HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইসলামে নারী বনাম ইয়াহূদী-খৃষ্টান ধর্মে নারী

লেখকঃ ড. শরীফ আব্দুল আযীম

১২
স্ত্রীর অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব
ইসলাম, ইয়াহূদী ও খৃষ্টান তিনটি ধর্মই বিবাহ ও পরিবার গঠনকে গুরুত্ব দিয়েছে। স্বামী পরিবারের অভিভাবক, এতে সবাই একমত। তবে, মতভেদ রয়েছে স্বামীর ক্ষমতার গন্ডিতে। ইয়াহূদী ও খৃষ্টান ধর্ম পুরোপুরি ইসলামের বিপরীত। তারা স্বামীকে স্ত্রীর ওপর একচ্ছত্র মালিকানার অধিকার দিয়েছে। ইয়াহূদী ধর্মে স্ত্রী যেন স্বামীর কাছে দাসীর সমতুল্য গণ্য হয়। [Louis M. Epstein, The Jewish Marriage Contract (New York: Arno Press, 1973) p. 149.]

এ কারণে ব্যভিচারের বিধানে পুরুষ ও নারীর জন্য দু'রকম আইন রয়েছে। স্বামীকে অধিকার দেওয়া হয়েছে স্ত্রীর মান্নতের ওপর প্রভাব খাটানোর। এ বিধান নারীকে সম্পদ ও মালিকানাধীন সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ইয়াহূদী নারী শুধুমাত্র বিবাহের কারণে স্বামীর মালিকানায় চলে আসে এবং স্বামী তার স্ত্রীর সম্পদ ও সম্পত্তিতে প্রভাব খাটায়। ইয়াহূদী পন্ডিতেরা বলে থাকে যে, বিবাহের কারণে স্ত্রী ও তার ধন সম্পদ স্বামীর অধিকারে চলে আসে। [Swidler, op. cit., p. 142.]

এ ছাড়াও এ বিধানের কারণে বিবাহের পরে ধনী স্ত্রী সম্পদহীনা হয়ে পড়ে। ইয়াহূদী ধর্মশাস্ত্রে (তালমুদে) বলা হয়েছে “নারীর কোনো সম্পদের মালিক হওয়ার অধিকার নেই। তার মালিকানাধীন সমস্ত সম্পদ স্বামীর বলে গণ্য হবে। স্বামীর মালিকানাধীন সম্পদ তো আছেই এমনকি স্ত্রীর সম্পদও স্বামীর মালিকানায় চলে আসবে। স্ত্রী যা অর্জন করবে বা রাস্তায় কুড়িয়ে পাবে এবং বাড়ীর সমস্ত কিছু এমনকি রুটির টুকরাও স্বামীর অধিকারে। মহিলা কোনো লোককে ডেকে মেহমানদারী করলে তা স্বামীর মাল থেকে চুরি হিসেবে গণ্য হবে”। (তালমুদ san 71a, git 62a)

ইয়াহূদী মহিলারা নিজ সম্পদ দিয়ে প্রস্তাবদানকারীকে আকৃষ্ট করে। ইয়াহূদী পরিবারে পিতা তার সম্পদের কিছু অংশ তার মের জন্য রেখে দেয় যা যৌতুক হিসেবে স্বামীকে দিতে হয়। এ যৌতুকের কারণে ইয়াহূদী পিতার নিকট কন্যা সন্তানের জন্মটা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কন্যাকে ছোটকাল থেকে মানুষ করার দ্বারা তার দায়িত্ব আদায় হয় না; বরং নিজের সম্পদ থেকে কিছু অংশ তার বিবাহের জন্য রেখে দিতে হয়। ফলে ইয়াহূদী সমাজে কন্যা সন্তান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। [Epstein, op. cit., pp. 164-165.]

প্রাচীন ইয়াহূদী সমাজে কন্যা সন্তান জন্মের সময়ে পরিবারের সদস্যদের খুশি না হওয়ার কারণ এখান থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায়। (দেখুন: কন্যা সন্তান কি অপমান ডেকে আনে? অধ্যায়টি)

যৌতুক স্বামীর জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। স্বামী তার মালিক হলেও তা বিক্রি করার অধিকার তার নেই। এ সম্পদে স্ত্রীরও কোনো অধিকার নেই। বিবাহের পর স্ত্রীর ওপর কাজকর্ম করা বাধ্যতামূলক তবে, যা রোজগার করবে সবই স্বামীর মালিকানায় চলে যাবে। কেননা সে তার ব্যাপারে দায়িত্বশীল। দু’টি অবস্থা ছাড়া তার মালিকানাধীন সম্পদ সে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার নেই। ১. তালাক দিলে অথবা ২. স্বামীর মৃত্যু।

স্বামীর জীবদ্দশায় স্ত্রী মারা গেলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হবে। আর স্ত্রীর জীবদ্দশায় স্বামী মারা গেলে স্ত্রী শুধুমাত্র বিবাহের সময় যৌতুক হিসেবে দেওয়া সম্পদের দাবী করতে পারবে, অন্য কোনো সম্পদ চাওয়ার অধিকার তার থাকবে না। স্বামী তার নতুন স্ত্রীকে উপহার সামগ্রী দিবে, তবে তাও স্বামীর অধিকারে থাকবে। [Ibid., pp. 112-113. See also Priesand, op. cit., p. 15.]

খৃষ্টান ধর্মও অতি সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত ইয়াহূদীদের উক্ত নিয়মাবলী পালন করে আসছিল। কনস্টান্টিনোপল সাম্রাজ্যের পরবর্তী খৃষ্টান রোমান সাম্রাজ্যের নাগরিক ও ধর্মীয় বিধানাবলীতে স্বামীর জন্য বিবাহের সময় মীরাসের (উত্তরাধিকার) শর্তারোপ করা হত। পরিবারকে তাদের কন্যাদের জন্য উঁচুমানের যৌতুক নির্ধারণ করে রাখতে হত। ফলশ্রুতিতে পুরুষেরা তড়িঘড়ি করে বিবাহ করত অথচ পরিবারের মহিলারা দেরীতে বিবাহ করতে বাধ্য হত। [James A. Brundage, Law, Sex, and Christian Society in Medieval Europe (Chicago: University of Chicago Press, 1987) p. 88.]

খৃষ্টানদের গীর্জার নিয়মানুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে এবং ব্যভিচারের দোষে অভিযুক্ত না হলে স্ত্রী তার প্রদত্ত যৌতুকের মালামাল দাবী করতে পারে। আর ব্যভিচারের দোষে অভিযুক্ত হলে উক্ত সম্পদের দাবি জরিমানা হিসেবে ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবে। [Ibid., p. 480.]

নাগরিক ও গীর্জার ধর্মীয় বিধানানুযায়ী উনবিংশ শতাব্দীর শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকার নারীদের নিজের অধিকারভূক্ত সম্পত্তিতে কোনো অধিকার ছিল না। ১৬৩২ খৃষ্টাব্দে প্রস্তুতকৃত নারী অধিকার আইনে বলা হয়েছিল “স্বামীর মালিকানাধীন সমস্ত সম্পদের মালিক স্বামী নিজেই, আর স্ত্রীর মালিকানাধীন সম্পদের মালিকও তার স্বামী”। [R. Thompson, Women in Stuart England and America (London: Routledge & Kegan Paul, 1974) p. 162.]

স্ত্রী বিবাহের পর তার অধিকারভূক্ত সম্পদের মালিকানাই শুধু হারায় না বরং তার নিজের ব্যক্তিত্বও হারায়। স্বেচ্ছায় কোনো কাজ করার অধিকারটুকুও সে পায় না। তার যে কোনো ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বা কাজ বাতিল করার অধিকার দেওয়া হয়েছে স্বামীকে। এছাড়া যার সাথে নারী চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সেও অপরাধী এবং অপরাধে সহযোগিতাকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা নিজের নামে বা স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে বিচার চাইতে পারে না। [Mary Murray, The Law of the Father (London: Routledge, 1995) p. 67.]

আইনানুযায়ী বিবাহিত নারীদের সাথে শিশুদের মত ব্যবহার করতে হবে। সে স্বামীর মালিকানাধীন পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং নিজের মালিকানাধীন সম্পদ, ব্যক্তিত্ব ও বংশ পরিচয় সবকিছু হারিয়ে ফেলবে। [Gage, op. cit., p. 143.]

ইয়াহূদী ও খৃষ্টান ধর্ম নারীদেরকে নিকট অতীত পর্যন্ত যে সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল ইসলাম সে সকল অধিকার পরিপূর্ণভাবে প্রদান করেছে। মুসলিম নারীদের নিজ স্বামীকে কোনো কিছু যৌতুক হিসেবে দিতে হয় না এবং সে সমাজে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে ধর্তব্য হয় না। ইসলাম নারীকে সন্মানিত করেছে তাই তার কোনো প্রয়োজন হয় না নিজের অর্থ সম্পদ দেখিয়ে কোনো যুবককে (বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ায়) প্রলুব্ধ করার, বরং স্বামীর জন্য অবশ্য কর্তব্য স্ত্রীকে উপহার তথা মোহরানা পরিশোধ করা। এ মোহরানার সম্পদের পরিপূর্ণ মালিকানা স্ত্রীর নিজের; স্বামী, পরিবারের সদস্য বা অন্য কারো তাতে অধিকার নেই। কিছু কিছু মুসলিম সমাজে এ মোহরানার পরিমাণ হয়ে থাকে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) ডলারের সমপরিমান পর্যন্ত হয়ে থাকে। [For example, see Jeffrey Lang, Struggling to Surrender, (Beltsville, MD: Amana Publications, 1994) p. 167.]

তালাক হয়ে গেলেও তার সে সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হয় না। স্ত্রী স্বেচ্ছায় না দিলে তার মালিকানাধীন সম্পত্তিতে স্বামীর বিন্দুমাত্রও অধিকার নেই। [Elsayyed Sabiq, Fiqh al Sunnah (Cairo: Darul Fatah lile'lam Al-Arabi, 11th edition, 1994), vol. 2, pp. 218-229.]

আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন,

﴿وَءَاتُواْ ٱلنِّسَآءَ صَدُقَٰتِهِنَّ نِحۡلَةٗۚ فَإِن طِبۡنَ لَكُمۡ عَن شَيۡءٖ مِّنۡهُ نَفۡسٗا فَكُلُوهُ هَنِيٓ‍ٔٗا مَّرِيٓ‍ٔٗا ٤ ﴾ [ النساء : ٤ ]

“তোমরা খুশি মনে তোমাদের স্ত্রীদেরকে মোহরানা দিয়ে দাও। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে কোনো অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪]

স্ত্রী তার নিজস্ব সম্পদে ইচ্ছামত হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে। কেননা তার নিজের ও তার সন্তানদের জীবন পরিচালনা করার দায়িত্ব স্বামীর ওপর ন্যস্ত। [Abdel-Haleem Abu Shuqqa, Tahreer al Mar'aa fi Asr al Risala (Kuwait: Dar al Qalam, 1990) pp. 109-112.]

স্ত্রী যতই ধনী হোক না কেন পরিবারের কোনো খরচ পরিচালনা করা তার জন্য আবশ্যক নয়, তবে যদি সে করে তা ভিন্ন কথা। স্বামী মারা গেলে সে যেমন, তার উত্তরাধিকারী সম্পদে অংশীদার হবে তেমনি স্ত্রী মারা গেলেও স্বামী তার সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। ইসলামে বিবাহের পরেও স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনতা ও বংশগত ঐতিহ্য অবশিষ্ট থাকে। [Leila Badawi, "Islam", in Jean Holm and John Bowker, ed., Women in Religion (London: Pinter Publishers, 1994) p. 102.]

একবার এক আমেরিকান বিচারক বলেছিলেন “মুসলিম নারীরা সূর্যের মতোই স্বাধীন। দশবারও যদি তারা বিবাহ করে তবুও তারা তাদের স্বাধীনতা ও বংশ পরিচয় ধরে রাখতে পারে”। [Amir H. Siddiqi, Studies in Islamic History (Karachi: Jamiyatul Falah Publications, 3rd edition, 1967) p. 138.]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন