hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কাদিয়ানী মতবাদ (পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ)

লেখকঃ এহসান ইলাহী জহীর

১২
দশম প্রবন্ধ: খতমে নবুয়্যত এবং কাদিয়ানী কর্তৃক কুরআন ও হাদীসের বিকৃতি:
উম্মতে ইসলামিয়া সম্মিলিত ভাবে এই ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী নেই। তাঁর পর যে কেহ নবুয়তের দাবি করবে, হয় সে মিথ্যাবাদী দাজ্জাল, না হয় বিকৃত মস্তিষ্ক পাগল। এ বিষয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উম্মতের কোন দু’ব্যক্তির মধ্যে মতভেদ নেই। কিন্তু কাফের সাম্রাজ্যবাদী ও উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বিরুদ্ধবাদী খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে এমন কতেক দল সৃষ্টি করা হয়েছে, যারা বাহ্যত: ইসলামের নাম ধারণ করলেও, প্রকৃত পক্ষে তারা অন্যের হাতের অস্ত্র স্বরূপ। এরা তাদের অমূলক ধারণা দ্বারা আল্লাহর খালেছ দ্বীনের শত্রুদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করে দাবিকরে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী নহেন এই অর্থে যে, তাঁর পরে আর কোন নবী নেই, বরং তাঁর পরে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একাধিক নবীর আগমন সম্ভব। যেমন বাস্তবে তাঁর পরে কোন কোন ভন্ড নবীর আগমন ঘটেছে। তারা কুরআন ও হাদীসের বাক্যকে তার মূল অর্থ থেকে সরিয়ে স্থানচ্যুত করে এবং কুরআন ও হাদীসের বিকৃত, মেকী ও ঘৃণ্য ব্যাখ্যা প্রদান করে। এ সব দলের মধ্যে প্রসিদ্ধ হল কাদিয়ানী সম্প্রদায় যারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর উম্মত এবং বাহায়ী জামাত, যারা হুসাইন আলীর অনুসারী, যার উপাধি হল বাহাউল্লাহ। এ দু’টি ঘৃণ্য দলই ইসলামের দাবিদার হওয়ার কারণে অমূলক অপ ব্যাখ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া কুরআনের স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। আমরা কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বক্তব্য সমূহ উল্লেখ করব এবং সন্দেহ ও আপত্তি সমূহ উত্থাপন করে যুক্তি সংগত উপায়ে উহার উত্তর প্রদান করব। কোন বিষয় সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘায়িত না করে মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করব, যাতে উহা বিরক্তিকর ও ত্রুটি পূর্ণ না হয়। এইভাবে পাঠকগণ এদের বিভ্রান্তি সৃষ্টি, প্রতারণা, পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী করার কৌশল সম্পর্কে অবগত হতে পারবে।

এটা জানা কথা যে, বাহায়ীরা বিশ্বাস করে, হুসাইন আলী আল্লাহর নবী ও রাসূল। আর, কাদিয়ানীরা বলে: গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবী ও রাসূল। পক্ষান্তরে, আল্লাহ তাআলা বলেন: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নহেন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।’ [সুরা আহযাব-৪১] এ আয়াতটি এ বিষয়ে স্পষ্ট এবং এর অর্থও প্রকাশ্য। কোন প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মুখাপেক্ষী নহে। যার আরবী ভাষা সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান আছে সেও এ আয়াত থেকে বুঝতে পারবে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে আর কোন নবী নেই। প্রথমত: খাতাম শব্দের অর্থ শেষ নহে, বরং তার অর্থ হল শ্রেষ্ঠ। সুতরাং আয়াতের অর্থ এই দাঁড়ায়, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং খাতামুন নাবিয়্যীন অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ নবী।’ এর অর্থ এই নহে যে, তার দ্বারা নবুয়তের ধারা সমাপ্ত হয়ে গেছে।

দ্বিতীয়ত:- খাতাম শব্দের অর্থ মোহর। অর্থাৎ তিনি লোকজনের উপর শীল মোহর করেন এবং তাঁর মোহর দ্বারাই কেহ নবীতে পরিণত হয়।

তৃতীয়তঃ- আন-নাবিয়্যীন দ্বারা শরীয়ত সম্পন্ন নবীগণকে বুঝান হয়েছে। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ নবীগণের শেষ যারা স্বয়ং সম্পূর্ণ শরীয়ত নিয়ে আগমন করেছেন। এমন অনেক নবী পূর্বে এসেছেন যারা পূর্ববর্তী নবীর শরীয়তের অনুসারী ছিলেন। যেমন, হারুন আলাইহিস সালাম মুসা আলাইহিস সালাম এর অনুগামী নবী।

এই হল উক্ত আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা ও অন্তঃ-সারশূন্য অপ-ব্যাখ্যা মিথ্যাবাদী ভন্ডনবীর নবুওতকে প্রমাণিত করার জন্য তারা যার আশ্রয় নিয়েছে। যে ভন্ডনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক সাধারণ খাদেমের স্তরে পৌঁছার যোগ্য নহে, সুতরাং কোথায় সে এবং কোথায় শানে রেসালত ও নবুয়্যত? এ সমস্ত ব্যাখ্যার প্রতি কোন রকমের মনোযোগ ও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, উহাতে এমন দুর্বলতা ও হীনতা রয়েছে যা তাদের নিজের ভাষ্যদ্বারা ফুটে উঠে। কিন্তু যেহেতু তারা এ সমস্ত ব্যাখ্যা দ্বারা নির্বোধ, সরলমনা ও আরবী ভাষা জ্ঞানহীন লোকজনকে প্রতারিত করে, তাই এগুলোর উত্তর আমাদের দিতে হবে।

প্রথম- ‘খাতাম’ শব্দের সর্বশেষ অর্থ ছেড়ে দিয়ে উহার অর্থ শ্রেষ্ঠত্ব গ্রহণ করা আরবী ভাষার অভিধান, তাফসীরকারকদের মতামত, ইজমায়ে উম্মত ও কুরআন হাদীসের স্পষ্ট বর্ণনার পরিপন্থী। মাজদুদ্দীন ফিরোজাবাদী তার আল-কামুসুল মুহীত নামক অভিধানে বলেন: প্রত্যেক বিষয়ের পিছনের এবং শেষের অংশকে খাতেমা বলা হয় এবং লোকের মধ্যে শেষ ব্যক্তিকেও খাতাম বলে।’ (আল কামুসুল মুহীত, ৪থ খন্ড, ১০২ পৃ: ৪থ সংস্করণ।)

ইবনুল ফারিস বলেন: খাতাম অর্থ বস্ত্তর শেষ পর্যন্ত পৌঁছা এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতামুল আম্বিয়া, যেহেতু তিনি তাদের শেষে আসছেন।’ (মু’জামুল মাকাঈছুল লুগাত, ২য় খন্ড, ২৪৫ পৃ: ১ম সংস্করণ।)

ইমাম জুবাইদী বলেন: রাসূলুল্লাহ অন্যতম নাম হল খাতিম এবং খাতাম।, আর অর্থ হল ঐ ব্যক্তি যার আগমনে নবুয়্যত সমাপ্ত হয়েছে। (তাজুল আরুছ, ৮ম খন্ড, ২৬৭ পৃ: ১ম সংস্করণ।)

জওহরী তার আস্ সিহাহ’ নামক অভিধানে বলেন: কোন বস্ত্তর খাতেমা তার শেষকে বুঝায়। আর, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবীগণের সর্বশেষ। (জওহরী রচিত আস্ সিহাহ।)

প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ আবুল বাক্কা বলেছেন: আমাদের নবীর খাতামুল আম্বিয়া নমকরণের কারণ হল এই যে, খাতাম হল সম্প্রদায়ের শেষ ব্যক্তি। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী।’ (কুল্লিয়াতে আবুল বাক্কা।’

ইমাম রাগীব ইসফাহানী বলেছেন: খাতামুন নাবিয়্যীন নবুওতকে শেষ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর আগমন দ্বারা তা সম্পূর্ণ করেছেন।’ (আল মুফরাদাত লিল-ইসপাহানী’ ১৪২ পৃ: মিশরীয় সংস্করণ।) সাহেবুল মাজমা বলেন: খাতিম এবং খাতাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম নাম। ‘তা’ বর্ণটি যবরযুক্ত হলে শব্দটি ইসম বা বিশেষ্য হবে অর্থাৎ তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি। আর ‘তা’ বর্ণটি যেরযুক্ত হলে শব্দটি ইসমে ফায়েল হবে অর্থাৎ শেষকারী ব্যক্তি।’ (মাজমাউল বিহার’৩৩০ পৃ:।)

পরিশেষে, ভাষাবিদ ইবন মানজুর আফ্রিকী মিশরী খাতাম শব্দের অন্তর্গত যা কিছু বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করেছেন, আমরা তার আলোচনা করব। তিনি বলেন: প্রত্যেক জিনিসের খাতাম ও খাতেম উহার পরিণাম ও শেষ। ইখতাতামতু শাইআ’ (আমি বিষয়টি শেষ করেছি) । এটা ইফতাতাহতু শাইআ’ (আমি বিষয়টি সূচনা করেছি) এর বিপরীত। সূরার খাতেমা তার শেষ অংশ। খাতিমুল কওম, খিতামুল কওম এবং খাতামুল কওম হল কওমের শেষ ব্যক্তি। ‘লিহইয়ানী’ হতে বর্ণিত আছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতামুল আম্বিয়া। আত-তাহজীব থেকে উদ্ধৃত: খাতিম এবং খাতাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম সমূহের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনে আছে: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও খাতামুন নাবিয়্যীন অর্থাৎ নবীদের সর্বশেষ। (লিসানুল আরব’ ১২শ খন্ড, ১৬৪ পৃ: বৈরুত সংস্করণ।) এ সমস্ত কথা আরবী ভাষাবিদও পন্ডিতগণ বলেছেন। তাদের আরবী গ্রন্থও অভিধান সমূহ হতে আমরা তা উদ্ধৃত করেছি। তাদের প্রত্যেকেই স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, খাতাম অর্থ শেষ। আমি বুঝতে পারি না যে, যারা আরবী ভাষায় কিছুই জানে না তারা কেমন করে দাবিকরে যে, আল্লাহর বাণী:

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ

এর মধ্যে খাতাম শব্দের অর্থ শেষ নহে, বরং শ্রেষ্ঠ। তাফসীর শাস্ত্রের ইমামগণও ঠিক এই শেষ অর্থেই এর ব্যাখ্যা করেছেন। ইমাম ইবন জারীর তাবারী এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, خاتم النبيين অর্থাৎ নবীদের সর্বশেষ। (তাফসীরে ইবনে জারীর, ২২খন্ড, ১২পৃঃ ১ম সংস্করণ, মিশর।) খাজেন বলেন: খাতামুন নবিয়্যীনের অর্থ তাঁর দ্বারা আল্লাহ তাআলা নবুওতকে শেষ করেছেন। সুতরাং তাঁর পর আর কোন নবুয়্যত নেই।

وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

এর অর্থ- এ কথাও আল্লাহর ইলমের অন্তর্ভুক্ত যে, তাঁর পর আর নবী নেই। (খাজেনের লুবাবুত তাবীল’ ৩য় খন্ড, ৪৭১ পৃ: ১ম সংস্করণ, মিশর)

নাসাফী বলেছেন: খাতামুন নাবিয়্যীন (‘তা’ বর্ণের যবরযোগে) এর অর্থ হল তিনি হলেন নবীদের সর্বশেষ এবং ‘তা’ বর্ণের যের যোগে এর অর্থ হল তিনি হলেন নবীদের সমাপ্তকারী।’ (তাফসীরে মাদারীকুত তানজীল’ ৩য় খন্ড, ৪৭১ পৃ: ১ম সংস্করণ)

ইমাম কুরতুবী বলেন: একমাত্র ক্বারী আসেমই ‘তা’ বর্ণের যবরযোগে পাঠ করেছেন। অর্থ হল নবীগণকে তাঁর দ্বারাই শেষ করা হয়েছে। আর অধিকাংশ আলেমগণ ‘তা’ বর্ণের যেরযোগে পাঠ করেছেন। অর্থ হল- তিনি তাদের সমাপ্ত করেছেন। কেহ কেহ বলেছেন- খাতাম ও খাতিম দুটো ব্যবহারিক রূপ। অর্থ এক। (তাফসীরে কুরতুবী, ১৪শ খন্ড, ১৯৬ পৃ: ১ম সংস্করণ, মিশর।) ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বলেন: খাতামুন নাবিয়্যীন এ জন্য যে, যে নবীর পরে অন্য কোন নবী আসবেন যদি সে নবী কোন উপদেশ বা বর্ণনা পরিত্যাগ করে যান, তবে পরবর্তী নবী তা পরিপূর্ণ করবেন। কিন্তু যে নবীর পর আর কোন নবী নেই, তিনি তাঁর উম্মতের জন্য অসীম স্নেহশীল, হেদায়াত দাতা ও উপকারী হয়ে থাকেন। (রাজীর তাফসীরে কবির’।)

ইমাম ইবনে কাছীর

وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ

বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও খাতামুন নাবিয়্যীন অর্থাৎ নবীদের সর্বশেষ, এ আয়াত সম্পর্কে লিখেছেন। তার মূল ভাষ্য হল এই: এ আয়াতের মধ্যে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে যে, তাঁর পর আর কোন নবী নেই। যখন তাঁর পর কোন নবী নেই, তখন কোন রাসূল না থাকাই অনিবার্য। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির বহু হাদীস বর্ণিত আছে। (তাফসীরে ইবন কাসীর, ৩য় খন্ড, ৪৯৩ পৃ:, ৩য় সংস্করণ মিশর)

আল্লাহর রাসূল যিনি ওহী ব্যতীত কথা বলেন না, এ ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা করে বলেছেন-

প্রথম হাদীস- আমিই সর্বশেষ নবী এবং আমার মসজিদ সর্বশেষ মসজিদ। [১ সহীহ মুসলিম।]

দ্বিতীয় হাদীস- অপর এক রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত হাদীসের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বলেছেন: আমি শেষ নবী এবং আমার মসজিদ নবীগণের সর্বশেষ মসজিদ। [২ দায়লামী এবং বাজ্জার ‘কানজুল উম্মালের উদ্ধৃতি দিয়ে এটা বর্ণনা করেছেন।]

তৃতীয় হাদীস- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: আমি সর্বশেষ নবী এবং তোমরা সর্বশেষ উম্মত। [ইবন মাযাহ ও হাকিম।]

চতুর্থ হাদীস- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপর এক হাদীসে বলেছেন, যে হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম তাদের সহীহ গ্রন্থ দ্বয়ে উদ্ধৃত করেছেন: আমার ও অন্যান্য নবীগণের দৃষ্টান্ত হল- যেমন অতিশয় মনোরম একটি প্রসাদ, যাতে একটি ইটের স্থান ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দর্শকবৃন্দ প্রদক্ষিণ করে তার মনোরম দৃশ্য দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়, কিন্তু একটি ইটের স্থান শুন্য লক্ষ্য করে! সুতরাং আমিই ঐ ইটের শুন্য স্থানটি পূর্ণ করেছি। প্রসাদটি আমার দ্বারা সমাপ্ত হয়েছে এবং রাসূলগণের আগমনও আমার দ্বারা শেষ হয়েছে। [৪ বুখারী ও মুসলিম।]

এ সকল হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনিই সর্বশেষ নবী এবং তাঁর উম্মত সর্বশেষ উম্মত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসাদের হাদীসে ‘খতম’ শব্দের এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যাতে কোন দাজ্জালের জন্য তাঁর পর নবুয়তের দাবি করার অবকাশ রাখেন নি। কেননা, নবুয়তের প্রসাদ পূর্ণতা লাভ করেছে এবং উহার খালি জায়গাটুকুও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ হাদীসটি অনেক হাদীসবেত্তা বিভিন্ন পন্থায় বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ রা. থেকে এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেছেন যে, নবীগণের মধ্যে আমার দৃষ্টান্ত হল, এক ব্যক্তি একটি সুন্দর ও পরিপূর্ণ ঘর তৈরি করল, কিন্তু উহাতে একটি ইটের স্থান খালি রেখে দিল, সেখানে কোন ইট স্থাপন করেনি। লোকজন এটা প্রদক্ষিণ করে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে- হায়রে, যদি এ ইটের স্থানটুকু পরিপূর্ণ হয়ে যেত! সুতরাং আমিই নবীগণের মধ্যে ঐ ইটের স্থানসম। [১ইবন কাসীরের উদ্ধৃতি দিয়ে আহমদ তাঁর মসনদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।] অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, আমি এসে ঐ ইটটি পূর্ণ করে দিয়েছি।

এ সকল হাদীস এটাই প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতামুন নাবিয়্যীন অর্থাৎ সর্বশেষ নবী । আর, কাদিয়ানীর যা বলেছে যে, খাতাম অর্থ শ্রেষ্ঠ, শেষ নহে, তা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, বিকৃত, অন্তঃসারশূন্য ও দুর্বল, যার কোন ভিত্তি ও প্রমাণ নেই। এইতো ভাষাবিদগণ ও তাফসীরের ইমামগণ স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, খাতাম অর্থ শ্রেষ্ঠ নহে, বরং শেষ। মুসলমানদের ইমাম ও মোমিনদের নবী যিনি ওহীর সাহায্যে কথা বলেন, স্বয়ং তিনি স্পষ্টকরে বলেছেন যে, তিনি সর্বশেষ নবী, তাঁর দ্বারা নবুয়্যতকে সমাপ্ত করা হয়েছে এবং তাঁর দ্বারাই রেসালত বন্ধ হয়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তার বিপরীত কিছু বলার সাধ্য কারো নেই। ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী স্বয়ং এ নীতি তার উক্তিতে স্বীকার করেছে. ইলহাম প্রাপ্ত ব্যক্তির (অর্থাৎ রাসূলের) বর্ণনার পর আর কোন ব্যাখ্যা বা তাফসীর গ্রহণযোগ্য নয়। (গোলামের ঘোষণা যা তাবলীগে রেসালতে’ সন্নিবেশিত, ১ম খন্ড, ১২১ পৃ:।) এ জন্যই গোলাম আহমদ তার স্পষ্ট বক্তব্য দ্বারা সর্বশেষ নবী এবং তাঁর মাধ্যমে রাসূল আগমনের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। (গোলাম কাদিয়ানীর আল-ইস্তেফতা’) কাদিয়ানীরা যখন এ সকল গভীর ও স্পষ্ট হাকীকত উপলব্ধি করে তখন তারা তাদের বাতিল ব্যাখ্যা সমূহকে শক্তিশালী করার জন্য এমন কতকগুলো বিষয়ের চেয়ে কম নহে। তাই, কখনও তারা ভিত্তিহীন মওযু (মনগড়া) রেওয়ায়েত দ্বারা, যার কোন আসল নেই, দলীল গ্রহণ করে। আর তা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলীকে বললেন: আমি সর্বশেষ নবী, আর তুমি হে আলী! সর্বশেষ ওলী।’ (নজীর আহমদ কাদিয়ানীর আল কওলুস সরীহ’ ১৭৩ পৃ:।) তারা বলে যে, এর অর্থ হল- আলী রা. সর্বশ্রেষ্ঠ ওলী, এই অর্থ নয় যে, আলীর রা. পরে আর কোন ওলী আসবেন না। আমরা বলি, এ রেওয়ায়েতের কোন আসল বা ভিত্তি নেই। উপরন্তু আমরা সহীহ হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, খাতাম অর্থ শ্রেষ্ঠ নহে, বরং শেষ। আমরা উহা অভিধান ও তাফসীরের কিতাব সমূহ দ্বারা প্রমাণ করেছি। অনুরূপভাবে কোন কোন কাদিয়ানী একটি (বিচ্ছিন্ন) রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল গ্রহণ করার চেষ্টা করেছে। উহাতে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবাবাসকে রা. বলেছেন: আনন্দিত হও হে চাচা! নিশ্চয়ই তুমি হলে খাতামুল মুহাজেরীন বা সর্বশেষ মুহাজের। (আব্দুর রহমান কাদিয়ানীর আহমদিয়া পকেট বুক।) তাই তারা বলে: এখানে খাতাম অর্থ শ্রেষ্ঠ। কারণ, এর অর্থ এই নয় যে, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের হিযরতের পর আর কোন হিযরত নেই।

আমরা বলি: এ রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল গ্রহণ করাও রূগ্ন বুদ্ধি, অন্তরের বক্রতার পরিচয় বহন করে এবং তা দ্বীন ইসলামের মধ্যে পরিবর্তন সাধনের কুমতলব ও বিশ্বস্ত সত্যবাদী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুসলমানগণকে দুরে রাখার একটা কৌশল মাত্র। কেননা, আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, এ রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা ঠিক নহে।

প্রথমত: এ রেওয়ায়েতটি বিচ্ছিন্ন। উহার সনদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত ধারাবাহিক পৌঁছায়নি।

দ্বিতীয়ত: আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, নবুয়তের দ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং রেসালত শেষ হয়ে গেছে।

তৃতীয়তঃ আমরা ভন্ডনবী কাদিয়ানীর ভাষ্য উল্লেখ করেছি: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বর্ণনার পর কোন তাফসীর ও ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নহে।

চতুর্থত: যদি আমরা এ রেওয়াতকে সহীহ মেনে নেই তবুও এর দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হয় না। কারণ, মক্কা বিজয়ের পূর্বে যে সকল মুসলমান মক্কায় অবস্থান করছিলেন, তাদের জন্য মদিনায় হিজরত করা অপরিহার্য ছিল। আর আববাস রা. মক্কা বিজয়ের কিছু পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মদিনায় হিযরত করেছিলেন। হাফিজ ইবন হাজার তাঁর আল-ইছাবাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন: আববাস রা: মক্কা বিজয়ের কিছু পূর্বে হিযরত করেছেন এবং মক্কা বিজয়ের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। [১ সাহাবীগণের পরিচয় সম্পর্কে ইবন হাজারের গ্রন্থ হল আল ইছাবাত।] তিনি যখন মদিনায় পৌঁছেছিলেন, তখন তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন: ‘হে চাচা, তুমি আনন্দিত হও! নিশ্চয়ই তুমি হলে সর্বশেষ মুহাজির। কারণ, মক্কা বিজয়ের সময় অত্যাসন্ন ছিল। মুজাসি ইবন মাসউদ সালমী যখন তার ভাই মুজালিদ ইবন মাসউদকে নিয়ে হিজরতের উপর বায়আত গ্রহণের উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে আগমন করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: মক্কা বিজয়ের পর হিযরত নেই, তবে ইসলামের উপর বায়আত আছে। [২ বুখারী।]

মোটকথা, এ রেওয়ায়েত দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় না যে, খাতাম অর্থ শ্রেষ্ঠ, শেষ নহে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই পঞ্চম হাদীসকে বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন, যখন আলীকে সম্বোধন করে বলেছিলেন: ‘মুসার আলাইহিস সালাম কাছে হারূণের আলাইহিস সালাম যে মর্যাদা ছিল, ঠিক তেমনি আমার কাছে তোমার মর্যাদা রয়েছে। তবে পার্থক্য হল এতটুকু যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই। [৩ বুখারী ও মুসলিম।]

উক্ত হাদীস এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, খাতাম অর্থ শেষ। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরে নবুওতকে অস্বীকার করেছেন। কোন এক কাদিয়ানী জনৈক কবির উক্তি দ্বারা দলীল গ্রহণ করে বলে, কবিরা খাতাম শব্দকে শ্রেষ্ঠ অর্থে ব্যবহার করেছেন। আমি বলি: উহা তাদের পক্ষে কোন দলীলরূপে গণ্য হয় না। যেমন, তারা বলে: হাসান ইবন ওহাব আবু তামাম ত্বায়ীর শোক প্রকাশে বলে:

فجع القريص بخاتم الشعراء وغديرروضتها حبيب الطائ

(কুবাইস এলাকাবাসী খাতামুশ শুআরা এর জন্য ব্যথিত, কেননা, প্রকৃত কথা হল, হাবীব ত্বায়ীই ছিল এর বাগানে জলধারা বিশেষ।) এখানে খাতামুশ শুআরা অর্থ শ্রেষ্ঠ কবি, সর্বশেষ কবি নহে। কেননা, কবিগণ সব সময়ই বিদ্যমান আছেন। (কাদিয়ানীদের আল- কাওলুস সারীহ’ ও আহমদিয়া পকেট বুক।’) আমরা এর উত্তরে বলি: এর অর্থ কি আবু তামাম তার পূর্ববর্তী সকল কবির মধ্যে শ্রেষ্ঠ? এ পর্যন্ত কেহ এমন কথা বলেনি, এবং বলতে পারেও না। আর হাসান ইবন ওহাবেরও ধারণা ছিল না যে, আবু তামাম আরবের সকল কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বরং ইহার অর্থ হল- হাসান ইবন ওহাবের ধারণা অনুযায়ী আবু তামাম ই শেষ কবি, যিনি প্রাচী বিজ্ঞ কবিদের রীতি অনুসরণ করেছিলেন। সুতরাং কবিতার এ পঙ্ক্তি কাদিয়ানীদের পক্ষে দলীল নহে, বরং তাদের বিপক্ষে প্রমাণিত হয়।

দ্বিতীয় কথা- মানুষের কথা দ্বারা আল্লাহর বাণীর অর্থ নির্ধারণের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর দিকে, এরপর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন এবং আইম্মায়ে মুজতাহেদীন ও মুফাস্সীরীনের উক্তির দিকে ফিরে যেতে হবে। উপরন্তু এখানে কবির উক্তি অনেক অর্থের সম্ভাবনা রাখে, কোন একটি অর্থ সুস্পষ্ট নহে।

তৃতীয় কথা- কাদিয়ানীরা যখন মানুষের উক্তি দ্বারা দলীল গ্রহণ করতে চায়, তখন তাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম ও উচিত হবে তারা যেন তাদের নবীর উক্তি দ্বারা দলীল গ্রহণ করে। প্রকাশ থাকে যে, তাদের ভন্ডনবী কাদিয়ানী ‘খাতাম’ শব্দের অর্থ গ্রহণ করেছে ‘শেষ’ শ্রেষ্ঠ নহে। সে তার জন্ম কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে বলে: আমি জন্মগ্রহণ করলাম এবং আমার সাথে একজন মেয়ে জন্মগ্রহণ করল। সে প্রথমে পেট থেকে বের হল, এবং পরে আমি বের হলাম। এরপর আমার মাতা-পিতার আর কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। তাই, আমি হলাম তাদের (খাতাম) সর্বশেষ সন্তান। (তিরিয়াকুল কুলুব, ৩৭৯৯ পৃষ্ঠা)

মির্জা কাদিয়ানীর এ কথাটি কি কাদিয়ানীদের জন্য দলীল হবে? না হাসান ইবনে ওহাবের কথা দলীল হবে? এ ছাড়া ভন্ডনবী কাদিয়ানী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর উল্লেখ করে বলেছে: বনী ইসরাঈলের খাতেম সর্বশেষ নবীর নাম ছিল ঈসা । (বারাহীনে আহমদিয়ার পরিশিষ্ট নুসরাতুল হক’ পৃ: বা।) কোন কাদিয়ানী এ কথা বলতে পারবে না যে, এখানে ‘খাতাম’ এর অর্থ শ্রেষ্ঠ, শেষ নহে। কেননা, ভন্ডনবী অন্যত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে:- মুসা আলাইহিস সালাম এর পর সকল নবীই তাঁর শরীআতের খাদেম ছিলেন। (গোলাম কাদিয়ানীর শাহাদাতুল কুরআন’ ২৬ পৃ:।) যদি মানুষের উক্তি দ্বারা দলীল গ্রহণ করতেই হয়, তবে কাদিয়ানীদের জন্য ভন্ডনবীর উক্তি দ্বারা দলীল গ্রহণ করা অধিক শ্রেয়। কেননা, সে নিজেই দাবি করছে. সে প্রবৃত্তির তাড়নায় কোন কথা বলে না, সে যা বলে তা ওহীর সাহায্যেই বলে। (গোলাম কাদিয়ানীর আরবাঈন ৩ নম্বর, ৪৩ পৃ:।) সে তো ‘খাতাম’ শব্দকে শেষ অর্থে ব্যবহার করেছে, শ্রেষ্ঠ অর্থে নহে। আর, এ কথা প্রমাণ করাই আমাদের লক্ষ্য। কাদিয়ানীরা বলে যে, খাতাম অর্থ মোহর, অর্থাৎ তিনি লোকদের মোহর লাগান এবং তাঁর মোহরে একজন লোক নবী হতে পারে , ইহা সম্পূর্ণ বাজে কথা। আরবদের কাছে এই অর্থের কোন ব্যবহার নেই। নচেৎ এটা অপরিহার্য হয়ে পড়বে যে, খাতামুল মুহাজেরীনের অর্থ যার মোহরে একজন লোক মুহাজির হয়ে যায় এবং খাতামুল মুজতাহেদীনের অর্থ যে মানুষকে মোহর লাগায় এবং তাদেরকে মুজতাহেদ বানিয়ে দেয়। এ অর্থ আরবরা কখনও শুনেনি এবং এখন পর্যন্ত তাদের ভাষায় ইহার অস্তিত্ব নেই। এমনকি, অন্য কোন ভাষায়ও এরূপ ব্যবহার নেই। অন্যথায়, ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এ উক্তি উদ্দেশ্য কি হবে: আমি আমার মাতা-পিতার সন্তানের জন্য ‘খাতাম’। সে কি তার মাতা-পিতার সন্তানের মোহর লাগাচ্ছে যাতে তারা তাদের সন্তান হিসেবে পরিগণিত হয়? এ ধরনের নির্বুদ্ধিতার দ্বারা কি কাদিয়ানীরা তাদের মিথ্যাবাদী ভন্ডনবীর নবুওতকে প্রমাণ করতে চায়, না, এর দ্বারা মুসলমানগণকে প্রতারিত করতে চায়?

চতুর্থ কথা- তাদের উক্ত, উক্ত আয়াতে নবীগণ দ্বারা উদ্দেশ্য শরীয়াতের অধিকারী নবগিণ- একথা সম্পূর্ণ বাতিল, এর পক্ষে তাদের কোন দলীল নেই। কারণ, আল্লাহ তাআলা নবীগণের মধ্যে শরীয়ত প্রাপ্ত নহেন এমন কোন পার্থক্য করেননি। বরং আন্নাবিয়্যীন শব্দ আম (ব্যাপক) ও ‘মুতলাক’ (শর্তহীন) রয়েছে। আর, উসুল শাস্ত্রের প্রসিদ্ধ নীতি হল- আমাকে তার উমুম (ব্যাপকতা) এর উপর এবং মুতলাক কে তার এতলাক (শর্তহীনতা) এর উপর বহাল রাখা, যতক্ষণ পর্যন্ত এমন কিছু না পাওয়া যায় যা উহাকে খাস করে অথবা কোন শর্তের সহিত আবদ্ধ করে। এখানে এমন কোন প্রমাণ নেই যদ্দারা বুঝা যায় যে, নবীগণ দ্বারা এক বিশেষ শ্রেণির নবী উদ্দেশ্য। বরং এই অর্থ গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠিত স্পষ্ট উদ্ধৃতি সমূহের পরিপন্থী। কারণ এ সকল দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ‘নাবিয়্যীন’ দ্বারা সাধারণ নবুওতকে বুঝান হয়েছে।

ষষ্ঠ হাদীস- আমরা এখানে আর একটি হাদীসের উল্লেখ করব, যা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে নবুয়তের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যার জন্য আমার মাতা-পিতা ও আমার প্রাণ কুরবান) এরশাদ করেছেন- বনী ইসরাঈলকে তাদের নবীগণ দেখা শুনা করতেন । যখন কোন নবীর ইন্তেকাল ঘটত, তাঁর পরেই আর এক নবী আগমন করতেন। কিন্তু আমার পর আর কোন নবী নেই। তবে খলীফা আসবেন এবং তাদের সংখ্যা হবে অনেক। [১ বুখারী ইবনে মাযাহ ও আহমদ।] উক্ত হাদীস সুস্পষ্ট ভাবে এ কথাই বোঝাচ্ছে যে, আননাবিয়্যীন অর্থ সাধারণ নবুয়্যত। উহা নতুন কোন শরীয়ত যুক্ত হোক বা না হোক । কেননা, মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীসে দুটি বিষয় উল্লেখ করেছেন।

এক:- বণী ইসরাঈলের ভাল-মন্দ নবীগণ দেখাশোনা করতেন। এক নবী ইন্তেকাল করলে অপর নবী আগমন করতেন। কিন্তু কেহই একথা বলেননি যে, বণী ইসরাঈলের সকল নবী স্বতন্ত্র শরীয়তের অধিকারী ছিলেন। স্বয়ং কাদিয়ানীরাও একথা বলেনি। অতঃপর মহান রাসূল এ উক্তি করলেন আমার পরে কোন নবী নেই।

দুই:- তারপর খলীফা হবেন এবং তাঁরা অনেক হবেন।’ এ উক্তিও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে যে, তাঁর পর আর কোন নবী নেই। কারণ তাঁর পর যদি আর কোন নবী থাকত তা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলতেন না যে অচিরেই খলিফাগণ আগমন করবেন এবং তারা অনেক হবেন।

সপ্তম হাদীস- উপরন্তু রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট থেকে ওহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, অচিরেই এমন কতক গুলো লোক বের হবে যারা অপবাদ রটনাকারী, মিথ্যুক এবং নিজেকে নবী দাবি করবে, আর, আল্লাহর বাণী সমূহকে স্ব স্থান থেকে পরিবর্তন করবে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, যাতে কোন প্রকার অস্পষ্টতা ও সন্দেহের অবকাশ নেই। তিনি বলেছেন: অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুক বের হবে, যাদের প্রত্যেকে আল্লাহর নবী হওয়ার দাবি করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোন নবী নেই। অপর রেওয়ায়েতে আছে ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ত্রিশজন দাজ্জাল বের হবে, এদের প্রত্যেকেই দাবি করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোন নবী নেই। [১ আবু দাউদ ও তিরমিজী।] উক্ত হাদীস এদের মিথ্যা, ভ্রান্ত ব্যাখ্যার প্রতি আশ্রয় গ্রহণের মাধ্যমে এদের প্রতারণা এবং কুরআন হাদীসের বাণীকে এদের বিকৃতকরণের বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরছে। স্বয়ং তাদের ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী তার মিথ্যা নবুয়্যত দাবি করার পূর্বে স্বীকার করেছে যে, আল্লাহ তাআলার বাণী ‘খাতামুন নবিয়্যীন’ দ্বারা সাধারণ নবুয়্যত বুঝায়। সে তার উক্তি দ্বারা স্পষ্ট করে বলেছে: ‘তুমি কি জান না যে. মহান দয়ালু প্রভু আমাদের নবীর নাম রেখেছেন ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ এতে কোন রূপ ব্যতিক্রম নেই। আর আমাদের নবী স্বীয় উক্তি ‘লা নাবিয়্যা বাদী’ দ্বারা সত্যান্বেষীদের জন্য সুস্পষ্ট করে এর ব্যাখ্যা করেছেন।’ (গোলাম কাদিয়ানীর ইলহামের সমষ্টি হামামাতুল বুশরা ৩৪ পৃ:) সে আরো বলছে: ‘মা কানা মুহাম্মাদুন’ আয়াতটি স্পষ্ট করে প্রমাণ করছে যে, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর এ পৃথিবীতে আর কোন নবী আসবেন না।’ (গোলাম কাদিয়ানীর এজালাতুল আওহাম’ ৬১৪ পৃ:।))সে আরো বলেছে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেকবার বলেছেন যে, তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না এবং ‘আমার পর কোন নবী নেই’ হাদীসটি অতি প্রসিদ্ধ। এর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে কারো আপত্তি করার সাধ্য নেই। কুরআন কারীম , যার প্রতিটি শব্দই অকাট্য আয়াতের উক্তি দ্বারা ইহার সত্যতা প্রমাণ করেছে। সুতরাং নবুয়্যত আমাদের নবীর কাছে এসে শেষ হয়ে গেছে। (গোলাম কাদিয়ানীর কিতাবুল বারিয়া’ এর টিকা ১৮৪ পৃ:।) সে এর চেয়েও অধিক বলেছে: আমি ঠিক ঐ ভাবে বিশ্বাস করি যেভাবে মুসলমানগণ ও আহলে সুন্নাহ বিশ্বাস করেন। কুরআন ও হাদীস দ্বারা যা সাব্যস্ত তার সবটুকু আমি সমর্থন করি। আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, সর্বশেষ নবী সাইয়েদানা ও মাওলানা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর যে ব্যক্তি নবুয়্যত ও রেসালতের দাবি করবে সে কাফের ও মিথ্যুক। আমার বিশ্বাস রেসালত আদম ছফিউল্লাহ থেকে আরম্ভ করে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে শেষ হয়েছে। (গোলামের ঘোষণা যা তাবলীগে রেসালতে সন্নিবেশিত, ২য় খন্ড, ২য় পৃ:।)

এ উক্তি গুলো করেছে কাদিয়ানীদের সেই ভন্ডনবী যার দাবি হল যে, সে প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলে না, যা বলে তা ওহী ব্যতীত অন্য কিছু নহে। সুতরাং কাদিয়ানীরা কেমন করে ইজমায়ে উম্মত, মুফাস্সেরীনের মতামত, মহান রাসূলের হাদীস, এমন কি তাদের ভন্ডনবীর উক্তিকে বর্জন করে চলে? সে ভন্ডনবীই তার স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করছে যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ এর মধ্যে ‘আন নাবিয়্যীন’ ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, চাই তারা শরীয়তের অধিকারী হন বা না হন। এমনকি, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ঐ ব্যক্তির দাবিকেও প্রত্যাখ্যান করছে, যে শরীয়ত বিহীন নবীগণের আগমন এখনও সম্ভব বলে মনে করে। তাই, সে বলছে: ‘মহিউদ্দিন আরবী লিখেছেন, শরীয়ত সম্পন্ন নবুয়্যত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা বন্ধ হয়ে গেছে, তবে শরীয়ত বিহীন নবুয়্যত বন্ধ হয়নি।’ কিন্তু আমি গোলাম বিশ্বাস করি যে, সকল প্রকার নবুয়তের দ্বার বন্ধ হয়ে গেছে। (গোলাম কাদিয়ানীর প্রবন্ধ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল-হিকমে প্রচারিত এবং ১০ এপ্রিল ১৯০৩ সালে প্রকাশিত।) আমি জানি না, এত কিছুর পর ভন্ডনবী ও কাদিয়ানীরা কেমন করে এ কথা বলতে দুঃসাহস করে যে, খাতামুন নাবিয়্যীনের অর্থ শরীয়তের অধিকারী নবীগণ। এ ছাড়া আমি কাদিয়ানীদের প্রশ্ন করব যে, তারা আল্লাহ তাআলার এ বাণী সম্পর্কে কি বলে: ‘‘তিনি তোমাদেরকে এ নির্দেশ করছেন না যে তোমরা ফেরেস্তা ও নবীগণকে প্রভুরূপে গ্রহণ কর।’’ [১ সুরা আল ইমরান ৮০।] কাদিয়ানীরা কি এ বিশ্বাস করে যে, স্বতন্ত্র শরীয়ত নিয়ে আসেন নি তাদেরকে প্রভুরূপে গ্রহণ করতে দোষ নেই?

এইভাবে তারা আল্লাহ তাআলার এ বাণীরও কি অর্থ গ্রহণ করে: ‘বরং ঐ ব্যক্তির কাজে প্রকৃত কল্যাণ ও ছওয়াব রয়েছে, যে আল্লাহ, পরকাল, ফেরেস্তা, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস রাখে।’ [২ সুরা বাকারা, ১৭৭।] তারা কি শরীয়ত বিহীন নবীগণের প্রতি ঈমান গ্রহণ না করাকে জায়েজ মনে করে? এতে তো তারা রাজি হবে না। কারণ, তারা বলে যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও একজন শরীয়ত বিহীন নবীগণের প্রতি ঈমান গ্রহণ না করা কে জায়েজ মনে করে? এতে তো তারা রাজি হবে না। কারণ, তারা বলে যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীও একজন শরীয়ত বিহীন নবী। তা সত্ত্বেও তার উপর ঈমান আনয়ন করা ফরজ এবং যারা তার মিথ্যা নবুওতকে স্বীকার করবে না তারা কাফের। এ কথাটি আমরা দ্বিতীয় প্রবন্ধে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। বাস্তব কথা হল, তারা আল্লাহর বাণীকে একমাত্র তাদের ঘৃণিত উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই বিকৃত করে। অন্যথায়, এটা স্পষ্ট যে, গোলাম কাদিয়ানী শরীয়ত বিহীন নবুয়তের দাবি করেনি। বরং স্বতন্ত্র শরীয়ত সম্পন্ন নবুওতেরই দাবি করেছে। পঞ্চম প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছি যে, তার উপর ওহী নাজিলের দাবি করেছে। অনুরূপ ভাবে সে একটা স্বতন্ত্র দ্বীন ও শরীয়তের দাবি করেছে। বরং সে তার ঘৃণিত সত্তাকে সকল নবী রাসূলে উপর প্রাধান্য দিয়েছে। অতএব, তাদের পক্ষ থেকে খাতামুন নাবিয়্যীন এর অর্থ কখনও শরীয়ত সম্পন্ন নবী আর কখনও শরীয়ত বিহীন নবী গ্রহণ করা শুধু মুসলমানের সহিত প্রতারণা, ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছু নহে।

‘আন-নাবীয়্যীন দ্বারা কতেক নবী বুঝান হয়েছে’ ইবনে আরবীর এই উক্তি দ্বারা কোন কোন কাদিয়ানীর দলীল গ্রহণ করা সঠিক নহে।

প্রথমত: স্বয়ং তাদের ভন্ডনবী ইবন আরবীর উক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, যা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। সুতরাং তাদের নবী যা অস্বীকার করেছে উহা দ্বারা তাদের দলীল গ্রহণ করা কেমন করে ঠিক হবে?

দ্বিতীয়ত: কাদিয়ানীরাই ইবন আরবীর উক্তির উদ্ধৃতি প্রদানে ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা করছে। কেননা তারা ভালকরে জানে যে, ইবন আরবী শরীয়ত সম্পন্ন নবী এবং শরীয়ত বিহীন নবী বলে কোন পার্থক্য করেননি। বরং তাঁর মতে নবী মাত্রই শরীয়তের অধিকারী ব্যক্তি। সুতরাং যে ব্যক্তি তাবলীগ করে এবং তাঁর কাছে যে ওহী আসে উহার ঘোষণা দেয়, ইবন আরবীর মতে সে শরিয়তধারী নবী। আর যার কাছে শুধু ইলহাম আসে কিন্তু তিনি ইলহামের কথা প্রচার করেন না, তিনি ওলী। তাকেই ইবন আরবী বাড়িয়ে নবী বলে ফেলেছেন। ‘আল ইয়াওকীত’ গ্রন্থের লেখক বলেছেন: তাদের (প্রকৃত ও রূপক নবীর) মধ্যে পার্থক্য হল- নবী ঐ ব্যক্তি যার কাছে যখন জীবরাঈল ফেরেস্তা কিছু প্রেরণ করেন আর তিনি এটাকে নিজের জন্য খাছ মনে করেন এবং অপরের কাছে প্রচার করাকে হারাম মনে করেন। অতঃপর যদি তাকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, পৌঁছে দাও যা তোমার কাছে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তখন এই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে রাসূল বলা হবে। আর, যদি নবী কোন হুকুমকে এমনভাবে নিজের জন্য খাছ না করেন যে, তাহা অন্যের জন্য প্রযোজ্য হবে না, তবে তিনি রাসূল, নবী নন। অর্থাৎ এর দ্বারা শরিয়তধারী নবুয়্যত বুঝায় যা ওলীগণ হাসেল করতে পারে না। (আল-ইয়াওকীত আল-জাওয়াহীর’ যা মুহাম্মদিয়া পকেট বুক থেকে উদ্ধৃত।)

ইবনুল আরবী বলেন: নবী যে গুণের দ্বারা খাছ, ওলীর মধ্যে সে গুণ হতে পারে না, তা হল শরীয়ত সম্পর্কে ওহী লাভ করা । সুতরাং নবী ও রাসূল ব্যতীত কেহ শরীয়ত লাভ করতে পারে না। (ইবন আরবীর ফতুহাতে মক্কিয়া’) মোটকথা, ইবন আরবী প্রমুখ ছুফিগণ এ আক্কিদা রাখেন না যে, প্রকৃত নবুয়্যত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর বিদ্যমান আছে। বরং তারা নবুয়্যত শব্দ দ্বারা এমন বেলায়েত উদ্দেশ্য করেছেন, যার তাবলীগ করা অপরের কাছে হারাম। এ ধরনের নবুয়্যত কি কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্য এবং এ অর্থেই কি তারা গোলাম আহমদের নবুওতে বিশ্বাসী? অথবা অন্য কি অর্থ তারা গ্রহণ করে?

তৃতীয়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ এর অর্থ ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ দ্বারা ব্যাখ্যা করার পর কারো জন্য জায়েজ নহে রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সুস্পষ্ট বাণীকে ত্যাগ করে মানুষের অস্পষ্ট ও বিভিন্ন অর্থের সম্ভাব্য উক্তি দ্বারা দলীল পেশ করা, যা ইসলামে হুজ্জতও নহে এবং খাঁটি ধর্মের সনদও নহে। এই দেখুন স্বয়ং বিশ্বাসী ও সত্যবাদী রাসূল স্পষ্ট করে বলছেন:- অষ্টম হাদীস- নবুয়্যত ও রেসালত বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আমার পর আর কোন নবীও নেই এবং কোন রাসূল ও নেই।’ [১ তিরমিজী এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেছেন, আহমদ তাঁর মুসনাদেও এই হাদীস বর্ণনা করেছেন।]

এই হাদীসটিকে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার পুস্তক তুহফায়ে বাগদাদ এর ৭ম পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত করেছে এবং এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছে: আমাদের নবী যিনি সর্বশেষ নবী তাঁর পরে আল্লাহ তাআলা আর কোন নবী প্রেরণ করবেন না। আর নবুয়তের ধারা বন্ধ হওয়ার পর পুনরায় নতুন করে উহা চালু করবেন না’ (গোলাম কাদিয়ানীর মেরআতু কামালাতে ইসলাম’ ৩৭৭ পৃ:) কাদিয়ানীরা যে বলে, নবীগণ দ্বারা কতেক নবী উদ্দেশ্য, সকল নবী নহে। দলীলরূপে তারা আল্লাহ তাআলার এই বাণীকে গ্রহণ করে:

وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ( البقرة 61)

তারা নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। [১ সুরা বাকারা, ৬১।] অর্থাৎ ইহুদীরা কতেক নবীকে হত্যা করেছে। এ কথাটিও তাদের মিথ্যাচারিতার প্রমাণ। কারণ, এ স্থানে আন-নাবিয়্যীন এর আলিফ ও লাম হরফ দ্বয় আহ্দী বা নির্দিষ্ট অর্থ জ্ঞাপক, ব্যাপক অর্থবোধক নহে। এ কথাটি বোঝাচ্ছে আল্লাহ তাআলার এই বাণী: তারা নবীগণের এক জামাতকে মিথ্যা বলে আর এক জামাতকে হত্যা করে। [২ সুরা বাকারা, ৮৭।] তাছাড়া কতেক নবী বলতে শরিয়তধারী নবীগণ উদ্দেশ্য নহে। যাতে তারা বলতে পারে যে, ইহুদীরা শুধু শরিয়তধারী নবীগণকে হত্যা করত এবং শরীয়ত বিহীন নবীগণকে হত্যা করত না। এ কথার উপরও কোন দলীল নেই।

বাহায়ীগণ আল্লাহ তাআলার বাণী: ‘‘বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী’’ সম্পর্কে বলে যে, এখানে খাতাম অর্থ সৌন্দর্য। তাই, আয়াতের মর্ম হল এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবীগণের জন্য অঙ্গুলির মধ্যে আংটির সৌন্দর্যের মত। বাহায়ীদের অসৎ অনুসারী কাদিয়ানীরা ও এই অপ-ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছে। [৩ নজীর কাদিয়ানীর আল-কাউলুস সারীহ-দ্রষ্টব্য।] এ উক্তিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা করা হয়েছে। কেননা, তাঁকে পরিধেয় অলংকারের মালিক ও উহার পরিধানকারীর মোকাবিলায় অলংকারের কোন মূল্য নেই। বরং সেই অলংকার কিনে, পরিধান করে এটাকে খুলে দেয়। সেই অলংকার আঙুলে পরিধান করে সম্মানিত করে, অলংকার তাকে সম্মানিত করে না। সুতরাং এতে মহান রাসূলের জন্য কোন ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয় না। অথচ আল্লাহ তাবারকা ওতাআলা এ শব্দটিকে প্রশংসার স্থলে উল্লেখ করেছেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ফযিলত ও সম্মানের কথা স্পষ্টকরে বর্ণনা করেছেন।

নবম হাদীস- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: আমাকে ছয়টি গুণের দ্বারা সকল নবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে। আমাকে এমন ভাষা দান করা হয়েছে, যার শব্দ কম কিন্তু অর্থ ব্যাপক, আমাকে রুউব (সশ্রদ্ধ ভয়) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, আমার জন্য গনিমতের মাল হালাল করে দেয়া হয়েছে, আমার জন্য সমস্ত জমীনকে মসজিদ এবং পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আমার দ্বারা নবীগণের আগমন সমাপ্ত করা হয়েছে। [৪ মুসলিম।]

এ কারণেই সমস্ত মুসলিম জাতি এ কথার উপর ঐক্যবদ্ধ যে, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ই সর্বশেষ নবী, তাঁর পরে আর কোন নবী নেই। তাঁর পরে যদি কেহ নবুয়তের দাবিকরে, তবে সে কাফের ও দাজ্জাল। এমনিভাবে যে কেহ এ আকীদা রাখে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বারা নবুয়্যত শেষ হয়নি, সেও কাফের এবং স্বচ্ছ মুসলিম উম্মত থেকে বহির্ভূত। কাজী আয়াজ ‘ইজমার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন- যে ব্যক্তি খাতামুন নাবিয়্যীন এর বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করে না সে কাফের। তার স্পষ্ট বক্তব্য হল এই: যে, সকল লোক আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অথবা পরে কারো নবুয়তের দাবিকরে, যেমন ইহুদীদের মধ্যে ঈসায়ী সম্প্রদায় বলে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রেসালত আরবের জন্য খাছ, এমনিভাবে, হিজমিয়া সম্প্রদায় বলে যে, রাসূল আগমনের ধারা বিদ্যমান রয়েছে, তবে তারা সকলেই কাফের ও মিথ্যুক। কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়ে গেছেন যে, তিনি সর্বশেষ নবী তাঁর পরে কোন নবী নেই। আর আর আল্লাহ তাআলাও সংবাদ দিয়েছেন যে, মুহাম্মদ সর্বশেষ নবী এবং সমস্ত মানব জাতির জন্য প্রেরিত। মুসলিম জাতি একমত যে, এ বাক্যটির বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করতে হবে। কোন প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ব্যতীত এর স্বাভাবিক মর্মই উদ্দেশ্য। সুতরাং অকাট্য দলীল প্রমাণ ও এজমা দ্বারা এদের কাফের সাব্যস্ত হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই। (কাজি আয়াজের আশ-শিফা।)

দশম হাদীস উপরোক্ত সব উল্লেখের পর অবশিষ্ট হাদীস গুলোকে আমি বর্ণনা করছি, যাতে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দ্বারা নবুয়্যত শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: আমি আল্লাহর কাছে ঐ সময় সর্বশেষ নবীরূপে নির্ধারিত, যখন আদম আলাইহিস সালাম তরল মাটির মধ্যে ছিলেন। [১ শরহে সুন্নাহ ও মসনদে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে মিশকাতুল মাসাবীহের লীখক হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।]

একাদশ হাদীস- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমার অনেক নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মদ , আমি আহমদ, আমি মাহী, যার দ্বারা আল্লাহ কুফর মিটাবেন। আমি হাসীর, যার পদাঙ্ক অনুসরণে কিয়ামতের দিন সকল মানুষকে একত্র করা হবে। আমি আ’কিব, যার পরে আর কোন নবী নেই। [২ বুখারী ও মুসলিম।] অপর এক রেওয়ায়েতে আছে- আমি ঐ আ’কিব যে, আমার পর আর কোন নবী নেই। [৩ তিরমিযি।] উক্ত হাদীস স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ‘আমি আ’কিব’। অতঃপর নিজেই এর ব্যাখ্যা করেছেন- ‘আ’কিব ঐ ব্যক্তি যার পর আর কোন নবী নেই’। কিন্তু কাদিয়ানীরা যখন এ স্পষ্ট বক্তব্য দেখতে পেল, তখনই তারা তাদের অসৎ অভ্যাসের আশ্রয় নিল। আর, তা হল কুরআন হাদীসের পরিবর্তন ও বিকৃতি করা । তারা বলে: আ’কিব শব্দের ব্যাখ্যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেন নি। বরং তা কোন বর্ণনাকারী করেছেন।’ (নজীর আহমদ কাদিয়ানীর আল-কাওলুস সারীহ’ ১৮৭ পৃ:।) কাদিয়ানীরা তাদের অজ্ঞতার কারণে তিরমিযীর রেওয়ায়েত সম্পর্কে অবহিত নহে। উহাতে উত্তম পুরুষের ভাষায় ব্যাখ্যা রয়েছে, ‘আমি ঐ শেষ আগমনকারী যে আমার পর আর কোন নবী নেই।’ [৪ তিরমিযি ২য় খন্ড, ১৩৭ পৃঃ। মিশর সংস্করণ ১২৯২ হিঃ।] এ ব্যাখ্যা আদৌ এ কথার সম্ভাবনা রাখে না যে, কোন বর্ণনাকারী উহার ব্যাখ্যা করেছেন। এর ভাষ্য হল: আমিই খাতাম আমার দ্বারা নবুওতকে শেষ করা হয়েছে এবং আমিই আ’কিব সুতরাং আমার পরে আর কোন নবী নেই। [১ ইবন হাযার আসকালানীর আল-ইসাবাত গ্রন্থের হাসিয়া যা ইবন আব্দুল বার আল-ইন্তিখাব নামে রচনা করেছেন। ১ম খন্ড, ৩৭ পৃঃ মিশর সংস্করণ।]

অনুরূপভাবে কাজী আয়াজ উক্ত হাদীস উদ্ধৃত করেছেন- আমিই আ’কিব যে আমার পর আর কোন নবী নেই।’ [২ কাজী আয়াজের আশ-শিফা ১৯১ পৃঃ ইস্তাম্বুল সংস্করণ।]

এসব উদ্ধৃতির পর কাদিয়ানীদের পক্ষে একথা বলার কোন অবকাশ নেই যে, এ ব্যাখ্যা কোন রাবীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে এবং উহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষা নহে। কেননা, আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে, এ রেওয়ায়েতটি মুতাকাল্লিমের জমীর (উত্তম পুরুষের সর্বনাম) দ্বারা বর্ণিত। আর, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে মুতাকাল্লেমের জমীর দ্বারা বর্ণনা করা সম্ভব নহে। হাদীসের বর্ণনা ভঙ্গিও তা বোঝাচ্ছে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বলেছেন: আমি মাহী’ অতঃপর এর ব্যাখ্যা করেছেন- যার দ্বারা আল্লাহ কুফরকে মিটাবেন।’ তারপর বলেছেন আমি হাসীর’ এরপর এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন- আমার পদাঙ্ক অনুসরণে সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে।’ অতঃপর বলেছেন আমি আ’কিব এবং এ ক্ষেত্রেও বলেছেন ‘যার পর আর কোন নবী নেই’। এ কথা সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, তিনি নিজেই শেষ আগমন কারীর ব্যাখ্যা করেছেন, যেমন তিনি মাহী’ ও হাসীর’ এর ব্যাখ্যা করেছেন। মোটকথা, যখন আমরা এ ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণ করে দিলাম, তখন এ ব্যাপারে আর কারো পক্ষ থেকে ইতস্তত: করার অবকাশ নেই যে, ভন্ডনবী মিথ্যাবাদী তার নবুয়তের দাবিতে সম্পূর্ণ মিথ্যা।

দ্বাদশ হাদীস- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলীকে রা. সম্বোধন করে বলেছেন আমার কাছে তোমার ঐ মর্যাদা রয়েছে, যেমন মুসা আলাইহিস সালাম এর কাছে হারূণ আলাইহিস সালাম এর মর্যাদা ছিল। কিন্তু পার্থক্য শুধু এতটুকু যে আমার পর আর কোন নবী নেই। [৩ বুখারী ও মুসলিম।]

এ হাদীসটি অতি স্পষ্ট করে বোঝাচ্ছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নবী নেই। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তবুক যুদ্ধের সময় আলী রা. কে যখন তাঁর পিছনে রেখে মদিনাতে যেতে চাইলেন, তখন আলী রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সাথে জিহাদে শরীক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন। সেই সময় রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, আমি তোমার মর্যাদাকে খাটো করার জন্য কিংবা তোমার সম্মানকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য তোমাকে পেছনে রেখে যাচ্ছি না, বরং মদিনাতে তোমাকে আমার স্থলাভিষিক্ত করছি, যেমন মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর সাক্ষাতে তূর পর্বতে গমনকালে তাঁর ভাই হারূণকে আলাইহিস সালাম স্বীয় কওম দেখা শোনার জন্য স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন। এ দু টোর মধ্যে আর কোন পার্থক্য নেই শুধু এই কথা যে, হারূণ আলাইহিস সালাম নবী ছিলেন। কারণ, নবুয়তের ধারা তখন খতম হয়নি। কিন্তু তুমি নবী নও। কারণ নবুয়্যত আমার দ্বারা শেষ হয়ে গেছে এবং আমার পর আর কোন নবী নেই । এ অর্থকেই শক্তিশালী করছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আর একটি বাণী, যা হযরত সা’দ ইবন আবি ওক্কাসের রা. রেওয়ায়েতে পাওয়া যায়। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: আমার পর নবুয়্যত নেই’। [১ মুসলিম।]

এই রেওয়ায়েতটি কাফের মুরতাদ সম্প্রদায়ের উপর একটি চরম আঘাত, যারা আল্লাহর বাণীসমূহ ও রাসূলের বাণীসমূহকে ইহুদীদের ন্যায় পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে। তারা বলে ‘লা নাবিয়া বা’দী’ বাক্যে ‘লা’ অব্যয়টি ‘নফী কামাল’ (পরিপূর্ণতার না বোধক) অর্থে ব্যবহৃত। ‘নফী জিনস’ (মূল নবুয়তের না বোধক) অর্থে ব্যবহৃত নহে। সুতরাং তাদের মতে বাক্যটির অর্থ হয়- আমার পর স্বয়ং সম্পূর্ণ কোন নবী নেই। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে হারূণের আলাইহিস সালাম উল্লেখ করলেন। অতঃপর ‘লা নাবিয়া বা’দী বললেন। এটা জানা কথা যে, হারূণ আলাইহিস সালাম কোন স্বয়ং সম্পূর্ণ নবী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন মুসার আলাইহিস সালাম অনুগামী একজন নবী।

আসল কথা হল- এই এন্টি দলটি শুধু খতমে নবুওতকে অস্বীকার করতে চাচ্ছে না, বরং এর চেয়ে আরো বেশি কিছু তারা চায়। আর, তা হল- আল্লাহ সুবহানাহু অতাআলার অস্তিত্ব সম্পর্কে কুফরীর দ্বার উদ্ঘাটন করা এবং তাওহীদের বুনিয়াদকে ধ্বংস করে দেয়, মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পূর্বেকার সকল রাসূল স্থাপন করে গেছেন। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী ‘লা নবুওতা বা’দী’ এবং ‘লা নাবিয়া বা’দী’ বাক্যে পরিপূর্ণতার না বোধক অর্থ নির্ধারণ করতে চায়। যাতে এ নীতির ভিত্তিতে তাদের কোন একজন অনুরূপ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সম্পর্কেও বলতে পারে আমাদের ঐ উদ্ধৃতি এ কথাকেই সমর্থন করছে যা আমরা তাদের থেকে আল্লাহ তাআলার সাথে মানানসই নয় এমন অসমীচীন গুণ সম্পর্কে পঞ্চম প্রবন্ধে উল্লেখ করেছি। মোটকথা, কাদিয়ানী নেতা ও ভন্ডনবী স্বীকার করেছে. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তি ‘লা নাবিয়া বা’দী’ এর ‘লা’ অব্যয়টি ব্যাপক নফীর জন্য, ‘নফী কামালের জন্য নহে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আইয়েমে সুলাহ’ ১৪৬ পৃ:।))কোন কোন কাদিয়ানী এই উক্তি করেছে যে, উক্ত হাদীসে নফী আলী রা. এর জন্য খাছ। এটা আরবী ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং সত্যের মোকাবেলায় শুধু হটকারিতা বৈ আর কিছু নয়। কেননা, আরবী ভাষা সম্বন্ধে যার সামান্যতম ধারণা আছে, সে বুঝতে পারে যে, এর দ্বারা সাধারণ ভাবে না বেধক অর্থ উদ্দেশ্য। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ‘আমার কাছে তোমার ঐ মর্যাদা রয়েছে যে মর্যাদা হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এর কাছে হযরত হারূণ আলাইহিস সালাম এর ছিল, কিন্তু পার্থক্য হল শুধু এতটুকু যে, আমার পর কোন নবী নেই।’ অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে- ‘আমার পর নবুয়্যত নেই।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো একথা বলেন নি যে, আমার পর তুমি নবী নও।

ত্রয়োদশ হাদীস- আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি এরশাদ করেছেন: ‘নবুয়তের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, রয়েছে একমাত্র সুসংবাদ’। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন সুসংবাদ কি? উত্তর দিলেন, ‘সৎ স্বপ্ন’। [২ বুখারী।]

এই হাদীসের অর্থ অতি স্পষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে আর কোন নবী নেই এবং কোন নবুওতও নেই। কাদিয়ানী ও তাদের সাথী মুরতাদ দল দলীল পেশ করে যে, কোন কোন হাদীসের কিতাবে আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যদি ইব্রাহীম জীবিত থাকতেন তা হলে তিনি সত্যবাদী নবী হতেন।’ (আল-কাওলুস সারীহ’ এবং আহমদীয়া পকেট বুক)’ কয়েকটি কারণে তা ঠিক নহে এগুলো আমি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। কেননা, তারা এ রেওয়ায়েতের পাশেই ভ্যান ভ্যান করে ঘুরপাক খাচ্ছে, বিশেষকরে সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর নবুয়তের ধারা এবং রাসূল আগমনের ছিলছিলাকে প্রমাণ করার জন্য। অথচ এতে এমন কোন দলীল ও প্রমাণ লাভের অবকাশ নেই।

প্রথমত: এ হাদীস বিশুদ্ধ নহে। আল্লামা নববী ও অন্যান্যরা এর বিশ্লেষণ করেছেন। কারণ, উক্ত হাদীসের সনদে ইব্রাহীম ইবন উসমান মুহাদ্দিসগণের ঐক্যমত অনুযায়ী দুর্বল। তার সম্পর্কে শু’বা বলেছেন: মিথ্যুক, ইমাম আহমদ বলেছেন: ‘দুর্বল’ ইবন মুঈন বলেছেন: বিশ্বস্ত নহে, এবং নাসায়ী বলেছেন: বর্জিত। [১ ইমাম জাহাবীর মিযানুল এ ’তেদাল।] সুতরাং এ সকল মতামতের পর আর এই হাদীসের দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না।

দ্বিতীয়ত: যদি এ হাদীস ঠিক মেনেও নেওয়া যায় তবুও তা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খতমে নবুয়তের পরিপন্থী নহে। কারণ, এর অর্থ হল ইব্রাহীম যদি বাঁচতেন তা হলে তিনি সত্যবাদী নবী হতেন, কিন্তু তাঁর জন্য বেঁচে থাকা সম্ভব পর ছিল না। কেননা, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খতমে নবুয়্যত তাঁর বাঁচার জন্য প্রতিবন্ধক ছিল। আর এটাই হাফেজ ইবনে হাজার ইমাম আহমদের রেওয়ায়েত থেকে উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম আহমদ তাঁর মাসনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি এরশাদ করেছেন: ‘যদি ইব্রাহীম জীবিত থাকতেন, তা হলে

নবী হতেন, কিন্তু, তিনি জীবিত থকতে পারেন নি। যেহেতু তোমাদের মধ্যেই রয়েছে সর্বশেষ নবী।’ [২ ফতহুল বারী ইবন হাজার।] এটাকে সমর্থন করছে ঐ হাদীস যা ইমাম বুখারী রা. ইবন মাযা ও অন্যান্যরা ইবন আবু আওফা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন: ইব্রাহীম শিশু অবস্থায় মারা গেলেন। যদি হযরতের পর আর কোন নবী হওয়া সম্ভব হত, তবে তাঁর পুত্র অবশ্যই জীবিত থাকতেন । কিন্তু তাঁর পরে তো কোন নবী নেই।’ [৩ বুখারী ও ইবন মাযা।]

তৃতীয়ত: উক্ত হাদীসে ‘লাও’ অব্যয়টি শর্তের জন্য। আর, শর্তযুক্ত বাক্য প্রথম অংশের বাস্তবায়ন অপরিহার্য করে না। তাই এ উক্তি আল্লাহ তাআলার ঐ বাণীর মতই (যদি আসমান ও জমীনে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ হতেন, তবে উভয়টি বিনষ্ট হয়ে যেত) [৬ সুরা আম্বিয়া ২২।] অর্থাৎ অন্য কোন মাবুদও নেই। কাজেই আসমান ও জমিন বিনষ্টও হবে না এমনিভাবে ইব্রাহীম ও জীবিত থাকবেন না এবং কোন নবীও আসবেন না। মোটকথা, এ হাদীসটিও জোরালোভাবে প্রমাণ করছে যে, নবুয়্যত বিশ্বস্ত সত্যবাদী নবীর উপর শেষ হয়ে গেছে। কাফের মুরতাদগণ যেভাবে ধারণা করছে তা ঠিক নহে। এদিকেই মহান ও সম্মানের অধিকারী আল্লাহ ইঙ্গিত করেছেন- আল্লাহর বাণী: ‘আজকের দিন আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত চূড়ান্ত ভাবে সম্পন্ন করে দিলাম। আর ইসলাম কে তোমাদের দ্বীন রূপে মনোনীত করলাম।’ [১ সুরা মায়েদা ৩।] আল্লাহর বাণী: ‘হে রাসূল, আপনি বলুন, হে মানব জাতি! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর রাসূল।’ [২ সুরা সাবা ২৮ ।] আল্লাহর বাণী: আমি কেবলমাত্র আপনাকে সকল মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শন কারি রূপে প্রেরণ করেছি।’ [৩ সুরা আহযাব।] এরূপ অনেক আয়াত রয়েছে। এজন্যই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তাকে কাফের সাম্রাজ্যবাদীরা আজ্ঞাবহ করার পূর্বে বলেছিল: আল্লাহ তাআলা স্বীয় উক্তি এর মধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে,নবুয়্যত হযরত মুহাম্মদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর শেষ হয়ে গেছে এবং তিনিই সর্বশেষ নবী।’ (গোলাম কাদিয়ানীর তোহয়ায়ে গড়লিয়া’ ৮৩ পৃ:।)

চতুর্দশ হাদীস- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: যদি আমার পর কেহ নবী হতেন তা হলে তিনি হতেন ওমর।’ [৪ তিরমিযি।]

এ হাদীসটিও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর নবুয়্যত শেষ হওয়ার পক্ষে স্পষ্ট দলীল। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় যে দলটি তাদের অনুকরণ ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন পদ্ধতি ছেড়ে দিয়েছে, আর, বিশ্বাস ঘাতক সাম্রাজ্যবাদের আঁচল আঁকড়ে ধরেছে, তারা যখনই কোন সুস্পষ্ট বাণী দেখতে পায় তখনই তা অস্বীকার করে বসে। শুধু অস্বীকারই করে না, ইহুদীদের ন্যায় এটাকে বিকৃত এবং মিথ্যার রূপই দান করে। যদিও নিয়মানুযায়ী তাদের উপকারে আসে না বা অভিধান কিতাবাদী তাদের সহায়তা করে না। তাদের এ ধরনের একটি নিকৃষ্ট ফন্দি হল উক্ত হাদীসকে অস্বীকার করার জন্য তারা বলে: ‘& হাদীসটি গরিব’ উহা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না’। তারা আরো বলে, বা’দী শব্দের বিপরীত নহে। সুতরাং ইহা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর কোন নবী নেই।’ এই কথার দলীল হতে পারে না। (আল কওলুস সারীহ’ ১৮৪ পৃ:।)

এ সমস্ত কথা বলেছে জিন্দিক ও মুরতাদগণ। এদের বক্তব্যের অর্থহীনতার প্রতি লক্ষ করুন । প্রথমত: এদের উক্তি- ‘গরীব হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না’। এটা হাদীস মুহাদ্দীছগণের পরিভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নহে। কেননা, হাদীছ গরীব হওয়াতে উহা অভিযুক্ত হয় না এবং এটাকে দুর্বল করে না। এই সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা দিচ্ছেন হাদীসের ইমাম ও পরিভাষা-বিদ-গণ। যথা: ইমাম ইবন সালাহ, হাকিম, খতীব আসকালানী প্রমুখ, ‘উলুমুল হাদীস, ‘মারেফাতু উলুমুল হাদীস, গরাবাতের সাথে দুর্বলতা ও সবলতার কোন সম্পর্ক নেই। এর উদাহরণ হল বুখারীর প্রথম হাদীসঃ إنما

الأعمال بالنيات

এটা গরিব হাদীস। অথচ এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ নেই যে, উহা বিশুদ্ধ হাদীস, উহা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া তিরমিজি স্বয়ং স্পষ্ট করে বলেছেন যে, এ হাদীসটি হাসান। আর, হাসান মকবুলের অন্তর্ভুক্ত। এইভাবে এদের উক্তি ‘বা’দ (পরে) শব্দটির অর্থ ‘গায়ের’ (ব্যতীত) গ্রহণ করা, এটা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর উক্তি ছাড়া আর কিছুই নহে। অন্যথায়, আরবী ভাষার কোন অভিধানে ‘বা’দ’ এর অর্থ গায়ের পাওয়া যায় নি যে, তারা এ শব্দকে ভিন্ন ও বিপরীত অর্থে ব্যবহার করছে। কাদিয়ানীরা আল্লাহ তাআলার বাণী:

فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَ اللَّهِ وَآَيَاتِهِ يُؤْمِنُونَ ﴿6 الجاثية﴾

দ্বারা যে দলীল পেশ করছে যে, উক্ত আয়াতে বা’দ শব্দটি গায়ের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এটা তাদের অজ্ঞতা ও স্বল্প জ্ঞানের পরিচয় বহন করে। তারা যে আরবী ভাষার জ্ঞান থেকে বহু দূরে, তাই বোঝাচ্ছে। কেননা, আরবরা অধিকাংশ স্থানে (মুজাফইলাইহি) কে লোপ করে উহার স্থানে দ্বিতীয় মুজাফ ইলাইহিকে বসিয়ে থাকে। এটা ঐ সকল ব্যক্তিই বুঝতে পারে, যাদের আরবী ভাষা সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান রয়েছে। বা উহার প্রাথমিক বিষয়াদি পড়াশোনা করেছে। এ ধরনেরই একটি বাক্য হল মহান আল্লাহর বাণী:

فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَ اللَّهِ وَآَيَاتِهِ يُؤْمِنُونَ

অর্থাৎ (আল্লাহর বাণী তথা কুরআন ও এর আয়াত সমূহের পর আর কোন কথার প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে?) এভাবেই স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন মুফাস্সেরগণের ইমাম ইবন জারীর, ইমাম সয়ূতী, আবুস সুউদ, জমাখশারী ও বায়জাভী প্রমুখ আল্লামাগণ। ঠিক এই অর্থের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন খাজেন ও নাসাফী। তাঁরা বা’দ শব্দের পরে কালামুল্লাহ ঊহ্য ধরে বলেছেন:(আল্লাহর পর অর্থাৎ আল্লাহর কিতাব ও তাঁর আয়াতের পর ওরা কোন বাণীর প্রতি বিশ্বাস রাখবে।) [১ সুরা জাছিয়া ৬।] (মায়ালেম ও মাদারেক।) এ ধরনের দৃষ্টান্ত আরবদের কথা-বার্তায় অনেক। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমের দোয়ায় বলেছেন: أنت الآخر فليس بعدك شيء

(তুমিই শেষ তোমার পর আর কিছু নেই) [২ মুসলিম।] মুল্লা আলী ক্বারী এর অর্থ সম্পর্কে বলেন-অর্থাৎ: أي بعد آخريتك (তোমার শেষত্বের পর আর কিছু নেই।) [৩ মিরকাত. ৩য় খন্ড, ১০৮ পৃঃ।] এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তি ‘আমার পর কোন নবুয়্যত নেই। [৪ মুসলিম।] এর অর্থ-.

অর্থাৎ আমার নবুয়তের পর আর কোন নবুয়্যত নেই’।

আমরা অন্যভাবে বলি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ হাদীস নবুয়্যত শেষ হওয়ার উপর অত্যন্ত স্পষ্ট। কারণ, অন্য হাদীস একে শক্তিশালী করছে, যার মধ্যে বা’দ শব্দের উল্লেখ নেই। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উক্তি যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে: ‘আমি হলাম শেষ নবী।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আরো একটি উক্তি: নবুয়্যত আর অবশিষ্ট নেই কেবলমাত্র সুসংবাদ ব্যতীত। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন-সুসংবাদ কি? উত্তর দিলেন- সৎ স্বপ্ন।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপর একটি উক্তি: রেসালত ও নবুয়্যত শেষ হয়ে গেছে। [১ ইহার আলোচনা পূর্বে চলে গেছে।] এ সকল হাদীস সহ আরো অনেক হাদীস স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে যে, বা’দ এর অর্থ শেষে হওয়া এবং শেষ। এ অর্থ অতি স্পষ্ট।

আর কাদিয়ানীদের উক্তি যে, বা’দ শব্দটি ‘গায়ের’ অর্থে ঐ রেওয়ায়েতের মধ্যে ব্যবহার হয়েছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়, তিনি বলেছেন: ‘যদি আমাকে প্রেরণ করা না হত, তা হলে হে ওমর তোমাকে প্রেরণ করা হত।’ (আল- কওলুস সরীহ’ এবং আহমদিয়া পকেট বুক।’) এটা সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা, কাদিয়ানীরা এ রেওয়ায়েতকে মিরকাত থেকে উদ্ধৃত করেছে, আর, মিরকাতের লেখক এর সনদ উল্লেখ করেন নি। এ কারণে রেওয়ায়েতটি অজ্ঞাত। ‘শেখ আব্দুল্লাহ মে’মার উল্লেখ করেছেন যে, এ সকল শব্দে উক্ত রেওয়ায়েতটি হাদীসের কোন কিতাবে পাওয়া যায় না। সম্ভবত: মোল্লা আলী ক্বারী এ রেওয়ায়েতটিকে অপর রেওয়ায়েত থেকে উদ্ধৃত করেছেন যার শব্দাবলি হল- যদি আমাকে প্রেরণ করা না হত, তবে অবশ্যই তোমাদের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করা হত। আর ওমর রা. কেই তোমাদের মধ্যে প্রেরণ করা হত’। [২ মানাবীর ‘কুনুজুল হক’।] অথবা এটা নিম্নোক্ত রেওয়ায়েত থেকে উদ্ধৃত করেছেন ‘যদি আমি প্রেরিত না হতাম তা হলে আমার পর ওমর রা. কে প্রেরণ করা হত’। [৩ কুনুজুল হক।]

কিন্তু এত সত্ত্বেও উহা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। কারণ, এ দুটি রেওয়ায়েত দুর্বল এবং বানোয়াট।

প্রথম রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করেছেন ইবনুল জাওযী তাঁর কিতাব ‘মাওযুয়াত’ এর মধ্যে দুটি সনদে। প্রথম সনদের মধ্যে একজন রাবী যার নাম জাকারিয়া ইবন ইয়াহইয়া ওক্কার, সে মিথ্যুক ও হাদীস রচনাকারী। ইবনুল জাওযী বলেছেন: ‘জাকারিয়া মিথ্যুক, সে হাদীস রচনা করে।’ (মাওজুয়াত) জাহবী তাঁর আল-মীজান গ্রন্থে বলেছেন: ইবন আদী বলেছেন: ‘জাকারিয়া হাদীস রচনা করে।’ সালেহ বলেছেন: ‘সে বড় মিথ্যুকদের একজন ছিল।’ [৪ জাহাবীর মীজানুল এতেদাল।] এ রেওয়ায়েতের দ্বিতীয় সনদে একজন রাবীর নাম আ্দুল্লাহ ইবন হেরানী তার সম্পর্কে ইবন জাওযী বলেছেন: ‘সে বর্জিত।’ [৫ মাওজুয়াত।] আর, জাহাবী ইয়াকুব ইবন ইসমাঈল থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে, ইবন ওয়াকেদ মিথ্যাবাদী ছিলেন।’ [৬ জাহাবীর মীজানুল এতেদাল।]

এ কারণেই, ইবন জাওযী এ রেওয়ায়েতকে উভয় সনদের দিক থেকে মওযু বলেছেন। আর, দ্বিতীয় রেওয়ায়েত অর্থাৎ ‘যদি আমি প্রেরিত না হতাম তা হলে অবশ্যই আমার পরে ওমরকে রা. প্রেরণ করা হত।’ উহাতে ইসহাক ইবন নুজাইহ মালতী নামে জনৈক রাবী রয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে জাহাবী তাঁর পুস্তক ‘আল-মীজানে’ ইমাম আহমদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন- আহমদ বলেছেন যে, সে লোকজনের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। ইয়াহইয়া বলেছেন, সে মিথ্যাবাদী ও হাদীস রচনার কাজে প্রসিদ্ধ। [৭ মীজান।] এজন্য ইবন জাওযী বলেছেন: এ রেওয়ায়েতটিও মওযু (বানোয়াট) [১ মওজুয়ত।] মোটকথা, এ উভয় রেওয়ায়েতই মওযু। এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সঠিক নহে এবং এর দ্বারা হুজ্জতও প্রমাণিত হয় না। তাই বা’দ শব্দের অর্থকে বিকৃত করার মধ্যে তাদের চক্রান্ত নিহিত রয়েছে, যে চক্রান্ত ইহুদীরা ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য করে যাচ্ছে।

পঞ্চদশ হাদীস- এরপর আমি আর একটি হাদীস উল্লেখ করব। তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: ‘হে আবু জর! সর্ব প্রথম নবী আদম আলাইহিস সালাম এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। [২ ইবন হিববান তাঁর সহীহ কিতাবে এবং আবু নাঈম হুলিয়া কিতাবে বর্ণনা করেছেন, আর ইবন হাজার ফতহুল বারী কিতাবে উহাকে সহীহ বলেছন] এ সকল বিশুদ্ধ হাদীস এবং কুরআনে স্পষ্ট ভাষ্য অকাট্য ভাবে প্রমাণ করছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নবী নেই। আর, যে ব্যক্তি তার পরে নবুয়তের দাবি করবে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে মিথ্যুক ও দাজ্জাল। ইমাম ইবন কাসীর র. বলেছেন: ‘বান্দার প্রতি আল্লাহর অসীম মেহেরবানি যে, তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাদের প্রতি প্রেরণ করেছেন। অতঃপর তাঁকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে সম্মানিত করেছেন। আর, তাঁরই সম্মানে খাঁটি দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন।’ আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশুদ্ধ হাদীসে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁর পর আর কোন নবী নেই, যাতে সকল মানুষ জানতে পারে যে, যে কেহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর ঐ পদবির দাবি করবে, সে মিথ্যুক, অপবাদদাতা, দাজ্জাল, বিভ্রান্ত ও বিভ্রান্তকারী। যদিও তাদের কেহ আগুন দিয়ে খেলে এবং বিভিন্ন প্রকার যাদু মন্ত্র ও ম্যাজিক দেখায়, তবুও বুদ্ধিমান লোকের দৃষ্টিতে এ গুলো প্রতারণা ও ধোঁকা ব্যতীত কিছুই নহে। যেমন করে মহান আল্লাহ ত’আলা ইয়ামেনে আসওদ আনাসীর হাতে এবং ইয়ামামাতে মুসাইলামা কাজ্জাবের হাতে অনেকগুলো বিভ্রান্তিকর অবস্থা ও বাজে উক্তি সমূহ প্রকাশ করান। এ গুলো দেখে প্রত্যেক বুদ্ধিমান, বোধশক্তি সম্পন্ন ও যোগ্য লোক বুঝে নেয় যে, এরা মিথ্যুক। এদের উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা মিথ্যা নবুয়তের দাবি করবে, তাদের সকলের উপর আল্লাহর লা’নত ও অভিশাপ। সুতরাং এ সকল মিথ্যুকদের কারো কারো কাছে আল্লাহ তাআলা এমন অবস্থা সৃষ্টি করেন যা দেখে আলেমগণ ও মোমিন বান্দাগণ এদের মিথ্যা দাবি অনুধাবন করে নিতে পারেন। [৩ তাফসীরে ইবন কাসীর, ৩য় খন্ড ৪৯৪ পৃঃ মিশর সংস্করণ।] এ সমস্তের পর অর্থাৎ পূর্বে আলোচিত সত্যকে অনুধাবন করার পর এবং কুরআন হাদীস ও আরবী ভাষা নিয়ে কাদিয়ানীদের খেলা করার ব্যাপারে অবহিত হওয়ার পর আর তাদের অমূলক বিকৃতি, সারশূন্য ব্যাখ্যা বলী, নিকৃষ্ট উক্তি ও সস্তা জ্ঞান শূন্য আকীদা বিশ্বাসের পর আমি তাদের আরো কিছু বিকৃতির কথা উল্লেখ করতে চাই, যদ্দারা তারা দলীল গ্রহণ করতে চায় যে, নবুয়তের ধারা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। ফলে এ প্রবন্ধটি ওদের সমস্ত চক্রান্ত এবং বিভ্রান্তির এটা সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে পারবে এবং পাঠক ওদের স্বভাবগত ঘৃণিত অবস্থা ও গোপন দুরভিসন্ধি সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে।

কাদিয়ানীরা বলে- আল্লাহ তাআলার বাণী: ‘যারা আল্লাহ ও রাসূলের কথা মেনে চলবে, তারা পরকালে ঐ সকল লোকদের সাথে থাকবে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এরা হলেন- নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎকর্মশীল লোকগণ। আর, তারা কতই না উত্তম সাথী! [১ সূরা নিসা, ৬৯ আয়াত।]

এই আয়াত প্রমাণ করছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর নবুয়তের ধারা চালু আছে। (কাদিয়ানী পুস্তক আল-কাওলুস সারীহ’ ১৯৭ পৃ: এবং আহমদিয়া পকেট বুক ৫০০পৃঃ ইত্যাদি।)

আরবী ভাষার সাথে যার সামান্যতম সম্পর্ক আছে অথবা যে উহার শব্দাবলির অর্থ বুঝে, তার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর নবুয়তের ধারা চালু থাকার উপর দলীল গ্রহণ করা সম্ভব। কারণ, উক্ত আয়াতের মধ্যে এ অর্থের প্রতি সামান্যতমও ইঙ্গিত নেই। কিন্তু কাদিয়ানীরা এবং যারা তাদের সাথে শয়তানের পথ অনুসরণ করে চলেছে, তারা এ পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাতে দুঃসাহস করেছে। এমনকি, তারা তাদের মিথ্যা নবীর নীতি ধরে শয়তানের ওহীর সাহায্যে ইসলামের নামে জনসাধারণকে প্রতারিত করার জন্য পরাক্রমশালী এক আল্লাহর পবিত্র কালাম পরিবর্তন করতে লজ্জাবোধ করেনি।

অতএব, তারা কুরআন ও হাদীসের সকল বাণী এবং আইম্মায়ে তাফসীর ও ভাষাবিদদের মতামতের বিপরীত বলে: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা মেনে চলে সে নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও নেক্কার গণের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।’ হ্যাঁ এ সব কথা বলছে, কুরআনের অস্বীকার কারী আল্লাহর শত্রু ও তাঁর রাসূলের শত্রু এবং ইসলামের শত্রু বিশ্বাসঘাতক সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টরা, যারা একজন আফিমখোর মদ্যপায়ী ইংরেজদের সেবাদাস ব্যক্তির নবুয়্যত প্রমাণ করতে চায়। অথচ, আয়াতের অর্থ অতি স্পষ্ট। আর তা হল এই ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে তারা নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও নেককারগণের সান্নিধ্য লাভ করতে পারবে।’ এ জন্যই আল্লাহ তাআলা এর পরেই বলেছেন: ‘আর তারা কতই না উত্তম সাথী।’ অন্যথায় এদের উক্তি থেকে কতকগুলো বিষয় অপরিহার্য হয়ে পড়ে: প্রথমত:- নবুয়্যত উপার্জন উপযোগী বস্ত্ত, দান গত বস্ত্ত নহে। আর যে কেহ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে নবী হতে পারবে। ইহা কুরআনের স্পষ্ট ভাষ্যের বিপরীত। আল্লাহর বাণী: ‘আল্লাহ ফেরেস্তাদের মধ্যে এবং মানুষের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকেই রাসূল মনোনীত করেন।’ [২ সুরা হাজ্জ।]

দ্বিতীয়ত:- যারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হবে, তাদের নবী হওয়া অপরিহার্য হবে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ যাদের প্রশংসা করেছেন মহান আল্লাহ স্বীয় কালামে পাকে। কেননা, আজ পর্যন্ত তাদের তুলনায় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি অধিক অনুগত আর কাইকে পাওয়া যায়নি এবং পাওয়া যাবেও না। তাদের পরেই মর্যাদা ও আনুগত্য লাভ করেছেন তাবেয়ীগণ, অতঃপর তাবে তাবেয়ীগণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের কেহ দাবি করেননি যে, তিনি নবী হয়ে গেছেন। কোন ইমামও একথা বলেন নি যে, তাঁরা নবী ছিলেন। এই নীতিতেই মহান আল্লাহ যখন সত্যিকার মুমিনদের কথা উল্লেখ করেছেন তখন তাদের সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহ উপাধি দান করেছেন। আল্লাহর বাণী: ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারীগণ এবং যারা আল্লাহর নিকট করযে হাসানা পেশ করে, আল্লাহ তাদের প্রতিদান অনেকগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেবেন। আর যারা আল্লাহ ও তার রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তাঁরা তাদের প্রভুর কাছে সত্যবাদী ও শহীদরূপে পরিগণিত। [১ সুরা হাদীদ-১৮] আল্লাহর বাণী: ‘যারা ঈমানদার এবং সৎকাজ করে আমি তাদেরকে আমার নেকার বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করব।’ [২ সুরা আনকাবুত-৯] আল্লাহ তা’য়ালা এ কথা বলেন নি যে, আমি তাদের নবীগণের অন্তর্ভুক্ত করব। কেননা, নবুয়্যত অর্জন যোগ্য কোন বস্ত্ত নহে। অন্যথায়, ভন্ডনবী কাদিয়ানী শুধু একাই নবী হবে না, বরং যারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসারী হবে, তারা সকলেই কোন প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই নবী হবেন। এ কথা স্বয়ং কাদিয়ানীরাও বলে না।

তৃতীয়ত:- আল্লাহ তাআলার বাণী: - وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ

)যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে) উহাতে নারী পুরুষ উভয়ই শামিল। তবে মহিলাদেরকে নবী হওয়া থেকে বঞ্চিত রাখা হবে কেন?

চতুর্থত:- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী, সিদ্দিক ও শহীদগণের সঙ্গী হবে। [৩ তিরমিযি, দারমী, দারকুতনী ও শিশকাত।] এর অর্থ কি বিশ্বস্ততার দ্বারা নবী হয়েছেন? উপরোক্ত এ হাদীসটি আয়াতের মতই সুদৃঢ়। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবীগণের সঙ্গী হবেন।’ যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: ‘যে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ অর্থাৎ নবী ও ছিদ্দীকগণের সঙ্গী হবে।’ এর মর্ম হল সত্যবাদী ব্যবসায়ী ব্যক্তি এ সকল মুকাররব (আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী) বান্দাদের সঙ্গ লাভ করবে।

পঞ্চমত:- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর নিকটবর্তী সময়ে আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহগণের সঙ্গ লাভের জন্য প্রার্থনা করতেন। [৪ বুখারী ও মুসলিম।] এর অর্থ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্নেহশীল করুণাময় প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতেন, তিনি যেন তাঁকে এ দুনিয়া থেকে আপন সান্নিধ্যে নিয়ে যান, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও নেককার বান্দাগণের সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন। অনুরূপ আরেকবার বলেছেন- (হে আল্লাহ! হে সর্বোচ্চ সাথী!) অন্যথায়, নবী সিদ্দিক ও শহীদ হবার প্রার্থনা দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে? অথচ তিনি তো পূর্ব থেকেই নবী।

ষষ্ঠত:- মহান আল্লাহর বাণী:-

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ( الأحزاب 40)

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নহেন। বরং তিতি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী।) আল্লাহর বাণী:-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ( المائدة 3)

(আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার করুণা সু-সম্পূর্ণ করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের দ্বীনরূপে পছন্দ করলাম।)

আল্লাহর বাণী: -وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ( سبأ 28)

(আমি আপনাকে সমস্ত মানব জাতির জন্য সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।) কুরআনে বর্ণিত আরো পবিত্র বাণীসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নবী নেই। অনুরূপভাবে মহান রাসূলের মুতাওয়াতির হাদীস সমূহ এ কথার উপর অকাট্য হুজ্জত যে, তাঁরপর নবুয়তের ধারা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। সুতরাং এ সকল প্রকাশ্য প্রমাণাদি হুজ্জতের পর কোন বিকৃতকারী ও ইহুদীদের অনুসারীর পক্ষে কোন অধিকার নেই যে, সে মহান আরশের প্রভুর বাণীর সাথে খেলা করে কোন অপবাদ রটনাকারী মিথ্যুকের জন্য নবুয়্যত সাব্যস্ত করবে।

সপ্তমতঃ- কাদিয়ানীরা বলে- আল্লাহর বাণী:

مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ( النساء 69)

এর মধ্যে ‘মাআ’ শব্দটি ‘মিন এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এ কথার কোন দলীল নেই। কারণ, কোন ভাষাবিদ বা কোন তাফসীরকারক এমন কথা কখনও বলেন নি। তাফসীরকারক সকলেই এ কথা সাব্যস্ত করেছেন যে, এ আয়াতে ‘মাআ’ এর অর্থ সঙ্গ ও সাথে থাকা। বিখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাছীর এ শব্দ প্রসঙ্গে বলেন: ‘তাকে ওদের সাথী বানিয়ে দেয়।’ ইমাম যমখশারী রহ. বলেন: আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী বান্দা তাঁর সাথী হবেন।’ ইমাম রাজী এর অর্থ করেন, ‘যখন তারা আমার দর্শন ও সাক্ষাৎ লাভ করতে চাইবে, তখন তা পারবে।’ কাদিয়ানীরা এ অর্থ গ্রহণ না করলে আল্লাহ তাআলার এ বাণী সম্পর্কে কি বলতে পারে?-

إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿البقرة 153﴾

(নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।) এর অর্থ কি আল্লাহ ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত? তারা আল্লাহ তাআলার এ বাণী সম্পর্কেও কি বলতে পারে?

( النحل ১২৮) إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا

নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন। এর অর্থ কি আল্লাহ মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত?))মোটকথা, আল্লাহ তাআলার বাণীতে ‘মাআ’ শব্দটি ‘মায়িআত’ বা সাথী হওয়ার অর্থ প্রদান করছে। অর্থাৎ এ ব্যক্তির ঐ সকল মুকাররব বান্দাদের সঙ্গ হাসেল হবে। স্বয়ং আয়াতের শেষ অংশ এর তাফসীর করছেঃ

وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا ﴿النساء 69﴾

(এরা কতই না উত্তম সাথী।)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঐ বাণীও এর সাক্ষ্য দিচ্ছে- ‘একজন লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে হাজির হয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমি এ কথার সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, আমার মালের যাকাত আদায় করি এবং রমযানের রোযা রাখি। উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যে ব্যক্তি এ অবস্থায় মারা যাবে সে কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদগণের সাথে এমনভাবে থাকবে, এ কথা বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি অঙ্গুলি একসাথে খাড়া করলেন। [১ আমর ইবন মুররাতাল যুহনীর রেওয়ায়েত থেকে ইমাম আহমদ তার মসনদে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঐ বাণীও একথার সাক্ষ্য দিচ্ছেঃ

من أحبني كان معي في الجنة

(যে আমাকে ভালবাসে সে বেহেশতে আমার সাথে থাকবে।) [২ তিরমিজী।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হযরত রবিয়া ইবনে কা’বের প্রতি যখন তিনি আবেদন করেছিলেন- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি বেহেশতে আপনার সঙ্গ কামনা করি’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন- ‘তুমি এ কাজে নিজের জন্য বেশি বেশি সেজদা করে আমাকে সাহায্য কর’। [৩ মুসলিম।] এ সমস্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা এ কথাই প্রকাশ করে যে, ‘মাআ’ শব্দের অর্থ সাথী ও সঙ্গী হওয়া, অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থ নহে, এ সকল কাফের ও মুরতাদরা যেমন ধারণা করছে। আমর যুহানীর হাদীস এ ব্যপারে একটি উজ্জ্বল প্রমাণ এবং এ সকল কাফেরদের মাথার উপর একটি কোষমুক্ত তরবারি স্বরূপ। সেই হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন- ‘যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যখন সে এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, যাকাত প্রদান করে ও রমজানের রোজা রাখে সে হবে নবীদের সঙ্গী’। এখানে যদি ‘মাআ’ শব্দকে ‘মিন’ অর্থে ব্যবহার করা হয় তা হলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য নবী হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এ জাতীয় বাতিল কথাবার্তা দ্বারা কাদিয়ানীরা কি লোকজনকে পথভ্রষ্ট ও প্রতারিত করতে চায়? অথচ তাদের দলীল প্রমাণাদি মাকড়শার জালের চেয়েও দুর্বল। মহান আল্লাহ বলেছেন:

وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنْكَبُوتِ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ ﴿العنكبوت 41﴾

(‘নিশ্চয়ই মাকড়শার ঘর সবচেয়ে দুর্বল ঘর। হায়, যদি মানুষ তা বুঝতে পারত’।)

দ্বিতীয় আয়াত, যদ্বারা তারা নবুয়তের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করার জন্য দলীল হিসেবে গ্রহণ করে। আর এ কথা তারা তাদের অসৎ পূর্ব পুরুষ বাহায়ীদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাআলার বাণীর অর্থ বিকৃত করে। আল্লাহর বাণী: (হে আদম সন্তান! যখনই তেমাদের কাছে তোমাদের মধ্য হতে রাসূলগণ আগমন করে, আমার আয়াত বর্ণনা করে, তখন যে কেহ আল্লাহকে ভয় করবে এবং সৎ কাজ করবে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না।) [১ সুরা আরাফ-৩৫।] কাদিয়ানিরা বলে, এ আয়াত প্রমাণ করছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরেও নবীগণের আগমন ঘটবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে রাসূলগণের আগমন সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। (আল কওলুস সারীহ, ১৯৮ পৃ: ও আহমদিয়া পকেট বুক’ ৫০৩পৃঃ।)

আমরা বলি: এ আয়াত দ্বারা নবুয়্যত চালু থাকার উপর দলীল পেশ করা কতগুলো কারণে বাতিল।

প্রথমত: আদম আলাইহিস সালাম ও তাঁর সন্তানদের প্রতি এ সম্বোধনটি ছিল সৃষ্টির আদিকালে এবং এ প্রতিশ্রুতিটি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল নবী রাসূলের আগমন দ্বারা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এই আয়াত প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু জারীর বলেছেন: ‘আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরকে নিজ হাতে নিয়ে এ কথা দ্বারা সম্বোধন করলেন।’ (তাফসীর ইবনে জারীর) আয়াতের ভাব-ভঙ্গিও একথা বুঝাছে। কেননা, এ আয়াতে আদম আলাইহিস সালাম এর সৃষ্টি, তাঁর বেহেশতে প্রবেশ, তারপর সেখান থেকে তাঁর বহিস্কৃত হওয়া সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে । দ্বিতীয়ত: আয়াতে إن ‘ইন’ (যদি) শব্দটি বর্ণিত হয়েছে এবং উহার বাস্তবায়ন অপরিহার্য নহে। যেমন- বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ তাআলার এ বাণীতেঃ

قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ ﴿الزخرف 81﴾

(‘যদি আললাহ রহমানের কোন সন্তান থাকত, তাহলে আমিই সর্বপ্রথম তাঁর উপাসনাকারী হতাম’) [২ সুরা ঝুখরুফ ৮১।]

তৃতীয়তঃ ‘ইয়াতীয়ান্না’ শব্দটি فعل مضارع

(বর্তমান বা ভবিষ্যৎকালীন ক্রিয়া) আর المضارع এর ধারাবাহিকতা অপরিহার্য নহে। যেমন রয়েছে আল্লাহর এই বাণীতেঃ

فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ أَحَدًا فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَنِ صَوْمًا ( مريم 26)

(যদি তুমি কোন মানুষ দেখতে পাও, তবে তাকে বল, আমি রহমানের জন্য রোজার মানত করেছি।) [১ সূরা মরিয়ম, ২৬।] আয়াতের অর্থ এই নয় যে, মরিয়ম অনাধিকাল পর্যন্ত বেচে থাকবেন, এমনকি তিনি মানব জাতিকে সর্বদা ও অবিরত ভাবে দেখতে পাবেন।

সুতরাং একথা স্পষ্ট যে, আয়াতের মধ্যে সম্বোধনটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের জন্য নহে। বরং এ সম্বোধনটি মহান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের পূর্বে সকল আদম সন্তানের জন্য ছিল।

চতুর্থতঃ স্বয়ং কাদিয়ানীর উক্তি নবুয়্যত অর্থাৎ রিসালত শেষ হয়ে গেছে’। ইতিপূর্বে এর আলোচনা হয়ে গেছে।

কাদিয়ানীরা তাদের মিথ্যা নবীর নবুয়্যত প্রমাণ করার জন্য কোন কোন রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল পেশ করেছে। ইতিপূর্বে আমরা যেগুলোর উল্লেখ করিনি, এখন তা উল্লেখ করছি।

প্রথম রেওয়ায়েতঃ হযরত আয়েশা রা. বলেন:

( قولوا خاتم النبيين ولا تقولوا لا نبي بعدي )

(তোমরা খাতামুন নাবিয়্যীন বল, আমার পর কোন নবী নেই এ কথা বল না।) (আল কওলুস সারীহ, যা দূররে মানসুর হতে উদৃত।)

এ রেওয়ায়েতের সনদের আদৌ কোন ভিত্তি নেই। কাদিয়ানীদের এবং তাদের পথের পথিকদের মধ্যে এমন কোন লোক জন্মায়নি যে এ রেওয়ায়েতের বিশুদ্ধতা প্রমাণ করতে পারে। সুতরাং রেওয়ায়েতটি মওযু। উপরন্তু এটা সৈয়দা হযরত আয়েশার রা. প্রতি একটা অপবাদ। অথচ তিনিই রেওয়ায়েত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সা, বলেছেন: ‘তাঁর পর মুবাশশিরাত ব্যতীত নবুয়তের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। সাহাবাগণ আরজ করলেন- হে আল্লাহর রাসূল! মুবাশশিরাত কি? উত্তর দিলেন- সঠিক ও সৎ স্বপ্ন যা মুসলিম দেখতে পায় বা অন্য কেহ তার সম্পর্কে দেখে থাকে। [২ মুসনদে আহমদ।]

দ্বিতীয় রেওয়ায়েতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আববাস রা. কে বলেন: তোমাদের মধ্যেই খেলাফত ও নবুয়্যত হবে।’ (কানজুল উম্মাল, ও হুজ্জুল কারামাহ’।) এ রেওয়েতটিও মাওজু এবং উহার একজন রাবী যার নাম মুহাম্মদ আমির, তিনি সর্ব সম্মতিক্রমে দুর্বল।

দ্বিতীয়ত: এ রেওয়ায়েতের অর্থ যদি এই সাব্যস্ত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আববাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তোমাদের অর্থাৎ বনী হাশেম থেকে নবী আসছেন; যেমন রাজা বাদশাহ ও খলীফাগণ বনী হাসেম থেকে আসবেন। তবে এটাই হল এ রেওয়ায়েতের সঠিক অর্থ। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে নবীদের আগমনের কোন প্রমাণ নেই। তৃতীয়তঃ এ রেওয়ায়েত থেকে তারা যে অর্থ গ্রহণ করে বাস্তবতা এটাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে। কেননা, আববাসী বংশের কেহই এ কথা দাবী করেনি যে, সে নবী। কিন্তু তাদের ভন্ডনবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তো মোঘল বংশীয়, যেমনটি সে নিজেই তার জীবন চরিতে উল্লেখ করেছে। [১ ষষ্ঠ প্রবন্ধে এর আলোচনা চলে গেছে।]

এগুলো হল কাদিয়ানীদের দলীল দস্তাবেজ। জানি না তারা কেমন করে বিশুদ্ধ ও প্রমাণিত হাদীসসমূহকে বর্জন করে এবং মওযু ও অপ্রমাণিত রেওয়ায়েত দ্বারা দলীল পেশ করে। এ সমস্ত লোক থেকে এমন আচরণ হওয়া কোন আশ্চর্যের বিষয় নহে। কেননা, যে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বরং তাদের সৃষ্টি করেছে, প্রচলিত নীতি হলো- ‘উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য উপায়-উপকরণের ন্যায্যতা প্রতিপালন করে’ কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করার পিছনে তাদের লক্ষ্য হল- ইসলামের আসল সত্য রূপকে বিকৃত করা, মুসলমানগণকে বিপথগামী করা, তাদের ঐক্য বিনষ্ট করা এবং তাদের জামাতকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। এই পথে তারা ঐ সমস্ত উপায় উপকরণ অবলম্বন করে, যা তাদের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করে। যেমন বিকৃত করণ, অপব্যাখ্যা, বাতিল বিষয়াদি দ্বারা দলীল পেশ করা। আমাদের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল এই- এ দলের বাস্তব প্রকৃতি প্রকাশ করা এবং তাদের বাতিল ও ভ্রান্ত বিষয়াদি এবং মেকী দাবির উপর থেকে আবরণ সরিয়ে দেয়া। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করতে আমরা আমাদের সামর্থানুযায়ী চেষ্টা করছি। আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের এই প্রার্থনা, তিনি যেন সত্যকে তার নির্দেশ দ্বারা সত্য প্রমাণিত করেন এবং সত্যের প্রতি আহবানকারীদের বিজয়ী করেন। আল্লাহ তাআলা রহমত বর্ষণ করুন আমাদের ইমাম ও সর্বশেষ নবী প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সমস্ত সাহাবীগণের উপর।

আল্লাহই আমাদের একমাত্র তাওফীকদাতা।

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন