hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কাদিয়ানী মতবাদ (পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ)

লেখকঃ এহসান ইলাহী জহীর

১১
নবম প্রবন্ধ: কাদিয়ানী নেতৃবৃন্দ ও তাদের বিভিন্ন উপদল:
ফার্সী ভাষায় কবিতার একটি জ্ঞানপূর্ণ ছন্দ আছে। যার মর্মার্থ হল ‘‘ভিত্তি স্থাপন কালে যদি প্রথম ইটটি বাঁকা অবস্থায় রাখা হয় তা হলে সমস্ত দালানটিই বাঁকা হওয়া অপরিহার্য।’’ এ জ্ঞানপূর্ণ কথাটি সম্পূর্ণরূপে কাদিয়ানীদের উপর প্রযোজ্য।

প্রথমত: গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে সে প্রতিশ্রুত মাসীহ, আল্লাহর নবী ও রাসূল এবং সকল নবী রাসূল হতে উত্তম হওয়ার দাবি করেছে। ইসলামের ভিত্তি ও সর্ব স্বীকৃত মূলনীতি সমূহকে সে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে এবং আল্লাহর নবী রাসূলগণ, ওলীগণ ও তার মনোনীত ব্যক্তিবর্গের অবমাননা করেছে। সে জালিম ইংরেজ উপনিবেশ দাবি প্রভুর ইঙ্গিতে এবং তাদের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তায় সম্পূর্ণরূপে ফিতনার দ্বার সমূহ খুলে দিয়েছে।

দ্বিতীয়ত: তার চতুষ্পার্শ্বে এমন কতকগুলো লোক জড়ো হয়েছে অথবা সে জড়ো করেছে, যারা তার মত বিশ্বাসঘাতক, অতি-লোভী ও ডলার পাউন্ডের বিনিময়ে তাদের অন্তঃকরণকে বিক্রি করে দিয়েছে। এদের কাছে শরীয়তের নীতিমালা ও চারিত্রিক সীমারেখার কোন গুরুত্ব নেই । বরং তারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং নিজস্ব সুবিধা অর্জনের জন্য সবকিছু এমনকি দ্বীন ও ঈমানকে বিক্রি করতে প্রস্ত্তত। তারা কোন প্রকাশ্য ক্ষতি ব্যতিরেকে যা কিছু খরচ করার সামর্থ্য রাখে তার সবটুকু এ পথে ব্যয় করতে থাকে। এরূপ লোকজন দ্বারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ধর্ম তৈরি করেছে। আর যদি অন্যরা বলি, এ সকল লোক দ্বারাই কাদিয়ানী মতবাদ সংগঠিত হয়েছে, তা হলে আমাদের এ প্রকাশ ভঙ্গিটি অধিক উপযোগী ও বিশুদ্ধ হবে। কেননা, এ সমস্ত লোকেরাই গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুয়তের জন্য অর্থ জোগান দিত এবং গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তাদের প্রচারক ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তারা তাকে যে কথা প্রচার করার পরামর্শ দিত সে তা-ই প্রচার করত এবং তারা যা বলতে চাইত সেটাই সে বলত। উপরোক্ত কথাগুলো আমি দলীল প্রমাণ ছাড়া বলিনি। বরং স্বয়ং ভন্ডনবী কাদিয়ানী থেকে উহার উদ্ধৃতি দিচ্ছি।

গোলাম আহমদ একটি পুস্তক রচনার ব্যাপারে সাহায্য সহযোগিতা কামনা প্রসঙ্গে লিখেছে ‘আপনার মূল্যবান পত্র পেয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। ইতিপূর্বে ইসলামের কিছু খেদমত করার আকাঙ্ক্ষা ছিল। কিন্তু আপনার পত্রখানা আমাকে অনেক অনেক সাহস জুগিয়েছে। আপনার কাছে যদি কিছু প্রবন্ধ-বলী থাকে, তবে উহা আমার নিকট পাঠিয়ে দিন।’’ (উস্তাদ চেরাগ আলীর কাছে গোলামের পত্র যা ‘সিওরুল মুছান্নিফিন’ এ সন্নিবেশিত।) সে আরো লিখেছে: দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর এখন পর্যন্ত নবুয়্যত প্রমাণ করা সম্পর্কে আপনার প্রবন্ধটি আমার কাছে পৌঁছেনি। তাই, আপনাকে দ্বিতীয়বার কষ্ট দিচ্ছি যাতে সত্ত্বর আপনার এ প্রবন্ধটি পাঠিয়ে দেন এবং কুরআনের হকীকত প্রমাণ করে আমার জন্য আর একটি প্রবন্ধ লিখবেন, যাতে উহা আমার পুস্তক বারাহীনে আহমদিয়া তে সন্নিবেশিত করতে পারি। (চেরাগ আলীর নিকট লিখিত গোলামের পত্র এবং ‘সিওরুল মুছান্নিফিনে’ ও তা সন্নিবেশিত।) কদিয়ানীদের অন্যতম নেতা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ও প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছে ‘জনাব (গোলাম) প্রতিশ্রুত মাসীহ ও নির্দিষ্ট মাহদী হওয়া সত্ত্বেও আমার নিকট শরীয়তের মাসআলা মাসায়েল জিজ্ঞাসা করতেন এবং এ ব্যাপারে আমার সহিত পরামর্শ করতেন। ( কাদিয়ানী নেতা মুহাম্মদ এহসান আমরুহীর প্রবন্ধ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজলে প্রচারিত এবং ২২ ডিসেম্বর ১৯১৬ খৃ: প্রকাশিত।) গোলাম পুত্র তার পুস্তকে একথা স্বীকার করে বলে: ‘জনাব তার আরবী কিতাব সমূহের পান্ডুলিপি গুলো তার প্রথম খলীফা নুরুদ্দীন ও উস্তাদ মুহাম্মদ আহ-সান আমরুহীর নিকট সংশোধনের জন্য পাঠাতেন। (একজন নবীর কি সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে থাকে?) প্রথম খলীফা যেভাবে উহা গ্রহণ করত ঐ ভাবে তা ফেরত দিয়ে দিত। (কেননা, গোলাম যা লিখত তার অধিকাংশের প্রকৃত লেখক সে ছিল। তাই, উহা পুনরায় দেখার প্রয়োজন মনে করত না।) কিন্তু, উস্তাদ মুহাম্মদ আহসান আমরুহী উহার সংশোধন ও পরিবর্তনে তার সমুদয় প্রচেষ্টা ব্যয় করতেন। (গোলাম পুত্র বশীর আহমদ কাদিয়ানীর সীরতে মাহদী ১ম খন্ড ৭৫ পৃ:।)

কাদিয়ানী পত্রিকায় এ কথা প্রচারিত হয় জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ আত-তাবলীগ’ নামক এক খানা কিতাব আরবী ভাষায় রচনা করেছেন যা তার ‘মেরাতু কামালাতে ইসলাম’ নামক পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত। সেই পুস্তক লেখা কালে তিনি এর পান্ডুলিপি হাকিমুল উম্মত নুরুদ্দীনের নিকট পড়ার জন্য পাঠাতেন। তিনি সংশোধন করে দেওয়ার পর উহা উস্তাদ আব্দুল করীমের নিকট ফার্সী ভাষায় রূপান্তরিত করার জন্য পাঠাতেন। (আল-ফজল ১৫ ই জানুয়ারি, ১৯২৯ খৃ:।) মোটকথা কাদিয়ানী নবুয়্যত এমনিভাবে এই সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের যোগসাজশে তৈরি হয়েছে। আমরা ভন্ডনবী কাদিয়ানীর চরিত্রের আলোচনা করতে গেলে এ সকল নেতাদের জীবন আলোচনা করাও আমাদের দায়িত্বে এসে পড়ে। কেননা, শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্য এতে শিক্ষা রয়েছে এবং এর দ্বারা ওদের প্রকৃত স্বরূপ জনসমক্ষে প্রকাশ পাবে। এছাড়া কাদিয়ানী ধর্মের আলোচনা সম্পূর্ণ হবে না তাদের ভিতরকার দল উপদলের আলোচনা ব্যতিরেকে, এ প্রবন্ধটি রচনা করি।

মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর প্রতি চ্যালেঞ্জ করে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার নিজের জন্য ১৯০৭ সালের ১৫ই এপ্রিল এ বদ দোয়া করেছিল (নিশ্চয়ই যে মিথ্যাবাদী সে সত্যবাদীর জীবদ্দশায় প্লেগ বা কলেরা রোগে মারা যাবে।) এর ফলশ্রুতিতে উক্ত দোয়ার মাত্র এক বৎসর পর ১৯০৮ সালে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর জীবদ্দশায়ই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে পায়খানা গৃহে প্রয়োজন সারতে সারতে সে মারা যায়। [১ গুলাম আহমদের মৃত্যুর পর আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী প্রায় চল্লিশ বৎসর জীবিত ছিলেন।] তাই তার মৃত্যুর পর কাদিয়ানী নেতা ও তার নবুয়তের প্রতিষ্ঠাতাগণ তার ত্যাজ্য সম্পত্তি বণ্টনে এবং একে অন্যের সহিত ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হল। এদের মধ্যে প্রধান ছিল নুরুদ্দীন, মুহম্মদ আলী, গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ, কামাল উদ্দিন, মুহাম্মদ আহসান আমরুহী, ইয়ার মুহাম্মদ, আব্দূল্লাহ টিমাপুরী ও মুহাম্মদ সাদেক। তখনকার সময়ে নুরুদ্দিন ও মুহাম্মদ আলী তাদের শিরোমণি ছিল। এদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি (অর্থাৎ নুরুদ্দীন) সম্পর্কে প্রসিদ্ধ ছিল যে, গোলাম আহমদের নামে যে সকল পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে, সে-ই উহার প্রকৃত রচয়িতা। এই ব্যক্তিই ভন্ডনবী গোলাম আহমদের মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি থেকে নিয়ে নবুয়তের শেষ দাবির সময় পর্যন্ত তার অর্থ জোগান দিত। এটা অযৌক্তিক কথা নয়; কেননা, গোলাম আহমদ স্বয়ং একটা নির্বোধ ও বোকা লোক ছিল। পূর্বের দুটি প্রবন্ধ কদিয়ানীরা সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট এবং ইতিহাসের আলোকে কাদিয়ানীদের নবী এর মধ্যে আমরা এর বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সে তো শরীয়ত সম্পর্কে বিশুদ্ধ ও নিয়মিত শিক্ষা গ্রহণও করেনি। বিশেষকরে আরবী ভাষায় বিশেষ কোন জ্ঞান অর্জন করেনি। কিন্তু নুরুদ্দীন ছিল এর বিপরীত। প্রথমত: সে আরবী ভাষায় শিক্ষা লাভ করেছে। দ্বিতীয়ত: সে দীর্ঘ দিন যাবৎ হিজাজে অবস্থান করেছে। তৃতীয়ত: সে কল্পনা প্রবণ ব্যক্তি ছিল। নুরুদ্দীনের প্রতি গোলামের লিখিত পত্রাবলি আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে। কেননা, গোলাম সর্বদাই তার সহিত আদব রক্ষা করে চলত এবং তাকে এমন সব উপাধি দ্বারা ভূষিত করে যা উস্তাদ বা শেখ ব্যতীত আর কারো জন্য প্রয়োগ করা হয় না। একদা সে নুরুদ্দীনকে লিখে: ‘‘আমার শ্রদ্ধেয় বন্ধু শেখ হাকীম নুরুদ্দীন! আল্লাহ তাকে নিরাপদে রাখুন! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহু ! আপনার উপকার হয়নি জেনে আশ্চর্য হলাম.....। খাদেম গোলাম আহমদ। (নুরুদ্দীনের নিকট লিখিত গোলামের পত্র যা গোলামের চিঠিপত্র সংকলন ‘‘মাকতুবাতে আহমাদিয়া’’ তে সন্নিবেশিত, ৫ম খন্ড, ১৪ পৃ: ২নং পত্র।) সে আরো লিখেছে: ‘শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত বন্ধু শেখ হাকীম নুরুদ্দীনের প্রতি ....... খাদেম, গোলাম আহমদ’’। (মাকতুবাতে আহমদিয়া ৫ম খন্ড ১৪ নম্বর) নুরুদ্দীনের সহিত এটাই ছিল তার আচরণ। এটা কি যুক্তি সংগত যে, একজন নবী তার শিষ্যদেরকে এরূপ উপাধি দ্বারা সম্বোধন করতে পারে? গোলাম আহমদের মৃত্যুর প্রায় বিশ বৎসর পর ১৯৯২ সালে তারই পুত্র ও দ্বিতীয় খলীফা কাদিয়ানে প্রদত্ত ভাষণে অসাবধানে আমাদের এ কথা স্বীকার করে বলেছে: ‘‘অনেক লোক বলত, জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ (গোলাম) উর্দু পর্যন্ত জানেন না। অন্য লোকে আরবী পুস্তক সমূহ লিখে তার সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছে। কেহ কেহ এর চেয়ে অধিক বলত: শেখ নুরুদ্দীনই তার জন্য পুস্তক লিখে দেয়। বাস্তব অবস্থা হল জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ এ কথা দাবি করেন নি যে, তিনি কারো কাছ থেকে জাহেরী উলুম শিক্ষা লাভ করেছেন এবং তিনি বলতেন-, আমার উস্তাদ আফিম ব্যবহার করতেন। [১ সম্ভবতঃ ভন্ডনবী কাদিয়ানী তার এ সকল উস্তাদের ন্যায় আফিমের অভ্যাস্ত ছিল। তার পুত্র মাহমুদ বর্ণনা করেছে, জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ ওষধ তৈরী করতেন, যার বড় অংশ ছিল আফিম তিনি এ ওষধ সর্বদা ব্যবহার করতেন। এমনিভাবে নুরদদ্দীনকে উহা ব্যবহার করতে দিতেন।] অনেক সময় তিনি হক্কা পান করতেন এবং অনেক সময় অতিশয় নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে হক্কা মাটিতে পড়ে যেত। এরূপ উস্তাদ কি শিক্ষা দিত? (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের ভাষণ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজলে সন্নিবেশিত, ৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯২৯ খৃ:) ইতিপূর্বে গোলামের দ্বিতীয় পুত্রের বক্তব্য ও আল-ফজল পত্রিকা থেকে আমরা উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছি যে, ভন্ডনবী কাদিয়ানী পান্ডুলিপিগুলো সংশোধনের জন্য নুরুদ্দীনের নিকট পাঠাত। [১ এটা অতি আশ্চর্যের বিষয় যে, কোন নবী কি তার অনুসারীদের কাছে এ কথার মুখাপেক্ষী যে, সে তার কথা বার্তাকে সংশোধন করে দেবে?] সুতরাং এ নুরুদ্দীনই গোলামের মৃত্যুকালে প্রকৃত পক্ষে প্রথম ব্যক্তি ছিল এবং কাদিয়ানীদের কাছে পদে তার পরবর্তী ব্যক্তি ছিল মুহাম্মদ আলী। সে মাস্টার ডিগ্রি এবং কাদিয়ানী সাম্রাজ্যবাদীদের উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। এ জন্য গোলাম কাদিয়ানী তাকে একান্ত বিশেষ লোক হিসেবে ‘‘রিভিউ অব রিলিজিউন্সের সম্পাদক নিযুক্ত করে ছিল। অনুরূপভাবে তাকে কাদিয়ানী কয়েকটি কমিটির সভাপতিও নিযুক্ত করেছিল। সে ভন্ডনবী ও তার ইংরেজ প্রভুদের মধ্যে মাধ্যম হিসাবে কাজ করত। কাদিয়ানীদের মধ্যে মর্যাদা ও সম্মানের দিক দিয়ে এ দু ব্যক্তির সমকক্ষ আর কেহ ছিল না। অবশ্য, তৃতীয় এক ব্যক্তিও ছিল যে গোলামের জীবদ্দশায়ই অত্যন্ত ঘৃণিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এ আলোচনা পরে আসবে। প্রথমে আমরা নুরুদ্দীনের ও মুহাম্মদ আলীর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করব। পরে কাদিয়ানীদের অন্যান্য বড় বড় লোকের জীবন আলোচনা করব; যাতে পাঠক গোলাম আহমদের সঙ্গী সাথী, খলিফাগণ, কাদিয়ানীদের সর্দার ও নেতাগণের প্রকৃত রূপ জানতে পারে এবং আরো জানতে পারে যে, কোন ধরনের লোকজন নিয়ে এ দলটি গঠিত হয়েছিল। কারণ, এরাই হল কাদিয়ানী ধর্মের ভিত্তি ও বীজ।

নুরুদ্দীন:

কাদিয়ানীদের প্রথম খলীফা নুরুদ্দীন অতিশয় লোভী ও মান-মর্যাদার আকাঙ্ক্ষী ছিল। সূচনা লগ্ন থেকেই তার ব্যক্তিতব বিকাশের প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাই, যখন ভারত বর্ষে খোদাদ্রোহী নাস্তিকদের আবির্ভাব ঘটল, তখন সে তাদের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করল। এরা খারাপ ও ঘৃণ্য হওয়া সত্ত্বেও তারা আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান ও জড় বিজ্ঞানে পারদর্শী ছিল। আর এ, মিসকীন ব্যক্তির তো সমস্ত পড়া-শুনা মক্তবের ভিতর অথবা প্রাচীন চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কে ছিল। এ জন্য সে ওদের কাছে কোন সম্মান লাভ করতে পারে নি। ইত্যবসরে ঘটনাচক্রে গোলাম কাদিয়ানীর সাথে তার পরিচয় হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল যে, এ ব্যক্তিই তার ও তার আশা-আকাঙ্ক্ষার উপযুক্ত। সুতরাং সে তার সাথে মিশে গেল। স্বয়ং গোলাম পুত্র উল্লেখ করেছে- ‘‘জনাব শেখ নূরুদ্দীন নাস্তিকদের চিন্তা ধারায় প্রভাবান্নিত ছিল। কিন্তু জনাব গোলামের সাথে মিশে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে এ প্রভাব দূর হয়ে গেল।’’ (গোলাম কাদিয়ানীর সীরতে মাহদী’ ১ম খন্ড ১৪১ পৃ:) গোলামের সাথে তার মিশে যাওয়ার পর তাকে ইচ্ছা মাফিক পরিচালনা করতে লাগল এবং তার সমস্ত ভিত্তিহীন ও অমূলক প্রয়োজনে তাকে সবরকমের তথ্য সরবরাহ শুরু করে। যা আমরা এইমাত্র উল্লেখ করেছি। এ দ্বারা তার নিজের ব্যক্তিত্বের বিকাশ চরিতার্থ করা উদ্দেশ্য ছিল। আর সে তা গোলামের মৃত্যুর পরই লাভ করে। তখন সে দাবি করল যে, এ জমিনে সে আল্লাহর রাসূল (অর্থাৎ গোলামের নায়েব) যদি তার এ দাবি উদ্দেশ্য না হত তা হল এ সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে তার শক্তির অপচয় করত না। অতএব, সে ঘোষণা দিল: ‘‘আমি মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনিই আমাকে তাঁর খলীফা নির্ধারিত করেছেন। এমন কে আছে যে খেলাফতের এ চাদর আমা থেকে কেড়ে নিতে পারে? আল্লাহ তাঁর পছন্দ ও ইচ্ছায় আমাকে তোমাদের ইমাম ও খলীফা নিযুক্ত করতে চেয়েছেন। সুতরাং তোমরা যা ইচ্ছা তা বলতে থাক। কিন্তু তোমরা আমাকে যে সমস্ত অপবাদ দেবে ও নিন্দা করবে তা আমার নিকট পৌঁছোবে না, বরং পৌঁছোবে আল্লাহর নিকট। কেননা, তিনিই আমাকে খলীফা নিযুক্ত করেছেন।’’ (নুরুদ্দীনের ঘোষণা, যা কাদিয়ানী ম্যাগাজিন রিভিউ অব রিলিজিওন্স এ সন্নিবেশিত, ১৪ খন্ড ৬ নম্বর, ২৩৪ পৃ:) তখন কাদিয়ানীরা তাদের নবীর খলীফা হিসেবে তার হাতে বাইয়াত করল। কারণ গোলাম আহমদের পরিবারের সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল এবং তারা জানত যে তাদের ভন্ডনবী তাকে অতিশয় সম্মান করত। বিশেষ করে যখন সাম্রাজ্যবাদী সরকার খেলাফতের মুকুট তার মাথায় রাখতে সম্মতি প্রদান করল। এরপর তার খিলাফতকে সমর্থন করা ছাড়া বিমুখ হওয়ার ক্ষমতা কারো ছিল না। উল্লেখ্য যে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের নিজেদের প্রতি তার ভালোবাসা , নিষ্ঠা ও সেবা এবং মুসলমানদের প্রতি তার বিশ্বাস ঘাতকতার ব্যাপারে পরীক্ষা করেই তার খেলাফত সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছিল। ফলে সে কাদিয়ানী সিংহাসনের উপর জমে বসল এবং (নাউযুবিল্লাহ) নিজেকে আবু বকরের রা. সমতুল্য বলে ঘোষণা দিল।

কোথায় এ গান্ধী খবীছের অবস্থান? আর কোথায় আবু বকর রা. এর মত পাক পবিত্র ব্যক্তি? সে তো ঐ ব্যক্তি যে তার নিজ সম্পর্কে বলে: ‘‘আমি জম্মু এলাকায় ছিলাম। তথাকার একজন হিন্দু মহিলা আমাকে ভালোবাসত। যখন আমার দুই পুত্র ফজলে ইলাহি ও হাফিজুর রহমান মারা গেল তখন সে আমার নিকট এসে বলল- আমি এমন এমন দুটি পুত্র তোমাকে দান করব। উত্তরে আমি তাকে বললাম- এমনি ভাবে কি বদলা পাওয়া সম্ভব? (আকবর কাদিয়ানীর মিরাকাতুল ইয়াকীন ফি হায়াতে নুরুদ্দীন’ ১৯৯ পৃ:) কোথায় ঐ ব্যক্তির অবস্থান যে তার দ্বীন ও ঈমান কে তুচ্ছ পার্থিব মান সম্মানের জন্য বিক্রি করেছে এবং কোথায় আবু বকর রা. এর অবস্থান যিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছেন এবং ঈমান ও দ্বীন ইসলামের জন্য তার নেতৃত্ব ও আধিপত্যকে ত্যাগ করেছেন? এজন্য আল্লাহ তাআলা ঐ বিশ্বাস ঘাতক থেকে ভীষণ অপমানকর প্রতিশোধ নেন। সে দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকে, এমনকি সে তার জ্ঞান ও বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে। এমনি ভাবে সে দীর্ঘ দিন আল্লাহর শাস্তিতে কাটানোর পর জঘন্যভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অতঃপর তার যুবক পুত্র কাদিয়ানীদের বিষ প্রয়োগে মারা গেল এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী অন্য এক ব্যক্তির সাথে পলায়ন করে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়ে যায়। স্বয়ং কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল একথা উল্লেখ করে বলেছে যে, নূরুদ্দীনের সেই উক্তি কোথায়? ‘‘জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ আল্লাহর নবী ও রারূল।’’ তার ঐ উক্তিটি যে, জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ কুরআনের ঐ আয়াতের লক্ষ্য- ‘‘আমার পরে এক রাসূল আসবেন যার নাম হবে আহমদ। [১ সুরা আছছাফ-৬ (মিথ্যুক কাদিয়ানীরা দাবী করে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম এর ভাষায় কোরআন শরীফে রাসুল সা. এর যে সব গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে এগুলোর উদ্দেশ্য তিনি নন বরং উদ্দেশ্য গুলাম আহমদ কাদিয়ানী।)] শেষের দিকে মাসীহের রেসালতের স্বীকৃতি থেকে নীরব থাকা এবং এর উপর অটল থাকা থেকে বিমুখ হওয়া এবং শাস্তি স্বরূপ ঘোড়ার পিট থেকে পড়ে যাওয়া, অতঃপর মৃত্যুর পূর্বে কথা বন্ধ হওয়া, দরিদ্রতার মধ্যে মৃত্যুবরণ করা তার পুত্র আব্দুল হাই অল্পদিন পর পূর্ণ যৌবনে মৃত্যুবরণ করা, এবং জঘন্য ও নিকৃষ্ট তার স্ত্রীর অন্যত্র বিবাহ সূত্রে অবদ্ধ হওয়ার কারণ কি? এসব বিষয়ে উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য কি কোন উপদেশ নেই? (আল ফজল, ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯২২ খৃষ্টাব্দ, রেসালাতে খাজিনাতুস সাদাকাত’ হতে উদ্ধৃত) শুধু এটাই নহে বরং তার কন্যা গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের স্ত্রী নিহত হল এবং মাহমুদ আহমদকে এ হত্যা কান্ডের ও তার ভাই আব্দুল হাই এর হত্যা কান্ডের জন্য অভিযুক্ত করা হল। (কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল ৩রা আগস্ট ১৯৩৭ খৃ:) এমনিভাবে সে যে পার্থিব মান সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করার জন্য মুহাম্মদে আরবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বিশ্বাস-ঘাতকতা করেছিল, তা থেকে সে বঞ্চিত হল। ফলে, সে তার পুত্র ও তার কন্যা যে ভন্ডনবীর পুত্রবধূ ছিল সকলেই মারা গেল। তার দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল মান্নান জীবিত রইল। যখন সে এ সমস্ত অত্যাচারের প্রতিবাদ করল তখন সে মুনাফেকির অভিযোগে দল-চ্যুত হল। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হল। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। সে ১৩ মার্চ ১৯১৪ সালে মারা গেল। তার মৃত্যুর পর গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদকে খেলাফতের মুকুট পরান হল। এর আলোচনা করার পূর্বে আমি মুহাম্মদ আলীর জীবন সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে চাই, যার স্থান নূরুদ্দীনের পরেই।

লাহোরী কাদিয়ানীদের আমীর মুহাম্মদ আলী:

মুহাম্মদ আলী আধুনিক উচ্চ শিক্ষায় মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করে। অতঃপর উপযুক্ত কোন কাজ কর্ম পায়নি। ফলে, সে বেকার অবস্থায় দিন কাটাতে থাকে। অবশেষে সাম্রাজ্যবাদীরা তাকে শিকার করে নেয় এবং তার দ্বীন ঈমান ক্রয় করে তাদের এজেন্ট বিশ্বাসঘাতক ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী কাদিয়ানীর নিকট সপোর্দ করে, যাতে সে তার সাথে মিলিত হয়ে একসঙ্গে কাজ করে এবং ইসলাম ধর্ম ধ্বংস করতে মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসে সন্দেহ সৃষ্টি করতে ও তাদের মধ্যে ফিতনার বীজ বপন করতে তাকে সাহায্য করে। তার জন্য বড় অঙ্কের বেতন নির্ধারণ করা হয়। যার পরিমাণ ঐ সময়ে দুই শত টাকার অধিক ছিল তখনকার দিনে কোন ব্যক্তি বেতন রূপে পঞ্চাশ টাকা পেলে তাকে আমীর বলে গণ্য করা হত। উল্লেখ্য যে, গোলাম আহমদ যে মুহাম্মদ আলীর সর্দার ও নেতা ছিল সে তার নবুয়তের দাবির পূর্বে মাসিক মাত্র পনেরো টাকা বেতনরূপে গ্রহণ করত। এত বড় অঙ্কের টাকা সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। সুতরাং সে ভন্ডনবী কাদিয়ানীর সহিত মিলিত হয়ে ইসলামের এমারতে ছিদ্র করার কাজে রত হয়ে পড়ল এবং মির্জার প্রয়োজনীয় ভিত্তিহীন ও বাতিল মতবাদ তাকে জোগান দিতে থাকে। এমনি ভাবে তাকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদীদের গুপ্তচররূপে তৈরি করা হল। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীরা অত্যন্ত ধূর্ত ও বিপদজনক লোক ছিল। কেননা, তারা গোলাম আহমদের মাথায় নবুয়তের মুকুট পরানোর পর একথা অনুভব করল যে, তার পাশে আধুনিক ও অন্যান্য শিক্ষায় সুদক্ষ কিছু লোক জড়ো করা প্রয়োজন, যারা সাধারণ শিক্ষিত মুসলমানদের মধ্যে ফিতনা ছড়াতে পারে। আর, তাদেরই একজন ছিল মুহাম্মদ আলী। গোলাম আহমদ সাম্রাজ্যবাদীদের ইঙ্গিতে তার জন্য একটি মাসিক ম্যাগাজিন রিভিউ অব রিলিজিউন্স প্রকাশ করল। যার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থী ও আধুনিক সংস্কৃতির অধিকারীদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক চিন্তাধারা প্রচার করা। আর এটা তার হাতেই সপোর্দ করা হল। কোন এক কাদিয়ানী লেখক উল্লেখ করেছে যে, রিভিউ অব রিলিজিওন্স একটি মাসিক ম্যাগাজিন। মুকাদ্দাস (গোলাম) তার চিন্তাধারা ও শিক্ষা দীক্ষা পৃথিবীতে ছড়াবার জন্য এটা প্রকাশ করেছেন। আর উস্তাদ মুহাম্মদ আলীকে এর প্রধান সম্পাদক নিয়োগ করেছেন।’ (মুহাম্মদ ইসমাঈল কাদিয়ানীর ‘আন-নাজবাতু আলা আজবিবাতিত তাহাররিয়াতিস সাবিকা লিমুহাম্মদ আলী’ ৬৪ পৃ:) গোলামের মৃত্যুর পর এ ম্যাগাজিনের শুধু তদারকের দায়িত্ব তার উপর রাখা হয় এবং কাদিয়ানিগণ কর্তৃক বিকৃত কুরআনের অর্থ ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করার দায়িত্বও তার উপর ন্যস্ত করা হয়। যাতে সে কাদিয়ানীদের মেকী বিচ্যুতিপূর্ণ আকীদা বিশ্বাসের দ্বারা তা পরিপূর্ণ করতে পারে। প্রথম দিকে কাদিয়ানীদের প্রথম খলীফা নূরুদ্দীনের উপর এ অনুবাদ দেখা শুনার দায়িত্ব ছিল।‘‘প্রতিশ্রুত মাসীহের প্রথম খলীফা জনাব নূরুদ্দীন কুরআনের ব্যাখ্যা উস্তাদ মুহাম্মদ আলী দিয়ে লিখাতেন। উস্তাদ মুহাম্মদ আলী এ কাজে নিয়োজিত হয়ে মাসিক দুই শত টাকার বেতন ভোগ করতেন।’’ (আল-ফজল, ২রা জুন ১৯৩১ খৃ: প্রকাশিত।) শের আলী কাদিয়ানী লিখেছে- উস্তাদ মুহাম্মদ আলী অনুবাদের কাজে নিয়োজিত হওয়ার পর তাকে শুধু ম্যাগাজিন দেখা শুনার ভার দেওয়া হল এবং আমাকে এর সম্পাদক নিযুক্ত করা হল। আমি প্রবন্ধাবলি লিখতে লাগলাম এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত এগুলো প্রকাশ করার পূর্বে উস্তাদ মুহাম্মদ আলীর নিকট পেশ করতাম। (শের আলী কাদিয়ানীর আত তাবছেরা আলাল আকায়েদেসসাবেকা, উস্তাদ মুহাম্মদ ২৪ পৃ:) যেহেতু সে গোলাম আহমদ ও তার নবুয়তের হাকীকত জানত, তাই সে গোলাম আহমদ ও তার পরিবারের কারো প্রতি ভ্রূক্ষেপ করত না। বরং সে অনেক সময় তার উপর অভিযোগ করত এবং তার জীবদ্দশায়ই তার অবমাননা করত। এমনকি, অনেকবার সে তাকে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণকারী রূপে অপবাদ দিয়েছে। (অর্থাৎ সে একাকী ভোগ করত, অন্য কাউকে এতে অংশীদার করত না।) কিন্তু গোলাম এর কোন প্রতি উত্তর দেয়নি এবং এর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কেমন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? সে তো এ সমস্ত লোকের কাছে ঋণী ছিল। এখানে আমরা গোলাম পুত্র ও তার খলীফা মাহমুদ আহমদের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। সে কাদিয়ানীদের প্রথম খলীফা নূরুদ্দীনের নিকট লিখছে ...‘‘উস্তাদ মুহাম্মদ আলী উস্তাদ কামালউদ্দিন সর্বদাই জনাব (গোলাম) এর উপর অভিযোগ করে থাকেন। এমনকি নওয়াব মুহাম্মদ আলী (গোলামের শ্বশুর) আমাকে বলেছেন যে, একবার কামালউদ্দিন ও মুহাম্মদ আলী তাকে বলেছেন যে, গোলাম আহমদের কাছ থেকে হিসাব নিকাশ গ্রহণের সময় এসে গেছে। তাই জনাব (গোলাম) তার মৃত্যুর একদিন পূর্বেও বলেছেন: উস্তাদ মুহাম্মদ আলী ও খাজা কামালউদ্দীন আমার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করেন এবং বলেন যে, আমি অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে থাকি। এটা তাদের জন্য সমীচীন নহে। এরপর গোলাম বলে: আজ আমার নিকট উস্তাদের কাছ থেকে একটি পত্র এসেছে; এতে তিনি বলেছেন যে, পারিবারিক খরচ তো অল্পই হয়ে থাকে। এ হাজার হাজার টাকার অবশিষ্ট সম্পদ কোথায় ব্যয় করা হয়? (হয়ত এর দ্বারা সে সাম্রাজ্যবাদীদের ভন্ডনবীর নিকট তাদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধি রূপে তার নিজের অংশই উদ্দেশ্য করেছে।) জনাব অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বললেন: এ সমস্ত লোক বলে যে, আমরা অবৈধ মাল ভক্ষণ করি। এ সমস্ত সম্পদের সাথে তাদের কি সম্পর্ক? (তাদের সম্পর্ক কেন থাকবে না? তারা কি নবুয়তের অংশীদার নহে?) আমি যদি তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাই তবে এ সম্পদের কিছুই এমনকি একটি পয়সাও তাদের কাছে আসবে না। (এর দ্বারা কি ভক্ষণ করা বৈধ হয়ে যাবে? নূরুদ্দীনের নিকট গোলাম পুত্রের যা লাহোরী কাদিয়ানীদের আমির মুহাম্মাদ আলীর হাকীকতুল ইখতেলাফ কিতাবে সন্নিবেশিত, ৫০ পৃ:) ঠিক এ অর্থই কাদিয়ানী মুফতি সরওয়ার শাহ তার পুস্তক কাশফুল ইখতেলাফে উল্লেখ করেছে- উস্তাদ মুহাম্মদ আলী ও খাজা কামাল উদ্দীন সর্বদাই সম্পদের ব্যাপারে প্রতিশ্রুত মাসীহের উপর অভিযোগ করতেন এবং সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখতেন।(সরওয়ার কাদিয়ানির কাশফুল ইখতেলাফ) এমনিভাবে তাদের বঞ্চিত রেখে একাকী সম্পদ জড়ো করা ও সঞ্চিত করার ব্যাপারে ভন্ডনবী কাদিয়ানীর সাথে যখন বিরোধ চলছিল, তখন গোলাম মারা গেল এবং কাদিয়ানী খেলাফতের মুকুট নুরুদ্দীনের মাথায় পরানো হল। ফলে, তারা ইংরেজদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এবং মুরিদগণের কাছ থেকে লুণ্ঠিত সম্পদ বণ্টন করতে লাগল । শেষ পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদীরা এক নতুন চিন্তা ভাবনা শুরু করল। তখন কাদিয়ানীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াতে তাদের কাজ-কর্ম এবং মুসলমানগণকে প্রতারণা করার ব্যাপারটা শিথিল হয়ে পড়েছিল। কারণ, মুসলিম আলেমগণ জাগ্রত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের শীর্ষে ছিলেন শেখ ফাজেল মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী, ইসলাম ধর্মের তর্ক বিশারদ শেখ ছনাউল্লাহ অমৃতসরী, শেখ জলীল মুহাম্মদ ইব্রাহীম শিয়ালকোটি এবং শেখুল আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জলন্দরী প্রমুখ আলেম-ফাজেলগণ। (তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক , আর যারা জীবিত আছেন তাদেরকে আল্লাহ হেফাজতে রাখুন।) এদের প্রত্যেকেই কাদিয়ানী ধর্মের প্রতিবাদে পৃথক পৃথক পুস্তক রচনা করলেন এবং তাদের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে দিলেন। তাদের বাস্তব রূপ উদ্ঘাটন করলেন এবং মুসলমানগণকে এদের মিথ্যা নবুয়্যত ও মিথ্যাবাদী নবী থেকে সতর্ক করে দিলেন। ফলে সাম্রাজ্যবাদীরা এ ধর্মান্তরিত দলের পেছনে যে পরিশ্রম করেছিল তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেখে ভীত হয়ে পড়ল। তারা তাদের কনিষ্ঠ এজেন্ট মুহাম্মদ আলী যে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য কাদিয়ানীদের বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তাকে ইঙ্গিত করল, যাতে সে তার নেতৃত্বে একটি নতুন দল তৈরি করে এবং ঘোষণা দেয় যে, গোলাম আহমদের দাবি নবুয়তের দাবি ছিল না; বরং তার দাবি ছিল যে, সে এ মিল্লাত অর্থাৎ মিল্লাতে ইসলামিয়ার মুজাদ্দিদ ও সংস্কারক। তা হলে মুসলমানদের মধ্যে যারা ইতিপূর্বে প্রতারিত হয়নি তারা এখন প্রতারিত হবে এবং এভাবে তারা গোলাম আহমদের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। এর ফলে মূল কাদিয়ানী ধর্মে তাদেরকে প্রবেশ করানো সহজ হয়ে যাবে। অথবা কমপক্ষে প্রতিরক্ষাকারী জীবন্ত ইসলাম এবং ইসলামের মুজাহিদ রাসূলের শিক্ষা থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে। এইভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত ও মুহাম্মদ আলীর লোভ লালসা অনুসারে এ দলটি সংগঠিত হল, তাদের চিন্তা ধারা ও ধর্ম বিশ্বাসের বিভিন্নতার কারণে নহে। যেমন তারা ধোঁকা ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে তা প্রকাশ করে থাকে। লাহোরে এ দলের কেন্দ্র স্থাপন করা হল। এমনি ভাবে মূল কাদিয়ানী ধর্মের কেন্দ্র কাদিয়ান থেকে গেল। (মুহাম্মদ আলীর তাহরিকে আহমদিয়া ৩০পৃঃ) পূর্ববর্তীরা নিরঙ্কুশ কাদিয়ানী নামে এবং এরা লাহোরী কাদিয়ানী নামে খ্যাতি লাভ করল। ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, লাহোরী কাদিয়ানীরা তাদের চিন্তা ধারা ও বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে বিরোধ প্রকাশ করেনি। কেননা, ভিতরে ভিতরে তাদের ধর্ম বিশ্বাস অবিকল কাদিয়ানী ধর্ম বিশ্বাসের মতই ছিল। স্পষ্ট বর্ণনা দেখুন! লাহোরী কাদিয়ানী অর্থাৎ মুহাম্মদ আলী দলের একটি পত্রিকা তাদের মূল ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ প্রচার করেছে। তাতে রয়েছে আমরা প্রতিশ্রুত মাসীহের প্রাথমিক সেবকগণ। আমাদের বিশ্বাস যে, জনাব আল্লাহর সত্য ও সঠিক রাসূল ছিলেন। এ যুগের জনগণের পথ প্রদর্শন ও হেদায়েতের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। অনুরূপভাবে আমরা বিশ্বাস করি যে, তার অনুসরণ ছাড়া কারো মুক্তি পাওয়া সম্ভব নহে। (লাহোরী কাদিয়ানীদের পত্রিকা পয়গামে সুলাহে ৭ই সেপ্টেম্বর ১৯১৩ সালে প্রকাশিত।) এই মুহাম্মদ আলী নিজেই লিখেছে- আমাদের বিশ্বাস যে ,গোলাম আহমদ প্রতিশ্রুত মাসীহ ও নির্দিষ্ট মাহদী এবং তিনি আল্লাহর নবী ও রাসূল। তিনি তাকে এ মর্যাদায় পৌঁছিয়েছেন যা সে নিজের জন্য বর্ণনা করেছিল। (অর্থাৎ সকল রাসূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।) অনুরূপভাবে আমরা এ বিশ্বাসও করি যে, যে ব্যক্তি তাকে বিশ্বাস করবে না সে মুক্তি পাবে না। (রিভিউ অব রিলিজিওন্স ৩য় খন্ড ১১ নম্বর ৪১১ পৃ:।) সে আরো লিখেছে যদি মুসা আল্লাহর নবী হয়ে থাকেন এবং ঈসা আল্লাহর রাসূল হয়ে থাকেন তবে গোলাম আহমদ আল্লাহর নবী ও রাসূল। কেননা, যে সকল নিদর্শনা বলী দ্বারা আমরা আল্লাহর নবীদের পরিচয় পাই, তার সবগুলো গোলাম আহমদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর উপর আমার মাতা-পিতা উৎসর্গ হোক এবং তার উপর সালাত ও সালাম। (রিভিউ অব রিলিজিউনাস ৯ম খন্ড ৭নম্বর ২৪৮ পৃ:।) তার সম্পর্কে এরূপ কথা অনেক। কিন্তু মুহাম্মদ আলী অন্যত্র দাবি করেছে: আমরা বিশ্বাস করি না যে, গোলাম আহমদ আল্লাহর নবী ও রাসূল, বরং আমাদের বিশ্বাস তিনি একজন মুজাদ্দিদ ও সংস্কারক। (পয়গামে সুলাহ ১৯৩১ খৃ:।) তার এই দাবি বাস্তব বিরোধী ও তার পূর্ববর্তী বিবৃতি-বক্তব্যের পরিপন্থী। কেননা, গোলাম আহমদের দাবিসমূহ যাতে কোন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। সে স্পষ্টভাবে দাবি করেছে যে, আল্লাহর নবী ও রাসূল এবং সকল নবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এমনকি সে (নাউজুবিল্লাহ) মুহাম্মদে আরবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও উত্তম আমরা পূর্ববর্তী কয়েকটি প্রবন্ধে এর বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এমনি ভাবে এখন আমরা মুহাম্মদ আলী ও তার দল সম্পর্কে উল্লেখ করছি যে, তারা মুসলমানদের প্রতারণা করা ও যাদেরকে ইতিপূর্বে প্রতারণা করা সম্ভব হয়নি তাদেরকে শিকার করার জন্য তারা তাদের এ আকীদা প্রকাশ করছে। কার্যত: সরলমনা মুসলমানদের একটি দল তাদের সাথে শামিল হয়ে গেল, যারা গোলাম কাদিয়ানীর দাবিদাওয়া ও এ দলের বাস্তব রূপ সম্পর্কে অবগত ছিল না। যখন তারা জানতে পারল, তখন তারা এ দল এবং মিথ্যাবাদী কাদিয়ানী থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করল।

মোটকথা, মুহাম্মদ আলী ও তার লাহোরী কাদিয়ানী জামাত ঐ আকীদা পোষণ করে যে আকীদার উপর কাদিয়ানী স্থির রয়েছে। কিন্তু তারা তাদের অন্তরে লুক্কায়িত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বাহ্যিকভাবে ঐ আকীদা ত্যাগ করে চলছে। এ উদ্দেশ্যটির সার বিষয় হল নিম্নোক্ত তিনটি:

প্রথমত: কাদিয়ানীদের প্রকৃত প্রভু সাম্রাজ্যবাদের ইঙ্গিত ছিল যে, কাদিয়ানীদের এমন একটি দল গঠন করতে হবে যারা সাধারণ মুসলমানদের সাথে সদ্ব্যবহার করে তাদেরকে গোলাম আহমদের নিকটবর্তী করে দেবে। এটা জানা কথা, যে ব্যক্তি গোলামের নিকটবর্তী হবে সে ইসলাম হতে দূরে সরে পড়বে এবং কাদিয়ানীদের প্রকৃত মুরবিব সাম্রাজ্যবাদের নৈকট্য লাভ করবে। লাহোরী কাদিয়ানী পত্রিকা এ দিকে ইঙ্গিত করে বলছে- হায়, যদি কাদিয়ানীরা গোলাম আহমদকে নবীরূপে প্রকাশ না করত....! যদি তারা এমন করত তা হলে কাদিয়ানী ধর্ম পৃথিবীর সকল প্রান্তে প্রবেশ করত।’ (পয়গাম সুলাহ’ ১৭ই এপ্রিল, ১৯৩৪ খৃ:)

প্রকাশ থাকে যে, মুহাম্মদ আলী নিজেই আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে মরিসাস দ্বীপে একজন কাদিয়ানী মুবাল্লেগের নিকট লিখেছে ‘তোমাদের উচিত, তোমরা সেখানে এ সব কথা প্রচার করবে না যে, গোলাম আহমদ নবী ছিলেন, মুজাদ্দিদ নয় এবং যে তাকে বিশ্বাস করবে না সে কাফের। কেননা, এ দুটি বিশ্বাস ভারতবর্ষে কাদিয়ানী ধর্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। (লাহোরী কাদিয়ানীদের আমির মুহাম্মদ আলীর মরিসাস দ্বিপে জনৈক কাদিয়ানী মুবাল্লেগের নিকট লিখিত পত্র, যা আত-তাবলীগ পত্রিকায় সন্নিবেশিত ১ম খন্ড, ২১ নম্বর।)

এর অর্থ হল: এ সব কিছু শুধু কাদিয়ানী ধর্মের প্রচলন ও জনসাধারণকে গোলাম আহমদের নিকটবর্তী করে দেওয়ার জন্যই ছিল। এটা কি ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের ইঙ্গিতে ছিল? মূল বক্তব্য দেখুন! কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজল প্রচার করেছে. ইংরেজ সরকার লাহোরী কাদিয়ানীদেরকে তাদের খেদমতের বিনিময়ে এক হাজার একর জমি দান করেছে। এত বড় পুরস্কার সরকারের প্রতি তাদের বিরাট খেদমতের স্বীকৃতি স্বরূপ দান করা হয়েছে। (আল-ফজল যা প্রচার করেছে তার মূল ভাষ্য, ২৫ শে ডিসেম্বর ১৯৩০ খৃ:) দ্বিতীয়ত: মুহাম্মদ আলী কাদিয়ানে সাম্রাজ্যবাদের একজন উচ্চ মর্যাদার প্রতিনিধি ছিল। কারণ, সে গোলাম আহমদের নবুয়্যত প্রচারের জন্য তথ্য জোগান এবং তার দায় দায়িত্বের ভার গ্রহণ করে। এ জন্য সে এ নবুয়তের বাস্তব রূপ এবং এর সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত ছিল। উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্যবাদের সেবা করা এবং মুসলমানগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। আমরা তা পূর্বে উল্লেখ করেছি। আর এই সেবা একটি নতুন দল গঠনের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সাধিত হতে পারে। এ জন্য সে সাম্রাজ্যবাদের নির্দেশাবলী দ্রুত বাস্তবায়িত করতে থাকে।

তৃতীয়ত: সে গোলাম আহমদের পরিবারকে রাশি রাশি ধন-সম্পদে তাকে শরীক না করে সঞ্চিত করার জন্য ঘৃণা করত। বিশেষ করে ভন্ডনবীর মৃত্যুর পর। কেননা, তারা এ সমস্ত লোকের মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত ছিল না। পক্ষান্তরে ভন্ডনবী নিজে সামান্য হলেও এদের অংশ দিত। কারণ, সে জানত যে এরাই তার নবুয়তের মূল ভিত্তি। আল-ফজল পত্রিকা এ কথার স্বীকৃতি দিয়ে বলছে: উস্তাদ মুহাম্মদ আলী কয়েকটি কারণে কাদিয়ানী মতবাদ থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। একটি হল: যখন জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ মৃত্যুবরণ করলেন, তখন মুহাম্মদ আলীকে তার (গোলামের) ঘর হতে বের করে দেয়া হয়। দ্বিতীয়ত: গোলাম কাদিয়ানীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মুহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করেন যে, সে জনগণের সম্পদ তার ইমারতে ব্যয় করেছে। (কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল , ২রা সেপ্টেম্বর, ১৯১৫ খৃ: প্রকাশিত।) এই পত্রিকাই প্রচার করেছে যে, এ দলের (লাহোরী কাদিয়ানী) নেতারা জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহের হাতে বায়আত করেছে এবং এদেরকে এ উম্মতের (কাদিয়ানী উম্মত) প্রধান প্রধান লোক বলে গণ্য করা হত। কিন্তু তারা তাদের আধ্যাত্মিক ত্রুটির কারণে সর্বদাই জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহের সহিত বেআদবী করত।... আর, তার মৃত্যুর পর ধন-সম্পদ ও পদ মর্যাদার লোভে বশীভূত হয়ে কাদিয়ান কেন্দ্র থেকে তারা পৃথক হয়ে গেল এবং একটি নতুন জামাতের ভিত্তি স্থাপন করল।(আল ফজল ২১ সেপ্টেম্বর ১৯২৮ খৃ:) এ দুটি এবারত আমাদের বক্তব্যের স্পষ্ট সাক্ষ্য। বাকি, ভন্ডনবীর সহিত তাদের বেয়াদবী করা সত্ত্বেও দলের মধ্যে নেতা ও প্রধান হিসেবে বহাল থাকা কোন আশ্চর্যের বিষয় নহে। কেননা, তারা জানত যে, এ নবুয়তের দাবি একটা ব্যবসায়ী কোম্পানি এবং তারা সবাই এর অংশীদার।

মোটকথা, কাদিয়ানীরা দু দলে বিভক্ত হয়ে পড়ল। এক দলের প্রধান ছিল নুরুদ্দীন। এদের আকীদা ছিল গোলাম আহমদ আল্লাহর নবী ও রাসূল এবং সে প্রতিশ্রুত মাসীহ ও মাহদী। সে সকল নবী রাসূলের মধ্যে উত্তম এবং যে ব্যক্তি তাতে বিশ্বাস করবে না, সে কাফের, জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে। নুরুদ্দীন ব্যতীত এ দলের অন্যান্য প্রধান ব্যক্তিবর্গ ছিল গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ ও কাদিয়ানীদের মুফতি মুহাম্মদ সাদেক প্রমুখ। এ দলই ছিল ভন্ডনবী কাদিয়ানীর প্রকৃত দল। কেননা, এরাই গোলাম আহমদের শিক্ষাকে খোলাখুলিভাবে প্রচার করত এবং কোন কিছু গোপন করত না।

দ্বিতীয় দল যাদের প্রধান ছিল মুহাম্মদ আলী। তারা প্রকাশ করত যে, গোলাম আহমদ নবী ও রাসূল নহে, বরং মুজাদ্দিদ ও সংস্কারক। তাকে যে অমান্য করবে সে ফাসেক বিপথগামী। এদের প্রধান প্রধান লোক ছিল খাজা কামালুদ্দীন, মুহা্ম্মদ আহসান আমরুহী প্রমুখ। কিন্তু গোলাম আহমদের শিক্ষা ও বাণী এদের অনুকুলে ছিল না। তা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। মুহাম্মদ আলীর চরিত্রকে পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করার জন্য আমরা আরো কিছু বিষয়ের উল্লেখ করব। যাতে এ ধর্মের মূল উপাদান যে তৈরি করেছে তার পক্ষ থেকে এ ধর্মের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করা সম্ভব হয়। মুহাম্মদ আলী কাদিয়ানী ধর্ম থেকে পৃথক হয়ে কি করল? কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল থেকে আমরা তা শুনে নেই। হয়তো: পাঠকগণ জানেন যে, উস্তাদ মুহাম্মদ আলী যখন কাদিয়ান থেকে বের হয়ে যায়, তখন ইংরেজি ভাষায় কুরআনের অনুবাদ চুরি করে তার সাথে নিয়ে যায়। যে অনুবাদের জন্য জামাত হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেছিল। একটি বিরাট লাইব্রেরি ও চুরি করে নিয়ে গেল। অনুরূপভাবে একটা ছাপা মেশিনও নিয়ে গেল, যার মূল্য (তখনকার দিনে) সাড়ে তিন শত টাকা ছিল। (আল ফজল, ১লা জুলাই, ১৯১৫ খৃ:।) এটাও জানেন যে, উস্তাদ মুহাম্মদ আলী জামাতের পক্ষ থেকে কুরআনের ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করত। অর্থাৎ সে এ কাজের বিনিময়ে একটা বিরাট পারিশ্রমিক গ্রহণ করত। অতঃপর সে কাদিয়ান থেকে এ অজুহাতে এ বোটা বাদ (বর্তমানে পাকিস্তানের একটি গ্রীষ্মকালীন বাসস্থান) চলে গেল যে, অবশিষ্ট অনুবাদ সে ওখা নে গিয়ে পূর্ণ করবে। এ কাজের জন্য সে হাজার টাকা অগ্রিম গ্রহণকরে। অনুরূপ ভাব সে কাদিয়ানীদের সাধারণ লাইব্রেরি থেকে হাজার হাজার টাকা মূল্যের পুস্তিকাদি নিয়ে যায়। এই সাথে একটা আধুনিক ছাপা মেশিনও সে নিয়ে গেল, যার মালিক ছিল কাদিয়ানী জামাত। জামাতের নিকট এ সমস্ত জিনিস ফেরত দেওয়ার বদলে সে লাহোরে ঘোষণা দিল- এ সমস্ত জিনিস তার নিজেরই এবং এর সাথে কাদিয়ানীদের কোন সম্পর্ক নেই। অতঃপর সে কুরআনের অনুবাদ [১ অত্যন্ত অনুতাপের বিষয় যে, অনেক মুসলমান ইংরেজী ভাষায় কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যাকৃত তার গ্রন্থটি কিনছেন, তাদের ধারনা যে উহার লেখক একজন মুসলিম ব্যক্তি। এমনিভাবে, তারা ঐ সকল ষড়যন্ত্রের কথাও জানেন না যাকে সে উহার অনুবাদ ও ব্যখ্যার মধ্যে গ্রথিত করেছে। সুতরাং এ তথ্য জানার পর সকলেরই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।] থেকে কাদিয়ানীদের কিছু মাসয়ালা বের করে বিশ্বাসঘাতকতার শীর্ষে পৌঁছে যায়। সে আল্লাহর এ বাণীর প্রতি ভ্রূক্ষেপও করেনি: ‘‘তোমরা জেনে শুনে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং তোমাদের আমানতেও খিয়ানত করো না।’’ আল্লাহ আরো বলেছেন, তিনি বিশ্বাসঘাতকদের পছন্দ করেন না।’ (আল-ফজল, ২রা জুন, ১৯৩১ খৃ:)

মুহাম্মদ আলী জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহের চিন্তাধারা চুরি করে কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় সন্নিবেশিত করেছে। কিন্তু উল্লেখ করেনি যে, সে তার নিকট থেকে তা গ্রহণ করেছে। (আল-ফজল’ ৩১ শে জুন ১৯৩১খৃঃ) একদা কাদিয়ানী পত্রিকা প্রকাশ করল- ‘কেবলমাত্র উস্তাদ মুহাম্মদ আলী ইংরেজদের পক্ষে গুপ্তচর বৃত্তিতে নিয়োজিত নহেন, বরং তার সম্মানিতা স্ত্রীও এই সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। (পয়গামে সুলাহ, যা আল-ফজল, থেকে উদ্ধৃত, ৩রা মার্চ, ১৯৩১ খৃ:)

এই হল কাদিয়ানীদের নেতা এবং লাহোরী কাদিয়ানী জামাতের আমিরের অবস্থা, আর, এই হল লাহোরী কাদিয়ানী জামাতের অবস্থা, ! উল্লেখ্য যে, লাহোরী কাদিয়ানী ধর্ম নুরুদ্দীনের মৃত্যুর পর গোলাম আহমদের পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত হল। লাহোরী জামাতের প্রধান হল মুহাম্মদ আলী, এর সচিব হল তার ভাই এবং এর কোশাধক্ষ্য হল তার ভাতিজা। সাধারণ ও বিশেষ পাঠাগার সম্পাদক হল তার ভগ্নে। পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও ঘোষণাপত্র বিভাগের প্রধান হল তার শ্বশুর। মেহমানদারী বিভাগের প্রধান হল তার আর এক আত্মীয়। (আল-ফজল যা, ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯২৮ খৃ: প্রকাশিত।)

কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মাহমুদ আহমদ:

১৯১৪ সালে নুরুদ্দীনের মৃত্যুর পর গোলাম কাদিয়ানীর পুত্র জন সমক্ষে এসে নিজেকে খলীফা ঘোষণা দিল। সে শুধূ কাদিয়ানীদের খলীফা নহে, বরং সমগ্র বিশ্বের খলীফা। অনন্তর, সে ঘোষণা দিল: ‘আমি শুধু কাদিয়ানীদের খলীফা নই এবং শুধু ভারতেরও নই, বরং আমি প্রতিশ্রুত মাসীহের খলীফা। তাই, আফগানিস্তান, আরব বিশ্ব, ইরান, চীন, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, সু-মাত্রা, জাভা, এমনকি ব্রিটিশেরও খলীফা। বিশ্বের সকল মহাদেশব্যাপী আমার আধিপত্য রয়েছে।’ (মাহমুদ আহমদের ভাষণ যা আল-ফজল পত্রিকায় সন্নিবেশিত, ১লা নভেম্বর, ১৯৩১ খৃ:) সেই তার বিকৃত মস্তিষ্ক পিতার যথার্থ সত্যিকার স্থলাভিষিক্ত। কাজেই, সে তার পিতার ন্যায় পাগলামি আরম্ভ করে এবং ঘোষণা দেয়: কুরআনে আমার উল্লেখ রয়েছে। কুরআনে বর্ণিত লোকমান এবং তদীয় পুত্রের কাহিনী লক্ষ্য করুন! লোকমান কে তা কি জান? এবং তার ছেলেই বা কে? লোকমান হল প্রতিশ্রুত মাসীহ (গোলাম) এবং তার ছেলে হলাম আমি।’ (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের ভাষণ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজলে সন্নিবেশিত, ১২ই মার্চ, ১৯২৩ খৃ:) সাম্রাজ্যবাদের দাসত্বে তার বাবার চরিত্র গ্রহণ করে সে ঘোষণা দিল- ইংরেজ সরকারের দুঃখ আমাদেরই দুঃখ। কাদিয়ানী বাহিনী যারা ফ্রান্স ভূমিতে ব্রিটিশের শত্রুগণের সাথে যুদ্ধরত আছে, তারা যেন এ মর্মটি অনুধাবন করে নেয়। (আল-ফজল’ ২৭শে অক্টোবর, ১৯১৪খৃঃ)

তুরস্ক ও অস্ট্রিয়ায় ইংরেজরা তাদের শত্রু মুসলমানগণকে পরাজিত করার খুশিতে খলীফা মাহমুদ তার অনুসারীদেরকে আনন্দ মাহফিল অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয় এবং যুদ্ধ প্রস্ত্ততিতে কাদিয়ানীদের অংশ গ্রহণের নিমিত্তে সরকারের কাছে পাঁচ হাজার টাকা প্রেরণ করে। এতদ্ব্যতীত ভারত বর্ষে বিশ্বাস ঘাতক সাম্রাজ্যবাদী শাসক গোষ্ঠীকে ধন্যবাদ দিয়ে অনেক অনেক তার বার্তা প্রেরণ করে। (আল-ফজল পত্রিকা দেখুন, ১৬ নভেম্বর, ১৯১৮ সালে প্রকাশিত) আমরা এর জীবনী সংক্ষিপ্ত আকারে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করব, যাতে পাঠক জানতে পারেন যে, কেমন ব্যক্তিটি কাদিয়ানীদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

প্রথমত: সে কাদিয়ানীদের মধ্যে তার কয়েকজন বিরুদ্ধবাদীদের গুপ্ত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। এদের মধ্যে রয়েছে তার স্ত্রী যে নূরুদ্দীনের কন্যা ছিল এবং তার শ্যালক। (কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজল’ ১৪ই আগস্ট, ১৯৩৭খৃঃ।) কারণ, তারা তার পারিবারিকও দাম্পত্য জীবন সংক্রান্ত খেয়ানতে পরিপূর্ণ। সে যে সকল হারাম ও লজ্জাহীন অশ্লীল কাজে লিপ্ত ছিল তাও তারা জানত। এ সকল ঘটনার একটি হল এই, জনৈক কাদিয়ানী তাকে তার পুত্রবধূ ধর্ষণ করার অভিযোগ দিয়ে বলে- আমি আহমদ দ্বীন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছি যে, আমি একজন কাদিয়ানী এবং আমি বিশ্বাস করি যে, প্রতিশ্রুত মাসীহ আল্লাহর নবী ও রাসূল ছিলেন। আমি জনাব মাসীহের দ্বিতীয় খলীফা তদীয় পুত্র মাহমুদ আহমদের হাতেও বায়আত করেছি। আমার স্ত্রী ও পরিবার পরিজন দ্বিতীয় খলীফা মাহমুদ আহমদের বাড়িতে তার পরিবার বর্গ ও মাসীহে মাওউদের পরিবারের সেবা যত্নের উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে যায়। মাহমুদ আহমদ তাকে একাকিনী দেখতে পেয়ে কোন কৌশলে তাকে তার কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে এবং বলে কাউকে তুমি একথা বলিও না। যদি বল, তবে কেহই তোমাকে বিশ্বাস করবে ন, বরং তুমি নিজেই লোকজনের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হবে। অনন্তর, সে কেঁদে কেঁদে বাড়িতে এসে ঘটনাটি বলল। আমি খলীফার নিকট গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। সে তা অস্বীকার করল। তাকে হলফ করতে বললাম। তাও সে প্রত্যাখ্যান করল এবং আমাকে মৃত্যু অথবা কাদিয়ান থেকে বিতাড়িত করার হুমকিও দিল, যদি আমি মুখ খুলে কারো কাছে একথা বলি। আমি এ পত্রটি পত্রিকায় এ জন্য পাঠাচ্ছি, যাতে জনগণ এই খলীফার বাস্তব রূপ সম্পর্কে অবহিত হতে পারে যে তার অপরাধ সমূহ কাদিয়ানী সিলসিলাকে কলুষিত করেছে। যদি সে আমার পুত্রবধূর সাথে ব্যভিচার না করে থাকে তাহলে সে আমার সাথে মোবাহালা করে বলুক- মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ অবতীর্ণ হোক ।’ (আহমদ দ্বীন কাদিয়ানীর পত্র যা দৈনিক জমীনদার লাহোরী পত্রিকায় প্রচারিত।) এ পত্রটি প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে তারা আহমদ দ্বীনকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে বশ করে নিল। শেষ পর্যন্ত সে কাদিয়ানী পত্রিকা আর-ফজলে এ মর্মে ঘোষণা দিল যে, জমীনদার পত্রিকায় আমি যে পত্র প্রচার করেছিলাম তজ্জন্য আমি অনুতপ্ত। কারণ আমার পুত্রবধূ খলীফাতুল মাসীহের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। (এটা কি বুদ্ধিসম্মত কথা যে, কোন একজন বিবাহিত নারী নিজের জন্য এরূপ মিথ্যা অপবাদ রটনা করে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে?) এ জন্য আমরা তাকে ত্বালাক দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে আমি মে শপথ আহবান করেছিলাম, তাও আমার পক্ষ থেকে একটি ভুল ছিল। কেননা আমি জানতাম না যে, মোবাহালা এ ধরনের বিষয়াদিতে বৈধ নহে। সুতরাং আমি ঘোষণা দিচ্ছি, হযরতের শপথ ব্যতীত এবং হযরতের সাথে মোবাহালা ব্যতীত আমার বিশ্বাস যে, আমার পুত্রবধূ হযরত (মাহমুদ আহমদ) কে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।’ (দ্বীন আহমদ কাদিয়ানীর ঘোষণা যা আল-ফজল পত্রিকায় ৩রা জুন ১৯৩০ সালে প্রচারিত।) ঠিক একই অপবাদ তাকে আরো অনেক ব্যক্তি দিয়েছেন, যাদের সংখ্যা বিশের অধিক। তাদের মধ্যে রয়েছেন, আবদুর রহমান কাদিয়ানী, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল করীম, ডাক্তার আব্দুল আজীজ প্রমুখ ব্যক্তিগণ। এদের যারাই তার থেকে শপথ অথবা মোবাহালা দাবি করেছেন সে তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অপবাদ অস্বীকার করেছে। লাহোরী কাদিয়ানী পত্রিকা প্রচার করেছে ১৯২৫ সাল হতে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত মাহমুদ আহমদের উপর ব্যভিচারের অপবাদ বিশের অধিক দাঁড়িয়েছে। এ সব অপবাদ ঐ সকল লোকের পক্ষ থেকে আরোপিত হয়েছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজ শহর ও জনপদ ত্যাগ করে হিযরত করেছে। তা সত্ত্বেও খলীফা মাহমুদ একটি মাত্র কথা বলতে সাহস পায়নি, ‘মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ।’ কেননা, সে বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অবহিত রয়েছে। (পায়গামে সুলাহ, ১৬ই নভেম্বর ১৯৪৯ খৃ:।) এদেরই একজন কাদিয়ানের মজলুমগণ নামে একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা রচনা করে উহাতে অপবাদ সমূহের উল্লেখ করার পর বলেছে: আব্দুর রহমান মিসরি কাদিয়ানী এ সকল অপবাদের অনুসন্ধান করার জন্য বিশিষ্ট কাদিয়ানীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার দ্বাবী জানাল, কিন্তু খলীফা তাতে সম্মতি প্রদান করেন নি, বরং তিনি কিছুদিন পর তাকে জামাত থেকে তাড়িয়ে দেন এবং তার যুক্তিসংগত শর্তাবলি গ্রহণ করার পরিবর্তে তাকে কাদিয়ানী ধর্ম হতে বহিষ্কারের ঘোষণা প্রদান করেন। (ফখরুদ্দীন মুলতানী কাদিয়ানীর লিখিত কাদিয়ানের মজলুমগণ।’) এই হল কাদিয়ানী ইমাম ও তাদের খলীফার স্বরূপ, যে সর্বদা এ ধরনের কুৎসিত অপবাদের দ্বারা অভিযুক্ত ছিল। বরং তার মুরিদগণের পক্ষ হতে। আমি ক্রিমিনাল আদালতের রেজিষ্টার হতে নিম্নোক্ত যে ভাষ্যটি উদ্ধৃত করছি তা এ লোকটির মানসিকতার সঠিক চিত্র তুলে ধরছে। মাহমুদ আহমদের কাছে একজন যুবতী সেবিকা ছিল। সে একবার কিছু ঔষধ ক্রয় করার জন্য এহসান আলী কাদিয়ানী তাকে প্রতারিত করে তার ফার্মেসির পেছনে একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে তার সাথে ব্যভিচার করে। যখন ছালমা নাম্নি এ সেবিকা বাড়ি প্রত্যাবর্তন করে, তখন কাদিয়ানী খলীফা মাহমুদ আহমদের নিকট ঘটনাটির সংবাদ দেয়। খলীফা এহসান আলীকে ডেকে পাঠালেন এবং ছালমাকে বললেন- তাকে (অর্থাৎ এহসান আলীকে) দশটি জুতা মার। সালমা তাকে জুতা মারল, এরপর তাকে ছেড়ে দিলে সে চলে গেল।’ (অমৃতসর জেলা হাকিমের আদলতে ছালমার সাক্ষ্য, ১০ই জুলাই ১৯৩৫ খৃ: যা আল মাযহাবুল কাদিয়ানী অভিধান থেকে উদ্ধৃত।) উক্ত ভাষ্যটি একথা ছাড়া আর কিছুই বুঝায় না যে, লোকটি এ জঘন্য অপরাধ কে মামুলী বিষয় মনে করত। এরপর ঐ যুবতীকে ব্যভিচারী এহসান আলীর গায়ে হালকাভাবে জুতা দিয়ে প্রহার করার নির্দেশ দেওয়া কি একথা বুঝায় না যে, সে এ সকল অপবাদ দ্বারা অভিযুক্ত হল, তখন সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হতে পারেনি।

আর একবার অমৃতসরের ‘মোবাহালা’ নামক পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাকে এ বিষয়ের উপর মোবাহালা করতে চ্যালেঞ্জ করেছিল যে, সে ব্যভিচারী নহে। কিন্তু সে এই বলে তাদের প্রতিবাদ করল- এ সমস্ত ব্যাপারে মেবাহালা করা বৈধ নহে। অতপর. উমর উদ্দিন সমলবী কাদিয়ানী বর্ণনা করছে যে, অমৃতসরের মেবাহালা পত্রিকা কর্তৃক কাদিয়ানী খলীফা মাহমুদ আহমদ কে এ সকল চ্যালেঞ্জ প্রদান এবং ওগুলো তার প্রত্যাখ্যান করার পর আমি মাহমুদ আহমদের কাছে গেলাম। তখন সে গ্রীষ্মকালীন আবাসস্থল মানসূরিতে অবস্থান করছিল। (মানসুরী ভারতের অন্যতম গ্রীষ্ম কালীন আবাসস্থল।) আমি তাকে বললাম- মুসলমানগণ একে অপরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়ার অবস্থায় মোবাহালা বৈধ হবে না কেন? অথচ প্রতিশ্রুত মাসীহ স্পষ্টভাবে বলে গেছেন যে, এ সমস্ত অবস্থায় মেবাহালা বৈধ। খলীফা মাহমুদ আহমদ আমাকে উত্তর দিল, আমি ইতিপূর্বে এ সমস্ত ব্যাপারে মোবাহালা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুত মাসীহের ফতওয়া সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না। জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহের ফতওয়া সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর খলীফার কর্তব্য ছিল যে, সে টাল-বাহানা করে মেবাহালা থেকে পিছু হটবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও সে নিজেকে নির্দোষ সাব্যস্ত করার জন্য মেবাহালার দিকে অগ্রসর হয়নি। (উমর উদ্দিন সমলাবী কাদিয়ানীর প্রবন্ধ যা কাদিয়ানী পত্রিকা পয়গামে সুলাহ এ প্রচারিত এবং ১৯শে জুলাই ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত।) স্বয়ং এই কাদিয়ানী খলীফা যখন ইউরোপ ভ্রমণে গেল তখন সেখানে এমন কতকগুলো কাজে লিপ্ত হল যার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে মানুষ ঘৃণা বোধ করে। এ ভ্রমণ সম্পর্কে অনেক কিছু প্রচারিত হয়েছে। সে প্যারিসে আন্তর্জাতিক ক্লাবে উপস্থিত হয়ে নগ্ন নর্তকীদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করল। এই ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করলে সে উত্তর দেয়: আমি পাশ্চাত্য সভ্যতার বিপর্যয় সমূহ শুধু পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রবেশ করেছিলাম। এতদ্ব্যতীত সে কাদিয়ান এবং ভারতের বিখ্যাত বিখ্যাত গ্রীষ্মকালীন আবাসভূমি ও নগরে বড় বড় প্রসাদ নির্মাণ করেছে। ভারত বিভক্তির পর সে তার খেলাফতের মুকুট ও সিংহাসন কাদিয়ানে রেখে পাকিস্তানে পলায়ন করে। অতপর: কাদিয়ানীদের জন্য পাকিস্তানে নতুন একটি কেন্দ্রের গোড়াপত্তন করে এর নাম দেয় রাবওয়া। কাদিয়ানীদেরকে ওখানে হিযরত করার নির্দেশ দিল। এখানেও সে তার পুরাতন অভ্যাস সমূহ ত্যাগ করতে পারল না। বরং পুনরায় সে তার কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে এবং আনন্দ উল্লাসে মগ্ন হল। ফলে, তার সম্পর্কে অনেক কাহিনি প্রচারিত হতে লাগল এবং তার অতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গও তাকে চিনে ফেলল। একজন বিশিষ্ট কাদিয়ানী আল ফজল পত্রিকার সম্পাদক ছিল, সে সবকিছু এমন কি কাদিয়ানী ধর্ম ত্যাগ করে রাবওয়া থেকে পলায়ন করার পর তার পুস্তক আমিরুল মাযহাবী লির রাবওয়া তে লিখে তার কলঙ্ক রটিয়ে দিয়েছে।....

পরিশেষে তার উপর পরাক্রমশালী মহান আল্লাহর শান্তি আসল এবং সে কতিপয় মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হল; যথা অর্স্ব, বাঁত মাথা ঘুরান, হিষ্ট্রিয়া (এক প্রকার পাগলামী)যক্ষ্মা ও পক্ষাঘাত। সে কয়েক বৎসর যাবৎ বিছানায় পড়ে রইল, না কথা বলতে পারত, না নড়াচড়া করতে পারত। এমতাবস্থায় সে দশ বৎসর যাবৎ উপর্যুপরি এ সকল রোগে আক্রান্ত থেকে ১৯৬৫ সালে মারা যায়। মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন: ‘তাদেরকে আমি বিরাট শাস্তির পূর্বে নিকটবর্তী শাস্তির স্বাদ ভোগ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।’ [১ সুরা সিজদাহ ২০] তার মৃত্যুর পর তার ছেলে খলীফা নিযুক্ত হল।....

খাজা কামালুদ্দীন:

মুহাম্মদ আলীর অন্যতম প্রধান সাহায্যকারী ছিল খাজা কামালুদ্দীন। সে গোলামের মৃত্যুর পর ঘোষণা দিল, গোলাম আহমদ যা করত সে তাই করবে। কাজেই সেও গোলামের ন্যায় সংশোধনকারী ও মুজাদ্দেদ। (আল ফজল ১০ অক্টোবর, ১৯১৫ খৃ:।) তারপর সে কাদিয়ানীদের কাছ থেকে ইউরোপে কাদিয়ানী ধর্ম প্রচারের নামে একটা বিরাট পরিমাণের টাকা গ্রহণ করল এবং ইংল্যান্ড চলে গেল এবং অকিং এ বসবাস করতে লাগল। সেখানে সে একটি বিরাট বাড়ী ক্রয় করে এবং কোন প্রকার কাজ কর্ম ব্যতীত আমীর উমারাদের ন্যায় জীবন যাপন শুরু করে। [১ আমার কাছে উস্তাদ আব্দুল হক মাহরুছ বর্ণনা করেছেন যে, একদা মিশরে মুদ্রিত আর-রেসালাতে প্রচার করা হল যে, খাজা কামালুদ্দীন ইসলামের একজন বিখ্যাত আহবায়ক। আর তার হাতে বড় বড় ইংরেজ লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে লর্ড হেডলী প্রমুখ ব্যক্তি রয়েছেন। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা আমরা পুর্বে উল্লেখ করেছি যে, সে ইসলামের আহবায়ক ছিল না; বরং কুফুর ও ইরতেদাদের আহবায়ক ছিল। এদের সাথে লর্ড হেডলীর ইসলাম গ্রহণের কোন সম্পর্ক ছিল না। যেমন তিনি নিজেই ইহার ঘোষণা দিয়েছেন।...] যখনই সে কাউকে ইউরোপে ইসলাম গ্রহণ করেছে বলে শুনত, সাথে সাথে সে এটাকে নিজের কৃতিত্ব বলে দাবি করত। যেমন, সে লর্ড হেডলী, মুহাম্মদ পিকতল, স্যার আরজিন্যাল্ড হিমেলটন, ডাঃ স্যান্ড রেক এবং স্যার ষ্টুয়ার্ড রেঙ্কিন এর বেলায় করেছিল। তবে এদের সকলেই যখন এ অপবাদের কথা জানতে পেরেছেন, সাথে সাথে এর প্রতিবাদ করেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন যে, গোলাম আহমদের ধর্ম এবং তার সঙ্গী সাথীদের ধর্মের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। (মাহমুদ আহমদের মেরআতুস সিদক’ ১৫৮ পৃ: এবং তার হাককিতুল ইসলাম ম্যাগাজিন, জানুয়ারি ১৯৩৪ সাল ও মদিনা পত্রিকা ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ সাল।)

ধর্ম প্রচারের নামে যে বিপুল সম্পদ সে গ্রহণ করেছিল তা সে হজম করে নিল এবং তার নিজের প্রতি আহবান করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। স্বয়ং কাদিয়ানী ম্যাগাজিন প্রচার করছে- ‘খাজা কামালুদ্দীন লক্ষ লক্ষ টাকা কোন কাজ না করেই এবং কোন হিসাব না দিয়েই সবটুকু ভক্ষণ করে ফেলেছে। যখন তার কাছে হিসাব চাওয়া হল, তখন উত্তরে বলল-‘জমিয়তে ইসলামিয়া লাহোরের নিকট এর হিসাব আছে। জমিয়ত তার নির্দিষ্ট সময়ে ঘোষণা দিল যে, তাদের নিকট কোন হিসাব নেই। কেননা, খাজা কামালুদ্দীন আহমদের নিকট কোন হিসাব পাঠান নি। (আল ফজল ১৭ আগস্ট, ১৯২৮ খৃ:।) এ বিরাট অঙ্কের টাকা সে কোথায় কীভাবে ব্যায় করল? একজন ভারতীয় পর্যটক যিনি ওয়াকিং গিয়েছিলেন, তিনি এ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বললেন- মি: কামালুদ্দীন তার জনৈক বন্ধুর সহিত হোটেলে খাবার খাচ্ছিল। তারা চলে যাওয়ার পর আমি হোটেলের বয়কে জিজ্ঞাসা করলাম- এ দুই ভদ্রলোক কি খেলেন? সে অত্যন্ত সরলভাবে উত্তর দিল- উন্নত মানের শুকরের মাংস।’ (আল-ফজল’ ২১ আগস্ট, ১৯২৪ খৃ:।) ইনিই হলেন ভন্ডনবী কাদিয়ানীর মহান সাহাবী ও লাহোরী কাদিয়ানী জামাতের নেতা যিনি বিরাট পরিমাণ সম্পদ পিছনে রেখে মারা যান।

মুহাম্মদ আহসান আমরুহীঃ-

মুহাম্মদ আহসান আমরুহী যার সম্পর্কে আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, গোলাম আহমদ তার লিখিত পান্ডুলিপি গুলো সংশোধনের জন্য তার কাছে পাঠিয়ে দিত এবং তার সম্পর্কে লিখেছে যে, জনাব উস্তাদ মুহাম্মদ আহসান আমরুহী একজন মহান মর্যাদাবান, বিশ্বাসী, মুত্তাকী এবং আল্লাহর পথে নিজের প্রাণ ও অন্তঃকরণ উৎসর্গকারী।’ (গোলামের ভাষণ যা তাবলীগে রেসালাতে সন্নিবেশিত, ২য় খন্ড, ১০৩ পৃ:।) গোলাম পুত্র ও তার খলীফা এ ব্যক্তি সম্পর্কে লিখেছে, জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ ও তার খলীফা শেখ সৈয়দ মুহাম্মদ আহসান আমরুহীকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন। আমার পিতা তার ইলম ও ফজলের কারণে তার সামনে আদব রক্ষা করে চলতেন। (মাহমুদ আহমদের মানছাবুল খেলাফত’ ৫৩ পৃ:) শুধু তাই নহে, কাদিয়ানী ভন্ডনবী বিভিন্ন মাসায়েলের ব্যাপারে তারই শরণাপন্ন হতেন। কাদিয়ানী মুফতি মুহাম্মদ সাদিকের বর্ণনার প্রতি লক্ষ করুন- ‘শেখ আব্দুল করীম ইমামতি করছিলেন এবং জনাব গোলাম তার পেছনে নামাজ আদায় করছিলেন। যখন শেখ আব্দুল করীম প্রথম তাশাহুদ হতে দাঁড়ালেন তখন জনাব গোলাম তা বুঝতে না পেরে তাশাহুদেই রয়ে গেলেন। এমনকি শেখ আব্দুল করীম রুকুর জন্য তাকবীর বললেন। (হায়রে ভন্ডনবী মিথ্যাবাদীর উদাসীনতা?) পরে তিনি ক্বিয়াম ছাড়াই রুকুতে গিয়ে মিলিত হলেন। যখন নামাজ সেরে ফেললেন তখন উস্তাদ নুরুদ্দীন ও উস্তাদ মুহাম্মদ আহসান আমরুহীকে ডেকে তাদের কাছে মাসআলার অবস্থা পেশ করে তার শরয়ী হুকুম সম্পর্কে ফতওয়া চাইলেন। (কোন নবী শরয়ী মাসায়েল অন্যের নিকট জিজ্ঞাসা করার মুখাপেক্ষী, না তিনিই লোকজনের নিকট মাসায়েল বর্ণনা করবেন? হে আল্লাহর বান্দাগণ একটু ভেবে দেখুন) এ রাকাতকে কি গণনা করবে, না গণনা করবে না? তখন উস্তাদ মুহাম্মদ আহসান আমরুহী এ ব্যাপারে কয়েকটি সমাধান বর্ণনা করলেন।’ (মুহাম্মদ সাদেকের ভাষণ যা আল-ফজলে সন্নিবেশিত,১৭ই জানুয়ারি ১৯২৫ খৃ:।) এই মহান উস্তাদ, মুত্তাকী, বিশ্বাসী ও কাদিয়ানীদের বিরাট নেতা পরিশেষে কি হলেন? তার সম্পর্কে আল-ফজল পত্রিকা লিখেছে- পয়গামে সুলাহ পত্রিকা এই দুর্ভাগা, কঠোর প্রাণ ও জালুতের একটি প্রবন্ধ প্রচার করেছে, যে ব্যক্তি শোচনীয় বয়সে পৌঁছেছিলেন এবং তার অনুভূতি শক্তি ও হারিয়ে ফেলেছিলেন অর্থাৎ উস্তাদ মুহাম্মদ আহসান আমরুহী, তিনি এই প্রবন্ধে বলেন: আমাদের নেতা ও উস্তাদ, দ্বিতীয় খলীফা উমরের সমতুল্য মাহমুদ আহমদ বলেছেন: তিনি ছিলেন একজন সামেরী ও জালুত ব্যক্তি’’। (কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজল ৯ই নভেম্বর ১৯১৮ খৃ:।) এই হল ভন্ডনবী কাদিয়ানীর বিশিষ্ট সাহাবী তথা তার উস্তাদ। তার সম্পর্কে আল-ফজল এ কথা বলছে এবং গোলাম পুত্র ও তখনকার খলীফা মাহমুদ আহমদের তত্ত্বাবধানে তা প্রচার করছে। সেও একই কথা গোলাম পুত্র কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমদ সম্পর্কেও বলেছে । আমরা বলি যে, তারা উভয়ই ঠিক বলেছে।

মুহাম্মদ সাদেক- কাদিয়ানীদের মুফতি:

মুহাম্মদ সাদেক সেও আল্লাহর কঠিন শাস্তিতে পতিত হয়েছে। আল-ফজল পত্রিকা প্রচার করেছে যে, সম্মানিত জনাব মুফতি মুহাম্মদ সাদেক জ্বর, কঠিন কাশি ও মূত্র বদ্ধতায় আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত কষ্ট ভোগ করছেন। তার সুস্থতার জন্য দোয়া করা বন্ধু বান্ধবদের কর্তব্য। (আল-ফজল আগস্ট ১৯৪০ খৃ:।)

আশ্চর্যের বিষয়, এ সমস্ত রোগ তার প্রাণনাশ করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমতাবস্থায় সে অল্প বয়স্কা এক যুবতীকে বিবাহ করেছে। লক্ষণীয় যে, এ সময় তার বয়স ছিল সত্তুরের ঊর্ধ্বে। লাহোরী কাদিয়ানী পত্রিকা প্রচার করেছে ‘মুফতি মুহাম্মদ সাদেকের বিবাহ সংবাদ আমাদের কাছে পৌঁছেছে। অথচ তার বয়স সত্তুর বছর অতিক্রম করেছে। তিনি অল্প বয়স্কা একজন যুবতী বিবাহ করেছেন। এটা জানা কথা যে, উক্ত মুফতি করাচীতে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন। কিন্তু বিবাহের অস্থিরতা তাকে রোগমুক্ত হয়ে কাদিয়ানে যাওয়ার অবকাশ দেয়নি। এজন্য উকিলের মাধ্যমে তিনি বিবাহ সম্পন্ন করেছেন। (অর্থাৎ স্ত্রী কাদিয়ানে এবং তিনি করাচীতে।) এমনিভাবে কাদিয়ানী মুবাল্লেগ শেখ আব্দুর রহীমের বিবাহের সংবাদও পৌঁছেছে। তার বয়সও সত্তুর বছর অতিক্রম করেছিল। তার কাহিনি হল সে একটি যুবতী মেয়েকে পড়াত এবং আকস্মিকভাবে সে ঘোষণা দিল যে সে মেয়েটিকে বিবাহ করে ফেলেছে। (পয়গামে সুলাহ, ২৮ অক্টোবর, ১৯৪০ খৃ:।)

অতঃপর তার রোগাক্রান্ত অবস্থায় ৯ জানুয়ারি ১৯৪৬ সালে আল-ফজল পত্রিকায় ঘোষণা দেওয়া হল জনাব মুফতি খুবই অসুস্থ। তার মূত্রনালি ফুলে গেছে এবং উহা থেকে রক্ত ঝরছে। তিনি অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছেন। পূর্ণ-রাত অনিদ্রায় কেটে যায়, তিনি বিরতি হীন ভাবে এ রোগ যন্ত্রণায় অস্থির থাকেন।’ (আল-ফজল ৯ই জানুয়ারি ১৯৪৬ খৃ:।) অবশেষে সে এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে। শাস্তি এরূপই হয়, আর পরকালের শাস্তিতো আরো ভয়াবহ! যদি তারা উপলব্ধি করত। [১ সুরা কলম ৩৩]

আব্দুল করীম- গোলাম কাদিয়ানীর নামাজের ইমাম:

আমরা কাদিয়ানীদের এ সমস্ত নেতাদের সারিতে আরো একজন কাদিয়ানী নেতার উল্লেখ করা সমীচীন মনে করি, যে গোলাম আহমদের জীবদ্দশায়ই মারা যায়। তার নাম হল আব্দুল করীম। সে গোলাম আহমদের ঘনিষ্ঠ সাথী ও খতিব ছিল। তার সম্পর্কে গোলাম বলেছে, কাদিয়ানীদের মধ্যে এমন কোন তৃতীয় ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেনি যে শেখ নুরুদ্দীন ও শেখ আব্দুল করীমের সমকক্ষ হতে পারে।’ (গোলামের বাণী যা মাহমুদ আহমদের ডায়রীতে সন্নিবেশিত এবং আল-ফজলে প্রচারিত, ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯২২ খৃ:।) আমার মওলা আব্দূল করীম শিয়ালকোটি আল্লাহ তাকে নিরাপদে রাখুন! তিনি আমার লিখিত পুস্তক আত-তাবলীগের অনুবাদে সাহায্য করেছেন। এবং তিনি আমার একজন নিষ্ঠাবান বন্ধু’। সে গোলাম আহমদের সাথে মিলিত হবার পূর্বে একজন নাস্তিক ও বেদ্বীন ছিল। (বশীর আহমদের সীরাতুল মাহদী ১ম খন্ড, ১৪১ পৃ:।) সেই প্রথম ব্যক্তি যে গোলাম আহমদকে আল্লাহর রাসূল ও আল্লাহর নবী বলে সম্বোধন করেছিল। (আল-ফজল, ১লা জুলাই, ১৯৩৩ খৃ:।) এমনকি কেহ কেহ বলে থাকেন যে, সে-ই গোলাম আহমদকে নবুয়তের দাবিকরতে সাহস জুগিয়েছিল। কেননা, সর্বদাই সে জুমার খুতবায় তাকে হে নবী! হে রাসূল! বলে সম্বোধন করত। এর ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে এ পৃথিবীতেই এমন শাস্তি দিয়েছেন, যা শ্রবণ করলে মানুষ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে। গোলাম পুত্র বশীর আহমদ তার রোগ সম্পর্কে লিখছে ‘শেখ আব্দুল করীম কারবাঙ্কাল রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং তার শরীরে এমন কোন জায়গা অবশিষ্ট ছিল না যেখানে অপারেশন করা হয়নি। সে তার অসুখের সময় এমন চিৎকার করত যা শ্রবণ করাও মানুষ সহ্য করতে পারত না। এ জন্য জনাব প্রতিশ্রুত মাসীহ তার বাসস্থান পরিবর্তন করে দিলেন। কারণ, যেখানে প্রতিশ্রুত মাসীহ বসবাস করতেন ঐ একই বাড়িতে শেখ আব্দুল করীমও বসবাস করত। শেখ আব্দুল করিম চিৎকার করে কান্নাকাটি করত, যাতে জনাব মাসীহ তার সাথে দেখা করতে যান। কিন্তু জনাব মাসীহ তার শুশ্রূষার জন্য কখনও যান নি। তিনি বলতেন- আমি তো তার কাছে যেতে চাই, কিন্তু আমি তাকে এ অবস্থায় দেখে সহ্য করতে পারব না। কোন কোন সময় শেখ আব্দুল করীম রোগের কঠোরতার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত এবং বলত যে, আমার কাছে সোয়ারী নিয়ে আস, আমি মাসীহের নিকট যাব। কেননা, অনেক দিন যাবৎ আমি তাকে দেখতে পাইনি। তিনি ধারণা করতেন যে, জনাব হতে দূরে কাদিয়ানের বাহিরে কোথাও তিনি অবস্থান করছেন। (গোলাম পুত্র বশীর আহমদ লিখিত সীরতুল মাহদী ১ম খন্ড, ২৭১ পৃ:।) এভাবে প্রায় দু মাস পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত থেকে সে মারা যায়।

ইয়ার মুহাম্মদ ও আব্দুল্লাহ টিমাপুরী এবং কাদিয়ানীদের তৃতীয় জামাত:

ইয়ার মুহাম্মদ, আব্দুল্লাহ টিমাপুরী ও অন্যান্যরা ভিন্ন ধরনের লোকছিল। যখন তারা এ কৃত্রিম নবুয়্যত দেখতে পেল, যার সংগঠনে তারা অংশগ্রহণ করেছিল; তখন তারা ব্যাপারটি সহজ মনে করে প্রত্যেকেই নবুয়তের দাবিকরে অপর একটি স্বতন্ত্র কাদিয়ানী দল গঠন করে বসল। প্রকৃত পক্ষে এরাই সত্যিকার সেই দল যারা গোলাম আহমদের শিক্ষা দীক্ষাকে কার্যে পরিণত করেছে এবং ভন্ডনবী কাদিয়ানীর প্রস্তাব সমূহ বাস্তবায়িত করেছে।

প্রথমত: ইয়ার মুহাম্মদ নবুয়তের ঘোষণা করে দাবি করল যে, সে জনাব গোলাম আহমদের একজন অনুসারী নবী। এ নতুন ভন্ডনবী গোলাম পুত্র ও কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ আহমদের শিক্ষক ছিল। মাহমুদ আহমদ লিখেছে, ইয়ার মুহাম্মদ মাদ্রাসায় আমার শিক্ষক ছিলেন এবং জনাব মাসীহ কে অতি ভালোবাসতেন। শেষ পর্যন্ত তার ধারণা হল যে, সে একজন নবী এবং জনাব মাসীহের (গোলামের সমুদয় এলহামকে তার সহিত সম্পৃক্ত করতে শুরু করে। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের প্রবন্ধ যা আল-ফজলে প্রচারিত, ১ম জানুয়ারি ১৯৩৫ খৃ:) এরপর নুর আহমদ কাদিয়ানী এসে ঘোষণা দিল- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আহমদ নূর রাসূলুল্লাহ। আমি আল্লাহর রাসূল। যে আমার আনুগত্য করবে সে যেন আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে আমার অবাধ্য হবে সে যেন আল্লাহর অবাধ্য হল। আমি বিশ্ববাসীর প্রতি করুণা স্বরূপ প্রেরিত হয়েছি। আমি সকল নবীর বহি:- প্রকাশ । ( নুর আহমদ কাদিয়ানী লিখিত লিকুল্লি উম্মাতিন আজল’ ১ও ২ পৃ:।) আশ্চর্যের বিষয়, যখনই কেহ নবুয়তের দাবি করত, কাদিয়ানী খলীফা তার সম্পর্কে বলত যে, সে পাগল ও রোগী। এ পার্থক্যের কারণ কি? এটা স্বীকৃত কথা যে, যতদিন তোমরা নবুয়তের দরজা খুলে রাখবে ততদিন পর্যন্ত তোমরা অপরকে বাধা দিতে পারবে না। এখন তোমরা তাদেরকে ঐ কথাই বলছ, যা অপর লোকেরা তোমাদের ভন্ডনবী মিথ্যাবাদীকে বলেছিল। সুতরাং কেন তোমরা ওখানে এটাকে স্বীকৃতি দিচ্ছ এবং এখানে তা প্রত্যাখ্যান করছ? এই তো গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ নতুন ভন্ডনবী নুর আহমদ কাদিয়ানী সম্পর্কে লিখছে: (কেহ কেহ নূর আহমদের কার্যকলাপকে আমাদের সহিত সম্পৃক্ত করে থাকেন।.... তবে প্রত্যেকের জানা উচিত যে, সৈয়দ নূর আহমদ নবুয়তের দাবি করছে। সে একজন অসুস্থ ও অপারগ ব্যক্তি। কাজেই তার সহিত আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আল-ফজল, ১১নভেম্বর ১৯৩৪ খৃ:।) আব্দুল্লাহ টিমাপুরী যিনি গোলাম আহমদের একজন বিশিষ্ট সাহাবী সে এই মর্মে ঘোষণা দিল যে, সে গোলাম আহমদের সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ অনুসারে একজন নবী সে বলেছে: আমিই হলাম ঐ ব্যক্তি যার সম্বন্ধে জনাব আকদাস প্রতিশ্রুত মাসীহ সুসংবাদ দিয়েছেন যে সে প্রেরিত হবে। অতএব গোলাম আহমদের ফয়েজ ও বরকতে আমি প্রেরিত হয়েছি। অচিরেই, আমার হাতে দুনিয়া বাসীর সম্মুখে জনাব গোলামের সত্যতা প্রকাশ পাবে। (আব্দুল্লাহ টিমাপুরীর তাফসরি সাবআম মিনাল মাসানী’ পৃ: আলিফ।) সে লিখেছে- আল্লাহ ত’আলা আকাশ থেকে আমার উপর একটা সহীফা অবতীর্ণ করেছেন এবং মাখলুকের নিকট তাঁর দাওয়াত পৌঁছে দিতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাইশ বৎসর কাল অতিবাহিত হয়েছে, আমি আমার কর্তব্য সম্পাদন করে আসছি।’ (ভন্ডনবী আব্দুল্লাহ টিমাপুরীর উম্মুল ইরফান ৯পৃঃ।)

অপর একজন কাদিয়ানী নবুয়তের সিংহাসনে আরোহণ করে বলল: ‘‘গোলাম আহমদের ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে আমি কদিয়ানীদের জন্য সেই নির্দিষ্ট ও প্রতিশ্রুত ব্যক্তি।’’ (ভন্ডনবী মুহাম্মদ সিদ্দিক কাদিয়ানীর খাদিমু খাতামিন নাবিয়ীন’ ১৮ পৃ:। সে লিখেছে: আমার নিষ্ঠা ও সত্য নিয়তের প্রতি তাকিয়ে দেখুন! আমি নিজে কাদিয়ানে গিয়ে খলীফা মাহমুদ আহমদের হাতে বায়আত করেছি এবং এর উপর অটল রয়েছি। তারপর আমার কাছে প্রকাশ করা হয়েছে যে, আমি কাদিয়ানীদের জন্য অপেক্ষিত ও প্রতিশ্রুত ব্যক্তি এবং আল্লাহ তাআলা আমার জন্য অনেক নিদর্শন প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন প্রমাণাদিও অবতীর্ণ করেছেন এবং পূর্ণ ক্ষমতার কামালিয়তকে আমার সঙ্গী করে দিয়েছেন।’ (ভন্ডনবী মুহাম্মদ সিদ্দিক কাদিয়ানীর খাদিম খাতামিন নাবিয়ীন’ ২৫পৃঃ।)

অনুরূপ ভাবে, আরও কয়েক ব্যক্তি তাদের নবুয়তের ঘোষণা দিয়েছে। যেমন, গোলাম মুহাম্মদ কাদিয়ানী, চেরাগ উদ্দিন জমবী কাদিয়ানী ও মুহাম্মদ সাদেক কাদিয়ানী প্রমুখ। তারা কাদিয়ানী ধর্মে আর একটি জামাত গঠন করেছে। তাদের বিশ্বাস, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহর নবী ও রাসূল। যে ব্যক্তি গোলাম আহমদের নবুওতে বিশ্বাস করবে না সে মুক্তি পাবে না। এমনিভাবে তাদের নবুয়্যত ও রেসালতে বিশ্বাস করবে না সেও মুক্তি পাবে না। তাদের ও ভন্ডনবী কাদিয়ানীদের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, সে কোন মাধ্যম ছাড়াই নবুয়্যত লাভ করেছে এবং তারা তার মাধ্যমে নবুয়্যত লাভ করেছে। সে তাদের উস্তাদ স্বরূপ এবং তারা হল তার ছাত্র। সত্য কথা হল এই যে, এরাই গোলাম আহমদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ তাদের কে সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। (যাতে করে লোকেরা একথা বুঝতে না পারে যে, নবুয়্যত একটা খেলনায় পরিণত হয়ে গেছে।) যেমন, তাদের নেতার সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিল। ফলে তারা শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। যদিও তারা গোলাম আহমাদের ন্যায় তাদের আশে পাশে কতকগুলো বোকা ও নির্বোধ ব্যক্তিকে জড়ো করতে সামর্থ্য হয়েছিল।

এরাই হল কাদিয়ানীদের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ। আর এটাই হল তাদের চরিত্র। আর এ গুলো হল কাদিয়ানীদের দল ও উপদল, যারা নিজে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অন্যদেরকে সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত করছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন