মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
এবার আমরা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে আলোচনা করব তা হলো বহুবিবাহ। বহুবিবাহ একটি পুরাতন রীতি যা বহু সম্প্রদায়েই পাওয়া যেত। বাইবেলেও বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয় নি। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে (OldTestament) ও ইয়াহূদী পণ্ডিতদের লেখনীতে সর্বদা বহুবিবাহের বৈধতার কথা লক্ষ করা যায়। বলা হয় যে, নবী সুলায়মান আলাইহিস সালাম এর নিকট ৭০০ স্ত্রী ও ৩০০ দাসী ছিল। (১, কিংস: ১১/৩) আর দাউদ আলাইহিস সালাম এরও বেশ কিছু স্ত্রী ও দাসী ছিল। (২, সামুয়েল: ৫/১৩)
পুরাতন নিয়মে (Old Testament) পিতার উত্তরাধিকারী সম্পদে পুত্র এবং একাধিক স্ত্রীদের অংশ নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। (ডিউটারনমী: ২২/৭)
তবে শুধুমাত্র স্ত্রীর বোনকে বিবাহ করা হারাম করা হয়েছে।(লেভিটিকাস: ১৮/১৮) ইয়াহূদী ধর্মগ্রন্থ তালমুদে বলা হয়েছে: “স্ত্রীদের সংখ্যা যেন কোনো ক্রমেই চারের বেশি না হয়”। [Ibid., p. 49.]
ইউরোপের ইয়াহূদীরা ষষ্ঠদশ শতাব্দী পর্যন্ত বহুবিবাহের প্রথা চালু রেখেছিল। আর প্রাচ্যের ইয়াহূদীরা ইসরাইলে (যেখানে বিহুবিবাহ নিষিদ্ধ) আসার আগ পর্যন্ত এটা অব্যাহত রেখেছিল। তবে তাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী বহুবিবাহ এখনও বৈধ। [Swidler, op. cit., pp. 144-148.]
বাইবেলের নতুন নিয়মে (New Testament) এ ব্যাপারে কি বলা হয়েছে? আসুন দেখে নেওয়া যাক। ‘ইউহান্না হিলমান’ তার কিতাবের “বহুবিবাহ নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা” শিরোনামে লিখেছেন-“বহুবিবাহ সম্বন্ধে নতুন নিয়মে (New Testament) কোনো নির্দেশও দেওয়া হয় নি আবার নিষিদ্ধও করা হয় নি”। [Hazleton, op. cit., pp 44-45.]
তৎকালীন ইয়াহূদী সমাজে বহুবিবাহের ব্যাপক প্রচলন থাকা সত্বেও ঈসা আলাইহিস সালাম বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন নি। “ইউহান্না হিলমান” আসল ব্যাপারটা প্রকাশ করে দিয়ে বলেছেন: রোমের গীর্জা থেকেই বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইউনানী-রোমানীয় কৃষ্টি-কালচারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য। এ কৃষ্টি-কালচার একজন মাত্র স্ত্রী রাখার বৈধতা দেয় এবং ব্যভিচারকে স্বীকৃতি দেয়। তিনি তার কথার স্বপক্ষে পণ্ডিত এজেস্টাইনের কথা তুলে ধরেন। ‘বর্তমানে আমাদের উচিৎ রোমানীয় সভ্যতাকে অনুসরণ করা সুতরাং দ্বিতীয় বিবাহকে আর বৈধতা দেওয়া হবে না’। [Eugene Hillman, Polygamy Reconsidered: African Plural Marriage and the Christian Churches (New York: Orbis Books, 1975) p. 140.]
আফ্রিকার গীর্জাগুলোর পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয় যে, ইউরোপীয় খৃষ্টানরা বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করেছে রোমানীয় সভ্যতার সাথে তাল মেলানোর জন্য ধর্মের কোনো কারণে নয়।
আল-কুরআনেও বহুবিবাহের স্বীকৃতি দেয়, তবে তা শর্ত সাপেক্ষে।
“যদি তোমরা এতিমদের সাথে ন্যায় বিচার করতে পারবে না বলে আশংকা কর তাহলে,মেয়েদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা দুই, তিন বা চারটি পর্যন্ত বিবাহ করে নাও। আর যদি আশংকা কর যে,তাদের সাথে ন্যায়সংগত আচরণ করতে পারবে না তবে, একটিই বা তোমাদের অধিকার ভূক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা রয়েছে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩]
কুরআন বাইবেলের বিপরীত। কুরআন বহুবিবাহের সীমা নির্ধারন করে দিয়েছে চারটি পর্যন্ত ন্যায়বিচারের শর্তে। কুরআন কোথাও মুসলিমদেরকে বহুবিবাহ করতে উৎসাহ দেয় নি; বরং অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু, কেন? কেন বহুবিবাহের অনুমতি দিয়েছে? উত্তর ছোট্ট। তাহল: কিছু কিছু সময় ও স্থানে এগুলো সামাজিক কারণেই জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। আগের আয়াতেও বলা হয়েছে ইয়াতীম ও বিধবাদের কারণে বহুবিবাহকে বৈধ করা হয়েছে। আর ইসলাম সর্বযুগের সর্বকালের সর্বস্থানের জন্য অত্যাধুনিক।
অধিকাংশ সমাজে নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি থাকে। আমেরিকাতে নারীর সংখ্যা রয়েছে পুরুষের চেয়ে কমপক্ষে আশি লক্ষ বেশি। গিনিয়াতে প্রতি ১০০ পুরুষের জন্য রয়েছে ১২২ জন মহিলা। তানজানিয়ায় প্রতি ১০০ জন মহিলার জন্য রয়েছে ৯৫.১০ জন পুরুষ। [Ibid., p. 17.]
এ সমস্যা সমাধানে সমাজের কি করা উচিৎ? এর অনেকগুলো সমাধান আছে। কেউ কেউ বলে: তারা অবিবাহিত থেকে যাবে। অন্যরা বলেন, জীবন্ত কবর দিতে হবে। (বর্তমান সমাজেও কিছু কিছু সমাজে এর প্রচলন লক্ষ করা যায়।) কোনো কোনো সমাজ যিনা-ব্যভিচারকে বৈধতা দেয় ইত্যাদি।
তবে আফ্রিকার অধিকাংশ সমাজে বহুবিবাহের বৈধতা রয়েছে। পশ্চিমারা অনেকেই মনে করেন যে, বহুবিবাহ নারীর জন্য অপমানকর। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোনো সমাজের মেয়েরা বহুবিবাহকে সমর্থন করে থাকেন, এতে পশ্চিমারা রীতিমত আশ্চর্য হয়। আফ্রিকার অধিকাংশ যুবতী নারী তার বিবাহের জন্য বিবাহিত পুরুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কেননা তারা বুঝতে পারেন যে, উক্ত স্বামী তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম। প্রচুর সংখ্যক আফ্রিকান মহিলা নিসঙ্গতা কাটাতে স্বামীদেরকে দ্বিতীয় বিবাহ করতে উৎসাহ প্রদান করে থাকেন। [Ibid., pp. 88-93.]
নাইজেরিয়ায় ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়স্ক ৬০০০ মহিলার মধ্যে প্রায় ৬০% তার স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহ করতে বাধা দেন না। আর ২৩% মহিলা এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন। কেনিয়ার ৭৬% মহিলা বহুবিবাহকে প্রত্যাখ্যান করেন না। কেনিয়ার গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেক ২৭ জন মহিলার মধ্যকার ২৫ জন মহিলা বহুবিবাহকে প্রাধান্য দেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, তারা মনে করে স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করলে বাড়ীতে তাদের ওপর কাজের চাপ কমে যাবে। [Ibid., pp. 92-97.]
আফ্রিকার অধিকাংশ সমাজেই বহুবিবাহ বৈধ রয়েছে। এমনকি ‘প্রটেস্টেন্ট গীর্জা’ও এটাকে বৈধতা দেয়। উচ্চপদস্থ এক ইংরেজ খৃষ্টানযাজক কেনিয়াতে বলেছেন: যদিও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার দ্বারা স্বামী স্ত্রীর মাঝে মহব্বত পয়দা হয় তবে, গীর্জা চিন্তা করে যে,অনেক সমাজে মহিলারা বহুবিবাহকে সাদরে গ্রহণ করছে এবং এ বহুবিবাহ প্রথা খৃষ্টান ধর্মবিরোধী নয়। [Philip L. Kilbride, Plural Marriage For Our Times (Westport, Conn.: Bergin & Garvey, 1994) pp. 108-109.]
“আফ্রিকায় বহুবিবাহ” প্রথার ওপর গবেষণা করে খৃষ্টান পাদ্রী “ডেভিড জেতারী” বলেছেন: তিনি তালাক ও পুনর্বিবাহের চেয়ে তালাকপ্রাপ্তা নারী ও শিশুদের দিকে লক্ষ্য করে বহুবিবাহকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। [The Weekly Review, Aug. 1, 1987.]
আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক মহিলাকে চিনি যারা দীর্ঘদিন থেকেই পশ্চিমা বিশ্বে অবস্থান করছেন। তারা বহুবিবাহ বিরোধী নন। তাদের মধ্যকার একজন যিনি আমেরিকায় বসবাস করতেন তিনি তার স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে সন্তান পালনে তাকে বেগ পেতে না হয়। পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা খুব বেশি দেখা যায় যুদ্ধের সময়। আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান সপ্রদায়ের লোকেরা এ সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগত। এ সম্প্রদায়ের মহিলারা অবৈধ সম্পর্কের চেয়ে বহুবিবাহকেই বেশি অগ্রধিকার দিত। অপরদিকে ইউরোপের উপনিবেশবাদীরা অন্য কোনো বিকল্প রাস্তা দেখিয়ে না দিয়েই “অসভ্য” আখ্যায়িত করে বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। [59. Kilbride, op. cit., p. 126.]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানীতে পুরুষের চেয়ে মহিলা ছিল ৭৩,০০,০০০ বেশি। তন্মধ্যে ৩৩ লক্ষ বিধবা। সেখানে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১০০ জন পুরুষ ছিল সমবয়সী ১৭৬ জন মহিলার বিপরীতে। [John D'Emilio and Estelle B. Freedman, Intimate Matters: A history of Sexuality in America (New York: Harper & Row Publishers, 1988) p. 87.]
সে সময় তাদের মধ্যকার অনেকেই পুরুষের প্রতি শুধু জীবনসঙ্গী হিসেবে নয়; বরং অভাবের তাড়নায় ভরনপোষণকারী হিসেবেও তাদের মুখাপেক্ষী ছিল। বিজয়ী সেনারা এ সমস্ত মহিলাদের থেকে সুবিধা ভোগ করত। প্রচুর সংখ্যক যুবতী ও বিধবা মহিলা দখলদার সেনাদের সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের অধিকাংশ সৈন্য তাদের সাথে অবৈধ দৈহিক মেলামেশা করে বিনিময়ে তাদেরকে সিগারেট, চকোলেট বা রুটি প্রদান করত। ছোট্ট বাচ্চারা এ উপহার গুলো পেয়ে খুশি হত। ১০ বছর বয়সী একজন শিশু সমবয়সী শিশুদের কাছে এ ধরণের উপহার দেখে আকাংখ্যা করত কোনো ইংরেজ যদি তার মাকে এ ধরণের কিছু দিত তাহলে তারা ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেত। [Ute Frevert, Women in German History: from Bourgeois Emancipation to Sexual Liberation (New York: Berg Publishers, 1988) pp. 263-264.]
আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে প্রশ্ন করি- নারীর জন্য কোনোটা কল্যাণকর? স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ যেটার প্রচলন রয়েছে রেড ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের মাঝে; নাকি সভ্যতার দাবিদার পশ্চিমা সেনাদের মতো ব্যভিচারে? অন্য কথায়, কোনো সিস্টেমটা নারীর জন্য সন্মানের আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত কুরআনের বিধান, নাকি রোমান সাম্রাজ্যের জারিকৃত বিধান?
১৯৪৮ সালে জার্মানীর মিউনিখে “পুরুষের চেয়ে নারী বেশি হয়ে যাওয়ার সমস্যা” নিয়ে কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। যোগদানকারীদের মাত্র কয়েকজন বহুবিবাহের পক্ষে মত দেওয়া ছাড়া তারা আর কোনো সমাধানে পৌছতে পারেনি। অন্যরা তাদের মতের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। পরে এটার ওপর গবেষণা করে তারা সবাই একমত হলো যে, এটা ছাড়া উদ্ভুত সমস্যার আর কোনো সমাধান নেই; এটাই একমাত্র সমাধান। পরে কনফারেন্স থেকে পরবর্তীতে বহুবিবাহকে সমর্থন করে মতামত প্রদান করা হয়। [Ibid., pp. 257-258.]
বর্তমানে বিশ্ব ব্যাপক ধ্বংসাত্বক অস্ত্রে ভরপুর। আজ হোক কাল হোক অচিরেই ইউরোপীয় খৃষ্টানরা বহুবিবাহকে তাদের সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে মেনে নেবে। এ বাস্তবতাকে বুঝতে পেরেছেন পণ্ডিত “হিলমান”। তিনি বলেন, ধ্বংসাত্বক অস্ত্র (পরমানু ও রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি) ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার ফলে পুরুষ ও নারী জাতির মধ্যে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হবে। ফলে, বহুবিবাহ প্রথা অবলম্বন করা জরুরি হয়ে পড়বে, অন্যথায় জাতি চরম সংকটে পড়ে যাবে। এ অবস্থায় ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ ও গীর্জা নতুন নতুন সিদ্ধান্ত ও কারণ দেখিয়ে “বিবাহ” সম্বন্ধে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করবে”। [Sabiq, op. cit., p. 191.]
বহুবিবাহ আজকাল সমাজের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে দেখা দিয়েছে। কুরআনে বহুবিবাহের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে আজকাল পশ্চিমা সমাজে আফ্রিকার তুলনায় বেশি পরিমাণে প্রচলিত রয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। তাদের মধ্যকার গড়ে প্রতি ২০ জনে একজন যুবক তার ২১তম বছর পুর্ণ হওয়ার আগেই মারা যায়। [Hillman, op. cit., p. 12.]
তাদের অনেকেই হত্যার শিকার হয় আর অন্যরা অকর্মন্য, কারারুদ্ধ বা মদ্যপ হয়ে থাকে। [Nathan Hare and Julie Hare, ed., Crisis in Black Sexual Politics (San Francisco: Black Think Tank, 1989) p. 25.]
এ ছাড়াও প্রতি চারজন মহিলার একজন ৪০ বছর বয়সেও অবিবাহিত থাকে। আর শেতাঙ্গদের মধ্যকার প্রতি দশজনে একজন অবিবাহিত থাকে। [Ibid., p. 26.]
অনেক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ২০ বছরের আগেই সন্তানের মা হয়ে যায় এবং তারা ভরনপোষণের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়। এর ফলে একজন বিবাহ করে অথচ তার স্ত্রী তা জানে না। [Kilbride, op. cit., p. 94.]
এ সমস্যা মোকাবেলা করতে আফ্রো-আমেরিকানদেরকে বহুবিবাহের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। [Ibid., p. 95.]
সে সমাজের প্রতিটি সম্প্রদায় “অংশীদারিত্বের বিবাহ” (পুরুষ কাউকে বিবাহ করবে অথচ, স্ত্রী তা জানবে না) বৈধতার পক্ষে একমত হয়েছে যা স্ত্রী ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এ সমস্যা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ২৭ শে জানুয়ারী “টেম্পল ফিলাডেলফিয়া” বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কনফারেন্স হয়েছে। [Ibid.]
অনেকেই এ সমস্যার সমাধান হিসেবে বহুবিবাহের বৈধতা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তারা বিশেষভাবে যে সমাজে ব্যভিচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল সেখানে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ না করার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জনৈক মহিলা বললেন: আফ্রো-আমেরিকানদের উচিৎ আফ্রিকাকে অনুসরণ করা যারা বহুবিবাহকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
রোমান ক্যাথলিক এনথ্রোপোলজী (নৃতত্ত্ব বিজ্ঞান) বিশেষজ্ঞ “ফিলিপ কালব্রাইট” তার “বর্তমান যুগে বহুবিবাহ” নামক গ্রন্থে (যা খৃষ্টানদের মাঝে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করে) লেখেন: আমেরিকান সমাজের বহু সমস্যার সমাধান রয়েছে বহুবিবাহের মধ্যে। এটা তালাক সমস্যার সমাধান করবে যা শিশুদের ওপর অতিমাত্রায় খারাপ প্রভাব ফেলে। আমেরিকান সমাজের অধিকাংশ তালাকের ঘটনা ঘটে থাকে নারী পুরুষের মধ্যকার অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপকতার ফলে। এ সমস্যাগুলোর সমাধানকল্পে বহুবিবাহ প্রথাকে বৈধ করা জরুরী। তালাকের চেয়ে এ পন্থাটা উত্তম। শিশুদেরকে রক্ষা করার জন্য এটা সর্বোত্তম পন্থা। তিনি আরো বলেন, সমাজে পুরুষ কম থাকার কারণে বিবাহের ক্ষেত্রে নারীরা যে সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছে, বহুবিবাহ এ সমস্যার পরিসমাপ্তি ঘটাবে। আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে প্রচলিত “অংশীদারী বিবাহ” (স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করবে আগের স্ত্রীর অজান্তে) করার কোনো প্রয়োজন হবে না। [Ibid., pp. 95-99.]
১৯৮৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়েছিল নারীর সংখ্যা কম থাকায় “আইন কর্তৃক পুরুষকে বহুবিবাহের অনুমতি দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে” অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী বহুবিবাহের পক্ষে মতামত প্রদান করে। একজন ছাত্রী বলল: তার (তার স্বামী বহুবিবাহ করলে) জন্য উত্তম হবে এবং তার মানসিক চাহিদা পুরণে সহায়ক হবে। [71. Ibid., p. 118.]
আমেরিকাস্থ “মর্মন” নামক ধর্মগোষ্টির একদল মহিলা বহুবিবাহকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কেননা স্ত্রীরা সন্তান লালন-পালনে সহযোগিতা করে থাকে। [Lang, op. cit., p. 172.]
ইসলামে বহুবিবাহ হয় উভয়পক্ষের ঐক্যমতে। কারো অধিকার নেই কোনো মহিলাকে বিবাহিত পুরুষের সাথে জোর করে বিবাহ দেবে। মহিলারও অধিকার আছে সে তার স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহকে প্রত্যাখ্যান করবে। [Kilbride, op. cit., pp. 72-73.]
কিন্তু, বাইবেলে একদিকে বহুবিবাহের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে স্বামীর ভাইয়ের সাথে, (বিবাহিত হলেও) যখন বিধবা মহিলা সন্তানহীনা হয়। (দেখুন: বিধবার সমস্যা সংকুল জীবন অধ্যায়)
মহিলার কোনো অধিকার নেই তার স্বামীর ভাইয়ের সাথে বিবাহ বসায় দ্বিমত করার। (জেনেসিস: ৩৮/৮-১০)
উল্লেখ্য যে, মুসলিম সমাজের দিকে তাকালে বহুবিবাহ তেমন খুব একটা চোখে পড়ে না। কেননা নারী পুরুষের সংখ্যার মধ্যকার পার্থক্যটা উদ্বেগজনক নয়। তাই, আমরা বলতে পারি যে, পশ্চিমাদের অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপকতার তুলনায় মুসলিম বিশ্বে বহুবিবাহের সংখ্যা অতি নগণ্য।
বিখ্যাত প্রটেস্টানী খৃষ্টান ‘বেলী গ্রাহাম’ বলেন, সমাজকে বাচিয়ে রাখার স্বার্থেই বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ করা খৃষ্টানদের উচিৎ হবে না। ইসলাম সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্যেই বহুবিবাহকে বৈধ করেছে এবং নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে জীবনসঙ্গীকে বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছে। খৃষ্টান সমাজের প্রত্যেক পুরুষ একটি মাত্র বিবাহ করে ঠিকই কিন্তু পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যকার অবৈধ সম্পর্কের সংখ্যা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবেই দয়া ও উদারতার ধর্ম ইসলাম পুরুষকে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি দিলেও পুরুষ মহিলার মধ্যকার গোপন সম্পর্ক পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ব্যভিচারের মরণ ছোবল থেকে সমাজকে বাচিয়ে রাখতে। এবং সমাজের স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখার গ্যারান্টি দিয়েছে। [Sabiq, op. cit., pp. 187-188.]
কিন্তু, অনেক মুসলিম ও অমুসলিম দেশ আজ বহুবিবাহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এমনকি সেখানে প্রথম স্ত্রীর অনুমতিতে হলেও দ্বিতীয় বিবাহ আইনানুগ অবৈধ বিবেচিত হয়। তবে স্ত্রীর অজান্তে বা তার সাথে প্রতারণা করে অপর মহিলাকে বিবাহ করা আইন অনুযায়ী বৈধ। এ ধরণের দ্বিমুখী আইনের স্বার্থকতা কী? আইন কি মানুষের সাথে প্রতারণাকে বৈধতা দেওয়ার জন্যেই প্রণয়ন করা হয়েছে? বর্তমান সময়ে সভ্যতার দাবিদারদের দ্বিমুখী নীতিসমূহের মধ্যে এটাও একটা আজব নীতি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/635/17
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।