HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পাঠ সমূহ

লেখকঃ শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ.)

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পাঠ সমূহ

শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ.)

অনুবাদক: শাইখ ইবরাহীম আব্দুল হালীম মাদানী

সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

অনুবাদকের কথা
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি মানব জাতি ও জিন জাতিকে তাঁর ইবাদত করার জন্যে সৃষ্টি করেছেন। সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের শেষ নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যিনি তাঁর উম্মাতকে ছোট বড় সব ইবাদত করার পদ্ধতি বর্ণনা করে গেছেন। আরও সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবাগণের উপর যারা তাঁর বর্ণিত পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে পেরেছিলেন।

অতঃপর-

হে সম্মানিত পাঠক পাঠিকা! আল্লাহ আমাদের উপর তাঁর ইবাদত করা ফরয করেছেন এবং পাশাপাশি তার নির্ধারিত পদ্ধতিও বর্ণনা করেছেন। শুধু সে নির্ধারিত পদ্ধতিতেই ইবাদত করলে তা গ্রহণ হবে। অন্যথায় তা গ্রহণ হবে না। তাই ইবাদত শুরু কারার আগে আমাদের উপর সর্ব প্রথম ফরয হল তার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা। অর্থাৎ কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞান অর্জন করা। কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞানার্জনের অনেক পথ আছে। তন্মধ্যে উত্তম পথ হল সরাসরি উস্তাযের কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করা, যাকে আরবী ভাষায় ( تلقي العلم من الشيخ مشافهة ) তালাক্কিউল ইলমে মিনাশ্ শাইখে মুশাফাহাতান) বলা হয়। এ পথটি বাস্তবায়নার্থে আমি সামাহাতুশ্ শাইখ আব্দুল আজীজ বিন বায রহিমাহুল্লাহর লিখিত

الدروس المهمة لعامة الأمة

"সারা বিশ্বের সকল মুসলিমের জন্যে অত্যাবশ্যকীয় পাঠসমূহ" বইটির উপর আইভিসি ডট নেট ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাশ নিয়েছি যাতে কোরিয়া, সা’উদী আরব ও দুবাই সহ অন্যান্য দেশের বাংলাভাষী মুসলিম প্রবাসীগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন।

জ্ঞানার্জনের দ্বিতীয় উত্তম পথ হল নির্ভরযোগ্য লিখকের বই পড়ে জ্ঞানার্জন করা। আমি এ পথটির প্রতি লক্ষ্য করে উক্ত বইটি শিক্ষা দানের সময়ে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করি, যাতে বাংলা ভাষাভাষী ভাই ও বোনেরা উক্ত বই হতে জ্ঞান অর্জন করে উপকৃত হতে পারে।

পরিশেষে আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি যিনি আমাকে এ ভাল কাজটি করার তাওফীক দান করেছেন। আরো কৃতজ্ঞতা আদায় করছি কোরিয়াস্থ Kyung Hee বিশ্ববিদ্যালয়ে পি,এইচ, ডি গবেষক মুহাম্মাদ মুতাহারুল ইসলাম ভাইয়ের যিনি বইটি দেখে দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা, তিনি যেন এটি আমার ও আমাদের ভাইদের পক্ষ থেকে যারা সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করেছেন কবুল করেন ও পরকালে মুক্তির ব্যবস্থা করেন।

বিনীত, ইবরাহীম বিন আব্দুল হালীম

উত্তর কোরিয়া

ভূমিকা:
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি সারা জগতের প্রভূ এবং মুত্তাকিনদের জন্যেই (শুভ) পরিণতি ও ফলাফল। আল্লাহ তাঁর বান্দা,রাসূল ও আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সলাত ও সালাম বর্ষণ করুন। আরো সলাত ও সালাম বর্ষণ করুন তাঁর পরিবার ও সকল সাথীগণের উপর। অতঃপর দীন-ইসলাম সম্পর্কে সারা বিশ্বের সকল মুসলিমের জন্যে যা জানা ওয়াজিব তার কিছুর বর্ণনার ব্যাপারে এ সংক্ষিপ্ত লিখুনি। আমি এর নাম রেখেছিঃ সারা বিশ্বের সকল মুসলিমের জন্যে অত্যাবশ্যকীয় পাঠসমূহ। আমি আল্লাহর কাছে প্রর্থনা করছি, তিনি যেন এর দ্বারা মুসলিমদের উপকার করেন এবং তিনি যেন এটি আমার পক্ষ হতে গ্রহণ করেন। কারণ তিনি মহৎ ও উদার।

-আবদুল আজীজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ)

সাবেক প্রধান মুফতি সৌদি আরব।

প্রথম পাঠঃ সূরা ফাতিহা ও কিছু ছোট ছোট সূরা
সূরা ফাতিহা এবং সূরা যালযালা হতে সূরা নাস পর্যন্ত এ ছোট ছোট সূরাগুলো হতে যথা সম্ভব শিক্ষা করা অত্যাবশ্যক। যে ব্যক্তি পড়তে জানে না সে অন্যের নিকট শুনে শুনে পড়া শিখবে। পরে বিশুদ্ধভাতে তা মুখস্থ করবে এবং যা বুঝা অবশ্যই দরকার তার ব্যাখ্যা শিখবে।

দ্বিতীয় পাঠঃ ইসলামের স্তম্ভ সমূহ
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের বিবরণ:

সর্বপ্রথম ও সর্ব বৃহৎ স্তম্ভ হল, "লাইলাহা ইল্লাল্লাহ; মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" তথা আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন উপাস্য নাই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। এ সাক্ষ্য দেয়া, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন উপাস্য নাই এর শর্তসমূহ সহ এর অর্থের ব্যাখ্যা করে।

এর অর্থ হল: لا إله ) ) "কোন ইলাহ নাই" এর অর্থ হল: আল্লাহ ছাড়া যারই ইবাদত করা হয় তার সকলের প্রতি অস্বীকৃতি জানানো। إلا الله "আল্লাহ ছাড়া" এর অর্থ হল, এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর জন্যেই সকল ইবাদত সাব্যস্ত করা।

লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ এর শর্ত সমূহ:

১) ইলম বা জানা যার বিপরীত অজানা।

২) ইয়াকীন বা দৃঢ় বিশ্বাস যার বিপরীত সন্দেহ।

৩) ইখলাস বা একনিষ্ঠতা যার বিপরীত শিরক।

৪) সিদক্ব বা সত্য যার বিপরীত মিথ্যা।

৫) ভালবাসা যার বিপরীত বিদ্বেষ।

৬) অনুগত হওয়া যার বিপরীত ত্যাগ ও বর্জন করা।

৭) কবুল বা গ্রহণ করা যার বিপরীত প্রত্যাখ্যান করা।

৮) আল্লাহ ছাড়া যার উপাসনা করা হয় তার অস্বীকার করা।

এ শর্তগুলো নিন্মে কবিতার দু’টি লাইনে একত্রিত করা হয়েছে:

علم يقين وإخلاص وصدقك معمحبـة وانقيـاد والقبـول لها

وزيد ثامنها الكفران منك بماسوى الإله من الأشياء قد أُلها

"মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল" এ সাক্ষ্য দানের দাবী হল:

-তিনি যে ব্যাপারে সংবাদ দিয়েছেন সে সব ব্যাপারে তাঁকে সত্যায়ন করা।

-যে ব্যাপারে আদেশ করেছেন সে ব্যাপারে তাঁর আনুগত্য করা।

-যা থেকে নিষেধ ও সতর্ক করেছেন তা থেকে বিরত থাকা।

আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা প্রবর্তন করেছেন শুধু তার মাধ্যমেই আল্লাহর ইবাদত করা।

তারপর পাঠকদের জন্যে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের বাকি স্তম্ভগুলো বর্ণনা করা। আর তা হল:

২। সলাত প্রতিষ্ঠা করা।

৩। যাকাত আদায় করা।

৪। রমযান মাসের সিয়াম সাধন করা।

৫) সামর্থবান ব্যক্তিদের জন্যে আল্লাহর সম্মানিত ঘরের হজ্জ করা।

তৃতীয় পাঠঃ ঈমানের রুকন সমূহ
ঈমানের রুকন বা স্তম্ভ হল ছয়টিঃ

১) আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

২) তাঁর ফিরিশ্তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

৩) তাঁর কিতাব সমূহের বিশ্বাস স্থাপন করা।

৪) তাঁর রাসূলগণের বিশ্বাস স্থাপন করা।

৫) শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা।

৬) ঈমান আনা ভাগ্যের ভাল-মন্দ এ সবই আল্লাহর পক্ষ হতে এ কথার প্রতি।

চতুর্থ পাঠঃ তাওহীদের প্রকারসমূহ ও শিরকের প্রকার সমূহ
তাওহীদ তিন প্রকার ও সেগুলোর বিবরণ:

১। তাওহীদুর রুবূবিইয়াহ।

২। তাওহীদুল উলূহিইয়াহ।

৩। তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত।

উক্ত তিন প্রকারের ব্যাখ্যা:

১। তাওহীদুর রুবূবিইয়াহঃ আল্লাহ সকল কিছুর স্রষ্টা ও উদ্ভাবক। সব ব্যাপারে কর্তৃত্বকারী। তার কোন শরীক নাই- এ সব কথার প্রতি ঈমান আনা।

২। তাওহীদুল উলূহিইয়াহঃ আল্লাহ সুবহানাহু সত্য উপাস্য। এ ব্যাপারে তাঁর কোন শরীক নাই। আর এটিই হল 'লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ' এর অর্থ। তাই সলাত, সওম এবং আরও অন্যান্য যত ইবাদত আছে সব ইবাদতই আল্লাহর জন্যে একনিষ্ঠ করা অপরিহার্য এবং এ ইবাদতের কোন কিছুই আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্যে সম্পাদন করা অবৈধ বা হারাম ।

৩। তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাতঃ কুরআন কারীমে বা সহীহ হাদীছ সমূহে আল্লাহর যে সকল নাম ও গুণ বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা এবং তা বিকৃত না করে, আসল অর্থ বর্জন না করে, পদ্ধতি বর্ণনা না করে ও উদাহরণ না দিয়ে, উপযুক্ত পন্থায় একক আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ * اللَّهُ الصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُواً أَحَدٌ

"তুমি বলে দাও, তিনিই আল্লাহ একক। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কারো কাছ থেকে জন্ম নেননি এবং তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেহই তাঁর সমকক্ষ নয়।" (সূরাঃ ইখলাস)।

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

"কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। আর তিনি সব শুনেন এবং সব দেখেন।" (সূরা আশ শুরাঃ ১১)

আর কতিপয় বিদ্বান তাওহীদের এ প্রকারসমূহকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাতকে তাওহীদুর রুবূবিইয়ার মাঝে প্রবেশ করিয়েছেন। এতে কোন অসুবিধা নাই। কারণ দু’প্রকারের মাঝেই উদ্দেশ্য একই।

শিরকের প্রকার সমূহ

শিরক তিন প্রকারঃ

১। বড় শিরক। ২। ছোট শিরক। ৩। গোপন বা অন্তর্নিহিত শিরক।

১। বড় শিরকঃ বড় শিরক আমল বাতিল হয়ে যওয়াকে অপরিহার্য করে এবং এর উপর যার মৃত্যু হবে তার জাহান্নামে চিরস্থায়ী হওয়াকে অপরিহার্য করে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ [ سورة الأنعام : الآية : ٨٨ ]

"আর যদি তারা শিরক করে তবে তাদের পক্ষ হতে তাদের কৃতকর্ম বাতিল হয়ে যাবে।" (সূরা আন’আমঃ ৮৮)

তিনি আরো বলেনঃ

مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِينَ أَن يَعْمُرُوا مَسَاجِدَ اللَّهِ شَاهِدِينَ عَلَىٰ أَنفُسِهِم بِالْكُفْرِ   ۚ أُولَٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ

"মুশরিকদের জন্যে তাদের নিজেদের কুফরির স্বীকৃতি দেয়াবস্থায় আল্লাহর মাসজিদের আবাদ করার আধিকার নেই। এদের আমল সমূহ বাতিল হবে এবং জাহান্নামেই তারা চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।" (সূরা তাওবাঃ ৭২)

আর নিশ্চয়ই যে এর উপর মৃত্যু বরণ করবে তাকে ক্ষমা করা হবে না এবং তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ [ سورة النساء : الآية 48]

"নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এতদ্ব্যতীত সব কিছু যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন।" (সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪৮)

তিনি আরও বলেনঃ

إنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

"নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করবে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের জন্যে কোন সাহায্যকারী থাকবে না।" (সূরা মায়িদাঃ আয়াতঃ ৭২)

মৃত ব্যক্তি ও প্রতিমাকে আহবান করা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তাদের উদ্দেশ্যে মানত মানা, তাদের নামে পশু জবেহ করা ইত্যাদি অন্যান্য কর্ম বড় শিরকের অন্তর্ভূক্ত।

২। ছোট শিরকঃ কুরআন বা হাদীছের দলীলের দ্বারা যার নাম শিরক প্রমাণিত হয়েছে। তবে তা বড় শিরকের অন্তর্ভূক্ত নয়।

যেমন কিছু কর্মের মাঝে রিয়া বা লোক দেখানো কাজ, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা, মা শাআল্লাহ ওয়া শাআ ফুলান (অর্থঃ যা আল্লাহ চেয়েছেন এবং অমুক ব্যক্তি চেয়েছেন) বলা এবং এর মত আরও কিছু কাজ ও কথা। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

أَخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوا وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الرِّيَاءُ

( رواه الإمام أحمد )

"আমি তোমাদের উপর যে সকল জিনিসের ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভয়ানক হচ্ছে আশ্ শিরকুল আসগার তথা ছোট শিরক। তাঁকে আশ্ শিরকুল আসগার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, ছোট শিরক হচ্ছে রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত।" (হাদীছটি ইমাম আহমাদ, ত্ববরানী ও বাইহাকী মাহমূদ বিন লাবীদ আল আনসারী রাযিআল্লাহু আনহু হতে হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন এবং ত্ববরানী মাহমূদ বিন লাবীদ সে রাফি’বিন খাদীজ হতে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে একাধিক হাসান সুত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)

তিনি আরো বলেছেনঃ

مَنْ حَلَفَ بِشَيْءٍ دُونَ اللَّهِ فَقَدْ أَشْرَكَ

"যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর শপথ করলো সে (আল্লাহর সাথে) শিরক করলো।" (ইমাম আহমাদ, উমার বিন আল খাত্তাব রাযি আল্লাহু আনহু হতে সহীহ সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।)

আর আবূ দাউদ ও তিরমিযী আবদুল্লাহ বিন ’উমার এর হাদীছ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহীহ সনদে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন নিশ্চয় তিনি বলেছেনঃ

لَا تَقُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ فُلَانٌ وَلَكِنْ قُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فُلَانٌ

"তোমরা আল্লাহ এবং অমুক ব্যক্তি যা চেয়েছেন’ এ কথা বলো না। বরং তোমরা বলো,‘আল্লাহ যা চেয়েছেন অতঃপর অমুক ব্যক্তি যা চেয়েছেন।" (হুযাইফাহ বিন আল ইয়ামান রাযিআল্লাহু আনহু হতে আবূ দাউদ হাদীছটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন)

এ প্রকার শিরক মুরতাদ তথা ধর্মত্যাগী হয়ে যাওয়াকে অপরিহার্য করে না এবং জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করাকে আবশ্যাক করে না, তবে এটি অত্যাবশ্যকীয় তাওহীদের পূর্ণতার পরিপন্থী।

৩। তৃতীয় প্রকারঃ গোপন বা অন্তর্নিহিত শিরক। এর প্রমাণ হল: নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ

أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي مِنْ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ قَالَ قُلْنَا بَلَى فَقَالَ الشِّرْكُ الْخَفِيُّ أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ يُصَلِّي فَيُزَيِّنُ صَلَاتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ إِلَيْهِ

"আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের সংবাদ দেব না? যে বিষয়টি আমার কাছে তোমাদের উপর আল মসীহুদ্ দাজ্জালের’ চেয়েও ভয়ানক? সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তা হচ্ছে ‘আশ্ শিরকুল খফী’ বা গোপন বা লুক্কায়িত শিরক। আর তা হল: এক ব্যক্তি দাঁড়ায়, নামায় আদায় করে অতঃপর তার নামাযকে খুব সুন্দরভাবে আদায় করে এ জন্যে যে, সে তার দিকে এক ব্যক্তির দৃষ্টিকে লক্ষ্য করছে। (হাদীছটি ইমাম আহমাদ আবূ সাঈদ খুদরী রাযিআল্লাহু আনহু হতে তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

শিরককে শুধু দু’ভাগে ভাগ করাও ঠিক আছে। যথা:

১। বড় শিরক।

২। ছোট শিরক।

তবে অন্তর্নিহিত শিরক সেটা বড় -ছোট উভয়কেই শামিল করে। আর তা বড় শিরকে হয়ে থাকে। যেমন, মুনাফিকদের শিরক। কারণ তারা তাদের বাতিল ’আকীদাকে গোপন করে। আর লোককে দেখানের জন্যে ইসলামকে প্রকাশ করে। নিজেদের প্রাণের উপর আশঙ্কা করে। আর তা ছোট শিরকেও হয়ে থাকে। যেমন, রিয়া বা লোক দেখানো আমল বা কাজ। যেমন পূর্বে বর্ণিত মাহমূদ বিন লাবীদ আল আনসারীর হাদীছও উল্লেখিত আবূ সাঈদ খুদরীর হাদীছ। আল্লাহই তাওফীক দাতা।

পঞ্চম পাঠঃ আল ইহসান
ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করা যেন তুমি তাঁকে দেখছো। আর তুমি যদি তাঁকে না দেখতে পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছে।

ষষ্ঠ পাঠঃ সলাতের শর্ত সমূহ
সলাতের শর্ত হল নয়টিঃ

১। মুসলিম হওয়া।

২। জ্ঞানবান হওয়া।

৩। ভাল-মন্দ পার্থক্যের জ্ঞান থাকা।

৪। হদছ (তথা অপবিত্রতা) দূর করা, আর ইহা-নাপাকি হতে অযু বা গোসল করে পবিত্র হওয়াকে বুঝায়।

৫। মুসল্লির কাপড়, শরীর ও নামায পড়ার স্থান হতে নাপাকি দূর করা।

৬। সতর ঢাকা। পুরুষের সতর নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত। আর মহিলা তার সম্পূর্ণ শরীরই নামাযে সতর, তার মুখ ও হাতের তালুদ্বয় ছাড়া।

৭। নামাযের সময় উপস্থিত হওয়া।

৮। ক্বিবলা মুখী হওয়া।

৯। নিয়াত করা; নিয়াত পড়া নয়।

১০
সপ্তম পাঠঃ সলাতের রুকনসমূহ
সলাতের রুকনসমূহ আর তা হল চৌদ্দটিঃ

১। সামর্থ্য থাকলে দাঁড়ানো।

২। তাকবীরে তাহরীমাহ।

৩। সূরা ফাতিহা পাঠ করা।

৪। রুকু’ করা।

৫। রুকু’ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।

৬। সাত অঙ্গের উপর সিজদা করা।

৭। সিজদা হতে উঠা।

৮। দুই সিজদার মাঝে বসা।

৯। শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়া।

১০। তাশাহ্হুদ কালে বসা।

১১। নামাযের এই রুকন গুলো সম্পাদনে স্থিরতা বজায় রাখা।

১২। এই রুকন গুলো ধারাবাহিক ভাবে আদায় করা।

১৩। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা।

১৪। ডানে ও বামে দুই দিকে সালাম প্রদান করা বা সালাম ফিরানো।

১১
অষ্টম পাঠঃ সলাতের ওয়াজিব সমূহ
সলাতের ওয়াজিব আটটিঃ

১। তাকবীরে তাহরীমার তাকবীর ছাড়া নামাযে অন্যান্য তাকবীর সমূহ।

২। سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলা। আর ইহা ইমাম ও একাকী নামায আদায় কারীর জন্য ওয়াজিব। তবে মুক্তাদী তা পাঠ করবে না। (অবশ্য একদল আলেমের মতে মুক্তাদীও তা পড়তে পারে।)

৩। ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামায আদায় কারী সকলের উপর رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ (রাব্বানা ওয়ালাকাল হাম্‌দ) সকলের জন্যে বলা ওয়াজিব।

৪। রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুব্হা-না রাব্বিয়াল আজীম) বলা।

৫। সিজ্‌দায় سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা) বলা।

৬। দু’সিজদার মাঝে رَبِّ اغْفِرْلِي (রাব্বিগ ফিরলী) বলা।

৭। প্রথম বৈঠকে তাহিয়্যাত পড়া।

৮। প্রথম বৈঠকের জন্য বসা।

১২
নবম পাঠঃ তাশাহুদের বিবরণ
তাশাহুদ:

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّـبَاتُ، السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ .

(আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লা-হি ওয়াস্ সালা-ওয়া-তু ওয়াত্ তাইয়্যিবা-তু,আস্‌সালা-মু আলাইকা আইয়্যু হান্নাবিয়্যু ওয়া রাহ্‌মাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহ। আস্‌সালা-মু আলাইনা-ওয়া আ‘লা-ইবাদিল্লা-হিস্ সালিহীন। আশ্‌হাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ)।

অর্থঃ সকল মৌখিক,শারীরিক ও আর্থিক ইবাদাত আল্লাহর জন্য। হে নাবী! তোমার উপর আল্লাহর রহমাত ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের ও আল্লাহর সকল সৎ ব্যক্তিদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আমি আরোও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সলাত পাঠ করবে এবং তাঁর জন্যে বরকতের দু’আ করবে

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آَلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آَلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آَلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آَلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ .

(আল্লাহুম্মা সল্লি আ‘লা মুহাম্মাদ, ওয়ালা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা আ‘লা ইব্রাহীম, ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, ওয়া বারিক আ‘লা মুহাম্মাদ, ওয়া-আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আ‘লা ইব্রাহীম, ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ)।

“হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবারের উপর রহমাত বর্ষণ কর, যেরূপ ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) ও ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) এর পরিবারের উপর রহমাত বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবারের উপর বরকত দান কর। যেরূপ ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) ও ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) এর পরিবারের উপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত”।

তারপর শেষ বৈঠকে আল্লাহর কাছে জাহান্নামের শাস্তি, কবরের শাস্তি, জীবন-মরণ ও মাসিহুদ্ দাজ্জালের ফিৎনা হতে আশ্রয় চাবে। মুখে বলবেঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِـتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ فِـتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

(আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযুবিকা মিন আ‘যাবে জাহান্নামা ওয়া মিন আ‘যাবিল ক্বাবরে, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জালি)।

"হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের শাস্তি,কবরের শাস্তি, জীবন-মরণ ও মাসিহুদ্ দাজ্জালের ফিৎনা হতে আশ্রয় চাচ্ছি।"

তারপর দু’আ থেকে বিশেষ করে মাসনূন দুয়া সমূহ থেকে যা খুশি পাঠ করা।

নিন্মের দু’আগুলো মাসনূন দু’আর আন্তর্ভূক্ত:

اَللَّهُمَّ اَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَ حُسْنِ عِبَادَتِكَ

আল্লাহুম্মা আয়ি’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুস্‌নি ’ইবাদাতিকা।

"হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে তোমার স্বরণ, কৃতজ্ঞতা আদায় করতে ও ভালভাবে তোমার ইবাদত করার তাওফীক দান কর।

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّك أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

আল্লাহুম্মা ইন্নি যলামতু নাফসী যুলমান কাছিরা। ওয়া লা ইয়াগফিরুয যনূবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লী মাগফিরাতাম মিন ’ইনদিকা ওয়ারহামনী। ইন্নাকা আনতাল গফূরুর রহীম

"হে আল্লাহ আমি আমার আত্মার উপর অনেক বেশি যুলুম করেছি। আর তুমি ছাড়া কেউ পাপ মাফ কারী নাই। অতএব তুমি তোমার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া কর। কারণ তুমি ক্ষমাকারী ও দয়ালু ।"

তবে যোহর, আসর, মাগরিব ও ’ইশার সলাতে প্রথম বৈঠকের মাঝে শাহাদাইনের পর তৃতীয় রাকা’আতের জন্যে দাঁড়াবে। কেউ যদি এতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পাঠ করে তবে তা তার জন্যে উত্তম হবে এ ব্যাপারে ব্যাপক অর্থবোধক হাদীছ সমূহ থাকার কারণে। তারপর তৃতীয় রাকা’আতের জন্যে দাঁড়াবে।

১৩
দশম পাঠঃ সলাতের সুন্নাত সমূহ
সলাতের সুন্নাত সমূহঃ

১। প্রারম্ভিক দু’আ (ছানা) পাঠ করা।

২। ডান হাতকে বাম হাতের উপর করে দণ্ডায়মান অবস্থায় রুকুর পূর্বে ও পরে বুকের উপর রাখা।

৩। দু’হাতের আঙ্গুল মিলিত ও দণ্ডয়মান অবস্থায় অবস্থায় কাধঁ বা দু’কানের লতি পর্যন্ত উত্তলন করা তাকবীরাতুল ইহরামের সময়, রুকু’ করার সময়, রুকু’হতে উঠার সময় ও প্রথম বৈঠক হতে তৃতীয় রাকা’আতের জন্যে দাঁড়ানের সময়।

৪। রুকু’ ও সিজাদার তাসবীহ একের অধিক পাঠ করা।

৫। দুই সিজদার মাঝে মাগফিরাতের দু’আ একবারে অধিক পাঠ করা।

৬। রুকু'তে মাথাকে পিঠের বরাবর রাখা।

৭। সিজদা রত অবস্থায় বাহুদ্বয়কে পার্শদ্বয় হতে, পেটকে উরুদ্বয় হতে ও উরুদ্বয়কে পায়ের নলীদ্বয় হতে দূরে রাখা।

৮। সিজদার সময় জমিন হতে হস্তদ্বয়কে উঁচু রাখা।

৯। প্রথম বৈঠকে ও দুই সিজাদার মাঝে ডান পা খাড়া রেখে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা।

১০। তিন ও চার রাক’আত বিশিষ্ট সলাতের শেষ বৈঠকে তাওয়াররুক করা। তাওয়াররুকের নিয়ম হল, বাম পাকে ডান পায়ের নলীর নিচে রাখা অত:পর ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর বসা।

১১। প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহুদের বসে শুরু থেকে শেষপর্যন্ত শাহাদত আঙ্গুলী দ্বারা ইঙ্গিত করা ও দু’আর সময় নড়ানো।

১২। প্রথম বৈঠকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবারের উপর এবং ইব্রাহীম ও ইব্রাহীম আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালামের পরিবারের উপর সলাত ও বরকত বর্ষণ করা। অর্থাৎ দুরুদে ইবরাহীম পাঠ করা।

১৩। শেষ বৈঠকে দু’আ করা।

১৪। ফজরের সলাতে, জুমু’আর সলাতে, দুই ঈদের সলাতে, বৃষ্টি প্রার্থনার সলাতে এবং মাগরিব ও এশার সলাতের প্রথম দু’ রাক’আতে উচ্চ স্বরে কিরাত পড়া।

১৫। জহর, আসর ও মাগরিবের তৃতীয় রাক’আতে এবং এশার সলাতের শেষ দুই রাক’আতে অনুচ্চ স্বরে কিরাত পড়া।

১৬। সূরা ফাতিহা ছাড়া কুরআনের অন্য স্থান থেকে পাঠ করা।

সলাতের যে সুন্নাতগুলো আমরা উল্লেখ করেছি তা ছাড়াও হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য সুন্নাতগুলো প্রতি লক্ষ্য রাখা। যেমনঃ ইমাম, মুক্তাদী ও একা একা সলাত আদায়কারীর রুকু’ হতে উঠে রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু এর অতিরিক্ত পাঠ করা। এটি সুন্নাত। আরও তার (সলাতের সুন্নাতের) অন্তর্ভূক্ত হল: রুকু’র সময় হস্তদ্বয়ের অঙ্গুলিগুলো প্রসারিত অবস্থায় হাটুদ্বয়ের উপর রাখা।

১৪
একাদশ পাঠঃ যে সকল কারণে সলাত নষ্ট হয়
যে সকল কারণে সালাত নষ্ট হয় সেগুলো হল আটটি। যথা:

১। সলাতের মাসলাহাতের (কল্যাণ মূলক) বহির্ভূত এমন বিষয়ে স্বরণ ও জানা থাকা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত কথা বলা। তবে ভূলকারী ও মূর্খ ব্যাক্তি তার সলাত এর দ্বারা বাতিল হবে না।

২। নামাযে হাসা।

৩। কোন কিছু খাওয়া।

৪। পান করা।

৫। লজ্জাস্থান প্রকাশিত হওয়া।

৬। সলাতে ধারাবাহিকভাবে অনেক বেশী অনর্থক কাজ করা। (আর অধিক কাজের পরিমাণ নির্ণয় করার মানদণ্ড হল, কেউ তার দিকে তাকালে মনে হবে যে, সে নামাযের মাঝে নয়।)

৭। ক্বিবলার দিক থেকে ডান বা বাম দিকে অনেক বেশি ফিরে যাওয়া।

৮। অযু ভেঙ্গে যাওয়া।

১৫
দ্বাদশ পাঠঃ অযুর শর্ত সমূহ
অযুর শর্ত দশটিঃ

১। মুসলিম হওয়া।

২। বিবেক বা বিবেকবান হওয়া।

৩। ভাল-মন্দের পার্থক্য করা বয়সে উপনিত হওয়া।

৪। নিয়াত করা।

৫। নিয়াতের হুকুম সঙ্গে রাখা এর অর্থ হল পবিত্রতা অর্জন পরিপূর্ণ হওয়ার শেষ পর্যন্ত অযু ভঙ্গের নিয়ত না করা।

৬। অযু ওয়াজিব করে এমন কারণ বন্ধ করা।

৭। অযুর আগে পানি বা ঢিলা ব্যবহার করা।

৮। পানি পবিত্র ও বৈধ হওয়া।

৯। পানি চামড়ায় পৌছতে দেয় না এমন জিনিস দূর করা।

১০। যার অযু সব সময় চলে যায় তার জন্যে সলাতের সময় হওয়া।

১৬
ত্রয়োদশ পাঠঃ অযুর ফরয সমূহ
ওযুল ফরয ছয়টিঃ

১। মুখ ধৌত করা। কুলি করা ও নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়া মুখ ধৌত করার অন্তর্ভূক্ত।

২। কনুইদ্বয়সহ দু’হাত ধৌত করা।

৩। সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। দুই কান মাসেহ করা মাথা মাসেহ করার অন্তর্ভূক্ত।

৪। (পায়ের) গিরা সহ দু’পা ধৌত করা।

৫। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।

৬। অযুর এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই অপর অঙ্গ ধৌত করা। মুখ, হাত ও পা তিনবার ধৌত করা মুস্তাহাব। অনুরূপ কুলি করা ও নাকে পানি দিয়ে নাক ঝারা। আর এর মধ্যে ফরয শুধু একবার। তবে মাথা একবারের বেশি মাসেহ করা মুস্তাহাব নয়। যেমন এর উপর সহীহ হাদীছসমূহ প্রমাণ করেছে।

১৭
চতুর্থতম পাঠঃ অযু ভঙ্গের কারণ সমূহ
অযু ভঙ্গের কারণ ছয়টিঃ

১। পেশাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া।

২। শরীরের যে কোন স্থান হতে অধিকমাত্রায় অপবিত্র জিনিস বের হওয়া।

৩। ঘুম বা তা ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে বিবেক চলে যাওয়া

৪। বিনা আবরণে পুরুষ বা মহিলার লজ্জাস্থান হাত দিয়ে স্পর্শ করা।

৫। উটের মাংস খাওয়া।

৬। ইসলাম হতে মুর্তাদ হওয়া। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করা। আল্লাহ আমাদের সহ সকল মুসলিমকে এটি হতে রক্ষা করুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মৃত ব্যক্তির গোসল দানের ব্যাপারে বিশুদ্ধ মত হল যে এটিতে অযু ভাংবে না । আর এটিই অধিকাংশ বিদ্যানগণের মতামত বা কথা। কারণ এ ব্যাপারে কোন দলীল নাই। গোসল দানকারীর হাত যদি মৃতব্যক্তির লজ্জাস্থানে বিনা আবরণে লাগে তবে তার উপর অযু ওয়াজিব হবে। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানকারীর উচিত যে সে মৃত ব্যক্তির লজ্জাস্থান বিনা আবরণে স্পর্শ করবে না। অনুরূপ ভাবে আলিমদের দু’টি মতামতের বিশুদ্ধ মতে মহিলাকে যৌন উত্তেজনা অবস্থায় হোক আর যৌন উত্তেজনা ছাড়া হোক স্পর্শ করলে সাধারণভাবে অযু ভাংবে না, যদি তার কাছ থেকে কিছু না বের হয়। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কতিপয় স্ত্রীকে চুমু দিতেন তারপর সলাত আদায় করতেন আর অযু করতেন না। আর সূরা নিসা ও সূরা মায়িদার দু’আয়াতের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বাণীঃ

أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ

"অথবা তোমরা যদি মহিলাদের সাথে সহবাস করে থাকো।" (সূরা নিসাঃ আয়াত ৪৩ এবং সূরা মায়িদাঃ আয়াত ৬)

এখানে لَمْسٌ স্পর্শ দ্বারা জিমা’ সহবাস উদ্দেশ্য আলিমদের দু’টি মতামতের বিশুদ্ধ মতে। আর এটি ইবনু আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহুমা এর এবং সালাফ ও খালাফ তথা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলিমদের এক দলের মত। আল্লাহই তাওফীক দাতা।

১৮
পঞ্চদশ পাঠঃ প্রত্যেক মুসলিমের জন্যে ইসলামী চরিত্রে অলঙ্কৃত হওয়া আবশ্যক
কতিপয় ইসলামী চরিত্র:

১। সর্বদাই সত্য বলা।

২। আমানাতদার হওয়া।

৩। পবিত্রতা,নির্দোষ, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ও সংযমতার গুণ অর্জন করা।

৪। লজ্জা করা ও লজ্জাবোধ থাকা ইসলামী চরিত্রের অন্যতম একটি দিক।

৫। সাহসী হওয়া-বীরত্ব পূর্ণ হওয়া।

৬। দানশীলতা,

৭) উদারতা।

৮। ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা।

৯।আল্লাহর হারামকৃত সকল বিধি-বিধান ও সকল বস্তু হতে সম্পূর্ণ দূরে থাকা।

১০। প্রতিবেশীদের সাথে ভাল ব্যবহার করা ।

১১। অভাব গ্রস্ত ব্যক্তিকে সামর্থ অনুপাতে সাহায্য করা। এ ছাড়া আরো ইসলামী চরিত্র যার বৈধতার উপর কুরআন বা সহীহ হাদীছ প্রমাণ করেছে ।

১৯
ষষ্ঠদশ পাঠঃ ইসলামী আদব-কায়দা-শিষ্টাচার গ্রহণ করা
ইসলামী শিষ্টাচার অনুযায়ী চরিত্রকে ঢেলে সাজাতে হবে।

আর তা হল নিন্মরূপঃ

১। (মুসলিমদের) পরস্পরে সালাম বিনিময় করা।

২। হাঁসৌজ্জল থাকা।

৩। ডান হাতে খাওয়া ও ডান হাতে পান করা।

৪। প্রত্যেক কাজের শুরুতে বিস্‌মিল্লাহ বলা।

৫। (প্রত্যেক কাজ) শেষে আল হামদু লিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে) বলা।

৬। হাঁচির পর আল হামদু লিল্লাহ বলা।

৭। হাঁচি দাতা হাঁচি দেয়ার পর আল হামদুলিল্লাহ বললে তার উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন) বলা।

৮। রোগীকে দেখতে যাওয়া।

৯। মৃত ব্যক্তির জানাযা ও কাফন-দাফনে অংশ গ্রহণ করা।

১০। মাসজিদ বা বাড়িতে প্রবেশ কালে, বের হওয়া সময় ও সফরের সময় ইসলামী নিয়ম-নীতি মেনে চলা। সেই সাথে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বড় ও ছোটদের সাথে ইসলামি আদবের পাবন্ধ হওয়া।

১১। নবশিশুর প্রতি অভিনন্দন জানানো।

১২। বিবাহে বরকতের দু’আ করা।

১৩। বিপদে সান্ত্বনাদান করা। এ ছাড়া আরও অন্যান্য ইসলামী আদব-কায়দা। যেমন, পোশাক পরিধান করা ক্ষেত্রে, পোশাক খোলার সময় এমনকি জুতা পরিধান করার সময়ও ইসলামে আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখা।

২০
সপ্তদশ পাঠঃ শিরক ও সকল প্রকার আল্লাহ বিরোধী কাজ সমূহ হতে সর্তকী করণ
সকল মুসলিমদের শিরক ও সকল প্রকার আল্লাহ বিরোধী কাজসমূহ হতে সর্তক থাকা ও মানুষকে সর্তক রাখা অপরিহার্য। যেমন,

সাতটি ধ্বংসকারী পাপ:

১। আল্লাহর সাথে শিরক করা।

২। যাদু ও যাদুর সাথে সম্পর্কিত সকল প্রকার কার্যকলাপের সাথে জড়িত হওয়া।

৩। অন্যায় ও ন্যায় সংগত কারণ ছাড়াই মানুষ হত্যা করা হতে যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন।

৪। সুদ খাওয়া। (অর্থাৎ সুদ সম্পর্কিত সকল প্রকার লেনদেন ও কার্যকলাপ হতে)

৫। ইয়াতীমের মাল-অর্থ ভক্ষণ করা।

৬। যুদ্ধ ময়দান হতে পালায়ন করা।

৭। সতী নিরপরাধ মু’মিন নারীকে অপবাদ দেওয়া।

৮। আরও যেমন, মাতা পিতার অবাধ্য হওয়া।

৯। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।

১০। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া।

১১। মানহানী, অর্থ আত্বসাৎ ও রক্ত পাতের ব্যপারে মানুষের প্রতি যুলুম করা হতে।

১২। নিশা সৃষ্টি কারী পানীয় ও খাদ্য বস্তু পান করা ও খাওয়া হতে।

১৩। জুয়া খেলা।

১৪। অপরের গীবাত করা হতে।

১৫। চুগলখোরী করা হতে।

আরও অন্যান্য আল্লাহ ও রাসূল বিরোধী কাজ হতে বিরত থাকা যা থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মানুষদেরকে বিরত থাকতে বলেছেন।

২১
অষ্টাদশ পাঠঃ মৃত্যু ব্যক্তিকে প্রস্তুত করা তার উপর সলাত ও তাকে সমাহিত করা
নিন্মে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হল:

প্রথমতঃ মৃত্যু শয্যায় শায়ীত ব্যক্তিকে لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ 'লাইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর তালকীন দেয়া সম্মত। কারণ এ ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস রয়েছে। তিনি বলেছেন, "তোমরা তোমাদের মধ্যে মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে এমন ব্যক্তিকে لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ এর তালক্বীন দাও।" হাদীছটি মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

এ হাদীছে বর্ণিত মাওতা দ্বারা উদ্দেশ্য হল আল ঐ সকল শয্যাশায়ী ব্যক্তিগণ যাদের মৃত্যু নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত হবে তখন তার চোখ বন্ধ করে দিতে হবে এবং তার দাঁড়ি বেঁধে দিতে হবে। কারণ এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত বর্ণিত হয়েছে।

তৃতীয়তঃ মুসলিম মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া আবশ্যক। তবে শহীদ ব্যক্তি যে জিহাদ করতে করতে মৃত্যু বরণ করেছে তাকে গোসল দিতে হবে না এবং তার জানাযার সলাত পড়তে হবে না বরং তাকে তার পরিহিত কাপড়েই দাফন করতে হবে। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদের শহীদদের গোসল দেন নাই এবং তাদের উপর জানাযার সলাত আদায় করেন নাই।

চতুর্থতঃ মৃত ব্যক্তির গোসলের বিবরণ: মৃত ব্যক্তির লজ্জাস্থান (কাপড় দিয়ে) ঢেকে দিতে হবে। পরে (কাপড়) একটু উঁচু করবে এবং তার পেট নরম ভাবে চাপ দিবে। তারপর মৃত ব্যক্তিকে গোসল দানকারী তার নিজ হাতে নেকড়া বা অনুরূপ কিছু পেঁচাবে। অতপর তাকে এর দ্বারা পরিস্কার করবে। তারপর সলাতের অযুর ন্যায় অযু করাবে। তারপর মৃত ব্যক্তির মাথা ও দাঁড়ি পানি ও বরই পাতা বা অনুরূপ কিছু দিয়ে ধৌত করবে। তারপর তার ডান পার্শ্ব ধৌত করবে। তারপর তার বাম পার্শ্ব ধৌত করবে। তারপর তাকে এ ভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার গোসল দিবে। (গোসলদাতা) প্রত্যেক বারই তার হাত তার পেটের উপর দিয়ে ফেরাবে। পেছনের রাস্তা দিয়ে যদি কোন কিছু বের হয় তবে তা ধ্যেত করে নিবে এবং বের হওয়ার স্থানটি তুলা বা অনুরুপ কিছু দিয়ে বন্ধ করে দিবে। আর যদি বন্ধ না হয় তবে পোড়ামাটি বা আধুনিক ডাক্তারি উপকরণের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে। যেমন প্লাস্টার/ প্রলেপ বা অনরূপ কিছু এবং পুনরায় অযু করাবে। আর যদি তিনবার ধৌত করার মাধ্যমে পরিস্কার না হয়, তবে পাঁচ বা সাতবার পর্যন্ত ধৌত করবে। তারপর কাপড় দ্বারা মুছে দিবে। অপ্রকাশ্য স্থানসমূহ ও সিজদার স্থান সমূহে সুগন্ধি লাগাবে। আর যদি সারা শরীরে সুগন্ধি লাগায় তবে তা আরো উত্তম হবে। আর ধূপ দ্বারা তার কাফন গুলো সুগন্ধি করে দিবে। আর যদি তার মোচ বা নখ লম্বা থাকে তবে তা কেটে দিবে। আর তা ছেড়ে দিলে বা না কাটলেও কোন অসুবিধা নাই। আর তার চুল আঁচড়াবে না। তার নাভীর নিচের চুল মুণ্ডাবে না এবং খাৎনা করাবে না। কারণ এর উপর কোন দলীল নাই। মহিলা তার চুলকে তিনগুচ্ছ করা হবে এবং তা তার পিছনের দিকে ছেড়ে দেয়া হবে।

পঞ্চতমঃ মৃত ব্যক্তিকে কাফন দেয়াঃ পুরুষকে তিন সাদা কাপড়ে কাফন দেয়া উত্তম, যাতে জামা ও পাগড়ী থাকবে না। যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাফন দেয়া হয়েছিল। মৃত ব্যক্তিকে এর ভিতর পর্যায়ক্রমে রাখতে হবে। আর যদি মৃত ব্যক্তিকে জামা, লুঙ্গি ও লিফাফাতে কাফন দেয়া হয়, তবে তা কোন অসুবিধা নাই।

আর মহিলাকে পাঁচ কাপড়ে কাফন দেয়া হবে। যথা: চাদর, উড়না, লুঙ্গি ও দুটি লিফাফা।

আর কাফন দেয়া হবে একটি, দুটি বা তিন কাপড়ে। আর এক জামা ও দুই লিফাফাতে বালিকাকে কাফন দেয়া হবে।

মৃত ব্যক্তির সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে এমন কাপড় সকলের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক। তবে যদি মৃত ব্যক্তি মুহরিম হয় তাহলে তাকে পানি ও ররই পাতা দিয়ে গোসল করাতে হবে এবং তার চাদর ও লুঙ্গিতে বা এ ছাড়া অন্য কাপড়ে কাফন দেয়া হবে এবং তার মাথা ও মুখ ঢাকা যাবে না এবং সুগন্ধিও লাগাবে না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন 'লাব্বাইক...' বলা অবস্থায় উঠানো হবে। যেমন, এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

আর মুহরিম যদি মহিলা হয় তবে তাকে অন্যান্য মহিলার ন্যায় কাফন দেয়া হবে। তবে তাকে সুগন্ধি লাগানো যাবে না এবং নিকাব দ্বারা তার মুখ ঢাকা যাবে না এবং মোজা দ্বারা তার হস্তদ্বয় ঢাকা যাবে না। তবে পূর্বে বর্ণিত মহিলার কাফনের বিবরণ অনুপাতে তার হস্তদ্বয় ও মুখ মণ্ডল ঢেকে দিতে হবে।

ষষ্ঠতমঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল, তার জানাযার সলাত ও দাফন করার সে বেশী উপযুক্ত যাকে মৃত ব্যক্তি এ ব্যাপারে অসিয়ত করে গেছে। তারপর তার বাপ। তারপর তার দাদা। তারপর পুরুষদের ব্যাপারে’ আসাবাদের তথা নিজ বংশের মধ্যে সব চেয়ে বেশী নিকটবর্তী তারপর যে বেশী নিকটবর্তী সে। আর মহিলাকে গোসল দেয়ার সে সব চেয়ে অধিক উপযুক্ত যাকে সে অসিয়ত করে গেছে। তারপর তার মা। তারপর তার দাদী। তারপর সে মহিলার মহিলাদের যে বেশী নিকটবর্তী তারপর যে বেশী নিকটবর্তী সে।

আর স্বামী-স্ত্রী একজন অপরজনকে গোসল করাবে। কারণ আবু বকর রাযিআল্লাহু আনহুকে তাঁর স্ত্রী গোসল করিয়েছিলেন। আর আলী রাযিআল্লাহু তাঁর স্ত্রী ফাতিমা রাযিআল্লাহু আনহাকে গোসল করিয়ে ছিলেন।

সপ্তমতঃ মৃত ব্যক্তির জানাযার সলাতের বিবরণঃ

জানাযার সলাতে চার তাকবীর দিবে।

প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। আর যদি এর সাথে ছোট একটি সূরা বা এক বা দু আয়াত পাঠ করে তবে তা ভাল হবে। কারণ, এ ব্যাপারে ইবনু আব্বাস (রাজিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে ছহীহ হাদীস বর্ণিত আছে।

এরপর দ্বিতীয় তাকবীর দিবে এবং নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর তাশাহুদে যে সলাত (দরূদ) পাঠ করা হয় সে সলাত পাঠ করবে।

তারপর তৃতীয় তাকবীর দিয়ে নিম্নের দু‘আ পাঠ করবে:

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا ، وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا، وَغَائِبِنَا، وَصَغِيْرِنَا وَ كَبِيْرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا . اللهُمَّ مَنْ أَحيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإيْمَان- اَللهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِه وَاعْفُ عَنْهُ وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنْقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسٍِ ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ وَأَهْلاً خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ ، وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ وَ أَدْخِلْهُ الْجَنًةَ - وَأعِذْهُ مِنَ عَذَابِ الْقَبْرِ [ وَعَذَابِ النَّارِ ] وَأَفْصِحْ لَهُ فِيْ قَبْرِهِ وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ- اللهُمَّ لا تَحْرِمْنَا أجْرَهُ وَلا تُضِلْنَا بَعْدَه»

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলী হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গাইবিনা ওয়া সগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া যাকারিনা য়া উনছা-না। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফা আহয়্যিহী’ আলাল ইসলাম,ওয়া মান তাওয়াফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু ’আলাল ঈমান। আল্লাহুম্মাগ ফিরলাহু ওয়ারহামহু,ওয়া আফিহি, ওয়া আ’ফু আনহু ওয়া আকরিম নুযুলাহু ওয়া ওয়াছ্ছি’ মুদখালাহু,ওয়া আগছিলহু বিলমা-ঈ ওয়াস্ সালজি ওয়াল বারদি। ওয়া নাক্কিহি মিনাল খাতায়া কামা য়ূনাক্কাস্ সাওবুল আবইয়াযু মিনাদ্দানাছি,ওয়া আবদিলহু দারান খাইরাম্ মিন্ দারিহী ওয়া আহলান খাইরাম্ মিন আহলিহী,ওয়া যাওজান খায়রাম মিন্ যাওজিহি,ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা,ওয়া আইযহু মিন আযাবিল ক্বাবরি (ওয়া আযাবিন্নারি),ওয়া আফসিহ লাহু ফি ক্বাবরিহি ওয়া নাওয়ীর লাহু ফিহি,আল্লাহুম্মা লা তাহরিম না আজরাহু ওয়া লা তুযিল্লানা বা’দাহু।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিতও অনুপস্থিত, ছোট ও বড়, নর ও নারীদিগকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! আমাদের মাঝে যাদের তুমি জীবিত রেখেছো তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো, আর যাদেরকে মৃত্যু দান করো তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দান কর। হে আল্লাহ! তুমি এই মৃত্যু ব্যক্তিকে ক্ষমা কর তার উপর রহম কর তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখো, তাকে মার্জনা কর, মর্যাদার সাথে তার আতিথেয়তা করো। তার বাসস্থানটি প্রশস্থ করে দাও,তুমি তাকে ধৌত করে দাও, পানি, বরফ ও শিশির দিয়ে।

তুমি তাকে গুনাহ হতে এমনভাবে পরিস্কার করো যেমন সাদা কাপড় ধৌত করে ময়লা বিমুক্ত করা হয়। তার এই (দুনিয়ার) বাসস্থানের বদলে উত্তম বাসস্থান প্রদান কর, তার এই পরিবার হতে উত্তম পরিবার দান করো, তার এই স্ত্রী হতে উত্তম স্ত্রী দান কর, তুমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও, আর তাকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচাও। তার কবর প্রশস্ত করে দাও এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচাও। তার কবর প্রশস্ত করে দাও এবং তার জন্য ইহা আলোকময় করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদেরকে তার সওয়াব হতে বঞ্চিত করোনা এবং তার মৃত্যূর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করো না।

অতঃপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে ডান দিকে এক সালামের মাধ্যমে সলাত শেষ করবে। জানাযার সলাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে হাত উঠানো মুস্তাহাব। যদি মৃত ব্যক্তি মহিলা হয় তাহলে... اَللهُمَّ اغْفِرْلَهُ এর পরিবর্তে اَللهُمَّ اغْفِرْلَهَا অর্থাৎ আরবী স্ত্রীলিঙ্গের সর্বনাম যোগ করে পড়তে হয়। আর যদি মৃত্যের সংখ্যা দুই হয় তাহলে اَللهُمَّ اغْفِرْلَهُمَا .. الخ এবং এর বেশী হলে اَللهُمَّ اغْفِرْلَهُمْ .. إلخ অর্থাৎ সংখ্যা হিসেবে সর্বনাম ব্যবহার করবে। মৃত যদি শিশু হয় তাহলে উপরোক্ত মাগফিরাতের দু’আর পরিবর্তে নিম্নের দু’আ পাঠ করবে।

اللهُمَّ اجْعَلْهُ فَرْطًا وَّذُخْرًا لِوَالِدَيْهِ وَشَفِيْعًا مُجَابًا اللهُمَّ ثَقَّلْ بِهِ مَوَازِيْنَهُمَا وَأعْظِمْ بِهِ أجُوْرَهُمَا . وَألْحِقْهُُ بِصَالِحِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَاجْعَلْهُ فِيْ كَفَالَةِ إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ . وَقِهِ بِرَحْمَتكَ عَذَابَ الْجَحِيْمِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ্’ আলহু ফারাতান ওয়া জুখরান লিওয়ালিদাইহি, ওয়া শাফীআন মুাজাবা। আল্লাহুম্মা ছাক্কিলবিহী মাওয়াযীনাহুমা-ওয়া আ’যিম বিহী উজু-রাহুমা,ওয়া আলহিকুহু বিসা-লিহিল মু’মিনীন ওয়া আজ’আলহু ফী কাফা-লাতি ইব্রাহীমা আলাইহিস সলাম,ওয়াক্বিহী বিরাহমাতিকা আযাবাল জাহীম।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি এই শিশুকে তার পিতা-মাতার জন্যে অগ্রীম দূত ও সংরক্ষিত প্রতিদান বানাও এবং তাকে এমন সুপারিশকারী বানাও যার শুপারিশ কবুল করা হবে। হে আল্লাহ! তুমি এই শিশুর দ্বারা তার পিতা-মাতার সওয়াবের ওজন আরো ভারী কর এবং এর দ্বারা তাদের প্রতিদানকে আরো বড় কর। তাকে নেককার মু’মিনদের অন্তর্ভূক্ত কর এবং ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দায়িত্বে রেখে দাও। একে তোমার রহমতের দ্বারা জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা কর।

জানাযার ক্ষেত্রে সুন্নাত হল, ইমাম মৃত পুরুষের মাথা বরাবর দাঁড়াবে এবং স্ত্রীলোক হলে তার দেহের মধ্যস্থলে দাঁড়াবে। মৃতের সংখ্যা একাধিক হলে পুরুষের মৃতদেহ ইমামের নিকটবর্তী থাকবে এবং মহিলাদের মৃতদেহ কিবলার নিকটবর্তী থাকবে। তাদের সাথে শিশু থাকলে পুরুষের পরে এবং মহিলার আগে পুরুষ শিশু স্থান পাবে, তারপর মহিলাগণ এবং সর্বশেষে নারী শিশু স্থান হবে। বালকের মাথা পুরুষের মাথা বরাবর এবং স্ত্রীলোকের মধ্যাংশ পুরুষের মাথা বরাবর রাখা হবে। এইভাবে বালিকার মাথা স্ত্রীলোকের মাথা বরাবর এবং বালিকার মধ্যাংশ পুরুষের মাথা বরাবর রাখা হবে। সব মুছাল্লীগণ ইমামের পিছনে দাঁড়াবে। তবে যদি কোন লোক ইমামের পিছনে দাঁড়াবার স্থান না পায় তাহলে সে ইমামের ডান পার্শ্বে দাঁড়াবে।

অষ্টমতঃ মৃত ব্যক্তির দাফনের বিবরণঃ কবরকে একজন পুরুষের কোমর পরিমাণ গভীর করা এবং তাতে কেবলার দিক থেকে লাহাদ (বগলী কবর) থাকা শরীয়ত সম্মত। মৃতকে তার ডান পার্শ্বের উপর কাত করে লাহাদে রাখা এবং কাফনের গিঁঠ বা বন্ধন খুলে দেয়া। তবে দেহ থেকে কাপড় খুলে নেয়া যাবে না।

মৃত ব্যক্তির মুখ খোলা যাবে না। সে পুরুষ হোক অথবা নারী হোক। এরপর এর উপর ইট খাড়া করে রেখে তা কাদা মাটি দিয়ে লেপে দেয়া, যাতে ইটগুলো স্থির থাকে এবং মৃত ব্যক্তিকে মাটি থেকে রক্ষা করে। আর যদি ইট সংগ্রহ করা সহজ না হয়, তাহলে অন্য কিছু যেমন, তক্তা, পাথর অথবা কাঠ খাড়া করে রাখা যাতে মাটি থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে। তারপর এর উপর মাটি দেয়া হবে এবং মাটি দেয়ার সময় নিম্নের দু’আটি বলা মুস্তাহাব বা সুন্নাত।

بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ

উচ্চারণঃ (বিস্‌মিল্লাহি ওয়া ’আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ) (আল্লাহর নামে এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)র মিল্লাতের (দীনের) উপর রাখলাম) এবং কবর এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করা হবে এবং এর উপর সহজ হলে কঙ্কর রাখবে ও পানি ছিটিয়ে দিবে। মৃতের দাফনকারীদের জন্যে কবরের পার্শ্বে দাঁড়ানো ও তার জন্যে দু’আ করা বৈধ। কারণ নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দাফন কাজ শেষ করতেন তখন তিনি কবরের পার্শ্বে দাঁড়াতেন এবং বলতেনঃ "তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ঈমানের উপর অবিচল থাকার জন্যে দু’আ কর কারণ এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।

নবমমতঃ দাফনের পূর্বে যে ব্যক্তির জানাযা পড়ে নাই সে দাফনের পরও তার কবলে গিয়ে জানাযা পড়তে পারে। কারণ নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছেন। তবে এই নামায একমাস সময়ের মধ্যে হতে হবে, এর বেশী হলে কবরের কাছে গিয়ে জানাযার নামায পড়া বৈধ হবে না। কারণ দাফনের একমাস পর নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন জানাযা পড়েছেন এমন কোন হাদীস পাওয়া যায় নাই।

দশমঃ মৃত্যের পরিবারের জন্যে তার বাড়িতে উপস্থিত মানুষের জন্যে খাদ্য প্রস্তুত করা জায়েয নয়। কারণ, সম্মানিত সাহাবী জারীর বিন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী (রাযিআল্লাহু আনহুর) বলেন, আমরা মৃত্যের পরিবারের কাছে লোকজনের একত্রিত হওয়া ও এবং দাফনের পর তাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করাকে নিয়াহার (বিলাপের) অন্তর্ভূক্ত করতাম। (এই হাদীসটি ইমাম আহমদ হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন)। তবে মৃতের পরিবারের জন্যে বা তাদের মেহমানদের জন্যে খাদ্য প্রস্তুত করাতে কোন অসুবিধা নেই

মৃত্যের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের জন্যে মৃত্যের পরিবারের জন্যে খাদ্য প্রস্তুত করা শরীয়ত সম্মত। কারণ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে যখন জাফর বিন আবূ তালিব (রাযিআল্লাহু আনহু) এর শামে মৃত্যু হয়েছে এ সংবাদ পৌঁছে তখন তিনি স্বীয় পরিবারবর্গকে বললেন: "জাফর পরিবারের জন্য খাদ্য প্রস্তুত কর। আরও বললেন যে, তাদের উপর এমন বিপদ নেমে এসেছে যা তাদেরকে খাদ্য প্রস্তুত করা থেকে ব্যস্ত করে রেখেছে।"

মৃতের পরিবারের জন্যে যে খাদ্য পাঠানো হয়েছে তা খাওয়ার জন্য নিজেদের প্রতিবেশী বা অন্যদের আহবান করাতে কোন অসুবিধা নেই। এর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে বলে আমাদের জানা নেই।

একাদশঃ কোন মহিলার জন্যে স্বামী ব্যতীত অপর কোন মৃতের উপর তিন দিনের বেশী শোক প্রকাশ করা জায়েয নয়। স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর মৃত্যুওতে চার মাস দশ দিন শোক প্রকাশ ওয়াজিব। তবে গর্ভবর্তী মহিলার সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত শোক পালন করতে হবে। কারণ এ ব্যাপারে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সহীহ হাদীস প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু পুরুষের জন্যে আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কারোর মুত্যুতে শোক পালন করা জায়েয নয়।

দ্বাদশঃ (দিন ও তারিখ নির্ধারণ না করে) যে কোন সময় মৃত ব্যক্তিদের জন্যে সাধারণভাবে দু’আ করা, তাদের জন্য আল্লাহর রহমতের জন্য দুয়া করা, মৃত্যু ও তার পরের অবস্থার কথা স্মরণের উদ্দেশ্যে পুরুষদের জন্যে কবর জিয়ারত করা শরীয়ত সম্মত। কারণ (এ ব্যাপারে) নাবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস রয়েছে। আবূ হুরাইরা রাযিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

زُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُكُمْ الْآخِرَةَ ( خرَّجه الإمام مسلم في صحيحه )

"তোমরা কবর জিয়ারত কর, কারণ এটি তোমাদেরকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।" (হাদীসটি ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণ যখন কবর যিয়ারত করতেন তখন তাঁদেরকে তিনি নিম্নের দু’আ বলতে শিক্ষা দিতেন।

اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهْلَ الدَّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهَ بِكُمْ لاَحِقُوْنَ نَسَأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيْةَ، يَرْحَمُ الله الْمُسْتَقْدِمِيْنَ وَالْمُسْتَأَخِرِيْنَ

উচ্চারণঃ আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ্ দিয়ারি মিনাল মু’মিনীনা ওয়াল মুসলিমীন,ওয়া ইন্না ইনশা আল্লাহু বিকুম লাহিকূন। নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াহ,ইয়ারহামুল্লাহুল্ মুস্তাক্দিমীনা ওয়াল মুস্তাখিরীন।

অর্থঃ তোমাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক হে কবরবাসী মু’মিন ও মুসলিমগণ। ইনশা আল্লাহ আমরাও অবশ্যই তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আমাদের এবং তোমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করতেছি। আল্লাহ অগ্রগামী ও পশ্চাতগামীদের প্রতি দয়া করুন।

মহিলাদের জন্যে কবর জিয়ারত করা বৈধ নয়। কারণ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর জিয়ারত কারীনী নারীদের অভিশাপ করেছেন। তাছাড়া মেয়েদের কবর জিয়ারতে ফেতনা ও অধৈর্য্য সৃষ্টির ভয় রয়েছে। এ ভাবে মেয়েদের পক্ষে কবর পর্যন্ত জানাযার অনুগমন করা বৈধ নহে। কেননা, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এ থেকে নিষেধ করেছেন। তবে মসজিদে বা অন্য কোন স্থানে মৃতের উপর জানাযার নামায পড়া নারী পুরুষ সকলের জন্যে বৈধ।

(এ বইয়ে) যা একত্রিত করা সহজ হয়েছে এটি তার সর্বশেষ পাঠ।

আল্লাহ আমাদের নাবী মোহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীগণের উপর সলাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন