মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : আল্লাহ তাআলা বলেন—যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সঙ্গে কোনো প্রকার শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেই। আমার বান্দা যে এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমার সান্নিধ্য লাভ করে সে সবের মাঝে তার প্রতি আরোপিত ফরজ কাজই আমার নিকট অধিকতর প্রিয় এবং আমার বান্দা নফল কার্যাবলীর মাধ্যমে অব্যাহত ভাবে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এক সময় সে আমার ভালোবাসা লাভে সক্ষম হয়। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি হয়ে যাই তার কর্ণ, যার মাধ্যমে সে শ্রবণ করে। এবং হয়ে যাই তার চক্ষু, যার মাধ্যমে সে দর্শন করে, এবং তার হস্ত, যার দ্বারা সে হস্তগত করে, এবং তার চরণ হয়ে যাই যা দিয়ে বিচরণ করে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায় আমি তাকে অবশ্যই তা প্রদান করি। যদি আমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দান করি। [বোখারি-৬৫০২]
হাদিস বর্ণনাকারী : হাদিসটি বর্ণনাকারী আবু হুরাইরা রা., তিনি ছিলেন হাদিস কণ্ঠস্থকারী সাহাবিদের অন্যতম শীর্ষস্থানীয়। তার ও তার পিতার নাম বিষয়ে বিজ্ঞ উলামা মহলে রয়েছে মতদ্বৈধতা। তবে প্রসিদ্ধ মতানুসারে তার এবং তার পিতার নাম হলো আব্দুর রহমান, ইবনে ছখর, আদ দাওসী। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন খায়বার যুদ্ধের বছরে, সপ্তম হিজরির প্রারম্ভে। ইমাম জাহাবী বলেন :—
حمل عن النبي صلى الله عليه وسلم علما طيبا كثيرا مباركا فيه، لم يلحق فى كثرته .
রাসূলুল্লাহ সা. হতে তিনি প্রভূত, বরকতময় জ্ঞান বহন করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। [আল-ইসাবা] রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিরবচ্ছিন্ন সংস্রবের বরকতে পবিত্র হাদিসের বর্ণনায় তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ রাবী। যে কারণে তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা পাঁচ হাজার তিন শত চুয়াত্তর (৫,৩৭৪)-এ পৌঁছেছে। ইমাম বোখারি রহ. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণনা করেন যে—তিনি বলেছেন :—
إنكم تقولون : إن أبا هريرة يكثر الحديث عن رسول الله صلى الله عليه وسلم، وتقولون : ما بال المهاجرين والأنصار لا يحدثون عن رسول الله- صلى الله عليه وسلم- بمثل حديث أبي هريرة ؟ وإن إخوتي من المهاجرين كان يشغلهم الصفق بالأسواق، وكنت ألزم رسول الله صلى الله عليه وسلم على ملء بطني، فأشهد إذا غابوا، وأحفظ إذا نسوا، وكان يشغل إخوتي من الأنصار عمل أموالهم، وكنت امرأ مسكينا من مساكين الصفة، أعي حين ينسون .
‘তোমরা পরস্পর বলাবলি কর যে, আবু হুরাইরা রাসূল সা. হতে অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেন এবং তোমাদের পারস্পরিক মন্তব্য হচ্ছে যে, মুহাজির ও আনসারগণ আবু হুরাইরার মত হাদিস বর্ণনায় অংশ নেন না কেন ? আমার মুহাজির ভাইরা বাজারে ব্যবসায় নিয়োজিত থাকত। আর আমি উদরপূর্তির চিন্তা বাদ দিয়ে রাসূলের সঙ্গ যাপনেই বেশি গুরুত্ব প্রদান করতাম। যখন তারা চলে যেত, তখন আমি উপস্থিত থাকতাম, আর তারা বিস্মৃত হলে আমি ব্যাপৃত হতাম কণ্ঠস্থ করণে। আমার আনসার ভাইদের ব্যস্ত রাখত সহায়-সম্পত্তির ব্যস্ততা। আমি ছিলাম সুফ্ফার অসহায় কপর্দকশূন্য একজন। তারা বিস্মৃত হলে আমি মনে রাখতাম।’ [আল-ইসাবা]
একদিন রাসূল স. হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন :—
إنه لن يبسط أحد ثوبه حتى أقضي جميع مقالتي هذه ثم يجمع إليه ثوبه إلا وعى ما أقول . فبسطت نمرة علي ّ، حتى إذا قضى رسول الله صلى الله عليه وسلم مقالته جمعتها إلى صدري، فما نسيت من مقالة رسول الله صلى الله عليه وسلم تلك من شيء .
‘আমি যতক্ষণ না আমার যাবতীয় কথা শেষ করছি ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ যদি তার কাপড় বিছিয়ে রেখে দেয় এবং কথা শেষ হলে তা নিজের দিকে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে, তাহলে আমার উপস্থাপিত সব কথাই তার মনে থাকবে।’—তৎক্ষণাৎ আমি আমার সাদা-কালো দাগযুক্ত পশমি চাদর পেতে দিলাম এবং যখন তিনি যাবতীয় কথা বলে শেষ করলেন, তখনি আমি আমার পাতা চাদরটি টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। তাই, রাসূলের বলা সেই কথাগুলোর কিছুই আমি ভুলিনি। [বোখারি : ১৯০৬]
সাতান্ন হিজরিতে তিনি পরলোক গমন করেন।
শাব্দিক আলোচনা :
إنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ হাদিসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এ ধরণের বাক্যরূপ প্রমাণ করে হাদিসটি ‘হাদিসে কুদসী’। হাদিসে কুদসী হল :—
هو ما أضيف إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وأسنده إلى ربه عز وجل .
রাসূল স. যা নিজের সাথে সংশ্লিষ্ট করে বর্ণনা করেন, কিন্তু বরাত দেন আল্লাহ তাআলার কালাম হিসেবে।
مَنْ عَادَى لِيْ وَلِيًّا (যে আমার কোনো ওলি (বন্ধু)-এর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করল) ভিন্ন বর্ণনায় এসেছে :—
من أهان لي وليّا فقد بارزني بالمحاربة
যে আমার কোনো প্রিয় বান্দাকে অপমাণিত করল সে আমার সঙ্গে লড়াইয়ের ঘোষণা দিল। [যাদুদ দায়িয়াহ : ১৫] ‘ওয়ালিয়্যুন’ শব্দটি ‘মুওয়ালাত’ থেকে উৎপন্ন, যার অর্থ নৈকট্য। ওলি কাকে বলে ?—
الولي : هو القريب من الله بعمل الطاعات والكف عن المعاصي
ওলি তাকেই বলে যে যথার্থ এবাদত বন্দেগি ও সর্বপ্রকার পাপাচার পরিহারে দৃঢ়তার স্বাক্ষর রেখে মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্যে উপনীত হতে সক্ষম ও সফল হয়েছে। [প্রাগুক্ত : ১৫]
فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحََرْبِ অর্থাৎ, যেহেতু আমার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে সেহেতু আমিও তার সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম।
وَمَا تَقَرَّبَ إلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُهُ عَلَيْهِ ‘আমার বন্ধুদের সাথে শত্রুতা প্রকারান্তরে আমার সাথে যুদ্ধ ঘোষণারই অনুরূপ’—এ আলোচনার অবতারণার পর আল্লাহ তাআলা তার বন্ধুদের গুণ বর্ণনা করেছেন, যাদের সাথে শত্রুতা নিষিদ্ধ, এবং যাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আল্লাহর কাম্য। আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারাই, যারা নৈকট্যদানকারী বিষয়কে অবলম্বন করে, বলাবাহুল্য এর শীর্ষে অবস্থান করে শরিয়তের অবশ্য পালনীয় বিধান বা ফরজ সমূহ।
فَإذَا أحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعُهُ الّذِيْ يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرُهُ الّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِيْ يُبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلُهُ الَّتِيْ يَمْشِيْ بِهَا বাক্যাংশের উদ্দেশ্য এই যে, প্রথমত: ফরজ, দ্বিতীয়ত: নফল-ইত্যাদির মাধ্যমে সে নিরত হবে আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের অধ্যবসায়, আল্লাহ তাকে আপন করে নিবেন, ঈমানের স্তর হতে তাকে উন্নীত করবেন এহসানের স্তরে। ফলে সে এমনভাবে আল্লাহ পাকের এবাদতে লিপ্ত হবে—যেন সে আল্লাহর দর্শন লাভ করছে, তার হৃদয় পূর্ণ হবে আল্লাহর মারেফাতে, তার মহববত ও মহত্ত্বে। তার আত্মা কম্পিত হবে আল্লাহর ভীতি ও মাহাত্ম্যে। তার হৃদয়কোন্দর বিগলিত হবে তার সংশ্লিষ্টতা ও তার প্রতি প্রবল ব্যগ্রতায়। এক সময় তার মনে হবে, অন্তরদৃষ্টি দ্বারা সে আল্লাহকে দর্শন করছে—তার কথন হবে আল্লাহর কথন, শ্রবণ হবে তারই শ্রবণ, দৃষ্টি হবে তারই দৃষ্টি।
وَلَئِنْ سَأَلَنِيْ لَأُعْطِيَنّهُ، وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِيْ لَأُعِيْذَنَّهُ . অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাকের সে-রূপ নৈকট্যশালী সৌভাগ্যবান বান্দার বিশিষ্ট মর্যাদা রয়েছে তাঁর সমীপে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সে যদি তাঁর সকাশে কিছু চায় তবে তিনি তাকে তা দিয়ে দেন। কোনো বিষয় থেকে আশ্রয় কামনা করলে তিনি তা থেকে তাকে আশ্রয় দেন। তাঁকে ডাকলে তিনি সাড়া দেন। অতএব আল্লাহ পাকের সকাশে তার এহেন সম্মান থাকায় সে الدَّعْوَةِ مُسْتَجَابُ (যার দোয়া কবুল করা হয়) বান্দায় পরিণত হয়।
বিধান ও উপকারিতা :
ওয়াজিব-মোস্তাহাব, বা আবশ্যক-অনাবশ্যক সর্বস্তরের এবাদত বন্দেগির অভ্যন্তরে বিচরণ, এবং ছোট বড় সর্বশ্রেণীর পাপাচার অনাচারের ভয়ংকর বৃত্ত থেকে সম্পূর্ণ ভাবে আত্মরক্ষা—এ দু’টি বিষয়ই মানব-মানবীর ভিতরে অলিত্বের প্রতিভা সৃষ্টি করে। শামিল করে তাদের সেই শ্রেষ্ঠ অলিদের কাতারে যারা মহববত করে আল্লাহকে। আল্লাহ পাকও তাদের মহববত করেন—কেবল তাই নয়, বরং যারা তাদের মহববত করে তিনি তাদেরকেও ভালোবাসেন। অধিকন্তু, যে সমস্ত লোক আল্লাহ তাআলার এমন বন্ধুদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, অথবা তাদের কষ্ট দেয়, কিংবা ঘৃণা করে, অথবা তাদের সাথে প্রতারণা ও প্রবঞ্চনা মূলক দুরাচার, অথবা কোনোরূপ অনিষ্ট ও ক্ষতি সাধনের কুটিল মতলব নিয়ে তাদের পিছু নেয়, তিনি সে সমস্ত দুষ্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা তাদের সাহায্য সহযোগিতার জিম্মাদার হন। বিধায় তিনি তাদের সহায়তা করেন।
আল্লাহর বন্ধুদের প্রতি মহববত পোষণ আবশ্যক, অপরদিকে তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ অবৈধ সর্বৈবে। এমনিভাবে, যারা তার সাথে শত্রুতায় লিপ্ত তাদের সাথে শত্রুতার মনোভাব ও তাদের বন্ধুত্ব বর্জন আবশ্যক।
যারা আল্লাহ, তার রাসূল ও মোমিনদের সাথে বন্ধুতা করে, তারাই আল্লাহর দল, আর আল্লাহর দলই বিজয়ী। [সূরা মায়েদা : ৫৬]
আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, তারা মোমিনদের প্রতি সদয় এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর।
হাদিসটি প্রমাণ করে, আল্লাহর বন্ধু দু শ্রেণীতে বিভক্ত।
প্রথমত: যারা ফরজ আদায়ের মাধ্যমে তার নৈকট্য হাসিল করে। এরা আসহাবে ইয়ামিন বা মধ্যপন্থী। ফরজ আদায়, নি:সন্দেহ, সর্বোত্তম এবাদত, যেমন বলেছেন উমর ইবনুল খাত্তাব রা.
أفضل الأعمال أداء ما افترض الله، والورع عما حرم الله، وصدق النية فيما عند الله .
‘সর্বোত্তম এবাদত হল যা আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন, অত:পর আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার এবং যা আল্লাহর কাছে রক্ষিত, তা লাভের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ নিয়ত।’ [যাদুদ দায়িয়াহ : ১৬]
দ্বিতীয়ত: ফরজ আদায়ের পর যারা নফল এবাদত, মাকরূহ বিষয়াদি পরিহার—ইত্যাদির অধ্যবসায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে। আল্লাহ তাদের প্রতি ভালোবাসা আবশ্যক করে নেন। উল্লেখিত হাদিসে এ দ্বিতীয় প্রকার অলিদের প্রতি বিশেষ আলোকপাত করে বলা হয়েছে—
নফল এবাদত বন্দেগির মধ্য দিয়ে আমার বান্দা আমার নৈকট্য লাভ অব্যাহত রাখে এমনকি এ পর্যায়ে আমি তাকে ভালোবাসি। [বোখারি- ৬৫০২]
আল্লাহ তাআলা যে বান্দাকে ভালোবাসেন, সে বান্দার হৃদয়ে তার বাস্তব ভালোবাসা জাগিয়ে তোলেন এবং স্মরণ ও এবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিমগ্ন থাকতে পারে—এরূপ শক্তি-সামর্থ্য ও হিম্মত তাকে দান করেন। তদুপরি, আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য ও নৈকট্য বয়ে আনে এমন ধর্মকর্ম বা ধর্ম-পরায়ণতায় সে তার অন্তরঙ্গতা ও নিবিড় আন্তরিকতা খুঁজে পায়। ফলে ওই সব সু-কর্ম নিশ্চিত করে মহান আল্লাহর নিকটবর্তিতা এবং সাব্যস্ত করে ওই সংরক্ষিত অনন্ত নেয়ামতরাজি যা তাঁরই সকাশে সংরক্ষিত। আল্লাহ তাআলা বলেন :—
হে মোমিনগণ, তোমাদের মধ্য থেকে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-বিনম্র হবে, এবং কাফেরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে, এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। [মায়েদা : ৫৪]
বান্দার জন্য আল্লাহর মহববত অন্যতম মুখ্য বিষয়। যে ব্যক্তি তা প্রাপ্ত হবে, প্রাপ্ত হবে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ ও সৌভাগ্য। প্রকৃত মোমিন সেই, যে আল্লাহর অলি হওয়ার আকাঙ্খায় ব্যাগ্র-কাতর হবে। এ লক্ষ্যে নিজেকে নিয়োজিত করবে চূড়ান্ত অধ্যবসায়। আল্লাহর অলি হওয়ার লক্ষ্য অর্জিত হয় নানাভাবে—
(ক) যা পালন আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য ফরজ করেছেন, তা সুচারুরূপে পালন করা। হাদিসে এসেছে—
আমার বান্দা যে সমস্ত উপায়ে আমার নৈকট্য পায়, তন্মধ্যে তার প্রতি আমার আরোপিত ফরজ কর্ম সমূহই আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।
কিছু ফরজ কর্মের উদাহরণ নিম্নরূপ :—
তাওহীদ বা একত্ববাদের বাস্তবিক রূপায়ণ, ফরজ সালাত আদায়, জাকাত প্রদান, এবং মাহে-রমজানের সিয়াম পালন, ও বায়তুল্লাহর হজ পালন, এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচার ও আত্মীয়ের হক আদায়। তদুপরি সততা, নিষ্ঠা, উদারতা, সহানুভূতি, অনুনয়-বিনয় এবং উৎকৃষ্ট কথন-বলন ও উত্তম ব্যবহার—প্রভৃতির ন্যায় শ্রেষ্ঠ চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া।
(খ) ছোট বড় সকল হারাম বস্ত্ত সহ মাকরূহ বা অপছন্দনীয় বিষয়াদি থেকে যথা সাধ্য দূরত্ব বজায় রাখা।
এক : অনুধাবন ও চিন্তা-গবেষণাসহ কোরআন তেলাওয়াত, এবং সে অনুসারে চিন্তা-ভাবনা করে তা শ্রবণ, যথাসাধ্য তার মুখস্থ এবং কণ্ঠস্থকৃত অংশগুলোর বারংবার পুনরাবৃত্তি এবং উক্ত আবৃত্তির মাধ্যমে আন্তরিক প্রশান্তি উপভোগ করা। কেননা মাহবুবের কথন-বলন ও শ্রবণে যে মধুরতা নিহিত, মহববত পোষণকারী মহলে তার চেয়ে তীব্রতর মধুরতা ও মিষ্টতা আর কিছুই নেই। খুঁজে পায় সেখানে তারা চরম ও পরম তৃপ্তি। কোরআন কারীমের পাঠ সংক্রান্ত উক্ত স্বাদ উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে—এমন কিছু উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
এক—উক্ত বিষয়ে দৃঢ় সংকল্প করা।
দুই—উক্ত বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
তিন—উক্ত বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ।
চার—উপরোক্ত তিনটি কাজ শেষ করার পর যে মূল কর্মটি হাতে নিতে হবে তা হলো দৈনন্দিন কোরআন করীমের একটি পারার তেলাওয়াত নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালিয়ে যাবে এবং যথাসাধ্য উক্ত নিয়মানুবর্তিতা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলবে। কিছুতেই তা ভঙ্গ করবে না।
দুই : আত্মিক ও মৌখিকভাবে আল্লাহর স্মরণে অধিকহারে ব্যাপৃত হওয়া। বিশুদ্ধ হাদিসে কুদসীতে এসেছে যে—
يقول الله تعالي : أنا عند ظن عبدى بى، وأنا معه حين يذكرني، فان ذكرني في نفسه ذكرته في نفسي، وان ذكرني في ملأ ذكرته في ملأ خير منهم .
আল্লাহ তাআলা বলেন : আমার প্রতি আমার বান্দা যেরূপ ধারণা পোষণ করে আমি তার সে-রূপ ধারণা অনুযায়ী কাজ করি। আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমায় স্মরণ করে। অতএব সে যদি আমাকে নির্জনে স্মরণ করে আমি তাকে নির্জনে স্মরণ করি। আর যদি সে আমাকে ভরা মজলিসে স্মরণ করে তবে আমি তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। [বোখারি , মুসলিম] এবং আল্লাহ তাআলা বলেন :
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ ( البقرة : ১৫২)
তোমরা আমার স্মরণ কর আমি তোমাদের স্মরণ করব। [সুরা বাক্বারা : ১৫২]
তিন : আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার পরম বন্ধুদের ভালোবাসা। পাশাপাশি উক্ত উদ্দেশ্যে তাঁর শত্রুদের সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করা। উমর রা. থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : নবী করীম স. বলেছেন :—
إن من عباد الله لأناسا ما هم بأنبياء ولا شهداء، يغبطهم الأنبياء والشهداء يوم القيامة بمكانهم من الله تعالى، يوم القيامة بمكانهم من الله تعالي، قالوا : يا رسول الله، تخبرنا من هم ؟ قال : هم قوم تحابوا بروح الله علي غير أرحام بينهم، ولا أموال يتعاطونها، فوالله إن وجوههم لنور، وإنهم علي منابر من نور لا يخافون إذا خاف الناس، ولا يحزنون إذا حزن الناس، وقرأ هذه الآية : أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [ يونس : ৬২]
আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা নবী কিংবা শহীদ নয়। আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত বিশেষ মর্যাদার কারণে নবী ও শহীদগণ কেয়ামত দিবসে তাদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হবেন। তারা বললেন : হে আল্লাহর রাসূল সা. তারা কারা, আপনি আমাদের তা অবহিত করবেন কী ? তিনি বললেন : তারা হল সে সমস্ত লোক যারা একে অপরকে ভালো বেসেছিল শুধু আল্লাহর ইচ্ছা বাস্তবায়নে, কোন আত্মীয়তার বন্ধনের তাগিদে নয়, কিংবা তাদের পারস্পরিক সম্পদের আদান-প্রদানের কারণেও নয়। আল্লাহর শপথ ! নিশ্চয় তাদের মুখমন্ডল হবে আলোময় (ঝলমলে) তারা উপবিষ্ট থাকবে জ্যোতির তৈরি মিম্বার (মঞ্চ) সমূহে। লোকেরা যখন শঙ্কায় কাতর হবে, তখন তারা হবে নি:শঙ্কচিত্ত। মানুষ যখন শোকে কাতর হবে, তখন তারা হবে আনন্দচিত্ত। [আবু দাউদ : ৩০৬০]
আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয়-ভীতি কিংবা শোক-দু:খ নেই। [ইউনুস : ৬২]
পাঁচ : হাদিসটি প্রমাণ করে—রাসূল সা.-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার আনুগত্য ও বন্ধুত্বের যে বিধান দিয়েছেন, তা ব্যতীত ভিন্ন কোন পথ-পদ্ধতির মাধ্যমে তা লাভের দাবি খুবই অসাড়, মিথ্যা—তাই সর্বার্থে বর্জনীয়। মুশরিকরা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের ভিন্ন উপায় হিসেবে গায়রুল্লাহর এবাদত করত কোরআনে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে আল্লাহ তাআলা বলেন—
অথচ তারা সমস্ত রাসূলদেরই মিথ্যা প্রতিপন্ন করে উদ্ধতভাবে এবং তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও ফরজ-কর্মসমূহ পরিহারে তারা থাকে অটল ও অনড়।
ছয় : মুসলমানমাত্র আশা রাখে যে তার দোয়া কবুল করা হবে, গ্রহণ করা হবে তার কর্মগুলো, দান করা হবে তাকে তার প্রার্থিত বিষয়। যা থেকে সে পরিত্রান প্রার্থনা করবে, তা থেকে তাকে পরিত্রান দেয়া হবে। এগুলো মানুষের খুবই আন্তরিক ও আত্মিক বাসনা, যার সঠিক সন্ধান দিতে পারে একমাত্র ওলায়াত বা বন্ধুত্বের পথ। যে পথের পুরোটাই জুড়ে থাকবে ফরজ ও শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত-সমর্থিত নফল এবাদত—যার পিছনে কাজ করবে বিশুদ্ধ নিয়ত ও রাসূলের আনুসরণ এবং তার নির্দেশিত পথের অনুবর্তন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/353/6
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।