মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
তালাক নিয়ে তিনটি ধর্মে ব্যাপক মতানৈক্য রয়েছে। খৃষ্টান ধর্মে তালাককে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা বাইবেলের নতুন নিয়মের (New Testament) বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বোধগম্য হয়। ঈসা আলাইহিস সালামের নামে প্রচার করা হয় যে, তিনি বলেছেন: “আমি বলছি যে তার স্ত্রীকে তালাক দেবে সে যেন তার স্ত্রীর জন্য ব্যভিচারের দরজা উন্মুক্ত করে দিল। আর যে তালাকপ্রাপ্তাকে বিবাহ করল সে যেন ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ল”। (ম্যাথিউ: ৫/৩২)
কিন্তু, এগুলো বাস্তবে বাস্তবায়ন করা হয় না। এগুলো ধার্মিকতার দাবি হওয়া সত্বেও কখনও সম্ভব নয়। বৈবাহিক জীবনের ব্যর্থতার কারণে যদি স্বামী-স্ত্রীর জীবনযাপন অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তালাক নিষিদ্ধ হওয়ার বিধান তাদের কোনো উপকারে আসবে না। স্বামী স্ত্রীর জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে গেলে তাদেরকে জোর করে একত্র রাখার কোনো অর্থ হয় না। তবে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই যে, খৃষ্টান সমাজ আজ তালাককে বৈধতা প্রদান করতে বাধ্য হয়েছে।
পক্ষান্তরে ইয়াহূদীরা কোনো কারণ ছাড়াই তালাককে বৈধতা দিয়েছে। পুরাতন নিয়ম (Old Testament) পুরুষকে অধিকার দিয়েছে যে,নিছক পছন্দ-অপছন্দের কারণেই সে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। বলা হয়েছে: “কোনো পুরুষ কোনো নারীকে বিবাহ করার পর কোনো ত্রুটির কারণে তাকে পছন্দ না হয়। এরপর সে তালাক লিখে স্ত্রীকে দিয়ে দিল। স্ত্রী তার বাড়ী থেকে বের হয়ে গিয়ে আবার আরেকজনকে বিবাহ করল। সেও স্ত্রী পছন্দসই না হওয়ার কারণে তালাক লিখে স্ত্রীর হাতে দিয়ে দিল। এমতাবস্থায় প্রথম স্বামীর জন্য এ স্ত্রী পুনরায় বৈধ হবে না। কেননা স্রষ্টার দৃষ্টিতে সে তখন নাপাক। তোমাকে আল্লাহ তা‘আলা যে অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন তার অতিরিক্ত গ্রহণ করতে পদক্ষেপন করো না”। (ডিউটারনমী: ২৪/১-৪)
ইয়াহূদী পণ্ডিতরা ‘অপছন্দ ও দোষ’ শব্দ দু’টির ব্যাখ্যায় মতবিরোধ করেছেন। ইয়াহূদী ধর্ম শাস্ত্র ‘তালমুদে’ তাদের এ সমস্ত মতবিরোধের বর্ণনা এসেছে। ‘শামাঈ’ গোত্রের মতে স্ত্রী পাপাচারে লিপ্ত না হলে তাকে তালাক দেওয়া যাবে না। ‘হালীল’ গোত্রের মতে- যে কোনো কারণে এবং যখন খুশি স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে। এমনকি নিছক খাদ্য নষ্ট করে ফেললেও। ইয়াহূদী পণ্ডিত ‘আকীবা’ বলেন, স্বামীর অধিকার আছে সে বর্তমান স্ত্রীর চেয়ে বেশি সুন্দরী স্ত্রী পেলেও আগের স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবে। (গিট্টিন ৯০ A-B)
নতুন নিয়ম (New testament) শামাঈদের মতকে গ্রহণ করেছে। অপর দিকে ইয়াহূদী আইনে ‘হালীল ও আকীবার’ মতামতকে গ্রহণ করেছে। আর এ মতই বহুল প্রচলিত। [Epstein, op. cit., p. 196.]
এ আইন স্বামীকে অধিকার দেয় কোনো কারণ ছাড়াই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার; পক্ষান্তরে পুরাতন নিয়ম (Old Testament) পুরুষকে অপছন্দ হলে তালাক দেওয়ার শুধু বৈধতাই দেয় না; বরং তাকে নির্দেশও দেয়। বলা হয়েছে “খারাপ স্ত্রী তার স্বামীর জন্য অপমান বয়ে আনে এবং সে অপরের ঠাট্টা বিদ্রুপের পাত্র হয়। তার এ স্ত্রী তাকে সৌভাগ্যবান বানাতে পারে না। নারীরা পাপাচারের কেন্দ্র বিন্দু; তাদের পাপাচারের কারণেই আমাদের সবাইকে মরতে হবে। খারাপ স্ত্রীকে যা খুশি তা বলতে দিও না। যদি সে তা মেনে না নেয় তাহলে তালাক দিয়ে তার থেকে মুক্ত হও”। (এক্সিলেসিয়াসটিকাস: ২৫/২৫)
ইয়াহূদী ধর্ম গ্রন্থ তালমুদে তালাক বৈধ হওয়ার কিছু কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যার কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে “যদি সে রাস্তায় খাওয়া দাওয়া করে। ইয়াহূদী পণ্ডিত ‘মায়ার’ বলেন উক্ত স্ত্রীকে তালাক দেওয়া আবশ্যক”। (তালমুদ: গিট্টিন ৮৯ A)
যে বন্ধ্যা স্ত্রীর দশ বছর যাবত কোনো সন্তান হয় না তাকে বাধ্যতামুলক তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তালমুদ। ইয়াহূদী পণ্ডিত বলেন, “কোনো নারীর বিবাহের পর দশ বছর পর্যন্ত কোনো সন্তান না হলে তাকে যেন স্বামী তালাক দিয়ে দেয়”। (Yeb 64 A)
কিন্তু, ইয়াহূদী আইনে মহিলার কোনো অধিকার নেই তালাক চাওয়ার, তবে আদালতে শক্তিশালী কোনো কারণ দেখাতে পারলেই (যা দ্বারা তালাক পাওয়ার দাবিদার সাব্যস্ত হয়) শুধুমাত্র ইয়াহূদী নারীরা তালাক পেতে পারে। যে সমস্ত কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে-
১. স্বামী যদি শারিরীক কোনো অংগ-প্রত্যংগের বা ত্বকের কোনো রোগে ভুগতে থাকে।
২. স্বামী যদি পরিবারের খাদ্যের বন্দোবস্ত না করতে পারে ইত্যাদি।
এ সময় আদালত তার তালাকের আবেদন গ্রহণ করবে। মহিলা কখনও তালাকের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না; বরং শুধুমাত্র স্বামীই তার স্ত্রীকে তালাকের কাগজপত্র দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। এ অবস্থায় আদালত স্বামীকে তালাকে বাধ্য করতে কিছু শাস্তি প্রয়োগ করতে পারে। যেমন-জরিমানা করা, জেলে আটক রাখা, গীর্জায় প্রবেশে বাধা দেওয়া ইত্যাদি। যাতে সে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য হয়। এমতাবস্থায় স্বামী তাকে তালাক দিকে অস্বীকৃতি জানালে স্ত্রী সারাজীবন ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। স্ত্রীকে সারা জীবন না বিবাহিত না তালাকপ্রাপ্তা অবস্থায় থাকতে হতে পারে। তাদের নিয়ম অনুযায়ী এ অবস্থায় স্বামী অন্য কাউকে বিবাহ করে বা অন্য কোনো মহিলার সাথে অবৈধভাবে ঘর সংসার করতে পারে। কেননা,এ অবস্থায় সন্তান হলে তাদের দেশীয় আইনানুযায়ী তা বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। স্ত্রী পড়ে থাকবে বিবাহবিহীন অবস্থায়। কারণ, সে এখনও পুর্ব স্বামীর সথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহ বসলে সে ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হবে এবং সন্তান হলে তাদের পরবর্তী দশম প্রজন্ম পর্যন্ত সমস্ত সন্তান অবৈধ ঘোষিত হবে। এ স্ত্রীকে বলা হবে মুকাইইয়াদাহ বা আবদ্ধ। [Swidler, op. cit., pp. 162-163.]
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে এরুপ ১০০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত ইয়াহূদী মহিলা রয়েছে, যারা এভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। ইসরাঈলে আছে এ রকম ১৬০০০ মহিলা। স্বামীরা তাদেরকে তালাক দেওয়ার নাম করে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নেয়। [The Toronto Star, Apr. 8, 1995.]
ইসলাম উভয় ধর্মের সমস্যাগুলোর সমাপ্তি ঘোষণা করতে এগিয়ে আসল। ইসলামে বৈবাহিক বন্ধন একটি অত্যন্ত পবিত্র বন্ধন। শক্তিশালী কোনো কারণ ছাড়া যা ছিন্ন হবার নয়। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেও ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে সুষ্ঠু ফয়সালায় বিশ্বাসী। সুষ্ঠু ফয়সালার সমস্ত পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে শুধুমাত্র তখনই ইসলাম সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে তালাকের বৈধতা দেয়।
সংক্ষেপে বলতে গেলে ইসলাম তালাকের বৈধতা দেয়; কিন্তু তালাকের পথ রুদ্ধ করতে যা করা দরকার সবকিছু করে। ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কেই তালাকের ক্ষমতা দিয়েছে। যা ইয়াহূদীদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আর নারীদের তালাকের সে অধিকার হলো-‘খোলা’ করা। [Sabiq, op. cit., pp. 318-329. See also Muhammad al Ghazali, Qadaya al Mar'aa bin al Taqaleed al Rakida wal Wafida (Cairo: Dar al Shorooq, 4th edition, 1992) pp. 178-180.]
তালাক দেওয়ার পর স্বামীর কোনো অধিকার নেই স্ত্রীকে প্রদত্ত সম্পদ (উপহার ইত্যাদি) ফেরত নেওয়ার। তালাকের পর নারীকে প্রদত্ত সম্পদ ফেরত নেওয়া সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থানে অন্য স্ত্রীকে পরিবর্তন করতে চাও এবং তাদের একজনকে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ দিয়ে থাক, তবে তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গুনাহর মাধ্যমে গ্রহণ করতে চাও”? [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২০]
আর যদি স্ত্রী তার বিবাহকে ছিন্ন করতে চায়, তাহলে সে তার গৃহীত উপহার সামগ্রী স্বামীকে ফিরিয়ে দেবে। সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়াটা ন্যায় সংগত বিনিময় হিসেবে বিবেচিত হবে; কেননা স্বামী চায় তাদের বিবাহ বন্ধন টিকে থাকুক অপরদিকে স্ত্রী তা ছিন্ন করতে চায়। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, স্ত্রী যদি বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে চায়, তখন ছাড়া অন্য কোনো সময় স্বামীর জন্য বৈধ হবে না তাকে প্রদত্ত সম্পদ ফিরিয়ে নেয়া।
“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে যা কিছু প্রদান করেছ তা থেকে কিছু ফিরিয়ে নেওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। কিন্তু, যে ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়েই ভয় করে যে তারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা বজায় রাখতে পারবে না, সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নেয় তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোনো পাপ নেই। এটা হলো আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা। কাজেই এ সীমা অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করবে তারাই যালিম।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২৯]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একজন মহিলা আসলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন: আমি আমার বিবাহ বিচ্ছেদ চাই; কিন্তু, তিনি বর্ণনা করেন নি, কী কারণে তিনি তার বিবাহ বিচ্ছেদ চান। তার সমস্যা একটাই যে, তিনি তার সাথে জীবনযাপন করতে ভালোবাসেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«( أتردين عليه حديقته ) . قالت : نعم ، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( اقبل الحديقة وطلقها تطليقة )»
“তুমি কি তাকে বাগান (বিবাহের সময় উপহার স্বরুপ প্রদত্ত) ফেরত দেবে? মহিলা বলল, হ্যা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বামীকে বললেন: বাগান নিয়ে নাও এবং তাকে একটি তালাক (শুধুমাত্র এক তালাক দিলে আবার ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।) দিয়ে দাও।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৭৩)
এছাড়াও কোনো শক্তিশালী কারণে মহিলা তালাক দাবী করতে পারে। যেমন, স্বামীর কঠোরতা, বিনা কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করা বা পারিবারিক খরচ না চালানো ইত্যাদি। এ অবস্থায় ইসলামী আদালত মহিলাকে তালাকের ব্যাপারে ফয়সালা দেবে। [Ibid., pp. 313-318.]
সংক্ষেপে: ইসলাম নারীকে যে অধিকার দিয়েছে তার কোনো তুলনা হয় না। সে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে পারে ‘খোলা’ বিধানের মাধ্যমে বা আদালতে অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে। মুসলিম মহিলাকে কখনো আটকিয়ে রাখা (তালাক না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা) যায় না। ইসলাম আসার পর এ সকল অধিকার বলে ইয়াহূদী নারীরা ইসলামী আদালতে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তালাক দাবী করত। কিন্তু ইয়াহূদীরা তাদের তালাককে প্রত্যাখ্যান করে কিছু অধিকার দিয়ে কৌশলে ইসলামী আদালতে যাওয়া থেকে তাদেরকে বিরত রাখল। খৃষ্টান সমাজের ইয়াহূদী মহিলারা এ অধিকারগুলো পেত না। কেননা ওখানকার রোমানীয় আইন ইয়াহূদী আইন থেকে উত্তম ছিল না। [David W. Amram, The Jewish Law of Divorce According to Bible and Talmud (Philadelphia: Edward Stern & CO., Inc., 1896) pp. 125-126.]
এখন আমরা দেখব ইসলাম তালাককে কীভাবে গ্রহণ করে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলার কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় বৈধকাজ হচ্ছে তালাক। (আবু দাউদ)
নিছক অপছন্দের কারণে স্বামীর অধিকার নেই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার। অপছন্দ হলেও ইসলাম স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে।
“স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা এমন জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেক কল্যাণ রেখে দিয়েছেন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৯]
“কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীকে উপহাস না করে। যদি তার একটি আচরণ পছন্দ না হয়, তাহলে আরেকটি আচরণে হয়ত সে সন্তুষ্ট হবে।” (সহীহ মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাগিদ দিয়ে বলেছেন: স্ত্রীর কাছে যার আচরণ উত্তম সেই পুর্ণ ঈমানদার। তিনি বলেন,
«أكمل المؤمنين إيمانا أحسنهم خلقا . وخياركم خياركم لنسائهم»
“ঐ ব্যক্তি পূর্ণাংগ ঈমানদার যার আচার ব্যবহার উত্তম। আর যার আচার আচরণ স্ত্রীদের কাছে উত্তম সেই উত্তম ব্যক্তি।” (সহীহ তিরমিযী)
ইসলাম প্রাক্টিক্যাল ধর্ম তাই সে খেয়াল রাখে যে,কিছু কিছু পরিস্থিতিতে স্বামী স্ত্রীর মাঝে মীমাংসা করা সম্ভব হয় না এবং স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করেও লাভ হয় না; বরং একে অপরের সাথে খারাপ ব্যবহার করে সে সময়ের জন্য স্বামীকে চারটি নসীহত পেশ করেছে। এ সময়কার করণীয় সম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“পুরুষেরা নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা একের ওপর অন্যকে বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হিফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হিফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করতে যেওনা। নিশ্চয় আল্লাহ সবার ওপর শ্রেষ্ঠ। যদি তোমরা তাদের মধ্যে সম্পর্কছেদ হওয়ার মতো পরিস্থিতির আশংকা কর, তবে তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন ও স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত কর। আল্লাহ তা‘আলা সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪-৩৫]
পুরুষের উচিৎ উপরোক্ত তিনটি নসীহত মেনে চলা। যদি তাতে কোনো কাজ না হয়, তখন এতে তার পরিবারকে জড়াবে। এ আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, স্ত্রী অবাধ্য না হলে স্বামীর জন্য কোনোভাবে উচিৎ হবে না তাকে প্রহার করা, তবে তাকে সংশোধন করতে গিয়ে জরুরি অবস্থায় প্রহার করা বৈধ। যদি এতে স্ত্রী সংশোধিত হয়ে যায়, তাহলে তাকে পুর্বেকার কাজের জন্য তিরস্কার করা উচিৎ নয়। আর যদি সংশোধন না হয় তাহলে, দ্বিতীয়বার তাকে প্রহার করবে না; বরং উভয়ের পরিবার থেকে সদস্য নিয়ে সালিস বসবে। (প্রহার করলে তা হবে মৃদু আকারে অমানুষিকভাবে যেন না হয় যাতে ব্যাথা হয় এবং তা চেহারাসহ স্পর্শকাতর স্থানে হতে পারবে না।)
বিদায় হজের ভাষণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম পুরুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন অত্যন্ত জরুরী অবস্থা (অশ্লীল কাজকর্ম বা কথায় জড়িত হওয়া ইত্যাদি) ছাড়া এ পর্যায়ে না আসে। এ অবস্থায়ও শাস্তিটা হবে খুবই সামান্য। নারী যদি এ কাজ থেকে বিরত হয় স্বামীর জন্য তার বিরুদ্ধে পুনরায় একশানে যাওয়া উচিৎ হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«ألا واستوصوا بالنساء خيرا فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن شيئا غير ذلك إلا أن يأتين بفاحشة مبينة فإن فعلن فاهجروهن في المضاجع واضربوهن ضربا غير مبرح فإن أطعنكم فلا تبغوا عليهن سبيلا» .
“তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। কেননা তারা তোমাদের কাছে বন্দী রয়েছে। এটা ব্যতিত তোমাদের আর কোনো কিছু করার অধিকার নেই তবে, যদি তারা অশ্লীল কাজে জড়িয়ে পড়ে তাহলে, ভিন্ন কথা। যদি তারা এরুপ করে তাহলে, তাদেরকে বিছানা ত্যাগ কর, আর তাদেরকে মৃদু প্রহার কর যেন তাদের শরীরে কোনো ব্যথা (অমানুষিক) না হয়। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো পন্থা অবলম্বন করতে যেও না। (তিরমিযী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কারণ ছাড়া স্ত্রীকে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একদল মহিলা এসে অভিযোগ করলেন যে, তাদের স্বামীরা তাদেরকে প্রহার করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের কাছে অনেক নারী এসে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। ঐ সমস্ত পুরুষেরা উত্তম নহে (যারা তাদের স্ত্রীদেরকে প্রহার করে)। (আবু দাউদ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার পরিবারের নিকট উত্তম। (তিরমিযী)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাঃ) নাম্নী মহিলাকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন যে লোক স্ত্রীকে প্রহার করে বলে সমাজে পরিচিতি লাভ করেছে, তাদেরকে যেন বিবাহ না করে। উক্ত মহিলা নিজেই বর্ণনা করেন: মুয়াবিয়া ও আবু জাহাম আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আবু জাহাম! সে তো তার কাধ থেকে লাঠি নামায় না; আর মুয়াবিয়া দরিদ্র যার কোনো সম্পদ নেই......(সহীহ মুসলিম)
তালমূদ স্ত্রীকে শিষ্টাচার শিক্ষাদান করতে প্রহার করার অনুমতি দিয়েছে। [David W. Amram, The Jewish Law of Divorce According to Bible and Talmud (Philadelphia: Edward Stern & CO., Inc., 1896) pp. 125-126.]
বলা হয়েছে তাকে প্রহার করতে হলে পাপাচারী হওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং শুধুমাত্র গৃহাস্থলীর কাজকর্ম করতে অনীহা প্রকাশ করলেও তাকে প্রহার করা যাবে।তাকে মৃদু নয় বরং তাকে বেত্রাঘাত করা ও খানাপিনা থেকে বিরত রাখারও অনুমতি দিয়েছে। [Epstein, op. cit., p. 219.]
কিন্তু স্বামীর আচরণ খারাপ হওয়ার আশংকা দেখা দিলে আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
অর্থাৎ কোনো মহিলা যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ বা এড়িয়ে চলা নীতি অবলম্বনের আশংকা করে। তাহলে তাদের পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করে নেয়াতে কোনো দোষ নেই। আর মীমাংসাই উত্তম কাজ। মানুষের আত্মার সামনে লোভ বিদ্যমান রয়েছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে জেনে রাখ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সব কাজের খোজ খবর রাখেন। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১২৮]
এ অবস্থায় নারীকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে পরস্পরের মাঝে মীমাংসা করে নিতে। (উভয় পরিবারের মধ্যস্থতায় বা তাদের মধ্যস্থতা ব্যতিত) নারীকে স্বামীর বিছানা থেকে পৃথক থাকা বা স্বামীকে প্রহার করার উপদেশ দেয় নি, যাতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এড়ানো যায়। কেননা তা তাদের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ককে আরো বেশি ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। কোনো কোনো আলিম মত প্রকাশ করেছেন যে, এ অবস্থায় স্ত্রীর পক্ষ থেকে মীমাংসার জন্য আদালত এগিয়ে আসবে। প্রথমে আদালত স্বামীকে সতর্ক করে দেবে অতঃপর স্বামী থেকে স্ত্রীকে দূরে রাখবে এবং সর্বশেষে আদালত স্বামীকে প্রহার করার হুকুম দেবে। [Ibid, pp 156-157.]
সংক্ষেপে এভাবে বলা যায় যে, বৈবাহিক সম্পর্ককে অটুট রাখতে স্বামী স্ত্রীকে বিভিন্ন উপদেশ প্রদান করবে। তাদের কোনো একজন অপরের প্রতি খারাপ আচরণ করে থাকলে অন্যজন এ উপদেশগুলো কাজে লাগিয়ে তাদের এ পবিত্র বন্ধন অটুট রাখার চেষ্টা করে যাবে। এ চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হলে ইসলাম শেষ চিকিৎসা হিসেবে হৃদ্যতার সাথে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে অনুমতি দেয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/635/13
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।