hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

গুরুত্বপূর্ণ বিশটি হাদিসের ভাষ্য

লেখকঃ গবেষণা পরিষদ: আল-মুনতাদা আল-ইসলামী

১২
সাত শ্রেণির লোক আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ - عَنِ النَّبِيِّ- صَلَّى الله ُعَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ : سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إلَّا ظِلُّهُ : إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِيْ المَسَاجِدِ، وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِيْ اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتَ مَنْصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ : إنِّي أخَافُ اللهَ، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ) متفق عليه (

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন—কেয়ামত দিবসে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে না—ন্যয়পরায়ন বাদশাহ ; এমন যুবক, যে তার যৌবন ব্যয় করেছে আল্লাহর এবাদতে ; ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় সর্বদা সংশ্লিষ্ট থাকে মসজিদের সাথে ; এমন দু ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য ; এমন ব্যক্তি, যাকে কোন সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া রমণী আহবান করল অশ্লীল কর্মের প্রতি, এবং প্রত্যাখ্যান করে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি ; এমন ব্যক্তি, যে এরূপ গোপনে দান করে যে, তার বাম হাত ডান হাতের দান সম্পর্কে অবগত হয় না। আর এমন ব্যক্তি, নির্জনে যে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দু-চোখ বেয়ে বয়ে যায় অশ্রুধারা। [বোখারি-৬৬০, মুসলিম-১০৩১।]

শব্দ প্রসঙ্গে আলোচনা :

سَبْعَةٌ : অর্থ সাত, সংখ্যাটি এখানে সীমাবদ্ধ করণের জন্য উল্লেখ করা হয়নি, কারণ, অন্যান্য হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, এ সাত শ্রেণি ব্যতীত অন্যান্যরাও কেয়ামত দিবসে আল্লাহর আরশের ছায়াতলে স্থান লাভ করবে।

يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ : আল্লাহর ছায়া দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য তার আরশের ছায়া। ভিন্ন এক রেওয়ায়েত এর প্রমাণ—যেখানে স্পষ্টভাবে ‘তার আরশ’ কথাটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلاَّ ظِلَّهُ : উদ্দেশ্য কেয়ামত দিবস।

إِمَامٌ عَادِلٌ : আভিধানিক অর্থে ইমাম হলেন—যার নেতৃত্ব মেনে নেওয়া হয় এমন দলপতি। পরিভাষায়—শাসক ও বিচারক, যাদের কাঁধে মুসলমানদের কল্যাণের দায়িত্ব-ভার অর্পণ করা হয়েছে। ন্যায় প্রয়োগের মাধ্যমে যিনি শাসন করেন, তাকে আদেল ( عادِل ) বলা হয়।

شَابٌٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ اللهِ : বিশেষভাবে যুব শ্রেণির উল্লেখের কারণ এই যে, যুবক বয়সেই প্রবৃত্তি নানাভাবে মানুষের চিন্তা-চেতনায় হানা দেয়, প্রলুব্ধ করে নানা অপকর্মে-অধর্মে। সুতরাং যুবক বয়সে এবাদতে নিমগ্ন হওয়া অন্য যে কোন সময়ে এবাদতে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে শ্রেয় ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

اِجْتَمَعَا عَلَيْهِ : অর্থাৎ, আল্লাহর ভালোবাসার ভিত্তিতেই তারা একে অপরকে ভালোবেসেছে, এবং বিচ্ছিন্ন হয়েছে তারই জন্য। আল্লাহর ভালোবাসাই তাদের উভয়ের মাঝে গড়ে দিয়েছে সখ্যতা ও বন্ধুত্ব, পার্থিব কোন প্রতিবন্ধকতা এ ব্যাপারে তাদের মাঝে আড়াল তৈরি করতে পারেনি। মৃত্যু পর্যন্ত তাদের উভয়ের মাঝে বন্ধনের একমাত্র সূত্র হল আল্লাহর মহববত।

وَ رَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتَ مَنْصَبٍ وَ جَمَالٍ : অর্থাৎ সুন্দরী নেতৃস্থানীয়া রমণী তাকে মন্দ কর্মের প্রতি আহবান জানাল।

وَ رَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ : সদকা হল : মানুষ আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য যে সম্পদ বিলিয়ে দেয়—হোক তা জাকাতের মত ফরজ কিংবা নফল দান। তবে, সদকা শব্দের ব্যবহার এক সময় ব্যাপক হয়ে দাঁড়ায় কেবল নফল দানের ক্ষেত্রে।

فَأَخَفَاهَا حَتّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُه مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ : বাক্যটি দ্বারা দানের গোপনীয়তা বুঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ যদি বাম হাত ডান হাতের কর্ম সম্পর্কে অবগতি লাভে সক্ষম হত, অধিক গোপনীয়তার কারণে সেও তার দানের ব্যাপারে অবগতি লাভ করতে পারত না।

خَالِيًا : নির্জনে, যেখানে কেউ নেই। বিশেষভাবে এ অবস্থাটি উল্লেখের কারণ হল, নির্জনের এবাদত রিয়া বা লোক দেখানো ভাবনা হতে মুক্ত থাকে, লোক-দেখানো প্রবৃত্তির সম্ভাবনা স্বভাবতই থাকে না।

فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ : আল্লাহর ভয়ে তার দু-চোখে অশ্রু বয়ে গেল।

আহকাম ও ফায়দা :

আল্লাহ তাআলার মহানুভবতা এই যে, কিছু কিছু কর্মকে তিনি বান্দার জন্য বিশেষ ফলদায়ক নির্ধারণ করে দিয়েছেন, উক্ত কর্মের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে অনেকের তুলনায় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়ে উঠে। এভাবে তিনি বান্দাদের মাঝে কল্যাণ-কর্মের উদ্দীপনা ও উৎসাহ সঞ্চার করেন।

বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়ে উঠা সাত শ্রেণির লোকদের কথা রাসূল সা. উক্ত হাদিসে উল্লেখ করেছেন। এ সাত শ্রেণি ব্যতীতও, অন্য কয়েকটি শ্রেণির কথা রাসূল ভিন্ন হাদিসে উল্লেখ করেছেন। উদাহরণত: আল্লাহর পথে গাজি ; অভাবীর সাহায্যকারী ; ঋণগ্রস্তকে সাহায্যদাতা ; এবং দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মসজিদে গমনকারী—ইত্যাদি। অন্য হাদিসের এ রেওয়ায়াতের ফলে হাদিসবেত্তাগণ মত দিয়েছেন যে, সাত সংখ্যাটি এখানে বিশেষ কোন অর্থ বহন করে না। তাই সাতের মাঝেই তা সীমাবদ্ধ নয়।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত গুণ অনুসন্ধান করেছেন এবং তার রচিত معرفة الخصال الموصلة إلى الظلال নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন।

হাদিসটিতে কেবল পুরুষের উল্লেখও কোন সীমাবদ্ধকরণের নির্দেশ করে না। দুটি স্থান ব্যতীত যা যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে নারীরাও সমান অংশীদার। স্থান দুটি হচ্ছে—

সর্বোচ্চ নেতৃস্থান ও শাসন ব্যবস্থা। নারীরা মুসলমানদের সাধারণ নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম নয়, এবং সক্ষম নয় তারা বিচারক হতে। তবে যে সকল ক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব বৈধ—যেমন স্কুলের প্রধান হওয়া—সে সকল ক্ষেত্রে নারীদের ন্যয়পরায়নতা বিবেচ্য।

দ্বিতীয়ত: নারীদের ক্ষেত্রে মসজিদে গমন করা বাধ্যতামূলক হওয়ার বিষয়টি বিবেচ্য নয়, কারণ, তাদের জন্য গৃহে সালাত আদায়ই উত্তম। অন্যান্য ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাথে নারীরাও সমানভাবে অংশীদার।

শরিয়ত ন্যয়পরায়নতার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছে,—হোক তা সর্বোচ্চ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কিংবা তার তুলনায় কিছুটা নিম্নস্তরে ; এমনকি ব্যক্তির পারিবারিক জীবনও এর আওতাভুক্ত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন—

وَقُلْ آَمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ( الشورى : 15)

আপনি বলুন, আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আমি তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি, এবং তোমাদের মাঝে ন্যয় প্রতিষ্ঠার আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। [সূরা শূরা : ১৫]

অন্যত্র তিনি বলেন—

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ ( النحل : 90)

নিশ্চয় আল্লাহ আদেশ করেন ন্যয়পরায়নতা ও এহসানের। [সূরা নহল : ৯০]

রাসূল সা. বলেছেন—

اتقوا الله واعدلوا بين أولادكم .

তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে সমতা বিধান কর। [বোখারি : ২৩৯৮] অন্যত্র বলেছেন—

إن المقسطين عند الله على منابر من نورعن يمين الرحمن عز وجل، وكلتا يديه يمين، الذين يعدلون في حكمهم وأهليهم وما ولوا .

সুবিচারকগণ আল্লাহর ডান পাশে নূরের মিম্বর সমূহে অবস্থান করবে—তার উভয় হাতই ডান ; যারা তাদের শাসন, পরিবার ও দায়িত্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যয় প্রতিষ্ঠা করবে। [মুসলিম : ৩৪০৬] উক্ত হাদিসে রাসূল ন্যায়পরায়ণ শাসকের উল্লেখ সর্বপ্রথমে করেছেন, কারণ, নেতৃত্ব ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা খুবই কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষের জীবনে যৌবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, তাতে দৃঢ়তা থাকে প্রচন্ড, মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকে প্রখর—উদ্দম ও জীবনীশক্তিতে ভরপুর একটি সময় মানুষের যৌবন। সুতরাং, যে ব্যক্তি যৌবনে আল্লাহ প্রবর্তিত পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করবে, দমন করবে প্রবৃত্তি ও চাহিদা—হাদিসে বর্ণিত সেই মহান স্তর তারই প্রাপ্য। যে বিষয়গুলো যৌবনে মানুষকে তা অর্জনে সাহায্য করে, তা নিম্নরূপ—

জ্ঞানান্বেষণ, ও তাতে পরিপূর্ণ আত্মনিয়োগ।

বিভিন্ন ভালো কাজের মাধ্যমে সর্বদা সময় কাজে লাগানোর অভ্যাস গড়ে তোলা।

আল্লাহর পথের মহান অনুসারীদের সাথে সংস্পর্শ যাপন।

যুবক বয়সে পবিত্র কোরআনের পুরোটা কিংবা তার অংশ বিশেষ মুখস্থ করার প্রচেষ্টা চালান।

৭. মসজিদ আল্লাহর ঘর, তাতে ফরজ ও নফল এবাদতসমূহ পালন করা হয়। চর্চা করা হয় নানা ধর্মীয় বিদ্যা। ধর্মের আলোচনা ও নসিহত হয় সর্বদা। দ্বীনের ক্ষেত্রে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যারা মসজিদের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত, তারা কেয়ামত দিবসে সেই মহান সওয়াব লাভ করবে। এছাড়া, যে মসজিদের সাথে সর্বদা সম্পৃক্ত, সে দূরে থাকে পাপ, এমনকি, পাপের দর্শন থেকে। অবস্থান করে আল্লাহর রহমতের স্বর্গীয় সান্নিধ্যে। এভাবে তার অন্তর পরিচ্ছন্নতা লাভ করে, স্বচ্ছ হয় তার চিন্তা-চেতনা। ক্রমান্বয়ে ক্ষালন হতে থাকে তার পাপসমূহ, বাড়তে থাকে সৎ ও সুফলদায়ক কর্মগুলো। মসজিদের সাথে সম্পৃক্ততার অর্থ এ নয় যে, সর্বদা স্বশরীরে মসজিদে অবস্থান করতে হবে। এর অর্থ এই যে, মসজিদ হতে বের হওয়ার পরও তার মন কেবল তাতে ফিরে যেতে উৎসুক হয়ে উঠবে, যখন তাতে অবস্থান করবে, স্থানটিকে তার খুবই আপন মনে হবে, লাভ করবে পরম স্বস্তি ও প্রশান্তি।

৮. সম্পর্কের নানা রকম পার্থিব ভিত্তি মানুষে মানুষে সম্পর্ক তৈরি করে—কখনো আত্মীয়তা, অর্থনৈতিক যূথবদ্ধতা, চারিত্রিক ও আচরণীয় সম্পৃক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্ক রচনার ক্ষেত্রে পালন করে থাকে মৌলিক ভূমিকা। পক্ষান্তরে, ইসলাম মানুষকে উৎসাহী করে এমন শক্তিকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরিতে, যার পুরোটাই নির্ভর করে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার উপর। কোরআন ও সুন্নাহও এ দিকটির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে—আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন—

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ

মোমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। [সূরা হুজুরাত : ১০] অন্যত্র এসেছে—

الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ ﴿ الزخرف :67﴾

মোত্তাকি ব্যতীত সে দিন বন্ধুরা হবে পরস্পর পরস্পরের শত্রু। [সূরা যুখরুফ : ৬৭]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে এরশাদ করেন—

أوثق عرى الإيمان الحب في الله والبغض في الله .

ঈমানের মজবুতম বন্ধন হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, এবং তার জন্য ঘৃণা করা। [আহমদ ২৮৬/৪, বায়হাকী, হাদিসটি সহিহ]

৯. মানুষের প্রবৃত্তির রয়েছে নানা আকর্ষণ ও ইচ্ছা। ইসলাম এগুলো সুস্থ ও বৈধভাবে পূরণ করার ব্যবস্থা করেছে। শয়তান সর্বদা এ ফন্দিতে ব্যস্ত থাকে যে, কীভাবে সে মানুষকে আক্রান্ত করবে প্রবৃত্তির ফাঁদে, ভ্রষ্ট করবে সত্য পথ হতে। নারী-পুরুষ সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে শয়তান মানুষের সামনে খুবই মোহনীয় করে তুলে ধরে। নারী যদি হয় সুন্দরী, সম্মানিতা ও মর্যাদার অধিকারী, তবে পুরুষ তার প্রতি আসক্ত হয় প্রবল মোহে। যে ঈমানদার, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী, এ সকল পরিস্থিতিতে পাপে তার ঈমান বাধা প্রদান করে, সতর্ক করে দেয় ; ফলে তার অনুভূতি জাগ্রত হয় যে—আমি আল্লাহকে ভয় করি—মৌখিক এ স্বীকৃতির পর সে যখন বাস্তবেও এর অনুসরণ করে, লাভ করে হাদিসে বর্ণিত মহান সৌভাগ্য ও মর্যাদা। ইসলাম তার মৌলিক পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে নারী ও পুরুষকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে গড়ে তুলতে চায়—যে তার প্রতি কর্মে, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহকে ধ্যানে উপস্থিত রাখবে। কবি বলেন—

و إذا خلوت بريبة في ظلمة و النفس داعية إلي الطغيان

فاستقم من نظر الإله و قل لها إن الذي خلق الظلام يراني

নির্জন অন্ধকারে যখন একান্ত হবে সংশয়ে (রমনীর সাথে)

আর তোমার প্রবৃত্তি আহবান জানাবে অন্যায়ের প্রতি

তখন তুমি আল্লাহর দৃষ্টির সম্মুখে লজ্জাশীল হও

তাকে বল, এ অন্ধকারের যিনি স্রষ্টা, তিনি তো আমাকে দেখছেন।

১০. সদকা এক মহান কর্ম। এর ফজিলত প্রভূত। অজস্র এর ফলাফল। এর ফজিলত ও সওয়াব বর্ণনায় অসংখ্য আয়াত ও হাদিস নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন—

مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِئَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ( البقرة : 261)

আল্লাহর রাস্তায় ধন-সম্পদ ব্যয়কারীদের দৃষ্টান্ত একটি বীজের মত, যা হতে উৎপন্ন হয়েছে সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত শস্যদানা। যাকে ইচ্ছা তাকে আল্লাহ তাআলা আরো বাড়িয়ে দেন, আল্লাহ প্রশস্ত, সর্বজ্ঞ। [সূরা বাকারা : ২৬১]

প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য—উভয় প্রকার সদকাই ফজিলতপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন—

إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ ( البقرة : 271)

তোমরা যদি সদকা প্রকাশ কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন করে দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরণ করে দাও, তবে তাও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তা তোমাদের পাপ ক্ষালন করবে ; তোমরা যা কর, সে ব্যাপারে আল্লাহ জ্ঞাত।’ [সূরা বাকারা : ২৭১]

অবস্থাভেদে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সদকার মাঝে উত্তম-অনুত্তম নির্ধারণ করা হয়। যদি তা প্রকাশ্যে পালন করার ব্যাপারে কোন কল্যাণ থাকে, তবে তাই উত্তম। অন্যথায়, ফরজ ও নফল—উভয় ক্ষেত্রে গোপনে পালন করা উত্তম।

১২. সর্বোত্তম আমলগুলোর মাঝে জিকির অন্যতম। সন্দেহ নেই, এটি তার সহজতরগুলোর মাঝেও অন্যতম। এতে আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা করা হয়, প্রশংসা করা হয়, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয় তার প্রতি, পেশ করা হয় সশঙ্ক আকুতি। যখন এ জিকির পালিত হয় লোকচক্ষুর অন্তরালে, এবং আল্লাহর ভয়ে জিকিরকারী বান্দার দু-চোখ ভরে যায় অশ্রুধারায়, আল্লাহ তাকে মহান সওয়াবে ভূষিত করেন—তিনি তাকে ছায়া দান করেন কেয়ামতের কঠিন দিবসে, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত ভিন্ন কোন ছায়া থাকবে না।

১৩. হাদিসটি প্রমাণ করে, এখলাসশূন্য এবাদত কোন কাজে আসে না। উল্লেখিত আমলগুলোর মাঝে একক যে গুণটি পাওয়া যায়, তা হচ্ছে এবাদতের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ এখলাস আনয়ন, এবং পার্থিব যাবতীয় উদ্দেশ্য হতে তাকে মুক্ত রাখা।

১৪. এ গুণগুলোর মাঝে যে কয়টি একক গুণ পাওয়া যায়—তা হচ্ছে, সবর, সহিষ্ণুতা। সন্দেহ নেই, আল্লাহর আনুগত্য ও তার নির্দেশ পালনের জন্য প্রয়োজন সবর ও ধৈর্য। কারণ, তার প্রতি পদে বাধা হয়ে দাঁড়াবে শয়তান, গাফেল আত্মা ও প্রবৃত্তি। বান্দা যখন এর বিরুদ্ধে অংশ নিবে আত্মিক জেহাদে, বিজয় অর্জন করবে এর বিরুদ্ধে—নিশ্চয় উত্তম পুরস্কারে ভূষিত হবে।

১৫. হাদিসটি আমাদেরকে এ হেদায়েত প্রদান করে যে, মোমিনের উচিত গোপনে সৎকর্মে অংশগ্রহণ করা। যাতে এবাদতে রিয়ার (লোক দেখানো ভাবনা) বিন্দুমাত্র সংশয় তৈরি না হয়, এবং গড়ে উঠে এখলাসের অভ্যাস।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন