মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে যে, শেষ জামানায় যে মাসীহের আগমনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তিনি হলেন গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংবাদ অনুযায়ী প্রেরিত হয়েছেন। কাজেই সাধারণভাবে সকল মানবজাতি, বিশেষ করে মুসলমানদের কর্তব্য হল তার অনুসরণ করা এবং তার প্রতি বিশ্বাস রাখা। এখন আমাদের দেখা উচিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংবাদ অনুযায়ী কে আসল এবং তার দাবিই বা কি? ভন্ডনবী কাদিয়ানী বলে:- ‘‘আমি ঐ আল্লাহর শপথ করছি যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন এবং ঐ আল্লাহর শপথ যার উপর অভিশপ্তগণ ব্যতীত আর কেহই অপবাদ রটায় না; তিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন এবং আমাকে প্রতিশ্রুত মাসীহ বানিয়েছেন।’’ (গোলামের ঘোষণা যা তাবলীগে রেসালাত এ সন্নিবেশিত, বইটি গোলামের ঘোষণা বলীর সমষ্টি, ১০ম খন্ড, ১৮ পৃ:।) সে বলে: ‘আমার দাবি হল, আমি ঐ প্রতিশ্রুত মাসীহ যার সম্পর্কে সমুদয় আসমানি কিতাবে সংবাদ দেওয়া হয়েছে য, তিনি শেষ জামানায় আত্মপ্রকাশ করবেন।’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘তুহফায়ে কলরা’ ১৯৫ পৃ:।) সে আরো বলে: ‘বড় বড় ওলীগণের কাশফ এ কথার উপর একমত যে, মাসীহ চতুর্দশ শতাব্দীর পূর্বে অথবা চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আত্মপ্রকাশ করবেন। এ সময় অতিক্রান্ত হবে না। (এ কথাটি কে বলেছে? এবং কোথায় বলেছে?) এটা স্পষ্ট কথা যে, চতুর্দশ শতাব্দীতে আমি ব্যতীত আর কেহই এ পদের জন্য ঘোষণা দেয়নি। (আমি বলব: হ্যাঁ এ জন্যই কেহ এ ঘোষণা দেয়নি যে, সব লোক এমন নহে যে দোজখের অগ্নিতে প্রবেশ করার জন্য এ সমস্ত অপবাদ রটানোর দুঃসাহস করতে পারে।) এ জন্য আমিই প্রতিশ্রুত মাসীহ।’’ তার দাবির উপর এটা আশ্চর্য ধরনের প্রমাণ। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘এজালাতুল আওহাম’’ ৬৮৫ পৃ:) কিন্তু পরে সে নিজেই এ দাবি এই বলে প্রত্যাহার করে নেয় ‘আমি এ দাবি করেছি যে, আমি মাসীহ সমতুল্য, অবিকল প্রতিশ্রুত মাসীহ নই। কোন কোন বোকা ধারণা করেছে....। আমি কখনও এ দাবি করিনি যে, আমি মরিয়ম পুত্র মাসীহ। বরং যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে এ কথা বলবে, সে অপবাদ রটনাকারী মিথ্যাবাদী। আমার দাবি হল, আমি মাসীহ সমতুল্য। অর্থাৎ আমার মধ্যে ঈসার আলাইহিস সালাম কোন কোন আধ্যাত্মিক গুণাবলি, স্বভাব ও চরিত্রে সংরক্ষিত করেছেন। (এজালাতুল আওহাম, ২৯৬ পৃ:) পুনরায় সে বলে: ‘আমি এ দা করিনি যে, আমি প্রতিশ্রুত মাসীহ এবং আমার পরে কোন মাসীহ আসবেন না’ বরং আমি বিশ্বাস করি এবং একথা বার বার বলছি যে, আমার পরে এক মাসীহ নহে বরং হাজার হাজার মাসীহের আগমন ঘটতে পারে। (গোলামের ‘এজালাতুল আওহাম’ ২৯৬ পৃ:) অর্থাৎ আমাকে এখন মেনে নাও এবং অন্য কোন ব্যক্তি যদি এ দাবিকরে যে, সে প্রতিশ্রুত মাসীহ, তবে তাকেও মেনে নাও’’। এই হল কাদিয়ানীদের মাসীহ যে মিথ্যাবাদীদের স্বভাব অনুযায়ী তার দাবির মধ্যে অন্ধ উটের ন্যায় দিশেহারা হয়ে বিচরণ করছে। এ ধরনের দিশেহারা আচরণ ও পদস্খলন দ্বারা কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্য হল সরলমনা লোকজনকে যাদের অধিকাংশ মুসলমান, ঈসা আলাইহিস সালাম এর অবতরণ সম্পর্কে তাদের আকীদা বিশ্বাসের সুযোগ গ্রহণ করে প্রতারিত করা। গোলাম আহমদ এমন ব্যক্তি যার অন্তঃসারশূন্য সস্তা দাবিদাওয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকেও সে অনেক নীচে। তার পরস্পর বিরোধী উক্তিসমূহ তার দাবিদাওয়াকে মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য যথেষ্ট। এ সত্ত্বেও আমরা এ ব্যাপারে তার আনুমানিক, মিথ্যা প্রলাপ ও অমূলক উক্তি সমূহের উল্লেখ করে একটা জ্ঞান সম্মত আলোচনা করতে চাই। যাতে, আমরা প্রত্যেক সন্দেহ পোষণকারী ও সুযোগ সন্ধানী অপেক্ষমাণের মূলোৎপাটন করতে পারি। এতে সন্দেহ নেই যে, মহান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিশ্রুত মাসীহের আগমনের সংবাদ দিয়েছেন এবং তাঁর গুণাবলি ও ব্যক্তিত্বকে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করে দিয়েছেন। যাতে শয়তান তার অনুসারীদেরকে নিয়ে খেলা করতে না পারে। আবু হুরায়রা রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: ‘ঐ আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! অচিরেই মরিয়ম পুত্র ন্যায় বিচারক শাসকরূপে তোমাদের মধ্যে অবতরণ করবেন, যুদ্ধ রহিত করবেন এবং ধন সম্পদ এত অধিক হবে যে কেহই তা গ্রহণ করবে না। এমন কি তখন একটি মাত্র সেজদা পৃথিবী ও উহাতে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম হবে’। [১ বুখারী ও মুসলিম]
নওয়াস ইবনে সাম’আন রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দাজ্জাল বের হওয়া সম্পর্কে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মরিয়ম পুত্র মাসীহকে যখন আল্লাহ তাআলা পাঠাবেন, তখন তিনি দামেস্কের পূর্ব প্রান্তের সাদা মিনারার নিকট দু’টি হলুদ বর্ণের চাদর পরিধান করে এবং দু’জন ফেরেস্তার ডানার উপর হাত দু’টি রেখে অবতরণ করবেন। যখন মাথা ওঠাবেন তখন উহা থেকে মুক্তা ঝরবে। কোন কাফের তাঁর নিশ্বাসের গন্ধ পেলেই মৃত্যুবরণ করবে। তাঁর দুষ্টি যত দুর পর্যন্ত যায় তত দূর পর্যন্ত তার নিশ্বাসও পৌঁছাবে। তার পর দাজ্জালকে ধাওয়া করে ‘লুদ’ নামক প্রবেশ দ্বারে হত্যা করবেন। [২ মুসলিম, তিরমিযি, আবু দাউদ, ইবনে মাযা, আহমদ ও হাকিম। তবে শব্দাবলী মুসলিমের।] (হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণিত)
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: ‘ঐ আল্লাহর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, ইবনে মরিয়ম ‘রাওহা’ নামক স্থানের পথিমধ্যে হজ অথবা ওমরা কিংবা উভয়টির অবস্থায় নব চন্দ্রের ন্যায় আবির্ভূত হবেন। [৩ মুসলিম]
অন্য রেওয়ায়েতে আছে যে, মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন..... এবং রাওহা নামক [মদিনা হতে সত্তর কিলোমিটার দুরে মক্কার পথে একটি মাঠের নাম।] স্থানে মঞ্জিল করবেন। তারপর সেখান থেকে হজ বা ওমরা অথবা উভয়টি করবেন। [১ মসনদে আহমদ] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম এর অধিকতর নিকটবর্তী। কারণ, তাঁর ও আমার মাঝখানে আর কোন নবী নেই এবং অবশ্যই তিনি অবতরণ করবেন। যখন তোমরা তাঁকে এ সকল লক্ষণ দ্বারা চিনে নিবে; তিনি মধ্যম অবয়ব বিশিষ্ট ও লাল মিশ্রিত সাদা রঙ্গের হবেন। তাঁর মাথা থেকে যেন ফোটা ফোটা হয়ে পানি পড়বে, যদিও তাতে পানি লাগেনি। তিনি ক্রুশ চূর্ণ-বিচূর্ণ করবেন। এবং জনগণকে ইসলামের দিকে আহবান জানাবেন। তাঁর সময়েই আল্লাহ পাক মাসীহ দাজ্জালকে ধ্বংস করবেন। পৃথিবীতে নিরাপত্তা বিরাজ করবে। এমনকি উটের সহিত বাঘ, গরুর সহিত চিতাবাঘ এবং বকরীর সহিত নেকড়ে বাঘ বিচরণ করবে। শিশুরা সাপ নিয়ে খেলা করবে অথচ ওরা তাদের কোন ক্ষতি করবে না। তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বৎসর কাল অবস্থান করবেন। অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং মুসলমানগণ তাঁর জানাজার নামাজ পড়ে তাঁকে দাফন করবেন। [২ মসনদে আহমদ ও আব দাউদ। তবে শব্দাবলী মসনদের।]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন: মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, তারপর তিনি বিবাহ করবেন এবং তার সন্তান সন্ততিও হবে। অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং আমার সাথে আমার কবরেই তাঁকে দাফন করা হবে। [৩ এ হাদীসটি মিশকাতুল মাসাবীহের গ্রন্থকার ইবনে জাওযীর ‘আল ওফা’ কিতারে উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন। হায়ছামীর ‘মাজমাউয জাওয়াইদ’ পুস্তকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি কাদিয়ানীদের মতেও বিশুদাধ পরে এর বর্ণনা আসবে।] এ ছাড়া আরো অনেক হাদীস এ সম্পর্কে বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সমস্ত হাদীসে প্রতিশ্রুত মাসীহের গুণাবলি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি কে হবেন? কোথা হতে আসবেন, কোথায় থাকবেন কেমন করে থাকবেন, তাঁর সময় কি কি সংঘটিত হবে, স্বয়ং তিনি কি করবেন, পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবেন এবং কোথায় সমাধিস্থ হবেন? এসব বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিস্তারিত ভাবে ব্যক্ত করে গেছেন:-
১- প্রতিশ্রুত মাসীহ মরিয়ম পুত্র হবেন, অন্য কেহ নহে এবং অন্য কারো পুত্র নহে। আর, তাঁর অনুরূপ ও কেহ নহে।
২- তিনি আকাশ থেকে অবতীর্ণ হবেন, অর্থাৎ তিনি শুধু প্রেরিতই হবেন না, বরং তাঁর জন্য প্রেরিত ও অবতীর্ণ হওয়া আবশ্যকীয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে অবতীর্ণ হবেন।’ আর, এটা জানা কথা যে, অবতরণ করা প্রেরিত হওয়া নহে।
৩- তিনি দামেস্কের পূর্ব প্রান্তে সাদা মিনারের নিকট আকাশ হতে অবতরণ করবেন এবং তিনি অবতরণ কালে দু’টি হলুদ বর্ণের চাদর পরিহিত হবেন এবং দু’জন ফেরেস্তার ডানার উপর তাঁর দু’হাত রাখবেন।
৪- তাঁর অবতরণ কালে প্রত্যেক কাফের মৃত্যু বরণ করবে।
৫- তিনি ন্যায় পরায়ণ শাসক হবেন। শাসিত কিংবা অত্যাচারী শাসক হবেন না।
৬- তিনি ক্রস ভেঙে দেবেন। যাতে এরপর তার এবাদত না করা হয়।
৭- শুকর নিধন ও নিঃশেষ করার নির্দেশ দেবেন। এমনকি, তারপর এটা আর ভক্ষণ করা হবে না।
৮- সকল লোক দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে নিবে। এমনকি দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন থাকবে না, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়।
৯- ‘লুদ’ নামক প্রবেশ দ্বারে দাজ্জালকে তিনি হত্যা করবেন।
১০- তাঁর যুগে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য হবে, এমনকি জনগণের কাছে ভিক্ষা করার মত কোন ভিক্ষুক থাকবে না। কারণ, তাঁর যুগে অধিক পরিমাণে বরকত ও কল্যাণ অবতীর্ণ হবে।
১১- তাঁর যুগে লোকজন আল্লাহর এবাদতের প্রতি উৎসাহিত হবে এবং প্রত্যেক উৎকৃষ্ট ও আকর্ষণীয় বস্ত্তর উপর উহাকে প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেবে।
১২- পৃথিবীতে নিরাপত্তা স্থাপিত হবে। এমনকি বাঘ উটের সাথে, গরু চিতাবাঘের সাথে এবং নেকড়ে বাঘ ছাগলের সাথে মাঠে বিচরণ করবে। ছেলে পেলে সাপ নিয়ে খেলবে এবং ওরা তাদের কোন ক্ষতি করবে না।
১৩- অবতরণের পর তিনি হজ্জে এফরাদ বা হজ্জে তামাত্তু অথবা হজ্জে ক্বেরাণ করবেন।
১৪- তিনি পৃথিবীতে চল্লিশ বৎসরকাল অবস্থান করবেন। অতঃপর তাঁর মৃত্যু ঘটবে।
১৫- মুসলমানগণ তার জানাযার নামাজ পড়বে।
১৬- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা মুবারকে তাঁকে দাফন করা হবে।
এই হল প্রতিশ্রুত মাসীহের কয়েকটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন এবং উল্লেখিত হাদীস সমূহ থেকে আমরা উদ্ধার করেছি। এখন আমরা দুষ্টিপাত করব গোলাম আহমদের দাবির প্রতি, ‘‘সে হল প্রতিশ্রুত মাসীহ, যার সম্বন্ধে সমুদয় আসমানি কিতাবে সংবাদ দেয়া হয়েছে’’। [১ রেফারেন্স পুস্তকের নাম পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।] তার উপর কি এ সমস্ত গুণাবলি প্রযোজ্য হয়?
প্রথমত: সে মরিয়ম পুত্র নহে এবং তার নাম ও ঈসা নহে। বরং তার নাম তারই বর্ণনানুযায়ী ‘আমার নাম গোলাম আহমদ, আমার বাবার নাম গোলাম মুর-তাজা এবং আমার দাদার নাম আতা মুহাম্মদ।’ (গোলামের ‘কিতাবুল বারিয়া’ এর টিকা, ১৩৪ পৃ:।) কেহ যেন এ ধারণা না করেন যে তার মাতার নাম মরিয়ম। মাতার নাম ‘চেরাগ বিবি’। প্রকাশ থাকে যে, জনৈক কাদিয়ানী লেখক তার নাম এই বলে উল্লেখ করেছে. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা সাইয়েদা আমেনার পর পৃথিবীতে অধিক মর্যাদাবান আর কোন মা নেই মাত্র একজন ব্যতীত, আর তিনি হলেন ‘চেরাগ বিবি’। যিনি পৃথিবীতে একজন মহান সন্তান গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে জন্মদান করেছেন’। (ইয়াকুব কাদিয়ানীর ‘হায়াতুন নবী’ ১ম খন্ড, ১৪১ ও ১৪২ পৃ:।) সুতরাং তার নাম গোলাম আহমদ, তার পিতার নাম গোলাম মুরতাজা এবং তার মার নাম চেরাগ বিবি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে মরিয়মপুত্র অবতরণ করবেন’’। [২ বুখারী ও মুসলিম।] সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন: ‘আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জাল আবির্ভূত হবে। তারপর সে চল্লিশ দিন বা চল্লিশ মাস অথবা চল্লিশ বৎসর অবস্থান করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম কে প্রেরণ করবেন। তিনি ওরওয়া ইবন মাসউদের সাদৃশ্য হবেন। [১ মুসলিম, আহমদ, হাকিম, শব্দ মুসলিমের।] যখন এ সমস্ত সুস্পষ্ট বর্ণনাদি পাওয়া গেল তখন সে দিশে হারার মত প্রলাপ করতে থাকে, যাতে সে নিজেকে মরিয়ম পুত্র প্রমাণ করতে পারে; তা যে কোন প্রকারের নির্বুদ্ধিতা ও বোকামীর আশ্রয় নিয়ে হোক না কেন। সে লিখেছে: ‘আমাকে মরিয়ম বানান হয়েছে এবং দু’বৎসরকাল আমি মরিয়ম রয়েছি। অতঃপর আমার মধ্যে ঈসার রূহ ফুঁকে দেয়া হয়েছে, যেমন মরিয়মের মধ্যে ফুঁকে দেয়া হয়েছিল। ফলে, আমি গর্ভ-ধারণ করি। অনূর্ধ্ব দশ মাস পর আমি মরিয়ম তে রূপান্তরিত হয়ে ঈসা হয়ে যাই। এভাবে আমি মরিয়ম পুত্র হই।’ (গোলামের ‘সফিনায়ে নূহ’ ১৬ পৃ:।) সে আরো বলেছে: আল্লাহ আমাকে মরিয়ম নাম দিয়েছেন, যিনি ঈসাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। সূরা তাহরীমে আল্লাহর এ উক্তিতে আমাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে: (ইমরানের কন্যা মরিয়ম যিনি তাঁর সম্ভ্রম রক্ষা করেছেন, আমি তাঁর মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছি।) [২ সুরা তাহরীম, ১২।] কেননা, একমাত্র আমিই এ দাবি করেছি যে, আমি মরিয়ম এবং আমার মধ্যে ঈসার আলাইহিস সালাম এর রূহ ফুঁকে দেয়া হয়েছে। (গোলামের ‘হাকীকতে ওহী’ এর টিকা, ৩৩৭ পৃ:।) একদা সে এর চেয়ে অধিক নির্বুদ্ধিতা ও বোকামী প্রদর্শন করে বলেছে,- ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখেছি যেন আমি একজন মহিলা এবং আল্লাহ তাআলা আমার মধ্যে তাঁর পুরুষত্ব প্রকাশ করেছেন’। (ইয়ার মুহাম্মদ কাদিয়ানীর ‘রেওয়ায়েতুল গোলাম’ যা ‘দাহিয়াতুল ইসলামের’ ৩৪ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত।) অতঃপর সে এ কথার গুরুত্ব নিজেই উপলব্ধি করে মাসীহ ঈসা ইবন মরিয়ম সাজার বিভিন্ন কারণ দর্শাতে শুরু করে, যা পূর্বেকার কারণ গুলোর তুলনায় কম হাস্যকর নহে। একবার সে বলে মাসীহ ইবন মরিয়ম হওয়ার উদ্দেশ্য হল তার সাদৃশ্য এমনকি আমি জন্ম গ্রহণেও অদ্ভুত ধরনের। কেননা, যখন আমি জন্ম গ্রহণ করি। এটা মানব সৃষ্টির ক্ষেত্রে এক গর্ভে একটি সন্তানই জন্ম গ্রহণ করে থাকে। (গোলামের ‘তুহফায়ে কুলরা’ এর টিকা, ১১০ পৃ:) এর চেয়ে অধিক আশ্চর্যের বিষয় আর কি হতে পারে?
আরেকবার সে এর চেয়েও অধিক আশ্চর্য জনক কথা বলেছে- ‘এ উম্মতের মাসীহ ঈসার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর তা হল এই- ‘ঈসা আলাইহিস সালাম সর্ব দিক দিয়ে বনি ইসরাঈল বংশোদ্ভূত ছিলেন না। শুধু মার দিক থেকে ইসরাঈলী ছিলেন। অনুরূপভাবে আমি হাসেমী। কেননা, আমার কোন কোন দাদী সাইয়েদ বংশোদ্ভূত। কিন্তু আমার পিতা সাইয়েদ নহেন।’ (গোলামের শিয়ালকোটের বক্তৃতা, ১৭ নম্বর।) সে আরো বলে- ‘আমি ঈসা আলাইহিস সালাম এর সহিত এই হিসেবে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, আমি কুরাইশ বংশীয় নই। কিন্তু আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়তের ধারাবাহিকতায় চৌদ্দ শতাব্দীতে প্রেরিত হয়েছি। যেমন, ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর পিতা না থাকার কারণে ইসরাঈল বংশীয় ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি মুসা আলাইহিস সালাম এর নবুয়তের ধারাবাহিকতায় তাঁর চৌদ্দ শতাব্দী অতিবাহিত হওয়ার পর রাসূল হলেন। (গোলামের ‘তাজকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ ৩৩পৃঃ।) এতেই কি সে ক্ষান্ত হয়েছে? না কখনও না। এতে সে ক্ষান্ত হয়নি হবেও না, বরং সে আবার বলেছে- ‘তোমরা বিশ্বাস কর যে, আমিই ঐ মরিয়ম পুত্র যিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আর, আমি কোন আধ্যাত্মিক উস্তাদ পাইনি। এটাই আমার এবং মরিয়ম পুত্র ঈসার মধ্যকার সামঞ্জস্য, যিনি পিতা বিহীন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। যেমন আমি আধ্যাত্মিক পিতা বিহীন জন্ম গ্রহণ করেছি।’’ (‘এজালাতুল আওহাম’ ৬৫৯ পৃ:)
জানি না এত কিছুর পরও কাদিয়ানীরা মুসলমানদের নিকট এ আশা করতে পারে যে, তারা একে প্রতিশ্রুত মাসীহ বলে মেনে নেবে এবং তাকে বিশ্বাস করবে? হায় অসৎ সাহস! হায় স্পষ্ট অপবাদ রটনা! হায় প্রকাশ্য মিথ্যা! সে নিজেই বলেছে= ‘মিথ্যাবাদীর কথায় পরস্পর বিরোধিতা অবশ্যম্ভাবী’। (গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ পরিশিষ্ট, ৫ম খন্ড, ১১২পৃ)
২- সে আকাশ থেকে অবতরণ করেনি, বরং সে ভারতে পাঞ্জাবের একটি গ্রামে (কাদিয়ানে) জন্ম গ্রহণ করেছে। এই যে কাদিয়ানী পত্রিকা বলেছে- ‘কাদিয়ান মাসীহের জন্মস্থান, বাসস্থান ও সমাধিস্থান। উক্ত গ্রামে ঐ বাড়িটি এখনও রয়েছে যেখানে গোলাম আহমদ জন্ম গ্রহণ করেছে।’ (কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল ফজল’ ১৩ ডিসেম্বর ১৯২৯ খৃ:) দেখুন, কাদিয়ানীরা আপত্তি উত্থাপন করে বলতে পারে যে, হাদীসে আকাশ শব্দের উল্লেখ নেই, বুখারীতেও নেই, মুসলিমেও নেই, বরং আকাশের শর্তারোপ তোমাদের পক্ষ হতে করা হয়েছে। আর ‘নুযুলের’ অর্থ হল প্রকাশ পাওয়া।
আমরা উত্তরে বলব: ‘আকাশ শব্দটি আমাদের পক্ষ হতে বাড়ান হয়নি, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন যা ঐ হাদীসে রয়েছে যে হাদীসটি বায়হাকী ‘কিতাবুল আসমা ওয়াছ ছিফাত’ এ আবু হুরায়রা রা. থেকে উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা রা. বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: ‘‘তোমাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন মরিয়ম পুত্র আকাশ থেকে তোমাদের মধ্যে অবতরণ করবেন এবং তোমাদের ইমাম তোমাদের থেকেই হবে।’’ অতএব ‘নুযুল’ বা অবতরণ এর অর্থ ‘যহুর’ বা প্রকাশ পাওয়া গ্রহণ করা সঠিক নহে।
তারা বলে: ‘আকাশ’ শব্দটি বায়হাকীর পক্ষ থেকে বাড়ান হয়েছে। কেননা বায়হাকী এ হাদীসকে বুখারী ও মুসলিমের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। অথচ বুখারী ও মুসলিম এ অতিরিক্ত শব্দ দ্বারা হাদীসটি উল্লেখ করেন নি। তারা আরও বলে: এ হাদীসটিকে ইমাম সুয়ূতী রা. বায়হাকী থেকে ‘আকাশ’ শব্দের উল্লেখ ব্যতিরেকে বর্ণনা করেছেন। এতে বুঝা যায় যে, ইমাম সুয়ূতী ও এ শব্দটিকে হাদীসের অংশরূপে ধারণা করেন নি।
প্রথমত: আমরা বলব যে, বায়হাকীর কিতাবটি কি, তা আমাদের উপলব্ধি করা উচিত। বায়হাকী এমন একটি কিতাব যা রেওয়ায়েতের ব্যাপারে স্বয়ং সম্পূর্ণ। অর্থাৎ এতে ইমাম বায়হাকী ইমাম বুখারী, মুসলিম, তিরমিযি ও ইবনে মাযা প্রমুখ হাদীস বেত্তাদের মত রেওয়ায়েতকে তার সনদ সহকারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত উল্লেখ করে থাকেন। ঐ সমস্ত হাদীসের কিতাবের মত নহে যাতে শুধু মতনের উল্লেখ থাকে, সনদের উল্লেখ থাকে না। যেমন মিশকাতুল মাসাবীহ, বুলুগুল মারাম প্রভৃতি কিতাবে হাদীসকে শুধু একত্রিত করা হয়েছে। এ দু’প্রকার হাদীস গ্রন্থের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, প্রথম প্রকার যখন কোন হাদীসকে কোন কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত করে তখন তার উদ্দেশ্য শুধু এটাই হয়ে থাকে যে, মূল হাদীসটি ঐ কিতাবেও বিদ্যমান আছে। দ্বিতীয়টি এর বিপরীত। কেননা, যখন এতে কোন কিতাবের সাথে কোন হাদীসকে সম্পৃক্ত করা হয় তখন ঐ হাদীসের মূল সূত্রটি বর্ণনা করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এ হিসাবে যখন বায়হাকী এ হাদীসটিকে বুখারীর সাথে সম্পৃক্ত করলেন, তাতে তার উদ্দেশ্য এই নহে যে, এ হাদীসের মূল সূত্র হল বুখারী। বরং এ কথার দিকে ইঙ্গিত করাই উদ্দেশ্য যে, মূল হাদীসটি বুখারীও উল্লেখ করেছেন। আর এটা সুস্পষ্ট। তবে, আকাশ শব্দটিকে বায়হাকীর উল্লেখ করা এবং বুখারী ও মুসলিম উল্লেখ না করা, এতে কিছু যায় আসে না। কেননা, এ সমস্ত কিতাবের প্রত্যেকটি স্বয়ং মৌলিকত্বের অধিকারী। আর, নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের অতিরিক্ত বিবরণ হাদীস বেত্তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য। একথা সর্বসম্মত বলে খতীব বাগদাদী উল্লেখ করেছেন। [১ ১৭তম পরিচ্ছেদ, আল-বাইছুল হাছীছ- ইবনে কাছীর।] একথা স্পষ্ট যে, আকাশ শব্দটি নুযূলের প্রতিকুল নহে; বরং সম্পূর্ণরূপে অনুকুল।
দ্বিতীয়ত: জালালুদ্দীন সুয়ূতীর (সামা) আকাশ শব্দের উল্লেখ না করে এ হাদীসের বর্ণনা করা এ ছাড়া আর কিছুই বুঝায় না যে, তিনি একে বায়হাকী থেকে উদ্ধৃত করার সময় লক্ষ করেন নি। প্রকৃত পক্ষে বায়হাকী উক্ত হাদীসে ‘সামা’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন এবং তার কিতাবেও তা বিদ্যমান। অথবা তিনি হাদীসটি উদ্ধৃত করার সময় বুখারী ও মুসলিমের শুধু মতনের উপর দৃষ্টি রেখেছেন। উক্ত দুই অবস্থার সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব, এর দ্বারা হাদীসে উল্লেখ নেই বলে কোন দলীল উপস্থাপন করা যাবে না। এরূপ হওয়ার দৃষ্টান্ত বহু রয়েছে, যা হাদীস গবেষকদের কাছে অজানা নহে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই মাসীহের (আঃ) আকাশ হতে অবতরণের কথা স্বীকার করে বলেছে- ‘হাদীসে আছে যে, মাসীহ আলাইহিস সালাম দু’টি হলুদ বর্ণের চাদর পরিধান করে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন’। (গোলামের ‘ এজালাতুল আওহাম’ ৮১ পৃ:।) এমনিভাবে, তার কিতাব ‘তাশহীজুল আজহানে’ সে বলেছে। কাজেই পালাবার কোন উপাই নেই। কেননা, আমরা সত্যবাদী নবী আল্লাহর রাসূল থেকে প্রমাণ করেছি, তিনি মাসীহের আলাইহিস সালাম একটি গুণ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আকাশ হতে অবতরণ করবেন। যেমন আমরা ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী থেকে তার স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রমাণ করেছি যে ঈসা আলাইহিস সালাম আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। আর এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। এর দ্বারা গোলাম আহমদের মাসীহ হওয়ার দাবি মিথ্যা সাব্যস্ত হয়ে যায়।
৩- এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (মাসীহ) অবতরণ স্থলের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, তিনি হলুদ রংয়ের দু’টি চাদর পরিধান করে দুজন ফেরেস্তার ডানার উপর দু’হাত রেখে পূর্ব দামেস্কর সাদা মিনারের নিকট অবতরণ করবেন।’ আর জানা কথা যে, গোলাম আহমদ পূর্ব দামেস্কর সাদা মিনারের নিকট কখনও অবতরণ করেনি। বরং সে কাদিয়ানে জন্ম গ্রহণ করেছে। আমরা ইতিপূর্বে তা উল্লেখ করেছি। এমনকি সে তার জীবনে কখনও দামেস্ক দেখেনি। কথিত আছে, ‘যখন তোমার লজ্জা থাকবে না তখন যা ইচ্ছে তা কর’ এই হাদীসটি সে অস্বীকার করতে না পেরে এর বিকৃত ও মেকী ব্যাখ্যা দিতে আরম্ভ করল। কখনও সে বলে: আমি মাসীহের আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে’। (এজালাতুল আওহাম’ ৭২-৭৩ পৃ:।) সে আরো বলে: ‘আমি অপর একজন মসীহের আগমনের সম্ভাবনা অস্বীকার করি না এবং কখনও অস্বীকার করব না, যার উপর হাদীসে বর্ণিত প্রকাশ্য গুণাবলি প্রযোজ্য হয় আবার তা প্রকাশ্য অর্থে প্রযোজ্য হয় না। (হায় আক্ষেপের বিষয়।) হয়ত বা প্রকৃত পক্ষে মাসীহ দামেস্কে অবতরণ করবেন। (শেখ আব্দুল জববারের নিকট গোলামের লিখিত পত্র যা কাশেম কাদিয়ানীর লিখিত ‘তাবলীগে রেসালতের’ ২য় খন্ড ১৫৯ পৃ: সন্নিবেশিত।) অতঃপর যখন সে বুঝতে পারল যে, এতে কোন ফলোদয় হবে না। তখন সে নতুন পন্থা অবলম্বন করল। কিন্তু এটা প্রথমটি থেকে আরো নিকৃষ্ট। সে বলে- ‘সহীহ মুসলিমে যে কথার উল্লেখ রয়েছে যে, মাসীহ আলাইহিস সালাম পূর্ব দামেস্কের সাদা মিনারের নিকট অবতরণ করবেন, তা মহাক্কেক আলেমগণকে অস্থির করে তুলেছে। কিন্তু এখন আল্লাহ আমার কাছে এর অর্থ প্রকাশ করেছেন। আর তা হল- দামেস্ক দ্বারা এমন জনপদ উদ্দেশ্য করা হয়েছে যেখানে ইয়াজিদ পন্থীরা বসবাস করে, যারা আল্লাহর শত্রু এবং আল্লাহর রাসূলের শত্রু; যারা তাদের প্রবৃত্তিকে উপাস্য নির্ধারণ করেছে এবং নিজ ‘নফসে আম্মারার’ অনুসরণ করেছে। তা সত্ত্বেও এদের মধ্যেই মাসীহের অবতরণ করা অনিবার্য। আল্লাহ তা,আলা আমার কাছে এ কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, দামেস্ক দ্বারা এমন একটি জনপদ উদ্দেশ্য করা হয়েছে যেখানে দামেস্কের বৈশিষ্টাবলী বিদ্যমান আছে। আর সেটা হল ঐ কাদিয়ান। আল্লাহ আমার কাছে এটা প্রকাশ করেছেন। কেননা, কাদিয়ান দামেস্কের সাথে সামঞ্জস্য রাখে এবং এতে এজিদ পন্থীরা বসবাস করে। আর একথা স্পষ্ট যে উদাহরণে পুরাপুরি সামঞ্জস্য হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং অনেক সময় দু’বস্ত্তর মধ্যে সামান্যতম সামঞ্জস্য থাকার কারণে এক বস্ত্তর উপর অপর বস্ত্তর নাম ব্যবহার করা হয়। এ সাধারণ নিয়ম অনুসারে আল্লাহ দামেস্কর সহিত কাদিয়ানের তুলনা করেছেন। (গোলামের এজালাতুল আওহাম ৬৩-৭০ পৃ: সার সংক্ষেপ।) বাকি রইল ‘মিনারের’ প্রশ্ন? তার মাসীহিয়্যতের দাবি করার বার বৎসর পর ১৯০৩ সালে কাদিয়ানে একটি মিনার নির্মাণ করে তার নামকরণ করল ‘মানারাতুল মাসীহ’। আর বলল, এটাই সেই মিনার হাদীসে যার উল্লেখ রয়েছে যে এতে মাসীহ অবতরণ করবেন। (গোলামের ঘোষণা যা তার ঘোষণা-বলীর সমষ্টি, কাসেম কাদিয়ানীর ‘তাবলীগে রেসালাতে’ সন্নিবেশিত।) এটা কি বোকামীর পর বোকামী নহে? এ অজ্ঞতার উপর কি আর কোন অজ্ঞতা হতে পারে? ঐ সকল আচ্ছাদিত বুদ্ধিমত্তার জন্য আফসোস যারা একে বিশ্বাস করে এবং এর অনুসরণ করে! ঐ সকল নির্বুদ্ধিতা ও দুর্বল বিষয়াদিকে জেনে শুনেও একে বিশ্বাস করে এবং মেনে চলে। মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন- ‘তাদের অন্তর আছে যদ্দরা তারা অনুধাবন করতে পারে না এবং তাদের চক্ষু আছে যদ্দারা তারা দেখতে পারে না এবং তাদের কান আছে যদ্দরা তারা শুনতে পারে না। ওরা একেবারে উদাসীন। [২ সূরা আ’রাফ, ১৭৯।] এর চেয়ে অধিক আশ্চর্যের বিষয় হল- যখন হাদীসে একথা উল্লেখ রয়েছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম দু’টিচাদর পরিধান করে অবতরণ করবেন, তখন সে বলল- সহীহ মুসলিমে এর প্রমাণ আছে যে, ঈসা আলাইহি সালাম দু’টি হলুদ বর্ণের চাদর পরিধান করে অবতরণ করবেন এর অর্থ হল, তিনি অবতরণ কালে অসুস্থ থাকবেন। (গোলামের এজালাতুর আওহাম’ ৮১ পৃ:) সে আরো বলে- দুই চাদর দ্বারা উদ্দেশ্য দুটি রোগ। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথার দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, মাসীহ তাঁর অবতরণ কালে দুটি রোগে আক্রান্ত থাকবেন। উল্লেখ্য যে আমি দুটি রোগে আক্রান্ত আছি। একটি বহুমূত্র, অপরটি মাথাঘুরান। (গোলামের প্রবন্ধ যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘বদরে’ সন্নিবেশিত, ৮ই জুন ১৯০৬ খৃ:।) সে লিখেছে- যখন আমি প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার দাবি করি তখন আমি দুটি রোগে আক্রান্ত হই, একটি বহুমূত্র অপরটি মাথাঘুরান। (গোলামের হকী-কতে ওহী’ ১০৬ও ২০৭ পৃ:) পরিশেষে এই হাদীসে আছে যে, মাসীহ আলাইহিস সালাম দুটি হলুদ বর্ণের চাদর পরিধান করে অবতরণ করবেন। চাদর দুটি হল আমার মাথা ঘুরান রোগ যার প্রচন্ডতার কারণে আমি কখনও মাটিতে পড়ে যাই এবং আমার বহুমূত্র রোগ, যার কারণে আমি কখনও কখনও রোজ একশতবার প্রস্রাব করে থাকি। (গোলামের বারাহীনে আহমদিয়া’ এর পরিশিষ্ট ৫ম খন্ড, ২০১ পৃ:।)
এটা কি আশ্চর্যের ব্যাপার নহে যে, সত্য মাসীহ আলাইহিস সালাম জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান করতেন এবং আল্লাহর নির্দেশে মৃতদের জীবিত করতেন? আর এই মিথ্যা মাসীহ এমন রোগে আক্রান্ত হয় যা তাকে অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে ফেলে দেয়, এবং এত অধিক পরিমাণ প্রস্রাব করে যে সর্বদা তার পাশে পাত্র রাখতে সে বাধ্য হয়, যাঁর মধ্যে প্রস্রাব করে নিজেই উহা বাহিরে ফেলে দেয়। (কাদিয়ানী মুফতি মুহাম্মদ সাদেকের ভাষণ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজলে সন্নিবেশিত, ৬ই ডিসেম্বর ১৯২৪ খৃ:) এ সমস্ত অন্তঃ সারশূন্য ব্যাখ্যা দেওয়ার পরও সে মনের দিক থেকে শান্তি লাভ করতে পারেনি। এমনকি, সে বলেছে: ‘অপর একজন মাসীহের অবতরণ সম্ভব যার উপর হাদীসে বর্ণিত গুণাবলি বাহ্যিকভাবে প্রযোজ্য হবে’। (গোলামের ‘এজালাতুল আওহাম’ ১৯৯ পৃ:।) সে তার এ বক্তব্যে সত্যই বলেছে যে, পরস্পর বিরোধী দুটি বক্তব্য পাগল বা মুনাফিক ব্যতীত আর কারো কাছ থেকে প্রকাশ পাবে না। (গোলামের ছিত্তে ভজন ৩১ পৃ:।) মোটকথা এ গুণটিও এই জনাবের উপর প্রযোজ্য হয়নি। আর তা হল এই মাসীহ আলাইহিস সালাম দুটি হলদে বর্ণের চাদর পরিধান করে দুজন ফেরেস্তার ডানার উপর ভর করে পূর্ব দামেস্কের সাদা মিনারের নিকট অবতরণ করবেন। [১ আমি জানি না যে, তারা কিভাবে্এ হাদীসের ব্যাখ্যা করে? অর্থাৎ মাসীহ দুই ফেরেস্তার ডানার উপর দুহাত দিয়ে ভর করে? অর্থাৎ মাসীহ দুই ফেরেস্তার ডানার উপর দুহাত দিয়ে ভর করে অবতরণ করবেন। সম্ভবতঃ কাদিয়ানীর দৃষ্টি এদিকে পড়েনি। অন্যথায় সে একথা বলত না যে, উহা দ্বারা দুটি কাঠ উদ্দেশ্য যার উপর চলাফেরায় অক্ষম ব্যক্তি ভর করে। ওলা হাওলা ওলাওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।] অতএব, প্রমাণিত হল যে, সে তার দাবিতে মিথ্যা..........।
৪- চতুর্থ গুণটি হল যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন, তা হল- ‘কাফেরদের মৃত্যু বরণ। তিনি এরশাদ করেছেন- ‘‘কোন কাফের তার নিশ্বাসের গন্ধ পেলেই মৃত্যুবরণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আর তাঁর নিশবাস এত দুর পর্যন্ত পৌঁছোবে যত দুর পর্যন্ত তার দৃষ্টি পৌঁছোবে’’। গোলাম আহমদের অবস্থা এর বিপরীত। তার দাবিকালে কাফেরদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। কেননা, সে বলেছে যে, আমাকে বিশ্বাস করবে না সে কাফের। (গোলামের হাকীকতে ওহী ১৬৩ পৃ:।) তার উপর মাত্র বিশ হাজার নির্বোধ লোক বিশ্বাস করেছে। অচিরেই আমি এর বিস্তারিত আলোচনা করব যে তার মৃত্যুর বিশ বৎসর পর যখন আদম শুমারি করা হল, তখনও কাদিয়ানীদের সংখ্যা পঁচাত্তর হাজার অতিক্রম করেনি। (আল-ফজল, ২১ জুন ১৯৩৪ খৃ:।) এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, মৃত্যুর দ্বারা কাফেরদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার স্থলে দুই হাজার মিলিয়নেরও অধিক লোক তার আগমনের কারণে কাফের হয়ে গেল...।
৫- মাসীহে মাওউদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হল, ‘‘তিনি ন্যায় বিচারক শাসক হবেন, শাসিত নহে। অত্যাচারী শাসক ও নহে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু এই জনাব গোলাম কাদিয়ানী শুধু শাসিতই ছিলেন না, বরং লাঞ্ছিত ও তার জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতক এবং কাফের সাম্রাজ্যবাদের দাস ও তার প্রজা হওয়ার দ্বারা গৌরাবান্নিত ছিল। এই তো সে ইংরেজের দাসত্বের কথা সগৌরবে উল্লেখ করে বলছে- ‘আমার পিতা আমরণ ইংরেজ সরকারের নিষ্ঠাবান সেবক ছিলেন। তার পর মহান সরকারের এই খেদমত আমার ভাই গোলাম গোলাম কাদির উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেন। তিনিও আমরণ ইংরেজ সরকারের ভালোবাসা ও সেবায় আমাদের বাবার পথ অনুসরণ করে চলতে লাগলেন। অতঃপর আমি তাদের পথ ধরে চলছি এবং যথাযথভাবে তাদের অনুসরণ করছি। কিন্তু আমি কোন ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী ছিলাম না। এজন্য আমি আমার হাত ও কলম দ্বারা ইংরেজ সরকারের সেবা করতে উদ্যোগী হলাম। আল্লাহর নামে অঙ্গিকার করলাম যে, আমি এমন কোন পুস্তক লিখব না যাতে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারের অবদানের কথা উল্লেখ থাকবে না। (গোলামের নুরুল হক ১ম খন্ড ২৮ পৃ:।) সে আরো বলে: আমি ইংরেজ সরকারের এমন সেবা করেছি যেমন সেবা আর কেউ করতে পারেনি। এমনকি আমার বাপ দাদাও নহে। আর তা হল এই- আমি আরবী ফার্সী ও উর্দু ভাষায় কয়েক দশক পুস্তক এ উদ্দেশ্যে রচনা করেছি, যাতে আমি এ কথা ব্যক্তি করি যে, দয়াবান ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ নহে। সকল মুসলমানের কর্তব্য হল তারা যেন খাঁটি অন্তরে এ সরকারের আনুগত্য করে। এ জন্য আমি আমার বিশ্বস্ত শিষ্যদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছি যারা ইংরেজ সরকারের প্রতি নিষ্ঠাবান এবং তার জন্য সকল প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্ত্তত’। (গোলাম কাদিয়ানীর ভাষণ যা তাবলীগে রেসালাতে সন্নিবেশিত, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৬৫ পৃ:।) সে আরো বলেছে: প্রত্যেক সৌভাগ্যবান মুসলিমের কর্তব্য হল ইংরেজদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য দো’আ করা এবং শত্রুদের উপর তাদের বিজয় কামনা করা। কেননা, এরা একটি অনুগ্রহশীল জাতি এবং আমাদের উপর এ ব্রিটিশ সরকারের বড় বড় অবদান রয়েছে। যে সকল মুসলমান এ সরকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করি তা হলে আমরা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হব।’ (গোলাম কাদিয়ানীর এজালাতুল আওহাম ৯পঃ।) উপরন্তু সে নিজেই স্বীকার করেছে যে, হাদীসের শব্দাবলির বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী প্রতিশ্রুত মাসিহ রাজত্ব ও শাসন ক্ষমতা নিয়ে আসবেন। ‘‘ কিন্তু আমি ফকিরী ও দরবেশি নিয়ে এসেছি’’। (গোলামের ‘এজালাতুল আওহাম’ ৩০০ পৃ:।) হায়রে তার অসহায় অবস্থা!
৬- মাসীহ আলাইহিস সালাম এর অপর একটা নিদর্শন হল যে, তিনি ক্রুশকে ভেঙে ফেলবেন। এরপর আর ক্রুশের পূজা হবে না। এটা হল সাইয়েদেনা ঈসার আলাইহিস সালাম বড় বড় অলৌকিক ঘটনাবলীর অন্যতম। তিনি পৃথিবীতে এমন কোন ক্রুশ রাখবেন না যার পূজা করা হবে, এভাবে এমন কোন খ্রিস্টানও রাখবেন না, যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সামনে রুকু, সেজদা করবে। এ কথা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী স্বীকার করে বলেছে: ‘প্রতিশ্রুত মাসীহের আলাইহিস সালাম জন্য যে সকল প্রকাশ্য ও স্পষ্ট নিদর্শনা বলী নির্ধারণ করা হয়েছে তার অন্যতম হল তার হাতে ক্রুশ ভাঙ্গা হবে। (গোলামের আঞ্জামে আথম ৪৬ পৃ:।) এ কথাটি পরবর্তী পৃষ্ঠায় দ্বিতীয়বার উল্লেখ করে বলেছে: ‘হাদীসে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে যে, মাসীহের আলাইহিস সালাম সর্ব প্রথম নিদর্শন তার হাতে ক্রুশ চূর্ণ হবে।’ (উল্লেখিত কিতাব ৪৭ পৃ:) এ বখাটেকে সে আরো অধিক স্পষ্ট করে বলেছে: মাসীহের আলাইহিস সালাম অবতরণ উদ্দেশ্য হল, ত্রিত্ববাদের চিন্তাধারাকে মুছে ফেলা এবং একক আল্লাহর মহত্ত্ব প্রকাশ করা। (গোলামের মানারাতুল মাসীহের ঘোষণা যা তাবলীগে রেসালাতে সন্নিবেশিত।) অনুরূপভাবে সে অন্যত্র লিখছে: মাসীহ আলাইহিস সালাম তার সকল প্রচেষ্টা ত্রিত্ববাদের চিন্তাকে মুছে ফেলার জন্য ব্যয় করবেন।’ (গোলামের ‘আইয়ামে সুলহ’ এর টীকা, ৪৪ পৃ:।) একথা স্বীকার করার পর তার মাসীহিয়তের প্রমাণ স্বরূপ বর্ণনা করেছে. ‘এ ক্ষেত্রে (মাসীহিয়াতের ক্ষেত্রে) আমি যে কাজ সম্পন্ন করছি তা হল, ঈসা আলাইহিস সালাম এর এবাদতের স্তম্ভ গুলো আমি, ভেঙে দিচ্ছি। (গোলামের প্রবন্ধ যা কাদিয়ানী পত্রিকা বদরে সন্নিবেশিত, ১৯শে জুলাই, ১৯০৬ খু:)
গোলাম কাদিয়ানীর জন্য তা কি অর্জিত হয়েছে? আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিশ্রুত মাসীহের যে সকল গুণাবলি বর্ণনা করেছেন এবং মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী ও যা স্বীকার করেছে, তা কি তার উপর প্রযোজ্য হয়েছে? এখন আমাদের দেখা উচিত, কাদিয়ানী পত্রিকা মাসিহিয়্যাত সম্পর্কে কি বলেছে, তা কি মুছে গেছে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, অথবা বর্ধিত ও উন্নত হয়েছে? ‘পয়গামে সুলাহতে কাদিয়ানীরা প্রচার করেছে যে, মসীহিয়্যাত দিন দিন উন্নতি লাভ করছে। (পয়গামে সুলাহ, ৬ই মার্চ, ১৯২৮ খৃ: প্রকাশিত।) এটাকে কাদিয়ানীরা স্বীকার করে নিয়েছে। আর এটাই হল গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিজ এলাকা ‘গুরদ উসবুরে’ মাসীহিয়্যাত সম্পর্কে আদম শুমারীর ভাষ্য। ১৮৯১ সালে গোলাম আহমদ যখন প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার ঘোষণা দিল তখন গুরদ উসবুরে খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল মাত্র দুই হাজার চারশো জন। এটাই নির্ধারিত ছিল যে, গোলাম আহমদ মাসীহিয়্যতের ঘোষণা করার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ প্রদান ও গোলাম আহমদের স্বীকৃতি অনুযায়ী একটি খ্রিস্টানও অবশিষ্ট থাকবে না। বিশেষ করে ঐ এলাকায় যেখানে সে বসবাস করে। কিন্তু ঘটল কি? মাত্র দশ বৎসর পর ১৯০১ সালে এদের সংখ্যা ৪৪৭১ জনে পৌঁছোল। যখন এ এলাকার পরবর্তী আদম শুমারী ১৯১১ সালে অনুষ্ঠিত হল তখন তাদের সংখ্যা দাঁড়াল ২৩৩৬৫ জনে এবং ১৯৩১ সালে ৪৩৩৪৩ জনে। অর্থাৎ গোলামের মাসীহিয়্যতের ঘোষণার পর মাত্র চল্লিশ বৎসরের মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা বিশগুণ বেড়ে গেল। আর ইহা ঘটল একটা ছোট এলাকা অর্থাৎ তারই এলাকায়। এটা তার ঐ কথা সত্ত্বেও ঘটল: ‘আমি যদি ইসলামের সাহায্যার্থে এমন কাজ না করে মরে যাই যা মাসীহিয়্যতের সহিত সম্পৃক্ত, তবে তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমি মিথ্যাবাদী। (গোলামের প্রবন্ধ যা ১৯শে জুলাই, ১৯০৬ সালের বদরে সন্নিবেশিত। শেখ আব্দুল্লাহ মেমারের পকেট বুক হতে উদ্ধৃত।)
প্রকাশ থাকে যে, আমরা আদম শুমারী এবং কাদিয়ানীদের স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রমাণ করেছি যে, প্রতিশ্রুত মাসীহের যা কর্তব্য ছিল তা সে করেনি। তবে সে নিজেরই বক্তব্য অনুযায়ী মিথ্যাবাদী ব্যতীত আর কিছুই নহে। তার বক্তব্য অনুযায়ী আমরাও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে সে একটা মস্ত বড় মিথ্যুক।
৭- প্রতিশ্রুত মসীহের সপ্তম বৈশিষ্ট্য হল এই যে, তিনি শুকর নিধন ও উহা নির্মূল করার নির্দেশ দেবেন। এমনকি, এরপর আদৌ উহা ভক্ষণ করা হবে না। এটা কি গোলাম লাভ করতে পেরেছে? এখন পর্যন্ত কি শুকর ভক্ষণ করা হচ্ছে না, না কি হয়?
৮- প্রতিশ্রুত মাসীহের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, তিনি সমুদয় মানব জাতিকে একই ধর্ম ইসলামের উপর একত্রিত করবেন। অপর কোন ধর্ম অবশিষ্ট থাকবে না, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তি ‘বরং তিনি যুদ্ধ রহিত করবেন, দ্বারা তা বুঝা যাচ্ছে। সুতরাং কেহ যেন এ ধারণা না করে যে, যুদ্ধ রহিত করার অর্থ জেহাদ উঠিয়ে দেওয়া। না, বরং এর অর্থ হল ইসলাম ব্যতীত অপর কোন ধর্মকে তিনি অবশিষ্ট রাখবেন না যাতে তার যুদ্ধ করতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি ওহীর সাহায্যে কথা বলেন, তিনি এ অর্থটি বিস্তারিত ভাবে অপর হাদীসে বর্ণনা করেছেন, যা আহমদ তাঁর মসনদে এবং আবু দাউদ তার সূনানে উল্লেখ করেছেন: ‘আমি মরিয়ম পুত্রের অধিক নিকটবর্তী, তিনি অবতরণ করবেন। যখন তোমরা তাঁকে দেখবে তখন এমন অবস্থা দ্বারা তাঁকে চিনে নাও যে, তিনি একজন মধ্যম গড়নের লাল সাদা মিশ্রিত রংয়ের লোক হবেন। তাঁর পরনে দুটি হলুদ বর্ণের কাপড় হবে, তাঁর মাথা থেকে যেন পানির ফোটা পড়ছে, যদিও আদ্রতা তাকে আদৌ স্পর্শ করেনি। তিনি ক্রুশ চূর্ণ বিচূর্ণ করবেন, শুকর হত্যা করবেন, কর রহিত করবেন এবং মানব জাতিকে ইসলামের দিকে আহবান করবেন। তার যুগে আল্লাহ তাআলা ইসলাম ব্যতীত সমুদয় ধর্মকে খতম করে দেবেন..। হাদীসের শেষ পর্যন্ত । [১ আহমদ আবু দাউদ।] আবু হুরায়রা রা. এ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন: ইচ্ছে হলে তোমরা পড় [২ বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাযা ও আহমদ। কোন কোন আলেম এ রেওয়ায়েতকে মারুফ বলে উল্লেখ করেছেন।]:
‘‘আহলে কিতাবের সকলেই তার মৃত্যুতে পূর্বে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তিনি তাদের জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে এবং ক্বিয়ামতের দিন তিনি তাদের জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবেন।’’ [১ সুরা নিসা ১৫৯] ভন্ডনবী কাদিয়ানীও একথা স্বীকার করেছে যে, প্রতিশ্রুত মাসীহের অন্যতম গুণ হবে ইসলাম প্রচার করা এবং তাঁর যুগের অন্যান্য ধর্মকে মিটিয়ে দেওয়া। এটাই হল তার ভাষ্য ‘এর উপর সবাই একমত যে, প্রতিশ্রুত মাসীহের যুগে পৃথিবীতে ইসলাম অধিক মাত্রায় প্রসার লাভ করবে এবং অন্যান্য বাতিল ধর্মসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (গোলামের আইয়ামে সুলাহ ১৩৬পৃঃ) সে লিখেছে- আল্লাহর উক্তি: আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম, এর মধ্যে রাজীম শব্দ থেকে প্রকাশ পাচ্ছে যে, এমন একটি যুগ আসবে যখন কোন বাতিল অবশিষ্ট থাকবে না এবং মিথ্যা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর ইসলাম ব্যতীত সকল ধর্ম নির্মূল হয়ে যাবে। (গোলামের এজাজে মাসীহ ৮৩ পৃ:।) সে আরো বলেছে: আল্লাহর ইচ্ছে যে, সমুদয় ধর্মকে এক ধর্মে পরিণত করবেন। আর এ কাজের জন্য একজন প্রতিনিধি নির্ধারিত করে তাঁর নাম রেখেছেন প্রতিশ্রুত মাসীহ’। (গোলামের মেরআতুল মারেফা ৮২ পৃ:।)
এখন প্রশ্ন হল গোলাম আহমদের মাসীহিয়্যাত দাবি করার পর ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অপর সকল ধর্ম কি ধ্বংস হয়ে গেছে? এবং এক ধর্ম অর্থাৎ ইসলামের উপর কি সকল লোক একত্রিত হয়েছে? এ প্রশ্ন অত্যন্ত স্বাভাবিক, এবং এর উত্তর অতি স্পষ্ট ও প্রকাশ্য। বরং বহু বাতিল ধর্মের মধ্যে আর একটি ধর্ম বৃদ্ধি পেল। আর তা হল মিথ্যাবাদী কাদিয়ানীর মতবাদ কাদিয়ানী ধর্ম।
৯- মাসীহ আলাইহিস সালাম আর একটি অন্যতম গুণ হল- তিনি ‘লুদ’ দ্বার প্রান্তে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, তিনি লুদ নামক দ্বার প্রান্তে দাজ্জালকে খুঁজে পাবেন এবং তথায় তাকে হত্যা করবেন। ভন্ডনবী কাদিয়ানীও প্রতিশ্রুত মাসীহের এ গুণটি স্বীকার করে বলেছে: অতপর মরিয়ম পুত্র মাসীহ দাজ্জালের অন্বেষণে বের হবেন এবং বাইতুল মুকাদ্দাসের লুদ নামক জনপদের দরজার নিকটে তাকে পেয়ে হত্যা করবেন। (গোলাম কাদিয়ানীর এজালাতুল আহাম, ২২০ পৃ:।) গোলাম আহমদ নিজেই প্রতিশ্রুত মাসীহের এ গুণটি স্বীকার পর তার জন্য কি এ গুণ অর্জিত হয়েছে? না, কখনও না। কেহই এ কথা বলে নাই এবং বলতে পারবে না যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী দাজ্জালকে হত্যা করেছে। সে তো এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে যে, বাইতুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হয়নি এবং তা দেখেও নি।
১০- প্রতিশ্রুত মাসীহের দশম গুণ হল এই যে, তাঁর যুগে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য হবে। এমনকি কোন ভিক্ষুক থাকবে না যে লোকের কাছে ভিক্ষা চেয়ে ফিরে। সত্যবাদী বিশ্বস্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন: ‘‘ধন-সম্পদে অধিক হবে যে, কেহই উহা গ্রহণ করবে না’’। আর, এটা হবে প্রতিশ্রুত মাসীহের বরকত। (তার উপর ও আমাদের নবীর উপর হাজার হাজার সালাম।) প্রতিশ্রুত মাসীহের দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর যুগে কি এমন হয়েছে? সম্পদ কি এত অধিক পরিমাণে হয়েছে যে, কোন ভিক্ষুক অবশিষ্ট থাকে নাই, যে ভিক্ষা চেয়ে ফিরে এবং এমন কোন মিসকিন অবশিষ্ট থাকে নাই, যে মানুষের হাতের দিকে তাকায়? কাদিয়ানী মাসীহ কি লোকজনকে ধন-সম্পদ দান করবেন এবং লোকজনকে তা গ্রহণ করতে আহবান জানাবেন। কিন্তু কেহই তা গ্রহণ করবে না। আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈসা আলাইহিস সালাম ন্যায় বিচারক, শাসক এবং ন্যায় পরায়ণ ইমাম রূপে অবতরণ না করেন। তখন তিনি ক্রুশ ভাঙবেন, শুকর হত্যা করবেন এবং কর রহিত করবেন। ধন-সম্পদের এতই প্রাচুর্য হবে যে, উহা কেহই গ্রহণ করবে না।’ [১ ইবনে মাজাহ।] অপর এক বর্ণনায় আছে- লোকজন একে অপরকে ধন-সম্পদ গ্রহণ করার জন্য ডাকবে, কিন্তু কেহই তা গ্রহণ করবে না। [২ মুসনাদে আহমদ] এক রেওয়ায়েতে আছে- ‘তিনি শুকর হত্যা করবেন, ক্রুশ মুছে ফেলবেন এবং ধন-সম্পদ দান করবেন, কিন্তু কেহই তা গ্রহণ করবে না। [৩ মুসনাদে আহমদ] এর আলোকে যখন আমরা কাদিয়ানীর ইতিহাস ও তার চরিত্র দেখি, তখন আমরা ব্যাপারটি এর সম্পূর্ণ বিপরীত পাই। ভন্ডনবী কাদিয়ানীকে আমরা ধন-সম্পদ বিতরণকারী ও দাতা হওয়ার পরিবর্তে লোকের নিকট ভিক্ষা করতে ও তাঁদের নিকট স্পষ্ট চাইতে দেখি। সে তার ভক্তগণের নিকট এই বলে সওয়াল করে: যারা আমার অনুসরণকরে তাদের কর্তব্য হল প্রত্যেক মাসে তাদের মালের এক অংশ আমার নিকট পাঠিয়ে দেওয়া। এ ঘোষণার পর আমি তিন মাস অপেক্ষা করব, যে ব্যক্তি এ তিন মাসের মধ্যে আমার নিকট তার মালের একটি অংশ পাঠাবে না, আমি আমার ভক্তগণের তালিকা হতে তার নাম মুছে ফেলব। (গোলামের লওহুল মাহদী ১পৃঃ।) সে তার ভক্তগণের নিকট আরো লিখেছে লোকজনের কিছু দান-দক্ষিণা করা উচিত। কেননা, কোন কাজই টাকা পয়সা ব্যতীত সম্ভব নহে। আমাদের জামাতের এ দিকে লক্ষ্য করে যথা সম্ভব দান দক্ষিণা জমা করা কর্তব্য। (গোলামের ঘোষণা যা কাদিয়ানী পত্রিকা বদরে সন্নিবেশিত, ৯ই জুলাই ১৯০৩ খৃ:।) শুধু তা-ই নহে বরং সে তার ভক্তগণের জন্য যে দোয়া করত তারও বিনিময় গ্রহণ করত। কাদিয়ানী মুফতি উল্লেখ করেছেন ‘একদা একজন কাদিয়ানী ধনী ব্যক্তির ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহের নিকট তার রোগ নিরাময়ের দোয়া চাইল। জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ তার উত্তরে বললেন: এ ধনী ব্যক্তির উচিত যে একটা বড় অঙ্কের টাকা যেন আমার জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়, তা হলে আমি তার পুত্রের জন্য দোয়া করব।’ (কাদিয়ানী মুফতি মুহাম্মদ সাদেকের ভাষণ যা আল ফজর পত্রিকায় সন্নিবেশিত, ২২শে অক্টোবর, ১৯৩৭ খৃ: প্রকাশিত।) ভিক্ষা করতে করতে সে এমন নিম্ন পর্যায়ে নেমে যায় যে তার ভক্তগণের সঙ্গে কবর বেচা কেনা এবং এর দ্বারা ব্যবসা করতে আরম্ভ করে । এ ব্যবসার বিস্তারিত অবস্থা হল এই প্রথমত: সে ঘোষণা দিল আমি এখনই এমন একটা কবরস্থান দেখতে পেলাম, আল্লাহ তাআলা যার নাম রেখেছেন জান্নাতের কবরস্থান। তারপর আমার কাছে এলহাম এসেছে যে, পৃথিবীর সমস্ত কবরস্থান এ ভূমির সমতুল্য নহে। (মঞ্জুর কাদিয়ানীর লিখিত মুকাশেফাতুল গোলাম’ ৫৯ পৃ:।) অতঃপর তার ভক্তগণকে এই বলে উৎসাহিত করে- আমার প্রভু আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন এবং একটি ভূমির দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, এটা এমন একটি ভূমি যার নীচে বেহেস্ত আছে। যে ব্যক্তি এখানে সমাধিস্থ হবে সে বেহেস্ত প্রবেশ করবে এবং তার কোন ভয় ভীতি থাকবে না।’ (গোলামের আল-ইস্তেফতা আরবী ৫১ পৃ:) এরপর, সে তার মূল অবস্থা ধাপ্পা বাজী ও ধন সম্পদ কেড়ে নেওয়ার দিকে প্রত্যাবর্তন করে বলে: কাদিয়ানীদের কবরস্থানের জন্য আর একটি ভূমি সংগ্রহ করেছি এবং আল্লাহ আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, এ ভূমিটি বেহেস্ত এবং বলেছেন যে তিনি সর্ব প্রকার রহমত এতে অবতীর্ণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি এ সকল কবরে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে, তার কর্তব্য হবে সামর্থ্যনুযায়ী তার সম্পদের কিছু অংশ পাঠিয়ে দেওয়া। তার আরো কর্তব্য হবে তার ত্যাজ্য সম্পত্তির এক দশমাংশ কাদিয়ানী তহবিলের জন্য অছিয়ত করে যাওয়া।’’(গোলাম কাদিয়ানীর আল- অছিয়ত’ ১২-১৩ পৃ:।)
অপর দিকে, তার মাসীহিয়্যতের দাবির পিছনে ঐ সম্পদ লাভই উদ্দেশ্য ছিল, যা ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীরা তাকে প্রদান করেছিল এবং যা সরলমনা লোকজন হতে অর্জনের আশা করত। তার পুত্র ও দ্বিতীয় খলীফা মাহমুদ আহমদ তার মামা হতে বর্ণনা করে বলেছে: মির্জা শের আলী একজন সুদর্শন, সম্মানী এবং সাদা দীর্ঘ দাড়ি বিশিষ্ট লোক ছিলেন। তার বোন প্রতিশ্রুত মাসীহের স্ত্রী ছিলেন তিনি কাদিয়ানের রাস্তায় বসে থাকতেন। যখনই জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহের অনুসারীদের মধ্যে কোন নতুন আগন্তুক কাদিয়ানে আসত, তখন তিনি তাকে ডেকে কাছে বসাতেন এবং বলতেন: গোলাম আহমদ মিথ্যুক ও লুটেরা। সে এই দোকান পেতেছে (অর্থাৎ কাদিয়ানী মতবাদের দোকান) যাতে করে সে লোকের সম্পদ হরণ করতে পারে। আমি জনসাধারণকে তা অবগত করছি। কারণ সে আমার আত্মীয়, আর তোমরা তাকে চেন না। আমি জানি, সে একজন দরিদ্র লোক এবং তার আয় অতি নগণ্য। তদুপরি তার ভাই তাকে পিতার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এ জন্যই সে এ দোকান পেতেছে। তোমরা দূর- দূরান্ত থেকে এসে থাক এবং আমরা তার পাশেই বসবাস করি। গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের ভাষণ যা আল ফজলে সন্নিবেশিত, ১৭ এপ্রিল ১৯৪৬ খৃ:।) আমরা ইতিহাসের আলোকে কাদিয়ানীদের নবী’ নামক প্রবন্ধে জনগণের সম্পদকে অন্যায়ভাবে তার লুঠতরাজের পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছি। এ ধারাটি তার খলীফা ও সন্তানদের মধ্যে অদ্যাবধি চলে আসছে। প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আর্থিক অবস্থা হল এই। বাকি রইল সাধারণ লোকের অবস্থা। সকলেরই জানা আছে যে এ যুগে কি সম্পদের এতই প্রাচুর্য হয়েছে যে কাউকে দান করলে সে উহা গ্রহণ করবে না? গোলাম আহমদ কি জনগণকে ধন-সম্পদ দান করত? না, সর্ব প্রকার প্রতারণা ও মিথ্যা ছলনার দ্বারা তাদের নিকট থেকে উহা গ্রহণ করত? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী থেকে সে কতদূরে? মাসীহের আলাইহিস সালাম যুগে লোক একে অপরকে সম্পদ দিতে চাইলে কেহ তা গ্রহণ করবে না। সম্পদ দেয়া হবে, কিন্তু তা কেহই গ্রহণ করবে না.......।
১১- অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসীহে মাওউদের যুগে জনগণের মধ্যে আল্লাহর এবাদতে আগ্রহ এবং দুনিয়া ও উহার সব কিছুর উপর তা প্রাধান্য দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। এটাও গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর যুগে বাস্তবায়িত হয়নি ।কেননা, সে নিজেই স্বীকার করেছে যে তার উপর অল্প সংখ্যক মানুষের একটি দল ছাড়া আর কেহ বিশ্বাস স্থাপন করেনি। তার মৃত্যুর ত্রিশ বছর পর আদম শুমারীর সময়ে কাদিয়ানীদের সংখ্যা সমস্ত ভারতে পঁচাত্তর হাজারের অধিক হয়নি। (কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল ২১ শে জুন ১৯৩৪ খৃ:।) আমাদের এ বেচারার উপর এ গুণটিও প্রযোজ্য হল না।
১২- মসীহ আলাইহিস সালাম এর অবতরণের অন্যতম নিদর্শন হল পৃথিবীতে নিরাপত্তা স্থাপিত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, সিংহ উটের সহিত, চিতাবাঘ গরুর সহিত বিচরণ করবে। বালকগণ সাপ নিয়ে খেলবে, ওরা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করবে না। এটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। গোলাম আহমদের যুগেও নহে এবং তার পরেও নহে। এর উপর বড় প্রমাণ হল এই যে, কাদিয়ানীরা গোলাম আহমদের হজ না করার প্রশ্নে অসুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেছে: গোলাম আহমদ অসুস্থ থাকার কারণে হজ্জ করতে পারে নি। তদুপরি হিজাজের শাসনকর্তা তার বিরোধী। সেখানে গমন করলে তার প্রাণ নাশের আশঙ্কা রয়েছে। (আল ফজল, ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ খৃ:।) এই হল গোলাম আহমদের যুগে নিরাপত্তার অবস্থা, যা কাদিয়ানীরা নিজেই স্বীকার করেছে। কোথায় সেই উটের সহিত সিংহের, চিতাবাঘের সহিত গরুর এবং ছাগলের সহিত নেকড়ে বাঘের বিচরণ? কোথায় বালকদের সাপ নিয়ে খেলা ? উল্লেখ্য যে, গোলাম কাদিয়ানী তার শিষ্যদের মাধ্যমে বিরুদ্ধ বাদীগণকে গুপ্ত হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং তাকে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ আদালত তাকে খালাস করে দেয়।
১৩- প্রতিশ্রুত মাসীহ এর আরো একটি গুণ হল তিনি অবতরণের পর হজ্জে এফরাদ, তামাত্তু অথবা ক্বেরান করবেন। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গোলাম আহমদ হজও করে নি, উমরাহও করেনি। এমনকি পবিত্র স্থান সমূহ দেখার ও তার সুযোগ ঘটেনি। এইতো কাদিয়ানীদের অবস্থা যারা দুর্বল, অন্তঃসারশুণ্য ও সস্তা ব্যাখ্যা দ্বারা তাদের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে: যেমন আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি, গোলাম আহমদ অসুস্থ থাকার কারণে তার উপর হজ্জ ফরজ হয়নি এবং হেজাজের প্রশাসকও তার বিরোধী ছিলেন। কেনন, ভারতের আলেমগণ তাকে হত্যা করা ওয়াজিব বলে ফতওয়া দিয়েছেন। কাজেই সে ওখানে গেলে তার প্রাণ নাশের আশঙ্কা রয়েছে। (কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ খৃ:।) এ হল তার অবস্থা। অথচ সে দাবি করেছে যে, তার উপর ঐশী বাণী এসেছে, আল্লাহ তোমাকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন।’ (গোলামের তাজ কেরাতুশ শাহাদাতাইন’ ৪ পৃ:।) মোটকথা, প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার দাবিদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানী হজ্জ করেনি, রোগ, ভয় কিংবা অন্য যে কোন কারণে হোক । অথচ সে নিজেই স্বীকার করেছে যে, বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে ‘‘প্রতিশ্রুত মাসীহ হজ্জ করবেন,। (গোলামের আইয়ামে সুলাহ’ ১৬৯ পৃ:।) যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একথা প্রমাণিত যে হজ্জ করা প্রতিশ্রুত মাসীহের অন্যতম গুণ হেতু তার কোন ওজর আপত্তির অবকাশ থাকবে না। কেননা, প্রকৃত মাসীহের জন্য হজ্জ করার ব্যাপারে যত বাধা বিপত্তি আছে তা সব সরিয়ে ফেলা হবে, যাতে করে তার জন্য এ গুণটি প্রযোজ্য হয় যা এমন নী বর্ণনা করেছেন যিনি ওহী দ্বারা কথা বলেন। এ কথার প্রতি গোলামের স্বীকৃতি রয়েছে যে, হাদীসটি বিশুদ্ধ এবং মাসীহের জন্য হজ্জ সাব্যস্ত।
১৪- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, মাসীহ আলাইহিস সালাম পৃথিবীতে চল্লিশ বৎসর অবস্থান করে মৃত্যুবরণ করবেন। গোলাম কাদিয়ানী ১৮৩৯ বা ১৮৪০ সনে জন্ম গ্রহণ করে [১ গুলামের কিতাবুল বরিয়্যা ১৩৪ পৃঃ] এবং ১৯০৮ সনে মৃত্যুবরণ করে। [২ কাদিয়ানী পত্রিকা আল-হিকম ২৮শে মে , ১৯০৮ সালে প্রকাশিত।] এই হিসাবে তার বয়স ৬৮/৬৯ বৎসর হয়। কিন্তু সে এর ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, হাদীসে বর্ণিত বয়স দ্বারা নবুয়তের বয়স উদ্দেশ্য। (গোলামের এজালাতুল আওহাম ৮১ পৃ:।) তার এ দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। কেননা, তার মাসীহ হওয়ার দাবি ছিল ১৮৯১ খৃ:, যেমন তার পুত্র বশীর আহমদ তার সীরতে উল্লেখ করে বলেছে: অর্থাৎ গোলাম ১৮৮২ সনে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি এ উম্মতের সংস্কারক হিসাবে নিয়োজিত এবং ১৮৮৯ সনে ঘোষণা দিলেন যে তিনি মাসীহ মাওউদ। (বশীর আহমদের সীরতে মাহদী ১ম খন্ড ৩১ পৃ:।) এ ভিত্তিতে তার মসীহ হওয়ার দাবির উপর সতের বছরের অধিক কাল অতিবাহিত হয়নি এবং সে চল্লিশ বছর জীবিতও থাকেনি। তাই এ গুণটিও তার মধ্যে পাওয়া গেল না।
১৫- অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- মাসীহ আলাইহিস সালাম মৃত্যুবরণ করার পর মুসলমানগণ তাঁর জানাযার নামাজ আদায় করবেন। কিন্তু গোলাম আহমদের অবস্থা এর বিপরীত। কেননা, একজন মুসলমানও তার জানাযার নামাজ পড়েনি। বরং যারা তার জানাযার নামাজ পড়েছে। তারা সবাই ছিল মুরতাদ ও বিদ্রোহী দলভুক্ত। কাদিয়ানীদের কেহই একথা প্রমাণ করতে পারবে না যে, কোন মুসলিম ব্যক্তি তার জানাযার নামাজ পড়েছে।
১৬- হাদীস শরীফে আছে, যে হাদীসকে ইবনুল জাওযীর উপস্থাপনা অনুযায়ী মিশকাতুল মাসাবীহের গ্রন্থকার বর্ণনা করেছেন যে, প্রতিশ্রুত মাসীহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওজা মুবারকে সমাধিস্থ হবেন। এ হাদীসের সনদ যাচাইয়ের কোন প্রয়োজন নেই। কারণ, গোলাম আহমদ নিজেই এর স্বীকৃতি দিয়ে বলেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, প্রতিশ্রুত মাসীহ আমার কবরে সমাধিস্থ হবেন। (গোলাম কাদিয়ানীর সাফিনায়ে নূহ ১৫ পৃ:।) অতএব গোলাম কাদিয়ানীর জন্য এ সম্মান অর্জিত হয়নি, সেত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরও জিয়ারত করতে পারেনি, আর সমাধিস্থ হওয়া তো দূরের কথা? কারণ সে লাহোরে মৃত্যুবরণ করেছে (পশ্চিম পাকিস্তানের রাজধানী) পরে তার লাশ কাদিয়ানী এনে তথায় দাফন করা হয়। [৩ আল-হিকম’ ২৮ শে মে, ১৯০৮ খৃঃ।] যখন এ গুণটিও তার বেলায় প্রযোজ্য হয়নি তখন তারা তাদের অভ্যাস অনুযায়ী বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে বলতে লাগল যে, কবর দ্বারা প্রকৃত কবর উদ্দেশ্য নহে, বরং আধ্যাত্মিক কবর উদ্দেশ্য। কেননা, যদি প্রকৃত কবর উদ্দেশ্য নহে, বরং আধ্যাত্মিক কবর উদ্দেশ্য। কেননা, যদি প্রকৃত কবর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে তাতে রাসূলুল্লাহ এর অবমাননা হবে। আর তা হল, কবর খুলে তাতে প্রতিশ্রুত মাসীহকে দাফন করা। (খাদিম কাদিয়ানীর আহমদিয়া পকেট বুক।) আমরা বলি: আরবগণ কবর শব্দ বলে কবরস্থান অর্থ গ্রহণ করে। এটা তাদের কাছে প্রচলিত। মুছান্নাফে ইবন আবি শাইবার রা. কিতাবুল জানায়িযে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন: ‘আমাকে ওসমান ইবন মাযউনের কবরে অর্থাৎ কবরস্থানে দাফন করিও। (ইবনে আবি শাইবা, কিতাবুল জানায়িয ১৩৪ পৃ: ভারতীয় মুদ্রণ।) একই কিতাবের একই ভাবে মুয়াবিয়া ইবনে হিশাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি সুফিয়ান থেকে, সুফিয়ান অপর এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন, খায়সামা ওসিয়াত করে গেলেন যে, তাকে যেন তার গোত্রীয় দরিদ্রদের মাকবারাতে (কবরস্থানে) দাফন করা হয়। আরবদের নিকট মাকবারার স্থলে কবর এবং কবরের স্থলে মাকবারা ব্যবহার প্রচুর রয়েছে। কাদিয়ানী মুবাল্লেগ খাদেম তার পুস্তকে মুল্লা আলী ক্বারী থেকে বর্ণনা উল্লেখ করেছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম পৃথিবীতে অবস্থানের পর হজ্জ সম্পাদন করবেন এবং ফিরে এসে মক্কা ও মদিনার মধ্যস্থলে মৃত্যুবরণ করবেন। তাঁকে মদিনাতে এনে রওজা শরীফে দাফন করা হবে। (গোলাম কাদিয়ানীর আহমদিয়া পকেট বুক ৪৮২ পৃ:।)
এ কথাও অপরিহার্য নয় যে ‘‘মধ্যে’’ অব্যয়টি সর্বদা জরফিয়তের (স্থান-কাল) অর্থে ব্যবহৃত
হবে। কখনও কখনও নিকট অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী এর প্রমাণ,আল্লাহ বলেন: ‘‘ধন্য সে ব্যক্তি, যে আগুনের নিকটবর্তী স্থানে আছে। [১ সুরা নামল, ৮।]
ইমাম রাজী বলেন, এটাই অধিক যুক্তিসংগত। কেননা, নিকটবর্তী বস্ত্তকে বলা হয় এটা উহার মধ্যে আছে। (ইমাম রাজীর তাফসীরে কাবীর ৪৩৬ পৃ:, ৬ষ্ট খন্ড।) অতএব, আমার কবরে দাফন করা হবে এর অর্থ আমার কবরের নিকট দাফন করা হবে। তিরমিজী আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রা. থেকে যে রেওয়ায়েত করেছেন তা এ অর্থকে সমর্থন করে। তিনি বলেছেন: তাওরাতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবস্থা এভাবে লিখিত আছে, মরিয়ম পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম তার সহিত সমাধিস্থ হবেন।
তিরমিজী এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, এটা হাদীসে হাসান। আর এ হাদীসটি তাবরেজী মিশকাতুল মাসাবীহে উল্লেখ করে বলেছেন: আবু মাওদুদ বলেছেন: (তিনি এ হাদীসের একজন মাদানী রাবী) এ ঘরে একটি কবরের জায়গা অবশিষ্ট রয়েছে’ উল্লেখ্য যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজে স্বীকার করেছে এ হাদীস (অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালাম আমার কবরে সমাধিস্থ হবেন।) এর প্রকাশ্য অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে অর্থাৎ সম্ভবত: অপর একজন মাসীহ আগমন করবেন, যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা পাকের নিকট দাফন করা হবে।(গোলামের এজালাতুল আওহাম ১৯৬ পৃ:।) অনুরূপ ভাবে কাদিয়ানী বিতর্ক কারিরা ও এ কথার স্বীকার করেছে, যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। এ সমস্ত অকাট্য প্রমাণাদি ও স্পষ্ট দলীল দস্তাবেজ দ্বারা সাব্যস্ত হল যে, গোলাম আহমদ তার মাসীহ হওয়ার দাবিতে মিথ্যুক। আর তা ঐ সমস্ত গুণাবলির মাপ কাটিতে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন, যিনি ওহী ব্যতীত কথা বলেন না, যার সম্পর্কে কল্যাণময় মহান আল্লাহ বলেছেন: তিনি তাঁর প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কথা বলেন না। তিনি যা বলেন তা ওহী ব্যতীত আর কিছু নহে, [১ সুরা নাজম ৪।] সেই মহান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিশ্রুত মাসীহের যে গুণাবলি বর্ণনা করেছেন তার আলোকে গোলাম আহমদ মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত। এমন কি গোলাম তার নিজের স্বীকারোক্তির দ্বারাও মিথ্যুক প্রমাণিত। আমরা সূত্র ব্যতীত কোন কিছুরই উল্লেখ করিনি। এ ব্যাপারে আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। কেননা, কাদিয়ানীরা অনেক সময় দুর্বল বুদ্ধি, দুর্বল চিত্ত ও দুর্বল জ্ঞান সম্পন্ন লোকদেরকে এ সকল সন্দেহ সৃষ্টিকারী ও ফন্দি দ্বারা প্রতারিত করে থাকে। তাদের সমুদয় বাঁকা ইমারত গুলি এ বিশ্বাসের উপরই প্রতিষ্ঠিত যে, গোলাম আহমদ প্রতিশ্রুত মাসীহ। তারা দলীল প্রমাণ দ্বারা তাদের এ বিশ্বাস প্রমাণিত করতে অতিশয় দুর্বল।
পাঠকবৃন্দ, নিশ্চয়ই তার দাবি নিরীক্ষণ করেছেন এবং এই সাথে তার দুর্বল প্রমাণাদিও দেখেছেন। এটা কি কোন বুদ্ধিমানের কথা- আমি প্রতিশ্রুত মাসীহ। তার প্রমাণ? কেননা, তা একমাত্র আমিই এ দাবি করেছি। (গোলামের এজালাতুল আওহাম ৬৮৫ পৃ:।)
পরিশেষে, আমরা আমাদের এ প্রবন্ধ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদীস দ্বারা সমাপ্ত করব যার মধ্যে তিনি মাসীহ আলাইহিস সালাম অবতরণের পূর্বে ও পরে পৃথিবীতে কি ঘটবে তা স্পষ্টকরে বর্ণনা করেছেন। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী নওয়াস বিন সাম’আন রা. বলেন: একদা ভোর বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের আলোচনা করলেন। এক পর্যায়ে তিনি তাকে অতি তুচ্ছ ভাষায় উল্লেখ করলেন, আবার তার খুব গুরুত্বও প্রকাশ করলেন। আমাদের নিকটবর্তী ঐ খেজুর বাগানেই আছে। তারপর রাসূলুল্লাহ এর নিকট থেকে আমরা উঠে আসলাম। বিকেলে তাঁর নিকট আবার গেলাম। তিনি আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ভাব অনুভাব করে জিজ্ঞাসা করলেন: তোমাদের কি অবস্থা? আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! ভোরবেলা আপনি দাজ্জালের উল্লেখ করতে গিয়ে কখনও উচ্চ: স্বরে আবার কখনও নিচু স্বরে তার আলোচনা করেন। আমাদের ধারণা হল যেন, দাজ্জাল আমাদের নিকটবর্তী খেজুর বাগানেই আছে। দাজ্জাল আমাদের নিকটবর্তী খেজুর বাগানেই আছে। তখন তিনি বললেন: দাজ্জাল ব্যতীত আমি অন্য বিষয় তোমাদের জন্য বেশি ভয় করি। সে যদি আমার জীবদ্দশায় বের হয় তাহলে তোমাদের রক্ষা করার জন্য আমিই যথেষ্ট। আর আমার অবর্তমানে বের হলে প্রত্যেক ব্যক্তির উপর নিজকে রক্ষা করার দায়িত্ব থাকবে। আমি সকল মুসলমানের আল্লাহকে রেখে যাব। আর মুসলমানদের সাহায্যের জন্য আল্লাহই থাকবেন। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই দাজ্জাল কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট একজন জওয়ান হবে। তার চক্ষু হবে সমতল। আমি তাকে আব্দুল উজ্জা ইবন কুতনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ দেখছি। তার সঙ্গে যার সাক্ষাৎ হবে সে যেন সূরা কাহফের প্রারম্ভিক আয়াতগুলো পাঠ করে। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে বের হবে। সে তার ডান দিকে বাম দিকে সর্ব অঞ্চলে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। আমরা বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ, সে পৃথিবীতে কতকাল অবস্থান করবে। তিনি বললেন: চল্লিশ দিন। একদিন হবে এক বৎসরের সমান, এক দিন হবে এক মাসের সমান এবং একদিন হবে এক সপ্তাহের সমান। আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! যে দিনটি এক বৎসরের সমান হবে, উহাতে কি আমাদের জন্য এক দিনের নামাজ যথেষ্ট হবে? উত্তরে বললেন: না, এর জন্য তোমরা দিনের পরিমাণ ঠিক করে নিবে। আমরা আরজ করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! পৃথিবীতে তার গতি কি রূপ হবে? উত্তরে বললেন: ঐ মেঘমালার ন্যায় যাকে বাতাস পিছন থেকে তাড়া করছে। তারপর সে কোন এক সম্প্রদায়ের নিকট আসবে। তাদের আহবান করবে। তাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে তার ডাকে সাড়া দেবে। তার নির্দেশে আকাশ বৃষ্টি বর্ষন করবে এবং জমিন শস্যাদি উৎপাদন করবে। তাদের চতুষ্পদ জন্তু এতে বিচরণ করবে, ফলে এদের কবজাগুলো সুউচ্চ হবে, স্তন গুলো দুধে পরিপূর্ণ হবে এবং কোমরগুলো মোটা তাজা হবে। অতঃপর সে অপর এক সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদেরকে তার প্রতি ঈমান আনার জন্য আহবান করবে, কিন্তু তারা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। সে তাদের থেকে ফিরে যাবে, তখন এরা একেবারে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়বে। তাদের হাতে ধন সম্পদ কিছুই থাকবে না। সে পতিত ভূমি দিয়ে গমন কালে তাকে বলবে: তুমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ বের করে দাও। তাতে সম্পদগুলো মৌমাছিরা যেমন রাণী মৌমাছিকে অনুসরণ করে চলে তেমনি তার পিছে পিছে চলবে। তারপর সে পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত একটি যুবককে ডাকবে। তাকে তরবারির আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে উভয় খন্ডকে একটি তীর নিক্ষেপের দুরত্বে ফেলে দেওয়ার পর তাকে ডাকবে। তাতে সে হাসিমুখে উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে তার দিকে আসবে। ইত্যবসরে আল্লাহ তাআলা মরিয়ম পুত্র মাসীহ কে প্রেরণ করবেন। তখন তিনি দামেস্কের পূর্ব প্রান্তে সাদা মিনারের নিকট দুটি হলদে বর্ণের চাদর পরিহিত অবস্থায় দুজন ফেরেস্তার ডানার উপর ভর করে অবতরণ করবেন। যখন তিনি মাথা নিচু করবেন তখন তার থেকে ফোটা ফোটা করে পানি পড়বে; আর যখন মাথা উঁচু করবেন তখন তার থেকে মুক্তা ঝরবে। কোন কাফের তার নিশ্বাসের গন্ধ পেলেই তৎক্ষণাৎ সে মারা যাবে। তাঁর নিশ্বাস এত দূর পর্যন্ত পুঁছবে যতদূর তাঁর দৃষ্টি পৌঁছোবে। তিনি দাজ্জালকে ধাওয়া করে ‘লুদ’ নামক স্থানের প্রবেশ দ্বারে হত্যা করবেন। তারপর ঈসার আলাইহিস সালাম কাছে এমন একটি দল আসবে যাদেরকে আল্লাহ পাক দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তিনি তাদের চেহারা মুছে দেবেন এবং তাদেরকে বেহেস্তে তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত করবেন। ইত্যবসরে আল্লাহ তাআলা ঈসা আলাইহিস সালাম এর কাছে ওহী পাঠাবেন- ‘আমি আমার কিছু বান্দাকে বের করে দিয়েছি, যাদের সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা কারো নেই। আপনি আমার এ বান্দাগণকে নিয়ে তুর পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করুন। তখন আল্লাহ পাক ইয়াজুজ মাযুজকে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান হতে নীচের দিকে আসতে থাকবে অর্থাৎ পাহাড় উপত্যকা পেরিয়ে তারা এগিয়ে আসবে। তাদের প্রথম দল তাবরেস্তানের একটি হ্রদের নিকট দিয়ে গমন করবে এবং উহার সব পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষ দল এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বলবে। তাদের শেষ দল এর নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বলবে: এখানে তো কোন এক সময় পানি ছিল। তখন আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীগণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। এ অবস্থায় তাদের কাছে একটি গরুর মাথা আজকের দিনের একশত দিনারের চেয়েও বেশি মূল্যবান হবে। তারপর আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে দোয়ায় মগ্ন হবেন। তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াযুজ মাযুজের ঘাড়ে মরণ কীট প্রেরণ করবেন। এতে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। এক প্রাণের মৃত্যুর ন্যায় সকলে এক সাথে মৃত্যুবরণ করবে। তারপর আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাহাবিগণ পৃথিবীতে অবতরণ করবেন কিন্তু তারা ওদের পঁচা লাশ ও দুর্গন্ধ হতে মুক্ত এক বিঘত জায়গা খুঁজে পাবেন না। এরপর আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার সাথীগণ আল্লাহর দরবারে দোয়ায় মশগুল হয়ে পড়বেন। তখন আল্লাহ বুখতী উটের মত লম্বা লম্বা গলা বিশিষ্ট পক্ষী পাঠাবেন। ওরা এদের লাশ উঠিয়ে নিয়ে যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা সেখানে নিক্ষেপ করবে। এরপর আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। উহা থেকে কোন কাঁচা ও পাকা ঘর অবশিষ্ট থাকবে না। এই বৃষ্টি পৃথিবীকে ধুয়ে মুছে আয়নার মত স্বচ্ছ করে দেবে। অতঃপর পৃথিবীকে নির্দেশ দেয়া হবে, ফলমূল উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকতকে ফিরিয়ে আন। সেদিন একটি ডালিম এক বিরাট দল খাবে এবং উহার ছাল দ্বারা ছায়া গ্রহণ করতে পারবে। আল্লাহ দুধের মধ্যে এমন বরকত দেবেন যে, একটা দুধালো উঁটনী কয়েকজন লোকের জন্য যথেষ্ট হবে, একটি দুধালো গাভি একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে, এবং একটা দুধালো বকরি একটি ছোট দলের জন্য যথেষ্ট হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা একটা স্নিগ্ধ বাতাস পাঠাবেন এবং উহা তাদের বগলের নীচ দিয়ে প্রবেশ করে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের প্রাণ কবজ করে নেবে। আর, থেকে যাবে শুধু দুষ্ট প্রকৃতির লোকগুলো। তারা গাধার ন্যায় প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে’’। [১ মুসলিম. আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, আহমদ, শব্দ মুসলিমর।] আল্লাহর রাসূল সত্যই বলেছেন। এই হল প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার দাবির সত্যতার মাপকাঠি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে, বর্ণনা দিয়েছেন মির্জা গোলামের পূর্বে কি তা ঘটেছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিবরণ দিয়েছেন তার সময়ে কি তা সংঘটিত হয়েছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা উল্লেখ করেছেন তা কি তার উপর প্রযোজ্য হয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবার পরিজন, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের উপর দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/699/10
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।