HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে মসজিদের ফযিলত, বিধি-বিধান ও আদাব
লেখকঃ ড. সাঈদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী
নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের খারাবী থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নাই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়েত দেয়ার কেউ নাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি একক, তার কোন শরিক নাই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি এহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।
অত:পর, মসজিদ বিষয়ে এটি একটি সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা, যাতে দলীল প্রমাণ সহকারে মসজিদের অর্থ, মসজিদ বানানোর ফযিলত, মসজিদের আবাদ, ফযিলত ও মসজিদে গমনের ফযিলত ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে আলোচনা করা হয়েছে মসজিদের আদব, মসজিদের বিধান, মসজিদের মধ্যে তা‘লীমের হালকা কায়েম করার ফযিলত ইত্যাদি দলীল প্রমাণ সহকারে আলোচনা করা হয়েছে। আমি এ রিসালায় -পুস্তিকায়- আলোচিত অধিকাংশ বিষয়গুলো আমার ইমাম শায়খ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহেমাহুল্লাহ-এর আলোচনা ও বিবৃতি থেকে গ্রহণ করেছি। আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন! আল্লাহ তা‘আলার দরবারে আমার কামনা - আল্লাহ যেন আমার এ আমলকে কবুল করেন এবং বরকত-পূর্ণ করেন। আর আমার এ আমল দ্বারা আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের উপকার ও যাবতীয় কল্যাণ দান করেন। আর যারা এর প্রতি পৌঁছে তাদেরকেও যেন উপকৃত করেন। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হলেন, সর্বোত্তম সত্ত্বা যার নিকট চাওয়া যায় এবং তিনিই হলেন উত্তম ভরসা। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং একমাত্র অভিভাবক। মহান আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নাই এবং কোন বাধা দানকারী নাই। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ এর উপর, যিনি আমাদের ইমাম ও আদর্শ । আর তার পরিবার-পরিজন, তার সাহাবী ও যারা তার অনুকরণ করে কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর।
লিখক
বৃহস্পতিবার
২৮. ২. ১৪২১ হিঃ
অত:পর, মসজিদ বিষয়ে এটি একটি সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা, যাতে দলীল প্রমাণ সহকারে মসজিদের অর্থ, মসজিদ বানানোর ফযিলত, মসজিদের আবাদ, ফযিলত ও মসজিদে গমনের ফযিলত ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে আলোচনা করা হয়েছে মসজিদের আদব, মসজিদের বিধান, মসজিদের মধ্যে তা‘লীমের হালকা কায়েম করার ফযিলত ইত্যাদি দলীল প্রমাণ সহকারে আলোচনা করা হয়েছে। আমি এ রিসালায় -পুস্তিকায়- আলোচিত অধিকাংশ বিষয়গুলো আমার ইমাম শায়খ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহেমাহুল্লাহ-এর আলোচনা ও বিবৃতি থেকে গ্রহণ করেছি। আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। আমীন! আল্লাহ তা‘আলার দরবারে আমার কামনা - আল্লাহ যেন আমার এ আমলকে কবুল করেন এবং বরকত-পূর্ণ করেন। আর আমার এ আমল দ্বারা আমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের উপকার ও যাবতীয় কল্যাণ দান করেন। আর যারা এর প্রতি পৌঁছে তাদেরকেও যেন উপকৃত করেন। কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হলেন, সর্বোত্তম সত্ত্বা যার নিকট চাওয়া যায় এবং তিনিই হলেন উত্তম ভরসা। তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং একমাত্র অভিভাবক। মহান আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নাই এবং কোন বাধা দানকারী নাই। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ এর উপর, যিনি আমাদের ইমাম ও আদর্শ । আর তার পরিবার-পরিজন, তার সাহাবী ও যারা তার অনুকরণ করে কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর।
লিখক
বৃহস্পতিবার
২৮. ২. ১৪২১ হিঃ
যদি মসজিদ শব্দটি দ্বারা উদ্দেশ্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের জন্য নির্মিত বিশেষ স্থান হয়, তাহলে এর বহুবচন مساجد মাসাজেদ। আর যদি মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য কপাল রাখার স্থান হয়, তাহলে শব্দটির জিম যবর বিশিষ্ট হবে, অর্থাৎ সেজদা করার স্থান [দেখুন: আল্লামা ইবনে মানজুর, লিসানুল আরব, দাল অধ্যায়, মিম পরিচ্ছেদ, ২০৪-২০৪/৩; আল্লামা সানআনী, সুবুলুস সালাম, ১৭৯/২।]
মোটকথা, মসজিদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: সেজদা করার স্থান। পরবর্তীতে এ শব্দের অর্থ ব্যাপকতা লাভ করে এর অর্থ হয়, ঐ ঘর যে ঘরকে মুসলিমদের সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্র হওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।
আল্লামা যরকশি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, সালাতের কর্মসমূহের মধ্য হতে সেজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্ম হওয়াতে সালাত আদায়ের স্থানের নামকে সেজদা থেকেই নেয়া হয়েছে। এ কারণেই মসজিদকে মসজিদ مسجد বলা হয়ে থাকে মারকা مركع বলা হয় না। তারপর বর্তমানে মসজিদ শব্দটি সালাতের জন্য নির্মিত স্থানের সাথেই খাস। এ কারণেই লোকেরা ঈদের সময় সালাত আদায়ের জন্য ঈদ গাহে একত্র হয়; কিন্তু তাকে মসজিদ বলে না [ই’লামুস সাজেদ বি-আহকামিল মাসাজেদ, পৃ: ২৭-২৮। আরও দেখুন : কাজী ’ইয়াজ, মাশারেকুল আনওয়ার, ২০৭/২; আল-আসফাহানী, মুফরাদাতু আলফাযিল কুরআন, পৃ: ৩৯৭; মোল্লা আলী কারী, মিকাতুল মাফাতিহ শারহে মিশকাতু মাসাবিহ, ১২/১০; আত-তিবী, শারহে মিশকাতুল মাসাবিহ, ৩৬৩৫/১১।]
মোটকথা, মসজিদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: সেজদা করার স্থান। পরবর্তীতে এ শব্দের অর্থ ব্যাপকতা লাভ করে এর অর্থ হয়, ঐ ঘর যে ঘরকে মুসলিমদের সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্র হওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।
আল্লামা যরকশি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, সালাতের কর্মসমূহের মধ্য হতে সেজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্ম হওয়াতে সালাত আদায়ের স্থানের নামকে সেজদা থেকেই নেয়া হয়েছে। এ কারণেই মসজিদকে মসজিদ مسجد বলা হয়ে থাকে মারকা مركع বলা হয় না। তারপর বর্তমানে মসজিদ শব্দটি সালাতের জন্য নির্মিত স্থানের সাথেই খাস। এ কারণেই লোকেরা ঈদের সময় সালাত আদায়ের জন্য ঈদ গাহে একত্র হয়; কিন্তু তাকে মসজিদ বলে না [ই’লামুস সাজেদ বি-আহকামিল মাসাজেদ, পৃ: ২৭-২৮। আরও দেখুন : কাজী ’ইয়াজ, মাশারেকুল আনওয়ার, ২০৭/২; আল-আসফাহানী, মুফরাদাতু আলফাযিল কুরআন, পৃ: ৩৯৭; মোল্লা আলী কারী, মিকাতুল মাফাতিহ শারহে মিশকাতু মাসাবিহ, ১২/১০; আত-তিবী, শারহে মিশকাতুল মাসাবিহ, ৩৬৩৫/১১।]
স্থায়ীভাবে সালাত আদায়ের জন্য যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তাকে শরীয়তের পরিভাষায় মসজিদ বলে। [প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ রুওয়াছ, মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ: ৩৯৭।] শরিয়তের দৃষ্টিতে মসজিদের মূল অর্থ হল, ভূ-খণ্ডের এক টুকরো জায়গা যেখানে আল্লাহর জন্য সেজদা করা হয়। [আয-যারকশী, ই’লামুস সাজেদ বি আহকামিল মাসাজেদ পৃ: ২৭।] কারণ, যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«.. وجُعِلَت لي الأرض مسجداً وطهوراً، فأيُّما رجل من أمّتي أدركته الصلاة، فليصلِّ »
“আমার জন্য জমিনকে মসজিদ ও পবিত্র করা হয়েছে। আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে যেখানেই সালাত পেয়ে থাকে, সে যেন সেখানেই সালাত আদায় করে নেয়। [মুত্তাফাকুন আলাইই : সহীহ বুখারী, তাইয়াম্মুম অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: হাদদাসানা আব্দুল্লাহ বিন ইউছুফ, হাদিস নং ৩৩৫; সহীহ মুসলিম, মাসাজেদ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মাসাজেদ ও সালাতের স্থান সমূহের আলোচনা, হাদিস নং ৫২১।] এটি আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তার পূর্বে যারা নবী ছিলেন, তাদের জন্য সব স্থানে সালাত আদায় করার অনুমতি ছিল না, তাদেরকে শুধু মাত্র গির্জা ও উপাসনালয়ে সালাত আদায় করতে হত। [আল্লামা কুরতবী, আল-মুফহিম (সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে) ১১৭/২।]
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস দ্বারাও বিষয়টি প্রমাণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «... وأينما أدركتك الصلاة فصلِّ، فهو مسجد » “যেখানেই তোমাকে সালাত পেয়ে বসে, তুমি সালাত আদায় কর, এটিই মসজিদ [মুত্তাফাকুন আলাইই : সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, পরিচ্ছেদ : আল্লাহ তা’আলার বাণী- [ وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ ] হাদিস নং ৪২৫, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, হাদিস নং ৫২০।]”। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, শরীয়ত যে সব স্থানে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছে, যেমন- কবরস্থান, নাপাক-স্থান, ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান ইত্যাদি ছাড়া বাকী সব জায়গায় সালাত আদায় করা জায়েয আছে। অনুরূপভাবে যে কোন কারণেই হোক যে সব স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন, যেমন- উট বাঁধার স্থান, মানুষের চলাচলের স্থান, গোসলখানা ইত্যাদি, সে সব স্থানে সালাত আদায় করা যাবে না। [শারহুন নববী ’আলা সহীহ মুসলিম ৫/৫।] আর জামে‘ হল, মসজিদের একটি গুণ। এ নামে নামকরণ করার কারণ হল, মসজিদ মুসল্লীদের একত্র করে বা মসজিদে মুসল্লীরা একত্র হয়। অথবা মসজিদ হল লোকজনের একত্র হওয়ার আলামত। এ কারণেই মসজিদকে জামে‘ মসজিদ বলা হয়ে থাকে। [দেখুন: আল্লামা ইবনে মানজুর, লিসানুল আরব, আইন অধ্যায়, জিম পরিচ্ছেদ: ৫৫/৮।] যে মসজিদে জুমুআ‘র সালাত আদায় করা হয়, সে মসজিদকেও জামে‘ মসজিদ বলা হয়; যদিও মসজিদ ছোট হয়। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে এ মসজিদটি মানুষকে একত্র করে।
«.. وجُعِلَت لي الأرض مسجداً وطهوراً، فأيُّما رجل من أمّتي أدركته الصلاة، فليصلِّ »
“আমার জন্য জমিনকে মসজিদ ও পবিত্র করা হয়েছে। আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে যেখানেই সালাত পেয়ে থাকে, সে যেন সেখানেই সালাত আদায় করে নেয়। [মুত্তাফাকুন আলাইই : সহীহ বুখারী, তাইয়াম্মুম অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: হাদদাসানা আব্দুল্লাহ বিন ইউছুফ, হাদিস নং ৩৩৫; সহীহ মুসলিম, মাসাজেদ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মাসাজেদ ও সালাতের স্থান সমূহের আলোচনা, হাদিস নং ৫২১।] এটি আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তার পূর্বে যারা নবী ছিলেন, তাদের জন্য সব স্থানে সালাত আদায় করার অনুমতি ছিল না, তাদেরকে শুধু মাত্র গির্জা ও উপাসনালয়ে সালাত আদায় করতে হত। [আল্লামা কুরতবী, আল-মুফহিম (সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে) ১১৭/২।]
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস দ্বারাও বিষয়টি প্রমাণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «... وأينما أدركتك الصلاة فصلِّ، فهو مسجد » “যেখানেই তোমাকে সালাত পেয়ে বসে, তুমি সালাত আদায় কর, এটিই মসজিদ [মুত্তাফাকুন আলাইই : সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, পরিচ্ছেদ : আল্লাহ তা’আলার বাণী- [ وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ ] হাদিস নং ৪২৫, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, হাদিস নং ৫২০।]”। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, শরীয়ত যে সব স্থানে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছে, যেমন- কবরস্থান, নাপাক-স্থান, ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থান ইত্যাদি ছাড়া বাকী সব জায়গায় সালাত আদায় করা জায়েয আছে। অনুরূপভাবে যে কোন কারণেই হোক যে সব স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন, যেমন- উট বাঁধার স্থান, মানুষের চলাচলের স্থান, গোসলখানা ইত্যাদি, সে সব স্থানে সালাত আদায় করা যাবে না। [শারহুন নববী ’আলা সহীহ মুসলিম ৫/৫।] আর জামে‘ হল, মসজিদের একটি গুণ। এ নামে নামকরণ করার কারণ হল, মসজিদ মুসল্লীদের একত্র করে বা মসজিদে মুসল্লীরা একত্র হয়। অথবা মসজিদ হল লোকজনের একত্র হওয়ার আলামত। এ কারণেই মসজিদকে জামে‘ মসজিদ বলা হয়ে থাকে। [দেখুন: আল্লামা ইবনে মানজুর, লিসানুল আরব, আইন অধ্যায়, জিম পরিচ্ছেদ: ৫৫/৮।] যে মসজিদে জুমুআ‘র সালাত আদায় করা হয়, সে মসজিদকেও জামে‘ মসজিদ বলা হয়; যদিও মসজিদ ছোট হয়। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ে এ মসজিদটি মানুষকে একত্র করে।
মসজিদের গুরুত্ব, সম্মান ও ফযিলত বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে আঠারো স্থানে মসজিদের আলোচনা করেন। [দেখুন: মুহাম্মাদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, আল কুরআনের শব্দসমূহের অভিধান, আল মুজামুল মুফাহরাস পৃ: ৩৪৫।] আল্লাহর কাছে মসজিদের মহান মর্যাদা ও সম্মানের কারণে তিনি মসজিদকে নিজের প্রতি সম্পর্কিত করেছেন। আর আল্লাহর দিকে সম্পর্কিত বিষয়গুলো দু’প্রকার :
প্রথম প্রকার: এমন কিছু সিফাত যেগুলো নিজে নিজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কায়েম হতে পারে না। যেমন- ইলম, কুদরত, বক্তব্য, শ্রবণ ও দৃষ্টি। এগুলো হল, গুণ ও বৈশিষ্টকে গুণান্বিত সত্তার সাথে সম্পর্কিত করা। সুতরাং আল্লাহর ইলম, কুদরত, হায়াত, চেহারা, হাত সবই আল্লাহ সিফাত। আল্লাহর কোন মাখলুক এ সব গুণে তার সদৃশ হতে পারে না। এ সব গুণগুলো সাথেই প্রযোজ্য।
দ্বিতীয় প্রকার: এমন কতক বস্তুকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা যেগুলো তার থেকে আলাদা। যেমন- ঘর, উট, বান্দা, রাসূল, রূহ ইত্যাদি। এটি হল, মাখলুকের সম্মন্ধ তার খালেকের দিকে। তবে আল্লাহর সাথে এ ধরনের সম্মন্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে এমন বিশেষত্ব ও সম্মানের অধিকারী করে থাকে যা অন্য বস্তুর তুলনায় স্বতন্ত্র ও আলাদা। আল্লাহ তা‘আলা মসজিদসমূহকে তার নিজের দিকে সম্পর্কিত করেছেন যা সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ বলে বিবেচিত। [দেখুন : শারহুল আকীদাহ আত-তহাবিয়াহ পৃ: ৪৪২, শায়খ সালমান, আল-কাওয়াশিফ আল-জালিইয়াহ ‘আন মাআনী আল-ওয়াসিতিইয়াহ পৃ:২৪২.] আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَآۚ ﴾ [ البقرة : ١١٤ ]
“আর তার চেয়ে অধিক জালেম কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরান করতে চেষ্টা করে?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১১৪।]
﴿ إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ... ١٨ ﴾ [ التوبة : ١٨ ]
“একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১৮।]
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জ্বিন, আয়াত: ১৮।]
সমগ্র পৃথিবীর প্রতিটি ধুলা-কণার মালিক, খালেক ও নিয়ন্ত্রক আল্লাহ হওয়া সত্ত্বেও, মসজিদের বিশেষ মর্যাদা ও ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারণ, মসজিদ বেশ কতক ইবাদাত-বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নির্মাণ করা হয়। মসজিদ আল্লাহর জন্য; আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য নয়। যেমনি ভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের যেসব ইবাদাত তার জন্য করার নির্দেশ দিয়েছেন, সে ইবাদাতগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য করা বৈধ নয়, অনুরূপভাবে মসজিদও আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য বানানো বৈধ নয়। [আল্লামা ড. আব্দুল্লাহ আব্দুর রহমান আল-জুবরীন, মসজিদ বিষয়ক ফুসুল ও মাসায়েল, পৃ: ৫; আল-আসার আত-তারববী, আল্লামা ড. সালেহ বিন গানেম আস-সাদলা, পৃ: ৪; আরও দেখুন, আল-মামনু ওয়াল মাশরু, শায়খ মুহাম্মদ বিন আলী আল-‘আরফায, পৃ: ৬।] এমনই একটি সম্মন্ধ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থাপন করেছেন, যা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর ঘরের সম্মান। যেমন তিনি বলেন,
«وما اجتمع قوم في بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله، ويتدارسونه بينهم إلا نزلت عليهم السكينة، وغشيتهم الرحمة وذكرهم الله فيمن عنده »
আল্লাহর ঘরসমূহ হতে কোন ঘরে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করা ও শিক্ষা করার জন্য যখন কোন সম্প্রদায় একত্র হয়, তাদের উপর শান্তি নাযিল হয়, রহমত তাদের ঢেকে ফেলে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার যে সব ফেরেশতা আছে, তাদের নিকট তাদের আলোচনা করেন। [সহীহ মুসলিম, জিকির ও দু’আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: কুরআন তিলাওয়াতের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত, হাদিস: ২৬৯৯।] মসজিদের ফযিলত ও মর্যাদার আরও প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَوۡلَا دَفۡعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعۡضَهُم بِبَعۡضٖ لَّهُدِّمَتۡ صَوَٰمِعُ وَبِيَعٞ وَصَلَوَٰتٞ وَمَسَٰجِدُ يُذۡكَرُ فِيهَا ٱسۡمُ ٱللَّهِ كَثِيرٗاۗ وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠ ﴾ [ الحج : ٤٠ ]
“আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহু-দীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন। যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪০।]
আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত রাখার জন্য জিহাদের বিধান রাখা হয়েছে। আর মসজিদসমূহ হল, জমিনে সর্বোত্তম স্থান যেখানে আল্লাহর নামকে সমুন্নত রাখা হয়, তাওহীদের কালিমা উচ্চারণ করা হয় এবং শাহাদাতাইনের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয- সালাত তাতে আদায় করা হয়। এ কারণেই মসজিদের সম্মান রক্ষা করা ও মসজিদ অবমাননা কারীদের প্রতিহত করা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَوۡلَا دَفۡعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعۡضَهُم بِبَعۡضٖ ٤٠ ﴾ [ الحج : ٤٠ ]
“আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন”।
ইমাম ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে উত্তম কথা হল, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জানিয়ে দেন- যদি তিনি মানুষকে মানুষের মাধ্যমে প্রতিহত না করতেন, তাহলে উল্লেখিত স্থানসমূহ ধ্বংস হয়ে যেত। আর আল্লাহ তা‘আলা কতক মানুষ দ্বারা কতককে ধ্বংস করার অপর অর্থ হল, মুসলিমদের মাধ্যমে মুশরিকদের প্রতিহত করা। প্রতিহত করার অপর অর্থ হল, যারা ক্ষমতাশীল তাদের মাধ্যমে তাদের প্রজাদের জুলুম অত্যাচার করা হতে প্রতিহত করা। প্রতিহত করার অপর অর্থ হল, যারা অন্যের হক বা অধিকারকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার অনুমতি দেন, তাদের প্রতিহত করা...। [জামে‘উল বায়ান: ৬৪৭/১৮।]
ইমাম ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা এক সম্প্রদায় থেকে অপর সম্প্রদায়ের লোকদের জুলুম-অত্যাচার ও অন্যায়-অনাচারকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে জমিন ধ্বংস হয়ে যেত এবং শক্তিশালী লোকেরা দুর্বল লোকদের নিষ্পেষিত করে দিত। [তাফসীরুল কুরআন আল-আজীম পৃ; ৯০১।]
ইমাম বগবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা জিহাদের মাধ্যমে এবং হদ কায়েম করার মাধ্যমে মানুষকে দমিয়ে না রাখতেন, তাহলে প্রতিটি নবীর শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ধ্বংস হয়ে যেত। মুসা আ. এর যুগে গির্জা ধ্বংস করা হত, আর ঈসা আ. এর যুগে খৃষ্টানদের উপাসনালয় এবং মহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদসমূহ ধ্বংস করা হত। [তাফসীরুল বাগাবী, ২৯০/৩।]
কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর তা‘আলার বাণী - يُذۡكَرُ فِيهَا ٱسۡمُ ٱللَّهِ তে হা সর্বনামটি মসজিদসমূহের দিকে ফিরছে। কারণ, সেটিই এখানে সর্বাধিক নিকটে। ইমাম ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উত্তম কথা হল, যে ব্যক্তি এ কথা বলে, এর অর্থ হল, ‘রুহবান বা পাদ্রীদের আশ্রম, খৃষ্টানদের উপাসনালয়, ইয়াহুদীদের গির্জা ও মুসলিমদের সেই মসজিদসমূহ যেখানে অধিকহারে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়, তা ধ্বংস হয়ে যেত’। [জামেয়ুল বায়ান, পৃ: ৬৫০/১৮। আরও দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাসীর, পৃ: ৯০১।]
যে ব্যক্তি মসজিদসমূহের পক্ষে লড়াই করে এবং আল্লাহর দ্বীনকে সহযোগিতা করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সাহায্য করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠ ﴾ [ الحج : ٤٠ ]
“আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪০।]
তারপর আল্লাহ তা‘আলা যারা সহযোগিতা করে, তাদের প্রশংসা করে বলেন,
﴿ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٤١ ﴾ [ الحج : ٤١ ]
“তারা এমন যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণে”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪১।]
মসজিদের গুরুত্ব ও ফযিলত অধিক হওয়ার কারণে, মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয়াকে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও বড় অন্যায় বলে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَآۚ ﴾ [ البقرة : ١١٤ ]
“আর তার চেয়ে অধিক জালেম কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরান করতে চেষ্টা করে?। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১১৪]
মনে রাখতে হবে, ইসলাম পূর্ব যত দ্বীন বা শরীয়ত দুনিয়াতে এসেছিল, ইসলামের আগমনের পর এগুলো সব রহিত হয়ে গেছে। পূর্ববর্তী লোকদের দ্বীন ও ধর্ম রহিত হওয়াতে তাদের গির্জা, উপসনালয় ও সকল ইবাদাতগৃহ আবাদ করাও বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মাত্র মুসলিমদের মসজিদসমূহই অবশিষ্ট আছে। সুতরাং, এখন শুধু মসজিদ সমূহের মান-মর্যাদা ও সম্মানকে সমুন্নত রাখতে হবে। [দেখুন : মসজিদ বিষয়ক কিতাব ফুসুল ও মাসায়েল, আল্লামা আব্দুল্লাহ আব্দুর রহমান আল-জুবরীন, পৃ: ৬।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]
“সে সব ঘরে, যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিকর করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬।] আল্লাহই সাহায্য কারী”। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, পৃ: ১০৯।]
প্রথম প্রকার: এমন কিছু সিফাত যেগুলো নিজে নিজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কায়েম হতে পারে না। যেমন- ইলম, কুদরত, বক্তব্য, শ্রবণ ও দৃষ্টি। এগুলো হল, গুণ ও বৈশিষ্টকে গুণান্বিত সত্তার সাথে সম্পর্কিত করা। সুতরাং আল্লাহর ইলম, কুদরত, হায়াত, চেহারা, হাত সবই আল্লাহ সিফাত। আল্লাহর কোন মাখলুক এ সব গুণে তার সদৃশ হতে পারে না। এ সব গুণগুলো সাথেই প্রযোজ্য।
দ্বিতীয় প্রকার: এমন কতক বস্তুকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা যেগুলো তার থেকে আলাদা। যেমন- ঘর, উট, বান্দা, রাসূল, রূহ ইত্যাদি। এটি হল, মাখলুকের সম্মন্ধ তার খালেকের দিকে। তবে আল্লাহর সাথে এ ধরনের সম্মন্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে এমন বিশেষত্ব ও সম্মানের অধিকারী করে থাকে যা অন্য বস্তুর তুলনায় স্বতন্ত্র ও আলাদা। আল্লাহ তা‘আলা মসজিদসমূহকে তার নিজের দিকে সম্পর্কিত করেছেন যা সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ বলে বিবেচিত। [দেখুন : শারহুল আকীদাহ আত-তহাবিয়াহ পৃ: ৪৪২, শায়খ সালমান, আল-কাওয়াশিফ আল-জালিইয়াহ ‘আন মাআনী আল-ওয়াসিতিইয়াহ পৃ:২৪২.] আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَآۚ ﴾ [ البقرة : ١١٤ ]
“আর তার চেয়ে অধিক জালেম কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরান করতে চেষ্টা করে?” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১১৪।]
﴿ إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ... ١٨ ﴾ [ التوبة : ١٨ ]
“একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১৮।]
﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জ্বিন, আয়াত: ১৮।]
সমগ্র পৃথিবীর প্রতিটি ধুলা-কণার মালিক, খালেক ও নিয়ন্ত্রক আল্লাহ হওয়া সত্ত্বেও, মসজিদের বিশেষ মর্যাদা ও ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারণ, মসজিদ বেশ কতক ইবাদাত-বন্দেগী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নির্মাণ করা হয়। মসজিদ আল্লাহর জন্য; আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য নয়। যেমনি ভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বান্দাদের যেসব ইবাদাত তার জন্য করার নির্দেশ দিয়েছেন, সে ইবাদাতগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য করা বৈধ নয়, অনুরূপভাবে মসজিদও আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য বানানো বৈধ নয়। [আল্লামা ড. আব্দুল্লাহ আব্দুর রহমান আল-জুবরীন, মসজিদ বিষয়ক ফুসুল ও মাসায়েল, পৃ: ৫; আল-আসার আত-তারববী, আল্লামা ড. সালেহ বিন গানেম আস-সাদলা, পৃ: ৪; আরও দেখুন, আল-মামনু ওয়াল মাশরু, শায়খ মুহাম্মদ বিন আলী আল-‘আরফায, পৃ: ৬।] এমনই একটি সম্মন্ধ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থাপন করেছেন, যা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর ঘরের সম্মান। যেমন তিনি বলেন,
«وما اجتمع قوم في بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله، ويتدارسونه بينهم إلا نزلت عليهم السكينة، وغشيتهم الرحمة وذكرهم الله فيمن عنده »
আল্লাহর ঘরসমূহ হতে কোন ঘরে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করা ও শিক্ষা করার জন্য যখন কোন সম্প্রদায় একত্র হয়, তাদের উপর শান্তি নাযিল হয়, রহমত তাদের ঢেকে ফেলে এবং আল্লাহ তা‘আলা তার যে সব ফেরেশতা আছে, তাদের নিকট তাদের আলোচনা করেন। [সহীহ মুসলিম, জিকির ও দু’আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: কুরআন তিলাওয়াতের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত, হাদিস: ২৬৯৯।] মসজিদের ফযিলত ও মর্যাদার আরও প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَوۡلَا دَفۡعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعۡضَهُم بِبَعۡضٖ لَّهُدِّمَتۡ صَوَٰمِعُ وَبِيَعٞ وَصَلَوَٰتٞ وَمَسَٰجِدُ يُذۡكَرُ فِيهَا ٱسۡمُ ٱللَّهِ كَثِيرٗاۗ وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠ ﴾ [ الحج : ٤٠ ]
“আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহু-দীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন। যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪০।]
আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত রাখার জন্য জিহাদের বিধান রাখা হয়েছে। আর মসজিদসমূহ হল, জমিনে সর্বোত্তম স্থান যেখানে আল্লাহর নামকে সমুন্নত রাখা হয়, তাওহীদের কালিমা উচ্চারণ করা হয় এবং শাহাদাতাইনের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয- সালাত তাতে আদায় করা হয়। এ কারণেই মসজিদের সম্মান রক্ষা করা ও মসজিদ অবমাননা কারীদের প্রতিহত করা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَوۡلَا دَفۡعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعۡضَهُم بِبَعۡضٖ ٤٠ ﴾ [ الحج : ٤٠ ]
“আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন”।
ইমাম ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে উত্তম কথা হল, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জানিয়ে দেন- যদি তিনি মানুষকে মানুষের মাধ্যমে প্রতিহত না করতেন, তাহলে উল্লেখিত স্থানসমূহ ধ্বংস হয়ে যেত। আর আল্লাহ তা‘আলা কতক মানুষ দ্বারা কতককে ধ্বংস করার অপর অর্থ হল, মুসলিমদের মাধ্যমে মুশরিকদের প্রতিহত করা। প্রতিহত করার অপর অর্থ হল, যারা ক্ষমতাশীল তাদের মাধ্যমে তাদের প্রজাদের জুলুম অত্যাচার করা হতে প্রতিহত করা। প্রতিহত করার অপর অর্থ হল, যারা অন্যের হক বা অধিকারকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য মিথ্যা সাক্ষী দেয়ার অনুমতি দেন, তাদের প্রতিহত করা...। [জামে‘উল বায়ান: ৬৪৭/১৮।]
ইমাম ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা এক সম্প্রদায় থেকে অপর সম্প্রদায়ের লোকদের জুলুম-অত্যাচার ও অন্যায়-অনাচারকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে জমিন ধ্বংস হয়ে যেত এবং শক্তিশালী লোকেরা দুর্বল লোকদের নিষ্পেষিত করে দিত। [তাফসীরুল কুরআন আল-আজীম পৃ; ৯০১।]
ইমাম বগবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি আল্লাহ তা‘আলা জিহাদের মাধ্যমে এবং হদ কায়েম করার মাধ্যমে মানুষকে দমিয়ে না রাখতেন, তাহলে প্রতিটি নবীর শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো ধ্বংস হয়ে যেত। মুসা আ. এর যুগে গির্জা ধ্বংস করা হত, আর ঈসা আ. এর যুগে খৃষ্টানদের উপাসনালয় এবং মহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদসমূহ ধ্বংস করা হত। [তাফসীরুল বাগাবী, ২৯০/৩।]
কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর তা‘আলার বাণী - يُذۡكَرُ فِيهَا ٱسۡمُ ٱللَّهِ তে হা সর্বনামটি মসজিদসমূহের দিকে ফিরছে। কারণ, সেটিই এখানে সর্বাধিক নিকটে। ইমাম ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উত্তম কথা হল, যে ব্যক্তি এ কথা বলে, এর অর্থ হল, ‘রুহবান বা পাদ্রীদের আশ্রম, খৃষ্টানদের উপাসনালয়, ইয়াহুদীদের গির্জা ও মুসলিমদের সেই মসজিদসমূহ যেখানে অধিকহারে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়, তা ধ্বংস হয়ে যেত’। [জামেয়ুল বায়ান, পৃ: ৬৫০/১৮। আরও দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাসীর, পৃ: ৯০১।]
যে ব্যক্তি মসজিদসমূহের পক্ষে লড়াই করে এবং আল্লাহর দ্বীনকে সহযোগিতা করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সাহায্য করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠ ﴾ [ الحج : ٤٠ ]
“আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪০।]
তারপর আল্লাহ তা‘আলা যারা সহযোগিতা করে, তাদের প্রশংসা করে বলেন,
﴿ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٤١ ﴾ [ الحج : ٤١ ]
“তারা এমন যাদেরকে আমি জমিনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণে”। [সূরা আল-হজ, আয়াত: ৪১।]
মসজিদের গুরুত্ব ও ফযিলত অধিক হওয়ার কারণে, মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয়াকে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও বড় অন্যায় বলে আখ্যায়িত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَآۚ ﴾ [ البقرة : ١١٤ ]
“আর তার চেয়ে অধিক জালেম কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরান করতে চেষ্টা করে?। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১১৪]
মনে রাখতে হবে, ইসলাম পূর্ব যত দ্বীন বা শরীয়ত দুনিয়াতে এসেছিল, ইসলামের আগমনের পর এগুলো সব রহিত হয়ে গেছে। পূর্ববর্তী লোকদের দ্বীন ও ধর্ম রহিত হওয়াতে তাদের গির্জা, উপসনালয় ও সকল ইবাদাতগৃহ আবাদ করাও বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মাত্র মুসলিমদের মসজিদসমূহই অবশিষ্ট আছে। সুতরাং, এখন শুধু মসজিদ সমূহের মান-মর্যাদা ও সম্মানকে সমুন্নত রাখতে হবে। [দেখুন : মসজিদ বিষয়ক কিতাব ফুসুল ও মাসায়েল, আল্লামা আব্দুল্লাহ আব্দুর রহমান আল-জুবরীন, পৃ: ৬।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ ٣٦ ﴾ [ النور : ٣٦ ]
“সে সব ঘরে, যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিকর করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩৬।] আল্লাহই সাহায্য কারী”। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, পৃ: ১০৯।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أَحَبُّ البلاد إلى الله مساجدها، وأبغض البلاد إلى الله أسواقها »
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় স্থান হল, মসজিদসমূহ, আর আল্লাহর নিকট সর্বাধিক নিকৃষ্ট শহর হল, বাজারসমূহ। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ এবং সালাতের স্থানসমূহ। পরিচ্ছেদ: ফজরের সালাতের পর সালাতের স্থানে বসার ফযিলত এবং মসজিদের ফযিলত, হাদিস: ৬৭১।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু أحبّ البلاد إلى الله مساجدها হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, কারণ মসজিদগুলো হল, আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীর ঘর এবং এগুলোর বুনিয়াদ হল, তাকওয়া নির্ভর। আর ا«وأبغض البلاد إلى الله أسواقه » কারণ, বাজার হল, ধোঁকা, প্রতারণা, সুদ-ঘুষ, মিথ্যাচার, মারা-মারি, হানা-হানি, ওয়াদা ভঙ্গ করা, আল্লাহর জিকির হতে বিরত রাখা ইত্যাদির স্থান। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা, ১৭৭/৫।]
ইমাম কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু «أحبّ البلاد إلى الله مساجدها» হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, শহরের ঘরসমূহ হতে সর্বাধিক প্রিয় ঘর এবং সর্বাধিক প্রিয় ভূ-খণ্ড হল, মসজিদ সমূহ। কারণ, মসজিদসমূহকে ইবাদাত-বন্দেগী, জিকির-আযকার, মুসলিমদের মিলনকেন্দ্র, ইসলামের নির্দেশনসমূহের বহি:প্রকাশ ও ফেরেশতাদের একত্র হওয়ার স্থান হিসেবে খাস করা হয়েছে। আর বাজার আল্লাহর নিকট সর্বাধিক নিকৃষ্ট হওয়ার কারণ, বাজারকে খাস করা হয়েছে, দুনিয়া উপার্জনের জন্য, মানুষের পার্থিব উদ্দেশ্য লাভের জন্য এবং আল্লাহর জিকির হতে গাফেল রাখার জন্য। কারণ, বাজার হল, মিথ্যাচারিতার স্থান, শয়তানের রণক্ষেত্র। শয়তান এখানেই তার ঝাণ্ডা স্থাপন করে ওত পেতে আছে। [আল-মুফহিম (সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে), 294/2।]
« أَحَبُّ البلاد إلى الله مساجدها، وأبغض البلاد إلى الله أسواقها »
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় স্থান হল, মসজিদসমূহ, আর আল্লাহর নিকট সর্বাধিক নিকৃষ্ট শহর হল, বাজারসমূহ। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ এবং সালাতের স্থানসমূহ। পরিচ্ছেদ: ফজরের সালাতের পর সালাতের স্থানে বসার ফযিলত এবং মসজিদের ফযিলত, হাদিস: ৬৭১।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু أحبّ البلاد إلى الله مساجدها হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, কারণ মসজিদগুলো হল, আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীর ঘর এবং এগুলোর বুনিয়াদ হল, তাকওয়া নির্ভর। আর ا«وأبغض البلاد إلى الله أسواقه » কারণ, বাজার হল, ধোঁকা, প্রতারণা, সুদ-ঘুষ, মিথ্যাচার, মারা-মারি, হানা-হানি, ওয়াদা ভঙ্গ করা, আল্লাহর জিকির হতে বিরত রাখা ইত্যাদির স্থান। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা, ১৭৭/৫।]
ইমাম কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু «أحبّ البلاد إلى الله مساجدها» হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, শহরের ঘরসমূহ হতে সর্বাধিক প্রিয় ঘর এবং সর্বাধিক প্রিয় ভূ-খণ্ড হল, মসজিদ সমূহ। কারণ, মসজিদসমূহকে ইবাদাত-বন্দেগী, জিকির-আযকার, মুসলিমদের মিলনকেন্দ্র, ইসলামের নির্দেশনসমূহের বহি:প্রকাশ ও ফেরেশতাদের একত্র হওয়ার স্থান হিসেবে খাস করা হয়েছে। আর বাজার আল্লাহর নিকট সর্বাধিক নিকৃষ্ট হওয়ার কারণ, বাজারকে খাস করা হয়েছে, দুনিয়া উপার্জনের জন্য, মানুষের পার্থিব উদ্দেশ্য লাভের জন্য এবং আল্লাহর জিকির হতে গাফেল রাখার জন্য। কারণ, বাজার হল, মিথ্যাচারিতার স্থান, শয়তানের রণক্ষেত্র। শয়তান এখানেই তার ঝাণ্ডা স্থাপন করে ওত পেতে আছে। [আল-মুফহিম (সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে), 294/2।]
মনে রাখবেন, তিনটি মসজিদ জমিনে সর্বোত্তম মসজিদ: আল-মসজিদুল হারাম, মসজিদ আন-নববী ও আল-মসজিদুল আকসা। আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قلت : يا رسول الله، أي مسجد وضع في الأرض أوَّل؟ قال : «المسجد الحرام » . قلت : ثم أيُّ؟ قال : «المسجد الأقصى » . قلت : كم بينهما؟ قال : . « أربعون سنة، وأينما أدركتك الصلاة فصلِّ، فهو مسجد »
“আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সর্ব প্রথম কোন মসজিদটি দুনিয়াতে নির্মাণ করা হয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল-মসজিদুল হারাম, তারপর কোনটি? বললেন, আল-মসজিদুল আকসা। আমি বললাম উভয়ের মাঝে সময়ের ব্যবধান কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। সালাতের ওয়াক্ত তোমাকে যেখানেই পেয়ে বসে, সেখানে সালাত আদায় কর এবং সেটিই তোমার জন্য মসজিদ”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, কিতাবুল আম্বিয়া, পরিচ্ছেদ: وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ হাদিস নং: ৪২৫। সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ ও সালাতের স্থানসমূহ। হাদিস নং, ৫২০।]
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«نزل الحجر الأسود من الجنة، وهو أشد بياضاً من اللبن، فسوَّدته خطايا بني آدم »
“হাজরে আসওয়াদটি জান্নাত থেকে নাযিল হয়। তখন সেটি দুধের চেয়েও অধিক সাদা ছিল। কিন্তু আদম সন্তানদের গুনাহ সেটিকে কালো করে ফেলছে”। আল্লামা ইবনে খুযাইমা রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটি এ শব্দে বর্ণনা করেন, أشد بياضاً من الثلج “বরফ হতেও অধিক সাদা”। [সুনান আত-তিরমিযি, তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ, কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : হাজারে আসওয়াদের ফযিলত, রুকন ও মাকাম সম্পর্কে যা এসেছে, হাদীস নং-৮৭৭। ইবনু খুজাইমা তার সহীহ গ্রন্থে ২২০/৪; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ৬৩১/১; আরনাউত জামেউল উসুলে ২৭৫/৯ একে হাসান বলেন।] আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«والله ليبعثنه الله يوم القيامة، له عينان يبصر بهما، ولسان ينطق به، يشهد على من استلمه بحق »
”নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন পাথরটিকে দুটি চোখ দিয়ে প্রেরণ করবেন যদ্বারা সে দেখতে পাবে এবং মুখ দেয়া হবে, যার দ্বারা সে কথা বলবে। যারা সত্যিকার অর্থে তাকে চুমু দিত, সে তাদের পক্ষে সাক্ষী দেবে”। [সুনান আত-তিরমিযি, কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : হাজারে আসওয়াদ সম্পর্কে যা এসেছে। হাদীস নং-৯৬১; তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান। ইবনু খুজাইমা ২০/৪; মুসনাদ আহমাদ ২৬৬/১; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ২৮৪/১; হাকেম হাদিসটিকে সহীহ বলেন ৪৫৭/১, এবং ইমাম যাহাবীও তার সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلاة في مسجدي هذا أفضل من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام»
“আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা, মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করা হতে উত্তম”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, পরিচ্ছেদ: মক্কা ও মদীনার মসজিদদ্বয়ে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদিস নং ১১৯০। সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ, মক্কা ও মদীনার মসজিদদ্বয়ে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদিস নং ১৩৯৪।] সঠিক হল, মসজিদে হারামে সালাত আদায় করা অন্যত্র আদায় করার চেয়ে বহুগুণ বেশী। [দেখুন: মাজমুয়ায়ে ফতোয়া, ইমাম বিন বায, ২৩০/১২।] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلاة في مسجدي أفضل من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام، وصلاة في المسجد الحرام أفضل من مائة ألف صلاة فيما سواه »
“আমার মসজিদে সালাত আদায় করা, মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর মসজিদে হারামে সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে এক লক্ষ সালাত আদায় করা হতে উত্তম”। [সুনান ইবনে মাযা, সালাত কায়েম করা অধ্যায়, হাদিস নং ১৪০৬; আহমদ ৩৪৩/৩; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, সহীহ সুনান ইবনে মাযা ২৩৬/৩; এরওয়াউল গালীল ৩৪১/৪।] অপর হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«والصلاة في بيت المقدس بخمسمائة صلاة »
“বাইতুল মাকদিসে সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে পাঁচ শত সালাত আদায় করার সমান”। [আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বাযযার ও ইবনে আব্দুল বার বর্ণিত হাদিস। বাযযার একে হাসান বলেছেন। বায়হাকী শুআবুল ঈমানে এটি বর্ণনা করেছেন। দেখুন ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ৬৭/৩।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تشدّ الرّحال إلا إلى ثلاثة مساجد : مسجدي هذا، ومسجد الحرام، والمسجد الأقصى »
“তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা যাবে না। মসজিদ তিনটি হল, আমার এ মসজিদ, মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা”। বুখারির শব্দাবলী নিম্নরূপ:
«لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد : المسجد الحرام، ومسجد الرسول صلى الله عليه و سلم، ومسجد الأقصى »
“তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা যাবে না। মসজিদ তিনটি হল, মসজিদে হারাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদ, মসজিদে আকসা”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, মক্কা ও মদীনার মসজিদে সালাত আদায়ের ফযিলত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মক্কা ও মদীনার মসজিদে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদীস-১১৮৯। সহীহ মুসলিম কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : তিনটি মসজিদের ফযিলত, হাদীস- ১৩৯১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما بين بيتي ومنبري روضة من رياض الجنة، ومنبري على حوضي »
“আমার ঘর ও মিম্বারের মাঝে জান্নাতের বাগানসমূহ হতে একটি বাগান রয়েছে। আর আমার মিম্বার আমার হাউজের উপর”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, মক্কা ও মদীনার মসজিদে সালাত আদায়ের ফযিলত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : কবর ও মিম্বরের মাঝখানে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদীস-১১৯৬। সহীহ মুসলিম কিতাবুল হজ, হাদীস- ১৩৯১।]
قلت : يا رسول الله، أي مسجد وضع في الأرض أوَّل؟ قال : «المسجد الحرام » . قلت : ثم أيُّ؟ قال : «المسجد الأقصى » . قلت : كم بينهما؟ قال : . « أربعون سنة، وأينما أدركتك الصلاة فصلِّ، فهو مسجد »
“আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! সর্ব প্রথম কোন মসজিদটি দুনিয়াতে নির্মাণ করা হয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল-মসজিদুল হারাম, তারপর কোনটি? বললেন, আল-মসজিদুল আকসা। আমি বললাম উভয়ের মাঝে সময়ের ব্যবধান কত? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। সালাতের ওয়াক্ত তোমাকে যেখানেই পেয়ে বসে, সেখানে সালাত আদায় কর এবং সেটিই তোমার জন্য মসজিদ”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, কিতাবুল আম্বিয়া, পরিচ্ছেদ: وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ نِعْمَ الْعَبْدُ إِنَّهُ أَوَّابٌ হাদিস নং: ৪২৫। সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ ও সালাতের স্থানসমূহ। হাদিস নং, ৫২০।]
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«نزل الحجر الأسود من الجنة، وهو أشد بياضاً من اللبن، فسوَّدته خطايا بني آدم »
“হাজরে আসওয়াদটি জান্নাত থেকে নাযিল হয়। তখন সেটি দুধের চেয়েও অধিক সাদা ছিল। কিন্তু আদম সন্তানদের গুনাহ সেটিকে কালো করে ফেলছে”। আল্লামা ইবনে খুযাইমা রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটি এ শব্দে বর্ণনা করেন, أشد بياضاً من الثلج “বরফ হতেও অধিক সাদা”। [সুনান আত-তিরমিযি, তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ, কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : হাজারে আসওয়াদের ফযিলত, রুকন ও মাকাম সম্পর্কে যা এসেছে, হাদীস নং-৮৭৭। ইবনু খুজাইমা তার সহীহ গ্রন্থে ২২০/৪; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ৬৩১/১; আরনাউত জামেউল উসুলে ২৭৫/৯ একে হাসান বলেন।] আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«والله ليبعثنه الله يوم القيامة، له عينان يبصر بهما، ولسان ينطق به، يشهد على من استلمه بحق »
”নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন পাথরটিকে দুটি চোখ দিয়ে প্রেরণ করবেন যদ্বারা সে দেখতে পাবে এবং মুখ দেয়া হবে, যার দ্বারা সে কথা বলবে। যারা সত্যিকার অর্থে তাকে চুমু দিত, সে তাদের পক্ষে সাক্ষী দেবে”। [সুনান আত-তিরমিযি, কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : হাজারে আসওয়াদ সম্পর্কে যা এসেছে। হাদীস নং-৯৬১; তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান। ইবনু খুজাইমা ২০/৪; মুসনাদ আহমাদ ২৬৬/১; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ২৮৪/১; হাকেম হাদিসটিকে সহীহ বলেন ৪৫৭/১, এবং ইমাম যাহাবীও তার সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلاة في مسجدي هذا أفضل من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام»
“আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা, মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করা হতে উত্তম”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, পরিচ্ছেদ: মক্কা ও মদীনার মসজিদদ্বয়ে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদিস নং ১১৯০। সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ, মক্কা ও মদীনার মসজিদদ্বয়ে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদিস নং ১৩৯৪।] সঠিক হল, মসজিদে হারামে সালাত আদায় করা অন্যত্র আদায় করার চেয়ে বহুগুণ বেশী। [দেখুন: মাজমুয়ায়ে ফতোয়া, ইমাম বিন বায, ২৩০/১২।] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلاة في مسجدي أفضل من ألف صلاة فيما سواه إلا المسجد الحرام، وصلاة في المسجد الحرام أفضل من مائة ألف صلاة فيما سواه »
“আমার মসজিদে সালাত আদায় করা, মসজিদে হারাম ছাড়া অন্য যে কোনো মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর মসজিদে হারামে সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে এক লক্ষ সালাত আদায় করা হতে উত্তম”। [সুনান ইবনে মাযা, সালাত কায়েম করা অধ্যায়, হাদিস নং ১৪০৬; আহমদ ৩৪৩/৩; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, সহীহ সুনান ইবনে মাযা ২৩৬/৩; এরওয়াউল গালীল ৩৪১/৪।] অপর হাদিসে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«والصلاة في بيت المقدس بخمسمائة صلاة »
“বাইতুল মাকদিসে সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে পাঁচ শত সালাত আদায় করার সমান”। [আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বাযযার ও ইবনে আব্দুল বার বর্ণিত হাদিস। বাযযার একে হাসান বলেছেন। বায়হাকী শুআবুল ঈমানে এটি বর্ণনা করেছেন। দেখুন ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ৬৭/৩।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تشدّ الرّحال إلا إلى ثلاثة مساجد : مسجدي هذا، ومسجد الحرام، والمسجد الأقصى »
“তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা যাবে না। মসজিদ তিনটি হল, আমার এ মসজিদ, মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা”। বুখারির শব্দাবলী নিম্নরূপ:
«لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد : المسجد الحرام، ومسجد الرسول صلى الله عليه و سلم، ومسجد الأقصى »
“তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা যাবে না। মসজিদ তিনটি হল, মসজিদে হারাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদ, মসজিদে আকসা”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, মক্কা ও মদীনার মসজিদে সালাত আদায়ের ফযিলত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মক্কা ও মদীনার মসজিদে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদীস-১১৮৯। সহীহ মুসলিম কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : তিনটি মসজিদের ফযিলত, হাদীস- ১৩৯১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ما بين بيتي ومنبري روضة من رياض الجنة، ومنبري على حوضي »
“আমার ঘর ও মিম্বারের মাঝে জান্নাতের বাগানসমূহ হতে একটি বাগান রয়েছে। আর আমার মিম্বার আমার হাউজের উপর”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, মক্কা ও মদীনার মসজিদে সালাত আদায়ের ফযিলত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : কবর ও মিম্বরের মাঝখানে সালাত আদায়ের ফযিলত, হাদীস-১১৯৬। সহীহ মুসলিম কিতাবুল হজ, হাদীস- ১৩৯১।]
এর পক্ষে প্রমাণ হলো : আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন,
« كان النبي صلى الله عليه و سلم يأتي مسجد قباء كل سبتٍ ماشياً وراكباً » وكان عبد الله بن عمر يفعله » .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে একদিন মসজিদে কুবায় পায়ে হেঁটে বা আরোহণ করে উপস্থিত হতেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ করতেন। মুসলিমের বর্ণনায় হাদিসটি এ শব্দে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يأتي مسجد قباء، راكباً، وماشياً، فيصلي فيه ركعتين »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কুবায় পায়ে হেঁটে ও আরোহণ করে উপস্থিত হতেন এবং তাতে তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, মক্কা ও মদীনায় সালাত আদায় করা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, প্রতি শনিবার মসজিদে কুবাতে আগমনের ফযিলত, হাদিস নং ১১৯৩; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করা ও মসজিদে কুবার ফযিলত, হাদীস- ১৩৯৯।] সাহাল বিন হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تطهّر في بيته، ثم أتى مسجد قباء فصلى فيه صلاة كان له كأجر عمرة »
“যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহে পবিত্রতা অর্জন করল, অত:পর মসজিদে কুবাতে উপস্থিত হয়ে [দুই রাকাত] সালাত আদায় করল, তার জন্য ওমরা করার সাওয়াব মিলবে। [সুনান নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজিদ, মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করার ফযিলত, হাদিস নং ৭০০, সুনান ইবনু মাযা: ১৪১২, আর শায়খ আলবানী একে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ সুনান আন-নাসাঈ ১৫০/১০; সহীহ ইবনে মাযা, ২৩৭/৭।] উসাইদ বিন যুহাইর আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«الصلاة في مسجد قباءٍ كعُمرة »
“মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করা ওমরা আদায় করার সমান”। [সুনান আত- তিরমিযি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৩২৪; সুনান ইবনু মাযা, সালাত কায়েম করা অধ্যায়, মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১৪১১। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সুনান আত-তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ১০৪/১; সহীহ সুনান ইবনে মাযা; ২৩৭/১।] এ সাওয়াব তার জন্য যে মসজিদে কুবার উদ্দেশ্যে সফর করে নাই বরং সে শুধু মদিনা হতে গিয়ে মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করে অথবা সে মদিনার মসজিদের উদ্দেশে সফর করেছে এবং সেখান থেকে মসজিদে কুবা যিয়ারত করতে গিয়েছে এবং তাতে সালাত আদায় করেছে। অন্যথায় তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নাই। যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
« كان النبي صلى الله عليه و سلم يأتي مسجد قباء كل سبتٍ ماشياً وراكباً » وكان عبد الله بن عمر يفعله » .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে একদিন মসজিদে কুবায় পায়ে হেঁটে বা আরোহণ করে উপস্থিত হতেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণ করতেন। মুসলিমের বর্ণনায় হাদিসটি এ শব্দে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يأتي مسجد قباء، راكباً، وماشياً، فيصلي فيه ركعتين »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কুবায় পায়ে হেঁটে ও আরোহণ করে উপস্থিত হতেন এবং তাতে তিনি দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন”। [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, মক্কা ও মদীনায় সালাত আদায় করা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, প্রতি শনিবার মসজিদে কুবাতে আগমনের ফযিলত, হাদিস নং ১১৯৩; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ, পরিচ্ছেদ : মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করা ও মসজিদে কুবার ফযিলত, হাদীস- ১৩৯৯।] সাহাল বিন হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تطهّر في بيته، ثم أتى مسجد قباء فصلى فيه صلاة كان له كأجر عمرة »
“যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহে পবিত্রতা অর্জন করল, অত:পর মসজিদে কুবাতে উপস্থিত হয়ে [দুই রাকাত] সালাত আদায় করল, তার জন্য ওমরা করার সাওয়াব মিলবে। [সুনান নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজিদ, মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করার ফযিলত, হাদিস নং ৭০০, সুনান ইবনু মাযা: ১৪১২, আর শায়খ আলবানী একে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ সুনান আন-নাসাঈ ১৫০/১০; সহীহ ইবনে মাযা, ২৩৭/৭।] উসাইদ বিন যুহাইর আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
«الصلاة في مسجد قباءٍ كعُمرة »
“মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করা ওমরা আদায় করার সমান”। [সুনান আত- তিরমিযি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৩২৪; সুনান ইবনু মাযা, সালাত কায়েম করা অধ্যায়, মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১৪১১। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সুনান আত-তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ১০৪/১; সহীহ সুনান ইবনে মাযা; ২৩৭/১।] এ সাওয়াব তার জন্য যে মসজিদে কুবার উদ্দেশ্যে সফর করে নাই বরং সে শুধু মদিনা হতে গিয়ে মসজিদে কুবাতে সালাত আদায় করে অথবা সে মদিনার মসজিদের উদ্দেশে সফর করেছে এবং সেখান থেকে মসজিদে কুবা যিয়ারত করতে গিয়েছে এবং তাতে সালাত আদায় করেছে। অন্যথায় তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ নাই। যেমনটি পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনেক আয়াত ও হাদিস বর্ণিত, যেগুলো মসজিদ বানানো ও মসজিদ আবাদ করার প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ ١٨ ﴾ [ التوبة : ١٨ ]
“একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে”। [সূরা আ-তাওবা, আয়াত: ১৮।]
মসজিদসমূহের আবাদ মসজিদ বানানো, পরিষ্কার করা, মসজিদে বিছানা বিছানো ও মসজিদ থেকে নাপাকী দূর করা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্ম দ্বারা হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে মসজিদে সালাত আদায়, সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া, মসজিদে শিক্ষা দেয়া, শিক্ষা নেয়া ইত্যাদির জন্য বার বার মসজিদে গমন করা দ্বারাও মসজিদ আবাদ করা হয়ে থাকে। [দেখুন, আল্লামা রাগেব আল ইস-ফাহানীর কুরআনের শব্দসমূহের সম্ভার পৃ: ৫৮৬, আল্লামা তাবারীর জামেউল বায়ান ১৬৫/১৪; তাফসীরে বগবী ১৭৪/২; তাফসীরে সাদী পৃ: ২৯১।] এ ছাড়াও আরও যত ধরনের ইবাদাত যা কেবলই আল্লাহর জন্য করা হয়ে থাকে সে সবের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা। আর যাবতীয় সব ইবাদাত-বন্দেগী আল্লাহর জন্যই। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জ্বিন, আয়াত: ১৮।] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ رِجَالٞ لَّا تُلۡهِيهِمۡ تِجَٰرَةٞ وَلَا بَيۡعٌ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَإِقَامِ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِيتَآءِ ٱلزَّكَوٰةِ يَخَافُونَ يَوۡمٗا تَتَقَلَّبُ فِيهِ ٱلۡقُلُوبُ وَٱلۡأَبۡصَٰرُ ٣٧ لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا عَمِلُواْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٣٨ ﴾ [ النور : ٣٦، ٣٨ ]
“সে সব ঘরে, যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম জিকির করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল সন্ধ্যায় তার তাসবীহ পাঠ করে সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিকির, সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। যেন আল্লাহ তাদেরকে প্রদান করেন উত্তম প্রতিদান ঐ আমলের যা তারা করেছে এবং স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক প্রদান করেন।” [সূরা নূর, আয়াত: ৩৬-৩৮।]
আল্লাহ তা‘আলার বাণী- [ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ ] এর অর্থ, আল্লাহ তা‘আলা মসজিদ বানানো, সমুন্নত রাখা, আবাদ করা ও পবিত্র করার নির্দেশ দেন। আবার কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল, মসজিদের জিম্মাদারি গ্রহণ করা, ময়লা আবর্জনা, যে সব কথা বা কাজ মসজিদে করা উচিত নয় তার থেকে মসজিদকে পবিত্র রাখা। [ইমাম ইবনে কাসীরের তাফসীরুল কুরআন আল আজীম পৃ: ৯৪৩।] ইমাম তাবারী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ ] এ কথার অর্থ হল, আল্লাহ ঘরকে বানানোর নির্দেশ দেন। আবার কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর ঘরকে সম্মান করার নির্দেশ দেন। তিনি আবার প্রথম ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দেন। তিনি বলেন, দুটি ব্যাখ্যার মধ্য হতে উত্তম ব্যাখ্যা আমার নিকট যে কথা মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহু বলেছেন, আয়াতের অর্থ আল্লাহ তা‘আলা মসজিদকে উঁচু করে নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿وَإِذۡ يَرۡفَعُ إِبۡرَٰهِۧمُ ٱلۡقَوَاعِدَ مِنَ ٱلۡبَيۡتِ وَإِسۡمَٰعِيلُ ١٢٧ ﴾ [ البقرة : ١٢٧ ]
“আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিতগুলো উঠাচ্ছিল”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৭।] কারণ, ঘর ও নির্মাণ কাজে সমুন্নত রাখার অর্থ অধিকাংশ সময় এটিই হয়ে থাকে। [আল্লামা তাবারীর জামেয়ুল বায়ান, ১৯০/১৯, দেখুন, তাফসীর আল-বাগাবী। ৩৪৭/৩.] আল্লামা সা‘দী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আল্লাহ তা‘আলার বাণী - فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ – আয়াতটি মসজিদের বিধানসমূহের সামগ্রিক একটি চিত্র। ফলে মসজিদ বানানো, মসজিদ পরিস্কার করা, মসজিদ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, মসজিদকে পাগল ও ছোট বাচ্চা যারা নাপাক থেকে সতর্ক থাকে না, তাদের থেকে হেফাযত করা, কাফের-মুশরিক থেকে রক্ষা করা, মসজিদে খেল-তামাশা করা হতে বিরত থাকা এবং আল্লাহর জিকির ছাড়া বড় আওয়াজ করা হতে বিরত থাকা সবই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত [আল্লামা সা’দী রাহিমাহুল্লাহু এর তাইসীরুর রহমান ফি কালামীল মান্নান, পৃ: ৫১৮]। আমর ইবনে মাইমুন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
] أدركت أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم، وهم يقولون : المساجد بيوت الله، وإنه حق على الله أن يكرم من زاره [.
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের বলতে দেখেছি, তারা বলেন, মসজিদসমূহ আল্লাহর আল্লাহর ঘর। যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহ যিয়ারত করে তার সম্মান করা আল্লাহর জন্য ওয়াজিব। [আল্লামা ইবনে জারির, জামেয়ুল বায়ান, ১৮৯/১৯।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ বানানো বিষয়ে মানুষকে উৎসাহ দেন এবং তাদের নছিহত করেন। যেমন, ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى مسجداً » قال بكير : حسبت أنه قال : « يبتغي به وجه الله » « بنى الله له مثله في الجنة »
“যে ব্যক্তি একটি মসজিদ বানায়”, বুকাইর বলেন, আমার বিশ্বাস তিনি বলেছেন, ‘তার দ্বারা সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশা করে’, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তার জন্য অনুরূপ একটি ঘর বানাবেন”। মুসলিম শরিফে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى مسجداً لله » قال بكير : حسبت أنه قال : « يبتغي به وجه الله تعالى، بنى الله له بيتاً في الجنة »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ বানায়”, বুকাইর বলেন, আমার বিশ্বাস তিনি বলেছেন, ‘তার দ্বারা সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশা করে’ আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর বানাবেন”। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ, মসজিদ বানানো আলোচনা, হাদিস নং ৪৫০; সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত, মসজিদসমূহ বানানোর ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা। হাদিস নং ৫৩৩।]
হাদিসটির ব্যাখ্যায় আল্লামা হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- [ من بنى مسجداً ] -তে মসজিদ শব্দটি নাকিরা ব্যবহারের কারণ, ব্যাপক অর্থ বুঝানো। সুতরাং, ছোট মসজিদ ও বড় মসজিদ সবই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى لله مسجداً صغيراً أو كبيراً بنى الله له بيتاً في الجنة »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ বানায় ছোট হোক বা বড় হোক, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”। [তিরমিযি, কিতাবুস সালাত, মসজিদ বানানো ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা; হাদিস, ৩১৯। সহীহ তারগীব ও তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১০১/১।] আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى لله مسجداً ولو قدر مفحص قطاة بنى الله له بيتاً في الجنة »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি ঘর বানায় যদিও সেটি একটি পাখির বাসার [আল্লামা মুনযিরির তারগীব ও তারহীব, ২৬২/১।] সমান হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”। [আল্লামা আলবানী সহীহ তারগীব ও তাহযীবে হাদিসটি বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেন। বাযযার ও তাবরানী সগীরের মধ্যে হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। ইবনে হিববান, ৪৯০/৪, হাদিস নং ১৬১০।]
হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, অধিকাংশ আলেমগণ কথাটিকে ‘মুবালাগা’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। কারণ, যে জায়গাটিতে পাখি তার ডিম রাখা ও তাপ দেয়ার জন্য তালাশ করে, তা সালাত আদায় করার জন্য যথেষ্ট নয়। আবার কেউ কেউ বলেন, কথাটি দ্বারা বাহ্যিক অর্থই উদ্দেশ্য; অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি মসজিদের প্রয়োজনে উল্লেখিত পরিমাণ জায়গা মসজিদের জন্য বাড়াল অথবা একটি মসজিদ নির্মাণে একাধিক লোক অংশ গ্রহণ করল এবং প্রতিটি ব্যক্তির অংশ উল্লেখিত পরিমাণ হল, তাহলে সেও এ পুরস্কারের অধিকারী হবেন। এ অর্থ তখন যখন মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য হবে আমরা মসজিদ বলতে যা বুঝি অর্থাৎ যে ঘরকে সালাত আদায় করার জন্য নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আর যদি মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য শাব্দিক অর্থ- কপাল রাখার- জায়গা হয়ে থাকে, তা হলে উল্লেখিত কোন ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী দ্বারা বুঝা যায়, বাস্তব মসজিদ। কারণ, উম্মে হাবীবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি ঘর বানায়- এ কথারই সমর্থন করে। আল্লামা সামাওয়াইহি রাহিমাহুল্লাহু তার ফাওয়ায়েদ কিতাবে হাসান সনদে এ হাদিসটি উল্লেখ করেন। তবে অন্য কেউ একে রূপক অর্থে ব্যবহার করাতে কোন অসুবিধা নাই। কারণ, প্রতিটি বস্তুর নির্মাণ তার হিসাব অনুযায়ী হয়ে থাকে। আমরা আমাদের সফরের পথে অনেক ছোট ছোট মসজিদ দেখেছি। অনেক মসজিদ এমন আছে যেগুলোতে সেজদার জায়গা ছাড়া আর কোন জায়গাই নাই। ইমাম বাইহাকী রাহিমাহুল্লাহু শুয়াবুল ঈমানে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অনুরূপ একটি হাদিস বর্ণনা করেন। তাতে তিনি এ কথাটি বৃদ্ধি করেন, ‘আমি বললাম রাস্তায় যে সব মসজিদগুলো দেখা যায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ইমাম তাবরানী রাহিমাহুল্লাহু আবু করসাফা হতে অনুরূপ একটি হাদিস বর্ণনা করেন। উভয় হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ।” [ফাতহুল বারী শারহে সহীহ আল-বুখারি ৫৪৫/১]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী -«من بنى مسجداً لله » এর অর্থ, মসজিদ বানানোর উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করা। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ১৩০/২।] আল্লামা ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু আল্লামা ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহু হতে বর্ণনা করে বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, তাতে তার নাম লিপিবদ্ধ করে, সে এখলাস হতে অনেক দূরে সরে যায়। [ফতহুল বারী, ৫৪৫/১।] আর যে ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে মসজিদ নির্মাণ সে কখনো এ সাওয়াব পাবে না। কারণ, তার কোন ইখলাস নাই। যদি তার ইখলাস অনুযায়ী তাকে কিছু সাওয়াব দেয়া হবে। তার মধ্যে পরিপূর্ণ ইখলাস না থাকায় সে পুরো সাওয়াব পাবে না। আর পরিপূর্ণ ইখলাস তখন সাব্যস্ত হবে যখন সে কোন বিনিময় গ্রহণ করবে না [ফতহুল বারী, ৫৪৫/১।]।
ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী -«بنى الله له مثله في الجنة » এর অর্থ সম্পর্কে আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিসটির বাহ্যিক অর্থ এখানে উদ্দেশ্য নয়। এখানে অর্থ হল, আল্লাহ তা‘আলা তার মসজিদ বানানোর সাওয়াব দ্বারা মহান, সম্মানিত ও উচ্চমানের একটি ঘর বানাবে। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ১৩০/২।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- [ مثله ] এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক: আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি ঘর বানাবে। কিন্তু ঘরটি কত বড় হবে এবং এর সৌন্দর্য যে কত বেশী হবে, সে সম্পর্কে আমাদের কারো অজানা নয়। অর্থাৎ, দুনিয়ার কোন চোখ তা দেখতে পায়নি এবং কোন মানুষের অন্তর তা কখনো চিন্তা করেনি। দ্বিতীয়: এ কথার অর্থ, ঐ ঘরের ফযিলত জান্নাতের অন্যান্য ঘরসমূহের তুলনায় এমন হবে, যেমন দুনিয়াতে অন্যান্য ঘরের উপর মসজিদের ফযিলত অনেক বেশি। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৮/৫।]
হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ কথার সন্তোষজনক উত্তরের মধ্যে আরেকটি হল, এখানে ‘অনুরূপ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল সংখ্যা। অর্থাৎ একটি মসজিদ বানালে তার জন্য একটি ঘর বানানো হবে। আর ঘরটি কেমন হবে, তা হল তার নিয়ত ও ইখলাসের সাথে বিবেচ্য। কারণ, অনেক সময় দেখা যায় একটি ঘর দশটি ঘর হতে এমনকি একশটি ঘর হতেও উত্তম। [ফতহুল বারী, ৫৪৬/১।] ইমাম নববীর মতে এটি হল প্রথম অর্থ। আর সুবিশাল জান্নাতের ঘর আর সংকীর্ণ দুনিয়ার ঘরের মধ্যে নি:সন্দেহে বলা যায় আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকবে। কারণ, জান্নাতের এক বিঘাত জায়গা দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সব হতে উত্তম। [ফতহুল বারী, ৫৪৬/১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن مما يلحق المؤمن من عمله وحسناته بعد موته : علماً علَّمه ونشره،وولداً صالحاً تركه،ومصحفاً ورَّثه،أو مسجداً بناه،أو بيتاً لابن السبيل بناه،أو نهراً أجراه،أو صدقة أخرجها من ماله في صحته وحياته يلحقه من بعد موته»
“একজন মুমিনের মৃত্যুর পর তার নেক আমল ও নেকীসমূহ যা তার সাথে সম্পৃক্ত হবে, তা হল, যে ইলম সে শিক্ষা দিয়েছে এবং প্রসার করছে। আর যে সব নেক সন্তান সে দুনিয়াতে রেখে গেছে এবং কুরআনের মুসহাফ সে রেখে গেছে অথবা কোন মসজিদ নির্মাণ করেছে কিংবা মুসাফিরদের জন্য কোন ঘর বানিয়েছে, অথবা কোন একটি পানির ঝর্ণা প্রবাহিত করেছে বা তার স্বীয় সম্পদ হতে তার সুস্থ থাকা অবস্থায় বা জীবদ্দশায় দান খয়রাত করেছে, যা তার মৃত্যুর পর তার সাথে সম্পৃক্ত হবে। [ইবনে মাযা, পরিচেছদ: যে ব্যক্তি ইলম পৌঁছায়, হাদিস ২৪২, আল্লামা আল-বানী সহীহ তারগীব ও তারহীবে হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।]
﴿ إِنَّمَا يَعۡمُرُ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ ١٨ ﴾ [ التوبة : ١٨ ]
“একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে”। [সূরা আ-তাওবা, আয়াত: ১৮।]
মসজিদসমূহের আবাদ মসজিদ বানানো, পরিষ্কার করা, মসজিদে বিছানা বিছানো ও মসজিদ থেকে নাপাকী দূর করা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্ম দ্বারা হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে মসজিদে সালাত আদায়, সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া, মসজিদে শিক্ষা দেয়া, শিক্ষা নেয়া ইত্যাদির জন্য বার বার মসজিদে গমন করা দ্বারাও মসজিদ আবাদ করা হয়ে থাকে। [দেখুন, আল্লামা রাগেব আল ইস-ফাহানীর কুরআনের শব্দসমূহের সম্ভার পৃ: ৫৮৬, আল্লামা তাবারীর জামেউল বায়ান ১৬৫/১৪; তাফসীরে বগবী ১৭৪/২; তাফসীরে সাদী পৃ: ২৯১।] এ ছাড়াও আরও যত ধরনের ইবাদাত যা কেবলই আল্লাহর জন্য করা হয়ে থাকে সে সবের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা। আর যাবতীয় সব ইবাদাত-বন্দেগী আল্লাহর জন্যই। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [ الجن : ١٨ ]
“আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জ্বিন, আয়াত: ১৮।] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ رِجَالٞ لَّا تُلۡهِيهِمۡ تِجَٰرَةٞ وَلَا بَيۡعٌ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَإِقَامِ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِيتَآءِ ٱلزَّكَوٰةِ يَخَافُونَ يَوۡمٗا تَتَقَلَّبُ فِيهِ ٱلۡقُلُوبُ وَٱلۡأَبۡصَٰرُ ٣٧ لِيَجۡزِيَهُمُ ٱللَّهُ أَحۡسَنَ مَا عَمِلُواْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦۗ وَٱللَّهُ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٣٨ ﴾ [ النور : ٣٦، ٣٨ ]
“সে সব ঘরে, যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম জিকির করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল সন্ধ্যায় তার তাসবীহ পাঠ করে সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর যিকির, সালাত কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা সেদিনকে ভয় করে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। যেন আল্লাহ তাদেরকে প্রদান করেন উত্তম প্রতিদান ঐ আমলের যা তারা করেছে এবং স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক প্রদান করেন।” [সূরা নূর, আয়াত: ৩৬-৩৮।]
আল্লাহ তা‘আলার বাণী- [ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ ] এর অর্থ, আল্লাহ তা‘আলা মসজিদ বানানো, সমুন্নত রাখা, আবাদ করা ও পবিত্র করার নির্দেশ দেন। আবার কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হল, মসজিদের জিম্মাদারি গ্রহণ করা, ময়লা আবর্জনা, যে সব কথা বা কাজ মসজিদে করা উচিত নয় তার থেকে মসজিদকে পবিত্র রাখা। [ইমাম ইবনে কাসীরের তাফসীরুল কুরআন আল আজীম পৃ: ৯৪৩।] ইমাম তাবারী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ ] এ কথার অর্থ হল, আল্লাহ ঘরকে বানানোর নির্দেশ দেন। আবার কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর ঘরকে সম্মান করার নির্দেশ দেন। তিনি আবার প্রথম ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দেন। তিনি বলেন, দুটি ব্যাখ্যার মধ্য হতে উত্তম ব্যাখ্যা আমার নিকট যে কথা মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহু বলেছেন, আয়াতের অর্থ আল্লাহ তা‘আলা মসজিদকে উঁচু করে নির্মাণ করার নির্দেশ দেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে বলেন,
﴿وَإِذۡ يَرۡفَعُ إِبۡرَٰهِۧمُ ٱلۡقَوَاعِدَ مِنَ ٱلۡبَيۡتِ وَإِسۡمَٰعِيلُ ١٢٧ ﴾ [ البقرة : ١٢٧ ]
“আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিতগুলো উঠাচ্ছিল”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২৭।] কারণ, ঘর ও নির্মাণ কাজে সমুন্নত রাখার অর্থ অধিকাংশ সময় এটিই হয়ে থাকে। [আল্লামা তাবারীর জামেয়ুল বায়ান, ১৯০/১৯, দেখুন, তাফসীর আল-বাগাবী। ৩৪৭/৩.] আল্লামা সা‘দী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আল্লাহ তা‘আলার বাণী - فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ – আয়াতটি মসজিদের বিধানসমূহের সামগ্রিক একটি চিত্র। ফলে মসজিদ বানানো, মসজিদ পরিস্কার করা, মসজিদ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, মসজিদকে পাগল ও ছোট বাচ্চা যারা নাপাক থেকে সতর্ক থাকে না, তাদের থেকে হেফাযত করা, কাফের-মুশরিক থেকে রক্ষা করা, মসজিদে খেল-তামাশা করা হতে বিরত থাকা এবং আল্লাহর জিকির ছাড়া বড় আওয়াজ করা হতে বিরত থাকা সবই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত [আল্লামা সা’দী রাহিমাহুল্লাহু এর তাইসীরুর রহমান ফি কালামীল মান্নান, পৃ: ৫১৮]। আমর ইবনে মাইমুন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
] أدركت أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم، وهم يقولون : المساجد بيوت الله، وإنه حق على الله أن يكرم من زاره [.
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের বলতে দেখেছি, তারা বলেন, মসজিদসমূহ আল্লাহর আল্লাহর ঘর। যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহ যিয়ারত করে তার সম্মান করা আল্লাহর জন্য ওয়াজিব। [আল্লামা ইবনে জারির, জামেয়ুল বায়ান, ১৮৯/১৯।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ বানানো বিষয়ে মানুষকে উৎসাহ দেন এবং তাদের নছিহত করেন। যেমন, ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى مسجداً » قال بكير : حسبت أنه قال : « يبتغي به وجه الله » « بنى الله له مثله في الجنة »
“যে ব্যক্তি একটি মসজিদ বানায়”, বুকাইর বলেন, আমার বিশ্বাস তিনি বলেছেন, ‘তার দ্বারা সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশা করে’, আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তার জন্য অনুরূপ একটি ঘর বানাবেন”। মুসলিম শরিফে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى مسجداً لله » قال بكير : حسبت أنه قال : « يبتغي به وجه الله تعالى، بنى الله له بيتاً في الجنة »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ বানায়”, বুকাইর বলেন, আমার বিশ্বাস তিনি বলেছেন, ‘তার দ্বারা সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশা করে’ আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর বানাবেন”। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ, মসজিদ বানানো আলোচনা, হাদিস নং ৪৫০; সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাত, মসজিদসমূহ বানানোর ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা। হাদিস নং ৫৩৩।]
হাদিসটির ব্যাখ্যায় আল্লামা হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- [ من بنى مسجداً ] -তে মসজিদ শব্দটি নাকিরা ব্যবহারের কারণ, ব্যাপক অর্থ বুঝানো। সুতরাং, ছোট মসজিদ ও বড় মসজিদ সবই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى لله مسجداً صغيراً أو كبيراً بنى الله له بيتاً في الجنة »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ বানায় ছোট হোক বা বড় হোক, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”। [তিরমিযি, কিতাবুস সালাত, মসজিদ বানানো ফযিলত সম্পর্কে আলোচনা; হাদিস, ৩১৯। সহীহ তারগীব ও তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১০১/১।] আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من بنى لله مسجداً ولو قدر مفحص قطاة بنى الله له بيتاً في الجنة »
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি ঘর বানায় যদিও সেটি একটি পাখির বাসার [আল্লামা মুনযিরির তারগীব ও তারহীব, ২৬২/১।] সমান হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”। [আল্লামা আলবানী সহীহ তারগীব ও তাহযীবে হাদিসটি বিশুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেন। বাযযার ও তাবরানী সগীরের মধ্যে হাদিসটি বর্ণনা করেন। হাদিসটির বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য। ইবনে হিববান, ৪৯০/৪, হাদিস নং ১৬১০।]
হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, অধিকাংশ আলেমগণ কথাটিকে ‘মুবালাগা’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। কারণ, যে জায়গাটিতে পাখি তার ডিম রাখা ও তাপ দেয়ার জন্য তালাশ করে, তা সালাত আদায় করার জন্য যথেষ্ট নয়। আবার কেউ কেউ বলেন, কথাটি দ্বারা বাহ্যিক অর্থই উদ্দেশ্য; অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি মসজিদের প্রয়োজনে উল্লেখিত পরিমাণ জায়গা মসজিদের জন্য বাড়াল অথবা একটি মসজিদ নির্মাণে একাধিক লোক অংশ গ্রহণ করল এবং প্রতিটি ব্যক্তির অংশ উল্লেখিত পরিমাণ হল, তাহলে সেও এ পুরস্কারের অধিকারী হবেন। এ অর্থ তখন যখন মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য হবে আমরা মসজিদ বলতে যা বুঝি অর্থাৎ যে ঘরকে সালাত আদায় করার জন্য নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আর যদি মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য শাব্দিক অর্থ- কপাল রাখার- জায়গা হয়ে থাকে, তা হলে উল্লেখিত কোন ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নাই। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী দ্বারা বুঝা যায়, বাস্তব মসজিদ। কারণ, উম্মে হাবীবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি ঘর বানায়- এ কথারই সমর্থন করে। আল্লামা সামাওয়াইহি রাহিমাহুল্লাহু তার ফাওয়ায়েদ কিতাবে হাসান সনদে এ হাদিসটি উল্লেখ করেন। তবে অন্য কেউ একে রূপক অর্থে ব্যবহার করাতে কোন অসুবিধা নাই। কারণ, প্রতিটি বস্তুর নির্মাণ তার হিসাব অনুযায়ী হয়ে থাকে। আমরা আমাদের সফরের পথে অনেক ছোট ছোট মসজিদ দেখেছি। অনেক মসজিদ এমন আছে যেগুলোতে সেজদার জায়গা ছাড়া আর কোন জায়গাই নাই। ইমাম বাইহাকী রাহিমাহুল্লাহু শুয়াবুল ঈমানে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অনুরূপ একটি হাদিস বর্ণনা করেন। তাতে তিনি এ কথাটি বৃদ্ধি করেন, ‘আমি বললাম রাস্তায় যে সব মসজিদগুলো দেখা যায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ইমাম তাবরানী রাহিমাহুল্লাহু আবু করসাফা হতে অনুরূপ একটি হাদিস বর্ণনা করেন। উভয় হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ।” [ফাতহুল বারী শারহে সহীহ আল-বুখারি ৫৪৫/১]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী -«من بنى مسجداً لله » এর অর্থ, মসজিদ বানানোর উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করা। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ১৩০/২।] আল্লামা ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু আল্লামা ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহু হতে বর্ণনা করে বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, তাতে তার নাম লিপিবদ্ধ করে, সে এখলাস হতে অনেক দূরে সরে যায়। [ফতহুল বারী, ৫৪৫/১।] আর যে ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে মসজিদ নির্মাণ সে কখনো এ সাওয়াব পাবে না। কারণ, তার কোন ইখলাস নাই। যদি তার ইখলাস অনুযায়ী তাকে কিছু সাওয়াব দেয়া হবে। তার মধ্যে পরিপূর্ণ ইখলাস না থাকায় সে পুরো সাওয়াব পাবে না। আর পরিপূর্ণ ইখলাস তখন সাব্যস্ত হবে যখন সে কোন বিনিময় গ্রহণ করবে না [ফতহুল বারী, ৫৪৫/১।]।
ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী -«بنى الله له مثله في الجنة » এর অর্থ সম্পর্কে আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিসটির বাহ্যিক অর্থ এখানে উদ্দেশ্য নয়। এখানে অর্থ হল, আল্লাহ তা‘আলা তার মসজিদ বানানোর সাওয়াব দ্বারা মহান, সম্মানিত ও উচ্চমানের একটি ঘর বানাবে। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ১৩০/২।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী- [ مثله ] এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক: আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একটি ঘর বানাবে। কিন্তু ঘরটি কত বড় হবে এবং এর সৌন্দর্য যে কত বেশী হবে, সে সম্পর্কে আমাদের কারো অজানা নয়। অর্থাৎ, দুনিয়ার কোন চোখ তা দেখতে পায়নি এবং কোন মানুষের অন্তর তা কখনো চিন্তা করেনি। দ্বিতীয়: এ কথার অর্থ, ঐ ঘরের ফযিলত জান্নাতের অন্যান্য ঘরসমূহের তুলনায় এমন হবে, যেমন দুনিয়াতে অন্যান্য ঘরের উপর মসজিদের ফযিলত অনেক বেশি। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৮/৫।]
হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ কথার সন্তোষজনক উত্তরের মধ্যে আরেকটি হল, এখানে ‘অনুরূপ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল সংখ্যা। অর্থাৎ একটি মসজিদ বানালে তার জন্য একটি ঘর বানানো হবে। আর ঘরটি কেমন হবে, তা হল তার নিয়ত ও ইখলাসের সাথে বিবেচ্য। কারণ, অনেক সময় দেখা যায় একটি ঘর দশটি ঘর হতে এমনকি একশটি ঘর হতেও উত্তম। [ফতহুল বারী, ৫৪৬/১।] ইমাম নববীর মতে এটি হল প্রথম অর্থ। আর সুবিশাল জান্নাতের ঘর আর সংকীর্ণ দুনিয়ার ঘরের মধ্যে নি:সন্দেহে বলা যায় আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকবে। কারণ, জান্নাতের এক বিঘাত জায়গা দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সব হতে উত্তম। [ফতহুল বারী, ৫৪৬/১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن مما يلحق المؤمن من عمله وحسناته بعد موته : علماً علَّمه ونشره،وولداً صالحاً تركه،ومصحفاً ورَّثه،أو مسجداً بناه،أو بيتاً لابن السبيل بناه،أو نهراً أجراه،أو صدقة أخرجها من ماله في صحته وحياته يلحقه من بعد موته»
“একজন মুমিনের মৃত্যুর পর তার নেক আমল ও নেকীসমূহ যা তার সাথে সম্পৃক্ত হবে, তা হল, যে ইলম সে শিক্ষা দিয়েছে এবং প্রসার করছে। আর যে সব নেক সন্তান সে দুনিয়াতে রেখে গেছে এবং কুরআনের মুসহাফ সে রেখে গেছে অথবা কোন মসজিদ নির্মাণ করেছে কিংবা মুসাফিরদের জন্য কোন ঘর বানিয়েছে, অথবা কোন একটি পানির ঝর্ণা প্রবাহিত করেছে বা তার স্বীয় সম্পদ হতে তার সুস্থ থাকা অবস্থায় বা জীবদ্দশায় দান খয়রাত করেছে, যা তার মৃত্যুর পর তার সাথে সম্পৃক্ত হবে। [ইবনে মাযা, পরিচেছদ: যে ব্যক্তি ইলম পৌঁছায়, হাদিস ২৪২, আল্লামা আল-বানী সহীহ তারগীব ও তারহীবে হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।]
জামা‘আতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা, আল্লাহর মহান ইবাদাত। হাদিসে এর অনেক ফযিলত বর্ণিত আছে। যেমন-
এক- যারা মসজিদকে অধিক ভালোবাসে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়ায় অবস্থান করবে, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। প্রমাণ: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سبعة يظلّهم الله تعالى في ظلّه يوم لا ظلَّ إلا ظلّه : الإمام العادل، وشاب نشأ في عباده الله، ورجل قلبه مُعلّق في المساجد، ورجلان تحابّا في الله اجتمعا عليه وتفرّقا عليه، ورجل دعته امرأة ذات منصب وجمال فقال : إني أخاف الله، ورجل تصدق بصدقة فأخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه، ورجل ذكر الله خالياً ففاضت عيناه»
“সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন যেদিন তারা ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। এক- ন্যায় পরায়ণ বাদশা, দুই- ঐ যুবক, যে তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদাতে ক্ষয় করল, তিন- ঐ লোক যার অন্তর আল্লাহর ঘর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত, চার- দুই লোক যারা উভয়ে পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসতো এবং তারই ভিত্তিতে একত্র হত এবং তারই ভিত্তিতে পৃথক হত। পাঁচ- ঐ ব্যক্তি যাকে কোন রূপসী ও সম্ভ্রান্ত নারী তার সাথে অপকর্মের প্রতি ডাকলে, সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। ছয়-ঐ ব্যক্তি যে এত গোপনে দান করল, তার বাম হাত জানে না, ডান হাত কি দান করল। সাত- ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করল এবং তার চক্ষুদ্বয় আল্লাহর ভয়ে কাঁদল”। মুসলিম এর বর্ণিত শব্দাবলী - «ورجل مُعلّق بالمسجد إذا خرج منه حتى يعود إليه » . “ঐ লোক যে মসজিদ থেকে বের হলে তার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে যতক্ষণ না সে মসজিদে ফিরে না আসে”। [বুখারি ও মুসলিম, সহীহ বুখারি, আযান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস, ৬৬০; কিতাবুয যাকাত, ডান হাতে দান করার ফযিলত, হাদীস ১৪২৩; সহীহ মুসলিম, যাকাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ গোপনে সদাকা প্রদানের ফযিলত, হাদিস: ১০৩১।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু «ورجل قلبه معلّق في المساجد» এ কথাটির ব্যাখ্যায় বলেন, “অর্থাৎ, অন্তরে মসজিদের প্রতি কঠিন ভালোবাসা বিদ্যমান থাকা এবং মসজিদে জামাআতের সাথে সালাত আদায়ের পাবন্দী করা। তবে এ কথার অর্থ সারাক্ষণ মসজিদে বসে থাকা নয়। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা, হাদিস নং, ১২৬/৭।] হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু «معلّق في المساجد» বাক্যটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেন, বুখারি ও মুসলিমে হাদিসটি এভাবেই বর্ণিত। বাক্যটির বাহ্যিক রূপ দ্বারা বুঝা যায়, শব্দটি আরবী ‘তালীক’ শব্দ থেকে গৃহীত। তিনি মানুষের অন্তরকে মসজিদে ঝুলানো কোন বস্তুর সাথে তুলনা করেন। যেমন- কিনদিল। এ কথা দ্বারা বুঝানো হল - দীর্ঘ সময় অন্তর মসজিদের সাথে থাকা, যদিও তার দেহ মসজিদের বাইরে থাকে। আল্লামা জাওযীর বর্ণনা এ কথার প্রমাণ, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «كأنما قلبه معلّق في المسجد » আর শব্দটি আরবী ‘আলাকা’ শব্দ হতেও নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, কঠিন মহব্বত-ভালোবাসা। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহু এর বর্ণনা তার প্রমাণ, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «معلّق بالمساجد» মসজিদসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। [ফতহুল বারী, ১৪৫।]
দুই- মসজিদে গমন করা দ্বারা মর্তবা বৃদ্ধি পায়, গুনাহসমূহ দূরীভূত হয় এবং প্রতি কদমে নেকী লেখা হয়। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« وما من رجل يتطهر فيحسن الطهور ثم يعمد إلى مسجد من هذه المساجد إلا كتب الله له بكل خطوة يخطوها حسنة،ويرفعه بها درجة،ويحطّ عنه بها سيئة ...»
“যখন কোন ব্যক্তি সুন্দর করে পবিত্রতা অর্জন করে তারপর এ সব মসজিদসমূহ হতে কোন মসজিদে গমনের ইচ্ছা পোষণ করে, লোকটি যত কদম হাঁটবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি কদমে নেকী লিপিবদ্ধ করবে এবং তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করবে এবং তার গুনাহসমূহ দূর করবে”...। [মুসলিম, ৬৫৪।] আবু হরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত মারফু‘ হাদীসে আরো বলা হয়,
«.. وذلك أن أحدكم إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة، لم يخطُ خطوة إلا رُفِعَ له بها درجة، وحُطّ عنه بها خطيئة ...»
“যখন তোমাদের কেউ সুন্দরভাবে ওজু করে, তারপর সে মসজিদের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করতে বের হয়, তার প্রতিটি কদমে নেকী লেখা হয় এবং গুনাহ ক্ষমা করা হয়”। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, হাদিস নং, ৬৪৭। মুসলিম হাদিস নং ৬৪৯।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من تطهّر في بيته ثم مشى إلى بيت من بيوت الله، ليقضي فريضة من فرائض الله كانت خطواته : إحداهما تحطّ خطيئة، والأخرى ترفع درجة »
যে ব্যক্তি স্বীয় ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর সে আল্লাহর ঘরসমূহ হতে কোন ঘরের উদ্দেশে রওয়ানা করল, যাতে আল্লাহর ফরযসমূহ হতে কোন ফরযকে আদায় করে, তখন তার প্রতিটি কদমসমূহ একটির কারণে তার গুনাহসমূহ মাপ হবে এবং অপরটির কারণে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৬৬।]
ইমাম কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “আল্লামা দাউদী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি তার গুনাহ থাকে, তাহলে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। আর যদি গুনাহ না থাকে, তাহলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। আমি বললাম, এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, প্রতি কদমে যা লাভ করা হয়, তা একই। হয়ত মর্যাদা বৃদ্ধি, আর না হয় গুনাহসমূহের ক্ষমা। অপর একজন বলেন, না, বরং প্রতিটি কদমে তিনটি জিনিষ লাভ হয়, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর এক হাদিসে বর্ণনা করে বলেন,
«كتب الله له بكل خطوة حسنة، ويرفعه بها درجة، ويحطّ عنه بها سيئة »
“আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রতিটি কদমে একটি করে নেকী, একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহই ভালো জানেন”। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]
আমি আমার শাইখ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “প্রতিটি কদমে মর্তবা বৃদ্ধি পাবে, প্রতিটি কদমে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা হয় এবং নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়। শেষের বর্ধিত অংশটি- ‘নেকী লেখা হয়’ কথাটি মুসলিম শরিফে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ হতে বর্ণিত। যখন একটি বর্ণনা বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়, যাতে বলা হয়, মর্তবা বৃদ্ধি করা হবে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে, তখন প্রথমতঃ এ বর্ণনাটি অনুযায়ী সে ফযিলত প্রাপ্ত হয়, তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরও ফযিলত দান করেন, অতিরিক্তটির মাধ্যমে। সুতরাং প্রতিটি কদমে তিনটি ফযিলত লাভ হয়, এক- মর্যাদা বৃদ্ধি, দুই-গুনাহ মাপ, তিন-নেকী লিপিবদ্ধ করা। [আমি সহীহ বুখারি হাদিস নং ২১১৯ এর তাকরীর করার মাঝে তার থেকে শুনেছি।]
তিন- মসজিদে সালাত আদায় করার জন্য ঘর থেকে বের হলে যেমন নেকী লেখা হয় অনুরূপভাবে যখন বাড়ি ফিরে তখনও তার জন্য নেকী লেখা হয়, যখন সে সাওয়াবের আশা করে। প্রমাণ, উবাই বিন কায়াব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ। মসজিদসমূহের দিকে অধিক গমনের ফযিলত। হাদিস নং ৬৬৩।] তিনি বলেন
كان رجل لا أعلم رجلاً أبعد من المسجد منه، لا تخطئه صلاة، قال : فقيل له أو قلت له : لو اشتريت حماراً تركبه في الظلماء، وفي الرمضاء؟ قال : ما يسرني أن منزلي إلى جنب المسجد، إني أريد أن يكتب لي ممشاي إلى المسجد ورجوعي إذا رجعت إلى أهلي، فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « قد جمع الله لك ذلك كله » وفي لفظ : « إن لك ما احتسبت »
“একজন লোক ছিল মসজিদ থেকে এত বেশি দূরে অবস্থান করতেন যে, আর কেউ তার চেয়েও দূরে অবস্থান করতেন বলে আমার জানা ছিল না। তার কোন সালাত মিস হত না। তাকে বলা হল বা আমি বললাম, যদি তুমি একটি গাধা ক্রয় করতে যা দ্বারা তুমি অন্ধকারে অথবা প্রচণ্ড গরমে সাওয়ার হয়ে মসজিদে আসা যাওয়া করতে পারতে? লোকটি বলল, আমার বাড়িটি মসজিদের পাশে হওয়াতে আমি বিন্দু পরিমাণও খুশি নয়। আমি চাই মসজিদের দিকে আমার হাঁটা এবং মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়াতে আমার জন্য যেন নেকী লেখা হয়। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য এগুলো সবই লিপিবদ্ধ করবে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, তোমার জন্য তাই থাকবে যা তুমি আশা করবে”।
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যেমনি ভাবে মসজিদে গমন করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে অনুরূপভাবে মসজিদ থেকে ফিরার পথেও সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যাবে। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৫৫/৩।]
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
(( إن أعظم الناس أجراً في الصلاة أبعدهم إليها ممشى، فأبعدهم، والذي ينتظر الصلاة حتى يصليها مع الإمام أعظم أجراً من الذي يصليها ثم ينام ))
“নিশ্চয়ই সালাতে মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি বেশী সাওয়াব পাবে যে মসজিদ থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করছে, তারপর যে তার থেকে কম দূরে। আর যে সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে যাতে ইমামের সাথে সে সালাত আদায় করতে পারে সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে যে সালাত পড়ে ঘুমিয়ে যায়।” [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬৫১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬২।]
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خلت البقاع حول المسجد، فأراد بنو سلمة أن ينتقلوا إلى قرب المسجد، فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم، فقال لهم : « إنه بلغني أنكم تريدون أن تنتقلوا قرب المسجد » قالوا : نعم، يا رسول الله، قد أردنا، فقال : « يا بني سلمة، ديارَكم تُكتب آثاركم، ديارَكم تُكتب آثاركم »
“মসজিদের পাশে কিছু জমি খালি ছিল, তা দেখে বনু সালমা মসজিদের নিকটে ঘর বানানোর ইচ্ছা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বিষয়টি পৌছলে, তিনি তাদের বলেন, হে বনু সালমা! আমার নিকট খবর পৌঁছেছে, তোমরা মসজিদের কাছাকাছি স্থানান্তর হওয়ার ইচ্ছা করছ? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এ রকম ইচ্ছা করছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের ঘরে থাক, তোমাদের প্রতিটি কদমে তোমাদের জন্য নেকী লেখা হবে, তোমরা তোমাদের ঘরে থাক, তোমাদের প্রতিটি কদমে তোমাদের জন্য নেকী লেখা হবে। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুল আযান, হাদিস নং ৬৫৬; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, মসজিদসমূহের দিকে অধিক গমনের ফযিলত, হাদিস নং ৫৬৬।]
চার: মসজিদের দিক পায়ে হাঁটার দ্বারা গুনাহগুলো মুছে দেয়া হয়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ألا أدلّكم على ما يمحو الله به الخطايا، ويرفع به الدرجات » ؟ قالوا : بلى يا رسول الله، قال : « إسباغ الوضوء على المكاره، وكثرة الخُطا إلى المساجد، وانتظار الصلاة بعد الصلاة، فذلكم الرباط، فذلكم الرباط »
“আমি কি তোমাদের এমন বস্তুর প্রতি পথ দেখাবো? যদ্বারা তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেয়া হবে এবং তোমাদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করা হবে। তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণ ওজু করা, মসজিদের দিক বেশি বেশি গমন করা, একটি সালাতের পর আরেকটি সালাতের অপেক্ষা করা। এটিই হল, আল্লাহর রাহে অবস্থান, এটিই হল, আল্লাহর রাহে অবস্থান”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫১, সালাতের ফযিলত অনুচ্ছেদে হাদিসটির তাখরিজ অতিবাহিত হয়েছে।]
গুনাহ মুছে দেয়া দ্বারা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়ার প্রতি ইশারা করা হল। অথবা এর অর্থ হল, ফেরেশতাদের কিতাব থেকে গুনাহসমূহকে মুছে দেয়া হল। আর এটি গুনাহগুলো ক্ষমা করার দলিল। মর্যাদা বৃদ্ধি করার অর্থ হল, জান্নাতের সম্মানিত স্থান। আর إسباغ الوضوء শব্দের অর্থ, ওজুকে পরিপূর্ণ করা। আর মাকারেহ অর্থ, কঠিন ঠাণ্ডা, দৈহিক কষ্ট ইত্যাদি। আর كثرة الخطا কখনো বাড়ি দূরে হওয়ার কারণে হয়ে থাকে অথবা বার বার মসজিদের যাতায়াতের কারণে হয়ে থাকে। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা; 143/3।]
পাঁচ- পরিপূর্ণ ওজু করার পর মসজিদের দিক রওয়ানা হওয়া দ্বারা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। ওসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : « من توضأ للصلاة فأسبغ الوضوء ثم مشى إلى الصلاة المكتوبة فصلاها مع الناس، أو مع الجماعة، أو في المسجد غفر الله له ذنوبه »
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের ওজু করে এবং ওজুকে পরিপূর্ণ করে, তারপর ফরয সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে গমন করে এবং মানুষের সাথে বা জামা‘আতে বা মসজিদে সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন”। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, পরিচ্ছেদ: ওজু ও সালাতের ফযিলত, হাদিস নং ২৩২।]
ছয়: জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলা মেহমানদারি প্রস্তুত করেন তার জন্য যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত করে। যতবার সে সকালে মসজিদে গমন করবে অথবা যতবার সে বিকালে মসজিদ থেকে ফিরে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من غدا إلى المسجد أو راح أعدّ الله له في الجنة نُزُلاً كلما غدا أو راح »
“যে ব্যক্তি সকালে মসজিদে যায়, অথবা বিকালে মসজিদ থেকে ফিরে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যতবার সে যাতায়াত করে ততবার তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারি প্রস্তুত করে”। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুল আযান হাদিস নং ৬৬২; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ হাদিন নং ৬৬৯]
আর [ غدا ] শব্দের মূল অর্থ হল, সকালে বের হওয়া অর্থাৎ, প্রথম সময়ে আগমন করা। আর راح শব্দের অর্থ, বিকালে ফিরে যাওয়া। তারপর সাধারণত শব্দদ্বয় ব্যাপক অর্থে অর্থাৎ, যাতায়াত করার অর্থে ব্যবহার হয়। আর [ أعدّ ] অর্থ, তৈরি করা, আর [ النُّزُل ] শব্দের অর্থ, বাড়িতে মেহমান আসলে তার সম্মানে যা তৈরি করা হয় তাকে নুযূল বলে। আর এটি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা উভয় সময়ে হয়ে থাকে [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে, ২৯৪/২। সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৭৬/৫।]। এটি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ আল্লাহ যাকে চায়, তাকে দান করেন। আর যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত করে, তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারি তৈরি করা হয়। মসজিদে যাওয়ার কারণে এবং মসজিদ থেকে ফেরার কারণে।
সাত: যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করল, কিন্তু সে জামা‘আত পেল না, তার মসজিদে পৌঁছার পূর্বেই জামা‘আত শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তার জন্য সে পরিমাণ সাওয়াব মিলবে, যে পরিমাণ সাওয়াব যে সালাতে উপস্থিত হলে পেত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من توضأ فأحسن الوضوء، ثم راح فوجد الناس قد صلوا أعطاه الله تعالى مثل أجر من صلاها وحضرها لا ينقص ذلك من أجرهم شيئاً »
“যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওজু করল, তারপর সে মসজিদে গমন করল এবং দেখতে পেল, লোকেরা সালাত আদায় করে ফেলছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সে পরিমাণ সাওয়াব দান করবে, যে পরিমাণ সাওয়াব যে ব্যক্তি সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে পাবে। তবে তাদের সাওয়াব থেকে কোন কিছুই কমানো হবে না”। [আবু দাউদ কিতাবুস সালাত হাদিস নং ৫৬৪ বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১১৩/২] আট- যে ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হল, তাহলে সে ঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত সালাতের মধ্যেই থাকবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا توضأ أحدكم في بيته ثم أتى المسجد كان في صلاة حتى يرجع، فلا يقل : هكذا» وشبك بين أصابعه .
“যখন কোন ব্যক্তি তার নিজ গৃহে ওজু করে, তারপর সে মসজিদে গমন করে, ঘরে ফেরার আগপর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে। সে যেন এভাবে না বলে”। আর তিনি আঙ্গুলগুলো একটিকে অপরটির মধ্যে প্রবেশ করান”। [ইবনু খুজাইমা, ২২৯/১, হাকেম ২০৬/১, সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১১৮/১।]
নয়: মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে পবিত্র অবস্থায় যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হয়, তার সাওয়াব একজন মুহরিম হাজীর সাওয়াবের সমান। আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من خرج من بيته متطهراً إلى صلاة مكتوبة فأجره كأجر الحاجّ المحرم»
“যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে ফরয সালাতের উদ্দেশ্যে পবিত্রতা অর্জন করে বের হয়, তার সাওয়াব একজন মুহরিম হাজীর সাওয়াবের সমান”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত হাদিস নং ৫৫৮; সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন। ১১১/২; সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১২৭/১।]
দশ- মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশে বের হওয়া ব্যক্তির জিম্মাদারি আল্লাহর হাতে। আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثلاثة كلهم ضامن على الله تعالى : رجل خرج غازياً في سبيل الله تعالى فهو ضامن على الله حتى يتوفاه فيدخله الجنة أو يردّه بما نال من أجر وغنيمة، ورجل راح إلى المسجد فهو ضامن على الله حتى يتوفاه فيدخله الجنة أو يردّه بما نال من أجر وغنيمة، ورجل دخل بيته بسلام فهو ضامن على الله تعالى»
”তিন ব্যক্তি এমন আছে, তাদের সবার জিম্মাদারি আল্লাহর উপর। এক- যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছে, সে আল্লাহর জিম্মায়; যদি মারা যায় আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, অন্যথায় তাকে তার সাওয়াব ও গণিমতসহ- যা লাভ করেছে- তা নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফেরাবেন। আরেক ব্যক্তি যে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, সেও আল্লাহর জিম্মায়, যদি মারা যায় আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, অন্যথায় তাকে তার সাওয়াব ও গণিমত- যা লাভ করেছে- তা নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফেরাবেন। আর যে ব্যক্তি তার নিজ গৃহে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে সেও আল্লাহর জিম্মাদারিতে থাকবে”। [সূনানে আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, পরিচ্ছেদ: সমূদ্রে জিহাদ করার ফযিলত হাদিস নং ২৪৯৪, সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন, ৪৭৩/২।]
এটি আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, আল্লাহ তা‘আলা এ শ্রেণীর প্রতিটি লোককে তার নিজের জিম্মাদারিতে নিয়ে নেন। ফলে তাদের তিনি সর্ব উত্তম বিনিময় দান করেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী - «ورجل دخل بيته بسلام » টির দুটি অর্থ হতে পারে।
এক- যখন ঘরে প্রবেশ করবে সালাম দেবে। দুই- লোকটি তার ঘরে প্রবেশ করা দ্বারা নিরাপত্তা কামনা করে। অর্থাৎ, শান্তির অনুসন্ধানে সে তার ঘরকেই অবলম্বন করে, যাতে ফিতনা হতে নিরাপদে থাকতে পারে। তখন হাদিসটি দ্বারা নির্জনতা ও একাকীত্বের প্রতি উৎসাহ এবং মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। আর এটি তখন বিবেচ্য যখন সমাজে ফিতনা দেখা দেয় এবং একজন মুসলিম তার দ্বীনের হেফাজতের ব্যাপারে আশঙ্কা করে। আর যখন এ ধরনের কোন পরিস্থিতি না থাকে, তখন যে মুমিন মানুষের সাথে মিশে, তাদের নির্যাতনের উপর ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে, সে মুমিনকে আল্লাহ তাদের তুলনায় অধিক সাওয়াব দান করবে যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের নির্যাতন সহ্য করে না।
এগার- জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমনকারীদের বিষয়ে ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা প্রতিযোগিতা করে। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে স্বপ্নে বলেন,
«.. يا محمد هل تدري فيمَ يختصم الملأ الأعلى؟ قلت : نعم، في الكفارات : المكث في المسجد بعد الصلاة، والمشي على الأقدام إلى الجماعات، وإسباغ الوضوء على المكاره، ومن فعل ذلك عاش بخير، ومات بخير، وكان من خطيئته كيوم ولدته أمه ...».
“হে মুহাম্মদ! তুমি কি জান ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা [অর্থাৎ, নিকট বর্তী ফেরেশতারা। ‘আল-মালাউ’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঐ সকল সম্মানিত ফেরেশতা যারা আল্লাহর মাহত্ম্য ও মর্যাদা দিয়ে তাদের নিজেদের অন্তর ও মাজলিসকে ভরপুর রাখে। আর তাদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অনেক উর্ধে হওয়ার কারণে তাদের নাম রাখা হয়েছে, ‘আল-আ’লা’ বলে। দেখুন: আল্লামা মুবারক পুরির তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৯।] কি নিয়ে বিতর্ক করে? [অর্থাৎ, তারা তর্ক করে, আর তাদের তর্ক করার অর্থ হল, এ সব আমলসমূহকে প্রমাণ করা ও আসমানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের প্রতিযোগিতা করা। অথবা আমলসমূহের ফযিলত ও সম্মান সম্পর্কে তাদের কথা বলাবলি করা। অথবা মানুষের জন্য এ সব ফযিলত খাস হওয়া এবং তাদের এসব আমলের কারণে, ফেরেশতাদের চেয়েও অধিক মর্যাদা লাভ করার কারণে মানুষ এ সব আমলের সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে আগ্রহী হওয়া। আর এটিকে ঝগড়া বলার কারণ- প্রশ্ন উত্তরের আলোকে বিষয় আবির্ভূত হয়েছে তাই। আর এটি মুনাজারা ও মুখাসামার সাথে সাদৃশ্য রাখে। আল্লামা ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এখানে ইখতেসাম দ্বারা সে এখতেসাম উদ্দেশ্য নয় যেটি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও জানার জন্য দেখুন; জামে তিরমিযির ব্যাখ্যা সম্বলিত কিতাব তুহফাতুল আহওয়াযি পৃ: ১০৯,১৩৯/৯।] আমি বললাম হ্যাঁ, গুনাহ মাপের বিষয়সমূহ নিয়ে তারা প্রতিযোগিতা করে। অর্থাৎ, সালাত আদায়ের পর মসজিদে অবস্থান করা, জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া, কষ্ট সত্ত্বেও ওজুকে পরিপূর্ণ করা। যে ব্যক্তি এ কাজগুলো করবে, সে ভালোভাবে জীবন যাপন করবে এবং ভালোভাবে মৃত্যু বরণ করবে। আর সে তার গুনাহ হতে এমন পবিত্র হবে যেন তার মা তাকে আজই প্রসব করছে”। [সূনান আত-তিরমিযি, কিতাবুত তাফসীর, হাদিস নং ৩২৩৩ ও ৩২৩৪, ইমাম তিরিমিযির নিকট মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস দ্বারা হাদিসটির শাহেদ বিদ্যমান, হাদিস নং ৩২৩৫। আর আল্লামা আলবানী হাদিস দুটিকে সহীহ সূনান আত-তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯৯-৯৮/৩।]
বার- মসজিদে জামাআতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে গমন করা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের কারণ। কারণ, উল্লেখিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন « فمن فعل ذلك عاش بخير ومات بخير » যে ব্যক্তি এ সব করবে, সে ভালোভাবে জীবন যাপন করবে এবং ভালোভাবে মারা যাবে। [দেখুন: তুহফাতুল আহওয়াযি জামে তিরমিযির ব্যাখ্যা, ১০৪/৯] এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [ النحل : ٩٧ ]
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭।]
তের- মসজিদসমূহের দিক যাতায়াত করা গুনাহসমূহ মাফের কারণ। কেননা উল্লেখিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « وكان من خطيئته كيوم ولدته أمه » “সে সেদিনের মত নিষ্পাপ হবে যেদিন তার মাতা তাকে প্রসব করেন”।
চৌদ্দ- আল্লাহ তা‘আলা মসজিদ যিয়ারতকারীদের সম্মান করেন। প্রমাণ- সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من توضأ في بيته ثم أتى المسجد فهو زائر لله، وحقٌّ على المزُور أن يكرم الزائر »
“যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহে ওজু করে তারপর মসজিদে আগমন করে, সে অবশ্যই একজন আল্লাহর যিয়ারতকারী। যার যিয়ারত করা হল তার উপর ওয়াজিব হল, যিয়ারতকারীর সম্মান করা”। [তাবরানী মুজামে কবীরে ২৫৩/৬, ৬১৩৯, ৬১৪৫ আল্লামা হাইসামী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, তাবরানী হাদিসটি আল-কাবীরে বর্ণনা করেন, তার একটি সনদ বিশুদ্ধ এবং বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ বর্ণনাকারী; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৩১৯/১৩, হাদিস নং ১৬৪৬৫।]
আমর বিন মাইমুন রাহিমাহুল্লাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أدركت أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم وهم يقولون : (( المساجد بيوت الله وإنه حقّ على الله أن يُكرم من زاره )) ، وفي لفظ عن عمرو بن ميمون عن عمر رضى الله عنه قال : (( المساجد بيوت الله في الأرض وحقّ على المزور أن يكرم زائره )).
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের বলতে দেখেছি, তারা বলেন, মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর, আল্লাহর উপর ওয়াজিব হল, যারা তার ঘরকে যিয়ারত করতে আসে তাদের সম্মান করা। [আল্লামা ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু স্বীয় সনদে জামেয়ুল বায়ানে উল্লেখ করেন, ১৮৯/১৯।] অপর এক শব্দে আমর বিন মাইমুন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জমিনে মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর। যারা যিয়ারত করতে আসবে তাদের সম্মান করা যাকে যিয়ারত করবে তার উপর ওয়াজিব”। [মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা ৩১৮/১৩, হাদিস নং ১৬৪৬৩।]
পনের- আল্লাহ তা‘আলা যে বান্দা ওজু অবস্থায় মসজিদে গমন করে তার প্রতি খুশি হন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا يتوضأ أحد فيُحسن وضوءه ويُسبغه ثم يأتي المسجد لا يريد إلا الصلاة فيه، إلا تبشبش الله إليه كما يتبشبش أهل الغائب بطلعته »
“যখন কোন বান্দা ভালোভাবে ওজু করে এবং ওজুকে পরিপূর্ণ করে, তারপর সে কেবল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি এমন খুশি হয়, যেমন একজন মানুষ হারানো লোককে খুঁজে পেলে খুশি হয়”। [ইবনু আবি খুজাইমা, কিতাবুল ইমামা সালাত অধ্যায়ে, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বান্দা ওজু করে মসজিদের দিক যাওয়াতে আল্লাহর খুশি হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস ১৪৯১। এবং সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১২৩/১। হাদিস নং ৩০১।] ইমাম ইবনে খুজাইমা এ হাদিসের উপর একটি পরিচ্ছেদ স্থাপন করেন। তিনি বলেন, “পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তার স্বীয় বান্দার প্রতি খুশি হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা, যখন সে ওজু করে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে”। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, ৩৭৪/২।] আল্লাহর সমস্ত গুণাবলী সাব্যস্ত হয়ে থাকে তার শান অনুযায়ী।
ষোল- যে ব্যক্তি অন্ধকারের মধ্যে মসজিদে গমন করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নুরের সু-সংবাদ। বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« بشّر المشائين في الظلم إلى المساجد بالنور التّامّ يوم القيامة »
“অন্ধকারের মধ্যে মসজিদে গমনকারীদের তোমরা কিয়ামতের পরিপূর্ণ নূরের সু-সংবাদ দাও”। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৬১, তিরমিযি, হাদিস নং ২২৩, সালাতের ফযিলত অংশে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।]
এক- যারা মসজিদকে অধিক ভালোবাসে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়ায় অবস্থান করবে, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। প্রমাণ: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سبعة يظلّهم الله تعالى في ظلّه يوم لا ظلَّ إلا ظلّه : الإمام العادل، وشاب نشأ في عباده الله، ورجل قلبه مُعلّق في المساجد، ورجلان تحابّا في الله اجتمعا عليه وتفرّقا عليه، ورجل دعته امرأة ذات منصب وجمال فقال : إني أخاف الله، ورجل تصدق بصدقة فأخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه، ورجل ذكر الله خالياً ففاضت عيناه»
“সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন যেদিন তারা ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। এক- ন্যায় পরায়ণ বাদশা, দুই- ঐ যুবক, যে তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদাতে ক্ষয় করল, তিন- ঐ লোক যার অন্তর আল্লাহর ঘর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত, চার- দুই লোক যারা উভয়ে পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসতো এবং তারই ভিত্তিতে একত্র হত এবং তারই ভিত্তিতে পৃথক হত। পাঁচ- ঐ ব্যক্তি যাকে কোন রূপসী ও সম্ভ্রান্ত নারী তার সাথে অপকর্মের প্রতি ডাকলে, সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। ছয়-ঐ ব্যক্তি যে এত গোপনে দান করল, তার বাম হাত জানে না, ডান হাত কি দান করল। সাত- ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করল এবং তার চক্ষুদ্বয় আল্লাহর ভয়ে কাঁদল”। মুসলিম এর বর্ণিত শব্দাবলী - «ورجل مُعلّق بالمسجد إذا خرج منه حتى يعود إليه » . “ঐ লোক যে মসজিদ থেকে বের হলে তার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে যতক্ষণ না সে মসজিদে ফিরে না আসে”। [বুখারি ও মুসলিম, সহীহ বুখারি, আযান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস, ৬৬০; কিতাবুয যাকাত, ডান হাতে দান করার ফযিলত, হাদীস ১৪২৩; সহীহ মুসলিম, যাকাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ গোপনে সদাকা প্রদানের ফযিলত, হাদিস: ১০৩১।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু «ورجل قلبه معلّق في المساجد» এ কথাটির ব্যাখ্যায় বলেন, “অর্থাৎ, অন্তরে মসজিদের প্রতি কঠিন ভালোবাসা বিদ্যমান থাকা এবং মসজিদে জামাআতের সাথে সালাত আদায়ের পাবন্দী করা। তবে এ কথার অর্থ সারাক্ষণ মসজিদে বসে থাকা নয়। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা, হাদিস নং, ১২৬/৭।] হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু «معلّق في المساجد» বাক্যটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেন, বুখারি ও মুসলিমে হাদিসটি এভাবেই বর্ণিত। বাক্যটির বাহ্যিক রূপ দ্বারা বুঝা যায়, শব্দটি আরবী ‘তালীক’ শব্দ থেকে গৃহীত। তিনি মানুষের অন্তরকে মসজিদে ঝুলানো কোন বস্তুর সাথে তুলনা করেন। যেমন- কিনদিল। এ কথা দ্বারা বুঝানো হল - দীর্ঘ সময় অন্তর মসজিদের সাথে থাকা, যদিও তার দেহ মসজিদের বাইরে থাকে। আল্লামা জাওযীর বর্ণনা এ কথার প্রমাণ, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «كأنما قلبه معلّق في المسجد » আর শব্দটি আরবী ‘আলাকা’ শব্দ হতেও নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, কঠিন মহব্বত-ভালোবাসা। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহু এর বর্ণনা তার প্রমাণ, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «معلّق بالمساجد» মসজিদসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। [ফতহুল বারী, ১৪৫।]
দুই- মসজিদে গমন করা দ্বারা মর্তবা বৃদ্ধি পায়, গুনাহসমূহ দূরীভূত হয় এবং প্রতি কদমে নেকী লেখা হয়। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« وما من رجل يتطهر فيحسن الطهور ثم يعمد إلى مسجد من هذه المساجد إلا كتب الله له بكل خطوة يخطوها حسنة،ويرفعه بها درجة،ويحطّ عنه بها سيئة ...»
“যখন কোন ব্যক্তি সুন্দর করে পবিত্রতা অর্জন করে তারপর এ সব মসজিদসমূহ হতে কোন মসজিদে গমনের ইচ্ছা পোষণ করে, লোকটি যত কদম হাঁটবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি কদমে নেকী লিপিবদ্ধ করবে এবং তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করবে এবং তার গুনাহসমূহ দূর করবে”...। [মুসলিম, ৬৫৪।] আবু হরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত মারফু‘ হাদীসে আরো বলা হয়,
«.. وذلك أن أحدكم إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة، لم يخطُ خطوة إلا رُفِعَ له بها درجة، وحُطّ عنه بها خطيئة ...»
“যখন তোমাদের কেউ সুন্দরভাবে ওজু করে, তারপর সে মসজিদের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করতে বের হয়, তার প্রতিটি কদমে নেকী লেখা হয় এবং গুনাহ ক্ষমা করা হয়”। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, হাদিস নং, ৬৪৭। মুসলিম হাদিস নং ৬৪৯।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من تطهّر في بيته ثم مشى إلى بيت من بيوت الله، ليقضي فريضة من فرائض الله كانت خطواته : إحداهما تحطّ خطيئة، والأخرى ترفع درجة »
যে ব্যক্তি স্বীয় ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর সে আল্লাহর ঘরসমূহ হতে কোন ঘরের উদ্দেশে রওয়ানা করল, যাতে আল্লাহর ফরযসমূহ হতে কোন ফরযকে আদায় করে, তখন তার প্রতিটি কদমসমূহ একটির কারণে তার গুনাহসমূহ মাপ হবে এবং অপরটির কারণে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৬৬।]
ইমাম কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “আল্লামা দাউদী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি তার গুনাহ থাকে, তাহলে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। আর যদি গুনাহ না থাকে, তাহলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। আমি বললাম, এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, প্রতি কদমে যা লাভ করা হয়, তা একই। হয়ত মর্যাদা বৃদ্ধি, আর না হয় গুনাহসমূহের ক্ষমা। অপর একজন বলেন, না, বরং প্রতিটি কদমে তিনটি জিনিষ লাভ হয়, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর এক হাদিসে বর্ণনা করে বলেন,
«كتب الله له بكل خطوة حسنة، ويرفعه بها درجة، ويحطّ عنه بها سيئة »
“আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রতিটি কদমে একটি করে নেকী, একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহই ভালো জানেন”। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]
আমি আমার শাইখ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “প্রতিটি কদমে মর্তবা বৃদ্ধি পাবে, প্রতিটি কদমে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা হয় এবং নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়। শেষের বর্ধিত অংশটি- ‘নেকী লেখা হয়’ কথাটি মুসলিম শরিফে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ হতে বর্ণিত। যখন একটি বর্ণনা বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়, যাতে বলা হয়, মর্তবা বৃদ্ধি করা হবে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে, তখন প্রথমতঃ এ বর্ণনাটি অনুযায়ী সে ফযিলত প্রাপ্ত হয়, তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরও ফযিলত দান করেন, অতিরিক্তটির মাধ্যমে। সুতরাং প্রতিটি কদমে তিনটি ফযিলত লাভ হয়, এক- মর্যাদা বৃদ্ধি, দুই-গুনাহ মাপ, তিন-নেকী লিপিবদ্ধ করা। [আমি সহীহ বুখারি হাদিস নং ২১১৯ এর তাকরীর করার মাঝে তার থেকে শুনেছি।]
তিন- মসজিদে সালাত আদায় করার জন্য ঘর থেকে বের হলে যেমন নেকী লেখা হয় অনুরূপভাবে যখন বাড়ি ফিরে তখনও তার জন্য নেকী লেখা হয়, যখন সে সাওয়াবের আশা করে। প্রমাণ, উবাই বিন কায়াব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ। মসজিদসমূহের দিকে অধিক গমনের ফযিলত। হাদিস নং ৬৬৩।] তিনি বলেন
كان رجل لا أعلم رجلاً أبعد من المسجد منه، لا تخطئه صلاة، قال : فقيل له أو قلت له : لو اشتريت حماراً تركبه في الظلماء، وفي الرمضاء؟ قال : ما يسرني أن منزلي إلى جنب المسجد، إني أريد أن يكتب لي ممشاي إلى المسجد ورجوعي إذا رجعت إلى أهلي، فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « قد جمع الله لك ذلك كله » وفي لفظ : « إن لك ما احتسبت »
“একজন লোক ছিল মসজিদ থেকে এত বেশি দূরে অবস্থান করতেন যে, আর কেউ তার চেয়েও দূরে অবস্থান করতেন বলে আমার জানা ছিল না। তার কোন সালাত মিস হত না। তাকে বলা হল বা আমি বললাম, যদি তুমি একটি গাধা ক্রয় করতে যা দ্বারা তুমি অন্ধকারে অথবা প্রচণ্ড গরমে সাওয়ার হয়ে মসজিদে আসা যাওয়া করতে পারতে? লোকটি বলল, আমার বাড়িটি মসজিদের পাশে হওয়াতে আমি বিন্দু পরিমাণও খুশি নয়। আমি চাই মসজিদের দিকে আমার হাঁটা এবং মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়াতে আমার জন্য যেন নেকী লেখা হয়। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য এগুলো সবই লিপিবদ্ধ করবে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, তোমার জন্য তাই থাকবে যা তুমি আশা করবে”।
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যেমনি ভাবে মসজিদে গমন করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে অনুরূপভাবে মসজিদ থেকে ফিরার পথেও সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যাবে। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৫৫/৩।]
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
(( إن أعظم الناس أجراً في الصلاة أبعدهم إليها ممشى، فأبعدهم، والذي ينتظر الصلاة حتى يصليها مع الإمام أعظم أجراً من الذي يصليها ثم ينام ))
“নিশ্চয়ই সালাতে মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি বেশী সাওয়াব পাবে যে মসজিদ থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করছে, তারপর যে তার থেকে কম দূরে। আর যে সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে যাতে ইমামের সাথে সে সালাত আদায় করতে পারে সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে যে সালাত পড়ে ঘুমিয়ে যায়।” [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬৫১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬২।]
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خلت البقاع حول المسجد، فأراد بنو سلمة أن ينتقلوا إلى قرب المسجد، فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم، فقال لهم : « إنه بلغني أنكم تريدون أن تنتقلوا قرب المسجد » قالوا : نعم، يا رسول الله، قد أردنا، فقال : « يا بني سلمة، ديارَكم تُكتب آثاركم، ديارَكم تُكتب آثاركم »
“মসজিদের পাশে কিছু জমি খালি ছিল, তা দেখে বনু সালমা মসজিদের নিকটে ঘর বানানোর ইচ্ছা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বিষয়টি পৌছলে, তিনি তাদের বলেন, হে বনু সালমা! আমার নিকট খবর পৌঁছেছে, তোমরা মসজিদের কাছাকাছি স্থানান্তর হওয়ার ইচ্ছা করছ? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এ রকম ইচ্ছা করছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের ঘরে থাক, তোমাদের প্রতিটি কদমে তোমাদের জন্য নেকী লেখা হবে, তোমরা তোমাদের ঘরে থাক, তোমাদের প্রতিটি কদমে তোমাদের জন্য নেকী লেখা হবে। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুল আযান, হাদিস নং ৬৫৬; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, মসজিদসমূহের দিকে অধিক গমনের ফযিলত, হাদিস নং ৫৬৬।]
চার: মসজিদের দিক পায়ে হাঁটার দ্বারা গুনাহগুলো মুছে দেয়া হয়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ألا أدلّكم على ما يمحو الله به الخطايا، ويرفع به الدرجات » ؟ قالوا : بلى يا رسول الله، قال : « إسباغ الوضوء على المكاره، وكثرة الخُطا إلى المساجد، وانتظار الصلاة بعد الصلاة، فذلكم الرباط، فذلكم الرباط »
“আমি কি তোমাদের এমন বস্তুর প্রতি পথ দেখাবো? যদ্বারা তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেয়া হবে এবং তোমাদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করা হবে। তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণ ওজু করা, মসজিদের দিক বেশি বেশি গমন করা, একটি সালাতের পর আরেকটি সালাতের অপেক্ষা করা। এটিই হল, আল্লাহর রাহে অবস্থান, এটিই হল, আল্লাহর রাহে অবস্থান”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫১, সালাতের ফযিলত অনুচ্ছেদে হাদিসটির তাখরিজ অতিবাহিত হয়েছে।]
গুনাহ মুছে দেয়া দ্বারা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়ার প্রতি ইশারা করা হল। অথবা এর অর্থ হল, ফেরেশতাদের কিতাব থেকে গুনাহসমূহকে মুছে দেয়া হল। আর এটি গুনাহগুলো ক্ষমা করার দলিল। মর্যাদা বৃদ্ধি করার অর্থ হল, জান্নাতের সম্মানিত স্থান। আর إسباغ الوضوء শব্দের অর্থ, ওজুকে পরিপূর্ণ করা। আর মাকারেহ অর্থ, কঠিন ঠাণ্ডা, দৈহিক কষ্ট ইত্যাদি। আর كثرة الخطا কখনো বাড়ি দূরে হওয়ার কারণে হয়ে থাকে অথবা বার বার মসজিদের যাতায়াতের কারণে হয়ে থাকে। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা; 143/3।]
পাঁচ- পরিপূর্ণ ওজু করার পর মসজিদের দিক রওয়ানা হওয়া দ্বারা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। ওসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : « من توضأ للصلاة فأسبغ الوضوء ثم مشى إلى الصلاة المكتوبة فصلاها مع الناس، أو مع الجماعة، أو في المسجد غفر الله له ذنوبه »
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের ওজু করে এবং ওজুকে পরিপূর্ণ করে, তারপর ফরয সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে গমন করে এবং মানুষের সাথে বা জামা‘আতে বা মসজিদে সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন”। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, পরিচ্ছেদ: ওজু ও সালাতের ফযিলত, হাদিস নং ২৩২।]
ছয়: জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলা মেহমানদারি প্রস্তুত করেন তার জন্য যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত করে। যতবার সে সকালে মসজিদে গমন করবে অথবা যতবার সে বিকালে মসজিদ থেকে ফিরে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من غدا إلى المسجد أو راح أعدّ الله له في الجنة نُزُلاً كلما غدا أو راح »
“যে ব্যক্তি সকালে মসজিদে যায়, অথবা বিকালে মসজিদ থেকে ফিরে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যতবার সে যাতায়াত করে ততবার তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারি প্রস্তুত করে”। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুল আযান হাদিস নং ৬৬২; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ হাদিন নং ৬৬৯]
আর [ غدا ] শব্দের মূল অর্থ হল, সকালে বের হওয়া অর্থাৎ, প্রথম সময়ে আগমন করা। আর راح শব্দের অর্থ, বিকালে ফিরে যাওয়া। তারপর সাধারণত শব্দদ্বয় ব্যাপক অর্থে অর্থাৎ, যাতায়াত করার অর্থে ব্যবহার হয়। আর [ أعدّ ] অর্থ, তৈরি করা, আর [ النُّزُل ] শব্দের অর্থ, বাড়িতে মেহমান আসলে তার সম্মানে যা তৈরি করা হয় তাকে নুযূল বলে। আর এটি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা উভয় সময়ে হয়ে থাকে [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে, ২৯৪/২। সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৭৬/৫।]। এটি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ আল্লাহ যাকে চায়, তাকে দান করেন। আর যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত করে, তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারি তৈরি করা হয়। মসজিদে যাওয়ার কারণে এবং মসজিদ থেকে ফেরার কারণে।
সাত: যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করল, কিন্তু সে জামা‘আত পেল না, তার মসজিদে পৌঁছার পূর্বেই জামা‘আত শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তার জন্য সে পরিমাণ সাওয়াব মিলবে, যে পরিমাণ সাওয়াব যে সালাতে উপস্থিত হলে পেত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من توضأ فأحسن الوضوء، ثم راح فوجد الناس قد صلوا أعطاه الله تعالى مثل أجر من صلاها وحضرها لا ينقص ذلك من أجرهم شيئاً »
“যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওজু করল, তারপর সে মসজিদে গমন করল এবং দেখতে পেল, লোকেরা সালাত আদায় করে ফেলছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সে পরিমাণ সাওয়াব দান করবে, যে পরিমাণ সাওয়াব যে ব্যক্তি সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে পাবে। তবে তাদের সাওয়াব থেকে কোন কিছুই কমানো হবে না”। [আবু দাউদ কিতাবুস সালাত হাদিস নং ৫৬৪ বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১১৩/২] আট- যে ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হল, তাহলে সে ঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত সালাতের মধ্যেই থাকবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا توضأ أحدكم في بيته ثم أتى المسجد كان في صلاة حتى يرجع، فلا يقل : هكذا» وشبك بين أصابعه .
“যখন কোন ব্যক্তি তার নিজ গৃহে ওজু করে, তারপর সে মসজিদে গমন করে, ঘরে ফেরার আগপর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে। সে যেন এভাবে না বলে”। আর তিনি আঙ্গুলগুলো একটিকে অপরটির মধ্যে প্রবেশ করান”। [ইবনু খুজাইমা, ২২৯/১, হাকেম ২০৬/১, সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১১৮/১।]
নয়: মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে পবিত্র অবস্থায় যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হয়, তার সাওয়াব একজন মুহরিম হাজীর সাওয়াবের সমান। আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من خرج من بيته متطهراً إلى صلاة مكتوبة فأجره كأجر الحاجّ المحرم»
“যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে ফরয সালাতের উদ্দেশ্যে পবিত্রতা অর্জন করে বের হয়, তার সাওয়াব একজন মুহরিম হাজীর সাওয়াবের সমান”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত হাদিস নং ৫৫৮; সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন। ১১১/২; সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১২৭/১।]
দশ- মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশে বের হওয়া ব্যক্তির জিম্মাদারি আল্লাহর হাতে। আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثلاثة كلهم ضامن على الله تعالى : رجل خرج غازياً في سبيل الله تعالى فهو ضامن على الله حتى يتوفاه فيدخله الجنة أو يردّه بما نال من أجر وغنيمة، ورجل راح إلى المسجد فهو ضامن على الله حتى يتوفاه فيدخله الجنة أو يردّه بما نال من أجر وغنيمة، ورجل دخل بيته بسلام فهو ضامن على الله تعالى»
”তিন ব্যক্তি এমন আছে, তাদের সবার জিম্মাদারি আল্লাহর উপর। এক- যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছে, সে আল্লাহর জিম্মায়; যদি মারা যায় আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, অন্যথায় তাকে তার সাওয়াব ও গণিমতসহ- যা লাভ করেছে- তা নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফেরাবেন। আরেক ব্যক্তি যে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, সেও আল্লাহর জিম্মায়, যদি মারা যায় আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, অন্যথায় তাকে তার সাওয়াব ও গণিমত- যা লাভ করেছে- তা নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফেরাবেন। আর যে ব্যক্তি তার নিজ গৃহে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে সেও আল্লাহর জিম্মাদারিতে থাকবে”। [সূনানে আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, পরিচ্ছেদ: সমূদ্রে জিহাদ করার ফযিলত হাদিস নং ২৪৯৪, সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন, ৪৭৩/২।]
এটি আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, আল্লাহ তা‘আলা এ শ্রেণীর প্রতিটি লোককে তার নিজের জিম্মাদারিতে নিয়ে নেন। ফলে তাদের তিনি সর্ব উত্তম বিনিময় দান করেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী - «ورجل دخل بيته بسلام » টির দুটি অর্থ হতে পারে।
এক- যখন ঘরে প্রবেশ করবে সালাম দেবে। দুই- লোকটি তার ঘরে প্রবেশ করা দ্বারা নিরাপত্তা কামনা করে। অর্থাৎ, শান্তির অনুসন্ধানে সে তার ঘরকেই অবলম্বন করে, যাতে ফিতনা হতে নিরাপদে থাকতে পারে। তখন হাদিসটি দ্বারা নির্জনতা ও একাকীত্বের প্রতি উৎসাহ এবং মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। আর এটি তখন বিবেচ্য যখন সমাজে ফিতনা দেখা দেয় এবং একজন মুসলিম তার দ্বীনের হেফাজতের ব্যাপারে আশঙ্কা করে। আর যখন এ ধরনের কোন পরিস্থিতি না থাকে, তখন যে মুমিন মানুষের সাথে মিশে, তাদের নির্যাতনের উপর ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে, সে মুমিনকে আল্লাহ তাদের তুলনায় অধিক সাওয়াব দান করবে যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের নির্যাতন সহ্য করে না।
এগার- জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমনকারীদের বিষয়ে ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা প্রতিযোগিতা করে। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে স্বপ্নে বলেন,
«.. يا محمد هل تدري فيمَ يختصم الملأ الأعلى؟ قلت : نعم، في الكفارات : المكث في المسجد بعد الصلاة، والمشي على الأقدام إلى الجماعات، وإسباغ الوضوء على المكاره، ومن فعل ذلك عاش بخير، ومات بخير، وكان من خطيئته كيوم ولدته أمه ...».
“হে মুহাম্মদ! তুমি কি জান ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা [অর্থাৎ, নিকট বর্তী ফেরেশতারা। ‘আল-মালাউ’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঐ সকল সম্মানিত ফেরেশতা যারা আল্লাহর মাহত্ম্য ও মর্যাদা দিয়ে তাদের নিজেদের অন্তর ও মাজলিসকে ভরপুর রাখে। আর তাদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অনেক উর্ধে হওয়ার কারণে তাদের নাম রাখা হয়েছে, ‘আল-আ’লা’ বলে। দেখুন: আল্লামা মুবারক পুরির তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৯।] কি নিয়ে বিতর্ক করে? [অর্থাৎ, তারা তর্ক করে, আর তাদের তর্ক করার অর্থ হল, এ সব আমলসমূহকে প্রমাণ করা ও আসমানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের প্রতিযোগিতা করা। অথবা আমলসমূহের ফযিলত ও সম্মান সম্পর্কে তাদের কথা বলাবলি করা। অথবা মানুষের জন্য এ সব ফযিলত খাস হওয়া এবং তাদের এসব আমলের কারণে, ফেরেশতাদের চেয়েও অধিক মর্যাদা লাভ করার কারণে মানুষ এ সব আমলের সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে আগ্রহী হওয়া। আর এটিকে ঝগড়া বলার কারণ- প্রশ্ন উত্তরের আলোকে বিষয় আবির্ভূত হয়েছে তাই। আর এটি মুনাজারা ও মুখাসামার সাথে সাদৃশ্য রাখে। আল্লামা ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এখানে ইখতেসাম দ্বারা সে এখতেসাম উদ্দেশ্য নয় যেটি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও জানার জন্য দেখুন; জামে তিরমিযির ব্যাখ্যা সম্বলিত কিতাব তুহফাতুল আহওয়াযি পৃ: ১০৯,১৩৯/৯।] আমি বললাম হ্যাঁ, গুনাহ মাপের বিষয়সমূহ নিয়ে তারা প্রতিযোগিতা করে। অর্থাৎ, সালাত আদায়ের পর মসজিদে অবস্থান করা, জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া, কষ্ট সত্ত্বেও ওজুকে পরিপূর্ণ করা। যে ব্যক্তি এ কাজগুলো করবে, সে ভালোভাবে জীবন যাপন করবে এবং ভালোভাবে মৃত্যু বরণ করবে। আর সে তার গুনাহ হতে এমন পবিত্র হবে যেন তার মা তাকে আজই প্রসব করছে”। [সূনান আত-তিরমিযি, কিতাবুত তাফসীর, হাদিস নং ৩২৩৩ ও ৩২৩৪, ইমাম তিরিমিযির নিকট মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস দ্বারা হাদিসটির শাহেদ বিদ্যমান, হাদিস নং ৩২৩৫। আর আল্লামা আলবানী হাদিস দুটিকে সহীহ সূনান আত-তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯৯-৯৮/৩।]
বার- মসজিদে জামাআতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে গমন করা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের কারণ। কারণ, উল্লেখিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন « فمن فعل ذلك عاش بخير ومات بخير » যে ব্যক্তি এ সব করবে, সে ভালোভাবে জীবন যাপন করবে এবং ভালোভাবে মারা যাবে। [দেখুন: তুহফাতুল আহওয়াযি জামে তিরমিযির ব্যাখ্যা, ১০৪/৯] এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا مِّن ذَكَرٍ أَوۡ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَلَنُحۡيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةٗ طَيِّبَةٗۖ وَلَنَجۡزِيَنَّهُمۡ أَجۡرَهُم بِأَحۡسَنِ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٧ ﴾ [ النحل : ٩٧ ]
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭।]
তের- মসজিদসমূহের দিক যাতায়াত করা গুনাহসমূহ মাফের কারণ। কেননা উল্লেখিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « وكان من خطيئته كيوم ولدته أمه » “সে সেদিনের মত নিষ্পাপ হবে যেদিন তার মাতা তাকে প্রসব করেন”।
চৌদ্দ- আল্লাহ তা‘আলা মসজিদ যিয়ারতকারীদের সম্মান করেন। প্রমাণ- সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من توضأ في بيته ثم أتى المسجد فهو زائر لله، وحقٌّ على المزُور أن يكرم الزائر »
“যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহে ওজু করে তারপর মসজিদে আগমন করে, সে অবশ্যই একজন আল্লাহর যিয়ারতকারী। যার যিয়ারত করা হল তার উপর ওয়াজিব হল, যিয়ারতকারীর সম্মান করা”। [তাবরানী মুজামে কবীরে ২৫৩/৬, ৬১৩৯, ৬১৪৫ আল্লামা হাইসামী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, তাবরানী হাদিসটি আল-কাবীরে বর্ণনা করেন, তার একটি সনদ বিশুদ্ধ এবং বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ বর্ণনাকারী; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৩১৯/১৩, হাদিস নং ১৬৪৬৫।]
আমর বিন মাইমুন রাহিমাহুল্লাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أدركت أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم وهم يقولون : (( المساجد بيوت الله وإنه حقّ على الله أن يُكرم من زاره )) ، وفي لفظ عن عمرو بن ميمون عن عمر رضى الله عنه قال : (( المساجد بيوت الله في الأرض وحقّ على المزور أن يكرم زائره )).
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের বলতে দেখেছি, তারা বলেন, মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর, আল্লাহর উপর ওয়াজিব হল, যারা তার ঘরকে যিয়ারত করতে আসে তাদের সম্মান করা। [আল্লামা ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু স্বীয় সনদে জামেয়ুল বায়ানে উল্লেখ করেন, ১৮৯/১৯।] অপর এক শব্দে আমর বিন মাইমুন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জমিনে মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর। যারা যিয়ারত করতে আসবে তাদের সম্মান করা যাকে যিয়ারত করবে তার উপর ওয়াজিব”। [মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা ৩১৮/১৩, হাদিস নং ১৬৪৬৩।]
পনের- আল্লাহ তা‘আলা যে বান্দা ওজু অবস্থায় মসজিদে গমন করে তার প্রতি খুশি হন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا يتوضأ أحد فيُحسن وضوءه ويُسبغه ثم يأتي المسجد لا يريد إلا الصلاة فيه، إلا تبشبش الله إليه كما يتبشبش أهل الغائب بطلعته »
“যখন কোন বান্দা ভালোভাবে ওজু করে এবং ওজুকে পরিপূর্ণ করে, তারপর সে কেবল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি এমন খুশি হয়, যেমন একজন মানুষ হারানো লোককে খুঁজে পেলে খুশি হয়”। [ইবনু আবি খুজাইমা, কিতাবুল ইমামা সালাত অধ্যায়ে, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বান্দা ওজু করে মসজিদের দিক যাওয়াতে আল্লাহর খুশি হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস ১৪৯১। এবং সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১২৩/১। হাদিস নং ৩০১।] ইমাম ইবনে খুজাইমা এ হাদিসের উপর একটি পরিচ্ছেদ স্থাপন করেন। তিনি বলেন, “পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তার স্বীয় বান্দার প্রতি খুশি হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা, যখন সে ওজু করে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে”। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, ৩৭৪/২।] আল্লাহর সমস্ত গুণাবলী সাব্যস্ত হয়ে থাকে তার শান অনুযায়ী।
ষোল- যে ব্যক্তি অন্ধকারের মধ্যে মসজিদে গমন করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নুরের সু-সংবাদ। বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« بشّر المشائين في الظلم إلى المساجد بالنور التّامّ يوم القيامة »
“অন্ধকারের মধ্যে মসজিদে গমনকারীদের তোমরা কিয়ামতের পরিপূর্ণ নূরের সু-সংবাদ দাও”। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৬১, তিরমিযি, হাদিস নং ২২৩, সালাতের ফযিলত অংশে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।]
মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য যাওয়ার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কতক আদব রয়েছে। নিম্নে সেগুলোর আলোচনা করা হল:-
এক- নিজ ঘরে ওজু করা এবং ওজুকে যথাযথ ও পরিপূর্ণ করা। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ما من رجل يتطهر فيحسن الطهور ثم يعمد إلى مسجد من هذه المساجد إلا كتب الله له بكل خطوة يخطوها حسنة، ويرفعه بها درجة، ويحط عنه بها سيئة »
“যখন কোন ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে এবং পবিত্রতাকে খুব সুন্দরভাবে করে, তারপর সে এ সব মসজিদসমূহ হতে কোন একটি মসজিদের দিকে যায়, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি কদমে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করে, তার একটি মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৪, জামা‘আতে সালাত ওয়াজিব হওয়ার অধ্যায়ে তাখরিজ অতিবাহিত হয়েছে।]
দুই- দুর্গন্ধ হতে দূরে থাকা। জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من أكل ثوماً أو بصلاً فليعتزلنا، أو ليعتزل مسجدنا، وليقعد في بيته »
“যে ব্যক্তি পেয়াজ বা রশুন খায়, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং সে যেন তার নিজ ঘরে বসে থাকে”। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فإن الملائكة تتأذَّى مما يتأذَّى منه الإنس» “নিশ্চয় ফেরেশতারা ঐ সব বস্তু হতে কষ্ট পায় যে বস্তু হতে মানুষ কষ্ট পায়”। মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من أكل البصل والثوم والكراث، فلا يقربنَّ مسجدنا؛ فإن الملائكة تتأذى مما يتأذى منه بنو آدم »
“যে ব্যক্তি পেয়াজ, রশুন ও কারাস খায় সে যেন আমাদের মসজিদের কাছেও না আসে। কারণ, আদম সন্তানেরা যে সব বস্তুতে কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও তাতে কষ্ট পায়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস নং ৮৫৫; মুসলিম, হাদিস নং ৫৬৪, ৫৬১-৫৬৭, সালাতের মাকরূহ বিষয়ে আলোচনায় তথ্যসূত্র আলোচনা করা হয়েছে।]
তিন- সুন্দর কাপড় পরিধান ও সৌন্দর্য গ্রহণ করবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ ٣١ ﴾ [ الاعراف : ٣١ ]
“হে আদম সন্তান তোমরা প্রতিটি সালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যকে অবলম্বন কর”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إن الله جميل يحب الجمال» “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন”। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: কিবির হারাম হওয়ার বর্ণনা, হাদিস নং ৯১।]
চার- ঘর থেকে বের হওয়ার দু'আ পড়বে এবং সালাতের নিয়তে ঘর থেকে বের হবে। এ দু'আ পড়বে-
« بسم الله توكلت على الله، ولا حول ولا قوة إلا بالله »
“আল্লাহর নামে আরম্ভ করলাম। আল্লাহর উপরই ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নাই এবং তিনি ছাড়া কোন বাধাদানকারী নাই”। [যখন এ কথা বলে, তখন বলা হবে, (( هُديت، وكفيت، ووقيت، فتتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر : كيف لك برجل قد هدي، وكفي ووقي ) তুমি হেদায়েত প্রাপ্ত হলে, যথেষ্ট হলে, এবং বেঁচে গেলে, তখন শয়তান তার থেকে দূরে সরে গেল। তখন আরেকজন শয়তান বলবে, “কেমন হবে সে ব্যক্তি যাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে এবং তাকে হেফাযত করা হয়েছে?” আবু দাউদ কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: ঘরথেকে বের হওয়ার সময় কি বলা হবে। হাদিস নং ৫০৯৫; তিরমিযি, কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কি বলবে সে বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৩৪২৬; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনান আত-তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ১৫১/৩।] এবং এ দু'আ পড়বে-
« اللهم إني أعوذ بك أن أضِلَّ أو أُضَلّ، أو أزِلَّ، أو أُزَلَّ، أو أظلِمَ أو أُظلَم، أو أجهل أو يُجهل عليَّ » [যখন এ কথা বলে, তখন বলা হবে, (( هُديت، وكفيت، ووقيت، فتتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر : كيف لك برجل قد هدي، وكفي ووقي ) তুমি হেদায়েত প্রাপ্ত হলে, যথেষ্ট হলে, এব বেচে গেলে, তখন শয়তান তার থেকে দূরে সরে গেল। তখন আরেকজন শয়তান বলবে, কেন হবে সে ব্যক্তি সম্পর্কে যাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট বলে দেয়া হয়েছে এবং বাচানো হয়েছে। আবু দাউদ কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: ঘরথেকে বের হওয়ার সময় কি বলা হবে। হাদিস নং ৫০৯৫। তিরমিযি কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কি বলবে সে বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৩৪২৬। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১৫১/৩।]
“হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, পদস্খলন করা অথবা পদস্খলিত হওয়া থেকে। পথ হারিয়ে ফেলা বা অন্য কর্তৃক পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে। কারো উপর যুলম করা থেকে অথবা কারো দ্বারা নির্যাতিত হওয়া থেকে। কারো সাথে মুর্খতা-পূর্ণ আচরণ করা থেকে এবং মূর্খতা-জনিত আচরণের শিকার হওয়া থেকে”। [আবু দাউদ, কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: ঘরথেকে বের হওয়ার সময় কি বলা হবে। হাদিস নং ৫০৯৪; তিরমিযি, কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কি বলবে সে বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৩৪২৭। ইবনে মাযা, কিতাবুত দু‘আ, পরিচ্ছে: ঘর থেকে বের হওয়া দু’আ বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩৮৮৪। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে ইবনে মাযায় হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ৩৩৬/২।]
অথবা এ দু'আ পড়বে-
« اللهم اجعل في قلبي نوراً، وفي لساني نوراً، وفي سمعي نوراً، وفي بصري
نوراً، ومن فوقي نوراً، ومن تحتي نوراً، وعن يميني نوراً، وعن شمالي نوراً، ومن أمامي نوراً، ومن خلفي نوراً، واجعل في نفسي نوراً، وأعظم لي نوراً، وعظِّم لي نوراً، واجعل لي نوراً، واجعلني نوراً، اللهم أعطني نوراً، واجعل في عصبي نوراً، وفي لحمي نوراً، وفي دمي نوراً، وفي شعري نوراً، وفي بشري نوراً» .
“হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তর আলোকময় কর। আমার জবানকে তুমি আলোকময় কর। আমার কর্ণ আলোকময় কর, আমার চোখ জ্যোর্তিময় কর, আমার উপর, নীচকে আলোকময় কর। আমার সম্মূখ আলোকময় কর। আমার পশ্চাত আলোকময় কর। আমার ডানে আমার বামে, আমার উপরে আমার নিচে জ্যেতি ছড়িয়ে দাও। আমার অন্তরে নূর দাও। আমার জন্য তুমি নূরকে বৃহৎ ও মহান কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য আলো দান কর এবং আমাকে আলো বানিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নূর দাও, তুমি আমার শীরা, আমার গোস্ত, আমার রক্ত, আমার চুল ও চামড়ায় নূরকে ছড়িয়ে দাও। [বুখারি, কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: যখন ঘুম থেকে উঠে তখন কি বলবে। হাদিস নং ৬৩১৬, মুসলিম, কিতাবু সালাতুল মুসাফিরিন, পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত ও তার জন্য দু‘আ, হাদিস নং ৭৬৩; অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, ১৯১ [৭৬৩] فخرج إلى الصلاة وهو يقول . তারপর তিনি সালাতের দিকে বের হন এবং বলেন। এখানে যতগুলো বর্ণনা আছে, সবই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনা।]
পাঁচ- মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তায় এবং সালাতে আঙ্গুল ফোটাবে না। কা’ব বিন আজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا توضأ أحدكم فأحسن وضوءه، ثم خرج عامداً إلى المسجد فلا يشبكن بين أصابعه؛ فإنه في صلاة »
“যখন তোমাদের কেউ সুন্দরভাবে ওজু করে, তারপর সে মসজিদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, সে যেন তার আঙ্গুলগুলো না ফুটায়। কারণ, সে এখন সালাত-রত”। [তিরমিযি, হাদিস নং ৩৮৭, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, ১২১/১; হাদিসটির তাখরীজ সালাতের মাকরূহ বিষয় সমূহের আলোচনায় অতিবাহিত হয়েছে।]
ছয়:- মসজিদে যাওয়ার সময় শান্ত-সৃষ্ট ও গাম্ভীর্যের সাথে হাঁটবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا سمعتم الإقامة فامشوا إلى الصلاة وعليكم السكينة والوقار، ولا تُسرعوا، فما أدركتم فصلوا، وما فاتكم فأتموا »
“যখন তোমরা সালাতের ইকামত শুনবে, তোমরা শান্ত-সৃষ্ট ভাবে সালাতের দিক অগ্রসর হও। তোমরা তাড়াহুড়া করো না। তোমরা যা পাবে তা আদায় করবে, আর যা তোমাদের ছুটে যাবে তা পরিপূর্ণ করবে”। অপর শব্দে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا أقيمت الصلاة فلا تأتوها تسعون، وأتوها تمشون وعليكم السكينة، فما أدركتم فصلوا، وما فاتكم فأتموا »
“যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তোমরা দৌড়াবে না। তোমরা শান্ত-সৃষ্ট ভাবে পায়ে হেঁটে সালাতে হাজির হও, যত টুকু পাও তা আদায় কর আর যতটুকু তোমাদের ছুটে যায়, তা তোমরা পরিপূর্ণ কর”। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, কিতাবুল আযান, পরিচ্ছেদ: সালাতের দিকে দৌড়বে না, শান্ত সৃষ্টভাবে সালাতে উপস্থিত হবে। হাদিস নং ৬৩৬; জুমু‘আহ অধ্যায়, জামাআতে হাযির হওয়া প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৯০৮; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ, সালাতে শান্ত সৃষ্টভাবে উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব এবং দৌড়ে আসা নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা, হাদিস নং ৬০২।]
উল্লেখিত হাদিসে শান্ত-সৃষ্ট ও নমনীয়তার সাথে সালাতে উপস্থিত হওয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং দৌড়ে সালাতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জুমু’আর সালাত হোক বা অন্য যে কোন সালাত হোক না কেন। প্রথম তাকবীর পাক বা না পাক সর্বাবস্থায় তাড়াহুড়া থেকে বিরত থাকবে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী -« إذا سمعت الإقامة » তে ইকামতের কথা উল্লেখ করার কারণ, অধিক সতর্ক করা ও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। কারণ, যখন ইকামত হয়, তখন সালাতের কিছু অংশ ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন যেহেতু তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে ইকামতের পূর্বে দৌড়ে আসার কোন প্রশ্নই আসে না। এর কারণ বর্ণনা দিয়ে হাদিসের পরবর্তী অংশ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فإن أحدكم إذا كان يعمد إلى الصلاة فهو في صلا ة » “কারণ, যখন তোমাদের কেউ সালাতের ইচ্ছা করে, সালাতের মধ্যেই থাকে”।
এ কথাটি সালাতে আগমনের পুরো সময়টাকে শামিল করে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেকটি তাকীদ নিয়ে আসেন এবং বলেন, [ فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فأتموا ] “তোমরা যা পেলে তা আদায় কর, আর যা ছুটে গেল, তা পরিপূর্ণ কর”। মোট কথা হাদিসে সতর্কতা ও তাকীদ সবই বিদ্যমান, যাতে কেউ এ কথা বলতে না পারে এখানে নিষেধ করাটা শুধু তার জন্য যে সালাতের কিছু অংশ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা না করে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে দেন যে, যদিও সালাতের কিছু অংশ ছুটে যায়। আর ছুটে যাওয়া সালাত কি করবে তাও তিনি বলে দেন।
সাত- মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে জুতা-দ্বয় দেখে নেবে। যদি তাতে কোন নাপাক কিছু থাকে তাহলে, তা মাটি দ্বারা মুছে নেবে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا جاء أحدكم إلى المسجد فلينظر فإن رأى في نعليه قذراً أو أذى فليمسحه وليصلِّ فيهما »
“যখন তোমরা মসজিদে আসবে, তোমরা তোমাদের জুতার দিকে দেখ, যদি তোমরা তাতে কোন নাপাক বা ময়লা দেখ, তা মুছে ফেল এবং জুতাসহ সালাত আদায় কর”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: জুতাদ্বয় পরিধান করে সালাত আদায় প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৬৫০; ইবনু খুজাইমা, ১০১৭; সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
মাটিতে মাসেহ করা দ্বারা জুতাদ্বয় পাক হয়ে যায়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إذا وطئ أحدكم بنعليه الأذى فإن التراب له طهور» “যদি তোমাদের কেউ তার জুতা দ্বারা কোন নাপাক বস্তু পাড়ায়, মাটি হল তার পবিত্রতা”। অপর শব্দে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إذا وطئ الأذى بخفيه فطهورهما التراب » “যখন তোমাদের কেউ তার মুজাদ্বয় দ্বারা নাপাক বস্তুকে পাড়ায়, তার পবিত্রতা হল মাটি”।
আট- মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে ডান পা বাড়িয়ে দেবে এবং এ দোয়া পড়বে-
(( أعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم، وسلطانه القديم، من الشيطان الرجيم ))( [যখন এ কথা বলবে তখন শয়তান বলবে, আমার থেকে সারাদিনের জন্য সে নিরাপদ। আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচেছদ: একজন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের সময় কি বলবে, হাদিস নং ৪৬৬; সহীহ সূনানে আবু দাউদে আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হতে বর্ণিত হাদিসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, ৯২/১।]). [ بسم الله والصلاة ]( [রাত দিনের আমলসমূহের আলোচনায় আল্লামা ইবনুস সূন্নী, হাদিস নং ৮৮; আর আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।]) [ والسلام على رسول الله ]( [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: মসজিদের প্রবেশের সময় কি বলবে, হাদিস নং ৪৬৫; আর আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]) [ اللهم افتح لي أبواب رحمتك ]؛
প্রমাণ- আমি হুমাইদ বা আবি উসাইদ হতে হাদিস বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا دخل أحدكم المسجد فليقل : اللهم افتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج فليقل : اللهم إني أسألك من فضلك »
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বলে, হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। আর যখন বের হয়, তখন বলবে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার অনুগ্রহ কামনা করি”। [মুসলিম, কিতাবু সালাতিল মুসাফিরিন ও সালাতে কসর করা। পরিচ্ছেদ: কি বলবে, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে, হাদিস নং ১১৩।]
নয়- যখন মসজিদে প্রবেশ করবে যারা মসজিদের ভিতরে আছে তাদের এমন আওয়াজে সালাম দেবে যাতে তারা শুনতে পায়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، أوَلا أدلّكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم »
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি ঈমানদার না হবে, আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালো না বাসবে। আর আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বাতিয়ে দেব, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার কর”। [মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ : জান্নাতে মুমিন ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না, হাদিস নং ৫৪।] আম্মার বিন ইয়াছির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«ثلاث من جمعهن فقد جمع الإيمان : الإنصاف من نفسك، وبذل السلام للعالم، والإنفاق من الإقتار »
“তিনটি বিষয়কে যে ব্যক্তি একত্র করবে, সে ঈমানকে একত্র করল। নিজের ব্যাপারে ইনসাফ করা, আলেমদের সালাম দেয়া এবং অভাবের সময় দান করা”। [বুখারি, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ : সালাম ইসলাম। ১৫/১]
দশ- তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকাত সালাত আদায় করবে। সালাতের ওয়াক্ত হলে যখন মুয়াজ্জিনের আযানের পর মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যদি ঐ ওয়াক্ত সালাতের সুন্নতে রাতেবাহ থাকে তাহলে সুন্নাতে রাতেবা পড়বে, আর যদি সুন্নাতে রাতেবা না থাকে, তাহলে আযান ও ইকামাতের মাঝের দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেবে। তাহলে আর তাহিয়্যাতুল মসজিদ আলাদা করে পড়তে হবে না। আর যদি সালাতের ওয়াক্ত দাখিল হওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে অবশ্যই তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই সালাত আদায় করতে হবে। আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « إذا دخل أحدكم المسجد فلا يجلس حتى يصلي ركعتين » “যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দুই রাকাত সালাত আদায় করা ব্যতীত মসজিদে না বসে”।
এগার- যখন কোন ব্যক্তি মসজিদের ভিতরে জুতা খুলে, সে যেন তা তার উভয় পায়ের মাঝখানে রাখে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا صلى أحدكم فخلع نعليه فلا يؤذي بهما أحداً، ليجعلهما بين رجليه، أو ليصلِّ فيهما »
যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে এবং জুতা-দ্বয় খুলে ফেলে, সে যেন জুতা-দ্বয় দ্বারা কাউকে কষ্ট না দেয়। জুতা-দ্বয়কে তার উভয় পায়ের মাঝখানে রাখে অথবা জুতা নিয়ে সালাত আদায় করে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا صلى أحدكم فلا يضع نعليه عن يمينه ولا عن يساره فتكون عن يمين غيره، إلا أن لا يكون عن يساره أحد وليضعهما بين رجليه »
“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, সে তার জুতাকে ডান দিকে রাখবে না এবং বাম দিকেও না। তখন অপর ভাইয়ের ডানে হবে। হ্যাঁ, যদি তার বামে কেউ না থাকে তখন কোন অসুবিধা নাই। জুতাকে তার উভয় পায়ের মাঝখানে রাখবে”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ : একজন মুসল্লি যখন তার পাদুকাদ্বয় খোলে তখন কোথায় রাখবে, হাদিস নং ৬৫৪, ৬৫৫; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ১২৮/১।] আমি আমার শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “জুতা পরে সালাত আদায় করা ইয়াহুদীদের সুন্নতের পরিপন্থী। তবে লক্ষ্য রাখার পর যদি জুতার মধ্যে কোন নাপাক বস্তু দেখে, তাহলে মাটি, পাথর ইত্যাদি দ্বারা তা পরিষ্কার করে নেবে। তবে যে সব মসজিদে বিছানা বিছানো থাকে সেখানে কিছু মানুষের অবহেলার কারণে ধুলা বালি পাওয়া যায়। ফলে মানুষ মসজিদ থেকে চলে যেতে চায়। এ কারণে আমার নিকট উত্তম হল, জুতা রাখার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করবে”। [আমি তার থেকে এ কথাগুলো বুলুগুল মারাম কিতাবের হাদিস নং ২৩২ ও ২৩৩ ব্যাখ্যা দেয়ার সময় শুনেছি।]
বার- কাউকে কষ্ট দেয়া ও ভিড় করা ছাড়া যদি সম্ভব হয়, ইমামের ডান পাশে প্রথম কাতারে বসবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لو يعلم الناس ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه لاستهموا »
যদি মানুষ জানত, আযান দেয়া ও প্রথম কাতারে বসার মধ্যে কত ছাওয়াব তা লাভ করার জন্য লটারি দেয়ার প্রয়োজন হলে তারা লটারিতে অংশ গ্রহণ করত। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুল আযান, হাদিস নং ৬১৫; মুসলিম, হাদিস নং ৪৩৭; তথ্য আযানের ফযিলত বিষয় আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « إن الله وملائكته يصلون على ميامن الصفوف » “আল্লাহ তা‘আলা ও তার ফেরেশতারা কাতারের ডান দিকের উপর রহমত নাযিল করে”। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৭৬, ইবনে মাযা, হাদিস নং ১০০৫। আল্লামা মুনযিরি হাদিসটিকে হাসান বলেন; ইবন হাজার, ফতহুল বারী ২১৩/২।]
তের- মসজিদে কিবলা মুখী হয়ে বসে কুরআন তিলাওয়াত করবে অথবা আল্লাহর যিকর করবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
« إن لكل شيء سيداً، وإن سيد المجالس قبالة القبلة »
“প্রতিটি বস্তুর একজন সরদার রয়েছে। আর মজলিস সমূহের সরদার হল, কিবলাকে সামনে রেখে বসা”। [তাবরানী, আল-আওসাত [মাজমায়ুল বাহরাইন ২৭৮/৫, হাদিস নং ৩০৬২]; আল্লামা হাইসামী, মাজমায়ুয যাওয়ায়েদ ৫৯/৮ গ্রন্থে বলেন, “ হাদিসটি তাবরানী আওসাতে উল্লেখ করেন, আর তার সনদ বিশুদ্ধ”।]
চৌদ্দ- সালাতের অপেক্ষা করার নিয়ত করবে এবং কাউকে কষ্ট দেবে না। কারণ, সে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষা করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতের আগে বা পরে স্বীয় জায়নামাজে অবস্থান করবে ফেরেশতারা তার উপর রহমতের দোয়া করতে থাকে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يزال العبد في صلاة ما كان في مصلاه ينتظر الصلاة، وتقول الملائكة : اللهم اغفر له، اللهم ارحمه ... »
“যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বান্দা সালাতের অপেক্ষা করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতেই থাকবে। আর ফেরেশতারা বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ তুমি তাকে দয়া কর...”।
«والملائكة يصلون على أحدكم مادام في مجلسه الذي صلى فيه، يقولون : اللهم ارحمه، اللهم اغفر له، اللهم تب عليه، ما لم يُؤذِ، ما لم يُحدث »
“যতক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতের আগে বা পরে স্বীয় জায়নামাজে অবস্থান করবে ফেরেশতারা তার উপর রহমতের দোয়া করতে থাকে। তারা বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে দয়া কর, ক্ষমা কর। হে আল্লাহ তার তওবা কবুল কর, যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং নাপাক না হয়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস নং ৬৪৭; মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৯; জামাআতে সালাতের ফযিলত সম্পর্কে হাদিসটির তথ্যসূত্র বর্ণনা করা হয়েছে।]
পনের- যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন একমাত্র ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত আদায় করবে না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة »
“যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত আদায় করা যাবে না”। [মুসলিম, হাদিস নং ৭১০; নফল সালাতের ফযিলত সম্পর্কে হাদিসটির তথ্যসূত্র বর্ণনা করা হয়েছে।]
ষোল- মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা সামনে বাড়াবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাধ্য অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জন, মাথা আঁচড়ানো, জুতা পরিধানসহ ইত্যাদি সব বিষয়ে ডান দিককে অধিক পছন্দ করেন। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন ডান পা দিয়ে শুরু করতেন এবং যখন বের হতেন, তখন বাম পা দিয়ে আরম্ভ করতেন। [বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা, হাদিস নং ৪২৬।] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সুন্নত হল, যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, ডান পা দিয়ে আরম্ভ করবে, আর যখন বের হবে, তখন বাম পা দিয়ে বের হবে। [বর্ণনায় হাকেম এবং তিনি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন মুসলিম শরীফের শর্তে। আর যাহাবী তার সাথে সহমত প্রকাশ করেন। ১১৮/১।] এবং এ দু'আ পড়বে,
« بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم إني أسألك من فضلك ]( [মুসলিম, হাদিস নং ১১৩, আবু দাউদ হাদিস নং ৪৬৫, মসজিদে প্রবেশের দুআ সম্পর্কে হাদিসটির তথ্যসূত্র বর্ণনা করা হয়েছে।]) [ اللهم اعصمني من الشيطان الرجيم » .
“ আল্লাহর নামে, আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহর উপর। হে আল্লাহ, তোমার অনুগ্রহ তোমার চাই। হে আল। হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্সা কর”। [ইবনে মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত, হাদিস নং ৭৭৩; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে ইবনে মাযাতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ৭৬৫।]
এক- নিজ ঘরে ওজু করা এবং ওজুকে যথাযথ ও পরিপূর্ণ করা। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ما من رجل يتطهر فيحسن الطهور ثم يعمد إلى مسجد من هذه المساجد إلا كتب الله له بكل خطوة يخطوها حسنة، ويرفعه بها درجة، ويحط عنه بها سيئة »
“যখন কোন ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করে এবং পবিত্রতাকে খুব সুন্দরভাবে করে, তারপর সে এ সব মসজিদসমূহ হতে কোন একটি মসজিদের দিকে যায়, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি কদমে একটি করে নেকী লিপিবদ্ধ করে, তার একটি মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৪, জামা‘আতে সালাত ওয়াজিব হওয়ার অধ্যায়ে তাখরিজ অতিবাহিত হয়েছে।]
দুই- দুর্গন্ধ হতে দূরে থাকা। জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من أكل ثوماً أو بصلاً فليعتزلنا، أو ليعتزل مسجدنا، وليقعد في بيته »
“যে ব্যক্তি পেয়াজ বা রশুন খায়, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং সে যেন তার নিজ ঘরে বসে থাকে”। মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فإن الملائكة تتأذَّى مما يتأذَّى منه الإنس» “নিশ্চয় ফেরেশতারা ঐ সব বস্তু হতে কষ্ট পায় যে বস্তু হতে মানুষ কষ্ট পায়”। মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من أكل البصل والثوم والكراث، فلا يقربنَّ مسجدنا؛ فإن الملائكة تتأذى مما يتأذى منه بنو آدم »
“যে ব্যক্তি পেয়াজ, রশুন ও কারাস খায় সে যেন আমাদের মসজিদের কাছেও না আসে। কারণ, আদম সন্তানেরা যে সব বস্তুতে কষ্ট পায়, ফেরেশতারাও তাতে কষ্ট পায়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস নং ৮৫৫; মুসলিম, হাদিস নং ৫৬৪, ৫৬১-৫৬৭, সালাতের মাকরূহ বিষয়ে আলোচনায় তথ্যসূত্র আলোচনা করা হয়েছে।]
তিন- সুন্দর কাপড় পরিধান ও সৌন্দর্য গ্রহণ করবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ ٣١ ﴾ [ الاعراف : ٣١ ]
“হে আদম সন্তান তোমরা প্রতিটি সালাতের সময় তোমাদের সৌন্দর্যকে অবলম্বন কর”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إن الله جميل يحب الجمال» “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন”। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: কিবির হারাম হওয়ার বর্ণনা, হাদিস নং ৯১।]
চার- ঘর থেকে বের হওয়ার দু'আ পড়বে এবং সালাতের নিয়তে ঘর থেকে বের হবে। এ দু'আ পড়বে-
« بسم الله توكلت على الله، ولا حول ولا قوة إلا بالله »
“আল্লাহর নামে আরম্ভ করলাম। আল্লাহর উপরই ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নাই এবং তিনি ছাড়া কোন বাধাদানকারী নাই”। [যখন এ কথা বলে, তখন বলা হবে, (( هُديت، وكفيت، ووقيت، فتتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر : كيف لك برجل قد هدي، وكفي ووقي ) তুমি হেদায়েত প্রাপ্ত হলে, যথেষ্ট হলে, এবং বেঁচে গেলে, তখন শয়তান তার থেকে দূরে সরে গেল। তখন আরেকজন শয়তান বলবে, “কেমন হবে সে ব্যক্তি যাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে এবং তাকে হেফাযত করা হয়েছে?” আবু দাউদ কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: ঘরথেকে বের হওয়ার সময় কি বলা হবে। হাদিস নং ৫০৯৫; তিরমিযি, কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কি বলবে সে বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৩৪২৬; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনান আত-তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ১৫১/৩।] এবং এ দু'আ পড়বে-
« اللهم إني أعوذ بك أن أضِلَّ أو أُضَلّ، أو أزِلَّ، أو أُزَلَّ، أو أظلِمَ أو أُظلَم، أو أجهل أو يُجهل عليَّ » [যখন এ কথা বলে, তখন বলা হবে, (( هُديت، وكفيت، ووقيت، فتتنحى له الشياطين، فيقول شيطان آخر : كيف لك برجل قد هدي، وكفي ووقي ) তুমি হেদায়েত প্রাপ্ত হলে, যথেষ্ট হলে, এব বেচে গেলে, তখন শয়তান তার থেকে দূরে সরে গেল। তখন আরেকজন শয়তান বলবে, কেন হবে সে ব্যক্তি সম্পর্কে যাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট বলে দেয়া হয়েছে এবং বাচানো হয়েছে। আবু দাউদ কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: ঘরথেকে বের হওয়ার সময় কি বলা হবে। হাদিস নং ৫০৯৫। তিরমিযি কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কি বলবে সে বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৩৪২৬। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১৫১/৩।]
“হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, পদস্খলন করা অথবা পদস্খলিত হওয়া থেকে। পথ হারিয়ে ফেলা বা অন্য কর্তৃক পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে। কারো উপর যুলম করা থেকে অথবা কারো দ্বারা নির্যাতিত হওয়া থেকে। কারো সাথে মুর্খতা-পূর্ণ আচরণ করা থেকে এবং মূর্খতা-জনিত আচরণের শিকার হওয়া থেকে”। [আবু দাউদ, কিতাবুল আদব, পরিচ্ছেদ: ঘরথেকে বের হওয়ার সময় কি বলা হবে। হাদিস নং ৫০৯৪; তিরমিযি, কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কি বলবে সে বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৩৪২৭। ইবনে মাযা, কিতাবুত দু‘আ, পরিচ্ছে: ঘর থেকে বের হওয়া দু’আ বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩৮৮৪। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে ইবনে মাযায় হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ৩৩৬/২।]
অথবা এ দু'আ পড়বে-
« اللهم اجعل في قلبي نوراً، وفي لساني نوراً، وفي سمعي نوراً، وفي بصري
نوراً، ومن فوقي نوراً، ومن تحتي نوراً، وعن يميني نوراً، وعن شمالي نوراً، ومن أمامي نوراً، ومن خلفي نوراً، واجعل في نفسي نوراً، وأعظم لي نوراً، وعظِّم لي نوراً، واجعل لي نوراً، واجعلني نوراً، اللهم أعطني نوراً، واجعل في عصبي نوراً، وفي لحمي نوراً، وفي دمي نوراً، وفي شعري نوراً، وفي بشري نوراً» .
“হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তর আলোকময় কর। আমার জবানকে তুমি আলোকময় কর। আমার কর্ণ আলোকময় কর, আমার চোখ জ্যোর্তিময় কর, আমার উপর, নীচকে আলোকময় কর। আমার সম্মূখ আলোকময় কর। আমার পশ্চাত আলোকময় কর। আমার ডানে আমার বামে, আমার উপরে আমার নিচে জ্যেতি ছড়িয়ে দাও। আমার অন্তরে নূর দাও। আমার জন্য তুমি নূরকে বৃহৎ ও মহান কর। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য আলো দান কর এবং আমাকে আলো বানিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নূর দাও, তুমি আমার শীরা, আমার গোস্ত, আমার রক্ত, আমার চুল ও চামড়ায় নূরকে ছড়িয়ে দাও। [বুখারি, কিতাবুত দাওয়াত, পরিচ্ছেদ: যখন ঘুম থেকে উঠে তখন কি বলবে। হাদিস নং ৬৩১৬, মুসলিম, কিতাবু সালাতুল মুসাফিরিন, পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত ও তার জন্য দু‘আ, হাদিস নং ৭৬৩; অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, ১৯১ [৭৬৩] فخرج إلى الصلاة وهو يقول . তারপর তিনি সালাতের দিকে বের হন এবং বলেন। এখানে যতগুলো বর্ণনা আছে, সবই আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনা।]
পাঁচ- মসজিদে যাওয়ার সময় রাস্তায় এবং সালাতে আঙ্গুল ফোটাবে না। কা’ব বিন আজরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا توضأ أحدكم فأحسن وضوءه، ثم خرج عامداً إلى المسجد فلا يشبكن بين أصابعه؛ فإنه في صلاة »
“যখন তোমাদের কেউ সুন্দরভাবে ওজু করে, তারপর সে মসজিদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, সে যেন তার আঙ্গুলগুলো না ফুটায়। কারণ, সে এখন সালাত-রত”। [তিরমিযি, হাদিস নং ৩৮৭, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, ১২১/১; হাদিসটির তাখরীজ সালাতের মাকরূহ বিষয় সমূহের আলোচনায় অতিবাহিত হয়েছে।]
ছয়:- মসজিদে যাওয়ার সময় শান্ত-সৃষ্ট ও গাম্ভীর্যের সাথে হাঁটবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا سمعتم الإقامة فامشوا إلى الصلاة وعليكم السكينة والوقار، ولا تُسرعوا، فما أدركتم فصلوا، وما فاتكم فأتموا »
“যখন তোমরা সালাতের ইকামত শুনবে, তোমরা শান্ত-সৃষ্ট ভাবে সালাতের দিক অগ্রসর হও। তোমরা তাড়াহুড়া করো না। তোমরা যা পাবে তা আদায় করবে, আর যা তোমাদের ছুটে যাবে তা পরিপূর্ণ করবে”। অপর শব্দে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا أقيمت الصلاة فلا تأتوها تسعون، وأتوها تمشون وعليكم السكينة، فما أدركتم فصلوا، وما فاتكم فأتموا »
“যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তোমরা দৌড়াবে না। তোমরা শান্ত-সৃষ্ট ভাবে পায়ে হেঁটে সালাতে হাজির হও, যত টুকু পাও তা আদায় কর আর যতটুকু তোমাদের ছুটে যায়, তা তোমরা পরিপূর্ণ কর”। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, কিতাবুল আযান, পরিচ্ছেদ: সালাতের দিকে দৌড়বে না, শান্ত সৃষ্টভাবে সালাতে উপস্থিত হবে। হাদিস নং ৬৩৬; জুমু‘আহ অধ্যায়, জামাআতে হাযির হওয়া প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৯০৮; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ, সালাতে শান্ত সৃষ্টভাবে উপস্থিত হওয়া মুস্তাহাব এবং দৌড়ে আসা নিষিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা, হাদিস নং ৬০২।]
উল্লেখিত হাদিসে শান্ত-সৃষ্ট ও নমনীয়তার সাথে সালাতে উপস্থিত হওয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং দৌড়ে সালাতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জুমু’আর সালাত হোক বা অন্য যে কোন সালাত হোক না কেন। প্রথম তাকবীর পাক বা না পাক সর্বাবস্থায় তাড়াহুড়া থেকে বিরত থাকবে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী -« إذا سمعت الإقامة » তে ইকামতের কথা উল্লেখ করার কারণ, অধিক সতর্ক করা ও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। কারণ, যখন ইকামত হয়, তখন সালাতের কিছু অংশ ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন যেহেতু তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে ইকামতের পূর্বে দৌড়ে আসার কোন প্রশ্নই আসে না। এর কারণ বর্ণনা দিয়ে হাদিসের পরবর্তী অংশ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فإن أحدكم إذا كان يعمد إلى الصلاة فهو في صلا ة » “কারণ, যখন তোমাদের কেউ সালাতের ইচ্ছা করে, সালাতের মধ্যেই থাকে”।
এ কথাটি সালাতে আগমনের পুরো সময়টাকে শামিল করে। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেকটি তাকীদ নিয়ে আসেন এবং বলেন, [ فما أدركتم فصلوا وما فاتكم فأتموا ] “তোমরা যা পেলে তা আদায় কর, আর যা ছুটে গেল, তা পরিপূর্ণ কর”। মোট কথা হাদিসে সতর্কতা ও তাকীদ সবই বিদ্যমান, যাতে কেউ এ কথা বলতে না পারে এখানে নিষেধ করাটা শুধু তার জন্য যে সালাতের কিছু অংশ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা না করে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে দেন যে, যদিও সালাতের কিছু অংশ ছুটে যায়। আর ছুটে যাওয়া সালাত কি করবে তাও তিনি বলে দেন।
সাত- মসজিদে প্রবেশ করার পূর্বে জুতা-দ্বয় দেখে নেবে। যদি তাতে কোন নাপাক কিছু থাকে তাহলে, তা মাটি দ্বারা মুছে নেবে। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا جاء أحدكم إلى المسجد فلينظر فإن رأى في نعليه قذراً أو أذى فليمسحه وليصلِّ فيهما »
“যখন তোমরা মসজিদে আসবে, তোমরা তোমাদের জুতার দিকে দেখ, যদি তোমরা তাতে কোন নাপাক বা ময়লা দেখ, তা মুছে ফেল এবং জুতাসহ সালাত আদায় কর”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: জুতাদ্বয় পরিধান করে সালাত আদায় প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৬৫০; ইবনু খুজাইমা, ১০১৭; সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]
মাটিতে মাসেহ করা দ্বারা জুতাদ্বয় পাক হয়ে যায়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إذا وطئ أحدكم بنعليه الأذى فإن التراب له طهور» “যদি তোমাদের কেউ তার জুতা দ্বারা কোন নাপাক বস্তু পাড়ায়, মাটি হল তার পবিত্রতা”। অপর শব্দে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إذا وطئ الأذى بخفيه فطهورهما التراب » “যখন তোমাদের কেউ তার মুজাদ্বয় দ্বারা নাপাক বস্তুকে পাড়ায়, তার পবিত্রতা হল মাটি”।
আট- মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে ডান পা বাড়িয়ে দেবে এবং এ দোয়া পড়বে-
(( أعوذ بالله العظيم وبوجهه الكريم، وسلطانه القديم، من الشيطان الرجيم ))( [যখন এ কথা বলবে তখন শয়তান বলবে, আমার থেকে সারাদিনের জন্য সে নিরাপদ। আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচেছদ: একজন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের সময় কি বলবে, হাদিস নং ৪৬৬; সহীহ সূনানে আবু দাউদে আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হতে বর্ণিত হাদিসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, ৯২/১।]). [ بسم الله والصلاة ]( [রাত দিনের আমলসমূহের আলোচনায় আল্লামা ইবনুস সূন্নী, হাদিস নং ৮৮; আর আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন।]) [ والسلام على رسول الله ]( [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: মসজিদের প্রবেশের সময় কি বলবে, হাদিস নং ৪৬৫; আর আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।]) [ اللهم افتح لي أبواب رحمتك ]؛
প্রমাণ- আমি হুমাইদ বা আবি উসাইদ হতে হাদিস বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا دخل أحدكم المسجد فليقل : اللهم افتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج فليقل : اللهم إني أسألك من فضلك »
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন বলে, হে আল্লাহ তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। আর যখন বের হয়, তখন বলবে, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার অনুগ্রহ কামনা করি”। [মুসলিম, কিতাবু সালাতিল মুসাফিরিন ও সালাতে কসর করা। পরিচ্ছেদ: কি বলবে, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে, হাদিস নং ১১৩।]
নয়- যখন মসজিদে প্রবেশ করবে যারা মসজিদের ভিতরে আছে তাদের এমন আওয়াজে সালাম দেবে যাতে তারা শুনতে পায়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، أوَلا أدلّكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم »
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি ঈমানদার না হবে, আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালো না বাসবে। আর আমি কি তোমাদের এমন একটি জিনিস বাতিয়ে দেব, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার কর”। [মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ : জান্নাতে মুমিন ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করবে না, হাদিস নং ৫৪।] আম্মার বিন ইয়াছির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«ثلاث من جمعهن فقد جمع الإيمان : الإنصاف من نفسك، وبذل السلام للعالم، والإنفاق من الإقتار »
“তিনটি বিষয়কে যে ব্যক্তি একত্র করবে, সে ঈমানকে একত্র করল। নিজের ব্যাপারে ইনসাফ করা, আলেমদের সালাম দেয়া এবং অভাবের সময় দান করা”। [বুখারি, কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ : সালাম ইসলাম। ১৫/১]
দশ- তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকাত সালাত আদায় করবে। সালাতের ওয়াক্ত হলে যখন মুয়াজ্জিনের আযানের পর মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন যদি ঐ ওয়াক্ত সালাতের সুন্নতে রাতেবাহ থাকে তাহলে সুন্নাতে রাতেবা পড়বে, আর যদি সুন্নাতে রাতেবা না থাকে, তাহলে আযান ও ইকামাতের মাঝের দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেবে। তাহলে আর তাহিয়্যাতুল মসজিদ আলাদা করে পড়তে হবে না। আর যদি সালাতের ওয়াক্ত দাখিল হওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে, তাহলে তাকে অবশ্যই তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই সালাত আদায় করতে হবে। আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « إذا دخل أحدكم المسجد فلا يجلس حتى يصلي ركعتين » “যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দুই রাকাত সালাত আদায় করা ব্যতীত মসজিদে না বসে”।
এগার- যখন কোন ব্যক্তি মসজিদের ভিতরে জুতা খুলে, সে যেন তা তার উভয় পায়ের মাঝখানে রাখে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا صلى أحدكم فخلع نعليه فلا يؤذي بهما أحداً، ليجعلهما بين رجليه، أو ليصلِّ فيهما »
যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে এবং জুতা-দ্বয় খুলে ফেলে, সে যেন জুতা-দ্বয় দ্বারা কাউকে কষ্ট না দেয়। জুতা-দ্বয়কে তার উভয় পায়ের মাঝখানে রাখে অথবা জুতা নিয়ে সালাত আদায় করে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا صلى أحدكم فلا يضع نعليه عن يمينه ولا عن يساره فتكون عن يمين غيره، إلا أن لا يكون عن يساره أحد وليضعهما بين رجليه »
“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, সে তার জুতাকে ডান দিকে রাখবে না এবং বাম দিকেও না। তখন অপর ভাইয়ের ডানে হবে। হ্যাঁ, যদি তার বামে কেউ না থাকে তখন কোন অসুবিধা নাই। জুতাকে তার উভয় পায়ের মাঝখানে রাখবে”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ : একজন মুসল্লি যখন তার পাদুকাদ্বয় খোলে তখন কোথায় রাখবে, হাদিস নং ৬৫৪, ৬৫৫; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ১২৮/১।] আমি আমার শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “জুতা পরে সালাত আদায় করা ইয়াহুদীদের সুন্নতের পরিপন্থী। তবে লক্ষ্য রাখার পর যদি জুতার মধ্যে কোন নাপাক বস্তু দেখে, তাহলে মাটি, পাথর ইত্যাদি দ্বারা তা পরিষ্কার করে নেবে। তবে যে সব মসজিদে বিছানা বিছানো থাকে সেখানে কিছু মানুষের অবহেলার কারণে ধুলা বালি পাওয়া যায়। ফলে মানুষ মসজিদ থেকে চলে যেতে চায়। এ কারণে আমার নিকট উত্তম হল, জুতা রাখার জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করবে”। [আমি তার থেকে এ কথাগুলো বুলুগুল মারাম কিতাবের হাদিস নং ২৩২ ও ২৩৩ ব্যাখ্যা দেয়ার সময় শুনেছি।]
বার- কাউকে কষ্ট দেয়া ও ভিড় করা ছাড়া যদি সম্ভব হয়, ইমামের ডান পাশে প্রথম কাতারে বসবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لو يعلم الناس ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه لاستهموا »
যদি মানুষ জানত, আযান দেয়া ও প্রথম কাতারে বসার মধ্যে কত ছাওয়াব তা লাভ করার জন্য লটারি দেয়ার প্রয়োজন হলে তারা লটারিতে অংশ গ্রহণ করত। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুল আযান, হাদিস নং ৬১৫; মুসলিম, হাদিস নং ৪৩৭; তথ্য আযানের ফযিলত বিষয় আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « إن الله وملائكته يصلون على ميامن الصفوف » “আল্লাহ তা‘আলা ও তার ফেরেশতারা কাতারের ডান দিকের উপর রহমত নাযিল করে”। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৬৭৬, ইবনে মাযা, হাদিস নং ১০০৫। আল্লামা মুনযিরি হাদিসটিকে হাসান বলেন; ইবন হাজার, ফতহুল বারী ২১৩/২।]
তের- মসজিদে কিবলা মুখী হয়ে বসে কুরআন তিলাওয়াত করবে অথবা আল্লাহর যিকর করবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
« إن لكل شيء سيداً، وإن سيد المجالس قبالة القبلة »
“প্রতিটি বস্তুর একজন সরদার রয়েছে। আর মজলিস সমূহের সরদার হল, কিবলাকে সামনে রেখে বসা”। [তাবরানী, আল-আওসাত [মাজমায়ুল বাহরাইন ২৭৮/৫, হাদিস নং ৩০৬২]; আল্লামা হাইসামী, মাজমায়ুয যাওয়ায়েদ ৫৯/৮ গ্রন্থে বলেন, “ হাদিসটি তাবরানী আওসাতে উল্লেখ করেন, আর তার সনদ বিশুদ্ধ”।]
চৌদ্দ- সালাতের অপেক্ষা করার নিয়ত করবে এবং কাউকে কষ্ট দেবে না। কারণ, সে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষা করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতের আগে বা পরে স্বীয় জায়নামাজে অবস্থান করবে ফেরেশতারা তার উপর রহমতের দোয়া করতে থাকে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يزال العبد في صلاة ما كان في مصلاه ينتظر الصلاة، وتقول الملائكة : اللهم اغفر له، اللهم ارحمه ... »
“যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বান্দা সালাতের অপেক্ষা করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতেই থাকবে। আর ফেরেশতারা বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ তুমি তাকে দয়া কর...”।
«والملائكة يصلون على أحدكم مادام في مجلسه الذي صلى فيه، يقولون : اللهم ارحمه، اللهم اغفر له، اللهم تب عليه، ما لم يُؤذِ، ما لم يُحدث »
“যতক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতের আগে বা পরে স্বীয় জায়নামাজে অবস্থান করবে ফেরেশতারা তার উপর রহমতের দোয়া করতে থাকে। তারা বলবে, হে আল্লাহ! তুমি তাকে দয়া কর, ক্ষমা কর। হে আল্লাহ তার তওবা কবুল কর, যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং নাপাক না হয়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস নং ৬৪৭; মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৯; জামাআতে সালাতের ফযিলত সম্পর্কে হাদিসটির তথ্যসূত্র বর্ণনা করা হয়েছে।]
পনের- যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন একমাত্র ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত আদায় করবে না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة »
“যখন সালাতের ইকামত দেয়া হয়, তখন ফরয সালাত ছাড়া আর কোন সালাত আদায় করা যাবে না”। [মুসলিম, হাদিস নং ৭১০; নফল সালাতের ফযিলত সম্পর্কে হাদিসটির তথ্যসূত্র বর্ণনা করা হয়েছে।]
ষোল- মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় বাম পা সামনে বাড়াবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাধ্য অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জন, মাথা আঁচড়ানো, জুতা পরিধানসহ ইত্যাদি সব বিষয়ে ডান দিককে অধিক পছন্দ করেন। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন ডান পা দিয়ে শুরু করতেন এবং যখন বের হতেন, তখন বাম পা দিয়ে আরম্ভ করতেন। [বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা, হাদিস নং ৪২৬।] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সুন্নত হল, যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, ডান পা দিয়ে আরম্ভ করবে, আর যখন বের হবে, তখন বাম পা দিয়ে বের হবে। [বর্ণনায় হাকেম এবং তিনি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন মুসলিম শরীফের শর্তে। আর যাহাবী তার সাথে সহমত প্রকাশ করেন। ১১৮/১।] এবং এ দু'আ পড়বে,
« بسم الله والصلاة والسلام على رسول الله، اللهم إني أسألك من فضلك ]( [মুসলিম, হাদিস নং ১১৩, আবু দাউদ হাদিস নং ৪৬৫, মসজিদে প্রবেশের দুআ সম্পর্কে হাদিসটির তথ্যসূত্র বর্ণনা করা হয়েছে।]) [ اللهم اعصمني من الشيطان الرجيم » .
“ আল্লাহর নামে, আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহর উপর। হে আল্লাহ, তোমার অনুগ্রহ তোমার চাই। হে আল। হে আল্লাহ, আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্সা কর”। [ইবনে মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত, হাদিস নং ৭৭৩; আর আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে ইবনে মাযাতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ৭৬৫।]
এক- মসজিদসমূহ পরিষ্কার করা, মসজিদ সুগন্ধময় রাখা এবং মসজিদ সংরক্ষণ করা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
« أمر رسول الله صلى الله عليه و سلم ببناء المساجد في الدور وأن تنظف، وتطيب »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিভিন্ন বাড়ীতে বাড়ীতে (তথা এলাকায়) মসজিদ বানানো [বাড়ীতে বাড়ীতে মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা : সুফিয়ান রাহিমাহুল্লাহু বলেন, অর্থাৎ বিভিন্ন গোত্রে মসজিদ বানানো। দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীর রাহিমাহুল্লাহু এর জামেউল উসুল ২০৮/১১।] এবং মসজিদকে পরিষ্কার করা ও সুগন্ধময় করার নির্দেশ দেন”। [আহমদ মুসনাদ ২৭৯/৬; আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: বাড়ীতে মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদীস নং ৪৫৫; তিরমিযি, কিতাবুল জুমুআ, মসজিদকে সু-গন্ধী লাগানো বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৫৯৪; ইবনে মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ওয়াল জামা‘আত, হাদিস নং ৭৫৮, ৭৫৯; আর আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ৯২/১।]
সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি তার ছেলের নিকট এ বলে চিঠি লেখেন- (( أما بعد، فإن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يأمرنا بالمساجد أن نصنعها في دورنا، ونصلح صنعتها، ونطهرها )). “অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আমাদের এলাকায় মসজিদ বানানো এবং মসজিদের সংস্কার করা ও পবিত্র করার নির্দেশ দিতেন”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: বাড়ি বাড়ি মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৫৬। আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯২/১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن رجلاً أسودَ أو امرأة سوداء كان يقمُّ المسجد فمات ولم يعلم النبي صلى الله عليه و سلم بموته، فذكره ذات يوم، فقال : « ما فعل ذلك الإنسان »؟ قالوا : مات يا رسول الله، قال : « أفلا آذنتموني » ؟ فقالوا : إنه كان كذا وكذا قصته، قال : فحقروا شأنه، قال : « دلّوني على قبره » أو قال : « على قبرها » فأتى قبرها فصلى عليها، [ ثم قال : « إن هذه القبور مملوءة ظلمة على أهلها، وإن الله تعالى ينوِّرها لهم بصلاتي عليهم » .
“একজন কালো ব্যক্তি বা মহিলা মসজিদ পরিষ্কার করত। [ قَمُّ المسجد অর্থাৎ, পরিস্কার করা, দেখুন: আল্লামা মুনযিরির, আত-তারগীব ও আত-তারহীব: ২৬৮/১।] লোকটি মারা গেল কিন্তু তার মৃত্যু সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হয়নি। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আলোচনা করে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বললেন, ঐ লোকটি কি করলেন? তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল লোকটি মারা গেল। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? তারা বলল, সে ছিল এমন এবং তার ঘটনা এই। মোট কথা তারা তার বিষয়টিকে খাট করে দেখলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে তার কবর দেখাও অথবা বললেন, তার [মহিলার] কবর দেখাও। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবরের উপর এসে তার জন্য দু'আ করল। তারপর তিনি বললেন, কবরসমূহ কবর বাসীর জন্য অন্ধকারে পরিপূর্ণ। আর আল্লাহ তা‘আলা কবরসমূহের উপর আমার দু'আ করা দ্বারা আলোকিত করবেন। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: كنس المسجد والتقاط الخرق، والأذى، والعيدان، হাদিস নং ৪৫৮; কিতাবুল জানায়েয, পরিচ্ছেদ: দাফনের পর কবরের উপর সালাত আদায়, হাদিস নং ১৩৩৭; মুসলিম, কিতাবুল জানায়েয, পরিচ্ছেদ: দাফনের পর কবরের উপর সালাত আদায়, হাদিস নং ৯৫৬।] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
بينما نحن في المسجد مع رسول الله صلى الله عليه و سلم، إذ جاء أعرابي فقام يبول في المسجد، فقال أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم : مه، مه ؟ قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « لا تزرموه دعوه » فتركوه حتى بال، ثم إن رسول الله صلى الله عليه و سلم دعاه فقال له : « إن هذه المساجد لا تصلح لشيء من هذا البول والقذر، إنما هي لذكر الله تعالى والصلاة، وقراءة القرآن » أو كما قال رسول الله صلى الله عليه و سلم، قال : فأمر رجلاً من القوم فجاء بدلوٍ من ماءٍ فشنَّه عليه )).
“একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম তখন একজন গ্রাম্য লোক এসে মসজিদে দাড়িয়ে পেশাব করা আরম্ভ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাকে বলল, থাম থাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে বাধা দিও না। তাকে তোমরা আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও। তারপর তাকে তারা বাধা দিলেন না। সে নিরাপদে পেশাব করার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ যিকর, কুরআন তিলাওয়াত ও সালাত আদায়ের জন্য। এখানে পেশাব-পায়খানা করা চলবে না। অথবা রাসূল যেভাবে বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর এক লোককে এক বালতি পানি এনে তার উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দেন এবং পানি ঢেলে দেন। [বুখারি ও মুসলিম: কিতাবুল ওজু অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদের ভিতরে পেশাবের উপর পানি ঢেলে দেয়ার আলোচনা, হাদিস নং, ২২১; মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়, পেশাব ইত্যাদি নাপাক বস্তু যখন মসজিদে পাওয়া যায়, তা ধোয়া ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে, আর যমিন পানি দ্বারা পরিস্কার হয়ে যায়, কোন প্রকার খনন করা ছাড়াই, হাদিস নং ২৮৫।] আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «البزاق في المسجد خطيئة، وكفَّارتها دفنه » “মসজিদে থু থু ফেলা অন্যায় আর তার কাফ্ফারা হল, তা দাফন করে দেয়া”। মুসলিমের অপর শব্দে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «التفل في المسجد خطيئة وكفارتها دفنها» “মসজিদে থু থু ফেলা অন্যায়, আর তার কাফ্ফারা হল, তা দাফন করে দেয়া (অর্থাৎ পা মাড়িয়ে ঢেকে ফেলা)”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস সালাত, মসজিদে থু থু ফেলার কাফফরাহ, হাদিস নং ৪১৫; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, সালাত ইত্যাদিতে মসজিদে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ হওয়া এবং মুসল্লি তার সামনে বা ডানে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ৫৫২।] আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عُرضت عليّ أعمال أمتي : حسنها وسيئها، فوجدت في محاسن أعمالها، الأذى يُماط عن الطريق، ووجدت في مساوئ أعمالها النخاعة تكون في المسجد ولا تدفن »
“আমার উম্মতের নেক আমল এবং বদ-আমলসমূহ আমার নিকট পেশ করা হল। আমি তাদের নেক আমলসমূহের মধ্যে দেখতে পেলাম রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। আর তাদের খারাব আমলসমূহে দেখতে পেলাম মসজিদে থু থু ফেলা হয়েছে অথচ তা দাফন করা হয়নি”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ, পরিচ্ছেদ, মসজিদে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ৫৫৩।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ কথা স্পষ্ট এখানে যে খারাবী ও দুর্নামের কথা বলা হয়েছে, তা শুধু যে ব্যক্তি থু থু ফেলে তার সাথে খাস নয়; বরং যে ব্যক্তি দেখা সত্ত্বেও তা ঢেকে দয়ে দাফন করেনি অথবা খোঁচা ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার করেনি সবই তার অন্তর্ভুক্ত। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৪৫/৫।]
দুই- যখন মসজিদে যাবে তখন দুর্গন্ধ হতে দূরে থাকবে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من أكل ثوماً أو بصلاً فليعتزلْنا، أو ليعتزلْ مسجدَنا، وليقعدْ في بيته »
“যে ব্যক্তি পেয়াজ বা রশুন খায়, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং সে যেন তার স্বীয় ঘরে বসে থাকে”।
মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فإن الملائكة تتأذَّى مما يتأذَّى منه الإنس» “নিশ্চয় ফেরেশতারা ঐ সব বস্তু হতে কষ্ট পায়, যে বস্তু হতে মানুষ কষ্ট পায়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস: ৮৫৫; মুসলিম, হাদিস: ৫৬৪; মাকরুহাতে সালাতের আলোচনায় হাদিসটির তাখরীয উল্লেখ করা হয়েছে।] ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষকে এ বলে ভাষণ দেন,
«إنكم أيها الناس تأكلون شجرتين لا أراهما إلا خبيثتين، هذا البصل والثوم، لقد رأيت رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا وجد ريحهما من الرجل في المسجد أمر به فأُخرج، فمن أكلهما فليمتهما طبخاً»
“হে মানুষ তোমরা দুটি গাছ খাও এ দুটিকে খবীস বলেই মনে করি। গাছ দুটি হল, পেয়াজ ও রশুন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেছি, তিনি মসজিদে কোন মানুষ থেকে এ দুটি গাছের দুর্গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। যদি কেউ খায় সে যেন গাছ দুটিকে সম্পূর্ণ পাক করে নেয়”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের আলোচনা, হাদিস: ৫৬৬।]
তিন- মসজিদে সালাতের জামা‘আত কায়েম করা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য মসজিদ ছাড়া সালাত আদায় করা জায়েয নাই। এ বিষয়টির উপর প্রমাণ ঐ সব দলীল যেগুলো জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হওয়াকে প্রমাণ করে। মনে রাখবে, জামা‘আতে সালাত আদায় করা ফরযে আইন [জামা‘আতে সালাতের বিধানের আলোচনায় এ বিষয়ের দলীলসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।] তবে যদি মসজিদ পাওয়া না যায় অথবা মসজিদ অনেক দূরে; আযান শোনা যায় না অথবা সফরে অবস্থান করছে, তখন জামা‘আতে সালাত আদায় করা ফরয নয়। জামা‘আত শুধু সক্ষম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব, অক্ষমের উপর নয়। যারা অক্ষম তারা যে কোন পবিত্র স্থানে সালাত আদায় করে নেবে। কারণ, যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أُعطيت خمساً لم يُعطهنّ أحد قبلي : نُصرت بالرعب مسيرة شهر، وجُعِلت لي الأرض مسجداً وطهوراً، فأيما رجل من أمتي أدركته الصلاة فليصلِّ، وأحلت لي الغنائم ولم تُحلّ لأحد قبلي، وأعطيت الشفاعة، وكان النبي يُبعث إلى قومه خاصة وبُعثتُ إلى الناس عامة»
“আমাকে পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি। আমাকে একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত ভীতি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছ। আমার জন্য যমিনকে মসজিদ ও পবিত্র করা হয়েছে। সুতরাং, আমার উম্মত হতে যে কোন লোককে সালাতের ওয়াক্ত পেয়ে বসে সে যেন সালাত আদায় করে নেয়। আমার জন্য গণিমতের সম্পদকে হালাল করা হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি। আমাকে সুপারিশ দেয়া হয়েছে। আর প্রত্যেক নবী তার সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে আর আমাকে সমগ্র মানুষের নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি,তায়াম্মুম অধ্যায়, হাদিস, ৩৩৫। মুসলিম কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের আলোচনা, হাদিস: ৫২১।] ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যে ব্যক্তি হাদিসসমূহে ভালোভাবে চিন্তা করে, তার নিকট এ কথা স্পষ্ট হবে, মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা ফরযে আইন। তবে কোন কোন অপরাগতা এমন আছে যেগুলোর কারণে জামা‘আত ও জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দেয়া বৈধ। কোন প্রকার অপারগতা ছাড়া মসজিদে উপস্থিত হওয়া ছেড়ে দেয়া, বিনা ওজরে জামা‘আত ছেড়ে দেয়ার নামান্তর। সুতরাং আমরা যে সিদ্ধান্ত দ্বারা আল্লাহর দ্বীনকে মানব, একমাত্র ওজর ছাড়া মসজিদে সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকে জায়েয নাই। আল্লাহই ভালো জানেন কোনটি বিশুদ্ধ [আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম, কিতাবুস সালাত পৃ: ৮৯।]।
চার, কবরকে মসজিদ বানানো হারাম হওয়া: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল বলেন, (( لعن الله اليهود والنصارى اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد ))؛ আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অভিশাপ করেন। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন, আবুল ইয়ামান, হাদিস: ৪৩৬; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩০।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ও আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস তারা উভয়ে ইরশাদ করেন,
(( لَمّا نزل برسول الله صلى الله عليه و سلم طفق يطرح خميصة له على وجهه، فإذا اغتم بها كشفها عن وجهه، فقال وهو كذلك : «لعنة الله على اليهود والنصارى، اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد يحذر ما صنعو »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যখন মালাকুল মাওত উপস্থিত হল, [মালাকুল মওত হলেন মৃত্যুর ফেরেশতা।] তখন তার চেহারার উপর একটি উড়না রাখা হল। [আরম্ভ করল।] যখন তা দিয়ে তার চেহারা ডেকে দেয়া হত, তখন তিনি তা খুলে ফেলতেন। [অর্থাৎ, ঢেকে দেয়া হল।] তখন তিনি এ অবস্থায় বলেন, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানের উপর আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়েছেন। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা যা করত, তা থেকে উম্মতকে সতর্ক করেন। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন, আবুল ইয়ামান, হাদিস: ৪৩৬; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩০।]
জুনদব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্বে আমি তাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন,
« إني أبرأ إلى الله أن يكون لي منكم خليل؛فإن الله تعالى قد اتخذني خليلاً كما اتخذ إبراهيم خليلاً، ولو كنت مُتخذاً من أمتي خليلاً لاتخذت أبا بكر خليلاً، ألا وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم وصالحيهم مساجد، ألا فلا تتخذوا القبور مساجد، فإني أنهاكم عن ذلك»
“আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্য হতে কেউ আমার বন্ধু হওয়া থেকে মুক্তি চাচ্ছি। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেন যেমনটি তিনি ইব্রাহিমকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেন। আমি যদি আমার উম্মত থেকে কাউকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতাম। মনে রেখ! তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের নবী ও নেক লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ বানাত। মনে রেখ, তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ বানিও না। কারণ, আমি তোমাদের এ থেকে নিষেধ করছি”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া, কবরের উপর মুর্তি স্থাপন করা নিষিদ্ধ হওয়া এবং কবরকে মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩২।]
وعن عائشة أن أم حبيبة وأم سلمة رضي الله عنهن ذكرتا كنيسة رأينها بالحبشة فيها تصاوير، فَذَكرتا للنبي صلى الله عليه و سلم فقال : « إنَّ أولئك إذا كان فيهم الرجل الصالح فمات بنوا على قبره مسجداً، وصوَّروا فيه تلك الصور، أولئك شرار الخلق عند الله تعالى يوم القيامة »
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, উম্মে হাবীবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা ও উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তারা উভয়ে মুলকে হাবসাতে দেখা একটি উপাসনালয়ের কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে মূর্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের মধ্যে যখন কোন ভালো লোক মারা যেত, তারা তাদের কবরের উপর মসজিদ বানাত এবং এ সব মূর্তি গুলো তাদের আকৃতিতে তৈরি করত। এরা আল্লাহর কিয়ামতের দিব সর্বাধিক নিকৃষ্ট সৃষ্টি। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, কিতাবুস সালাত, باب هل تنبش قبور مشركي الجاهلية ويتخذ مكانها مساجد، হাদীস নং ৪২৭; মুসলিম, মুসলিম কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া, কবরের উপর মুর্তি স্থাপন করা নিষিদ্ধ হওয়া এবং কবরকে মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩২।]
পাঁচ: জরুরতের সময় কাফেরের মসজিদে প্রবেশ করা কোন প্রকার ক্ষতি করা ও কষ্ট দেয়া ছাড়া। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
بعث النبي صلى الله عليه و سلم خيلاً قِبَلَ نجدٍ فجاءت برجل من بني حنيفة يقال له : ثمامة بن أثال، فربطوه بسارية من سواري المسجد، فخرج إليه النبي صلى الله عليه و سلم فقال : « أطلقوه »فانطلق إلى نخل قريب من المسجد، فاغتسل، ثم دخل المسجد فقال : أشهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله .
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্য দলকে নজদের দিকে প্রেরণ করলে তারা হানিফা গোত্র থেকে সুমামা ইবনুল আসাল নামক একজন লোককে ধরে নিয়ে আসেন এবং তাকে মসজিদের খুঁটিসমূহ হতে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট গিয়ে বললেন, তাকে তোমরা ছেড়ে দাও। তারপর সে মসজিদের নিকট একটি বাগানের দিকে গিয়ে গোসল করল তারপর মসজিদে প্রবেশ করল এবং বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস, সালাত, যখন ইসলাম কবুল করবে, তখন গোসল করা ও মসজিদে বন্দীদের বেঁধে রাখা, হাদিস: ৪৬২; পরিচ্ছেদ: মুশরিকের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা। মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ, পরিচ্ছেদ: কয়েদীকে বন্দী করা ও বেঁধে রাখা এবং তার উপর ইহসান করা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস: ১৭৬৪।] এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, মুশরিক প্রয়োজনের সময় মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। তবে মসজিদে হারামে প্রবেশ করতে পারবে না। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম, ১৮৫/২] আমি আমার শাইখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত মসজিদে কাফেরকে বাঁধা যায়। এ হাদিস দ্বারা আরও প্রমাণিত হয়, কাফেরের জন্য মদিনায় প্রবেশ করা বৈধ। তবে মক্কায় প্রবেশ করা জায়েয নাই। আর হাদিসটি দ্বারা প্রমাণিত হয়, প্রয়োজনের সময় কাফের মসজিদের প্রবেশ করতে পারবে। মদিনার মসজিদে কাফের ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারলে অন্য মসজিদগুলোতে প্রবেশ না করতে পারা গ্রহণযোগ্য নয়। [বুলুগুল মুরাম ২৬৫ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি বলতে শুনেছি।]
ছয়- মসজিদে ভালো অর্থবোধক উপকারী কবিতা পড়া বৈধ। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن عمر رضى الله عنه مرّ بحسان رضى الله عنه وهو ينشد الشعر في المسجد، فلحظ إليه فقال : قد كنت أنشدُ وفيه من هو خير منك، ثم التفت إلى أبي هريرة فقال : أنشدك الله أسمعت رسول الله يقول : «أجب عني اللهم أيِّده بروح القدس » قال : اللهم نعم .
"ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাসসান বিন সাবেতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হাসসান মসজিদে কবিতা আবৃতি করছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকালেন। তখন তিনি বললেন, আমি মসজিদে কবিতা আবৃতি করতাম যে অবস্থায় মসজিদে তোমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। তারপর তিনি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহ শপথ দিয়ে বলছি, তুমি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলতে শুনোনি? আমার পক্ষ থেকে উত্তর দাও! (রাসূল বলছেন,) “হে আল্লাহ তুমি তাকে রুহুল কুদ্স দ্বারা সাহায্য কর”। উত্তরে আবু হুরাইরা বললেন, হ্যাঁ"। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, মসজিদের কাব্য বলা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৫৩; মুসলিম, সাহাবীদের ফযিলত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: হাসসান বিন সাবেতের রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ফযিলত বিষয় আলোচনা, হাদিস নং২৪৮৫] এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে সব কবিতা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে, তা মসজিদে আবৃত্তি করা জায়েয আছে। কারণ, কবিতা আবৃত্তি মানুষের অন্তরে বিশাল প্রভাব ফেলে এবং মানুষকে হকের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। আর যে সব হাদিসে মসজিদের ভিতর কবিতা আবৃত্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা জাহিলিয়্যতের যুগের কবিতা এবং বাতিলদের কবিতা। মোট কথা যেগুলোর অনুমতি দেয়া হয়েছে, সে গুলো জাহিলিয়্যাত হতে নিরাপদ। আবার কেউ কেউ বলেন, এমন কবিতা হতে হবে যা মসজিদে উপস্থিত লোকদের কোন প্রকার বিঘ্ন না ঘটায় ।
সাত- মসজিদে হারানো বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করা। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من سمع رجلاً ينشد ضالة ( [ ينشُدُ শব্দটি من نشدت إذا طلبت হতে। দেখুন: সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৫৮/৫]) في المسجد فليقل : لا ردّها الله عليك؛فإن المساجد لم تُبنَ لهذا »
“যে ব্যক্তি কোন মানুষকে মসজিদে হারানো বস্তু তালাশ করতে শুনবে, সে যেন বলে, আল্লাহ তা‘আলা যেন, তোমাকে ফেরত না দেয়। কারণ মসজিদসমূহ এ জন্য বানানো হয়নি”। [মুসলিম কিতাবুল মাসাজিদ, মসজিদে কোন হারানো বস্তু তালাশ করা বিষয়ে আলোচনা। কাউকে তালাশ করতে দেখলে কি বলবে।] বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن رجلاً نشد في المسجد فقال : من دعا إلى الجمل الأحمر؟ فقال النبي صلى الله عليه و سلم : « لا وجدتَ إنما بُنيت المساجد لِمَا بُنيت له »
“এক ব্যক্তি মসজিদের হারানো বস্তু সম্পর্কে ঘোষণা দিয়ে বলে, আমার লাল উট পেয়ে আমাকে কে খবর দেবে [দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীরের জামেয়ুল উসুল ২০৪/১১।] ? তার কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি পাবে না, মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদের উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য (হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়ার জন্য নয়)”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, মসজিদে কোন হারানো বস্তু তালাশ করা বিষয়ে আলোচনা। কাউকে তালাশ করতে দেখলে কি বলবে, হাদিস নং ৫৬৯।]
উল্লেখিত হাদিসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়, মসজিদের ভিতরে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া যে সব কাজ উল্লেখিত বিষয়ের সমর্থক হবে, তার বিধানও এর সাথে সম্পৃক্ত করা হবে। যেমন- মসজিদে বেচা-কেনা করা, বন্ধক দেয়া ইত্যাদি যাবতীয় লেনদেন নিষিদ্ধ এবং মসজিদে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা মাকরুহ। হাদিস দ্বারা আরও প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তু তালাশ করে, সে আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা ও নাফরমানি করার শাস্তিস্বরূপ তার উপর বদ দোয়া করা বৈধ। আর যে শোনে সে যেন এ কথা বলে, ‘তুমি পাবে না’, কারণ, মসজিদ এ জন্য বানানো হয় নাই। ‘তুমি পাবে না মসজিদকে মসজিদের উদ্দেশ্যেই বানানো হয়েছে’। আর الضالة শব্দের অর্থ হারানো বস্তু আর نشدها অর্থাৎ তালাশ করা ও জিজ্ঞাসা করা। [দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীরের জামেউল উসুল ২০৩/১১]
আট- মসজিদে বেচা-কেনা করা হারাম। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« إذا رأيتم من يبيع أو يبتاع في المسجد فقولوا : لا أربح الله تجارتك، وإذا رأيتم من ينشد فيه ضالة فقولوا : لا ردّ الله عليك »
“যখন কাউকে মসজিদে বিক্রি করতে বা খরিদ করতে দেখবে, তখন তাকে বল, আল্লাহ তোমার ব্যবসায় কোন লাভ না দিক। আর যখন দেখবে, কোন ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তু তালাশ করছে, তখন তুমি বলবে, আল্লাহ যেন তোমার নিকট ফেরত না দেয়”। [তিরমিযি, বেচা-কেনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদে বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া হাদিস নং ১৩২১। নাসায়ী রাত ও দিনের আমল বিষয়ে আলোচনা অধ্যায়, হাদিস নং ১৭৬; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ৩৪/২।] হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মসজিদের বেচা-কেনা করা হারাম। কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখতে তাকে বলা উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেন তোমার ব্যবসা বাণিজ্যে কোন বরকত না দেয়। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম ১৮৯/২।] এ কথা দ্বারা তাদেরকে বদ-দু'আ করে সতর্ক করা হল। আর কারণ উপরেই বলা হয়েছে। « فإن المساجد لم تبن لذلك » “মসজিদসমূহ এ জন্য বানানো হয়নি”।
নয়- মসজিদের ভিতরে হদ কায়েম করা যাবে না এবং কাউকে বন্দী রাখা যাবে না। হাকিম বিন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم أن يستقاد في المسجد،وأن تنشد فيه الأشعار،وأن تقام فيه الحدود »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কাউকে আটকে রাখা, গান গাওয়া ও হদ কায়েম করা হতে নিষেধ করেছেন”। [আবু দাউদ, কিতাবুল হুদুদ, পরিচ্ছেদ : মসজিদে হদ কায়েম করা প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৪৪৯০; আহমদ মুসনাদ ৩৪/৩; হাকিম, মুস্তাদরাক গ্রন্থে ৩৭৮/৪; ইমাম দারা কুতনী, সূনান গন্থে ৮৬/৩; বাইহাকী, আস-সূনান আল-কুবরা গ্রন্থে ৩২৮/৮, বুলুগুল মারামে হাফেয ইবনে হাজার হাদিসটিকে দূর্বল আখ্যায়িত করেন। আর আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে হাসান বলেন, ৮৫০/৩।] হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মসজিদে হদ কায়েম করা ও আটক করা হারাম। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম ১৯১/২।] আর যে সব কবিতা মসজিদে বলা জায়েয নাই সেগুলো হল, জাহিলিয়্যাত ও ফাসেকদের কবিতা। কিন্তু যে সব কবিতা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করে তাতে কোন অসুবিধা নাই। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হাদিসটি যদিও দুর্বল, কিন্তু সহীহ হাদিস থেকে তার অর্থের সমর্থন পাওয়া যায়। কারণ, মসজিদে হদ কায়েম করা দ্বারা যখন আসামিকে পেটানো বা হত্যা করা হয়, তখন মসজিদ রক্তাক্ত বা পেশাব, পায়খানা ইত্যাদি দ্বারা নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। [বুলুগুল মুরাম ২৬৯ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি বলতে শুনেছি।]
দশ- মসজিদে ঘুমানো, খাওয়া, ঘর বানানো অসুস্থ লোককে জায়গা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أصيب سعد يوم الخندق فضرب عليه رسول الله صلى الله عليه و سلم خيمة في المسجد ليعوده من قريب»
“খন্দকের যুদ্ধের দিন সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আঘাত প্রাপ্ত হয়ে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য মসজিদের ভিতরে একটি তাঁবু নির্মাণ করেন [দেখুন: আল্লামা সুনআনীর সুবুলুস সালাম: ১৯৩/২।] যাতে তাকে কাছের থেকে দেখা-শুনা করতের পারেন। [বুখারি ও মুসলিম বুখারি, সালাত অধ্যায়ে, মসজিদে রোগীদের জন্য তাবু নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৬৩। মুসলিম কিতাবুল জিহাদ, যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তাদের হত্যা করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ১৭৬৯।] এ হাদিস দ্বার প্রমাণিত হয়, মসজিদে ঘুমানো, অসুস্থ ব্যক্তি থাকা ও মসজিদে তাঁবু বানানো বৈধ। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু বলতে শুনেছি তিনি বলেন, মসজিদে তাঁবু বানানো, ই‘তেকাফের জন্য অথবা কোন সম্মানী ব্যক্তির জন্য যাতে মানুষ তার সাথে দেখা করতে পারে অথবা যার থাকার যায়গা নাই তার জন্য থাকার যায়গা বানানোতে কোন অসুবিধা নাই। [বুলুগুল মারামের ২৭০ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বর্ণিত, তিনি যখন অবিবাহিত যুবক ছিলেন, তখন মসজিদে ঘুমাতেন। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদের ঘুমানো প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৪৪০; মুসলিম, সাহাবীদের ফযিলত বিষয়ে আলোচনা, পরিচ্ছেদ: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ফযিলত, হাদিস নং ২৪৭৯।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن وليدة سوداء كان لها خباء في المسجد، فكانت تأتيني فتحدث عندي، قالت : فلا تجلس عندي مجلساً إلا قالت :
ويوم الوشاح من تعاجيب ربنا ( [তার একটি আশ্চর্য ঘটনা রয়েছে। দেখুন সহীহ বুখারি: ৩৮৩৫, ৪৩৯।]) ألا إنه من بلدة الكفر أنجاني ( [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: নারীদের জন্য মসজিদের ঘুমানো প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৪৩৯; তাতে একটি আশ্চর্য ঘটনা রয়েছে!। ।])
একজন কালো বাঁদির জন্য মসজিদে একটি তাঁবু ছিল। সে আমার নিকট এসে আমার সাথে কথা বলত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও বলেন, সে আমার সাথে যখনই বসত তখন এ কথা গুলো বলত, “সে ঘটনার দিন, আমার প্রভূর একটি আশ্চর্য বিষয়সমূহের একটি আশ্চর্যের দিবস। তবে তিনি আমাকে কাফের শহর থেকে মুক্তি দিয়েছেন”।
এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যখন কোন ফিতনার আশঙ্কা না থাকে তখন মুসলিম পুরুষ বা নারী উভয়ের জন্য রাতে বা দিনে মসজিদে ঘুমানো বৈধ, [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম ১৯৩/২।] যদি তার কোন ঘর-বাড়ি না থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী সুফফার অধিবাসীরা মসজিদে ঘুমাত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« رأيت سبعين من أصحاب الصفة ما منهم رجل عليه رداءٌ، إما إزار وإما كساء قد ربطوا في أعناقهم، فمنها ما يبلغ نصف الساقين، ومنها ما يبلغ الكعبين، فيجمعه بيده كراهية أن تُرى عورته »
“আমি সত্তর জন সুফফার অধিবাসীদেরকে দেখেছি, তাদের কারো শরীরে কোন চাদর ছিল না। তারা হয়ত, লুঙ্গি অথবা একটি কাপড় পরিধান করত যা তারা তাদের গলার সাথে বেঁধে রাখত। তাদের কাপড় কারো পায়ে অর্ধ পেন্ডলী পর্যন্ত আবার কারো টাখনু পর্যন্ত হত। তারা তাদের হাত কাপড়ের উভয় আঁচলকে একত্র করে ধরে রাখত, যাতে মানুষ তাদের সতর দেখতে না পারে। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: পুরুষের জন্য মসজিদের ঘুমানো প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৪৪০।] আব্দুল্লাহ বিন হারেস বিন জুয আয-যাবিদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« كنا نأكل على عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد الخبز واللحم »
“আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদে গোস্ত ও রুটি খেতাম”। [ইবনু মাযা, কিতাবুল আত‘ইমাহ, পরিচ্ছেদ: মসজিদে খাওয়া, হাদিস নং ৩৩০০। আল্লামা আলবানী সহীহ ইবনে মাযা ২৩০/২ তে হাদিসটিকে সহীহ বলেন।]
এগার- মসজিদে বৈধ খেলা যেগুলির অনুমতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« لقد رأيت رسول الله صلى الله عليه و سلم يوماً على باب حجرتي والحبشة يلعبون في المسجد، ورسول الله صلى الله عليه و سلم يسترني بردائه، أنظر إلى لعبهم )). وفي لفظ : (( كان الحبشة يلعبون بحرابهم فيسترني رسول الله صلى الله عليه و سلم وأنا أنظر، فما زلت أنظر حتى كنت أنا أنصرف، فاقدروا قدر الجارية الحديثة السن تسمع اللهو»
“একদিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কামরার দরজায় দেখলাম। তখন হাবশীরা মসজিদে খেলছিল। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার চাদর দ্বারা ঢেকে রাখেন যাতে আমি তাদের খেলা দেখতে পাই। অপর এক শব্দে হাদিসটি বর্ণিত হাবশীরা তাদের ডাল-সুরকী নিয়ে খেলা-ধুলা করছে, আমি তাদের খেলা দেখতেছিলাম আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে রাখেন। এভাবে আমি সারাক্ষণ দেখতেছিলাম যতক্ষণ আমি না ফিরতাম। তোমরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক রমণী যে খেলা-ধুলায় মনোযোগী তার সম্মান কত তা তোমরা অনুমান কর”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদে অস্ত্র বহনকারী, হাদিস নং ৪৫৪, বিবাহ অধ্যায়, পরিবারের সাথে ভালো ব্যবহার বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৫১৯০; কিতাবুল ঈদ, পরিচ্ছেদ: ঈদের দিন অস্ত্র দিয়ে খেলা করা, হাদিস নং ৫৯০; বিবাহ অধ্যায়ে নারীদের জন্য হাবশীদের দিক তাকানো, হাদিস নং ৫২৩৬; মুসলিম, দুই ঈদের সালাত অধ্যায়, যে সব খেলা-ধুলাতে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা নাই সে সব খেলা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৮৯২]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
بينما الحبشة يلعبون عند النبي صلى الله عليه و سلم وفي رواية : في المسجد دخل عمر فأهوى إلى الحصباء فحصبهم بها، فقال : «دعهم يا عمر »
“একবার হাবশীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট, অপর বর্ণনায়, মসজিদে খেলছিল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে তাদের নিকট প্রবেশ করলেন এবং তাদের জন্য পাথর নিলন এবং তাদেরকে পাথর দিয়ে আঘাত করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ওমর তুমি তাদের ছেড়ে দাও”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সীয়ার, অস্ত্র দিয়ে খেলা-ধুলা করা, হাদিস নং ২৯০১; মুসলিম, ঈদের সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যে সব খেলা-ধুলাতে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা নাই সে সব খেলা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৮৯৩।] হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, ডাল-সূরকী দিয়ে খেলা-ধুলা করা শুধু খেলা নয়, বরং তাতে রয়েছে, যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং দুশমনের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। [ফতহুল বারী ৫৪৯/১।] শাইখ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ স্বরূপ বা যুদ্ধ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দ্বারা খেলা-ধুলা করা বৈধ। হাবশি যারা খেলা-ধুলা করছে, তাদের দিকে অপরিচিতা নারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর তাকানো দ্বারা প্রমাণিত হয়, মহিলার জন্য সমষ্টিগত পর্যায়ে ব্যক্তি পর্যায়ে না হলে, পুরুষের দিক তাকানো জায়েয আছে। যেমন, মহিলারা মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য বের হলে এবং রাস্তায় হাঁটার সময় পুরুষদের সাথে সাক্ষাত হলে তাদের দিকে তাকায়। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম: ১৯৫/২।] আমি আমার শাইখ ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নারীদের জন্য সমষ্টিগতভাবে পুরুষের দিকে তাকানোতে কোন অসুবিধা নাই। যেমন পুরুষরা সফরে ও মসজিদে তাদের দিকে তাকায়। মোট কথা চলাচলকারী মুসল্লি, খেলোয়াড়দের দিকে সাধারণ তাকানো ক্ষতিকর নয়। কারণ, এ ধরনের দৃষ্টি সাধারণত কামভাব নিয়ে হয় না। [বুলুগুল মারাম, ২৭১ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
বার- মসজিদকে উঁচা-মজবুত করা, সজ্জিত করা এবং মসজিদ বানানোর ক্ষেত্রে অপচয় না করার বিধান।
মসজিদকে উঁচা করা, ও সাজানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত। আর মসজিদ বানানোর ক্ষেত্রে অপচয় না করে পরিমিত খরচ করার বিষয়ে নির্দেশ সম্বলিত বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تقوم الساعة حتى يتباهى الناس في المساجد »
“যতদিন পর্যন্ত মানুষ মসজিদ নিয়ে অহংকার না করবে [দেখুন, আল্লামা ইবনুল আসীরের জামে‘উল উসুল ২১০/১১। আরও দেখুন আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৬৯৫/১।] ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না”। নাসায়ীতে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من أشراط الساعة أن يتباهى الناس في المساجد »
“কিয়ামতের আলামত হল, লোকেরা মসজিদ নিয়ে অহংকার করবে”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৪৯; ইবনু মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ওয়াল জামা‘আত, পরিচ্ছেদ: মসজিদকে শক্তিশালী করা।, হাদিস নং ৭৩৯; নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজেদ, মসজিদ নিয়ে গর্ব করা অধ্যায়ে, হাদিস নং ৬৮৯; আহমদ ৪৫/৩। আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটি সহীহ সূনানে নাসায়ী ১৪৮/১ ও সহীহ সূনানে আবু দাউদে ৯১/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, «ما أمرت بتشييد المساجد » . “আমাদেরকে মসজিদ উঁচা করার বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়নি”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদীস ৪৪৮; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯০/১।] আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, « لتزخْرِفُنَّها كما زخرفت اليهود والنصارى »
“তোমরা মসজিদকে সেভাবেই সাজাবে যেভাবে ইয়াহুদি ও খৃষ্টানরা তাদের উপাসানালয়কে সাজাত”। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মসজিদ বানানো, হাদিস ৪৪৬, আর আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৮।]
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«كان سقف المسجد من جريد النخل»
“মসজিদের ছাদ ছিল, খেজুরের ডাল”। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মসজিদ বানানো, হাদিস ৪৪৬।]
আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদ বানানোর নির্দেশ দেন এবং বলেন,
« أكِنَّ الناس من المطر، وإياك أن تُحَمِّر، أو تُصفِّر، فتفتن الناس »
“মসজিদ বানিয়ে মানুষকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা কর। তুমি লাল রং করা ও হলুদ রং করা হতে সতর্ক থাক, অন্যথায় মানুষকে ফিতনায় ফেলবে। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো, ৪৪৬ নং হাদীসের পূর্বে।] মনে রাখবে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আবু জাহামকে নকশা বিশিষ্ট জুব্বাটি ফেরত দেয়া হতে বুঝে নিয়েছেন। কারণ, জুব্বাটির বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, [ إنها ألهتني عن صلاتي ] “নিশ্চয় এটি আমাকে আমার সালাত থেকে অমনোযোগী করে দেয়”। [বুখারি, হাদিস নং ৩৭৩; মুসলিম, হাদীস নং ৫৫৬। সালাতের মাকরুহগুলো আলোচনায় তথ্যসূত্র অতিবাহিত হয়েছে।] হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হতে পারে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। [দেখুন: ফতহুল বারী, ৩৩৯/১।] আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, [ يتباهون بها ثم لا يعمرونها إلا قليلاً ] তারা মসজিদ নিয়ে বড়াই করে কিন্তু কম সংখ্যক লোক ছাড়া বাকীরা মসজিদকে আবাদ করে না। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো। ৪৪৬নং হাদিসের পূর্বে। হাফিয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু ফতহুল বারীতে উল্লেখ করে বলেন, এটি মুসনাদে আবি ইয়া‘লাতে মওসুল হিসেবে বর্ণিত। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, « يأتي على أمتي زمان يتباهون في المساجد،ثم لا يعمرونها إلا قليلاً » ]
আমি আমার শাইখ ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, মসজিদকে সুন্দর করা এবং মসজিদে সালাত আদায় না করা মুসিবত বলে গণ্য। [সহীহ বুখারির ৪৪৬ নং হাদিসের ব্যখ্যার পূর্বে তাকীরর করতে আমি তাকে এ কথা বলতে শুনেছি।] আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
أن المسجد كان على عهد رسول الله مبنيّاً باللبن، وسقفه الجريد، وعمده خشب النخل، فلم يزد فيه أبو بكر شيئاً، وزاد فيه عمر وبناه على بنياه في عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم : باللَّبِن والجريد، وأعاد عمده خشباً، ثم غيره عثمان، فزاد فيه زيادة كثيرة، وبنى جداره بالحجار المنقوشة والقصة، وجعل عمده من حجارة منقوشة، وسقفه بالساج .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদ ছিল, ইটের নির্মাণ এবং খেজুর পাতার ছাউনি। আর খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার খেলাফত আমলে এর কোন সংস্কার করেননি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদকে বাড়ান, তবে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যা দিয়ে নির্মাণ করেছে- ইট, খেজুরের ডাল ও খেজুর গাছের খুঁটি- তা দিয়েই নির্মাণ করেন। তারপর ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে মসজিদের নির্মাণকে পরিবর্তন করেন। তিনি মসজিদকে অনেক দূর পর্যন্ত বাড়ান। তিনি নকশী পাথর [দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীরের জামেয়ুল উসুল, ১৮৬/১১।] ও চুন দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি যে মসজিদ নির্মাণ করেন, তার খুঁটি ছিল নকশী পাথর এবং ছাদ ছিল হিন্দুস্থানি কাট। [বুখারি সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো। ৪৪৬।]
আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কর্ম প্রমাণ করে, নকশী পাথর, ভালো কাট ও রঙ দিয়ে সাজানোতে কোন ক্ষতি নাই। যদিও সালফে সালেহীনদের মতে উত্তম হল মসজিদকে রঙ না করা। কিন্তু যেহেতু মানুষ বর্তমানে তাদের ঘরবাড়ীকে খুব সুন্দর করে সাজায়, তাই তারা পুরাতন আমলের ঘরবাড়ীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মসজিদগুলোকে আগের অবস্থায় রেখে দেয়া তাদেরকে মসজিদে সালাত আদায় ও মসজিদে একত্র হওয়া থেকে বিমুখ করে। এ কারণে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যা করেছে, তা করাতে কোন প্রকার অসুবিধা নাই। যাতে মানুষ মসজিদের দিকে উৎসাহিত হয় এবং মনোযোগী হয়। তবে অহংকার ও বড়াই করার জন্য হলে তা বৈধ নয়। তবে মসজিদে কোন কিছু লেখা মাকরূহ। উত্তম হল, মসজিদে কোন প্রকার না লেখা। [বুলুগুল মুরাম ২৭৪ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
তেরÑ মসজিদে বৈধ কথা-বার্তা বলাতে কোন অসুবিধা নাই। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن النبي صلى الله عليه و سلم : « كان لا يقوم من مصلاّه الذي صلى فيه الصبح أو الغداة حتى تطلع الشمس،فإذا طلعت الشمس قام،وكانوا يتحدثون فيأخذون في أمر الجاهلية فيضحكون ويتبسّم »
“সূর্য উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে ফজরের সালাত বা সকালের সালাত আদায় করতেন, সে স্থান থেকে উঠতেন না। আর যখন সূর্য উদয় হত, তখন তা থেকে উঠে যেতেন। আর তারা জাহিলিয়্যাতের বিভিন্ন কাহিনী বলতেন এবং হাসা-হাসি করতেন”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ ও সালাতের স্থানসমূহের আলোচনা, পরিচ্ছেদ : ফজরের সালাতের সালাতের স্থানে বসা, হাদিস নং ৬৭০।] আহমদ রাহিমাহুল্লাহু এর বর্ণনায় বর্ণিত, তিনি বলেন,
« شهدت النبي صلى الله عليه و سلم أكثر من مائة مرة في المسجد، وأصحابه يتذاكرون الشعر وأشياء من أمر الجاهلية، فربما تبسم معهم »
“আমি একশ বারের বেশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদেরকে দেখেছি তারা মসজিদে কবিতা আবৃত্তি ও জাহিলিয়্যাতের বিষয়গুলো আলোচনা করেন। অনেক সময় তিনি তাদের সাথে হাসা-হাসি করতেন”। [আহমদ, ৯১/৫। তিরমিযি, কিতাবুল আদব, কবিতা আবৃত্তি করার আলোচনা, হাদীস ২৮৫০; তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ১৩৭/৩।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “এতে প্রমাণিত হয়, মসজিদে হাসি দেয়া ও মুচকি হাসি দেয়া জায়েজ আছে”। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৭৭/৫।] আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, বলা যায়, “তখন তারা মসজিদে কথা বলত। কারণ, মসজিদে কথা বলা বৈধ, নিষিদ্ধ নয়। কারণ, মসজিদে কথা বলা সম্পর্কে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যা বলা যায় তা হল, মসজিদে আল্লাহর যিকর করা উত্তম ও ফযিলতপূর্ণ। আর এতে ঐ সময়ে মসজিদে কথা বলা ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য বলে প্রমাণিত হয় না। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন”। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ২৯৬/২।]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যে কথা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল ভালোবাসে সে কথা মসজিদে বলা উত্তম। আর যা নিষিদ্ধ, তা মসজিদে বলা আরো দৃঢ়ভাবে নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে যা মসজিদের বাহিরে বলা মাকরূহ বা মুবাহ তা মসজিদে বলাও মাকরূহ বা মুবাহ। [ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর মাজমুয়ায়ে ফতোয়া। ২০০,২৬২/২২।]
চৌদ্দ- মসজিদে বড় আওয়াজে কথা বলা নিষিদ্ধ। কারণ, আওয়াজ বড় করাতে মুসল্লীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। সুতরাং, মসজিদে আওয়াজ বড় করবে না, যদিও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে হয়। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
اعتكف رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد فسمعهم يجهرون بالقرآن، فكشف الستر وقال : « ألا إن كلكم مناج ربَّه، فلا يؤذينَّ بعضكم بعضاً، ولا يرفع بعضكم على بعضٍ في القراءة » أو قال : « في الصلاة »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ই‘তেকাফ করছিল, তিনি সাহাবীদের শুনতে পেলেন, তারা বড় আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করছে। তাদের তিলাওয়াত শোনে তিনি পর্দা খুলে বলেন, তোমরা সবাই আল্লাহর সাথে কথা বলছ, তাই তোমরা একে অপরকে কষ্ট দেবে না। তোমাদের কেউ কুরআন তিলাওয়াতে, অথবা বলল, সালাতে আওয়াজকে বড় করবে না”। [আবু দাউদ, নফল অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: রাতের সালাতে উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ১৩৩২; সহীহ আবু দাউদে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১৪৭/১; ইমাম আহমদ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুসনাদে বর্ণনা করেন ৬৭/২; আহমদ শাকের রাহিমাহুল্লাহু মুসনাদের স্বীয় ব্যাখ্যায় একে সহীহ বলে উল্লেখ করেন হাদিস নং ৯২৮, ৫৩৪৯।] সায়েব বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كنت قائماً في المسجد فحصبني رجل، فنظرت فإذا عمر بن الخطاب، فقال : اذهب فأتني بهذين، فجئته بهما، فقال : من أنتما؟ أو من أين أنتما؟ قالا : من أهل الطائف، قال : لو كنتما من أهل البلد لأوجعتكما، ترفعان أصواتكما في مسجد رسول الله صلى الله عليه و سلم .
“আমি মসজিদে দাঁড়ানো ছিলাম, একলোক আমাকে পাথর মারল, আমি তাকিয়ে দেখি লোকটি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি আমাকে বললেন, যাও, তাদের দুই জনকে ধরে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তাদের দুইজনকে তার নিকট নিয়ে আসতে তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করে বলেন, তোমরা কারা? কোথায় থেকে আসছ? তারা বলল, আমরা তায়েফ থেকে আসছি। তারপর তিনি বললেন, যদি তোমরা শহরের হতে তাহলে আমি তোমাদের দুইজনকে শাস্তি দিতাম। তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে তোমাদের আওয়াজকে উঁচা করছ”। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, মসজিদে আওয়াজ উঁচা করা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৭০।]
وعن كعب بن مالك رضى الله عنه أنه تقاضى ابنَ أبي حدرد ديناً كان له عليه في المسجد، فارتفعت أصواتهما، حتى سمعهما رسول الله صلى الله عليه و سلم وهو في بيته، فخرج إليهما حتى كشف سِجفَ حجرته فنادى : « يا كعب »، قال : لبيك يا رسول الله، قال : « ضع من دينك هذا » وأومأ إليه : أي الشطر، قال كعب : قد فعلت يا رسول الله، قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « قم فاقضه »،قال الحافظ ابن حجر -رحمه الله -: (( وفي الحديث جواز رفع الصوت في المسجد، وهو كذلك ما لم يفحش ... والمنقول عن مالك منعه في المسجد مطلقاً، وعنه التفرقة بين رفع الصوت بالعلم والخير، وما لا بد منه فيجوز، وبين
কা‘ব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি উবাই বিন হাদরাদের নিকট তার পাওনা আদায় করার জন্য মসজিদেই তা চাচ্ছিলেন। তারা উভয়ে মসজিদে আওয়াজকে বড় করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ঘর থেকে তাদের আওয়াজ শুনতে পেয়ে সাথে সাথে বের হলেন, তার কামরার পর্দা উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, হে কা‘ব! উত্তরে বলল, লাব্বাইক হে আল্লাহর রাসূল! তুমি তোমার পাওনা থেকে অর্ধেক ক্ষমা করে দাও। তখন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি তাই করলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য জনকে বললেন, “দাঁড়াও তুমি বাকীটা আদায় করে দাও”। [বুখারি, সালাত অধ্যায় মসজিদের অবস্থান করা অধ্যায়। হাদিস নং ৪৫৭।]
হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যদি কোন অশ্লীল কথা-বার্তা না হয়, তাহলে মসজিদে আওয়াজ উঁচা করা জায়েজ আছে। আর ইমাম মালেক থেকে বর্ণিত, মসজিদে আওয়াজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার থেকে পার্থক্যও বর্ণিত- যদি ইলম ও কল্যাণ বিষয়ক বা জরুরি কোন আলোচনা হয়, তখন বৈধ। আর যদি অপ্রয়োজনীয় হয়, তাহলে অবৈধ। [ফতহুল বারী, ৫৫২/১।] হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু মিহলাব থেকে তার কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যদি মসজিদে আওয়াজ বড় করা না জায়েজ হত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কোন কথা না বলে ছেড়ে দিতেন না এবং তাদের বিষয়টি জানিয়ে দিতেন। হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু আরও বলেন, আমি বলি, যারা নিষিদ্ধ বলছেন, হতে পারে তাদের নিকট নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পূর্বেই জানা ছিল, তাই নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেন নাই। তাই তিনি তাদের উভয়ের মাঝে ঝগড়া মীমাংসা করার উপর জোর দেন যাতে মসজিদে বড় আওয়াজ করাও বন্ধ হয়ে যাবে। [ফতহুল বারী, ৫৫২/১।] আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, মসজিদে পাওনাদারের জন্য তার পাওনা চাওয়া জায়েজ আছে। যেমন- সে বলবে, তুমি আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। এটি বেচা-বিক্রির মত নয়, অথবা সে বলবে, আমার পাওনা আদায় কর, আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। [সহীহ বুখারি, ৪৫৭ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘ব ও ইবনে আবু হাদরাদকে যা বলেছেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হল, সংশোধন ও মীমাংসা। সঠিক হল, তারা উভয়ে ঋণ পরিশোধে তাড়াহুড়া করা ও ঋণকে কমিয়ে আনার উপর একমত হয়, এতে কোন অসুবিধা নাই। [সহীহ বুখারি, ২৪১৮ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
পনের- মসজিদের খুঁটির মাঝখানে সালাত আদায় করা। একা সালাত আদায়কারী ও ইমামের জন্য এতে কোন অসুবিধা নাই। আর মুক্তাদীদের জন্য মসজিদে জায়গা থাকা সত্বেও খুঁটির মাঝে সালাত আদায় করা মাকরূহ। কারণ, খুঁটি কাতারের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে। তবে মসজিদে জায়গা না হলে তখন কোন অসুবিধা নাই। এ বিষয়ে আনাস বিন মালেক হতে হাদিস বর্ণিত, আব্দুল হুমাইদ বিন মাহমুদ রাহিমাহুল্লাহু বলেন,
«كنت مع أنس بن مالك أصلي، قال : فألقونا بين السواري، قال : فتأخر أنس، فلما صلينا قال : إنَّا كُنَّا نتقي هذا على عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم »
আমি আনাস বিন মালিকের সাথে সালাত আদায় করছিলাম, তিনি আমাদের খুঁটির মাঝে ঠেলে দেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাত থেকে বিরত থাকলেন। আমরা সালাত শেষ করলে তিনি আমাদের বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এ থেকে বেঁচে থাকতাম”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায় সাওয়ারির সামনে কাতার করা, হাদিস নং ৬৭৩; তিরমিযি, হাদিস নং ২২৯; নাসায়ী ৯৪/২; আহমদ হাদিস নং ১৩১/৩; হাকিম ২১৮/১; সহীহ আবু দাউদে আল্লামা আলবানী হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ১৪৯/১।] মুয়াবিয়া বিন কুররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন, «كنا نُنْهى عن الصلاة بين السواري ونطرد عنها طرداً » “আমাদের খুঁটির মাঝে সালাত আদায় থেকে নিষেধ করা হত এবং আমাদের দূরে রাখা হত”। [ইবনু মাযা, হাদিস: ১০০২; হাকেম, ২১৮/১, আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ ইবনে মাযাতে বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।]
« أن النبي صلى الله عليه و سلم لما دخل الكعبة صلى بين الساريتين »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাবা শরীফে প্রবেশ করেন, তখন তিনি দুই খুঁটির মাঝে সালাত আদায় করেন”। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, সালাত অধ্যায়, জামা‘আত ছাড়া সাওয়ারির সামনে সালাত আদায় করা, হাদিস নং ৫০৪, মুসলিম, কিতাবুল হজ, কাবা ঘরে প্রবেশ মুস্তাহাব হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১৩২৯।]
ষোল- জুমু‘আর সালাতের পূর্বে মসজিদে হালকা করা। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أن النبي صلى الله عليه و سلم نهى عن التحلق يوم الجمعة قبل الصلاة، وعن الشراء والبيع في المسجد»
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন সালাতের পূর্বে মসজিদে হালকা করে বসা ও বেচা-কেনা করা হতে নিষেধ করেছেন।
ইমাম তিরমিযি হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«نهى عن تناشد الأشعار في المسجد، وعن البيع والشراء فيه، وأن يتحلَّق الناس فيه يوم الجمعة قبل الصلاة »
“মসজিদে কবিতা আবৃতি, বেচা-কেনা এবং জুমু‘আর দিন সালাতের পূর্বে গোল হয়ে বসা হতে নিষেধ করেন”। [নাসায়ী মসজিদে বেচা-কেনা করা ও জুমার সালাতের পূর্বে হালকা করে বসা। হাদিস নং ৭১৪। আবু দাউদ কিতাবুল জুমআ। জুমার সালাতের পূর্বে গোলাকার হয়ে বসা, হাদিস নং ১০৭৯। তিরমিযি সালাত অধ্যায়, মসজিদে বেচা-কেনা করা ও হারানো বস্তু তালাশ করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩২২। ইবনু মাযা কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত। ইমমা খুতবা দেয়া অবস্থায় সালাতের পূর্বে জুমার দিন মসজিদে হালকা করা এবং এহতেবা করা। হাদিস নং ১১৩৩। আল্লামা আলবানী রহ সূনানে নাসায়ী, সূনানে আবুদাউদ হাদিসটিকে হাসান বলেন।] তাহাল্লুক ও হিলাক শব্দ বহুবচন, একবচন হল হালাকা। অর্থাৎ, একাধিক মানুষ গোলাকার হয়ে বসা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হালাকা বন্দী হয়ে এক জায়গায় বা একাধিক জায়গায় বিভিন্ন হালাকা বানিয়ে বসা হতে নিষেধ করেন, যদিও কোন ইলমী আলোচনার জন্য হয়। কারণ, এতে কাতার বন্দী হতে অসুবিধা হতে পারে অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন মানুষকে তাড়াতাড়ি মসজিদে আসা ও কাতার বন্দী হয়ে প্রথম কাতারে তারপর দ্বিতীয় কাতারে বসার নির্দেশ দিয়েছেন।
সালাতের পূর্বে হালকা করে বসা হলে তাদের যে বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার প্রতি উদাসীনতা বুঝায়। জুমু‘আর সালাত থেকে ফারেগ হওয়ার পর হালাকা করে বসাতে কোন অসুবিধা নাই। [দেখুন: আল্লামা মুবারক পুরীর তুহফাতুল আহওয়াযি, ২৭২/২।] আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু এর উপর আমল করতেন। তিনি জুমু‘আর দিন ফজরের সালাত থেকে নিয়ে জুমু‘আর সালাত আদায় করা পর্যন্ত সব ধরনের হালাকা বন্ধ করে দিতেন। তারপর জুমু‘আর সালাতের পর তার বাড়ীতে হালাকা হত।
সতের- ঘুম আসলে স্থান পরিবর্তন করা। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«إذا نعس أحدكم وهو في المسجد فليتحول من مجلسه ذلك إلى غير ه »
“যখন মসজিদে তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন স্বীয় মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বসে”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ইমামের খুতবার সময় ঘুমানো, হাদিস নং ১১৯। তিরিমিযি, জুমু‘আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তির জুমু‘আর দিন ঘুম আসে সে স্থান ত্যাগ করবে। হাদিস নং ৫২৬; আহমদ ২২, ৩২, ১৩৫/২; আর আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে ২০৮/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] তিরমিযির শব্দ - «إذا نعس أحدكم يوم الجمعة، فليتحول عن مجلسه ذلك » “যখন তোমাদের কারো জুমার দিন তন্দ্রা আসে, সে যেন ঐ মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র চলে যায়”।
আহমদের শব্দ - « إذا نعس أحدكم في مجلسه يوم الجمعة فليتحول إلى غيره » . যখন জুমার দিন তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন অন্যত্র চলে যায়। আহমদের অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত - « إذا نعس أحدكم في المسجد يوم الجمعة فليتحول من مجلسه ذلك إلى غيره » যখন মসজিদে তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন স্বীয় মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বসে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, « إذا نعس أحدكم في مجلسه يوم الجمعة فليتحول منه إلى غيره » . “যখন জুমার দিন মজলিসে বসে তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন তা থেকে উঠে অন্যত্র চলে যায়”। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আদেশে দ্বারা প্রমাণিত হয় বিষয়টি ওয়াজিব। [বুলুগুল মারামের ৫২৬ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] আর স্থান পরিবর্তন করার হিকমত হল, স্থান পরিবর্তন করাতে ঘুম চলে যায়। অথবা ঘুমের কারণে যে স্থানে গাফলত বা অলসতায় আক্রান্ত হল, সে স্থান ত্যাগ করা। যদিও ঘুমন্ত ব্যক্তির কোন গুনাহ নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতের সময় ঘুমানোর ঘটনায় তার সাহাবীদের স্থান পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। অথবা যে ব্যক্তি সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসে থাকে সে সালাতরত। আর সালাতে ঘুম আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। হতে পারে এ কারণেই শয়তানের দিকে সম্বোধিত কাজকে দূর করার জন্য তাকে স্থান পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয়া হল, যাতে মসজিদে আল্লাহর যিকর, খুতবা ও উপকারী কোন কথা শ্রবণ থেকে বিরত থাকতে না হয়। [দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার, ৫২৪/২; আল্লামা মুবারকপুরির তুহাফাতুল আহওয়াজি শরহে জামে তিরমিযি ৬৪/৩; আওনুল মা‘বুদ: ৪৬৯/৩।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী - «إذا نعس أحدكم يوم الجمعة » “যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়”, এর দ্বারা সমগ্র দিন উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হল, যখন মসজিদে বসে জুমু‘আর সালাতের অপেক্ষা করতে থাকে। চাই খুতবার সময় হোক বা তার পূর্বে হোক। তবে খুতবার সময়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর এখানে জুমু‘আর দিনের কথাটা বলার কারণ হল, এ দিনে জুমু‘আর সালাত আদায় বা জুমু‘আর খুতবা শ্রবণ করার জন্য মানুষ তাড়াতাড়ি মসজিদে আসার কারণ ল¤বা সময় মসজিদে অবস্থান করায় তাদের তন্দ্রা আসে। কিন্তু সালাতের অপেক্ষা করা জুমু‘আর দিন বা অন্য দিনের বিধান এক। যেমন আবু দাউদের হাদিসে বর্ণিত, «إذا نعس أحدكم وهو في المسجد فليتحول من مجلسه ذلك إلى غيره »، “যখন তোমাদের কারো মসজিদে থাকা অবস্থায় তন্দ্রা আসে, সে যেন স্থান পরিবর্তন করে”। সুতরাং জুমু‘আর দিনের আলোচনার উদ্দেশ্য হল সকল মানুষের মধ্য থেকে কাউকে স্পষ্ট করে পৃথক করা। আর এও হতে পারে এ দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু জুমু‘আর দিন, যাতে জুমার খুতবা শোনার প্রতি অধিক যতœবান হয়। [দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৫২৪/২।]
আঠার- গির্জায় সালাত আদায় করা, গির্জাকে পরিষ্কার করা ও গির্জার স্থানে মসজিদ বানানো। তল্ক বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
خرجنا وفداً إلى النبي صلى الله عليه و سلم فبايعناه، وصلينا معه، وأخبرناه أن بأرضنا بيعة ( [‘আল-বিয়া’ শব্দের অর্থ পাদ্রী আশ্রম। আবার কেউ কেউ বলেন, খৃষ্টানদের উপাসানালয়। আর আল্লামা ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু দ্বিতীয় মতকে প্রাধান্য দেন। ফাতহুল বারী ৫৩১/১।]) لنا فاستوهبناه من فضل طهوره، فدعا فتوضأ، وتمضمض، ثم صبه في إداوة وأمرنا فقال : « اخرجوا فإذا أتيتم أرضكم فاكسروا بيعتكم، وانضحوا مكانها بهذا الماء، واتخذوها مسجداً » قلنا : إن البلد بعيدٌ والحر شديد، والماء ينشف، فقال : « مدوه من الماء؛ فإنه لا يزيده إلا طيباً »، فخرجنا حتى قدمنا فكسرنا بيعتنا، ثم نضحنا مكانها، واتخذناها مسجداً فنادينا فيه بالأذان، قال : والراهب رجل من طيئ، فلما سمع الأذان قال : دعوة حقٍّ، ثم استقبل تلعةً من تلاعنا فلم نره بعد )).
“আমরা একটি জামা‘আত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে, তিনি আমাদের বাইয়াত করেন এবং আমরা তার সাথে সালাত আদায় করি। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাই যে, আমাদের দেশে আমাদের একটি গির্জা আছে, আপনি আমাদেরকে আপনার ওজুর পানির বাকী পানিগুলো দেন। এ কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজুর পানি আনার জন্য একজনকে ডাকলেন, ওজু করলেন, কুলি করলেন, তারপর একটি পাত্রে পানিগুলো ঢেলে রাখেন। তারপর তিনি আমাদের এ বলে, নির্দেশ দেন- তোমরা তোমাদের দেশে গিয়ে, তোমাদের গির্জাকে ভাঙ্গবে এবং স্থানটিকে এ পানি দ্বারা পরিষ্কার করবে এবং স্থানটিকে মসজিদ বানাবে। আমরা বললাম, আমাদের দেশ অনেক দূর, শুষ্ক মওসুম, গরম অনেক বেশি, এ পানি শুকিয়ে যাবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এর সাথে আরও পানি বাড়াও তা তার সুঘ্রাণকেই বৃদ্ধি করবে। আমরা বের হলাম এবং আমাদের দেশে এসে আমাদের গির্জাকে ভেঙ্গে দিলাম। তারপর তার স্থানে পানি ছিটিয়ে দিলাম এবং তাকে আমরা মসজিদ বানালাম। তারপর আমরা মসজিদে আযান দিলাম। আযান শোনে পাদ্রী লোকটি বলল, হকের দাওয়াত, তারপর সে আমাদের টিলাসমূহ হতে একটি টিলার দিকে গেল, আমরা তার পর থেকে তাকে আর কোন দিন দেখিনি”। [নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজিদ, পরিচ্ছেদ : গীর্জাকে মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা। সহীহ নাসায়ীতে আল্লামা আলবানী সনদটিকে সহীহ বলেন ১৫১/১।]
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বড় বড় পাদ্রীদের অনেককে বলেন, « إنا لا ندخل كنائسكم من أجل التماثيل التي فيها الصور » “আমরা তোমাদের গির্জা প্রবেশ করতে পারি না কারণ, তোমাদের গির্জায় মানুষের আকৃতির মূর্তি রয়েছে”। [বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: গীর্জায় সালাত আদায় করা, হাদিস নং ৪৩৪; হাফেজ ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু ফতহুল বারী- ৫৩১/১ তে উল্লেখ করেন, আব্দুর রাজ্জাক হাদিসটিকে মওসুল বর্ণনা করেন।] « وكان ابن عباس رضي الله عنهما يصلي في البيعة إلا بيعة فيها تمثال » “আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু খৃষ্টানদের গির্জায় সালাত আদায় করত, তবে যে গির্জায় মূর্তি থাকত তাতে তিনি সালাত আদায় করত না”। [বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: গীর্জায় সালাত আদায় করা, হাদিস নং ৪৩৪; হাফেজ ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু ফতহুল বারী- ৫৩১/১ তে উল্লেখ করেন, বগোবী রাহিমাহুল্লাহু জাদিয়াতে হাদিসটিকে মওসুল বর্ণনা করেন। তবে তাতে এ অংশটুকু বাড়ান-(( فإن كان فيها تماثيل خرج فصلى في المطر )).]
এ হাদিস প্রমাণ করে, গির্জার স্থানগুলোকে মসজিদে রূপান্তরিত করা বৈধ। এবং আরও প্রমাণিত হয়, তাদের গির্জায় সালাত আদায় করা বৈধ। তবে মূর্তির দিক ফিরে সালাত আদায় করবে না এবং নাপাক স্থানে সালাত আদায় করবে না। [দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার। ৬৮৭/১] আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, গির্জায় সালাত আদায় করাতে কোন অসুবিধা নাই। তবে মূর্তির দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে না। আর এ বিধান তখন যখন এ ছাড়া অন্য কোন স্থান পাওয়া যাবে না যে খানে সালাত আদায় করা যাবে। [সহীহ বুখারি, ৪৩৪ নং হাদিসের পূর্বে ব্যখ্যা করার সময় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
উনিশ- মসজিদ ও বাজারে ধারালো অস্ত্র বহন হতে বিরত থাকার নির্দেশ। আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا مرّ أحدكم في مسجدنا، أو في سوقنا ومعه نبل ( [আরবী তীর। দেখুন ফতহুল বারী ইমাম ইবনে হাজরের। ৪৪৬/১।]) فليمسك على نصالها ( [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা। এবং দেখুন, আল্লামা হুমাইদী রাহিমাহুল্লাহু এর গরীব পৃ ৭৯, ১৩৫।])» “যখন তোমাদের কেউ আমাদের মসজিদ বা বাজারে অতিক্রম করে এবং তার সাথে রয়েছে তীর, সে যেন তার ধারালো লোহার দিকটিকে বিরত রাখে”। অথবা বলেন, «فليقبض بكفه أن يصيب أحداً من المسلمين منها شيء » “সে যেন তার হাত দিয়ে ধারালো অংশটুকু ধরে রাখে”। যাতে তার দ্বারা কোন মুসলিমের গায়ে আঘাত না লাগে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «من مرّ في شيء من مساجدنا أو أسواقنا بنبل فليأخذ على نصالها، لا يعقر بكفّه مسلماً » ( [বুখারি ও মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, মসজিদে চলাচল করা। হাদিস নং ৪৫২। কিতাবুল ফিতান, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, যে ব্যক্তি আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র বহন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয় আলোচনা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৭০৭৫। মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি মসজিদ বাজার ও যে সব স্থানে মানুষের জামায়েত থাকে তা অতিক্রম করার সময়, ধারালো বস্তুকে সংরক্ষণ রাখার আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৫।]). “যে ব্যক্তি আমাদের মসজিদসমূহ ও বাজারসমূহে চলাচল করে, সে যেন তীরের ধারালো অংশটুকুকে ধরে রাখে। যাতে সে তার হাত দিয়ে কোন মুসলিমকে রক্তাক্ত না করে”। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিন বলেন,
أن رجلاً مرّ في المسجد بأسهم قد بدا نصولها، فأُمر أن يأخذ بنصولها لا يخدش مسلماً . وفي لفظ مسلم : فقال له رسول الله صلى الله عليه و سلم : « أمسك بنصالها »
“এক লোক কতক তীর নিয়ে মসজিদ অতিক্রম করছিল, তখন তীরসমূহের ধারালো দিকগুলো দেখা যাচ্ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধারালো দিকগুলোকে আড়াল করার নির্দেশ যাতে কোন মুসলিম আঘাত না পায়। মুসলিমের অপর শব্দে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত, « أن رجلاً مرَّ بأسهم في المسجد قد أبدى نصولها، فأُمر أن يأخذ بنصولها كي لا يخدش مسلماً » এক লোক কতক তীর নিয়ে মসজিদ অতিক্রম করছিল, অথচ সে তীরসমূহের ধারালো দিকগুলো প্রকাশ করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধারালো দিকগুলোকে ধরে রাখার নির্দেশ দেন, যাতে কোন মুসলিম আঘাত না পায়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, সালাত অধ্যায়, মসজিদে প্রবেশের সময় তীরের ধারালো অংশ হেফাজত করা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৪৫১। সালাত অধ্যায়, যে ব্যক্তি মসজিদ বাজার ও যে সব স্থানে মানুষের জামায়েত থাকে তা অতিক্রম করার সময়, ধারালো বস্তুকে সংরক্ষণ রাখার আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৪।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এখানে নিয়ম হল, মানুষের সমাগম স্থল, মসজিদ বা বাজার ইত্যাদিতে হাঁটা চলা করার সময় ধারালো বস্তুকে হেফাযত করা। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা 407/16।] এতে আরও বুঝা যায়, যে বস্তুর মধ্যে মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তা হতে সতর্ক থাকা এবং যে সব বস্তু মানুষকে কষ্ট দেয়, তা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা 407/16।] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, «لا يحلّ لأحدكم أن يحمل بمكة السلاح» তোমাদের কারো জন্য মক্কায় অস্ত্র বহন করা হালাল নয়। [মুসলিম কিতাবুল হজ, মক্কায় বিনা প্রয়োজনে অস্ত্র বহন করা, ১৩৫৬।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ নিষেধটি হল যদি তার কোন প্রয়োজন না থাকে। আর যদি প্রয়োজন থাকে তাহলে, জায়েয। এটি আমাদের মাযহাব এবং জমহুর আলেমদের মাযহাব। আর কাজী আয়ায রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আহলে ইলমদের মতে এ নিষেধটি বিনা প্রয়োজনে অস্ত্র বহন করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
হাদিসে কাউকে অস্ত্র দিয়ে ইশারা করার প্রতি কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। ঠাট্টা করেও কারো দিকে অস্ত্র দিয়ে ইশারা করা যাবে না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لا يشير أحدكم على أخيه بالسلاح؛ فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزغ في يده، فيقع في حفرة من حفر النار» . তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইশারা না করে। কারণ, সে জানে না, শয়তান কখন তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেবে। ফলে সে জাহান্নামের গর্ত সমূহ হতে কোন গর্তে পতিত হবে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুল ফিতান, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, যে ব্যক্তি আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র বহন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয় আলোচনা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৭০৭২। মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: অস্ত্র দ্বারা কোন মুসলিমের দিক ইশারা করা অবৈধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৭।] মুসলিম শরিফের শব্দ -« لا يشير أحدكم إلى أخيه بالسلاح فإنه لا يدري أحدكم لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار » ( [মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: অস্ত্র দ্বারা কোন মুসলিমের দিক ইশারা করা অবৈধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৭।])؛ বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «من أشار إلى أخيه بحديدة؛ فإن الملائكة تلعنه حتى يدعه وإن كان أخاه لأبيه وأمه » . “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইশারা করে। ফেরেশতারা তার উপর অভিশাপ করে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অস্ত্র পরিহার না করে। যদিও সে তার আপন ভাই হয়ে থাকে”। [মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: অস্ত্র দ্বারা কোন মুসলিমের দিক ইশারা করা অবৈধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৬।]
এর চেয়েও বড় অন্যায় হল, মুসলিমদের বিপক্ষে তাদের অস্ত্র বহন করা। আব্দুল্লাহ বিন ওমর ও আবু মুসা আশয়ারি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তারা উভয় বলেন, « من حمل علينا السلاح فليس منا »
“যারা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র বহন করে তারা আমাদের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়” [বুখারি, কিতাবুল ফিতান, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, যে ব্যক্তি আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র বহন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয় আলোচনা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৭০৭০।]। এটি সতর্কতা তার জন্য যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেয় এবং অন্যায়ভাবে তাদের হত্যা করার জন্য অস্ত্র হাতে নেয়। কারণ, হাদিসে তাদের ভয় দেখানো হয়েছে, তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে [দেখুন: হাফেয ইবনে হাজারের ফতহুল বারী ২৪/১৩।]। যে সব বস্তু মানুষকে কষ্ট তা হতে মুমিনদের নিরাপদে রাখার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক গুরুত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তলোয়ারকে ঝুলিয়ে বহন করা হতে নিষেধ করেন। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, أن النبي صلى الله عليه و سلم نهى أن يُتعاطى السيف مسلولاً . “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তলোয়ার ঝুলিয়ে বহন করা হতে নিষেধ করেছেন”। [আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, কোসমুক্ত করে তলোয়ার আদান প্রদান করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ৪৯১/২।]
বিশ- মহিলাদের মসজিদে সালাত আদায় করা:
বিশুদ্ধে হাদিসসমূহে বর্ণিত যে, মহিলাদের জন্য তাদের ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম। যদি তাদের ঘর থেকে বের হওয়াতে কোন প্রকার ফিতনার আশঙ্কা না থাকে এবং তারা এমন সাজ-সজ্জা গ্রহণ না করে, যা ফিতনার দিকে তাদের নিয়ে যায়- যেমন খুশবু ব্যবহার করা, বে-পর্দা হওয়া, সৌন্দর্য প্রকাশ করা ইত্যাদি, তাহলে, পুরুষদের ওপর ওয়াজিব হল, তাদের সালাতের জামা‘আতে মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া এবং তাদের নিষেধ না করা। যদি এ ধরনের কোন খারাবী পাওয়া যায় বা আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের ওপর অনুমতি দেয়া ওয়াজিব নয়। তাদের জন্য বের হওয়াও উচিত নয়। তাদের জন্য বের হওয়া হারাম। এ বিষয়ে হাদিসসমূহ নিম্নরূপ:
প্রথম হাদিস: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا استأذنت أحدكم امرأته إلى المسجد فلا يمنعها »
“যখন তোমাদের কোন নারী তোমাদের নিকট মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তোমরা তাদের নিষেধ করো না”। মুসলিমে শরিফে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تمنعوا إماء الله مساجد الله »
তোমরা আল্লাহর বান্দীদের মসজিদে গমনে নিষেধ করো না। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি নিকাহ অধ্যায়, স্ত্রী স্বামীর নিকট মসজিদে গমনের অনুমতি প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ৫২৩৮। মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪২।] আর আবু দাউদে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تمنعوا نساءكم مساجد الله وبيوتهن خيرٌ لهن »
“তোমরা তোমাদের নারীদের আল্লাহর মসজিদসমূহে যাওয়া হতে নিষেধ করো না। আর তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪২। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৩/১।]
দ্বিতীয় হাদিস: জয়নব আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« إذا شَهِدَتْ إحداكُنَّ العشاء فلا تطيَّب تلك الليلة »
“যখন কোন মহিলা এশার সালাতে উপস্থিত হতে চায়, সে ঐ রাত্রিতে সু-গন্ধি লাগাবে না”। অপর শব্দে বর্ণিত, « إذا شهدت إحداكن المسجد فلا تمسّ طيباً » “যখন তোমাদের কেউ মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন খোশবু স্পর্শ না করে”। [মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪৩।]
তিন নং হাদিস: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أيما امرأة أصابت بخوراً فلا تشهد معنا العشاء الآخرة »
“যে মহিলা বখুর গ্রহণ করে, সে যেন আমাদের সাথে এশার সালাতে উপস্থিত না হয়”। [মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪৪।]
চতুর্থ হাদিস: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تمنعوا إماء الله مساجد الله، ولكن ليخرجن وهن تَفِلات »
“তোমরা তোমাদের নারীদের আল্লাহর মসজিদসমূহে যাওয়া হতে বারণ করো না। তবে তারা যেন খোশবু ছাড়া বের হয়” [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৫৬৫। আহমদ ৪৩৮/২, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাসান সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৩/১।]।
পঞ্চম হাদিস: আব্দুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلاة المرأة في بيتها أفضل من صلاتها في حجرتها وصلاتها في مَخْدعها أفضل من صلاتها في بيتها »
“মহিলাদের ঘরে সালাত আদায় করা, বারান্দায় সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর মহিলাদের খাস কামরায় সালাত আদায় করা, ঘরে সালাত আদায় করা হতে উত্তম। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, এ বিষয়ে কঠোরতা করা প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৫৭০। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৪/১।] এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, একজন নারীর জন্য সে যে ঘরে বসবাস করে, সেখানে সালাত আদায় করার সাওয়াব বেশি ঘরের সম্মুখ কামরায় সালাত আদায় করা হতে। কারণ, সম্মুখ কামরা পর্দার দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে থাকে ভিতরের কামরা হতে। আর ঘরের ভিতরে বড় কামরা অন্তর্গত বিশেষ কামরায় সালাত আদায় করা ভিতরের কামরায় সালাত আদায় করে হতে উত্তম। কারণ, মহিলাদের জন্য সালাত আদায়ের স্থানের ভিত্তি হল, পর্দা। সুতরাং, পর্দা যত বেশি হবে, সালাত তাতে উত্তম হবে [আল্লামা সাবকী রাহিমাহুল্লাহু এর আল মিনহাল আল আযবুল মাওরুদ, শরহু সূনানে আবু দাউদ। ২৭০/৪]।
ষষ্ট হাদিস: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لو تركنا هذا الباب للنساء » قال نافع : فلم يدخل منه ابن عمر حتى مات .
“আমরা যদি এ দরজাটিকে মহিলাদের জন্য ছেড়ে দেই”, [তাহলে ভালো হত]। নাফে‘ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করেননি”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, মহিলাদের মসজিদে পুরুষদের থেকে দূরে রাখা হাদিস নং ৪৬২ এবং এ বিষয়ে কঠোরতা করা প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৫৭১। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৪/১।] অর্থাৎ, যদি আমরা এ দরজাকে মহিলাদের জন্য ছেড়ে দেই, তা উত্তম হত। যাতে মহিলারা সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হলে, মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় পুরুষদের সাথে মিশতে না হয়। সুতরাং উচিত হল, মসজিদ সমূহে মহিলাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা ও বাহির হওয়ার জন্য বিশেষ দরজার ব্যবস্থা রাখা। যাতে তারা মসজিদের প্রবেশ করতে পারে এবং তা হতে বের হতে পারে। তবে শর্ত হল, কোন ফিতনার আশঙ্কা না থাকতে হবে। অন্যথায় তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করাই শ্রেয়। [আল্লামা সাবকী রাহিমাহুল্লাহু এর আল মিনহাল আল আযবুল মাওরুদ, শরহু সূনানে আবু দাউদ। ৭০/৪ এবং আওনুল মা’বুদ। ২৭৭/২।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিসগুলো এ বিষয়ে স্পষ্ট যে, মহিলাদের মসজিদে গমনে নিষেধ করা হবে না। তবে কতগুলো শর্ত আছে, যেগুলো আলেমগণ হাদিস থেকে বের করে উল্লেখ করেছেন। আর সে গুলো হল, যে সব মহিলা সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হবে তারা সুগন্ধি লাগাবে না, সাজ-সজ্জা অবলম্বন করবে না, আর আওয়াজ বিশিষ্ট কোন অলংকার পরিধান করবেনা, পুরুষদের সাথে মিশবে না, এমন যুবতী হবে না যার বের হওয়ার কারণে ফিতনার আশংকা থাকে এবং রাস্তায় কোন ফিতনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। [ইমাম নববীর মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা, ৪০৬/৪।]
একুশ- জুমু‘আর সালাতের পূর্বে ইমামের খুতবা দেয়ার সময় মসজিদে দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক গুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা। মুয়ায বিন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« نهى عن الحُبْوَةِ يوم الجمعة والإمام يخطب »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবা দেয়ার সময় দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক ঘুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা [ الحبوة : মসজিদে দুই হাটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক ঘুটিয়ে কাপড় পেছিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা। আবার কখনো সময় এহতেবা দুই হাত মাটিতে রাখার কারণেও হয়ে থাকে। দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৫২৫/২।] হতে নিষেধ করেছেন”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, হাদিস নং ১১১০। তিরমিযি, জুমআ অধ্যায় অধ্যায়, হাদিস নং ৫১৪। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদ ২০৬/১ এবং বিশুদ্ধ সূনানে তিরমিযিতে ১৫৯/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
] نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الاحتباء يوم الجمعة، يعني والإمام يخطب [.
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন আমাদেরকে দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক ঘুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা থেকে নিষেধ করেছেন”। [ইবনে মাযা, কিতাবুল মাসাজিদ ও জামা‘আত। হাদিস নং ১১৩৪, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে ইবনু মাযাতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৮৭/১।]
ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আহলে ইলমের একটি জামা‘আত বলেন, জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবার সময় ইহতেবা করে বসাকে মাকরূহ বলেন। আবার কতক আলেম এ ধরনের বসার অনুমতি দেন। যারা অনুমতি দেন তারা হলেন, আব্দুল্লাহ বিন ওমর ও অন্যান্যরা। তাদের সাথে সহমত প্রকাশ করেন, আহমদ ইসহাক। তারা উভয় ইমামের খুতবার সময় ইহতেবা করাতে কোন অসুবিধা মনে করেন না। [সূনানে তিরিমিযি তুহফাতুল আহওয়াযী সহ, ৪৬/৩।]
ইমাম শওকানী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, জুমু‘আর দিন ইহতেবা মাকরূহ হওয়া বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এক জামা‘আত আহলে ইলম বলেন, এটি মাকরূহ। তারা পরিচ্ছেদের হাদিস ও তার সমর্থক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন। আর অধিকাংশ আলেম যেমন- ইরাকী রাহিমাহুল্লাহু এর মত হল মাকরূহ না হওয়া। তারা উল্লেখিত হাদিসসূহের উত্তরে বলেন, এগুলো সবই দুর্বল হাদিস। [আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৫২৫/২।]
মুবারকফুরি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ বিষয়ে হাদিসগুলো দুর্বল হলেও একটি হাদিস আরেকটি হাদিসকে শক্তিশালী করে। আর নি:সন্দেহে বলা যায়, ইহতেবা ঘুমের কারণ হয়। এ কারণেই উত্তম হল, জুমু‘আর দিন খুতবার সময় ইহতেবা করা থেকে বিরত থাকা। এটিই আছে আমার নিকট আল্লাহ ভালো জানেন [সূনানে তিরিমিযি তুহফাতুল আহওয়াযী সহ, ৪৭/৩।]। আমি আমার শাইখ ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহু কে বলতে শুনেছি, তিনি মুবারক পুরি রাহিমাহুল্লাহু এর কথার সাথে একটু বাড়িয়ে বলেন, এটি বিশুদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি এহতেবা না করাই উত্তম। [আল্লামা মুবারকপুরি কথার উপর তা’লীক করার সময়৪৭/৩ আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
আমি তাকে মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস সম্পর্কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, এহতেবা সম্পর্কে সর্বাধিক হাসান হাদিস হল এ হাদিস। হাদিসটি বিষয়ে কথা আছে। তবে তার একাধিক দুর্বল সাক্ষী আছে। সুতরাং মুমিনদের জন্য উত্তম হল, ইহতেবা না করা। আর কতক সাহাবীদের এহতেবা করা সম্পর্কে তিনি বলেন, কারণ, তাদের নিকট এ হাদিসটি পৌঁছে নাই। [সূনানে তিরমিযির ৫১৪ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
বাইশ- মিম্বার: খতীবের আরোহণ করার সিঁড়িকে উঁচা হওয়ার কারণে মিম্বার বলে। [আল্লামা ইবনে মানজুরের লিসানুল আরব, ১৮৯/৫।] হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একটি মিম্বার গ্রহণ করেন। আবু হাযেম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
سألوا سهل بن سعد رضى الله عنه من أي شيء المنبر؟ فقال : « ما بقي بالناس أعلم مني : هو من أثل الغابة عمله فلان مولى فلانة لرسول الله صلى الله عليه و سلم »
“তারা সাহাল বিন সাআদকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বার? তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক জানার মত কোন লোক দুনিয়াতে বাকী ছিল না”। তার মিম্বার ছিল বনের বৃক্ষের তৈরী। তা অমুক গোলাম বানিয়েছে”। অপর শব্দে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলার নিকট এ নির্দেশ দিয়ে পাঠান, তুমি তোমার মিস্ত্রি গোলামকে আদেশ দাও, সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের মিম্বার বানায় যার উপর আমি বসব। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন,
] والله إني لأعرف مما هو، ولقد رأيته أول يوم وضع، وأول يوم جلس عليه رسول الله صلى الله عليه و سلم، أرسل رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى فلانة امرأة من الأنصار : « مُري غلامك النجار أن يعمل لي أعواداً أجلس عليهنّ إذا كلمتُ الناس » فأمرته فعملها من طرفاءِ الغابة، ثم جاء بها فأرسلت إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم، فأمر بها فوضعت هاهنا ...[.
“আল্লাহর কসম আমি জানি কোন জিনিস দিয়ে তা বানিয়েছে। প্রথম যেদিন সেটিকে রাখে এবং যেদিন প্রথমবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর বসে, আমি তাকে দেখছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন আনসারী মহিলার নিকট এ নির্দেশ দিয়ে পাঠান যে, তুমি তোমার মিস্ত্রি গোলামকে নির্দেশ দাও, সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের মিম্বার বানায় যার উপর আমি মানুষের সাথে কথা বলার সময় বসব । তারপর সে একটি মিম্বার বানায়.... তারপর সে এটিকে নিয়ে আসলে মহিলাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট পাঠান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রাখার নির্দেশ দিলে তাকে এ জায়গায় রাখা হয়। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ সালাত আদায় করা ছাদ, মিম্বর ও লাকড়ীর উপর। হাদিস নং ৩৭৭, মসজিদের মিম্বর বানানোর সময় মিস্ত্রী ও কারিগরের সহযোগীতা গ্রহণ হাদিস নং ৪৪৮, জুমআ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মিম্বরের উপর খুতবা দেয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৯১৭] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن امرأة قالت : يا رسول الله، ألا أجعل لك شيئاً تقعد عليه؟ فإن لي غلاماً نجاراً، قال : « إن شئت » . وفي لفظ : «كان جذع يقوم عليه النبي صلى الله عليه و سلم فلما وُضِع له المنبر سمعنا للجذع مثل أصوات العشار حتى نزل النبي صلى الله عليه و سلم فوضع يده عليه »
“এক মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমি কি তোমার জন্য এমন একটি জিনিস বানাবো যার উপর তুমি বসবে?। আমার একজন মিস্ত্রি গোলাম আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, যদি চাও তুমি বানাতে পার। অপর এক শব্দে বর্ণিত, একটি খেজুরের কাঠ ছিল যার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ায়। যখন তার জন্য মিম্বার রাখা হল, আমরা খেজুরের কাঠ থেকে গরুর বাছুরের আওয়াজের মত আওয়াজ শুনতে পাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নেমে গেলেন এবং হাতকে তার উপর রাখেন”। অপর এক শব্দে বর্ণিত,
«فصاحت النخلة التي كان يخطب عندها حتى كادت أن تنشق، فنزل النبي صلى الله عليه و سلم حتى أخذها فضمها إليه، فجعلت تئنّ أنين الصبي الذي يسكَّت حتى استقرت، قال : بكت على ما كانت تسمع من الذكر»
তারপর যে খেজুরের গাছের নিকট দাঁড়িয়ে খুতবা দিত, সে খেজুর গাছটি চিৎকার দেয়া আরম্ভ করল। এমনকি সে যেন ফেটে পড়ার উপক্রম হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নামলেন এবং তার উপর হাত রেখে তাকে তার দিক মিলিয়ে নিলে খেজুরের ডাল এমন বাচ্চার মত কাঁদতে লাগল যার ক্রন্দন থামানো হচ্ছিল। তারপর গাছটি স্থির হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার আলোচনা শুনে খেজুর গাছটি কাঁদছিল। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদের মিম্বর বানানোর সময় মিস্ত্রী ও কারিগরের সহযোগীতা গ্রহণ, হাদিস নং ৪৪৮, জুমআ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মিম্বরের উপর খুতবা দেয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৯১৭, কিতাবুল বুয়ু, পরিচ্ছেদ: নাজ্জারের আলোচনা হাদিস নং ২০৯৫। কিতাবুল মানাকেব, ইসলামে নবুওয়তের আলামত হাদিস নং ৩৫৮৫।] অপর একটি শব্দে বর্ণিত,
«كان المسجد مسقوفاً على جذوع من النخل، فكان النبي صلى الله عليه و سلم يقوم إلى جذع منها، فلما صنع له المنبر فكان عليه ... »
মসজিদের ছাদ ছিল খেজুরের কাঠের উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ডানে সাথে দাঁড়াতেন। তারপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য মিম্বার বানানো হল, তখন সে তার উপর ...
আব্দুল্লাহ বিন ওমর হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
لَمّا بدَّن قال له تميم الداري : ألا أتخذ لك منبراً يجمع أو يحمل عظامك؟ قال : «بلى» فاتخذ له منبراً مرقاتين .
যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোটা হয়ে গেলেন [দেখুন জামেয়ুল উসুল আল্লামা ইবনুল আছীরের। ১৮৮/১১।], তাকে তামীমে দারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি কি তোমার জন্য একটি মিম্বার বানাবো? যা তোমাকে একত্র করবে বা তোমাকে বহন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তারপর তাকে দুই সিঁড়ি বিশিষ্ট একটি মিম্বার বানানো। [আবু দাউদ< সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ মিম্বর গ্রহণ করা, হাদিস নং ১০৮১। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ২০২/১।] সাহাল বিন সাআদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أرسل رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى امرأة : « انظري غلامك النجار يعمل لي أعواداً أكلم الناس عليها » فعمل هذه الثلاث درجات، ثم أمر بها رسول الله صلى الله عليه و سلم فوضعت هذا الموضع .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলার নিকট পাঠালেন-তুমি তোমার মিস্ত্রি গোলামটিকে বল সে যেন একটি মিম্বার বানায় যাতে আমি বসবো এবং মানুষের সাথে কথা বলি। তারপর সে তিন স্তর বিশিষ্ট একটি মিম্বার বানায় এবং সেটিকে এ স্থানে রাখা হয়। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ, পরিচ্ছেদ, সালাতে এক কদম বা দুই কদম চলাচল করা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৫৪৪।] সালমা বিন আকু‘ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« وكان بين المنبر والقبلة قدر ممر الشاة »
মিম্বার ও কিবলার মাঝে একটি ছাগল অতিক্রম করা পরিমাণ ফাঁকা থাকত। [মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মুসল্লি সুতরার নিকটবতী হওয়া, হাদিস নং ৫০৯।] সাহাল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
« أنه كان بين جدار المسجد مما يلي القبلة وبين المنبر ممر الشاة »
“মসজিদের দেয়াল যা ক্বিবলার সাথে সম্পৃক্ত, তার মাঝে ও মিম্বারের মাঝে একটি বকরী অতিক্রম করার সমপরিমাণ ফাঁকা থাকত”। [বুখারি, কুরআন ও সূন্নাহ আঁকড়ে ধরা অধ্যায়, হাদিস নং ৭৩৩৪]
তেইশ- মসজিদে গমনের সময় এখলাস থাকতে হবে, যাতে মহা ছাওয়াব লাভে ধন্য হয়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « من أتى المسجد لشيء فهو حظه » . “যে ব্যক্তি কোন কিছুর জন্য মসজিদে আসে, তাই তার অংশ”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদে বসে থাকার ফযিলত, হাদিস নং 472; মিম্বর গ্রহণ করা, হাদিস নং ১০৮১; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ৯৪/১।]
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে এসে দুনিয়া বা পরকাল বিষয়ে কোন কিছু অর্জন করতে চায়, সে তাই পাবে। কারণ, প্রতিটি মানুষের জন্য তাই মিলবে যা সে নিয়ত করে। এখানে মসজিদে আসার সময় নিয়তকে সহীহ করা বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যাতে নিয়তের মধ্যে গড়-মিল দেখা না দেয়। যেমন- হাঁটা-হাঁটি করা, সাথী-সঙ্গীদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা ইত্যাদির নিয়তে মসজিদে গমন করবে না। বরং মসজিদের যাওয়ার সময় ই‘তেকাফ, একাগ্রতা অবলম্বন, ইবাদাত-বন্দেগী, আল্লাহর ঘরের যিয়ারত, জ্ঞান লাভ করা ইত্যাদি ভালো কাজের নিয়ত করবে। [দেখুন: আল্লামা মুহাম্মদ শামসুল হক আজীম আবাদীর সূনানে আবুদাউদের ব্যাখ্যা আওনুল মাবুদ: ১৩৬/২।]
চব্বিশ- বিনা ওজরে কাছের মসজিদ ছেড়ে অন্য মসজিদে যাওয়া হতে সতর্ক থাকবে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «ليصلِّ أحدكم في مسجده ولا يتتبع المساجد» . “তোমরা তোমাদের নিজেদের মসজিদে সালাত আদায় করবে। মসজিদ খোঁজাখুঁজি করবে না”। [তাবরানী মুজাম আল কবীর: ২৭১/২ হাদিস নং ১৩৩৭৩, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১০৫/৫, হাদিস নং ৫৩৩২। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ।]
ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এটি নিকটবর্তী মসজিদ ত্যাগ করার একটি অসিলা মাত্র এবং ইমামের অন্তরে ভীতি ঢেলে দেয়া। আর যদি ইমাম এমন হয়, সে সালাত পরিপূর্ণ করে না, বিদ‘আত করে, প্রকাশ্যে কোন পাপে লিপ্ত থাকে, তখন অন্য কোন মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাতে কোনো অসুবিধা নাই। [এলামুল মুকেয়ীন ১৬০/৩।] যখন কোন গ্রামে কাছের মসজিদ জামা‘আত ত্যাগকারীর সংখ্যা বেশি হয়, তখন মসজিদে জামা‘আত না হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এর কারণে মানুষের মধ্যে ইমামের প্রতি খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়। কিন্তু যদি কোন ভালো উদ্দেশ্য থাকে, যেমন- দূরের মসজিদে কোন দ্বীনি আলোচনা, শিক্ষণীয় ক্লাস থাকে অথবা সে মসজিদে সালাত তাড়াতাড়ি হয় এবং মুক্তাদির তা জরুরি তখন দূরের মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাতে কোন অসুবিধা নাই। [দেখুন: আব্দুল্লাহ বিন ফাওযান, মসজিদে উপস্থিত হওয়ার বিধান, পৃ: ১৭৬।]
আর যদি কোন মানুষ মক্কা অথবা মদিনাতে বাস করে, মক্কার মসজিদে হারামে সালাত আদায় করা অথবা মদিনায় মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্য দূরে যাওয়াতে কোন অসুবিধা নাই। কারণ, এখানে দূরের মসজিদ দুটির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। [আল্লামা ইবনে উসাইমিনের আশ-শারহুল মুমতি‘ ২১৪-২১৫/৪।]
পঁচিশ- মানুষের কাঁধের উপর মাড়িয়ে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। আব্দুল্লাহ বিন বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جاء رجل يتخطى رقاب الناس يوم الجمعة والنبي صلى الله عليه و سلم يخطب، فقال له النبي صلى الله عليه و سلم : « اجلس فقد آذيت »
“এক ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মসজিদে এসে মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি বস তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জুমু‘আর দিন মানুষের গরদান ফাকা করা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১১১৮, নাসায়ী জুমু’আ অধ্যায়, জুমু‘আর দিন মানুষের গরদান ফাকা করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১৩৯৯। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ২০৮/১।] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رجلاً دخل المسجد يوم الجمعة ورسول الله صلى الله عليه و سلم يخطب فجعل يتخطى الناس فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « اجلس فقد آذيت وآنيت »
“জুমু‘আর দিন একজন মানুষ মসজিদে প্রবেশ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন, লোকটি মানুষকে সরাচ্ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বস, তুমি মানুষকে কষ্ট দিলে এবং দূরে সরালে”। [ইবনু মাযা, সালাত কায়েম করা অধ্যায়, জুমু‘আর দিন মানুষের গরদান ফাকা করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১১১৫; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৮৪/১।]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি সামনে ফাঁকা না থাকে তখন জুমু‘আর দিন হোক বা অন্য দিন কাতারে প্রবেশ করার জন্য কোন মানুষের মাথা ফাঁকা করা বৈধ নয়। কারণ, এটি যুলম ও আল্লাহর আদেশের লঙ্ঘন। [শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ: পৃ: ৮১।]
২৬- দুই ব্যক্তিকে আলাদা করবে না। সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يغتسل رجل يوم الجمعة، ويتطهّر ما استطاع من الطّهر، ويدهن من دهنه، أو يمسّ من طيب بيته، ثم يخرج فلا يُفرّق بين اثنين، ثم يصلّي ما كُتب له، ثم يُنصت إذا تكلّم الإمام إلا غُفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى» .
“যখন কোন ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে, যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে, শরীরে তেল লাগায়, স্বীয় ঘর থেকে সু-গন্ধি লাগায়, তারপর মসজিদে গিয়ে দুই ব্যক্তিকে আলাদা করে না, মসজিদে গিয়ে তার উপর যে সালাত আদায় করা ফরয করা হয়, তা আদায় করে এবং যখন ইমাম খুতবা দেয়, মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার এ জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আর মাঝে যত গুনাহ হয় সবই ক্ষমা করে দেবেন”। [বুখারি, জুমু‘আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জুমু‘আর জন্য তেল লাগানো, হাদিস নং ৮৮৩।]
সাতাশ- মুসল্লীর সামনে এবং তার সুতরার মাঝে হাঁটবে না। আবু জাহামের হাদিসে রয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لو يعلم المارُّ بين يدي المصلي ماذا عليه، لكان أن يقف أربعين خير له من أن يمرَّ بين يديه »
“যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী তার গুনাহ সম্পর্কে জানত, তাহলে তার জন্য চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করা উত্তম ছিল মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা থেকে”। আবু নদর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আমি জানিনা তিনি কি চল্লিশ দিন বলেছেন নাকি চল্লিশ মাস নাকি চল্লিশ বছর [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস নং ৫১০, মুসলিম, হাদিস নং ৫০৭।]।
আটাশ- মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য কোন স্থানকে নির্ধারিত করবে না: আব্দুর রহমান বিন শিবল বলেন,
نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم عن نقرة الغراب، وافتراش السبع، وأن يوطن الرجل المكان في المسجد كما يوطن البعير .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাকের ঠোকরের মত ঠোকর দেয়া থেকে নিষেধ করেন। উঠ যেভাবে আসন নির্ধারণ করে সেভাবে কোন মানুষকে মসজিদে আসন নির্ধারণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। [আবু দাউদ হাদিস নং ৮৬২। আহমদ: ২২৯/১ হাকেম: ৫২৪/১ আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯৪/১।]
ঊনত্রিশ- বসার জন্য কাউকে তার জায়গা থেকে উঠাবে না। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يقيمنَّ أحدُكم أخاه يوم الجمعة ثم ليخالف إلى مقعده، فيقعد فيه، ولكن يقول : افسحوا »
“তোমাদের কেউ যেন, তোমার ভাইকে তার স্থান থেকে না উঠায় এবং তাকে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে সে স্থানে না বসে। তবে তাকে বলবে, তুমি জায়গা খালি কর”। [মুসলিম, সালাম অধ্যায়, হাদিস নং ২১৭৮।] আব্দুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল বলেন,
«لا يقيمنّ أحدُكم الرجلَ من مجلسه ثم يجلس فيه، ولكن تفسّحوا وتوسّعوا » قال نافع : الجمعة؟ قال الجمعة وغيرها،
“তোমাদের কেউই যেন তার ভাইকে তার মজলিশ থেকে সরিয়ে তার স্থানে না বসে। তবে তোমরা মজলিশে জায়গা করে দাও এবং মজলিশকে প্রশস্থ কর”। নাফে রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এটি কি শুধু জুমু‘আ বিষয়ে? তিনি বললেন, জুমু‘আ ও অন্য সব সময়; এটি সব মজলিশকে শামিল করে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, জুমআ অধ্যায়, হাদিস নং ৯১১; মুসলিম, সালাম অধ্যায়, হাদিস নং ২১৭৮।]
ত্রিশ- জুমু‘আর দিন খুতবার শ্রবণ করার জন্য চুপ করে থাকবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت »
“যখন তুমি তোমার সাথীকে জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবার সময় বলবে, তুমি চুপ কর, তাহলে অন্যায় করলে”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, জুমু‘আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ইমামের খুতবা দেয়ার সময়, জুমু‘আর দিন চুপ থাকা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৯৩৪; মুসলিম, কিতাবুল জুমু‘আ, ইমামের খুতবা দেয়ার সময়, জুমু‘আর দিন চুপ থাকা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৮৫১।]
একত্রিশ- আযান ও ইকামতের মাঝে মানুষের সাথে কথা-বার্তা বলে, দুনিয়ার বিষয়ে অধিক প্রশ্ন করে, কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর যিকির হতে বিরত থেকে মূল্যবান সময়কে নষ্ট করবে না। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফু‘ হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سيكون في آخر الزمان قوم يجلسون في المساجد حلقاً حلقاً، إمامهم الدنيا، فلا تُجالسوهم؛ فإنه ليس لله فيهم حاجة »
“শেষ জামানায় এমন সম্প্রদায়ের লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মসজিদে হালকাবন্দী হয়ে বসবে, তাদের লক্ষ্য হবে দুনিয়া। তোমরা তাদের সাথে বসবে না। কারণ, তাদের মধ্যে আল্লাহর জন্য কোন প্রয়োজন নাই। [তাবরানী, আল-কবীরে ১৯৯/১০, হাদিস নং ১০৪৫২, হাদিসটিকে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু সিলসিলাতুল আহাদিস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হাদিস নং ১১৬৩।]
বত্রিশ- জুমু‘আর দিন বা অন্য দিন জায়নামায ইত্যাদি দিয়ে কোন জায়গাকে দখল করে রাখবে না। কারণ, এটি হল মসজিদের কোন অংশকে বিছানা দিয়ে জবর দখল রাখার শামিল এবং অন্য মুসল্লী যারা আগে মসজিদে আসে তাদেরকে সে জায়গায় সালাত আদায় থেকে বাধা দেয়ার নামান্তর। মানুষকে মসজিদে আগে আগে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি বিছানা পাঠিয়ে দেয় এবং সে নিজে দেরিতে আসে, সে দুই দিক দিয়ে শরিয়তের বিরোধিতা করল; এক- তাকে আগে আসার নির্দেশ দেয়া হল, সে তা না করে দেরীতে মসজিদে আসল। দুই- সে মসজিদের কিছু অংশকে জবর দখল করে রাখল। ফলে যারা মসজিদে আগে আসবে, তাদের তাতে সালাত আদায় করতে বাধা দিল এবং প্রথম কাতার পুরো করা থেকে নিষেধ করল এবং যখন মানুষ উপস্থিত হবে, তখন তাদেরকে ফাঁক করে সামনে এগুতে হবে। [দেখুন: মাজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে শাইখুল ইসলাম- ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু পৃ: ২১৬-২১৭/২৪ ও ৮৮/২৭।] আল্লামা আব্দুর রহমান আস-সা‘দী রাহিমাহুল্লাহু এ কাজটিকে নাজায়েজ বলে ফতোয়া দেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্ম হালাল নয়। কারণ, এটি শরিয়তের পরিপন্থী এবং সাহাবায়ে কেরাম ও কেয়ামত পর্যন্ত তাদের অনুসারীদের আদর্শের পরিপন্থী। [দেখুন: ফতুয়া আস-সাদীয়াহ, পৃ: ১৮২। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বিষয়টি না যায়েজ হওয়ার ফতুয়া দিতে শুনেছি। তবে যদি মানুষ মসজিদে থাকে এবং ওজুর জন্য বের হয় এবং আবার ফিরে আসে।]
তেত্রিশ- গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি এবং ঋতুবতী মহিলা মসজিদে বসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْۚ ٤٣ ﴾ [ النساء : ٤٣ ] ( [সূরা নিসা আয়াত: ৪৩।]).
আয়াতের ব্যাখ্যা: মুসল্লী যেন সালাত আদায়ের জন্য মাতাল অবস্থায় মসজিদের নিকটে না যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত সে কি বলে তা বুঝতে পারে। আর নাপকী অবস্থায়ও কেবল অতিক্রম করা ছাড়া মসজিদে নিকট না যায়। অর্থাৎ মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য যতটুকু হাঁটা প্রয়োজন হয়, তা ছাড়া যেন মসজিদে চলাচল না করে। আয়াতে সালাতকে মসজিদ ও সালাতের স্থানের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাখ্যাটিকে ইমাম ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু প্রাধান্য দেন। [জামেয়ুল বায়ান ৩৮২-৩৮৫/২।] হাফেয ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহুবলেন, অনেক ইমামগণ এ আয়াত দ্বারা এ কথার উপর প্রমাণ পেশ করেন, যে গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থান করা হারাম। তবে তার জন্য মসজিদ ত্যাগ করার জন্য অতিক্রম করা বৈধ। অনুরূপভাবে ঋতুবতী ও নিফাস ধারিনী মহিলার বিধানও একই। [তাফসীরুল কু্রআন আল-আজীম পৃ: ৩২৭।]
তবে ঋতুবতী ও নিফাস ধারিনী মহিলার উপর জরুরী হল, সে মসজিদকে নাপাক করা হতে হেফাযত করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
« ناوليني الخمرة من المسجد » ، فقالت : إني حائض، فقال : « إن حيضتك ليست في يدك »
“তুমি আমার জন্য মসজিদ থেকে জায়নায নিয়ে আস। তখন সে বলল, আমি হায়েযা। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার হায়েয তোমার হাতে নয়”। [মুসলিম, কিতাবুল হায়েয, একই বিছানায় হায়েযা মহিলার সাথে শোয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ২৯৮।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
قال : بينما رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد قال : «يا عائشة ناوليني الثوب » فقالت : إني حائض، فقال : « حيضتك ليست في يدك »
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে উপস্থিত ছিল, তিনি বললেন, হে আয়েশা তুমি আমার জন্য কাপড়টি নিয়ে আস। তখন সে বলল, আমি হায়েযা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার হায়েয তোমার হাতে নয়”। [মুসলিম, কিতাবুল হায়েয, একই বিছানায় হায়েযা মহিলার সাথে শোয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ২৯৯।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত মারফু‘ হাদিসটি - «وجِّهوا هذه البيوت عن المسجد، فإني لا أُحلّ المسجد لحائض ولا جنب » “তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে মসজিদ থেকে সরিয়ে নাও কারণ, আমি হায়েযা ও নাপাক ব্যক্তির জন্য মসজিদকে হালাল মনে করি না [আবু দাউদ, তাহারাত অধ্যায়, নাপাক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩২২। তালখীসে আল হাবিরে হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু ১৪০/১। ইমাম আহমদ বলেন, এতে কোন অসুবিধা দেখিনা। আল্লামা ইবনে খুজাইমা সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। আর ইবনে কাত্তান হাসান বলেন। আমি আমার শাইখকে বুলুগুল মুরাম ১৩২ নং হাদিসের ব্যখ্যায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হাদিসটির সনদে কোন অসুবিধা নাই।]”- যারা মসজিদে অবস্থান করে তাদের জন্য। কোন কোন আহলে ইলম জুনুবী-নাপাক-ব্যক্তি যখন ওজু করে তখন তার জন্য মসজিদে অবস্থান করা বৈধ বলে মত দেন। যায়েদ বিন আসলামের হাদিস তিনি বলেন,
أن بعض أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم كانوا إذا توضؤوا جلسوا في المسجد،
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতক সাহাবী ওজু করার পর মসজিদে বসে থাকতেন”। [বর্ণনায় সাঈদ বিন মনসূর ও খলিল বিন ইসহাক যেমনটি ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর মুন্তাকায় বর্ণিত। ১৪১-১৪২/১ এবং যেমনটি ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর উমদার ব্যাখ্যা। ৩৯১/১] কিন্তু অন্যান্য আহলে ইলমগণ বলেন, কোনক্রমেই মসজিদে বসবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী - ﴿ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْۚ ٤٣ ﴾ [ النساء : ٤٣ ] - “Ges অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৪৩।] ব্যাপক, তাতে সবাই শামিল। শুধু ওজু করা দ্বারা একজন মানুষ জুনুবী থেকে বের হয় না। একটু আগে উল্লিখিত হাদিসটির ব্যাপকতা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, এটিই সু-স্পষ্ট ও অধিক শক্তিশালী কথা, যে সব সাহাবীরা মসজিদে বসে থাকত, তাদের কর্মটি এ কথার উপর প্রয়োগ করা হবে যে, যে সব দলীল অপবিত্র ব্যক্তিকে মসজিদে বসা থেকে নিষেধ করছে, তাদের কাছে সে দলীলসমূহ গোপন ছিল। আর আসল হল, দলীলের উপর আমল করা। আর যায়েদ বিন আসলামের হাদিসটি যদিও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন, তবু যেহেতু তিনি হাদিসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে একা, তাই তার বিষয়ে হাদীস বিশারদদের অন্তরে কিছু (সমস্যা) আছে [মুন্তাকা এর ৩৯৬ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি আমার শাইখকে বলতে শুনেছি।]।
« أمر رسول الله صلى الله عليه و سلم ببناء المساجد في الدور وأن تنظف، وتطيب »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিভিন্ন বাড়ীতে বাড়ীতে (তথা এলাকায়) মসজিদ বানানো [বাড়ীতে বাড়ীতে মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা : সুফিয়ান রাহিমাহুল্লাহু বলেন, অর্থাৎ বিভিন্ন গোত্রে মসজিদ বানানো। দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীর রাহিমাহুল্লাহু এর জামেউল উসুল ২০৮/১১।] এবং মসজিদকে পরিষ্কার করা ও সুগন্ধময় করার নির্দেশ দেন”। [আহমদ মুসনাদ ২৭৯/৬; আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: বাড়ীতে মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদীস নং ৪৫৫; তিরমিযি, কিতাবুল জুমুআ, মসজিদকে সু-গন্ধী লাগানো বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৫৯৪; ইবনে মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ওয়াল জামা‘আত, হাদিস নং ৭৫৮, ৭৫৯; আর আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন, হাদিস নং ৯২/১।]
সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি তার ছেলের নিকট এ বলে চিঠি লেখেন- (( أما بعد، فإن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يأمرنا بالمساجد أن نصنعها في دورنا، ونصلح صنعتها، ونطهرها )). “অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আমাদের এলাকায় মসজিদ বানানো এবং মসজিদের সংস্কার করা ও পবিত্র করার নির্দেশ দিতেন”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: বাড়ি বাড়ি মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৫৬। আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯২/১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن رجلاً أسودَ أو امرأة سوداء كان يقمُّ المسجد فمات ولم يعلم النبي صلى الله عليه و سلم بموته، فذكره ذات يوم، فقال : « ما فعل ذلك الإنسان »؟ قالوا : مات يا رسول الله، قال : « أفلا آذنتموني » ؟ فقالوا : إنه كان كذا وكذا قصته، قال : فحقروا شأنه، قال : « دلّوني على قبره » أو قال : « على قبرها » فأتى قبرها فصلى عليها، [ ثم قال : « إن هذه القبور مملوءة ظلمة على أهلها، وإن الله تعالى ينوِّرها لهم بصلاتي عليهم » .
“একজন কালো ব্যক্তি বা মহিলা মসজিদ পরিষ্কার করত। [ قَمُّ المسجد অর্থাৎ, পরিস্কার করা, দেখুন: আল্লামা মুনযিরির, আত-তারগীব ও আত-তারহীব: ২৬৮/১।] লোকটি মারা গেল কিন্তু তার মৃত্যু সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হয়নি। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আলোচনা করে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে বললেন, ঐ লোকটি কি করলেন? তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল লোকটি মারা গেল। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? তারা বলল, সে ছিল এমন এবং তার ঘটনা এই। মোট কথা তারা তার বিষয়টিকে খাট করে দেখলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে তার কবর দেখাও অথবা বললেন, তার [মহিলার] কবর দেখাও। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কবরের উপর এসে তার জন্য দু'আ করল। তারপর তিনি বললেন, কবরসমূহ কবর বাসীর জন্য অন্ধকারে পরিপূর্ণ। আর আল্লাহ তা‘আলা কবরসমূহের উপর আমার দু'আ করা দ্বারা আলোকিত করবেন। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: كنس المسجد والتقاط الخرق، والأذى، والعيدان، হাদিস নং ৪৫৮; কিতাবুল জানায়েয, পরিচ্ছেদ: দাফনের পর কবরের উপর সালাত আদায়, হাদিস নং ১৩৩৭; মুসলিম, কিতাবুল জানায়েয, পরিচ্ছেদ: দাফনের পর কবরের উপর সালাত আদায়, হাদিস নং ৯৫৬।] আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
بينما نحن في المسجد مع رسول الله صلى الله عليه و سلم، إذ جاء أعرابي فقام يبول في المسجد، فقال أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم : مه، مه ؟ قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « لا تزرموه دعوه » فتركوه حتى بال، ثم إن رسول الله صلى الله عليه و سلم دعاه فقال له : « إن هذه المساجد لا تصلح لشيء من هذا البول والقذر، إنما هي لذكر الله تعالى والصلاة، وقراءة القرآن » أو كما قال رسول الله صلى الله عليه و سلم، قال : فأمر رجلاً من القوم فجاء بدلوٍ من ماءٍ فشنَّه عليه )).
“একদিন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম তখন একজন গ্রাম্য লোক এসে মসজিদে দাড়িয়ে পেশাব করা আরম্ভ করলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাকে বলল, থাম থাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে বাধা দিও না। তাকে তোমরা আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও। তারপর তাকে তারা বাধা দিলেন না। সে নিরাপদে পেশাব করার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ যিকর, কুরআন তিলাওয়াত ও সালাত আদায়ের জন্য। এখানে পেশাব-পায়খানা করা চলবে না। অথবা রাসূল যেভাবে বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর এক লোককে এক বালতি পানি এনে তার উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দেন এবং পানি ঢেলে দেন। [বুখারি ও মুসলিম: কিতাবুল ওজু অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদের ভিতরে পেশাবের উপর পানি ঢেলে দেয়ার আলোচনা, হাদিস নং, ২২১; মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়, পেশাব ইত্যাদি নাপাক বস্তু যখন মসজিদে পাওয়া যায়, তা ধোয়া ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে, আর যমিন পানি দ্বারা পরিস্কার হয়ে যায়, কোন প্রকার খনন করা ছাড়াই, হাদিস নং ২৮৫।] আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «البزاق في المسجد خطيئة، وكفَّارتها دفنه » “মসজিদে থু থু ফেলা অন্যায় আর তার কাফ্ফারা হল, তা দাফন করে দেয়া”। মুসলিমের অপর শব্দে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «التفل في المسجد خطيئة وكفارتها دفنها» “মসজিদে থু থু ফেলা অন্যায়, আর তার কাফ্ফারা হল, তা দাফন করে দেয়া (অর্থাৎ পা মাড়িয়ে ঢেকে ফেলা)”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস সালাত, মসজিদে থু থু ফেলার কাফফরাহ, হাদিস নং ৪১৫; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, সালাত ইত্যাদিতে মসজিদে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ হওয়া এবং মুসল্লি তার সামনে বা ডানে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ৫৫২।] আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عُرضت عليّ أعمال أمتي : حسنها وسيئها، فوجدت في محاسن أعمالها، الأذى يُماط عن الطريق، ووجدت في مساوئ أعمالها النخاعة تكون في المسجد ولا تدفن »
“আমার উম্মতের নেক আমল এবং বদ-আমলসমূহ আমার নিকট পেশ করা হল। আমি তাদের নেক আমলসমূহের মধ্যে দেখতে পেলাম রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। আর তাদের খারাব আমলসমূহে দেখতে পেলাম মসজিদে থু থু ফেলা হয়েছে অথচ তা দাফন করা হয়নি”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ, পরিচ্ছেদ, মসজিদে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ৫৫৩।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ কথা স্পষ্ট এখানে যে খারাবী ও দুর্নামের কথা বলা হয়েছে, তা শুধু যে ব্যক্তি থু থু ফেলে তার সাথে খাস নয়; বরং যে ব্যক্তি দেখা সত্ত্বেও তা ঢেকে দয়ে দাফন করেনি অথবা খোঁচা ইত্যাদি দিয়ে পরিষ্কার করেনি সবই তার অন্তর্ভুক্ত। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৪৫/৫।]
দুই- যখন মসজিদে যাবে তখন দুর্গন্ধ হতে দূরে থাকবে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من أكل ثوماً أو بصلاً فليعتزلْنا، أو ليعتزلْ مسجدَنا، وليقعدْ في بيته »
“যে ব্যক্তি পেয়াজ বা রশুন খায়, সে যেন আমাদের থেকে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে এবং সে যেন তার স্বীয় ঘরে বসে থাকে”।
মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «فإن الملائكة تتأذَّى مما يتأذَّى منه الإنس» “নিশ্চয় ফেরেশতারা ঐ সব বস্তু হতে কষ্ট পায়, যে বস্তু হতে মানুষ কষ্ট পায়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস: ৮৫৫; মুসলিম, হাদিস: ৫৬৪; মাকরুহাতে সালাতের আলোচনায় হাদিসটির তাখরীয উল্লেখ করা হয়েছে।] ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু তার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষকে এ বলে ভাষণ দেন,
«إنكم أيها الناس تأكلون شجرتين لا أراهما إلا خبيثتين، هذا البصل والثوم، لقد رأيت رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا وجد ريحهما من الرجل في المسجد أمر به فأُخرج، فمن أكلهما فليمتهما طبخاً»
“হে মানুষ তোমরা দুটি গাছ খাও এ দুটিকে খবীস বলেই মনে করি। গাছ দুটি হল, পেয়াজ ও রশুন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখেছি, তিনি মসজিদে কোন মানুষ থেকে এ দুটি গাছের দুর্গন্ধ পেলে তাকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন। যদি কেউ খায় সে যেন গাছ দুটিকে সম্পূর্ণ পাক করে নেয়”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের আলোচনা, হাদিস: ৫৬৬।]
তিন- মসজিদে সালাতের জামা‘আত কায়েম করা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য মসজিদ ছাড়া সালাত আদায় করা জায়েয নাই। এ বিষয়টির উপর প্রমাণ ঐ সব দলীল যেগুলো জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হওয়াকে প্রমাণ করে। মনে রাখবে, জামা‘আতে সালাত আদায় করা ফরযে আইন [জামা‘আতে সালাতের বিধানের আলোচনায় এ বিষয়ের দলীলসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।] তবে যদি মসজিদ পাওয়া না যায় অথবা মসজিদ অনেক দূরে; আযান শোনা যায় না অথবা সফরে অবস্থান করছে, তখন জামা‘আতে সালাত আদায় করা ফরয নয়। জামা‘আত শুধু সক্ষম ব্যক্তির উপর ওয়াজিব, অক্ষমের উপর নয়। যারা অক্ষম তারা যে কোন পবিত্র স্থানে সালাত আদায় করে নেবে। কারণ, যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أُعطيت خمساً لم يُعطهنّ أحد قبلي : نُصرت بالرعب مسيرة شهر، وجُعِلت لي الأرض مسجداً وطهوراً، فأيما رجل من أمتي أدركته الصلاة فليصلِّ، وأحلت لي الغنائم ولم تُحلّ لأحد قبلي، وأعطيت الشفاعة، وكان النبي يُبعث إلى قومه خاصة وبُعثتُ إلى الناس عامة»
“আমাকে পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কাউকে দেয়া হয়নি। আমাকে একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত ভীতি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছ। আমার জন্য যমিনকে মসজিদ ও পবিত্র করা হয়েছে। সুতরাং, আমার উম্মত হতে যে কোন লোককে সালাতের ওয়াক্ত পেয়ে বসে সে যেন সালাত আদায় করে নেয়। আমার জন্য গণিমতের সম্পদকে হালাল করা হয়েছে যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য হালাল করা হয়নি। আমাকে সুপারিশ দেয়া হয়েছে। আর প্রত্যেক নবী তার সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে আর আমাকে সমগ্র মানুষের নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি,তায়াম্মুম অধ্যায়, হাদিস, ৩৩৫। মুসলিম কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের আলোচনা, হাদিস: ৫২১।] ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যে ব্যক্তি হাদিসসমূহে ভালোভাবে চিন্তা করে, তার নিকট এ কথা স্পষ্ট হবে, মসজিদে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা ফরযে আইন। তবে কোন কোন অপরাগতা এমন আছে যেগুলোর কারণে জামা‘আত ও জুমু‘আর সালাত ছেড়ে দেয়া বৈধ। কোন প্রকার অপারগতা ছাড়া মসজিদে উপস্থিত হওয়া ছেড়ে দেয়া, বিনা ওজরে জামা‘আত ছেড়ে দেয়ার নামান্তর। সুতরাং আমরা যে সিদ্ধান্ত দ্বারা আল্লাহর দ্বীনকে মানব, একমাত্র ওজর ছাড়া মসজিদে সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকে জায়েয নাই। আল্লাহই ভালো জানেন কোনটি বিশুদ্ধ [আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম, কিতাবুস সালাত পৃ: ৮৯।]।
চার, কবরকে মসজিদ বানানো হারাম হওয়া: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল বলেন, (( لعن الله اليهود والنصارى اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد ))؛ আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের অভিশাপ করেন। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন, আবুল ইয়ামান, হাদিস: ৪৩৬; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩০।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ও আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস তারা উভয়ে ইরশাদ করেন,
(( لَمّا نزل برسول الله صلى الله عليه و سلم طفق يطرح خميصة له على وجهه، فإذا اغتم بها كشفها عن وجهه، فقال وهو كذلك : «لعنة الله على اليهود والنصارى، اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد يحذر ما صنعو »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যখন মালাকুল মাওত উপস্থিত হল, [মালাকুল মওত হলেন মৃত্যুর ফেরেশতা।] তখন তার চেহারার উপর একটি উড়না রাখা হল। [আরম্ভ করল।] যখন তা দিয়ে তার চেহারা ডেকে দেয়া হত, তখন তিনি তা খুলে ফেলতেন। [অর্থাৎ, ঢেকে দেয়া হল।] তখন তিনি এ অবস্থায় বলেন, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানের উপর আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়েছেন। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারা যা করত, তা থেকে উম্মতকে সতর্ক করেন। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: আমাকে হাদিস বর্ণনা করেন, আবুল ইয়ামান, হাদিস: ৪৩৬; মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩০।]
জুনদব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্বে আমি তাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন,
« إني أبرأ إلى الله أن يكون لي منكم خليل؛فإن الله تعالى قد اتخذني خليلاً كما اتخذ إبراهيم خليلاً، ولو كنت مُتخذاً من أمتي خليلاً لاتخذت أبا بكر خليلاً، ألا وإن من كان قبلكم كانوا يتخذون قبور أنبيائهم وصالحيهم مساجد، ألا فلا تتخذوا القبور مساجد، فإني أنهاكم عن ذلك»
“আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্য হতে কেউ আমার বন্ধু হওয়া থেকে মুক্তি চাচ্ছি। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেন যেমনটি তিনি ইব্রাহিমকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেন। আমি যদি আমার উম্মত থেকে কাউকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আমি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতাম। মনে রেখ! তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের নবী ও নেক লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ বানাত। মনে রেখ, তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ বানিও না। কারণ, আমি তোমাদের এ থেকে নিষেধ করছি”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া, কবরের উপর মুর্তি স্থাপন করা নিষিদ্ধ হওয়া এবং কবরকে মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩২।]
وعن عائشة أن أم حبيبة وأم سلمة رضي الله عنهن ذكرتا كنيسة رأينها بالحبشة فيها تصاوير، فَذَكرتا للنبي صلى الله عليه و سلم فقال : « إنَّ أولئك إذا كان فيهم الرجل الصالح فمات بنوا على قبره مسجداً، وصوَّروا فيه تلك الصور، أولئك شرار الخلق عند الله تعالى يوم القيامة »
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, উম্মে হাবীবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা ও উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তারা উভয়ে মুলকে হাবসাতে দেখা একটি উপাসনালয়ের কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আলোচনা করেন, যার মধ্যে রয়েছে মূর্তি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের মধ্যে যখন কোন ভালো লোক মারা যেত, তারা তাদের কবরের উপর মসজিদ বানাত এবং এ সব মূর্তি গুলো তাদের আকৃতিতে তৈরি করত। এরা আল্লাহর কিয়ামতের দিব সর্বাধিক নিকৃষ্ট সৃষ্টি। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, কিতাবুস সালাত, باب هل تنبش قبور مشركي الجاهلية ويتخذ مكانها مساجد، হাদীস নং ৪২৭; মুসলিম, মুসলিম কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া, কবরের উপর মুর্তি স্থাপন করা নিষিদ্ধ হওয়া এবং কবরকে মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস: ৫৩২।]
পাঁচ: জরুরতের সময় কাফেরের মসজিদে প্রবেশ করা কোন প্রকার ক্ষতি করা ও কষ্ট দেয়া ছাড়া। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
بعث النبي صلى الله عليه و سلم خيلاً قِبَلَ نجدٍ فجاءت برجل من بني حنيفة يقال له : ثمامة بن أثال، فربطوه بسارية من سواري المسجد، فخرج إليه النبي صلى الله عليه و سلم فقال : « أطلقوه »فانطلق إلى نخل قريب من المسجد، فاغتسل، ثم دخل المسجد فقال : أشهد أن لا إله إلا الله وأن محمداً رسول الله .
‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্য দলকে নজদের দিকে প্রেরণ করলে তারা হানিফা গোত্র থেকে সুমামা ইবনুল আসাল নামক একজন লোককে ধরে নিয়ে আসেন এবং তাকে মসজিদের খুঁটিসমূহ হতে একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট গিয়ে বললেন, তাকে তোমরা ছেড়ে দাও। তারপর সে মসজিদের নিকট একটি বাগানের দিকে গিয়ে গোসল করল তারপর মসজিদে প্রবেশ করল এবং বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুস, সালাত, যখন ইসলাম কবুল করবে, তখন গোসল করা ও মসজিদে বন্দীদের বেঁধে রাখা, হাদিস: ৪৬২; পরিচ্ছেদ: মুশরিকের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা। মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ, পরিচ্ছেদ: কয়েদীকে বন্দী করা ও বেঁধে রাখা এবং তার উপর ইহসান করা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস: ১৭৬৪।] এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, মুশরিক প্রয়োজনের সময় মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। তবে মসজিদে হারামে প্রবেশ করতে পারবে না। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম, ১৮৫/২] আমি আমার শাইখ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত মসজিদে কাফেরকে বাঁধা যায়। এ হাদিস দ্বারা আরও প্রমাণিত হয়, কাফেরের জন্য মদিনায় প্রবেশ করা বৈধ। তবে মক্কায় প্রবেশ করা জায়েয নাই। আর হাদিসটি দ্বারা প্রমাণিত হয়, প্রয়োজনের সময় কাফের মসজিদের প্রবেশ করতে পারবে। মদিনার মসজিদে কাফের ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারলে অন্য মসজিদগুলোতে প্রবেশ না করতে পারা গ্রহণযোগ্য নয়। [বুলুগুল মুরাম ২৬৫ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি বলতে শুনেছি।]
ছয়- মসজিদে ভালো অর্থবোধক উপকারী কবিতা পড়া বৈধ। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن عمر رضى الله عنه مرّ بحسان رضى الله عنه وهو ينشد الشعر في المسجد، فلحظ إليه فقال : قد كنت أنشدُ وفيه من هو خير منك، ثم التفت إلى أبي هريرة فقال : أنشدك الله أسمعت رسول الله يقول : «أجب عني اللهم أيِّده بروح القدس » قال : اللهم نعم .
"ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাসসান বিন সাবেতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হাসসান মসজিদে কবিতা আবৃতি করছিলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকালেন। তখন তিনি বললেন, আমি মসজিদে কবিতা আবৃতি করতাম যে অবস্থায় মসজিদে তোমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। তারপর তিনি আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহ শপথ দিয়ে বলছি, তুমি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলতে শুনোনি? আমার পক্ষ থেকে উত্তর দাও! (রাসূল বলছেন,) “হে আল্লাহ তুমি তাকে রুহুল কুদ্স দ্বারা সাহায্য কর”। উত্তরে আবু হুরাইরা বললেন, হ্যাঁ"। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, মসজিদের কাব্য বলা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৫৩; মুসলিম, সাহাবীদের ফযিলত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: হাসসান বিন সাবেতের রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ফযিলত বিষয় আলোচনা, হাদিস নং২৪৮৫] এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে সব কবিতা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে, তা মসজিদে আবৃত্তি করা জায়েয আছে। কারণ, কবিতা আবৃত্তি মানুষের অন্তরে বিশাল প্রভাব ফেলে এবং মানুষকে হকের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। আর যে সব হাদিসে মসজিদের ভিতর কবিতা আবৃত্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা জাহিলিয়্যতের যুগের কবিতা এবং বাতিলদের কবিতা। মোট কথা যেগুলোর অনুমতি দেয়া হয়েছে, সে গুলো জাহিলিয়্যাত হতে নিরাপদ। আবার কেউ কেউ বলেন, এমন কবিতা হতে হবে যা মসজিদে উপস্থিত লোকদের কোন প্রকার বিঘ্ন না ঘটায় ।
সাত- মসজিদে হারানো বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করা। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من سمع رجلاً ينشد ضالة ( [ ينشُدُ শব্দটি من نشدت إذا طلبت হতে। দেখুন: সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৫৮/৫]) في المسجد فليقل : لا ردّها الله عليك؛فإن المساجد لم تُبنَ لهذا »
“যে ব্যক্তি কোন মানুষকে মসজিদে হারানো বস্তু তালাশ করতে শুনবে, সে যেন বলে, আল্লাহ তা‘আলা যেন, তোমাকে ফেরত না দেয়। কারণ মসজিদসমূহ এ জন্য বানানো হয়নি”। [মুসলিম কিতাবুল মাসাজিদ, মসজিদে কোন হারানো বস্তু তালাশ করা বিষয়ে আলোচনা। কাউকে তালাশ করতে দেখলে কি বলবে।] বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن رجلاً نشد في المسجد فقال : من دعا إلى الجمل الأحمر؟ فقال النبي صلى الله عليه و سلم : « لا وجدتَ إنما بُنيت المساجد لِمَا بُنيت له »
“এক ব্যক্তি মসজিদের হারানো বস্তু সম্পর্কে ঘোষণা দিয়ে বলে, আমার লাল উট পেয়ে আমাকে কে খবর দেবে [দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীরের জামেয়ুল উসুল ২০৪/১১।] ? তার কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি পাবে না, মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদের উদ্দেশ্য সম্পাদন করার জন্য (হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়ার জন্য নয়)”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, মসজিদে কোন হারানো বস্তু তালাশ করা বিষয়ে আলোচনা। কাউকে তালাশ করতে দেখলে কি বলবে, হাদিস নং ৫৬৯।]
উল্লেখিত হাদিসদ্বয় দ্বারা প্রমাণিত হয়, মসজিদের ভিতরে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া যে সব কাজ উল্লেখিত বিষয়ের সমর্থক হবে, তার বিধানও এর সাথে সম্পৃক্ত করা হবে। যেমন- মসজিদে বেচা-কেনা করা, বন্ধক দেয়া ইত্যাদি যাবতীয় লেনদেন নিষিদ্ধ এবং মসজিদে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা মাকরুহ। হাদিস দ্বারা আরও প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তু তালাশ করে, সে আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা ও নাফরমানি করার শাস্তিস্বরূপ তার উপর বদ দোয়া করা বৈধ। আর যে শোনে সে যেন এ কথা বলে, ‘তুমি পাবে না’, কারণ, মসজিদ এ জন্য বানানো হয় নাই। ‘তুমি পাবে না মসজিদকে মসজিদের উদ্দেশ্যেই বানানো হয়েছে’। আর الضالة শব্দের অর্থ হারানো বস্তু আর نشدها অর্থাৎ তালাশ করা ও জিজ্ঞাসা করা। [দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীরের জামেউল উসুল ২০৩/১১]
আট- মসজিদে বেচা-কেনা করা হারাম। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« إذا رأيتم من يبيع أو يبتاع في المسجد فقولوا : لا أربح الله تجارتك، وإذا رأيتم من ينشد فيه ضالة فقولوا : لا ردّ الله عليك »
“যখন কাউকে মসজিদে বিক্রি করতে বা খরিদ করতে দেখবে, তখন তাকে বল, আল্লাহ তোমার ব্যবসায় কোন লাভ না দিক। আর যখন দেখবে, কোন ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তু তালাশ করছে, তখন তুমি বলবে, আল্লাহ যেন তোমার নিকট ফেরত না দেয়”। [তিরমিযি, বেচা-কেনা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদে বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া হাদিস নং ১৩২১। নাসায়ী রাত ও দিনের আমল বিষয়ে আলোচনা অধ্যায়, হাদিস নং ১৭৬; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ৩৪/২।] হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মসজিদের বেচা-কেনা করা হারাম। কাউকে মসজিদে বেচা-কেনা করতে দেখতে তাকে বলা উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেন তোমার ব্যবসা বাণিজ্যে কোন বরকত না দেয়। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম ১৮৯/২।] এ কথা দ্বারা তাদেরকে বদ-দু'আ করে সতর্ক করা হল। আর কারণ উপরেই বলা হয়েছে। « فإن المساجد لم تبن لذلك » “মসজিদসমূহ এ জন্য বানানো হয়নি”।
নয়- মসজিদের ভিতরে হদ কায়েম করা যাবে না এবং কাউকে বন্দী রাখা যাবে না। হাকিম বিন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم أن يستقاد في المسجد،وأن تنشد فيه الأشعار،وأن تقام فيه الحدود »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কাউকে আটকে রাখা, গান গাওয়া ও হদ কায়েম করা হতে নিষেধ করেছেন”। [আবু দাউদ, কিতাবুল হুদুদ, পরিচ্ছেদ : মসজিদে হদ কায়েম করা প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৪৪৯০; আহমদ মুসনাদ ৩৪/৩; হাকিম, মুস্তাদরাক গ্রন্থে ৩৭৮/৪; ইমাম দারা কুতনী, সূনান গন্থে ৮৬/৩; বাইহাকী, আস-সূনান আল-কুবরা গ্রন্থে ৩২৮/৮, বুলুগুল মারামে হাফেয ইবনে হাজার হাদিসটিকে দূর্বল আখ্যায়িত করেন। আর আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে হাসান বলেন, ৮৫০/৩।] হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মসজিদে হদ কায়েম করা ও আটক করা হারাম। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম ১৯১/২।] আর যে সব কবিতা মসজিদে বলা জায়েয নাই সেগুলো হল, জাহিলিয়্যাত ও ফাসেকদের কবিতা। কিন্তু যে সব কবিতা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করে তাতে কোন অসুবিধা নাই। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হাদিসটি যদিও দুর্বল, কিন্তু সহীহ হাদিস থেকে তার অর্থের সমর্থন পাওয়া যায়। কারণ, মসজিদে হদ কায়েম করা দ্বারা যখন আসামিকে পেটানো বা হত্যা করা হয়, তখন মসজিদ রক্তাক্ত বা পেশাব, পায়খানা ইত্যাদি দ্বারা নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। [বুলুগুল মুরাম ২৬৯ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি বলতে শুনেছি।]
দশ- মসজিদে ঘুমানো, খাওয়া, ঘর বানানো অসুস্থ লোককে জায়গা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أصيب سعد يوم الخندق فضرب عليه رسول الله صلى الله عليه و سلم خيمة في المسجد ليعوده من قريب»
“খন্দকের যুদ্ধের দিন সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আঘাত প্রাপ্ত হয়ে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য মসজিদের ভিতরে একটি তাঁবু নির্মাণ করেন [দেখুন: আল্লামা সুনআনীর সুবুলুস সালাম: ১৯৩/২।] যাতে তাকে কাছের থেকে দেখা-শুনা করতের পারেন। [বুখারি ও মুসলিম বুখারি, সালাত অধ্যায়ে, মসজিদে রোগীদের জন্য তাবু নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৬৩। মুসলিম কিতাবুল জিহাদ, যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তাদের হত্যা করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ১৭৬৯।] এ হাদিস দ্বার প্রমাণিত হয়, মসজিদে ঘুমানো, অসুস্থ ব্যক্তি থাকা ও মসজিদে তাঁবু বানানো বৈধ। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু বলতে শুনেছি তিনি বলেন, মসজিদে তাঁবু বানানো, ই‘তেকাফের জন্য অথবা কোন সম্মানী ব্যক্তির জন্য যাতে মানুষ তার সাথে দেখা করতে পারে অথবা যার থাকার যায়গা নাই তার জন্য থাকার যায়গা বানানোতে কোন অসুবিধা নাই। [বুলুগুল মারামের ২৭০ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বর্ণিত, তিনি যখন অবিবাহিত যুবক ছিলেন, তখন মসজিদে ঘুমাতেন। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদের ঘুমানো প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৪৪০; মুসলিম, সাহাবীদের ফযিলত বিষয়ে আলোচনা, পরিচ্ছেদ: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ফযিলত, হাদিস নং ২৪৭৯।] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن وليدة سوداء كان لها خباء في المسجد، فكانت تأتيني فتحدث عندي، قالت : فلا تجلس عندي مجلساً إلا قالت :
ويوم الوشاح من تعاجيب ربنا ( [তার একটি আশ্চর্য ঘটনা রয়েছে। দেখুন সহীহ বুখারি: ৩৮৩৫, ৪৩৯।]) ألا إنه من بلدة الكفر أنجاني ( [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: নারীদের জন্য মসজিদের ঘুমানো প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৪৩৯; তাতে একটি আশ্চর্য ঘটনা রয়েছে!। ।])
একজন কালো বাঁদির জন্য মসজিদে একটি তাঁবু ছিল। সে আমার নিকট এসে আমার সাথে কথা বলত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও বলেন, সে আমার সাথে যখনই বসত তখন এ কথা গুলো বলত, “সে ঘটনার দিন, আমার প্রভূর একটি আশ্চর্য বিষয়সমূহের একটি আশ্চর্যের দিবস। তবে তিনি আমাকে কাফের শহর থেকে মুক্তি দিয়েছেন”।
এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যখন কোন ফিতনার আশঙ্কা না থাকে তখন মুসলিম পুরুষ বা নারী উভয়ের জন্য রাতে বা দিনে মসজিদে ঘুমানো বৈধ, [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম ১৯৩/২।] যদি তার কোন ঘর-বাড়ি না থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী সুফফার অধিবাসীরা মসজিদে ঘুমাত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« رأيت سبعين من أصحاب الصفة ما منهم رجل عليه رداءٌ، إما إزار وإما كساء قد ربطوا في أعناقهم، فمنها ما يبلغ نصف الساقين، ومنها ما يبلغ الكعبين، فيجمعه بيده كراهية أن تُرى عورته »
“আমি সত্তর জন সুফফার অধিবাসীদেরকে দেখেছি, তাদের কারো শরীরে কোন চাদর ছিল না। তারা হয়ত, লুঙ্গি অথবা একটি কাপড় পরিধান করত যা তারা তাদের গলার সাথে বেঁধে রাখত। তাদের কাপড় কারো পায়ে অর্ধ পেন্ডলী পর্যন্ত আবার কারো টাখনু পর্যন্ত হত। তারা তাদের হাত কাপড়ের উভয় আঁচলকে একত্র করে ধরে রাখত, যাতে মানুষ তাদের সতর দেখতে না পারে। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: পুরুষের জন্য মসজিদের ঘুমানো প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৪৪০।] আব্দুল্লাহ বিন হারেস বিন জুয আয-যাবিদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« كنا نأكل على عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد الخبز واللحم »
“আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদে গোস্ত ও রুটি খেতাম”। [ইবনু মাযা, কিতাবুল আত‘ইমাহ, পরিচ্ছেদ: মসজিদে খাওয়া, হাদিস নং ৩৩০০। আল্লামা আলবানী সহীহ ইবনে মাযা ২৩০/২ তে হাদিসটিকে সহীহ বলেন।]
এগার- মসজিদে বৈধ খেলা যেগুলির অনুমতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« لقد رأيت رسول الله صلى الله عليه و سلم يوماً على باب حجرتي والحبشة يلعبون في المسجد، ورسول الله صلى الله عليه و سلم يسترني بردائه، أنظر إلى لعبهم )). وفي لفظ : (( كان الحبشة يلعبون بحرابهم فيسترني رسول الله صلى الله عليه و سلم وأنا أنظر، فما زلت أنظر حتى كنت أنا أنصرف، فاقدروا قدر الجارية الحديثة السن تسمع اللهو»
“একদিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কামরার দরজায় দেখলাম। তখন হাবশীরা মসজিদে খেলছিল। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তার চাদর দ্বারা ঢেকে রাখেন যাতে আমি তাদের খেলা দেখতে পাই। অপর এক শব্দে হাদিসটি বর্ণিত হাবশীরা তাদের ডাল-সুরকী নিয়ে খেলা-ধুলা করছে, আমি তাদের খেলা দেখতেছিলাম আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে রাখেন। এভাবে আমি সারাক্ষণ দেখতেছিলাম যতক্ষণ আমি না ফিরতাম। তোমরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক রমণী যে খেলা-ধুলায় মনোযোগী তার সম্মান কত তা তোমরা অনুমান কর”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদে অস্ত্র বহনকারী, হাদিস নং ৪৫৪, বিবাহ অধ্যায়, পরিবারের সাথে ভালো ব্যবহার বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৫১৯০; কিতাবুল ঈদ, পরিচ্ছেদ: ঈদের দিন অস্ত্র দিয়ে খেলা করা, হাদিস নং ৫৯০; বিবাহ অধ্যায়ে নারীদের জন্য হাবশীদের দিক তাকানো, হাদিস নং ৫২৩৬; মুসলিম, দুই ঈদের সালাত অধ্যায়, যে সব খেলা-ধুলাতে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা নাই সে সব খেলা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৮৯২]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
بينما الحبشة يلعبون عند النبي صلى الله عليه و سلم وفي رواية : في المسجد دخل عمر فأهوى إلى الحصباء فحصبهم بها، فقال : «دعهم يا عمر »
“একবার হাবশীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট, অপর বর্ণনায়, মসজিদে খেলছিল। তখন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে তাদের নিকট প্রবেশ করলেন এবং তাদের জন্য পাথর নিলন এবং তাদেরকে পাথর দিয়ে আঘাত করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ওমর তুমি তাদের ছেড়ে দাও”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সীয়ার, অস্ত্র দিয়ে খেলা-ধুলা করা, হাদিস নং ২৯০১; মুসলিম, ঈদের সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যে সব খেলা-ধুলাতে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা নাই সে সব খেলা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৮৯৩।] হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, ডাল-সূরকী দিয়ে খেলা-ধুলা করা শুধু খেলা নয়, বরং তাতে রয়েছে, যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং দুশমনের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। [ফতহুল বারী ৫৪৯/১।] শাইখ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ স্বরূপ বা যুদ্ধ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দ্বারা খেলা-ধুলা করা বৈধ। হাবশি যারা খেলা-ধুলা করছে, তাদের দিকে অপরিচিতা নারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর তাকানো দ্বারা প্রমাণিত হয়, মহিলার জন্য সমষ্টিগত পর্যায়ে ব্যক্তি পর্যায়ে না হলে, পুরুষের দিক তাকানো জায়েয আছে। যেমন, মহিলারা মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য বের হলে এবং রাস্তায় হাঁটার সময় পুরুষদের সাথে সাক্ষাত হলে তাদের দিকে তাকায়। [দেখুন: আল্লামা সান‘আনীর সুবুলুস সালাম: ১৯৫/২।] আমি আমার শাইখ ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নারীদের জন্য সমষ্টিগতভাবে পুরুষের দিকে তাকানোতে কোন অসুবিধা নাই। যেমন পুরুষরা সফরে ও মসজিদে তাদের দিকে তাকায়। মোট কথা চলাচলকারী মুসল্লি, খেলোয়াড়দের দিকে সাধারণ তাকানো ক্ষতিকর নয়। কারণ, এ ধরনের দৃষ্টি সাধারণত কামভাব নিয়ে হয় না। [বুলুগুল মারাম, ২৭১ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
বার- মসজিদকে উঁচা-মজবুত করা, সজ্জিত করা এবং মসজিদ বানানোর ক্ষেত্রে অপচয় না করার বিধান।
মসজিদকে উঁচা করা, ও সাজানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত। আর মসজিদ বানানোর ক্ষেত্রে অপচয় না করে পরিমিত খরচ করার বিষয়ে নির্দেশ সম্বলিত বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تقوم الساعة حتى يتباهى الناس في المساجد »
“যতদিন পর্যন্ত মানুষ মসজিদ নিয়ে অহংকার না করবে [দেখুন, আল্লামা ইবনুল আসীরের জামে‘উল উসুল ২১০/১১। আরও দেখুন আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৬৯৫/১।] ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না”। নাসায়ীতে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من أشراط الساعة أن يتباهى الناس في المساجد »
“কিয়ামতের আলামত হল, লোকেরা মসজিদ নিয়ে অহংকার করবে”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৪৯; ইবনু মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ওয়াল জামা‘আত, পরিচ্ছেদ: মসজিদকে শক্তিশালী করা।, হাদিস নং ৭৩৯; নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজেদ, মসজিদ নিয়ে গর্ব করা অধ্যায়ে, হাদিস নং ৬৮৯; আহমদ ৪৫/৩। আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটি সহীহ সূনানে নাসায়ী ১৪৮/১ ও সহীহ সূনানে আবু দাউদে ৯১/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, «ما أمرت بتشييد المساجد » . “আমাদেরকে মসজিদ উঁচা করার বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়নি”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা, হাদীস ৪৪৮; আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯০/১।] আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, « لتزخْرِفُنَّها كما زخرفت اليهود والنصارى »
“তোমরা মসজিদকে সেভাবেই সাজাবে যেভাবে ইয়াহুদি ও খৃষ্টানরা তাদের উপাসানালয়কে সাজাত”। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মসজিদ বানানো, হাদিস ৪৪৬, আর আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৪৮।]
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«كان سقف المسجد من جريد النخل»
“মসজিদের ছাদ ছিল, খেজুরের ডাল”। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মসজিদ বানানো, হাদিস ৪৪৬।]
আর ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদ বানানোর নির্দেশ দেন এবং বলেন,
« أكِنَّ الناس من المطر، وإياك أن تُحَمِّر، أو تُصفِّر، فتفتن الناس »
“মসজিদ বানিয়ে মানুষকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা কর। তুমি লাল রং করা ও হলুদ রং করা হতে সতর্ক থাক, অন্যথায় মানুষকে ফিতনায় ফেলবে। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো, ৪৪৬ নং হাদীসের পূর্বে।] মনে রাখবে, ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আবু জাহামকে নকশা বিশিষ্ট জুব্বাটি ফেরত দেয়া হতে বুঝে নিয়েছেন। কারণ, জুব্বাটির বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, [ إنها ألهتني عن صلاتي ] “নিশ্চয় এটি আমাকে আমার সালাত থেকে অমনোযোগী করে দেয়”। [বুখারি, হাদিস নং ৩৭৩; মুসলিম, হাদীস নং ৫৫৬। সালাতের মাকরুহগুলো আলোচনায় তথ্যসূত্র অতিবাহিত হয়েছে।] হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হতে পারে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল। [দেখুন: ফতহুল বারী, ৩৩৯/১।] আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, [ يتباهون بها ثم لا يعمرونها إلا قليلاً ] তারা মসজিদ নিয়ে বড়াই করে কিন্তু কম সংখ্যক লোক ছাড়া বাকীরা মসজিদকে আবাদ করে না। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো। ৪৪৬নং হাদিসের পূর্বে। হাফিয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু ফতহুল বারীতে উল্লেখ করে বলেন, এটি মুসনাদে আবি ইয়া‘লাতে মওসুল হিসেবে বর্ণিত। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, « يأتي على أمتي زمان يتباهون في المساجد،ثم لا يعمرونها إلا قليلاً » ]
আমি আমার শাইখ ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, মসজিদকে সুন্দর করা এবং মসজিদে সালাত আদায় না করা মুসিবত বলে গণ্য। [সহীহ বুখারির ৪৪৬ নং হাদিসের ব্যখ্যার পূর্বে তাকীরর করতে আমি তাকে এ কথা বলতে শুনেছি।] আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
أن المسجد كان على عهد رسول الله مبنيّاً باللبن، وسقفه الجريد، وعمده خشب النخل، فلم يزد فيه أبو بكر شيئاً، وزاد فيه عمر وبناه على بنياه في عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم : باللَّبِن والجريد، وأعاد عمده خشباً، ثم غيره عثمان، فزاد فيه زيادة كثيرة، وبنى جداره بالحجار المنقوشة والقصة، وجعل عمده من حجارة منقوشة، وسقفه بالساج .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদ ছিল, ইটের নির্মাণ এবং খেজুর পাতার ছাউনি। আর খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার খেলাফত আমলে এর কোন সংস্কার করেননি। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদকে বাড়ান, তবে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যা দিয়ে নির্মাণ করেছে- ইট, খেজুরের ডাল ও খেজুর গাছের খুঁটি- তা দিয়েই নির্মাণ করেন। তারপর ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এসে মসজিদের নির্মাণকে পরিবর্তন করেন। তিনি মসজিদকে অনেক দূর পর্যন্ত বাড়ান। তিনি নকশী পাথর [দেখুন: আল্লামা ইবনুল আসীরের জামেয়ুল উসুল, ১৮৬/১১।] ও চুন দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি যে মসজিদ নির্মাণ করেন, তার খুঁটি ছিল নকশী পাথর এবং ছাদ ছিল হিন্দুস্থানি কাট। [বুখারি সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদ বানানো। ৪৪৬।]
আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কর্ম প্রমাণ করে, নকশী পাথর, ভালো কাট ও রঙ দিয়ে সাজানোতে কোন ক্ষতি নাই। যদিও সালফে সালেহীনদের মতে উত্তম হল মসজিদকে রঙ না করা। কিন্তু যেহেতু মানুষ বর্তমানে তাদের ঘরবাড়ীকে খুব সুন্দর করে সাজায়, তাই তারা পুরাতন আমলের ঘরবাড়ীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মসজিদগুলোকে আগের অবস্থায় রেখে দেয়া তাদেরকে মসজিদে সালাত আদায় ও মসজিদে একত্র হওয়া থেকে বিমুখ করে। এ কারণে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যা করেছে, তা করাতে কোন প্রকার অসুবিধা নাই। যাতে মানুষ মসজিদের দিকে উৎসাহিত হয় এবং মনোযোগী হয়। তবে অহংকার ও বড়াই করার জন্য হলে তা বৈধ নয়। তবে মসজিদে কোন কিছু লেখা মাকরূহ। উত্তম হল, মসজিদে কোন প্রকার না লেখা। [বুলুগুল মুরাম ২৭৪ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
তেরÑ মসজিদে বৈধ কথা-বার্তা বলাতে কোন অসুবিধা নাই। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن النبي صلى الله عليه و سلم : « كان لا يقوم من مصلاّه الذي صلى فيه الصبح أو الغداة حتى تطلع الشمس،فإذا طلعت الشمس قام،وكانوا يتحدثون فيأخذون في أمر الجاهلية فيضحكون ويتبسّم »
“সূর্য উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে ফজরের সালাত বা সকালের সালাত আদায় করতেন, সে স্থান থেকে উঠতেন না। আর যখন সূর্য উদয় হত, তখন তা থেকে উঠে যেতেন। আর তারা জাহিলিয়্যাতের বিভিন্ন কাহিনী বলতেন এবং হাসা-হাসি করতেন”। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ ও সালাতের স্থানসমূহের আলোচনা, পরিচ্ছেদ : ফজরের সালাতের সালাতের স্থানে বসা, হাদিস নং ৬৭০।] আহমদ রাহিমাহুল্লাহু এর বর্ণনায় বর্ণিত, তিনি বলেন,
« شهدت النبي صلى الله عليه و سلم أكثر من مائة مرة في المسجد، وأصحابه يتذاكرون الشعر وأشياء من أمر الجاهلية، فربما تبسم معهم »
“আমি একশ বারের বেশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদেরকে দেখেছি তারা মসজিদে কবিতা আবৃত্তি ও জাহিলিয়্যাতের বিষয়গুলো আলোচনা করেন। অনেক সময় তিনি তাদের সাথে হাসা-হাসি করতেন”। [আহমদ, ৯১/৫। তিরমিযি, কিতাবুল আদব, কবিতা আবৃত্তি করার আলোচনা, হাদীস ২৮৫০; তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে তিরমিযিতে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ১৩৭/৩।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “এতে প্রমাণিত হয়, মসজিদে হাসি দেয়া ও মুচকি হাসি দেয়া জায়েজ আছে”। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৭৭/৫।] আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, বলা যায়, “তখন তারা মসজিদে কথা বলত। কারণ, মসজিদে কথা বলা বৈধ, নিষিদ্ধ নয়। কারণ, মসজিদে কথা বলা সম্পর্কে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যা বলা যায় তা হল, মসজিদে আল্লাহর যিকর করা উত্তম ও ফযিলতপূর্ণ। আর এতে ঐ সময়ে মসজিদে কথা বলা ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য বলে প্রমাণিত হয় না। আল্লাহ তা‘আলা ভালো জানেন”। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ২৯৬/২।]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যে কথা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল ভালোবাসে সে কথা মসজিদে বলা উত্তম। আর যা নিষিদ্ধ, তা মসজিদে বলা আরো দৃঢ়ভাবে নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে যা মসজিদের বাহিরে বলা মাকরূহ বা মুবাহ তা মসজিদে বলাও মাকরূহ বা মুবাহ। [ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর মাজমুয়ায়ে ফতোয়া। ২০০,২৬২/২২।]
চৌদ্দ- মসজিদে বড় আওয়াজে কথা বলা নিষিদ্ধ। কারণ, আওয়াজ বড় করাতে মুসল্লীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। সুতরাং, মসজিদে আওয়াজ বড় করবে না, যদিও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে হয়। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
اعتكف رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد فسمعهم يجهرون بالقرآن، فكشف الستر وقال : « ألا إن كلكم مناج ربَّه، فلا يؤذينَّ بعضكم بعضاً، ولا يرفع بعضكم على بعضٍ في القراءة » أو قال : « في الصلاة »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে ই‘তেকাফ করছিল, তিনি সাহাবীদের শুনতে পেলেন, তারা বড় আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করছে। তাদের তিলাওয়াত শোনে তিনি পর্দা খুলে বলেন, তোমরা সবাই আল্লাহর সাথে কথা বলছ, তাই তোমরা একে অপরকে কষ্ট দেবে না। তোমাদের কেউ কুরআন তিলাওয়াতে, অথবা বলল, সালাতে আওয়াজকে বড় করবে না”। [আবু দাউদ, নফল অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: রাতের সালাতে উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ১৩৩২; সহীহ আবু দাউদে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১৪৭/১; ইমাম আহমদ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুসনাদে বর্ণনা করেন ৬৭/২; আহমদ শাকের রাহিমাহুল্লাহু মুসনাদের স্বীয় ব্যাখ্যায় একে সহীহ বলে উল্লেখ করেন হাদিস নং ৯২৮, ৫৩৪৯।] সায়েব বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كنت قائماً في المسجد فحصبني رجل، فنظرت فإذا عمر بن الخطاب، فقال : اذهب فأتني بهذين، فجئته بهما، فقال : من أنتما؟ أو من أين أنتما؟ قالا : من أهل الطائف، قال : لو كنتما من أهل البلد لأوجعتكما، ترفعان أصواتكما في مسجد رسول الله صلى الله عليه و سلم .
“আমি মসজিদে দাঁড়ানো ছিলাম, একলোক আমাকে পাথর মারল, আমি তাকিয়ে দেখি লোকটি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি আমাকে বললেন, যাও, তাদের দুই জনকে ধরে আমার নিকট নিয়ে আস। আমি তাদের দুইজনকে তার নিকট নিয়ে আসতে তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করে বলেন, তোমরা কারা? কোথায় থেকে আসছ? তারা বলল, আমরা তায়েফ থেকে আসছি। তারপর তিনি বললেন, যদি তোমরা শহরের হতে তাহলে আমি তোমাদের দুইজনকে শাস্তি দিতাম। তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদে তোমাদের আওয়াজকে উঁচা করছ”। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, মসজিদে আওয়াজ উঁচা করা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৪৭০।]
وعن كعب بن مالك رضى الله عنه أنه تقاضى ابنَ أبي حدرد ديناً كان له عليه في المسجد، فارتفعت أصواتهما، حتى سمعهما رسول الله صلى الله عليه و سلم وهو في بيته، فخرج إليهما حتى كشف سِجفَ حجرته فنادى : « يا كعب »، قال : لبيك يا رسول الله، قال : « ضع من دينك هذا » وأومأ إليه : أي الشطر، قال كعب : قد فعلت يا رسول الله، قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « قم فاقضه »،قال الحافظ ابن حجر -رحمه الله -: (( وفي الحديث جواز رفع الصوت في المسجد، وهو كذلك ما لم يفحش ... والمنقول عن مالك منعه في المسجد مطلقاً، وعنه التفرقة بين رفع الصوت بالعلم والخير، وما لا بد منه فيجوز، وبين
কা‘ব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি উবাই বিন হাদরাদের নিকট তার পাওনা আদায় করার জন্য মসজিদেই তা চাচ্ছিলেন। তারা উভয়ে মসজিদে আওয়াজকে বড় করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় ঘর থেকে তাদের আওয়াজ শুনতে পেয়ে সাথে সাথে বের হলেন, তার কামরার পর্দা উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, হে কা‘ব! উত্তরে বলল, লাব্বাইক হে আল্লাহর রাসূল! তুমি তোমার পাওনা থেকে অর্ধেক ক্ষমা করে দাও। তখন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি তাই করলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য জনকে বললেন, “দাঁড়াও তুমি বাকীটা আদায় করে দাও”। [বুখারি, সালাত অধ্যায় মসজিদের অবস্থান করা অধ্যায়। হাদিস নং ৪৫৭।]
হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যদি কোন অশ্লীল কথা-বার্তা না হয়, তাহলে মসজিদে আওয়াজ উঁচা করা জায়েজ আছে। আর ইমাম মালেক থেকে বর্ণিত, মসজিদে আওয়াজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার থেকে পার্থক্যও বর্ণিত- যদি ইলম ও কল্যাণ বিষয়ক বা জরুরি কোন আলোচনা হয়, তখন বৈধ। আর যদি অপ্রয়োজনীয় হয়, তাহলে অবৈধ। [ফতহুল বারী, ৫৫২/১।] হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু মিহলাব থেকে তার কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যদি মসজিদে আওয়াজ বড় করা না জায়েজ হত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কোন কথা না বলে ছেড়ে দিতেন না এবং তাদের বিষয়টি জানিয়ে দিতেন। হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু আরও বলেন, আমি বলি, যারা নিষিদ্ধ বলছেন, হতে পারে তাদের নিকট নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পূর্বেই জানা ছিল, তাই নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেন নাই। তাই তিনি তাদের উভয়ের মাঝে ঝগড়া মীমাংসা করার উপর জোর দেন যাতে মসজিদে বড় আওয়াজ করাও বন্ধ হয়ে যাবে। [ফতহুল বারী, ৫৫২/১।] আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, মসজিদে পাওনাদারের জন্য তার পাওনা চাওয়া জায়েজ আছে। যেমন- সে বলবে, তুমি আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। এটি বেচা-বিক্রির মত নয়, অথবা সে বলবে, আমার পাওনা আদায় কর, আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। [সহীহ বুখারি, ৪৫৭ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘ব ও ইবনে আবু হাদরাদকে যা বলেছেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন, এটি হল, সংশোধন ও মীমাংসা। সঠিক হল, তারা উভয়ে ঋণ পরিশোধে তাড়াহুড়া করা ও ঋণকে কমিয়ে আনার উপর একমত হয়, এতে কোন অসুবিধা নাই। [সহীহ বুখারি, ২৪১৮ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
পনের- মসজিদের খুঁটির মাঝখানে সালাত আদায় করা। একা সালাত আদায়কারী ও ইমামের জন্য এতে কোন অসুবিধা নাই। আর মুক্তাদীদের জন্য মসজিদে জায়গা থাকা সত্বেও খুঁটির মাঝে সালাত আদায় করা মাকরূহ। কারণ, খুঁটি কাতারের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে। তবে মসজিদে জায়গা না হলে তখন কোন অসুবিধা নাই। এ বিষয়ে আনাস বিন মালেক হতে হাদিস বর্ণিত, আব্দুল হুমাইদ বিন মাহমুদ রাহিমাহুল্লাহু বলেন,
«كنت مع أنس بن مالك أصلي، قال : فألقونا بين السواري، قال : فتأخر أنس، فلما صلينا قال : إنَّا كُنَّا نتقي هذا على عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم »
আমি আনাস বিন মালিকের সাথে সালাত আদায় করছিলাম, তিনি আমাদের খুঁটির মাঝে ঠেলে দেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাত থেকে বিরত থাকলেন। আমরা সালাত শেষ করলে তিনি আমাদের বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এ থেকে বেঁচে থাকতাম”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায় সাওয়ারির সামনে কাতার করা, হাদিস নং ৬৭৩; তিরমিযি, হাদিস নং ২২৯; নাসায়ী ৯৪/২; আহমদ হাদিস নং ১৩১/৩; হাকিম ২১৮/১; সহীহ আবু দাউদে আল্লামা আলবানী হাদিসটি সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ১৪৯/১।] মুয়াবিয়া বিন কুররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন, «كنا نُنْهى عن الصلاة بين السواري ونطرد عنها طرداً » “আমাদের খুঁটির মাঝে সালাত আদায় থেকে নিষেধ করা হত এবং আমাদের দূরে রাখা হত”। [ইবনু মাযা, হাদিস: ১০০২; হাকেম, ২১৮/১, আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ ইবনে মাযাতে বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।]
« أن النبي صلى الله عليه و سلم لما دخل الكعبة صلى بين الساريتين »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাবা শরীফে প্রবেশ করেন, তখন তিনি দুই খুঁটির মাঝে সালাত আদায় করেন”। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, সালাত অধ্যায়, জামা‘আত ছাড়া সাওয়ারির সামনে সালাত আদায় করা, হাদিস নং ৫০৪, মুসলিম, কিতাবুল হজ, কাবা ঘরে প্রবেশ মুস্তাহাব হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১৩২৯।]
ষোল- জুমু‘আর সালাতের পূর্বে মসজিদে হালকা করা। আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أن النبي صلى الله عليه و سلم نهى عن التحلق يوم الجمعة قبل الصلاة، وعن الشراء والبيع في المسجد»
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন সালাতের পূর্বে মসজিদে হালকা করে বসা ও বেচা-কেনা করা হতে নিষেধ করেছেন।
ইমাম তিরমিযি হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«نهى عن تناشد الأشعار في المسجد، وعن البيع والشراء فيه، وأن يتحلَّق الناس فيه يوم الجمعة قبل الصلاة »
“মসজিদে কবিতা আবৃতি, বেচা-কেনা এবং জুমু‘আর দিন সালাতের পূর্বে গোল হয়ে বসা হতে নিষেধ করেন”। [নাসায়ী মসজিদে বেচা-কেনা করা ও জুমার সালাতের পূর্বে হালকা করে বসা। হাদিস নং ৭১৪। আবু দাউদ কিতাবুল জুমআ। জুমার সালাতের পূর্বে গোলাকার হয়ে বসা, হাদিস নং ১০৭৯। তিরমিযি সালাত অধ্যায়, মসজিদে বেচা-কেনা করা ও হারানো বস্তু তালাশ করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩২২। ইবনু মাযা কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত। ইমমা খুতবা দেয়া অবস্থায় সালাতের পূর্বে জুমার দিন মসজিদে হালকা করা এবং এহতেবা করা। হাদিস নং ১১৩৩। আল্লামা আলবানী রহ সূনানে নাসায়ী, সূনানে আবুদাউদ হাদিসটিকে হাসান বলেন।] তাহাল্লুক ও হিলাক শব্দ বহুবচন, একবচন হল হালাকা। অর্থাৎ, একাধিক মানুষ গোলাকার হয়ে বসা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হালাকা বন্দী হয়ে এক জায়গায় বা একাধিক জায়গায় বিভিন্ন হালাকা বানিয়ে বসা হতে নিষেধ করেন, যদিও কোন ইলমী আলোচনার জন্য হয়। কারণ, এতে কাতার বন্দী হতে অসুবিধা হতে পারে অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন মানুষকে তাড়াতাড়ি মসজিদে আসা ও কাতার বন্দী হয়ে প্রথম কাতারে তারপর দ্বিতীয় কাতারে বসার নির্দেশ দিয়েছেন।
সালাতের পূর্বে হালকা করে বসা হলে তাদের যে বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার প্রতি উদাসীনতা বুঝায়। জুমু‘আর সালাত থেকে ফারেগ হওয়ার পর হালাকা করে বসাতে কোন অসুবিধা নাই। [দেখুন: আল্লামা মুবারক পুরীর তুহফাতুল আহওয়াযি, ২৭২/২।] আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহু এর উপর আমল করতেন। তিনি জুমু‘আর দিন ফজরের সালাত থেকে নিয়ে জুমু‘আর সালাত আদায় করা পর্যন্ত সব ধরনের হালাকা বন্ধ করে দিতেন। তারপর জুমু‘আর সালাতের পর তার বাড়ীতে হালাকা হত।
সতের- ঘুম আসলে স্থান পরিবর্তন করা। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
«إذا نعس أحدكم وهو في المسجد فليتحول من مجلسه ذلك إلى غير ه »
“যখন মসজিদে তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন স্বীয় মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বসে”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ইমামের খুতবার সময় ঘুমানো, হাদিস নং ১১৯। তিরিমিযি, জুমু‘আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তির জুমু‘আর দিন ঘুম আসে সে স্থান ত্যাগ করবে। হাদিস নং ৫২৬; আহমদ ২২, ৩২, ১৩৫/২; আর আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে ২০৮/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] তিরমিযির শব্দ - «إذا نعس أحدكم يوم الجمعة، فليتحول عن مجلسه ذلك » “যখন তোমাদের কারো জুমার দিন তন্দ্রা আসে, সে যেন ঐ মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র চলে যায়”।
আহমদের শব্দ - « إذا نعس أحدكم في مجلسه يوم الجمعة فليتحول إلى غيره » . যখন জুমার দিন তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন অন্যত্র চলে যায়। আহমদের অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত - « إذا نعس أحدكم في المسجد يوم الجمعة فليتحول من مجلسه ذلك إلى غيره » যখন মসজিদে তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন স্বীয় মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বসে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, « إذا نعس أحدكم في مجلسه يوم الجمعة فليتحول منه إلى غيره » . “যখন জুমার দিন মজলিসে বসে তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন তা থেকে উঠে অন্যত্র চলে যায়”। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আদেশে দ্বারা প্রমাণিত হয় বিষয়টি ওয়াজিব। [বুলুগুল মারামের ৫২৬ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] আর স্থান পরিবর্তন করার হিকমত হল, স্থান পরিবর্তন করাতে ঘুম চলে যায়। অথবা ঘুমের কারণে যে স্থানে গাফলত বা অলসতায় আক্রান্ত হল, সে স্থান ত্যাগ করা। যদিও ঘুমন্ত ব্যক্তির কোন গুনাহ নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাতের সময় ঘুমানোর ঘটনায় তার সাহাবীদের স্থান পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। অথবা যে ব্যক্তি সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসে থাকে সে সালাতরত। আর সালাতে ঘুম আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। হতে পারে এ কারণেই শয়তানের দিকে সম্বোধিত কাজকে দূর করার জন্য তাকে স্থান পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয়া হল, যাতে মসজিদে আল্লাহর যিকর, খুতবা ও উপকারী কোন কথা শ্রবণ থেকে বিরত থাকতে না হয়। [দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার, ৫২৪/২; আল্লামা মুবারকপুরির তুহাফাতুল আহওয়াজি শরহে জামে তিরমিযি ৬৪/৩; আওনুল মা‘বুদ: ৪৬৯/৩।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী - «إذا نعس أحدكم يوم الجمعة » “যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়”, এর দ্বারা সমগ্র দিন উদ্দেশ্য নয়, বরং উদ্দেশ্য হল, যখন মসজিদে বসে জুমু‘আর সালাতের অপেক্ষা করতে থাকে। চাই খুতবার সময় হোক বা তার পূর্বে হোক। তবে খুতবার সময়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর এখানে জুমু‘আর দিনের কথাটা বলার কারণ হল, এ দিনে জুমু‘আর সালাত আদায় বা জুমু‘আর খুতবা শ্রবণ করার জন্য মানুষ তাড়াতাড়ি মসজিদে আসার কারণ ল¤বা সময় মসজিদে অবস্থান করায় তাদের তন্দ্রা আসে। কিন্তু সালাতের অপেক্ষা করা জুমু‘আর দিন বা অন্য দিনের বিধান এক। যেমন আবু দাউদের হাদিসে বর্ণিত, «إذا نعس أحدكم وهو في المسجد فليتحول من مجلسه ذلك إلى غيره »، “যখন তোমাদের কারো মসজিদে থাকা অবস্থায় তন্দ্রা আসে, সে যেন স্থান পরিবর্তন করে”। সুতরাং জুমু‘আর দিনের আলোচনার উদ্দেশ্য হল সকল মানুষের মধ্য থেকে কাউকে স্পষ্ট করে পৃথক করা। আর এও হতে পারে এ দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু জুমু‘আর দিন, যাতে জুমার খুতবা শোনার প্রতি অধিক যতœবান হয়। [দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৫২৪/২।]
আঠার- গির্জায় সালাত আদায় করা, গির্জাকে পরিষ্কার করা ও গির্জার স্থানে মসজিদ বানানো। তল্ক বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
خرجنا وفداً إلى النبي صلى الله عليه و سلم فبايعناه، وصلينا معه، وأخبرناه أن بأرضنا بيعة ( [‘আল-বিয়া’ শব্দের অর্থ পাদ্রী আশ্রম। আবার কেউ কেউ বলেন, খৃষ্টানদের উপাসানালয়। আর আল্লামা ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু দ্বিতীয় মতকে প্রাধান্য দেন। ফাতহুল বারী ৫৩১/১।]) لنا فاستوهبناه من فضل طهوره، فدعا فتوضأ، وتمضمض، ثم صبه في إداوة وأمرنا فقال : « اخرجوا فإذا أتيتم أرضكم فاكسروا بيعتكم، وانضحوا مكانها بهذا الماء، واتخذوها مسجداً » قلنا : إن البلد بعيدٌ والحر شديد، والماء ينشف، فقال : « مدوه من الماء؛ فإنه لا يزيده إلا طيباً »، فخرجنا حتى قدمنا فكسرنا بيعتنا، ثم نضحنا مكانها، واتخذناها مسجداً فنادينا فيه بالأذان، قال : والراهب رجل من طيئ، فلما سمع الأذان قال : دعوة حقٍّ، ثم استقبل تلعةً من تلاعنا فلم نره بعد )).
“আমরা একটি জামা‘আত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলে, তিনি আমাদের বাইয়াত করেন এবং আমরা তার সাথে সালাত আদায় করি। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাই যে, আমাদের দেশে আমাদের একটি গির্জা আছে, আপনি আমাদেরকে আপনার ওজুর পানির বাকী পানিগুলো দেন। এ কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজুর পানি আনার জন্য একজনকে ডাকলেন, ওজু করলেন, কুলি করলেন, তারপর একটি পাত্রে পানিগুলো ঢেলে রাখেন। তারপর তিনি আমাদের এ বলে, নির্দেশ দেন- তোমরা তোমাদের দেশে গিয়ে, তোমাদের গির্জাকে ভাঙ্গবে এবং স্থানটিকে এ পানি দ্বারা পরিষ্কার করবে এবং স্থানটিকে মসজিদ বানাবে। আমরা বললাম, আমাদের দেশ অনেক দূর, শুষ্ক মওসুম, গরম অনেক বেশি, এ পানি শুকিয়ে যাবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এর সাথে আরও পানি বাড়াও তা তার সুঘ্রাণকেই বৃদ্ধি করবে। আমরা বের হলাম এবং আমাদের দেশে এসে আমাদের গির্জাকে ভেঙ্গে দিলাম। তারপর তার স্থানে পানি ছিটিয়ে দিলাম এবং তাকে আমরা মসজিদ বানালাম। তারপর আমরা মসজিদে আযান দিলাম। আযান শোনে পাদ্রী লোকটি বলল, হকের দাওয়াত, তারপর সে আমাদের টিলাসমূহ হতে একটি টিলার দিকে গেল, আমরা তার পর থেকে তাকে আর কোন দিন দেখিনি”। [নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজিদ, পরিচ্ছেদ : গীর্জাকে মসজিদ বানানো বিষয়ে আলোচনা। সহীহ নাসায়ীতে আল্লামা আলবানী সনদটিকে সহীহ বলেন ১৫১/১।]
ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বড় বড় পাদ্রীদের অনেককে বলেন, « إنا لا ندخل كنائسكم من أجل التماثيل التي فيها الصور » “আমরা তোমাদের গির্জা প্রবেশ করতে পারি না কারণ, তোমাদের গির্জায় মানুষের আকৃতির মূর্তি রয়েছে”। [বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: গীর্জায় সালাত আদায় করা, হাদিস নং ৪৩৪; হাফেজ ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু ফতহুল বারী- ৫৩১/১ তে উল্লেখ করেন, আব্দুর রাজ্জাক হাদিসটিকে মওসুল বর্ণনা করেন।] « وكان ابن عباس رضي الله عنهما يصلي في البيعة إلا بيعة فيها تمثال » “আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু খৃষ্টানদের গির্জায় সালাত আদায় করত, তবে যে গির্জায় মূর্তি থাকত তাতে তিনি সালাত আদায় করত না”। [বুখারি, কিতাবুস সালাত, পরিচ্ছেদ: গীর্জায় সালাত আদায় করা, হাদিস নং ৪৩৪; হাফেজ ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহু ফতহুল বারী- ৫৩১/১ তে উল্লেখ করেন, বগোবী রাহিমাহুল্লাহু জাদিয়াতে হাদিসটিকে মওসুল বর্ণনা করেন। তবে তাতে এ অংশটুকু বাড়ান-(( فإن كان فيها تماثيل خرج فصلى في المطر )).]
এ হাদিস প্রমাণ করে, গির্জার স্থানগুলোকে মসজিদে রূপান্তরিত করা বৈধ। এবং আরও প্রমাণিত হয়, তাদের গির্জায় সালাত আদায় করা বৈধ। তবে মূর্তির দিক ফিরে সালাত আদায় করবে না এবং নাপাক স্থানে সালাত আদায় করবে না। [দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার। ৬৮৭/১] আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, গির্জায় সালাত আদায় করাতে কোন অসুবিধা নাই। তবে মূর্তির দিকে মুখ করে সালাত আদায় করবে না। আর এ বিধান তখন যখন এ ছাড়া অন্য কোন স্থান পাওয়া যাবে না যে খানে সালাত আদায় করা যাবে। [সহীহ বুখারি, ৪৩৪ নং হাদিসের পূর্বে ব্যখ্যা করার সময় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
উনিশ- মসজিদ ও বাজারে ধারালো অস্ত্র বহন হতে বিরত থাকার নির্দেশ। আবু মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا مرّ أحدكم في مسجدنا، أو في سوقنا ومعه نبل ( [আরবী তীর। দেখুন ফতহুল বারী ইমাম ইবনে হাজরের। ৪৪৬/১।]) فليمسك على نصالها ( [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা। এবং দেখুন, আল্লামা হুমাইদী রাহিমাহুল্লাহু এর গরীব পৃ ৭৯, ১৩৫।])» “যখন তোমাদের কেউ আমাদের মসজিদ বা বাজারে অতিক্রম করে এবং তার সাথে রয়েছে তীর, সে যেন তার ধারালো লোহার দিকটিকে বিরত রাখে”। অথবা বলেন, «فليقبض بكفه أن يصيب أحداً من المسلمين منها شيء » “সে যেন তার হাত দিয়ে ধারালো অংশটুকু ধরে রাখে”। যাতে তার দ্বারা কোন মুসলিমের গায়ে আঘাত না লাগে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «من مرّ في شيء من مساجدنا أو أسواقنا بنبل فليأخذ على نصالها، لا يعقر بكفّه مسلماً » ( [বুখারি ও মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, মসজিদে চলাচল করা। হাদিস নং ৪৫২। কিতাবুল ফিতান, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, যে ব্যক্তি আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র বহন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয় আলোচনা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৭০৭৫। মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি মসজিদ বাজার ও যে সব স্থানে মানুষের জামায়েত থাকে তা অতিক্রম করার সময়, ধারালো বস্তুকে সংরক্ষণ রাখার আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৫।]). “যে ব্যক্তি আমাদের মসজিদসমূহ ও বাজারসমূহে চলাচল করে, সে যেন তীরের ধারালো অংশটুকুকে ধরে রাখে। যাতে সে তার হাত দিয়ে কোন মুসলিমকে রক্তাক্ত না করে”। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিন বলেন,
أن رجلاً مرّ في المسجد بأسهم قد بدا نصولها، فأُمر أن يأخذ بنصولها لا يخدش مسلماً . وفي لفظ مسلم : فقال له رسول الله صلى الله عليه و سلم : « أمسك بنصالها »
“এক লোক কতক তীর নিয়ে মসজিদ অতিক্রম করছিল, তখন তীরসমূহের ধারালো দিকগুলো দেখা যাচ্ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধারালো দিকগুলোকে আড়াল করার নির্দেশ যাতে কোন মুসলিম আঘাত না পায়। মুসলিমের অপর শব্দে হাদিসটি এভাবে বর্ণিত, « أن رجلاً مرَّ بأسهم في المسجد قد أبدى نصولها، فأُمر أن يأخذ بنصولها كي لا يخدش مسلماً » এক লোক কতক তীর নিয়ে মসজিদ অতিক্রম করছিল, অথচ সে তীরসমূহের ধারালো দিকগুলো প্রকাশ করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধারালো দিকগুলোকে ধরে রাখার নির্দেশ দেন, যাতে কোন মুসলিম আঘাত না পায়”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, সালাত অধ্যায়, মসজিদে প্রবেশের সময় তীরের ধারালো অংশ হেফাজত করা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৪৫১। সালাত অধ্যায়, যে ব্যক্তি মসজিদ বাজার ও যে সব স্থানে মানুষের জামায়েত থাকে তা অতিক্রম করার সময়, ধারালো বস্তুকে সংরক্ষণ রাখার আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৪।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এখানে নিয়ম হল, মানুষের সমাগম স্থল, মসজিদ বা বাজার ইত্যাদিতে হাঁটা চলা করার সময় ধারালো বস্তুকে হেফাযত করা। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা 407/16।] এতে আরও বুঝা যায়, যে বস্তুর মধ্যে মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তা হতে সতর্ক থাকা এবং যে সব বস্তু মানুষকে কষ্ট দেয়, তা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা 407/16।] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, «لا يحلّ لأحدكم أن يحمل بمكة السلاح» তোমাদের কারো জন্য মক্কায় অস্ত্র বহন করা হালাল নয়। [মুসলিম কিতাবুল হজ, মক্কায় বিনা প্রয়োজনে অস্ত্র বহন করা, ১৩৫৬।] ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ নিষেধটি হল যদি তার কোন প্রয়োজন না থাকে। আর যদি প্রয়োজন থাকে তাহলে, জায়েয। এটি আমাদের মাযহাব এবং জমহুর আলেমদের মাযহাব। আর কাজী আয়ায রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আহলে ইলমদের মতে এ নিষেধটি বিনা প্রয়োজনে অস্ত্র বহন করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
হাদিসে কাউকে অস্ত্র দিয়ে ইশারা করার প্রতি কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। ঠাট্টা করেও কারো দিকে অস্ত্র দিয়ে ইশারা করা যাবে না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لا يشير أحدكم على أخيه بالسلاح؛ فإنه لا يدري لعل الشيطان ينزغ في يده، فيقع في حفرة من حفر النار» . তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইশারা না করে। কারণ, সে জানে না, শয়তান কখন তার হাত থেকে ছিনিয়ে নেবে। ফলে সে জাহান্নামের গর্ত সমূহ হতে কোন গর্তে পতিত হবে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, কিতাবুল ফিতান, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, যে ব্যক্তি আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র বহন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয় আলোচনা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৭০৭২। মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: অস্ত্র দ্বারা কোন মুসলিমের দিক ইশারা করা অবৈধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৭।] মুসলিম শরিফের শব্দ -« لا يشير أحدكم إلى أخيه بالسلاح فإنه لا يدري أحدكم لعل الشيطان ينزع في يده فيقع في حفرة من النار » ( [মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: অস্ত্র দ্বারা কোন মুসলিমের দিক ইশারা করা অবৈধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৭।])؛ বিষয়টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «من أشار إلى أخيه بحديدة؛ فإن الملائكة تلعنه حتى يدعه وإن كان أخاه لأبيه وأمه » . “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দিয়ে ইশারা করে। ফেরেশতারা তার উপর অভিশাপ করে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অস্ত্র পরিহার না করে। যদিও সে তার আপন ভাই হয়ে থাকে”। [মুসলিম, কিতাবুল বির ওয়াস সেলা। পরিচ্ছেদ: অস্ত্র দ্বারা কোন মুসলিমের দিক ইশারা করা অবৈধ হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ২৬১৬।]
এর চেয়েও বড় অন্যায় হল, মুসলিমদের বিপক্ষে তাদের অস্ত্র বহন করা। আব্দুল্লাহ বিন ওমর ও আবু মুসা আশয়ারি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তারা উভয় বলেন, « من حمل علينا السلاح فليس منا »
“যারা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র বহন করে তারা আমাদের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়” [বুখারি, কিতাবুল ফিতান, এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, যে ব্যক্তি আমাদের বিপক্ষে অস্ত্র বহন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয় আলোচনা প্রসঙ্গে। হাদিস নং ৭০৭০।]। এটি সতর্কতা তার জন্য যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেয় এবং অন্যায়ভাবে তাদের হত্যা করার জন্য অস্ত্র হাতে নেয়। কারণ, হাদিসে তাদের ভয় দেখানো হয়েছে, তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে [দেখুন: হাফেয ইবনে হাজারের ফতহুল বারী ২৪/১৩।]। যে সব বস্তু মানুষকে কষ্ট তা হতে মুমিনদের নিরাপদে রাখার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক গুরুত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তলোয়ারকে ঝুলিয়ে বহন করা হতে নিষেধ করেন। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, أن النبي صلى الله عليه و سلم نهى أن يُتعاطى السيف مسلولاً . “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তলোয়ার ঝুলিয়ে বহন করা হতে নিষেধ করেছেন”। [আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, কোসমুক্ত করে তলোয়ার আদান প্রদান করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ৪৯১/২।]
বিশ- মহিলাদের মসজিদে সালাত আদায় করা:
বিশুদ্ধে হাদিসসমূহে বর্ণিত যে, মহিলাদের জন্য তাদের ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম। যদি তাদের ঘর থেকে বের হওয়াতে কোন প্রকার ফিতনার আশঙ্কা না থাকে এবং তারা এমন সাজ-সজ্জা গ্রহণ না করে, যা ফিতনার দিকে তাদের নিয়ে যায়- যেমন খুশবু ব্যবহার করা, বে-পর্দা হওয়া, সৌন্দর্য প্রকাশ করা ইত্যাদি, তাহলে, পুরুষদের ওপর ওয়াজিব হল, তাদের সালাতের জামা‘আতে মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া এবং তাদের নিষেধ না করা। যদি এ ধরনের কোন খারাবী পাওয়া যায় বা আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাদের ওপর অনুমতি দেয়া ওয়াজিব নয়। তাদের জন্য বের হওয়াও উচিত নয়। তাদের জন্য বের হওয়া হারাম। এ বিষয়ে হাদিসসমূহ নিম্নরূপ:
প্রথম হাদিস: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا استأذنت أحدكم امرأته إلى المسجد فلا يمنعها »
“যখন তোমাদের কোন নারী তোমাদের নিকট মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তোমরা তাদের নিষেধ করো না”। মুসলিমে শরিফে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تمنعوا إماء الله مساجد الله »
তোমরা আল্লাহর বান্দীদের মসজিদে গমনে নিষেধ করো না। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি নিকাহ অধ্যায়, স্ত্রী স্বামীর নিকট মসজিদে গমনের অনুমতি প্রসঙ্গে আলোচনা। হাদিস নং ৫২৩৮। মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪২।] আর আবু দাউদে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تمنعوا نساءكم مساجد الله وبيوتهن خيرٌ لهن »
“তোমরা তোমাদের নারীদের আল্লাহর মসজিদসমূহে যাওয়া হতে নিষেধ করো না। আর তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪২। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৩/১।]
দ্বিতীয় হাদিস: জয়নব আস-সাকাফী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« إذا شَهِدَتْ إحداكُنَّ العشاء فلا تطيَّب تلك الليلة »
“যখন কোন মহিলা এশার সালাতে উপস্থিত হতে চায়, সে ঐ রাত্রিতে সু-গন্ধি লাগাবে না”। অপর শব্দে বর্ণিত, « إذا شهدت إحداكن المسجد فلا تمسّ طيباً » “যখন তোমাদের কেউ মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন খোশবু স্পর্শ না করে”। [মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪৩।]
তিন নং হাদিস: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أيما امرأة أصابت بخوراً فلا تشهد معنا العشاء الآخرة »
“যে মহিলা বখুর গ্রহণ করে, সে যেন আমাদের সাথে এশার সালাতে উপস্থিত না হয়”। [মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৪৪৪।]
চতুর্থ হাদিস: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تمنعوا إماء الله مساجد الله، ولكن ليخرجن وهن تَفِلات »
“তোমরা তোমাদের নারীদের আল্লাহর মসজিদসমূহে যাওয়া হতে বারণ করো না। তবে তারা যেন খোশবু ছাড়া বের হয়” [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, মহিলাদের মসজিদে গমনের বিধান, হাদিস নং ৫৬৫। আহমদ ৪৩৮/২, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাসান সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৩/১।]।
পঞ্চম হাদিস: আব্দুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلاة المرأة في بيتها أفضل من صلاتها في حجرتها وصلاتها في مَخْدعها أفضل من صلاتها في بيتها »
“মহিলাদের ঘরে সালাত আদায় করা, বারান্দায় সালাত আদায় করা হতে উত্তম। আর মহিলাদের খাস কামরায় সালাত আদায় করা, ঘরে সালাত আদায় করা হতে উত্তম। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, এ বিষয়ে কঠোরতা করা প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৫৭০। আল্লামা আলবানী সহীহ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৪/১।] এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, একজন নারীর জন্য সে যে ঘরে বসবাস করে, সেখানে সালাত আদায় করার সাওয়াব বেশি ঘরের সম্মুখ কামরায় সালাত আদায় করা হতে। কারণ, সম্মুখ কামরা পর্দার দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে থাকে ভিতরের কামরা হতে। আর ঘরের ভিতরে বড় কামরা অন্তর্গত বিশেষ কামরায় সালাত আদায় করা ভিতরের কামরায় সালাত আদায় করে হতে উত্তম। কারণ, মহিলাদের জন্য সালাত আদায়ের স্থানের ভিত্তি হল, পর্দা। সুতরাং, পর্দা যত বেশি হবে, সালাত তাতে উত্তম হবে [আল্লামা সাবকী রাহিমাহুল্লাহু এর আল মিনহাল আল আযবুল মাওরুদ, শরহু সূনানে আবু দাউদ। ২৭০/৪]।
ষষ্ট হাদিস: আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لو تركنا هذا الباب للنساء » قال نافع : فلم يدخل منه ابن عمر حتى مات .
“আমরা যদি এ দরজাটিকে মহিলাদের জন্য ছেড়ে দেই”, [তাহলে ভালো হত]। নাফে‘ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করেননি”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, মহিলাদের মসজিদে পুরুষদের থেকে দূরে রাখা হাদিস নং ৪৬২ এবং এ বিষয়ে কঠোরতা করা প্রসঙ্গে, হাদিস নং ৫৭১। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ১১৪/১।] অর্থাৎ, যদি আমরা এ দরজাকে মহিলাদের জন্য ছেড়ে দেই, তা উত্তম হত। যাতে মহিলারা সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হলে, মসজিদে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় পুরুষদের সাথে মিশতে না হয়। সুতরাং উচিত হল, মসজিদ সমূহে মহিলাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা ও বাহির হওয়ার জন্য বিশেষ দরজার ব্যবস্থা রাখা। যাতে তারা মসজিদের প্রবেশ করতে পারে এবং তা হতে বের হতে পারে। তবে শর্ত হল, কোন ফিতনার আশঙ্কা না থাকতে হবে। অন্যথায় তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করাই শ্রেয়। [আল্লামা সাবকী রাহিমাহুল্লাহু এর আল মিনহাল আল আযবুল মাওরুদ, শরহু সূনানে আবু দাউদ। ৭০/৪ এবং আওনুল মা’বুদ। ২৭৭/২।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিসগুলো এ বিষয়ে স্পষ্ট যে, মহিলাদের মসজিদে গমনে নিষেধ করা হবে না। তবে কতগুলো শর্ত আছে, যেগুলো আলেমগণ হাদিস থেকে বের করে উল্লেখ করেছেন। আর সে গুলো হল, যে সব মহিলা সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হবে তারা সুগন্ধি লাগাবে না, সাজ-সজ্জা অবলম্বন করবে না, আর আওয়াজ বিশিষ্ট কোন অলংকার পরিধান করবেনা, পুরুষদের সাথে মিশবে না, এমন যুবতী হবে না যার বের হওয়ার কারণে ফিতনার আশংকা থাকে এবং রাস্তায় কোন ফিতনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। [ইমাম নববীর মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা, ৪০৬/৪।]
একুশ- জুমু‘আর সালাতের পূর্বে ইমামের খুতবা দেয়ার সময় মসজিদে দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক গুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা। মুয়ায বিন আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« نهى عن الحُبْوَةِ يوم الجمعة والإمام يخطب »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবা দেয়ার সময় দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক ঘুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা [ الحبوة : মসজিদে দুই হাটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক ঘুটিয়ে কাপড় পেছিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা। আবার কখনো সময় এহতেবা দুই হাত মাটিতে রাখার কারণেও হয়ে থাকে। দেখুন: আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৫২৫/২।] হতে নিষেধ করেছেন”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, হাদিস নং ১১১০। তিরমিযি, জুমআ অধ্যায় অধ্যায়, হাদিস নং ৫১৪। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদ ২০৬/১ এবং বিশুদ্ধ সূনানে তিরমিযিতে ১৫৯/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
] نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الاحتباء يوم الجمعة، يعني والإمام يخطب [.
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর দিন আমাদেরকে দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক ঘুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে জমিনে নিতম্ব রেখে বসা থেকে নিষেধ করেছেন”। [ইবনে মাযা, কিতাবুল মাসাজিদ ও জামা‘আত। হাদিস নং ১১৩৪, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে ইবনু মাযাতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৮৭/১।]
ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আহলে ইলমের একটি জামা‘আত বলেন, জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবার সময় ইহতেবা করে বসাকে মাকরূহ বলেন। আবার কতক আলেম এ ধরনের বসার অনুমতি দেন। যারা অনুমতি দেন তারা হলেন, আব্দুল্লাহ বিন ওমর ও অন্যান্যরা। তাদের সাথে সহমত প্রকাশ করেন, আহমদ ইসহাক। তারা উভয় ইমামের খুতবার সময় ইহতেবা করাতে কোন অসুবিধা মনে করেন না। [সূনানে তিরিমিযি তুহফাতুল আহওয়াযী সহ, ৪৬/৩।]
ইমাম শওকানী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, জুমু‘আর দিন ইহতেবা মাকরূহ হওয়া বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এক জামা‘আত আহলে ইলম বলেন, এটি মাকরূহ। তারা পরিচ্ছেদের হাদিস ও তার সমর্থক হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন। আর অধিকাংশ আলেম যেমন- ইরাকী রাহিমাহুল্লাহু এর মত হল মাকরূহ না হওয়া। তারা উল্লেখিত হাদিসসূহের উত্তরে বলেন, এগুলো সবই দুর্বল হাদিস। [আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৫২৫/২।]
মুবারকফুরি রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এ বিষয়ে হাদিসগুলো দুর্বল হলেও একটি হাদিস আরেকটি হাদিসকে শক্তিশালী করে। আর নি:সন্দেহে বলা যায়, ইহতেবা ঘুমের কারণ হয়। এ কারণেই উত্তম হল, জুমু‘আর দিন খুতবার সময় ইহতেবা করা থেকে বিরত থাকা। এটিই আছে আমার নিকট আল্লাহ ভালো জানেন [সূনানে তিরিমিযি তুহফাতুল আহওয়াযী সহ, ৪৭/৩।]। আমি আমার শাইখ ইমাম বিন বায রাহিমাহুল্লাহু কে বলতে শুনেছি, তিনি মুবারক পুরি রাহিমাহুল্লাহু এর কথার সাথে একটু বাড়িয়ে বলেন, এটি বিশুদ্ধ হওয়ার কাছাকাছি এহতেবা না করাই উত্তম। [আল্লামা মুবারকপুরি কথার উপর তা’লীক করার সময়৪৭/৩ আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
আমি তাকে মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস সম্পর্কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, এহতেবা সম্পর্কে সর্বাধিক হাসান হাদিস হল এ হাদিস। হাদিসটি বিষয়ে কথা আছে। তবে তার একাধিক দুর্বল সাক্ষী আছে। সুতরাং মুমিনদের জন্য উত্তম হল, ইহতেবা না করা। আর কতক সাহাবীদের এহতেবা করা সম্পর্কে তিনি বলেন, কারণ, তাদের নিকট এ হাদিসটি পৌঁছে নাই। [সূনানে তিরমিযির ৫১৪ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]
বাইশ- মিম্বার: খতীবের আরোহণ করার সিঁড়িকে উঁচা হওয়ার কারণে মিম্বার বলে। [আল্লামা ইবনে মানজুরের লিসানুল আরব, ১৮৯/৫।] হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের একটি মিম্বার গ্রহণ করেন। আবু হাযেম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
سألوا سهل بن سعد رضى الله عنه من أي شيء المنبر؟ فقال : « ما بقي بالناس أعلم مني : هو من أثل الغابة عمله فلان مولى فلانة لرسول الله صلى الله عليه و سلم »
“তারা সাহাল বিন সাআদকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বার? তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক জানার মত কোন লোক দুনিয়াতে বাকী ছিল না”। তার মিম্বার ছিল বনের বৃক্ষের তৈরী। তা অমুক গোলাম বানিয়েছে”। অপর শব্দে বর্ণিত,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলার নিকট এ নির্দেশ দিয়ে পাঠান, তুমি তোমার মিস্ত্রি গোলামকে আদেশ দাও, সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের মিম্বার বানায় যার উপর আমি বসব। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত তিনি বলেন,
] والله إني لأعرف مما هو، ولقد رأيته أول يوم وضع، وأول يوم جلس عليه رسول الله صلى الله عليه و سلم، أرسل رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى فلانة امرأة من الأنصار : « مُري غلامك النجار أن يعمل لي أعواداً أجلس عليهنّ إذا كلمتُ الناس » فأمرته فعملها من طرفاءِ الغابة، ثم جاء بها فأرسلت إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم، فأمر بها فوضعت هاهنا ...[.
“আল্লাহর কসম আমি জানি কোন জিনিস দিয়ে তা বানিয়েছে। প্রথম যেদিন সেটিকে রাখে এবং যেদিন প্রথমবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর বসে, আমি তাকে দেখছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন আনসারী মহিলার নিকট এ নির্দেশ দিয়ে পাঠান যে, তুমি তোমার মিস্ত্রি গোলামকে নির্দেশ দাও, সে যেন আমার জন্য একটি কাঠের মিম্বার বানায় যার উপর আমি মানুষের সাথে কথা বলার সময় বসব । তারপর সে একটি মিম্বার বানায়.... তারপর সে এটিকে নিয়ে আসলে মহিলাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট পাঠান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রাখার নির্দেশ দিলে তাকে এ জায়গায় রাখা হয়। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ সালাত আদায় করা ছাদ, মিম্বর ও লাকড়ীর উপর। হাদিস নং ৩৭৭, মসজিদের মিম্বর বানানোর সময় মিস্ত্রী ও কারিগরের সহযোগীতা গ্রহণ হাদিস নং ৪৪৮, জুমআ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মিম্বরের উপর খুতবা দেয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৯১৭] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن امرأة قالت : يا رسول الله، ألا أجعل لك شيئاً تقعد عليه؟ فإن لي غلاماً نجاراً، قال : « إن شئت » . وفي لفظ : «كان جذع يقوم عليه النبي صلى الله عليه و سلم فلما وُضِع له المنبر سمعنا للجذع مثل أصوات العشار حتى نزل النبي صلى الله عليه و سلم فوضع يده عليه »
“এক মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমি কি তোমার জন্য এমন একটি জিনিস বানাবো যার উপর তুমি বসবে?। আমার একজন মিস্ত্রি গোলাম আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, যদি চাও তুমি বানাতে পার। অপর এক শব্দে বর্ণিত, একটি খেজুরের কাঠ ছিল যার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ায়। যখন তার জন্য মিম্বার রাখা হল, আমরা খেজুরের কাঠ থেকে গরুর বাছুরের আওয়াজের মত আওয়াজ শুনতে পাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নেমে গেলেন এবং হাতকে তার উপর রাখেন”। অপর এক শব্দে বর্ণিত,
«فصاحت النخلة التي كان يخطب عندها حتى كادت أن تنشق، فنزل النبي صلى الله عليه و سلم حتى أخذها فضمها إليه، فجعلت تئنّ أنين الصبي الذي يسكَّت حتى استقرت، قال : بكت على ما كانت تسمع من الذكر»
তারপর যে খেজুরের গাছের নিকট দাঁড়িয়ে খুতবা দিত, সে খেজুর গাছটি চিৎকার দেয়া আরম্ভ করল। এমনকি সে যেন ফেটে পড়ার উপক্রম হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে নামলেন এবং তার উপর হাত রেখে তাকে তার দিক মিলিয়ে নিলে খেজুরের ডাল এমন বাচ্চার মত কাঁদতে লাগল যার ক্রন্দন থামানো হচ্ছিল। তারপর গাছটি স্থির হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার আলোচনা শুনে খেজুর গাছটি কাঁদছিল। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদের মিম্বর বানানোর সময় মিস্ত্রী ও কারিগরের সহযোগীতা গ্রহণ, হাদিস নং ৪৪৮, জুমআ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মিম্বরের উপর খুতবা দেয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৯১৭, কিতাবুল বুয়ু, পরিচ্ছেদ: নাজ্জারের আলোচনা হাদিস নং ২০৯৫। কিতাবুল মানাকেব, ইসলামে নবুওয়তের আলামত হাদিস নং ৩৫৮৫।] অপর একটি শব্দে বর্ণিত,
«كان المسجد مسقوفاً على جذوع من النخل، فكان النبي صلى الله عليه و سلم يقوم إلى جذع منها، فلما صنع له المنبر فكان عليه ... »
মসজিদের ছাদ ছিল খেজুরের কাঠের উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ডানে সাথে দাঁড়াতেন। তারপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য মিম্বার বানানো হল, তখন সে তার উপর ...
আব্দুল্লাহ বিন ওমর হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
لَمّا بدَّن قال له تميم الداري : ألا أتخذ لك منبراً يجمع أو يحمل عظامك؟ قال : «بلى» فاتخذ له منبراً مرقاتين .
যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোটা হয়ে গেলেন [দেখুন জামেয়ুল উসুল আল্লামা ইবনুল আছীরের। ১৮৮/১১।], তাকে তামীমে দারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি কি তোমার জন্য একটি মিম্বার বানাবো? যা তোমাকে একত্র করবে বা তোমাকে বহন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তারপর তাকে দুই সিঁড়ি বিশিষ্ট একটি মিম্বার বানানো। [আবু দাউদ< সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ মিম্বর গ্রহণ করা, হাদিস নং ১০৮১। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ২০২/১।] সাহাল বিন সাআদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أرسل رسول الله صلى الله عليه و سلم إلى امرأة : « انظري غلامك النجار يعمل لي أعواداً أكلم الناس عليها » فعمل هذه الثلاث درجات، ثم أمر بها رسول الله صلى الله عليه و سلم فوضعت هذا الموضع .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলার নিকট পাঠালেন-তুমি তোমার মিস্ত্রি গোলামটিকে বল সে যেন একটি মিম্বার বানায় যাতে আমি বসবো এবং মানুষের সাথে কথা বলি। তারপর সে তিন স্তর বিশিষ্ট একটি মিম্বার বানায় এবং সেটিকে এ স্থানে রাখা হয়। [মুসলিম, কিতাবুল মাসাজেদ, পরিচ্ছেদ, সালাতে এক কদম বা দুই কদম চলাচল করা বৈধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৫৪৪।] সালমা বিন আকু‘ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« وكان بين المنبر والقبلة قدر ممر الشاة »
মিম্বার ও কিবলার মাঝে একটি ছাগল অতিক্রম করা পরিমাণ ফাঁকা থাকত। [মুসলিম, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ : মুসল্লি সুতরার নিকটবতী হওয়া, হাদিস নং ৫০৯।] সাহাল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
« أنه كان بين جدار المسجد مما يلي القبلة وبين المنبر ممر الشاة »
“মসজিদের দেয়াল যা ক্বিবলার সাথে সম্পৃক্ত, তার মাঝে ও মিম্বারের মাঝে একটি বকরী অতিক্রম করার সমপরিমাণ ফাঁকা থাকত”। [বুখারি, কুরআন ও সূন্নাহ আঁকড়ে ধরা অধ্যায়, হাদিস নং ৭৩৩৪]
তেইশ- মসজিদে গমনের সময় এখলাস থাকতে হবে, যাতে মহা ছাওয়াব লাভে ধন্য হয়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « من أتى المسجد لشيء فهو حظه » . “যে ব্যক্তি কোন কিছুর জন্য মসজিদে আসে, তাই তার অংশ”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মসজিদে বসে থাকার ফযিলত, হাদিস নং 472; মিম্বর গ্রহণ করা, হাদিস নং ১০৮১; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন ৯৪/১।]
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে এসে দুনিয়া বা পরকাল বিষয়ে কোন কিছু অর্জন করতে চায়, সে তাই পাবে। কারণ, প্রতিটি মানুষের জন্য তাই মিলবে যা সে নিয়ত করে। এখানে মসজিদে আসার সময় নিয়তকে সহীহ করা বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যাতে নিয়তের মধ্যে গড়-মিল দেখা না দেয়। যেমন- হাঁটা-হাঁটি করা, সাথী-সঙ্গীদের সাথে দেখা সাক্ষাত করা ইত্যাদির নিয়তে মসজিদে গমন করবে না। বরং মসজিদের যাওয়ার সময় ই‘তেকাফ, একাগ্রতা অবলম্বন, ইবাদাত-বন্দেগী, আল্লাহর ঘরের যিয়ারত, জ্ঞান লাভ করা ইত্যাদি ভালো কাজের নিয়ত করবে। [দেখুন: আল্লামা মুহাম্মদ শামসুল হক আজীম আবাদীর সূনানে আবুদাউদের ব্যাখ্যা আওনুল মাবুদ: ১৩৬/২।]
চব্বিশ- বিনা ওজরে কাছের মসজিদ ছেড়ে অন্য মসজিদে যাওয়া হতে সতর্ক থাকবে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «ليصلِّ أحدكم في مسجده ولا يتتبع المساجد» . “তোমরা তোমাদের নিজেদের মসজিদে সালাত আদায় করবে। মসজিদ খোঁজাখুঁজি করবে না”। [তাবরানী মুজাম আল কবীর: ২৭১/২ হাদিস নং ১৩৩৭৩, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১০৫/৫, হাদিস নং ৫৩৩২। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ।]
ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এটি নিকটবর্তী মসজিদ ত্যাগ করার একটি অসিলা মাত্র এবং ইমামের অন্তরে ভীতি ঢেলে দেয়া। আর যদি ইমাম এমন হয়, সে সালাত পরিপূর্ণ করে না, বিদ‘আত করে, প্রকাশ্যে কোন পাপে লিপ্ত থাকে, তখন অন্য কোন মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাতে কোনো অসুবিধা নাই। [এলামুল মুকেয়ীন ১৬০/৩।] যখন কোন গ্রামে কাছের মসজিদ জামা‘আত ত্যাগকারীর সংখ্যা বেশি হয়, তখন মসজিদে জামা‘আত না হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এর কারণে মানুষের মধ্যে ইমামের প্রতি খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়। কিন্তু যদি কোন ভালো উদ্দেশ্য থাকে, যেমন- দূরের মসজিদে কোন দ্বীনি আলোচনা, শিক্ষণীয় ক্লাস থাকে অথবা সে মসজিদে সালাত তাড়াতাড়ি হয় এবং মুক্তাদির তা জরুরি তখন দূরের মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করাতে কোন অসুবিধা নাই। [দেখুন: আব্দুল্লাহ বিন ফাওযান, মসজিদে উপস্থিত হওয়ার বিধান, পৃ: ১৭৬।]
আর যদি কোন মানুষ মক্কা অথবা মদিনাতে বাস করে, মক্কার মসজিদে হারামে সালাত আদায় করা অথবা মদিনায় মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্য দূরে যাওয়াতে কোন অসুবিধা নাই। কারণ, এখানে দূরের মসজিদ দুটির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। [আল্লামা ইবনে উসাইমিনের আশ-শারহুল মুমতি‘ ২১৪-২১৫/৪।]
পঁচিশ- মানুষের কাঁধের উপর মাড়িয়ে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। আব্দুল্লাহ বিন বুসর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جاء رجل يتخطى رقاب الناس يوم الجمعة والنبي صلى الله عليه و سلم يخطب، فقال له النبي صلى الله عليه و سلم : « اجلس فقد آذيت »
“এক ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মসজিদে এসে মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি বস তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জুমু‘আর দিন মানুষের গরদান ফাকা করা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১১১৮, নাসায়ী জুমু’আ অধ্যায়, জুমু‘আর দিন মানুষের গরদান ফাকা করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১৩৯৯। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ২০৮/১।] জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رجلاً دخل المسجد يوم الجمعة ورسول الله صلى الله عليه و سلم يخطب فجعل يتخطى الناس فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « اجلس فقد آذيت وآنيت »
“জুমু‘আর দিন একজন মানুষ মসজিদে প্রবেশ করল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন, লোকটি মানুষকে সরাচ্ছিল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বস, তুমি মানুষকে কষ্ট দিলে এবং দূরে সরালে”। [ইবনু মাযা, সালাত কায়েম করা অধ্যায়, জুমু‘আর দিন মানুষের গরদান ফাকা করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ১১১৫; আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১৮৪/১।]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি সামনে ফাঁকা না থাকে তখন জুমু‘আর দিন হোক বা অন্য দিন কাতারে প্রবেশ করার জন্য কোন মানুষের মাথা ফাঁকা করা বৈধ নয়। কারণ, এটি যুলম ও আল্লাহর আদেশের লঙ্ঘন। [শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর ইখতিয়ারাতুল ফিকহিয়্যাহ: পৃ: ৮১।]
২৬- দুই ব্যক্তিকে আলাদা করবে না। সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يغتسل رجل يوم الجمعة، ويتطهّر ما استطاع من الطّهر، ويدهن من دهنه، أو يمسّ من طيب بيته، ثم يخرج فلا يُفرّق بين اثنين، ثم يصلّي ما كُتب له، ثم يُنصت إذا تكلّم الإمام إلا غُفر له ما بينه وبين الجمعة الأخرى» .
“যখন কোন ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে, যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে, শরীরে তেল লাগায়, স্বীয় ঘর থেকে সু-গন্ধি লাগায়, তারপর মসজিদে গিয়ে দুই ব্যক্তিকে আলাদা করে না, মসজিদে গিয়ে তার উপর যে সালাত আদায় করা ফরয করা হয়, তা আদায় করে এবং যখন ইমাম খুতবা দেয়, মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার এ জুমু‘আ হতে অপর জুমু‘আর মাঝে যত গুনাহ হয় সবই ক্ষমা করে দেবেন”। [বুখারি, জুমু‘আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: জুমু‘আর জন্য তেল লাগানো, হাদিস নং ৮৮৩।]
সাতাশ- মুসল্লীর সামনে এবং তার সুতরার মাঝে হাঁটবে না। আবু জাহামের হাদিসে রয়েছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لو يعلم المارُّ بين يدي المصلي ماذا عليه، لكان أن يقف أربعين خير له من أن يمرَّ بين يديه »
“যদি মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী তার গুনাহ সম্পর্কে জানত, তাহলে তার জন্য চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করা উত্তম ছিল মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা থেকে”। আবু নদর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, আমি জানিনা তিনি কি চল্লিশ দিন বলেছেন নাকি চল্লিশ মাস নাকি চল্লিশ বছর [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, হাদিস নং ৫১০, মুসলিম, হাদিস নং ৫০৭।]।
আটাশ- মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য কোন স্থানকে নির্ধারিত করবে না: আব্দুর রহমান বিন শিবল বলেন,
نهى رسول الله صلى الله عليه و سلم عن نقرة الغراب، وافتراش السبع، وأن يوطن الرجل المكان في المسجد كما يوطن البعير .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাকের ঠোকরের মত ঠোকর দেয়া থেকে নিষেধ করেন। উঠ যেভাবে আসন নির্ধারণ করে সেভাবে কোন মানুষকে মসজিদে আসন নির্ধারণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। [আবু দাউদ হাদিস নং ৮৬২। আহমদ: ২২৯/১ হাকেম: ৫২৪/১ আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯৪/১।]
ঊনত্রিশ- বসার জন্য কাউকে তার জায়গা থেকে উঠাবে না। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا يقيمنَّ أحدُكم أخاه يوم الجمعة ثم ليخالف إلى مقعده، فيقعد فيه، ولكن يقول : افسحوا »
“তোমাদের কেউ যেন, তোমার ভাইকে তার স্থান থেকে না উঠায় এবং তাকে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে সে স্থানে না বসে। তবে তাকে বলবে, তুমি জায়গা খালি কর”। [মুসলিম, সালাম অধ্যায়, হাদিস নং ২১৭৮।] আব্দুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল বলেন,
«لا يقيمنّ أحدُكم الرجلَ من مجلسه ثم يجلس فيه، ولكن تفسّحوا وتوسّعوا » قال نافع : الجمعة؟ قال الجمعة وغيرها،
“তোমাদের কেউই যেন তার ভাইকে তার মজলিশ থেকে সরিয়ে তার স্থানে না বসে। তবে তোমরা মজলিশে জায়গা করে দাও এবং মজলিশকে প্রশস্থ কর”। নাফে রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এটি কি শুধু জুমু‘আ বিষয়ে? তিনি বললেন, জুমু‘আ ও অন্য সব সময়; এটি সব মজলিশকে শামিল করে। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, জুমআ অধ্যায়, হাদিস নং ৯১১; মুসলিম, সালাম অধ্যায়, হাদিস নং ২১৭৮।]
ত্রিশ- জুমু‘আর দিন খুতবার শ্রবণ করার জন্য চুপ করে থাকবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا قلت لصاحبك يوم الجمعة أنصت والإمام يخطب فقد لغوت »
“যখন তুমি তোমার সাথীকে জুমু‘আর দিন ইমামের খুতবার সময় বলবে, তুমি চুপ কর, তাহলে অন্যায় করলে”। [বুখারি ও মুসলিম: বুখারি, জুমু‘আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ইমামের খুতবা দেয়ার সময়, জুমু‘আর দিন চুপ থাকা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৯৩৪; মুসলিম, কিতাবুল জুমু‘আ, ইমামের খুতবা দেয়ার সময়, জুমু‘আর দিন চুপ থাকা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস নং ৮৫১।]
একত্রিশ- আযান ও ইকামতের মাঝে মানুষের সাথে কথা-বার্তা বলে, দুনিয়ার বিষয়ে অধিক প্রশ্ন করে, কুরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর যিকির হতে বিরত থেকে মূল্যবান সময়কে নষ্ট করবে না। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফু‘ হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سيكون في آخر الزمان قوم يجلسون في المساجد حلقاً حلقاً، إمامهم الدنيا، فلا تُجالسوهم؛ فإنه ليس لله فيهم حاجة »
“শেষ জামানায় এমন সম্প্রদায়ের লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মসজিদে হালকাবন্দী হয়ে বসবে, তাদের লক্ষ্য হবে দুনিয়া। তোমরা তাদের সাথে বসবে না। কারণ, তাদের মধ্যে আল্লাহর জন্য কোন প্রয়োজন নাই। [তাবরানী, আল-কবীরে ১৯৯/১০, হাদিস নং ১০৪৫২, হাদিসটিকে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু সিলসিলাতুল আহাদিস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হাদিস নং ১১৬৩।]
বত্রিশ- জুমু‘আর দিন বা অন্য দিন জায়নামায ইত্যাদি দিয়ে কোন জায়গাকে দখল করে রাখবে না। কারণ, এটি হল মসজিদের কোন অংশকে বিছানা দিয়ে জবর দখল রাখার শামিল এবং অন্য মুসল্লী যারা আগে মসজিদে আসে তাদেরকে সে জায়গায় সালাত আদায় থেকে বাধা দেয়ার নামান্তর। মানুষকে মসজিদে আগে আগে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি বিছানা পাঠিয়ে দেয় এবং সে নিজে দেরিতে আসে, সে দুই দিক দিয়ে শরিয়তের বিরোধিতা করল; এক- তাকে আগে আসার নির্দেশ দেয়া হল, সে তা না করে দেরীতে মসজিদে আসল। দুই- সে মসজিদের কিছু অংশকে জবর দখল করে রাখল। ফলে যারা মসজিদে আগে আসবে, তাদের তাতে সালাত আদায় করতে বাধা দিল এবং প্রথম কাতার পুরো করা থেকে নিষেধ করল এবং যখন মানুষ উপস্থিত হবে, তখন তাদেরকে ফাঁক করে সামনে এগুতে হবে। [দেখুন: মাজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে শাইখুল ইসলাম- ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু পৃ: ২১৬-২১৭/২৪ ও ৮৮/২৭।] আল্লামা আব্দুর রহমান আস-সা‘দী রাহিমাহুল্লাহু এ কাজটিকে নাজায়েজ বলে ফতোয়া দেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্ম হালাল নয়। কারণ, এটি শরিয়তের পরিপন্থী এবং সাহাবায়ে কেরাম ও কেয়ামত পর্যন্ত তাদের অনুসারীদের আদর্শের পরিপন্থী। [দেখুন: ফতুয়া আস-সাদীয়াহ, পৃ: ১৮২। আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজীজ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বিষয়টি না যায়েজ হওয়ার ফতুয়া দিতে শুনেছি। তবে যদি মানুষ মসজিদে থাকে এবং ওজুর জন্য বের হয় এবং আবার ফিরে আসে।]
তেত্রিশ- গোসল ফরয হয়েছে এমন ব্যক্তি এবং ঋতুবতী মহিলা মসজিদে বসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْۚ ٤٣ ﴾ [ النساء : ٤٣ ] ( [সূরা নিসা আয়াত: ৪৩।]).
আয়াতের ব্যাখ্যা: মুসল্লী যেন সালাত আদায়ের জন্য মাতাল অবস্থায় মসজিদের নিকটে না যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত সে কি বলে তা বুঝতে পারে। আর নাপকী অবস্থায়ও কেবল অতিক্রম করা ছাড়া মসজিদে নিকট না যায়। অর্থাৎ মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য যতটুকু হাঁটা প্রয়োজন হয়, তা ছাড়া যেন মসজিদে চলাচল না করে। আয়াতে সালাতকে মসজিদ ও সালাতের স্থানের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাখ্যাটিকে ইমাম ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু প্রাধান্য দেন। [জামেয়ুল বায়ান ৩৮২-৩৮৫/২।] হাফেয ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহুবলেন, অনেক ইমামগণ এ আয়াত দ্বারা এ কথার উপর প্রমাণ পেশ করেন, যে গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থান করা হারাম। তবে তার জন্য মসজিদ ত্যাগ করার জন্য অতিক্রম করা বৈধ। অনুরূপভাবে ঋতুবতী ও নিফাস ধারিনী মহিলার বিধানও একই। [তাফসীরুল কু্রআন আল-আজীম পৃ: ৩২৭।]
তবে ঋতুবতী ও নিফাস ধারিনী মহিলার উপর জরুরী হল, সে মসজিদকে নাপাক করা হতে হেফাযত করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
« ناوليني الخمرة من المسجد » ، فقالت : إني حائض، فقال : « إن حيضتك ليست في يدك »
“তুমি আমার জন্য মসজিদ থেকে জায়নায নিয়ে আস। তখন সে বলল, আমি হায়েযা। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার হায়েয তোমার হাতে নয়”। [মুসলিম, কিতাবুল হায়েয, একই বিছানায় হায়েযা মহিলার সাথে শোয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ২৯৮।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
قال : بينما رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد قال : «يا عائشة ناوليني الثوب » فقالت : إني حائض، فقال : « حيضتك ليست في يدك »
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে উপস্থিত ছিল, তিনি বললেন, হে আয়েশা তুমি আমার জন্য কাপড়টি নিয়ে আস। তখন সে বলল, আমি হায়েযা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার হায়েয তোমার হাতে নয়”। [মুসলিম, কিতাবুল হায়েয, একই বিছানায় হায়েযা মহিলার সাথে শোয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ২৯৯।]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত মারফু‘ হাদিসটি - «وجِّهوا هذه البيوت عن المسجد، فإني لا أُحلّ المسجد لحائض ولا جنب » “তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে মসজিদ থেকে সরিয়ে নাও কারণ, আমি হায়েযা ও নাপাক ব্যক্তির জন্য মসজিদকে হালাল মনে করি না [আবু দাউদ, তাহারাত অধ্যায়, নাপাক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩২২। তালখীসে আল হাবিরে হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু ১৪০/১। ইমাম আহমদ বলেন, এতে কোন অসুবিধা দেখিনা। আল্লামা ইবনে খুজাইমা সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। আর ইবনে কাত্তান হাসান বলেন। আমি আমার শাইখকে বুলুগুল মুরাম ১৩২ নং হাদিসের ব্যখ্যায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হাদিসটির সনদে কোন অসুবিধা নাই।]”- যারা মসজিদে অবস্থান করে তাদের জন্য। কোন কোন আহলে ইলম জুনুবী-নাপাক-ব্যক্তি যখন ওজু করে তখন তার জন্য মসজিদে অবস্থান করা বৈধ বলে মত দেন। যায়েদ বিন আসলামের হাদিস তিনি বলেন,
أن بعض أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم كانوا إذا توضؤوا جلسوا في المسجد،
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কতক সাহাবী ওজু করার পর মসজিদে বসে থাকতেন”। [বর্ণনায় সাঈদ বিন মনসূর ও খলিল বিন ইসহাক যেমনটি ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর মুন্তাকায় বর্ণিত। ১৪১-১৪২/১ এবং যেমনটি ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহু এর উমদার ব্যাখ্যা। ৩৯১/১] কিন্তু অন্যান্য আহলে ইলমগণ বলেন, কোনক্রমেই মসজিদে বসবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী - ﴿ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْۚ ٤٣ ﴾ [ النساء : ٤٣ ] - “Ges অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৪৩।] ব্যাপক, তাতে সবাই শামিল। শুধু ওজু করা দ্বারা একজন মানুষ জুনুবী থেকে বের হয় না। একটু আগে উল্লিখিত হাদিসটির ব্যাপকতা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
আমি আমার শাইখ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, এটিই সু-স্পষ্ট ও অধিক শক্তিশালী কথা, যে সব সাহাবীরা মসজিদে বসে থাকত, তাদের কর্মটি এ কথার উপর প্রয়োগ করা হবে যে, যে সব দলীল অপবিত্র ব্যক্তিকে মসজিদে বসা থেকে নিষেধ করছে, তাদের কাছে সে দলীলসমূহ গোপন ছিল। আর আসল হল, দলীলের উপর আমল করা। আর যায়েদ বিন আসলামের হাদিসটি যদিও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন, তবু যেহেতু তিনি হাদিসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে একা, তাই তার বিষয়ে হাদীস বিশারদদের অন্তরে কিছু (সমস্যা) আছে [মুন্তাকা এর ৩৯৬ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি আমার শাইখকে বলতে শুনেছি।]।
নিঃসন্দেহে বলা যায়, আল্লাহ তা‘আলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার উম্মতের জন্য সমগ্র যমিনকে মসজিদ ও পবিত্র বানিয়েছেন। একমাত্র কবরস্থান, গোসল খানা, উট বাধার স্থান, নাপাকীর স্থান এবং আযাব ও ভূমি ধ্বসের স্থান ছাড়া। এ গুলোতে তিনি সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «الأرض كلها مسجد إلا المقبرة والحمّام» “যমীনের সব অংশটুকু মসজিদ তবে কবর ও গোসল খানা ছাড়া”। [আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যে সব স্থানে সালাত আদায় করা যায়েয নাই। হাদিস নং ৪৯২। তিরমিযি সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মাকবারাহ ও হাম্মাম ছাড়া সব যায়গা মসজিদ হাদিস নং ৩১৭। ইবনু মাযা, মাসাজিদ ও জামা‘আত অধ্যায়, যে সব স্থানে সালাত আদায় করা মাকরুহ। হাদিস নং ৭৪৫। আহমদ ৮৩/৩, ৯৬ আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ সূনানে আবুদ দাউদ, তিরমিযি ও ইবনে মাযায় হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] কবরে সালাত আদায় করা যাবে না এবং তাতে সালাত আদায় করা সহীহ হবে না [আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৬৭০/১ এবং আল্লামা সুনআনীর সুবুলুস সালাম ১১৯/২।]। চাই সালাত আদায় করা, কবরের ওপর হোক বা কবরকে সামনে রেখে হোক আলাদা স্থানে হোক যে কবরের স্থানে আলাদা ঘর বানিয়ে তাতে সালাত আদায় করা। কারণ, যে কর্ম থেকে নিষেধ করা হয়েছে, করলে তা অশুদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। কবর ও গোসল খানার নামটি যে সব স্থানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে সব স্থানে সালাত আদায় করা জায়েজ নাই। কবরের উপর সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন, সালাতের স্থানের নিচে, নাপাকী রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, মৃত লোকদের সম্মানার্থে কবরের উপর সালাত আদায় করা যাবে না। আর গোসল খানায় সালাত আদায় অবৈধ হওয়ার কারণ বিষয়ে কেউ কেউ বলেন, তাতে অধিকাংশ সময় অনেক নাপাকী থাকে। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি শয়তানের বাসস্থান। [আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৬৭০/১ এবং আল্লামা সুনআনীর সুবুলুস সালাম ১১৯/২।] আমি আমার শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, গোসল করার জন্য নির্মিত হাম্মাম, কবরের উপর বা কবরের দিকে ফিরে সালাত আদায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, কবরের উপর সালাত আদায় বা কবরের দিকে সালাত আদায় করা শিরকের ওসিলা হয়ে থাকে। আর গোসল খানায় সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হল, তাতে নাপাকী থাকার আশঙ্কা রয়েছে বা গোসলখানা হল, শয়তানের আবাসস্থল। কারণ সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। [বুলুগুল মারাম ২২৯ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] কবর সমূহের উপর সালাত আদায় নিষিদ্ধ। আবু মারসাদ আল গানাবী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, « لا تصلوا إلى القبور ولا تجلسوا عليها » “তোমরা কবরে দিকে ফিরে সালাত আদায় করবে না এবং তার উপর তোমরা বসবে না”। [মুসলিম: জানায়েয অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর বসা ও সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৯৭২।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« أن يجلس أحدكم على جمرة فتحرق ثيابه، فتخلص إلى جلده خيرٌ له من أن يجلس على قبر »
“তোমাদের কেউ অগ্নি কয়লার উপর বসার ফলে তার কাপড় পুড়ে আগুন চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া কবরের উপর বসা হতে উত্তম। [মুসলিম: জানায়েয অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর বসা ও সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৯৭২।] আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « اجعلوا في بيوتكم من صلاتكم ولا تتخذوها قبوراً» “তোমরা তোমাদের ঘরসমূহে তোমাদের সালাতের কিছু আদায় কর। ঘরকে কবর বানিও না”। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, সালাত অধ্যায়, কবরের উপর সালাত মাকরূহ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৩২। মুসলিম, সালাতুল মুসাফিরিন। ঘরের মধ্যে নফল সালাত আদায় প্রসংঙ্গে। হাদিস নং ৭৭৭।] ঘরে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য নফল সালাত। কারণ, ফরয সালাত মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করতে হয়। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী - « ولا تتخذوها قبوراً » “তাকে তোমরা কবর বানিও না”। এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য, কবর সালাতের স্থান নয়। ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহু এ হাদিস থেকে কবরসমূহের উপর সালাত আদায় করা মাকরূহ হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত করেন। [আল্লামা শাওকানী রহ এর নাইলুল আওতার, পৃ: ৬৭২/১]
একজন মুসলিম উট বাঁধার স্থান যাকে উট ঘুমানোর স্থান বলা হয়, তাতে সালাত আদায় করবে না। বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত তিনি বলেন,
سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الصلاة في مبارك الإبل؟ فقال : «لا تصلوا في مبارك الإبل؛ فإنها من الشياطين » . وسئل عن الصلاة في مرابض الغنم؟ فقال : « صلوا فيها فإنها بركة »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উটের ঘুমানোর স্থানে সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করবে না। কারণ, সেটি শয়তান থেকে। আর তাকে ছাগল বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করার কথা বলা হলে, রাসূল বলেন, তোমরা তাতে সালাত আদায় কর, কারণ এতে রয়েছে বরকত”। [আবু দাউ সালাত অধ্যায়, হাদিস নং ৪৯৩ ও ১৮৪। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ সূনানে আবুদ দাউদ, হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ৯৭/১।] আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল আল মুযানী থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلوا في مرابض الغنم، ولا تصلوا في أعطان الإبل، فإنها خُلقت من الشياطين »
“তোমরা ছাগল বাঁধার স্থানে সালাত আদায় কর। আর তোমরা উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করো না। কারণ, তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে শয়তান থেকে”। [নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজিদ, পরিচ্ছেদ: উটের ঘরে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে। হাদিস নং ৭৩৬, ইবনু মাযা কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত। পরিচ্ছেদ: উটের ঘর ও ছাগলের ঘরে সালাত আদায় করা। হাদিস নং ৭৬৯। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ সূনানে নাসায়ী ১৫৮/১, ও ইবনে মাযায় ১২৮/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلوا في مرابض الغنم ولا تصلوا في أعطان الإبل » “তোমরা ছাগল বাঁধার স্থানে সালাত আদায় কর এবং উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করো না”। [তিরমিযি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ما جاء في الصلاة في مرابض الغنم، وأعطان الإبل হাদিস নং ৩৪৮। ইবনু মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত। পরিচ্ছেদ: উটের ঘর ও ছাগলের ঘরে সালাত আদায় করা। হাদিস নং ৭৬৮। আহমদ ১৫০/৪। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ সূনানে তিরমিযি ১১০/১, ও বিশুদ্ধ ইবনে মাযায় ১২৮/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] সাবুরা বিন মাবাদ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا يُصلَّى في أعطان الإبل، ويُصلّى في مراح الغنم »
“উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করবে না। তবে ছাগলের বিশ্রামের ঘরে সালাত আদায় কর”। জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن رجلاً سأل رسول الله صلى الله عليه و سلم : أأتوضأ من لحوم الغنم؟ قال : « إن شئت فتوضأ، وإن شئت فلا تتوضأ » قال : أتوضأ من لحوم الإبل؟ قال : «نعم فتوضأ من لحوم الإبل » قال : أصلي في مرابض الغنم؟ قال : «نعم » . قال : أصلي في مبارك الإبل؟ قال : « لا »
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কি ছাগলের গোস্ত খেয়ে ওজু করব? তিনি বলেন, যদি চাও ওজু কর আর যদি চাও ওজু করো না। তিনি বলেন, উটের গোস্তের কারণে ওজু করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তুমি উটের গোস্তের কারণে অজু কর। ছাগলের বিশ্রামের ঘরে সালাত আদায় করব? বললেন, হ্যাঁ। উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করব? বললেন, না”। [মুসলিম, কিতাবুল হায়েয, উটের গোস্ত খাওয়ার কারণে ওজু করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩৬০।] হাদিসে বিভিন্ন শব্দ বর্ণিত যেমন এক হাদিস مبارك الإبل আরেক হাদিসে أعطان الإبل আরেক হাদিসে مناخ الإبل আরেক হাদিসে مرابد الإبل আরেক হাদিসে مزابل الإبل শব্দ বর্ণিত। আর হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, ছাগলের ঘরে সালাত আদায় বৈধ। আর উটের ঘরের সালাত আদায় হারাম। এ মত পোষণ করেন ইমাম আহমদ। তিনি বলেন, উটের ঘরে কোন অবস্থাতেই সালাত আদায় করা জায়েয নাই। যদি কোন ব্যক্তি উটের ঘরে সালাত আদায় করে তাকে অবশ্যই সে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। আর অধিকাংশ আলেমগণের মত হল, এখানে নিষেধটি মাকরূহের উপর প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু সঠিক কথা হল, নিষেধ করাটা হারামের দাবিদার। আল্লামা ইবনে হাযম বর্ণনা করেন, উটের গৃহে সালাত আদায়কে নিষেধ করার হাদিসগুলো মুতাওয়াতের। এগুলো বিশ্বাস করা ওয়াজিব। কেউ কেউ বলেন, নিষেধ করার হিকমত হল, তাকে শয়তান থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, পায়খানা পেশাব করার সময় অধিকাংশ সময় যে তাকে সুতরা বানাবে তাকে নাপাক বানানো হতে মুক্ত রাখে না। অথবা সালাত আদায় করার সময় তার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, ফলে তা তার সালাত ভঙ্গ, অথবা কোন প্রকার কষ্ট অথবা এমন কোন সমস্যা তৈরি হবে, যাতে তার সালাতে একাগ্রতা ও মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। আর এ হাদিসগুলো সবই এ কথার প্রতি গুরুত্ব দেয় যে উট বাঁধার স্থানে যাতে কেউ সালাত আদায় না করে এবং তাতে সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকে। [আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ৬০৬/১; সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ২৮৯/৪। ফতহুল বারী: ৫২৭/১। আল্লামা সুনআনীর সুবুলুস সালাম ১২০/১ ও আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৬৭৭/১।]
একজন মুসলিম আযাবের স্থানে সালাত আদায় করবে না। আব্দুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تدخلوا على هؤلاء المعذبين إلا أن تكونوا باكين، فإن لم تكونوا باكين فلا تدخلوا عليهم، لا يصيبكم ما أصابهم »
“তোমরা এ সব শাস্তিপ্রাপ্ত লোকদের নিকট প্রবেশ করো না। তবে ক্রন্দন রত অবস্থায় প্রবেশ কর, যদি তোমরা ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ করতে না পার, তাহলে তাদের নিকট প্রবেশ করো না”। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, সালাত অধ্যায়, আযাব ও ধ্বংসস্তুপের মধ্যে সালাত আদায় করা। হাদিস নং ৪৩৩। মুসলিম, যুহুদ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ আল্লাহ তা’লার বাণী - لا تدخلوا مساكن الذين ظلموا أنفسهم إلا أن تكونوا باكين، হাদিস নং ২৯৮০।] যাতে তাদের যা পৌঁছেছে, তোমাদের তা না পৌঁছে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَمّا مرّ رسول الله صلى الله عليه و سلم بالحِجر قال : « لا تدخلوا مساكن الذين ظلموا أنفسهم، أن يصيبكم ما أصابهم إلا أن تكونوا باكين » . ثم رفع رأسه وأسرع السير حتى أجاز الوادي .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজর এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল। তখন তিনি বলেন, (( لا تدخلوا مساكن الذين ظلموا أنفسهم، أن يصيبكم ما أصابهم إلا أن تكونوا باكين )). অর্থাৎ, তোমরা তাদের বাসগৃহে প্রবেশ করবে, যারা তাদের নিজেদের উপর অবিচার করেছে, তবে ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ কর। তারপর তিনি উপরের দিকে মাথা উঠান এবং ঐ উপত্যকা অতিক্রম করা পর্যন্ত দ্রুত হাঁটতে থাকেন। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, উটের স্থানে সালাত আদায় বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৩৫।]
আর যদি কেউ উট বাঁধার স্থান ছাড়া অন্য কোথাও কেউ যদি উটকে নামাযের সুতরা তথা আড়াল বানায় তাতে কোন অসুবিধা নাই। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার উটকে সুতরা বানিয়ে তার দিক ফিরিয়ে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি বলেন, (( رأيت النبي صلى الله عليه و سلم يفعله )). “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি”। [বুখারি, হাদিস নং ৪৪১৯, ৪৭০২ এবং মুসলিম হাদিস নং ২৯৮০- ২৯৮১]
« أن يجلس أحدكم على جمرة فتحرق ثيابه، فتخلص إلى جلده خيرٌ له من أن يجلس على قبر »
“তোমাদের কেউ অগ্নি কয়লার উপর বসার ফলে তার কাপড় পুড়ে আগুন চামড়া পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া কবরের উপর বসা হতে উত্তম। [মুসলিম: জানায়েয অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: কবরের উপর বসা ও সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৯৭২।] আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « اجعلوا في بيوتكم من صلاتكم ولا تتخذوها قبوراً» “তোমরা তোমাদের ঘরসমূহে তোমাদের সালাতের কিছু আদায় কর। ঘরকে কবর বানিও না”। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, সালাত অধ্যায়, কবরের উপর সালাত মাকরূহ হওয়া বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৩২। মুসলিম, সালাতুল মুসাফিরিন। ঘরের মধ্যে নফল সালাত আদায় প্রসংঙ্গে। হাদিস নং ৭৭৭।] ঘরে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য নফল সালাত। কারণ, ফরয সালাত মসজিদে জামা‘আতের সাথে আদায় করতে হয়। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী - « ولا تتخذوها قبوراً » “তাকে তোমরা কবর বানিও না”। এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য, কবর সালাতের স্থান নয়। ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহু এ হাদিস থেকে কবরসমূহের উপর সালাত আদায় করা মাকরূহ হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত করেন। [আল্লামা শাওকানী রহ এর নাইলুল আওতার, পৃ: ৬৭২/১]
একজন মুসলিম উট বাঁধার স্থান যাকে উট ঘুমানোর স্থান বলা হয়, তাতে সালাত আদায় করবে না। বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত তিনি বলেন,
سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الصلاة في مبارك الإبل؟ فقال : «لا تصلوا في مبارك الإبل؛ فإنها من الشياطين » . وسئل عن الصلاة في مرابض الغنم؟ فقال : « صلوا فيها فإنها بركة »
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উটের ঘুমানোর স্থানে সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করবে না। কারণ, সেটি শয়তান থেকে। আর তাকে ছাগল বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করার কথা বলা হলে, রাসূল বলেন, তোমরা তাতে সালাত আদায় কর, কারণ এতে রয়েছে বরকত”। [আবু দাউ সালাত অধ্যায়, হাদিস নং ৪৯৩ ও ১৮৪। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ সূনানে আবুদ দাউদ, হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। হাদিস নং ৯৭/১।] আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল আল মুযানী থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلوا في مرابض الغنم، ولا تصلوا في أعطان الإبل، فإنها خُلقت من الشياطين »
“তোমরা ছাগল বাঁধার স্থানে সালাত আদায় কর। আর তোমরা উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করো না। কারণ, তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে শয়তান থেকে”। [নাসায়ী, কিতাবুল মাসাজিদ, পরিচ্ছেদ: উটের ঘরে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে। হাদিস নং ৭৩৬, ইবনু মাযা কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত। পরিচ্ছেদ: উটের ঘর ও ছাগলের ঘরে সালাত আদায় করা। হাদিস নং ৭৬৯। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ সূনানে নাসায়ী ১৫৮/১, ও ইবনে মাযায় ১২৮/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صلوا في مرابض الغنم ولا تصلوا في أعطان الإبل » “তোমরা ছাগল বাঁধার স্থানে সালাত আদায় কর এবং উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করো না”। [তিরমিযি, সালাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ما جاء في الصلاة في مرابض الغنم، وأعطان الإبل হাদিস নং ৩৪৮। ইবনু মাযা, কিতাবুল মাসাজেদ ও জামা‘আত। পরিচ্ছেদ: উটের ঘর ও ছাগলের ঘরে সালাত আদায় করা। হাদিস নং ৭৬৮। আহমদ ১৫০/৪। আল্লামা আলবানী বিশুদ্ধ সূনানে তিরমিযি ১১০/১, ও বিশুদ্ধ ইবনে মাযায় ১২৮/১ হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।] সাবুরা বিন মাবাদ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا يُصلَّى في أعطان الإبل، ويُصلّى في مراح الغنم »
“উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করবে না। তবে ছাগলের বিশ্রামের ঘরে সালাত আদায় কর”। জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
أن رجلاً سأل رسول الله صلى الله عليه و سلم : أأتوضأ من لحوم الغنم؟ قال : « إن شئت فتوضأ، وإن شئت فلا تتوضأ » قال : أتوضأ من لحوم الإبل؟ قال : «نعم فتوضأ من لحوم الإبل » قال : أصلي في مرابض الغنم؟ قال : «نعم » . قال : أصلي في مبارك الإبل؟ قال : « لا »
“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কি ছাগলের গোস্ত খেয়ে ওজু করব? তিনি বলেন, যদি চাও ওজু কর আর যদি চাও ওজু করো না। তিনি বলেন, উটের গোস্তের কারণে ওজু করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তুমি উটের গোস্তের কারণে অজু কর। ছাগলের বিশ্রামের ঘরে সালাত আদায় করব? বললেন, হ্যাঁ। উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করব? বললেন, না”। [মুসলিম, কিতাবুল হায়েয, উটের গোস্ত খাওয়ার কারণে ওজু করা বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৩৬০।] হাদিসে বিভিন্ন শব্দ বর্ণিত যেমন এক হাদিস مبارك الإبل আরেক হাদিসে أعطان الإبل আরেক হাদিসে مناخ الإبل আরেক হাদিসে مرابد الإبل আরেক হাদিসে مزابل الإبل শব্দ বর্ণিত। আর হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, ছাগলের ঘরে সালাত আদায় বৈধ। আর উটের ঘরের সালাত আদায় হারাম। এ মত পোষণ করেন ইমাম আহমদ। তিনি বলেন, উটের ঘরে কোন অবস্থাতেই সালাত আদায় করা জায়েয নাই। যদি কোন ব্যক্তি উটের ঘরে সালাত আদায় করে তাকে অবশ্যই সে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। আর অধিকাংশ আলেমগণের মত হল, এখানে নিষেধটি মাকরূহের উপর প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু সঠিক কথা হল, নিষেধ করাটা হারামের দাবিদার। আল্লামা ইবনে হাযম বর্ণনা করেন, উটের গৃহে সালাত আদায়কে নিষেধ করার হাদিসগুলো মুতাওয়াতের। এগুলো বিশ্বাস করা ওয়াজিব। কেউ কেউ বলেন, নিষেধ করার হিকমত হল, তাকে শয়তান থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, পায়খানা পেশাব করার সময় অধিকাংশ সময় যে তাকে সুতরা বানাবে তাকে নাপাক বানানো হতে মুক্ত রাখে না। অথবা সালাত আদায় করার সময় তার মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, ফলে তা তার সালাত ভঙ্গ, অথবা কোন প্রকার কষ্ট অথবা এমন কোন সমস্যা তৈরি হবে, যাতে তার সালাতে একাগ্রতা ও মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। আর এ হাদিসগুলো সবই এ কথার প্রতি গুরুত্ব দেয় যে উট বাঁধার স্থানে যাতে কেউ সালাত আদায় না করে এবং তাতে সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকে। [আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে ৬০৬/১; সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ২৮৯/৪। ফতহুল বারী: ৫২৭/১। আল্লামা সুনআনীর সুবুলুস সালাম ১২০/১ ও আল্লামা শাওকানীর নাইলুল আওতার ৬৭৭/১।]
একজন মুসলিম আযাবের স্থানে সালাত আদায় করবে না। আব্দুল্লাহ ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাদিস বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تدخلوا على هؤلاء المعذبين إلا أن تكونوا باكين، فإن لم تكونوا باكين فلا تدخلوا عليهم، لا يصيبكم ما أصابهم »
“তোমরা এ সব শাস্তিপ্রাপ্ত লোকদের নিকট প্রবেশ করো না। তবে ক্রন্দন রত অবস্থায় প্রবেশ কর, যদি তোমরা ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ করতে না পার, তাহলে তাদের নিকট প্রবেশ করো না”। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, সালাত অধ্যায়, আযাব ও ধ্বংসস্তুপের মধ্যে সালাত আদায় করা। হাদিস নং ৪৩৩। মুসলিম, যুহুদ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ আল্লাহ তা’লার বাণী - لا تدخلوا مساكن الذين ظلموا أنفسهم إلا أن تكونوا باكين، হাদিস নং ২৯৮০।] যাতে তাদের যা পৌঁছেছে, তোমাদের তা না পৌঁছে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَمّا مرّ رسول الله صلى الله عليه و سلم بالحِجر قال : « لا تدخلوا مساكن الذين ظلموا أنفسهم، أن يصيبكم ما أصابهم إلا أن تكونوا باكين » . ثم رفع رأسه وأسرع السير حتى أجاز الوادي .
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজর এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল। তখন তিনি বলেন, (( لا تدخلوا مساكن الذين ظلموا أنفسهم، أن يصيبكم ما أصابهم إلا أن تكونوا باكين )). অর্থাৎ, তোমরা তাদের বাসগৃহে প্রবেশ করবে, যারা তাদের নিজেদের উপর অবিচার করেছে, তবে ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ কর। তারপর তিনি উপরের দিকে মাথা উঠান এবং ঐ উপত্যকা অতিক্রম করা পর্যন্ত দ্রুত হাঁটতে থাকেন। [বুখারি, সালাত অধ্যায়, উটের স্থানে সালাত আদায় বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৩৫।]
আর যদি কেউ উট বাঁধার স্থান ছাড়া অন্য কোথাও কেউ যদি উটকে নামাযের সুতরা তথা আড়াল বানায় তাতে কোন অসুবিধা নাই। আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার উটকে সুতরা বানিয়ে তার দিক ফিরিয়ে সালাত আদায় করতেন এবং তিনি বলেন, (( رأيت النبي صلى الله عليه و سلم يفعله )). “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি”। [বুখারি, হাদিস নং ৪৪১৯, ৪৭০২ এবং মুসলিম হাদিস নং ২৯৮০- ২৯৮১]
১৪
দশম পরিচ্ছেদ: মসজিদের মধ্যে ইলমের মজলিশ আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «من نَفَّسَ عن مؤمن كربة من كرب الدنيا نَفَّسَ الله عنه كربة من كرب يوم القيامة، ومن يسَّر على معسر يسَّر الله عليه في الدنيا والآخرة، ومن ستر مسلماً ستره الله في الدنيا والآخرة، والله في عون العبد ما كان العبد في عون أخيه، ومن سلك طريقاً يلتمس فيه علماً سهَّل الله له به طريقاً إلى الجنة، وما اجتمع قوم في بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم، إلا نزلت عليهم السكينة، وغشيتهم الرحمة، وحفتهم الملائكة، وذكرهم الله فيمن عنده، ومن بطَّأ به عمله لم يسرع به نسبه»
“যে ব্যক্তি কোন মুমিন থেকে দুনিয়াবি একটি বিপদ দূর করে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত দিবসের বিপদসমূহ হতে একটি বিপদ দূর করবে। আর যে ব্যক্তি কোন অভাবীকে সচ্ছল করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া আখিরাতে তাকে সচ্ছলতা দান করবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ে দোষ-ত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে। আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সহযোগিতা করে যখন সে তার অপর ভাইয়ে সহযোগিতা করে। যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি রাস্তা সহজ করে দেবেন। কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন আল্লাহর ঘরসমূহ হতে কোন ঘরে একত্র হয়, যাতে তারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে বা পরস্পর আলোচনা করে তাদের উপর সাকিনা নাযিল হতে থাকে, তাদেরকে রহমত ঢেকে রাখে এবং ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট যারা আছে, তাদের কাছে তাদের আলোচনা করেন। আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ তাকে এগিয়ে নেয় না”। [মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ: তিলাওয়াতে কুরআন ও যিকিরের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ২৬৯৯।] আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا يقعد قوم يذكرون الله تعالى إلا حفتهم الملائكة، وغشيتهم الرحمة، ونزلت عليهم السكينة، وذكرهم الله فيمن عنده »
“যখন কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা আল্লাহর যিকর করার জন্য কোন মজলিসে একত্র হয়, তখন ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখবে এবং রহমত তাদের ঢেকে ফেলবে, আর তাদের উপর সাকিনা নাযিল হতে থাকবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তার দরবারের ফেরেশতাদের নিকট তাদের আলোচনা করবে”। [মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ: তিলাওয়াতে কুরআন ও যিকিরের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ২৭০০।] এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস যাতে বিভিন্ন ধরনের ইলম, মূলনীতি ও ইসলামী শিষ্টাচারের আলোচনা করা হয়েছে। মুসলিমদের প্রয়োজনসমূহ পূরণ করা ও তাদের বিভিন্ন উপকার যেমন, শিক্ষা দেয়া, অর্থের যোগান দেয়া, কোন ভালো কাজের প্রতি পথ দেখানো বা উপদেশ দেয়ার বিভিন্ন ফযিলত এখানে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়াও মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন করা, অভাবীদের সুযোগ দেয়া, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার ফযিলত এ হাদিসে আলোচনা করা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়তের জ্ঞান লাভ করা জরুরি। হাদিসে মসজিদের কুরআন শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে একত্র হওয়ার ফযিলত আলোচনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে যদি কুরআন শেখার উদ্দেশ্যে কোন মাদ্রাসায় বা ঘরে একত্র হয়, তাহলেও এ ফযিলত লাভ করা যাবে। দ্বিতীয় হাদিসটি এ কথার প্রমাণ। কারণ, তাতে কোন স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়নি বরং ব্যাপক রাখা হয়েছে। আর প্রথম হাদিসে খাস করাটা আকস্মিক। হাদিসে এ কথাটি স্পষ্ট করা হয়, যার আমল দুর্বল সে কখনো যারা আমলে সবল, তাদের মানে পৌঁছতে পারবে না। তাদের উচিত তার যেন তাদের বাপ-দাদার বংশ মর্যাদার উপর ভরসা না করে [দেখুন: সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা। ২৪/১৭।]। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
خرج معاوية رضى الله عنه على حلقة في المسجد فقال : ما أجلسكم؟ قالوا : جلسنا نذكر الله، قال : آلله ما أجلسكم إلا ذاك؟ قالوا : والله ما أجلسنا إلا ذاك، قال : أما إني لم أسْتَحْلِفْكُم تُهمةً لكم، وما كان أحد بمنزلتي من رسول الله صلى الله عليه و سلم أقل عنه حديثاً مني، وإن رسول الله صلى الله عليه و سلم خرج على حلقةٍ من أصحابه فقال : «ما أجلسكم؟» قالوا : جلسنا نذكر الله ونحمده على ما هدانا للإسلام ومنَّ به علينا، قال : «آلله ما أجلسكم إلا ذاك ؟» قالوا : والله ما أجلسنا إلا ذاك، قال :. « أما إني لم أستحلفكم تهمة لكم ولكنه أتاني جبريل فأخبرني أن الله تعالى يباهي بكم الملائكة »
অর্থ, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে একটি হালাকাতে উপস্থিত হয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের এখানে কে বসিয়েছে, তারা বলল, আমরা আল্লাহর জিকির করার জন্য বসছি। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা শুধু এ জন্যই বসছ? তারা বলল, আল্লাহর কসম আমরা শুধু এ জন্যই বসছি। তিনি বললেন, আমি তোমাদের নিকট কসম তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি বলে চাইনি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণনাকারী আমার থেকে এত কম আর কেউ নাই। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথীদের একটি হালকায় বের হয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের কোন জিনিস এখানে বসিয়েছে? উত্তরে তারা বলল, আমরা এখানে বসছি, আল্লাহর জিকির করার জন্য এবং আল্লাহ আমাদের ইসলামের প্রতি পথ দেখানো ও আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করছে তার উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা শুধু এ জন্যই এখানে বসছ? তারা বলল, আল্লাহর কসম আমরা শুধু এ জন্যই এখানে বসছি। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি বলে তোমাদের নিকট কসম চাইনি। তবে আমার নিকট জিবরীল আ. এসেছিলেন। তিনি আমাকে সংবাদ দেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের মধ্যে গর্ব করেন। [মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ: তিলাওয়াতে কুরআন ও যিকিরের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ২৭০১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إن لله ملائكة يطوفون في الطرق يلتمسون أهل الذكر، فإذا وجدوا قوماً يذكرون الله تنادوا : هلمّوا إلى حاجتكم، قال : فيحفونهم بأجنحتهم إلى السماء الدنيا، قال : فيسألهم ربهم تعالى وهو أعلم بهم، ما يقول عبادي؟ قال : تقول : يسبحونك، ويكبرونك، ويحمدونك، ويمجدونك، قال : فيقول : هل رأوني؟ قال فيقولون : لا، والله ما رأوك، قال : فيقول : كيف لو رأوني؟ قال : يقولون : لو رأوك كانوا أشدّ لك عبادة، وأشد لك تمجيداً، وأكثر لك تسبيحاً، قال : يقول : فما يسألوني؟ قال : يسألونك الجنة، قال : يقول : وهل رأوها؟ قال : يقولون : لا، والله يا رب ما رأوها، قال : فيقول : فكيف لو أنهم رأوها؟ قال : يقولون : لو أنهم رأوها كانوا أشد عليها حرصاً وأشد لها طلباً، وأعظم فيها رغبة، قال : فممَ يتعوذون؟ قال : يقولون : من النار، قال : يقول : وهل رأوها؟ قال يقولون : لا، والله يا رب ما رأوها، قال : يقول : فكيف لو رأوها؟ قال : يقولون : لو رأوها كانوا أشدّ منها فراراً، وأشد لها مخافة، قال : فيقول : فأشهدكم أني قد غفرت لهم، قال : يقول ملك من الملائكة : فيهم فلان ليس منهم إنما جاء لحاجة، قال : هم الجلساء لا يشقى بهم جليسهم ))( [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, দু’আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর যিকিরের ফযিলত, হাদীস ৬৪০৮; মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যিকিরের মজলিসের ফযিলত। হাদিস নং ২৬৮৯।]). وفي لفظ مسلم : (( إن لله تبارك وتعالى ملائكة سيارة فُضُلاً ( [সাইয়ারাহ অর্থ যারা জমিনে ঘুরতে থাকে। আর এখানে (( فضلاً )) অর্থ, অতিরিক্ত ফেরেশতা যারা শুধু ঘুরে তাদের কোন কাজ নাই। তাদের কাজ হল, যিকিরের হালকাসমূহ খোঁজা। সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৮/১৭।]) يبتغون مجالس الذكر، فإذا وجدوا مجلساً فيه ذكر قعدوا معهم، وحفَّ بعضهم بعضاً بأجنحتهم حتى يملؤوا ما بينهم وبين السماء الدنيا، فإذا تفرَّقوا عرجوا وصعدوا إلى السماء، قال : فيسألهم الله تعالى وهو أعلم بهم، من أين جئتم؟ فيقولون : جئنا من عند عبادٍ لك في الأرض : يسبحونك، ويكبرونك، ويهللونك، ويحمدونك، ويسألونك ... » الحديث . وفيه : « قد غفرت لهم، وأعطيتهم ما سألوا، وأجرتهم مما استجاروا، قال : يقولون : رب فيهم فلان عبدٌ خطّاء إنما مرّ فجلس معهم، قال : فيقول : وله غفرت، هم القوم لا يشقى بهم جليسُهم »
অর্থ, আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছে, তারা যমিনে ঘুরে ঘুরে যিকিরকারীদের অনুসন্ধান করেন। যখন তারা কোন সম্প্রদায়কে দেখতে পায় তারা আল্লাহর যিকর করছে। তখন তারা তাদের নিজেদের ডেকে বলে, আস, তোমরা তোমাদের যা দরকার তা পেয়েছ। তখন তারা তাদের ডানা দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত বেষ্টনী দেয়। তখন আল্লাহ তাদের জিজ্ঞাসা করে যদিও তিনি তাদের বিষয়ে সর্বজ্ঞ। আমার বান্দারা কি বলে? তারা উত্তর দেয়, তারা আপনার তাসবীহ বর্ণনা করে, আপনার বড়ত্ব বর্ণনা করে, আপনার মর্যাদা বর্ণনা এবং আপনার প্রশংসা করে। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবে, তারা কি আমাকে দেখেছে? তারা বলল, না আল্লাহর কসম, তারা তোমাকে দেখেনি। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবে, তারা যদি আমাকে দেখত, তাহলে কি অবস্থা হত? সে বলল, তারা বলল, যদি তোমাকে দেখত, তাহলে তারা তোমার ইবাদাত আরও বেশি করত, তোমার বড়ত্ব আরও বেশি আলোচনা করত এবং তোমার তাসবীহ আরও বেশি আলোচনা করত। তিনি বললেন, আল্লাহ বলবে, তারা আমার নিকট কি চায়? তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়, তারা কি জান্নাত দেখছে? তারা বলবে না আল্লাহর কসম হে প্রভু! তারা জান্নাত দেখেনি। তখন আল্লাহ বলে, যদি তারা জান্নাত দেখত, তাহলে তারা কি করত? তিনি বলেন, তারা বলবে, যদি তারা দেখত, তাহলে তারা অধিক লালায়িত হত এবং আরও কঠিন ভাবে তালাশ করত এবং আরও বেশি আগ্রহ করত। তিনি বলল, তারপর তারা কীসের থেকে আশ্রয় চায়? তিনি বললেন, তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়। তিনি বলেন, তারপর আল্লাহ তাদের জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখছে? তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তিনি বলেন, তারা বলবে, না আল্লাহর কসম তারা জাহান্নাম দেখেনি। যদি দেখত তাহলে কি করত? তিনি বললেন, যদি তারা দেখত, তাহলে তারা আরও বেশি পলায়ন করত এবং আরও বেশি ভয় করত। তিনি বললেন, তখন আল্লাহ বলবে, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। বললেন, একজন ফেরেশতা বলবে, তাদের একলোক আছে, সে তাদের থেকে নয়। সে তার ব্যক্তিগত কাজে আসছে। আল্লাহ বলবেন, তারা এমন এক সম্প্রদায় তাদের সাথে যারা বসে তারাও বঞ্চিত হয় না। মুসলিম শরীফের শব্দ নিম্নরূপ: আল্লাহ তা‘আলার জন্য রয়েছে, চলমান অতিরিক্ত কতক ফেরেশতা তারা যিকিরের মজলিসসমূহ অনুসন্ধান করতে থাকে। যখন তারা কোন মজলিস পায় যেখানে যিকর হয়, তারা তাদের সাথে বসে পড়ে। তারা পরস্পর পরস্পরকে তাদের ডানা দ্বারা এমনভাবে বেষ্টন করে, যাতে তাদের মাঝে ও দুনিয়ার আকাশের মাঝে আর কোন ফাকা না থাকে। যখন যিকরের মজলিস শেষ হয়ে যায়, তারা উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং আকাশে আরোহণ করে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের জিজ্ঞাসা করে, তিনি তাদের সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। তোমরা কোথায় থেকে আসছ? তারা বলবে, আমরা যমিনে তোমার কতক বান্দার নিকট থেকে আসছি, যারা তোমার তাসবীহ পাঠ করে, তোমার বড়ত্ব বর্ণনা করে, তোমার তাহলীল পাঠ করে, তোমার প্রশংসা করে এবং তোমার নিকট চায়। হাদিসে আরও বলা হয়, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা আমার কাছে চাইল, আমি তাই দিলাম, আমি তাদের মুক্তি দিলাম যা হতে তারা মুক্তি চায়। তিনি বলেন, তারা বলল, হে আমার রব! তাদের মধ্যে অমুক একজন বান্দা আছে সে পথ ভোলা, পথ দিয়ে যাচ্ছিল তাদের সাথে বসে পড়ছে। বলল, আল্লাহ বলবে, আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম। তারা এমন সম্প্রদায় তাদের সাথে যে বসে সেও নৈরাশ হয় না। [মুসলিম, হাদিস নং ২৬৮৯। দেখুন হাফেয ইবনে হাজরের ফতহুল বারী, ২০৯/১১।]
আমি শাইখ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এটি একটি মহা ফযিলত। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমার কামনা তিনি যেন কবুল করেন। আর ইলমের মজলিস অধিক গুরুত্বপূর্ণ তাসবীহর মজলিস থেকে। [সহীহ বুখারি, ৬৪০৮ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] আবু ওয়াকেদ আল-লাইসী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
بينما هو جالس في المسجد والناس معه، فأقبل ثلاثة نفر، فأقبل اثنان إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم وذهب واحد، قال : فوقفا على رسول الله صلى الله عليه و سلم، فأما أحدهما فرأى فُرْجة في الحلقة فجلس فيها، وأما الآخر فجلس خلفهم، وأما الثالث فأدبر ذاهباً، فلما فرغ رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : « ألا أخبركم عن النفر الثلاثة : أما أحدهم فآوى إلى الله فآواه الله، وأما الآخر فاستحيا فاستحيا الله منه، وأما الآخر فأعرض فأعرض الله عنه »
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসা ছিল, আর লোকেরা তার সাথে আছে। তখন মসজিদে তিনজন লোকের আগমন ঘটল। তাদের দুইজন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে আসল আর একজন চলে গেল। তিনি বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অবস্থান করল। তাদের একজন মজলিসে একটু ফাঁকা দেখল এবং সেখানে তারা বসে পড়ল। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি তাদের পিছনে বসে পড়ল। আর তৃতীয় ব্যক্তি সে চলে গেল। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর হলেন, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের লোক তিনটি সম্পর্কে জানিয়ে দেব? তাদের একজন আল্লাহর দিকে জায়গা করে নিলো, আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিল। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি সে লজ্জা করল আল্লাহ তাকে লজ্জার বিনিময় দিল। আর তৃতীয় ব্যক্তি সে ফিরে গেল, আল্লাহ তা‘আলাও তার থেকে ফিরে গেল”। [বুখারি, সালাত অধ্যায় পরিচ্ছেদ: হালকা করা ও মসজিদে বসার বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৭৪। কিতাবুল ইলম, পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি মজলিসের শেষ প্রান্তে গিয়ে বসে এবং যে ব্যক্তি মজলিশের মধ্যে ফাকা দেখে সেখানে বসে পড়ে সে বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৬৬।] এ হাদিসটির মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। অপরাধীদের অপরাধ ও তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া অপরাধ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে বৈধ। এটিকে গীবত বলা যাবে না। এখানে ইলম ও যিকরের হালকাসমূহে বসা এবং আলেম ও যিকরকারীদের সাথে মসজিদে বসার ফযিলত প্রমাণিত। আর এখানে লজ্জাকারীর প্রশংসা করা হয়েছে [দেখুন: হাফেজ ইবনে হাজরের ফতহুল বারী: ১৫৭।]। আর মজলিস যেখানে শেষ হয় সেখানে বসার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। আমি ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, একজন আলেমের জন্য মসজিদে একাধিক হালাকা থাকা জরুরি; যাতে মানুষ তার থেকে উপকার লাভ করে। এখানে আরও প্রমাণিত হয়, একজন তালেব এলেমের জন্য মজলিসের মধ্যে ফাঁকা থাকলে তাতে বসা ও প্রবেশ করা বৈধ।
উত্তম হল, হালাকার মধ্যে ঢুকে পড়া এবং তাদের সাথে মিশে যাওয়া [সহীহ বুখারি ৬৬ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]। আমি তাকে আরও বলতে শুনেছি তিনি বলেন, ইলমী হালাকা সমূহের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং মুহাদ্দেসের কাছে থাকার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি ওয়াজের মজলিশ থেকে বের হয়ে যায়, সে ফিরিয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। [সহীহ বুখারি ৪৭৪ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] উকবা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خرج رسول الله صلى الله عليه و سلم، ونحن في الصّفّة ( [সুফ্ফা বলা একটি ঘর যা মসজিদে চিল। তাতে গরীব সাহাবীরা অবস্থান করত। আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]) فقال : «أيكم يحب أن يغدو ( [দেখুন: আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]) كل يوم إلى بُطْحَانَ أو العقيق ( [বুতহান ও আকিক দুটি উপত্যাকা। উভয় উপাত্যাকা ও মদীনার মাঝে প্রায় তিন মাইলের সমপরিমাণ দূরত্ব। সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৩৩৭/৬।]) فيأتي منه بناقتين كَوْمَاويْنِ ( [শব্দটি كوماء শব্দের তাছনীয়া বা দ্বি-বচন, উষ্টী যা বড় চোট বিশিষ্ট উট। দেখুন: আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে। এবং সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা।]) في غير إثمٍ ولا قطع رحمٍ؟» فقلنا : يا رسول الله نحب ذلك، قال : « أفلا يغدو أحدُكُم إلى المسجد فيعلَمُ أو يقرأُ آيتين من كتاب الله تعالى، خير له من ناقتينِ، وثلاثٌ خيرٌ له من ثلاثٍ، وأربعٌ خيرٌ له من أربعٍ، ومن أعدادهن من الإبل »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হল, আর আমরা ছুফফাতে। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে পছন্দ করে, প্রতিদিন সকাল বেলা বুতহান অথবা আকীক বাজারে গিয়ে সেখান থেকে দুটি মোটা তাজা উট কোন প্রকার অন্যায় ও আত্মীয়তা ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে? আমরা বললাম হে আল্লাহর আমরা একে পছন্দ করি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কেন সকাল বেলা মসজিদে যাওনা এবং আল্লাহর কিতাব হতে দুটি আয়াত তিলাওয়াত করবে অথবা শিখবে। তা তোমাদের জন্য দুটি উট হতে উত্তম। আর তিনটি আয়াত তিনটি উট হতে উত্তম। আর চারটি চারটি হতে উত্তম। এবং তাদের সংখ্যা পরিমাণ উট হতে। [মুসলিম, কিতাব সালাতুল মুসাফিরিন। পরিচ্ছেদ: কুরআন পড়া ও শেখার ফযিলত। হাদিস নং ৮০৩।] ইমাম কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিসের উদ্দেশ্য হল, কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া। আর তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে এমন বস্তু দ্বারা যা তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ। কারণ, তারা হল উটের অধিবাসী। অন্যথায় কুরআনের সামান্য একটু অংশ শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেয়ার সাওয়াব দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা হতে উত্তম [আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম ৪২৯/২ সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «ولقاب قوس أحدكم أو موضع قدمٍ خير من الدنيا وما فيها» “তোমাদের কারো তীরের গোলাকারটি অথবা তোমাদের পা রাখার জায়গাটি দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা হতে উত্তম”। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, কিতাবুর রিকাক, পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নাম বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৬৫৬৮। মুসলিম কিতাবুল ইমারাহ, আল্লাহর রাস্তায় সকাল-সন্ধা যাপন করার ফযিলত। হাদিস নং ১৮৮০।]
وصلى الله وسلم، وبارك على نبينا محمد، وعلى آله، وأصحابه، ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين .
“যে ব্যক্তি কোন মুমিন থেকে দুনিয়াবি একটি বিপদ দূর করে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত দিবসের বিপদসমূহ হতে একটি বিপদ দূর করবে। আর যে ব্যক্তি কোন অভাবীকে সচ্ছল করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া আখিরাতে তাকে সচ্ছলতা দান করবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভাইয়ে দোষ-ত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে। আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সহযোগিতা করে যখন সে তার অপর ভাইয়ে সহযোগিতা করে। যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি রাস্তা সহজ করে দেবেন। কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন আল্লাহর ঘরসমূহ হতে কোন ঘরে একত্র হয়, যাতে তারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে বা পরস্পর আলোচনা করে তাদের উপর সাকিনা নাযিল হতে থাকে, তাদেরকে রহমত ঢেকে রাখে এবং ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট যারা আছে, তাদের কাছে তাদের আলোচনা করেন। আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ তাকে এগিয়ে নেয় না”। [মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ: তিলাওয়াতে কুরআন ও যিকিরের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ২৬৯৯।] আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا يقعد قوم يذكرون الله تعالى إلا حفتهم الملائكة، وغشيتهم الرحمة، ونزلت عليهم السكينة، وذكرهم الله فيمن عنده »
“যখন কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা আল্লাহর যিকর করার জন্য কোন মজলিসে একত্র হয়, তখন ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখবে এবং রহমত তাদের ঢেকে ফেলবে, আর তাদের উপর সাকিনা নাযিল হতে থাকবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তার দরবারের ফেরেশতাদের নিকট তাদের আলোচনা করবে”। [মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ: তিলাওয়াতে কুরআন ও যিকিরের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ২৭০০।] এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস যাতে বিভিন্ন ধরনের ইলম, মূলনীতি ও ইসলামী শিষ্টাচারের আলোচনা করা হয়েছে। মুসলিমদের প্রয়োজনসমূহ পূরণ করা ও তাদের বিভিন্ন উপকার যেমন, শিক্ষা দেয়া, অর্থের যোগান দেয়া, কোন ভালো কাজের প্রতি পথ দেখানো বা উপদেশ দেয়ার বিভিন্ন ফযিলত এখানে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়াও মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন করা, অভাবীদের সুযোগ দেয়া, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার ফযিলত এ হাদিসে আলোচনা করা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরীয়তের জ্ঞান লাভ করা জরুরি। হাদিসে মসজিদের কুরআন শিক্ষা করার উদ্দেশ্যে একত্র হওয়ার ফযিলত আলোচনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে যদি কুরআন শেখার উদ্দেশ্যে কোন মাদ্রাসায় বা ঘরে একত্র হয়, তাহলেও এ ফযিলত লাভ করা যাবে। দ্বিতীয় হাদিসটি এ কথার প্রমাণ। কারণ, তাতে কোন স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়নি বরং ব্যাপক রাখা হয়েছে। আর প্রথম হাদিসে খাস করাটা আকস্মিক। হাদিসে এ কথাটি স্পষ্ট করা হয়, যার আমল দুর্বল সে কখনো যারা আমলে সবল, তাদের মানে পৌঁছতে পারবে না। তাদের উচিত তার যেন তাদের বাপ-দাদার বংশ মর্যাদার উপর ভরসা না করে [দেখুন: সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা। ২৪/১৭।]। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
خرج معاوية رضى الله عنه على حلقة في المسجد فقال : ما أجلسكم؟ قالوا : جلسنا نذكر الله، قال : آلله ما أجلسكم إلا ذاك؟ قالوا : والله ما أجلسنا إلا ذاك، قال : أما إني لم أسْتَحْلِفْكُم تُهمةً لكم، وما كان أحد بمنزلتي من رسول الله صلى الله عليه و سلم أقل عنه حديثاً مني، وإن رسول الله صلى الله عليه و سلم خرج على حلقةٍ من أصحابه فقال : «ما أجلسكم؟» قالوا : جلسنا نذكر الله ونحمده على ما هدانا للإسلام ومنَّ به علينا، قال : «آلله ما أجلسكم إلا ذاك ؟» قالوا : والله ما أجلسنا إلا ذاك، قال :. « أما إني لم أستحلفكم تهمة لكم ولكنه أتاني جبريل فأخبرني أن الله تعالى يباهي بكم الملائكة »
অর্থ, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে একটি হালাকাতে উপস্থিত হয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের এখানে কে বসিয়েছে, তারা বলল, আমরা আল্লাহর জিকির করার জন্য বসছি। তারপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা শুধু এ জন্যই বসছ? তারা বলল, আল্লাহর কসম আমরা শুধু এ জন্যই বসছি। তিনি বললেন, আমি তোমাদের নিকট কসম তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি বলে চাইনি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণনাকারী আমার থেকে এত কম আর কেউ নাই। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথীদের একটি হালকায় বের হয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের কোন জিনিস এখানে বসিয়েছে? উত্তরে তারা বলল, আমরা এখানে বসছি, আল্লাহর জিকির করার জন্য এবং আল্লাহ আমাদের ইসলামের প্রতি পথ দেখানো ও আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করছে তার উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা শুধু এ জন্যই এখানে বসছ? তারা বলল, আল্লাহর কসম আমরা শুধু এ জন্যই এখানে বসছি। তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে অবিশ্বাস করি বলে তোমাদের নিকট কসম চাইনি। তবে আমার নিকট জিবরীল আ. এসেছিলেন। তিনি আমাকে সংবাদ দেন যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের মধ্যে গর্ব করেন। [মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়। পরিচ্ছেদ: তিলাওয়াতে কুরআন ও যিকিরের জন্য একত্র হওয়ার ফযিলত বিষয়ে আলোচনা হাদিস নং ২৭০১।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إن لله ملائكة يطوفون في الطرق يلتمسون أهل الذكر، فإذا وجدوا قوماً يذكرون الله تنادوا : هلمّوا إلى حاجتكم، قال : فيحفونهم بأجنحتهم إلى السماء الدنيا، قال : فيسألهم ربهم تعالى وهو أعلم بهم، ما يقول عبادي؟ قال : تقول : يسبحونك، ويكبرونك، ويحمدونك، ويمجدونك، قال : فيقول : هل رأوني؟ قال فيقولون : لا، والله ما رأوك، قال : فيقول : كيف لو رأوني؟ قال : يقولون : لو رأوك كانوا أشدّ لك عبادة، وأشد لك تمجيداً، وأكثر لك تسبيحاً، قال : يقول : فما يسألوني؟ قال : يسألونك الجنة، قال : يقول : وهل رأوها؟ قال : يقولون : لا، والله يا رب ما رأوها، قال : فيقول : فكيف لو أنهم رأوها؟ قال : يقولون : لو أنهم رأوها كانوا أشد عليها حرصاً وأشد لها طلباً، وأعظم فيها رغبة، قال : فممَ يتعوذون؟ قال : يقولون : من النار، قال : يقول : وهل رأوها؟ قال يقولون : لا، والله يا رب ما رأوها، قال : يقول : فكيف لو رأوها؟ قال : يقولون : لو رأوها كانوا أشدّ منها فراراً، وأشد لها مخافة، قال : فيقول : فأشهدكم أني قد غفرت لهم، قال : يقول ملك من الملائكة : فيهم فلان ليس منهم إنما جاء لحاجة، قال : هم الجلساء لا يشقى بهم جليسهم ))( [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, দু’আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর যিকিরের ফযিলত, হাদীস ৬৪০৮; মুসলিম, যিকির ও দু’আ অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যিকিরের মজলিসের ফযিলত। হাদিস নং ২৬৮৯।]). وفي لفظ مسلم : (( إن لله تبارك وتعالى ملائكة سيارة فُضُلاً ( [সাইয়ারাহ অর্থ যারা জমিনে ঘুরতে থাকে। আর এখানে (( فضلاً )) অর্থ, অতিরিক্ত ফেরেশতা যারা শুধু ঘুরে তাদের কোন কাজ নাই। তাদের কাজ হল, যিকিরের হালকাসমূহ খোঁজা। সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৮/১৭।]) يبتغون مجالس الذكر، فإذا وجدوا مجلساً فيه ذكر قعدوا معهم، وحفَّ بعضهم بعضاً بأجنحتهم حتى يملؤوا ما بينهم وبين السماء الدنيا، فإذا تفرَّقوا عرجوا وصعدوا إلى السماء، قال : فيسألهم الله تعالى وهو أعلم بهم، من أين جئتم؟ فيقولون : جئنا من عند عبادٍ لك في الأرض : يسبحونك، ويكبرونك، ويهللونك، ويحمدونك، ويسألونك ... » الحديث . وفيه : « قد غفرت لهم، وأعطيتهم ما سألوا، وأجرتهم مما استجاروا، قال : يقولون : رب فيهم فلان عبدٌ خطّاء إنما مرّ فجلس معهم، قال : فيقول : وله غفرت، هم القوم لا يشقى بهم جليسُهم »
অর্থ, আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছে, তারা যমিনে ঘুরে ঘুরে যিকিরকারীদের অনুসন্ধান করেন। যখন তারা কোন সম্প্রদায়কে দেখতে পায় তারা আল্লাহর যিকর করছে। তখন তারা তাদের নিজেদের ডেকে বলে, আস, তোমরা তোমাদের যা দরকার তা পেয়েছ। তখন তারা তাদের ডানা দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত বেষ্টনী দেয়। তখন আল্লাহ তাদের জিজ্ঞাসা করে যদিও তিনি তাদের বিষয়ে সর্বজ্ঞ। আমার বান্দারা কি বলে? তারা উত্তর দেয়, তারা আপনার তাসবীহ বর্ণনা করে, আপনার বড়ত্ব বর্ণনা করে, আপনার মর্যাদা বর্ণনা এবং আপনার প্রশংসা করে। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবে, তারা কি আমাকে দেখেছে? তারা বলল, না আল্লাহর কসম, তারা তোমাকে দেখেনি। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ বলবে, তারা যদি আমাকে দেখত, তাহলে কি অবস্থা হত? সে বলল, তারা বলল, যদি তোমাকে দেখত, তাহলে তারা তোমার ইবাদাত আরও বেশি করত, তোমার বড়ত্ব আরও বেশি আলোচনা করত এবং তোমার তাসবীহ আরও বেশি আলোচনা করত। তিনি বললেন, আল্লাহ বলবে, তারা আমার নিকট কি চায়? তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়, তারা কি জান্নাত দেখছে? তারা বলবে না আল্লাহর কসম হে প্রভু! তারা জান্নাত দেখেনি। তখন আল্লাহ বলে, যদি তারা জান্নাত দেখত, তাহলে তারা কি করত? তিনি বলেন, তারা বলবে, যদি তারা দেখত, তাহলে তারা অধিক লালায়িত হত এবং আরও কঠিন ভাবে তালাশ করত এবং আরও বেশি আগ্রহ করত। তিনি বলল, তারপর তারা কীসের থেকে আশ্রয় চায়? তিনি বললেন, তারা জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চায়। তিনি বলেন, তারপর আল্লাহ তাদের জিজ্ঞাসা করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখছে? তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তিনি বলেন, তারা বলবে, না আল্লাহর কসম তারা জাহান্নাম দেখেনি। যদি দেখত তাহলে কি করত? তিনি বললেন, যদি তারা দেখত, তাহলে তারা আরও বেশি পলায়ন করত এবং আরও বেশি ভয় করত। তিনি বললেন, তখন আল্লাহ বলবে, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। বললেন, একজন ফেরেশতা বলবে, তাদের একলোক আছে, সে তাদের থেকে নয়। সে তার ব্যক্তিগত কাজে আসছে। আল্লাহ বলবেন, তারা এমন এক সম্প্রদায় তাদের সাথে যারা বসে তারাও বঞ্চিত হয় না। মুসলিম শরীফের শব্দ নিম্নরূপ: আল্লাহ তা‘আলার জন্য রয়েছে, চলমান অতিরিক্ত কতক ফেরেশতা তারা যিকিরের মজলিসসমূহ অনুসন্ধান করতে থাকে। যখন তারা কোন মজলিস পায় যেখানে যিকর হয়, তারা তাদের সাথে বসে পড়ে। তারা পরস্পর পরস্পরকে তাদের ডানা দ্বারা এমনভাবে বেষ্টন করে, যাতে তাদের মাঝে ও দুনিয়ার আকাশের মাঝে আর কোন ফাকা না থাকে। যখন যিকরের মজলিস শেষ হয়ে যায়, তারা উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং আকাশে আরোহণ করে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের জিজ্ঞাসা করে, তিনি তাদের সম্পর্কে সর্বজ্ঞ। তোমরা কোথায় থেকে আসছ? তারা বলবে, আমরা যমিনে তোমার কতক বান্দার নিকট থেকে আসছি, যারা তোমার তাসবীহ পাঠ করে, তোমার বড়ত্ব বর্ণনা করে, তোমার তাহলীল পাঠ করে, তোমার প্রশংসা করে এবং তোমার নিকট চায়। হাদিসে আরও বলা হয়, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা আমার কাছে চাইল, আমি তাই দিলাম, আমি তাদের মুক্তি দিলাম যা হতে তারা মুক্তি চায়। তিনি বলেন, তারা বলল, হে আমার রব! তাদের মধ্যে অমুক একজন বান্দা আছে সে পথ ভোলা, পথ দিয়ে যাচ্ছিল তাদের সাথে বসে পড়ছে। বলল, আল্লাহ বলবে, আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম। তারা এমন সম্প্রদায় তাদের সাথে যে বসে সেও নৈরাশ হয় না। [মুসলিম, হাদিস নং ২৬৮৯। দেখুন হাফেয ইবনে হাজরের ফতহুল বারী, ২০৯/১১।]
আমি শাইখ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এটি একটি মহা ফযিলত। আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমার কামনা তিনি যেন কবুল করেন। আর ইলমের মজলিস অধিক গুরুত্বপূর্ণ তাসবীহর মজলিস থেকে। [সহীহ বুখারি, ৬৪০৮ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] আবু ওয়াকেদ আল-লাইসী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
بينما هو جالس في المسجد والناس معه، فأقبل ثلاثة نفر، فأقبل اثنان إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم وذهب واحد، قال : فوقفا على رسول الله صلى الله عليه و سلم، فأما أحدهما فرأى فُرْجة في الحلقة فجلس فيها، وأما الآخر فجلس خلفهم، وأما الثالث فأدبر ذاهباً، فلما فرغ رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : « ألا أخبركم عن النفر الثلاثة : أما أحدهم فآوى إلى الله فآواه الله، وأما الآخر فاستحيا فاستحيا الله منه، وأما الآخر فأعرض فأعرض الله عنه »
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসা ছিল, আর লোকেরা তার সাথে আছে। তখন মসজিদে তিনজন লোকের আগমন ঘটল। তাদের দুইজন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে আসল আর একজন চলে গেল। তিনি বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অবস্থান করল। তাদের একজন মজলিসে একটু ফাঁকা দেখল এবং সেখানে তারা বসে পড়ল। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি তাদের পিছনে বসে পড়ল। আর তৃতীয় ব্যক্তি সে চলে গেল। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর হলেন, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের লোক তিনটি সম্পর্কে জানিয়ে দেব? তাদের একজন আল্লাহর দিকে জায়গা করে নিলো, আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিল। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি সে লজ্জা করল আল্লাহ তাকে লজ্জার বিনিময় দিল। আর তৃতীয় ব্যক্তি সে ফিরে গেল, আল্লাহ তা‘আলাও তার থেকে ফিরে গেল”। [বুখারি, সালাত অধ্যায় পরিচ্ছেদ: হালকা করা ও মসজিদে বসার বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৪৭৪। কিতাবুল ইলম, পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি মজলিসের শেষ প্রান্তে গিয়ে বসে এবং যে ব্যক্তি মজলিশের মধ্যে ফাকা দেখে সেখানে বসে পড়ে সে বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৬৬।] এ হাদিসটির মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। অপরাধীদের অপরাধ ও তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া অপরাধ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে বৈধ। এটিকে গীবত বলা যাবে না। এখানে ইলম ও যিকরের হালকাসমূহে বসা এবং আলেম ও যিকরকারীদের সাথে মসজিদে বসার ফযিলত প্রমাণিত। আর এখানে লজ্জাকারীর প্রশংসা করা হয়েছে [দেখুন: হাফেজ ইবনে হাজরের ফতহুল বারী: ১৫৭।]। আর মজলিস যেখানে শেষ হয় সেখানে বসার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। আমি ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, একজন আলেমের জন্য মসজিদে একাধিক হালাকা থাকা জরুরি; যাতে মানুষ তার থেকে উপকার লাভ করে। এখানে আরও প্রমাণিত হয়, একজন তালেব এলেমের জন্য মজলিসের মধ্যে ফাঁকা থাকলে তাতে বসা ও প্রবেশ করা বৈধ।
উত্তম হল, হালাকার মধ্যে ঢুকে পড়া এবং তাদের সাথে মিশে যাওয়া [সহীহ বুখারি ৬৬ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।]। আমি তাকে আরও বলতে শুনেছি তিনি বলেন, ইলমী হালাকা সমূহের প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং মুহাদ্দেসের কাছে থাকার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি ওয়াজের মজলিশ থেকে বের হয়ে যায়, সে ফিরিয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। [সহীহ বুখারি ৪৭৪ নং হাদিসের ব্যখ্যায় আমি তাকে বলতে শুনেছি।] উকবা বিন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خرج رسول الله صلى الله عليه و سلم، ونحن في الصّفّة ( [সুফ্ফা বলা একটি ঘর যা মসজিদে চিল। তাতে গরীব সাহাবীরা অবস্থান করত। আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]) فقال : «أيكم يحب أن يغدو ( [দেখুন: আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]) كل يوم إلى بُطْحَانَ أو العقيق ( [বুতহান ও আকিক দুটি উপত্যাকা। উভয় উপাত্যাকা ও মদীনার মাঝে প্রায় তিন মাইলের সমপরিমাণ দূরত্ব। সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৩৩৭/৬।]) فيأتي منه بناقتين كَوْمَاويْنِ ( [শব্দটি كوماء শব্দের তাছনীয়া বা দ্বি-বচন, উষ্টী যা বড় চোট বিশিষ্ট উট। দেখুন: আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে। এবং সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা।]) في غير إثمٍ ولا قطع رحمٍ؟» فقلنا : يا رسول الله نحب ذلك، قال : « أفلا يغدو أحدُكُم إلى المسجد فيعلَمُ أو يقرأُ آيتين من كتاب الله تعالى، خير له من ناقتينِ، وثلاثٌ خيرٌ له من ثلاثٍ، وأربعٌ خيرٌ له من أربعٍ، ومن أعدادهن من الإبل »
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হল, আর আমরা ছুফফাতে। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে পছন্দ করে, প্রতিদিন সকাল বেলা বুতহান অথবা আকীক বাজারে গিয়ে সেখান থেকে দুটি মোটা তাজা উট কোন প্রকার অন্যায় ও আত্মীয়তা ছিন্ন করা ছাড়া নিয়ে আসতে? আমরা বললাম হে আল্লাহর আমরা একে পছন্দ করি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কেন সকাল বেলা মসজিদে যাওনা এবং আল্লাহর কিতাব হতে দুটি আয়াত তিলাওয়াত করবে অথবা শিখবে। তা তোমাদের জন্য দুটি উট হতে উত্তম। আর তিনটি আয়াত তিনটি উট হতে উত্তম। আর চারটি চারটি হতে উত্তম। এবং তাদের সংখ্যা পরিমাণ উট হতে। [মুসলিম, কিতাব সালাতুল মুসাফিরিন। পরিচ্ছেদ: কুরআন পড়া ও শেখার ফযিলত। হাদিস নং ৮০৩।] ইমাম কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিসের উদ্দেশ্য হল, কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া। আর তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে এমন বস্তু দ্বারা যা তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ। কারণ, তারা হল উটের অধিবাসী। অন্যথায় কুরআনের সামান্য একটু অংশ শিক্ষা করা বা শিক্ষা দেয়ার সাওয়াব দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা হতে উত্তম [আল্লামা কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু এর আল-মুফহিম ৪২৯/২ সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «ولقاب قوس أحدكم أو موضع قدمٍ خير من الدنيا وما فيها» “তোমাদের কারো তীরের গোলাকারটি অথবা তোমাদের পা রাখার জায়গাটি দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে তা হতে উত্তম”। [বুখারি ও মুসলিম : বুখারি, কিতাবুর রিকাক, পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নাম বিষয়ে আলোচনা। হাদিস নং ৬৫৬৮। মুসলিম কিতাবুল ইমারাহ, আল্লাহর রাস্তায় সকাল-সন্ধা যাপন করার ফযিলত। হাদিস নং ১৮৮০।]
وصلى الله وسلم، وبارك على نبينا محمد، وعلى آله، وأصحابه، ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين .
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন