hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কাদিয়ানী মতবাদ (পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ)

লেখকঃ এহসান ইলাহী জহীর

সপ্তম প্রবন্ধ: ভন্ডনবী কাদিয়ানী ও তার ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ:
নবুয়তের অন্যতম দলীল হল: ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হওয়া অর্থাৎ আল্লাহর ইলহাম দ্বারা গায়েব বা ভবিষ্যতের সংবাদ বাস্তবে পরিণত হওয়া। এর উদাহরণ হল- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধে কাফের বাহিনীর পরাজিত হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। বদরের যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে তিনি বলেছিলেন: ‘‘অচিরেই দলটি পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে ফিরে যাবে’’। [১ সুরা আল- কামার-৪৫]

অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার একদিন পূর্বে প্রতিপক্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার স্থান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ওমর রা. থেকে আনাছ রা. বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গতকল্য আমাদেরকে মুশরেক নেতাদের নিহত হওয়ার স্থান দেখিয়ে বলছিলেন: ‘‘ইনশাআল্লাহ আগামীকল্য এটা অমুকের নিহত হওয়ার স্থান এবং ইনশাআল্লাহ আগামীকল্য এটা অমুকের নিহত হওয়ার স্থান’’। ওমর রা. বলেন: ‘সেই সত্তার কসম! যিনি তাঁকে সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন- তারা ঐ সীমা একটুও অতিক্রম করেনি যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন’। (মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ভবিষ্যদ্বাণী হল: রোম ও পারস্য সম্রাটের ধন ভান্ডার সমূহ মুসলমানদের হাতে বিজিত হওয়ার কথা সহ আরো অনেক ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন। কেননা, রাসূলগণ নিজের পক্ষ থেকে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করেন না বরং তাঁরা যা বলেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলেন। এর প্রতি ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘‘তিনিই হলেন অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত, তাঁর অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত আর কাউকে অবহিত করেন না’’। [২ সুরা জীন- ২৬ ও ২৭]

আল্লাহপাক আরো বলেছেন: ‘‘আপনি কখনও ধারণা করবেন না যে, আল্লাহ তার রাসূলগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন, কেননা, আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী’’। [৩ সুরা হিজর-৪৭]

এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যা সংগঠিত হবে না এমন কোন বিষয় সংঘটিত হওয়ার সংবাদ দেয়া রাসূলের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, তা আল্লাহর নীতির পরিপন্থী এবং আল্লাহর বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী, অথচ আল্লাহই সর্বাধিক সত্যবাদী। ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও তার এই উক্তির দ্বারা একথা স্বীকার করছে: তাওরাত ও কুরআন উভয়ই ভবিষ্যদ্বাণী সমূহকে নবুওয়াতের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রমাণ বলে সাব্যস্ত করেছে (গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘ইস্তেফতা’ ৩পৃঃ)। সে আরো বলেছে: আল্লাহর এলহাম সমূহ বাস্তবায়িত না হওয়া অসম্ভব। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘মেরাতুল মারেফাত’ ৮৩ পৃ:) এ ভিত্তিতেই আমরা এ প্রবন্ধে নবুয়্যত ও রেসালাতের দাবিদার গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণী সমূহের আলোচনা করতে চাই। সে দাবিকরে যে, সে আল্লাহর ওহী ও তার সম্বোধন দ্বারা সম্মানিত। সে বলেছে: ‘আমি আমার ওহীতে ঐ রূপ বিশ্বাস করি যেমন তাওরাত ইঞ্জিল ও কুরআনে বিশ্বাস করি ’। (গোলামের ‘‘আরবাঈন’’ ৪ নম্বর ২৫ পৃ:) সে আরো বলেছে: ‘আমি নবী এবং আল্লাহর সম্বোধন ও তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি তা পূরণ করেন এবং তার অদৃশ্য জগতের অনেক কিছু আমার কাছে উদ্ঘাটন করেন। আর, আমাকে বিশ্বের রহস্য-বলী সম্পর্কে অবহিত করেন, যা ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে। এ জন্যই আমাকে নবী বলা হয়। (লাহোরের ‘আম’ নামক পত্রিকায় গোলাম আহমদের প্রেরিত পত্র ২৩ মে, ১৯০৮ খৃ:) এর আলোকে আমরা দেখব, সে কি বাস্তবিকই আল্লাহর সম্বোধন দ্বারা সম্মানিত এবং ভবিষ্যতের রহস্যাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত? অথবা সে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে? কেননা, সে-ই নিজে এ নিয়ম নির্ধারণ করেছে যে, আমার সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য আমার ভবিষ্যৎ বাণী সমূহ থেকে উত্তম ও সুন্দর আর কিছুই নেই। (গোলামের মেরাতুল কামালাত’ ২৩২।)

যে মানদন্ড সে নিজেই নির্ধারণ করেছে আমরা উহা দ্বারা তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে চাই। তার ভবিষ্যদ্বাণীর বিবরণ দেওয়ার পূর্বে তার দেয়া ভবিষ্যদ্বাণীর সংজ্ঞা উল্লেখ করা আমি সংগত মনে করি। সে আল্লাহর নবী ঈসাকে আলাইহিস সালাম আক্রমণ করে বলে: ‘এ মিসকিন ইসরাঈলী ব্যক্তির ভবিষ্যদ্বাণী আর কি? ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদি।’ এ সকল বিষয়কে ভবিষ্যদ্বাণী এবং গায়েবের সংবাদ কেন বলা হল? তা আমার বোধগম্য নয়। ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষ কি আদি হতে সংঘটিত হচ্ছে না? এবং বিশ্বের কোন না কোন অংশে সর্বদাই যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে না? সুতরাং এই আহম্মক (আল্লাহ পানাহ) এ সকল বিষয়কে ভবিষ্যদ্বাণী নাম দিল কেন’’? (গোলামের ‘আঞ্জামে আথম’ এর পরিশিষ্ট ৪পৃঃ।) সে আরো বলে: ‘‘নবী ব্যতীত অন্যান্যরাও যুদ্ধ-বিগ্রহ, ভূমিকম্প ও বিপদাপদ প্রভৃতির সংবাদ দিতে পারে।’’ (গোলাম আহমদের ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ ৪৬৮ পৃ:।) এ দুটি ভাষ্যে ভন্ডনবী কাদিয়ানী আমাদেরকে অবহিত করেছে যে, ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ অস্বাভাবিক হতে হবে এবং এগুলো সম্পর্কে কোন বিষয়ের বিদ্যমান পূর্বাভাস দ্বারা আনুমানিক সংবাদ দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কেননা, এরূপ সংবাদ দেওয়া প্রত্যেক বুদ্ধি সম্পন্ন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। অথচ গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণী সমূহে এ সকল বস্ত্তকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে, যার বিস্তারিত বিবরণ সম্মুখে আসছে। এখানে এর একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। ভন্ডনবী কাদিয়ানী বলেছে: আল্লাহ তাআলা আমার কাছে প্রকাশ করেছেন যে, প্রচুর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। যদ্দরুন জনবসতি সমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যাবে। তারপর কঠিন ভূমিকম্প হবে। কার্যত:

অত্যধিক বৃষ্টি হয়েই গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ভূমিকম্পের অপেক্ষায় আছি।’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘হাকীকতুল ওহী’ ৩০৪ পৃ:)অথচ আদি থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে বৃষ্টির মৌসুমে যে কোন ব্যক্তি বৃষ্টি হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। এদিকে ভ্রূক্ষেপ না করেও আমি গোলাম আহমদের এক একটা ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ করব এবং এগুলোকে তার উক্তি অনুযায়ী তার সত্য মিথ্যার মাপকাঠি হিসেবে উপস্থাপিত করব। বিশেষ করে ঐ সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী যে গুলো সম্বন্ধে সে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে সংঘটিত হওয়ার কথা স্পষ্ট করে বলেছে এবং একথাও বলেছে যে, আল্লাহর কাছ থেকে অবহিত না হয়ে সে সংবাদ দেয়নি। যদি এগুলো বাস্তবায়িত না হয় তাহলে সে এমন এমন হবে এবং তার সাথে এমন এমন ব্যবহার করা হবে। এ প্রসঙ্গে তার একটি ভবিষ্যদ্বাণী লক্ষ করুন, যা সে অতি শক্তভাবে এ বলে ব্যক্ত করছে: ‘যদি আমার উক্তি অনুসারে ইহা সংঘটিত না হয়, তাহলে আমি সর্বপ্রকার শাস্তি গ্রহণে প্রস্ত্তত আছি। আমার মুখ যেন কাল করা হয়, আমাকে যেন অপমান করা হয় এবং আমার গলায় রশি লাগিয়ে যেন ফাঁসি দেওয়া হয়। আমি মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যা বলছি তা সংঘটিত হওয়া একান্ত অপরিহার্য। আকাশ ও পৃথিবীর পরিবর্তন হওয়া সম্ভব কিন্তু আল্লাহর কথা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। যদি আমার কথা মিথ্যা হয় তবে আমার জন্য তোমরা শূল তৈরি করে রাখ। শয়তান খবীছও মালউনদের চেয়ে অধিক অভিশাপ আমাকে দাও।’ (গোলাম কাদিয়ানী ‘আল হারবুল মুকাদ্দাস’ ১৮৮ পৃ:) দেখা যাক, ঐ ভবিষ্যদ্বাণীটি কি যা সংঘটিত না হলে সে ফাঁসি কাষ্টে ঝুলতে প্রস্ত্তত ছিল? এটা তারই ভাষায় আমি ছোট একটি ভূমিকার পর উল্লেখ করব যা পাঠককে সম্পূর্ণ বিষয়টি অনুধাবন করতে সাহায্য করবে। এটা নিম্নরূপ:-

১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে ভারতবর্ষের একটি শহর ‘অমৃতসরে ’আব্দুল্লাহ আথম নামে একজন খ্রিস্টানের সহিত গোলাম আহমদের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। অনেক দীর্ঘ আলোচনার পরও তারা কোন মীমাংসায় পৌঁছতে পারেনি এবং তাদের কেউ প্রতিপক্ষের উপর জয়ী হতে পারে নি। গোলাম আহমদের এ দাবিতেও যে, সে আল্লাহর ওহীর দ্বারা সাহায্য প্রাপ্ত। ফলে সে এমন একটা তামাশা করতে চাইল যদ্দারা সে ঐ অপমানকে মুছে ফেলতে পারে, যা একজন সাধারণ খ্রিস্টানের সাথে পরাজিত হওয়ার কারণে তার উপর আপতিত হয়েছিল। সুতরাং ১৮৯৩ সালের ৫ই জুন তারিখে ভোর হতে না হতে সে ঘোষণা দিল যে, সে আল্লাহর নিকট হতে অবহিত হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ আথম পনেরো মাসের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৯৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে মারা যাবে। প্রকাশ থাকে যে, উক্ত আব্দুল্লহর বয়স তখন ছেষট্টি বছরের ঊর্ধ্বে ছিল। এখন আমি তার মূল ভাষ্য বর্ণনা করছি। গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলে: ‘আজ রাতে আমার কাছে যা উদ্ঘাটিত হয়েছে তা হল এই- আমি মহান আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত কাকুতি ও বিনয়ের সহিত দোয়া করলাম তিনি যেন এ ব্যাপারে আমাকে একটা মীমাংসা করে দেন। তখন আল্লাহ আমাকে নিদর্শন প্রদান করলেন যে, মিথ্যাবাদী যদি হকের প্রতি প্রত্যাবর্তন না করে তবে সে পনেরো মাসের মধ্যে মৃত্যু বরণ করবে এবং সত্যবাদী সম্মান ও মর্যাদা লাভ করবে। আর, যদি মিথ্যাবাদী ১৮৯৩ সালের ৫মে হতে পনেরো মাসের মধ্যে মৃত্যু বরণ না করে এবং আমার উক্তি বাস্তবায়িত না হয় তবে আমি সকল প্রকার শাস্তি গ্রহণের জন্য প্রস্ত্তত আছি। আমার মুখ যেন কাল করা হয়, আমাকে অপমানিত করা হয় এবং আমার গলায় দড়ি লাগিয়ে আমাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। আমি মহান আল্লাহর শপথকরে বলছি যে, আমার উক্তি বাস্তবায়িত হবে এবং উহা বাস্তবায়িত হওয়া অনিবার্য।’ (আল-হরবুল মুকাদ্দাস ১৮৮ পৃ:) কাদিয়ানীরা অত্যন্ত ভয়ংকর পরিবেশে অধৈর্য হয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নের অপেক্ষা করছিল। এখন আমি এমন কিছুর বর্ণনা দিচ্ছি যদ্দারা ঐ পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত হওয়া যাবে, যে পরিবেশে ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার দল বসবাস করছিল। ভবিষ্যদ্বাণীর মেয়াদ শেষ হওয়ার কাছাকাছি সময়ে গোলাম আহমদ তার জনৈক মুরিদের নিকট পত্র লিখছে, যার নমুনা হল এই, সম্মানিত ভাই রুস্তম আলী, আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ, টিকেট সহ আপনার পত্র পেয়েছি। ভবিষ্যদ্বাণীর নির্দিষ্ট মেয়াদের অল্প কিছুদিন বাকি আছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন তার বান্দাগণকে পরীক্ষা হতে রক্ষা করেন। সেই চিহ্নিত ব্যক্তি আব্দুল্লাহ আথম পিরোজপুরে (ভারতের একটি শহর) নিরাপদ ও সুস্থ দেহে অবস্থান করছে। আল্লাহ তার দুর্বল বান্দাগণকে পরীক্ষা হতে রক্ষা করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন। আমি ভাল আছি। তোমরা শেখের নিকটও পত্র লিখবে যেন তিনিও এ দোয়ায় শরীক থাকেন। (অর্থাৎ আব্দুল্লাহ যেন এ মেয়াদের ভিতরে মৃত্যুবরণ করে।) আস-সালাম’। গোলাম আহমদ, কাদিয়ান হতে।’ (রুস্তম আলীর নিকট গোলাম আহমদের চিঠি যা গোলাম কাদিয়ানীর পত্রাবলির সমষ্টি ‘মাকাতিবে আহমদিয়া’ নামক পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত ৫ম খন্ড, ৩ নম্বর ১২৮ পৃ:) গোলাম পুত্র ও কাদিয়ানী নেতা বশীর আহমদ লিখেছে: আমাকে আব্দুল্লাহ ছিন্নুরী বলেছেন যে, আব্দুল্লাহ আথমের নির্দিষ্ট মেয়াদের যখন মাত্র একদিন বাকি তখন জনাব মাসীহ আমাকে এবং হামীদ আলীকে নির্দেশ দিলেন যে, মসুর ডালের কিছু দানা নিয়ে উহার উপর কুরআনের কোন একটি সুরা পড়তে। সূরাটির নাম আমি এখন ভুলে গেছি, তবে একথা স্মরণ আছে যে উহা সূরায়ে ফীলের ন্যায় ছোট। আমরা পূর্ণ এক রাত লেগে থেকে অজিফাটি শেষ করলাম। তারপর জনাব মাসীহের (গোলাম) নিকট গেলাম এবং তার সম্মুখে দানাগুলো পেশ করলাম। তিনি আমাদেরকে নিয়ে কাদিয়ানের বাহিরে উত্তর প্রান্তের দিকে বের হলেন এবং বললেন, ‘এখনই আমি এ দানা গুলো পুরাতন একটি কূপে নিক্ষেপ করব। যখন আমি এ দানা গুলো নিক্ষেপ করব তখন তোমরা পিছন ফিরে তাকাবে না এবং দ্রুত ফিরে আসবে।’ আমরা এরূপ করলাম এবং পিছন দিকে না তাকিয়ে দ্রুত চলে আসলাম। (গোলাম তনয় বশীর আহমদের সীরাতুল মাহদী ১ম খন্ড ১৫৯ পৃ:) ‎‎‎‎‎‎‎‎‎

এখন আমরা কাদিয়ানী লেখক ইয়াকুব আলী কদিয়ানীর ‘সীরাতুল মাসীহিল মাওউদ’ নামক পুস্তক হতে নির্দিষ্ট মেয়াদের শেষ দিনের অবস্থা বর্ণনা করছি। সে বলছে: ‘‘আথমকে দেওয়া নির্দিষ্ট মেয়াদের শেষ দিন আসল, কাদিয়ানীদের চেহারা হলুদ বর্ণ ধারণ করল এবং তাদের অন্তর অস্থির হয়ে উঠল। আমাদের কেউ কেউ আব্দুল্লাহ আথমের মৃত্যুর উপর বিরুদ্ধবাদীদের সাথে বাজি ধরল। আর, নৈরাশ্য ও অনুতাপ তাদেরকে শ্বাস রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তাদের কিছু লোক আল্লাহর কাছে তার মৃত্যুর জন্য দোয়া করে নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগল। তাদের এ চিৎকার ও আর্তনাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, অনেক বিরুদ্ধবাদীরাও তাদের জন্য ব্যথিত হয়ে উঠল। (ইয়াকুব কাদিয়ানীর ‘সীরাতুল মাসীহিল মাওউদ’ ৭ পৃ:।) এ সমস্ত কান্নাকাটি ও অজিফা তদবিরের পর কি ঘটল? এ ভবিষ্যদ্বাণী কি বাস্তবায়িত হল এবং আব্দুল্লাহ আথম কি মৃত্যুবরণ করল? এসকল প্রশ্নের উত্তর ভন্ডনবী গোলাম আহমদের শ্বশুর তার নিকট লিখিত একটি পত্রে এভাবে দিচ্ছে: ‘সম্মানিত মাওলানা সাহেব! আল্লাহ আপনাকে নিরাপদ রাখুন। আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আজ সেপ্টেম্বরের সাত তারিখ। ভবিষ্যদ্বাণীর শেষ মেয়াদ ছিল পাঁচ সেপ্টেম্বর। আমি ভবিষ্যদ্বাণীর কথা নিয়ে আলোচনা করছি না বরং আপনি যে ইলহামের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তা আমার স্মরণ হচ্ছে- ‘যদি পনেরো মাস সময়ের মধ্যে এ মিথ্যাবাদী মৃত্যুবরণ না করে এবং আমার উক্তি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে আমি প্রস্ত্তত হব..............। এখন যেহেতু এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হল না এবং আব্দুল্লাহ আথম নিরাপদ, সুস্থ ও জীবিত আছে, মৃত্যুবরণ করেনি। আমার ধারণা যে, এ ভবিষ্যদ্বাণীর কোন ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নহে...... মুহাম্মদ আলী খান।’ (গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিকট মুহাম্মদ আলী কাদিয়ানীর লিখিত পত্র যা ইয়াকুব আলী কাদিয়ানী রচিত ‘আয়েনায়ে হক্বনুমা’ এর অন্তর্ভুক্ত, ১০০-১০১ পৃ:।) কোন কোন কাদিয়ানী এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিল যে, আব্দুল্লাহ আথম খ্রীষ্টধর্ম থেকে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু আব্দুল্লাহ আথম এদেরকে অপমানিত করে এবং তার ঐ ঘোষণা দ্বারা এদের কোন ব্যাখ্যার অবকাশ রাখেনি, যা সে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার দশদিন পর ‘‘ওফাদার’’ পত্রিকায় পাঠিয়েছিল। ইহাতে একথা ছিল ‘গোলাম আহমদ আমার মৃত্যু সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিল উহার প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমি আপনাদেরকে অবহিত করছি যে, আমি আল্লাহর অনুগ্রহে সুস্থ ও নিরাপদ আছি। আমি শুনতে পেলাম যে, গোলাম আহমদ বলছে, আমি খ্রীষ্টধর্ম হতে প্রত্যাবর্তন করেছি। আমি ঘোষণা করছি যে, এটা মিথ্যা, আমি খ্রিস্টান ছিলাম এবং এখনও খ্রিস্টান আছি, যেমন পূর্বে ছিলাম। আল্লাহ যে আমাকে খ্রীষ্টন বানিয়েছেন তার জন্য আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।’ (লাহোরের ওফাদার পত্রিকায় আব্দুল্লাহ আথমের ঘোষণা ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ খৃ:) এমনি ভাবে ভন্ড মিথ্যাবাদী এবং আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ রটনাকারী অপদস্ত ও লাঞ্ছিত হয়। সে বলেছিল: আকাশ ও পৃথিবী স্থানচ্যুত হওয়া সম্ভব, কিন্তু এ ভবিষ্যদ্বাণী ব্যতিক্রম হওয়া সম্ভব নহে। (আল-হারবুল মুকাদ্দাস ১৮৮ পৃষ্ঠা।) উল্লেখিত আব্দুল্লাহ আথম দীর্ঘদিন জীবিত থাকে এবং এ অভিশপ্ত ভন্ডনবীর মাথা নত হয়। বরং শয়তান খবীছ ও মালউনদের চেয়েও অধিক লানত তার উপর পতিত হয়। সে স্বয়ং তা নিজের জন্য প্রকাশ করেছিল এবং আল্লাহ তা’য়ালা তাকে এ পৃথিবীতে জন সমক্ষে লাঞ্ছিত করেন। ইতিপূর্বে যাদের চক্ষু খুলেনি তাদের চক্ষুও খুলে যায়। যার ভাগ্যে হেদায়েত ছিল সে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। এটাও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তার নবী রাসূলগণকে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করেন না । তিনিই বলেছেন: ‘আল্লাহর প্রতি এরূপ ধারণা করবেন না যে, তিনি তার রাসূলগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন। [১ সুরা আল-হিজর- ৪৭]

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভবিষ্যদ্বাণী: [২ মূল কিতাবে দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণী লিখা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে এর মধ্যে দুটি ভবিষ্যদ্বাণী সন্নিবেশিত করা হয়েছে। (অনুবাদক)]

এরপর আমি গোলাম আহমদের দ্বিতীয় ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ করতে চাই। পাঠকের বুঝার সুবিধার জন্য এর একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকা প্রদান করছি। তা হল এই, ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আহমদ বেগ নামে একজন আত্মীয় ছিল। সে গোলাম আহমদের সাথে সম্পৃক্ত কোন এক ব্যাপারে গোলাম আহমদের মুখাপেক্ষী হয় এবং তার সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন উত্তরে গোলাম আহমদ বলল: ‘আমি তোমাকে এ শর্তে সাহায্য করব যে, তোমার মেয়ে মোহাম্মদী বেগমকে আমার কাছে বিবাহ দিতে হবে।’ এসময় তার বয়স পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে ছিল এবং সে ছিল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত; যেমন যক্ষ্মা, বহুমূত্র ও পক্ষাঘাতের অনুরূপ রোগ। আহমদ বেগ এ শর্ত গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। ফলে ভন্ডনবী গোলাম আহমদ পাগলের মত হয়ে যায় এবং তাকে বিভিন্ন রকমের হুমকি দিতে থাকে। এই মেয়ের প্রতি তার আসক্তি এতই প্রবল হয়েছিল যে, সে ভবিষ্যদ্বাণীরূপে ঘোষণা দিল আল্লাহ তাআলা আমার নিকট ভবিষ্যদ্বাণীরূপে প্রকাশ করেছেন যে, আহমদ বেগের বড় মেয়ের বিবাহ আমার সাথে হবে। তবে, তার পরিবার পরিজন এর বিরোধিতা করবে এবং এতে বাঁধা সৃষ্টি করবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমার সাথে তার বিবাহ দেবেন এবং সমুদয় প্রতিবন্ধকতা দূর করবেন। কেহই এর বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।’’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘‘&এজালাতুল আওহাম’’ ৩৯৬ পৃষ্ঠা) সে আরো বলল যে, মুহাম্মদী বেগমের সহিত বিবাহ অবধারিত। আমি আমার প্রভুর শপথ করে বলছি, এটা সত্য এবং তোমরা এর বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। মহান আল্লাহ বলেছেন আমি নিজেই তোমার সহিত তার বিবাহ দিয়ে দিলাম এবং কেহই আমার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করতে পারবে না’। (গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘‘আল-হুকমুছ্ছামাবী’’ ৪০ পৃ:) মোটকথা, গোলাম এ ব্যপারে উল্লেখ করছে যে, বিশ্ব প্রভু স্বয়ং একে তার সাথে বিবাহ দিয়েছেন এবং তার ফয়সালাকে কেহ ফিরাতে পারবে না। এজন্যই সে এত জোরালোভাবে বলেছে, এ ভাবষ্যদ্বাণী অবশই বাস্তবায়িত হবে এবং এর বাস্তবায়িত হওয়া অবধারিত। অতপর সে বলে: এই ভবিষ্যদ্বাণী অর্থাৎ এ মেয়েটির আমার সাথে বিবাহ হওয়া অখন্ডনীয় ভাগ্যলিপি। যার কোন অবস্থাতেই পরিবর্তন হবে না। কেননা, আমি এলহামের মধ্যে এ বাক্যটি পিছিয়ে ‘‘লা তাবদীলা লি কালিমাতিল্লাহ’’ (আল্লাহর ফায়সালার কোন পরিবর্তন নেই।) এর অর্থ হল, আমার এ ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। কারণ, এটা বাস্তবায়িত না হলে আল্লাহর কালাম অর্থহীন হয়ে পড়বে। (‘‘ইশতেহারুল গোলাম’’ ১৬ অক্টেবর ১৮৯৪ খৃ:) এরও অধিক সে বলেছে- ‘যদি এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হয় তবে আমি অত্যন্ত ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হব। হে নির্বোধেরা (তার বিরুদ্ধবাদীদের সম্বোধন করছে) এটা মানুষের কোন বানান কথা নয় এবং কোন ঘৃণিত ও অপবাদ রটনাকারীর খেলা নহে, বরং এটা আল্লাহর সত্য প্রতিশ্রুতি। তিনি এমন মা’বুদ যার বাণীর পরিবর্তন হয় না এবং এমন প্রভু যার ইচ্ছা পূরণে কেহ বাধা সৃষ্টি করতে পারে না’। (গোলামের আঞ্জামে আথম এর পরিশিষ্ট ৫৪ পৃ:) এ ভবিষ্যদ্বাণীর ফাঁকে সে আহমদ ও তার আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে লাগল। কখনও তাদেরকে আশা দেয়, আবার কখনও তাদেরকে হুমকী দেয়, যাতে তার এ আশা পূর্ণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ বাস্তবায়িত হয়ে যায়। সে আহমদ বেগের কাছে পত্র লিখল, যার বক্তব্য হল এই- ‘‘শ্রদ্ধেয় ভাই আহমদ বেগ। আল্লাহ তাআলা আমাকে নিরাপদ রাখুন। আমি এইমাত্র মুরাকাবা শেষ করলাম। সাথে সাথে আমার নিদ্রা আসল। তখন আমি স্বপ্নে দেখলাম, আল্লাহ্ আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমি তোমাকে এ মর্মে অবহিত করব, তুমি যেন তোমার কুমারী বড় মেয়েটিকে আমার নিকট বিবাহ দিয়ে দাও, যাতে তুমি আল্লাহর মঙ্গল, বরকত, দান ও সম্মানের অধিকারী হতে পার এবং তোমার বিপদাপদ যেন দূর হয়ে যায়। আর, যদি তুমি তোমার মেয়ে আমাকে প্রদান না কর, তা হলে তুমি ভৎর্সনা ও শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তা আমি তোমাকে পৌঁছে দিলাম। যাতে তুমি আল্লাহর পুরস্কার ও সম্মান লাভ করতে পার, এবং তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহের ভান্ডার খুলে যায়। তাছাড়া তুমি আমার কাছে যে দরখাস্ত নিয়ে এসেছিলে তাতে আমি স্বাক্ষর দিতে প্রস্ত্তত আছি। উপরন্তু, আমার সমস্ত সম্পত্তি তোমার এবং আল্লাহর। আমি তোমার পুত্র আজিজ বেগের জন্যও সুপারিশ করতে প্রস্ত্তত আছি, যাতে সে পুলিশ বিভাগে চাকুরি লাভ করতে পারে। অনুরূপভাবে, আমি তাকে আমার এক বিরাট ধনী মুরিদের কন্যার সাথে বিবাহ দিয়ে দিব।’’ (আহমদ বেগের কাছে গোলাম কাদিয়ানীর লিখিত পত্র যা ‘নবীস্তায়ে গায়েব’ থেকে গৃহীত ১০০ পৃ:, ফেব্রু: ১৮৮৮ খৃ:।) সে আর একটি পত্র তার কাছে লিখেছে: ‘যদি তুমি আমাকে তোমার মেয়ে দান কর এবং আমার সহিত তার বিবাহ দাও তা হলে আমি তোমাকে আমার স্থাবর সম্পত্তি ও বাগানের একটি বড় অংশ প্রদান করব এবং তোমার মেয়েকে আমার সমুদয় সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ দিয়ে দেব। আমি যা বলছি তা সত্য। তুমি যা চাও তা আমি তোমাকে দেব। আমার মত আত্মীয়তা রক্ষাকারী আর কাউকে তুমি খুঁজে পাবে না। (গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘মেরাতে কামালাতে ইসলাম’ ৫৭৩ পৃ:।) যখন সে দেখল যে এ সকল উৎসাহ ও আগ্রহ দান কোন কাজে আসছে না। তখন সে আহমদ বেগের কাছে নত হয়ে তার করুণা ভিক্ষা করতে লাগল। সে তার নিকট এ মর্মে আরো একটা পত্র লিখল: ‘আমি আপনার কাছে অত্যন্ত আদব ও নম্রতার সাথে আসা করছি যে, আপনি আমার কাছে আপনার মেয়েকে বিবাহ দেয়ার প্রস্তাবটি গ্রহণ করবেন। কেননা, এ বিবাহটি আপনাদের জন্য বরকতের কারণ হবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহের দরজা সমূহ যা আপনারা কল্পনা করতে পারেন না তা আপনাদের জন্য খুলে যাবে। হয়ত আপনারা জানেন, এ ভবিষ্যদ্বাণী হাজার হাজার এমনকি লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে প্রচারিত হয়ে গেছে এবং বিশ্ববাসী এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নের অপেক্ষা করছে। হাজার হাজার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এ

ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছে, বরং এটা নিয়ে তারা আমাদের বিরুদ্ধে হাসি ঠাট্টা করছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং আমাদিগকে সহায়তা করবেন। এজন্য আমি আপনার কাছে আশা করছি যেন এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হওয়ার ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতা করেন। (আহমদ বেগের নিকট গোলামের পত্র ১৭ জুলাই ১৮৯২ খৃ: যা ‘কালেমায়ে ফজলে রহমানী’ পুস্তক হতে গৃহীত ১২৩ পৃ:।) যখন এ প্রচেষ্টায়ও সে সফলকাম হতে পারে নি তখন সে তার দু’পুত্র সুলতান আহমদ ও ফজল আহমদের নিকট পত্র লিখল, তারা যেন তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করে। কারণ, ফজল আহমদ আহমদ বেগের ভাগিনীকে বিবাহ করেছিল। আর আহমদ বেগের মাতৃকুলের সহিত সুলতানের আত্মীয়তা ছিল। অনুরূপভাবে সে তার স্ত্রী সুলতান আহমদের মাতার কাছে পত্র লিখল। তিনি যেন তার অবস্থান দ্বারা এ ব্যাপারে চেষ্টা করেন। আর যদি তারা তাকে সাহায্য না করে, তাহলে সুলতান আহমদ ফজল আহমদ প্রত্যেকে তার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে এবং তাদের মা ত্বালাক প্রাপ্তা হবে।’ আবার, সে একটা সাধারণ ঘোষণা দিল যার বর্ণনা এই- ‘যদি আহমদ বেগের কন্যা আমি ব্যতীত অন্য কারে সঙ্গে বিবাহ বসে তবে ঐ দিনই সুলতান আহমদ আমার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়ে যাবে এবং তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে না। আর, তার মাও তালাক প্রাপ্তা হয়ে যাবে। আমার পুত্র ফজল আহমদও আমার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে যদি সে তার স্ত্রী আহমদ বেগের ভাগিনীকে তালাক না দেয়। সুলতান আহমদের ন্যায় তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে না। (ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ঘোষণা, ২মে ১৮৯১ খৃ: যা ‘‘তাবলীগে রিসালত’’ এর অন্তর্ভুক্ত ২য় খন্ড ৯পৃঃ) এ সকল ভীতি প্রদর্শনের মধ্যে এ উদ্যেশ্য ছিল তারা যেন আহমদ বেগকে তার মেয়ে গোলামের কাছে বিবাহ দিতে বাধ্য করে। কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তা-ই করেন। আহমদ বেগের কন্যা মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ সুলতান বেগ নামক জনৈক সৈনিকের সহিত সম্পন্ন হয়ে গেল। আর, এ মিথ্যাবাদী অপবাদ রটনাকারী আক্ষেপ, অনুতাপ ও হতাশার ভিতর জীবন যাপন করতে লাগল এবং নিজের উপর অভিসম্পাত কুড়াতে লাগল যা সে নিজেই নির্ধারণ করেছিল এবং নিজের জন্য প্রয়োগ করেছিল। সে বলেছিল: ‘যদি এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হয়, তবে আমি সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হব।’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আঞ্জামে আথম’ এর পরিশিষ্ট ৫৪ পৃ:) তার এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয় নি, যার সম্পর্কে সে বলেছিল. ‘এটা আল্লাহর সত্য প্রতিশ্রুতি এবং আল্লাহর বাণীর কোন ব্যতিক্রম নেই।’ আল্লাহপাক তাকে জন সমক্ষে লাঞ্ছিত করেছেন। কিন্তু সে তার কর্মধারা থেকে বিরত হয়নি এবং সে ঐ কথার উপর অটল রইল যে, যেকোনো অবস্থায় তার সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ হবে। কেননা, আকাশেই তার সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ হয়ে গেছে। তবে তার বর্তমান স্বামী অচিরেই মৃত্যুবরণ করবে। তারপর সে বলছে: এটা সত্য যে, আমার সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ হয় নি, তবে এটা নিশ্চিত যে, অচিরেই আমার সাথে তার বিবাহ হবে। যেমন ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখ রয়েছে, . ...। এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হওয়ায় লোক আমাকে নিয়ে উপহাস করছে। তবে, এ ভবিষ্যদ্বাণী আমি আমার নিজের পক্ষ হতে দেই নি, বরং আল্লাহর ওহী দ্বারা আমি বলেছি। আমি সত্য বলছি যে, এমন একদিন আসবে যেদিন এ সকল বিদ্রূপকারীদের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যাবে..... । আর, মেয়েটি জীবিত অবস্থায় আমার কাছে আসবে এবং আমার সঙ্গে তার বিবাহ হবে। আমি এতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখি। কেননা, আল্লাহর প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম হয় না’। (গোলাম কাদিয়ানীর ঘোষণা, যা মঞ্জুর কাদিয়ানঅর ‘মঞ্জুরে এলাহী’ নামক পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত, ১৪৪ পৃ:) সে আরো লিখেছে: ‘আমি আল্লাহর নিকট কাকুতি মিনতির সহিত প্রার্থনা করলে আমার কাছে এলহাম আসল: ‘অচিরেই আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনা বলী দেখাব, এ মেয়েটি বিধবা হবে এবং তার স্বামী ও পিতা তিন বৎসরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে। অতঃপর এই মহিলা আমার নিকট আসবে এবং কেহই এতে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না’ (গোলামের ইলহাম যা ‘নবীস্তায়ে গায়েব’ হতে গৃহীত।) সে আরও বলে: ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সত্য ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন। এটাও বাস্তব যে, আমার সাথে মহিলাটির বিবাহ হবে। এই সংবাদকে আমি আমার সত্য মিথ্যার মানদন্ড নির্ধারণ করছি। আমি তা আল্লাহর পক্ষ থেকে সংবাদ প্রাপ্তির পরই বলছি। (গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘আঞ্জামে আথম’ ২২৩ পৃ:)

এদিকে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, কিন্তু মুহাম্মদী বেগমের স্বামী সৈনিক ব্যক্তি অস্ত্র ও গুলীর নীচে জীবন যাপন করেও মৃত্যুবরণ করেনি এবং ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী গোলাম আহমদের নিকট মুহাম্মদী বেগম ফিরে আসেনি। ফলে চতুর্দিক থেকে তার উপর অভিশাপ ও গাল-মন্দ বর্ষিত হতে লাগল। সে দোয়ার মাধ্যমে সর্বশেষ ঘোষণা দিল: পবিত্র ও মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, হে মা’বুদ, সর্ব শক্তিমান ও সর্বজ্ঞ, যদি আহমদ বেগের কন্যার বিবাহের ভবিষ্যদ্বাণী তোমার নিকট হতে হয়ে থাকে, তাহলে তুমি তা বাস্তবে পরিণত কর। যাতে এটা তোমার মখলুকের উপর প্রমাণরূপে গণ্য হয় এবং এর দ্বারা হিংসুক খবীছদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। আর যদি এই ভবিষ্যদ্বাণী তোমার নিকট হতে না হয়ে থাকে, তাহলে হে আল্লাহ! আমাকে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করে ধ্বংস করে দিন এবং আপনার দৃষ্টিতে আমাকে অভিশপ্ত ও বিতাড়িত করুন।’ (গোলাম আহমদের ঘোষণা ২৭ অক্টোবর ১৮৯৪ খৃ: যা কাসিম কাদিয়ানীর ‘তাবলীগে রেসালাতের অন্তর্ভুক্ত, ৩য় খন্ড ১৮৬ পৃ:)

কার্যত: আল্লাহ তাআলা এ অভিশপ্ত ও বিতাড়িত ব্যক্তিকে তার [১ ভন্ডনবী কাদিয়ানী এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হলে উক্ত গুণ দুটো তার নিজের উপর আরোপ করছি। তার ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়নি।]

দীর্ঘ বাইশ বৎসর যাবৎ এ ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবায়িত করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালানোর পর অপমানিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত অবস্থায় ধ্বংস করেন। কেননা, সে প্রথম বারের মত ১৮৮৬ সালে এ ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং ১৯০৮ সালে সে মৃত্যুবরণ করে। আর, এ মহিলাটি তার বীর স্বামীর সংসারে থেকে এ ভন্ডনবীর অন্তরকে জ্বালিয়ে এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ ও কৃত্রিম-অমূলক দাবিদাওয়াকে মিথ্যা প্রমাণ করে বেঁচে রইল [২ মুহাম্মদী বেগম প্রায় একশত বছর জীবিত থাকার পর ১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে মৃত্যুবরণ করেন।]

আর তার স্বামী এই সফল প্রতিযোগী গোলাম আহমদের মৃত্যুর পর চল্লিশ বৎসরের অধিক কাল জীবিত ছিল। এ আঘাতটি ছিল কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে একটি মরণ আঘাত। এখনও তারা মাথা নত করে আছে এবং এ সংকট থেকে বের হওয়ার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না। কেননা, তাদের ভন্ডনবী সর্বদা এ ভবিষ্যদ্বাণীকে তার সত্য মিথ্যার মাপকাঠিরূপে গণ্য করেছে। একথা ধর্তব্য ছিল যে, যখন তারা এ লোকটিকে অপবাদ রটনাকারী ও মিথ্যাবাদী জানতে পারবে তখন তারা সঠিক পথে ফিরে আসবে। কেননা, আল্লাহর বাণী ও প্রতিশ্রুতি সমূহের পরিবর্তন অসম্ভব। গোলামও তা স্বীকার করেছে। কিন্তু বক্ষের ভিতর যে অন্তর আছে তা (বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে) অন্ধ হয়ে যায়। তার মিথ্যা প্রকাশ পাওয়ার পরও তারা তার ধর্মত্যাগ করেনি।

চতুর্থ ভবিষ্যদ্বণী:

উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী গোলাম আহমদকে মিথ্যুক ও দাজ্জাল সাব্যস্ত করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কাদিয়ানীদের বিশিষ্ট নেতা ও আমির মুহাম্মদ আলী লাহোরি কাদিয়ানী বলেছে: ‘এটা ঠিক যে, আমাদের ইমাম বলেছেন: মুহাম্মদী বেগমের সহিত তার বিবাহ হবে এবং এটাও ঠিক যে, মুহাম্মাদী বেগমের তার বিবাহ হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বও অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণী যা বাস্তবায়িত হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে লোকটিকে মিথ্যাবাদী বলা যায় না। (মুহাম্মদ আলীর প্রবন্ধ যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘পয়গামে সুলাহে’ প্রচারিত ১৬ জানুয়ারি ১৯২১ খৃ:।) প্রথমত: এটা তার ইমাম ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর উক্তির বিপরীত। সে বলেছে: ‘বিরুদ্ধ বাদীরা জেনে রাখ, আমাদের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য এ ভবিষ্যদ্বাণী হতে অধিক সুন্দর ও উপযোগী আর কিছু নেই।’ (গোলামের ‘মিরাতে কামালাতে ইসলাম’ ২৮৮ পৃ:) সুতরাং ভন্ডনবী কাদিয়ানী এ ভবিষ্যদ্বাণীকে বিশেষ করে তার সত্য মিথ্যার মাপকাঠি বানিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত: সে এ ভবিষ্যদ্বাণীকে বিভিন্ন শব্দ দ্বারা অত্যন্ত জোরালো ভাষায় ব্যক্ত করেছে. যেমন, এটা বাস্তবায়িত হওয়া অপরিবর্তনীয় ফয়সালা এবং আসমানে তার সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেছে, এবং স্বয়ং আল্লাহ তার সাথে মুহাম্মদী বেগমের বিবাহ সম্পন্ন করেছেন।’ এ ভবিষ্যদ্বাণী আল্লাহর ঐ সকল বাণীর অন্তর্ভুক্ত যার কোন পরিবর্তন ঘটতে পারে না।’ যদি এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হয় তবে সে অভিশপ্ত ও বিতাড়িত হবে।’ ইত্যাদি ইত্যাদি.....।

এ সব সত্ত্বেও আমি তার অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীর পরিণতি উল্লেখ করছি, যাতে, এ সত্য আরো অধিক স্পষ্ট হয়ে উঠে যা পূর্বেই স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং এতে যেন কারো সন্দেহ ও ইতস্তত: করার অবকাশ না থাকে। এ মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী তার স্ত্রীর গর্ভাবস্থার ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছে- ঐ আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা যিনি আমাকে এ বৃদ্ধাবস্থায় চারটি ছেলে দান করেছেন এবং পঞ্চম ছেলের সুসংবাদ দিয়েছেন।’ (গোলামের মূল বর্ণনা যা তার পুস্তক ‘‘মাওয়াহিবুর রহমান’’ এ উল্লেখিত, ১৩৯ পৃ:।) এ ইলহামটি ১৯০৩ খৃ: এর জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে ছিল এবং ঠিক ঐ মাসের ২৮ তারিখে ১৯০৩ খৃ: ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী গোলাম আহমদের স্ত্রী একটি সন্তান প্রসব করল। তবে এটা কি ছিল? কন্যা? হ্যাঁ, কন্যাই? কিন্তু বেশি দিন বাঁচেনি, বরং কয়েক মাস পরেই সে মারা গেল। আবার তার স্ত্রী গর্ভবতী হল এবং সে ভবিষ্যদ্বাণী করল, ‘‘সম্ভ্রান্ত ছেলে জন্ম গ্রহণ করবে, সে হবে সুদর্শন সুচতুর সন্তান।’’ (গোলামের আল-বুশরা ২য় খন্ড, ৯১ পৃ:।) এ ভবিষ্যদ্বাণী দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল, জনসাধারণের মনে এ ধারণা সৃষ্টি করা যে, ১৯০৩ সালের ভবিষ্যদ্বাণী দ্বারা এ গর্ভই উদ্দেশ্য, ইতি পূর্বেকার গর্ভ নহে। এরপর কি হল? আল্লাহর কুদরত দেখুন! এ অপবাদকারী মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ কীভাবে অপদস্ত করেছেন এবং এ ইলহাম ও ভবিষ্যদ্বাণীর মাত্র এক মাস পর কেমন করে তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেন। ১৯০৪ সালের ২৪ জুন গোলামের স্ত্রী আবার প্রসব করল। তা কি কন্যা? অবশ্যই কন্যা। তার নাম রাখা হল ‘‘আমাতুল হাফিজ।’’ কিন্তু সম্ভ্রান্ত সুচতুর সুদর্শন ছেলে জন্ম গ্রহণ করেনি? অবশ্যই জন্ম গ্রহণ করেনি। তা সত্ত্বেও গোলাম তার জীবনের শেষ পর্যন্ত বার বার একথা বলেছে যে, তার এমন একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে যে তার অপমানকে বিধৌত করবে এবং তার ভবিষ্যদ্বাণী প্রথম ও দ্বিতীয় গর্ভের জন্য জড়িত ছিল না। পুনরায় সে তার ইলহাম ও বিশেষ সন্তানের ভবিষ্যদ্বাণী ১৯০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করল- ‘আমি তোমাকে একজন ধৈর্যশীল ছেলের সুসংবাদ দিচ্ছি।’ (কাদিয়ানী পত্রিকা বদর যা ১৯০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এবং আল বুশরা ২য় খন্ড ১৬৩ পৃ:।) অক্টোবর মাসে সে তার দ্বিতীয় ইলহাম ঘোষণা করল: ‘‘অচিরেই আমি তোমাকে একটা ছেলে দান করব। হে প্রভু, আমাকে একটা পবিত্র সন্তান দান কর। আমি তোমাকে এমন ছেলের সুসংবাদ দিচ্ছি যার নাম হবে ইয়াহইয়া। (গোলামের অক্টোবরের ইলহাম যা তার ইলহামের সমষ্টি আল বুশরার অন্তর্ভুক্ত। ২য় খন্ড ১৩৬ পৃ:।) কিন্তু আক্ষেপের বিষয়- ‘পবিত্র ছেলে ও ধৈর্যশীল ছেলে জন্ম গ্রহণ করেনি। কারণ, এই ইলহামের কয়েক মাস পরেই ২৬ শে মে ১৯০৮ সালে গোলাম আহমদ মারা যায়, যাতে সে তার কর্মফল পেতে পারে। আমাতুল হাফিজ নাম্নী যে মেয়েটি ১৯০৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেছিল, সেই তার শেষ সন্তান। এ আঘাতটি তার জীবনের প্রথম আঘাত ছিল না , বরং ইতিপূর্বে ১৮৮৬ সালে সে এর তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করেছে। কিন্তু সে এতই নির্বোধ ছিল যে, সে এ থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি।

পঞ্চম ভবিষ্যদ্বাণী:

এ ভবিষ্যদ্বাণী আমি বিস্তারিত বর্ণনা করব। ১৮৮৬ সালের ২০ ফেব্রয়ারী তারিখে যখন গোলাম আহমদের স্ত্রী গর্ভবতী ছিল, তখন সে ঘোষণা দিল যে, আল্লাহর নিকট থেকে তার কাছে ইলহাম এসেছে। এর বর্ণনা হল এই: ‘‘আল্লাহ করুণাময় দয়ালু যিনি সবকিছু করতে পারেন আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তার একটি নিদর্শন প্রকাশ করবেন, যা রহমতের নিদর্শন.... প্রকাশ্য নিদর্শন..... সুদর্শন, সম্মানিত ও পবিত্র সন্তান......জাহেরী বাতেনী জ্ঞানে পরিপূর্ণ........প্রিয় ছেলে, সৌভাগ্যবান, আউয়াল ও আখেরের এবং হক ও উলার প্রকাশ স্থল, যেন আকাশ থেকে আল্লাহ স্বয়ং অবতরণ করেছেন। (এ সকল তুলনা হতে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি, তারা যা বলছে তা থেকে আল্লাহ অনেক ঊর্ধ্বে।) এ ছেলেটি খুব তাড়াতাড়ি বড় হবে এবং কায়েদিগণকে মুক্ত করবে এবং বিভিন্ন জাতি তার থেকে বরকত লাভ করবে। (গোলামের ঘোষণা, ২০ ফেব্রঃ ১৮৮৬ সাল, যা কাসিম কাদিয়ানীর ‘তাবলীগে রেসালাত’ এর অন্তর্ভুক্ত, ১ম খন্ড ৫৮ পৃ:।) সে স্পষ্ট করে বলছে যে, এ মহান সন্তানটি বর্তমান গর্ভ থেকেই জন্ম গ্রহণ করবে। (গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ‘তাতিম্মতু হাকিকাতুল ওহী, ১৩৫ পৃ:।) অতঃপর গোলামের স্ত্রী এ গুলো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দেওয়ার পর এবং আর্তনাদপূর্ণ ইলহামাতের পর এপ্রিল মাসে একটি সন্তান প্রসব করল। কিন্তু ভন্ডনবী মিথ্যাবাদীর দাবি অনুসারে সন্তানটি ছেলে ছিল না, বরং মেয়ে ছিল। তার নাম রাখা হল ‘ইসমত’। তারপর সে মাত্র পাঁচ বৎসর বয়সে ১৮৯১ সালে মারা গেল। কাদিয়ানীরা অধীর আগ্রহে এমন একটি ছেলে সন্তানের অপেক্ষায় রইল, যে হবে সুন্দর, সম্মানিত, মেধাবী, সত্য ও উচ্চ মর্যাদার প্রতীক, বিভিন্ন জাতি তার দ্বারা বরকত লাভ করবে এবং সে বন্দিদের মুক্তি করবে। এ অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তিক্ত ছিল। যদি এ মিথ্যাবাদীর সামান্যতম বুদ্ধি থাকত তবে সে এ ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার পর এ ধরনের আর কোন মিথ্যা ইলহাম রটনা করত না। কিন্তু তার শয়তান তাকে অনেক বার পথভ্রষ্ট করেছে যাতে করে সে লাঞ্ছনা, অপদস্ততা, লানত ও ঐ সকল গাল-মন্দ অর্জন করতে পারে যা সে নিজেই নিজের জন্য নির্ধারিত করেছে। আশ্চর্যের বিষয় যে, এ সত্ত্বেও সে দাবিকরে, প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে সে কোন কথা বলে না, যা বলে তা ওহী ব্যতীত আর কিছু নহে।’ (গোলামের আরবাঈন ৩ নম্বর ৪৩ পৃ:।)

ষষ্ঠ ভবিষ্যদ্বাণী:

এখন আমরা তার ষষ্ঠ ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লেখ করব, ১৮৮৬ সনের ২০শে ফেব্রয়ারী তারিখে সে ঘোষণা দিল ‘‘আল্লাহ তাআলা আমাকে এ মর্মে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, বরকতের অধিকারিণী স্ত্রী গণ থেকে আমার অনেক গুলো সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে। এদের কাউকে আমি এ এলহামের পরে বিবাহ করব। (তাবলীগে রেসালাতের অন্তর্ভুক্ত গোলামের ইলহাম, ১ম খন্ড, ৫৮ পৃ:।) এ বক্তব্যকে সে তার নিম্নোক্ত উক্তি দ্বারা আরো স্পষ্ট করেছে- ‘‘আল্লাহর কাছ থেকে ইলহাম পাওয়ার পর ১৮৮৬ সালের ফেব্রয়ারী মাসে আমি এ ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, এ ঘোষণার পর আল্লাহ তাআলা আমাকে বিবাহের সুসংবাদ দিয়েছেন, অচিরেই আমি বরকতময় রমণীগণকে বিবাহ করব এবং তাদের থেকে আমার সন্তানাদি জন্ম গ্রহণ করবে।’’ (গোলামের ‘মাহাক্কে আখইয়ার ও আসরার’ নামক ঘোষণাপত্র যা তাবলীগে রিসালাতের অন্তর্ভুক্ত ১ম খন্ড ৮৯ পৃ:) অতএব, তার ভবিষ্যদ্বাণী সুস্পষ্ট, কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। তা হল যে, গোলাম কাদিয়ানী ১৮৮৬ সালের ফেব্রয়ারী মাসের পর কয়েকজন মহিলাকে বিবাহ করবে এবং তাদের থেকে সন্তানাদি জন্ম গ্রহণ করবে। এরপর একটি বিষয় বাকি রয়ে গেল, আর তা হল এই যে, এ ঘোষণার পর সে কয়টি মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তাদের থেকে তার কয়টি সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে? বাস্তব অবস্থা এ সম্পর্কে কি বলি? এরপর গোলাম আহমদ অনেক মহিলা তো বিবাহ করেনি বরং একটিও না। আর, সন্তানাদি লাভের তো প্রশ্নই উঠে না।

সপ্তম ভবিষ্যদ্বাণী:

তার ভবিষ্যদ্বাণী সমূহের অন্যতম একটি হল এই- ১৮৯৯ সালের ১৪ ই জুন তারিখে তার একটি সন্তান জন্ম লাভ করে এবং তার নাম রাখে ‘মোবারক আহমদ’ তার জন্ম গ্রহণের কয়েকদিন পর সে ভবিষ্যদ্বাণীরূপে ঘোষণা দিল যে, এ সন্তানটি ‘‘আল্লাহর একটি নূর, প্রতিশ্রুত সংস্কারক, মহত্ত্ব ও আধিপত্যের অধিকারী, মাসীহ সাদৃশ্য আত্মা, রোগ নিরাময় কারী, আল্লাহর বাণী ও সৌভাগ্যবান এ সন্তান বিশ্বের সকল প্রান্তে খ্যাতি লাভ করবে, বন্দি মুক্ত করবে এবং সকল প্রান্তে খ্যাতি লাভ করবে, বন্দি মুক্ত করবে এবং সকল জাতি তার দ্বারা বরকত লাভ করবে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘তিরইয়াকুল কুলবি’ ৪৩ পৃ:) অতঃপর এ সন্তানটি তার জন্মের আট বৎসর পর ১৯০৭ সালে অসুস্থ হয়ে পড়ে। যদ্দরুন গোলাম আহমদ অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠল। কারণ, ইতিপূর্বে সে ঘোষণা দিয়েছিল যে, এ সন্তানটি এমন এমন হবে। সুতরাং যথা সম্ভব সে তার সকল প্রকার চিকিৎসা করল। ১৯০৭ সালের ২৭ শে আগস্ট তারিখে যখন তার রোগ কিছুটা হালকা হল, তখন গোলাম ভবিষ্যদ্বাণী রূপে ঘোষণা দিল ‘আল্লাহ আমার কাছে ইলহাম করেছেন যে, দোয়াটি কবুল হয়ে গেছে এবং রোগ সেরে গেছে। এর অর্থ হল এই যে, আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেছেন এবং মুবারক আহমদ আরোগ্য লাভ করবে। (কাদিয়ানী পত্রিকা ‘বদর’ ২৯ আগস্ট, ১৯০৭ সাল।) ভন্ডনবী কাদিয়ানী আল্লাহর শানে এ মিথ্যা অপবাদ ঘোষণা করার সাথে সাথে রোগটি নতুন করে ফিরে এল এবং ১৯০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে এ প্রতিশ্রুত সংস্কারক সন্তানটি মারা গেল, যে মহত্ত্ব ও আধিপত্যের অধিকারী, রোগ নিরাময়কারী, মাসীহ সাদৃশ্য, সকল জাতি যার প্রতি অপেক্ষমাণ ছিল, সে বন্দি মুক্ত করবে এবং জনগণের উপর থেকে তাদের কঠিন ও ভারী বোঝা সরিয়ে দেবে। (‘সীরাতে মাহদী’ ৪০ পৃ: এবং কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল ফজল’ ৩০ শে অক্টোবর, ১৯৪০ খৃ:)

অষ্টম ভবিষ্যদ্বাণী:

গোলামের অন্যতম এক ভবিষ্যদ্বাণী হল ‘কাদিয়ান নামক জনপদে যেখানে তার বাসস্থান প্লেগ রোগ দেখা দেবে না।’ সে বলেছে: তিনি সত্য মা’বুদ যিনি কাদিয়ানে তার রাসূল পাঠিয়েছেন, তিনিই কাদিয়ানকে হেফাজত করবেন এবং প্লেগ রোগ হতে একে রক্ষা করবেন। যদিও এ রোগ সত্ত্বর বৎসর পর্যন্ত চলতে থাকে। কেননা, কাদিয়ান তার রাসূলের আবাস ভূমি এবং এর মধ্যেই (অর্থাৎ কাদিয়ানে প্লেগ প্রবেশ না করাতে) সকল জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘দাফেউল বালা’ ১০ ও ১১ পৃ:) এ ভবিষ্যদ্বাণীতে গোলাম আহমদ দাবি করছে যে, যদিও এদেশে প্লেগ রোগ সত্ত্বর বৎসর পর্যন্ত চলতে থাকে, তবু কখনও উহা কাদিয়ানে প্রবেশ করবে না। কিন্তু দেখা গেল, ঐ কাদিয়ানে প্লেগ রোগ প্রবেশ করেছে, যাকে এ ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী তার অবস্থান দ্বারা বিখ্যাত করেছিল। এতে তার বাদী মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অথচ সে সময় কাদিয়ানের আশে পাশের গ্রাম ও শহরে প্লেগ ব্যাপক ছিল না এবং এর প্রকোপ স্থায়ী ছিল না। এমনকি এক বৎসর পর্যন্তও স্থায়ী থাকেনি। এখন আমরা গোলাম আহমদের নিজের পক্ষ থেকেই এর প্রমাণ পেশ করব। সে তার শ্বশুর মুহাম্মদ আলী খানের নিকট লিখিত পত্রে কাদিয়ানে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করে বলে: এখানে প্লেগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। লোক আক্রান্ত হয়ে কয়েক ঘনটার মধ্যে মারা যায়। আল্লাহই জানেন যে, এ পরীক্ষা কবে শেষ হবে! আপনারা ‘ফেনাইল ইনফেতলীনের’ একটা বড় বাক্স নিয়ে আসবেন; যার মূল্য প্রায় বিশ টাকা হবে। আর, আপনাদের বাড়িতেও ফেনাইল পাঠাবেন। (মুহাম্মদ আলী কাদিয়ানীর নিকট পত্র, যা ‘মাকতুবাতে আহমদিয়ার অন্তর্ভুক্ত ৫ম খন্ড ১১২ও ১১৩ পৃ:।) শুধু তাই নহে বরং প্লেগ তার বাড়িতেও ঢুকছে, হ্যাঁ, তার বাড়িতেই যার সম্পর্কে সে বলে ‘আমার বাড়ী নূহ আলাইহিস সালাম এর নৌকার মত; যে এখানে প্রবেশ করবে সে সকল বিপদাপদ হতে রক্ষা পাবে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘সফিনায়ে নূহ’ ৭৬ পৃ:।) ঠিক এ বাড়িতেই প্লেগ প্রবেশ করে এবং যা ঘটবার তা ঘটিয়েছে; ভন্ডনবী কাদিয়ানী উপরোক্ত ব্যক্তির নিকট লিখিত তার অপর এক পত্রে তা স্বীকার করেছে। এতে সে লিখেছে ‘আমাদের পরিবারেই প্লেগ রোগ দেখা দিয়েছে, এতে গাওছানুল কবীরা নাম্নি মহিলা আক্রান্ত হয়েছে। আমরা তাকে ঘর থকে বের করে দিয়েছি। এমনিভাবে উস্তাদ মুহাম্মদ দ্বীনও আক্রান্ত হয়েছেন, আমরা তাকেও বের করে দিয়েছি। আজ অন্য একজন মহিলা আক্রান্ত হয়েছে, যে দিল্লি হতে এসেছিল এবং আমাদের বাড়িতে অবস্থান করছিল..। আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি। এমন কি আমি ধারণা করতে থাকি যে, আমার ও মৃত্যুর মধ্যে মাত্র কয়েক সেকেন্ড আছে।’ (মুহাম্মদ আলীর নামে গোলামের পত্র, যা ‘মাকতুবাতে আহমদিয়ার অন্তর্ভুক্ত, ৫ম খন্ড, ১১৫ পৃ:)

এই হল কাদিয়ানে প্লেগ রোগ প্রবেশ না করা সম্পর্কে গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণী; যার সম্বন্ধে সে বলত যে, ‘এতে জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে। এই হল বাস্তব সত্য এবং মূলত: এতেই রয়েছে জাতির জন্য তার মিথ্যা ও আল্লাহ তাআলার প্রতি তার মিথ্যাচারের নিদর্শন।

নবম ভবিষ্যদ্বাণী:

মঞ্জুর মুহাম্মদ নামে গোলামের একজন মুরিদ ছিল। তার স্ত্রী গর্ভবতী হলে সে গোলাম আহমদের কাছে এসে সংবাদ দিল। তখন ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী তার অভ্যাস অনুসারে উঠে দাঁড়াল এবং ভবিষ্যদ্বাণীরুপে ঘোষণা দিল ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, মঞ্জুর মুহাম্মদের একটি ছেলে জন্ম গ্রহণ করবে। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম তার নাম কি হবে? তখন স্বপ্নের অবস্থা ইলহামের অবস্থায় পরিণত হয়ে গেল এবং উত্তরে বলা হল- ‘বশিরুদ্দৌলা’। কিন্তু বুঝতে পারছি না যে, মঞ্জুর মুহাম্মদ দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে? (গোলামের ইলহাম যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘রিভিই’ এর অন্তর্ভুক্ত, ১৯০৬ সনের মার্চ মাসে প্রকাশিত, ১২২ পৃ:।) একথা স্পষ্ট যে, মঞ্জুর মুহাম্মদ দ্বারা ঐ ব্যক্তিই উদ্দেশ্য যে এসে তার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার সংবাদ দিয়েছিল। কিন্তু একে অস্পষ্ট রাখার উদ্দেশ্য হল নির্দিষ্ট করে না বলা। বিশেষ করে ভবিষ্যদ্বাণী সমূহের মধ্যে উল্লেখিত দুটি বিষয়ের স্বাদ গ্রহণ করার পর সে অস্পষ্ট রাখতে চায়। এর তাৎপর্য হল এই যে, যদি তার ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, তবে তাকে বলা হবে: তুমিই উদ্দেশ্য ছিলে। আর যদি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, তবে তাকে একথা বলতে সহজ হবে যে, অন্য ব্যক্তি উদ্দেশ্য ছিল; স্বয়ং ইলহামে এর স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই। তারা ষড়যন্ত্র করল এবং আল্লাহ ও ব্যবস্থা নিলেন। আর, আল্লাহ সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ কারী। তাই আল্লাহ পুনরায় তাকে লাঞ্ছিত করতে ইচ্ছা করলেন। মাত্র চার মাস পর এ মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী ঘোষণা দিল,- ‘আমার বিশ্বাস যে, মঞ্জুর মুহাম্মদ দ্বারা এ ব্যক্তিই উদ্দেশ্য, এবং তার স্ত্রী মুহাম্মদী বেগমের গর্ভে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে। (এ মুহাম্মদী বেগম পূর্বোল্লিখিত মুহাম্মদী বেগম নহে) তার নাম হবে বশিরুদ্দৌলা। কিন্তু বুঝতে পারছি না যে, মঞ্জুর আহমদ দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে? (গোলামের ইলহাম যা কাদিয়ানী পত্রিকা রিভিউ এর অন্তর্ভুক্ত, ১৯০৬ সনের মার্চ মাসে প্রকাশিত, ১২২ পৃ:।) একথা স্পষ্ট যে, মঞ্জুর মুহাম্মদ দ্বারা ঐ ব্যক্তিই উদ্দেশ্য যে এসে তার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার সংবাদ দিয়েছিল। কিন্তু একে অস্পষ্ট রাখার উদ্দেশ্য হল নির্দিষ্ট করে না বলা। বিশেষ করে ভবিষ্যদ্বাণী সমূহের মধ্যে উল্লেখিত দুটি বিষয়ের স্বাদ গ্রহণ করার পর সে অস্পষ্ট রাখতে চায়। এর তাৎপর্য হল এই যে, যদি তার ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, তবে তাকে বলা হবে: তুমিই উদ্দেশ্য ছিলে । আর যদি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, তবে তাকে একথা বলতে সহজ হবে যে, অন্য ব্যক্তি উদ্দেশ্য ছিল; স্বয়ং ইলহামে এর স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই। তারা ষড়যন্ত্র করল এবং আল্লাহ ও ব্যবস্থা নিলেন। আর, আল্লাহ সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণকারী। তাই আল্লাহ পুনরায় তাকে লাঞ্ছিত করতে ইচ্ছা করলেন। মাত্র চার মাস পর এ মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী ঘোষণা দিল,- ‘আমার বিশ্বাস যে, মঞ্জুর মুহাম্মদ দ্বারা এ ব্যক্তিই উদ্দেশ্য, এবং তার স্ত্রী মুহাম্মদী বেগমের গর্ভে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে। (এ মুহাম্মদী বেগম পূর্বোল্লিখিত মুহাম্মদী বেগম নহে) তার নাম হবে বশিরুদ্দৌলা। এটাও সম্ভব যে, উক্ত সন্তান এ গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণ করবে না বরং পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম লাভ করবে। কিন্তু তার জন্ম গ্রহণ করা অপরিহার্য। কেননা, সে আল্লাহর নিদর্শন।’ (গোলামের ইলহাম যা ‘রিভিউ অব রিলিজিউন্স’ এর অন্তর্ভুক্ত জুন ১৯০৬ খৃ:।) তার পূর্ববর্তী তিক্ত অভিজ্ঞাতার কারণে এ ভবিষ্যদ্বাণীতে সে তার আত্মরক্ষার পথ রেখেছে। এজন্য বলেছে: আমি জানি না, উক্ত সন্তানটি এ গর্ভ হতে জন্ম গ্রহণ করবে অথবা পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণ করবে।’ এ সকল সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও সে একটি বিষয় জোর দিয়ে বলেছে, তা হল মুহাম্মদী বেগমের গর্ভে মঞ্জুর মুহাম্মদের একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে। তাই সে বলেছে: মঞ্জুর মুহাম্মদের স্ত্রী উক্ত সন্তান জন্ম দান এবং এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করবে না।’ (গোলামের মূল বক্তব্য, যা রিভিউ এর অন্তর্ভুক্ত, জুন ১৯০৭ খৃ:।) ঘটল কি? ১৯০৬ সালের জুলাই মাসে মঞ্জুর মুহাম্মদের স্ত্রী একটি কন্যা সন্তান প্রসব করল। তারপর সেই মহিলা আর কোন গর্ভ ধারণ না করে মৃত্যু বরণ করে। কাদিয়ানীরা এই বলে বশিরুদ্দৌলার অপেক্ষায় রইল যে, আল্লাহ জানেন, কখন এবং কেমন করে এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হবে। কেননা, জনাবে মুকাদ্দাস (গোলাম) মুহাম্মদী বেগমের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হওয়ার সংবাদ দিয়েছেন। আর, বেচারি তো মৃত্যুবরণ করেছে।’ হায় আফসোস! (গোলামের ইলহামাতের সমষ্টি মঞ্জুর কাদিয়ানী কর্তৃক রচিত ‘আল-বুশরার’ অন্তর্ভুক্ত, ২য় খন্ড, ১১৬ পৃ:।)

দশম ভবিষ্যদ্বাণী:

একদা ভন্ডনবী কাদিয়ানীর সাথে ডা: আব্দুল হাকীম নামী একজন মুসলমানের ঝগড়া বাঁধলে তিনি তাকে মিথ্যাবাদী বলে চ্যালেঞ্জ করলেন এবং তাকে মাঠে নামার জন্য আহবান জানালেন। কিন্তু গোলাম আহমদ তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার পরিবর্তে তাকে শাস্তি, বিপদ, অভিশাপ ও ধ্বংসের হুমকি দিতে লাগল এবং তার স্বভাব অনুযায়ী ঘোষণা দিল- আব্দুল হাকীম আমার জীবদ্দশায় মারা যাবে, কেননা, সে আমার মানহানি ও দুর্নাম করছে। এরূপ ব্যক্তি বেঁচে থাকে না ... এবং.... এবং; কিন্তু ডাঃ আব্দুল হাকীম অন্য ধরনের লোক ছিলেন তাই তিনিও ঘোষণা দিলেন- ‘ভন্ডনবী কাদিয়ানী আজ থেকে পনেরো মাসের মধ্যে মারা যাবে।’ আর এ ঘোষণাটি ছিল ১৯০৭ সালের ৪ঠা মে তারিখে। এখন এ সম্পর্কে ভন্ডনবী কাদিয়ানীর নিজ মুখের বক্তব্য আমাদের শুনা উচিত। সে লিখেছে- ‘এখন আর এক শত্রু বের হয়েছে- পাটিয়ালার (ভারতের একটি শহর) অধিবাসী ডাঃ আব্দুল হাকীম। সে দাবি করছে যে, আমি তার জীবিতাবস্থায় ১৯০৮ সালের ৪ঠা আগস্টের মধ্যে মারা যাব। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে এর বিপরীত সংবাদ দিয়েছেন, সে আল্লাহর আজাবে আক্রান্ত হবে এবং আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেবেন। পক্ষান্তরে, আমি তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকব। এ ব্যাপারটি আল্লাহর হাতে ন্যস্ত। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর দৃষ্টিতে সত্য, আল্লাহ তাকেই সাহায্য করবেন।’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আইনুল মা‘রেফত, ৩২১ ও ৩২২ পৃ:, ১৯০৮ সালের ২০মে তারিখে প্রচারিত।) সে আরো বলেছে: ‘শত্রু আব্দুল হাকীম যে আমার মৃত্যু কামনা করে , সে অচিরেই আমার চক্ষুর সামনে সমূলে ধ্বংস হবে, যেভাবে হাতিওয়ালাদেরকে সমূলে ধ্বংস করা হয়েছিল’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘তাবসেরাহ’)এ ভবিষ্যদ্বাণীর ভিত্তিতে সে আরো একটি ভবিষ্যদ্বাণী করল- ‘শত্রুরা আমার মৃত্যু কামনা করে এবং এ ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণীও করে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে আমি আশি বছর বা এরও অধিক কাল বেঁচে থাকব। (গোলামের ‘মাওয়া হিবুর রহমান’ ২১ পৃ:।) সে জোর দিয়ে বলেছে যে, সে ১৯০৮ সালের ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। বরং এরপর আরো দশ বছর সে বেঁচে থাকবে। এটা জানা কথা যে, সে ১৮৩৯ অথবা ১৮৪০ সনে জন্ম গ্রহণ করেছে। সে নিজেই করেছে- আমি ১৮৩৯ বা ১৮৪০ সালে জন্ম গ্রহণ করেছি’ (গোলামের ‘কিতাবুল বারিয়্যাহ’ এর টিকা, ১৪৬ পৃ: এবং কাদিয়ানী পত্রিকা ‘বদর’ ৮ আগস্ট ১৯০৪ খৃ:।) এবং (হায়াতুন নবী প্রথম খন্ড, ৪৯ পৃ: ও কাদিয়ানীদের অন্যান্য পুস্তক) সে আরো লিখেছে- ‘১৮৫৭ সালে আমার বয়স ষোলো বা সতের বছর ছিল। (গোলামের ‘কিতাবুল বারিয়্যর’ টিকা ১৪৬ পৃ:।) এমনিভাবে সে এ ভবিষ্যদ্বাণীতে তিনটি ভবিষ্যদ্বাণী একত্রিত করল। (১) ভন্ডনবী গোলাম আহমদের জীবিতাবস্থায় আব্দুল হকীম মৃত্যুবরণ করবে। (২) আব্দুল হাকীম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে সে অনুসারে ১৯০৮ সালের ৪ঠা আগস্টের মধ্যে সে মৃত্যুবরণ করবে না। (৩) সে কমপক্ষে ১৯১৯ বা ১৯২০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে। এখন আমরা দেখব তার এ সকল ভবিষ্যদ্বাণী কি বাস্তবায়িত হয়েছে? অথচ গোলাম বলেছে নবীগণের ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হওয়া অসম্ভব। (গোলামের ‘সফিনায়ে নূহ’ ৫ম পৃ:) সে আরো বলেছে- আমার সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য আমার ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ হতে উত্তম আর কিছু নেই। (গোলামের ‘মেরাতুল কামালাত’ ২৮৮ পৃ:।)

হে পাঠক! হে অনুসন্ধানী! বিবরণ লক্ষ্য করুন! মুহাম্মদ হুসেন কাদিয়ানী লিখেছে, ‘আমাদের ইমাম মাসীহ মাওউদ (গোলাম) ২৫মে পর্যন্ত সুস্থ ছিলেন এবং কাদিয়ানী পত্রিকা ‘পয়গামে সুলহ’ এর উদ্দেশ্যে একটি প্রবন্ধ লিখান; কিন্তু মাগরিবের পর অসুস্থ হয়ে পড়লেন.... এবং ১৯০৮ সালের ২৬শে মে সকাল সাড়ে দশ ঘটিকায় তার রুহ তার সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যায়।’ (মুহাম্মদ হুসাইন কাদিয়ানীর প্রবন্ধ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল

হিকমের’ অন্তর্ভুক্ত, ২৮ মে ১৯০৮ সাল।) গোলাম পুত্র বশীর আহমদ কাদিয়ানী লিখেছে- ‘মসীহে মাওউদ ১৯০৮ সালের ২৫মে পর্যন্ত সুস্থ ও উৎফুল্ল ছিলেন। কিন্তু এশার পর আকস্মিক ভাবে আমাদের কাছে তার মৃত্যুমুখী শয্যাশায়ী হওয়ার সংবাদ পৌঁছোল এবং ২৬ মে ১৯০৮ সালে তিনি মারা গেলেন।’ (গোলাম পুত্র বশীর আহমদের ‘সীরাতে মাহদী’ ৭পৃঃ) এভাবে মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী গোলাম আহমদ এ তিনটি ভবিষ্যদ্বাণীতে একই সময় তিনটি মিথ্যাকথা বলেছে। প্রথমত: ডা: আব্দুল হাকীম কর্তৃক নির্ধারিত সময়েই সে মৃত্যুবরণ করেছে। এতে এটাই প্রমাণিত হল যে, ডাঃ আঃ হাকীম সত্য এবং সে মিথ্যা। কেননা, সে ইতিপূর্বে বলেছে- ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে সাহায্য করেন যে তার দৃষ্টিতে সত্যবাদী। দ্বিতীয়ত: তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তার জীবদ্দশায় আব্দুল হাকিম মৃত্যুবরণ করেন নি । বরং তার মৃত্যুর পরও তিনি দীর্ঘ দিন বেঁচে ছিলেন। তৃতীয়ত: সে আটষট্টি অথবা উনসত্তুর বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে, তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আশি ও তদুর্ধ বৎসর বয়সে নহে। এ বিষয়ে আমি তার সম্পর্কে তা-ই বলব যা সে নিজে বলেছে: যে ব্যক্তি নবুয়তের দাবিকরে, তার ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত না হওয়া তার জন্য বড়ই লাঞ্ছনা ও অপমান জনক।’ (গোলামের ‘তিরয়াকুল কুলুব’ ১০৭ পৃ: এডিশন এক এবং ২৬৮ পৃ: এডিশন ২।) এই কথাটি সে সত্য বলেছে, যদিও অপরাপর অনেক বিষয়ে সে সত্য বলেনি। এ লাঞ্ছনার চেয়ে বড় লাঞ্ছনা এবং অপমানের চেয়ে অপমান আর কি হতে পারে? সে ২০ মে একটি পুস্তক প্রচার করে। যাতে সে তার শত্রুর মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ করে এবং মাত্র ছয়দিন পর সে তার শত্রুর পরিবর্তে নিজেই অত্যন্ত লাঞ্ছিত ও মিথ্যুক সেজে মৃত্যুবরণ করে। এমনি ভাবে সে আরো কতই না মিথ্যা বলেছে। তার অনেক অনেক ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে মাত্র দশটি আমরা এখানে উল্লেখ করেছি, যাতে সে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তার দশম ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে একই সময়ে তিনটি ভবিষ্যদ্বাণী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, আমি তা ইতিপূর্বে ব্যক্তি করেছি। এতটুকু বর্ণনা কে আমরা যথেষ্ট মনে করি। যদি আমরা তার মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী সমূহকে ধারাবাহিক বর্ণনা করি তাহলে বড় একটি ভলিউমে উহা সংকুলান করা যাবে না কেননা, এতটুকু বর্ণনাই এ লোকটি এবং তার দ্বাবী দাওয়ার বাস্তব রূপ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদানে যথেষ্ট। সে নিজেই বলেছে: ‘যদি কেহ একটি বিষয়ে মিথ্যা প্রমাণিত হয় তবে অন্যান্য বিষয়ে তার উপর বিশ্বাস রাখা যায় না’। (গোলামের ‘আইনুল মারেফাত’ ২২২ পৃ:।) অতএব দু’ একটি বিষয়ে নয়, বরং বারটি ভবিষ্যদ্বাণী বা ঘটনাতে আমরা তার মিথ্যাচারিতা প্রমাণ করেছি।

এ আলোচনার পরিশিষ্টে আমরা কাদিয়ানীদের দাবিদাওয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে চাই। ওদের বাদী- ‘যদিও আমাদের সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী সত্য ও বাস্তবায়িত হয়নি, তথাপি কিছুটা হলেও বাস্তবায়িত হয়েছে।’ ভন্ডনবী কাদিয়ানীর উক্তি যা আমারা এই মাত্র উল্লেখ করেছি, উহার প্রতি দৃষ্টিপাত না করেই বলছি- ‘কোন কোন ভবিষ্যদ্বাণী সত্য ও বাস্তবায়িত হওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যদ্বাণীর ঘোষণাকারী আল্লাহর পক্ষ থেকে বলেনি। কেননা, সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহ কখনও সত্য বলেন এবং কখনও সত্য বলেন না- তা অসম্ভব। বরং তাঁর বাণী সর্বদাই সত্য, এর ব্যতিক্রম সম্ভব নহে। এ ভন্ডনবী যত কথাই বলেছে সবই তার আন্দাজ ও অনুমান দ্বারা বলেছে। কখনও উহা বাস্তবায়িত হয় এবং কখনও উহার ব্যতিক্রম হয়; যেমন জ্যোতিষী ও অনুমানকারীরা কথা বলে থাকে। আর জ্যোতিষীও অনুমানকারীদেরকে নবী ও এলহামের অধিকারী বলা হয় না।

দ্বিতীয়ত: যে সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে কাদিয়ানীরা ঢোল পিটায় এবং বার বার প্রচার করে যে, এটা গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছে; তার দুটি অবস্থা রয়েছে:

একটি হল: গোলাম আহমদ আদৌ এ ভবিষ্যদ্বাণী করেনি, বরং এটা সংঘটিত হওয়ার পর সে নিজে অথবা অন্যরা একে তার সাথে সম্পৃক্ত করেছে। এরূপ ঘটনা অনেক যা পরে আমাদের বর্ণনায় আসছে।

দ্বিতীয়টি হল: এর উপর ভবিষ্যদ্বাণীর সংজ্ঞা প্রযোজ্য হয় না। প্রথমটির উদাহরণ- পন্ডিত দয়ানন্দ নামে জনৈক হিন্দু ব্যক্তি ভন্ডনবী গোলাম আহমদের বিরোধী ছিল। সে স্বাভাবিক ভাবেই মারা গেল। তখন ভন্ডনবী কাদিয়ানী এর সুযোগ গ্রহণ করতে চাইল এবং সে ঘোষণা দিল ‘আমি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম যে, আমার বিরুদ্ধবাদী পন্ডিত দয়ানন্দ অচিরেই মারা যাবে, এবং তখন সে মারা গেল। এ ভবিষ্যদ্বাণীর উপর শরম বাট নামক একজন হিন্দু সাক্ষী আছে। (আহমদিয়া পকেট বুক) কাদিয়ানীর এ ঘোষণা শুনার সাথে সাথে ‘শরমবাট’ যাকে কাদিয়ানী স্বাক্ষীরূপে গ্রহণ করেছিল ঘোষণা দিল- গোলাম আহমদ মিথ্যুক দাজ্জাল। আমি কখনও তার থেকে এ ভবিষ্যদ্বাণী শুনিনি। (পন্ডিত লক্ষীরামের ‘কুল্লিয়াত’ এবং তাকজীবে বারাহীনে আহমদিয়া’।) অর্ধ শতাব্দীরও অধিককাল অতিবাহিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোন কাদিয়ানী গোলাম আহমদের কোন বই পুস্তক থেকে এটা প্রমাণ করতে পারেনি যে উল্লেখিত পন্ডিত দয়ানন্দের মৃত্যুর পূর্বে গোলাম আহমদ এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। এমনিভাবে আব্দুল লতীফ ও আব্দুর রহমান নামে কাদিয়ানী দু’ব্যক্তি আফগানিস্তানে ইংরেজের গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে নিহত হল। যখন এ সংবাদ ভন্ডনবী কাদিয়ানীর নিকট পৌঁছোল তখন সে ঘোষণা

দিল। ‘ইতিপূর্বে সে তার পুস্তক বারাহীনে আহমদিয়া ৫১১ পৃষ্ঠায় এ দু’ব্যক্তির নিহত হওয়া সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং তার ইলহাম ‘‘দু’বকরী জবাই করা হয়েছে।’’ এর প্রতি ইঙ্গিত করেছে। (গোলামের তাজকেরাতুশ শাহাদাতাইন) আর, সে বলেছে এ দু’বকরী দ্বারা এ দু’নিহত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। (উল্লেখিত কিতাব।)

এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা। কেননা, গোলাম এত-দু-ভয়ের হত্যাকান্ডের পূর্বে উক্ত ইলহামের এ মর্মে কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। এ কারণেই গোলামের কথিত ইলহাম (দু বকরীর জবাই) দ্বারা তার ভবিষ্যদ্বণীর উপর কাদিয়ানীদের প্রমাণ পেশ করা ভ্রান্ত ও বাতিল। এর চেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল এই যে, ইতিপূর্বে গোলাম আহমদ নিজেই ভিন্ন মর্মে এ ইলহামের ব্যাখ্যা দিয়েছে। এখন তার মূল ভাষ্যের প্রতি লক্ষ্য করুন। ভন্ডনবী কাদিয়ানী বলে: ‘‘ইলহামে দুই জবেহকৃত বকরী দ্বারা মুহাম্মদী বেগমের স্বামী ও তার পিতাকে বুঝানো হয়েছে। [১ মুহাম্মদী বেগমের স্বামী ও তার পিতার আলোচনা ইতিপূর্বে করা হয়েছে।]

(গোলামের আঞ্জামে আথমের পরিশিষ্ট ৫৭ পৃ:।) তার নিজস্ব এ ব্যাখ্যা থেকে ফিরে যাওয়া প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নহে। এতে লোকটির সুযোগ সন্ধানী ও বহুরূপী হওয়ার একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। কাদিয়ানীরা প্রতারণা মূলক ভাবে যে সমস্ত বিষয়কে তার সাথে সম্পৃক্ত করেছে, তার অপর একটি উদাহরণ হল: তাদের উক্তি ‘‘উস্তাদ মুহাম্মদ ফয়জী, জনাবের (গোলাম) অন্যতম বিরুদ্ধবাদী ছিলেন। জনাব তার মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করলেন। জনাবের এ ভবিষ্যদ্বাণী ‘মাওয়াহিবুর রহমান নামক তার পুস্তকে বিদ্যমান আছে। (আহমদিয়া পকেট বুক।) এটা জঘন্য মিথ্যা ও সুস্পষ্ট প্রতারণা। কেননা, যারা কাদিয়ানী মতবাদের সহিত সম্পৃক্ত তাদের সবাইকে আমরা মাওয়াহিবুর রহমানের প্রথম সংস্করণ থেকে এ ভবিষ্যদ্বাণীটিকে প্রমাণ করতে চ্যালেঞ্জ করেছি। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অদ্যাবধি কেহ জন্ম গ্রহণ করেনি। এমনি ভাবে আরো অনেক উদাহরণ আছে। কোন ঘটনা ঘটলেই গোলাম আহমদ বলত, আমি এটা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই এ সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছি। তার এ পদ্ধতিতে কাদিয়ানীরা তার মৃত্যুর পর তার সাথে এমন সব বিষয় সম্পৃক্ত করে যা সে আদৌ বলেনি বা কখনও তার কল্পনাতে আসেনি।

দ্বিতীয় প্রকার ভবিষ্যদ্বাণীর উদাহরণ সমূহ অর্থাৎ এমন ঘটনাবলীর সংবাদ দেওয়া যার উপর ভবিষ্যদ্বাণীর সংজ্ঞা প্রয়োগ হয় না, তাও অনেক। এখানে আমরা এর কিছুটা বর্ণনা পেশ করব। গোলাম আহমদ ভবিষ্যদ্বাণী করল- ‘আমার বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে ‘দুই’ নামক এক ব্যক্তি সে আমার সাথে মোবাহালা (পারস্পরিক লা’নত করা) করুক বা নাই করুক সে মারা যাবে। (খাদেম কাদিয়ানীর আহমদিয়া পকেট বুক ৩৮৪ পৃ:) অনন্তর কাদিয়ানীরা বলে ‘প্রকৃত পক্ষে ‘দুই’ গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে মৃত্যু বরণ করেছে। (উল্লেখিত কিতাব) এটা ও কি একটা ভবিষ্যদ্বাণী? যদি এটা ভবিষ্যদ্বাণী হয়ে থাকে তা হলে প্রত্যেকের পক্ষে এ জাতীয় ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। কেননা, গোলাম আহমদ এ ব্যক্তির মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করেনি, বরং সে শুধু এ কথা বলেছে দুই মৃত্যুবরণ করবে। কেহ কি চিরকাল বেঁচে থাকবে? ‘‘এ পৃথিবীতে যারাই আছেন সকলই ধ্বংস প্রাপ্ত হবেন এবং একমত আপনার প্রভু যিনি মহান ও মহত্ত্বের অধিকারী তিনিই অবশিষ্ট থাকবেন’’। [২ সুরা আর রহমান ২৬ -২৭]

প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। [১ সুরা আলে ইমরান ১৮৬ এবং সুরা আল- আম্বিয়া-৩৫]

চাই গোলাম আহমদ বলুক আর নাই বলুক। কাদিয়ানীরা কি এ ধারণা পোষণ করে যে, যদি গোলাম আহমদ ভবিষ্যদ্বাণী না করত তবে দুই কখনও মৃত্যু বরণ করত না? অন্যথায় আর কি হতে পারে? যার সামান্যতম বুদ্ধি আছে, তার পক্ষে একথা বলা সম্ভব নহে যে এটা একটা ভবিষ্যদ্বাণী। গোলাম আহমদ নিজেই একথা স্বীকার করে আসছে ‘যে বিষয়ে অস্বাভাবিক কিছু নেই তা ভবিষ্যদ্বাণী হতে পারে না’। (গোলামের তিরিয়াকুল কুলুব ১১৫১ পৃ:) তবে ,দুই এর মৃত্যুর মধ্যে অস্বাভাবিক কি আছে? যে কেহই জন্ম গ্রহণ করবে সে মৃত্যুবরণ করবে। গোলাম আহমদ মরেছে, তার সাথীগণ তার প্রথম খলীফা দ্বিতীয় খলিফা, তার ছেলে পেলে, তার বন্ধু বান্ধব, তার স্ত্রী-গণ ও আত্মীয় স্বজন সকলই মৃত্যুবরণ করেছে। হ্যাঁ, যদি ভবিষ্যদ্বাণীতে তার মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ থাকত তা হলে তা যুক্তি সংগত হত, গোলাম আহমদের অধিকাংশ ভবিষ্যদ্বাণী এ পর্যায়েরু অমুক মৃত্যুবরণ করেছে, কেননা, আমি বলেছিলাম যে সে মৃত্যুবরণ করবে। এই প্রকার ভবিষ্যদ্বাণীর দ্বিতীয় উদাহরণ হল: তারা যাকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করে যে, গোলাম আহমদ ভূমিকম্প ও প্লেগ দেখা দেওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। এ দুটি ব্যাপক আকারে সংঘটিত হয়েছে। আমরা তার মূল বক্তব্য ও উহা বাতিল হওয়ার কথা উল্লেখ করার পূর্বে এদিকে ইঙ্গিত করা সমীচীন মনে করছি যে, ভূমিকম্প ও প্লেগের সংবাদ প্রদানকে ভবিষ্যদ্বণী বলা যায় না এবং এর উপর ভবিষ্যদ্বাণীর সংজ্ঞাও প্রযোজ্য হয় না। এমন কি, গোলাম আহমদের নিকটেও নহে। যেমন, আমরা প্রথম প্রবন্ধে উল্লেখ করেছি। আমরা গোলাম আহমদের আরো কিছু স্পষ্ট বক্তব্য বর্ণনা করব, যা পূর্বে উল্লেখ করিনি। ভন্ডনবী কাদিয়ানী ভবিষ্যদ্বাণী সমূহের উল্লেখ করে বলে: আমি সমস্ত বিষয়ের ভবিষ্যদাণী করেছি, তা আল্লাহর কুদরত ও তার ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত। ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ বিগ্রহ ও বিপদাপদ সম্পর্কে জ্যোতিষীদের সংবাদ প্রদানের মত আমার ভবিষ্যদ্বাণী নহে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ ২৫৫ পৃ:) সে লিখেছে: ভবিষ্যদ্বাণী সমূহের উদ্দেশ্য হল দলীল প্রমাণের মুখাপেক্ষী থাকে তবে এ ভবিষ্যদ্বাণীর ফল কি? এ জন্যই ভবিষ্যদ্বাণীর স্পষ্ট ও প্রকাশ্য হওয়া উচিত, যাতে বিশ্ববাসী সরাসরি তা চাক্ষুষ দেখতে পায়। (গোলামের তুহফায়ে কুলরা ১২১ ও ১২২ পৃ:) সে আরো বলেছে- ‘ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি এভাবে দৃষ্টিপাত করতে হবে যে এতে কি এমন কোন অস্বাভাবিক কিছু আছে যা মানুষের নাগালের বাহিরে অথবা এতে কি এমন কিছু আছে যার সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তি জ্যোতির্বিদ্যা বা ভূতথ্যবিদ্যার সাহায্যে সংবাদ দিতে পারে? প্রথমটি হবে ভবিষ্যদ্বাণী এবং দ্বিতীয়টি হবে বিজ্ঞান।’’ (গোলামের ‘তিরিয়াকুল কুলুব’ ১৫৫ পৃ:) ইঞ্জিলের মধ্যে হজরত ঈসা আঃ. এর সম্পর্কে সংবাদ দেওয়ার উপর মন্তব্য করতে গিয়ে সে বলে, ভূমিকম্প. যুদ্ধ বিগ্রহ মৃত্যু এবং দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়াকে ভবিষ্যদ্বাণী বলা যায় না, (গোলামের এজালাতুল আওহাম, ৭ম পৃ:) তার প্রথম খলীফা ও কাদিয়ানীদের বিশিষ্ট নেতা নূরুদ্দীন লিখেছে যে দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, বিপদাপদ প্রভৃতি প্রাকৃতিক বস্ত্ত, এগুলো সম্পর্কে নির্দিষ্ট সময় করে সংবাদ না দিলে তাকে ভবিষ্যদ্বাণী বলা যায় না।’ নূরুদ্দীনের ‘ফসলুল খেতাব’ প্রবন্ধের প্রারম্ভে গোলামের যে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা আমরা উল্লেখ করছিলাম, পুনরায় উহা উল্লেখ করছি, যাতে আমরা উহাকে আলোচকের বুঝার সুবিধার্থে এই বক্তব্যের সাথে মিলিত করতে পারি। ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী মহান আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম কে বিদ্রূপ করে বলেছে, এই নিঃসহায় ব্যক্তি ঈসার আলাইহিস সালাম ভবিষ্যদ্বাণী কি ছিল? ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ বিগ্রহ সংঘটিত হবে...। জানি না, এ সমস্ত বিষয়ের সংবাদ দেওয়াকে ভবিষ্যদ্বাণী ও অদৃশ্যের সংবাদ কেন নামকরণ করা হল! আদি হতে কি ভূমিকম্প সংঘটিত হয় নি? পূর্ব থেকেই কি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় নি? বিশ্বের কোন না কোন অঞ্চলে কি অহরহ যুদ্ধ চলছে না? তবে এ নির্বোধ ইসরাঈলী ব্যক্তি ঈসা আলাইহিস সালাম (নাউজুবিল্লাহ) কেন এ বিষয়গুলোর সংবাদ দেওয়াকে ভবিষ্যদ্বাণী নাম দিয়েছে। (গোলামের আঞ্জামে আথম’ এর টীকা, ৪পৃঃ) এসব সত্ত্বেও জানি না কাদিয়ানীরা কোন সাহসে এ উক্তি করে যে, গোলাম আহমদ তার পুস্তক ‘হাকীকতুল ওহী’ ২২০ পৃষ্ঠায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং বাস্তবিকই তার ভবিষ্যদানি অনুসারে প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছে।’ তারা আরো বলে- ‘তিনি তার পুস্তক সিররুল খেলাফতের ৬২ পৃষ্ঠায় তার বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার বদ-দোয়া করেছিলেন এবং বাস্তবিকই তা সংঘটিত হয়েছে।’ (আহমদিয়া পকেট বুক)

এর চেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল, উপরোল্লিখিত কথাগুলো বলার পর গোলাম আহমদ নিজে কীভাবে এটা বলার দুঃসাহস করে- ‘‘আল্লাহ আমাকে অবহিত করেছেন যে, কিয়ামত সাদৃশ্য একটি কঠিন ভূমিকম্প সংঘটিত হবে....। এ ভবিষ্যদ্বাণীর পর সতর্কতা অবলম্বন করা এবং একে ভয় করা উচিত। এ ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে আমি ঘরে বসবাস ছেড়ে দিয়েছি এবং তাবু ক্রয় করেছি। আমি উহাতে বসবাস করছি এবং হাজার টাকার মত তাতে ব্যায় করেছি। যে ব্যক্তি এ ভবিষ্যদ্বাণী সংঘটিত হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস রাখে সে ছাড়া আর কে এমন কাজ করবে এবং এ পরিমাণ টাকা ব্যায় করবে?’’ (গোলাম আহমদের ১৯০৫ খৃ: ১১ই মে তারিখে ঘোষিত ভবিষ্যদ্বাণীর উপর প্রযোজ্য? এ ভবিষ্যদ্বাণী এবং ইতিপূর্বে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী কি হুবহু ঈসার আলাইহিস সালাম ভবিষ্যদ্বাণীর মত নহে? অতএব সে স্বয়ং যা করেছে, অনুরূপ আক্রমণ করল কেন? তার এ উক্তিটি অসত্য মিথ্যাবাদীর কথা পরস্পর বিরোধী হওয়া থেকে মুক্ত হতে পারে না।’’ (গোলামের ‘বারাহীনে আহমদিয়ার’ পরিশিষ্ট ৫ম খন্ড ১১২ পৃ:।) সারকথা, এসব সংবাদের উপর ভবিষ্যদ্বাণীর সংজ্ঞা প্রযোজ্য হয় না এবং এগুলোকে ভবিষ্যদ্বাণী নাম দেওয়া মুর্খতা ও প্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছু নহে। এ সত্ত্বেও আমরা এ সকল সংবাদের আরো কিছু বিষয়াদির আলোচনা করব। প্রথমত: আমরা পেলগের সংবাদটি উল্লেখ করছি। কাদিয়ানীরা বলে-গোলাম আহমদ তার হাকীকাতুল ওহী নামক পুস্তকে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। বাস্তবে তার ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে প্লেগ দেখা দিয়েছে। ( আহমদিয়া পকেট বুক )

আমরা বলি গোলাম আহমদ প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার পূর্বে আদৌ এ সংবাদ দেয়নি, বরং দেশের কোন কোন অঞ্চলে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর এ সংবাদ দিয়েছে। সে নিজেও তা স্বীকার করেছে-‘‘ আমার নবুওয়তের একটি নিদর্শন হল-, আমি পাঞ্জাবে ( জেলা ) প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছি, অথচ তখন পাঞ্জাবের একটি এলাকা ছাড়া আর কোথাও প্লেগ বিদ্যমান ছিল না...। বর্তমানে পাঞ্জাবের সকল এলাকায়ই প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছে।(গোলাম আহমদের হাকীকাতুল ওহী ২২০ পৃ ) সে আরও বলছে: আমি প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ দিয়েছি যখন পাঞ্জাবের দুটি এলাকা ছাড়া আর কোথাও প্লেগ বিদ্যমান ছিল না। (মালফুজাতে আহমদিয়া ৬ষ্ঠ খন্ড) । এ ব্যাপারটি বুঝতে সামান্যতম চিন্তারও প্রয়োজন হয় না । কেননা , প্লেগ এবং অনুরূপ মহামারী আকারের রোগ সমূহ (আল্লাহ এরূপ না করুন)

যখন কোন এলাকায় দেখা দেয় তখন উহা স্বভাবত: আশে পাশের এলাকা সমূহে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণীতে নতুনত্ব কি আছে?

দ্বিতীয় বিষয় হল, ভন্ড নবী গোলাম আহমদ দাবি করত- ‘যখন রোগ ছড়িয়ে পড়বে, তখন তার বসতভূমি কাদিয়ানে প্রবেশ করবে না। অথচ প্লেগ শুধু কাদিয়ানেই ছড়িয়ে পড়েনি বরং উহা ঐ বাড়িতেও প্রবেশ করেছে যার সম্পর্কে সে বলত- উহা নূহের আলাইহিস সালাম নৌকার মত।

আমরা তা পূর্বে সূত্র সমূহের দৃঢ় প্রমাণাদি সহ উল্লেখ করেছি।

তৃতীয় বিষয়টি হল, ভন্ডনবী কাদিয়ানী বলেছে, ‘আমি বিরুদ্ধবাদীদের জন্য বদ দোয়া করেছি, যাতে তাদের মধ্যে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ে।’ (গোলামের ছিররুল খিলাফত, ৬২ পৃ:) এর অর্থ এই দাঁড়ায়, যারা কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করবে না এবং গোলাম আহমদের বিরোধিতা করবে প্লেগ শুধু তাদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়বে। অন্যত্র সে এর বিশ্লেষণ করে বলেছে: ‘প্লেগ রোগের শাস্তি শুধু অত্যাচারী ও অপরাধীদের জন্য হয়।’ (গোলামের ‘তাফসীরে খাজিনাতুল ইরফান, ১ম খন্ড ১৩১ পৃ:)

কিন্তু ঘটল কি? এ প্লেগ রোগে অনেক কাদিয়ানী তা স্বীকার করেছে। সে বলেছে: ‘‘আমাদের জামাতের কোন কোন লোক প্লেগ রোগে মারা গিয়েছে।’’ (গোলামের ‘হাকীকতুল ওহী’ ১৩১ পৃ:) শুধু তাই নয়, বরং এই জনাব নিজেও এত ভীত ছিল ‘মাসীহে মাওউদ মহামারির সময়ে এতই সতর্ক ছিলেন যে, যদি বাহির থেকে তার নিকট কোন পত্র আসত এবং তিনি তা স্পর্শ করতেন, তখন সঙ্গে সঙ্গে তার দু’হাত ধুয়ে নিতেন।’ (কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল-ফজল’ ১৯৩৭ সনের ২৮ শে মে তারিখে প্রকাশিত।) তিনি বকরীর গোস্ত ভক্ষণ ছেড়ে দিয়েছিলেন, কেননা, তিনি বলতেন এতে প্লেগের জীবাণু আছে। (গোলাম পুত্র বশীর আহমদের সীরাতে মাহদী ১ম খন্ড ৩৮ পৃ:) কাদিয়ানীদের মধ্যে প্লেগের কঠোরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তিনি আল্লাহর কাছে এই বলে কাকুতি মিনতি করতে লাগলেন- হে আল্লাহ! আমাদের জামাত থেকে এ মহামারী সরিয়ে দিন।’ (কাদিয়ানী পত্রিকা বদর ৪ঠা মে ১৯০৫ খৃ:)

এই হল প্লেগ সংক্রান্ত সংবাদের বাস্তব রূপ, যা কাদিয়ানীরা লোকজনকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। ভূমিকম্প সম্পর্কে তার সংবাদের বিবরণ হল নিম্নরূপ: ১৯০৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল তারিখে ভারত বর্ষে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, যা জমি উল্টে দিয়েছিল এবং লোকজনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বসতবাড়িও দালান কোঠা বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। এবং জান মালের অসংখ্য ও অপরিসীম ক্ষতিসাধন হয়েছিল। এ ভূমিকম্প ‘কাংগুরা ভূমিকম্প’ নামে পরিচিত। [১ কাংগুরা ভারতের একটি শহর। এখানে উল্লেখিত ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। তাই উহার নামানুসারে এ ভূমিকম্পকে ‘কাংগুরা ভূমিকম্প’ বলে।]

অতএব, ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী কাদিয়ানী এ ভূমিকম্পকে তার ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য সুযোগ রূপে গ্রহণ করতে চাইল। কেননা, স্বভাবতই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর অপরাপর ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই সে এ ভূমিকম্পের চারদিন পর ১৯০৫ সালের ৮ই এপ্রিল তারিখে ঘোষণা দিল- ‘আজ রাত তিন ঘটিকার সময় আমার কাছে ওহী এসেছে যে, কিয়ামতের ন্যায় একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে। আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তার নূতন নিদর্শন প্রকাশ করবেন........। এ ভূমিকম্প কখন সংঘটিত হবে? কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ অথবা কয়েক মাস বা কয়েক বৎসর পর হবে তা আমি সঠিকভাবে জানি না’। (গোলামের সতর্ক বাণী, ৮ই এপ্রিল ১৯০৫ সাল, যা ‘তাবলীগে রেসালাতের’ ১০ম খন্ড ৮০ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত।) এটা গোলাম আহমদের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়া সম্পর্কে প্রথম সংবাদ ছিল। সতর্ক বাণীর সাতদিন পর ১৯০৫ সালের ১৫ই এপ্রিল তারিখে দ্বিতীয় সতর্ক বাণী প্রচার করে। তাতে আছে ‘‘অল্প কয়েকদিন পর একটি ভয়ংকর ভূমিকম্প সংঘটিত হবে যা পৃথিবী উল্টিয়ে দেবে এবং জনপদ সমূহকে ধ্বংস করে দেবে, আর মানুষ, গাছ পালা ও পাথর বিনষ্ট করে দেবে। এটা অল্পক্ষণ চলবে, কিন্তু পৃথিবীর গতি পরিবর্তন করে দেবে। এমনকি জিন ও পক্ষীকুলের উপরও ইহার প্রভাব পড়বে’। (গোলামের ‘নুসরতুল হক’ যা ১৯০৫ সালের ১৫ই এপ্রিল তারিখে লিখিত ১৩০ পৃ:) অনেকদিন অতিবাহিত হয়ে গেল, কিন্তু কথিত ভূমিকম্প আর হল না। লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল যে, কখন উহা সংঘটিত হবে? কেননা আপনার সকল ভবিষ্যদ্বাণী ব্যাপক, যার কোন সময় সীমা নেই! সে ইঙ্গিতে উত্তর দিল যে, ইহা অতি নিকটে। আল্লাহ তাআলা আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, কিয়ামত সাদৃশ্য একটি ভয়ংকর ভূমিকম্প সংঘটিত হবে...। এ ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে আমি ঘরে বসবাস ছেড়ে দিয়েছি এবং তাবু ক্রয় করে উহাতে বসবাস আরম্ভ করেছি। (গোলামের ভবিষ্যদ্বাণী যা ১৯০৫ সালের ১১ই মে তারিখে ঘোষিত এবং ‘তবলীগে রেসালাতের ১০ম খন্ড ৯৬ ও ৯৭ পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত।) এ দিন গুলোও অতিবাহিত হল অথচ তার অনুমান ও ধারণা অনুযায়ী ভূমিকম্প সংঘটিত হল না। তার উপর কঠোরভাবে আপত্তি সমূহ উত্থাপিত হতে লাগল। এমনকি, সে ২২শে মে তারিখে আশ্চর্য ধরনের একটি ঘোষণা দিয়ে বলল: আল্লাহর ওহীতে উল্লেখিত ভূমিকম্পের অর্থ বাস্তব ভূমিকম্প হওয়া জরুরি নহে। বরং ভূমিকম্পের অর্থ কঠিন বিপদাপদও হতে পারে। যা হোক, আমার ধারণা যে, ভূমিকম্প তার প্রকৃত অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। এ জন্যেই আমি ঘর ছেড়ে তাবুতে বসবাস করছি। আমার নিকট আরও ইলহাম হয়েছে যে, ভূমিকম্প বসন্তকালে সংঘটিত হবে। (১৯০৫ সালের ২২ শে মে তারিখে গোলাম আহমদের ঘোষণা যা কাদিয়ানী ম্যাগাজিন রিভিউ অব রিলিজিওন্সের’ ৪থ খন্ডের ৩৪৪ পৃ: সন্নিবেশিত।) পুনরায় সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হল। বসন্তকাল আসল ও চলে গেল কিন্তু ভূমিকম্প সংঘটিত হল না, কিয়ামত সাদৃশ্য ভূমিকম্পও হল না, যার প্রভাব জ্বীন ও পক্ষীকুলের উপর পড়বে তার কোনটাই হল না। তারপরও সে চুপ থাকেনি, বরং লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বলল: যে ভূমিকম্প সম্পর্কে আমি সংবাদ দিয়েছি তা আমার দেশে এবং আমার জীবদ্দশায় সংঘটিত অপরিহার্য। যতই তা পিছিয়ে যাক্ না কেন ষোলো বছরের অধিক পিছিয়ে যাবে না। আমার জীবদ্দশায়ই তা সংঘটিত হওয়া অনিবার্য। (গোলামের ‘নুসরতে হক্বের’ পরিশিষ্টের টিকা, ৯৮ পৃ:।)

এরপর কি ঘটল? ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী মৃত্যু বরণ করল, কিন্তু ভূমিকম্প সংঘটিত হল না। কাদিয়ানীরা বাধ্য হয়ে স্বীকার করল যে, এ ভূমিকম্প গোলাম আহমদের জীবদ্দশায় সংঘটিত হয়নি। এদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি হল গোলাম পুত্র ও কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমদ। সে স্বীকার করেছে- ‘জনাব এ ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন’। (মাহমুদ আহমদের ‘দাওয়াতুল আমীর’ ২৩১ পৃ:।) এখন কোন শহরেই ভূমিকম্প হলে কাদিয়ানীরা বলে- এটা গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে হচ্ছে। তাদেরকে একথা জিজ্ঞাসা করা উচিত যে, তোমরা কীভাবে তা বলছ? অথচ তোমাদের ইমাম ও তোমাদের মিথ্যুক নবী স্পষ্ট করে বিস্তারিতভাবে বলে গেছে যে, এ ভূমিকম্প তার জীবদ্দশায় তার দেশেই সংঘটিত হবে। গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্বে কি পৃথিবীতে ভূমিকম্প সংঘটিত হত না? আমি মনে করি, কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এমন উক্তি করবে না। ১৯০৫ সালের ৫ই মে এর ভূমিকম্প সম্পর্কে গোলাম আহমদ দাবি করেনি যে, সে এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং তার ভক্তদের মধ্যে কেহ এ কথা প্রমাণ করতে পারবে না যে, সে এটা সংঘটিত হওয়ার সংবাদ দিয়েছে।

এই হল ঐ সমস্ত সংবাদের বাস্তব রূপ যার জন্য কাদিয়ানীরা ঢাক-ঢোল পিটায়। যদিও এটা সত্য ও বাস্তবায়িত হত, তবুও ইহাতে গোলাম আহমদের নবী, ইলহাম ও ওহী প্রাপ্ত হওয়ার দাবির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ হতে পারে না।

প্রথমত: এ জন্য যে, ভূমিকম্প ও বিপদাপদের সংবাদ দেওয়ার উপর ভবিষ্যদ্বাণীর সংজ্ঞা প্রযোজ্য হয় না, যেমন পূর্বে এর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত: কোন কোন সংবাদ সত্য হওয়া এবং কোনটি মিথ্যা হওয়া একথা বুঝায় না যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। কেননা, যদি ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে হত তবে কোন একটিরও ব্যতিক্রম হওয়া সম্ভব হত না। এ জন্যেইতো গোলাম আহমদ স্বয়ং বলেছে- ‘যদি সমুদয় ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন না হয় তবে একটিরও বাস্তবায়ন বিশ্বাস যোগ্য নয়। (গোলামের ‘কিতাবুল বারিয়া’ ২১ পৃ:।)

সাধারণত: এটা দৃষ্টিগোচর হয় যে, কোন একটা সাধারণ লোক কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে ভবিষ্যতে সংঘটিত হওয়ার কারণে তাকে নবী বা আল্লাহর ওলী বলা যায় না। এ কথাই ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেছে:- ‘কোন কোন ফাসেক, ফাজের, ব্যভিচারী, চোর, হারাম মাল ভক্ষণকারী, আল্লাহর নির্দেশাবলীর বিরুদ্ধাচরণ কারী এমনও আছে যে, কোন কোন সময় তারা সত্য স্বপ্ন দেখে’। (গোলামের ‘হাকীকতে ওহী’ ২য় পৃ:।) সে আরো বলেছে- ‘আরবে অধিক পরিমাণে যে সকল গণক ছিল তারা শয়তানের নিকট হতে ইলহাম প্রাপ্ত হত। যেভাবে তাদের কোন কোন ভবিষ্যদ্বাণীও সত্য হয়ে যেত’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘জহরতুল ইমাম’ ১৭ পৃ:।)

আমরা কাদিয়ানীদের পুস্তকাদি থেকে তাদেরই ভাষায় স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা সাব্যস্ত করেছি যে, যে সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীর উপর ভবিষ্যদ্বাণীর সংজ্ঞা প্রযোজ্য হয়, তার একটিও বাস্তবায়িত ও সত্য প্রমাণিত হয় নি। এমনকি যেটির উপর সংজ্ঞা প্রযোজ্য হয় নি তাও সত্য প্রমাণিত হয় নি। এটা মিথ্যাবাদী ও অপবাদ রটনাকারীর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি স্বরূপ। কাদিয়ানীরা তাদের পথভ্রষ্টতার মধ্যে দিশেহারা হয়ে ঘোর-পাক খাচ্ছে। কেহ কেহ জেনে শুনে এবং সত্যকে গোপন করে আর কেহ কেহ অজ্ঞতা বশত: এবং বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবহিত না থাকার কারণে। এই হল বাস্তব ও প্রকৃত অবস্থা। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এই যে, তাদেরকে যেন তিনি সত্যকে সত্যরূপে দেখিয়ে দেন এবং তা অনুসরণ করার তওফিক দেন; আর, বাতিলকে বাতিলরূপে দেখিয়ে দেন এবং তা বর্জন করার তাওফিক দান করেন। তিনিই হলেন সর্বোত্তম বন্ধু ও সর্বোত্তম সাহায্যকারী।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন