মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
অনেক লোক মনে করে যে, কাদিয়ানীরা মুসলমানদের বিভিন্ন দলের মধ্যে একটি দল। তবে, তারা কতগুলো শাখা প্রশাখায় ভিন্ন মত পোষণ করে। এ ছাড়া তাদের মধ্যে আর কোন তফাত নেই। আমরা এ প্রবন্ধে মুসলমানগণ ও তাদের ধর্মের মোকাবিলায় কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করব। যাতে, এটা যে, কত বড় বিভ্রান্তি তা পাঠক সহজে অনুধাবন করতে পারেন। আর এটাও বুঝতে পারেন যে, ইসলাম ধর্মের সাথে উহার বিন্দু মাত্র সম্পর্ক নেই। অথচ তারা জনসাধারণের সাথে প্রতারণা করছে এবং ইসলাম নামের পিছনে আত্মগোপন করে আছেন। প্রকৃতপক্ষে, তারা ইহুদ নাছারার ন্যায় ইসলাম থেকে বহু দুরে অবস্থান করছে। এ আবরণের দ্বারা নিজ স্বার্থরক্ষা ও সুযোগ লাভ করাই তাদের উদ্দেশ্য। অন্যথায় তাদের কিতাব সমূহে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কোন মুসলিম মারা গেলে জানাজার নামাজ পড়া যাবে না, এবং তাদের গোরস্থানেও কবর দেয়া যাবে না। কোন মুসলমানের সাথে বিবাহ শাদি চলবে না এবং কোন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও যোগদান করা যাবে না। বরং তাদের মতে সে কাফের। মিথ্যা নবীর দ্বাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেছে, ‘যে ব্যক্তি আমাকে বিশ্বাস করে না সে আল্লাহ ও রাসূলকে বিশ্বাস করে না’। (গোলাম আহমদের হাকিকাতুল অহী পৃষ্ঠা ১৬৩) তার ছেলে ও দ্বিতীয় খলীফা মাহমুদ আহমদ লিখেছে: ‘‘এক ব্যক্তি লক্ষ্মী শহরে আমার সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করল যে, জনসাধারণের মধ্যে প্রচারিত হয়ে গেছে যে যারা কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করে নাই তাদেরকে আপনারা কাফের বলেন, একথা কি সত্য? আমি তাকে বললাম, হাঁ, সত্য। এতে কোন সন্দেহ নেই, আমরা তোমাদেরকে কাফের বলি। লোকটি আমার কথাকে অদ্ভুত মনে করল এবং আশ্চর্যান্বিত হল। (আনওরে খিলাফত ৯২ পৃ:) সে আরো বলে: আমাদেরই প্রশ্ন অকাদিয়ানীদেরে আমরা কাফের বলব না কেন? অথচ তা কুরআন দ্বারা স্পষ্ট। কেননা আল্লাহ পাক পরিষ্কার ভাবে বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রাসূলকে অস্বীকার করবে সে কাফের, আর যে ব্যক্তি কুরআন কে অস্বীকার করবে সে কাফের। এমতাবস্থায় যে ব্যক্তি গোলাম আহমদকে নবী ও রাসূল বলতে অস্বীকার করবে সে কুরআনের ভাষায় কাফের। এজন্যই আমরা মুসলমানগণকে কাফের বলি। কেননা তারা রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করছে। কারো উপর ইমান রাখে, আবার কাউকে অস্বীকার করে। ফলে, এ প্রেক্ষিতে তারা কাফের।(আল-ফজল কাদিয়ানী পত্রিকা যা ২৬ মে জুন ১৯২২ খৃ: প্রকাশিত) তার দ্বিতীয় পুত্র বশীর আহমদ স্পষ্ট ভাষায় নির্লজ্জ ভাবে লিখেছে: যে ব্যক্তি মুসা আলাইহিস সালাম প্রতি ইমান আনে এবং ঈসার আলাইহিস সালাম প্রতি ইমান আনে না অথবা ঈসার প্রতি ইমান আনে কিন্তু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ইমান আনে না সে কাফের। অনুরূপ ভাবে যে ব্যক্তি গোলাম আহমদের উপর ইমান আনে না সেও কাফির এবং ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত। এ কথা আমরা নিজ থেকে বলছি না, বরং আল্লাহর কিতাব থেকে বলছি ‘‘তারাই হল সত্যিকারের কাফের।’’ (গোলাম পুত্র বশীর আহমদের কালিমাতুল ফাছল’ নামক গ্রন্থ)
জনৈক কাদিয়ানী আলেম তার ‘‘আন-নবুয়্যত ফিল ইলহাম’ গ্রন্থে লিখেছে: আল্লাহ তায়ালা গোলাম আহমদকে বললেন ‘‘যে ব্যক্তি আমাকে ভাল-বাসে ও আমার আনুগত্য স্বীকার করে তার কর্তব্য হল তোমার অনুসরণ করা এবং তোমার উপর ইমান আনা। অন্যথায়, সে আমার বন্ধু নয় বরং সে আমার শত্রু। আর তোমার অস্বীকারকারীরা যদি তা গ্রহণ না করে বরং তোমাকে অবিশ্বাস করে ও কষ্ট দেয়, তবে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিব এবং এ সকল কাফেরদের জন্য কারাগার হিসাবে জাহান্নামকে তৈরি করে রেখেছি।’’ অতএব আল্লাহ তায়ালা এ ইলহামে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি গোলাম আহমদকে অমান্য করবে, সে কাফির এবং তার শাস্তি জাহান্নাম। (মুহাম্মদ ইউসুফ কাদিয়ানীর ‘আন-নবুয়্যত ফিল ইলহাম’ নামক পুস্তক ৪০ পৃষ্ঠা)
কাদিয়ানীদের প্রথম খলীফা নুরুদ্দীনের উদ্ধৃতি দিয়ে গোলাম পুত্র বলেছে যে, অকাদিয়ানী মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার ঐ বাণীর অন্তর্ভুক্ত ‘‘এরাই হল সত্যিকারের কাফের’’। এই প্রসঙ্গে সে আরো বলেছে ‘একথা কেমন করে সম্ভব যে, মুসার আলাইহিস সালাম অস্বীকারকারী কাফের ও অভিশপ্ত হবে এবং ঈসার আলাইহিস সালাম অস্বীকারকারীরা কাফের হবে, আর গোলাম আহমদের অস্বীকারকরীরা কাফের হবে না, মুমেনদের আকিদা হল এই- ‘‘আমরা রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করি না’’ অথচ এরা রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করছে।
সুতরাং গোলাম আহমদকে অস্বীকারকারী ব্যক্তি কাফের হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং সে আল্লাহর ঐ বাণীর অন্তর্ভুক্ত- ‘‘এরাই প্রকৃত কাফের’’ (বশীর আহমদ কর্তৃক লিখিত কালিমাতুল ফাছল ১২০ ও ১৪৭ পৃষ্ঠা এবং ‘‘রিভিউ অব রিলি-জিওন্স’’ মাসিক পত্রিকায় সন্নিবেশিত।
এই হল তাদের মতবাদ এবং তাদের ভাষায় এটাই তাদের ও মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্কের স্বরূপ। কিন্তু তারা মুসলমানদের সারির পেছনে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য লুকিয়ে আছে। কখনও তারা সাধারণ মুসলমানগণকে প্রতারণা করে, বিশেষ করে পাক ভারত ব্যতীত অন্যান্য দেশে মুসলমানদের সাথে এবং তাদের ইমামের পিছনে প্রতারণা মূলক নামাজ পড়ে। কেননা আমরা পূর্বেই বলেছি যে, তারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুয়্যত অস্বীকারকারীকে কাফের বলে। সুতরাং কেমন করে তারা কাফেরদের পেছনে এবং তাদের সারিতে নামাজ পড়ার অনুমতি দিতে পারে? যদি তারা নামাজ পড়ে থাকে তবে উহা কপটতার নামাজ। অতঃপর তারা এ নামাজগুলোকে নিজ গৃহে পুনরায় পড়ে নেয়। অকাদিয়ানীদের পিছনে নামাজ পড়া সম্পর্কে এদের মতামত বর্ণনার পর আমরা তাদের এ দুরভিসন্ধি বিস্তারিত উল্লেখ করব। নবুয়তের দাবিদার কাদিয়ানী বলে- ‘এটাই আমার সুপরিচিত ধম মত যে, অকাদিয়ানী ব্যক্তি যেখানেই হোক , যে কেউই হোক , লোকেরা তার যতই প্রশংসা করুক, তার পিছনে তোমাদের নামাজ পড়া জায়েজ নহে। এটা আল্লাহর নির্দেশ ও আল্লাহর ইচ্ছা। আর, এতে যে সন্দেহ পোষণ করে বা ইতস্তত: করে সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। তোমাদের এবং ওদের মধ্যে আল্লাহ পার্থক্য করে দিতে চান। (গোলামের মালফুজাত যা আল-হিকম নামক কাদিয়ানী পত্রিকায় প্রচারিত প্রবন্ধ, ১০ ডিসেম্বর ১৯০৪ খৃ:)
গোলাম আহমদ তার ‘‘আরবাঈন’’ নামক পুস্তিকার ৩৪ও ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেছে- আল্লাহ আমাকে অবগত করেছেন যে, যে ব্যক্তি আমাকে অবিশ্বাস করে এবং আমার আনুগত্য স্বীকার করতে ইতস্তত: করে, তার পিছনে তোমাদের নামাজ পড়া অকাট্য হারাম। বরং তোমাদের কোন এক ইমামের পেছনে নামাজ পড়া তোমাদের কর্তব্য। হাদীসে এ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে, ‘‘তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হবে’’। অর্থাৎ যখন মাসীহ অবতরণ করবেন তখন তোমাদের কর্তব্য হবে ইসলামের দাবিদার সকল দলকে বর্জন করা। তোমাদের মধ্য হতে ইমাম নিযুক্ত করে নিবে। তোমাদের যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে তদনুযায়ী কাজ কর। তোমরা কি চাও যে, তোমাদের অজান্তে তোমাদের আমল সমূহ নষ্ট হয়ে যাক? এটাই গোলামের উক্তি। আর, তার ছেলের উক্তি হল এই- অকাদিয়ানী কোন ব্যক্তির পেছনে কারো নামাজ পড়া বৈধ নহে। লোকেরা বারংবার এ প্রশ্ন করছে যে অকাদিয়ানীদের পেছনে নামাজ বৈধ কি না? আমি বলি যখনই তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন করবে তখনই আমি বলব, জায়েজ নহে, জায়েজ নহে, জায়েজ নহে, (আনওরে খেলাফত, ৮৯ পৃ:)
তারা এ ব্যাপারে এতই কঠোর যে, তাদের দলের করো জন্য কোন ইমামের পেছনে নামাজ পড়া বৈধ নহে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিশ্চিত না হবে যে এ ইমাম কাদিয়ানী। মনজুর কাদিয়ানীর ‘‘মালফুজাতে আহমদিয়া’’ নামক গ্রন্থের ৪থ খন্ডে ১৪৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি গোলাম আহমদকে জিজ্ঞেস করল- কোন ব্যক্তির পক্ষে ঐ ইমামের পেছনে নামাজ পড়া বৈধ আছে কি না যার ধর্ম সম্পর্কে সে অবহিত নহে। উত্তরে সে বলল: না, তার ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে অবহিত না হয়ে তার পেছনে নামাজ পড়া বৈধ হবে না। যদি সে আমাকে বিশ্বাস করে, তবে বৈধ হবে, অবিশ্বাস করলে বৈধ হবে না। আর যদি বিশ্বাস অবিশ্বাস কিছুই না করে তবুও বৈধ হবে না, কেননা, সে মুনাফেক। আর কোন কোন সময় তারা মুসলমানদের মসজিদে এবং মুসলিম ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে থাকে উহার হাকীকত আমি কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা গোলামের পুত্র মাহমুদ আহমদের বাচনিক বর্ণনা করছি। সে তার হজের সফরের উল্লেখ করে বলে- ‘আমি ১৯১২ সালে মিসর গেলাম। আর, সেখান থেকে হজে গেলাম। জিদ্দায় আমার মাতামহ আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। এরপর সরাসরি আমরা মক্কায় চলে গেলাম। প্রথম দিন আমরা যখন তওয়াফে রত ছিলাম, তখন নামাজের সময় হয়ে গেল। আমি ফিরে যাবার ইচ্ছা করলাম, কিন্তু ভিড়ের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল এবং নামাজ শুরু হয়ে গেল। এমনি অবস্থায় আমার নানা আমাকে নামাজ পড়তে আদেশ করলেন। তাতে আমরা নামাজ পড়ে নিলাম। অতঃপর যখন আমরা ঘরে পড়তে প্রস্ত্ততি নিলাম যা অকাদিয়ানীদের পিছনে আদায় ও গ্রহণযোগ্য নহে। আমরা দাঁড়িয়ে সে নামাজ পড়ে নিলাম। আমরা এরূপই করতাম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা ঘরেই নামাজ পড়তাম এবং কখনও জামাতের নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করতাম। তারপর দাঁড়িয়ে আমাদের জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতাম। কোন কোন সময় আমাদের সাথে অকাদিয়ানীরা শরীক হয়ে যেত। (কেননা তারা জানত না যে, এরা বিদ্রোহী ও ধর্মান্তরিত দল)
অতঃপর বলে- যখন আমরা হজের সফর শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করলাম, তখন কোন একজন আমাদের প্রথম খলীফা নুরুদ্দীনকে জিজ্ঞেস করল একজন কাদিয়ানী অকাদিয়ানীর পেছনে নামাজের ব্যাপারে কি করবে? উত্তরে খলীফা বললেন, যদি অকাদিয়ানীর পেছনে নামাজ পড়া সংগত মনে করে তবে তার পেছনে নামাজ পড়ে নিবে। তবে পুনরায় উহা পড়ে নিবে। (মাহমুদ আহমদ লিখিত আয়নায়ে ছাদাকাত, ৯১পৃঃ) এটাই হল তাদের নামাজের স্বরূপ, যা কখনও কখনও তারা সাধারণ মুসলমানদের সাথে প্রতারণার উদ্দেশ্যে পড়ে থাকে। শুধু এ পর্যন্তই নহে, বরং কাদিয়ানীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তারা যেন সাধারণ ভাবে মুসলমানদের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারা যেন মুসলমানদের অনুষ্ঠানে এবং তাদের সুখে দুঃখে অংশগ্রহণ না করে। কেননা, কাদিয়ানীরা পবিত্র আর মুসলমানরা অপবিত্র। কাজেই অপবিত্রের সাথে পবিত্র এবং কাফেরের সাথে মোমিনের মিলিত হওয়া সমীচীন নহে। ভন্ডনবী কাদিয়ানী বলে: এ সম্পর্ক যে আমরা ছিন্ন করেছি তা আমাদের পক্ষ থেকে করিনি বরং আল্লাহর নির্দেশে করেছি। (স্বভাবতই তিনি হবেন কাদিয়ানীদের আল্লাহ, জগৎবাসীর আল্লাহ নহেন) সে আরো বলে- আমার নবুয়তের অস্বীকার করা অবস্থায় এদের সাথে সম্পর্ক রাখার উদাহরণ হল এই যে, খাঁটি দুধকে দুর্গন্ধময় বিকৃত দুধের সাথে মিশিয়ে রাখা। (আমি জানি না, সে খাঁটি দুধ বলে কাদেরে উদ্দেশ্য করেছে) এ কারণেই আমরা এ সব সম্পর্কের প্রয়োজন বোধ করি না। (গোলামের উক্তি যা ‘‘তাশহীদুল আজহান’’ নামক গ্রন্থে ৮ম খন্ড ৪থ নম্বর ৩১১ পৃ: উল্লেখিত।) সে আরো বলেছে: তোমরা বিবাহ শাদী ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে মুসলমানদের সাথে অংশগ্রহণ করবে না এবং তাদের জানাজার নামাজও পড়বে না। কেননা, তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। যখন এদের সাথে আমাদের সকল সম্পর্ক ও নামাজ বিচ্ছিন্ন এবং এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের কাছে কোনই গুরুত্ব রাখে না। তখন এদের মৃতের উপর আমাদের নামাজ আদায় করার অবকাশ আর কোথায় থাকে? (ইমামের বাণী যা আল ফজল পত্রিকায় ১৮ই জুন ১৯১৬ সালে প্রকাশিত) এ জন্যেই, যখন আমাদের কোন একজন দ্বিতীয় খলীফাকে জিজ্ঞেস করল- মুসলমান শিশুর উপর জানাজার নামাজ পড়া কি বৈধ? কেননা সে নিষ্পাপ এবং ভবিষ্যতে বেঁচে থাকলে সে কাদিয়ানী হবার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরে দ্বিতীয় খলীফা বললেন তার জানাজার নামাজ পড়া যবে না। যেমন খ্রিস্টান শিশুদের নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও জানাজার নামাজ পড়া যায় না। (মাহমুদ আহমদের ডায়রী যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজলে ২৩ অক্টোবর ১৯২২ খৃ: প্রচারিত হয়েছে) তার আনওয়ারুল খেলাফত নামক পুস্তিকার ৯৩ পৃ: সে লিখেছে- ‘একটি প্রশ্ন রয়ে গেল যে মুসলমানদের শিশুদের উপর জানাজার নামাজ পড়া কি জায়েজ? আমি বলব, জায়েজ নহে, যেমন হিন্দু ও খ্রিস্টান শিশুদের উপর জানাজার নামাজ জায়েজ নহে। কেননা, শিশুর ধর্ম তার মাতা-পিতারই ধর্ম, সে তার মাতা-পিতার অনুগামী’। এইতো ছিল মুসলিম শিশুদের ব্যাপার। আর, স্বয়ং বয়স্ক মুসলমানদের উপর জানাযার নামাজের হুকুম কি হতে পারে? নিশ্চয়ই তাদের মতে এটা বৈধ হবে না। কেননা, কাফেরগণ মুসলমানদের জানাজার নামাজ পড়ে না। তাই, অন্যদের তুলনায় এরা চরম কাফের হওয়া সত্ত্বে কেমন করে পড়তে পারে? প্রকাশ থাকে যে, গোলাম আহমদের প্রথম খলীফা নুরুদ্দীন বলেছে: মুসলমানদের উপর জানাজার নামাজ পড়া বৈধ নহে। তবে, মাসীহ (গোলাম আহমদ) মুসলমানদের উপর যে জানাজার নামাজ পড়তেন, উহা দাওয়াতের প্রাথমিক যুগে ছিল। যেমন নবী করীম ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফেরদের উপর জানাজার নামাজ পড়তেন। (আল ফজল ২৯শে এপ্রিল ১৯১৬ খৃ:) এমনকি, নবুয়তের দাবিদার কাদিয়ানী তার নিজ পুত্রের জানাজার নামাজ পড়েনি, শুধু এ কারণেই যে, সে তার উপর ঈমান আনে নি এবং মুসলমান অবস্থায় মারা গিয়েছে। সে তার অপরাপর ভাইয়ের ন্যায় ধর্মান্তরিত হয়নি। (আনওয়ারুল খেলাফত ৯১ পৃ:) এ ব্যাপারে তারা আরও কঠোরতা অবলম্বন করে এত নিম্নে পৌঁছে গেছে যে, যে ব্যক্তি নবুয়তের দাবিদার কাদিয়ানীর নাম শুনেনি এবং তার ভ্রান্ত দাওয়াতের কথা শুনেনি তারও জানাজার নামাজ পড়তে নিষেধ করেছে। যেমন, কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল ৬মে ১৯১৫ খৃ: সংখ্যায় প্রকাশ করেছে যে, ‘যদি ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয় যে, এমন স্থানে মারা গিয়েছে যেখানে কাদিয়ানী দাওয়াত পৌঁছেনি, তার ব্যাপারে কি করতে হবে? অতঃপর সেখানে কোন এক কাদিয়ানী পৌঁছোল, সে কি তার জানাজার নামাজ পড়বে? উত্তরে আমরা বলি, জাহের ব্যতীত আমরা কিছু জানি না। আর , তার ব্যাপারে জাহের হল এই যে, সে এমন অবস্থায় মারা গিয়েছে যে সে আল্লাহর রাসূল ও নবীকে চিনে নি। কাজেই আমরা তার জানাজার নামাজ পড়ব না। এমন কি যে ব্যক্তি কাদিয়ানী হয়ে ও মুসলমানদের পিছনে নামাজ পড়ে এবং তাদের সাথে কাজ কারবার করে তার জানাজার নামাজও পড়া যাবে না । কেননা, এ ব্যক্তিও তার কার্যকলাপের দ্বারা কাদিয়ানী ধর্মের বহির্ভূত হয়ে গেছে। (গোলামের পুত্র ও তার খলীফা মাহমুদ আহমদের পত্র যা ১৯৩৬ সালে ১৩ এপ্রিল আল ফজল পত্রিকায় প্রকাশিত।) তদুপরি মুসলমানদের জন্য রহমতের দোয়া করা যাবে না। যেমন দুজন কাদিয়ানী মুফতীকে যখন জিজ্ঞেস করা হল: কোন অকাদিয়ানী মারা গেলে কাদিয়ানী ব্যক্তি ‘রাহিমাহুল্লাহ’ ও ‘আদখালাহুল জান্নাহ’ বলতে পারে কি? উত্তরে তারা বলল না। কেননা, তাদের কুফুরী প্রকাশ্য। তাই, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। (ফতওয়া রওশন আলী ও মুহাম্মদ সরওর, আল ফজল পত্রিকা ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ খৃ:) এ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও তাদের বেহেস্তে প্রবেশ করা কাদিয়ানীদের দোয়ার উপর নির্ভর করে। যদি তারা মুসলমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করে তবে মুসলমানদের জন্য বেহেস্তের দরজা খোলা হবে না । জানি না এত কিছুর পরও কেন তারা ইসলামের দাবির উপর অটল থাকছে এবং মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করছে। বরং বীরত্বের দাবি হল এই যে, তারা যেন এ কথা ঘোষণা করে দেয় যে, তারা মুসলমান নহে, মুসলমানদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। এবং ইসলাম ধর্মের আড়ালে যেন তারা আত্মগোপন না করে। বরং তাদের স্বতন্ত্র দ্বীন ও নতুন ধর্মের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দেয়। যেমন তাদের ভাতৃবৃন্দ বাহায়ী সম্প্রদায় করেছে। যারা বর্তমান সকল ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটাই তাদের জন্য ঠিক ও শ্রেয়: হত। কিন্তু ‘‘কাদিয়ানীরা হল সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট’’ নামক প্রবন্ধে যেমন আমরা উল্লেখ করেছি এদের উদ্দেশ্য হল ইসলামের প্রকৃত রূপ পরিবর্তন এবং মুসলমানদের মধ্যে তাদের ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করা, টাকা, পয়সা উপার্জন, সাম্রাজ্যবাদীদের সেবা, ইসলামের ছদ্মাবরণে আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে বাতিল দাওয়াতের প্রসার এবং সাধারণ মুসলমানদিগকে প্রতারিত করা। অন্যথায়, তাদের আকীদা হল এই যে, তারা মুসলমানদের পিছনে নামাজ পড়া এবং মুসলমানদের উপর জানাজা পড়াকে জায়েজ মনে করে না। সম্ভবত: ইহা পাঠকদের কাছে নতুন কোন ব্যাপার নহে। কারণ, ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ভারত উপমহাদেশে মুসলিম মিল্লাতের হিতৈষী কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন) যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তৎকালীন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাফর উল্লাহ খান কাদিয়ানী তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেনি। ইহার কারণ সুস্পষ্ট যে, কায়েদে আজম তার মতে কাফের ছিলেন। যেহেতু তিনি মুহহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারী ছিলেন এবং তার উম্মতগণকে সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। অথচ সেই জাফরুল্লাহ ছিল মুরতাদ ও সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ট ও তার ইমাম গোলাম কাদিয়ানী বলেছে: আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর ইলহাম করেছেন যে, যে ব্যক্তি তোমার অনুসরণ করবে না আর তোমার বিরোধিতা করবে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধী এবং দোজখে প্রবেশকারী। (মে‘ইয়ারুল আখইয়ার ৮ম পৃ:) আর তার ইমামের পুত্র ও প্রতিনিধি বলেছে, যে ব্যক্তি গোলাম আহমদ কে বিশ্বাস করবে না সে কাফের, যদিও তার কাছে কাদিয়ানীদের দাওয়াত না পৌঁছে থাকে। এজন্যই তারা মুসলমানদের সাথে বিবাহ-শাদি বৈধ মনে করে না’। মাহমুদ আহমদ তার কিতাব ‘বরকতে খেলাফত’ এর ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত তার ভাষণে ঘোষণা দিয়েছে যে, কোন কাদিয়ানীর পক্ষে তার মেয়েকে অকাদিয়ানীর কাছে বিবাহ দেয়া বৈধ নহে। কারণ এটা প্রতিশ্রুত মাসীহের (গোলাম আহমদ) কঠোর নির্দেশ। সে আরো উল্লেখ করেছে: যে ব্যক্তি তার মেয়েকে অকাদিয়ানীর কাছে বিবাহ দেবে সে আমাদের জামাতের অন্তর্ভুক্ত নহে, যতই সে কাদিয়ানী ধর্মের দাবিদার হোক। এমনকি, আমাদের অনুসারীর জন্য উচিত নহে এ ধরনের কোন বিবাহ-শাদীর অনুষ্ঠানে যোগদান করা’ (আল-ফজল ২৩শে মে ১৯৩১খৃঃ)।
অধিকন্তু, কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল হিকমে’ প্রকাশিত হয়েছে যে, মুসলমানদের সাথে বিবাহ-শাদীর বেলায় একথা লক্ষ রাখতে হবে যে, তাদের কাছে কোন মেয়ে বিবাহ দেয়া যাবে না। তবে তাদের মেয়ে বিবাহ করা যেতে পারে। কেননা, তারা আহলে কিতাবের অনুরূপ। সুতরাং আমরা আমাদের মেয়ে দেব না বরং তাদের মেয়ে আমরা গ্রহণ করব। যেরূপ ব্যবহার আহলে কিতাবের সাথে করা হয়। আমাদের ইমাম বর্ণনা দিয়েছেন যে, অকাদিয়ানী মুসলমানরা হল আহলে কিতাব। আমাদের মেয়ে তাদেরকে দান করা বৈধ নহে কিন্তু আমাদের পক্ষে তাদের মেয়ে গ্রহণ করা বৈধ হবে। এতে আমাদের লাভও রয়েছে যে, আমাদের জামাতে একজন লোক বৃদ্ধি পেল। (আল-হিকম ১৪ই এপ্রিল ১৯২০খৃঃ) মাহমুদ আহমদ বলে, ‘মুসলমান, হিন্দু ও শিখ মেয়ে গ্রহণ করা জায়েজ, কিন্তু তাদেরকে মেয়ে দান করা বৈধ নহে’। (আল-ফজল ১৮ফেব্রূয়ারী ১৯৩০খৃঃ) সে আরো বলেছে: কোন কাদিয়ানী তার মেয়েকে অকাদিয়ানীর কাছে বিবাহ দেবে না। যদি দেয় তার উদাহরণ হল, যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে ‘‘কোন জেনাকারী যখন সে জেনা করে তখন সে মুমিন থাকে না’’। (আল-ফজল ২৬ জুলাই ১৯২২খৃঃ) সে আরো বলেছে, যে ব্যক্তি মুসলমানদের কাছে মেয়ে বিবাহ দেবে, তাকে জামাত থেকে বহিষ্কার করা হবে, এবং তাকে কাফের ঘোষণা দেয়া হবে’। ( আল ফজল ৪ই মে ১৯২২খৃঃ) ৬ই সেপ্টেম্বর তারিখে ১৯৩৪ খৃ: আল ফজল পত্রিকায় পাঁচজন লোককে জামাত থেকে এ অপরাধের কারণে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাদের অপরাধ ছিল তারা মুসলমানদের কাছে তাদের মেয়ে বিবাহ দিয়েছিল। ঘোষণার বর্ণনা ছিল এই, ‘‘আল-মাসীহের দ্বিতীয় খলীফা আমিরুল মুমেনীনের নির্দেশ অনুসারে উল্লেখিত নামের লোক দিগকে জামাত থেকে বহিষ্কার করা হল এবং এদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দেয়া গেল’’। এমনকি, বশীর আহমদ স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছে- ‘আমাদের নামাজ পৃথক করে দেয়া হয়েছে, তাদের কাছে মেয়ে বিবাহ দেয়া হারাম করা হয়েছে এবং তাদের জানাজায় শরীক হতে নিষেধ করা হয়েছে’। অতঃপর আর কি অবশিষ্ট রইল যে আমরা তাদের সাথে কাজ কারবারে যোগদান করব। সম্পর্ক দু‘ভাগে বিভক্ত: দ্বীনি ও দুনিয়াবী। তবে, দ্বীনি সম্পর্কের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল এবাদত এবং দুনিয়াবী সম্পর্কের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল এ বিবাহ শাদির সম্পর্ক। অতএব তাদের সাথে এবাদত করা এবং বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হওয়া আমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। যদি প্রশ্ন করেন যে, আপনারা কীভাবে তাদের মেয়ে গ্রহণ করার অনুমতি দেন? উত্তরে বলব যেমন আমরা খ্রিস্টানদের মেয়ে গ্রহণ করার অনুমতি দেই, আর যদি প্রশ্ন করেন- কেন আপনারা তাদেরকে সালাম করেন? উত্তরে বলব- রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াহুদীগণকে সালাম দিতেন। সারকথা হল এই যে, আমাদের ইমাম তাদের এবং আমাদের মধ্যে সবদিক থেকে পার্থক্য করে দিয়েছেন। (বশীর আহমদের কালিমাতুর ফাছল যা রিভিউ অব রিলিজিওনে সন্নিবেশিত)
হে কাপুরুষেরা! তোমরা কেন এ কপটতা অবলম্বন করছ? আর সাধারণ জনমতের সম্মুখে ইসলামের মুখোশ পরে আছ? এবং কেন তোমাদের অসৎ পূর্ববর্তীদের ন্যায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে তোমাদের হিংসা বিদ্বেষ প্রকাশ করছ না? কেমন করে তোমরা বড় চোরের পরামর্শানুযায়ী পর্দার অন্তরালে থেকে জগৎবাসীকে প্রতারণা করছ? সে বলেছিল ‘‘তোমার স্বর্ণ, তোমার গমনাগমন ও তোমার ধর্মকে গোপন রাখ।’’ এটা তারা করেছিল অপদস্ততা ও লাঞ্ছনার ভয়ে। [৭ বাহায়ী ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও নবুওতের ভন্ডদাবীদার বাহাউল্লাহর ইলহামাত।] তোমরা কি এই ধোঁকায় পড়ে আছ যে, জগদ্বাসী তোমাদের গোপন রহস্য, তোমাদের নির্লজ্জতা, তোমাদের বই পুস্তক ও মতামত জানতে পারবে না? আর তোমরা- ওহে আল্লাহ ও ইসলামের শত্রুরা,মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার উম্মতের শত্রুরা! ভারত উপমহাদেশে তোমাদের বিষয়ের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার কারণে তোমরা বিকল হয়ে পড়েছে। এখন তোমরা তোমাদের প্রচেষ্টাকে আফ্রিকা ও আরব বিশ্বে কেন্দ্রীভূত করেছ। তোমাদের পূর্ববর্তী মনিবের পরিকল্পনা অনুযায়ী গুপ্তচরবৃত্তি ও ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে । অথচ অতীতে তোমাদের খলীফা প্রকাশ করেছে যে, সে মুসলমানদের শত্রু। সে তার দলকে সম্বোধন করে একদা বলছে- আমরা ভারতবর্ষে আদম শুমারী অনুযায়ী পঁচাত্তর হাজার লোক আছি। কিন্তু এত সত্ত্বেও মুসলমানদের তুলনায় আমাদের স্বল্পতা কোন গুরুত্ব রাখে না। কেননা, আমাদের একজন নিষ্ঠাবান মুমিন এক হাজার মুসলমানের উপর বিজয়ী হবে। (হায়রে বীরত্ব) আর, সমস্ত বিশ্বের মুসলমানের সংখ্যা পঁচাত্তর মিলিয়নের বেশি নহে। (হায়রে হিসাব! হায়রে মিথ্যাচার) তার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, সমুদয় মুসলমান আমাদের তুলনায় অধিক শক্তিশালী নহে। তারা আমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, বরং আমরাই তাদের উপর বিজয়ী হব’। (অর্থাৎ মহান ইংরেজ সরকারের করুণায়।) আল-ফজল পত্রিকা ২১শে জুন ১৯৩৪ খৃ:।
মুসলমানদের প্রতি তাদের অন্তরে যে ক্রোধ ও হিংসা-বিদ্বেষ নিহিত রয়েছে, একথাগুলো উহার একটি চিত্র তুলে ধরছে। ইতিপূর্বে যখন তুর্কি মুসলিম শক্তির সহিত পঞ্চম জর্জের অর্থাৎ কাফের শক্তির সংঘর্ষ বেঁধেছিল, তখন তাদের দ্বিতীয় খলীফা বলেছিল- ‘আমরা পঞ্চম জর্জের সাথে আছি’। কেননা, তিনি বর্তমান খলীফা। (আল- ফজল পত্রিকা ২৬ শে জুলাই ১৯৩০ খৃ:) ব্রিটিশরা যখন প্যালেষ্টাইনে প্রবেশ করে, তখন তাদের প্রশংসায় সে একটি প্রবন্ধও লিখেছিল। বর্তমানে ইসরাইলীরা সমগ্র ইসলাম জগতের প্রধান শত্রু। আর এই ইসরাইলের সাথেই কাদিয়ানীদের হৃদ্যতাপূর্ণ ও সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। এটা শুধু এ কারণেই যে, তারা উভয়ই দ‘টি বিষয়ে একমত। একটা হল ইসলামের বিরোধিতা ও এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ এবং অপরটি হল সাম্রাজ্যবাদের দালালি। এ সম্পর্কে এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে, ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার দানে তাদেরকে সম্মানিত করেন। আর, এ সকল সাক্ষাৎকারে কি যে ষড়যন্ত্র রয়েছে তা সকলেরই বোধগম্য। ক্ষুদ্র ইসরাইল রাষ্ট্রের নেতা কাকে সম্মান দিতে পারে? ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ কেন ওদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা প্রদান করল? ইসরাইল কি কোন দলকে কেন্দ্র খোলার অনুমতি দিতে পারে, যদি তাদের উদ্দেশ্যাবলী ওদের উদ্দেশাবলীর সহিত যুক্ত না হয়? ইসরাইল বিনা মূল্যে কি আর্থিক সাহায্য করতে পারে? আর এটা কি অসম্ভব কথা যে, ইসলামী রাষ্ট্রসমূহে গুপ্তচর বৃত্তির মূল্য ওদের থেকে আদায় করে নেয়? প্রথমত: তারা সবচেয়ে বড় যে খেদমত আদায় করছে তা, হল তারা মুহাম্মদ আরবী থেকে আরবদেরকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক তাদের বহির্বিশ্বের ভাইদেরকে সম্পৃক্ত করে উহা ছিন্ন করছে এবং জেহাদের চেতনা তাদের অন্তর থেকে বের করে দিচ্ছে। (‘‘আমাদের মতে জেহাদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ’’ কাদিয়ানী পত্রিকা: রিভিউ অব রিলিজিওন্স ১৯০২ খৃ:)
এর চেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল, ইসরাইলের মধ্যে শুধু অধিকৃত প্যালেষ্টাইন রাষ্ট্রের কেন্দ্র নহে, বরং সমুদয় আরব রাষ্ট্রের কেন্দ্র সেখানে রয়েছে। সেখান থেকে তাদের প্রচারপত্র সকল আরব দেশগুলোতে প্রেরণ করা হয়। যেমন, কাদিয়ানীরা নিজেরাই তা স্বীকার করেছে। সময় সময় সেখানকার কাদিয়ানীদের তৎপরতার সংবাদ ইসরাইল বেতারযন্ত্র থেকে প্রচার করা হয়। কাদিয়ানীরা তাদের ‘‘মারকাযুনা ফিল খারেজ’’ নামক গ্রন্থে যা প্রচার করেছে, তার সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি আমরা বর্ণনা করছি। ‘‘আলমারকাজুল ইসরাইলী’’ শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাদিয়ানী কেন্দ্র হায়ফার সাউন্ট কারমালে অবস্থিত। ঐ খানে আমরা একটা মসজিদ, কেন্দ্রের জন্য একটা ঘর, সাধারণ পাঠকদের জন্য একটা লাইব্রেরি, বই বিক্রির জন্য একটা লাইব্রেরি ও একটি বিদ্যালয়ের মালিক। কেন্দ্র ‘‘বুশরা’’ নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে। ত্রিশটি আরব দেশে এ পত্রিকা প্রচার করা হয়। প্রতিশ্রুত মাসীহ (গোলাম) এর অধিকাংশ পুস্তক সমূহ এ কেন্দ্রের সাহায্যে আরবীতে অনুবাদ করা হয়। এই কাদিয়ানী কেন্দ্রটি প্যালেষ্টাইন বিভক্তির কারণে নানাভাবে প্রভাবন্বিত হয়েছে, যেসব মুসলমান ইসরাইলে রয়ে গিয়েছিল তারা এই কেন্দ্র থেকে অত্যধিক উপকৃত হয়েছে। আমাদের কেন্দ্রটি এদের খেদমতের কোন সুযোগই নষ্ট করে নি। কিছুদিন পূর্বে এই কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দল হাইফা কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তার সাথে অনেক বিষয়ে মতবিনিময় করে। হাইফার মেয়র আমাদের জন্য ‘কাবাবীর’ নামক স্থানে যেখানে অনেক কাদিয়ানী বসবাস করে একটি বিদ্যালয় স্থাপনে তার প্রস্ত্ততির কথা জানালেন । কাবাবীরে আমাদের সহিত পুনরায় সাক্ষাৎকারের প্রতিশ্রুতি দিলেন। এরপর কথানুযায়ী তিনি এমন চার ব্যক্তিকে নিয়ে আসলেন, যারা হাইফাতে আমাদের পরিচিত। আমাদের জামাত ও বিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাল এবং তাদেরকে সংবর্ধনার জন্য একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত করল। ফেরার পূর্বে তারা সাক্ষাৎকার রেজিস্ট্রিতে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল। ইসরাইল রাষ্ট্রে আমাদের যে মর্যাদা রয়েছে তা ছোট একটি বিষয় দ্বারা পাঠক বর্গ অনুধাবন করতে পারবেন। আমাদের একজন মুবাল্লেগ চৌধুরী মুহাম্মদ শরীফ ১৯৫৬ সালে ইসরাইল থেকে পাকিস্তান ফেরার ইচ্ছা করলে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রধান তার কাছে দূত পাঠালেন যেন তিনি ইসরাইল রাষ্ট্র ত্যাগ করার পূর্বে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। সুতরাং মুবাল্লেগ এ সুযোগকে একটি গনিমত মনে করল এবং জার্মানি ভাষায় অনুদিত একখন্ড কুরআন তাকে উপহার দিল। তিনি উহা অতি আনন্দের সহিত গ্রহণ করলেন। ইসরাইলী পত্রিকাসমূহে এ সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয় এবং রেডিও মারফত উহা প্রচার করা হয়। (উল্লেখিত পুস্তক ৭৯ পৃষ্ঠা)
এটাই হল মুসলমানদের সাথে এদের সম্পর্কের ও মুসলমানদের চরম শত্রুদের সাথে এই মুরতাদ সম্প্রদায়ের ভালোবাসার প্রকৃত রূপ। তারা দখলকৃত ভূমি এবং কট্টর ইহুদী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র কে মুসলমানদের ধ্বংস ও বিনাশ সাধনের জন্য কেন্দ্র নির্বাচন করে তাদের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কেননা, এইভাবে তারা মুসলমানদের পরম শত্রু ও কঠোর বিদ্বেষী লোকদের কাছ থেকে শক্তির জোগান লাভ করতে পারে।
এখান থেকেই পাঠক ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি এই দলের শত্রুতার মাত্রা দু‘দিক দিয়ে অনুধাবন করতে পারবে। একটি হল ধর্মীয় দিক, যা তাদের পুস্তকের মূল উদ্ধৃতিসহ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরটি রাজনৈতিক দিক, যা উল্লেখিত বক্তব্যের দ্বারা আরো স্পষ্ট প্রমাণিত হল। আল্লাহ পাক বিদ্বেষী দুষ্টদের হাত থেকে তাঁর দ্বীনকে রক্ষা করুন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/699/4
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।