hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কাদিয়ানী মতবাদ (পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ)

লেখকঃ এহসান ইলাহী জহীর

প্রথম প্রবন্ধ: কাদিয়ানীরা সাম্রজ্যবাদের এজেন্ট
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নেতা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ লন্ডনে একত্রিত হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম গবেষণা ও গভীর চিন্তা-ভাবনার পর অত্যন্ত গুরুতর এক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কেননা, ইসলাম ব্যতীত বিশ্বে আর কোন শক্তি তাদের মোকাবিলায় বিদ্যমান নেই তাই, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়া অপরিহার্য। তবে, এদের সরাসরি আক্রমণ করে নয়, বরং তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক বাতিল ফিরকা বা দল সৃষ্টি করে এ উদ্দেশ্য সফল করতে হবে। এ দলগুলো নামে মাত্র মুসলমান হবে এবং প্রকৃত পক্ষে তারা ইসলামের বুনিয়াদ ও নীতিমালা মূলোৎপাটনকারী হিসাবে কাজ করবে। এ দলগুলোকে সম্ভাব্য আর্থিকও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। যাতে, তারা ওদের বিপক্ষে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে এবং মুসলমানদের উপর গোয়েন্দাগিরির চাল চালিয়ে যেতে পারে। সুতরাং সে অনুযায়ী সাম্রাজ্যবাদীদের বিচক্ষণ হাত অত্যন্ত সুন্দর ও সুদৃঢ় এক জাল তৈরি করে। প্রথম পর্যায়ে তারা তাদের অধিকৃত দেশ সমূহে পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও বিশ্বাস ঘাতক লোক অনুসন্ধান করার নিমিত্তে বিশেষ বিশেষ দল পাঠাল। যারা ঐ,লোকদের অন্ত-করণ ঈমান, অনুভূতি ও বোধশক্তিকে ক্রয় করে নিতে পারে। এই ঘৃণ্য টিমগুলো বিশ্বাসঘাতক লোকদের অনুসন্ধান করতে লাগল। আর এটাত জানা কথা যে, কোন সম্প্রদায়ই এ ধরনের লোক থেকে মুক্ত নহে। তবে, এদের মধ্যে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের সবচেয়ে মারাত্মক এজেন্ট ছিল ভারতের গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং ইরানের বাহাউল্লাহ নামে পরিচিত মির্জা হুসাইন আলী। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিটি অধিক সাহসী অথচ বোকা ছিল। তাই, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার হিংসা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেয় এবং অতি দু:-সাহসের সাথে বলে ফেলে যে, (ভুল ভ্রান্তিতে ভরপুর) তার কিতাব দ্বারা কোরান করীম রহিত হয়ে গেছে এবং সে হল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীয়ত রহিতকারী। ফলে তার দ্বারা ইসলামের ক্ষতি কম হয়েছে। তবে, প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ কাদিয়ানী ছিল অধিক পটু ও ধুরন্ধর। এ কারণেই সে তার হিংসা বিদ্বেষকে গোপন রাখে। কখনও সে মুজাদ্দিদ রূপে, আবার কখনও মেহেদি রূপে আত্মপ্রকাশ করে। এর পর লাপ দিয়ে সে নবুয়তের মর্যাদায় পৌঁছে গিয়ে দাবিকরে বসল যে, সে আল্লাহর একজন প্রেরিত নবী, তার কাছে ওহী আসে। কিন্তু সে স্বয়ং সম্পূর্ণ নবী নহে বরং সে একজন অনুগামী নবী। যেমন হারুন আঃ মুসা আঃ এর অনুগামী নবী ছিলেন। সে কোরআন শরীফের অর্থ বিকৃত করে এবং উহার অপ ব্যাখ্যা করে। আর, সে বাতিল চিন্তাধারা প্রচার করতে শুরু করে এবং মুসলমানদের সারিতে থেকে সাম্রাজ্যবাদীদেরও বিরাট খেদমত আঞ্জাম দিতে থাকে। কারণ ইসলামের মুখোশ পরে যতটুকু খেদমত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে, ইসলাম থেকে বের হয়ে তা সম্ভব হত না। সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য তার সবচেয়ে বড় এক খেদমত ছিল তার ঐ ফতওয়া ‘‘ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা মুসলমানদের জন্য জায়েজ নহে। কারণ, জেহাদের হুকুম রহিত হয়ে গেছে এবং ইংরেজরা হল এ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়।’’ এতে সাম্রাজ্যবাদীরা তার উপর অত্যধিক খুশি হল। এবং সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ও অর্থ সম্পদ তার সামনে পেশ করল। এমনকি, তার অনুসরণ ও অনুকরণ করার জন্য তাকে কতগুলো লোক জুটিয়ে দিল। ফলে, যে ব্যক্তি তার দীর্ঘ জীবনে

একসাথে একশত পাউন্ড দেখে নাই সে আজ লক্ষ লক্ষ পাউন্ড নিয়ে খেলতে শুরু করে। সে ছিল মিসকীন, সামান্য বেতনভোগী কর্মচারী, মাসে পাঁচ পাউন্ডের বেশি বেতন পেত না, জীবিকার অন্বেষণে নগরে নগরে এবং গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াত; সে আজ বিরাট অট্রালিকা তৈরি করতে লাগল এবং দামী গাড়ি চড়তে লাগল। আর, তার চাকর নোকররা বড় বড় লোকদের চেয়েও বেশি জীবিকা অর্জনের সুযোগ লাভ করতে শুরু করে। ব্রিটেনের রাণীকে ভারতবর্ষে আগমন উপলক্ষে কাদিয়ানী যে মানপত্র প্রদান করেছিল, তাতে সে একথা স্বীকার করেছে। এমনি ভাবে, সাম্রাজ্যবাদীরা এ বৃক্ষটি বাড়িয়ে তোলার জন্য এবং লালন পালন করার জন্য তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করল। তাকে লোকের কাছে পরিচিত করল এবং নিজেদের ছত্রছায়ায় রেখে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করল। ইসলাম ও মুসলমানদের উপর এবং তাদের শ্রদ্ধাভাজন পূর্বপুরুষ ও ইমামদের উপর আক্রমণের জন্য উৎসাহ দিতে লাগল। এমনকি, সে নবীগণের এবং সাইয়েদুল মুরসালীনের ইজ্জতের উপরও আক্রমণ করতে লাগল। যেমন সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধর হাসান হুসাইন, তাঁর খলীফা, দামাদ ও আত্মীয় স্বজন অর্থাৎ আবু বকর উমর, উসমান, আলী ও অন্যান্য সাহাবীদের সম্মানের উপর আক্রমণ করল। সুতরাং উম্মতের সকল আলেমগণ একবাক্যে তাকে কাফের বলে ঘোষণা দেন এবং নবুয়তের বাদী, নবীগণের তিরস্কার, মুসলমানদের গালি গালাজ ও খাঁটি ইসলাম ধর্মের বুনিয়াদকে অস্বীকার করার কারণে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব বলে ফতওয়া প্রদান করেন। কিন্তু তার সাম্রাজ্যবাদী প্রভু তার পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করতে থাকে এবং তাকে মুসলমানদের ক্রোধ ও রোষানল থেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়। ফলে, মুসলমানগণ তার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন নি। তবে, মুসলিম আলেমগণ তার সাথে বিতর্ক ও মুনাজারা করেন। এভাবে, তারা সত্য প্রকাশ করেন এবং বাতিলকে অসার প্রমাণিত করেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিখ্যাত আলেম অমৃত সর নিবাসী শেখ ছানাউল্লাহ। তিনি বার বার বিতর্কে তার উপর জয়ী হন এবং তাকে প্রমাণ দ্বারা জব্দ করেন। পরিশেষে তাকে মুবাহালার জন্য আহবান করেন এই বলে: ‘যে মিথ্যাবাদী সে যেন সত্যবাদীর জিবদ্দশায় অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে’। আবার সত্য প্রকাশ পেল। এ মুবাহালার কিছুদিন পরেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এমনভাবে মৃত্যুবরণ করল যা শুনা মাত্র মানুষ ঘৃণা বোধ করে। পরে আমি এ ঘটনাটি বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করব। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এ ধর্মান্তরিত দলটি ইসলামের সাথে যার আদৌ সম্পর্ক নেই এবং ইসলাম ও তা থেকে বিচ্ছিন্ন, সে দলটি পুনরায় মুসলমানদের সারিতে প্রবেশ করে এবং তারা প্রকাশ করে, যে ঐ সকল বিষয়ের উপর তারা বিশ্বাস রাখে যার উপর মুসলমানদের বিশ্বাস রয়েছে। ছোটোখাটো অমৌলিক কিছু বিষয় ছাড়া তাদের এবং মুসলমানদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আবার তাদের ঐ পুরাতন প্রভু ইউরোপ ও আফ্রিকায় পত্র পত্রিকা ও অন্যান্য প্রচারণার মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করে। যেমন, খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি সংগঠন আল-মনজিদ অভিধানের পরিশিষ্টে এ কথা সংযোজন করে যে, ‘কাদিয়ানীরা একটি মুসলিম দল, তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, তাদের বিশ্বাস মুসলমানদের উপর জেহাদ ফরজ নয়’। এ কারণেই আমি এ নতুন মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার মনস্থ করলাম। বিশেষ করে কাবা শরীফে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত আমার কিছু বন্ধুর সাথে যখন সাক্ষাৎ হল এবং তারা আমাকে শঙ্কিত করে তুলল যে তাদের দেশে এমন কতকগুলো লোক রয়েছে, যারা কাদিয়ানী মতবাদের প্রতি এই বলে আহবান করে যে, তাদের নেতা উম্মতে মুসলিমার মুজাদ্দিদ ও সংস্কারক আর, তারা এমন কিছু পাচ্ছেন না যা দিয়ে ওদের মুকাবেলা করতে পারেন। কাদিয়ানী আলেমরা যখন তাদেরকে প্রশ্ন করেন তখন তারা উত্তর দিতে পারেন না। কারণ, তাদের কাছে ওদের কিতাব ও প্রকৃত আকিদা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই, আমি এ প্রথম কিস্তি পেশ করছি, আল্লাহর সঙ্গে এ প্রতিশ্রুতিসহ যে এ মতবাদের প্রকৃত অবস্থার মুখোশ না খোলা পর্যন্ত আমি শান্ত হব না। মহান আল্লাহর দরবারে এর তাওফিক কামনা করছি। ১৮৩৯ খৃষ্টাব্দে পাঞ্জাবের অন্তর্গত কাদিয়ান নামক গ্রামে কোন এক পরিবারে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ট গোলাম আহমদের জন্ম হয়। তার পিতা ঐ সকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। এবং মান-সম্মান লাভের উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদকে সাহায্য করেছে। যেমন, স্বয়ং গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার কিতার ‘তোহফায়ে কায়সারিয়ায়’ উল্লেখ করেছে যে, আমার পিতা গোলাম মুরতাজা ঐ সমস্ত লোকদের একজন ছিলেন, ইংরেজ সরকারের সাথে যাদের সুসম্পর্ক ও ভালোবাসার বন্ধন ছিল, এবং রাজ দরবারে তার একটা আসন সংরক্ষিত ছিল। সে ইংরেজ সরকারকে সর্বতভাবে সাহায্য করেছিল যখন তার স্বদেশি ও স্ব ধর্মীয় ভারতবাসীরা ১৮৫১ ইং সালে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। (এটা ছিল সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে একটা প্রসিদ্ধ বিপ্লব) এমনকি সে নিজের পক্ষ থেকে পঞ্চাশজন সৈন্য ও পঞ্চাশটি ঘোড়া দ্বারা তাদের সাহায্য করে এবং সে তার সাধ্যাতীত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সেবা করেছে। (উল্লেখিত গ্রন্থ ১৬ পৃ:) সুতরাং এ ধরনের পরিবারে যদি গোলাম আহমদের জন্ম না হয় তবে, আর কার জন্ম হবে? মোটকথা, জন্মের পর লেখাপড়ার বয়সে পৌছলে সে অখ্যাত কিছু শিক্ষকের কাছে কতক গুলো উর্দু ও আরবী পুস্তক পড়ে এবং কিছু আইন বিদ্যাও শিখে। তারপর সে মাসিক মাত্র পনেরো টাকা বেতনে বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত শিয়ালকোট নামক শহরে চাকুরি নেয়। সে একটা মানসিক ভারসাম্যহীন প্রকৃতির লোক ছিল। এমনকি, তার সম্পর্কে বলা হয় যে তাকে ঘর থেকে চিনি আনার কথা বলা হলে সে চিনির বদলে লবণ নিয়ে আসে। একান্ত নির্বুদ্ধিতা ও ভারসাম্যহীনতার কারণে সে পথিমধ্যে উহা খেতে আরম্ভ করে। যখন লবণ তার গলায় পৌঁছে আটকে যায় তখন তার চক্ষু-দ্বয় থেকে অশ্রু নির্গত হয়।(তার পুত্র বশীর আহমদ কর্তৃক লিখিত ‘‘সিরাতুল মাহদী’’ নামক গ্রন্থ) এতদ্ব্যতীত সে এত ভীরু ছিল যে, কখনও যুদ্ধ ও কুস্তিতে অংশ গ্রহণ করেনি। অথচ ঐ সময় ভদ্র পরিবারের সকলেই সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করত। এ কারণেই একদা সে একটা মোরগের বাচ্চা জবাই করতে গিয়ে তার আঙুল কেটে ফেলে এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে, সে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে সরে পড়ে। কারণ, সে তার জীবনে কোন প্রাণী জবাই করেনি। (সিরাতে মাহদী ২য় খন্ড ৪থ পৃ:) এ নির্বুদ্ধিতা ও ভীরুতা নিয়ে সে বড় হতে লাগল এবং যৌবনে পদার্পণ করল। এর অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ সে সর্বদা অসুস্থই থাকত। যৌবনে সে পাগলামি সাদৃশ্য ‘মুরাক’ বা হিষ্ট্রীয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া সে আরো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিল। ‘রিভিউ কাদিয়ান’ নামক কাদিয়ানী পত্রিকায় একদা প্রকাশিত হয়েছিল যে, মুরাক রোগটি আমাদের হযরতের বংশগত রোগ ছিল না, বরং উহা বহির্গত কারণে হয়েছিল। অর্থাৎ গোলাম আহমদের পূর্বে তার পরিবারের আর কেহ এ রোগে আক্রান্ত হন নি, বরং মস্তিষ্কের দুর্বলতার কারণে তিনিই প্রথম এ রোগে আক্রান্ত ও প্রভাবিত হন। (আগস্ট সংখ্যা ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দ) এতে, প্রমাণিত হল যে, সে মুরাক বা হিষ্ট্রীয়া রোগে আক্রান্ত ছিল এবং তার পরিবারে আরো অনেক লোক এ রোগে আক্রান্ত ছিল। এদের মধ্যে তার মামাতো ভাই ,কন্যা, এমনকি, তার স্ত্রীও এ রোগে আক্রান্ত ছিল। একথা তার ছেলে তার জীবন চরিতে উল্লেখ করেছে এবং সে নিজেও বলেছে‘‘আমার স্ত্রী মুরাক রোগে আক্রান্ত’’। ডাক্তারদের পরামর্শানুযায়ী সে আমার সঙ্গে কখনও বেড়াতে বের হত।(কাদিয়ানী পত্রিকা আল হিকম এ গোলামের বর্ণনা, যা ১৯০১ সালের ১০ আগস্ট প্রকাশিত) মুরাক রোগটা কি? এখন আমরা তা নিয়ে আলোচনা করব। কেননা আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সহিত এর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী আবু আলী সিনা তার ‘আল কানুন’ নামক গ্রন্থে ‘মুরাক’ রোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, মুরাক এমন একটা রোগ যার ফলে ভয়ভীতি ও বিপর্যয়ের আশঙ্কায় মানুষের চিন্তাধারা ও কল্পনাতে পরিবর্তন ঘটে। অভ্যন্তরীণ ভাবে মানসিক শক্তি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং রোগী এর কারণে সর্বদা অস্থির থাকে। আল্লামা বুরহানুদ্দিন মস্তিষ্ক রোগের লক্ষণ ও কারণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, মুরাক এমন একটা রোগ যার কারণে স্বাভাবিক কল্পনা ও চিন্তাধারা পরিবর্তিত হয়ে রোগীর গতিবিধি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। এমনকি, এ অবস্থায় পৌঁছে যায় যে,রোগী নিজেকে মনে করে সে অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে। আর এ ধরনের কোন কোন রোগী মনে করে যে, সে ফেরেস্তা হয়ে গেছে। অমূলক চিন্তাধারা ও কল্পনার মধ্যেই এ মরাকী পাগল কাদিয়ানী যৌবনে পদার্পণ করে দাবি করল যে, সে একজন মুজাদ্দিদ। এরপর সে বলতে লাগে যে, তার উপর উর্ধ জগতের রহস্যাবলীর ইলহাম হয়। এ সুযোগে তার সাম্রাজ্যবাদী প্রভু তার মাথায় নবুয়তের মুকুট পরিয়ে দেয়। সুতরাং এ নবুয়তের দাবিদার তাদেরই নবীতে পরিণত হয় এবং তারা হল এর মাবুদ। যেমন সে নিজেই ইহা স্বীকার করে বলেছে, বিশ বছরের কম বয়সের একজন ইংরেজ যুবকের আকৃতিতে আমি একজন ফেরেস্তাকে স্বপ্নে দেখেছি সে একটি চেয়ারের উপর বসে আছে এবং তার সামনে একটি টেবিল রয়েছে। আমি তাকে বললাম তুমি অতি সুন্দর। সে উত্তর দিল হাঁ, হাঁ’। (গোলাম কর্তৃক রচিত তাজকিরায়ে অহীয়ে মুকাদ্দাস ৩১ পৃ:) তার পর ইংরেজি ভাষায় ইলহাম হল, (i love you) আমি তোমাকে ভালোবাসি, (i with you) আমি তোমার সাথে আছি , (i shall help you) আমি তোমার সাহায্য করব। সে আরো উল্লেখ করে যে , ‘এরপর আমার শরীর প্রকম্পিত হল এবং ইংরেজি ভাষায় ইলহাম হল: আমি যা ইচ্ছে করি তা করতে পারি। অনন্তর আমি তার ভাষা উচ্চারণ বুঝতে পারলাম যেন একজন ইংরেজ আমার মাথার কাছে বসে কথা বলছেন’। (গোলাম আহমদ কর্তৃক রচিত‘‘বারাহীনে আহমদী’’ ৪৮০ পৃ:) এরপর আর কি? সে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং নিজের গোলামকে সাহায্য করে। কাজেই তার অবশ্য কর্তব্য হল তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। বিশেষ করে ভারত সম্রাজ্ঞী মহান রাণীকে আল্লাহ তাআলা পাঠালেন এবং তিনি শান্ত-না ও সাহস প্রদানের জন্য অনুগ্রহ পূর্বক তার ঘরে আগমন করলেন। সে নিজেই এর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছে আমি কাশফের মাধ্যমে ভারত সম্রাজ্ঞী মহান রাণীকে দেখতে পেলাম, তিনি আমার ঘরে আগমন করেছেন। তখন আমি আমার সঙ্গী সাথীদের একজনকে বললাম যে, মহান রাণী তার পরিপূর্ণ স্নেহ মমতা ও ভালোবাসা দ্বারা আমাদের কে সম্মানিত করেছেন। আর ,আমাদের ঘরে দু দিন অবস্থান করেছে। তাই, আমাদের কর্তব্য হল তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। (মঞ্জুর কাদিয়ানির লিখিত ‘মুকাশিফাতে গোলাম’ ১৭পৃষ্ঠা)

কার্যত: সাম্রাজ্যবাদের ভালোবাসা এবং উহার প্রতি তার বিশ্বস্ততার ঘোষণা স্বরূপ এবং মুসলমানদের ছিদ্রানুসন্ধানের উদ্দেশ্যে সে তার কর্তব্য নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে। এমনকি যখন কোন এক ঘৃণ্য সাম্রাজ্যবাদী একটা পুস্তক রচনা করে উহাতে উম্মাহাতুল মুমেনিন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানের উপর আঘাত হানে। তখন ভারত বর্ষের মুসলমানরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে, আর যখন এ পুস্তকের কারণে তাদের ঘৃণা ও ক্ষোভ সরকারের কাছে পৌছাল। তখন সে মুসলমানদের সাথে সহযোগিতার বদলে তাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে লাগল। কারণ তার মতে মহান ব্রিটিশ সরকার যারা এ পৃথিবীতে আল্লাহর ছায়া স্বরূপ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ করার অধিকার মুসলমানদের নেই। সাম্রাজ্যবাদের সাহায্য সহযোগিতা এমনকি উহার প্রতি তার অহবান এবং মুসলমানদের ছিদ্রানুসন্ধান করার কারণে যখন তার উপর আক্রমণ চলতে থাকে, তখন সে তার কোন একটি পুস্তকে লিখেছিল যে, আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী সরকারের জন্য আমরা সকল প্রকার বিপদ সহ্য করছি এবং ভবিষ্যতেও করব। কেননা তার করুণা ও দয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ব্রিটিশ সরকারের জন্য আমরা আমাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ উৎসর্গ করব। আর, প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে উহার মর্যাদা ও উন্নতির জন্য আমরা সর্বদা প্রার্থনা করব। (গোলামের ‘‘আরিয়া ধর্ম’’ ৭৯ ও ৮০ পৃষ্ঠা)

জানি না, যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবমাননা গ্রহণ করে, সে ধরনের লোক কি নবুয়্যত ও তাজদীদের (সংস্কার) দাবিকরতে পারে? বরঞ্চ সে ঐ সকল লোকের প্রশংসা করছে যারা হুজুরের অবমাননা করেছে এবং ঐ সব লোকের বিরোধিতা করছে যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণ ও দেহকে উৎসর্গ করেছেন। সে তার অনুসারী ও ভক্তগণকে উৎসাহিত করে, তারা যেন তাদের মহাপ্রভু ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্যে সম্পদ ও প্রাণ উৎসর্গ করার জন্য প্রস্ত্তত থাকে। কারণ তার ধর্ম তাকে শিক্ষা দেয়, আল্লাহর আদেশ পালন করতে এবং ঐ সরকারের আনুগত্য করতে যে দেশকে নিরাপত্তা দান করেছে এবং তাদেরকে নিজ ছায়াতলে জালিমদের (অর্থাৎ মুসলমানদের) হাত থেকে রক্ষা করেছে।

এ সরকার ব্রিটিশ সরকার ছাড়া আর কেহ নহে। অধিকন্তু, এ সরকারের অবাধ্যতা ইসলাম এবং আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের অবাধ্যতার শামিল।( সরকারের লক্ষণ নামক পুস্তিকায় উল্লেখিত গোলামের ভাষণ) তার দুটি পুস্তক ‘‘জরুরতুল ইমাম’’ পৃষ্ঠা ২৩ এবং ‘‘তুহফায়ে কায়সারিয়া’’ পৃ: ২৭ এ সে বলেছে আমি মহান আল্লাহর শুকরিয়া এজন্য আদায় করছি যে, তিনি আমাকে ব্রিটিশের এমন করুণার ছায়াতলে থেকে আমি কাজ করতে পারছি এবং ওয়াজ-নসিহতও করতে পারছি। সুতরাং এ অনুগ্রহশীল সরকারের প্রজাদের কর্তব্য হল তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, বিশেষ করে, আমার কর্তব্য হল এ সরকারের অধিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কেননা, বর্তমান ভারত সম্রাট ছাড়া আর কারো অধীনে থেকে আমার মহান উদ্দেশ্য সফল করতে পারতাম না। সে এও বলেছে যে ব্যক্তি বিচ্ছিন্নতা ও বিপর্যয় কামনা করে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং ঐ ব্যক্তির উপরও যে নেতার অনুগতা স্বীকার করে না। অথচ আল্লাহপাক বলেছেন যে, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের এবং নেতাদের অনুগত থাক। এখানে উলিল আমর বা নেতা বলতে বর্তমান সম্রাটকে বুঝায়। এজন্য আমি আমার ভক্তবৃন্দ ও অনুসারীগণকে উপদেশ দিয়ে থাকি তারা যেন ইংরেজকে উলুল আমর এর অন্তর্ভূত করে নেয় এবং অন্তর থেকে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতে কুণ্ঠিত না হয়। (তার নিজ ভাষা) তারা যে ইংরেজদের আনুগত্য করবে এতে আশ্চর্যের কিছু নয়; কেননা, তারা ওদেরই সন্তান, হাতের বানান বস্ত্ত এবং ওদের লাগান গাছের ফল। ভারত বর্ষের ইতিহাস বেত্তা দেখতে পেল তাদের লাগান গাছ পরিপক্ব ও ফলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে, তখন তারা কাদিয়ানীদের বেতনের মাধ্যমে ও বেতন ছাড়া বিশেষ বিশেষ সুযোগ দান করতে লাগল, কাদিয়ানী ছাত্রদের শিক্ষা দীক্ষার জন্য ইউরোপে পাঠাতে লাগল। আর , ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প কারখানা ইত্যাদি সমুদয় কর্মক্ষেত্রে তাদেরকে বিশেষ অধিকার দিতে লাগল। এমনিভাবে ইংরেজ সরকারকে এ দলের চিন্তা ধারাকে প্রচার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে নেয়। কেননা, এসব চিন্তাধারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ও তাদের স্বার্থেই ছিল। আর তাদের উৎসাহ প্রদান ও উত্তেজিত করার কারণে অনেক মূর্খ ও দুর্বল ইমানের অনেক লোক এ জালে আটকা পড়ে। কারণ, তারা ইহা অর্জনও করতে লাগল। এভাবে এ মুরতাদ দলটি ক্রমশ: বিস্তৃতি লাভ করে এবং দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর মুসলমানগণকে ইসলাম থেকে সরিয়ে রাখা ব্রিটিশের দাসত্বের নিকটবর্তী করার জন্য অনেক পুস্তিকা প্রচার করে। মুসলমানদের ক্রোধ ও রোষানল থেকে তাদের সাম্রাজ্যবাদী মুরবিবরা সর্বদা তাদেরকে হেফাযত করত। যখনই কোন সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসক তাদের প্রতি অমনোযোগী হত, তখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রতিবাদ উত্থাপিত হত যে, অমুক অন্যান্য দলকে আমাদের সমমর্যাদা দান করে। সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতি ভীতি প্রদর্শন ও সতর্ক বাণী এসে পড়ত। যেমন গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ভারতে নিযুক্ত ভইসরয়ের কাছে এমন কতকগুলো শব্দ ও পদ্ধতি ব্যবহার করে দরখাস্ত পেশ করল, যা কোন মর্যাদা সম্পন্ন লোকের পক্ষে শোভা পায় না। আর, আল্লাহর নবিতো এ থেকে কত ঊর্ধ্বে। (তার মূল বর্ণনা) আমার অনুসারীদের নাম সংবলিত যে আবেদন পত্রটি আপনার সমীপে পেশ করছি, এর উদ্দেশ্য হল এই যে, আমি ও আমার পূর্ব পুরুষেরা আপনাদের জন্য যে বিরাট খেদমত করেছি উহার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। আমি মহান সরকারের কাছে আরো আশা রাখি যে সরকার ঐ পরিবারের প্রতি লক্ষ্য রাখবে যে দীর্ঘ পঞ্চাশ বৎসর যাবৎ পরিপূর্ণ বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার সহিত প্রমাণ করেছে যে, এ পরিবার সরকারের প্রতি সবচেয়ে বেশি নিষ্ঠাবান। মহান সরকারের শাসকবর্গ এ পরিবারের ভালোবাসার স্বীকৃতি প্রদান করেছে এবং এ পরিবারের জন্য অঙ্গীকার পত্র ও সনদপত্র দান করেছে যে, ইহা একটি সেবক ও নিঃস্বার্থ পরিবার। এ জন্য আমি আপনাদের নিকট আশা রাখি যে, আপনার অধীনস্থ প্রশাসকদেরকে লিখবেন যাতে তারা ঐ বৃক্ষের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করে; যা আপনারাই রোপণ করেছেন। আরো আশা করি, তারা যেন আমার অনুসারীদের প্রতি বিশেষ স্নেহের দৃষ্টি রাখে। কেননা অতীতে কখনও আমরা আপনাদের জন্য প্রাণ ও রক্ত উৎসর্গ করতে পিছিয়ে থাকিনি, আর ভবিষ্যতেও পিছিয়ে থাকব না। এ মহান অবদানের প্রেক্ষিতে আমরা মহান সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা দাবি করার অধিকার রাখি, যাতে কেহ আমাদের উপর আক্রমণের সাহস না পায়। (ভারতবর্ষের প্রতি গোলাম আহমদের পত্র যা কাসেম কাদিয়ানীর লিখিত ‘‘তাবলীগে রিসালাত’’ নামক পুস্তকের ৭ম খন্ডে উল্লেখিত।) পুনরায় সে তাদের বিরাট বিরাট সেবার কথা উল্লেখ করে বলেছে যে, ইংরেজদের প্রশংসায় আমার রচিত পুস্তকাবলী দ্বারা আমি গ্রন্থাগার পরিপূর্ণ করে দিয়েছি। বিশেষ করে, সরকারের প্রতি এটাই আমার বড় অবদান। আমি আশা করি যে আমাকে এর উত্তম বিনিময় প্রদান করা হবে। কার্যত: এটাই ছিল তার অন্যতম বড় খেদমত। কেননা, সাম্রাজ্যবাদীরা খ্রিস্টান হোক আর অখৃষ্টান হোক , তারা মুসলমানদের জেহাদের অনুভূতিকে যতটুকু ভয় করে, অন্য কিছুকে তারা ততটুকু ভয় করে না। সুতরাং সে এর বিনিময় পেল। আর এর চেয়ে বড় বিনিময় কি হতে পারে যে, একজন মুরাক (হিষ্ট্রিয়া) রোগাক্রান্ত ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি যার কাছে একদিনের খাবার ছিল না, সে আজ নবুয়তের সিংহাসনে সমাসীন হয়ে বসেছে এবং তার চতুর পার্শ্বে নজর ও নেওয়াজের ধারা বয়ে চলেছে। লোকেরা তার কাছে দৌড়ে ছুটছে এবং এবং তখনকার বিশ্বের সর্ব বৃহৎ রাষ্ট্র তাকে সহায়তা করছে। এর ফলশ্রুতিতে তার পাগলামি আরো বৃদ্ধি পায় এবং তা চরম পর্যায়ে পৌঁছে। ইনশাআল্লাহ, আমি উহা বিশেষ প্রবন্ধে উল্লেখ করব। এ আলোচনার সঙ্গে গোলাম আহমদের ছেলে, তার দ্বিতীয় খলিফা কর্তৃক ব্যক্ত স্বীকারোক্তি ‘‘কাদিয়ানী ধর্ম সাম্রাজ্যবাদীদের ফসল ছাড়া আর কিছু নয়’’। যোগ করছি সে বলছে আমাদের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের অনেক অবদান রয়েছে। আমরা পূর্ণ শান্তি ও আরামের সহিত আমাদের উদ্দেশ্য সাধন করছি এবং বিভিন্ন দেশে প্রচারের উদ্দেশ্যে আমরা যেতে পারছি। ব্রিটিশ সরকার এখানেও আমাদের সাহায্য করছে। এটা হল আমাদের উপর তাদের পূর্ণ করুণা ও দয়া। (মাহমুদ আহমদ রচিত ‘‘বারাকাতুল খেলাফত’’ নামক গ্রন্থ ৬৫ পৃষ্ঠা) এ কারণেই গোলাম আহমদ সর্বদা তার ভক্তগণকে সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসা অর্জনে সচেষ্ট হওয়ার জন্য উৎসাহিত করত। শুধু তাই নহে বরং এর জন্য আত্মোৎসর্গ করতে এবং এর আহবায়ক হতে, আর মানুষের মনে এ কথা বদ্ধ মূল করতে অনুপ্রেরণা দিত যে, পৃথিবীতে এ সরকারের চেয়ে অধিক ন্যায় পরায়ণ ও উত্তম আর কেহ নেই। যার ফলে, এ আহবানের দরুন মানুষের মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করবে। কেননা যখন এ কথাটি বার বার শ্রুত হতে থাকে তখন এ করুণাময় সরকারের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান সুদৃঢ় হওয়া স্বাভাবিক। আর উহা শুধু ভারতবর্ষেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং আমাদের কেহ অন্য দেশে গেলে সেখানেও এ কর্মধারা চালিয়ে যাবে। কারণ, আমাদের স্বার্থ ও লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। ( আর তাদের এই অভিন্ন লক্ষ্য হলো ইসলামের প্রকৃতিকে ধ্বংস করা এবং সঠিক ধর্মকে মুছে ফেলা) যখন এ সরকারের ন্যায়পরায়ণতার কথা অন্যান্য দেশবাসীরা জানতে পারবে তখন তারা আগ্রহ করবে যেন এ বরকতময় সরকারের পা তাদের দেশেও পৌঁছে যায়।

বস্ত্তত তাদের উদ্দেশ্যাবলী ছিল অভিন্ন। যেমন এক কাদিয়ানী ধর্মপ্রচারক ১৯২৩ সনে রাশিয়া হতে প্রত্যাবর্তন করে সংবাদ দিয়ে বলল যে, আমি ব্রিটিশের গুপ্তচর হওয়ার অপবাদে কয়েকবার ধৃত হয়েছি’ সে গর্ব করে আরো বলে যে, আমি রাশিয়াতে শুধু কাদিয়ানী ধর্ম প্রচারের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু কাদিয়ানীদের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্যের সাথে জড়িত, তাই আমি ব্রিটিশ সরকারের সেবা করতে এবং আমার উপর তার অর্পিত কর্তব্য সম্পাদন করতে বাধ্য ছিলাম। (কাদিয়ানীদের মুবাল্লিগ মুহাম্মদ আমিনের লিখিত এবং আল ফজলুল কাদিয়ানী পত্রিকায় প্রচারিত ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ খৃ:) এভাবেই তাদের কার্যক্রম চলতে থাকল। এ অপবিত্র দলটি লাঞ্ছনা ও অপদস্ততার সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে। এমন হল যে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো একের পর এক সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে পতনের কারণে তারা আনন্দ উল্লাস করতে থাকে এবং বড় বড় সাধারণ সভা অনুষ্ঠান শুরু করে আর মুসলিম নিধনের জন্য যুদ্ধাস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বড় অঙ্কের টাকা প্রেরণ করতে থাকে। যখন গোলামের পুত্র ও তার খলিফা এ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলে, মুসলিম ওলামারা আমাদেরকে ইংরেজ সরকারের সহযোগিতার অপবাদ দেয়, আর উহার বিজয় সমূহে আমাদের আনন্দ উল্লাসের কারণে আমাদেরকে দোষারোপ করে। আমরা প্রশ্ন করি, কেন আমরা উহাতে সন্তুষ্ট ও আনন্দিত হব না? অথচ আমাদের ইমাম এ কথা বলেছেন, ‘আমি মেহদী এবং ব্রিটিশ সরকার আমার তরবারি’। সুতরাং আমরা এর বিজয়ে আনন্দিত হবই এবং আমরা দেখতে চাই যে, এ তরবারির আলো যেন ইরাক, সিরিয়া প্রভৃতি দেশে উদ্ভাসিত হচ্ছে। সে আরো বলে, আল্লাহ তায়ালা এ সরকারের সাহায্য করার জন্য ফেরেস্তা প্রেরণ করেছেন।(আল-ফজল পত্রিকা ৭ই ডিসেম্বর ১৯১৮ ইং) তদুপরি তার বক্তব্য হল যে, শত শত কাদিয়ানী ইরাক বিজয়ের জন্য ইংরেজ বাহিনীতে যোগদান করেছে এবং এ জন্য তাদের (অপবিত্র) রক্ত ঝরিয়েছে। (আল-ফজল পত্রিকা ৩১ শে আগস্ট ১৯২৩ খৃ:) অনুরূপ ভাবে সে আনন্দ প্রকাশ করে যখন সাম্রাজ্যবাদী বাহিনী আল-কুদসে প্রবেশ করে। সাম্রাজ্যবাদীদের সমর্থনে সে একটি প্রবন্ধও লিখেছে। তার এ কাজের ও উসমানী সাম্রাজ্যের পতনের জন্য ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রীর সেক্রেটারি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আল-ফজল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিজয়ের জন্য আমরা আল্লাহর হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। এটা একটা আনন্দ উল্লাসের কারণ। কেননা আমাদের নেতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার অনুসারীদেরকে এর জন্য দোয়া করতে উপদেশ দিতেন। ইতিপূর্বে কাদিয়ানী ধর্মের যে দাওয়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তার পথ আবার খুলে দেয়া হল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার ফলেই আমাদের এ সকল সুযোগ-সুবিধা লাভ হয় । (আল-ফজল ২৩ নভেম্বর ১৯১৮ খৃ:) এমনি ভাবে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ, মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও তাদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি সফল করার জন্য এ দলটিকে লালন-পালন করে। যেহেতু, এরা ইংরেজদের এজেন্ট, তাই জার্মান সরকার তার মন্ত্রী-বর্গকে এদের মাহফিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে নিষেধ করে। আল-ফজল ১লা নভেম্বর ১৯৩৪ খৃ: আরো উল্লেখ্য যে , আফগান ও ইংরেজদের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে যখন এ দলের দু’ব্যক্তি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিল, তখন আফগান সরকার এদেরকে সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে গুপ্তচর বৃত্তির দায়ে হত্যা করে। আফগান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, এদের কাছে এমন প্রমাণ ও চিঠিপত্র পাওয়া গেছে যদ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয় যে, এরা আমাদের শত্রুর এজেন্ট। কিন্তু এর বিপরীত কাদিয়ানী খলীফা এ দু’জনের অপরাধ নিয়ে গর্ব করে বলে যে, যদি আমাদের লোকেরা আফগানিস্থানে চুপ থাকত আর জিহাদ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাসকে প্রকাশ না করত তবে তাদের উপর কোন বিপদ আসত না। কিন্তু তারা ব্রিটিশ সরকারের ভালোবাসাকে গোপন করতে পারেনি, যা আমাদের কাছ থেকে বহন করে নিয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই তারা মৃত্যুর সম্মুখীন হয়। (ইবনে গোলামের জুমার খোতবা যা আল-ফজল পত্রিকায় প্রকাশিত ১৬ ই আগস্ট ১৯৩৫ খৃ:) এটা কারো কাছে অস্পষ্ট নয় যে, সাম্রাজ্যবাদীরা সর্বদাই গুপ্তচর বৃত্তির জন্য ধর্ম এবং ধর্মপ্রচারের সুযোগ গ্রহণ করে। যেমন ড: উমর ফররুখ তার পুস্তক ‘‘আত-তাবসীর অল-ইস্তিমার’’ এর মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং আমরাও তা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। এখন সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের শক্তি সুদৃঢ় করার জন্য এবং তাদের সার্থ রক্ষার তাগিদে আফ্রিকায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসে সন্দেহের সৃষ্টি এবং ইসলামকে কুলষিত করতে ও গুপ্তচর বৃত্তি চালাতে শুরু করেছে। এরা ওদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং ওদের সাহায্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলামের নাম ব্যবহার করছে। পরিশেষে, কাদিয়ানীদের মুখপাত্র আল-ফজল পত্রিকায় যা প্রচারিত হয়েছে, তার উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ‘‘ব্রিটিশ সরকার আমাদের জন্য ঢাল স্বরূপ।যার ছত্রছায়ায় আমরা কেবল সম্মুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যদি এ ঢাল সরিয়ে নেয়া হয়, তা হলে আমরা শত্রুর আক্রমণে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। সুতরাং এজন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছি যে, ব্রিটিশের উন্নতি অর্থ আমাদের উন্নতি এবং ওদের ধ্বংস অর্থ আমাদের ধ্বংস। (আল-ফজল ১৯শে অক্টোবর ১৯১৫ খৃ:) এটাই হল এ ধর্মান্তরিত দলের বাস্তব রূপ। যারা সাম্রজ্যবাদের কাছে তাদের আকিদা বিশ্বাসকে বিক্রি করে দিয়েছে। সর্বশক্তি দিয়ে তাদের খেদমত করেছে, আজও করে যাচ্ছে। ‘‘মহান আল্লাহর তওফীক ছাড়া গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং সৎকাজ সম্পাদন করার শক্তি-সামর্থ্য আমাদের কারো নেই’’

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন