মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে মসজিদের ফযিলত, বিধি-বিধান ও আদাব
লেখকঃ ড. সাঈদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী
১০
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : মসজিদে গমনের ফযিলত
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/617/10
জামা‘আতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা, আল্লাহর মহান ইবাদাত। হাদিসে এর অনেক ফযিলত বর্ণিত আছে। যেমন-
এক- যারা মসজিদকে অধিক ভালোবাসে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়ায় অবস্থান করবে, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। প্রমাণ: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«سبعة يظلّهم الله تعالى في ظلّه يوم لا ظلَّ إلا ظلّه : الإمام العادل، وشاب نشأ في عباده الله، ورجل قلبه مُعلّق في المساجد، ورجلان تحابّا في الله اجتمعا عليه وتفرّقا عليه، ورجل دعته امرأة ذات منصب وجمال فقال : إني أخاف الله، ورجل تصدق بصدقة فأخفاها حتى لا تعلم شماله ما تنفق يمينه، ورجل ذكر الله خالياً ففاضت عيناه»
“সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন যেদিন তারা ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। এক- ন্যায় পরায়ণ বাদশা, দুই- ঐ যুবক, যে তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদাতে ক্ষয় করল, তিন- ঐ লোক যার অন্তর আল্লাহর ঘর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত, চার- দুই লোক যারা উভয়ে পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসতো এবং তারই ভিত্তিতে একত্র হত এবং তারই ভিত্তিতে পৃথক হত। পাঁচ- ঐ ব্যক্তি যাকে কোন রূপসী ও সম্ভ্রান্ত নারী তার সাথে অপকর্মের প্রতি ডাকলে, সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। ছয়-ঐ ব্যক্তি যে এত গোপনে দান করল, তার বাম হাত জানে না, ডান হাত কি দান করল। সাত- ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করল এবং তার চক্ষুদ্বয় আল্লাহর ভয়ে কাঁদল”। মুসলিম এর বর্ণিত শব্দাবলী - «ورجل مُعلّق بالمسجد إذا خرج منه حتى يعود إليه » . “ঐ লোক যে মসজিদ থেকে বের হলে তার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে যতক্ষণ না সে মসজিদে ফিরে না আসে”। [বুখারি ও মুসলিম, সহীহ বুখারি, আযান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: সালাতের অপেক্ষায় মসজিদে বসা বিষয়ে আলোচনা, হাদিস, ৬৬০; কিতাবুয যাকাত, ডান হাতে দান করার ফযিলত, হাদীস ১৪২৩; সহীহ মুসলিম, যাকাত অধ্যায়, পরিচ্ছেদ গোপনে সদাকা প্রদানের ফযিলত, হাদিস: ১০৩১।]
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু «ورجل قلبه معلّق في المساجد» এ কথাটির ব্যাখ্যায় বলেন, “অর্থাৎ, অন্তরে মসজিদের প্রতি কঠিন ভালোবাসা বিদ্যমান থাকা এবং মসজিদে জামাআতের সাথে সালাত আদায়ের পাবন্দী করা। তবে এ কথার অর্থ সারাক্ষণ মসজিদে বসে থাকা নয়। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা, হাদিস নং, ১২৬/৭।] হাফেয ইবনে হাজর রাহিমাহুল্লাহু «معلّق في المساجد» বাক্যটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেন, বুখারি ও মুসলিমে হাদিসটি এভাবেই বর্ণিত। বাক্যটির বাহ্যিক রূপ দ্বারা বুঝা যায়, শব্দটি আরবী ‘তালীক’ শব্দ থেকে গৃহীত। তিনি মানুষের অন্তরকে মসজিদে ঝুলানো কোন বস্তুর সাথে তুলনা করেন। যেমন- কিনদিল। এ কথা দ্বারা বুঝানো হল - দীর্ঘ সময় অন্তর মসজিদের সাথে থাকা, যদিও তার দেহ মসজিদের বাইরে থাকে। আল্লামা জাওযীর বর্ণনা এ কথার প্রমাণ, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «كأنما قلبه معلّق في المسجد » আর শব্দটি আরবী ‘আলাকা’ শব্দ হতেও নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, কঠিন মহব্বত-ভালোবাসা। ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহু এর বর্ণনা তার প্রমাণ, তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «معلّق بالمساجد» মসজিদসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। [ফতহুল বারী, ১৪৫।]
দুই- মসজিদে গমন করা দ্বারা মর্তবা বৃদ্ধি পায়, গুনাহসমূহ দূরীভূত হয় এবং প্রতি কদমে নেকী লেখা হয়। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
« وما من رجل يتطهر فيحسن الطهور ثم يعمد إلى مسجد من هذه المساجد إلا كتب الله له بكل خطوة يخطوها حسنة،ويرفعه بها درجة،ويحطّ عنه بها سيئة ...»
“যখন কোন ব্যক্তি সুন্দর করে পবিত্রতা অর্জন করে তারপর এ সব মসজিদসমূহ হতে কোন মসজিদে গমনের ইচ্ছা পোষণ করে, লোকটি যত কদম হাঁটবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি কদমে নেকী লিপিবদ্ধ করবে এবং তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করবে এবং তার গুনাহসমূহ দূর করবে”...। [মুসলিম, ৬৫৪।] আবু হরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত মারফু‘ হাদীসে আরো বলা হয়,
«.. وذلك أن أحدكم إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة، لم يخطُ خطوة إلا رُفِعَ له بها درجة، وحُطّ عنه بها خطيئة ...»
“যখন তোমাদের কেউ সুন্দরভাবে ওজু করে, তারপর সে মসজিদের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করতে বের হয়, তার প্রতিটি কদমে নেকী লেখা হয় এবং গুনাহ ক্ষমা করা হয়”। [বুখারি ও মুসলিম, বুখারি, হাদিস নং, ৬৪৭। মুসলিম হাদিস নং ৬৪৯।] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من تطهّر في بيته ثم مشى إلى بيت من بيوت الله، ليقضي فريضة من فرائض الله كانت خطواته : إحداهما تحطّ خطيئة، والأخرى ترفع درجة »
যে ব্যক্তি স্বীয় ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর সে আল্লাহর ঘরসমূহ হতে কোন ঘরের উদ্দেশে রওয়ানা করল, যাতে আল্লাহর ফরযসমূহ হতে কোন ফরযকে আদায় করে, তখন তার প্রতিটি কদমসমূহ একটির কারণে তার গুনাহসমূহ মাপ হবে এবং অপরটির কারণে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৬৬।]
ইমাম কুরতবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, “আল্লামা দাউদী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, যদি তার গুনাহ থাকে, তাহলে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। আর যদি গুনাহ না থাকে, তাহলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। আমি বললাম, এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, প্রতি কদমে যা লাভ করা হয়, তা একই। হয়ত মর্যাদা বৃদ্ধি, আর না হয় গুনাহসমূহের ক্ষমা। অপর একজন বলেন, না, বরং প্রতিটি কদমে তিনটি জিনিষ লাভ হয়, কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর এক হাদিসে বর্ণনা করে বলেন,
«كتب الله له بكل خطوة حسنة، ويرفعه بها درجة، ويحطّ عنه بها سيئة »
“আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রতিটি কদমে একটি করে নেকী, একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহই ভালো জানেন”। [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে।]
আমি আমার শাইখ আব্দুল আজীজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রাহিমাহুল্লাহুকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, “প্রতিটি কদমে মর্তবা বৃদ্ধি পাবে, প্রতিটি কদমে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা হয় এবং নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়। শেষের বর্ধিত অংশটি- ‘নেকী লেখা হয়’ কথাটি মুসলিম শরিফে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ হতে বর্ণিত। যখন একটি বর্ণনা বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়, যাতে বলা হয়, মর্তবা বৃদ্ধি করা হবে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে, তখন প্রথমতঃ এ বর্ণনাটি অনুযায়ী সে ফযিলত প্রাপ্ত হয়, তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরও ফযিলত দান করেন, অতিরিক্তটির মাধ্যমে। সুতরাং প্রতিটি কদমে তিনটি ফযিলত লাভ হয়, এক- মর্যাদা বৃদ্ধি, দুই-গুনাহ মাপ, তিন-নেকী লিপিবদ্ধ করা। [আমি সহীহ বুখারি হাদিস নং ২১১৯ এর তাকরীর করার মাঝে তার থেকে শুনেছি।]
তিন- মসজিদে সালাত আদায় করার জন্য ঘর থেকে বের হলে যেমন নেকী লেখা হয় অনুরূপভাবে যখন বাড়ি ফিরে তখনও তার জন্য নেকী লেখা হয়, যখন সে সাওয়াবের আশা করে। প্রমাণ, উবাই বিন কায়াব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ। মসজিদসমূহের দিকে অধিক গমনের ফযিলত। হাদিস নং ৬৬৩।] তিনি বলেন
كان رجل لا أعلم رجلاً أبعد من المسجد منه، لا تخطئه صلاة، قال : فقيل له أو قلت له : لو اشتريت حماراً تركبه في الظلماء، وفي الرمضاء؟ قال : ما يسرني أن منزلي إلى جنب المسجد، إني أريد أن يكتب لي ممشاي إلى المسجد ورجوعي إذا رجعت إلى أهلي، فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم : « قد جمع الله لك ذلك كله » وفي لفظ : « إن لك ما احتسبت »
“একজন লোক ছিল মসজিদ থেকে এত বেশি দূরে অবস্থান করতেন যে, আর কেউ তার চেয়েও দূরে অবস্থান করতেন বলে আমার জানা ছিল না। তার কোন সালাত মিস হত না। তাকে বলা হল বা আমি বললাম, যদি তুমি একটি গাধা ক্রয় করতে যা দ্বারা তুমি অন্ধকারে অথবা প্রচণ্ড গরমে সাওয়ার হয়ে মসজিদে আসা যাওয়া করতে পারতে? লোকটি বলল, আমার বাড়িটি মসজিদের পাশে হওয়াতে আমি বিন্দু পরিমাণও খুশি নয়। আমি চাই মসজিদের দিকে আমার হাঁটা এবং মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়াতে আমার জন্য যেন নেকী লেখা হয়। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য এগুলো সবই লিপিবদ্ধ করবে। অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত, তোমার জন্য তাই থাকবে যা তুমি আশা করবে”।
ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যেমনি ভাবে মসজিদে গমন করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে অনুরূপভাবে মসজিদ থেকে ফিরার পথেও সমপরিমাণ সাওয়াব পাওয়া যাবে। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ৫৫/৩।]
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
(( إن أعظم الناس أجراً في الصلاة أبعدهم إليها ممشى، فأبعدهم، والذي ينتظر الصلاة حتى يصليها مع الإمام أعظم أجراً من الذي يصليها ثم ينام ))
“নিশ্চয়ই সালাতে মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি বেশী সাওয়াব পাবে যে মসজিদ থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করছে, তারপর যে তার থেকে কম দূরে। আর যে সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে যাতে ইমামের সাথে সে সালাত আদায় করতে পারে সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী সাওয়াব পাবে যে সালাত পড়ে ঘুমিয়ে যায়।” [মুত্তাফাকুন আলাইহ : সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৬৫১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬২।]
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خلت البقاع حول المسجد، فأراد بنو سلمة أن ينتقلوا إلى قرب المسجد، فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم، فقال لهم : « إنه بلغني أنكم تريدون أن تنتقلوا قرب المسجد » قالوا : نعم، يا رسول الله، قد أردنا، فقال : « يا بني سلمة، ديارَكم تُكتب آثاركم، ديارَكم تُكتب آثاركم »
“মসজিদের পাশে কিছু জমি খালি ছিল, তা দেখে বনু সালমা মসজিদের নিকটে ঘর বানানোর ইচ্ছা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বিষয়টি পৌছলে, তিনি তাদের বলেন, হে বনু সালমা! আমার নিকট খবর পৌঁছেছে, তোমরা মসজিদের কাছাকাছি স্থানান্তর হওয়ার ইচ্ছা করছ? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এ রকম ইচ্ছা করছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, তোমরা তোমাদের ঘরে থাক, তোমাদের প্রতিটি কদমে তোমাদের জন্য নেকী লেখা হবে, তোমরা তোমাদের ঘরে থাক, তোমাদের প্রতিটি কদমে তোমাদের জন্য নেকী লেখা হবে। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুল আযান, হাদিস নং ৬৫৬; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, মসজিদসমূহের দিকে অধিক গমনের ফযিলত, হাদিস নং ৫৬৬।]
চার: মসজিদের দিক পায়ে হাঁটার দ্বারা গুনাহগুলো মুছে দেয়া হয়। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ألا أدلّكم على ما يمحو الله به الخطايا، ويرفع به الدرجات » ؟ قالوا : بلى يا رسول الله، قال : « إسباغ الوضوء على المكاره، وكثرة الخُطا إلى المساجد، وانتظار الصلاة بعد الصلاة، فذلكم الرباط، فذلكم الرباط »
“আমি কি তোমাদের এমন বস্তুর প্রতি পথ দেখাবো? যদ্বারা তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেয়া হবে এবং তোমাদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করা হবে। তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, কষ্ট সত্ত্বেও পরিপূর্ণ ওজু করা, মসজিদের দিক বেশি বেশি গমন করা, একটি সালাতের পর আরেকটি সালাতের অপেক্ষা করা। এটিই হল, আল্লাহর রাহে অবস্থান, এটিই হল, আল্লাহর রাহে অবস্থান”। [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫১, সালাতের ফযিলত অনুচ্ছেদে হাদিসটির তাখরিজ অতিবাহিত হয়েছে।]
গুনাহ মুছে দেয়া দ্বারা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়ার প্রতি ইশারা করা হল। অথবা এর অর্থ হল, ফেরেশতাদের কিতাব থেকে গুনাহসমূহকে মুছে দেয়া হল। আর এটি গুনাহগুলো ক্ষমা করার দলিল। মর্যাদা বৃদ্ধি করার অর্থ হল, জান্নাতের সম্মানিত স্থান। আর إسباغ الوضوء শব্দের অর্থ, ওজুকে পরিপূর্ণ করা। আর মাকারেহ অর্থ, কঠিন ঠাণ্ডা, দৈহিক কষ্ট ইত্যাদি। আর كثرة الخطا কখনো বাড়ি দূরে হওয়ার কারণে হয়ে থাকে অথবা বার বার মসজিদের যাতায়াতের কারণে হয়ে থাকে। [সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা; 143/3।]
পাঁচ- পরিপূর্ণ ওজু করার পর মসজিদের দিক রওয়ানা হওয়া দ্বারা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়। ওসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول : « من توضأ للصلاة فأسبغ الوضوء ثم مشى إلى الصلاة المكتوبة فصلاها مع الناس، أو مع الجماعة، أو في المسجد غفر الله له ذنوبه »
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সালাতের ওজু করে এবং ওজুকে পরিপূর্ণ করে, তারপর ফরয সালাত আদায় করার জন্য মসজিদে গমন করে এবং মানুষের সাথে বা জামা‘আতে বা মসজিদে সালাত আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন”। [সহীহ মুসলিম, কিতাবুত তাহারাত, পরিচ্ছেদ: ওজু ও সালাতের ফযিলত, হাদিস নং ২৩২।]
ছয়: জান্নাতে আল্লাহ তা‘আলা মেহমানদারি প্রস্তুত করেন তার জন্য যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত করে। যতবার সে সকালে মসজিদে গমন করবে অথবা যতবার সে বিকালে মসজিদ থেকে ফিরে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من غدا إلى المسجد أو راح أعدّ الله له في الجنة نُزُلاً كلما غدا أو راح »
“যে ব্যক্তি সকালে মসজিদে যায়, অথবা বিকালে মসজিদ থেকে ফিরে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যতবার সে যাতায়াত করে ততবার তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারি প্রস্তুত করে”। [বুখারি ও মুসলিম: সহীহ বুখারি, কিতাবুল আযান হাদিস নং ৬৬২; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ হাদিন নং ৬৬৯]
আর [ غدا ] শব্দের মূল অর্থ হল, সকালে বের হওয়া অর্থাৎ, প্রথম সময়ে আগমন করা। আর راح শব্দের অর্থ, বিকালে ফিরে যাওয়া। তারপর সাধারণত শব্দদ্বয় ব্যাপক অর্থে অর্থাৎ, যাতায়াত করার অর্থে ব্যবহার হয়। আর [ أعدّ ] অর্থ, তৈরি করা, আর [ النُّزُل ] শব্দের অর্থ, বাড়িতে মেহমান আসলে তার সম্মানে যা তৈরি করা হয় তাকে নুযূল বলে। আর এটি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা উভয় সময়ে হয়ে থাকে [আল-মুফহিম সহীহ মুসলিমের তালখীসের মুশকিলাত বিষয়ে, ২৯৪/২। সহীহ মুসলিমের উপর ইমাম নববীর ব্যাখ্যা ১৭৬/৫।]। এটি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ আল্লাহ যাকে চায়, তাকে দান করেন। আর যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যা মসজিদে যাতায়াত করে, তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারি তৈরি করা হয়। মসজিদে যাওয়ার কারণে এবং মসজিদ থেকে ফেরার কারণে।
সাত: যে ব্যক্তি জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করল, কিন্তু সে জামা‘আত পেল না, তার মসজিদে পৌঁছার পূর্বেই জামা‘আত শেষ হয়ে গেছে, তাহলে তার জন্য সে পরিমাণ সাওয়াব মিলবে, যে পরিমাণ সাওয়াব যে সালাতে উপস্থিত হলে পেত। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« من توضأ فأحسن الوضوء، ثم راح فوجد الناس قد صلوا أعطاه الله تعالى مثل أجر من صلاها وحضرها لا ينقص ذلك من أجرهم شيئاً »
“যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওজু করল, তারপর সে মসজিদে গমন করল এবং দেখতে পেল, লোকেরা সালাত আদায় করে ফেলছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সে পরিমাণ সাওয়াব দান করবে, যে পরিমাণ সাওয়াব যে ব্যক্তি সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে পাবে। তবে তাদের সাওয়াব থেকে কোন কিছুই কমানো হবে না”। [আবু দাউদ কিতাবুস সালাত হাদিস নং ৫৬৪ বিশুদ্ধ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ১১৩/২] আট- যে ব্যক্তি পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হল, তাহলে সে ঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত সালাতের মধ্যেই থাকবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إذا توضأ أحدكم في بيته ثم أتى المسجد كان في صلاة حتى يرجع، فلا يقل : هكذا» وشبك بين أصابعه .
“যখন কোন ব্যক্তি তার নিজ গৃহে ওজু করে, তারপর সে মসজিদে গমন করে, ঘরে ফেরার আগপর্যন্ত সে মসজিদে থাকবে। সে যেন এভাবে না বলে”। আর তিনি আঙ্গুলগুলো একটিকে অপরটির মধ্যে প্রবেশ করান”। [ইবনু খুজাইমা, ২২৯/১, হাকেম ২০৬/১, সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১১৮/১।]
নয়: মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে পবিত্র অবস্থায় যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে বের হয়, তার সাওয়াব একজন মুহরিম হাজীর সাওয়াবের সমান। আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من خرج من بيته متطهراً إلى صلاة مكتوبة فأجره كأجر الحاجّ المحرم»
“যে ব্যক্তি তার ঘর থেকে ফরয সালাতের উদ্দেশ্যে পবিত্রতা অর্জন করে বের হয়, তার সাওয়াব একজন মুহরিম হাজীর সাওয়াবের সমান”। [আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত হাদিস নং ৫৫৮; সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন। ১১১/২; সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১২৭/১।]
দশ- মসজিদে জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশে বের হওয়া ব্যক্তির জিম্মাদারি আল্লাহর হাতে। আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ثلاثة كلهم ضامن على الله تعالى : رجل خرج غازياً في سبيل الله تعالى فهو ضامن على الله حتى يتوفاه فيدخله الجنة أو يردّه بما نال من أجر وغنيمة، ورجل راح إلى المسجد فهو ضامن على الله حتى يتوفاه فيدخله الجنة أو يردّه بما نال من أجر وغنيمة، ورجل دخل بيته بسلام فهو ضامن على الله تعالى»
”তিন ব্যক্তি এমন আছে, তাদের সবার জিম্মাদারি আল্লাহর উপর। এক- যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে জিহাদ করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছে, সে আল্লাহর জিম্মায়; যদি মারা যায় আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, অন্যথায় তাকে তার সাওয়াব ও গণিমতসহ- যা লাভ করেছে- তা নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফেরাবেন। আরেক ব্যক্তি যে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, সেও আল্লাহর জিম্মায়, যদি মারা যায় আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, অন্যথায় তাকে তার সাওয়াব ও গণিমত- যা লাভ করেছে- তা নিয়ে নিরাপদে বাড়িতে ফেরাবেন। আর যে ব্যক্তি তার নিজ গৃহে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে সেও আল্লাহর জিম্মাদারিতে থাকবে”। [সূনানে আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, পরিচ্ছেদ: সমূদ্রে জিহাদ করার ফযিলত হাদিস নং ২৪৯৪, সহীহ সূনানে আবু দাউদে আল্লামা আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেন, ৪৭৩/২।]
এটি আল্লাহর অপার অনুগ্রহ, আল্লাহ তা‘আলা এ শ্রেণীর প্রতিটি লোককে তার নিজের জিম্মাদারিতে নিয়ে নেন। ফলে তাদের তিনি সর্ব উত্তম বিনিময় দান করেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী - «ورجل دخل بيته بسلام » টির দুটি অর্থ হতে পারে।
এক- যখন ঘরে প্রবেশ করবে সালাম দেবে। দুই- লোকটি তার ঘরে প্রবেশ করা দ্বারা নিরাপত্তা কামনা করে। অর্থাৎ, শান্তির অনুসন্ধানে সে তার ঘরকেই অবলম্বন করে, যাতে ফিতনা হতে নিরাপদে থাকতে পারে। তখন হাদিসটি দ্বারা নির্জনতা ও একাকীত্বের প্রতি উৎসাহ এবং মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। আর এটি তখন বিবেচ্য যখন সমাজে ফিতনা দেখা দেয় এবং একজন মুসলিম তার দ্বীনের হেফাজতের ব্যাপারে আশঙ্কা করে। আর যখন এ ধরনের কোন পরিস্থিতি না থাকে, তখন যে মুমিন মানুষের সাথে মিশে, তাদের নির্যাতনের উপর ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে, সে মুমিনকে আল্লাহ তাদের তুলনায় অধিক সাওয়াব দান করবে যে মানুষের সাথে মিশে না এবং তাদের নির্যাতন সহ্য করে না।
এগার- জামা‘আতে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমনকারীদের বিষয়ে ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা প্রতিযোগিতা করে। আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় নবীকে স্বপ্নে বলেন,
«.. يا محمد هل تدري فيمَ يختصم الملأ الأعلى؟ قلت : نعم، في الكفارات : المكث في المسجد بعد الصلاة، والمشي على الأقدام إلى الجماعات، وإسباغ الوضوء على المكاره، ومن فعل ذلك عاش بخير، ومات بخير، وكان من خطيئته كيوم ولدته أمه ...».
“হে মুহাম্মদ! তুমি কি জান ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা [অর্থাৎ, নিকট বর্তী ফেরেশতারা। ‘আল-মালাউ’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঐ সকল সম্মানিত ফেরেশতা যারা আল্লাহর মাহত্ম্য ও মর্যাদা দিয়ে তাদের নিজেদের অন্তর ও মাজলিসকে ভরপুর রাখে। আর তাদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অনেক উর্ধে হওয়ার কারণে তাদের নাম রাখা হয়েছে, ‘আল-আ’লা’ বলে। দেখুন: আল্লামা মুবারক পুরির তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৯।] কি নিয়ে বিতর্ক করে? [অর্থাৎ, তারা তর্ক করে, আর তাদের তর্ক করার অর্থ হল, এ সব আমলসমূহকে প্রমাণ করা ও আসমানে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের প্রতিযোগিতা করা। অথবা আমলসমূহের ফযিলত ও সম্মান সম্পর্কে তাদের কথা বলাবলি করা। অথবা মানুষের জন্য এ সব ফযিলত খাস হওয়া এবং তাদের এসব আমলের কারণে, ফেরেশতাদের চেয়েও অধিক মর্যাদা লাভ করার কারণে মানুষ এ সব আমলের সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে আগ্রহী হওয়া। আর এটিকে ঝগড়া বলার কারণ- প্রশ্ন উত্তরের আলোকে বিষয় আবির্ভূত হয়েছে তাই। আর এটি মুনাজারা ও মুখাসামার সাথে সাদৃশ্য রাখে। আল্লামা ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহু বলেন, এখানে ইখতেসাম দ্বারা সে এখতেসাম উদ্দেশ্য নয় যেটি কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও জানার জন্য দেখুন; জামে তিরমিযির ব্যাখ্যা সম্বলিত কিতাব তুহফাতুল আহওয়াযি পৃ: ১০৯,১৩৯/৯।] আমি বললাম হ্যাঁ, গুনাহ মাপের বিষয়সমূহ নিয়ে তারা প্রতিযোগিতা করে। অর্থাৎ, সালাত আদায়ের পর মসজিদে অবস্থান করা, জামা‘আতে সালাত আদায়ের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া, কষ্ট সত্ত্বেও ওজুকে পরিপূর্ণ করা। যে ব্যক্তি এ কাজগুলো করবে, সে ভালোভাবে জীবন যাপন করবে এবং ভালোভাবে মৃত্যু বরণ করবে। আর সে তার গুনাহ হতে এমন পবিত্র হবে যেন তার মা তাকে আজই প্রসব করছে”। [সূনান আত-তিরমিযি, কিতাবুত তাফসীর, হাদিস নং ৩২৩৩ ও ৩২৩৪, ইমাম তিরিমিযির নিকট মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস দ্বারা হাদিসটির শাহেদ বিদ্যমান, হাদিস নং ৩২৩৫। আর আল্লামা আলবানী হাদিস দুটিকে সহীহ সূনান আত-তিরমিযিতে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন। ৯৯-৯৮/৩।]
বার- মসজিদে জামাআতে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে গমন করা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের কারণ। কারণ, উল্লেখিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন « فمن فعل ذلك عاش بخير ومات بخير » যে ব্যক্তি এ সব করবে, সে ভালোভাবে জীবন যাপন করবে এবং ভালোভাবে মারা যাবে। [দেখুন: তুহফাতুল আহওয়াযি জামে তিরমিযির ব্যাখ্যা, ১০৪/৯] এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭।]
তের- মসজিদসমূহের দিক যাতায়াত করা গুনাহসমূহ মাফের কারণ। কেননা উল্লেখিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « وكان من خطيئته كيوم ولدته أمه » “সে সেদিনের মত নিষ্পাপ হবে যেদিন তার মাতা তাকে প্রসব করেন”।
চৌদ্দ- আল্লাহ তা‘আলা মসজিদ যিয়ারতকারীদের সম্মান করেন। প্রমাণ- সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من توضأ في بيته ثم أتى المسجد فهو زائر لله، وحقٌّ على المزُور أن يكرم الزائر »
“যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহে ওজু করে তারপর মসজিদে আগমন করে, সে অবশ্যই একজন আল্লাহর যিয়ারতকারী। যার যিয়ারত করা হল তার উপর ওয়াজিব হল, যিয়ারতকারীর সম্মান করা”। [তাবরানী মুজামে কবীরে ২৫৩/৬, ৬১৩৯, ৬১৪৫ আল্লামা হাইসামী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, তাবরানী হাদিসটি আল-কাবীরে বর্ণনা করেন, তার একটি সনদ বিশুদ্ধ এবং বর্ণনাকারীগণ বিশুদ্ধ বর্ণনাকারী; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৩১৯/১৩, হাদিস নং ১৬৪৬৫।]
আমর বিন মাইমুন রাহিমাহুল্লাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أدركت أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم وهم يقولون : (( المساجد بيوت الله وإنه حقّ على الله أن يُكرم من زاره )) ، وفي لفظ عن عمرو بن ميمون عن عمر رضى الله عنه قال : (( المساجد بيوت الله في الأرض وحقّ على المزور أن يكرم زائره )).
“আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের বলতে দেখেছি, তারা বলেন, মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর, আল্লাহর উপর ওয়াজিব হল, যারা তার ঘরকে যিয়ারত করতে আসে তাদের সম্মান করা। [আল্লামা ইবনে জারির রাহিমাহুল্লাহু স্বীয় সনদে জামেয়ুল বায়ানে উল্লেখ করেন, ১৮৯/১৯।] অপর এক শব্দে আমর বিন মাইমুন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জমিনে মসজিদসমূহ আল্লাহর ঘর। যারা যিয়ারত করতে আসবে তাদের সম্মান করা যাকে যিয়ারত করবে তার উপর ওয়াজিব”। [মুসান্নাফে ইবনু আবি শাইবা ৩১৮/১৩, হাদিস নং ১৬৪৬৩।]
পনের- আল্লাহ তা‘আলা যে বান্দা ওজু অবস্থায় মসজিদে গমন করে তার প্রতি খুশি হন। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا يتوضأ أحد فيُحسن وضوءه ويُسبغه ثم يأتي المسجد لا يريد إلا الصلاة فيه، إلا تبشبش الله إليه كما يتبشبش أهل الغائب بطلعته »
“যখন কোন বান্দা ভালোভাবে ওজু করে এবং ওজুকে পরিপূর্ণ করে, তারপর সে কেবল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি এমন খুশি হয়, যেমন একজন মানুষ হারানো লোককে খুঁজে পেলে খুশি হয়”। [ইবনু আবি খুজাইমা, কিতাবুল ইমামা সালাত অধ্যায়ে, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বান্দা ওজু করে মসজিদের দিক যাওয়াতে আল্লাহর খুশি হওয়া বিষয়ে আলোচনা, হাদিস ১৪৯১। এবং সহীহ আত-তারগীব ও আত-তারহীবে আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেন ১২৩/১। হাদিস নং ৩০১।] ইমাম ইবনে খুজাইমা এ হাদিসের উপর একটি পরিচ্ছেদ স্থাপন করেন। তিনি বলেন, “পরিচ্ছেদ: আল্লাহ তার স্বীয় বান্দার প্রতি খুশি হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা, যখন সে ওজু করে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করে”। [সহীহ ইবনে খুজাইমা, ৩৭৪/২।] আল্লাহর সমস্ত গুণাবলী সাব্যস্ত হয়ে থাকে তার শান অনুযায়ী।
ষোল- যে ব্যক্তি অন্ধকারের মধ্যে মসজিদে গমন করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নুরের সু-সংবাদ। বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« بشّر المشائين في الظلم إلى المساجد بالنور التّامّ يوم القيامة »
“অন্ধকারের মধ্যে মসজিদে গমনকারীদের তোমরা কিয়ামতের পরিপূর্ণ নূরের সু-সংবাদ দাও”। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৬১, তিরমিযি, হাদিস নং ২২৩, সালাতের ফযিলত অংশে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/617/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।