন, ইলিয়াস, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, আল-ইয়াসা, যুল-কিফ্ল, দাউদ, সুলায়মান, আইয়্যুব, ঈসা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সংক্ষিপ্তভাবে ‘আসবাত’-এর কথা উল্লেখ আছে। [- ‘আসবাত’ বলতে ইসহাক ও ইয়াকুব (আঃ)এর বংশধরের ঐ সব সন্তান উদ্দেশ্য, যাদেরকে নবুওয়াতের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়েছিল।]
উত্তরঃ রাসূলদের মধ্যে হতে উলুল আযম হচ্ছেন পাঁচজন। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের কথা পৃথকভাবে কুরআন মাজীদের দুই স্থানে উল্লেখ করেছেন।
প্রথম স্থানটি হল সূরা আহযাবের ৭নং আয়াত। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আমি নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং আপনার নিকট থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মুসা ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের নিকট থেকেও’’। (সূরা আহযাবঃ ৭) আর দ্বিতীয় স্থানটি হল সূরা শুরার ৬৩নং আয়াত। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلاَ تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
‘‘তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আমি অহী করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মুসা ও ঈসার প্রতি এ মর্মে যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে মতভেদ সৃষ্টি করো না’’। (সূরা শুরাঃ ১৩)
প্রথম স্থানটি হল সূরা আহযাবের ৭নং আয়াত। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَإِذْ أَخَذْنَا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثَاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ وَإِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আমি নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং আপনার নিকট থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মুসা ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের নিকট থেকেও’’। (সূরা আহযাবঃ ৭) আর দ্বিতীয় স্থানটি হল সূরা শুরার ৬৩নং আয়াত। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلاَ تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
‘‘তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আমি অহী করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মুসা ও ঈসার প্রতি এ মর্মে যে, তোমরা দ্বীন প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে মতভেদ সৃষ্টি করো না’’। (সূরা শুরাঃ ১৩)
উত্তরঃ মানুষের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হওয়ার পর নূহ (আঃ) ছিলেন সর্বপ্রথম রাসূল। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ
‘‘নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি অহী প্রেরণ করেছি। যেমন অহী প্রেরণ করেছিলাম নূহ এবং তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَالأَحْزَابُ مِنْ بَعْدِهِمْ
‘‘তাদের পূর্বে নূহ (আঃ)এর সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যারোপ করেছিল’’। (সূরা গাফেরঃ ৫)
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ
‘‘নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি অহী প্রেরণ করেছি। যেমন অহী প্রেরণ করেছিলাম নূহ এবং তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَالأَحْزَابُ مِنْ بَعْدِهِمْ
‘‘তাদের পূর্বে নূহ (আঃ)এর সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যারোপ করেছিল’’। (সূরা গাফেরঃ ৫)
উত্তরঃ আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ আদম ও নুহ (আঃ)এর মধ্যে ১০টি শতাব্দী ছিল। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সকলেই তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। অতঃপর মানুষের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। [- দেখুনঃ তাফসীরে জামেউল বয়ান, (২/৩৩৪)।] আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ
‘‘অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদবাহক এবং ভয় প্রদর্শনকারীরূপে নবীগণকে প্রেরণ করলেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২১৩)
فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ
‘‘অতঃপর আল্লাহ সুসংবাদবাহক এবং ভয় প্রদর্শনকারীরূপে নবীগণকে প্রেরণ করলেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২১৩)
উত্তরঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। এ ব্যাপারে অসংখ্য দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত’’। (সূরা আহযাবঃ ৪০) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( وَإِنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي كَذَّابُونَ ثَلَاثُونَ كُلُّهُمْ يَدَّعِيُْ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي )
‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে আমার পরে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনা’’। [- আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা আলী (রাঃ)কে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
( أَلاَ تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لَيْسَ نَبِيٌّ بَعْدِي )
‘‘তুমি কি এ কথা শুনে খুশী হবে না যে, আমার নিকট তোমার মর্যাদা সেরূপ যেরূপ ছিল মুসার নিকট হারুন (আঃ)এর মর্যাদা। তবে আমার পর আর কোন নবী আসবে না’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাগাযী, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়েলুস্ সাহাবা।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي )
‘‘আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবে না’’। [- আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।] এ ধরণের আরো হাদীছ রয়েছে।
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত’’। (সূরা আহযাবঃ ৪০) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( وَإِنَّهُ سَيَكُونُ بَعْدِي كَذَّابُونَ ثَلَاثُونَ كُلُّهُمْ يَدَّعِيُْ أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي )
‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে আমার পরে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনা’’। [- আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা আলী (রাঃ)কে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
( أَلاَ تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لَيْسَ نَبِيٌّ بَعْدِي )
‘‘তুমি কি এ কথা শুনে খুশী হবে না যে, আমার নিকট তোমার মর্যাদা সেরূপ যেরূপ ছিল মুসার নিকট হারুন (আঃ)এর মর্যাদা। তবে আমার পর আর কোন নবী আসবে না’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাগাযী, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়েলুস্ সাহাবা।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي )
‘‘আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবে না’’। [- আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬।] এ ধরণের আরো হাদীছ রয়েছে।
১০১
প্রশ্নঃ (৯৯) অন্যান্য নবীর তুলনায় আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বৈশিষ্ট কী?উত্তরঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক বৈশিষ্ট রয়েছে। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করা হয়েছে। তাঁর বৈশিষ্ট হচ্ছে, তিনি সর্বশেষ নবী। যেমন আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি।
তিনি সমস্ত আদম সন্তানের সর্দার। নিম্নের আয়াতের তাফসীরে এ কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ
‘‘এই সকল রাসূল-আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে আল্লাহ কারো সাথে কথা বলেছেন এবং কাউকে পদ মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ وَلاَ فَخْرَ )
‘‘আমি আদম সন্তানের নেতা। তবে এটি কোন অহংকারের কথা নয়’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর, হাদীছ নং- ৩১৪৮। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুশ শাফাআহ, হাদীছ নং- ৪৩৬৩। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি সহীহ।]
আমাদের নবীর অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে, তিনি সমস্ত মানব জাতি ও জিন জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
‘‘হে নবী! আপনি বলুনঃ আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ্ প্রেরিত রাসূল’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৫৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا
‘‘আমি আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি’’। (সূরা সাবাঃ ২৮) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
( أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا فَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْمَغَانِمُ وَلَمْ تَحِلَّ لأَحَدٍ قَبْلِي وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً )
‘‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিষ প্রদান করা হয়েছে, যা পূর্বের কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (১) এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে ভয়ের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (২) যমীনের মাটি আমার জন্য পবিত্র এবং মসজিদ স্বরূপ করা হয়েছে। অতএব আমার উম্মতের কোন ব্যক্তির নিকট যদি নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তবে সে যেন উহা আদায় করে নেয়। (৩) আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করা হয়েছে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি। (৪) আমাকে শাফাআ’তের অধিকার দেয়া হয়েছে। (৫) আমার পূর্বেকার নবীগণ প্রেরিত হতেন তাদের গোত্রের লোকদের নিকট। আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানব জাতির জন্যে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ )
‘‘ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, এই উম্মাতের যে কোন ব্যক্তি আমার ব্যাপারে শুনবে, চাই সে ইহুদী হোক বা নাসারা হোক, অতঃপর সে যদি আমার নিয়ে আসা বিষয়ের প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যু বরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] উপরোক্ত বিষয়গুলো ব্যতীত নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরো অনেক বৈশিষ্ট রয়েছে।
তিনি সমস্ত আদম সন্তানের সর্দার। নিম্নের আয়াতের তাফসীরে এ কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ
‘‘এই সকল রাসূল-আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে আল্লাহ কারো সাথে কথা বলেছেন এবং কাউকে পদ মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ وَلاَ فَخْرَ )
‘‘আমি আদম সন্তানের নেতা। তবে এটি কোন অহংকারের কথা নয়’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর, হাদীছ নং- ৩১৪৮। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুশ শাফাআহ, হাদীছ নং- ৪৩৬৩। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি সহীহ।]
আমাদের নবীর অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে, তিনি সমস্ত মানব জাতি ও জিন জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
‘‘হে নবী! আপনি বলুনঃ আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ্ প্রেরিত রাসূল’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৫৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا
‘‘আমি আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি’’। (সূরা সাবাঃ ২৮) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
( أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا فَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْمَغَانِمُ وَلَمْ تَحِلَّ لأَحَدٍ قَبْلِي وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً )
‘‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিষ প্রদান করা হয়েছে, যা পূর্বের কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (১) এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে ভয়ের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (২) যমীনের মাটি আমার জন্য পবিত্র এবং মসজিদ স্বরূপ করা হয়েছে। অতএব আমার উম্মতের কোন ব্যক্তির নিকট যদি নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তবে সে যেন উহা আদায় করে নেয়। (৩) আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করা হয়েছে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি। (৪) আমাকে শাফাআ’তের অধিকার দেয়া হয়েছে। (৫) আমার পূর্বেকার নবীগণ প্রেরিত হতেন তাদের গোত্রের লোকদের নিকট। আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানব জাতির জন্যে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ )
‘‘ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, এই উম্মাতের যে কোন ব্যক্তি আমার ব্যাপারে শুনবে, চাই সে ইহুদী হোক বা নাসারা হোক, অতঃপর সে যদি আমার নিয়ে আসা বিষয়ের প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যু বরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] উপরোক্ত বিষয়গুলো ব্যতীত নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরো অনেক বৈশিষ্ট রয়েছে।
উত্তরঃ প্রচলিত সাধারণ বিষয়ের পরিপন্থী এমন অলৌকিক বিষয়ের নাম মু’জিযা, যাতে চ্যালেঞ্জ করা উদ্দেশ্য হয় এবং যেই চ্যালেঞ্জের মুকাবেলা করতে মানব জাতি সম্পূর্ণ অক্ষম।
মু’জিযা কখনও প্রকাশ্য হয়, যা চোখ দিয়ে দেখা যায় অথবা কান দিয়ে শুনা যায়। যেমন পাথরের ভিতর থেকে উটনী বের হয়ে আসা, লাঠি সাপে পরিণত হওয়া এবং জড়পদার্থের কথা বলা ইত্যাদি।
আবার কখনও তা অপ্রকাশ্য হয়ে থাকে, যা বিবেক-বুদ্ধি ও অন্তর দৃষ্টির মাধ্যমে অনুভব করা যায়। যেমন কুরআনের মু’জিযা।
আমাদের নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উভয় প্রকার মু’জিযা প্রদান করা হয়েছে। যে মু’জিযা অন্য নবীদের দেয়া হয়েছে, ঐ ধরণের আরো বড় মু’জিযা আমাদের নবীকে প্রদান করা হয়েছে। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর প্রকাশ্য মু’জিযাসমূহের মধ্যে অন্যতম মু’জিযা হচ্ছেঃ চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করা, মৃত খেজুর গাছের কাঠের ক্রন্দন, তাঁর পবিত্র আঙ্গুলের মধ্যে হতে পানি বের হওয়া, বিষ মিশ্রিত গোশতের কথা বলা, খাদ্যের তাসবীহ পাঠ ইত্যাদি। মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত এমনি আরো অনেক মু’জিযা রয়েছে; কিন্তু তা অন্যান্য নবীদের মু’জিযার মতই তাদের যুগ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। তবে সেগুলোর আলোচনা অবশিষ্ট রয়ে গেছে।
আর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর যে মু’জিযাটি কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে, সেটি হচ্ছে কুরআন মজীদ, যার বিস্মিয়কর বিষয়গুলো শেষ হবে না এবং কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না, অগ্র হতেও নয়, পশ্চাৎ হতেও নয়। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসনীয় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ’’।
মু’জিযা কখনও প্রকাশ্য হয়, যা চোখ দিয়ে দেখা যায় অথবা কান দিয়ে শুনা যায়। যেমন পাথরের ভিতর থেকে উটনী বের হয়ে আসা, লাঠি সাপে পরিণত হওয়া এবং জড়পদার্থের কথা বলা ইত্যাদি।
আবার কখনও তা অপ্রকাশ্য হয়ে থাকে, যা বিবেক-বুদ্ধি ও অন্তর দৃষ্টির মাধ্যমে অনুভব করা যায়। যেমন কুরআনের মু’জিযা।
আমাদের নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উভয় প্রকার মু’জিযা প্রদান করা হয়েছে। যে মু’জিযা অন্য নবীদের দেয়া হয়েছে, ঐ ধরণের আরো বড় মু’জিযা আমাদের নবীকে প্রদান করা হয়েছে। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর প্রকাশ্য মু’জিযাসমূহের মধ্যে অন্যতম মু’জিযা হচ্ছেঃ চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করা, মৃত খেজুর গাছের কাঠের ক্রন্দন, তাঁর পবিত্র আঙ্গুলের মধ্যে হতে পানি বের হওয়া, বিষ মিশ্রিত গোশতের কথা বলা, খাদ্যের তাসবীহ পাঠ ইত্যাদি। মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত এমনি আরো অনেক মু’জিযা রয়েছে; কিন্তু তা অন্যান্য নবীদের মু’জিযার মতই তাদের যুগ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। তবে সেগুলোর আলোচনা অবশিষ্ট রয়ে গেছে।
আর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর যে মু’জিযাটি কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে, সেটি হচ্ছে কুরআন মজীদ, যার বিস্মিয়কর বিষয়গুলো শেষ হবে না এবং কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না, অগ্র হতেও নয়, পশ্চাৎ হতেও নয়। এটা প্রজ্ঞাবান ও প্রশংসনীয় আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ’’।
উত্তরঃ কুরআন যে একটি চিরন্তন মু’জিযা তার দলীল এই যে, তা দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাযিল হচ্ছিল এবং মানব জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ট সাহিত্যিক, যুক্তি-তর্কে পারদর্শী, সর্বশ্রেষ্ট অলঙ্কার শাস্ত্রবিদ এবং উচ্চাঙ্গের ভাষণ প্রদানে পারদর্শীদেরকে চ্যালেঞ্জ করে আসছিল। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ
‘‘যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবে তারা কুরআনের মত একটি বাণী তৈরী করে নিয়ে আসুক’’। (সূরা তুরঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنْ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ
‘‘তারা কি বলেঃ ওটা (কুরআন) সে এই নিজেই তৈরী করেছে? আপনি চ্যালেঞ্জ করে দিন যে, তাহলে কুরআনের ন্যায় দশটি সূরা তৈরী করে আন এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’’। (সূরা হুদঃ ১৩) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنْ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِين
‘‘তারা কি এরূপ বলে যে, ওটা (কুরআন) সে এই নিজেই তৈরী করেছে? আপনি বলে দিন যে, তোমরা এর অনুরূপ সূরার একটি সূরা তৈরী করে আন এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’’। (সূরা ইউনুসঃ ৩৮) তারা কুরআনের মত একটি আয়াতও রচনা করে আনতে পারে নি। আনতে চেষ্টাও করে নি। অথচ কুরআনের মুকাবিলা করার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রচেষ্টাই চালিয়েছে। কুরআনের অক্ষরসমূহ ও শব্দসমূহ তাদের ঐ ভাষার অন্তর্ভূক্ত ছিল যার মাধ্যমে তারা পরস্পর কথা বলত, যাতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করত এবং পরস্পর গর্ব করত। শুধু তাই নয়, কুরআন বলিষ্ঠ ভাষায় তাদের অপরাগতার কথা ঘোষণাও করেছে এবং নিজের মু’জিযা প্রকাশ করেছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا
‘‘হে নবী আপনি ঘোষণা করে দিনঃ যদি মানব ও জিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না’’। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৮৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ قَدْ أُعْطِيَ مِنَ الآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَى اللَّهُ إِلَيَّ فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ )
‘‘যত নবী এসেছেন তাদের প্রত্যেককেই এমন কিছু নিদর্শন দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষেরা ঈমান আনয়ন করেছে। আর আমাকে যে মু’জিযা দেয়া হয়েছে তা হচেছ কুরআন, যা অহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমার নিকট প্রেরণ করেছেন। আমার আশা কিয়ামতের দিন আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে সবচেয়ে বেশী’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়েলুল কুরআন।]
আলেমগণ ঈজাযুল কুরআন তথা কুরআননের মুজেযার বিভিন্ন দিক নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। কুরআনের মু’জিযার দিকগুলো হচ্ছেঃ
(১) কুরআনের শব্দগুচ্ছ ঠিক সেভাবেই সাজানো, যেভাবে হারের মধ্যে মণি-মুক্তা সাজানো হয়। এমন সুন্দর শব্দের সমাহার পৃথিবীর কোন গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যাবে না।
(২) অর্থের দিক থেকেও কুরআন একটি চিরন্তন মু’জিযা। কুরআনের অর্থের মধ্যে কোন প্রকার বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নেই। যা মানব রচিত গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যায়। কুরআনের তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল। মানব রচিত কোন গ্রন্থই ভুলের উর্ধে নয়।
(৩) অতীতের খবরাদি বর্ণনার ক্ষেত্রেও কুরআনের তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল। যা কোন মানুষের দ্বারা রচনা করা সম্ভব নয়।
(৪) কুরআন ভবিষ্যতের যেসমস্ত সংবাদ পরিবেশন করেছে তার অধিকাংশই হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে। যেটুকু বাস্তবে পরিণত হয়নি, তা অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। তবে আলেমগণ কুরআনের মুজেযা শুধু তত টুকুই বর্ণনা করতে পেরেছে, একটি চড়ুই বিশাল সমুদ্র থেকে, ঠোট দিয়ে যতটুকু পানি সংগ্রহ করতে পারে।
فَلْيَأْتُوا بِحَدِيثٍ مِثْلِهِ إِنْ كَانُوا صَادِقِينَ
‘‘যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবে তারা কুরআনের মত একটি বাণী তৈরী করে নিয়ে আসুক’’। (সূরা তুরঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنْ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنتُمْ صَادِقِينَ
‘‘তারা কি বলেঃ ওটা (কুরআন) সে এই নিজেই তৈরী করেছে? আপনি চ্যালেঞ্জ করে দিন যে, তাহলে কুরআনের ন্যায় দশটি সূরা তৈরী করে আন এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’’। (সূরা হুদঃ ১৩) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنْ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِين
‘‘তারা কি এরূপ বলে যে, ওটা (কুরআন) সে এই নিজেই তৈরী করেছে? আপনি বলে দিন যে, তোমরা এর অনুরূপ সূরার একটি সূরা তৈরী করে আন এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও। যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক’’। (সূরা ইউনুসঃ ৩৮) তারা কুরআনের মত একটি আয়াতও রচনা করে আনতে পারে নি। আনতে চেষ্টাও করে নি। অথচ কুরআনের মুকাবিলা করার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রচেষ্টাই চালিয়েছে। কুরআনের অক্ষরসমূহ ও শব্দসমূহ তাদের ঐ ভাষার অন্তর্ভূক্ত ছিল যার মাধ্যমে তারা পরস্পর কথা বলত, যাতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করত এবং পরস্পর গর্ব করত। শুধু তাই নয়, কুরআন বলিষ্ঠ ভাষায় তাদের অপরাগতার কথা ঘোষণাও করেছে এবং নিজের মু’জিযা প্রকাশ করেছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
قُلْ لَئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنْسُ وَالْجِنُّ عَلَى أَنْ يَأْتُوا بِمِثْلِ هَذَا الْقُرْآنِ لاَ يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا
‘‘হে নবী আপনি ঘোষণা করে দিনঃ যদি মানব ও জিন এই কুরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্য জড়ো হয় এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না’’। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৮৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَا مِنَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ قَدْ أُعْطِيَ مِنَ الآيَاتِ مَا مِثْلُهُ آمَنَ عَلَيْهِ الْبَشَرُ وَإِنَّمَا كَانَ الَّذِي أُوتِيتُ وَحْيًا أَوْحَى اللَّهُ إِلَيَّ فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَكْثَرَهُمْ تَابِعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ )
‘‘যত নবী এসেছেন তাদের প্রত্যেককেই এমন কিছু নিদর্শন দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষেরা ঈমান আনয়ন করেছে। আর আমাকে যে মু’জিযা দেয়া হয়েছে তা হচেছ কুরআন, যা অহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ আমার নিকট প্রেরণ করেছেন। আমার আশা কিয়ামতের দিন আমার অনুসারীর সংখ্যা হবে সবচেয়ে বেশী’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়েলুল কুরআন।]
আলেমগণ ঈজাযুল কুরআন তথা কুরআননের মুজেযার বিভিন্ন দিক নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। কুরআনের মু’জিযার দিকগুলো হচ্ছেঃ
(১) কুরআনের শব্দগুচ্ছ ঠিক সেভাবেই সাজানো, যেভাবে হারের মধ্যে মণি-মুক্তা সাজানো হয়। এমন সুন্দর শব্দের সমাহার পৃথিবীর কোন গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যাবে না।
(২) অর্থের দিক থেকেও কুরআন একটি চিরন্তন মু’জিযা। কুরআনের অর্থের মধ্যে কোন প্রকার বিরোধ ও দ্বন্দ্ব নেই। যা মানব রচিত গ্রন্থের মধ্যে পাওয়া যায়। কুরআনের তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল। মানব রচিত কোন গ্রন্থই ভুলের উর্ধে নয়।
(৩) অতীতের খবরাদি বর্ণনার ক্ষেত্রেও কুরআনের তথ্য সম্পূর্ণ নির্ভুল। যা কোন মানুষের দ্বারা রচনা করা সম্ভব নয়।
(৪) কুরআন ভবিষ্যতের যেসমস্ত সংবাদ পরিবেশন করেছে তার অধিকাংশই হুবহু বাস্তবায়িত হয়েছে। যেটুকু বাস্তবে পরিণত হয়নি, তা অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। তবে আলেমগণ কুরআনের মুজেযা শুধু তত টুকুই বর্ণনা করতে পেরেছে, একটি চড়ুই বিশাল সমুদ্র থেকে, ঠোট দিয়ে যতটুকু পানি সংগ্রহ করতে পারে।
উত্তরঃ পরকালের প্রতি ঈমান আনয়নের যথেষ্ট দলীল রয়েছে।
(১) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ لاَ يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ * أُولَئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
‘‘নিশ্চয়ই যেসব লোক আমার সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করেছে এবং যারা আমার নিদর্শন সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা ঐ সমস্ত লোক যাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, সে কাজের বিনিময়ে তারা যা অর্জন করেছিল। (সূরা ইউনুসঃ ৭-৮) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَصَادِقٌ * وَإِنَّ الدِّينَ لَوَاقِعٌ
‘‘তোমাদের সাথে যে বিষয়ের ওয়াদা করা হচ্ছে, তা সত্য। প্রতিদান দিবস অবশ্যই সংঘটিত হবে’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৫-৬) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لاَ رَيْبَ فِيهَا
‘‘কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই’’। (সূরা গাফেরঃ ৫৯) এবিষয়ে আরো আয়াত রয়েছে।
(১) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ لاَ يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ * أُولَئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
‘‘নিশ্চয়ই যেসব লোক আমার সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে না এবং পার্থিব জীবন নিয়েই উৎফুল্ল রয়েছে, তাতেই প্রশান্তি অনুভব করেছে এবং যারা আমার নিদর্শন সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা ঐ সমস্ত লোক যাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, সে কাজের বিনিময়ে তারা যা অর্জন করেছিল। (সূরা ইউনুসঃ ৭-৮) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَصَادِقٌ * وَإِنَّ الدِّينَ لَوَاقِعٌ
‘‘তোমাদের সাথে যে বিষয়ের ওয়াদা করা হচ্ছে, তা সত্য। প্রতিদান দিবস অবশ্যই সংঘটিত হবে’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৫-৬) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لاَ رَيْبَ فِيهَا
‘‘কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই’’। (সূরা গাফেরঃ ৫৯) এবিষয়ে আরো আয়াত রয়েছে।
১০৫
প্রশ্নঃ (১০৩) আখেরাতের প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ কি? কি কি বিষয়ে আখেরাতের প্রতি ঈমান আনয়নের অন্তর্ভূক্ত হবে?উত্তরঃ আখেরাতের প্রতি ঈমান আনয়নের অর্থ হচ্ছে, সেই দিনের আগমণের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সে বিশ্বাস অনুযায়ী আমল করা। আখেরাতের প্রতি ঈমান আনয়নের মধ্যে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলাও অন্তর্ভূক্ত হবে। যেমন কিয়ামতের পূর্বে যে সমস্ত আলামত প্রকাশিত হবে, তার প্রতি বিশ্বাস, মৃত্যু ও মৃত্যুর পর কবরের ফিতনা, কবরের আযাব ও কবরের নিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস, শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া, কবর থেকে মানুষের পুনরুত্থান, কিয়ামতের মাঠের ভয়ানক ও ভীতিকর পরিস্থিতি, হাশরের মাঠের বিভিন্ন অবস্থা যেমন আমলনামা প্রদান, দাড়িপাল্লা স্থাপন, পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলের পার হওয়া, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর হাওযে কাউছার, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর শাফাআতে কুবরা, জান্নাত ও তার নেয়ামত, যার সর্বোচ্চ নেয়ামত হচ্ছে আল্লাহ্ তা’আলার দীদার এবং জাহান্নাম ও তার আযাব, যার সবচেয়ে কঠিন আযাব হচ্ছে আল্লাহর দীদার হতে মাহরুম হওয়া, ইত্যাদির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
উত্তরঃ কিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এ বিষয়টি ইলমুল গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয়ের অন্তর্গত। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অসংখ্য দলীল রয়েছে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ
‘‘কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। গর্ভাশয়ে যা থাকে, তা তিনিই জানেন। কেউ জানে না, সে আগামীকাল কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না যে, সে কোন্ দেশে মৃত্যু বরণ করবে’’। (সূরা লুকমানঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَسْأَلُونَكَ عَنْ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কিয়ামত কখন প্রতিষ্ঠিত হবে? আপনি বলে দিন যে, এই বিষয়ে আমার প্রতিপালকই জ্ঞানের অধিকারী। শুধু তিনিই কিয়ামতকে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করবেন। আকাশ রাজ্যে ও পৃথিবীতে তা হবে একটি ভয়াবহ ঘটনা। তোমাদের উপর তা হঠাৎ করেই চলে আসবে। এমনভাবে ওরা আপনাকে প্রশ্ন করছে আপনি যেন এ বিষয়ে সবিশেষ অবগত। (অর্থাৎ তারা এটা মনে করে আপনাকে প্রশ্ন করছে যে, আপনি কিয়ামতের সময় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন। অথচ এ বিষয়ে আপনার কোন জ্ঞান নেই) আপনি বলে দিন যে, এ সম্পর্কে জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা।’’ (সূরা আ’রাফঃ ১৮৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
يَسْأَلُكَ النَّاسُ عَنْ السَّاعَةِ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا
‘‘লোকেরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুনঃ এর জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই। আপনি এটা কি করে জানবেন যে, সম্ভবত কিয়ামত শীঘ্রই হয়ে যেতে পারে!’’। (সূরা আহযাবঃ ৬৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
يَسْأَلُونَكَ عَنْ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا إِلَى رَبِّكَ مُنتَهَاهَا
‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত সম্পর্কে যে, ওটা কখন ঘটবে? এর আলোচনার সাথে আপনার সম্পর্ক কি? (সূরা নাযিআ’তঃ ৪২-৪৪) এর চুড়ান্ত জ্ঞান আছে আপনার প্রতিপালকের নিকটেই’’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিবরাঈল (আঃ) যখন প্রশ্ন করলেনঃ কিয়ামত কখন হবে? তিনি উত্তর দিলেনঃ
( مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ )
‘‘এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারী অপেক্ষা বেশী অবগত নয়’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] তবে তিনি কিয়ামতের কিছু আলামত বলে দিয়েছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের জ্ঞান ঐ পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না। [- বুখারী শরীফের একটি দীর্ঘ হাদীছের অংশ বিশেষ। যা তিনি কিতাবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন।] অতঃপর তিনি সূরা লুকমানের উক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন।
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জানতেন না, জিবরীল (আঃ)ও নয়, এমন কি যেই ফেরেশতা শিঙ্গা মুখে নিয়ে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় আছেন তিনিও কিয়ামতের সময় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ
‘‘কিয়ামতের জ্ঞান শুধু আল্লাহর নিকট রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। গর্ভাশয়ে যা থাকে, তা তিনিই জানেন। কেউ জানে না, সে আগামীকাল কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না যে, সে কোন্ দেশে মৃত্যু বরণ করবে’’। (সূরা লুকমানঃ ৩৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَسْأَلُونَكَ عَنْ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কিয়ামত কখন প্রতিষ্ঠিত হবে? আপনি বলে দিন যে, এই বিষয়ে আমার প্রতিপালকই জ্ঞানের অধিকারী। শুধু তিনিই কিয়ামতকে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করবেন। আকাশ রাজ্যে ও পৃথিবীতে তা হবে একটি ভয়াবহ ঘটনা। তোমাদের উপর তা হঠাৎ করেই চলে আসবে। এমনভাবে ওরা আপনাকে প্রশ্ন করছে আপনি যেন এ বিষয়ে সবিশেষ অবগত। (অর্থাৎ তারা এটা মনে করে আপনাকে প্রশ্ন করছে যে, আপনি কিয়ামতের সময় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন। অথচ এ বিষয়ে আপনার কোন জ্ঞান নেই) আপনি বলে দিন যে, এ সম্পর্কে জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখেনা।’’ (সূরা আ’রাফঃ ১৮৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
يَسْأَلُكَ النَّاسُ عَنْ السَّاعَةِ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُونُ قَرِيبًا
‘‘লোকেরা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলুনঃ এর জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছেই। আপনি এটা কি করে জানবেন যে, সম্ভবত কিয়ামত শীঘ্রই হয়ে যেতে পারে!’’। (সূরা আহযাবঃ ৬৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
يَسْأَلُونَكَ عَنْ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا فِيمَ أَنْتَ مِنْ ذِكْرَاهَا إِلَى رَبِّكَ مُنتَهَاهَا
‘‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত সম্পর্কে যে, ওটা কখন ঘটবে? এর আলোচনার সাথে আপনার সম্পর্ক কি? (সূরা নাযিআ’তঃ ৪২-৪৪) এর চুড়ান্ত জ্ঞান আছে আপনার প্রতিপালকের নিকটেই’’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিবরাঈল (আঃ) যখন প্রশ্ন করলেনঃ কিয়ামত কখন হবে? তিনি উত্তর দিলেনঃ
( مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ )
‘‘এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারী অপেক্ষা বেশী অবগত নয়’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] তবে তিনি কিয়ামতের কিছু আলামত বলে দিয়েছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের জ্ঞান ঐ পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত, যা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না। [- বুখারী শরীফের একটি দীর্ঘ হাদীছের অংশ বিশেষ। যা তিনি কিতাবুল ঈমানে বর্ণনা করেছেন।] অতঃপর তিনি সূরা লুকমানের উক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন।
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জানতেন না, জিবরীল (আঃ)ও নয়, এমন কি যেই ফেরেশতা শিঙ্গা মুখে নিয়ে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় আছেন তিনিও কিয়ামতের সময় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
উত্তরঃ নিম্নে কিয়ামতের আলামতের কতিপয় দৃষ্টান্ত পেশ করা হলঃ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمْ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلْ انتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
‘‘তারা শুধু এ বিষয়ের দিকে চেয়ে আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমণ করবে কিংবা আপনার পালনকর্তা আগমণ করবেন। অথবা আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে। যে দিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন এসে যাবে তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি। হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমরা অপেক্ষা করতে থাক। আমরাও অপেক্ষা করতে থাকলাম’’। (সূরা আন’আমঃ ১৫৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِنْ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ
‘‘যখন প্রতিশ্রুতি (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবেঃ এ বিষয়ে যে, মানুষ আমার নিদর্শন সমূহে বিশ্বাস করতোনা’’। (সূরা নামলঃ ৮২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَإِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ أَبْصَارُ الَّذِينَ كَفَرُوا يَاوَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِين
‘‘এমন কি যখন ইয়াজুয ও মা’জুযকে মুক্ত করা হবে তখন তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে দলে দলে ছুটে আসবে। যখন সত্য প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী হবে তখন কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবেঃ হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এবিষয়ে উদাসীন; বরং আমরা ছিলাম জালেম’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ৯৬-৯৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ
‘‘অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেই দিনের যেদিন আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে। (সূরা দুখানঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
‘‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার’’। (সূরা হজ্জঃ ১)
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَنْ تَأْتِيَهُمْ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا قُلْ انتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
‘‘তারা শুধু এ বিষয়ের দিকে চেয়ে আছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আগমণ করবে কিংবা আপনার পালনকর্তা আগমণ করবেন। অথবা আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে। যে দিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন এসে যাবে তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে ঈমান আনয়ন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি। হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমরা অপেক্ষা করতে থাক। আমরাও অপেক্ষা করতে থাকলাম’’। (সূরা আন’আমঃ ১৫৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِنْ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ
‘‘যখন প্রতিশ্রুতি (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবেঃ এ বিষয়ে যে, মানুষ আমার নিদর্শন সমূহে বিশ্বাস করতোনা’’। (সূরা নামলঃ ৮২) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَإِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ أَبْصَارُ الَّذِينَ كَفَرُوا يَاوَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِين
‘‘এমন কি যখন ইয়াজুয ও মা’জুযকে মুক্ত করা হবে তখন তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে দলে দলে ছুটে আসবে। যখন সত্য প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী হবে তখন কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবেঃ হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এবিষয়ে উদাসীন; বরং আমরা ছিলাম জালেম’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ৯৬-৯৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ
‘‘অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেই দিনের যেদিন আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে। (সূরা দুখানঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
‘‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার’’। (সূরা হজ্জঃ ১)
উত্তরঃ হাদীছে কিয়ামতের অনেক আলামত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে আমরা এমন কয়েকটি হাদীছ বর্ণনা করব যাতে কিয়ামতের বড় বড় আলামতের উল্লেখ আছে।
(১) পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়ঃ এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَإِذَا طَلَعَتْ وَرَآهَا النَّاسُ يَعْنِي آمَنُوا أَجْمَعُونَ فَذَلِكَ حِينَ ( لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا )
‘‘যতদিন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবেনা ততদিন কিয়ামত হবেনা। যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখতে পাবে তখন সকলেই ঈমান আনবে। তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]
(২) দাববাতুল আর্যঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ فَتَسِمُ النَّاسَ عَلَى خَرَاطِيمِهِمْ ثُمَّ يَغْمُرُونَ فِيكُمْ حَتَّى يَشْتَرِيَ الرَّجُلُ الْبَعِيرَ فَيَقُولُ مِمَّنِ اشْتَرَيْتَهُ فَيَقُولُ اشْتَرَيْتُهُ مِنْ أَحَدِ الْمُخَطَّمِينَ
‘‘দাববাতুল আরদ্ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। অতঃপর মানুষেরা তোমাদের মধ্যে জীবন যাপন করবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছো? সে বলবেঃ আমি এটি নাকে দাগ ওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করেছি’’। [- মুসনাদে আহমাদ। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৩২২।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ مَعَهَا عَصَا مُوسَى وَخَاتَمُ سُلَيْمَانَ فَتَجْلُو وَجْهَ الْمُؤْمِنِ بِالْعَصَا وَتَخْتِمُ أَنْفَ الْكَافِرِ بِالْخَاتَمِ حَتَّى إِنَّ أَهْلَ الْخِوَانِ لَيَجْتَمِعُونَ فَيَقُولُ هَذَا يَا مُؤْمِنُ وَيَقُولُ هَذَا يَا كَافِرُ
‘‘দাববাতুল আরদ্ বের হবে। তার সাথে থাকবে মূসা (আঃ)এর লাঠি এবং সুলায়মান (আঃ)এর আংটি। কাফেরের নাকে সুলায়মান (আঃ)এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে এবং মূসা (আঃ)এর লাঠি দিয়ে মু’মিনের চেহারাকে উজ্জল করে দিবে। লোকেরা খানার টেবিল ও দস্তরখানায় বসেও একে অপরকে বলবেঃ হে মু’মিন! হে কাফের! [- মুসনাদে ইমাম আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন, হাদীছ নং- ৭৯২৪।]
(৩) দাজ্জালের আগমণঃ দাজ্জাল সম্পর্কে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। অধিকাংশ হাদীছই বুখারী ও মুসলিম শরীফে রয়েছে। এখানে শুধু দু’টি হাদীছ উল্লেখ করব। ইবনে উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেনঃ
قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ্ অন্ধ নন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া।] হুযায়ফা বিন ইয়ামান হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
لَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا مَعَ الدَّجَّالِ مِنْهُ مَعَهُ نَهْرَانِ يَجْرِيَانِ أَحَدُهُمَا رَأْيَ الْعَيْنِ مَاءٌ أَبْيَضُ وَالْآخَرُ رَأْيَ الْعَيْنِ نَارٌ تَأَجَّجُ فَإِمَّا أَدْرَكَنَّ أَحَدٌ فَلْيَأْتِ النَّهْرَ الَّذِي يَرَاهُ نَارًا وَلْيُغَمِّضْ ثُمَّ لْيُطَأْطِئْ رَأْسَهُ فَيَشْرَبَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مَاءٌ بَارِدٌ وَإِنَّ الدَّجَّالَ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ عَلَيْهَا ظَفَرَةٌ غَلِيظَةٌ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ كَاتِبٍ وَغَيْرِ كَاتِبٍ
‘‘দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দু’টি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে ‘‘কাফের’’ লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
(৪) ফিতনা ও যুদ্ধবিগ্রহঃ এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتَنٌ أَلَا ثُمَّ تَكُونُ فِتْنَةٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِي فِيهَا وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي إِلَيْهَا أَلَا فَإِذَا نَزَلَتْ أَوْ وَقَعَتْ فَمَنْ كَانَ لَهُ إِبِلٌ فَلْيَلْحَقْ بِإِبِلِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ غَنَمٌ فَلْيَلْحَقْ بِغَنَمِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ أَرْضٌ فَلْيَلْحَقْ بِأَرْضِهِ قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ مَنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ إِبِلٌ وَلَا غَنَمٌ وَلَا أَرْضٌ قَالَ يَعْمِدُ إِلَى سَيْفِهِ فَيَدُقُّ عَلَى حَدِّهِ بِحَجَرٍ ثُمَّ لِيَنْجُ إِنِ اسْتَطَاعَ النَّجَاءَ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ أُكْرِهْتُ حَتَّى يُنْطَلَقَ بِي إِلَى أَحَدِ الصَّفَّيْنِ أَوْ إِحْدَى الْفِئَتَيْنِ فَضَرَبَنِي رَجُلٌ بِسَيْفِهِ أَوْ يَجِيءُ سَهْمٌ فَيَقْتُلُنِي قَالَ يَبُوءُ بِإِثْمِهِ وَإِثْمِكَ وَيَكُونُ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ )
‘‘অচিরেই বিভিন্ন রকম ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফিতনার সময় বসে থাকা ব্যক্তি ফিতনার দিকে পায়ে হেঁটে অগ্রসরমান ব্যক্তির চেয়ে এবং পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ ও উত্তম হবে। ফিতনা শুরু হয়ে গেলে যার উট থাকবে সে যেন উটের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং যার ছাগল আছে সে যেন ছাগলের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যার চাষাবাদের যমিন আছে, সে যেন চাষাবাদের কাজে ব্যস্ত থাকে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ হে আল্লাহর নবী! যার কোন কিছুই নেই সে কি করবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ পাথর দিয়ে তার তলোয়ারকে ভোঁতা করে ফেলে নিরস্ত্র হয়ে যাবে এবং ফিতনা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবে। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! কেউ যদি আমাকে জোর করে কোন দলে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে কারো তলোয়ার বা তীরের আঘাতে আমি নিহত হই তাহলে আমার অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ‘‘সে তার পাপ এবং তোমার পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামের অধিবাসী হবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
(৫) ঈসা (আঃ)এর আগমণঃ ঈসা (আঃ)এর আগমণের ব্যাপারে অস্যংখ্য সহীহ হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ )
‘‘ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক হিসেবে ঈসা (আঃ) তোমাদের মাঝে আগমণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া (কর) রহিত করবেন। ধন-সম্পদ প্রচুর হবে এবং তা নেয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈসা (আঃ)এর অবতরণ।]
(৬) ইয়াজযুজ-মাজুজের আগমণঃ বুখারী ও মুসলিম শরীফে যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعًا يَقُولُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ الْإِبْهَامِ وَالَّتِي تَلِيهَا قَالَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ جَحْشٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকটে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করলেন। তিনি বলছিলেনঃ ( لَا إلَهَ إلَا اللَّهُ )। আরবদের জন্য ধ্বংস! একটি অকল্যাণ তাদের অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আজ ইয়াজুয-মা’জুযের প্রাচীর এই পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এ কথা বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তার পার্শ্বের আঙ্গুল দিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখালেন। যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপ কাজ বেড়ে যাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আম্বিয়া।]
(৭) বিশাল একটি ধোঁয়ার আগমণঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ رََّبكُمْ أَنْذَرَكُمْ ثَلَاثًا : الدُّخَانَ يَأْخُذُ الْمُؤْمِنِ كَالزَّكَمَةِ وَيَأْخُذُ الْكَافِرَ فَيَنْتَفِخُ حَتَّى يَخْرُجُ مِنْ كُلِّ مَسْمَعٍ مِنْهُ وَالثَّانِيَةَ الدَّابَّةَ وَالثَّالِثَةَ الدَّجَّالَ
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন। (১) ধোঁয়া, যা মু’মিনকে কেবল এক প্রকার সর্দিতে আক্রান্ত করে দেবে এবং কাফেরের শরীরের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে বের হতে থাকবে। (২) দাববাতুল আরয্ তথা ভূগর্ভ থেকে নির্গত অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমণ। (৩) দাজ্জালের আগমণ। [- তাফসীরে তাবারী, ইবনে কাছীর।]
(৮) কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মু’মিনদের রূহ কবজঃ আখেরী যামানায় কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মু’মিনদের রূহ কবজ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ رِيحًا مِنَ الْيَمَنِ أَلْيَنَ مِنَ الْحَرِيرِ فَلَا تَدَعُ أَحَدًا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ إِلَّا قَبَضَتْهُ
‘‘আল্লাহ তা’আলা ইয়ামানের দিক থেকে রেশমের চেয়ে অধিক নরম একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। সেদিন যার অন্তরে অণু দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সেও এ বাতাসের কারণে মৃত্যু বরণ করবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
(৯) হেজায থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবেঃ কিয়ামতের পূর্বে হেজাযের (আরব উপদ্বীপের) যমিন থেকে বড় একটি আগুন বের হবে। এই আগুনের আলোতে সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানের উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الْحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الْإِبِلِ بِبُصْرَى
‘‘হেজাযের ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবেনা। উক্ত অগ্নির আলোতে বুসরায় অবস্থানরত উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
(১০) তিনটি বড় ধরণের ভূমিধ্বসঃ কিয়ামতের পূর্বে তিনটি স্থানে বিশাল আকারের ভূমিধ্বস হবে। এগুলো হবে কিয়ামতের বড় আলামতের অন্তর্ভূক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَمِنْهَا وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ : خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ )
‘‘দশটি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবেনা। তার মধ্যে থেকে তিনটি ভূমিধ্বসের কথা উল্লেখ করলেন। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ خَسْفٌ بِالْمَشْرِق وَ خَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَ خَسْفٌ بِجَزِيْرَةِ الْعَرَبِ قُلْتُ : يَا رَسٌولُ اللَّهُ ! أَ يُخْسَفُ بِالْاَرْضُ وَ فِيْهَا الصَالِحِيْنَ؟ قَالَ لَهاَ رَسُوْلُ اللَّهُ صلى الله عليه و سلم أَكْثَرَ أَهْلُهَا الخَبَثُ
‘‘আমি চলে যাওয়ার পর অচিরেই তিনটি স্থানে ভূমিধ্বস হবে। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! সৎ লোক বর্তমান থাকতেই কি উহাতে ভূমিধ্বস হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পৃথিবীর অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে পাপকাজে লিপ্ত হবে’’। [- ইমাম হায়ছামী বলেনঃ তাবারানী তাঁর আওসাতে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। ।]
(১) পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয়ঃ এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَإِذَا طَلَعَتْ وَرَآهَا النَّاسُ يَعْنِي آمَنُوا أَجْمَعُونَ فَذَلِكَ حِينَ ( لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا )
‘‘যতদিন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবেনা ততদিন কিয়ামত হবেনা। যখন পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখতে পাবে তখন সকলেই ঈমান আনবে। তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোন উপকারে আসবেনা যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি কিংবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোন সৎকাজ করেনি’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]
(২) দাববাতুল আর্যঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ فَتَسِمُ النَّاسَ عَلَى خَرَاطِيمِهِمْ ثُمَّ يَغْمُرُونَ فِيكُمْ حَتَّى يَشْتَرِيَ الرَّجُلُ الْبَعِيرَ فَيَقُولُ مِمَّنِ اشْتَرَيْتَهُ فَيَقُولُ اشْتَرَيْتُهُ مِنْ أَحَدِ الْمُخَطَّمِينَ
‘‘দাববাতুল আরদ্ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। অতঃপর মানুষেরা তোমাদের মধ্যে জীবন যাপন করবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছো? সে বলবেঃ আমি এটি নাকে দাগ ওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করেছি’’। [- মুসনাদে আহমাদ। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৩২২।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ مَعَهَا عَصَا مُوسَى وَخَاتَمُ سُلَيْمَانَ فَتَجْلُو وَجْهَ الْمُؤْمِنِ بِالْعَصَا وَتَخْتِمُ أَنْفَ الْكَافِرِ بِالْخَاتَمِ حَتَّى إِنَّ أَهْلَ الْخِوَانِ لَيَجْتَمِعُونَ فَيَقُولُ هَذَا يَا مُؤْمِنُ وَيَقُولُ هَذَا يَا كَافِرُ
‘‘দাববাতুল আরদ্ বের হবে। তার সাথে থাকবে মূসা (আঃ)এর লাঠি এবং সুলায়মান (আঃ)এর আংটি। কাফেরের নাকে সুলায়মান (আঃ)এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে এবং মূসা (আঃ)এর লাঠি দিয়ে মু’মিনের চেহারাকে উজ্জল করে দিবে। লোকেরা খানার টেবিল ও দস্তরখানায় বসেও একে অপরকে বলবেঃ হে মু’মিন! হে কাফের! [- মুসনাদে ইমাম আহমাদ। আহমাদ শাকের সহীহ বলেছেন, হাদীছ নং- ৭৯২৪।]
(৩) দাজ্জালের আগমণঃ দাজ্জাল সম্পর্কে হাদীছগুলো মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। অধিকাংশ হাদীছই বুখারী ও মুসলিম শরীফে রয়েছে। এখানে শুধু দু’টি হাদীছ উল্লেখ করব। ইবনে উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেনঃ
قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا وَقَدْ أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ وَلَكِنِّي سَأَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ إِنَّهُ أَعْوَرُ وَإِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ্ অন্ধ নন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া।] হুযায়ফা বিন ইয়ামান হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
لَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا مَعَ الدَّجَّالِ مِنْهُ مَعَهُ نَهْرَانِ يَجْرِيَانِ أَحَدُهُمَا رَأْيَ الْعَيْنِ مَاءٌ أَبْيَضُ وَالْآخَرُ رَأْيَ الْعَيْنِ نَارٌ تَأَجَّجُ فَإِمَّا أَدْرَكَنَّ أَحَدٌ فَلْيَأْتِ النَّهْرَ الَّذِي يَرَاهُ نَارًا وَلْيُغَمِّضْ ثُمَّ لْيُطَأْطِئْ رَأْسَهُ فَيَشْرَبَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مَاءٌ بَارِدٌ وَإِنَّ الدَّجَّالَ مَمْسُوحُ الْعَيْنِ عَلَيْهَا ظَفَرَةٌ غَلِيظَةٌ مَكْتُوبٌ بَيْنَ عَيْنَيْهِ كَافِرٌ يَقْرَؤُهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ كَاتِبٍ وَغَيْرِ كَاتِبٍ
‘‘দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দু’টি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে ‘‘কাফের’’ লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
(৪) ফিতনা ও যুদ্ধবিগ্রহঃ এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتَنٌ أَلَا ثُمَّ تَكُونُ فِتْنَةٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِي فِيهَا وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي إِلَيْهَا أَلَا فَإِذَا نَزَلَتْ أَوْ وَقَعَتْ فَمَنْ كَانَ لَهُ إِبِلٌ فَلْيَلْحَقْ بِإِبِلِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ غَنَمٌ فَلْيَلْحَقْ بِغَنَمِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ أَرْضٌ فَلْيَلْحَقْ بِأَرْضِهِ قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ مَنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ إِبِلٌ وَلَا غَنَمٌ وَلَا أَرْضٌ قَالَ يَعْمِدُ إِلَى سَيْفِهِ فَيَدُقُّ عَلَى حَدِّهِ بِحَجَرٍ ثُمَّ لِيَنْجُ إِنِ اسْتَطَاعَ النَّجَاءَ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ أُكْرِهْتُ حَتَّى يُنْطَلَقَ بِي إِلَى أَحَدِ الصَّفَّيْنِ أَوْ إِحْدَى الْفِئَتَيْنِ فَضَرَبَنِي رَجُلٌ بِسَيْفِهِ أَوْ يَجِيءُ سَهْمٌ فَيَقْتُلُنِي قَالَ يَبُوءُ بِإِثْمِهِ وَإِثْمِكَ وَيَكُونُ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ )
‘‘অচিরেই বিভিন্ন রকম ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফিতনার সময় বসে থাকা ব্যক্তি ফিতনার দিকে পায়ে হেঁটে অগ্রসরমান ব্যক্তির চেয়ে এবং পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ ও উত্তম হবে। ফিতনা শুরু হয়ে গেলে যার উট থাকবে সে যেন উটের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং যার ছাগল আছে সে যেন ছাগলের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যার চাষাবাদের যমিন আছে, সে যেন চাষাবাদের কাজে ব্যস্ত থাকে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ হে আল্লাহর নবী! যার কোন কিছুই নেই সে কি করবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ পাথর দিয়ে তার তলোয়ারকে ভোঁতা করে ফেলে নিরস্ত্র হয়ে যাবে এবং ফিতনা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবে। অতঃপর তিনি বলেনঃ হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ হে আল্লাহর রাসূল! কেউ যদি আমাকে জোর করে কোন দলে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে কারো তলোয়ার বা তীরের আঘাতে আমি নিহত হই তাহলে আমার অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ‘‘সে তার পাপ এবং তোমার পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামের অধিবাসী হবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
(৫) ঈসা (আঃ)এর আগমণঃ ঈসা (আঃ)এর আগমণের ব্যাপারে অস্যংখ্য সহীহ হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ )
‘‘ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক হিসেবে ঈসা (আঃ) তোমাদের মাঝে আগমণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া (কর) রহিত করবেন। ধন-সম্পদ প্রচুর হবে এবং তা নেয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈসা (আঃ)এর অবতরণ।]
(৬) ইয়াজযুজ-মাজুজের আগমণঃ বুখারী ও মুসলিম শরীফে যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعًا يَقُولُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ الْإِبْهَامِ وَالَّتِي تَلِيهَا قَالَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ جَحْشٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকটে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করলেন। তিনি বলছিলেনঃ ( لَا إلَهَ إلَا اللَّهُ )। আরবদের জন্য ধ্বংস! একটি অকল্যাণ তাদের অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আজ ইয়াজুয-মা’জুযের প্রাচীর এই পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এ কথা বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তার পার্শ্বের আঙ্গুল দিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখালেন। যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপ কাজ বেড়ে যাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আম্বিয়া।]
(৭) বিশাল একটি ধোঁয়ার আগমণঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ رََّبكُمْ أَنْذَرَكُمْ ثَلَاثًا : الدُّخَانَ يَأْخُذُ الْمُؤْمِنِ كَالزَّكَمَةِ وَيَأْخُذُ الْكَافِرَ فَيَنْتَفِخُ حَتَّى يَخْرُجُ مِنْ كُلِّ مَسْمَعٍ مِنْهُ وَالثَّانِيَةَ الدَّابَّةَ وَالثَّالِثَةَ الدَّجَّالَ
‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন। (১) ধোঁয়া, যা মু’মিনকে কেবল এক প্রকার সর্দিতে আক্রান্ত করে দেবে এবং কাফেরের শরীরের প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে প্রতিটি ছিদ্র দিয়ে বের হতে থাকবে। (২) দাববাতুল আরয্ তথা ভূগর্ভ থেকে নির্গত অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমণ। (৩) দাজ্জালের আগমণ। [- তাফসীরে তাবারী, ইবনে কাছীর।]
(৮) কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মু’মিনদের রূহ কবজঃ আখেরী যামানায় কোমল ও ঠান্ডা বাতাসের মাধ্যমে মু’মিনদের রূহ কবজ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ رِيحًا مِنَ الْيَمَنِ أَلْيَنَ مِنَ الْحَرِيرِ فَلَا تَدَعُ أَحَدًا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ إِلَّا قَبَضَتْهُ
‘‘আল্লাহ তা’আলা ইয়ামানের দিক থেকে রেশমের চেয়ে অধিক নরম একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। সেদিন যার অন্তরে অণু দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সেও এ বাতাসের কারণে মৃত্যু বরণ করবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
(৯) হেজায থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবেঃ কিয়ামতের পূর্বে হেজাযের (আরব উপদ্বীপের) যমিন থেকে বড় একটি আগুন বের হবে। এই আগুনের আলোতে সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানের উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الْحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الْإِبِلِ بِبُصْرَى
‘‘হেজাযের ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবেনা। উক্ত অগ্নির আলোতে বুসরায় অবস্থানরত উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।]
(১০) তিনটি বড় ধরণের ভূমিধ্বসঃ কিয়ামতের পূর্বে তিনটি স্থানে বিশাল আকারের ভূমিধ্বস হবে। এগুলো হবে কিয়ামতের বড় আলামতের অন্তর্ভূক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَمِنْهَا وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ : خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ )
‘‘দশটি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবেনা। তার মধ্যে থেকে তিনটি ভূমিধ্বসের কথা উল্লেখ করলেন। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
سَيَكُوْنُ بَعْدِىْ خَسْفٌ بِالْمَشْرِق وَ خَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَ خَسْفٌ بِجَزِيْرَةِ الْعَرَبِ قُلْتُ : يَا رَسٌولُ اللَّهُ ! أَ يُخْسَفُ بِالْاَرْضُ وَ فِيْهَا الصَالِحِيْنَ؟ قَالَ لَهاَ رَسُوْلُ اللَّهُ صلى الله عليه و سلم أَكْثَرَ أَهْلُهَا الخَبَثُ
‘‘আমি চলে যাওয়ার পর অচিরেই তিনটি স্থানে ভূমিধ্বস হবে। একটি হবে পূর্বাঞ্চলে, একটি হবে পশ্চিমাঞ্চলে এবং আরেকটি হবে আরব উপদ্বীপে। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! সৎ লোক বর্তমান থাকতেই কি উহাতে ভূমিধ্বস হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পৃথিবীর অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে পাপকাজে লিপ্ত হবে’’। [- ইমাম হায়ছামী বলেনঃ তাবারানী তাঁর আওসাতে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। ।]
উত্তরঃ মওত চির সত্য। এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ
‘‘হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে’’। (সূরা সিজদাহঃ ১১) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন উত্তম প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।’’ (সূরা আলইমরানঃ ১৮৫) আল্লাহ্ তাআ’লা তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ
‘‘নিশ্চয়ই আপনি মৃত্যু বরণ করবেন। তারাও মৃত্যু বরণ করবে’’। (সূরা যুমারঃ ৩০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِنْ مِتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ
‘‘আপনার পূর্বে আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করি নি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?’’ (সূরা আম্বীয়াঃ ৩৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
‘‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা (সত্তা) ব্যতীত’’। (সূরা আর্ রাহমানঃ ২৬-২৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلاَّ وَجْهَهُ
‘‘আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংস হবে’’। (সূরা কাসাসঃ ৮৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ
‘‘আপনি সেই চিরঞ্জীবের উপর ভরসা করুন, যার মৃত্যু নেই’’। (সূরা ফুরকানঃ৫৮)
মৃত্যুর উপর ঈমান আনয়নের ব্যাপারে হাদীছগুলো গণনা করে শেষ করা যাবে না। মৃত্যু একটি বাস্তব বিষয়। এটি কারো অজানা নয়। এতে কোন সন্দেহ নেই। এর বাস্তবতা হতে চক্ষু বন্ধ করে রাখা অহঙ্কার ছাড়া আর কি হতে পারে? আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাগণই কেবল মৃত্যু ও তার পরবর্তী বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসের দাবী অনুযায়ী আমল করে থাকে। আমরা বিশ্বাস করি, যে কেউ মৃত্যু বরণ করুক, চাই তার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হোক বা নিহত হোক বা অন্য যে কোন কারণে হোক না কেন, সেটিই ছিল তার নির্ধারিত মৃত্যুর সময়। নির্ধারিত সময়ের একটু আগেও হয়নি, পরেও নয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
كُلٌّ يَجْرِي لأَجَلٍ مُسَمًّى
‘‘প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চলমান’’। (সূরা রা’দঃ ২)
فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ
‘‘যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসবে, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছে যেতে পারবে আর না এগিয়ে আসতে পারবে’’। (সূরা আ’রাফঃ ৩৪)
قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ
‘‘হে নবী! আপনি বলুনঃ তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে’’। (সূরা সিজদাহঃ ১১) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন উত্তম প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।’’ (সূরা আলইমরানঃ ১৮৫) আল্লাহ্ তাআ’লা তাঁর নবীকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ
‘‘নিশ্চয়ই আপনি মৃত্যু বরণ করবেন। তারাও মৃত্যু বরণ করবে’’। (সূরা যুমারঃ ৩০) আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِنْ قَبْلِكَ الْخُلْدَ أَفَإِنْ مِتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ
‘‘আপনার পূর্বে আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করি নি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?’’ (সূরা আম্বীয়াঃ ৩৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
‘‘ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল। একমাত্র আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালনকর্তার চেহারা (সত্তা) ব্যতীত’’। (সূরা আর্ রাহমানঃ ২৬-২৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلاَّ وَجْهَهُ
‘‘আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংস হবে’’। (সূরা কাসাসঃ ৮৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ
‘‘আপনি সেই চিরঞ্জীবের উপর ভরসা করুন, যার মৃত্যু নেই’’। (সূরা ফুরকানঃ৫৮)
মৃত্যুর উপর ঈমান আনয়নের ব্যাপারে হাদীছগুলো গণনা করে শেষ করা যাবে না। মৃত্যু একটি বাস্তব বিষয়। এটি কারো অজানা নয়। এতে কোন সন্দেহ নেই। এর বাস্তবতা হতে চক্ষু বন্ধ করে রাখা অহঙ্কার ছাড়া আর কি হতে পারে? আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাগণই কেবল মৃত্যু ও তার পরবর্তী বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসের দাবী অনুযায়ী আমল করে থাকে। আমরা বিশ্বাস করি, যে কেউ মৃত্যু বরণ করুক, চাই তার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হোক বা নিহত হোক বা অন্য যে কোন কারণে হোক না কেন, সেটিই ছিল তার নির্ধারিত মৃত্যুর সময়। নির্ধারিত সময়ের একটু আগেও হয়নি, পরেও নয়। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
كُلٌّ يَجْرِي لأَجَلٍ مُسَمًّى
‘‘প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চলমান’’। (সূরা রা’দঃ ২)
فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ
‘‘যখন তাদের নির্দিষ্ট সময় চলে আসবে, তখন তারা না এক মুহূর্ত পিছে যেতে পারবে আর না এগিয়ে আসতে পারবে’’। (সূরা আ’রাফঃ ৩৪)
উত্তরঃ কবরের আযাব ও নেয়ামতের বিষয়ে কুরআনে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمْ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِي لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
‘‘যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করুন। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করি নি। কখনই নয়, এটি তো তার একটি কথা মাত্র। তাদের সামনে রয়েছে বারযাখ (একটি পর্দা) কিয়ামত দিবস পর্যন্ত’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৯৮-১০০) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَحَاقَ بِآلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
‘‘ফিরআউন সম্প্রদায়কে নিকৃষ্ট শাস্তি পরিবেষ্টন করল। সকাল-সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সামনে আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন বলা হবে ফিরআউন সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর’’। (সূরা গাফেরঃ ৪৫-৪৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ
‘‘যারা বিশ্বাসী তাদেরকে ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ্ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন মজবুত বাক্যের উপর’’। (সূরা ইবরাহীমঃ ২৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَلَوْ تَرَى إِذْ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُوا أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمْ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ
‘‘আপনি যদি জালিমদেরকে ঐ সময়ে দেখতে পেতেন যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফেরেশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবেনঃ তোমরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণ বের করে আন। তোমাদের আমলের কারণে আজ তোদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে। কারণ তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেছিলে এবং তোমরা তাঁর আয়াতের বিরুদ্ধে অহংকার করেছিলে’’। (সূরা আনআমঃ ৯৩) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ
‘‘আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দিব। অতঃপর তাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে কঠিন শাস্তির দিকে’’। (সূরা তাওবাঃ ১০১) এখানে একবার কবরের শাস্তি ও আর একবার কিয়ামতের শাস্তি উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও আরো আয়াত বিদ্যমান।
حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمْ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِي لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
‘‘যখন তাদের কারো কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করুন। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করি নি। কখনই নয়, এটি তো তার একটি কথা মাত্র। তাদের সামনে রয়েছে বারযাখ (একটি পর্দা) কিয়ামত দিবস পর্যন্ত’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৯৮-১০০) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَحَاقَ بِآلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ
‘‘ফিরআউন সম্প্রদায়কে নিকৃষ্ট শাস্তি পরিবেষ্টন করল। সকাল-সন্ধ্যায় তাদেরকে উপস্থিত করা হয় আগুনের সামনে আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন বলা হবে ফিরআউন সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর’’। (সূরা গাফেরঃ ৪৫-৪৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ
‘‘যারা বিশ্বাসী তাদেরকে ইহজীবনে ও পরজীবনে আল্লাহ্ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন মজবুত বাক্যের উপর’’। (সূরা ইবরাহীমঃ ২৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَلَوْ تَرَى إِذْ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُوا أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمْ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ
‘‘আপনি যদি জালিমদেরকে ঐ সময়ে দেখতে পেতেন যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফেরেশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবেনঃ তোমরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণ বের করে আন। তোমাদের আমলের কারণে আজ তোদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে। কারণ তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেছিলে এবং তোমরা তাঁর আয়াতের বিরুদ্ধে অহংকার করেছিলে’’। (সূরা আনআমঃ ৯৩) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ
‘‘আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দিব। অতঃপর তাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে কঠিন শাস্তির দিকে’’। (সূরা তাওবাঃ ১০১) এখানে একবার কবরের শাস্তি ও আর একবার কিয়ামতের শাস্তি উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও আরো আয়াত বিদ্যমান।
উত্তরঃ কবরের আযাবের ব্যাপারে হাদীছগুলো মুতাওয়াতের (ধারাবাহিক) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ : أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ فَيُقَالُ : لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا- قَالَ : قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ قَالَ : وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ، فَيَقُولُ : لَا أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ : مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ : لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ )
‘‘বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার আত্মীয়রা ফিরে যায় তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এমন সময় দু’জন ফেরেশতা তার কাছে আগমণ করেন। তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ এই ব্যক্তি তথা মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে? মুমিন ব্যক্তি উত্তরে বলেঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তিনি হলেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয়ঃ তুমি জাহান্নামে তোমার ঠিকানার দিকে একটু দৃষ্টি দাও। আল্লাহ্ তাআলা তা পরিবর্তন করে জান্নাতে তোমার ঠিকানা তৈরী করেছেন। সুতরাং সে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ই দেখতে পাবে। কাফের অথবা মুনাফেক বান্দাকে যখন বলা হয়ঃ এই লোকটি সম্পর্কে তোর ধারণা কি? সে উত্তরে বলেঃ হায় আমি তা জানিনা। তার সম্পর্কে মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হয়ঃ তুমি জানার চেষ্টা করো নাই এবং অনুসরণও করো নাই। আর তাকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে কঠোরভাবে আঘাত করা হয়। তাতে সে এমন প্রকটভাবে চিৎকার করতে থাকে, যার আওয়াজ জিন-ইনসান ব্যতীত নিকটবর্তী সকল সৃষ্টিজীবই শুনতে পায়’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।]
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ )
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে তার ঠিকানা পেশ করা হয়। সে জান্নাতের অধিবাসী হলে জান্নাতে আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। বলা হয়ঃ এটিই হচ্ছে তোমার ঠিকানা। কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হওয়ার পর আল্লাহ্ তোমাকে এই ঠিকানায় পাঠাবেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত,
( مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ أَوْ مَكَّةَ فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ثُمَّ قَالَ بَلَى كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ وَكَانَ الْآخَرُ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ثُمَّ دَعَا بِجَرِيدَةٍ فَكَسَرَهَا كِسْرَتَيْنِ فَوَضَعَ عَلَى كُلِّ قَبْرٍ مِنْهُمَا كِسْرَةً فَقِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ فَعَلْتَ هَذَا قَالَ لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ تَيْبَسَا أَوْ إِلَى أَنْ يَيْبَسَا )
‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা বা মক্কার কোন একটি বাগানের পাশদিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তথায় তিনি দু’জন এমন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচিছল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ বড় কোন অপরাধের কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি বললেনঃ তাদের একজন পেশাব করার সময় আড়াল করতোনা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগাত। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কাঁচা খেজুরের শাখা আনতে বললেন। অতঃপর উক্ত খেজুরের শাখাটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে উভয় কবরের উপর একটি করে রেখে দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কেন এরকম করলেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ হয়ত খেজুরের শাখা দু’টি জীবিত থাকা পর্যন্ত তাদের কবরের আযাব হালকা করা হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ওযু। কবরের উপর খেজুর গাছের তাজা ডালা পুঁতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে খাস ছিল। কারণ সাহাবীদের কোন কবরের উপর এমনটি করার কথা বর্ণিত হয় নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অন্য কোন কবরে তা স্থাপন করেন নি। সুতরাং বুঝা গেল এটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনা। এর উপর কিয়াস করে বর্তমানে যেভাবে নতুন কবরের উপর খেজুর গাছে শাখা পুঁতা হয়ে থাকে তা ঠিক নয়।]
আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ
( خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ وَجَبَتِ الشَّمْسُ فَسَمِعَ صَوْتًا فَقَالَ : يَهُودُ تُعَذَّبُ فِي قُبُورِهَا )
‘‘একদা নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য অস্তমিত হওয়ার সময় ঘর থেকে বের হয়ে এসে এক বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে বললেনঃ কবরে ইহুদীদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ
( قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا فَذَكَرَ فِتْنَةَ الْقَبْرِ الَّتِي يَفْتَتِنُ فِيهَا الْمَرْءُ فَلَمَّا ذَكَرَ ذَلِكَ ضَجَّ الْمُسْلِمُونَ ضَجَّةً )
‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বক্তৃতা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে কবরে মানুষ যে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করলেন। মুসলমানগণ কবরের আযাবের ভয়াবহতার কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
( فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدُ صَلَّى صَلاَةً إلاَّ تَعَوَّذَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ )
‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রত্যেক নামাযের পর কবরের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতে দেখেছি’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।]
সূর্যগ্রহণের হাদীছের শেষাংশে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার আদেশ দিলেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কুসুফ।]
উপরোক্ত সকল হাদীছই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বিদ্যমান। লেখক বলেনঃ আমি মা’রিজুল কবুল নামক গ্রন্থে বিভিন্ন সনদে একদল সাহাবী থেকে ৬০টি হাদীছ উল্লেখ করেছি। সবগুলো হাদীছই মারফু। বিস্তারিত জানার জন্য আমার উক্ত কিতাবটি পাঠ করার পরামর্শ দেয়া হল।
( إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَيُقْعِدَانِهِ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَمَّا الْمُؤْمِنُ فَيَقُولُ : أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ فَيُقَالُ : لَهُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنَ النَّارِ قَدْ أَبْدَلَكَ اللَّهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنَ الْجَنَّةِ فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا- قَالَ : قَتَادَةُ وَذُكِرَ لَنَا أَنَّهُ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى حَدِيثِ أَنَسٍ قَالَ : وَأَمَّا الْمُنَافِقُ وَالْكَافِرُ فَيُقَالُ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ، فَيَقُولُ : لَا أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ : مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ : لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ وَيُضْرَبُ بِمَطَارِقَ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ غَيْرَ الثَّقَلَيْنِ )
‘‘বান্দাকে যখন কবরে রেখে তার আত্মীয়রা ফিরে যায় তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এমন সময় দু’জন ফেরেশতা তার কাছে আগমণ করেন। তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ এই ব্যক্তি তথা মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কি বলতে? মুমিন ব্যক্তি উত্তরে বলেঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তিনি হলেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তাকে বলা হয়ঃ তুমি জাহান্নামে তোমার ঠিকানার দিকে একটু দৃষ্টি দাও। আল্লাহ্ তাআলা তা পরিবর্তন করে জান্নাতে তোমার ঠিকানা তৈরী করেছেন। সুতরাং সে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ই দেখতে পাবে। কাফের অথবা মুনাফেক বান্দাকে যখন বলা হয়ঃ এই লোকটি সম্পর্কে তোর ধারণা কি? সে উত্তরে বলেঃ হায় আমি তা জানিনা। তার সম্পর্কে মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হয়ঃ তুমি জানার চেষ্টা করো নাই এবং অনুসরণও করো নাই। আর তাকে লোহার হাতুড়ী দিয়ে কঠোরভাবে আঘাত করা হয়। তাতে সে এমন প্রকটভাবে চিৎকার করতে থাকে, যার আওয়াজ জিন-ইনসান ব্যতীত নিকটবর্তী সকল সৃষ্টিজীবই শুনতে পায়’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।]
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ )
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে তার ঠিকানা পেশ করা হয়। সে জান্নাতের অধিবাসী হলে জান্নাতে আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। বলা হয়ঃ এটিই হচ্ছে তোমার ঠিকানা। কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হওয়ার পর আল্লাহ্ তোমাকে এই ঠিকানায় পাঠাবেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত,
( مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ أَوْ مَكَّةَ فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ثُمَّ قَالَ بَلَى كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ وَكَانَ الْآخَرُ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ثُمَّ دَعَا بِجَرِيدَةٍ فَكَسَرَهَا كِسْرَتَيْنِ فَوَضَعَ عَلَى كُلِّ قَبْرٍ مِنْهُمَا كِسْرَةً فَقِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ فَعَلْتَ هَذَا قَالَ لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ تَيْبَسَا أَوْ إِلَى أَنْ يَيْبَسَا )
‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা বা মক্কার কোন একটি বাগানের পাশদিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তথায় তিনি দু’জন এমন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচিছল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ বড় কোন অপরাধের কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি বললেনঃ তাদের একজন পেশাব করার সময় আড়াল করতোনা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগাত। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কাঁচা খেজুরের শাখা আনতে বললেন। অতঃপর উক্ত খেজুরের শাখাটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে উভয় কবরের উপর একটি করে রেখে দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কেন এরকম করলেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ হয়ত খেজুরের শাখা দু’টি জীবিত থাকা পর্যন্ত তাদের কবরের আযাব হালকা করা হবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ওযু। কবরের উপর খেজুর গাছের তাজা ডালা পুঁতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে খাস ছিল। কারণ সাহাবীদের কোন কবরের উপর এমনটি করার কথা বর্ণিত হয় নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অন্য কোন কবরে তা স্থাপন করেন নি। সুতরাং বুঝা গেল এটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনা। এর উপর কিয়াস করে বর্তমানে যেভাবে নতুন কবরের উপর খেজুর গাছে শাখা পুঁতা হয়ে থাকে তা ঠিক নয়।]
আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ
( خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ وَجَبَتِ الشَّمْسُ فَسَمِعَ صَوْتًا فَقَالَ : يَهُودُ تُعَذَّبُ فِي قُبُورِهَا )
‘‘একদা নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য অস্তমিত হওয়ার সময় ঘর থেকে বের হয়ে এসে এক বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে বললেনঃ কবরে ইহুদীদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ
( قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا فَذَكَرَ فِتْنَةَ الْقَبْرِ الَّتِي يَفْتَتِنُ فِيهَا الْمَرْءُ فَلَمَّا ذَكَرَ ذَلِكَ ضَجَّ الْمُسْلِمُونَ ضَجَّةً )
‘‘একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বক্তৃতা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়ে কবরে মানুষ যে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করলেন। মুসলমানগণ কবরের আযাবের ভয়াবহতার কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
( فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدُ صَلَّى صَلاَةً إلاَّ تَعَوَّذَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ )
‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রত্যেক নামাযের পর কবরের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতে দেখেছি’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।]
সূর্যগ্রহণের হাদীছের শেষাংশে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার আদেশ দিলেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কুসুফ।]
উপরোক্ত সকল হাদীছই সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বিদ্যমান। লেখক বলেনঃ আমি মা’রিজুল কবুল নামক গ্রন্থে বিভিন্ন সনদে একদল সাহাবী থেকে ৬০টি হাদীছ উল্লেখ করেছি। সবগুলো হাদীছই মারফু। বিস্তারিত জানার জন্য আমার উক্ত কিতাবটি পাঠ করার পরামর্শ দেয়া হল।
উত্তরঃ কবর থেকে পুনরুত্থানের দলীলগুলো নিম্নরূপঃ আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ مُضْغَةٍ مُخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِنُبَيِّنَ لَكُمْ وَنُقِرُّ فِي الأَرْحَامِ مَا نَشَاءُ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى
‘‘হে লোক সকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর, তবে শুন! আমি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। এর পর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে তারপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংস পিন্ড হতে, তোমাদের নিকট (আমার কুদরত) বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই’’। (সূরা হজ্জঃ ৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّهُ يُحْيِي الْمَوْتَى وَأَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ * وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لاَ رَيْبَ فِيهَا وَأَنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ مَنْ فِي الْقُبُورِ
‘‘এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ্ সত্য। তিনিই মৃতকে জীবন দান করবেন। আর তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আর কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর কবরে যারা আছে তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই পুনরুত্থিত করবেন’’। (সূরা হজ্জঃ ৬-৭) আললাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ
‘‘তিনিই আল্লাহ, যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর এটি তাঁর জন্যে অধিকতর সহজ’’। (সূরা রূমঃ ২৭) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُه
‘‘যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ১০৪) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَيَقُولُ الإِنْسَانُ أَئِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ أُخْرَجُ حَيًّا * أَوَلاَ يَذْكُرُ الإِنْسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ يَكُ شَيْئًا
‘‘মানুষ বলেঃ আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব? মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৬৬-৬৭) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
أَوَلَمْ يَرَ الإِنْسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ نُطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُبِينٌ * وَضَرَبَ لَنَا مَثَلاً وَنَسِيَ خَلْقَهُ قَالَ مَنْ يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ * قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنْشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ
‘‘মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু হতে? অথচ হঠাৎ সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী। আর সে আমার সম্পর্কে উপমা রচনা করে অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলেঃ হাড্ডিতে কে প্রাণ সঞ্চার করবে, যখন ওটা পচে গলে যাবে’’? আপনি বলুনঃ ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই, যিনি এটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৭৭-৭৯) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلَى أَنْ يُحْيِيَ الْمَوْتَى بَلَى إِنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ্ আকাশমন্ডলী ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং এসবের সৃষ্টিতে কোন ক্লান্তিবোধ করেন নি। তিনি মৃতকে জীবন দান করতে সক্ষম। তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান’’। (সূরা আহকাফঃ ৩৩) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنَّكَ تَرَى الأَرْضَ خَاشِعَةً فَإِذَا أَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ إِنَّ الَّذِي أَحْيَاهَا لَمُحْيِي الْمَوْتَى إِنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘আর তাঁর আরেকটি নিদর্শন এই যে, আপনি ভূমিকে দেখবেন অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করলে তা শস্যশ্যামল এবং বৃদ্ধি হয়। নিশ্চয়ই যিনি একে জীবিত করেন, তিনিই মৃতের জীবন দানকারী। তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান’’। (সূরা হা-মীম সাজদাহঃ ৩৯) এছাড়াও আরো আয়াত রয়েছে।
উপরোক্ত দৃষ্টান্তগুলো ছাড়াও আল্লাহ্ তা’আলা অসংখ্যবার পানির মাধ্যমে মৃত যমীনকে জীবিত করার দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। ফলে মৃত যমীন আন্দোলিত হয় এবং তা সবুজ আকার ধারণ করে। অথচ সেটি ছিল অনাবৃষ্টির কারণে মৃত ও শুস্ক।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উকাইলীর দীর্ঘ হাদীছে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উদাহরণ এভাবে পেশ করেছেন যে, তোমার মা’বুদের জীবনের শপথ! প্রত্যেক নিহত এবং প্রত্যেক মৃতের কবর বিদীর্ণ করা হবে। সে তার মাথার দিক থেকে জীবিত হয়ে উঠে বসবে। তোমার প্রতিপালক তোমাকে জিজ্ঞেস করবেঃ তোমার অবস্থা কি? সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! গতকালের কথা। আমি আমার পরিবার ও সন্তানদের সাথে ছিলাম। সাহাবী বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আমাদেরকে একত্রিত করা হবে? অথচ আমরা পচে গলে শেষ হয়ে যাব, বাতাস আমাদেরকে উড়িয়ে নিবে এবং হিংস্র প্রাণীরা আমাদেরকে খেয়ে ফেলবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার কাছে ঐ রকমই আল্লাহর নিদর্শন বর্ণনা করব। আমি একটি যমীন দেখেছি। সেটি পোড়া মাটির ন্যায় শক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলামঃ এটি পুনরায় কখনও জীবিত হবে না। আল্লাহ্ তাআলা সেখানে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। কয়েক দিন পর আমি সেখান দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমি দেখলামঃ সেটি পানি বিশিষ্ট একটি শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। তোমার প্রভুর হায়াতের শপথ! যমীনকে পানি দ্বারা জীবিত করার চেয়ে তিনি তোমাদেরকে কবর থেকে জীবিত করে হাশরের মাঠে উপস্থিত করতে অধিক ক্ষমতাবান। [- এটি একটি দীর্ঘ হাদীছের অংশ, যা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ যিলালুল জান্নাত হাদীছ নং- ৬৩৬।] এ রকম আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِنْ مُضْغَةٍ مُخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِنُبَيِّنَ لَكُمْ وَنُقِرُّ فِي الأَرْحَامِ مَا نَشَاءُ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى
‘‘হে লোক সকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর, তবে শুন! আমি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। এর পর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে তারপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংস পিন্ড হতে, তোমাদের নিকট (আমার কুদরত) বর্ণনা করার উদ্দেশ্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই’’। (সূরা হজ্জঃ ৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّهُ يُحْيِي الْمَوْتَى وَأَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ * وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لاَ رَيْبَ فِيهَا وَأَنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ مَنْ فِي الْقُبُورِ
‘‘এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ্ সত্য। তিনিই মৃতকে জীবন দান করবেন। আর তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আর কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর কবরে যারা আছে তাদেরকে আল্লাহ অবশ্যই পুনরুত্থিত করবেন’’। (সূরা হজ্জঃ ৬-৭) আললাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ
‘‘তিনিই আল্লাহ, যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনিই পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর এটি তাঁর জন্যে অধিকতর সহজ’’। (সূরা রূমঃ ২৭) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُه
‘‘যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ১০৪) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَيَقُولُ الإِنْسَانُ أَئِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ أُخْرَجُ حَيًّا * أَوَلاَ يَذْكُرُ الإِنْسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ قَبْلُ وَلَمْ يَكُ شَيْئًا
‘‘মানুষ বলেঃ আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব? মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৬৬-৬৭) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
أَوَلَمْ يَرَ الإِنْسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِنْ نُطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُبِينٌ * وَضَرَبَ لَنَا مَثَلاً وَنَسِيَ خَلْقَهُ قَالَ مَنْ يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ * قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنْشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ
‘‘মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু হতে? অথচ হঠাৎ সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী। আর সে আমার সম্পর্কে উপমা রচনা করে অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়। সে বলেঃ হাড্ডিতে কে প্রাণ সঞ্চার করবে, যখন ওটা পচে গলে যাবে’’? আপনি বলুনঃ ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই, যিনি এটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৭৭-৭৯) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلَى أَنْ يُحْيِيَ الْمَوْتَى بَلَى إِنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ্ আকাশমন্ডলী ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং এসবের সৃষ্টিতে কোন ক্লান্তিবোধ করেন নি। তিনি মৃতকে জীবন দান করতে সক্ষম। তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান’’। (সূরা আহকাফঃ ৩৩) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنَّكَ تَرَى الأَرْضَ خَاشِعَةً فَإِذَا أَنْزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ إِنَّ الَّذِي أَحْيَاهَا لَمُحْيِي الْمَوْتَى إِنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘আর তাঁর আরেকটি নিদর্শন এই যে, আপনি ভূমিকে দেখবেন অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করলে তা শস্যশ্যামল এবং বৃদ্ধি হয়। নিশ্চয়ই যিনি একে জীবিত করেন, তিনিই মৃতের জীবন দানকারী। তিনি প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান’’। (সূরা হা-মীম সাজদাহঃ ৩৯) এছাড়াও আরো আয়াত রয়েছে।
উপরোক্ত দৃষ্টান্তগুলো ছাড়াও আল্লাহ্ তা’আলা অসংখ্যবার পানির মাধ্যমে মৃত যমীনকে জীবিত করার দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। ফলে মৃত যমীন আন্দোলিত হয় এবং তা সবুজ আকার ধারণ করে। অথচ সেটি ছিল অনাবৃষ্টির কারণে মৃত ও শুস্ক।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উকাইলীর দীর্ঘ হাদীছে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উদাহরণ এভাবে পেশ করেছেন যে, তোমার মা’বুদের জীবনের শপথ! প্রত্যেক নিহত এবং প্রত্যেক মৃতের কবর বিদীর্ণ করা হবে। সে তার মাথার দিক থেকে জীবিত হয়ে উঠে বসবে। তোমার প্রতিপালক তোমাকে জিজ্ঞেস করবেঃ তোমার অবস্থা কি? সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! গতকালের কথা। আমি আমার পরিবার ও সন্তানদের সাথে ছিলাম। সাহাবী বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আমাদেরকে একত্রিত করা হবে? অথচ আমরা পচে গলে শেষ হয়ে যাব, বাতাস আমাদেরকে উড়িয়ে নিবে এবং হিংস্র প্রাণীরা আমাদেরকে খেয়ে ফেলবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার কাছে ঐ রকমই আল্লাহর নিদর্শন বর্ণনা করব। আমি একটি যমীন দেখেছি। সেটি পোড়া মাটির ন্যায় শক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলামঃ এটি পুনরায় কখনও জীবিত হবে না। আল্লাহ্ তাআলা সেখানে বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। কয়েক দিন পর আমি সেখান দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমি দেখলামঃ সেটি পানি বিশিষ্ট একটি শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। তোমার প্রভুর হায়াতের শপথ! যমীনকে পানি দ্বারা জীবিত করার চেয়ে তিনি তোমাদেরকে কবর থেকে জীবিত করে হাশরের মাঠে উপস্থিত করতে অধিক ক্ষমতাবান। [- এটি একটি দীর্ঘ হাদীছের অংশ, যা ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ যিলালুল জান্নাত হাদীছ নং- ৬৩৬।] এ রকম আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
উত্তরঃ যে ব্যক্তি কবর থেকে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করবে, সে আল্লাহ্ তাআলা, তাঁর কিতাবসমূহ এবং রাসূলদেরকে অস্বীকারকারী কাফের। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَئِذَا كُنَّا تُرَابًا وَآبَاؤُنَا أَئِنَّا لَمُخْرَجُونَ
‘‘কাফেরেরা বলেঃ আমরা এবং আমাদের বাপ-দাদারা মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে গেলেও আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে’’? (সূরা নামলঃ ৬৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَإِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَئِذَا كُنَّا تُرَابًا أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ الأَغْلاَلُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘‘আপনি যদি বিস্মিত হন, বিস্ময়ের বিষয় তাদের কথাঃ মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও কি আমরা নতুন জীবন লাভ করব? তারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছে। তাদের গলদেশে থাকবে লৌহ শৃঙ্খল। তারাই জাহান্নামী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে’’। (সূরা রা’দঃ ৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ لَنْ يُبْعَثُوا قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
‘‘কাফেররা ধারণা করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। আপনি বলুনঃ আমার প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। অতঃপর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ?। (সূরা মুমিনঃ ৭) এছাড়াও রয়েছে আরো আয়াত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ
( كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ وَشَتَمَنِي وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ فَأَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ لَنْ يُعِيدَنِي كَمَا بَدَأَنِي وَلَيْسَ أَوَّلُ الْخَلْقِ بِأَهْوَنَ عَلَيَّ مِنْ إِعَادَتِهِ وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا وَأَنَا الْأَحَدُ الصَّمَدُ لَمْ أَلِدْ وَلَمْ أُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لِي كُفْئًا أَحَدٌ )
‘‘আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। অথচ তার এরকম করার অধিকার নেই। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়। অথচ তার এরকম করার অধিকার নেই। আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অর্থ এই যে, সে বলে থাকে আল্লাহ্ আমাকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বার সেভাবে সৃষ্টি করতে পারবেন না। অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করার চেয়ে প্রথমবার সৃষ্টি করা আমার পক্ষে অধিক সহজ ছিল না। আর আমাকে গালি দেয়ার অর্থ এই যে, তার কথাঃ আল্লাহ্ পুত্র সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে জম্ম দেই নি এবং আমাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর আমার সমতুল্য কেউ নেই’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।]
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَئِذَا كُنَّا تُرَابًا وَآبَاؤُنَا أَئِنَّا لَمُخْرَجُونَ
‘‘কাফেরেরা বলেঃ আমরা এবং আমাদের বাপ-দাদারা মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে গেলেও আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে’’? (সূরা নামলঃ ৬৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَإِنْ تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَئِذَا كُنَّا تُرَابًا أَئِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ الأَغْلاَلُ فِي أَعْنَاقِهِمْ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘‘আপনি যদি বিস্মিত হন, বিস্ময়ের বিষয় তাদের কথাঃ মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও কি আমরা নতুন জীবন লাভ করব? তারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছে। তাদের গলদেশে থাকবে লৌহ শৃঙ্খল। তারাই জাহান্নামী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে’’। (সূরা রা’দঃ ৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ لَنْ يُبْعَثُوا قُلْ بَلَى وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ وَذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
‘‘কাফেররা ধারণা করে যে, তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। আপনি বলুনঃ আমার প্রতিপালকের শপথ! নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। অতঃপর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করা হবে। আর এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ?। (সূরা মুমিনঃ ৭) এছাড়াও রয়েছে আরো আয়াত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ
( كَذَّبَنِي ابْنُ آدَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ وَشَتَمَنِي وَلَمْ يَكُنْ لَهُ ذَلِكَ فَأَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ لَنْ يُعِيدَنِي كَمَا بَدَأَنِي وَلَيْسَ أَوَّلُ الْخَلْقِ بِأَهْوَنَ عَلَيَّ مِنْ إِعَادَتِهِ وَأَمَّا شَتْمُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا وَأَنَا الْأَحَدُ الصَّمَدُ لَمْ أَلِدْ وَلَمْ أُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لِي كُفْئًا أَحَدٌ )
‘‘আদম সন্তান আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। অথচ তার এরকম করার অধিকার নেই। আদম সন্তান আমাকে গালি দেয়। অথচ তার এরকম করার অধিকার নেই। আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার অর্থ এই যে, সে বলে থাকে আল্লাহ্ আমাকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বার সেভাবে সৃষ্টি করতে পারবেন না। অথচ দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করার চেয়ে প্রথমবার সৃষ্টি করা আমার পক্ষে অধিক সহজ ছিল না। আর আমাকে গালি দেয়ার অর্থ এই যে, তার কথাঃ আল্লাহ্ পুত্র সন্তান গ্রহণ করেছেন। অথচ আমি একক ও অমুখাপেক্ষী। আমি কাউকে জম্ম দেই নি এবং আমাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর আমার সমতুল্য কেউ নেই’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।]
উত্তরঃ সিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ
‘‘এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফলে আকাশ ও যমিনে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, সে ব্যতীত। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তৎক্ষনাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৮ এই আয়াতে দুইবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। একবার ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়বার ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে সকলেই জীবিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلاَّ مَنْ شَاءَ اللَّهُ
‘‘আর সেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফলে আকাশ ও যমিনে যারা আছে সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, সে ব্যতীত’’। (সূরা নামলঃ ৮৭)
যারা এই আয়াতে الفزع শব্দের ব্যাখ্যা الصعق দ্বারা করেছেন, তাদের মতে এখানে الفزع দ্বারা প্রথম ফুৎকার উদ্দেশ্য, যা সূরা যুমারের ৬৮নং আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। মুসলিম শরীফের হাদীছ থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَلَا يَسْمَعُهُ أَحَدٌ إِلَّا أَصْغَى لَهُ وَأَوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَهُ فَيَصْعَقُ ثُمَّ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا صَعِقَ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ أَوْ يُنْزِلُ اللَّهُ قَطْرًا كَأَنَّهُ الطَّلُّ فَتَنْبُتُ مِنْهُ أَجْسَادُ النَّاسِ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ
‘‘অতঃপর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া মাত্রই প্রত্যেক ব্যক্তি তা কান পেতে শুনার চেষ্টা করবে। সর্বপ্রথম উটের হাওজ মেরামত রত একজন ব্যক্তি সেই শব্দ শুনতে পেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাবে। অতঃপর সকল মানুষ সেই শব্দ শুনে বেহুঁশ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা শিশিরের ন্যায় এক প্রকার হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তাতে মানুষের দেহগুলো গজিয়ে উঠবে। পুনরায় শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে সকল মানুষ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] এই হাদীছে দুই ফুঁ দেয়ার কথা এসেছে। আর যারা الفزع এর ব্যাখ্যা الصعق দ্বারা করেন নি, তাদের মতে এখানে উপরোক্ত দু’টি ফুৎকার ব্যতীত তৃতীয় ফুৎকার উদ্দেশ্য, যা এ দু’টির পূবেই দেয়া হবে। শিঙ্গার দীর্ঘ হাদীছে একথার সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে তিনটি ফুৎকারের কথা বলা হয়েছে। ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার ফুৎকার, বেহুঁশ হওয়ার ফুৎকার এবং বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে হাজির হওয়ার ফুৎকার। আল্লাহই ভাল জানেন।
وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ
‘‘এবং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফলে আকাশ ও যমিনে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, সে ব্যতীত। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তৎক্ষনাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে’’। (সূরা যুমারঃ ৬৮ এই আয়াতে দুইবার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। একবার ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়বার ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে সকলেই জীবিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَيَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَفَزِعَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلاَّ مَنْ شَاءَ اللَّهُ
‘‘আর সেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফলে আকাশ ও যমিনে যারা আছে সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, সে ব্যতীত’’। (সূরা নামলঃ ৮৭)
যারা এই আয়াতে الفزع শব্দের ব্যাখ্যা الصعق দ্বারা করেছেন, তাদের মতে এখানে الفزع দ্বারা প্রথম ফুৎকার উদ্দেশ্য, যা সূরা যুমারের ৬৮নং আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। মুসলিম শরীফের হাদীছ থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَلَا يَسْمَعُهُ أَحَدٌ إِلَّا أَصْغَى لَهُ وَأَوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَهُ فَيَصْعَقُ ثُمَّ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا صَعِقَ ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ أَوْ يُنْزِلُ اللَّهُ قَطْرًا كَأَنَّهُ الطَّلُّ فَتَنْبُتُ مِنْهُ أَجْسَادُ النَّاسِ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ
‘‘অতঃপর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া মাত্রই প্রত্যেক ব্যক্তি তা কান পেতে শুনার চেষ্টা করবে। সর্বপ্রথম উটের হাওজ মেরামত রত একজন ব্যক্তি সেই শব্দ শুনতে পেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাবে। অতঃপর সকল মানুষ সেই শব্দ শুনে বেহুঁশ হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহ তা’আলা শিশিরের ন্যায় এক প্রকার হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তাতে মানুষের দেহগুলো গজিয়ে উঠবে। পুনরায় শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে সকল মানুষ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।] এই হাদীছে দুই ফুঁ দেয়ার কথা এসেছে। আর যারা الفزع এর ব্যাখ্যা الصعق দ্বারা করেন নি, তাদের মতে এখানে উপরোক্ত দু’টি ফুৎকার ব্যতীত তৃতীয় ফুৎকার উদ্দেশ্য, যা এ দু’টির পূবেই দেয়া হবে। শিঙ্গার দীর্ঘ হাদীছে একথার সমর্থন পাওয়া যায়। তাতে তিনটি ফুৎকারের কথা বলা হয়েছে। ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার ফুৎকার, বেহুঁশ হওয়ার ফুৎকার এবং বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে হাজির হওয়ার ফুৎকার। আল্লাহই ভাল জানেন।
উত্তরঃ কুরআন মাজীদে হাশরের মাঠে মানুষকে একত্রিত করার ধরণ বর্ণনায় অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
( وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ )
‘‘আর তোমরা আমার কাছে এককভাবে এসেছ। যেভাবে প্রথমবার আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম’’। (সূরা আনআমঃ ৯৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
( وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا )
‘‘সেদিন তাদেরকে একত্রিত করব, তাদের কাউকেও ছাড়ব না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ৪৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا
‘‘সেদিন দয়াময় আল্লাহর কাছে পরহেজগারদেরকে সম্মানিত অতিথিরূপে সমবেত করা হবে’’ এবং আমি অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব।’’ (সূরা মারইয়ামঃ ৮৫-৮৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلاَثَةً * فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ * وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ * وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ
‘‘আর তোমরা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। এক শ্রেণী ডান হাতে আমলনামা পাবে। কতই না ভাগ্যবান হবে ডান হাতের দল! আরেক শ্রেণী বাম হাতে আমলনামা পাবে। কত হতভাগ্য হবে বাম হাতের দল! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী’’। (সূরা ওয়াকিয়াঃ ৭-১০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لاَ عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلاَ تَسْمَعُ إِلاَّ هَمْسًا
‘‘সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে। তার কথা এদিক সেদিক হবে না। দয়াময় আল্লাহর ভয়ে সকল শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না’’। (সূরা তোহাঃ ১০৮) হাশরের মাঠের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় উটের পদধ্বনির ন্যায় আওয়াজ হবে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَمَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِهِ وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وَجُوهِهِمْ
‘‘আল্লাহ্ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত। আর আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন, তাদের জন্য আপনি আল্লাহ্ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কিয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৯৭) উক্ত আয়াতগুলো ছাড়াও আরো আয়াত রয়েছে।
( وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَى كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ )
‘‘আর তোমরা আমার কাছে এককভাবে এসেছ। যেভাবে প্রথমবার আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম’’। (সূরা আনআমঃ ৯৪) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
( وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا )
‘‘সেদিন তাদেরকে একত্রিত করব, তাদের কাউকেও ছাড়ব না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ৪৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا
‘‘সেদিন দয়াময় আল্লাহর কাছে পরহেজগারদেরকে সম্মানিত অতিথিরূপে সমবেত করা হবে’’ এবং আমি অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব।’’ (সূরা মারইয়ামঃ ৮৫-৮৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكُنْتُمْ أَزْوَاجًا ثَلاَثَةً * فَأَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ * وَأَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ مَا أَصْحَابُ الْمَشْأَمَةِ * وَالسَّابِقُونَ السَّابِقُونَ
‘‘আর তোমরা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হবে। এক শ্রেণী ডান হাতে আমলনামা পাবে। কতই না ভাগ্যবান হবে ডান হাতের দল! আরেক শ্রেণী বাম হাতে আমলনামা পাবে। কত হতভাগ্য হবে বাম হাতের দল! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী’’। (সূরা ওয়াকিয়াঃ ৭-১০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لاَ عِوَجَ لَهُ وَخَشَعَتِ الأَصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ فَلاَ تَسْمَعُ إِلاَّ هَمْسًا
‘‘সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে। তার কথা এদিক সেদিক হবে না। দয়াময় আল্লাহর ভয়ে সকল শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাবে। সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ব্যতীত তুমি কিছুই শুনবে না’’। (সূরা তোহাঃ ১০৮) হাশরের মাঠের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় উটের পদধ্বনির ন্যায় আওয়াজ হবে। আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَمَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِهِ وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وَجُوهِهِمْ
‘‘আল্লাহ্ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত। আর আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন, তাদের জন্য আপনি আল্লাহ্ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কিয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৯৭) উক্ত আয়াতগুলো ছাড়াও আরো আয়াত রয়েছে।
উত্তরঃ হাদীছ শরীফে হাশরের পদ্ধতি সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا )
‘‘মানুষকে তিনভাবে একত্রিত করা হবে। (১) একদল লোককে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (২) দু’জনকে একটি উটের উপর, তিনজনকে একটি উটের উপর, চারজনকে একটি উটের উপর এবং দশজনকে একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যেস্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সেস্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] বুখারী ও মুসলিম শরীফে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,
( أَنََّ رَجُلًا قَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَة؟ِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ )
‘‘জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে কিয়ামতের দিন কাফেরকে মুখের উপর ভর দিয়ে হাঁটানো হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ দুনিয়াতে যিনি তাকে দু’পায়ের উপর হাঁটাতে সক্ষম ছিলেন তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখের উপর হাঁটাতে সক্ষম নন? [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর।]
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا ثُمَّ قَرَأَ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ )
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে, খালী পা, উলঙ্গ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ
‘‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে পূর্ণ করতেই হবে। (সূরা আম্বীয়াঃ ১০৪) কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ)কে সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আরো বর্ণনা করেন যে,
( يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ فَقَالَ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَهمهم ذلك )
‘‘কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী-পুরুষ সকলকেই উলঙ্গ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে। [- বুখারী, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু রিকাক।]
( يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا )
‘‘মানুষকে তিনভাবে একত্রিত করা হবে। (১) একদল লোককে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (২) দু’জনকে একটি উটের উপর, তিনজনকে একটি উটের উপর, চারজনকে একটি উটের উপর এবং দশজনকে একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (৩) বাকী সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার জন্যে অবস্থান করবে অগ্নিও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে সকাল করবে। তারা যেস্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সেস্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] বুখারী ও মুসলিম শরীফে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,
( أَنََّ رَجُلًا قَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَة؟ِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ )
‘‘জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে কিয়ামতের দিন কাফেরকে মুখের উপর ভর দিয়ে হাঁটানো হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ দুনিয়াতে যিনি তাকে দু’পায়ের উপর হাঁটাতে সক্ষম ছিলেন তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখের উপর হাঁটাতে সক্ষম নন? [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর।]
ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا ثُمَّ قَرَأَ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ )
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে, খালী পা, উলঙ্গ এবং খাতনাবিহীন অবস্থায়। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ
‘‘যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে পূর্ণ করতেই হবে। (সূরা আম্বীয়াঃ ১০৪) কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আঃ)কে সর্বপ্রথম কাপড় পরিধান করানো হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] আয়েশা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আরো বর্ণনা করেন যে,
( يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ فَقَالَ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَهمهم ذلك )
‘‘কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারী-পুরুষ সকলকেই উলঙ্গ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে। [- বুখারী, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু রিকাক।]
উত্তরঃ হাশরের মাঠের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَلاَ تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ * مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لاَ يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ
‘‘আপনি কখনও মনে করবেন না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ গাফেল। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত বিহবল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না। তাদের অন্তর উড়ে যাবে’’। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪২-৪৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلاَئِكَةُ صَفًّا لاَ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا
‘‘যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্য বলবে’’। (সূরা আন-নাবাঃ ৩৮) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْآزِفَةِ إِذْ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلَا شَفِيعٍ يُطَاعُ
‘‘আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন। যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপীদের জন্য এমন কোন বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবেনা, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৮) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
‘‘ফেরেশতাগণ এবং রূহ্ (জিবরীল আঃ) আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।’’ (সূরা মাআ’রিজঃ ৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَا الثَّقَلاَنِ
‘‘হে মানুষ ও জিন! আমি শিঘ্রই তোমাদের প্রতি মনোনিবেশ করব’’। (সূরা আর্-রাহমানঃ ৩১)
وَلاَ تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ * مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لاَ يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ
‘‘আপনি কখনও মনে করবেন না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ গাফেল। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত বিহবল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না। তাদের অন্তর উড়ে যাবে’’। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪২-৪৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلاَئِكَةُ صَفًّا لاَ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا
‘‘যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্য বলবে’’। (সূরা আন-নাবাঃ ৩৮) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْآزِفَةِ إِذْ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلَا شَفِيعٍ يُطَاعُ
‘‘আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন। যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপীদের জন্য এমন কোন বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবেনা, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৮) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
‘‘ফেরেশতাগণ এবং রূহ্ (জিবরীল আঃ) আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।’’ (সূরা মাআ’রিজঃ ৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
سَنَفْرُغُ لَكُمْ أَيُّهَا الثَّقَلاَنِ
‘‘হে মানুষ ও জিন! আমি শিঘ্রই তোমাদের প্রতি মনোনিবেশ করব’’। (সূরা আর্-রাহমানঃ ৩১)
উত্তরঃ হাশরের মাঠে অবস্থানের ব্যাপারে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নিম্নবাণীর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেনঃ
( يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ) حَتَّى يَغِيبَ أَحَدُهُمْ فِي رَشْحِهِ إِلَى أَنْصَافِ أُذُنَيْهِ )
‘‘যেদিন মানুষ বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে’’ অবস্থা এরকম হবে যে, তাদের কেউ ঘামের মধ্যে কান পর্যন্ত ডুবে যাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ فِي الأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ )
‘‘কিয়ামতের দিন মানুষ ঘামের মধ্যে ডুবে যাবে। এমন কি তাদের শরীরে ঘাম সত্তর গজ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। উপরের দিকে মুখ থেকে কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ ধরণের আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
( يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ ) حَتَّى يَغِيبَ أَحَدُهُمْ فِي رَشْحِهِ إِلَى أَنْصَافِ أُذُنَيْهِ )
‘‘যেদিন মানুষ বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে’’ অবস্থা এরকম হবে যে, তাদের কেউ ঘামের মধ্যে কান পর্যন্ত ডুবে যাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ فِي الأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ )
‘‘কিয়ামতের দিন মানুষ ঘামের মধ্যে ডুবে যাবে। এমন কি তাদের শরীরে ঘাম সত্তর গজ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। উপরের দিকে মুখ থেকে কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ ধরণের আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
উত্তরঃ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলনামা প্রদান ও হিসাব সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لاَ تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
‘‘সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে এবং তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না’’। (সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا لَقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ
‘‘আর তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবেঃ তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ’’। (সূরা কাহ্ফঃ ৪৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَيَوْمَ نَحْشُرُ مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ فَوْجًا مِمَّنْ يُكَذِّبُ بِآيَاتِنَا فَهُمْ يُوزَعُونَ * حَتَّى إِذَا جَاءُوا قَالَ أَكَذَّبْتُمْ بِآيَاتِي وَلَمْ تُحِيطُوا بِهَا عِلْمًا أَمْ مَاذَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ * وَوَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ بِمَا ظَلَمُوا فَهُمْ لاَ يَنْطِقُونَ
‘‘যেদিন আমি সমবেত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একটি দলকে। যারা আমার নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করত এবং তাদেরকে সারিবদ্ধ করা হবে। যখন তারা সমাগত হবে, তখন আল্লাহ্ বলবেনঃ তোমরা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিলে আর ওটা তোমরা জ্ঞানায়ত্ব করতে পার নি? না তোমরা অন্য কিছু করছিলে? সীমালঙ্ঘন হেতু তাদের উপর ঘোষিত শাস্তি এসে পড়বে। ফলে তারা কিছুই বলতে পারবে না। (সূরা আন্-নামলঃ ৮৩-৮৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ * فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ * وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
‘‘সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে তাদের কৃতকর্ম দেখানোর জন্য। অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে তা দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে’’। (সূরা যিলযালঃ ৬-৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ * عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘‘আপনার প্রতিপালকের শপথ! আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করব তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে’’। (সূরা হিজ্রঃ ৯৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَقِفُوهُمْ إِنَّهُمْ مَسْئُولُونَ
‘‘তাদেরকে দাঁড় করিয়ে রাখ। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে’’। (সূরা আস্ সাফ্ফাতঃ ২৪)
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لاَ تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
‘‘সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে এবং তোমাদের কিছুই গোপন থাকবে না’’। (সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا لَقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ
‘‘আর তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবেঃ তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ’’। (সূরা কাহ্ফঃ ৪৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَيَوْمَ نَحْشُرُ مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ فَوْجًا مِمَّنْ يُكَذِّبُ بِآيَاتِنَا فَهُمْ يُوزَعُونَ * حَتَّى إِذَا جَاءُوا قَالَ أَكَذَّبْتُمْ بِآيَاتِي وَلَمْ تُحِيطُوا بِهَا عِلْمًا أَمْ مَاذَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ * وَوَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ بِمَا ظَلَمُوا فَهُمْ لاَ يَنْطِقُونَ
‘‘যেদিন আমি সমবেত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একটি দলকে। যারা আমার নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করত এবং তাদেরকে সারিবদ্ধ করা হবে। যখন তারা সমাগত হবে, তখন আল্লাহ্ বলবেনঃ তোমরা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিলে আর ওটা তোমরা জ্ঞানায়ত্ব করতে পার নি? না তোমরা অন্য কিছু করছিলে? সীমালঙ্ঘন হেতু তাদের উপর ঘোষিত শাস্তি এসে পড়বে। ফলে তারা কিছুই বলতে পারবে না। (সূরা আন্-নামলঃ ৮৩-৮৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ * فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ * وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ
‘‘সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে তাদের কৃতকর্ম দেখানোর জন্য। অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলে তা দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে’’। (সূরা যিলযালঃ ৬-৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ * عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘‘আপনার প্রতিপালকের শপথ! আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করব তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে’’। (সূরা হিজ্রঃ ৯৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَقِفُوهُمْ إِنَّهُمْ مَسْئُولُونَ
‘‘তাদেরকে দাঁড় করিয়ে রাখ। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে’’। (সূরা আস্ সাফ্ফাতঃ ২৪)
উত্তরঃ আমলনামা পেশ এবং হাশরের মাঠের হিসাব সম্পর্কে অনেক হাদীছ এসেছে। নিম্নে আমরা কয়েকটি হাদীছ বর্ণনা করব। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ عُذِّبَ قَالَتْ : قُلْتُ أَلَيْسَ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى ( فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا ) قَالَ ذَلِكِ الْعَرْضُ )
‘‘যাকে হিসাব নেয়ার জন্য পাকড়াও করা হবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ আল্লাহ্ তাআলা কি বলেন নি, ‘‘তার অতি সহজ হিসাব নেয়া হবে?’’। তিনি বললেনঃ ওটা কেবল পেশ করা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]
( يَقُولُ يُجَاءُ بِالْكَافِرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ لَهُ أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ لَكَ مِلْءُ الأَرْضِ ذَهَبًا أَكُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ فَيَقُولُ نَعَمْ فَيُقَالُ : لَهُ قَدْ كُنْتَ سُئِلْتَ مَا هُوَ أَيْسَرُ مِنْ ذَلِكَ * وفي رواية : فَقَدْ سَأَلْتُكَ مَا هُوَ أَهْوَنُ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ أَنْ لاَ تُشْرِكَ بِي فَأَبَيْتَ إِلاَّ الشِّرْكَ )
‘‘কিয়ামতের দিন কাফেরকে উপস্থিত করে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার কাছে যদি সমস্ত যমীন পূর্ণ স্বর্ণ থাকত, তাহলে তুমি কি আজকের আযাব থেকে রেহাই পাওয়ার বিনিময়ে তা দিয়ে দিতে? সে বলবেঃ হ্যাঁ অবশ্যই দিয়ে দিতাম। তখন তাকে বলা হবেঃ তোমার কাছে তো এর চেয়ে অধিক সহজ বিষয়ের দাবী করা হয়েছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, তুমি যখন আদমের পৃষ্ঠে ছিলে তখন তোমার কাছে আমি এর চেয়ে অনেক সহজ একটি জিনিষ চেয়েছিলাম। সেটি হচ্ছে তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি তা মানতে অস্বীকার করেছিলে এবং আমার সাথে শরীক করাকেই বেছে নিয়েছিলে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( مَا مِنْكُمْ أَحَدٌ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ وَلَوْ بِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ )
‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ্ তাআলা কথা বলবেন। আল্লাহর মধ্যে ও বান্দার মধ্যে দোভাষী থাকবে না। মানুষ তার ডান দিকে দেখবে। তার আমল ব্যতীত অন্য কিছু দেখতে পাবে না। সে তার বাম দিকে তাকিয়ে দেখবে। তার আমল ব্যতীত অন্য কিছু দেখতে পাবে না। সে তার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখবে। সে তার চেহারার সামনে জাহান্নাম ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পাবে না। সুতরাং তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও এবং একটি ভাল কথার বিনিময়ে হলেও জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচার চেষ্টা কর’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( يَدْنُو أَحَدُكُمْ مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ كَنَفَهُ عَلَيْهِ فَيَقُولُ عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فَيَقُولُ نَعَمْ وَيَقُولُ عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فَيَقُولُ نَعَمْ فَيُقَرِّرُهُ ثُمَّ يَقُولُ إِنِّي سَتَرْتُ عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا فَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ )
‘‘তোমাদের কেউ তার প্রতিপালকের এত নিকটবর্তী হবে যে, আল্লাহ্ তার কাঁধে স্বীয় পর্দা রেখে বলবেনঃ তুমি কি এই এই কাজ করেছ? সে স্বীকার করবে এবং বলবেঃ হ্যাঁ, আমি এই এই কাজ করেছি। আল্লাহ্ও তাকে স্বীকার করাবেন। অতঃপর আল্লাহ্ বলবেনঃ আমি দুনিয়াতে তোমার এই কাজগুলো গোপন রেখেছি। আর আমি আজ তোমাকে এগুলো ক্ষমা করে দিব’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।]
( مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ عُذِّبَ قَالَتْ : قُلْتُ أَلَيْسَ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى ( فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا ) قَالَ ذَلِكِ الْعَرْضُ )
‘‘যাকে হিসাব নেয়ার জন্য পাকড়াও করা হবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ আল্লাহ্ তাআলা কি বলেন নি, ‘‘তার অতি সহজ হিসাব নেয়া হবে?’’। তিনি বললেনঃ ওটা কেবল পেশ করা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]
( يَقُولُ يُجَاءُ بِالْكَافِرِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ لَهُ أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ لَكَ مِلْءُ الأَرْضِ ذَهَبًا أَكُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ فَيَقُولُ نَعَمْ فَيُقَالُ : لَهُ قَدْ كُنْتَ سُئِلْتَ مَا هُوَ أَيْسَرُ مِنْ ذَلِكَ * وفي رواية : فَقَدْ سَأَلْتُكَ مَا هُوَ أَهْوَنُ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ أَنْ لاَ تُشْرِكَ بِي فَأَبَيْتَ إِلاَّ الشِّرْكَ )
‘‘কিয়ামতের দিন কাফেরকে উপস্থিত করে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমার কাছে যদি সমস্ত যমীন পূর্ণ স্বর্ণ থাকত, তাহলে তুমি কি আজকের আযাব থেকে রেহাই পাওয়ার বিনিময়ে তা দিয়ে দিতে? সে বলবেঃ হ্যাঁ অবশ্যই দিয়ে দিতাম। তখন তাকে বলা হবেঃ তোমার কাছে তো এর চেয়ে অধিক সহজ বিষয়ের দাবী করা হয়েছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, তুমি যখন আদমের পৃষ্ঠে ছিলে তখন তোমার কাছে আমি এর চেয়ে অনেক সহজ একটি জিনিষ চেয়েছিলাম। সেটি হচ্ছে তুমি আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি তা মানতে অস্বীকার করেছিলে এবং আমার সাথে শরীক করাকেই বেছে নিয়েছিলে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( مَا مِنْكُمْ أَحَدٌ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ وَلَوْ بِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ )
‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই আল্লাহ্ তাআলা কথা বলবেন। আল্লাহর মধ্যে ও বান্দার মধ্যে দোভাষী থাকবে না। মানুষ তার ডান দিকে দেখবে। তার আমল ব্যতীত অন্য কিছু দেখতে পাবে না। সে তার বাম দিকে তাকিয়ে দেখবে। তার আমল ব্যতীত অন্য কিছু দেখতে পাবে না। সে তার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখবে। সে তার চেহারার সামনে জাহান্নাম ছাড়া অন্য কিছু দেখতে পাবে না। সুতরাং তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও এবং একটি ভাল কথার বিনিময়ে হলেও জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচার চেষ্টা কর’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( يَدْنُو أَحَدُكُمْ مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ كَنَفَهُ عَلَيْهِ فَيَقُولُ عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فَيَقُولُ نَعَمْ وَيَقُولُ عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فَيَقُولُ نَعَمْ فَيُقَرِّرُهُ ثُمَّ يَقُولُ إِنِّي سَتَرْتُ عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا فَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ )
‘‘তোমাদের কেউ তার প্রতিপালকের এত নিকটবর্তী হবে যে, আল্লাহ্ তার কাঁধে স্বীয় পর্দা রেখে বলবেনঃ তুমি কি এই এই কাজ করেছ? সে স্বীকার করবে এবং বলবেঃ হ্যাঁ, আমি এই এই কাজ করেছি। আল্লাহ্ও তাকে স্বীকার করাবেন। অতঃপর আল্লাহ্ বলবেনঃ আমি দুনিয়াতে তোমার এই কাজগুলো গোপন রেখেছি। আর আমি আজ তোমাকে এগুলো ক্ষমা করে দিব’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।]
উত্তরঃ কুরআন মজীদে বান্দার আমলনামা প্রদান সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا * اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا
‘‘প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম আমি তার গলায় লাগিয়ে দিয়েছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। আমি বলবঃ তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট’’। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ১৩-১৪) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَإِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ
‘‘যখন আমলনামাসমূহ প্রকাশ করা হবে’’। (সূরা তাকভীরঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لاَ يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلاَ كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
‘‘আর সেদিন আমলনামা উপস্থিত করা হবে। তাতে যা আছে, তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয় নি; সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি যুলুম করবেন না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ৪৯) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمْ اقْرَءُوا كِتَابِيَه * إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلاَقٍ حِسَابِيَه * فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ * فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ * قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ * كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الأَيَّامِ الْخَالِيَةِ * وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَالَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيّه * وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَه * يَالَيْتَهَا كَانَتْ الْقَاضِيَةَ * مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيَه * هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيّه * خُذُوهُ فَغُلُّوهُ * ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ * ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ * إِنَّهُ كَانَ لاَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ * وَلاَ يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ * فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ * وَلاَ طَعَامٌ إِلاَّ مِنْ غِسْلِينٍ * لاَ يَأْكُلُهُ إِلاَّ الْخَاطِئُونَ
‘‘অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবেঃ এসো! তোমরাও আমার আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে সুউচ্চ জান্নাতে। তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে। বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে তার প্রতিদান স্বরূপ তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে। আর যার আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে হায় আমায় যদি আমলনামা না দেয়া হতো! আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায় আমার মৃত্যুই যদি শেষ পরিণতি হত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসলনা। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল। ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ একে ধর। অতঃপর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। অতঃপর তাকে এমন শিকল দিয়ে বাঁধ যার দৈর্ঘ হবে সত্তর গজ। নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না এবং মিসকীনকে খাদ্য দিতে উৎসাহিত করত না। অতএব আজকের দিনে এখানে তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং কোন খাদ্য নেই ক্ষতমিশ্রিত পুঁজ ব্যতীত। গুনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না’’। (সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৯- ৩৭) সূরা ইনশিকাকে আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ
‘‘অনন্তর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে’’। (সূরা ইনশিকাকঃ ৭) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ
‘‘এবং যাকে তার আমলনামা পিঠের পিছন দিক থেকে দেয়া হবে’’। (সূরা ইনশিকাকঃ ১০) এখান থেকে বুঝা গেল যে, যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তাকে সামনের দিক থেকে আমলনামা প্রদান করা হবে। আর যাকে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তাকে পিছনের দিক থেকে আমলনামা দেয়া হবে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا * اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا
‘‘প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্ম আমি তার গলায় লাগিয়ে দিয়েছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। আমি বলবঃ তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই তোমার হিসাব-নিকাশের জন্য যথেষ্ট’’। (সূরা বনী ইসরাঈলঃ ১৩-১৪) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَإِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ
‘‘যখন আমলনামাসমূহ প্রকাশ করা হবে’’। (সূরা তাকভীরঃ ১০) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لاَ يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلاَ كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
‘‘আর সেদিন আমলনামা উপস্থিত করা হবে। তাতে যা আছে, তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয় নি; সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি যুলুম করবেন না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ৪৯) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمْ اقْرَءُوا كِتَابِيَه * إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلاَقٍ حِسَابِيَه * فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ * فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ * قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ * كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الأَيَّامِ الْخَالِيَةِ * وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَالَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِيّه * وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَه * يَالَيْتَهَا كَانَتْ الْقَاضِيَةَ * مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيَه * هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيّه * خُذُوهُ فَغُلُّوهُ * ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ * ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ * إِنَّهُ كَانَ لاَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ * وَلاَ يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ * فَلَيْسَ لَهُ الْيَوْمَ هَاهُنَا حَمِيمٌ * وَلاَ طَعَامٌ إِلاَّ مِنْ غِسْلِينٍ * لاَ يَأْكُلُهُ إِلاَّ الْخَاطِئُونَ
‘‘অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবেঃ এসো! তোমরাও আমার আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে সুউচ্চ জান্নাতে। তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে। বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে তার প্রতিদান স্বরূপ তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে। আর যার আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে হায় আমায় যদি আমলনামা না দেয়া হতো! আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায় আমার মৃত্যুই যদি শেষ পরিণতি হত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসলনা। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল। ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ একে ধর। অতঃপর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। অতঃপর তাকে এমন শিকল দিয়ে বাঁধ যার দৈর্ঘ হবে সত্তর গজ। নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না এবং মিসকীনকে খাদ্য দিতে উৎসাহিত করত না। অতএব আজকের দিনে এখানে তার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না এবং কোন খাদ্য নেই ক্ষতমিশ্রিত পুঁজ ব্যতীত। গুনাহগার ব্যতীত কেউ এটা খাবে না’’। (সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৯- ৩৭) সূরা ইনশিকাকে আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ
‘‘অনন্তর যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে’’। (সূরা ইনশিকাকঃ ৭) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ
‘‘এবং যাকে তার আমলনামা পিঠের পিছন দিক থেকে দেয়া হবে’’। (সূরা ইনশিকাকঃ ১০) এখান থেকে বুঝা গেল যে, যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তাকে সামনের দিক থেকে আমলনামা প্রদান করা হবে। আর যাকে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তাকে পিছনের দিক থেকে আমলনামা দেয়া হবে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( يُدْنَى الْمُؤْمِنُ مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ عَلَيْهِ كَنَفَهُ فَيُقَرِّرُهُ بِذُنُوبِهِ تَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا؟ يَقُولُ : أَعْرِفُ يَقُولُ رَبِّ أَعْرِفُ ( مَرَّتَيْنِ ) فَيَقُولُ : سَتَرْتُهَا فِي الدُّنْيَا وَأَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ، ثُمَّ تُطْوَى صَحِيفَةُ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الآخَرُونَ أَوِ الْكُفَّارُ فَيُنَادَى عَلَى رُءُوسِ الأَشْهَادِ ( هَؤُلاَءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلاَ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ )
‘‘কিয়ামতের দিন মু’মিনকে তার প্রতিপালকের নিকটবর্তী করা হবে। আল্লাহ্ তার কাঁধে স্বীয় পর্দা রেখে তার গুনাহগুলো স্বীকার করাবেন। তিনি বলবেনঃ তুমি কি এই গুনাহ করেছিলে? সে স্বীকার করবে এবং বলবেঃ হ্যাঁ, আমার স্মরণ আছে। সে দ্বিতীয়বারও স্বীকার করে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি এই এই কাজ করেছি। অতঃপর আল্লাহ্ বলবেনঃ আমি দুনিয়াতে তোমার এই কাজগুলো গোপন রেখেছি। আর আমি আজ তোমাকে এগুলো ক্ষমা করে দিব। অতঃপর তার গুনাহ্এর খাতাটি বন্ধ করা হবে। আর কাফেরদেরকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডেকে বলা হবে এরা ঐসমস্ত লোক, যারা তাদের প্রভুর উপর মিথ্যা রচনা করেছিল। আর যালেমদের উপর আল্লাহর লা’নত’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
( يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ يَذْكُرُ الْحَبِيبُ حَبِيبَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ : يَا عَائِشَةُ أَمَّا عِنْدَ ثَلاَثٍ فَلاَ أَمَّا عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَثْقُلَ أَوْ يَخِفَّ فَلاَ وَأَمَّا عِنْدَ تَطَايُرِ الْكُتُبِ، فَإِمَّا أَنْ يُعْطَى بِيَمِينِهِ أَوْ يُعْطَى بِشِمَالِهِ فَلاَ وَحِينَ يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ )
‘‘হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন কি কোন লোক তার বন্ধুকে স্মরণ করবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেনঃ হে আয়েশা! তিনটি স্থান এমন রয়েছে যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা (১) মানুষের আমল যখন মাপা হবে। তখন মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে। চিন্তা একটাই থাকবে, তার নেক আমলের পাল্লা ভারী হয় না হালকা হয়? (২) যখন প্রত্যেকের আমলনামা দেয়া হবে তখন কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। আমলনামা ডান হাতে পাবে না বাম হাতে পাবে? এনিয়ে চিন্তিত থাকবে (৩) পুলসিরাত পার হওয়ার সময়ও সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কেউ কাউকে স্মরণ করবে না’’। [-আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ। ইবনে লাহীআ ব্যতীত হাদীছের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।]
( يُدْنَى الْمُؤْمِنُ مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ عَلَيْهِ كَنَفَهُ فَيُقَرِّرُهُ بِذُنُوبِهِ تَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا؟ يَقُولُ : أَعْرِفُ يَقُولُ رَبِّ أَعْرِفُ ( مَرَّتَيْنِ ) فَيَقُولُ : سَتَرْتُهَا فِي الدُّنْيَا وَأَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ، ثُمَّ تُطْوَى صَحِيفَةُ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الآخَرُونَ أَوِ الْكُفَّارُ فَيُنَادَى عَلَى رُءُوسِ الأَشْهَادِ ( هَؤُلاَءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلاَ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ )
‘‘কিয়ামতের দিন মু’মিনকে তার প্রতিপালকের নিকটবর্তী করা হবে। আল্লাহ্ তার কাঁধে স্বীয় পর্দা রেখে তার গুনাহগুলো স্বীকার করাবেন। তিনি বলবেনঃ তুমি কি এই গুনাহ করেছিলে? সে স্বীকার করবে এবং বলবেঃ হ্যাঁ, আমার স্মরণ আছে। সে দ্বিতীয়বারও স্বীকার করে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমি এই এই কাজ করেছি। অতঃপর আল্লাহ্ বলবেনঃ আমি দুনিয়াতে তোমার এই কাজগুলো গোপন রেখেছি। আর আমি আজ তোমাকে এগুলো ক্ষমা করে দিব। অতঃপর তার গুনাহ্এর খাতাটি বন্ধ করা হবে। আর কাফেরদেরকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডেকে বলা হবে এরা ঐসমস্ত লোক, যারা তাদের প্রভুর উপর মিথ্যা রচনা করেছিল। আর যালেমদের উপর আল্লাহর লা’নত’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
( يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ يَذْكُرُ الْحَبِيبُ حَبِيبَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ : يَا عَائِشَةُ أَمَّا عِنْدَ ثَلاَثٍ فَلاَ أَمَّا عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَثْقُلَ أَوْ يَخِفَّ فَلاَ وَأَمَّا عِنْدَ تَطَايُرِ الْكُتُبِ، فَإِمَّا أَنْ يُعْطَى بِيَمِينِهِ أَوْ يُعْطَى بِشِمَالِهِ فَلاَ وَحِينَ يَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ )
‘‘হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন কি কোন লোক তার বন্ধুকে স্মরণ করবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেনঃ হে আয়েশা! তিনটি স্থান এমন রয়েছে যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা (১) মানুষের আমল যখন মাপা হবে। তখন মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে। চিন্তা একটাই থাকবে, তার নেক আমলের পাল্লা ভারী হয় না হালকা হয়? (২) যখন প্রত্যেকের আমলনামা দেয়া হবে তখন কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। আমলনামা ডান হাতে পাবে না বাম হাতে পাবে? এনিয়ে চিন্তিত থাকবে (৩) পুলসিরাত পার হওয়ার সময়ও সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কেউ কাউকে স্মরণ করবে না’’। [-আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ। ইবনে লাহীআ ব্যতীত হাদীছের অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।]
উত্তরঃ কিয়ামতের দিন বান্দাদের আমল মাপার জন্যে দাড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ
‘‘আমি কিয়ামতের দিন ন্যায় বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি জুলুম হবেনা। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ৪৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِيْ جَهَنَّمَ خَالِدُوْنَ
‘‘আর সে দিন যথাযথই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। তারা জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে (সূরা আ’রাফঃ ৮-৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ نَارٌ حَامِيَةٌ
‘‘অতঃপর যার পাল্লা ভারী হবে সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে হাভীয়া (জাহান্নাম)। আপনি জানেন তা কি? তা হচ্ছে প্রজ্জলিত অগ্নি’’। (সূরা আল-কারিআহঃ ৬-১১) আল্লাহ্ তা’আলা কাফেরদের ব্যাপারে বলেনঃ
فَلاَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
‘‘সুতরাং কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য কোন পরিমাপ প্রতিষ্ঠিত করব না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১০৫) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ
‘‘আমি কিয়ামতের দিন ন্যায় বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি জুলুম হবেনা। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট’’। (সূরা আম্বিয়াঃ ৪৭) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُوْلَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِيْ جَهَنَّمَ خَالِدُوْنَ
‘‘আর সে দিন যথাযথই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। তারা জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে (সূরা আ’রাফঃ ৮-৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ نَارٌ حَامِيَةٌ
‘‘অতঃপর যার পাল্লা ভারী হবে সে সুখী জীবন যাপন করবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে তার ঠিকানা হবে হাভীয়া (জাহান্নাম)। আপনি জানেন তা কি? তা হচ্ছে প্রজ্জলিত অগ্নি’’। (সূরা আল-কারিআহঃ ৬-১১) আল্লাহ্ তা’আলা কাফেরদের ব্যাপারে বলেনঃ
فَلاَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
‘‘সুতরাং কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য কোন পরিমাপ প্রতিষ্ঠিত করব না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১০৫) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ اللَّهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلًا مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَقُولُ أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الْحَافِظُونَ فَيَقُولُ لَا يَا رَبِّ فَيَقُولُ أَفَلَكَ عُذْرٌ فَيَقُولُ لَا يَا رَبِّ فَيَقُولُ بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً فَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتَخْرُجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فَيَقُولُ احْضُرْ وَزْنَكَ فَيَقُولُ يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ فَقَالَ إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ قَالَ فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ )
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা সমস্ত মানুষের সামনে আমার উম্মতের একজন লোককে উপস্থিত করবেন। তার সামনে নিরানববইটি ফাইল (খাতা) বের করা হবে। প্রত্যেকটি ফাইলের বিশালতা হবে চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেনঃ এখানে যা লেখা আছে তার কোন কিছু কি তুমি অস্বীকার করতে পারবে? আমার ফেরেশতাগণ কি তোমার উপর জুলুম করেছে? তখন সে লোকটি বলবেঃ হে আমার প্রভু! আপনার ফেরেশতাগণ অন্যায় কিছু লেখে নাই। আল্লাহ বলবেনঃ তোমার কোন অযুহাত আছে কি? তখন সে লোকটি বলবেঃ হে আমার প্রভু! আমার কোন অযুহাত নেই। তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমার কাছে তোমার একটি নেকী আছে। আজকে তোমার উপর বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবেনা। তারপর একটি কার্ড বের করা হবে। তাতে লিখা থাকবেঃ
) أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ )
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ বলবেনঃ দেখ! তোমার আমল ওজন করা হবে। সে বলবেঃ হে আমার প্রভু! এতগুলো বিশাল ফাইল ভর্তি গুনার তুলনায় এই কার্ডটির কোন ওজনই হবেনা। আল্লাহ বলবেনঃ আজ তোমার উপর বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবেনা। অতঃপর মান দন্ডের এক পাল্লায় রাখা হবে নিরানববইটি ফাইল এবং অপর পাল্লায় রাখা হবে শুধু মাত্র ঐ কার্ডটি। এবার ওজনের সময় তার গুনায় ভর্তি নিরানববইটি ফাইলের পাল্লা হালকা হয়ে যাবে এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লার পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আল্লাহর নামের সাথে অন্য বস্ত্তর কোন ওজনই হবেনা’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ১৩৫।] একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহবীদেরকে বললেনঃ
( مِمَّ تَضْحَكُونَ قَالُوا يَا نَبِيَّ اللَّهِ مِنْ دِقَّةِ سَاقَيْهِ فَقَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُمَا أَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ مِنْ أُحُدٍ )
‘‘তোমরা কি কারণে হাসছ? তারা বললেনঃ তাঁর (আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের) পায়ের চিকন নলা দেখে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, এই নলা দু’টি মীযানের পাল্লায় উহুদ পাহাড়ের চেয়েও ভারী হবে’’। [- মুসনাদে আহমাদ, (১/৪২০, ৪২১), হাকেম বলেনঃ হাদীছের সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী একমত পোষণ করেছেন। ইমাম আলবানীও হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ৩১৯২] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إِنَّهُ لَيَأْتِي الرَّجُلُ الْعَظِيمُ السَّمِينُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَزِنُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ ،وَقَالَ : اقْرَءُوا فَلاَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا )
‘‘কিয়ামতের দিন মোটা তাজা ভারী বিশাল আকৃতির লোককে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে একটি মশার পাখার ন্যায়ও তার ওজন হবে না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করঃ
فَلاَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
‘‘সুতরাং কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য কোন পরিমাপ প্রতিষ্ঠিত করব না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১০৫) [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর। মুসলিম, অধ্যায়ঃ সিফাতুল মুনাফিকীন।] এছাড়া এমর্মে আরো হাদীছ বিদ্যমান।
( إِنَّ اللَّهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلًا مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلًّا كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَقُولُ أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الْحَافِظُونَ فَيَقُولُ لَا يَا رَبِّ فَيَقُولُ أَفَلَكَ عُذْرٌ فَيَقُولُ لَا يَا رَبِّ فَيَقُولُ بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً فَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتَخْرُجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فَيَقُولُ احْضُرْ وَزْنَكَ فَيَقُولُ يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ فَقَالَ إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ قَالَ فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ وَالْبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ فَطَاشَتِ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتِ الْبِطَاقَةُ فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ )
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা সমস্ত মানুষের সামনে আমার উম্মতের একজন লোককে উপস্থিত করবেন। তার সামনে নিরানববইটি ফাইল (খাতা) বের করা হবে। প্রত্যেকটি ফাইলের বিশালতা হবে চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত। অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেনঃ এখানে যা লেখা আছে তার কোন কিছু কি তুমি অস্বীকার করতে পারবে? আমার ফেরেশতাগণ কি তোমার উপর জুলুম করেছে? তখন সে লোকটি বলবেঃ হে আমার প্রভু! আপনার ফেরেশতাগণ অন্যায় কিছু লেখে নাই। আল্লাহ বলবেনঃ তোমার কোন অযুহাত আছে কি? তখন সে লোকটি বলবেঃ হে আমার প্রভু! আমার কোন অযুহাত নেই। তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমার কাছে তোমার একটি নেকী আছে। আজকে তোমার উপর বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবেনা। তারপর একটি কার্ড বের করা হবে। তাতে লিখা থাকবেঃ
) أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ )
‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ বলবেনঃ দেখ! তোমার আমল ওজন করা হবে। সে বলবেঃ হে আমার প্রভু! এতগুলো বিশাল ফাইল ভর্তি গুনার তুলনায় এই কার্ডটির কোন ওজনই হবেনা। আল্লাহ বলবেনঃ আজ তোমার উপর বিন্দুমাত্র জুলুম করা হবেনা। অতঃপর মান দন্ডের এক পাল্লায় রাখা হবে নিরানববইটি ফাইল এবং অপর পাল্লায় রাখা হবে শুধু মাত্র ঐ কার্ডটি। এবার ওজনের সময় তার গুনায় ভর্তি নিরানববইটি ফাইলের পাল্লা হালকা হয়ে যাবে এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লার পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আল্লাহর নামের সাথে অন্য বস্ত্তর কোন ওজনই হবেনা’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান, ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ১৩৫।] একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহবীদেরকে বললেনঃ
( مِمَّ تَضْحَكُونَ قَالُوا يَا نَبِيَّ اللَّهِ مِنْ دِقَّةِ سَاقَيْهِ فَقَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُمَا أَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ مِنْ أُحُدٍ )
‘‘তোমরা কি কারণে হাসছ? তারা বললেনঃ তাঁর (আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের) পায়ের চিকন নলা দেখে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ঐ সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, এই নলা দু’টি মীযানের পাল্লায় উহুদ পাহাড়ের চেয়েও ভারী হবে’’। [- মুসনাদে আহমাদ, (১/৪২০, ৪২১), হাকেম বলেনঃ হাদীছের সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী একমত পোষণ করেছেন। ইমাম আলবানীও হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ৩১৯২] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إِنَّهُ لَيَأْتِي الرَّجُلُ الْعَظِيمُ السَّمِينُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَزِنُ عِنْدَ اللَّهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ ،وَقَالَ : اقْرَءُوا فَلاَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا )
‘‘কিয়ামতের দিন মোটা তাজা ভারী বিশাল আকৃতির লোককে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে একটি মশার পাখার ন্যায়ও তার ওজন হবে না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করঃ
فَلاَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا
‘‘সুতরাং কিয়ামতের দিন আমি তাদের জন্য কোন পরিমাপ প্রতিষ্ঠিত করব না’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১০৫) [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর। মুসলিম, অধ্যায়ঃ সিফাতুল মুনাফিকীন।] এছাড়া এমর্মে আরো হাদীছ বিদ্যমান।
উত্তরঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামের উপরে পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌঁছবেনা। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা। অতঃপর আমি আল্লাহ ভীরুদেরকে উদ্ধার করবো এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিবো’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৭১-৭২) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَى نُورُهُمْ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ
‘‘সেদিন আপনি মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবেন যে, তাদের সামনে ও ডান পার্শ্বে তাদের নূর ছুটাছুটি করবে’’। (সূরা হাদীদঃ ১২)
وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌঁছবেনা। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা। অতঃপর আমি আল্লাহ ভীরুদেরকে উদ্ধার করবো এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিবো’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৭১-৭২) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَى نُورُهُمْ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ
‘‘সেদিন আপনি মুমিন নর-নারীদেরকে দেখবেন যে, তাদের সামনে ও ডান পার্শ্বে তাদের নূর ছুটাছুটি করবে’’। (সূরা হাদীদঃ ১২)
উত্তরঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামের উপরে যে পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। এব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে। শাফাআতের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
يُؤْتَى بِالْجَسْرِ فَيُجْعَلُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَمَا الْجَسْرُ قَالَ : مَدْحَضَةٌ مَزِلَّةٌ عَلَيْهِ خَطَاطِيفُ وَكَلَالِيبُ وَحَسَكَةٌ مُفَلْطَحَةٌ لَهَا شَوْكَةٌ عُقَيْفَاءُ تَكُونُ بِنَجْدٍ يُقَالُ لَهَا السَّعْدَانُ الْمُؤْمِنُ عَلَيْهَا كَالطَّرْفِ وَكَالْبَرْقِ وَكَالرِّيحِ وَكَأَجَاوِيدِ الْخَيْلِ وَالرِّكَابِ فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ وَنَاجٍ مَخْدُوشٌ وَمَكْدُوسٌ فِي نَارِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَمُرَّ آخِرُهُمْ يُسْحَبُ سَحْبًا
‘‘কিয়ামতের দিন পুলসিরাতকে জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে। সাহাবীগণ বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! পুলসিরাত কি? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এটি পিছলিয়ে ফেলে দেয়ার স্থান। তাতে থাকবে বড়শীর মত মাথা বাঁকা বিশিষ্ট লোহা (যা মানুষকে ছোঁ মেরে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে), লোহার আঁকুড়া এবং লোহার শক্ত ও লম্বা কাঁটা, যা নজদ অঞ্চলে জন্মে থাকে। একে বলা হয় সা’দান কাঁটা। মুমিনগণ চোখের পলকে, বিজলির গতিতে, বাতাসের গতিতে, দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে এবং উটের গতিতে পুলসিরাত পার হবে। কেউ সম্পূর্ণ মুক্ত অবস্থায় বের হয়ে আসবে। কেউ আহত হবে এবং পরে তা থেকে পরিত্রাণ পাবে। কেউবা জাহান্নামের আগুনে নিপতিত হবে। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তিকে টেনে-হিঁচড়ে পার করা হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, জাহান্নামের পুল চুলের চেয়ে অধিক চিকন এবং তলোয়ারের চেয়ে অধিক ধারালো। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
يُؤْتَى بِالْجَسْرِ فَيُجْعَلُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ : وَمَا الْجَسْرُ قَالَ : مَدْحَضَةٌ مَزِلَّةٌ عَلَيْهِ خَطَاطِيفُ وَكَلَالِيبُ وَحَسَكَةٌ مُفَلْطَحَةٌ لَهَا شَوْكَةٌ عُقَيْفَاءُ تَكُونُ بِنَجْدٍ يُقَالُ لَهَا السَّعْدَانُ الْمُؤْمِنُ عَلَيْهَا كَالطَّرْفِ وَكَالْبَرْقِ وَكَالرِّيحِ وَكَأَجَاوِيدِ الْخَيْلِ وَالرِّكَابِ فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ وَنَاجٍ مَخْدُوشٌ وَمَكْدُوسٌ فِي نَارِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَمُرَّ آخِرُهُمْ يُسْحَبُ سَحْبًا
‘‘কিয়ামতের দিন পুলসিরাতকে জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে। সাহাবীগণ বলেনঃ আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! পুলসিরাত কি? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এটি পিছলিয়ে ফেলে দেয়ার স্থান। তাতে থাকবে বড়শীর মত মাথা বাঁকা বিশিষ্ট লোহা (যা মানুষকে ছোঁ মেরে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে), লোহার আঁকুড়া এবং লোহার শক্ত ও লম্বা কাঁটা, যা নজদ অঞ্চলে জন্মে থাকে। একে বলা হয় সা’দান কাঁটা। মুমিনগণ চোখের পলকে, বিজলির গতিতে, বাতাসের গতিতে, দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে এবং উটের গতিতে পুলসিরাত পার হবে। কেউ সম্পূর্ণ মুক্ত অবস্থায় বের হয়ে আসবে। কেউ আহত হবে এবং পরে তা থেকে পরিত্রাণ পাবে। কেউবা জাহান্নামের আগুনে নিপতিত হবে। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তিকে টেনে-হিঁচড়ে পার করা হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
আবু সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, জাহান্নামের পুল চুলের চেয়ে অধিক চিকন এবং তলোয়ারের চেয়ে অধিক ধারালো। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ কিয়ামতের দিন সকল প্রকার যুলুমের বদলা নেয়া হবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لاَ يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা বিন্দুমাত্র যুলুম করবেন না এবং যদি কোন সৎকাজ থাকে তবে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবেন। আর আল্লাহ্ তাঁর নিকট হতে মহান প্রতিদান প্রদান করবেন’’। (সূরা নিসাঃ ৪০) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
الْيَوْمَ تُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لاَ ظُلْمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ * وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْآزِفَةِ إِذْ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلاَ شَفِيعٍ يُطَاعُ * يَعْلَمُ خَائِنَةَ الأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ * وَاللَّهُ يَقْضِي بِالْحَقِّ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لاَ يَقْضُونَ بِشَيْءٍ إِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
‘‘আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে। আজ কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী। আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন। যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপীদের জন্য এমন কোন বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবেনা, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। চক্ষুর খেয়ানত ও অন্তরে যা গোপন আছে সে ব্যাপারে তিনি অবহিত। আর আল্লাহই ফয়সালা করেন ইনসাফের সাথে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৭-২০) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
‘‘আর তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে ফয়সালা করা হবে। তাদের উপর কোন প্রকার যুলুম করা হবে না’’। (সূরা যুমারঃ ৬৯)
إِنَّ اللَّهَ لاَ يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُضَاعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْرًا عَظِيمًا
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা বিন্দুমাত্র যুলুম করবেন না এবং যদি কোন সৎকাজ থাকে তবে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবেন। আর আল্লাহ্ তাঁর নিকট হতে মহান প্রতিদান প্রদান করবেন’’। (সূরা নিসাঃ ৪০) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
الْيَوْمَ تُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لاَ ظُلْمَ الْيَوْمَ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ * وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْآزِفَةِ إِذْ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلاَ شَفِيعٍ يُطَاعُ * يَعْلَمُ خَائِنَةَ الأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ * وَاللَّهُ يَقْضِي بِالْحَقِّ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لاَ يَقْضُونَ بِشَيْءٍ إِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
‘‘আজ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে। আজ কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী। আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন। যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপীদের জন্য এমন কোন বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবেনা, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। চক্ষুর খেয়ানত ও অন্তরে যা গোপন আছে সে ব্যাপারে তিনি অবহিত। আর আল্লাহই ফয়সালা করেন ইনসাফের সাথে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৭-২০) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ
‘‘আর তাদের মাঝে ইনসাফের সাথে ফয়সালা করা হবে। তাদের উপর কোন প্রকার যুলুম করা হবে না’’। (সূরা যুমারঃ ৬৯)
১২৮
প্রশ্নঃ (১২৬) কিয়ামতের দিন পারস্পরিক যুলুমের বদলা নেয়ার ব্যাপারে সুন্নাত থেকে দলীল দিন। হাদীছ শরীফে বদলা নেয়ার পদ্ধতি কিভাবে বর্ণিত হয়েছে?উত্তরঃ কিয়ামতের দিন পারস্পরিক যুলুমের বদলা নেয়ার ব্যাপারে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاءِ )
‘‘কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত দিয়া‘ত] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لَا يَكُونَ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْه )
‘‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে অত্যাচারের জন্য দায়ী সে যেন সেই দিন আসার আগে আজই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়, যেদিন কোন দীনার বা দিরহাম থাকবেনা। তার যদি কোন ভাল আমল থেকে থাকে তা থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কেটে নেয়া হবে। আর তার যদি কোন নেকী না থাকে তবে মজলুমের পাপ থেকে কিছু নিয়ে জালেমের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালিম।] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
) يَخْلُصُ الْمُؤْمِنُونَ مِنْ النَّارِ فَيُحْبَسُونَ عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُقَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ مَظَالِمُ كَانَتْ بَيْنَهُمْ فِي الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَأَحَدُهُمْ أَهْدَى بِمَنْزِلِهِ فِي الْجَنَّةِ مِنْهُ بِمَنْزِلِهِ كَانَ فِي الدُّنْيَا (
‘‘মু’মিনগণ যখন জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাবে তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি পুলের উপর থামানো হবে। তখন দুনিয়াতে একে অপরের প্রতি যে যুলুম করেছিল, তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সেই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার বাড়ী যেমন চিনত তার চাইতে বেশী তার বেহেশতের বাড়ীকে চিনতে পারবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালিম।]
( أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاءِ )
‘‘কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে’’। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত দিয়া‘ত] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لِأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لَا يَكُونَ دِينَارٌ وَلَا دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْه )
‘‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে অত্যাচারের জন্য দায়ী সে যেন সেই দিন আসার আগে আজই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়, যেদিন কোন দীনার বা দিরহাম থাকবেনা। তার যদি কোন ভাল আমল থেকে থাকে তা থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কেটে নেয়া হবে। আর তার যদি কোন নেকী না থাকে তবে মজলুমের পাপ থেকে কিছু নিয়ে জালেমের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালিম।] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
) يَخْلُصُ الْمُؤْمِنُونَ مِنْ النَّارِ فَيُحْبَسُونَ عَلَى قَنْطَرَةٍ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَيُقَصُّ لِبَعْضِهِمْ مِنْ بَعْضٍ مَظَالِمُ كَانَتْ بَيْنَهُمْ فِي الدُّنْيَا حَتَّى إِذَا هُذِّبُوا وَنُقُّوا أُذِنَ لَهُمْ فِي دُخُولِ الْجَنَّةِ فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَأَحَدُهُمْ أَهْدَى بِمَنْزِلِهِ فِي الْجَنَّةِ مِنْهُ بِمَنْزِلِهِ كَانَ فِي الدُّنْيَا (
‘‘মু’মিনগণ যখন জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাবে তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি পুলের উপর থামানো হবে। তখন দুনিয়াতে একে অপরের প্রতি যে যুলুম করেছিল, তার প্রতিশোধ নেয়া হবে। তাদেরকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। সেই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তাদের প্রত্যেকে পৃথিবীতে তার বাড়ী যেমন চিনত তার চাইতে বেশী তার বেহেশতের বাড়ীকে চিনতে পারবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালিম।]
উত্তরঃ হাশরের মাঠে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাউজে কাউছার থাকবে। এ ব্যাপারে সহীহ হাদীছগুলো মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ )
‘‘আমি হাউজের কাছে তোমাদের সকলের পূর্বেই পৌঁছে যাব’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إِنِّي فَرَطُكُمْ وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ وَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَنْظُرُ إِلَى حَوْضِي الْآنَ )
‘‘আমি তোমাদের পূর্বেই হাউজের কাছে পৌঁছে যাব। আমি তোমাদের উপর সাক্ষী হব। আল্লাহর শপথ! আমি এখান থেকে এখনই আমার হাউজ দেখতে পাচ্ছি’’। [- উপরোক্ত উৎস্য।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ الْمِسْكِ وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلاَ يَظْمَأُ أَبَدًا )
‘‘আমার হাউজের দৈর্ঘ্য হবে এক মাসের দূরত্বের সমান। যার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার সুঘ্রাণ হবে কস্তুরীর চেয়েও উত্তম। তার পেয়ালার সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমপরিমাণ। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পানি পান করবে চিরদিনের জন্যে তার পিপাসা মিটে যাবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( أَتَيْتُ عَلَى نَهَرٍ حَافَتَاهُ قِبَابُ اللُّؤْلُؤِ مُجَوَّفًا فَقُلْتُ : مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ )
‘‘আমি একটি নদীর পাশে উপস্থিত হলাম। তার উভয় পার্শ্ব ছিল ভিতরে ফাপা মুক্তার তাঁবুর মত। আমি বললামঃ হে জিবরীল! এটি কোন্ নদী? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এটি হচ্ছে হাউজে কাউছার। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] এছাড়া হাউজে কাউছার সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
( أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ )
‘‘আমি হাউজের কাছে তোমাদের সকলের পূর্বেই পৌঁছে যাব’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إِنِّي فَرَطُكُمْ وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ وَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَنْظُرُ إِلَى حَوْضِي الْآنَ )
‘‘আমি তোমাদের পূর্বেই হাউজের কাছে পৌঁছে যাব। আমি তোমাদের উপর সাক্ষী হব। আল্লাহর শপথ! আমি এখান থেকে এখনই আমার হাউজ দেখতে পাচ্ছি’’। [- উপরোক্ত উৎস্য।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( حَوْضِي مَسِيرَةُ شَهْرٍ مَاؤُهُ أَبْيَضُ مِنَ اللَّبَنِ وَرِيحُهُ أَطْيَبُ مِنَ الْمِسْكِ وَكِيزَانُهُ كَنُجُومِ السَّمَاءِ مَنْ شَرِبَ مِنْهَا فَلاَ يَظْمَأُ أَبَدًا )
‘‘আমার হাউজের দৈর্ঘ্য হবে এক মাসের দূরত্বের সমান। যার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার সুঘ্রাণ হবে কস্তুরীর চেয়েও উত্তম। তার পেয়ালার সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমপরিমাণ। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পানি পান করবে চিরদিনের জন্যে তার পিপাসা মিটে যাবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( أَتَيْتُ عَلَى نَهَرٍ حَافَتَاهُ قِبَابُ اللُّؤْلُؤِ مُجَوَّفًا فَقُلْتُ : مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَذَا الْكَوْثَرُ )
‘‘আমি একটি নদীর পাশে উপস্থিত হলাম। তার উভয় পার্শ্ব ছিল ভিতরে ফাপা মুক্তার তাঁবুর মত। আমি বললামঃ হে জিবরীল! এটি কোন্ নদী? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এটি হচ্ছে হাউজে কাউছার। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] এছাড়া হাউজে কাউছার সম্পর্কে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।
উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ * وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ
‘‘তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন বেহেশত রয়েছে, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে’’। (সূরা বাকারাঃ ২৪-২৫) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাযের দু’আয় বলতেনঃ
( اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ والنبيون حق ومحمد صلى الله عليه وسلم حق وَالسَّاعَةُ حَقٌّ )
‘‘হে আল্লাহ! আপনার জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান-যমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যস্থিত সকল বস্ত্তর আলো। আপনার জন্য সকল প্রশংসা। আপনি আসমান-যমিনের বাদশাহ। আপনার জন্য সকল প্রশংসা। আপনি সত্য, আপনার অঙ্গিকার সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, আপনার কথা সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং কিয়ামত সত্য। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত।] উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ الْعَمَلِ وفي رواية : مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ أَيَّهَا شَاءَ )
‘‘যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁর বাক্য, যা তিনি মারইয়াম পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর রূহ। আর এই সাক্ষ্য দিবে যে, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য তাকে আল্লাহ্ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তার আমল যাই হোক। অন্য বর্ণনায় আছে, জান্নাতের আটটি দরজার যে কোন একটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ * وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ
‘‘তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য। আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন বেহেশত রয়েছে, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে’’। (সূরা বাকারাঃ ২৪-২৫) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের নামাযের দু’আয় বলতেনঃ
( اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ والنبيون حق ومحمد صلى الله عليه وسلم حق وَالسَّاعَةُ حَقٌّ )
‘‘হে আল্লাহ! আপনার জন্য সমস্ত প্রশংসা। আপনি আসমান-যমিন এবং এ দু’য়ের মধ্যস্থিত সকল বস্ত্তর আলো। আপনার জন্য সকল প্রশংসা। আপনি আসমান-যমিনের বাদশাহ। আপনার জন্য সকল প্রশংসা। আপনি সত্য, আপনার অঙ্গিকার সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, আপনার কথা সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং কিয়ামত সত্য। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুদ্ দাওয়াত।] উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ الْعَمَلِ وفي رواية : مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةِ أَيَّهَا شَاءَ )
‘‘যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি এক। তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁর বাক্য, যা তিনি মারইয়াম পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর রূহ। আর এই সাক্ষ্য দিবে যে, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য তাকে আল্লাহ্ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তার আমল যাই হোক। অন্য বর্ণনায় আছে, জান্নাতের আটটি দরজার যে কোন একটি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উত্তরঃ জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়নের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে এই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টিই তৈরী করা হয়েছে এবং তা এখনও প্রস্ত্তত আছে। আল্লাহর হুকুমে এদু’টি চিরকাল থাকবে, কখনও ধ্বংস হবে না। এমনিভাবে জান্নাতের সকল নেয়ামত ও জাহান্নামের সর্বপ্রকার আযাবের প্রতি ঈমান আনয়ন জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়নের অন্তর্ভূক্ত।
উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরী করা হয়েছে এবং তা এখনও প্রস্ত্তত আছে। জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
‘‘জান্নাত মুত্তাকীদের জন্য তৈরী রাখা হয়েছে’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৩৩) আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নামের ব্যাপারে বলেনঃ
أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
‘‘জাহান্নাম কাফেরদের জন্য প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে’’। (সূরাঃ আল-ইমরানঃ ১৩১) আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদম ও তাঁর স্ত্রীকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন। আরো সংবাদ দিয়েছেন যে, কাফেরদেরকে সকাল-বিকালে জাহান্নামের উপর পেশ করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ )
‘‘আমি জান্নাত দেখলাম। তার অধিকাংশ অধিবাসীকেই দেখলাম যে, তারা গরীব লোক। আর আমি জাহান্নামও দেখলাম। তার অধিকাংশ অধিবাসীই ছিল মহিলা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ )
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে তার ঠিকানা পেশ করা হয়। সে জান্নাতের অধিবাসী হলে জান্নাতে আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। এটিই হচ্ছে তোমার ঠিকানা। কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হওয়ার পর আল্লাহ্ তোমাকে এখানে পাঠাবেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
( إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ )
‘‘যখন প্রচন্ড গরম পড়বে তখন তোমরা দেরী করে যোহরের নামায আদায় কর। কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকেই’’। [বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাওয়াকীত।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
وَاشْتَكَتْ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ يَا رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَهُوَ أَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنْ الْحَرِّ وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنْ الزَّمْهَرِيرِ
‘‘জাহান্নামের আগুন তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করলেন। একটি শীতের মৌসুমে অন্যটি গরমের মৌসুমে। সুতরাং গরমের মৌসুমে তোমরা প্রচন্ড গরম এবং শীতের মৌসুমে প্রচন্ড শীত অনুভব করে থাক। [বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাওয়াকীত।] তিনি আরো বলেনঃ
( الْحُمَّى مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَأَبْرِدُوهَا بِالْمَاءِ )
‘‘জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। সুতরাং পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তিবব।]
( لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ أَرْسَلَ جِبْرِيلَ إِلَى الْجَنَّةِ فَقَالَ انْظُرْ إِلَيْهَا )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করে জিবরীলকে জান্নাতে পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি যাও এবং তা দেখ’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ সিফাতুল জান্নাত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।]
সূর্য গ্রহণের দিন নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছিল। এমনিভাবে মিরাজের রাত্রিতেও তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল। জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরী আছে এমর্মে আরো অগণিত হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে।
أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
‘‘জান্নাত মুত্তাকীদের জন্য তৈরী রাখা হয়েছে’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৩৩) আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নামের ব্যাপারে বলেনঃ
أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
‘‘জাহান্নাম কাফেরদের জন্য প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে’’। (সূরাঃ আল-ইমরানঃ ১৩১) আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদম ও তাঁর স্ত্রীকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন। আরো সংবাদ দিয়েছেন যে, কাফেরদেরকে সকাল-বিকালে জাহান্নামের উপর পেশ করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ )
‘‘আমি জান্নাত দেখলাম। তার অধিকাংশ অধিবাসীকেই দেখলাম যে, তারা গরীব লোক। আর আমি জাহান্নামও দেখলাম। তার অধিকাংশ অধিবাসীই ছিল মহিলা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।] আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ )
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে তার ঠিকানা পেশ করা হয়। সে জান্নাতের অধিবাসী হলে জান্নাতে আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। এটিই হচ্ছে তোমার ঠিকানা। কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হওয়ার পর আল্লাহ্ তোমাকে এখানে পাঠাবেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
( إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ )
‘‘যখন প্রচন্ড গরম পড়বে তখন তোমরা দেরী করে যোহরের নামায আদায় কর। কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকেই’’। [বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাওয়াকীত।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
وَاشْتَكَتْ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ يَا رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَهُوَ أَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنْ الْحَرِّ وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنْ الزَّمْهَرِيرِ
‘‘জাহান্নামের আগুন তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করলেন। একটি শীতের মৌসুমে অন্যটি গরমের মৌসুমে। সুতরাং গরমের মৌসুমে তোমরা প্রচন্ড গরম এবং শীতের মৌসুমে প্রচন্ড শীত অনুভব করে থাক। [বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাওয়াকীত।] তিনি আরো বলেনঃ
( الْحُمَّى مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَأَبْرِدُوهَا بِالْمَاءِ )
‘‘জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। সুতরাং পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তিবব।]
( لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ أَرْسَلَ جِبْرِيلَ إِلَى الْجَنَّةِ فَقَالَ انْظُرْ إِلَيْهَا )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করে জিবরীলকে জান্নাতে পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি যাও এবং তা দেখ’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ সিফাতুল জান্নাত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।]
সূর্য গ্রহণের দিন নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছিল। এমনিভাবে মিরাজের রাত্রিতেও তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল। জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরী আছে এমর্মে আরো অগণিত হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে।
উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআ’লা জান্নাত চিরস্থায়ী হওয়ার ব্যাপারে বলেনঃ
خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘‘তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটি হচ্ছে বিরাট সফলতা’’। (সূরা তাওবাঃ ১০০) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ
‘‘তাদেরকে সেখান থেকে বের করা হবে না’’। (সূরা হিজরঃ ৪৮) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ
‘‘ওটা হবে অফুরন্ত দান’’। (সূরা হুদঃ ১০৮) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
لاَ مَقْطُوعَةٍ وَلاَ مَمْنُوعَةٍ
‘‘জান্নাতের ফল শেষ হবে না এবং তা নিষিদ্ধও হবে না’’। (সূরা আল-ওয়াকিয়াঃ ৩৩) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
إِنَّ هَذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِنْ نَفَادٍ
‘‘এটা আমার দেয়া রিযিক। তা কখনও শেষ হবে না’’। (সূরা সোয়াদঃ ৫৪) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ (51) فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (52) يَلْبَسُونَ مِنْ سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ (53) كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ (54) يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ (55) لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَى
‘‘নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে। বাগান ও ঝর্ণার মধ্যে। তাঁরা পরিধান করবে চিকন ও মোটা রেশমী পোষাক এবং তারা মুখোমুখী হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে। এবং তাদেরকে সঙ্গীনি দিব বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট পরমা সুন্দরী। সেখানে তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফল-মূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না’’। (সূরা দুখানঃ ৫১-৫৫) এছাড়া আরো আয়াত রয়েছে, যাতে আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের চিরস্থায়ী হওয়ার কথা বলেছেন। এও বলেছেন যে, জান্নাতের নেয়ামত তাদের থেকে কখনও শেষ হবে না এবং তারা জান্নাত থেকে কখনও বেরও হবে না।
জাহান্নামের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَظَلَمُوا لَمْ يَكُنْ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيقًا إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
‘‘নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে এবং যুলুম করেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করবেন না। জাহান্নামের পথ ব্যতীত। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৮-১৬৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيرًا * خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لاَ يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلاَ نَصِيرًا
‘‘আল্লাহ্ কাফেরদেরকে লা’নত করেছেন এবং তাদের জন্যে প্রস্ত্তত রেখেছেন জ্বলন্ত অগ্নি। সেখানে তারা চিরস্থায়ী থাকবে এবং তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না’’। (সূরা আহজাবঃ ৬৪-৬৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
‘‘যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীতা করে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’’। (সূরা জিনঃ ২৩) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ
‘‘তারা জাহান্নাম থেকে উদ্ধার পাবে না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৭) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
( لاَ يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ
‘‘তাদের আযাব হালকা করা হবে না। তারা সেখানে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে’’। (সূরা যুখরুফঃ ৭৫) আল্লাহ্ তাআলা’র বাণীঃ
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ
‘‘আর যারা কুফরী করে তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের আগুন। তাদের মৃত্যুর ফয়সালা হবে না যে, তারা মরবে এবং তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি লাঘব হবে না। এভাবে আমি প্রত্যেক কাফেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি’’। (সূরা ফাতিরঃ ৩৬) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لاَ يَمُوتُ فِيهَا وَلاَ يَحْيَا
‘‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্যে তো আছে জাহান্নাম। তাতে সে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। (সূরা তোহাঃ ৭৪) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
আল্লাহ্ তাআলা উপরোক্ত আয়াত এবং অনুরূপ অন্যান্য আয়াতে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা জাহান্নামের আসল বাসিন্দা তাদের জন্যই জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদেরকেও জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। সুতরাং আল্লাহ্ তা’আলা তাদের বের হওয়াকে নাকচ করে বলেনঃ ( وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ ) ‘‘তারা জাহান্নাম থেকে উদ্ধার পাবে না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৭) তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি মুলতবী বা হালকা করা হবে না। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ ( لاَ يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ )‘‘তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না। তারা সেখানে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে’’। (সূরা যুখরুফঃ ৭৫) জাহান্নামে তারা মরবেও না। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ لاَ يَمُوتُ فِيهَا وَلاَ يَحْيَا )) ‘‘তাতে সে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। (সূরা তোহাঃ ৭৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَمَّا أَهْلُ النَّارِ الَّذِينَ هُمْ أَهْلُهَا فَإِنَّهُمْ لاَ يَمُوتُونَ فِيهَا وَلاَ يَحْيَوْنَ )
‘‘যারা জাহান্নামের আসল বাসিন্দা তারা তাতে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
( إِذَا صَارَ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلَى الْجَنَّةِ وَأَهْلُ النَّارِ إِلَى النَّارِ جِيءَ بِالْمَوْتِ حَتَّى يُجْعَلَ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُذْبَحُ ثُمَّ يُنَادِي مُنَادٍ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ لَا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ فَيَزْدَادُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَرَحًا إِلَى فَرَحِهِمْ وَيَزْدَادُ أَهْلُ النَّارِ حُزْنًا إِلَى حُزْنِهِمْ )
‘‘যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে চলে যাবেন এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন (সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের ভেড়ার আকৃতিতে) মৃত্যুকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি স্থানে রেখে যবেহ করে ঘোষণা করা হবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। এখানে তোমরা অনাদিকাল পর্যন্ত অবস্থান করবে। ওহে জাহান্নামীরা! তোমরা চিরকাল এ কঠিন আযাব ভোগ করবে। তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। একথা শুনে বেহেশতবাসীদের আনন্দ ও খুশী আরও বেড়ে যাবে এবং জাহান্নামীদের দুঃখ ও পেরেশানী আরও বৃদ্ধি পাবে। [-বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।] অন্য বর্ণনায় আছে প্রত্যেকেই আপন আপন অবস্থায় চিরকাল থাকবে। অন্য বর্ণনায় আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
‘‘আপনি তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে ভয় দেখান। যেদিন সকল বিষয়ের ফয়সালা হবে। তারা গাফেল হয়ে পড়ে আছে। তাই তারা ঈমান আনছে না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৩৯) [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।] উল্লেখিত হাদীছগুলো ব্যতীত এবিষয়ে আরো হাদীছ রয়েছে।
خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘‘তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটি হচ্ছে বিরাট সফলতা’’। (সূরা তাওবাঃ ১০০) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ
‘‘তাদেরকে সেখান থেকে বের করা হবে না’’। (সূরা হিজরঃ ৪৮) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ
‘‘ওটা হবে অফুরন্ত দান’’। (সূরা হুদঃ ১০৮) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
لاَ مَقْطُوعَةٍ وَلاَ مَمْنُوعَةٍ
‘‘জান্নাতের ফল শেষ হবে না এবং তা নিষিদ্ধও হবে না’’। (সূরা আল-ওয়াকিয়াঃ ৩৩) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
إِنَّ هَذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِنْ نَفَادٍ
‘‘এটা আমার দেয়া রিযিক। তা কখনও শেষ হবে না’’। (সূরা সোয়াদঃ ৫৪) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ (51) فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ (52) يَلْبَسُونَ مِنْ سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ (53) كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ (54) يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ (55) لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَى
‘‘নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে। বাগান ও ঝর্ণার মধ্যে। তাঁরা পরিধান করবে চিকন ও মোটা রেশমী পোষাক এবং তারা মুখোমুখী হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে। এবং তাদেরকে সঙ্গীনি দিব বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট পরমা সুন্দরী। সেখানে তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফল-মূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না’’। (সূরা দুখানঃ ৫১-৫৫) এছাড়া আরো আয়াত রয়েছে, যাতে আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের চিরস্থায়ী হওয়ার কথা বলেছেন। এও বলেছেন যে, জান্নাতের নেয়ামত তাদের থেকে কখনও শেষ হবে না এবং তারা জান্নাত থেকে কখনও বেরও হবে না।
জাহান্নামের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَظَلَمُوا لَمْ يَكُنْ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيقًا إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
‘‘নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে এবং যুলুম করেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করবেন না। জাহান্নামের পথ ব্যতীত। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৮-১৬৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيرًا * خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لاَ يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلاَ نَصِيرًا
‘‘আল্লাহ্ কাফেরদেরকে লা’নত করেছেন এবং তাদের জন্যে প্রস্ত্তত রেখেছেন জ্বলন্ত অগ্নি। সেখানে তারা চিরস্থায়ী থাকবে এবং তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না’’। (সূরা আহজাবঃ ৬৪-৬৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
‘‘যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীতা করে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’’। (সূরা জিনঃ ২৩) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ
‘‘তারা জাহান্নাম থেকে উদ্ধার পাবে না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৭) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
( لاَ يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ
‘‘তাদের আযাব হালকা করা হবে না। তারা সেখানে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে’’। (সূরা যুখরুফঃ ৭৫) আল্লাহ্ তাআলা’র বাণীঃ
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ
‘‘আর যারা কুফরী করে তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের আগুন। তাদের মৃত্যুর ফয়সালা হবে না যে, তারা মরবে এবং তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি লাঘব হবে না। এভাবে আমি প্রত্যেক কাফেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি’’। (সূরা ফাতিরঃ ৩৬) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لاَ يَمُوتُ فِيهَا وَلاَ يَحْيَا
‘‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্যে তো আছে জাহান্নাম। তাতে সে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। (সূরা তোহাঃ ৭৪) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
আল্লাহ্ তাআলা উপরোক্ত আয়াত এবং অনুরূপ অন্যান্য আয়াতে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা জাহান্নামের আসল বাসিন্দা তাদের জন্যই জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদেরকেও জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। সুতরাং আল্লাহ্ তা’আলা তাদের বের হওয়াকে নাকচ করে বলেনঃ ( وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ ) ‘‘তারা জাহান্নাম থেকে উদ্ধার পাবে না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৭) তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি মুলতবী বা হালকা করা হবে না। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ ( لاَ يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ )‘‘তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না। তারা সেখানে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে’’। (সূরা যুখরুফঃ ৭৫) জাহান্নামে তারা মরবেও না। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ لاَ يَمُوتُ فِيهَا وَلاَ يَحْيَا )) ‘‘তাতে সে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। (সূরা তোহাঃ ৭৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( أَمَّا أَهْلُ النَّارِ الَّذِينَ هُمْ أَهْلُهَا فَإِنَّهُمْ لاَ يَمُوتُونَ فِيهَا وَلاَ يَحْيَوْنَ )
‘‘যারা জাহান্নামের আসল বাসিন্দা তারা তাতে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
( إِذَا صَارَ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلَى الْجَنَّةِ وَأَهْلُ النَّارِ إِلَى النَّارِ جِيءَ بِالْمَوْتِ حَتَّى يُجْعَلَ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُذْبَحُ ثُمَّ يُنَادِي مُنَادٍ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ لَا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ فَيَزْدَادُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَرَحًا إِلَى فَرَحِهِمْ وَيَزْدَادُ أَهْلُ النَّارِ حُزْنًا إِلَى حُزْنِهِمْ )
‘‘যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে চলে যাবেন এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন (সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের ভেড়ার আকৃতিতে) মৃত্যুকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি স্থানে রেখে যবেহ করে ঘোষণা করা হবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। এখানে তোমরা অনাদিকাল পর্যন্ত অবস্থান করবে। ওহে জাহান্নামীরা! তোমরা চিরকাল এ কঠিন আযাব ভোগ করবে। তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। একথা শুনে বেহেশতবাসীদের আনন্দ ও খুশী আরও বেড়ে যাবে এবং জাহান্নামীদের দুঃখ ও পেরেশানী আরও বৃদ্ধি পাবে। [-বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।] অন্য বর্ণনায় আছে প্রত্যেকেই আপন আপন অবস্থায় চিরকাল থাকবে। অন্য বর্ণনায় আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
‘‘আপনি তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে ভয় দেখান। যেদিন সকল বিষয়ের ফয়সালা হবে। তারা গাফেল হয়ে পড়ে আছে। তাই তারা ঈমান আনছে না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৩৯) [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।] উল্লেখিত হাদীছগুলো ব্যতীত এবিষয়ে আরো হাদীছ রয়েছে।
উত্তলঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'তের আকীদাহ এই যে, কিয়ামতের দিন মু’মিনগণ আল্লাহকে সেরকমই দেখতে পাবে, যেমন পরিস্কার আকাশে দিনের বেলায় সূর্য এবং রাতের বেলায় পূর্ণিমার চন্দ্রকে দেখতে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
‘‘সেদিন অনেক মুখ-মন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’’। (সূরা কিয়ামাহঃ ২২-২৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ
‘‘যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে উত্তম বস্ত্ত (জান্নাত) এবং আরও অতিরিক্ত জিনিষ (আল্লাহর দীদার)’’। (সূরা ইউনুসঃ ২৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
‘‘কখনও নয়, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বঞ্চিত হবে’’। (সূরা মুতাফফিফীনঃ ১৫) সুতরাং যেহেতু আল্লাহর শত্রুরা তাঁর দীদার হতে মাহরুম হবে, তাই তাঁর প্রিয় বান্দাগণ তা হতে বাধাগ্রস্ত হবে না। জারির বিন আব্দুল্লাহ্ বলেনঃ
( كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةً يَعْنِي الْبَدْرَ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لاَ تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا )
‘‘একদা পূর্ণিমার রাত্রিতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পাশে বসা ছিলাম। তিনি চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ কোন রকম অসুবিধা ছাড়াই তোমরা যেভাবে এই চন্দ্রটিকে দেখতে পাচ্ছ অচিরেই সেভাবে তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে। তোমরা যদি সামর্থ রাখ যে, সূর্যোদয়ের পূর্বের ও সূর্যাস্তের পূর্বের তথা ফজর ও আসরের নামায হতে পিছিয়ে থাকবে না, তাহলে তোমরা অবশ্যই তা করবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।] এখানে আল্লাহর দেখাকে চাঁদ দেখার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এমন নয় আল্লাহকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন অহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআ’লার কথা বলার হাদীছে এসেছেঃ
( ضربت الملائكة بأجنحتها خضعانًا لقوله كأنه سلسلة على صفوان (
‘‘যখন আল্লাহ্ তাআলা অহীর মাধ্যমে কথা বলেন তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর কথার প্রতি অনুগত হয়ে পাখা দ্বারা আঘাত করে। তাতে শক্ত পাথরের উপর লোহার শিকল পতিত হওয়ার শব্দের ন্যায় শব্দ হতে থাকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] এখানে ফেরেশতাদের পাখার আঘাতের শব্দকে শক্ত পাথরের উপর লোহার শিকল পতিত হওয়ার আওয়াজের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এখানে আওয়াজকে আওয়াজের সাথে তুলনা করা হয়েছে। শ্রবণকৃত বস্ত্তকে তথা অহীকে শ্রবণকৃত বস্ত্তর সাথে সাদৃশ্য করা হয়নি। কেননা আল্লাহর সতবা ও গুণ তাঁর কোন সৃষ্টির সদৃশ হওয়ার অনেক উর্ধে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কথা এধরণের কোন উপমা পেশের সম্ভাবনা হতে অনেক পবিত্র। কারণ সমস্ত সৃষ্টিজীবের মধ্যে তিনিই আল্লাহ্ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী। সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত সুহাইব (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে আছেঃ
( فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ ( لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ )
‘‘অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা পর্দা উঠাবেন। জান্নাতীদেরকে মহান আল্লাহর দীদারের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন বস্ত্তই প্রদান করা হবে না। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
( لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ )
‘‘যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে উত্তম বস্ত্ত (জান্নাত) এবং আরো অতিরিক্ত জিনিষ (আল্লাহর দীদার)’’। (সূরা ইউনুসঃ ২৬) [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] অন্য একটি সহীহ হাদীছে রয়েছেঃ
أَنَّ النَّاسَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ تُضَارُّونَ فِي الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي الشَّمْسِ لَيْسَ دُونَهَا سَحَابٌ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ
‘‘একদল লোক বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাত্রিতে চন্দ্রকে দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। তিনি আবার বললেনঃ আকাশে মেঘ না থাকলে সূর্য দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হয় কি? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা কিয়ামতের দিন এরকম পরিস্কারভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।]
এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) সূত্রে অসংখ্য সহীহ ও সুস্পষ্ট হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যারীর, সুহাইব, আনাস, আবু হুরায়রা, আবু মুসা, আবু সাঈদ ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতে সহীহ এবং সুনানের কিতাবগুলোতে এসমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থকার বলেনঃ আমার রচিত সুল্লামুল উসূলের ব্যাখ্যা ‘মাআরিজুল কুবুল’ গ্রন্থে ত্রিশের অধিক সাহাবী থেকে পয়ঁতাল্লিশটি হাদীছ বর্ণনা করেছি। যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদারকে অস্বীকার করল, সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। শুধু তাই নয় সে ঐসমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
‘‘কখনও নয়, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বঞ্চিত হবে’’। (সূরা মুতাফফিফীনঃ ১৫)
প্রকাশ্যভাবেই মু’মিনগণ কিয়ামতের দিন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। এটিই হবে বেহেশতের ভিতরে মু’মিনদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়া’মত। আমরা আল্লাহর কাছে কল্যাণ ও মুক্তি প্রার্থনা করছি। তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার স্বাদ প্রদান করে ধন্য করেন।
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
‘‘সেদিন অনেক মুখ-মন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’’। (সূরা কিয়ামাহঃ ২২-২৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ
‘‘যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে উত্তম বস্ত্ত (জান্নাত) এবং আরও অতিরিক্ত জিনিষ (আল্লাহর দীদার)’’। (সূরা ইউনুসঃ ২৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
‘‘কখনও নয়, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বঞ্চিত হবে’’। (সূরা মুতাফফিফীনঃ ১৫) সুতরাং যেহেতু আল্লাহর শত্রুরা তাঁর দীদার হতে মাহরুম হবে, তাই তাঁর প্রিয় বান্দাগণ তা হতে বাধাগ্রস্ত হবে না। জারির বিন আব্দুল্লাহ্ বলেনঃ
( كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةً يَعْنِي الْبَدْرَ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لاَ تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا )
‘‘একদা পূর্ণিমার রাত্রিতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পাশে বসা ছিলাম। তিনি চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ কোন রকম অসুবিধা ছাড়াই তোমরা যেভাবে এই চন্দ্রটিকে দেখতে পাচ্ছ অচিরেই সেভাবে তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে। তোমরা যদি সামর্থ রাখ যে, সূর্যোদয়ের পূর্বের ও সূর্যাস্তের পূর্বের তথা ফজর ও আসরের নামায হতে পিছিয়ে থাকবে না, তাহলে তোমরা অবশ্যই তা করবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।] এখানে আল্লাহর দেখাকে চাঁদ দেখার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এমন নয় আল্লাহকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন অহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআ’লার কথা বলার হাদীছে এসেছেঃ
( ضربت الملائكة بأجنحتها خضعانًا لقوله كأنه سلسلة على صفوان (
‘‘যখন আল্লাহ্ তাআলা অহীর মাধ্যমে কথা বলেন তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর কথার প্রতি অনুগত হয়ে পাখা দ্বারা আঘাত করে। তাতে শক্ত পাথরের উপর লোহার শিকল পতিত হওয়ার শব্দের ন্যায় শব্দ হতে থাকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।] এখানে ফেরেশতাদের পাখার আঘাতের শব্দকে শক্ত পাথরের উপর লোহার শিকল পতিত হওয়ার আওয়াজের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এখানে আওয়াজকে আওয়াজের সাথে তুলনা করা হয়েছে। শ্রবণকৃত বস্ত্তকে তথা অহীকে শ্রবণকৃত বস্ত্তর সাথে সাদৃশ্য করা হয়নি। কেননা আল্লাহর সতবা ও গুণ তাঁর কোন সৃষ্টির সদৃশ হওয়ার অনেক উর্ধে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কথা এধরণের কোন উপমা পেশের সম্ভাবনা হতে অনেক পবিত্র। কারণ সমস্ত সৃষ্টিজীবের মধ্যে তিনিই আল্লাহ্ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী। সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত সুহাইব (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে আছেঃ
( فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ ( لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ )
‘‘অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা পর্দা উঠাবেন। জান্নাতীদেরকে মহান আল্লাহর দীদারের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন বস্ত্তই প্রদান করা হবে না। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
( لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ )
‘‘যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে উত্তম বস্ত্ত (জান্নাত) এবং আরো অতিরিক্ত জিনিষ (আল্লাহর দীদার)’’। (সূরা ইউনুসঃ ২৬) [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] অন্য একটি সহীহ হাদীছে রয়েছেঃ
أَنَّ النَّاسَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ تُضَارُّونَ فِي الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي الشَّمْسِ لَيْسَ دُونَهَا سَحَابٌ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ
‘‘একদল লোক বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাত্রিতে চন্দ্রকে দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। তিনি আবার বললেনঃ আকাশে মেঘ না থাকলে সূর্য দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হয় কি? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা কিয়ামতের দিন এরকম পরিস্কারভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।]
এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) সূত্রে অসংখ্য সহীহ ও সুস্পষ্ট হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যারীর, সুহাইব, আনাস, আবু হুরায়রা, আবু মুসা, আবু সাঈদ ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতে সহীহ এবং সুনানের কিতাবগুলোতে এসমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থকার বলেনঃ আমার রচিত সুল্লামুল উসূলের ব্যাখ্যা ‘মাআরিজুল কুবুল’ গ্রন্থে ত্রিশের অধিক সাহাবী থেকে পয়ঁতাল্লিশটি হাদীছ বর্ণনা করেছি। যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদারকে অস্বীকার করল, সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। শুধু তাই নয় সে ঐসমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
‘‘কখনও নয়, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বঞ্চিত হবে’’। (সূরা মুতাফফিফীনঃ ১৫)
প্রকাশ্যভাবেই মু’মিনগণ কিয়ামতের দিন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। এটিই হবে বেহেশতের ভিতরে মু’মিনদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়া’মত। আমরা আল্লাহর কাছে কল্যাণ ও মুক্তি প্রার্থনা করছি। তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার স্বাদ প্রদান করে ধন্য করেন।
উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কিতাবের অনেক জায়গায় কঠিন শর্তসাপেক্ষে শাফাআতের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, শাফাআতের একমাত্র মালিক তিনি। তাতে কারো সামান্যতম অধিকার নেই। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا
‘‘হে নবী আপনি বলে দিনঃ সমস্ত সুপারিশ একমাত্র আল্লাহর জন্যই’’। (সূরা যুমারঃ ৪৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ
‘‘কে আছে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার তাঁর অনুমতি ব্যতীত?’’ (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا مِنْ شَفِيعٍ إلاَّ مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ
‘‘আল্লাহর অনুমতির পূর্বে কেউ সুপারিশ করতে পারবে না’’। (সূরা ইউনুসঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَوَاتِ لاَ تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى
‘‘আকাশে অনেক ফেরেশতা আছে। তাদের সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। যতক্ষণ আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন’’। (সূরা আন-নাজমঃ ২৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَلاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ
‘‘যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়, তার সুপারিশ ব্যতীত আল্লাহর কাছে কারো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না’’। (সূরা সাবাঃ ২৩)
প্রশ্ন রয়ে গেল কে সুপারিশ করবে? আল্লাহ্ যেমন বলেছেন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফআত করতে পারবে না, তেমনিভাবে আল্লাহ্ এও বলেছেন যে, সুপারিশের অনুমতি কেবল তাঁর নির্বাচিত ও প্রিয় বন্ধুগণই পাবেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلاَئِكَةُ صَفًّا لاَ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا
‘‘যেদিন রূহ অর্থাৎ জিবরীল (আঃ) ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্য বলবে’’। (সূরা আন-নাবাঃ ৩৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لاَ يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلاَّ مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
‘‘যিনি দয়াময় আল্লাহর নিকট হতে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৮৭)
আরো প্রশ্ন রয়ে গেল যে, সুপারিশ কার জন্যে হবে? আল্লাহ্ তাআলা কুরআন মাজীদে সংবাদ দিয়েছেন যে, যার উপর তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন, কেবল তার জন্যেই সুপারিশের অনুমতি দিবেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنْ ارْتَضَى
‘‘তারা কেবল তাদের জন্যই সুপারিশ করবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট আছেন’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ২৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ لاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلاً
‘‘দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত কারো সুপারিশ সেদিন কোন কাজে আসবে না’’। (সূরা তোহাঃ ১০৯)
ইহা জানা কথা যে, সঠিক তাওহীদের অনুসারী ব্যতীত আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কারো প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلاَ شَفِيعٍ يُطَاعُ
‘‘যালিমদের জন্যে কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং এমন কোন সুপারিশকারী নেই, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَا لَنَا مِنْ شَافِعِينَ * وَلا صَدِيقٍ حَمِيمٍ
‘‘পরিণামে আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই এবং কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই’’। (সূরা শুআরাঃ ১০০-১০১) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ
‘‘সেদিন সুপারিশ কারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৪৮)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে সুপারিশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন যে, তিনি আরশের নীচে সিজদায় পড়ে তাঁর প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করবেন, যা সেই সময় বিশেষভাবে তাঁকে শেখানো হবে। তিনি প্রথমেই সুপারিশ করবেন না। যতক্ষণ না তাঁকে বলা হবেঃ আপনি মাথা উঠান। কথা বলুন। আপনার কথা শ্রবণ করা হবে। আপনি প্রার্থনা করুন। আপনাকে প্রদান করা হবে। সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।]
তিনি আরো বলেছেন যে, সকল তাওহীদপন্থী গুনাহ্গারদের জন্যে তিনি একবারই সুপারিশ করবেন না; বরং তিনি বলেছেনঃ আমার জন্যে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।] তিনি পুনরায় ফেরত গিয়ে অনুরূপভাবে সিজদায় পড়বেন। পুনরায় তাঁর জন্যে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এভাবে হাদীছের শেষ পর্যন্ত। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেনঃ
( مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ : مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ )
‘‘কোন্ ব্যক্তি আপনার শাফাআত পেয়ে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি অন্তর থেকে একনিষ্ঠভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, সেই হবে আমার শাফাআত লাভ করে সবচেয়ে বেশী ধন্য’’।
قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا
‘‘হে নবী আপনি বলে দিনঃ সমস্ত সুপারিশ একমাত্র আল্লাহর জন্যই’’। (সূরা যুমারঃ ৪৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ
‘‘কে আছে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার তাঁর অনুমতি ব্যতীত?’’ (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا مِنْ شَفِيعٍ إلاَّ مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ
‘‘আল্লাহর অনুমতির পূর্বে কেউ সুপারিশ করতে পারবে না’’। (সূরা ইউনুসঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَوَاتِ لاَ تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى
‘‘আকাশে অনেক ফেরেশতা আছে। তাদের সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। যতক্ষণ আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন’’। (সূরা আন-নাজমঃ ২৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَلاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ
‘‘যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়, তার সুপারিশ ব্যতীত আল্লাহর কাছে কারো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না’’। (সূরা সাবাঃ ২৩)
প্রশ্ন রয়ে গেল কে সুপারিশ করবে? আল্লাহ্ যেমন বলেছেন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফআত করতে পারবে না, তেমনিভাবে আল্লাহ্ এও বলেছেন যে, সুপারিশের অনুমতি কেবল তাঁর নির্বাচিত ও প্রিয় বন্ধুগণই পাবেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلاَئِكَةُ صَفًّا لاَ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا
‘‘যেদিন রূহ অর্থাৎ জিবরীল (আঃ) ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্য বলবে’’। (সূরা আন-নাবাঃ ৩৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لاَ يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلاَّ مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
‘‘যিনি দয়াময় আল্লাহর নিকট হতে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৮৭)
আরো প্রশ্ন রয়ে গেল যে, সুপারিশ কার জন্যে হবে? আল্লাহ্ তাআলা কুরআন মাজীদে সংবাদ দিয়েছেন যে, যার উপর তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন, কেবল তার জন্যেই সুপারিশের অনুমতি দিবেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنْ ارْتَضَى
‘‘তারা কেবল তাদের জন্যই সুপারিশ করবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট আছেন’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ২৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ لاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلاً
‘‘দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত কারো সুপারিশ সেদিন কোন কাজে আসবে না’’। (সূরা তোহাঃ ১০৯)
ইহা জানা কথা যে, সঠিক তাওহীদের অনুসারী ব্যতীত আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কারো প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلاَ شَفِيعٍ يُطَاعُ
‘‘যালিমদের জন্যে কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং এমন কোন সুপারিশকারী নেই, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَا لَنَا مِنْ شَافِعِينَ * وَلا صَدِيقٍ حَمِيمٍ
‘‘পরিণামে আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই এবং কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই’’। (সূরা শুআরাঃ ১০০-১০১) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ
‘‘সেদিন সুপারিশ কারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৪৮)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে সুপারিশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন যে, তিনি আরশের নীচে সিজদায় পড়ে তাঁর প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করবেন, যা সেই সময় বিশেষভাবে তাঁকে শেখানো হবে। তিনি প্রথমেই সুপারিশ করবেন না। যতক্ষণ না তাঁকে বলা হবেঃ আপনি মাথা উঠান। কথা বলুন। আপনার কথা শ্রবণ করা হবে। আপনি প্রার্থনা করুন। আপনাকে প্রদান করা হবে। সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।]
তিনি আরো বলেছেন যে, সকল তাওহীদপন্থী গুনাহ্গারদের জন্যে তিনি একবারই সুপারিশ করবেন না; বরং তিনি বলেছেনঃ আমার জন্যে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।] তিনি পুনরায় ফেরত গিয়ে অনুরূপভাবে সিজদায় পড়বেন। পুনরায় তাঁর জন্যে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এভাবে হাদীছের শেষ পর্যন্ত। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেনঃ
( مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ : مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ )
‘‘কোন্ ব্যক্তি আপনার শাফাআত পেয়ে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি অন্তর থেকে একনিষ্ঠভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, সেই হবে আমার শাফাআত লাভ করে সবচেয়ে বেশী ধন্য’’।
উত্তরঃ শাফাআত কয়েক প্রকার। যথাঃ
(১) শাফাআতে উযমা বা সবচেয়ে বড় সুপারিশঃ শাফাআতে উয্মা হবে হাশরের মাঠে। এটি হবে বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ্ তাআলা যখন হাশরের ময়দানে আগমণ করবেন। এটি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জন্যে নির্দিষ্ট। আর এটিই হচ্ছে ‘মাকামে মাহমুদ’ তথা প্রশংসিত স্থান, যা আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে প্রদান করার অঙ্গিকার করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا
‘‘আপনার প্রতিপালক আপনাকে অচিরেই একটি প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৭৯) মানুষ যখন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে অস্থির হয়ে যাবে এবং ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে তখন তারা দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার জন্যে পর্যায়ক্রমে আদম, নুহ, ইবরাহীম, মুসা ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের কাছে গমণ করবে। সকলেই অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবেঃ نَفْسِيْ نَفْسِيْ অর্থাৎ আমি নিজের চিন্তায় ব্যস্ত আছি। পরিশেষে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমাকে শাফাআতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরশের নিচে সিজদায় পড়ে আল্লাহর প্রশংসায় লিপ্ত থাকবেন। আল্লাহ তাঁকে মাথা উঠাতে বলবেন এবং যা চাওয়ার তা চাইতে বলবেন। এ পর্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে দ্রুত ফয়সালা ও বিচার কার্য সমাধা করার জন্যে সুপারিশ করবেন। তাঁর সুপারিশে আল্লাহ হাশরের মাঠে নেমে এসে মানুষের মাঝে দ্রুত বিচার-ফয়সালা সম্পন্ন করবেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক, শরহুল আকীদাহ আত-তাহাবীয়াহ, পৃষ্ঠা নং- ২০৪।]
২) জান্নাতের দরজা খোলার জন্যে শাফাআ’তঃ সর্বপ্রথম আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের দরজা খুলবেন। সকল উম্মাতের মধ্যে তাঁর উম্মাতগণ সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ مَنْ أَنْتَ فَأَقُولُ مُحَمَّدٌ فَيَقُولُ بِكَ أُمِرْتُ لَا أَفْتَحُ لِأَحَدٍ قَبْلَكَ
‘‘কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় এসে দরজা খুলতে বলব। জান্নাতের দারোয়ান বলবেঃ কে আপনি? আমি বলবঃ মুহাম্মাদ। দারোয়ান বলবেঃ আপনার জন্যেই দরজা খোলার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং আপনার পূর্বে অন্য কারো জন্যে জান্নাতের দরজা খুলতে নিষেধ করা হয়েছে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
(৩) কিছু গুনাহগারকে জাহান্নামে না দেয়ার শাফাআ’তঃ এক শ্রেণীর তাওহীদপন্থি অপরাধী লোক তাদের কৃতকর্মের জন্যে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের হকদার হয়ে যাবে। তাদেরকে জাহান্নামে পাঠানোর ফয়সালা হবে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য শাফাআ’ত করবেন। ফলে তারা জাহান্নাম থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। [- শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসিতিয়াহ, পৃষ্ঠা নং- ১৪২।]
(৪) জাহান্নামে প্রবেশকারী একদল লোককে বের করার জন্যে শাফাআ’তঃ আমরা বিশ্বাস করি, যে সমস্ত তাওহীদপন্থী মু’মিন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি, কিন্তু তারা গুনাহ ও পাপের কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিবেন অথবা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। শির্ক ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে থাকেন’’। (সূরা নিসাঃ ৪৮) কুরআন ও হাদীছে পাপী মু’মিনদের এমন অনেক আমলের বর্ণনা এসেছে যাতে তাদের জন্যে শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে তবে উহা তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়া আবশ্যক করেনা। তাদের এক শ্রেণীর লোক কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর শাফাআ’তের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। তিনি বলেনঃ
( شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي )
‘‘আমার উম্মাতের কবীরা গুনায় লিপ্ত ব্যক্তিদের জন্যে আমার শাফাআ’ত’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ, সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৫৫৯৮।] তিনি আরো বলেনঃ
( لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا )
‘‘সকল নবীর জন্যে এমন একটি দু’আ রয়েছে, যা আল্লাহ কবুল করবেন। দুনিয়াতে সকল নবী আল্লাহর কাছে দু’আ করে নিয়েছেন। আর আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের সুপারিশের জন্যে দু’আটি রেখে দিয়েছি। আমার উম্মাতের যে ব্যক্তি শিরক না করে মৃত্যু বরণ করবে সে ব্যক্তি ইনশা-আল্লাহ তা পাবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওহীদপন্থী এমন একদল লোকের জন্যে শাফাআত করবেন, যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, তাদের শরীরের চামড়া আগুনে পুড়ে গেছে এবং আগুনে পুড়ে তারা কয়লার ন্যায় হয়ে গেছে। জাহান্নাম থেকে বের করে তাদেরকে ‘আবে হায়াতে’ তথা নতুন জীবন দানকারী নদীতে গোসল করানো হবে। সেখানে তারা এমনভাবে বেড়ে উঠবে যেমনভাবে বন্যার পানিতে ভেসে আসা আবর্জনার মাঝে বীজ থেকে তৃণলতা উৎপন্ন হয়ে থাকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উপরের তিন প্রকারের সুপারিশ শুধু আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জন্যে নির্দিষ্ট নয়। অন্যান্য নবীগণ, ফেরেশতাগণ, আল্লাহর অলীগণ এবং মুসলমানদের শিশু সন্তানগণও এপ্রকারের শাফাআত করবেন। তবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই প্রথমে এ প্রকার শাফাআত করবেন।
অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় অনুগ্রহে অনেক লোককে বিনা শাফাআতে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার সঠিক হিসাব আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ অবগত নয়।
(৫) জান্নাতের ভিতরে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যে শাফাআ’তঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক প্রকার জান্নাতীদের জন্যে শাফা’আত করবেন। এতে তাঁরা তাদের আমলের তুলনায় অধিক বিনিময় লাভ করবেন। এমর্মেও অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। [- শরহুল আকীদাহ আত্ তাহাবীয়া, পৃষ্ঠা নং- ২০৫।]
(৬) আবু তালেবের জন্যে শাফাআ’তঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের দিন তাঁর চাচা আবু তালেবের শাস্তি হালকা করার জন্যে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন। সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, আববাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
( يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَفَعْتَ أَبَا طَالِبٍ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ كَانَ يَحُوطُكَ وَيَغْضَبُ لَكَ قَالَ نَعَمْ هُوَ فِي ضَحْضَاحٍ مِنْ نَارٍ وَلَوْلَا أَنَا لَكَانَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ )
‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আবু তালেবের কোন উপকার করতে পারলেন? সে তো আপনাকে শত্রুদের অনিষ্ট হতে হেফাযত করতো এবং আপনার জন্যে মানুষের সাথে রাগান্বিত হত। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, ঠিক আছে। সে এখন জাহান্নামের আগুনের উপরিভাগে অবস্থান করছে। আমি না থাকলে সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করত। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لاَ تَزَالُ جَهَنَّمُ يُلْقَى فِيهَا وَتَقُولُ : هَلْ مِنْ مَزِيدٍ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيهَا قَدَمَهُ فَيَنْزَوِي بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ وَتَقُولُ قَطْ قَطْ بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ )
‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হতে থাকবে। জাহান্নাম বলবেঃ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ ‘‘আরো আছে কি?’’ পরিশেষে মহান রাববুল আলামীন তাতে নিজ পা রাখবেন। এতে জাহান্নাম সংকুচিত হয়ে যাবে এবং বলবেঃ ‘‘আপনার ইজ্জত ও সম্মানের শপথ! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ আইমান ওয়ান্ নুযুর।]
এছাড়াও শাফাআতের বিষয়ে আরো অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে। যে ব্যক্তির ইচছা সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত হতে সংগ্রহ করে নিতে পারে।
(১) শাফাআতে উযমা বা সবচেয়ে বড় সুপারিশঃ শাফাআতে উয্মা হবে হাশরের মাঠে। এটি হবে বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ্ তাআলা যখন হাশরের ময়দানে আগমণ করবেন। এটি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জন্যে নির্দিষ্ট। আর এটিই হচ্ছে ‘মাকামে মাহমুদ’ তথা প্রশংসিত স্থান, যা আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে প্রদান করার অঙ্গিকার করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا
‘‘আপনার প্রতিপালক আপনাকে অচিরেই একটি প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন’’। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৭৯) মানুষ যখন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে অস্থির হয়ে যাবে এবং ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে তখন তারা দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার জন্যে পর্যায়ক্রমে আদম, নুহ, ইবরাহীম, মুসা ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের কাছে গমণ করবে। সকলেই অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবেঃ نَفْسِيْ نَفْسِيْ অর্থাৎ আমি নিজের চিন্তায় ব্যস্ত আছি। পরিশেষে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমাকে শাফাআতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরশের নিচে সিজদায় পড়ে আল্লাহর প্রশংসায় লিপ্ত থাকবেন। আল্লাহ তাঁকে মাথা উঠাতে বলবেন এবং যা চাওয়ার তা চাইতে বলবেন। এ পর্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মাঝে দ্রুত ফয়সালা ও বিচার কার্য সমাধা করার জন্যে সুপারিশ করবেন। তাঁর সুপারিশে আল্লাহ হাশরের মাঠে নেমে এসে মানুষের মাঝে দ্রুত বিচার-ফয়সালা সম্পন্ন করবেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক, শরহুল আকীদাহ আত-তাহাবীয়াহ, পৃষ্ঠা নং- ২০৪।]
২) জান্নাতের দরজা খোলার জন্যে শাফাআ’তঃ সর্বপ্রথম আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের দরজা খুলবেন। সকল উম্মাতের মধ্যে তাঁর উম্মাতগণ সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
آتِي بَابَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَسْتَفْتِحُ فَيَقُولُ الْخَازِنُ مَنْ أَنْتَ فَأَقُولُ مُحَمَّدٌ فَيَقُولُ بِكَ أُمِرْتُ لَا أَفْتَحُ لِأَحَدٍ قَبْلَكَ
‘‘কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় এসে দরজা খুলতে বলব। জান্নাতের দারোয়ান বলবেঃ কে আপনি? আমি বলবঃ মুহাম্মাদ। দারোয়ান বলবেঃ আপনার জন্যেই দরজা খোলার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং আপনার পূর্বে অন্য কারো জন্যে জান্নাতের দরজা খুলতে নিষেধ করা হয়েছে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
(৩) কিছু গুনাহগারকে জাহান্নামে না দেয়ার শাফাআ’তঃ এক শ্রেণীর তাওহীদপন্থি অপরাধী লোক তাদের কৃতকর্মের জন্যে কিয়ামতের দিন জাহান্নামের হকদার হয়ে যাবে। তাদেরকে জাহান্নামে পাঠানোর ফয়সালা হবে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য শাফাআ’ত করবেন। ফলে তারা জাহান্নাম থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। [- শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসিতিয়াহ, পৃষ্ঠা নং- ১৪২।]
(৪) জাহান্নামে প্রবেশকারী একদল লোককে বের করার জন্যে শাফাআ’তঃ আমরা বিশ্বাস করি, যে সমস্ত তাওহীদপন্থী মু’মিন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি, কিন্তু তারা গুনাহ ও পাপের কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিবেন অথবা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। শির্ক ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে থাকেন’’। (সূরা নিসাঃ ৪৮) কুরআন ও হাদীছে পাপী মু’মিনদের এমন অনেক আমলের বর্ণনা এসেছে যাতে তাদের জন্যে শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে তবে উহা তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়া আবশ্যক করেনা। তাদের এক শ্রেণীর লোক কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর শাফাআ’তের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। তিনি বলেনঃ
( شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي )
‘‘আমার উম্মাতের কবীরা গুনায় লিপ্ত ব্যক্তিদের জন্যে আমার শাফাআ’ত’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ, সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৫৫৯৮।] তিনি আরো বলেনঃ
( لِكُلِّ نَبِيٍّ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ فَتَعَجَّلَ كُلُّ نَبِيٍّ دَعْوَتَهُ وَإِنِّي اخْتَبَأْتُ دَعْوَتِي شَفَاعَةً لِأُمَّتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَهِيَ نَائِلَةٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِي لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا )
‘‘সকল নবীর জন্যে এমন একটি দু’আ রয়েছে, যা আল্লাহ কবুল করবেন। দুনিয়াতে সকল নবী আল্লাহর কাছে দু’আ করে নিয়েছেন। আর আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের সুপারিশের জন্যে দু’আটি রেখে দিয়েছি। আমার উম্মাতের যে ব্যক্তি শিরক না করে মৃত্যু বরণ করবে সে ব্যক্তি ইনশা-আল্লাহ তা পাবে’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওহীদপন্থী এমন একদল লোকের জন্যে শাফাআত করবেন, যারা জাহান্নামে প্রবেশ করেছে, তাদের শরীরের চামড়া আগুনে পুড়ে গেছে এবং আগুনে পুড়ে তারা কয়লার ন্যায় হয়ে গেছে। জাহান্নাম থেকে বের করে তাদেরকে ‘আবে হায়াতে’ তথা নতুন জীবন দানকারী নদীতে গোসল করানো হবে। সেখানে তারা এমনভাবে বেড়ে উঠবে যেমনভাবে বন্যার পানিতে ভেসে আসা আবর্জনার মাঝে বীজ থেকে তৃণলতা উৎপন্ন হয়ে থাকে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]
উপরের তিন প্রকারের সুপারিশ শুধু আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জন্যে নির্দিষ্ট নয়। অন্যান্য নবীগণ, ফেরেশতাগণ, আল্লাহর অলীগণ এবং মুসলমানদের শিশু সন্তানগণও এপ্রকারের শাফাআত করবেন। তবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই প্রথমে এ প্রকার শাফাআত করবেন।
অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় অনুগ্রহে অনেক লোককে বিনা শাফাআতে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার সঠিক হিসাব আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ অবগত নয়।
(৫) জান্নাতের ভিতরে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যে শাফাআ’তঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক প্রকার জান্নাতীদের জন্যে শাফা’আত করবেন। এতে তাঁরা তাদের আমলের তুলনায় অধিক বিনিময় লাভ করবেন। এমর্মেও অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। [- শরহুল আকীদাহ আত্ তাহাবীয়া, পৃষ্ঠা নং- ২০৫।]
(৬) আবু তালেবের জন্যে শাফাআ’তঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের দিন তাঁর চাচা আবু তালেবের শাস্তি হালকা করার জন্যে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন। সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, আববাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
( يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَفَعْتَ أَبَا طَالِبٍ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ كَانَ يَحُوطُكَ وَيَغْضَبُ لَكَ قَالَ نَعَمْ هُوَ فِي ضَحْضَاحٍ مِنْ نَارٍ وَلَوْلَا أَنَا لَكَانَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ )
‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আবু তালেবের কোন উপকার করতে পারলেন? সে তো আপনাকে শত্রুদের অনিষ্ট হতে হেফাযত করতো এবং আপনার জন্যে মানুষের সাথে রাগান্বিত হত। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, ঠিক আছে। সে এখন জাহান্নামের আগুনের উপরিভাগে অবস্থান করছে। আমি না থাকলে সে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করত। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] আনাস বিন মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( لاَ تَزَالُ جَهَنَّمُ يُلْقَى فِيهَا وَتَقُولُ : هَلْ مِنْ مَزِيدٍ حَتَّى يَضَعَ رَبُّ الْعِزَّةِ فِيهَا قَدَمَهُ فَيَنْزَوِي بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ وَتَقُولُ قَطْ قَطْ بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ )
‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হতে থাকবে। জাহান্নাম বলবেঃ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ ‘‘আরো আছে কি?’’ পরিশেষে মহান রাববুল আলামীন তাতে নিজ পা রাখবেন। এতে জাহান্নাম সংকুচিত হয়ে যাবে এবং বলবেঃ ‘‘আপনার ইজ্জত ও সম্মানের শপথ! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ আইমান ওয়ান্ নুযুর।]
এছাড়াও শাফাআতের বিষয়ে আরো অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে। যে ব্যক্তির ইচছা সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত হতে সংগ্রহ করে নিতে পারে।
১৩৮
প্রশ্নঃ (১৩৬) কেউ কি তার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে কিংবা জাহান্নাম হতে রেহাই পাবে?উত্তরঃ আমলের বিনিময়ে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না কিংবা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাবে না। [- আমল জান্নাতের যাওয়ার জন্য সহায়ক হবে। তবে আমলই যে জান্নাতে নিয়ে যাবে তা নয়। বরং আমলকারীর উপর আল্লাহর রহমত থাকা জরুরী। আর যিনি আমল করেবন আল্লাহ্ কেবল তার উপরই রহমত করবেন।] নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( قَارِبُوا وَسَدِّدُوا وَاعْلَمُوا أَنَّهُ لَنْ يَنْجُوَ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِعَمَلِهِ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلاَ أَنْتَ قَالَ : وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ ) وفي رواية : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا فَإِنَّهُ لَنْ يُدْخِلَ الْجَنَّةَ أَحَدًا عَمَلُهُ قَالُوا وَلاَ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللَّهُ مِنْهُ بِرَحْمَةٍ وَاعْلَمُوا أَنَّ أَحَبَّ الْعَمَلِ إِلَى اللَّهِ أَدْوَمُهُ وَإِنْ قَلَّ )
‘‘তোমরা দ্বীনের নিকটবর্তী হও, সঠিক পথের উপর থাক। আর জেনে রাখ! আমলের বিনিময়ে তোমাদের কেউ জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে না। তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও না? তিনি বললেনঃ আমিও না। তবে আমাকে যদি আল্লাহ্ তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ দ্বার আচ্ছাদিত করে নেন। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সঠিক পথের উপর থাক। তোমরা দ্বীনের নিকটবর্তী হও এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা কারো আমল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও কি আপনার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না? তিনি বললেনঃ না, আমিও আমার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব না। তবে আমাকে যদি আল্লাহ্ তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেন। আরও জেনে রাখ যে, আল্লাহর কাছে সেই আমল অধিক প্রিয়, যা সর্বদা করা হয়। যদিও তার পরিমাণ অল্প হয়ে থাকে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]
( قَارِبُوا وَسَدِّدُوا وَاعْلَمُوا أَنَّهُ لَنْ يَنْجُوَ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِعَمَلِهِ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلاَ أَنْتَ قَالَ : وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَفَضْلٍ ) وفي رواية : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا فَإِنَّهُ لَنْ يُدْخِلَ الْجَنَّةَ أَحَدًا عَمَلُهُ قَالُوا وَلاَ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ : وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِيَ اللَّهُ مِنْهُ بِرَحْمَةٍ وَاعْلَمُوا أَنَّ أَحَبَّ الْعَمَلِ إِلَى اللَّهِ أَدْوَمُهُ وَإِنْ قَلَّ )
‘‘তোমরা দ্বীনের নিকটবর্তী হও, সঠিক পথের উপর থাক। আর জেনে রাখ! আমলের বিনিময়ে তোমাদের কেউ জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে না। তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও না? তিনি বললেনঃ আমিও না। তবে আমাকে যদি আল্লাহ্ তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ দ্বার আচ্ছাদিত করে নেন। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা সঠিক পথের উপর থাক। তোমরা দ্বীনের নিকটবর্তী হও এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা কারো আমল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও কি আপনার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না? তিনি বললেনঃ না, আমিও আমার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব না। তবে আমাকে যদি আল্লাহ্ তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ দ্বারা আচ্ছাদিত করে নেন। আরও জেনে রাখ যে, আল্লাহর কাছে সেই আমল অধিক প্রিয়, যা সর্বদা করা হয়। যদিও তার পরিমাণ অল্প হয়ে থাকে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]
وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
‘‘আর তাদেরকে ডেকে বলা হবেঃ তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে তোমাদেরকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে’’ (সূরা আ’রাফঃ ৪৩) এর মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করা যাবে?
উত্তরঃ আল্লাহর মেহেরবাণীতে উভয়ের মধ্যে কোন দ্বন্দ নেই। আরবী ভাষায় باء হরফে জারটি একাধিক অর্থে ব্যবহার হয়। কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে بَاء السببيةَ তথা বা- অক্ষরটি সাবাবীয় অর্থাৎ কারণ বর্ণনা করার জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং সৎ আমল জান্নাতে প্রবেশের কারণ। সৎকাজ ব্যতীত জান্নাত অর্জন সম্ভব নয়। কেননা যে শর্ত বাস্তবায়ন করলে সুনির্দিষ্ট ফলাফল অর্জিত হয়, সে শর্ত বাস্তবায়ন করা ব্যতীত উক্ত ফলাফল পাওয়া যায় না।
আর হাদীছে باء অব্যয়টি الثمنية --বিনিময় বা মূল্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই হাদীছে সৎআমল জান্নাতে প্রবেশের মূল্য হবে-এবিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। কারণ বান্দাকে যদি দুনিয়ার সমপরিমাণ বয়স দেয়া হয় এবং সে যদি এই দীর্ঘ বয়সে সবসময় দিনের বেলায় নফল রোজা রাখে এবং রাতভর নফল নামায আদায় করে এবং সকল প্রকার পাপ ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে তথাপিও তার এ আমল আল্লাহ্ তাআলার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নেয়ামতের দশভাগের একভাগের মূল্য হবে না। তাহলে কিভাবে সৎআমল জান্নাতে প্রবেশের মূল্য হতে পারে? আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
‘‘আর বলুনঃ হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। আপনি সর্বোত্তম দয়ালু’’। (সূরা মুমিনুনঃ ১১৮)
‘‘আর তাদেরকে ডেকে বলা হবেঃ তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে তোমাদেরকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে’’ (সূরা আ’রাফঃ ৪৩) এর মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করা যাবে?
উত্তরঃ আল্লাহর মেহেরবাণীতে উভয়ের মধ্যে কোন দ্বন্দ নেই। আরবী ভাষায় باء হরফে জারটি একাধিক অর্থে ব্যবহার হয়। কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে بَاء السببيةَ তথা বা- অক্ষরটি সাবাবীয় অর্থাৎ কারণ বর্ণনা করার জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং সৎ আমল জান্নাতে প্রবেশের কারণ। সৎকাজ ব্যতীত জান্নাত অর্জন সম্ভব নয়। কেননা যে শর্ত বাস্তবায়ন করলে সুনির্দিষ্ট ফলাফল অর্জিত হয়, সে শর্ত বাস্তবায়ন করা ব্যতীত উক্ত ফলাফল পাওয়া যায় না।
আর হাদীছে باء অব্যয়টি الثمنية --বিনিময় বা মূল্য অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই হাদীছে সৎআমল জান্নাতে প্রবেশের মূল্য হবে-এবিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। কারণ বান্দাকে যদি দুনিয়ার সমপরিমাণ বয়স দেয়া হয় এবং সে যদি এই দীর্ঘ বয়সে সবসময় দিনের বেলায় নফল রোজা রাখে এবং রাতভর নফল নামায আদায় করে এবং সকল প্রকার পাপ ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে তথাপিও তার এ আমল আল্লাহ্ তাআলার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ছোট নেয়ামতের দশভাগের একভাগের মূল্য হবে না। তাহলে কিভাবে সৎআমল জান্নাতে প্রবেশের মূল্য হতে পারে? আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
‘‘আর বলুনঃ হে আমার প্রতিপালক! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। আপনি সর্বোত্তম দয়ালু’’। (সূরা মুমিনুনঃ ১১৮)
উত্তরঃ তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন আবশ্যক হওয়ার অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَقْدُورًا
‘‘আল্লাহর বিধান পূর্ব থেকেই সুনির্ধারিত’’। (সূরা আহ্যাবঃ ৩৮) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولاً
‘‘কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা এমন এক কাজ করতে চেয়ে ছিলেন যা পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গিয়ে ছিল’’। (সূরা আনফালঃ ৪৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولاً
‘‘আর আল্লাহর নির্ধারিত বিধান কার্যকরী হবেই’’। (সূরা আহযাবঃ ৩৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ
‘‘আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন বিপদই আপতিত হয় না। আর যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন’’। (সূরা তাগাবুনঃ ১১) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَا أَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِإِذْنِ اللَّهِ
‘‘দু’দলের সম্মুখীন হওয়ার দিনে তোমাদের উপর যে মুসীবত উপনীত হয়েছিল, তা আল্লাহরই ইচ্ছাক্রমে’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৬৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ * أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
‘‘তাদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তারা বলেঃ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী’’। (সূরা বাকারাঃ ১৫৬-১৫৬) এছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে। হাদীছে জিবরীলে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ ) .
‘‘আর তুমি তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে’’। [- বুখারী ও মুসলিম অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] তিনি আরও বলেনঃ
وَأعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ وَأَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ )
‘‘মনে রেখো! যে মুসীবত তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা কখনই তোমার কাছে আসতে ভুল করার ছিল না। আর যে মুসীবত তোমার উপর আপতিত হয়নি তা কখনও আসার ছিল না’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ।] তিনি আরও বলেনঃ
( وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ )
‘‘তোমার উপর কোন মুসীবত আসলে তুমি এ কথা বলোনা যে, আমি যদি এরকম করতাম, তাহলে এরকম হত; বরং তোমরা বলঃ এটি আল্লাহ্ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। তিনি যা চান তাই করেন’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( كُلُّ شَيْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزِ وَالْكَيْسِ )
‘‘প্রত্যেক জিনিষই তাকদীরে লিখিত আছে। এমনকি অপরাগতা, অক্ষমতা, চালাকী এবং বুদ্ধিমত্তাও’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।]
وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَقْدُورًا
‘‘আল্লাহর বিধান পূর্ব থেকেই সুনির্ধারিত’’। (সূরা আহ্যাবঃ ৩৮) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولاً
‘‘কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা এমন এক কাজ করতে চেয়ে ছিলেন যা পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গিয়ে ছিল’’। (সূরা আনফালঃ ৪৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولاً
‘‘আর আল্লাহর নির্ধারিত বিধান কার্যকরী হবেই’’। (সূরা আহযাবঃ ৩৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ
‘‘আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন বিপদই আপতিত হয় না। আর যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন’’। (সূরা তাগাবুনঃ ১১) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَا أَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِإِذْنِ اللَّهِ
‘‘দু’দলের সম্মুখীন হওয়ার দিনে তোমাদের উপর যে মুসীবত উপনীত হয়েছিল, তা আল্লাহরই ইচ্ছাক্রমে’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৬৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ * أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
‘‘তাদের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তারা বলেঃ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্যে এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের উপর তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে শান্তি ও করুণা বর্ষিত হবে এবং এরাই সুপথগামী’’। (সূরা বাকারাঃ ১৫৬-১৫৬) এছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে। হাদীছে জিবরীলে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ ) .
‘‘আর তুমি তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে’’। [- বুখারী ও মুসলিম অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] তিনি আরও বলেনঃ
وَأعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ وَأَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ )
‘‘মনে রেখো! যে মুসীবত তোমার উপর আপতিত হয়েছে, তা কখনই তোমার কাছে আসতে ভুল করার ছিল না। আর যে মুসীবত তোমার উপর আপতিত হয়নি তা কখনও আসার ছিল না’’। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ।] তিনি আরও বলেনঃ
( وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا وَلَكِنْ قُلْ قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ )
‘‘তোমার উপর কোন মুসীবত আসলে তুমি এ কথা বলোনা যে, আমি যদি এরকম করতাম, তাহলে এরকম হত; বরং তোমরা বলঃ এটি আল্লাহ্ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। তিনি যা চান তাই করেন’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
( كُلُّ شَيْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزِ وَالْكَيْسِ )
‘‘প্রত্যেক জিনিষই তাকদীরে লিখিত আছে। এমনকি অপরাগতা, অক্ষমতা, চালাকী এবং বুদ্ধিমত্তাও’’। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।]
উত্তরঃ তাকদীরের উপর ঈমান আনয়নের চারটি স্তর রয়েছে। যথাঃ
প্রথম স্তরঃ আল্লাহর ইল্ম তথা তিনি সকল বস্ত্তকে স্বীয় জ্ঞানের মাধ্যমে পরিবেষ্টন করে আছেন- এ কথার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আসমান ও যমীনে সরিষার দানা পরিমাণ বস্ত্তও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। সৃষ্টি করার পূর্ব হতেই তিনি সকল বস্ত্ত সম্পর্কে অবগত আছেন। তাদের রিযিক, বয়স, কথা, কাজ, চলাচল, অবস্থান, গোপন-প্রকাশ্য, তাদের মধ্যে কে জান্নাতী এবং কে জাহান্নামী তাও তিনি জানেন।
দ্বিতীয় স্তরঃ প্রথম স্তরে বর্ণিত সকল বিষয় আল্লাহ্ তাআলা লিখে দিয়েছেন- এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা এবং বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ্ তাআলা ঐ সমুদয় বস্ত্তই লিখে রেখেছেন, যা হবে বলে তাঁর জ্ঞানের আওতায় ছিল। লাওহে মাহ্ফুয ও কলমের প্রতি ঈমান আনয়নও উপরোক্ত বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত।
তৃতীয় স্তরঃ আল্লাহর ইচ্ছা, যা অবশ্যই বাস্তবায়িত হয় এবং সর্বময় ক্ষমতার প্রতি ঈমান আনয়ন করা। যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং যা সৃষ্টি হবে, সে ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতা এদু’টির একটি অন্যটির জন্য আবশ্যক। আর যা সৃষ্টি হয়নি এবং যা সৃষ্টি হবে না, এদু’টির একটির জন্য অন্যটি জরুরী নয়। সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা যা করতে চেয়েছেন তাঁর কুদরতের মাধ্যমে তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। আর যা তিনি করতে ইচ্ছা করেন নি, তা বাস্তবায়িত হয় নি। তিনি ইচ্ছা করেন নি, এ জন্যই বাস্তবায়িত হয় নি; এজন্যে নয় যে, তিনি সেটি করতে সক্ষম নন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِنْ شَيْءٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا
‘‘আল্লাহ্ এমন নন যে, আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীর কোন কিছু তাকে অক্ষম করতে পারে। তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান’’। (সূরা ফাতিরঃ ৪৪)
চতুর্থ স্তরঃ এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক জিনিষের সৃষ্টিকর্তা। আরো বিশ্বাস করা যে, আসমান-যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থানের ছোট-বড় সকল বস্ত্তরই সৃষ্টিকর্তা তিনি। এসমস্ত সৃষ্টির চলাচল এবং অবস্থানও তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি পবিত্র। তিনি ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তিনিই একমাত্র প্রতিপালক।
প্রথম স্তরঃ আল্লাহর ইল্ম তথা তিনি সকল বস্ত্তকে স্বীয় জ্ঞানের মাধ্যমে পরিবেষ্টন করে আছেন- এ কথার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আসমান ও যমীনে সরিষার দানা পরিমাণ বস্ত্তও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। সৃষ্টি করার পূর্ব হতেই তিনি সকল বস্ত্ত সম্পর্কে অবগত আছেন। তাদের রিযিক, বয়স, কথা, কাজ, চলাচল, অবস্থান, গোপন-প্রকাশ্য, তাদের মধ্যে কে জান্নাতী এবং কে জাহান্নামী তাও তিনি জানেন।
দ্বিতীয় স্তরঃ প্রথম স্তরে বর্ণিত সকল বিষয় আল্লাহ্ তাআলা লিখে দিয়েছেন- এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা এবং বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ্ তাআলা ঐ সমুদয় বস্ত্তই লিখে রেখেছেন, যা হবে বলে তাঁর জ্ঞানের আওতায় ছিল। লাওহে মাহ্ফুয ও কলমের প্রতি ঈমান আনয়নও উপরোক্ত বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত।
তৃতীয় স্তরঃ আল্লাহর ইচ্ছা, যা অবশ্যই বাস্তবায়িত হয় এবং সর্বময় ক্ষমতার প্রতি ঈমান আনয়ন করা। যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং যা সৃষ্টি হবে, সে ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতা এদু’টির একটি অন্যটির জন্য আবশ্যক। আর যা সৃষ্টি হয়নি এবং যা সৃষ্টি হবে না, এদু’টির একটির জন্য অন্যটি জরুরী নয়। সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা যা করতে চেয়েছেন তাঁর কুদরতের মাধ্যমে তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। আর যা তিনি করতে ইচ্ছা করেন নি, তা বাস্তবায়িত হয় নি। তিনি ইচ্ছা করেন নি, এ জন্যই বাস্তবায়িত হয় নি; এজন্যে নয় যে, তিনি সেটি করতে সক্ষম নন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِنْ شَيْءٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الأَرْضِ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا
‘‘আল্লাহ্ এমন নন যে, আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীর কোন কিছু তাকে অক্ষম করতে পারে। তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান’’। (সূরা ফাতিরঃ ৪৪)
চতুর্থ স্তরঃ এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্ তাআলা প্রত্যেক জিনিষের সৃষ্টিকর্তা। আরো বিশ্বাস করা যে, আসমান-যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী স্থানের ছোট-বড় সকল বস্ত্তরই সৃষ্টিকর্তা তিনি। এসমস্ত সৃষ্টির চলাচল এবং অবস্থানও তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি পবিত্র। তিনি ছাড়া কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তিনিই একমাত্র প্রতিপালক।
উত্তরঃ তাকদীরের প্রথম স্তর হচ্ছে আল্লাহর ইল্ম তথা সৃষ্টির সকল বিষয় আদি থেকেই তিনি অবগত আছেন-এ কথার উপর ঈমান আনয়ন করা। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ
‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুই জানেন’’। (সূরা হাশরঃ ২২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
‘‘আর আল্লাহ্ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন’’। (সূরা তালাকঃ ১২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
عَالِمِ الْغَيْبِ لاَ يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الْأَرْضِ وَلاَ أَصْغَرُ مِنْ ذَلِكَ وَلاَ أَكْبَرُ
‘‘তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনু পরিমাণ বস্ত্তও তাঁর অগোচরে নয়; না তার চেয়ে ছোট, না বড়’’। (সূরা সাবাঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ
‘‘গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকটে। তিনি ব্যতীত কেউ তা জানে না’’। (সূরা আনআমঃ ৫৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ
‘‘আল্লাহই ভাল জানেন যে, কোথায় স্বীয় রেসালাত প্রেরণ করবেন’’। (সূরা আনআমঃ ১২৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালকই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথের উপর রয়েছে’’। (সূরা নাহ্লঃ ১২৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ
‘‘আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে অবগত নন?’’ (সূরা আনআমঃ ৫৩)। আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَوَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ
‘‘বিশ্ববাসীর অন্তরে যা আছে, আল্লাহ্ কি সম্যক অবগত নন?’’ (সূরা আনকাবুতঃ ১০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
‘‘আর যখন তোমার রব ফেরেশতাগণকে বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তারা বললঃ আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে, তারা সেখানে বিবাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি যা পরিজ্ঞ্যাত আছি, তোমরা তা জান না’’। (সূরা বাকারাঃ ৩০)
وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
‘‘বস্ত্ততঃ তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করবে, যা বাস্তবিকই তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। আর হতে পারে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করবে, যা তোমাদের জন্যে অমঙ্গলজনক। আল্লাহ্ অবগত আছেন আর তোমরা অবগত নও’’। (সূরা বাকারাঃ ২১৬)
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে কি পার্থক্য করা হয়ে গেছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। সে বললঃ তাহলে লোকেরা আমল করে কী জন্যে? তিনি বললেনঃ
( قَالَ كُلٌّ يَعْمَلُ لِمَا خُلِقَ لَهُ أَوْ لِمَا يُسِّرَ لَهُ )
‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি সে আমলই করবে, যার জন্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে অথবা যা তার জন্যে সহজ করা হয়েছে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মুশরিকদের শিশুদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ
( اللَّهُ إِذْ خَلَقَهُمْ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ )
‘‘আল্লাহই যেহেতু তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাই তিনিই ভাল জানেন বড় হলে তারা কি আমল করত’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] সহীহ মুসলিম শরীফে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা একদল লোককে জান্নাতের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অথচ তখন তারা তাদের পিতার পৃষ্ঠে ছিল। এমনিভাবে কতিপয় লোককে জাহান্নামের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অথচ তখন তারা তাদের পিতার পৃষ্ঠদেশে ছিল। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
( إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ )
‘‘কোন ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতবাসীদের আমল করতে থাকে, অথচ সে জাহান্নামী। এমনি কোন ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জাহান্নামীদের আমল করে থাকে, অথচ সে জান্নাতী’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
( مَا مِنْكُمْ مِنْ نَفْسٍ إلاَّ وَقَدْ عُلِمَ اللَّهُ مَنْزِلُهَا مِنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلِمَ نَعْمَلُ أَفَلاَ نَتَّكِلُ، قَالَ : لاَ اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ ثُمَّ قَرَأَ ( فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى إِلَى قَوْلِهِ فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى )
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কোন লোক নেই, যার ঠিকানা জান্নাতে বা জাহান্নামে তা আল্লাহ্ অবগত নন। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমরা আমল করব কেন? ভাগ্যের লেখার উপর ভরসা করে বসে থাকব না কেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘না; বরং তোমরা আমল কর। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে কাজ সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى
‘‘অতএব, যে দান করে, আল্লাহ ভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্যায়ন করে আমি তাকে সুখের বিষয়ের (জানণাতের) জন্যে সহজ পথ দান করব। আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের (জাহান্নামের) জন্যে সহজ পথ দান করব’’। (সূরা আল-লাইলঃ ৫-১০) [. বুখারী, অধ্যায়ঃ তাফসীরুল কুরআন। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র] এছাড়া আরো হাদীছ রয়েছে।
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ
‘‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সব কিছুই জানেন’’। (সূরা হাশরঃ ২২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
‘‘আর আল্লাহ্ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন’’। (সূরা তালাকঃ ১২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
عَالِمِ الْغَيْبِ لاَ يَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِي السَّمَوَاتِ وَلاَ فِي الْأَرْضِ وَلاَ أَصْغَرُ مِنْ ذَلِكَ وَلاَ أَكْبَرُ
‘‘তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অনু পরিমাণ বস্ত্তও তাঁর অগোচরে নয়; না তার চেয়ে ছোট, না বড়’’। (সূরা সাবাঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ
‘‘গায়েব বা অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই নিকটে। তিনি ব্যতীত কেউ তা জানে না’’। (সূরা আনআমঃ ৫৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ
‘‘আল্লাহই ভাল জানেন যে, কোথায় স্বীয় রেসালাত প্রেরণ করবেন’’। (সূরা আনআমঃ ১২৪) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
‘‘নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালকই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথের উপর রয়েছে’’। (সূরা নাহ্লঃ ১২৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ
‘‘আল্লাহ্ কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে অবগত নন?’’ (সূরা আনআমঃ ৫৩)। আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
أَوَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِمَا فِي صُدُورِ الْعَالَمِينَ
‘‘বিশ্ববাসীর অন্তরে যা আছে, আল্লাহ্ কি সম্যক অবগত নন?’’ (সূরা আনকাবুতঃ ১০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
‘‘আর যখন তোমার রব ফেরেশতাগণকে বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তারা বললঃ আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে, তারা সেখানে বিবাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি যা পরিজ্ঞ্যাত আছি, তোমরা তা জান না’’। (সূরা বাকারাঃ ৩০)
وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
‘‘বস্ত্ততঃ তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করবে, যা বাস্তবিকই তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। আর হতে পারে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করবে, যা তোমাদের জন্যে অমঙ্গলজনক। আল্লাহ্ অবগত আছেন আর তোমরা অবগত নও’’। (সূরা বাকারাঃ ২১৬)
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতী ও জাহান্নামীদেরকে কি পার্থক্য করা হয়ে গেছে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ। সে বললঃ তাহলে লোকেরা আমল করে কী জন্যে? তিনি বললেনঃ
( قَالَ كُلٌّ يَعْمَلُ لِمَا خُلِقَ لَهُ أَوْ لِمَا يُسِّرَ لَهُ )
‘‘প্রত্যেক ব্যক্তি সে আমলই করবে, যার জন্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে অথবা যা তার জন্যে সহজ করা হয়েছে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মুশরিকদের শিশুদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ
( اللَّهُ إِذْ خَلَقَهُمْ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ )
‘‘আল্লাহই যেহেতু তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাই তিনিই ভাল জানেন বড় হলে তারা কি আমল করত’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] সহীহ মুসলিম শরীফে আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা একদল লোককে জান্নাতের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অথচ তখন তারা তাদের পিতার পৃষ্ঠে ছিল। এমনিভাবে কতিপয় লোককে জাহান্নামের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। অথচ তখন তারা তাদের পিতার পৃষ্ঠদেশে ছিল। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
( إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ )
‘‘কোন ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতবাসীদের আমল করতে থাকে, অথচ সে জাহান্নামী। এমনি কোন ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জাহান্নামীদের আমল করে থাকে, অথচ সে জান্নাতী’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
( مَا مِنْكُمْ مِنْ نَفْسٍ إلاَّ وَقَدْ عُلِمَ اللَّهُ مَنْزِلُهَا مِنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلِمَ نَعْمَلُ أَفَلاَ نَتَّكِلُ، قَالَ : لاَ اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ ثُمَّ قَرَأَ ( فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى إِلَى قَوْلِهِ فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى )
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কোন লোক নেই, যার ঠিকানা জান্নাতে বা জাহান্নামে তা আল্লাহ্ অবগত নন। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে আমরা আমল করব কেন? ভাগ্যের লেখার উপর ভরসা করে বসে থাকব না কেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘না; বরং তোমরা আমল কর। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তিকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সে কাজ সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى وَصَدَّقَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَى وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَى وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى
‘‘অতএব, যে দান করে, আল্লাহ ভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্যায়ন করে আমি তাকে সুখের বিষয়ের (জানণাতের) জন্যে সহজ পথ দান করব। আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের (জাহান্নামের) জন্যে সহজ পথ দান করব’’। (সূরা আল-লাইলঃ ৫-১০) [. বুখারী, অধ্যায়ঃ তাফসীরুল কুরআন। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র] এছাড়া আরো হাদীছ রয়েছে।
উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكُلَّ شَيْءٍ أحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ
‘‘আমি প্রত্যেক জিনিষকে সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত করে রেখেছি’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ১২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ
‘‘নিশ্চয়ই এবিষয়টি কিতাবে লিখিত আছে’’। (সূরা হজ্জঃ ৭০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُونِ الأولَى * قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي فِي كِتَابٍ لاَ يَضِلُّ رَبِّي وَلاَ يَنْسَى
‘‘ফিরআউন বললঃ তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কি? মুসা বললেনঃ এর জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট লিপিবদ্ধ আছে। আমার প্রতিপালক ভ্রান্ত হন না ও বিস্মৃতও হন না’’। (সূরা তোহাঃ ৫১-৫২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَى وَلاَ تَضَعُ إِلاَّ بِعِلْمِهِ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
‘‘আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং প্রসবও করে না। কোন দীর্ঘায়ু ব্যক্তির আয়ু বৃদ্ধি করা হয় না এবং তাঁর আয়ু কমানো হয় না, কিন্তু তা তো কিতাবে রয়েছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর জন্যে সহজ’’। (সূরা ফাতিরঃ ১১) এছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
( مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ مَا مِنْ نَفْسٍ مَنْفُوسَةٍ إِلَّا كُتِبَ مَكَانُهَا مِنْ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ وَإِلَّا قَدْ كُتِبَ شَقِيَّةً أَوْ سَعِيدَة )
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার ঠিকানা জান্নাত কিংবা জাহান্নামে লেখা হয়নি এবং সে সৌভাগ্যশালী না দুর্ভাগা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] এই বর্ণনাতেই আছে, সুরাকা বিন মালেক (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিন। মনে হচ্ছে, আমাদেরকে এমুহূর্তে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে আজ আমরা কোন্ বিষয়ে আমল করব? এমন বিষয়ে যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং ভাগ্য লিখিত হয়ে গেছে? না ঐ বিষয়ের, যা আমরা ভবিষ্যতে সম্মুখীন হব? তিনি বললেনঃ না; বরং এমন বিষয়ে যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং ভাগ্য লিখিত হয়ে গেছে। সুরাকা বললেনঃ তাহলে আমল করে লাভ কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমল করতে থাক। কেননা প্রত্যেক আমলকারীর জন্যেই তার আমল সহজ করে দেয়া হয়’’। [- উপরোক্ত তথ্যসূত্র।] এ বিষয়ে আরো অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
وَكُلَّ شَيْءٍ أحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ
‘‘আমি প্রত্যেক জিনিষকে সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত করে রেখেছি’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ১২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّ ذَلِكَ فِي كِتَابٍ
‘‘নিশ্চয়ই এবিষয়টি কিতাবে লিখিত আছে’’। (সূরা হজ্জঃ ৭০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُونِ الأولَى * قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّي فِي كِتَابٍ لاَ يَضِلُّ رَبِّي وَلاَ يَنْسَى
‘‘ফিরআউন বললঃ তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কি? মুসা বললেনঃ এর জ্ঞান আমার প্রতিপালকের নিকট লিপিবদ্ধ আছে। আমার প্রতিপালক ভ্রান্ত হন না ও বিস্মৃতও হন না’’। (সূরা তোহাঃ ৫১-৫২) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَى وَلاَ تَضَعُ إِلاَّ بِعِلْمِهِ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
‘‘আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং প্রসবও করে না। কোন দীর্ঘায়ু ব্যক্তির আয়ু বৃদ্ধি করা হয় না এবং তাঁর আয়ু কমানো হয় না, কিন্তু তা তো কিতাবে রয়েছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর জন্যে সহজ’’। (সূরা ফাতিরঃ ১১) এছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
( مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ مَا مِنْ نَفْسٍ مَنْفُوسَةٍ إِلَّا كُتِبَ مَكَانُهَا مِنْ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ وَإِلَّا قَدْ كُتِبَ شَقِيَّةً أَوْ سَعِيدَة )
‘‘তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার ঠিকানা জান্নাত কিংবা জাহান্নামে লেখা হয়নি এবং সে সৌভাগ্যশালী না দুর্ভাগা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] এই বর্ণনাতেই আছে, সুরাকা বিন মালেক (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিন। মনে হচ্ছে, আমাদেরকে এমুহূর্তে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে আজ আমরা কোন্ বিষয়ে আমল করব? এমন বিষয়ে যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং ভাগ্য লিখিত হয়ে গেছে? না ঐ বিষয়ের, যা আমরা ভবিষ্যতে সম্মুখীন হব? তিনি বললেনঃ না; বরং এমন বিষয়ে যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং ভাগ্য লিখিত হয়ে গেছে। সুরাকা বললেনঃ তাহলে আমল করে লাভ কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা আমল করতে থাক। কেননা প্রত্যেক আমলকারীর জন্যেই তার আমল সহজ করে দেয়া হয়’’। [- উপরোক্ত তথ্যসূত্র।] এ বিষয়ে আরো অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
উত্তরঃ পাঁচটি তাকদীর লিখা হয়েছে। তবে সবগুলোই আল্লাহর ইল্ম অনুযায়ী লিখা হয়েছে। সুতরাং তাকদীর পাঁচটি হচ্ছেঃ
(১) প্রথম তাকদীরটি আল্লাহ্ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিখেছেন। কলম সৃষ্টি করে তাকে লিখতে বললেন। একে তাকদীরে আযালী তথা চিরন্তন বা চিরস্থায়ী তাকদীর বলা হয়।
(২) তাকদীরে উমরী অর্থাৎ সারা জীবনের তাকদীর। যেদিন আল্লাহ্ তাআলা
( أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ )
‘‘অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রভু নই’’? একথা বলে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন সেদিন নির্ধারণ করেছেন।
(৩) তৃতীয় তাকদীরটিকেও তাকদীরে উমরী বলা হয়। মাতৃগর্ভে বীর্য থেকে সন্তান তৈরী হওয়ার সময় লিখিত তাকদীর।
(৪) বাৎসরিক তাকদীর। এটি লাইলাতুল কদরে হয়ে থাকে।
(৫) দৈনন্দিনের তাকদীর। পূর্বনির্ধারিত প্রত্যেক তাকদীর আপন আপন স্থানে বাস্তাবয়ন করা।
(১) প্রথম তাকদীরটি আল্লাহ্ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিখেছেন। কলম সৃষ্টি করে তাকে লিখতে বললেন। একে তাকদীরে আযালী তথা চিরন্তন বা চিরস্থায়ী তাকদীর বলা হয়।
(২) তাকদীরে উমরী অর্থাৎ সারা জীবনের তাকদীর। যেদিন আল্লাহ্ তাআলা
( أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ )
‘‘অর্থাৎ আমি কি তোমাদের প্রভু নই’’? একথা বলে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন সেদিন নির্ধারণ করেছেন।
(৩) তৃতীয় তাকদীরটিকেও তাকদীরে উমরী বলা হয়। মাতৃগর্ভে বীর্য থেকে সন্তান তৈরী হওয়ার সময় লিখিত তাকদীর।
(৪) বাৎসরিক তাকদীর। এটি লাইলাতুল কদরে হয়ে থাকে।
(৫) দৈনন্দিনের তাকদীর। পূর্বনির্ধারিত প্রত্যেক তাকদীর আপন আপন স্থানে বাস্তাবয়ন করা।
উত্তরঃ চিরস্থায়ী তাকদীর সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي أَنْفُسِكُمْ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا
‘‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের শরীরে এমন কোন বিপদ আপতিত হয় না, যা সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি নি’’। (সূরা হাদীদঃ ২২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ : وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত মাখলুকের তাকদীর লিখে দিয়েছেন। তাঁর আরশ পানির উপরে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] তিনি আরো বলেনঃ
( إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ : لَهُ اكْتُبْ قَالَ : رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ : اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাকে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখব? আল্লাহ্ বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী প্রতিটি বস্ত্তর তাকদীর লিখ’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ আবওয়াবুল কাদ্র। তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। তবে ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলা সহীহাঃ (১/৩০৭) আল্লাহর আরশ পানির উপরে থাকার অর্থ হলো সাত আকাশের উপরে রয়েছে পানি। আর সেই পানির উপর আল্লাহর আরশ। এখনও আরশ স্বীয় অবস্থানেই রয়েছে।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ
( يا أبا هريرة جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ )
‘‘হে আবু হুরায়রা! পৃথিবীতে যা সৃষ্টি হবে তা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] অর্থাৎ সবকিছু লিখা হয়ে গেছে।
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي أَنْفُسِكُمْ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا
‘‘পৃথিবীতে এবং তোমাদের শরীরে এমন কোন বিপদ আপতিত হয় না, যা সৃষ্টি করার পূর্বেই একটি কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি নি’’। (সূরা হাদীদঃ ২২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( كَتَبَ اللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ : وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সমস্ত মাখলুকের তাকদীর লিখে দিয়েছেন। তাঁর আরশ পানির উপরে’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] তিনি আরো বলেনঃ
( إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ : لَهُ اكْتُبْ قَالَ : رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ : اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা কলম সৃষ্টি করে সর্বপ্রথম তাকে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখব? আল্লাহ্ বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী প্রতিটি বস্ত্তর তাকদীর লিখ’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ আবওয়াবুল কাদ্র। তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। তবে ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলা সহীহাঃ (১/৩০৭) আল্লাহর আরশ পানির উপরে থাকার অর্থ হলো সাত আকাশের উপরে রয়েছে পানি। আর সেই পানির উপর আল্লাহর আরশ। এখনও আরশ স্বীয় অবস্থানেই রয়েছে।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু হুরায়রাকে লক্ষ্য করে বলেনঃ
( يا أبا هريرة جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ )
‘‘হে আবু হুরায়রা! পৃথিবীতে যা সৃষ্টি হবে তা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] অর্থাৎ সবকিছু লিখা হয়ে গেছে।
উত্তরঃ অঙ্গিকার গ্রহণের দিবসে সমগ্র মানব জাতির তাকদীর নির্ধারনের অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললঃ হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী থাকলাম’’। (সূরা আরাফঃ ১৭২)
ইসহাক বিন রাহুয়াই বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! কে কি আমল করবে তা কি নতুনভাবে শুরু হবে? না পূর্বেই ফয়সালা ও নির্ধারিত হয়ে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা যখন আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তার সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানালেন। অতঃপর তাদের সকলকে স্বীয় হাতের মুষ্ঠিতে নিয়ে বললেনঃ এরা জান্নাতের অধিবাসী আর এরা জাহান্নামের অধিবাসী। সুতরাং জান্নাতবাসীদের জন্যে জান্নাতের আমল সহজ করে দেয়া হবে আর জাহান্নামীদের জন্যে জাহান্নামের আমল সহজ করে দেয়া হবে। [- দেখুন দুর্রুল মানছুর ফিত্ তাফসীরিল মা’ছুর, (৩/৮৪৩) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (২/২২৯) ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা (১৬৮)।]
মুআত্তা ইমাম মালেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা উমার ইবনুল খাত্তাবকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলঃ
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললঃ হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী থাকলাম। (এই স্বীকৃতি ও সাক্ষী গ্রহণ এই জন্যে যে) যাতে তোমরা কিয়ামতের দিন বলতে না পার আমরা এবিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম’’। (সূরা আরাফঃ ১৭২) উমার (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেও এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আদমকে সৃষ্টি করে তাঁর পৃষ্ঠদেশে হাত বুলালেন। অতঃপর তার পৃষ্ঠদেশ হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করে বললেনঃ আমি এদেরকে জাহান্নামের জন্যে সৃষ্টি করেছি। তবে জাহান্নামীদের আমলের ন্যায়ই এরা আমল করবে। [- ইমাম মালেক (রঃ) হাদিছটি তাকদীর অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী কিতাবুত্ তাফসীরে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছটি হাসান। তবে ইমাম আলবানী যঈফ বলেছেন। দেখুন যিলাযল জান্নাহ, হাদীছ নং- ১৯৬।]
তিরমিযীতে আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। তাঁর হাতে ছিল দু’টি কিতাব। তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এ কিতাব দু’টির বিষয় বস্ত্ত কি? তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জানি না, তবে আপনি যদি আমাদেরকে জানিয়ে দিন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাতের কিতাব সম্পর্কে বললেনঃ এই কিতাবটি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে। তাতে রয়েছে পিতার নাম ও গোত্রের নামসহ সমস্ত জান্নাতবাসীর নাম। অতঃপর তাদের সর্বশেষ নাম লিখার পর যোগফল নামানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে বাড়ানো বা তাদের মধ্যে হতে কাউকে কমানো হবে না। তারপর বাম হাতের কিতাব সম্পর্কে বললেনঃ এই কিতাবটি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে। তাতে রয়েছে পিতার নাম ও গোত্রের নামসহ সমস্ত জাহান্নামীর নাম। অতঃপর তাদের সর্বশেষ নাম লিখার পর যোগফল নামানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে বাড়ানো বা তাদের মধ্যে হতে কাউকে কমানো হবে না। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! ব্যাপারটি যদি এরকমই হয়ে থাকে, তাহলে আমলের প্রয়োজন কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা সঠিক পথের উপর অটল থাক এবং নিকটবর্তী হও। কেননা জান্নাতবাসীর শেষ পরিণতি হবে জান্নাতীদের আমলের মাধ্যমে। এর পূর্বে সে যে আমলই করুক না কেন। আর জাহান্নামীর শেষ পরিণতি হবে জাহান্নামবাসীর আমলের মাধ্যমে। এরপূর্বে সে যে আমলই করুক না কেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন এবং কিতাব দু’টি ফেলে দিয়ে বললেনঃ তোমাদের প্রতিপালক বান্দাদের বিষয়টি সমাপ্ত করে ফেলেছেন। একদল জান্নাতী এবং অন্যদল জাহান্নামী। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ গরীব। ইমাম আলবানী হাদীছটি সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা, (২/৫২৮)]
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললঃ হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী থাকলাম’’। (সূরা আরাফঃ ১৭২)
ইসহাক বিন রাহুয়াই বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! কে কি আমল করবে তা কি নতুনভাবে শুরু হবে? না পূর্বেই ফয়সালা ও নির্ধারিত হয়ে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা যখন আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তার সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানালেন। অতঃপর তাদের সকলকে স্বীয় হাতের মুষ্ঠিতে নিয়ে বললেনঃ এরা জান্নাতের অধিবাসী আর এরা জাহান্নামের অধিবাসী। সুতরাং জান্নাতবাসীদের জন্যে জান্নাতের আমল সহজ করে দেয়া হবে আর জাহান্নামীদের জন্যে জাহান্নামের আমল সহজ করে দেয়া হবে। [- দেখুন দুর্রুল মানছুর ফিত্ তাফসীরিল মা’ছুর, (৩/৮৪৩) তাফসীরে ইবনে কাছীর, (২/২২৯) ইমাম আলবানী (রঃ) সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা (১৬৮)।]
মুআত্তা ইমাম মালেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা উমার ইবনুল খাত্তাবকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলঃ
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললঃ হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী থাকলাম। (এই স্বীকৃতি ও সাক্ষী গ্রহণ এই জন্যে যে) যাতে তোমরা কিয়ামতের দিন বলতে না পার আমরা এবিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম’’। (সূরা আরাফঃ ১৭২) উমার (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেও এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আদমকে সৃষ্টি করে তাঁর পৃষ্ঠদেশে হাত বুলালেন। অতঃপর তার পৃষ্ঠদেশ হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করে বললেনঃ আমি এদেরকে জাহান্নামের জন্যে সৃষ্টি করেছি। তবে জাহান্নামীদের আমলের ন্যায়ই এরা আমল করবে। [- ইমাম মালেক (রঃ) হাদিছটি তাকদীর অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী কিতাবুত্ তাফসীরে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছটি হাসান। তবে ইমাম আলবানী যঈফ বলেছেন। দেখুন যিলাযল জান্নাহ, হাদীছ নং- ১৯৬।]
তিরমিযীতে আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। তাঁর হাতে ছিল দু’টি কিতাব। তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এ কিতাব দু’টির বিষয় বস্ত্ত কি? তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জানি না, তবে আপনি যদি আমাদেরকে জানিয়ে দিন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাতের কিতাব সম্পর্কে বললেনঃ এই কিতাবটি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে। তাতে রয়েছে পিতার নাম ও গোত্রের নামসহ সমস্ত জান্নাতবাসীর নাম। অতঃপর তাদের সর্বশেষ নাম লিখার পর যোগফল নামানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে বাড়ানো বা তাদের মধ্যে হতে কাউকে কমানো হবে না। তারপর বাম হাতের কিতাব সম্পর্কে বললেনঃ এই কিতাবটি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে। তাতে রয়েছে পিতার নাম ও গোত্রের নামসহ সমস্ত জাহান্নামীর নাম। অতঃপর তাদের সর্বশেষ নাম লিখার পর যোগফল নামানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে বাড়ানো বা তাদের মধ্যে হতে কাউকে কমানো হবে না। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! ব্যাপারটি যদি এরকমই হয়ে থাকে, তাহলে আমলের প্রয়োজন কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা সঠিক পথের উপর অটল থাক এবং নিকটবর্তী হও। কেননা জান্নাতবাসীর শেষ পরিণতি হবে জান্নাতীদের আমলের মাধ্যমে। এর পূর্বে সে যে আমলই করুক না কেন। আর জাহান্নামীর শেষ পরিণতি হবে জাহান্নামবাসীর আমলের মাধ্যমে। এরপূর্বে সে যে আমলই করুক না কেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন এবং কিতাব দু’টি ফেলে দিয়ে বললেনঃ তোমাদের প্রতিপালক বান্দাদের বিষয়টি সমাপ্ত করে ফেলেছেন। একদল জান্নাতী এবং অন্যদল জাহান্নামী। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ গরীব। ইমাম আলবানী হাদীছটি সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা, (২/৫২৮)]
১৪৭
প্রশ্নঃ (১৪৫) তাকদীরে উমরী, যা মাতৃগর্ভে বীর্য থেকে সন্তান তৈরী হওয়ার সময় সম্পন্ন হয় তার দলীল কি?উত্তরঃ তাকদীরে উমরী, যা মাতৃগর্ভে বীর্য থেকে সন্তান তৈরী হওয়ার সময় সম্পন্ন হয় তার অসংখ্য দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنْشَأَكُمْ مِنَ الأَرْضِ وَإِذْ أَنْتُمْ أَجِنَّةٌ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ فَلاَ تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى
‘‘তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভাল জানেন, যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং এ সময় তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণ হিসেবে ছিলে। অতএব তোমরা নিজেদের প্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে মুত্তাকী’’। (সূরা নাজমঃ ৩২) আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يُرْسَلُ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ فَوَالَّذِي لاَ إِلَهَ غَيْرُهُ إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا )
‘‘তোমাদের কারো সৃষ্টি তার মাতৃগর্ভে প্রথমে চল্লিশ দিন বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী চল্লিশ দিনে উহা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিনে উহা মাংশ পিন্ডে রূপান্তরিত হয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়। এসময় তাকে চারটি বিষয় লিখার নির্দেশ দেয়া হয়ঃ (১) সে কি পরিমাণ রিযিক পাবে। (২) বয়স কত হবে। (৩) কর্ম কি হবে এবং (৪) পরিণামে সে ভাগ্যবান হবে না হতভাগ্য। শপথ সেই আল্লাহ্র যিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীদের আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে, এমন সময় (তক্দীরের) লিখন সামনে চলে আসে। অতঃপর সে জাহান্নামবাসীদের মত আমল করে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে।
এমনিভাবে একজন জাহান্নামবাসীদের মত আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাতের দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে, এমন সময় (তক্দীরের) লিখন সামনে চলে আসে। অতঃপর সে জান্নাতবাসীদের মত আমল করে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে। [- (সহীহ) বুখারী, অধ্যায়ঃ বাদ্উল খাল্ক, অনুচ্ছেদঃ ফেরেশতাদের আলোচনা, হাদীছ নং- ২৯৬৯, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র, অনুচ্ছেদঃ মানব সৃষ্টির তিনটি পর্যায়, হাদীছ নং- ৪৭৮১।] এহাদীছটি ব্যতীত এবিষয়ে একদল সাহাবী থেকে আরো সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সবগুলা হাদীছের ভাবার্থ একই।
هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنْشَأَكُمْ مِنَ الأَرْضِ وَإِذْ أَنْتُمْ أَجِنَّةٌ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ فَلاَ تُزَكُّوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى
‘‘তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভাল জানেন, যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং এ সময় তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রুণ হিসেবে ছিলে। অতএব তোমরা নিজেদের প্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে মুত্তাকী’’। (সূরা নাজমঃ ৩২) আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يُرْسَلُ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ فَوَالَّذِي لاَ إِلَهَ غَيْرُهُ إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا )
‘‘তোমাদের কারো সৃষ্টি তার মাতৃগর্ভে প্রথমে চল্লিশ দিন বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী চল্লিশ দিনে উহা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিনে উহা মাংশ পিন্ডে রূপান্তরিত হয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়। এসময় তাকে চারটি বিষয় লিখার নির্দেশ দেয়া হয়ঃ (১) সে কি পরিমাণ রিযিক পাবে। (২) বয়স কত হবে। (৩) কর্ম কি হবে এবং (৪) পরিণামে সে ভাগ্যবান হবে না হতভাগ্য। শপথ সেই আল্লাহ্র যিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীদের আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে, এমন সময় (তক্দীরের) লিখন সামনে চলে আসে। অতঃপর সে জাহান্নামবাসীদের মত আমল করে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে।
এমনিভাবে একজন জাহান্নামবাসীদের মত আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাতের দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে, এমন সময় (তক্দীরের) লিখন সামনে চলে আসে। অতঃপর সে জান্নাতবাসীদের মত আমল করে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে। [- (সহীহ) বুখারী, অধ্যায়ঃ বাদ্উল খাল্ক, অনুচ্ছেদঃ ফেরেশতাদের আলোচনা, হাদীছ নং- ২৯৬৯, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র, অনুচ্ছেদঃ মানব সৃষ্টির তিনটি পর্যায়, হাদীছ নং- ৪৭৮১।] এহাদীছটি ব্যতীত এবিষয়ে একদল সাহাবী থেকে আরো সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সবগুলা হাদীছের ভাবার্থ একই।
উত্তরঃ লাইলাতুল কদরে বাৎসরিক তাকদীর লিখিত হয়। এ ব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ
‘‘আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফয়সালা হয়। আমার আদেশক্রমে। আমি তো প্রেরণকারী’’। (সূরা দুখানঃ ৩-৫)
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ পূর্ণ এক বছরে যা হবে তা লাওহে মাহফুয্ থেকে লাইলাতুল কদরে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন কারো মৃত্যু, জন্ম, রিযিক, বৃষ্টি এমনকি হাজীদের সংখ্যাও নির্ধারণ করা হয়। বলা হয় অমুক অমুক এবছর হজ্জ করবে। হাসান বসরী, সাঈদ বিন যুবায়ের, মুকাতিল আবু আব্দুর রাহমান এবং অন্যান্য আলেম থেকে এরূপ কথাই বর্ণিত হয়েছে। [- সহীহুল হাকেম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।]
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ
‘‘আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফয়সালা হয়। আমার আদেশক্রমে। আমি তো প্রেরণকারী’’। (সূরা দুখানঃ ৩-৫)
ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ পূর্ণ এক বছরে যা হবে তা লাওহে মাহফুয্ থেকে লাইলাতুল কদরে লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন কারো মৃত্যু, জন্ম, রিযিক, বৃষ্টি এমনকি হাজীদের সংখ্যাও নির্ধারণ করা হয়। বলা হয় অমুক অমুক এবছর হজ্জ করবে। হাসান বসরী, সাঈদ বিন যুবায়ের, মুকাতিল আবু আব্দুর রাহমান এবং অন্যান্য আলেম থেকে এরূপ কথাই বর্ণিত হয়েছে। [- সহীহুল হাকেম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।]
উত্তরঃ দৈনন্দিন তাকদীর নির্ধারণের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
‘‘তিনি প্রতিদিন কোন কোন মহান কার্যে রত আছেন’’। (সূরা আর্-রাহমান। ২৯) মুস্তাদরাকুল হাকেমে বর্ণিত আছে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে হতে অন্যতম একটি সৃষ্টি হচ্ছে লাওহে মাহ্ফুয। সাদা মুক্তা দিয়ে আল্লাহ্ এটিকে তৈরী করেছেন। তার উভয় পার্শ্ব তৈরী করা হয়েছে লাল রঙ্গের হিরা দিয়ে। কলমটি হচ্ছে নূরের তৈরী, কালিও নূরের। আল্লাহ্ তাআলা তাতে দৈনিক তিনশত ৬০ বার দৃষ্টি দেন। প্রত্যেকবার দৃষ্টি দেয়ার সময় তিনি কোন না কোন বস্ত্ত সৃষ্টি করেন, কারো জীবিকার ব্যবস্থা করেন, কাউকে জীবিত রাখেন, কাউকে মৃত্যু দেন, কাউকে সম্মানিত করেন, কাউকে অপমানিত করেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। এটিই হচ্ছে আল্লাহর বাণীর অর্থঃ
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
‘‘তিনি প্রতিদিন কোন না কোন মহান কার্যে রত আছেন’’। (সূরা আর্-রাহমান। ২৯)
উল্লেখিত এসমস্ত তাকদীর পূর্বোল্লেখিত বিস্তারিত তাকদীরের মতই। সেটি হচ্ছে তাকদীরে আযালী বা চিরস্থায়ী তাকদীর, যা কলম সৃষ্টি করার পর আল্লাহ্ তাআলা কলমকে লাওহে মাহ্ফুযে লিখার আদেশ দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমেই আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস ও ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর নিম্নবাণীর ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّا كُنَّا نَسْتَنْسِخُ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
‘‘তোমরা যা করতে তা আমি লিপিবদ্ধ করেছিলাম’’। (সূরা জাসিয়াঃ ২৯) আর এ সবকিছুই আল্লাহর ইল্ম থেকে, যা মহান আল্লাহর সিফাতের অন্তর্ভূক্ত।
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
‘‘তিনি প্রতিদিন কোন কোন মহান কার্যে রত আছেন’’। (সূরা আর্-রাহমান। ২৯) মুস্তাদরাকুল হাকেমে বর্ণিত আছে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে হতে অন্যতম একটি সৃষ্টি হচ্ছে লাওহে মাহ্ফুয। সাদা মুক্তা দিয়ে আল্লাহ্ এটিকে তৈরী করেছেন। তার উভয় পার্শ্ব তৈরী করা হয়েছে লাল রঙ্গের হিরা দিয়ে। কলমটি হচ্ছে নূরের তৈরী, কালিও নূরের। আল্লাহ্ তাআলা তাতে দৈনিক তিনশত ৬০ বার দৃষ্টি দেন। প্রত্যেকবার দৃষ্টি দেয়ার সময় তিনি কোন না কোন বস্ত্ত সৃষ্টি করেন, কারো জীবিকার ব্যবস্থা করেন, কাউকে জীবিত রাখেন, কাউকে মৃত্যু দেন, কাউকে সম্মানিত করেন, কাউকে অপমানিত করেন এবং তিনি যা চান তাই করেন। এটিই হচ্ছে আল্লাহর বাণীর অর্থঃ
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
‘‘তিনি প্রতিদিন কোন না কোন মহান কার্যে রত আছেন’’। (সূরা আর্-রাহমান। ২৯)
উল্লেখিত এসমস্ত তাকদীর পূর্বোল্লেখিত বিস্তারিত তাকদীরের মতই। সেটি হচ্ছে তাকদীরে আযালী বা চিরস্থায়ী তাকদীর, যা কলম সৃষ্টি করার পর আল্লাহ্ তাআলা কলমকে লাওহে মাহ্ফুযে লিখার আদেশ দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমেই আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস ও ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর নিম্নবাণীর ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّا كُنَّا نَسْتَنْسِخُ مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
‘‘তোমরা যা করতে তা আমি লিপিবদ্ধ করেছিলাম’’। (সূরা জাসিয়াঃ ২৯) আর এ সবকিছুই আল্লাহর ইল্ম থেকে, যা মহান আল্লাহর সিফাতের অন্তর্ভূক্ত।
উত্তরঃ সকল আসমানী কিতাব এবং নবীর সুন্নাতসমূহ এ ব্যাপারে একমত যে, পূর্বেই তাকদীরের লিখন আমলের প্রতিবন্ধক নয়। এমনভাবে তাকদীরের উপর ভরসা করে বসে থাকাও আবশ্যক করে না; বরং চেষ্টা ও পরিশ্রম করার প্রতি এবং সৎআমল করার প্রতি উৎসাহ যোগায়। একারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথীদেরকে পূর্বেই তাকদীর লিখার, তা বাস্তবায়ন হওয়া এবং কলম শুকিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এগুলো শুনে কোন কোন সাহাবী বলে উঠলেনঃ তাহলে কি আমরা আমল ছেড়ে দিয়ে তাকদীরের লিখার উপর ভরসা করে বসে থাকব না? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না, বরং আমল করতে থাক। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে তার আমল সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى
‘‘অতএব, যে দান করে, আল্লাহ ভীরু হয়’’। (সূরা লাইলঃ ৫)
সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং তাকদীরের লিখন বাস্তবায়ন করার জন্যে অসংখ্য উপকরণ তৈরী করেছেন। দুনিয়া ও আখেরাতের জন্যে কাজ করার পথ সহজ করতে তিনি যে উপকরণ সৃষ্টি করেছেন তাতে তিনি মহা প্রকৌশলী। আল্লাহ্ তাআ’লা তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টির জন্যে সেই পথই সহজ করে দিয়েছেন, যার জন্যে তাঁকে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
বান্দা যখন জানতে পারবে যে, আখেরাতে তার জন্যে নির্ধারিত কল্যাণ অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই সৎকর্ম সম্পাদন করতে হবে, তখন সৎকাজে তথা আখেরাতের কল্যাণ অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করবে। শুধু তাই নয়; বরং দুনিয়ার জীবিকা ও স্বার্থ অর্জনের চেয়ে আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের ক্ষেত্রে অধিক শ্রম ব্যয় করবে।
তাকদীরের হাদীছগুলো শুনে ঐ সাহাবী তাকদীরের বিষয়টি পরিপূর্ণরূপে বুঝতে সক্ষম হয়েছিল, যিনি বলেছিলেনঃ ‘‘আজ থেকে আমি পূর্বের চেয়ে আরো অধিক পরিশ্রম (আমল) করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجَزْ )
‘‘যে বিষয়টি তোমার উপকারে আসবে, তা অর্জনে সচেষ্ট হও, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, অপরাগতা প্রকাশ করো না। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যখন বলা হলঃ আমরা তো ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করি এবং ঝাড়-ফুঁক করি। এটা কি তাকদীরের কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
إِنَّهَا مِنْ قَدَرِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى )
‘‘এটিও অর্থাৎ চিকিৎসা করা ঝাড়-ফুক করাও আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তিবব। ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।] মোট কথা আল্লাহ্ তাআ’লা কল্যাণ-অকল্যাণ সবই নির্ধারণ করেছেন এবং উভয়টি অর্জনের উপকরণ তৈরী ও নির্ধারণ করেছেন।
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى
‘‘অতএব, যে দান করে, আল্লাহ ভীরু হয়’’। (সূরা লাইলঃ ৫)
সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং তাকদীরের লিখন বাস্তবায়ন করার জন্যে অসংখ্য উপকরণ তৈরী করেছেন। দুনিয়া ও আখেরাতের জন্যে কাজ করার পথ সহজ করতে তিনি যে উপকরণ সৃষ্টি করেছেন তাতে তিনি মহা প্রকৌশলী। আল্লাহ্ তাআ’লা তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টির জন্যে সেই পথই সহজ করে দিয়েছেন, যার জন্যে তাঁকে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
বান্দা যখন জানতে পারবে যে, আখেরাতে তার জন্যে নির্ধারিত কল্যাণ অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই সৎকর্ম সম্পাদন করতে হবে, তখন সৎকাজে তথা আখেরাতের কল্যাণ অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করবে। শুধু তাই নয়; বরং দুনিয়ার জীবিকা ও স্বার্থ অর্জনের চেয়ে আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের ক্ষেত্রে অধিক শ্রম ব্যয় করবে।
তাকদীরের হাদীছগুলো শুনে ঐ সাহাবী তাকদীরের বিষয়টি পরিপূর্ণরূপে বুঝতে সক্ষম হয়েছিল, যিনি বলেছিলেনঃ ‘‘আজ থেকে আমি পূর্বের চেয়ে আরো অধিক পরিশ্রম (আমল) করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجَزْ )
‘‘যে বিষয়টি তোমার উপকারে আসবে, তা অর্জনে সচেষ্ট হও, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, অপরাগতা প্রকাশ করো না। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যখন বলা হলঃ আমরা তো ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করি এবং ঝাড়-ফুঁক করি। এটা কি তাকদীরের কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
إِنَّهَا مِنْ قَدَرِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى )
‘‘এটিও অর্থাৎ চিকিৎসা করা ঝাড়-ফুক করাও আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে’’। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তিবব। ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।] মোট কথা আল্লাহ্ তাআ’লা কল্যাণ-অকল্যাণ সবই নির্ধারণ করেছেন এবং উভয়টি অর্জনের উপকরণ তৈরী ও নির্ধারণ করেছেন।
১৫১
প্রশ্নঃ (১৪৯) তাকদীরের তৃতীয় স্তর তথা ‘আল্লাহ্ স্বীয় ইচ্ছা অনুযায়ী তাকদীর নির্ধারণ করেন’’ এর দলীল কী?উত্তরঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَمَا تَشَاءُونَ إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ
‘‘তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন’’। (সূরা দাহরঃ ৩০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَلا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا * إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ
‘‘কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো নাঃ আমি ওটা আগামীকাল করব। এটা না বলে যে, ‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে’। (সূরা কাহ্ফঃ ২৩-২৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَنْ يَشَأِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَنْ يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
‘‘আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন হিদায়াতের সরল-সহজ পথের সন্ধান দেন’’। (সূরা আনআমঃ ৩৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً
‘‘আর আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদেরকে এক জাতি করতে পারতেন’’। (সূরা নাহ্লঃ ৯৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
‘‘আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতনা; কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই সম্পন্ন করে থাকেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৩) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لانْتَصَرَ مِنْهُمْ )
‘‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ নিতেন’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ৪) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ
‘‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই সম্পন্ন করে থাকেন’’। (সূরা বুরুজঃ ১৬) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
‘‘তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন ওকে বলেনঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৮২) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَنْ نَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
‘‘আমি কোন কিছু ইচ্ছা করলে সে বিষয়ে আমার কথা শুধু এই যে, আমি বলিঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়’’। (সূরা নাহ্লঃ ৪০) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإسْلاَمِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا
‘‘অতএব আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্যে তার অন্তকরণ খুলে দেন। আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তার অন্তকরণ খুব সংকুচিত করে দেন’’। (সূরা আন-আমঃ ১২৫) এছাড়াও আরো অগণিত আয়াত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ قُلُوبَ بَنِي آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ )
‘‘নিশ্চয়ই বনী আদমের অন্তরসমূহ দয়াময় আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝখানে মাত্র একটি অন্তরের ন্যায়। যেভাবে ইচ্ছা তিনি সেভাবেই উলট-পালট করেন। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ اللَّهَ قَبَضَ أَرْوَاحَكُمْ حِينَ شَاءَ وَرَدَّهَا عَلَيْكُمْ حِينَ شَاءَ )
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের রূহসমূহ যখন ইচ্ছা কবজ করে নেন এবং যখন ইচ্ছা তোমাদের নিকট তা ফেরত দেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا وَيَقْضِي اللَّهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ )
‘‘তোমরা সুপারিশ কর। এতে তোমরা বিনিময় প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ্ তার রাসূলের জবানের মাধ্যমে যা ইচ্ছা তাই ফয়সালা করেন। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ তোমরা একথা বলো নাঃ আল্লাহ্ যা চান এবং অমুক যা চান; বরং তোমরা বলঃ একমাত্র আল্লাহ্ যা চান। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদব। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছন নং-১৩৭।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ )
‘‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَرَادَ رَحْمَةَ أُمَّةٍ مِنْ عِبَادِهِ قَبَضَ نَبِيَّهَا قَبْلَهَا أَرَادَ هَلَكَةَ أُمَّةٍ عَذَّبَهَا وَنَبِيُّهَا حَيٌّ )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা যখন কোন জাতির উপর রহমত নাযিল করতে চান, তখন সেই উম্মাতের নবীকে আগেই মৃত্যু দেন। আর যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চান তখন তাদের নবী জীবিত থাকাবস্থাই তাদেরকে শাস্তি দেন। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফাযায়েল।] আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই করেন- এ ব্যাপারে আরো অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
وَمَا تَشَاءُونَ إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ
‘‘তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন’’। (সূরা দাহরঃ ৩০) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَلا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا * إِلا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ
‘‘কখনই তুমি কোন বিষয়ে বলো নাঃ আমি ওটা আগামীকাল করব। এটা না বলে যে, ‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে’। (সূরা কাহ্ফঃ ২৩-২৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَنْ يَشَأِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَنْ يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
‘‘আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন হিদায়াতের সরল-সহজ পথের সন্ধান দেন’’। (সূরা আনআমঃ ৩৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً
‘‘আর আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদেরকে এক জাতি করতে পারতেন’’। (সূরা নাহ্লঃ ৯৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
‘‘আর আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতনা; কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তাই সম্পন্ন করে থাকেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৫৩) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَوْ يَشَاءُ اللَّهُ لانْتَصَرَ مِنْهُمْ )
‘‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাদের নিকট থেকে প্রতিশোধ নিতেন’’। (সূরা মুহাম্মাদঃ ৪) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ
‘‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই সম্পন্ন করে থাকেন’’। (সূরা বুরুজঃ ১৬) আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
‘‘তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন ওকে বলেনঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৮২) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَنْ نَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
‘‘আমি কোন কিছু ইচ্ছা করলে সে বিষয়ে আমার কথা শুধু এই যে, আমি বলিঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়’’। (সূরা নাহ্লঃ ৪০) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإسْلاَمِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا
‘‘অতএব আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্যে তার অন্তকরণ খুলে দেন। আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তার অন্তকরণ খুব সংকুচিত করে দেন’’। (সূরা আন-আমঃ ১২৫) এছাড়াও আরো অগণিত আয়াত রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ قُلُوبَ بَنِي آدَمَ كُلَّهَا بَيْنَ إِصْبَعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ الرَّحْمَنِ كَقَلْبٍ وَاحِدٍ يُصَرِّفُهُ حَيْثُ يَشَاءُ )
‘‘নিশ্চয়ই বনী আদমের অন্তরসমূহ দয়াময় আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝখানে মাত্র একটি অন্তরের ন্যায়। যেভাবে ইচ্ছা তিনি সেভাবেই উলট-পালট করেন। [- সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদ্র।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
( إِنَّ اللَّهَ قَبَضَ أَرْوَاحَكُمْ حِينَ شَاءَ وَرَدَّهَا عَلَيْكُمْ حِينَ شَاءَ )
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাদের রূহসমূহ যখন ইচ্ছা কবজ করে নেন এবং যখন ইচ্ছা তোমাদের নিকট তা ফেরত দেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا وَيَقْضِي اللَّهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ )
‘‘তোমরা সুপারিশ কর। এতে তোমরা বিনিময় প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ্ তার রাসূলের জবানের মাধ্যমে যা ইচ্ছা তাই ফয়সালা করেন। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ তোমরা একথা বলো নাঃ আল্লাহ্ যা চান এবং অমুক যা চান; বরং তোমরা বলঃ একমাত্র আল্লাহ্ যা চান। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদব। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছন নং-১৩৭।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ )
‘‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
( إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَرَادَ رَحْمَةَ أُمَّةٍ مِنْ عِبَادِهِ قَبَضَ نَبِيَّهَا قَبْلَهَا أَرَادَ هَلَكَةَ أُمَّةٍ عَذَّبَهَا وَنَبِيُّهَا حَيٌّ )
‘‘আল্লাহ্ তাআলা যখন কোন জাতির উপর রহমত নাযিল করতে চান, তখন সেই উম্মাতের নবীকে আগেই মৃত্যু দেন। আর যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চান তখন তাদের নবী জীবিত থাকাবস্থাই তাদেরকে শাস্তি দেন। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফাযায়েল।] আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই করেন- এ ব্যাপারে আরো অনেক সহীহ হাদীছ রয়েছে, যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
১৫২