hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কাদিয়ানী মতবাদ (পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ)

লেখকঃ এহসান ইলাহী জহীর

পঞ্চম প্রবন্ধ: কাদিয়ানী মতবাদ ও উহার আকীদাসমূহ
যে সকল বাতিল মতবাদ ইসলামের শক্তিকে বিচ্ছিন্ন এবং তার অস্তিত্বকে বিনাশ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তন্মধ্যে একটি হল কাদিয়ানী মতবাদ। এমতবাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হল ইসলামী চিন্তাধারাকে প্রকাশ্যে নহে বরং গোপনীয়ভাবে ধূলিসাৎ করা। কেননা, ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা এ কথা প্রমাণ করেছে যে, যখনই ইসলাম বিরোধী কোন দল বা সম্প্রদায় ইসলামের উপর মুখোমুখী আক্রমণ চালায় এবং তার অস্তিত্বকে মুছে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তখন তারা সে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়নি, বরং এর ফলে ইসলামের শক্তি ও মুসলমানদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পায়। ইহুদ, নাছারা ও মক্কার মুশরেকগণ তাদের সকল শক্তি নিয়ে ইসলামের সম্মান ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করতে এবং মুসলমানদের সংখ্যা কমিয়ে দিতে ও তাদের উন্নতিকে রোধ করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু তারা এ সকল উদ্যোগের পর ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। যুদ্ধের ক্ষেত্রে তা তো স্পষ্ট। যখন ক্রুসেডের শক্তি পরাভূত হয়, তখন তাদের আধিপত্য চুন-বিচূর্ণ হয়ে যায় এবং ইসলামের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মোকাবিলায় তাদের অস্ত্রের ঝনঝনানি ভেঙে পড়ে, যেমন করে ইসলামের উষালগ্নে ইসলামের গতি প্রতিরোধে মুশরিক ও ইহুদী সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছিল। এমনিভাবে বাহাছ ও মুনাজারা এবং তর্ক বিতর্কের ক্ষেত্রে এবং উৎসাহ প্রদান ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমেও তারা ইসলামের মোকাবেলায় কখনও সফলতা অর্জন করতে পারেনি। অনন্তর, ইসলাম তাদের সমুদয় অপচেষ্টা সত্ত্বেও প্রচার ও প্রসার লোভী করে চলেছে।এসকল বিপদাপদ ইসলামের উন্নতি, মহত্ত্ব এবং স্থিতিশীলতাই বৃদ্ধি করেছে। তাই, যেমন তারা ইসলামের কোন রূপ ক্ষতিসাধনে ব্যর্থ হয়, তেমনিভাবে তারা ইসলামের জ্যোতি প্রবাহের সম্মুখে বাঁধা সৃষ্টি করতে নিরাশ হয়ে পড়ে্ আরব উপদ্বীপের মুশরেক, ইহুদ ও খ্রিস্টানদের এ অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রবেশ করার যুগে আফগানিস্তান, ইরান ও চীনের হিন্দু, বৌদ্ধ, অগ্নিপূঁজারী ও শিখরাও এর অভিজ্ঞতা লাভ করেছে যেরূপ অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল তাদের বন্ধুগণ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। উপরন্তু তারা এটাও অনুধাবন করল যে, ইসলামের পাষাণ প্রস্তরটি অতি কঠিন। একে ভেঙে ফেলা বা উহাতে ফাটল বা ছিদ্র করা সম্ভব নহে।

এ তিক্ত অভিজ্ঞতা ইসলামের অনিষ্টকারী শত্রুদেরকে যে নতুন চিন্তা ধারার খোরাক জোগায়, তা হল এই, তাদের উচিত প্রকাশ্যে ইসলামকে প্রতিরোধ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করা। কেননা, প্রকাশ্য প্রতিরোধ মুসলমানদের আত্মমর্যাদা ও প্রতিরোধ শক্তিকে আরো বৃদ্ধি করে তোলে। আর, তারা যেন মুসলমান ও ইসলামের উপর আঘাত হানতে প্রতারণা ও কপটতার কৌশল অবলম্বন করে এবং ইসলামের মোকাবিলার জন্য ইসলামের নামে মুসলমানদের মধ্য থেকে পৃথক নতুন ধর্ম তৈরি করে। এভাবে ধীরে ধীরে এর অস্তিত্ব ও চিন্তা ধারাকে মুছে ফেলা যাবে, এমনি ভাবে এবং পরিকল্পিত এই চিন্তা ধারায় কাদিয়ানী মতবাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রথমত: তারা একটি মুসলিম দলরূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং তারা ইসলাম বিরোধী বিষাক্ত চিন্তাধারা এমনভাবে প্রচার করতে শুরু করে, যাতে সাধারণ লোক বুঝে উঠতে না পারে। অতঃপর তারা ক্রমশ: গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করতে লাগল। যখন তাদের জালে কিছু অনভিজ্ঞ লোক এমনি ভাবে ফেঁসে যায় যে তাদের পালাবার আর কোন পথ থাকে না, তখন খোলাখুলি ভাবে এদের সম্মুখে তাদের এ ভ্রান্ত আকিদায় বহাল থেকে যায়, আর যাদেরকে হেদায়েত ও মুক্তি দান করা আল্লাহর ইচ্ছা ছিল, তারা এ ভ্রান্তি থেকে রেহাই পায়। এ চিন্তাধারায় এবং কাফের খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদের ইঙ্গিতে তারা এ পরিকল্পিত স্তর গুলোকে তাবলীগ ও দাওয়াতের ভিত্তিরূপে গ্রহণ করে নিল, যাতে তারা মুসলমানদের বিভ্রান্ত এবং ইসলামের প্রকৃত রূপকে কলুষিত করতে পারে। তাই , আমরা এ প্রবন্ধে কাদিয়ানী মতবাদের প্রকৃত আকীদা সমূহ এবং যে উদ্দেশ্যে উহার সৃষ্টি, তা তাদেরই কিতাবসমূহ থেকে উল্লেখ সহ বিশদ বর্ণনা দিব, যাতে পাঠকবৃন্দ এর ব্যাপক ভয়াবহতার ও বিরাট দুরভিসন্ধির কথা জানতে পারেন। অনুরূপভাবে এদের প্রতারণা এবং ইসলামের পোশাক পরিধান করে এদের মোনাফেকী সম্পর্কে তারা সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন।

সকল মুসলমান কোন প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই এ কথা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তাআলা সকল প্রকার দোষত্রুটি এবং মানবিক উত্তেজনা থেকে মুক্ত। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং জন্ম গ্রহণও করেন নি। আর কেহ তাঁর সমকক্ষ নেই। তিনি সাদৃশ্য ও অবয়ব বিশিষ্ট হওয়া থেকে পবিত্র। এমনি ভাবে , তারা বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী ও রাসূল। তার পর আর কোন নবী নেই। তাঁর উপরই রেসালাতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছে এবং তাঁর দ্বারাই ওহীর ছিল-ছিলা বন্ধ হয়ে গেছে, তাঁর কিতাবই শেষ কিতাব, তাঁর উম্মতই শেষ উম্মত এবং তাঁর ধর্মই শেষ ধর্ম। তার পরে যে কেহ নবুয়তের দাবি করবে সে হবে মিথ্যুক এবং আল্লাহর উপর অপবাদ আরোপকারী। কারণ, মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নহেন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।’’ [১ সুরা আহযাব-৪০]

আল্লাহ আরো বলেন: ‘‘আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিয়েছি। আর তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মনোনীত করেছি।’’ [২ সুরা মায়েদা-৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘আমার এবং অপর নবীগনের দৃষ্টান্ত এক প্রসাদের মত যাকে খুব সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু উহাতে একটি ইটের জায়গা খালি রাখা হয়। দর্শকরা এটা প্রত্যক্ষ করে এবং এর সুন্দর নির্মাণে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়, তবে,একটি ইটের জায়গা খালি থাকার কারণে আশ্চার্যবোধ করে। আমার দ্বারা দালানের নির্মাণ কাজ শেষ হল এবং রাসূলগণের আগমনও আমার দ্বারা সমাপ্ত হল,। [৩ বুখারী ও মুসলিম।] অন্য রেওয়ায়েতে আছে- আমিই সেই ইট এবং আমিই শেষ নবী। আর এক বর্ণনায় রয়েছে- ‘আমি শেষ নবী এবং তোমরা শেষ উম্মত,। [১ ইবনে মাজাহ, ইবনে খুজায়মা ও হাকিম।] হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন- ‘আমার পরে কোন নবী নেই এবং তোমাদের পরে আর কোন উম্মত নেই’। [২ মাসনাদে আহমদ] অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে- ‘আমার উম্মতের পরে আর কোন উম্মত নেই।’ [৩ তাবারানী ও বায়হাকী]

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতগণ এটাও বিশ্বাস করেন যে, জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। এটা একটি উত্তম ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি বড় উপায়। সকল শহর ও জনপদের মধ্যে মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওরা উত্তম এবং মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসার মর্যাদা ও সম্মান সকল মসজিদ হতে অধিক। পৃথিবীতে কোন মসজিদই এগুলোর সমমানের নহে। এটা মুসলমানদের বিশ্বাস। কিন্তু, কাদিয়ানীরা বরে- ‘আল্লাহ রোজা থাকেন, নামাজ পড়েন এবং (নাউজুবিল্লাহ) তিনি নিদ্রা যান ও জাগ্রত হন, লিখেন ও স্বাক্ষর করেন, সঠিক সিদ্ধান্ত করেন এবং ভুলও করেন, স্ত্রী সহবাস করেন এবং সন্তান জন্ম দেন, বিভক্ত হন, সাদৃশ্য রাখেন এবং তিনি দেহ বিশিষ্ট’।

এ প্রসঙ্গে কিছু স্পষ্ট বক্তব্য পেশ করা হচ্ছে। তথাকথিত কাদিয়ানী নবী গোলাম আহমদ বলে: আল্লাহ আমাকে বলেছেন- আমি নামাজ পড়ি ও রোজা রাখি, জাগ্রত থাকি ও নিদ্রা যাই। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আল-বুশরা’ ২য় খন্ড, ৯৭ পৃ:।) এ হল দাজ্জালের কথা। পক্ষান্তরে, সত্য মাবুদ অললাহ পাক মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যা অবতীর্ণ করেছেন, তা হল এই- ‘‘আল্লাহ তিনি ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা কোনটাই স্পর্শ করে না। আকাশ সমূহ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে এ সবের মালিক তিনিই। এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? মানুষের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবই তিনি জানেন। তার ইচ্ছা ব্যতীত তার ইলমের কিছু অংশও কেহ আয়ত্বে আনতে পারে না। তাঁর কুরছি আকাশ সমূহ ও পৃথিবী ব্যাপ্ত করে আছে। এ দু‘টোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য কঠিন নহে। তিনি সর্ব-উচ্চ ও মহান। [৪ সুরা বাকারা, আয়াতুল কুরসী-২৫৫]

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ‘আল্লাহ নিদ্রা যান না এবং নিদ্রা যাওয়া তাঁর জন্য সাজেনা’। [৫ মুসলিম, ইবনে মাজাহ ও দারামী]

অতঃপর মহান আল্লাহ তাঁর নিজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:- ‘‘আল্লাহর ইলম সকল বস্ত্তকে বেষ্টন করে রেখেছে।’’ [৬ সুরা তাহরীম- ১২] আরো বলেন:- ‘‘তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, কিনি উপস্থিত ও অনুপস্থিত সকল বিষয়ের জ্ঞান রাখেন।’’ [৭ সুনা হাশর - ২২] আর ফেরেস্তাদের ভাষ্যে বলেন:- ‘‘আমরা আপনার প্রভুর নির্দেশ ব্যতীত অবতরণ করি না, আমাদের সম্মুখে,পিছনে ও এত দু ভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা সব কিছুর মালিক তিনিই। আর তোমার প্রভু কখনও ভুলেন না।’’ [১ সুরা মারয়াম - ৬৪] মুসা আলাইহিস সালাম এর ভাষ্যে বলেন- ‘‘আমার প্রভু পথভ্রষ্ট হন না এবং ভোলেন ও না।’’ কিন্তু কদিয়ানীরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ ভুলও করেন এবং সঠিকও করেন। এটা জানা কথা যে, ভুলের সহিত অজ্ঞতা ও বিস্মৃত হওয়া অনিবার্য। ভন্ড কাদিয়ানী আরবী ভাষায় নিজ শব্দে বলে: ‘‘আল্লাহ বলেছেন- ‘আমি রাসূলের পক্ষ হতে উত্তর দেই, আমি ভুলও করি এবং সঠিকও করি। আমি রাসূলকে বেষ্টন করে রেখেছি।’’(আল-বুশরা ২য় খন্ড, ৭৯ পৃষ্টা।) সে আরো বলে: ‘‘আমি কাশফের দ্বারা দেখছি যে, আমি অনেক গুলি কাগজ আল্লাহ তাআলার কাছে পেশ করছি উহাতে স্বাক্ষর করার জন্য এবং আমি যে সকল দাবি করেছি উহা অনুমোদনের জন্য। অনন্তর, আমি দেখতে পেলাম তিনি উহাতে লাল কালি দ্বারা স্বাক্ষর করেছেন। কাশফের সময় আমার কাছে আব্দুল্লাহ নামে আমার একজন ভক্ত উপস্থিত ছিল। অতঃপর আল্লাহ কলম ঝাড়লেন। এতে লাল কালির ফোটা আমার কাপড়ে ও আমার ভক্ত আব্দুল্লাহর কাপড়ে পড়ল। কাশফ যখন শেষ হল তখন বাস্তবে দেখতে পেলাম আমার ও আব্দুল্লাহর কাপড় সেই লাল রঙ্গে রঞ্জিত হয়ে গেছে। অথচ আমাদের নিকট কোন লাল রং ছিল না। এখন পর্যন্ত এ কাপড়গুলো আমার মুরীদ আব্দুল্লাহর নিকট মওযুদ আছে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘তিরিয়াকুল কুলুব’ এবং ‘হাকীকতুল ওহী’ ২৫৫ পৃ:।)

অন্যত্র এ দাজ্জাল সৃষ্টিকর্তা সুমহান সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী আল্লাহকে ‘অক্টোপাস’ নামক একটা সামুদ্রিক প্রাণীর সহিত তুলনা দিয়েছে। সে বলে: ‘আল্লাহর অস্তিত্বের প্রকৃতিকে আমরা এরূপ ধরে নিতে পারি যে, তাঁর দৈর্ঘ্য-প্রস্থের কোন সীমা নেই। তিনি অক্টোপাস সাদৃশ’। তার অনেক শীরা রয়েছে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সম্প্রসারিত। (গোলামের ‘তাওজীহুল মুরাম’ ৭৫ পৃ:) এমনিভাবে সে আল্লাহর অস্তিত্বকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছে, যে আল্লাহর কোন সাদৃশ্য নেই। আর মহান আল্লাহর বাণী ‘‘ তাঁর অনুরূপ কোন বস্ত্ত নেই, তিনি সবকিছু শুনেন ও দেখেন। [২ সুরা শুরা - ১১] একথা সে অস্বীকার করেছে। এতদ্ব্যতীত কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ ত‘আলা স্ত্রী সহবাস করেন এবং তাঁর সন্তানাদি জন্ম লাভ করে।’’ তাদের এ বিশ্বাস কিতাবুল্লাহ, সুনণতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সকল আসমানি ধর্মের পরিপন্থী । অতঃপর এর চেয়ে অদ্ভুত বিষয় তারা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তাআলা তাদের নবী গোলাম আহমদের সাথে সহবাস করেছেন। শুধু তা-ই নহে বরং এ সহবাসের ফল সে নিজেই। প্রথমত: যার সাথে আল্লাহ সহবাস করেছেন সে হল তাদের নবী গোলাম আহমদ। অতঃপর সে-ই গর্ভ ধারণকারী। দ্বিতীয়ত: সে-ই জন্ম গ্রহণকারী সন্তান। এখন আমাদের শুনা উচিত কাদিয়ানীরা তাদের ভাষায় কি বলে? কাজী ইয়ার মুহাম্মদ কাদিয়ানীর বক্তব্য: ‘‘মসীহ মাওউদ’’ (গোলাম) এক সময় তার নিজের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলছেন, তিনি নিজেকে স্বপ্নে দেখেন, তিনি যেন একজন মহিলা। আর, আল্লাহ তাআলা তার মধ্যে নিজের পুরুষত্ব শক্তি প্রকাশ করলেন। (ইয়ার মুহাম্মদ, জাহিয়াতুল ইসলাম ৩৪ পৃ:) ভন্ড কাদিয়ানী নিজে বলে- ‘‘আমার মধ্যে ঈসার রূহ ফুঁকে দেয়া হয়েছে, যেমন মরিয়ামের মধ্যে ফুঁকে দেয়া হয়েছিল। রূপকভাবে আমি গর্ভ ধারণ করলাম। কয়েক মাস পরই যা দশ মাসের ঊর্ধ্বে নহে মরিয়াম হতে পরিবর্তিত হয়ে ঈসা হয়ে গেলাম। এ পদ্ধতিতে আমি মরিয়ম পুত্র হয়ে গেলাম। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘সফিনায়ে নূহ’ ৪৭ পৃ:) আরো সে বলে- আল্লাহ তাআলা আমাকে মরিয়ম নামে নাম করণ করেছেন, যে, মরিয়ম ঈসা কে গর্ভ ধারণ করেছিলেন। সুরায়ে তাহরীমের মধ্যে আল্লাহর এ বাণীতে আমিই উদ্দেশ্য, ‘‘ইমরানের কন্যা মরিয়ম যিনি তার সতীত্ব রক্ষা করেছেন। অতঃপর আমি উহাতে আমার রূহ ফুঁকে দিলাম’’। অবশ্যই আমি মেই একমাত্র ব্যক্তি যে দাবি করছে ‘আমিই মরিয়ম এবং আমার মধ্যেই ঈসার রূহ ফুঁকে দেয়া হয়েছে’। (গোলামের হাকীকতুল ওহীর হাসিয়া, ৩৩৭ পৃ:) এই ভিত্তিতে কাদিয়ানীরা গোলাম আহমদকে আল্লাহর পুত্র বলে বিশ্বাস করে, বরং সেই প্রকৃত আল্লাহ। এ মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী বলে: ‘আল্লাহ আমাকে বলেছেন- ‘‘তোমার সৃষ্টি আমার পানি থেকে এবং ওদের সৃষ্টি আমার পানি থেকে এবং ওদের সৃষ্টি কাপুরুষত্ব থেকে।’’ (গোলামের ‘‘আনজাসে আতম’’ ৫৫ পৃ:) সে আরো বলে- ‘আল্লাহ আমাকে এই বলে সম্বোধন করেছেন, শুন হে আমার ছেলে!’ (গোলামের ‘‘আল বুশরা ’’ ১ম খন্ড ৪৯ পৃষ্ঠা)

সে আরো বলে- যে, প্রভু আমাকে বলেছেন: তুমি আমা হতে এবং আমি তোমা থেকে, তোমার প্রকাশ আমার প্রকাশ। (গোলামের ‘‘ওহীয়ে মুকাদ্দাস’’ ৬৫০ পৃষ্ঠা) আল্লাহ আরো বলেছেন: হে সূর্য! হে চন্দ্র! তুমি আমা হতে এবং আমি তোমা হতে। (গোলাম রচিত ‘‘হাকীকতুল ওহী’’ ৭৩ পৃ:) সে আরো বলে: আল্লাহ তাআলা আমার মধ্যে অবতরণ করেছেন এবং তাঁর ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে আমি হলাম মাধ্যম।’’ (গোলাম রচিত কিতাবুল বারিয়্যা ৭৫ পৃ:) সে আরো বলে: আমার উপর ওহী এসেছে-‘‘আমি তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি এমন একটি পুত্রের, যে হবে সত্য ও উচ্চ মর্যাদার প্রতীক, যেন আল্লাহ আকাশ হতে অবতরণ করেছেন।’’ (গোলাম রচিত ‘‘আল ইসতেফতা’’ ৮৫পৃষ্ঠা) এই হল মহান আল্লাহ সম্পর্কে কাদিয়ানীদের আকীদাসমূহ। তারা আল্লাহর প্রতি যে সকল কথা আরোপ করছে, তা থেকে তিনি পবিত্র ও ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তাআলা তার সম্মানিত কালামে পাকে বলেন: ‘‘আপনি বলুন! তিনি আল্লাহ এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি সন্তান জন্ম দেননি এবং তিনি জন্ম গ্রহণও করেন নি। তার সমকক্ষ কেহ নেই। [১ সুরা ইখলাছ] আল্লাহ বলেন: ‘‘ঐ সকল লোকেরা কাফের হয়ে গেছে যারা বলে মসীহ ইবনে মরিয়মই হলেন আল্লাহ’’। [২ সুরা মায়েদা- ১৭] তিনি আরো বলেন: ‘‘হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ী কর না এবং আল্লাহর শানে সত্য ব্যতীত আর কিছুই বল না। নিশ্চয়ই মসীহ ঈসা বিন মরিয়ম আল্লাহর রাসূল ব্যতীত অন্য কিছু নহেন। তিনি আল্লাহর কালিমা যাকে মরিয়মের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আদিষ্ট রূহ। অতএব তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিন খোদা বল না। তোমরা এ থেকে বিরত থাক। এটা তোমাদের জন্য মঙ্গল জনক। আল্লাহই একমাত্র উপাস্য, সন্তান হওয়া থেকে তিনি পবিত্র। আকাশ সমূহ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুর মালিক তিনি। কার্য সম্পাদনে আল্লাহই যথেষ্ট’’। [১ সুরা নিসা- ১৭১] আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলে’’ মাসীহ আল্লাহর পুত্র, উহা তাদের মুখের কথা। এদের কথা ইতি পূর্বেকার কাফেরদের কথার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করুন। কাদিয়ানীরা যে আকীদা পোষণ করে , এর উপর তাদেরকে মহান আল্লাহ যা বলেছেন তা ছাড়া আমরা আর কিছুই বলব না। তিনি বলেছেন: ‘‘এদের কথা পূর্বেকার কাফেরদের কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। কেমন করে তারা উল্টো দিকে ফিরে যাচ্ছে’’? আমরা কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় আকীদার দিকে যাওয়ার পূর্বে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করতে চাই যে, কাদিয়ানীরা গোলামকে যে প্রভুর পুত্র বলে দাবিকরে, সে হল ইংরেজ। যেমন, গোলাম আহমদ স্পষ্ট করে বলেছে: ‘আমার প্রতি ইংরেজি ভাষায় কয়েকবার ইলহাম হয়েছে। শেষবারে এ ইলহাম হয়: I can do what I will অর্থাৎ ‘আমি যা চাই, তাই করতে পারি।’ কথার উচ্চারণ ও বাক্য ভঙ্গি থেকে আমি বুঝতে পারলাম যেন একজন ইংরেজ আমার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। (গোলাম রচিত- ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ ৪৮০ পৃষ্ঠা) এখন আমরা খতমে নবুয়্যত সম্পর্কে কাদিয়ানীদের আকীদার কথা উল্লেখ করছি। কাদিয়ানীরা এ বিশবাস করে যে, মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম দ্বারা নবুয়্যত শেষ হয়নি বরং নবুয়্যত চলতে থাকবে। গোলাম পুত্র ও তার দ্বিতীয় খলীফা বলে- ‘আমরা (কাদিয়ানীরা) বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাআলা প্রয়োজন অনুসারে এ উম্মতের সংশোধন ও হেদায়েতের জন্য নবীগণ প্রেরণ করতে থাকবেন’। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের প্রবন্ধ, যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল-ফজলের, অন্তর্ভুক্ত এবং ১৯২৫ সালের ১৪ই মে তারিখে প্রকাশিত।) সে আরো লিখেছে- ‘‘তারা কি মনে করে আল্লাহর ভান্ডার নিঃশেষ হয়ে গেছে । তাদের এ ধারণা ভ্রান্ত। কেননা আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে তাদের এ ধারণা ভ্রান্ত। কেননা, আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। তা না হলে কোথায় এক নবী, বরং আমি বলি, অচিরেই হাজার হাজার নবীর আগমন ঘটবে’’। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ রচিত ‘আনওয়ারুল খেলাফত’ ৬২ পৃ:) এ কাদিয়ানী খলীফাকে একদা জিজ্ঞাসা করা হল: ভবিষ্যতে নবীগণের আগমন কি সম্ভব? সে উত্তর দিল হ্যাঁ, নবীগণ কিয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবেন। কারণ, পৃথিবীতে যতক্ষণ পর্যন্ত ফ্যাসাদ বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীগণের আগমন অপরিহার্য। (আল-ফজল, ২৭শে ফেব্র:, ১৯২৭ খৃ:।)

এ নির্বোধ বুঝতে পারেনি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম যাবতীয় ফাসাদ ও উহার প্রতিকারের বর্ণনা দিয়ে গেছেন। কাজেই, কোন নতুন নবীর আগমনের প্রয়োজন হতে পারে না। এ দিকেই নবী করীম তাঁর বাণীতে ইঙ্গিত করেছেন: ‘বণী ইসরাইলের তত্ত্বাবধান করতেন নবীগণ। যখনই কোন নবীর তিরোধান ঘটত, তখন অন্য নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। নিশ্চয়ই আমার পরে আর কোন নবী নেই, কাজেই বহু সংখ্যক খলীফা আগমন করবেন’’। [২ বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজা ও আহমদ।] হাদীসের তাৎপর্য হল এই খলীফাগণের কর্তব্য হবে যে তারা ইসলাম প্রচার, খাঁটি ধর্মের প্রসার ও মুসলমানদের সংস্কারের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। যেমনি ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তরাধিকারী উলামায়ে কেরামগণ এ দায়িত্ব পালন করে যাবেন। সহীহ বুখারীতে আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী।’ [১ বুখারী ও তিরমিজী] এর প্রতিই আল্লাহ তাআলা তাঁর কালামে ইঙ্গিত করেছেন: ‘প্রত্যেক বড় সম্প্রদায় হতে এক একটি ছোট দল দ্বীনের জ্ঞান লাভ করার জন্য কেন বের হয় না? যখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসবে, তখন তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করবে।’’ [২ সরা তওবা ১২২] এ আক্বীদাকে তারা শুধু এ জন্যই তৈরি করেছে, যাতে গোলাম আহমদের নবুয়তের দাবিকে শক্তিশালী করা যায়। নচেৎ গোলাম আহমদ কোন ফাসাদের সংস্কার করেছে? বরং সে ই তো ফাঁসাদের একটি উৎস। গোলাম তার পুত্র ও খলীফার ন্যায় কথা বলেছে, ‘‘নিশ্চয়ই নবীগণের আগমন আল্লাহর একটা অনুগ্রহ এবং তাদের ধারাবাহিকতা কথনও বিচ্ছিন্ন হবে না। এটা আল্লাহর বিধান। তোমরা এটাকে ঠেকাতে পারবে না ।’’ (গোলামের ‘কিতাবে শিয়ালকোট’ এর সার সংক্ষেপ, ২২পৃঃ) যখন নবুয়তের আকারে হয়। এ গোলামই সর্বপ্রথম এতে প্রবেশ করে। এ জন্যই কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে যে, গোলাম আহমদ আল্লাহর নবী ও রাসূল। শুধু তাই নহে, বরং সে সকল নবী রাসূলগণ হতে উত্তম। সে পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের গৌরব। কাদিয়ানী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা ও তাদের মিথ্যা নবী গোলাম তার নিজের অবস্থা বর্ণনা করে বলে: ‘আমি ঐ আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ, তিনি আমাকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন এবং নবী নামে অভিহিত করেছেন। আর, আমাকে মসীহে মাওউদ বলে আহবান করেছেন এবং আমার দাবির সমর্থনে তিন হাজার নিদর্শন অবতীর্ণ করেছেন।’’ (গোলাম রচিত হাকীকতুল ওহীর পরিশিষ্ট, ৬৮ পৃ:) সে আরো বলে: তিনিই সত্য প্রভু, যিনি কাদিয়ানী তার রাসূল পাঠিয়েছেন।’ (কাদিয়ান তার আভাস ভূমির নাম)আল্লাহ তাআলা কাদিয়ানকে হিফাজত করবেন এবং প্লেগ রোগ, থেকে রক্ষা করবেন। শক্তিমান পরাক্রমশালী আল্লাহর কুদরত যে, গ্রামকে ভন্ডনবী কাদিয়ানী নিজের অবস্থান ও ভ্রান্ত মতবাদ দিয়ে অপবিত্র করেছে সেই কাদিয়ানে প্লেগ রোগ দেখা দেয়। যাতে তার দাবি মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়, অথচ আশে পাশের শহর-গ্রামে এই রোগ বিস্তৃতি লাভ করেনি। পরে এই গোলাম কাদিয়ানী তার শ্বশুরের কাছে লিখিত একটি পত্রে স্বয়ং এই প্লেগ রোগের কথা স্বীকার করে। সে লিখেছে: এখানে (কাদিয়ানে) প্লেগ রোগ চরমে পৌঁছেছে। মানুষ এর দ্বারা আক্রান্ত হলে কয়েক ঘনটার মধ্যেই মারা যায়।(মাকতুবাতে আহমদিয়া ৫ম খন্ড ১১২ পৃ:) উক্ত ব্যক্তির নিকট লেখা অন্য একটি পত্রে সে বলে: প্লেগ রোগ গ্রামে ঢুকে পড়েছে, এমনকি আমাদের ঘরেও ঢুকে পড়েছে। গোছানা আক্রান্ত তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে , যেমন বের করে দিয়েছি জনাব মোহাম্মদ দ্বীনকে। কেননা, সেও আক্রান্ত । আজ দিল্লী থেকে আগত আমাদের এক মেহমান মেয়ে লোক আক্রান্ত হলো। যদিও এর প্রকোপ সত্তুর বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। কেননা, এটা তার রাসূলের বাসস্থান এবং এতে সকল জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (গোলাম রচিত দাফেউল বালা’ ১০ও ১১ পৃ:) সে আরো বলে: আমার রেসালাত প্রমাণ করার জন্য আল্লাহ তাআলা এত বেশি সংখ্যক নিদর্শন প্রেরণ করেছেন, যদি তা এক হাজার নবীর মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়, তবে এতেই তাদের রেসালত প্রমাণিত হয়ে যাবে। কিন্তু মানব শয়তানরা এটা বিশ্বাস করে না ।(গোলাম রচিত আইনুল মারেফত ৩১৭ পৃ:) কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল লিখেছে, যে অর্থে পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণকে নবী রাসূল বলা হত সেই অর্থে গোলাম আহমদও নবী এবং রাসূল। (আল ফজল, ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৪খৃঃ) এ পত্রিকাটি ‘মুসলমানদের প্রতি আহবান’ শিরোনামে প্রচার করে: ‘‘হে লোকেরা, যারা ইসলামের দাবিকর, তোমরা প্রকৃত ইসলামের দিকে আস, যা তোমরা মাসীহে মাওউদ (অর্থাৎ গোলাম আহমদ) ব্যতীত আর কারো কাছে পাবে না। তার দ্বারাই তোমাদের পুণ্য ও খোদা ভীতির পথ খুলবে, তার অনুসরণে মানবজাতি সফলতা ও মুক্তি লাভ করবে, এবং গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে। তিনিই হলেন পূর্ববর্তী পরবর্তীদের গৌরব।(আল-ফজল, ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫ খৃ:) ভন্ডনবী কাদিয়ানীর পুত্র এবং কাদিয়ানীদের নেতা বশীর আহমদ লিখেছে: এ কথা বাস্তব সত্য যে, গোলাম আহমদ নবী ও রাসূল থেকে উত্তম বলে বিশ্বাস করে। তাদের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও রয়েছেন এখানে আমরা শুধু এদের দ‘টি উক্তি উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করি। ভন্ডনবী কাদিয়ানী বলে, ‘আমাকে যা কিছু আল্লাহ দিয়েছেন, তা জগৎবাসীর মধ্যে আর কাউকে দেননি।’ (গোলাম কাদিয়ানীর- হাকিকতে ওহীর পরিশিষ্ট, ৮৭ পৃ:) সে আরো বলে: সকল নবীগণকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা একাই আমাকে দেয়া হয়েছে। (গোলামের দুররে ছামীন ২৮৭ পৃ:) কাদিয়ানীদের একটা আকীদা হল এই যে, জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম গোলাম আহমদের নিকট অবতরণ করতেন। অথচ সকল মুসলমান এ বিশ্বাস পোষণ করেন যে, মুহাম্মদের পরে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আর কারো কাছে অবতরণ করেন নি। গোলাম পুত্র ও কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমদ বলে: আমার বয়স যখন নয় বছর, সে সময় আমি এবং আমার সাথী একজন ছাত্র আমাদের বাড়িতে খেলছিলাম। এমনি এক সময় খেলা ধুলার অবসরে আমরা একটি পুস্তক দেখতে পেলাম। আমরা উহা খুললাম যা পড়তেও সক্ষম ছিলাম। কাজেই, আমরা উহার কিছু অংশ পড়লাম। আমাদের পড়ার মধ্যে এ কথাটি ছিল ‘‘নিশ্চয়ই জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এখন অবতরণ করেন না’’। আমি বললাম এটা মিথ্যা কথা। কেননা, জিব্রাঈল আমার পিতার কাছে আগমন করেন। ঐ ছাত্রটি তা অস্বীকার করে বলল: না, কেননা এ পুস্তকে লেখা আছে যে, জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম অবতরণ করেন না। আমরা দ‘জনের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেল। তাই আমরা আমার পিতার নিকট গেলাম এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বললেন- কিতাবে যা লেখা আছে তা ভুল। কেননা জিব্রাঈল আঃ. এখনও অবতরণ করেন। (মাহমুদ আহমদের ভাষণ, যা আল ফজল পত্রিকা থেকে উদ্ধৃত এবং ১০ এপ্রিল ১৯২২ খৃ: প্রকাশিত) গোলাম নিজেই বলে: জিব্রাঈল আঃ. আগমন করে আমাকে পছন্দ করলেন এবং তার আঙুল ঘুরিয়ে আমার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে শত্রুগণ হতে রক্ষা করবেন। (গোলাম রচিত ‘মাওয়াহিবুর রহমান’ ৪৩ পৃষ্ঠা) কাদিয়ানীরা এটাও বিশ্বাস করে যে, গোলামের নিকট ওহী আসে এবং তার উপর আল্লাহর কালাম অবতীর্ণ হয়। শুধু এই নহে, বরং তার ওহী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওহীর সমতুল্য এবং তার এলহামাত কুরআনের মতই। এর উপর ঈমান আনয়ন করা অবশ্যই কর্তব্য। কাজী মুহাম্মদ ইউসুফ কাদিয়ানী বলে: গোলাম আহমদ আদিষ্ট হয়েছেন যে, তার কাছে যে ওহী আসে তা তার জামাতকে শুনাবেন। অনুরূপভাবে উহার উপর বিশ্বাস করা কাদিয়ানীদের কর্তব্য। কেননা, আল্লাহর কালাম এ উদ্দেশ্যে পৌঁছে থাকে অর্থাৎ উহাতে বিশ্বাস করা এবং তা কার্যে পরিণত করাই উদ্দেশ্য। এ মর্যাদা নবীগণ ছাড়া আর কারো নেই যে, তাদের ওহীতে ঈমান আনতে হবে। (মুহাম্মদ ইউসুফ রচিত ‘আন নবুয়্যত ফিল ইসলাম ’ ২৮ পৃ:) গোলাম বলে: ‘মহান আল্লাহর শপথ! আমি আমার ওহীতে বিশ্বাস করি, যেমন কুরআন ও অন্যান্য আসমানি কিতাবে বিশ্বাস রাখি। আর, আমি বিশ্বাস করি যে, যে কালাম আমার উপর অবতীর্ণ হয়, উহা আল্লাহর নিকট হতেই অবতীর্ণ হয়। অনুরূপভাবে আমি বিশ্বাস করি যে, কুরআন আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ হয়েছে।’ (গোলাম কাদিয়ানী রচিত-হাকীকাতুল ওহী’ ২১১ পৃ:) সে আরো বলছে: আমার নিকট যে ইলহামাত অবতীর্ণ হয়, উহাতে আমি এরূপ বিশ্বাস করি যেমন তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে বিশ্বাস রাখি। (তাবলীগে রেসালাত’ ৬খন্ড, ৬৪পৃঃ) কাদিয়ানীদের এক প্রধান জালালুদ্দীন সামছ লিখেছে ‘গোলাম আহমদের ওহীর মর্যাদা অবিকল কুরআন, ইঞ্জিল ও তাওরাতের মর্যাদার সমান।’ (জালালুদ্দীন রচিত আকিবাতুল মুনকিরিন খেলাফাহ’ ৪৯ পৃ:) যেহেতু কাদিয়ানীরা গোলাম আহমদের প্রলাপসমূহকে কুরআনের মতই মনে করে তাই তারা বলে যে, যে সকল হাদীসে গোলাম আহমদের উক্তির বিপরীত হবে, উহা প্রত্যাখ্যাত; যদিও উহা প্রকৃত পক্ষে বিশুদ্ধ হাদীস হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে, যে সকল হাদীস গোলাম আহমদের উক্তির মোতাবেক উহা বিশুদ্ধ। যদিও উহা প্রকৃত পক্ষে মওযু (জাল) বা মিথ্যা হয়ে থাকে। কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমদ বলে: গোলাম আহমদের কথা নির্ভরযোগ্য। এর উপর নির্ভর করা যায়। কিন্তু হাদীস সমূহের অবস্থা এর বিপরীত। কেননা, হাদীস সমূহ তো আমরা রাসূলুল্লাহর মুখ থেকে শুনি নি, আর গোলাম আহমদের কথা আমরা তার মুখ থেকেই শুনেছি। কাজেই হাদীস সহীহ হলে উহা গোলাম আহমদের উক্তির বিপরীত হওয়া সম্ভব নহে। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের উক্তি যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজলে উদ্ধৃত, ২৯ এপ্রিল ১৯১৫ খৃ:) এ পত্রিকাটি আরো প্রচার করেছে- ‘এক বে-আদব লিখেছে, গোলামের যে সকল উক্তি বিশুদ্ধ হাদীসের বিপরীত তা প্রত্যাখ্যান করা উচিত। এ নির্বোধ! বুঝতে পারেনি যে, এর দ্বারা গোলাম আহমদের সত্য দাবিগুলো অস্বীকার করা অপরিহার্য হয়ে পড়তে পারে। পক্ষান্তরে কোন কোন হাদীস এমনও রয়েছে, যে গুলোকে আলেমগণ দুর্বল সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু আমাদের নবী গোলাম আহমদ বলেন যে, ইহা বিশুদ্ধ। সুতরাং আমরা তার কথা বিশ্বাস করব ওদের কথা নহে। তিনি যে হাদীসকে বিশুদ্ধ বলেন আমরাও উহাকে বিশুদ্ধ বলব। আর যে হাদীসকে তিনি দুর্বল বলেন, আমরাও উহাকে দুর্বল বলব। কেননা, হাদীস সমূহ রাবীদের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। আমরা সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনিনি। তবে গোলাম আহমদের কথার উপর আমরা এ জন্য নির্ভর করি যে, তিনি আল্লাহর নিকট থেকে অবহিত হওয়ার পর আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন। আর তিনি হলেন একজন জ্যান্ত নবী। মোট কথা, যে হাদীস গোলাম আহমদের উক্তির বিপরীত হবে, হয়তো উহা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ অথবা উহা বিশুদ্ধ নহে। (আল- ফজল, ২৯ এপ্রিল, ১৯১৫ খৃ:) কাদিয়ানীদের খলীফা ও তাদের নেতা বলে: ‘মসীহে মাওউদ’ (গোলাম) যে কুরআন পেশ করেছেন উহা ভিন্ন আর কোন কুরআন নেই। যে হাদীস গোলাম আহমদের শিক্ষার আলোকে হবে, উহা ভিন্ন আর কোন হাদীস নেই। এবং গোলাম আহমদের নেতৃত্ব বহির্ভূত কোন নবী নেই। যে ব্যক্তি মুহাম্মদকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে চায়, সে যেন গোলাম আহমদের প্রতিচ্ছবি দেখে নেয়। কেননা, যে ব্যক্তি তার মাধ্যম ছাড়া মুহাম্মদকে দেখতে চায়, তার পক্ষে উহা সম্ভব নহে। অনুরূপভাবে কেহ যদি তার মাধ্যম ছাড়া কুরআন দেখতে চায়, তবে এই কুরআন সেই কুরআন নহে। যাহা যাকে ইচ্ছা তাকে পথ প্রদর্শন করে, বরং উহা সেই কুরআন হবে, যাহা যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করে। অনুরূপভাবে গোলাম আহমদের ব্যাখ্যা ছাড়া হাদীসের কোন মূল্য নেই। কেননা, প্রত্যেকে এ থেকে যা ইচ্ছা তা বের করতে পারে।’ (জুমার খুতবা যা গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ কাদিয়ানে প্রদান করেছিল, উহা ‘আল-ফজল ‘পত্রিকার অন্তর্ভুক্ত, ১৫ জুলাই ১৯২৪ খৃ:) কাদিয়ানীদের আরেকটি আকীদা হল এই যে, গোলাম আহমদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, যেরূপভাবে প্রধান রাসূলগণের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল। তার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে, উহা অন্যান্য অনেক নবীর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার চেয়েও অধিক। অন্যান্য আসমানি কিতাব যেভাবে তিলাওয়াত করা হয়, অনুরূপভাবে, এ কিতাবটিও তিলাওয়াত করা অপরিহার্য। যে কিতাবটি তার উপর অবতীর্ণ হয়েছে উহার নাম ‘আল-কিতাবুল মুবিন।’ আরো উল্লেখযোগ্য যে, কাদিয়ানীদের কুরআনে বিশ অংশ রয়েছে। এমনি ভাবে তা বিভিন্ন আয়াতেও বিভক্ত। কাদিয়ানী পত্রিকা লিখছে- গোলাম আহমদের উপর তার প্রভুর কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যে কোন নবীর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার চেয়ে কম নহে। বরং উহা অনেক নবীর চেয়ে বেশি। (আল-ফজল ১৫ ফেব্র: ১৯১৯ খৃ:) মুহাম্মদ ইউসুফ কাদিয়ানী তার পুস্তকে লিখছে- আল্লাহ তাআলা গোলাম আহমদের ইলহামাতের সমষ্টিকে ‘আল কিতাবুল মুবিন’ নামে অভিহিত করেছেন। এক একটা ইলহামের নাম এক একটি আয়াত যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, নবীর জন্য কিতাব লাভ করা অপরিহার্য; তার কর্তব্য হল গোলাম আহমদের নবুয়্যত ও রেসালতকে বিশ্বাস করা। কেননা, আল্লাহ তাআলা তার জন্য একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং ‘আলকিতাবুল মুবিন’ নামে উহার নামকরণ করেছেন। আর এ গুণে তাকে ভূষিত করেছেন।’ যদিও কাফেরগণ তা অপছন্দ করে। (মুহাম্মদ ইউসুফ কাদিয়ানী রচিত ‘আন-নবুয়্যত ফিল ইসলাম’ ৪৩ পৃ:) কাদিয়ানী খলীফা কাদিয়ানে প্রদত্ত তার ঈদের খুতবায় বলেছে: প্রকৃত ঈদ আমাদের জন্য; তবে প্রয়োজনের চাহিদা হল এই যে, মসীহে মাওউদের (গোলামের) উপর আল্লাহর যে কালাম অবতীর্ণ হয়েছে উহা আমাদের পাঠ করা ও অনুধাবন করা উচিত। খুব কম লোক আছে যারা এ কালাম পাঠ করে এবং এর দুধ পান করে। অথচ অপরাপর কিতাব যতই পাঠ করা হোক না কেন উহাতে সে স্বাদ ও আনন্দ নেই যা গোলাম আহমদের উপর অবতীর্ণ কিতাব পাঠ করলে লাভ করা যায়। (আল-ফজল, ৩রা এপ্রিল ১৯২৮ খৃ:) গোলাম আহমদ তার কালামের বর্ণনায় বলে: আমার উপর এত অধিক পরিমাণ আল্লাহর কালাম অবতীর্ণ হয়েছে; যদি উহা একত্রিত করা যায়, তবে বিশ খন্ডের কম হবে না। (গোলাম কদিয়ানীর ‘হাকীকতুল ওহী’ ৩৯১ পৃ:) কাদিয়ানীরা আরো বিশ্বাস করে যে, তারা স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি ধর্মের অধিকারী এবং তাদের শরীয়ত একটা স্বতন্ত্র শরীয়ত। গোলাম আহমদের সঙ্গী সাথী সাহাবাগণের মতই এবং তার উম্মত একটি নতুন উম্মত। কাদিয়ানীদের পত্রিকা একটি প্রবন্ধ প্রচার করেছে। উহাতে আছে-‘আল্লাহ তাআলা এ রেসালাতকে কাদিয়ান নামক উজাড় বস্তিতে প্রকাশ করেছেন এবং এ গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য গোলাম আহমদকে নির্বাচিত করেছেন, যিনি পারস্য বংশোদ্ভুত। তাকে বলে দিয়েছেন- ‘‘আমি তোমার নাম পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত পৌঁছে দেব এবং শক্তি দিয়ে তোমাকে সাহায্য করব। তুমি যে ধর্ম নিয়ে আগমন করেছ, উহাকে সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করব। আর এ বিজয় কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে।’’ (আল-ফজল পত্রিকা ৩রা ফেব্রু: ১৯৫৩ খৃ:) পত্রিকাটি আরো প্রচার করেছে যে, ‘যে ব্যক্তি কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করা অবস্থায় গোলাম আহমদকে দেখেছে, তাকে সাহাবী বলা হবে।’ (আল-ফজল, ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬ খৃ:) গোলাম আহমদ নিজেই এ মতের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে- যে ব্যক্তি আমার জামাতে প্রবেশ করবে, সে বাস্তবে সাইয়েদুল মুরসালীনের সাহাবাগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (গোলামের ‘খুতবায়ে ইলহামিয়া’ ১৭১ পৃ:) কাদিয়ানী পত্রিকা এ সূত্র ধরে বলে: ‘গোলাম আহমদের জামাত প্রকৃত পক্ষে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের জামাত। তাদের উপর যেমন রাসূলুল্লাহর ফয়েজ ও বরকত সমূহ জারি হয় এমনি ভাবে কোন পার্থক্য ছাড়াই তার জামাতের উপর রাসূলুল্লাহর ফয়েজ ও বরকত জারি হয়। (আল-ফজল ১ম জানুয়ারি ১৯১৪ খৃ:) কাদিয়ানী খলীফা মাহমুদ আহমদ তার জামাতকে ঐ সকল লোকের সাথে সাক্ষাতের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছে যে, ‘মসীহে মাওউদের (গোলামের) আসহাবের সহিত তোমাদের সাক্ষাৎ করা উচিত।’ এদের মধ্যে অনেকেই এমন আছে, যাদের চুল এলোমেলো এবং মলিন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাদের প্রশংসা করেছেন। (মাহমুদ আহমদের প্রবন্ধ যা আল-ফজল পত্রিকায় প্রচারিত, ৮জানুয়ারী ১৯৩২ খৃ:)

এখন আমরা স্বয়ং গোলাম আহমদের আলোচনা করছি। সে তার উম্মতের কথা উল্লেখ করে বলে: ‘আমার উম্মত দু’ভাগে বিভক্ত। এক দল খ্রিস্ট ধর্মের রং অবলম্বন করবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে। অপর দল মাহদীর রং গ্রহণ করবে। (গোলামের উক্তিসমূহ যা আল-ফজল পত্রিকার অন্তর্ভুক্ত, ২৬ শে জানুয়ারি ১৯১৬ খৃ:) অনুরূপভাবে, এই গোলাম আহমদ তার শরীয়তের উল্লেখ করে বলে: শরীয়ত কি? তা তোমরা বুঝে নাও। আদেশ নিষেধের বর্ণনা করার নাম শরীয়ত। যে ব্যক্তি এ কাজ করবে এবং তার উম্মতের জন্য আইন কানুন নির্ধারণ করবে সেই হল ছাহেবে শরীয়ত। সুতরাং আমিই ছাহেবে শরীয়ত। কেননা, আমার কাছে আদেশ নিষেধ সম্পর্কে ওহী আসে। আর শরীয়তের জন্য এটা জরুরি নহে যে, তা নতুন নতুন আহকাম সংবলিত হবে। কেননা, কুরআনে যে সমস্ত শিক্ষা রয়েছে তাওরাতেও তা বর্তমান। বরকতময় মহান আল্লাহ এ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন- ‘নিশ্চয়ই এটা পূর্বেকার সহীফা সমূহের মধ্যে আছে অর্থাৎ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও মুসার আলাইহিস সালাম সহীফাতে রয়েছে।’’ [১সুরা আল আ’লা ১৮-১৯] (গোলাম রচিত ‘আরবাঈন’ ৪ নম্বর ৭পৃঃ)

কাদিয়ানীরা এ আকীদা ও পোষণ করে যে, কাদিয়ান অর্থাৎ যে জনপদে দাজ্জাল, মিথ্যাবাদী, বিকৃত মস্তিষ্ক গোলাম আহমদ জন্ম গ্রহণ করেছে, উহা মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারা সমতুল্য। বরং এ দু’স্থান হতেও উত্তম। আর উহার ভূমি হেরেমের ভূমি এবং উহাতে আল্লাহর অনেক নিদর্শনা বলী রয়েছে। উহাতে এমন একটি অংশ রয়েছে যা বেহেস্তের এক টুকরা। এখানে এমন একটি গোরস্থান রয়েছে, যার উপর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম প্রেরণ করেন এবং কুরআনে এর উল্লেখ রয়েছে। কাদিয়ানের মসজিদ, মসজিদে নববী, মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসার সমতুল্য, বরং স্বয়ং এ মহল্লা মুসলমানদের কিবলা ও কা’বা সাদৃশ্য। কাদিয়ানীদের এক অভিশপ্ত ব্যক্তি ‘আল-ফজল পত্রিকায় লিখছে, যার ভাষ্য হল: ‘কাদিয়ান কি? কাদিয়ান হল আল্লাহর জালালী শান ও কুদরতের একটি প্রকাশ্য নিদর্শন। এমনি ভাবে মসীহে মাওউদ (গোলাম) বলেছেন- ‘ইহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দারুল খেলাফত এবং মাসীহের বাসস্থান, জন্মস্থান ও সমাধিস্থল। এ জনপদেই রয়েছে এমন একটা ঘর যেখানে বসবাস করতেন বিশ্বের মুক্তিদাতা, দাজ্জালের ঘাতক এবং (খ্রিস্টানদের) ক্রসের চূর্ণ বিচূর্ণকারী (স্বপ্ন জগতে) আর ইসলাম ধর্মকে সকল ধর্মের উপর বিজয় দানকারী। (আল-ফজল, ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৩৯ খৃ:) অন্য এক মিথ্যাবাদী লিখছে ‘এটা আল্লাহর নূর সমূহের অবতরণ স্থল, ইহার অলি-গলি ও গৃহ সমূহে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তার প্রত্যেকটি ইট আল্লাহর এক একটি নিদর্শন। এর মসজিদ সমূহ নুরানী এবং উহার মুয়াজ্জিনের আযান জ্যোতিষ্মান। এ সকল মসজিদের মিনার সমূহ হতে এমন ধ্বনি উচ্চারিত হয় যা আরব উপদ্বীপে চৌদ্দ শতাব্দী পূর্বে উচ্চারিত হয়েছিল। (আল-ফজল ১লা জানুয়ারি ১৯২৯ খৃ:) কাদিয়ানের খলীফা মাহমুদ আহমদ বলে: ‘আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি, আল্লাহ আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, কাদিয়ানের ভূমি বরকতময়, উহাতে অবিকল ঐ সকল বরকত অবতীর্ণ হয় যা মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারায় অবতীর্ণ হয়ে থাকে। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের বাণী যা ‘আল-ফজল’ পত্রিকা থেকে উদ্ধৃত, ১০ ডিসেম্বর ১৯৩২ খৃ:) সে আরো বলেছে কাদিয়ানী আল্লাহর নেয়ামত ও বরকত সমূহের অবতরণ স্থল। এ সমস্ত বরকত ও ফয়েজ সমূহ যেভাবে কাদিয়ানী অবতীর্ণ হয়, অন্য কোথায়ও তেমনি অবতীর্ণ হয় না। গোলাম আহমদও বলেছে: যে ব্যক্তি কাদিয়ানে আসবে না, আমি তার ঈমানের উপর আশঙ্কা করি।’ (গোলাম পুত্র ও তার দ্বিতীয় খলীফা কর্তৃক রচিত ‘আনওয়ারুল খেলাফত’ ১১৭ পৃ:) কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজল’ প্রচার করেছে; যে মসজিদে আকসার দিকে রাসূলুল্লাহকে রাত্রিবেলা ভ্রমণ করান হয়েছিল, তা হল ঐ মসজিদ যা কাদিয়ানী অবস্থিত। আর মূল বক্তব্য হল এই আল্লাহর বাণী। ‘‘ঐ আল্লাহ পবিত্র যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম হতে মসজিদে আকসার প্রতি ভ্রমণ করিয়ে ছিলেন, যার চতুর্পাশ্ব আমি বরকতময় করে রেখেছি।’’ [১ সুরা বণী ইসরাইল-১] উহাতে মসজিদে আকসার দ্বারা কাদিয়ানের মসজিদকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কেননা, রাসূলুল্লাহকে রাত্রিকালে ঐ মসজিদের দিকে ভ্রমণ করান হয়েছিল যা কাদিয়ানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এবং যা গোলাম আহমদের ঐ সকল কামালাত ও বরকতের জ্যান্ত ছবি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দান করেছিলেন। (আল ফজল, ২১ আগস্ট, ১৯৩২ খৃ:) এই কাদিয়ানী দাজ্জাল উক্ত মসজিদকে বাইতুল হারামের সঙ্গে তুলনা করে বলে: কাদিয়ানে অবস্থিত আমার মসজিদের বর্ণনা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে তাঁর বাণী- ‘‘আর যে ব্যক্তি এতে প্রবেশ করল সে নিরাপদ হয়ে গেল। [২ সুরা আলে ইমরান- ৯৭] অবতীর্ণ করেছেন। (গোলাম কাদিয়ানী রচিত ‘‘এজালাতুল আওহাম’’ ৭৫ পৃ:) গোলামের জনৈক ভক্ত আল ফজল পত্রিকায় লিখেছে, ‘আরব ভূমি যদি হেরেম শরীফ দ্বারা গর্ব করতে পারে তবে অনারব ভূমি কাদিয়ান ভূমি দ্বারা গর্ব করতে পারবে।’ (আল-ফজলে, প্রকাশিত ১৯শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খৃ:) এ পত্রিকাটিতেই কাদিয়ানের প্রশংসায় জনৈক কাদিয়ানীর রচিত একটি কাসীদা প্রচারিত হয়েছে। এতে আছে, হে কাদিয়ানের ভূমি তোমার উজ্জ্বল পরিবেশকে কি বলব, যদ্দারা বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট হুরগণের চক্ষু আলোকিত হয়। আর আমি তোমাকে কি বলব? তুমিই ক্বিবলা ও কা’বা এবং ফেরেস্তাগণের মসজিদ।’’ (আল-ফজল, ১৮ ই আগস্ট ১৯৩২ খৃ:) কদিয়ানী খলীফা জুমায়ার খুতবা দিতে গিয়ে বলে- কাদিয়ান পৃথিবীর কেন্দ্র স্থল এবং তা সকল জনপদের মূল। এ পবিত্র ভূমি ছাড়া কোন প্রকারের উপকারিতা লাভ করা সম্ভব নহে।(জুমায়ার খুতবা যা গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ কাদিয়ানে প্রদান করেছিল এবং আল ফজল পত্রিকায় প্রচারিত ৩রা জানুয়ারি ১৯২৫খৃঃ) সে তার হাকীকতুর রুইয়া. নামক পুস্তকে লিখেছে কাদিয়ান হল সকল জনপদের মূল। যে ব্যক্তি উহা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে তাকে টুকরা টুকরা ও ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হবে। তোমরা টুকরা ও ছিন্ন ভিন্ন হওয়া থেকে বেঁচে থাক। মক্কা ও মদিনার ফল শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু কাদিয়ানের ফল সর্বদা টাটকা থাকবে। (হাকীকতুর রুইয়া ২৫ পৃ:) যেমনি ভাবে এ সকল দাজ্জাল মক্কা ও মদিনার মর্যাদার অবমাননা করতে চেয়েছে। হ্যাঁ, এই মক্কা মুকাররমা, যার শপথ করেছেন মহান ও বরকতময় প্রভু এবং এর নামকরণ করেছেন ‘নিরাপদ শহর’। তিনি বলেন- ‘‘আমি এ শহরের শপথ করছি।’’ [৩ সুরা আল বালাদ ১] আরো বলেন: ‘এ নিরাপদ শহরের শপথ’’। [৪ সুরা তীন ৩] আর ‘‘উম্মুলকুরা’’ (সকল জনপদের মূল) নামে এর নামকরণ করে আল্লাহ পাক বলেন, ‘‘যাতে আপনি উম্মুল কুরা অর্থাৎ মক্কা ও তার আশে পাশের লোকজনকে ভীতি প্রদর্শন করেন।’’ [৫ সরা আল আনআম ৯৩] আর যেখানে আল্লাহ সম্মানিত ঘর ও হেরেম শরীফ রেখেছেন, যেমন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ কালামের মধ্যে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন- ‘‘সর্ব প্রথম ঘর যা মানব জাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে, উহা মক্কায় অবস্থিত, যা অত্যন্ত বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য পথ প্রদর্শক। উহাতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনা বলী। তন্মধ্যে একটি হল মাকামে ইব্রাহীম। যে ব্যক্তি উহাতে প্রবেশ করল সে নিরাপদ হয়ে গেল।’’ [১ সুরা আলে ইমরান- ৯৬-৯৭] আল্লাহ আরো বলেন ‘‘ হে মুহাম্মদ আপনি ঘোষণা করুন: আমি এ সম্মানিত শহরের প্রভুর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি।’’ [২ সুরা নমল-৭] আর এ শহর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তুমি সর্বোত্তম ভূমি এবং আল্লাহর কাছে তাঁর ভূমিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়তম।’’ [৩ তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, আহমদ, হাকিম ও ইবনে হিববান।] আর মদিনা মুনাওরা হল মহান আল্লাহর রাসূলের শহর, ওহীর অবতরণস্থল, নুরের উৎস এবং সাইয়্যেদুল মুরসালীনের হিজরত ও সমাধিস্থল। আল্লাহ এর নাম রেখেছেন ‘ত্বাবাহ’ (পবিত্র শহর) যে ব্যক্তি এখানে মৃত্যুবরণ করবে তাঁর জন্য রাসূলকে সুপারিশকারী বানিয়েছেন, দাজ্জাল ও প্লেগ হতে একে রক্ষা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি ওহীর সাহায্যে কথা বলেন তিনি একে হেরেমের মর্যাদা দান করেছেন। যেমন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হেরেম শরীফ বানিয়েছেন এবং একে ঈমানের কেন্দ্রস্থল সাব্যস্ত করেছেন। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহ তাআলা মদিনাকে ‘তাবাহ’ নাম দিয়েছেন [৪ বুখারী ও মুসলিম] এবং বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করতে সক্ষম হয় , সে যেন এখানে মৃত্যুবরণ করে। কেননা, যে ব্যক্তি এখানে মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করব। [৫ তিরমিজী ইবমোজাহ ও ইবনে হিববান] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন- ‘মদিনার দ্বার সমূহে ফেরেস্তা-গণের পাহারা রয়েছে, সেখানে দাজ্জাল ও প্লেগ প্রবেশ করতে পারবে না।’ [৬ বুখারী মুসলিম মুয়াত্তা ও আহমদ] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হেরেম বানিয়েছেন এবং মদিনার উভয়‘‘লাবা’’ প্রান্তরের মধ্যবর্তী স্থানকে হেরমরুপে নির্ধারিত করছি। [৭ তিরমিজী] হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন- ‘নিশ্চয়ই ঈমান সংকুচিত হয়ে মদিনার দিকে ফিরে আসবে, যেমন সর্প সংকুচিত হয়ে তার গর্তে প্রবেশ করে।’ [৮ বুখারী মুসলিম ইবনে মাজাহ ও আহমদ] হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-‘মদিনা মানুষের অপবিত্রতাকে এমনিভাবে দূর করে দেয় যেমনি কর্মকারের চুলা লোহার ময়লাকে দূর করে দেয়।’ [৯ বুখারী মুসলিম তিরমিজী, নাসায়ী, মুয়াত্তা ও আহমদ] এসব হল মক্কা ও মদিনা সম্পর্কে ইসলাম ও মুসলমানদের আকীদা। কিন্তু কাদিফানীরা এ দুটি মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ ও হ্রাস করার প্রয়াস চালায় এবং কাদিয়ানকে মক্কা ও মদিনার সমতুল্য নয় বরং এ দুটির চেয়ে আরো উত্তম বানাতে চায়। এ জন্যই কাদিয়ানী খলীফা বলে- মক্কা-মদিনার ফল নিঃশেষ হয়ে গেছে, কিন্তু কাদিয়ানের ফল সর্বদাই তাজা থাকবে। সে আরো বলে: কাদিয়ানে আল্লাহর কতকগুলো নিদর্শন রয়েছে। তন্মধ্যে বার্ষিক সম্মেলন স্থল, মসজিদে আল মুবারক, মসজিদে আকসা (আল কাদিয়ানী) মসীহের মিনার [১ ‘মসীহের মিনার’ গুলাম আহমদ এই মিনার বানিয়ে ঘোষণা করে যে এই সেই মিনার যার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাঃ. এই বলে ইশারা করেছেন যে, পূর্ব দামেস্কের এই মিনারার উপর ঈসা আঃ অবতরণ করবেন। গুলামের এই দাবীতে তার বোকামীর ভ্রষ্টতা কোথায় দামেস্ক আর কোথায় কাদিয়ান। এরপর কোথায় পূর্ব থেকে তৈরী মিনার আর কোথায়পরে তৈরী মিনার, যেটি নির্মাণ করছে মিথ্যুক ভন্ডনবী। এরপর বলে যে, এরপর বলে যে, এর উপর ঈসা নাজেল হবেন। এর চেয়ে বড় বোকামী আর কি হতে পারে!!] ইত্যাদি। সুতরাং এ সকল পবিত্র স্থানের জিয়ারত করা উচিত। কেননা এগুলো আল্লাহর নিদর্শনা বলী। (মাহমুদ আহমদের ভাষণ, যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল ফজলে অন্তর্ভুক্ত, ৮ই জানুয়ারি ১৯৩৩ খৃ:) তাদের আর একটি আকীদা হল এই ‘কাদিয়ানের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার নাম হজ।’ গোলাম পুত্র ও তার দ্বিতীয় খলীফা বলে: আমাদের বার্ষিক সম্মেলনই হল হজ। আল্লাহ তাআলা হজের স্থানরূপে কাদিয়ানকে নির্বাচিত করেছেন এবং এখানে অশ্লীলতা, পাপাচার ও ঝগড়া বিবাদ নিষিদ্ধ।’ (মাহমুদ আহমদের ‘‘বারাকাতুল খেলাফত’’ ৫ও ৭ পৃ:) কাদিয়ানী পত্রিকা ‘পয়গামে ছুলাহ’ তে জনৈক কাদিয়ানী লিখেছে, ‘গোলাম আহমদের উপর ঈমান গ্রহণ ব্যতীত কোন ইসলাম নেই, যেমন কাদিয়ানী সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া ব্যতীত কোন হজ নেই। কেননা, বর্তমান মক্কায় হজের উদ্দেশ্য সমূহ পূর্ণ হয় না। (পয়গামে ছুলাহ, ১৯ এপ্রিল ১৯৩৩ খৃ:) মিথ্যুক গোলাম আহমদ বলে: শুধু কাদিয়ানে অবস্থান করাই নফল হজ হতে উত্তম। (গোলাম রচিত ‘মেরআতু কামালাতিল ইসলাম’ ৩৫২ পৃ:) মাহমুদ আহমদ বলে: আমাকে ইয়াকুব আহমদ কাদিয়ানী বর্ণনা করেছেন যে, গোলাম আহমদ বলেছেন- ‘কাদিয়ানে আগমনই হচ্ছে হজ। (আল ফজল, ৫ জানুয়ারি ১৯৩৩ খৃ:)সারকথা, কাদিয়ানীদের প্রথম আকীদা হল: তাদের একজন মাবুদ আছেন যিনি মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন। তিনি রোজা রাখেন, নামাজ পড়েন, নিদ্রা যান ও জাগ্রত হন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ভুলও করেন, লিখেন এবং সাক্ষরও করেন, স্ত্রী সহবাস করেন ও সন্তান জন্ম দেন, এবং বিভক্তও হন। দ্বিতীয়: নবী রাসূলগণ কিয়ামত পর্যন্ত আগমন করবেন। তৃতীয়: গোলাম আহমদ আল্লাহর নবী ও রাসূল। চতুর্থ: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ সকল নবী রাসূল থেকে তিনি উত্তম। পঞ্চম: গোলামের উপর ওহী অবতীর্ণ হয়। ষষ্ঠ: গোলাম আহমদের কাছে ওহী পৌঁছানোর জন্য যে ফেরেস্তা নিযুক্ত করা হয়েছে তিনি হলেন জিব্রাইল আলাইহিস সালাম সপ্তম: তাদের ধর্ম অন্য সকল ধর্ম থেকে স্বতন্ত্র এবং তাদের শরীয়ত স্বয়ং সম্পূর্ণ। আর তারা একটি নতুন উম্মত অর্থাৎ গোলাম আহমদের উম্মত। অষ্টম: তাদের একটা স্বয়ং সম্পূর্ণ কিতাব আছে, যা সম্মান ও মর্যাদায় কুরআনের সমতুল্য। তার বিশটি খন্ড আছে। উহার নাম ‘আল-কিতাবুল মুবীন’ এবং উহা বিভিন্ন আয়াতে বিভক্ত। উহার একটি আয়াত হল- ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ কাদিয়ানে অবতরণ করেন।’’ (গোলাম রচিত, আল-বুশরা হতে উদ্ধৃত ৫৬ পৃ:) অপর একটি আয়াত ‘আল্লাহ তাআলা আরশ থেকে তোমার প্রশংসা করেন এবং তোমার দিকে চলে আসেন।’’ (গোলাম রচিত, আক্বিবাতুল আছিম’ ৫৫ পৃ:) অপর একটি আয়াত- ‘অমুক ব্যক্তি তোমার হায়েজ বা তোমার মধ্যকার অপর অপবিত্রতা সম্পর্কে অবগত হতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তোমার মধ্যে তার ধারাবাহিক দান সমূহ দেখাবেন। তোমার মধ্যে হায়েজ নেই; বরং তোমার মধ্যে একটা শিশু আছে। হ্যাঁ এই শিশুটি‘‘আতফালুল্লাহ ’’ (আল্লাহ তাআলার শিশুগণ) এর সমতুল্য। (গোলাম রচিত, হাকীকতুল ওহীর পরিশিষ্ট, ১৪২ পৃ:) নবম: সম্মান ও মর্যাদায় কাদিয়ান মক্কা মুকাররমা ও মদিনা মুনাওয়ারার সমতুল্য, এমনকি এ দুটি হতেও উত্তম। দশম: কাদিয়ানে বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়াই হল তাদের হজ। এখন আমরা এ সকল নির্দেশাবলীর উল্লেখ করব যা নবুয়তের দ্বাবীদার কাদিয়ানীর উপর তার প্রভু ইংরেজের পক্ষ হতে নাজেল করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম শক্তিকে খর্ব করা এবং সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে মুসলমানদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করা, আর, জিহাদ রহিত করা। কেননা, সাম্রাজ্যবাদীরা ইসলামের জিহাদের আকীদাকে সর্বাধিক ভয় করে। কারণ, জিহাদের সহিত মুসলমানদের সম্পর্ক ও আন্তরিকতা সম্বন্ধে তারা অবগত রয়েছে। ক্রুসেডের যুদ্ধ চলাকালে তারা এ আকীদা থেকে নির্গত উক্ত দুটি বিষয় ভালভাবেই আঁচ করতে পেরেছে। এ জন্য ইংরেজ খ্রিস্টান উপনিবেশবাদী তার মিথ্যা নবীকে মুসলমানদের অন্তর হতে এ বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করতে এবং এখন থেকে ইসলামে জিহাদ নেই, এ নতুন আকীদা সৃষ্টি করতে নির্দেশ দেয়। ফলে মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী বলে: ‘আল্লাহ তাআলা ধীরে ধীরে জেহাদের কঠোরতা হ্রাস করে দিয়েছেন। মুসার আলাইহিস সালাম যুগে শিশুদের হত্যা করা হত এবং মুহাম্মদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুগে শিশু, নারীও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করা রহিত করা হয়। অতঃপর আমার যুগে জেহাদের হুকুমকে একেবারে রহিত করে দেয়া হয়।’’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আরবাঈন’ ৪ নম্বর ১৫ পৃ:) সে আরো বলে: ‘আজ তরবারি দ্বারা জেহাদ রহিত হয়ে গেল, আজকের পর আর জেহাদ নেই।’ অতএব, যে ব্যক্তি কাফেরদের উপর অস্ত্রধারণ করবে এবং নিজেকে গাজী বলে অভিহিত করবে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধী বলে গণ্য হবে, যিনি তেরো শতাব্দী পূর্বে ঘোষণা দিয়েছেন যে, মসীহে মাওউদের সময় জেহাদ রহিত হয়ে যাবে। হে আল্লাহর শত্রু! তুমি মিথ্যা বলেছ এবং মহান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এমন কথা আরোপ করেছ যা তিনি কখনও বলেন নি।) আর, আমিই মসীহে মাওউদ। এখন আমার প্রকাশ পাওয়ার পর কোন জেহাদ নেই। তাই, আমরা সন্ধি ও নিরাপত্তার পতাকা উত্তোলন করব। (আরবাঈন- ৪৭ পৃ:।) একদা এ বিশ্বাস ঘাতক দালাল ঘোষণা দিল যে, ‘‘তোমরা এখন জেহাদের চিন্তা ছেড়ে দাও। কেননা, ধর্মের জন্য যুদ্ধ করা হারাম করে দেয়া হয়েছে। ইমাম ও মসীহ এসে গেছেন এবং আসমান থেকে আল্লাহর নূর অবতীর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং জেহাদ আর নেই। বরং যে ব্যক্তি এখন আল্লাহর পথে জেহাদ করবে, সে আল্লাহর শত্রু এবং নবীর আদেশ অমান্যকারী। (এখানে আল্লাহর শত্রু বলতে কাদিয়ানীদের প্রভু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শত্রু বুঝায় এবং নবীর অমান্যকারী বলতে কাদিয়ানীদের নবীর অমান্যকারী উদ্দেশ্য।) (গুলামেরে ঘোষণা যা গোলাম রচিত ‘‘তাবলীগে রেসালতের’’ অন্তর্ভুক্ত, ৪থ খন্ড ৪৯পৃঃ) কাদিয়ানী ম্যাগাজিন ‘‘রিভিউ অব রিলিজিউন্স’’ এর সম্পাদক মুহাম্মদ আলী লিখেছে: ইংরেজ সরকারের কর্তব্য হল কাদিয়ানীদের অবস্থা অনুধাবন করা। কেননা, আমাদের ইমাম তার জীবনের বাইশটি বছর লোকজনকে শুধু এ শিক্ষা দিতে ব্যয় করেছেন যে, জিহাদ হারাম এবং অকাট্য হারাম। শুধু ভারতেই তিনি এ শিক্ষা প্রচার করে ক্ষান্ত হননি, বরং তা মুসলিম দেশ সমূহে যথা আরব, সিরিয়া, আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশে প্রচার করেছেন। (‘‘রিভিউ অব রিলিজিওন্স’’ ২নম্বর ১৯০৪ খৃ:) ভন্ডনবী দাজ্জাল বলে: নিশ্চয়ই এ কাদিয়ানী সম্প্রদায় মুসলমানদের অন্তর থেকে জিহাদের অপবিত্র আকিদার মূলোৎপাটন করতে দিবারাত্র চেষ্টা চালিয়ে যাবে। (সরকারের প্রতি গোলামের আবেদনপত্র যা ‘‘রিভিউ অব রিরিজিওন্সের’’ অন্তর্ভুক্ত ৫নম্বর ১৯২২ খৃ:) কাদিয়ানীরা যে সমস্ত ঘৃণ্য আকিদা পোষণ করে তন্মধ্যে জিহাদকে রহিত করার ঘৃণিত আকিদা হল অন্যতম। অথচ, বিশ্বস্ত সত্যবাদী আল্লাহর রাসূল বলেন: ‘‘জেহাদ সর্বোত্তম আমল’’। [১ বুখারী মুসলিম আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, দারেমী ও আহমদ] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: ‘‘মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ মুমিন ব্যক্তি যে তার জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে।’’ [২ বুখারী মুসলিম আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, দারেমী ও আহমদ ৩ বুখারী মুসলিম নাসায়ী ও আহমদ] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:‘‘বেহেস্তের মধ্যে একশতটি স্তর রয়েছে, যে গুলোকে আল্লাহ তাআলা তাঁর রাস্তায় জেহাদকারীদের জন্য তৈরি করেছেন’’ [৪ তিরমিজী, বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ,, আহমদ, ত্বায়ালিসী ও দারামী] মুজাহিদ গণের নবী এবং তাদের সরদার ও নেতা, আর যুদ্ধ ক্ষেত্রে ও তরবারির ছায়াতলে তাঁদের প্রধান (তাঁর উপর আমার মাতা-পিতা ও আমার প্রাণ উৎসর্গ) বলেছেন: ‘‘আল্লাহর পথে এক সকাল বা এক বিকালের জিহাদ পৃথিবী ও উহার মধ্যকার সকল বস্ত্ত হতে উত্তম। বেহেস্তের মধ্যে তোমাদের কারো দুটি ধনুক পরিমাণ জায়গা অথবা তার হাত পরিমাণ জায়গা পৃথিবী ও উহার মধ্যকার সকল বস্ত্ত হতে উত্তম। বেহেস্তের কোন নারী যদি পৃথিবীর দিকে একবার উঁকি দেয়, তবে উহার সকল বস্ত্তকে আলোকিত করে দেবে এবং সুগন্ধময় করে তুলবে। আর তাঁর মাথার ওড়না পৃথিবী ও উহার মধ্যকার সকল বস্ত্ত হতে উত্তম। [৫ বুখারী মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, আহমদ ও ত্বায়ালাসী। উদ্ধৃতি বুখারী।] ‘‘হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: আল্লাহর পথে কোন বান্দার দু‘টি পা যদি ধুলা মিশ্রিত হয়, তবে একে দোজখের আগুন কখনও স্পর্শ করবে না।’’ [] এগুলো হল ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বানী। আর ঐগুলো হলো কাদিয়ানীদের মিথ্যা নবী দালাল, বিশ্বাস ঘাতক ও কাপুরুষের উক্তি। এগুলো হলো স্বাধীন মুসলমানদের আকিদা আর ঐ গুলো হলো সাম্রাজ্যবাদের ঔরসে জন্মগ্রহণকারী কাদিয়ানীদের আকিদা। কাদিয়ানীদের অপর একটি আকিদা হল ইংরেজ সরকারের ভালোবাসা ও আনুগত্য। এ সম্পর্কে আমি একটা পৃথক প্রবন্ধ লিখেছি। কিন্তু এখানে আমি ঐসকল বিষয় উল্লেখ করব যা ওখানে উল্লেখ করিনি। আর তা হল, এ কথা প্রমাণ করা যে, উপরোক্ত বিষয় তাদের মূল আকীদার অন্তর্ভুক্ত ও মৌলিক মূলমন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত। এটা জানা কথা যে, বাইয়াতের শর্তাবলি মাযহাবের মৌলিক নীতি এবং ভিত্তি হয়ে থাকে। একথা কাদিয়ানী ভন্ডনবী নিজেই স্বীকার করেছে। তার মূল বক্তব্য হল ‘‘আমি বাইয়াতের শর্তাবলি মুদ্রিত করেছি, যাতে এটা আমার দলের ও আমার অনুগামীদের কর্মসূচীর জন্য নীতি মালারুপে গণ্য হয়।’’ (তাবলীগে রেসালাত’’ মাযমুয়ায়ে কদিয়ানিয়াত. ৭ম খন্ড. ১৬ পৃ:) তাই, স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ সকল শর্ত কাদিয়ানীদের জন্য তাদের নবীর বর্ণনানুসারে মূলনীতি হিসাবে সাব্যস্ত। অতএব এখন আমরা দেখব ঐ সকল শর্তাবলি কি? যা গোলাম আহমদ তাদের জন্য মূলনীতিরূপে নির্ধারণ করেছে। সে বলে: আমি বাইয়াতের শর্তাবলি মুদ্রিত করেছি, যাতে এগুলো আমার দলের ও অনুসারীদের জন্য কর্মসূচী হয়ে থাকে। আর, এর নামকরণ করেছি ‘‘তাকমিলুত তাবলীগ মায়া শুরুতিল বাইয়াত’’ এবং উহার এক কপি সরকারের নিকট প্রেরণ করেছি; যাতে সরকার এ কথা জানতে পারে যে, আমি অনুসারীদেরকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নির্দেশ দিয়েছি যাতে তারা ইংরেজ সরকারের বিশ্বস্ত অনুগত ও থাকে। (ভারতের বড় লাটের কাছে গোলামের প্রেরিত আবেদন যা কাসেম কাদিয়ানী রচিত ‘‘তাবলীগে রেসালতের অন্তর্ভুক্ত, ৭ম খন্ড, ১৬ পৃষ্ঠা) সে এর চেয়েও অধিক স্পষ্ট করে বলছে: দীর্ঘ সতের বছর ধরে আমার অনবরত ভাষণের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, আমি মনে প্রাণে ইংরেজ সরকারের প্রতি বিশ্বস্ত ও নিষ্ঠাবান। সরকারের আনুগত্য ও মানুষের ভালোবাসা হল আমার বিশ্বাস। এটাই আমার আকীদা, যা আমার অনুসারী ভক্তগণের জন্য বাইয়াতের শর্তাবলির অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমি এ আকীদাকে বাইয়াতের শর্তাবলি সম্পর্কীয় পুস্তিকায় চতুর্থ বিষয়ের আওতায় স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি, যা আমার ভক্ত ও অনুসারীগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘‘কিতাবুল বারিয়ার’’ পরিশিষ্ট, ৯ পৃষ্ঠা) কাদিয়ানীদের খলীফা গোলামপুত্র লিখেছে যে, মসীহে মাওউদ (গোলাম) ইংরেজ সরকারের প্রতি বিশ্বস্ততাকে বাইয়াতের শর্তাবলির অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বলেছেন, যে ব্যক্তি সরকারকে অমান্য করবে এবং তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করবে এবং তার নির্দেশাবলী বাস্তবায়িত করবে না, সে আমাদের জামাতের অন্তর্ভুক্ত নহে।(গোলামপুত্র এবং তার দ্বিতীয় খলীফা মাহমুদ আহমদ রচিত ‘‘তুহফাতুল মুলুক’’ ১২৩ পৃ:) মোটকথা, কাদিয়ানীদের আকীদা হল কাফের ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসা পোষণ করা। এ বিকৃত আকীদাসমূহের সাথে আমি তাদের আর একটি আকীদা যোগ করব এবং এর উপর প্রবন্ধটি শেষ করব। আর তা হল, কাদিয়ানীরা এ বিশ্বাস পোষণ করে- যে ব্যক্তি গোলাম আহমদের উপর ঈমান আনবে না এবং তার উক্তিকে অমান্য করবে, সে কাফের এবং চিরকাল;দোজখে অবস্থান করবে। যদিও সে মুমিন ও মুসলিম হয়ে থাকে। কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমদ বলে: যে ব্যক্তি গোলাম আহমদকে বিশ্বাস করে না সে কাফেরও দ্বীন বহির্ভূত। যদিও সে মুসলিম হয় এবং কখনও গোলাম আহমদের নামও শুনতে পায়নি। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের ‘‘আনওয়ারে সাদাকাত’’ ৩৫ পৃ:) গোলামের দ্বিতীয় পুত্র বশীর আহমদ বলে: যে ব্যক্তি মুসাকে আলাইহিস সালাম বিশ্বাস করে না অথবা ঈসাকে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কে বিশ্বাস করে না, সে কাফের। অনুরূপভাবে, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম কে বিশ্বাস করে, কিন্তু গোলাম আহমদকে বিশ্বাস করে না, সেও কাফের, তার কাফের হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই । (বশীর আহমদের ‘‘কালিমাতুল ফছল’’ যা কাদিয়ানী ম্যগাজিন রিভিউ অব রিলিজিউন্স হতে উদ্ধৃত ৩৫ নম্বর, ১৪ খন্ড, ১১০ পৃ:) মিথ্যাবাদী ভন্ড নবী আরও বলেছে: ‘‘যার কাছে আমার দাওয়াত পৌঁছেছে এবং সে আমাকে বিশ্বাস করেনি, সে কাফের।’’ (গোলাম কাদিয়ানীর বাণী ‘‘আল-ফজলের’’ অন্তর্ভুক্ত, ১৫ জানুয়ারি, ১৯৩৫ খৃ:) সে বলে: ‘‘আমার নিকট ইলহাম হয়েছে যে, আল্লাহ আমাকে বলেছেন- যে ব্যক্তি তোমাকে বিশ্বাস করে না এবং তোমার অনুসরণ করে না, বরং বিরোধিতা করে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধী এবং সে দোজখের আগুনে প্রবেশ করবে। (গোলামের ইলহাম যা কাসেম কাদিয়ানীর ‘‘তাবলীগে রেসালাতের’’ অন্তর্গত, ৯ম খন্ড, ২৭ পৃ:)

এই হল কাদিয়ানীদের আকীদাসমূহ যা তারা গ্রহণ করে নিয়েছে। আমি এগুলোকে তাদের পুস্তক সমূহ থেকে তাদের ভাষায়, এমনকি তাদের শব্দ মালায় উল্লেখ করেছি। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুক। কেমন করে তারা উল্টো দিকে ফিরে যাচ্ছে?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন