hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কাদিয়ানী মতবাদ (পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ)

লেখকঃ এহসান ইলাহী জহীর

ভূমিকা
বিংশ শতাব্দীতে কাফের সাম্রাজ্যবাদীদের ইঙ্গিত ও ষড়যন্ত্রে দুটি ঘৃণ্য দল সৃষ্টি হয়। এদের উদ্দেশ্য হল, মুসলমানগণকে তাদের কেবলা ও কা’বা এবং তাদের প্রাণপ্রিয় ও আত্মার আবাসস্থল মক্কা মুকাররামা ও মদিনা মুনাওয়ারা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং তাদেরকে তাদের আবাসভূমি ও স্বদেশে আবদ্ধ রাখা। যাতে, সেই সুদৃঢ় সম্পর্ক ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যে সম্পর্ক পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত এবং উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষকে গ্রথিত করে রেখেছে। যে সম্পর্কের কারণে নীল নদের উপত্যকায় বসবাসরত লোকের উপর কোন বিপদ পতিত হলে সমর-কন্দ ও বোখারার অধিবাসীরা ব্যথিত হয়ে পড়ে এবং হিমালয় উপত্যকা ও কাশ্মীরের পাহাড়ি এলাকার অধিবাসীদের জন্য হিজাজ প্রান্ত ও নজ্দ মরুভূমির অধিবাসীরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। এ দু’টির একটি হল, কাদিয়ানী দল, [২ আফ্রিকা সহ অন্যান্য দেশে কাদিয়ানীরা ‘আহমাদিয়া’ নামে নিজেদের পরিচয় দানের মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতারণা ও ভ্রমে ফেলার প্রচেষ্টা করে। প্রকৃত পক্ষে, তাদের সাথে রাসুল সাঃ যাঁর নাম আহমাদও ছিল- এর কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ভন্ডনবির নাম হল গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী। পাক-ভারতে এরা কাদিয়ানী নামেই পরিচিত।] যারা ভারত উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট এবং দ্বিতীয়টি হল বাহায়ীয়া দল।

এই প্রধান উদ্দেশ্য অর্জনের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয় কাদিয়ানী দল এবং এরা ইসলাম ও মুসলমানদের সেই সব শত্রুর ছায়াতলে লালিত পালিত হয় যারা, উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার উপর বিপদাপদ পতিত হওয়ার আশায় সর্বদা অপেক্ষায় থাকে, তারাই এদেরকে ধন সম্পদ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সাহায্য করতে থাকে।

সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষ থেকে এ দলটিকে বিরাট অঙ্কের অর্থ সম্পদ, উচ্চ পর্যায়ের বৃত্তি, বড় বড় পদ ও বিশেষ বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। আর, হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে মৌখিক ও লেখনীর মাধ্যমে এদের প্রতিরক্ষার চেষ্টা চালান হয়। তেমনি ভাবে ইহুদী সম্প্রদায় কাল্পনিক হলেও নানাবিধ দলীল এবং শূন্য হলেও বিভিন্ন কৃত্রিম তহবিল দ্বারা তাদের সাহায্য করতে থাকে। সাম্রাজ্যবাদীরা এখনও এ দলটিকে ইসরাইলে প্রতিষ্ঠিত কাদিয়ানী কেন্দ্র ও আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত এর বিভিন্ন কেন্দ্র সমূহের মাধ্যমে সাহায্য করে চলছে। প্রত্যেকটি দল এ মতবাদ প্রচার করার জন্য চূড়ান্ত শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল মুসলমানগণকে মুজাহিদে আজম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। তাঁর ইন্তেকালের চৌদ্দ শত বছর পর আজও তাঁর নাম শুনলে কাফেরদের অন্তর ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং তাদের স্কন্ধ থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। এখনও তাঁর উম্মত বিদ্বেষ প্রবণ শত্রুদের গলদেশে কাঁটা স্বরূপ বাঁধে আছে। তাদের সজাগ হওয়ার কল্পনা মাত্র নাস্তিক ও মুশরিকদেরকে তাদের বিশ্রামাগার থেকে কাঁপিয়ে তোলে। তারা ভাল করে জানে যে, মহান নেতা মুহাম্মদ আল-আমীন সাঃ এর জীবন্ত ও মৃতদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চারকারী শিক্ষাগুলো মুছে না ফেলা পর্যন্ত তাদের জীবনে শান্তি আসবে না; অথবা, এ শিক্ষাকে এমন ভাবে পরিবর্তন ও বিকৃত করে দিতে হবে, যাতে এর জীবনী শক্তি দূর হয়ে যায় এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তারা মনে করে যে, এ উদ্দেশ্য সফল হতে পারে এ ধরনের আন্দোলন ও দাওয়াতকে সমর্থন করারই মাধ্যমে। এইতো সেই বিশিষ্ট হিন্দু লেখক ড: শঙ্কর দাসের একটি ভাষণে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বলেন: ‘‘আমাদের দেশ বর্তমানে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন তা হল এই, কীভাবে আমরা মুসলমানদের অন্তরে জাতীয়তাবাদের স্লোগান সৃষ্টি করতে পারি?’’ আমরা তাদের সাথে সকল প্রকার প্রচেষ্টার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাদের সাথে বিভিন্ন প্রকার চুক্তি ও অঙ্গিকারে আবদ্ধ হয়েছি, তথাপি ভারতের মুসলমানদের উপর এর কোন প্রভাব পড়েনি। এখনও তারা কল্পনা করে যে, তারা একটি স্বাধীন জাতি এবং তারা আরবের গান গায়। সম্ভব হলে তারা ভারতকে আরবের একটি অংশে পরিণত করে দিত।

নৈরাশ্যের এ গভীর অন্ধকারের মধ্যে দেশ প্রেমিক ও হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা শুধু একটিমাত্র দিক হতে আলোর ছিটা দেখছে; তা হল কাদিয়ানী সম্প্রদায়। যত বেশি মুসলমান কাদিয়ানী মতবাদের দিক ঝুঁকে পড়বে, তারা মক্কার পরিবর্তে কাদিয়ানকে তাদের কিবলা ও কাবা কল্পনা করবে। আর, এভাবেই তারা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নিকটবর্তী হয়ে আসবে। কাদিয়ানী মতবাদের উন্নতি ব্যতিরেকে আরবী সভ্যতা ও ইসলামী জাতীয়তাবাদের চেতনাকে দূরীভূত সম্ভব নয়। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে আমাদের বিবেচনা করা উচিত। সে মতে ভারতের পাঞ্জাব এলাকা থেকে একটি লোক আবির্ভূত হয় এবং মুসলমানগণকে তার অনুসরণ করতে আহবান জানায়। যে তার অনুসরণ করবে সে এককালে শুধু মুসলমান থাকার পর এখন কাদিয়ানী মুসলিম হিসাবে পরিগণিত হবে এবং বিশ্বাস করবে যে:-

১- নিশ্চয়ই আল্লাহ মানব জাতীর হেদায়েত ও পথ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যুগে যুগে রাসূল প্রেরণ করেন।

২- আরব জাতীর অবনতির যুগে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাসূলরূপে তাদের কাছে প্রেরণ করেছেন।

৩- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আল্লাহ তায়ালা অপর নবীর প্রয়োজন বোধ করেন। তাই, তিনি মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে রাসূলরূপে প্রেরণ করেন। সম্ভবত: আমার স্বজাতি ভাইয়েরা প্রশ্ন করবেন যে, তার এ ধর্ম বিশ্বাস আমাদের কি উপকারে আসবে? উত্তরে আমি বলব- যেমন একজন হিন্দু যদি মুসলমান হয়ে যায়, তবে রাম, কৃষ্ণ, বেদ, গীতা ও রামায়ণ থেকে তার ভালোবাসা কুরআন ও আরবের প্রতি চলে যায়, তদ্রুপ একজন মুসলমান যদি কাদিয়ানী হয়ে যায় তা হলে তার দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন হয়ে পড়বে এবং মুহাম্মদ সা: এর প্রতি তার ভালোবাসা কমে যাবে। আর, তার খিলাফতের কেন্দ্র আরব উপদ্বীপ ও তুর্কিস্থান থেকে কাদিয়ানের দিকে পরিবর্তিত হয়ে পড়বে এবং প্রাচীন এক পবিত্র স্থান হওয়া ছাড়া মক্কার আর কোন গুরুত্ব তার কাছে থাকবে না।

প্রত্যেকটি কাদিয়ানী সে যেখানেই থাকুক না কেন, চাই আরব, তুর্কিস্থান, ইরান অথবা পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলে অবস্থান করুক, সর্বদাই তার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কাদিয়ান অভিমুখে হবে এবং কাদিয়ান তার মুক্তির কেন্দ্রস্থল হবে। আর এতেই ভারতকে পবিত্র মনে করার রহস্য নিহিত। প্রত্যেকটি কাদিয়ানী ভারতকে পবিত্র মনে করবে। কেননা কাদিয়ান ভারতে অবস্থিত এবং গোলাম আহমাদও ভারতীয়। তার খলীফাগণ ও প্রতিনিধিগণ সকলেই ভারতীয়। এ কারণেই ধর্মান্ধ মুসলমানগণ কাদিয়ানী মতবাদকে সন্দেহের চোখে দেখে। কেননা, তাদের ধারণা যে, কাদিয়ানী মতবাদ আরব সভ্যতা ও প্রকৃত ইসলামের শত্রু। এ জন্যই খেলাফত আন্দোলনে [৩ তুরস্কে উছমানী খেলাফতের পতনের সময় ভারতীয় মুসলমানগণ তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তুলে খেলাফতের পূনঃ প্রতিষ্ঠা দাবী করে। এই আন্দোলনের নাম ছিল ‘খেলাফত আন্দোলন’। এর প্রতি ইঙ্গিত করে হিন্দু লিখক বলেন যে কাদিয়ানীরা খেলাফত পূনঃপ্রতিষ্ঠার দাবীতে মুসলমানদের সমর্খন করেনি।]

কাদিয়ানীরা মুসলমানদের সমর্থন করেনি। কারণ, তারা আরব ও তুরস্কের পরিবর্তে কাদিয়ানেই খেলাফত প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। আর এটাই সাধারণ মুসলমানদের উপর, যারা ইসলামী পুনরুত্থানের স্বপ্ন দেখে, একটা বড় আঘাত। অপর পক্ষে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জন্য আনন্দের বিষয়। (ড: শঙ্কর দাস বি, এস, সি; এম, বি, বি, এস এর প্রবন্ধ যা হিন্দুদের পত্রিকা ‘‘বন্দে মাতরমে’’ লিখিত এবং ২২ এপ্রিল ১৯৩২ সালে প্রকাশিত।) প্রকাশ থাকে যে, যখন ইসলাম ও রেসালাতে মুহাম্মাদীর কবি ড: মুহাম্মদ ইকবাল কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লিখেন, যাতে তিনি ওদের মিথ্যা ও বিভ্রান্তির স্পষ্ট বর্ণনা দেন, তখন সর্ব প্রথম ব্যক্তি যিনি তার প্রতিবাদ করেন এবং কাদিয়ানীদের পক্ষে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেন তিনি হলেন হিন্দু জাতীয়তাবাদের নেতা জওহার লাল নেহরু। তিনি ওদের সমর্থনে কতকগুলো প্রবন্ধ লিখলেন। যার ফলে কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমাদ কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে জওহার লাল নেহরুর প্রতি সংবর্ধনা জ্ঞাপনে উৎসাহিত করতে গিয়ে ঘোষণা করেন: সম্মানিত জওহার লাল নেহরু ড: মুহাম্মদ ইকবালের ঐ সকল প্রবন্ধের প্রতিবাদ করেছেন, যেগুলো তিনি এ কথা প্রমাণ করার জন্য রচনা করেছেন যে কাদয়িনীগণ একটি স্বতন্ত্র কাফের দল এবং ইসলামের সাথে ঐ দলের কোন সম্পর্ক নেই। এর প্রতিবাদে জওহার লালই দাঁড়িয়েছেন এবং প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, কাদিয়ানীদের উপর ড: ইকবালের আপত্তিসমূহ একেবারেই অযৌক্তিক। সুতরাং জওহার লাল নেহরুকে আন্তরিকতার সহিত সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা কাদিয়ানীদের কর্তব্য। (জুময়ার খুতবা যা কাদিয়ান নগরে কাদিয়ানী খলীফা প্রদান করেছিল। কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজলে প্রকাশিত ১৮ই জুন ১৯৩৬ খৃ:) অতপর: ইসলামের কবি নেহরুর পাল্টা জবাব দেন এবং তার কাদিয়ানীদের পক্ষ অবলম্বনের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে বলেন: নিশ্চয়ই জওহার লাল নেহরু ও তার জাতীয়তাবাদী সঙ্গী-সাথীরা মুসলমানদের পুনরুত্থান ও উন্নতিতে অস্থির, যেমন কাদিয়ানীরা ঐ একই কারণে অস্থির। তারা অনুভাব করে যে, এ উন্নতি ও আন্দোলন তাদের মূল পরিকল্পনা অর্থাৎ আমাদের প্রাণপ্রিয় মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ভারতীয় মিথ্যা নবুয়তের দাবিদারের জন্য একটি উন্নত উম্মত তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেবে। এ কারণেই জওহার লাল নেহরু তাদেরকে সমর্থন করেন। নচেৎ ওদের সাথে তার কি সম্পর্ক থাকতে পারে? ( ড: মুহাম্মদ ইকবালের আল-কাদিয়ানীয়াহ ও আল-ইসলাম নামক প্রবন্ধ যা আল-ইসলাম নামক ইংরেজি ম্যাগাজিনে প্রচারিত, ২২ জানুয়ারি ১৯৩৬ খৃ: প্রকাশিত।)

এ ধরনের আন্দোলন যখন গড়ে উঠেছিল, তখন আশা ছিল যে ইসলাম বিরোধী শক্তি সমূহ তাকে সহায়তা করবে। কার্যত: তাকে সাহায্য করেছে এবং সমর্থনও দিয়েছে। এমনকি সাম্রাজ্যবাদীরা একে সংগঠিত ও শক্তিশালী করার জন্য লোকজনকে উহার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। এদের অধিকাংশই ছিল উপনিবেশবাদী ইংরেজ সরকারের বেতনভোগী আমলা ও জায়গিরদার; যাদের কোন ধর্ম নেই, একমাত্র সরকারের সেবা ও সন্তুষ্টি লাভ ছাড়া এদের আর কোন দীন-ধর্ম নেই।

নবুয়তের মিথ্যা দাবিদার গোলাম আহমাদ নিজেই একথা স্বীকার করেছে। সে বলেছে যে, আমার দলে যারা প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশ ইংরেজ সরকারের সদস্য বড় বড় চাকুরিজীবী, বা তারা এ দেশের নেতৃস্থানীয় লোক ও ব্যবসায়ী, অথবা তারা উকিল ও ইংরেজি শিক্ষার্থী কিংবা তারা আলেম ফাযেল যারা অতীতে ইংরেজ সরকারের সেবা করেছে বা বর্তমানেও করছে এবং তাদের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধব। মোটকথা, এ দলটি তার মুরববী ইংরেজ সরকার দ্বারা গঠিত, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনকারী এবং তাদের পুরস্কারে ধন্য। সুতরাং আমি এবং অনুসারী শিক্ষিত সমাজ মানুষের কাছে এ সরকারের অবদান সমূহ বর্ণনা করে আসছি এবং হাজার হাজার লোকের অন্তরে এর আনুগত্য দৃঢ় করছি। (ইংরেজ সরকারের পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নরের কাছে গোলাম কাদিয়ানীর চিঠি ‘‘তাবলীগে রিসালত’’ নামক গোলামের ঘোষণা বলীর অন্তর্ভুক্ত, ৭ম খন্ড ১৮ পৃ:, কাসেম কাদিয়ানী কর্তৃক সংকলিত)

অতএব, যখন থেকে এ দলটি গঠিত হয় এবং উহার তৎপরতা আরম্ভ হয়, তখন থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের বড় বড় খেদমত আঞ্জাম দিতে থাকে। আমি দ্বীনি মাদ্রাসা সমূহে পাঠ্যরত থাকা কালে এ আন্দোলন সম্পর্কে শেয়খুল ইসলাম ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, সেই যুগের ইমাম শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহীম শিয়ালকোটি এবং আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ আল্লামা মুহাদ্দিস হাফেজ মুহাম্মদ জলন্দরী প্রমুখ ওলামাদের লিখিত কিতাব সমূহের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করি। তারপর ঘটনা হল এই, যখন আমি ও আমার কিছু সাথী আমার নিজ শহর শিয়াকোটে অবস্থিত বাহায়ীদের মজলিসে এবং খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠান সমূহে তাদের সাথে আলোচনা ও বিতর্কের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করছিলাম, তখন কাদিয়ানী মতবাদের কিছু লোক আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং আমাকে তাদের মুবাল্লেগের সহিত আলোচনার জন্য আহবান জানায়। যেহেতু এ ধরনের আলোচনার প্রতি আমার অতি আগ্রহ ও মনোযোগ ছিল। তাই আমি ইতস্ত. না করে শুধু একটি মাত্র শর্তে তাদের আহবান গ্রহণ করলাম। শর্তটি হল, তারা আমাকে গোলাম আহমদের পুস্তক সমূহ ধার দেবে। তারা আমাকে পাঁচটি বই ধার দিল। এ গুলোর নাম আমার এখনও স্মরণ আছে। তা হল:

১- আনজামে আছিম ২- এজালাতুল আওহাম ৩- দুররে ছামীন ৪- হাকীকাতুল ওহী এবং ৫- ছাফিনায়ে নূহ। প্রথম ও তৃতীয় বই দুটিতে বিরক্তিকর ও অর্থহীন বিষয় থাকা সত্ত্বেও আমি একই রাতে পড়ে নিলাম। এভাবে আমি অবশিষ্ট বইগুলি দুই বা তিন দিনের মধ্যে পড়ে শেষ করে নিলাম। প্রতিশ্রুত নির্দিষ্ট দিনে আমরা কয়েকজন সাথী একত্রিত হয়ে কাদিয়ানীদের মসজিদে গমন করলাম। সেখানে তারাও আমাদের অপেক্ষায় ছিল। অল্প কিছু কথা বার্তার পর আমরা আলোচনার বিষয়বস্ত্ত ঠিক করে নিলাম: ‘‘গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ।’’ কেননা, গোলাম তার ভবিষ্যদ্বাণী গুলোকে তার নবুয়তের মাপকাঠি রূপে নির্ধারণ করেছিল। তাই আমি আব্দুল্লাহ আছিমের মৃত্যু সম্পর্কে গোলাম আহমাদের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা প্রথমে তুলে ধরলাম। গোলাম বলেছিল যে, সে পনেরো মাসের শেষ দিকে মারা যাবে। আর, আমি প্রমাণ করে দিলাম যে, সে তার জন্য নির্ধারণকৃত সময়ে মারা যায়নি। সুতরাং তোমাদের মিথ্যা নবীর নবুয়্যত প্রমাণিত হয়নি। অতএব সে তার নবুয়তের দাবিতে সত্যবাদী নয়। কেননা, নবির ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হওয়া অপরিহার্য। [৪ ‘‘ভন্ডনবী কাদিয়ানী ও তার ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ’’ নামক প্রবন্ধে এই সম্পর্কে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি।] তখন আমি দেখতে পাই যে, কাদিয়ানী মুবাল্লেগের মুখ থেকে ফেনা বের হওয়ার পর সে ফ্যাকাশে হয়ে পড়েছে। সে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু এ প্রবল প্রমাণাদির উত্তর দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। অবশেষে সে এ কথা বলতে বাধ্য হল যে, আমি বিতর্কে পারদর্শী নই। তবে, ‘রাবওয়া’ [৫ ‘রাবওয়া’ পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমানে পাকিস্তান) একটি ক্ষুদ্র শহর। কাদিয়ানীরা এই শহর তৈরী করে তাদের কেন্দ্রে পরিণত করে।] থেকে বিতর্ককারী একজন কাদিয়ানী আলেম আসবে। তখন আমরা আপনাদেরকে তার সাথে বাহাছ করার জন্য আহবান করব। আমরা বিজয়ী হয়ে তাদের ওখান থেকে ফিরলাম এবং তাদের কাছ থেকে কাদিয়ানীদের আরও কতকগুলো বই ধার স্বরূপ নিয়ে আসলাম। এভাবেই, আমি কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই এ ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা আরম্ভ করলাম। এরপর থেকে আমি এবং আমার বন্ধু বান্ধবরা বাহায়ীদের মাহফিল, খ্রিস্টানদের প্রতিষ্ঠান ও কাদিয়ানীদের কেন্দ্রসমূহে আরও বেশি করে যাতায়াত শুরু করলাম। অবশেষে, আমি তাদের কেন্দ্রস্থল রাবওয়াতে উপস্থিত হই, যেখানে কাদিয়ানীরা ও তাদের বিতর্ককারীরা জড় হয়। তাদের খলীফাও সেখানে বাস করে। তাদের সাথে অনেক তর্ক-বিতর্ক চলে, আল হামদু লিল্লাহ ফলাফল প্রথম আলোচনার বিপরীত হয় নি ।( অর্থাৎ আমরাই বিজয়ী হই)

অতঃপর, আমি কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে পাকিস্তানের উর্দু ম্যাগাজিনে কতকগুলো প্রবন্ধ লিখি। যখন আমি মদিনা মুনাওয়ারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ লাভ করি এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপকগণের সাথে মিলিত হই, এবং বাইতুল্লাহ শরীফে ও মসজিদে নববীতে আগত হাজীগণের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের দেশে কাদিয়ানী মতবাদের তৎপরতা সম্পর্কে জানতে পারি, তখন আমি আরবী ও অন্যান্য ভাষায় কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে পুস্তক লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভাব করি। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন উস্তাদ যেমন ফিক্হ শাস্ত্রের অধ্যাপক বিজ্ঞ শেখ আতিয়া মুহাম্মদ সালেম, আরবী ভাষার অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহীম শকরা, ইতিহাসের অধ্যাপক শেখ আব্দুল হক মাহরুছ ও অন্যান্যরা যখন জানতে পারলেন যে, ইতি পূর্বে আমি কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে উর্দু ভাষায় পুস্তক লিখেছি তখন তারা আমাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। আমি আল্লাহর সাহায্য কামনা করি এবং কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে ‘‘কাদিয়ানীরা উপনিবেশবাদীদের এজেন্ট’’ শিরোনামে আমার প্রথম প্রবন্ধটি রচনা করি। আর আমি একথা ঠিক করে নিলাম যে, আমি কোন কথাই উহার উৎস উল্লেখ না করে লিখব না। এ প্রবন্ধটি আমি দামেস্কের বিখ্যাত ‘‘হাদারাতুল ইসলাম’’ নামক ম্যাগাজিনে প্রেরণ করি; যা ইতিপূর্বে আমার আরও কিছু প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিল। ১৩৮৬ হিঃ সনে ‘‘হাজারাতে ইসলামীয়ার’’ তৃতীয় সংখ্যায় আমার এ প্রবন্ধটি প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে বন্ধু বান্ধবের কাছে তা বিপুলভাবে গৃহীত ও সমাদৃত হয়। আমার সাথী ও উস্তাদগণ বিশেষকরে, পূর্বোল্লিখিত অধ্যাপকগণ এবং শেখ হাবীব হাম্মাদ আনসারী অধ্যাপক হাদীস ও শরীয়া বিভাগ, বিশিষ্ট শেখ আব্দুল কাদের সাইবাতুল হামদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়া ও উসুলে দ্বীন বিভাগের তাফসীর ও বিভিন্ন ফিরকা ও ধর্মতত্ব বিষয়ের অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক ড: আদীব সালেহ, হাদারাতুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ও দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের উলুমুল কুরআনের অধ্যাপক প্রমুখ ব্যক্তিগণ এভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে আমাকে উৎসাহিত করেন। ফলে, পূর্বের ন্যায় ধারাবাহিক লেখা এবং উল্লেখিত ম্যাগাজিনে প্রবন্ধ পাঠানোর ছিল-ছিলা চলতে থাকে। উক্ত ম্যাগাজিন ও আগ্রহের সাথে তা প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এরপর প্রবন্ধগুলো শেষে একত্র করে একটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা আমি সমীচীন মনে করলাম। তাই, আমি বিভিন্ন প্রকারের দশটি প্রবন্ধ সংবলিত পুস্তকটি এখন পেশ করছি।

এতে আমি আলোচনা করেছি কাদিয়ানী মতবাদের জন্ম ও তার ইতিহাস এবং ঐ সকল কারণ যা এ মতবাদ গঠনে ও তাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে, ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে এর সম্পর্ক, এর মূল আকীদাসমুহ, এর প্রতিষ্ঠাতা ও নবুয়তের দাবিদারের ইতিহাস, তার জীবন বৃত্তান্ত, তার দাবি সমূহ, আল্লাহর নবী রাসূল, আউলিয়ায়ে উম্মত ও সৎ লোকদের অবমাননা ইত্যাদি। সাথে এ ভাবে আমি কাদিয়ানীদের বিশ্বাসগত বক্তব্য এবং তাদের মিথ্যা নবীর বাদী-দাওয়া সমূহ তাদেরই বই পুস্তক ও উদ্ধৃতির দ্বারা বিশ্লেষণ করছি। এ মতবাদের অসারতা ও উহার প্রতিষ্ঠাতার দাবিদাওয়ার অসত্যতা তাদের স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রমাণ করেছি। এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা আমি প্রয়োজন মনে করি:

১- যেখানেই আমি কোন বক্তব্য উল্লেখ করে কাদিয়ানী পত্রিকা অথবা ম্যাগাজিনের উদ্ধৃতি যা দিয়েছি, তা প্রফেসার মুহাম্মদ ইলিয়াছ বরনীর ‘‘কাদিয়ানী মাজহাব’’ নামক তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ থেকে গৃহীত। গ্রন্থটি সাধারণ অসাধারণ সব লোকের কাছে পাওয়া যায়। ইহা অনেকবার মুদ্রিত হয়েছে, কিন্তু কোন কাদিয়ানী এর উৎস বা উদ্ধৃতিসমূহকে ভুল প্রতিপন্ন করার সাহস পায়নি। সুতরাং এর উদ্ধৃতিগুলো মুসলমান ও কাদিয়ানী সকলের কাছে নির্ভরযোগ্য।

২- আমার প্রবন্ধসমূহে যে সকল কিতাব ও উহার পৃষ্ঠা উল্লেখ করেছি, তার অধিকাংশ প্রথম সংস্করণের। কারণ, কাদিয়ানীদের অভ্যাস হল যখনই তারা তাদের কিতাবের নতুন সংস্করণ করে, তখনই উহার পৃষ্ঠাগুলো পরিবর্তন করে ফেলে। ইহা ছাপার তারতম্য হেতু নহে, বরং ইহা তাদের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তারা করে থাকে। যেমন আমি ‘‘কাদিয়ানী মতবাদ ও প্রতিশ্রুত মাসীহের আকীদা’’ প্রবন্ধে নবুয়তের মিথ্যা দ্বাবীদার কাদিয়ানী থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছি যে, ইসা আঃ দাজ্জালকে বাইতুল মুকাদ্দাসের লুধ নামক এক গ্রামের ফটকে পেয়ে হত্যা করবেন। এ উক্তিটি গোলামের ‘‘এজালাতুল আওহাম’’ নামক পুস্তকের প্রথম সংস্করণে ২২০ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায়। কিন্তু কাদিয়ানীরা তা দ্বিতীয় সংস্করণের ৯১ পৃষ্ঠায় স্থানান্তরিত করে ফেলে। পার্থক্য সুস্পষ্ট। মিথ্যুক কাদিয়ানী অমৃত-সর নিবাসী শাইখুল ইসলাম ছানাউল্লাহকে ‘হে বাতাসের পুত্র’ ‘হে প্রতারক’ বলেও গালি দিয়েছে। আমি এ কথাটি ‘‘ইতিহাসের মানদন্ডে কাদিয়ানী মতবাদের নবী’’ নামক প্রবন্ধে বর্ণনা করেছি। এ গালিটি আমি তার পুস্তক ‘‘এজাজে আহমদী’’ এর প্রথম সংস্করণের ৪৩ পৃষ্ঠায় পেয়েছি, কিন্তু কাদিয়ানীগণ তা দ্বিতীয় সংস্করণের ৭৭ পৃষ্ঠায় স্থানান্তরিত করে দিয়েছে। ঐ একই প্রবন্ধে আমি উল্লেখ করেছি যে, মির্জা গোলাম লিখেছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, উহা কখন হবে? উত্তরে তিনি বললেন: সকল আদম সন্তানের উপর একশত বৎসরের মাথায় কেয়ামত হবে! আমি তার পুস্তক ‘‘এজালাতুল আওহাম’’ এর ২৫৪ পৃষ্ঠা থেকে এ কথার উদ্ধৃতি দিয়েছি। কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণে তারা একে ১০৪ পৃষ্ঠায় নিয়ে গেছে। অনুরূপ অনেক উদাহরণ রয়েছে।

কাদিয়ানীদের অধিকাংশ পুস্তকের নাম যে গুলোর অর্থ আরবী ভাষায় বুঝা যায় তা স্বীয় অবস্থায় রেখে দিয়েছি। কিন্তু কিছু পুস্তক যে গুলোর অর্থ আরবী ভাষায় বোধগম্য নহে, সে গুলোকে আরবী ভাষায় অনুবাদ করে দিয়েছি। যথা: ‘‘কিস্তিয়ে নূহ’’ ইহা গোলামের রচিত পুস্তক। উর্দু ভাষার কিস্তিকে আরবীতে ছাফিনা বলা হয়। তাই লেখার সময় আমি ‘‘ছফিনাতু নূহ’’ লিখেছি। এমনি ভাবে তার আর একটি পুস্তক ‘‘আয়নায়ে কামালাতে ইসলাম’’ আয়নাকে আরবীতে ‘‘মিরআতুন’’ বলে। তাই আমি উহাকে ‘‘মিরআতু কামালাতে ইসলাম’’ লিখেছি। তদ্রুপ গোলামের পুত্র মাহমুদ আহমাদের ‘‘আয়নায়ে ছদাকাত’’ কে ‘‘মিরআতুছ ছিদক’’ গোলামের ‘‘জংগে মুকাদ্দাস’’কে ‘‘আল- হারবুলমুকাদ্দাস’’ এবং ‘‘এক গালতী কা এজালা’’ কে ‘‘এজালাতুল গালতাহ’’ লিখেছি।

৩- আমি এ পুস্তক রচনা কালে মুসলিম ওলামাদের বহু কিতাব থেকে সাহায্য গ্রহণ করেছি। উদ্ধৃতি গ্রহণের তালিকায় এর বর্ণনা আসবে। এ প্রবন্ধটি ব্যাপক গবেষণার ফলাফলের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং দলীল প্রমাণ দ্বারা সুদৃঢ়। কাজেই কাদিয়ানীরা এর ভিন্ন ব্যাখ্যা ও উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি। সুতরাং প্রবন্ধটি এ দলকে অসত্য প্রমাণ করতে এবং উহা যে হিংসা প্রসূত ও সাম্রাজ্যবাদীদের লালিত দল তা নির্ধারণে এক অকাট্য ও প্রকৃষ্ট দলীল রূপে পরিগণিত। আমি এই কিতাবের কোথায়ও আলোচনা ও বিতর্কের নীতি বহির্ভূত কোন কথা না বলার প্রতি লক্ষ রেখেছি এবং ভিত্তিহীন কোন দাবির উপর সিদ্ধান্ত না দেওয়ার নীতি অবলম্বন করেছি। অতএব, পাঠক সমস্ত কিতাবের মধ্যে এমন একটি বিষয়ও পাবেন না, যার উদ্ধৃতি কাদিয়ানীদের কাছে নির্ভরযোগ্য উৎস হতে দেয়া হয়নি। এমনি ভাবে কোন মাসআলা বা কোন হুকুম দানের ক্ষেত্রে আমি বিশুদ্ধ ও সহীহ হাদীস ব্যতীত অন্য কোন হাদীস উপস্থাপন করিনি। আল্লাহর কাছেই তওফিক কামনা করছি।

৪- সব কটি প্রবন্ধ যেভাবে আমি লিখেছিলাম কিতাবের মধ্যে ঐ ভাবেই রেখে দিয়েছি। তাতে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন করিনি। তাই, পাঠকবৃন্দ মূল বিষয় বস্ত্তর পরিচিতির জন্য প্রত্যেকটি প্রবন্ধের পূর্বে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দেখতে পাবেন। প্রথম প্রবন্ধ ছাড়া অন্য সকল প্রবন্ধের ভূমিকা কয়েক লাইনের বেশি নহে। তারপর সকল প্রবন্ধকে আমি এক একটি অধ্যায়ের মত সাজিয়েছি। প্রথম প্রবন্ধ, প্রথম অধ্যায়,দ্বিতীয় প্রবন্ধ, দ্বিতীয় অধ্যায়, তৃতীয় প্রবন্ধ, তৃতীয় অধ্যায়, অনুরূপ শেষ পর্যন্ত সাজিয়েছি। দশম অধ্যায়কে কিতাবের পরিশিষ্ট করেছি এবং তাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। কেননা, মিথ্যা নবুয়তের দ্বাবীদার ‘‘মুসাইলামাতুল কাজ্জাব’’ থেকে নিয়ে কাদিয়ানী পর্যন্ত সকল দাজ্জালই মুসলমানদের ‘‘আকীদায়ে খতমে নবুয়্যত ও রিসালাত’’ সম্পর্কে অজ্ঞতাকেই তাদের পুঁজি বানিয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহর নবী ও রাসূল ‘‘মুহাম্মদ আস-সাদিকুল আমিন’’ এর উপর নবুয়্যত ও রেসালাত যে সমাপ্ত হয়েছে, তা সম্পর্কে অধিকাংশ মুসলমান অজ্ঞ। (তাঁর জন্য আমার মাতা-পিতা ও আমার প্রাণ উৎসর্গ।)

৫- হয়তো কেহ বলতে পারেন যে, আমি গোলাম আহমদ কদিয়ানী ও তার অনুসারীদের বেলায় কোন প্রকার আদব ও সম্মান সূচক শব্দ ব্যবহার করিনি। ইহা আহলে হাদীসের অভ্যাসের পরিপন্থী। কেননা, তারা তাদের বিরুদ্ধবাদীদের প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন।

উত্তরে আমি বলব, সম্মান ঐ সকল লোকের জন্য জায়েজ বা মুস্তাহাব, বরং ক্ষেত্র বিশেষে ওয়াজিবের পর্যায়ে গণ্য যারা, শুধু মতামত ও চিন্তাধারার বিরুদ্ধবাদী। কিন্তু ঐ সকল লোকদের জন্য সম্মান প্রদর্শন করা জায়েজ নহে, যারা ইসলাম ধর্ম থেকে মুরতাদ হয়ে গেছে এবং আল্লাহর নবি রাসূলগণের প্রতি বেয়াদবী করে এবং রাসুলুল্লাহর ওয়াজীরগণ, তার দরদী, সন্তান ও সৎ সাহাবীগণকে গালি গালাজ করে। আর, সাইয়েদুল মুরসালীনের মর্যাদা লাভের এবং নবুয়্যত ও রেসালাতের দাবিকরে। এ ধরনের লোকদের সম্মান করা মুসলমানদের জন্য হারাম। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ ধরনের লোকদের সম্বোধন করতেন তখন এরূপ উক্তি দ্বারা সম্বোধন করতেন ‘‘মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহর পক্ষ থেকে মিথ্যাবাদী মুসায়লামার প্রতি।’’ আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। কাউকে গালি-গালাজ করা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমরা কাউকে গালি দেইনি, যদিও সে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর মত দাজ্জাল হয়। আমরা নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই বাণীর উপর আমল করি ‘‘ দোষারোপ ও লানতকারী খাঁটি মুমিন নয়।’’ (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন)

এই হল অত্র কিতাবে সন্নিবেশিত পাঁচটি ব্যতিক্রম, যা অধ্যয়ন শুরু করার পূর্বেই পাঠকের কাছে আমি বর্ণনা করে দিতে চেয়েছি।

পরিশেষে আমি ইসলামী সংগঠনগুলোর প্রতি এবং যাদের কাছে ইসলামী সমস্যাবলির গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষ করে মক্কা ভিত্তিক রাবেতায়ে আলমে ইসলামী, করাচী ইসলামী গবেষণা বোর্ড, কায়রো, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা প্রভৃতি সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের প্রতি আহবান রাখছি, তারা যেন এ সকল কাফের ও ধর্মান্তরিত লোকের থাবা থেকে মুসলমানগণকে উদ্ধারের জন্য কাজ করেন, সাধারণ ভাবে আরব দেশ ও অন্যান্য মুসলিম বিশ্বে বিশেষ করে আফ্রিকা ও ইউরোপে। যেখানে কাদিয়ানীরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদীদের এবং খাঁটি স্বচ্ছ ধর্ম ইসলামের শত্রুদের সহায়তায় বিরাট ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ইসলামের এ সকল শত্রু সম্প্রদায় কাদিয়ানীদেরকে সকল প্রকারে ও বিভিন্ন উপায়ে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য করে চলেছে, যাতে তারা মুসলমানগণকে প্রকৃত ইসলাম থেকে এবং যে সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে তারা আছেন তা থেকে ইসলামের নামে ধোঁকা ও প্রতারণার মাধ্যমে দুরে সরিয়ে দিতে পারে। এর কারণ হল, ঐ সব দেশে খাঁটি মুসলিম ওলামার স্বল্পতা, তাদের পদ শূন্যতা, আসল কাদিয়ানী মতবাদের হাকীকত ও তাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অধিকাংশ মুসলমানের অজ্ঞতা এবং আফ্রিকা সম্বন্ধে মুসলিম বিশ্বের উদাসীনতা। যখন কাদিয়ানীরা আফ্রিকায় পাঁচটিরও বেশি উচ্চ মানের ম্যাগাজিন মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি, ষড়যন্ত্র ও কুফরী চিন্তাধারা প্রচারের উদ্দেশ্যে ইসলামের শত্রুদের সহায়তায় প্রকাশ করে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সমস্ত আফ্রিকায় মুসলমানদের এমন একটি ম্যাগাজিন পাওয়া যায়নি যা ওদের মুকাবেলা ও তাদের বিশ্বাসগত বিভ্রান্তি প্রকাশ করতে পারে। উপরন্তু, তারা শত শত কাদিয়ানী মুবাল্লেগ নিযুক্ত করে রাখছে, যারা অন্যান্য মহাদেশসহ আফ্রিকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে তারা সাতচল্লিশটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং দুই শত ষাটটি মসজিদ নির্মাণ করেছে। তার সাথে রয়েছে অনেক বিশেষ বিশেষ ও সাধারণ লাইব্রেরি, বই পুস্তক পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন ভাষায় কোরান শরীফ অনুবাদের ব্যবস্থা করেছে। ইদানীং তারা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেকগুলো হাসপাতাল ও সমাজ কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে, তাদের ঘোষণা অনুযায়ী আফ্রিকায় তাদের অনুসারীদের সংখ্যা পনেরো বৎসরের মধ্যেই দুই মিলিয়নের ও বেশি হয়ে গেছে।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল বিভ্রান্ত ও বিভ্রান্তকারী এ দলটি সাম্রাজ্যবাদীদের ও ইংরেজ সরকারের সকল প্রকার সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও তাদেরই রাজত্বকালে ভারত উপমহাদেশে যেখানে উহার কেন্দ্র অবস্থিত, গুটি কতেক ব্যক্তি ছাড়া কাউকে তাদের দলে ভিড়াতে পারেনি; যারা সাম্রাজ্যবাদীদের কোলে দীর্ঘ সত্তুর বছর ধরে লালিত পালিত হয়েছে। এদের সংখ্যা কয়েক হাজারের অধিক নহে। এদের মসজিদ কয়েক দশকেরও বেশি হয়নি এবং এদের বিদ্যালয়ের সংখ্যা নয় এর বেশি নহে। এখানে এদের এমন অবস্থা হওয়ার কারণ এই যে, মুসলমানরা তাদের প্রকৃত অবস্থা জানতে পেরেছে এবং তাদের তৎপরতা উদ্ঘাটন করে দিয়েছে। আর, আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে ইসলাম প্রচারকদের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। এর কারণ কি? মুসলমানগণ কি এতই দরিদ্র হয়ে পড়েছে যে, ঐ সকল দেশে মুবাল্লেগ প্রেরণ করার মত তাদের সামর্থ্য নেই অথবা এর আর কি কারণ থাকতে পারে?

আমাদের প্রত্যেককে এর উত্তর সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। আমাকে সুযোগ দিলে আমি প্রকাশ্যে বলব- সব কিছুই মুসলমানদের কাছে পর্যাপ্ত রয়েছে বরং পূর্বের চেয়ে বেশি আছে। কিন্তু ইসলামের উন্নতির জন্য চিন্তা ভাবনা করা, ইসলামের বিপর্যয়ে ব্যথিত হওয়া, ইসলামের কাজে প্রস্ত্তত থাকা ও ইহার অসুবিধা গুলে কে দূর করা এবং এর রাস্তায় কুরবাণী করার গুণাবলি আজ আর আমদের মধ্যে নেই। আমরা নিজেদেরকে খুব ভাল অবস্থায় মনে করি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের, আমাদের ভাই বেরাদার ও স্ত্রী পুত্রের এবং পরিবার বর্গের উপর কোন কষ্ট না পৌঁছে। কিন্তু ইসলাম যে বিপদজনক অবস্থায় পতিত হচ্ছে এবং মুসলমানগণ কুফর ও ইরতেদাদ এবং গুমরাহী ও নাস্তিকতার তুফানে যে ভাবে জর্জরিত হচ্ছে, তা যতক্ষণ আমাদের বাড়ি ঘর হতে দূরে থাকে ততক্ষণ আমরা এই বিপদের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি না। এটাই হল স্পষ্ট গুমরাহী। অথচ মহান আল্লাহ পাক উম্মতে মুহাম্মাদীকে এই বলে প্রশংসা করেছেন ‘‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি যাদেরকে মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বের করা হয়েছে, তোমরা মানুষকে ভাল কাজের উপদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে, আর আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে’’। [৬ সুরা আল এমরান-১১০] কিন্তু আমরা এ সম্মান ও মর্যাদাকে উপেক্ষা করে চলছি এবং কল্যাণের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছি।

অতএব হে মুসলমানগণ! জাগ্রত হও এবং সাবধান হয়ে যাও। এর চেয়ে দুঃখের ও অশ্রু বিসর্জনের ব্যাপার আর কি হতে পারে যে, মুসলিম বিশ্বের বহু জনবল এই কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ মুসলমানগণ অতীতে নিজ নিজ দেশে প্রতিটি শত্রুর মোকাবিলায় জাগ্রত এবং প্রতিটি গুমরাহী ও ফাসাদের বিরুদ্ধে ফয়সালা করার জন্য যুদ্ধরত ছিল। এ দায়িত্বটি প্রত্যেকের উপর তার সামর্থ্যনুযায়ী প্রযোজ্য এবং কাদিয়ানীদের মোকাবিলায় তাদের বিপদ ঠেকাবার জন্য কাজ করা এমন একটি বিষয় যা ধর্মীয় রাজনৈতিক এবং দেশাত্মবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে সকলের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি ও অপরিহার্য । ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ জন্য যে, কাদিয়ানী তৎপরতা দ্বীনের আকীদা সমূহকে বিকৃত করছে এবং ইসলামের বুনিয়াদকে ধ্বংস করছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ জন্য যে, সাম্রাজ্যবাদীরা যখনই এ দলটিকে তৈরি করেছে এবং তাদের সহযোগিতার চুক্তিতে আবদ্ধ করেছে, তখন থেকেই তারা বিজিত দেশ সমূহে আধিপত্য বিস্তারের জন্য এদেরকে সেতুরুপে ব্যবহার করে চলেছে। দেশত্ববোধের দৃষ্টিকোণ থেকে কাদিয়ানীদের অস্তিত্ব যে কতটুকু মারাত্মক তা অখন্ড্য ভারতের বিখ্যাত লেখক এবং ইসলামের কবি ড: মুহাম্মদ ইকবাল স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন, যখন তিনি জওহার লাল নেহরু কর্তৃক এ দলকে সমর্থন দানের সময় প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন।

শেষ কথা এই যে, আমি এই পুস্তকটি যা সম্ভবত: মুসলমান ও কাদিয়ানী উভয় সম্প্রদায়ের পাঠকের কাছে অনুপম পুস্তক হিসেবে সমভাবে গণ্য হবে, মুসলমানদেরকে কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে পরিচয় দান করা এবং সাধারণ কাদিয়ানীদেরকে এ মতবাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য উপস্থাপিত করছি; যাতে মুসলমানগণ এর বিপদ থেকে সতর্ক থাকেন এবং সাধারণ কাদিয়ানী এর হাকিকত অনুধাবন করতে পারে । আমি জনাব আতিয়া মুহাম্মদ সালেমের সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারছি না এবং মদিনা মুনাওয়ারার মাকতাবায়ে ইলমীর মালিক শেখ মুহাম্মদ সুলতান নমনুকানীকেও পুস্তকের মুদ্রণ ও প্রচারের দায়িত্ব ভার গ্রহণের জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আল্লাহর কাছে এ কামনা করি, তিনি যেন গ্রন্থটিকে খালেছ ভাবে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কবুল করেন। আর যার হাতে ইহা পৌঁছোবে তার জন্য যেন উপকারী করে দেন এবং এ ময়দানে জেহাদের অগ্রগামীর জন্য পাথেয় করে দেন। আল্লাহর কাছে তাওফীক কামনা করছি। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নেতা ও সর্বশেষ নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং তার পরিবার বর্গ ও সাহাবীগণের উপর । হে আল্লাহ, তুমি কবুল কর।

২৭ রমজান ১৩৮৬ হিঃ এহসান এলাহী জহীর

মদিনা মুনাওয়ারা ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন