মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
কাদিয়ানী মতবাদ উদ্ভাবন করা হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য সাধন, মুসলমানদের অন্তর থেকে আত্মনির্ভরশীল মুহাম্মদী জীবন্ত শিক্ষাকে উৎপাটন এবং ঐ সকল লোকদের মধ্য থেকে ভ্রাতৃত্ব, সমবেদনা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য , যারা এক প্রভু-প্রতিপালকের অনুগত, এক ক্বেবলার দিকে মুখ করে, এক কিতাবে বিশ্বাস করে, যারা আপন সম্পদ , পরিবার-পরিজন, সন্তান ও নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে মুহাম্মদে আরবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এবং তাঁরই কারণে তারা ভালোবাসে প্রতিটি শহরকে যেখানে তিনি বাস করেছেন, প্রতিটি মহল্লাকে যেখানে তিনি অবস্থান করেছেন, প্রতিটি মসজিদকে যেখানে তিনি নামাজ আদায় করেছেন, প্রতিটি সম্প্রদায়কে যারা তাঁর ভাষায় কথা বলে এবং প্রতিটি লোককে যে তাঁর অনুসরণ করে। উপরোক্ত এই সব প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই কাদিয়ানী মতবাদ গঠিত ও সৃষ্টি করা হয় এবং ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের ছত্র ছায়ায় উহা লালিত-পালিত হয়। মুহাম্মদে আরাবীর উম্মতের দুর্দিনের অপেক্ষায় যারা ছিল তাদের জন্য কদিয়ানীরা নিজ নিজ অবস্থান দ্বারা বড় বড় খেদমত সম্পাদন করে। তারা এ ধারণা পোষণ করে যে, তাদের নেতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহর নবী ও তার রাসূল এবং সে সত্যবাদী আল্লাহর নবী ও তার রাসূল এবং সে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ সকল নবী ও রাসূলগণ হতে উত্তম। কাদিয়ান গ্রাম যা গোলাম আহমদের বাসস্থান উহা মক্কা মদিনা হতে উত্তম, যে কবরে মিথ্যাবাদী ভন্ডনবী সমাধিস্থ হয়েছে উহা পৃথিবীর সমুদয় কবর হতে অধিক মর্যাদাবান, মক্কা, আরাফাত ও মিনাতে কোন হজ্জ নেই, আল্লাহর পথে কোন জিহাদ নেই, তাদের নবী যে ইসলাম পেশ করেছেন তা ব্যতীত আর কোন ইসলাম নেই। যে ব্যক্তি তাকে ও তার পবিত্রতাকে বিশ্বাস করে না সে মুসলিম নহে। আমি এ প্রবন্ধে তাদের নবীর জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবন চরিত আলোচনা করার ইচ্ছা রাখি। যাতে তার সম্পর্কে অনুসন্ধানকারীরা জানতে পারবে যে, এ লোকটি কে? তার প্রকৃত রূপ কি? এ ধরনের লোক কি নবী হতে পারে? কোথায় নবুয়্যত? নবী হওয়াতো দূরের কথা? বরং এ ধরনের ব্যক্তিকে কি সৎ ও আল্লাহ ওয়ালা উলামাদের সারিতে গণ্য করা যায়? আমরা এ আলোচনায় যা কিছু বলব তা তাদের পুস্তকাবলী হতেই ও তাদের শব্দের উদ্ধৃতি দ্বারাই উল্লেখ করব। এটাই নিজের উপর বাধ্যতা মূলকভাবে স্থির করে নিয়েছি।
গোলামের বংশ ও জন্মস্থান:
ভন্ডনবী কাদিয়ানী তার বংশ ও জন্ম স্থানের উল্লেখ করে বলে: আমার নাম গোলাম আহমদ , আমার পিতার নাম গোলাম মুরতাজা, আমার দাদার নাম আতা মুহাম্মদ, আমার গোত্র মুঘল বরসাল। সংরক্ষিত দলীল পত্র দ্বারা বুঝা যায়, আমার পূর্ব পুরুষেরা সমর-কন্দ থেকে আগমন করেছেন। (গোলাম আহমদের কিতাবুল বারিয়া, ১৩৪, পৃ:) এটা জানা কথা যে, মুঘল তুর্কি বংশের। অথচ গোলাম বলেছে, সে মুঘল বংশধর। কিন্তু অন্যত্র সে বলে, সে পারস্য বংশোদ্ভুত। যেমন সে উল্লেখ করেছে: ‘‘এটা সুস্পষ্ট যে, আমার গোত্র মুঘল বংশোদ্ভুত কিন্তু এখন আমার কাছে আল্লাহর কালাম হতে প্রকাশ পেয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে আমি পারসি বংশোদ্ভুত কিন্তু এখন আমার কাছে আল্লাহর কালাম হতে প্রকাশ পেয়েছে যে, প্রকৃতপক্ষে আমি পারসী বংশোদ্ভুত এবং আমি এতে বিশ্বাসী। কেননা, আল্লাহ তাআলা যেভাবে বংশের বাস্তব অবস্থা জানেন, আর কেহ তা জানে না’’ (গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কর্তৃক রচিত আরবাঈনের হাসিয়া, ২ নম্বর ১৭ পৃ:) সে আরো বলেছে, আমি আমার পূর্ব পুরুষগণের জীবন চরিত সম্পর্কে লিখিত কোন কোন পুস্তকে পড়েছি যে, তারা মুঘল বংশের লোক। আমার পিতার কাছ থেকেও আমি এরূপ শুনেছি। কিন্তু আল্লাহ আমার কাছে ওহী পাঠিয়েছেন যে, তারা তুর্কি বংশোদ্ভুত নহে। বরং পারসী বংশোদ্ভুত। আল্লাহ আমাকে আরো অবহিত করেছেন যে, আমার কোন কোন দাদি ফাতেমী ও রাসূল পরিবারের ছিলেন। (গোলামের ‘‘হাকীকাতুল ওহীর’’পরিশিষ্ট ৭৭ পৃ:) একদা তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, তুমি কেমন করে বল যে, তুমি মুঘল বংশের? তার পর এ থেকে ফিরে গিয়ে দাবিকর যে, তুমি পারসী বংশের? তোমার এ দাবির পিছনে কি প্রমাণ রয়েছে? উত্তরে সে বলে: ‘আমি যে পারসী বংশীয় এ ব্যাপারে আল্লাহর ইলহাম ব্যতীত আমার কাছে আর কোন প্রমাণ ব্যতিরকে পরিবর্তন করে বলে: মুহিউদ্দিন ইবনুল আরবী তার পুস্তক ‘ফুসুলুল হিকমে’ আমার সম্পর্কে সংবাদ দিয়ে বলেছেন: শেষ জামানায় এমন একটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে যে আল্লাহর দিকে লোকদের আহবান জানাবে, তার জন্ম স্থান হবে চীন দেশ এবং তার ভাষা হবে নিজ দেশীয়। আমিই সেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তি। কেননা, আমি মূলত: চীন বংশীয়। (গোলামের, হাকীকতুল ওহী, মূল পুস্তক ও টীকা, ২০০ পৃ:) শুধু তা-ই নহে, বরং অন্য এক স্থানে সে বলে ‘‘আমি ফাতেমী’’, রাসূল তনয় ফাতেমার রা. বংশধর এবং আমার বংশ ইসহাকের আলাইহিস সালাম উত্তরসূরি। (তুহফায়ে গলড়িয়া’’ ২৯ পৃ:) এটাই হল তার বংশ পরিচয়। যখনই তুমি তার বংশের উলটা পালটা বর্ণনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, সে উত্তরে বলবে, তাকে এভাবেই আল্লাহ সংবাদ দিয়েছেন। মিথ্যাবাদীর মিথ্যা তার নিজের পরস্পর বিরোধী কথাবার্তাতেই ধরা পড়ে। মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে আসত তাহলে তোমরা এতে অনেক পার্থক্য পেতে’। [১সুরা নিসা-৮২] এরপর সে তার পিতা সম্পর্কে বলে- ‘রাজ দরবারে আমার পিতার জন্য একটা আসন সংরক্ষিত ছিল। তিনি ইংরেজ সরকারের খুবই বিশ্বস্ত ছিলেন। এমনকি তিনি ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহে (ভারত উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একটি বিখ্যাত গণ-আন্দোলন) সরকারকে উত্তম রূপে সাহায্য করেছিলেন। তিনি নিজের পক্ষ থেকে ৫০ জন সৈনিক ও ৫০ টি ঘোড়া সরকারকে জোগান দিয়েছিলেন। এমনি ভাবে, তিনি তার শক্তির ঊর্ধ্বে মহান সরকারের সেবা করেছেন। কিন্তু, এরপর থেকে আমার বংশের পতন ও অবনতি আরম্ভ হল। (সম্ভবত: তা দেশবাসীর প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা এবং যালেম কাফের উপনিবেশবাদের দালালির কারণে হয়েছিল।) এমনকি আমার পরিবার একটা দরিদ্র কৃষক পরিবারে পরিণত হয়ে যায়। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘‘তুহফায়ে কায়সারিয়া’’ ১৬ পৃ:) এ ধরনেরই একটি দরিদ্র, বিশ্বাস- ঘাতক, অজ্ঞাত পরিচয় বংশের পরিবারে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী জন্ম গ্রহণ করে। সে বলেছে: ‘আমি ১৯৩৯ বা ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে (পাঞ্জাবে) শিখ রাজত্বের শেষ দিকে জন্ম গ্রহণ করেছি’। (গোলাম কাদিয়ানীর কিতাবুল বারিয়া’’ ১৩৪ পৃ:)
তার শৈশব ও শিক্ষা:
যখন সে বোধশক্তি সম্পন্ন বয়সে পৌঁছে, তখন থেকে সে ছরফ, নাহু, আরবী, ফার্সী ও চিকিৎসা শাস্ত্রের কিছু পুস্তকাদি পড়তে শুরু করে। সে নিজেই উল্লেখ করেছে: যখন আমি বয়ঃপ্রাপ্ত হতে লাগলাম এবং যৌবনে পদার্পণ করলাম, তখন আমি কিছু ফার্সী, কিছু ছরফ, নাহুর পুস্তিকা, অন্যান্য শাস্ত্রের অল্প কিছু পুস্তিকা এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের অল্প কিছু পুস্তক পড়তে লাগলাম। আমার পিতা ছিলেন একজন বিজ্ঞ জ্যোতিষী। এ বিষয়ে তিনি অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। এ সম্পর্কে কিছু পুস্তক তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনি আমাকে উৎসাহিত করেন-----। তবে হাদীস, উসূল ও ফিকহ শাস্ত্রে আমার গভীর জ্ঞান অর্জনের সুযোগ হয় নি। নামমাত্র কিছু পড়াশোনা করেছি। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আত-তাবলীগ ইলা মাশাইখিল হিন্দ’ ৫৯ পৃ:) সে আরো বলেছে আমি উস্তাদ ফজলে ইলাহীর কাছে কুরআন ও ফার্সী কিতাব সমূহ পড়েছি এবং ছরফ, নাহু ও চিকিৎসা শাস্ত্র উস্তাদ ফজলে আহমদের নিকট পড়েছি (গোলাম কাদিয়ানী রচিত ‘কিতাবুল বারিয়া’ ১৩৫ পৃ:) তার কোন কোন শিক্ষক ছিলেন ভাং ও আফিমপায়ী। যেমন, তার ছেলে ও তার খলীফা মাহমুদ আহমদ তার ভাষণে উল্লেখ করেছে, যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘‘আল-ফজলে প্রচারিত হয়েছে, ৫ই ফেব্রু: ১৯২৯ খৃ:। ‘তিনি ইংরেজি ভাষার প্রাথমিক পুস্তকগুলি শিয়াল কোটে অবস্থান কালে সরকারী কর্মচারীদের জন্য একটি নৈশ বিদ্যালয়ে ডা: আমীর শাহকে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। জনাব (গোলাম) এ বিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়তে আরম্ভ করলেন এবং সেখানে দু’একটি পুস্তক পড়লেন।’’ (গোলাম পুত্র বশীর রচিত ‘সীরাতুল মাহদী’ ১ম খন্ড ১৩৫পৃঃ) এ হল তার যাবতীয় শিক্ষা ও লেখা পড়ার বিবরণ। এ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায় তারি বিভিন্ন প্রবন্ধ ও পুস্তকে। সে শুধু সুক্ষ্ণ জ্ঞানগর্ব বিষয়ে ভূল করেনি বরং সে সহজ ও সর্বজনবিদিত ঐতিহাসিক বিষয়েও ভীষণভাবে ভূল করেছে। যেমন সে বলেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের কিছুদিন পরেই তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘‘পয়গামে সুলাহ’’ ১৯ পৃ:) অথচ, ইসলামী ইতিহাস অথবা সীরাতের সঙ্গে যার সামান্যতম সম্পর্ক আছে, সে জানে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পিতা তার জন্মের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ‘‘আইনুল মা’ রেফাত’’ নামক তার পুস্তকে সে আরো লিখেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এগারো জন পুত্র জন্ম গ্রহণ করেন এবং সবাই মারা যান। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আইনুল মা’ রেফত ২৮৬ পৃ:) জানি না, সে তা কোত্থেকে গ্রহণ করেছে? কেননা, ইতিহাস এবং সীরাত আমাদের একথা বলে না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এগারো জন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছেন। বরং তাঁর শুধু চারজন ছেলে জন্ম গ্রহণ করে ছিলেন, তারা হলেন: তৈয়ব, তাহির, কাসিম ও ইব্রাহীম। খাদিজাতুল কুবরার রা. গর্ভে তিনজন এবং মারিয়া কিবতিয়ার রা.গর্ভে চতুর্থজন জন্ম গ্রহণ করেন। আর একবার সে লিখেছে, ‘‘প্রতিশ্রুত সন্তান ইসলামী মাসের চতুর্থ মাস অর্থাৎ সফরে জন্ম গ্রহণ করেছেন। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘‘তিরইয়াকুল কুলুব’’ ৪৩ পৃ:) বালকরা ও জানে যে, সফর মাস ইসলামী মাস সমূহের চতুর্থ মাস নহে, বরং দ্বিতীয় মাস। এরকম তার আরো অনেক ভুল ভ্রান্তি রয়েছে।
শৈশবে তার মধ্যে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য ছিল তা হল এই প্রথমত: তার কাপুরুষতা, দ্বিতীয়ত: তার বোকামী, তৃতীয়ত: পরের মাল ছিনতাই, চতুর্থত: তার বিভিন্ন প্রকার রোগ। বিখ্যাত কাদিয়ানী লিখক ইয়াকুব আলী কাদিয়ানী গোলামের সীরাতে উল্লেখ করেছে ‘‘ মাসীহ (গোলাম) কোনোরূপ প্রতিপক্ষের সহিত মোকাবিলায় ও কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন নি, যেমন- তখনকার দিনের ভদ্র পরিবারের সন্তানদের অভ্যাস ছিল। সে সামরিক বিদ্যাও শিখিনি। অথচ লোকেরা এ সকল কাজকে ভদ্রতা ও বীরত্বের প্রতীক রূপে গণ্য করত।’’ (ইয়াকুব কাদিয়ানীর ‘হায়াতুন নবী’ ১ম খন্ড১৩৮ পৃ:) আর তার ছেলে বশীর আহমদ তার সীরতে লিখেছে: ‘জনাব (গোলাম) একদা একটা মুরগির বাচ্চা জবাই করতে গিয়ে তার একটা আঙুল কেটে ফেললেন। ফলে হাত থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। তখন তিনি তওবা ইসতেগফার করতে লাগলেন। কেননা, তিনি তার জীবনে কখনও কোন প্রাণী জবাই করেন নি। (সীরাতে মাহদী, ২য় খন্ড, ৪পৃঃ) তার বোকামী সম্পর্কে তার ছেলে যা উল্লেখ করেছে: ‘‘আমার মা আমাকে বলেছেন, জনাব আববা-জান একদা তাঁকে বলেছেন- শৈশবে তাকে কয়েকজন বালক বলল- আমাদের জন্য ঘর থেকে কিছু চিনি নিয়ে আস। আমি ঘরে আসলাম এবং কাইকে কিছু জিজ্ঞেস না করে যেটাকে চিনি মনে করলাম তা গলায় পৌঁছে আটকে গেল তখন অত্যন্ত কষ্ট পেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, যা আমি চিনি মনে করছিলাম তা চিনি নয়, লবণ ছিল। (গোলাম পুত্র বশীরের সীরাতে মাহদী, ১ম খন্ড, ২২৬পৃঃ)তার এই ছেলে আরো যা উল্লেখ করেছে, তাতে এ লোকটির ব্যক্তিত্ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে বলে: আমার মা (গোলামের স্ত্রী) আমাকে বলেছেন, মাসীহে মাওউদ তার যৌবন কালে একদা তার দাদার পেনশনের টাকা উঠাতে গেলেন এবং তার সাথে ‘‘ইমামুদ্দীন’’ নামে জনৈক ব্যক্তি গেলেন। যখন তিনি পেনশন উঠালেন, তখন ইমামুদ্দীন তাকে ফুসলিয়ে কাদিয়ানী বাহিরে নিয়ে গেল এবং তারা দু’জন এখানে ওখানে ঘুরতে লাগলেন। জনাব (গোলাম) যখন তার সব টাকা শেষ করে ফেললেন, তখন ইমামুদ্দীন তাকে একাকী ফেলে অন্যত্র চলে গেল। কিন্তু জনাব মসীহে মাওউদ? তিনি লজ্জা শরমের কারণে বাড়িতে ফিরলেন না, বরং তিনি শিয়ালকোট গিয়ে সামান্য বেতনে (যার পরিমাণ ছিল পনেরো টাকা) চাকুরি করতে লাগলেন। (গোলাম পুত্র বশীর আহমদ কাদিয়ানীর ‘‘সীরাতুল মাহদী’’ ১ম খন্ড, ২৪ পৃ:)
তার অসুখ বিসুখঃ
তার অসুখ খুব বেশি পরিমাণ ছিল। তার ডান হাত ভাঙ্গা ছিল। গোলাম পুত্র উল্লেখ করেছে: আমার মা আমাকে অবগত করেছেন যে, আমার পিতার (গোলামের) ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল এবং শেষ জীবন পর্যন্ত তার এ হাত দুর্বল ছিল। এ হাত দ্বারা তিনি খাবার উঠাতে পারতেন, কিন্তু পানির পাত্র বা অন্য কোন ভারী জিনিস উঠাতে পারতেন না এমন কি, নামাযের মধ্যে বাম হাতের উপরই ভর করতেন। (সীরাতুল মাহদী, ১ম খন্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা) তাঁর দাঁত সম্পর্কে তার ছেলে বলে: তাঁর দাঁতগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। উহাতে পোকা ধরে ফেলেছিল। (সীরাতুল মাহদী, ২য় খন্ড, ১৩৫ পৃ:)
যক্ষ্মা:
ইয়াকুব আহমদ কাদিয়ানী লিখেছে: জনাব (গোলাম) তার পিতার জিবদ্দশায়ই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। তার পিতা প্রায় ছয় মাস এর চিকিৎসা করেন। (ইয়াকুব কাদিয়ানীর ‘‘হায়াতে আহমদ’’ ১ম খন্ড ৭৯ পৃ:) তার পুত্র বশীর আহমদ লিখেছে: জনাব মাসীহে মাওউদ তার পিতার জিবদ্দশায়ই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। (সীরাতুল মাহদী, ১ম খন্ড, ৪২ পৃ:)
বহুমূত্র এবং মাথা ঘুরানো:
নবুয়তের দাবিদার কাদিয়ানী বলে: আমি দু’টি রোগে আক্রান্ত। প্রথম রোগটি আমার শরীরের উপরিভাগে এবং এটা হলো মাথা ঘুরানো। আর দ্বিতীয় রোগটি হলো আমার শরীরের নিম্ন ভাগে এবং সেটা হলো বহুমূত্র (গোলাম কাদিয়ানীর ‘‘হাকীকতুল ওহী’’ ২০৬ পৃ:) গোলাম আহমদের স্ত্রী তার মাথা ঘোরানোর সময়কার অবস্থা বর্ণনা করে বলেন: ‘একদা জনাব মসীহের মাথা ঘুরানো আরম্ভ হলো, তখন তার দুই ছেলে ‘সুলতান আহমদ ও ফজল আহমদ’ কে ডাকা হয়। তারা দ্রুত ছুটে আসল। সুলতান আহমদ ভীত হয়ে তার খাটের পাশে বসে পড়ল এবং ফজল আহমদের মুখের রং বদলে গেল, সে এখানে ওখানে ছোটা ছুটি করতে শুরু করে। অতঃপর দু’পা তর পাগড়ি দ্বারা বেঁধে রাখে (গোলাম পুত্র বশীর আহমদের ‘‘সীরতে মাহদী’’ ১ম খন্ড ২২পৃঃ) গোলাম আহমদ নিজেই তাঁর মাথা ঘুরানো সম্পর্কে তার অবস্থা বর্ণনা করে বলে: মাথা ঘুরানোর তীব্রতা দেখা দিলে আমি কখনও কখনও মাটিতে পড়ে যাই এবং হৃৎপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন মন্থর হয়ে পড়ে। এ অবস্থা আমার জন্য খুবই বিপদ জনক ছিল (গোলাম কাদিয়ানীর ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ ৫ম খন্ড ২০১ পৃ:) কোন এক সময়ের কথা উল্লেখ করে তার স্ত্রী বলেছে: ‘একদা গোলাম আহমদ নামাজের জন্য মসজিদে গেলেন এবং নামাজ আরম্ভ করেন। কিছুক্ষণ তিনি দেখলেন যে, কাল কিছু তার চক্ষু-দ্বয় থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে। এতে তিনি চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। তারপর থেকে তিনি ইমামতি করেন নি। (সীরতে মাহদী, ১ম খন্ড ১৩ পৃ:)
এরপর থেকে তার মাথা ঘুরানো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। এ জন্য তিনি তার জীবনের অধিকাংশ রমযান মাসে রোযা থাকতে পারেন নি। যেমন, তার ছেলে তার সীরতে উল্লেখ করেছে। (সীরতে মাহদী ১ম খন্ড ৫১ পৃ:) গোলাম আহমদ তার ১ম খলীফা নুরুদ্দীনের নিকট লিখিত এক পত্রে তার পুরুষত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করে বলে: ‘আমি মনে করি আমার মস্তিষ্ক যে পরিমাণ দুর্বল তোমাদের তেমন নহে। আর যখন আমি বিবাহ করি তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, আমি পুরুষ নই’’। (নুরুদ্দীনের কাছে গোলামের পত্র যা তারি পত্রাবলির সমষ্টি ‘মাকাতিবে আহমদীয়া’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত, ৫ম খন্ড ১৩ নং।) উল্লেখ্য যে, তার বয়স যখন পনেরো বা ষোলো ছিল, তখন তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। (মঞ্জুর কাদিয়ানীর ‘‘মঞ্জুরে ইলাহী’’ ৩৪২ পৃ:)। সে স্নায়ুবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত ছিল, যার ফলে তার স্মরণ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ইহা সে বিভিন্ন লোকের কাছে লিখিত পত্রে উল্লেখ করেছে। যেমন- আমি স্নায়ুবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত। এজন্য আমি ঠান্ডা ও বৃষ্টি সহ্য করতে পারি না।’’ (গোলামের পত্রাবলি যা ‘মাকতুবাতে আহমদীয়ার অন্তর্ভুক্ত, ৫ম খন্ড, ২ নম্বর।) আমার স্মরণ শক্তি অতিশয় দুর্বল। কোন কোন লোকের সাথে আমার অনেকবার সাক্ষাৎ হয়, কিন্তু কিছু দিন পরই তার সাথে যে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল তা ভুলে যাই। আমার এ অবস্থা অবর্ণনীয় (মাকতুবাতে আহমদীয়া, ৫ম খন্ড ৩ নম্বর)।
তার চোখ দু’টি দুর্বল ও রুগ্ন ছিল। এমনকি সে উহা পুরোপুরি খুলতে পারত না। তার ছেলে লিখেছে: ‘একদা জনাব (গোলাম) তার কোন মুরীদের সঙ্গে ফোটো উঠাতে চাইলেন। তখন ফটোগ্রাফার তাকে একটু চোখ খুলতে বলল, যাতে ফোটোটা ঠিক মত উঠে। জনাব অতি কষ্টে চক্ষু খোলার চেষ্টা করলেন , কিন্তু খুলতে পারলেন না (গোলাম পুত্র বশীর আহমদের ‘সীরতে মাহদী’ ২য় খন্ড ৭৭ পৃ:)। শেষ বয়সে লোকটি এত অধিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে যে, যদি তাকে রোগ সমূহের সমষ্টি বলা হয়, তবে উহা বাস্তবের পরিপন্থী হবে না। তিনি ‘মুরাক; রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং এটা এক প্রকার ‘মালীখুলীয়া’। ডাঃ আল্লামা বুরহানুদ্দীন ‘শরহুল আসবাব অল আলামাত ’ গ্রন্থে মাথার রোগ সম্পর্কে বলেছেন যে, ‘মুরাক’ রোগটি এক প্রকার ‘মালীখুলীয়া’। (শরহে আসবাব, ১ম খন্ড ৭৪ পৃ:) কাদিয়ানী পত্রিকা সাক্ষ্য দিচ্ছে যে সে মুরাক রোগে আক্রান্ত ছিল। আর তার মূল ভাষ্য হল: ‘জনাব মসীহে মাওউদ মস্তিস্কের দুর্বলতার কারণে মুরাক রোগে আক্রান্ত ছিলেন । (কাদিয়ানী ম্যাগাজিন ‘রিভিউ অব রিলিজিউন্স, আগস্ট, ১৯২৬ খৃ: গোলাম আহমদ নিজেই বলেছে, ‘আমি মুরাক রোগে আক্রান্ত। ’ কাদিয়ানী পত্রিকা আল হিকম’ যা ৩১ শে অক্টোবর ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত।)
কাদিয়ানী চিকিৎসক ড: শাহ নেওয়াজ গোলাম আহমদের রোগ সমূহের বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন: আমাদের হুজুরের রোগ সমূহ যথা-মাথা ঘুরানো, মাথা ব্যথা, স্বল্প নিদ্রা, ক্ষুধা মন্দা, হৃৎপিন্ডের দুর্বলতা, দাস্ত, বহুমূত্র, মুরাক ইত্যাদি এগুলোর একমাত্র কারণ ছিল দুর্বলতা । (ড: শাহ নেওয়াজ কাদিয়ানীর প্রবন্ধ যা রিভিউ ম্যাগাজিনে প্রচারিত, মে, ১৯৩৭ খৃ:)
গোলাম আহমদ বলেছে: ‘আমি চির রোগী’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘নাসীমে দাওয়াত’ ৬৮ পৃ:) সে আরো লিখেছে ‘আমি এ সমস্ত রোগের কারণে অক্ষম হয়ে পড়েছি; এমনকি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারি না। কথনও নামায পূর্ণ করার পূর্বেই ভেঙে ফেলি। বর্তমানে এমন হয়ে পড়েছি যে, বসেও নামায পড়তে পারি না। (গোলামের পত্র ‘মাকতুবাতে আহমদীয়ার অন্তর্ভুক্ত, ৫ম খন্ড ৮৮ পৃ:)
উপরন্তু আল্লাহ তা’ আলা তার উপর ‘হিষ্ট্রিয়া’ নামক এক মারাত্মক রোগ চাপিয়ে দিয়েছিলেন। তার ছেলে বশীর আহমদ বলেছে: ডাঃ মুহাম্মদ ইসমাইল কাদিয়ানী আমাকে বলেছেন যে, জনাব মসীহ ‘হিষ্ট্রিয়া’ রোগে আক্রান্ত। (সীরতে মাহদী ২য় খন্ড ৫৫ পৃ:) এমনি ভাবে বশীর আহমদ তার মার কাছ থেকে বর্ণনা করছে যে, তার মা তাকে অবহিত করেছেন: জনাব (গোলাম) তার পুত্র প্রথম বশীরের মৃত্যুর পর হিষ্ট্রিয়া রোগে আক্রান্ত হন (সীরতে মাহদী ১ম খন্ড, ১৩ পৃ:) মহান আল্লাহ সত্যই বলেছেন: ‘‘নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে পরকালীন শাস্তির পূর্বে দুনিয়ার কিছু শাস্তির স্বাদ ভোগ করাব। যাতে তারা তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসে’। [১ সুরা সিজদা- ২০]
তার খ্যাতি ও দাওয়াতের সূচনা:
প্রথম অবস্থায় গোলাম আহমদ একজন মাযজুব (ধ্যানে আত্মহারা) ও ইসলামের প্রতিরক্ষাকারী রূপে প্রকাশ পায়। সে যখন শিয়াল কোটের চাকুরি ছেড়ে দিল এবং বেকার হয়ে পড়লে, তখন নে হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের বই পড়তে শুরু করে, কারণ, তখনকার দিনে ভারত বর্ষে মুসলিম উলামা এবং খ্রিস্টান ধর্মজাযক ও হিন্দু পন্ডিতদের মধ্যে আকীদা বিশ্বাস ও ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে বাছ, মুনাযারা ও তর্ক-বিতর্ক চলছিল। সাধারণ মুসলমানগণ উলামা ও মুনাযারা বিশারদগণকে সম্মান দিত এবং নিজের জান-মাল দ্বারা যথাসাধ্য খেদমত করত। অর্ধ শতাব্দী পূর্বে পৃথিবীর সকল অঞ্চলে মুসলমানদের এ অবস্থা ছিল। গোলাম আহমদ এটাকে তার নিজের জন্য সহজ ও সম্মানজনক কাজ মনে করল। আর, যে ধন-সম্পদ চাকুরির দ্বারা অর্জন করা সম্ভব নহে তা এর দ্বারা অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করল । তাই, সর্ব প্রথম সে হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটা ঘোষণা প্রচার করল। পত্রিকায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু প্রবন্ধ লিখল। এরপর সে ধারাবাহিক হিন্দু ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ঘোষণা ও প্রচারপত্র প্রকাশ করতে থাকে। এতে মুসলমানগণ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
(তা ১৮৭৭ ও ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ঘটনা) তারপর সে ঘোষণা দিল যে, পঞ্চাশ ভলিয়মের একখানি পুস্তক সে রচনা করছে। কাফেরগণ ইসলামের বিরুদ্ধে যে সমস্ত আপত্তি ও অভিযোগ উত্থাপন করে উহাতে সে তার জবাব দেবে। তাই, যথা সময়ে বইটি ছাপানোর জন্য অগ্রিম মূল্য প্রদান করে এতে অংশ গ্রহণ করা মুসলমানগণের কর্তব্য সুতরাং তার ভ্রান্ত দ্বাবী ও উত্তেজনা মূলক ঘোষণা-বলী দ্বারা সাধারণ মুসলমানগণ এ ধোঁকায় পড়ে যান যে, সত্যই সে পঞ্চাশ ভলিয়মের এমন একটি কিতাব ছাপাবে যাতে ইসলামের ও মুসলমানদের উপর হিন্দু ও খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সকল অভিযোগ আপত্তি খন্ডন করে ঐ গুলোর উত্তর দেবে? এসময়ে সে তার কেরামত ও মিথ্যা সাজান কাশ্ফ সমূহের ঘোষণা দিতে লাগল। ফলে মূর্খ লোকেরা মনে করল যে, সে মধু একজন আলেমই নহে বরং একজন মজযুব এবং আল্লাহর ওলী । তাই, কিতাবটি ছাপানোর জন্য তারা ওর কাছে প্রচুর পরিমাণ টাকা পাঠাতে লাগল। (গোলামের ঘোষণা বলী দ্রষ্টব্য, যা তাবলীগে রিসালাতের অন্তর্ভুক্ত, যা গোলাম কাদিয়ানীর ঘোষণা বলীর সমষ্টি। ১ম খন্ড ২৫ পৃ: এবং তাবলীগে রিসালত ২য় খন্ড এবং ১ম খন্ড ১৩ পৃ:) অতএব সে ১৮৮০ সনে পুস্তকটির ১ম খন্ড প্রকাশ করে এবং উহার নাম দেয় ‘‘বারাহীনে আহমদীয়া’’ এ খন্ডটি ঘোষণা বলী , প্রচারপত্র, তার কেরামত ও কাশফ দ্বারা পরিপূর্ণ। অতঃপর সে ২য় খন্ড প্রকাশ করে যা প্রথমটির মতই ছিল। এই ভাবে সে ১৮৮২ সনে ৩য় খন্ড এবং ১৮৮৪ সনে ৪থ খন্ড প্রকাশ করে। (বারাহীনে আহমদীয়ার ভূমিকা ১ম ২য় ৩য় ও ৪থ খন্ড, ) লোকের কাছে কিতাবটি পৌঁছার পর সকলেই আশ্চর্যান্বিত হল যে, এতে শত্রু পক্ষের আপত্তি ও সন্দেহাবলীর উল্লেখ করার পরিবর্তে তার নিজস্ব কেরামত ও কাফের উপনিবেশবাদের প্রশংসা পৃষ্ঠাগুলো ভরপুর করে দিয়েছে। এতে উলামা সমাজ বুঝতে পারলেন যে, লোকটি প্রতারক ও লুটেরা ব্যতীত আর কিছু নহে। সে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে তার ঘোষণা বলী ও প্রচারপত্র সমূহ দ্বারা মুসলমানদের শোষণ করতে এবং সম্পদ, সম্মান ও খ্যাতি অর্জনকরতে চেয়েছে। ইসলাম ও মুসলমানদের খেদমত এবং তাদের শত্রুর প্রতিরোধ করা তার উদ্দেশ্য নহে। বিশেষ করে যখন তারা ইসলামের বুনিয়াদের বিপরীত তার কিতাবের বর্ণনা-বলীর উপর অবহিত হলেন, তখন অনেক আলেম ভবিষ্যদ্ব্যাণী করলেন যে, ইসলামের নামে দোকান তৈরি করা ছাড়া লোকটির আর কোন উদ্দেশ্য নেই। যদি কেহ তাকে এর চেয়ে অধিক দান করে এবং তার জন্য বড় দোকান তৈরি করে দেয়, তবে সে ইসলামের বিরোধিতা করে হলেও সেই ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়বে। তারা যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করছিলেন তেমনটিই ঘটেছে কেননা, ইংরেজরা তখন মুসলমানদের বিদ্রোহ এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছিল। তারা মুসলমানদের মধ্যে এমন লোক খুঁজছিল, যাদের মুসলিম সমাজে খ্যাতি রয়েছে। এদেরকে তারা এজেন্ট নিযুক্ত করবে। যখন সাম্রাজ্যবাদীরা এমন পরিবারের একটি লোক পেল, যে তাদের এজেন্ট হিসাবে বিখ্যাত ছিল, তখন তারা এর সুযোগ গ্রহণ করল। এ জন্য গোলাম আহমদ উক্ত কিতাবের তৃতীয় খন্ড ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের প্রশংসায় পরিপূর্ণ করে দেয়। যখন এ ব্যাপারে মুসলমানদের পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন হল, তখন সে বলল- ‘‘কোন কোন মুসলমান আমার কাছে লিখেছে যে, আমি তৃতীয় খন্ডে ইংরেজ সরকারের প্রশংসা এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম কেন? কোন কোন মুসলমান এ প্রশংসার জন্য আমাকে গালমন্দও করেছেন। সুতরাং প্রত্যেকের জন্য উচিত , আমি কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষার অনুসরণে এ সরকারের প্রশংসা করছি (হে আল্লাহর শত্রু! তুই মিথ্যা বলছিস। কেননা, ইসলাম কোন কাফের সাম্রাজ্যবাদী ও জবর দখলকারী সরকারের প্রশংসা করার শিক্ষা দেয় না।) এজন্য আমি বাধ্য হয়ে এ সরকারের প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। (গোলামের ঘোষণা যা ‘বারাহীনে আহমদীয়ার চতুর্থ খন্ডের অন্তর্ভুক্ত।) )
মোটকথা, সাম্রাজ্যবাদ তাকে অস্ত্রস্বরূপ গ্রহণ করেছে এবং সমুদয় উত্তম ও মূল্যবান বস্ত্ত তার নিকট পেশ করেছে। তাই, তার পিতা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে যেমন বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল সেও তেমনি করল। তবে প্রথম বিশ্বাস ঘাতকতা ছিল তার দেশ ও দেশবাসীর প্রতি এবং দ্বিতীয়টি হল তার ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি। ফলে, সে সাম্রাজ্যবাদীদের মতবাদ এবং নির্দেশাবলী পালন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৮৮৫ সনে তার প্রথম ঘোষণা ছিল যে, সে একজন মুজাদ্দেদ। ১৮৯১ সনে সে দাবি করল যে, সে প্রতিশ্রুত ‘মাহদী’’ আর ঠিক ঐ বৎসরই সে দাবি করল সে প্রতিশ্রুত ‘‘মাসীহ’’। তবে সে অনুসারী নবী। তারপর সে ১৯০১ সনে ঘোষণা দিল যে, সে স্বয়ং সম্পূর্ণ নবী এবং সকল নবী রাসূলগণের মধ্যে উত্তম। অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকেরা তার নবুয়তের দাবির পূর্বেই বুঝে নিয়েছেন যে, সে এটাই চায়। কিন্তু প্রথমে সে কঠোরভাবে ইহা অস্বীকার করে বলে যে, আহলে সুন্নাহর যে আক্বীদা, আমি ও সেই আক্বীদা পোষণ করি। আমি বিশ্বাস করি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত এসে শেষ হয়ে গেছে (গোলামের ঘোষণা ২১শে অক্টোবর ১৮৯১ খৃ: যা তাবলীগে রেসালত ২য় খন্ড ২য় পৃ: অন্তর্ভুক্ত)। তারপর সাম্রাজ্যবাদের প্ররোচনায় আরো একটু অগ্রসর হয়ে বলে- ‘আমি নবী নই, তবে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে নবায়নকারী ‘কালীম’ বানিয়েছেন; যাতে, আমি দ্বীনে মুস্তফার নবায়ন করতে পারি। (গোলাম রচিত ‘মেরাতে কামালাতে ইসলাম’ ৩৮৩ পৃ:) ধীরে ধীরে সে বলতে আরম্ভ করল, ‘আমি নবী নই, তবে আমি ‘মুহদাস’। নবী হওয়ার যোগ্যতা রাখে, তবে কার্যত: সে নবী নহে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘‘হামামাতুল বুশরা’’ এর সারাংশ, ৯৯ পৃ:) অতঃপর সে বলে: ‘মুহদাস হল অসম্পূর্ণ নবী । সে যেন নবীগণ ও উম্মতগণের মধ্যে পুলের ন্যয় যোগসূত্র’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘এজালাতুল আওহাম’ ৫২৯ পৃ:) অতঃপর সে বলে আমি ঐ মাসীহ যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়ে গেছেন। (গোলাম কাদিয়ানী রচিত ‘এজালাতুল আওহাম’ ৮৩ পৃ:)
পরিশেষে বলে ‘ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তিনিই আমাকে প্রেরণ করেছেন এবং আমাকে নবী নামে অভিহিত করেছেন। আর আমার দাবির সত্যতা প্রমাণে তিন লক্ষ নিদর্শনা বলী প্রকাশ করেছেন’ । (গোলামের হাকীকতুল ওহীর পরিশিষ্ট, ৬৮ পৃ:) অথচ সে নিজেই ইতিপূর্বে বলেছে যে, ‘‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে যে ব্যক্তি নবুয়তের দাবি করবে সে মুসাইলামা আল কাজ্জাবের ভাই এবং কাফের ও খবীছ’’ (গোলামের ‘আঞ্জামে আথম’ ২৮ পৃ:) আরো সে বলেছে- ‘যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে নবুয়তের দাবি করবে, তাকে আমরা অভিশাপ দেই। (গোলামের ঘোষণা যা ‘তাবলীগে রেসালাতের’ অন্তর্ভুক্ত, ৬ষ্ট খন্ড ২য় পৃ:) এভাবে নবায়নের দাবি হতে তার প্রচারের সূচনা হয় এবং নবুয়তের দাবিতে গিয়ে সমাপ্ত হয়। উল্লেখ্য যে, যে কিতাবের পঞ্চাশ খন্ড প্রকাশ করার জন্য সে ঘোষণা দিয়েছিল উহার মাত্র পাঁচ খন্ড প্রকাশ করেছে। যখন চাঁদা দাতাদের পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সে উত্তর দিল- ‘পাঁচ ও পঞ্চাশের মধ্যে শুধু একটা বিন্দুর পার্থক্য। (গোলামের ‘বারাহীনে আহমদীয়ার’ ভূমিকা, ৫ম খন্ড ৭পৃঃ)
তার চাল-চলন ও চরিত্র:
কাদিয়ানীদের এ নেতা ও ভন্ডনবী চারিত্রিক দৃষ্টি কোন থেকে নজির বিহীন ছিল। এমন কোন গাল-মন্দ নেই যা সে জানে না এবং তার প্রতিপক্ষ ও বিরোধীর প্রতি সে তা ব্যবহার করেনি। একদা সে কোন এক ব্যক্তির নির্দিষ্ট সময়ে মারা যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, কিন্তু তার ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে সে ব্যক্তি ঐ নির্দিষ্ট সময়ে মারা যায়নি। তখন তাকে কোন কোন আলেম জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি নবী বলে দাবিকর এবং আল্লাহর ওহী ব্যতীত কথা বল না তবে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ না হওয়া কেমন করে সম্ভব হয়? তখন দলীল প্রমাণ সহ তাদের উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে সে তাদেরকে এবং সমস্ত মুসলমান আলেমদেরকে গালি দিতে শুরু করে। তার ভাষ্য ছিল এরূপ- ‘পৃথিবীতে শুকর হতে অপবিত্র আর কিছু নেই, কিন্তু ঐ সকল আলেম যারা আমার বিরোধিতা করে তারা শুকর হতেও অপবিত্র। হে আলেমগণ! হে মৃতদেহ ভক্ষণ কারী গণ এবং হে অপবিত্র আত্মার অধিকারীগণ! (গোলামের আঞ্জামে আথম, ২১ পৃ:) সে আরো বলে: ‘হে দুর্ভাগা অপবাদ কারী গণ! জানি না, এ অসভ্য দল লজ্জাবোধ করে না কেন? তাদের চেহারা কাল করে দেয়া হবে’। (গোলাম কাদিয়ানীর আঞ্জামে আথম ৫৮ পৃ:) সে তার বিরুদ্ধবাদীদের এই বলে গালি দেয় যে, ওদের কেহ কেহ কুকুরের ন্যায়, কেহ নেকড়ে বাঘের ন্যায় এবং কেহ শুকরের ন্যায় ।’ (গোলামের ‘খুৎবায়ে ইলহামিয়া’ ১৫০পৃঃ) তার শত্রুদেরকে ব্যাপকভাবে এ সকল গালি দিয়েও সে সন্তুষ্ট হয়নি, বরং নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে তাদের নাম উল্লেখ করে গালি দিতে থাকে। যেমন বলেছে- ‘হে আব্দুল হক নামী শয়তানের গোলাম! তোর মৃত্যু হোক।’’ (গোলামের ‘আঞ্জামে আথম’ ৫৮ পৃ:) সে আরো বলে: আব্দুল হক আমাদের বিজয় সহ্য করতে পারে নি। কেননা, তার আগ্রহ সে যেন জারজ সন্তানে পরিণত হয়।’ (গোলামের ‘আনওয়ারুল ইসলাম’ ৩০ পৃ:) তার বিরুদ্ধবাদীদের মধ্যে সা’দুল্লাহ নামী এক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সম্মুখে সে তার নিজ চরিত্র প্রকাশ করে বলে ‘হে প্রেত, উতর, পাপিষ্ঠ, শয়তান, অভিশপ্ত আহাম্মকের বীর্য, খবীস, মুফসেদ, মিথ্যাবাদী, হতভাগা ও বেশ্যার পুত্র! (আল্লাহ পানাহ, আল্লাহ পানাহ, কাদিয়ানীদের নবীর এমন উক্তি হতে) (গোলামের ‘আঞ্জামে আথম’ ২৮১ পৃ:) প্রসিদ্ধ মুনাযির তর্কবাগিশ শেখ ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকে এই বলে সম্বোধন করে- ‘হে কুকুর, হে মৃতদেহ ভক্ষণকারী, ! (আঞ্জামে আথম’ এর টিকা, ২৫ পৃ:) আরো সম্বোধন করে- ‘হে আবু জাহেল হে কাকতাড়ুয়া সন্তান ও বিশ্বাস ঘাতক!’ (গোলামের ‘এজাজে আহমদী’ ৪৩ পৃ:) ভারতবর্ষের জনৈক শাইখে তরী-কতকে সে এই বলে সম্বোধন করে- ‘মিথ্যুক, অপবাদকারী, খবীছ, বিচ্ছু এবং হে কুলরা ভূমির কীট! (যা এই শেখের বাসস্থান) তোর উপর আল্লাহর অভিশাপ! ইবলিসের কারণে তুই অভিশপ্ত হয়েছিস। তুই হল গুমরাহীর শেখ, ও হতভাগা’। (গোলামের ‘নুযুলুল মাসীহ’ ৭৫ও ৭৬ পৃ:)
একটি আরবী কবিতার কলিতে সে তার সকল শত্রুর উল্লেখ করে বলে:-
(সকল শত্রুরা মাঠের শুকর হয়ে গেছে।
আর তাদের নারীগণ তাদের সম্মুখে কুকুরীর ন্যায়।)
(গোলামের ‘নজমুল হুদা’ ১০ পৃ:)
কাদিয়ানী নবী এর চেয়ে অধিক এমন সব গাল মন্দ উচ্চারণ করত যা কান শুনতে চায় না এবং মুখও উচ্চারণ করতে চায় না। বিশেষ করে ঐ সকল গাল-মন্দের ব্যবহার যা ইসলামী আইনে অপবাদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং একজন সাধারণ লোকও তা উচ্চারণ করতে ঘৃণাবোধ করে। একদা গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ‘তুই জারজ সন্তান’ বলে গালি দিতে শুনে বলল: ওমর রা. এর সময়ে এরূপ গালির উপর অপবাদের শাস্তি হিসাবে কোড়া মারা হত। কিন্তু আজ কাল এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে জারজ সন্তান বলে গালি দিতে শুনেও লোকেরা কোন সাড়া দেয় না, এ গালিটি যেন তাদের কাছে কিছুই নহে। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের ‘জুমআর খুতবা’ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজলের অন্তর্ভুক্ত, ১৩ই ফেব্রু: ১৯২২ খৃ: প্রকাশিত) অতএব হে গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ! তোমার পিতা সম্পর্কে তুমি কি বল? যখন সে কোন মুসলমান আলেমকে এই বলে গালি দেয় ‘তুমি তোমার অপবিত্রতার দ্বারা আমাকে কষ্ট দিয়েছ। হে নর্তকীর ছেলে! তুই যদি অপদস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ না করিস, তাহলে আমি সত্য নবী নই’। (গোলামের আঞ্জামে আথম ৮৮ পৃ:) তোমার পিতা এবং তোমার নবী, যার তুমি খলীফা, বল তো সে কোড়ার উপযুক্ত হলো কি না?
ভন্ডনবী কাদিয়ানীর ভান্ডারে এরূপ গাল-মন্দ অনেক রয়েছে। সে তার বিরুদ্ধবাদীগণকে প্রায়শ: বলত: ‘অমুক হারামজাদা, অমুক বেশ্যার সন্তান।’ উম্মতের অনেক বিশিষ্ট লোক ও নেতাদেরকে সে এরূপ অশ্লীল গাল-মন্দ দিয়েছে। একদা সে সমস্ত উম্মতকে তার অদ্ভুত শব্দাবলি দ্বারা সম্বোধন করেছে: ‘এ সকল পুস্তকাদির প্রতি সকল মুসলমান ভালোবাসার চোখে দেখবে এবং উহার মারেফত থেকে উপকৃত হবে, আর, আমাকে গ্রহণ করবে এবং আমার দাওয়াত বিশ্বাস করবে, কিন্তু বেশ্যার সন্তানরাই বিশ্বাস করবে না, যাদের অন্তরের উপর আল্লাহ মোহর করে দিয়েছেন’। (গোলামের ‘মেরাতু কামালাতিল ইসলাম’ ৫৪৭ পৃ:) মুসলমানদের একজন শ্রেষ্ঠ আলেমকে সে এই বলে গালি দিয়ে বলে: ‘তুমি ঐ ভাবে নর্তন করছ যেমন নর্তকীরা মঞ্চে নর্তন করে। (গোলামের ‘হুজ্জাতুল্লাহ’ আরবী ৮৭ পৃ:) একজন খ্রিস্টান ব্যক্তিকে সে গালি দিয়ে বলে: ‘এটা হল জারজ সন্তানের লক্ষণ যে, সে সঠিক পথে চলে না।’ (গোলামের ‘আনওয়ারুল ইসলাম’ ৩০ পৃ:) আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে এই বলে গালি দেয়: ‘তারা জারজ সন্তান এবং হীন স্বভাবের লোক।’ (গোলামের ‘আরিয়া ধর্ম’ ৫৪ পৃ:)
এই হল কাদিয়ানী নবীর চরিত্রের সাধারণ নমুনা। অন্যথায়, সে এ ব্যাপারে সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে। এ ব্যাপারে তার কোন জুড়ি নেই। এমন কোন লোক কি পাওয়া যাবে? যে পূর্ণ চারটি পৃষ্ঠা শুধু লা‘নত লিখে কালো করেছে। হ্যাঁ সে-ই ঐ ব্যক্তি! যে তার একটি পুস্তকের পূর্ণ চারটি পৃষ্ঠা ‘লা‘নত’ শব্দ লিখে কালো করেছে। সে তার বিরুদ্ধবাদীদের উপর লানত লানত লানত এ শব্দটিকে এক হাজার বার লিখেছে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘নুরুল হক’ ১১৮-১২২ পৃ: দেখুন।) খ্রিস্ট ধর্মের একজন লোকের উপর হাজার বার লানত করেছে। (তাবলীগে রেসালত) তার পুস্তকাদিতে এ জাতীয় গাল-মন্দের ব্যবহার অনেক। এমনকি কোন লোক আছে যে, নবীগণকে গালি দেয়? হ্যাঁ! ভন্ডনবী কাদিয়ানীই আল্লাহর নবী ঈসাকে আলাইহিস সালাম গালি দিয়ে বলে: ‘ঈসা তার নিজের ব্যাপারে একথা বলতে পারেনি যে, তিনি সৎ। কেননা, লোকেরা তাকে মদ্যপায়ী এবং বদ চরিত্র বলে জানত। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘চিত্তে ভজনের’ টীকা ১৭২ পৃ:) সে আরো বলে: ঈসা আলাইহি সালাম বেশ্যাদের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলেন।’ কেননা, তাঁর মাতামহীগণ বেশ্যা ছিলেন। (আল্লাহ পানাহ) (গুলমের ‘আঞ্জামে আথম’ এ পরিশিষ্টের টিকা, ৭পৃঃ)
আশ্চর্যের বিষয়, এরকম অশালীন ও অভিশপ্তকারী ব্যক্তি দাবিকরে যে, সে নবী। সে নিজেই বলেছে: ‘‘গাল-মন্দ করা ছিদ্দকগণের কাজ নহে । আর, মুমিন ব্যক্তি অভিশপ্তকারী হতে পারে না’’ । (গোলামের ‘এজালাতুল আওহাম’ ৬৬ পৃ: আবার তার ছেলে বলেছে: মানুষ যখন পরাজিত হয়ে যায় এবং তার দাবির সমর্থনে কোন প্রমাণ পায় না, তখনই গালাগালি আরম্ভ করে। আর, যত বেশি সে গালাগালি করবে, তার পরাজয় তত বেশি প্রমাণিত হবে। (গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদের ‘আনওয়ারুল খেলাফত’ ১৫পৃঃ) ক্রিমিনাল আদালতের দুইজন বিচারক কাদিয়ানী ভন্ডনবীকে দোষী সাব্যস্ত করে বলেছেন যে, সে (গোলাম) অসচ্চরিত্র, অশালীন ভাষা এবং অশ্লীল শব্দ প্রয়োগকারী। তার কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, সে যেন তার বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি পুনরায় এরূপ শব্দাবলি প্রয়োগ না করে । গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই স্বীকার করেছে যে, সে এ অঙ্গীকার করেছে। সে এর উল্লেখ করে বলে: ‘আমি নায়েবে হাকীমের সম্মুখে অঙ্গীকার করেছি যে, আমি এরপর এ ধরনের অশ্লীল শব্দাবলি আর ব্যবহার করব না।’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘কিতাবুল বারিয়্যহ’ ভূমিকা, ১৩ পৃ:)
এই হল চারিত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাদিয়ানী নবীর স্বরূপ এবং তার গালিগালাজ। আমরা তার নিজ পুস্তক ও ভাষা হতে এখানে কিছুটা উল্লেখ করলাম।
তার আচার-ব্যবহার:
তার লেন দেনের অবস্থা এই যে, সে একটি ঘোষণা প্রচার করল: ‘আমার সকল অনুসারীদের উপর কর্তব্য হলো তারা যেন প্রত্যেক মাসে তাদের মালের একটা অংশ আমার কাছে পাঠায় । এ ঘোষণার পর আমি তিন মাস অপেক্ষা করব। যে ব্যক্তি এ সময়ের মদ্যে তার কিছু মাল আমার কাছে পাঠাবে না, আমার মুরিদগণের তালিকা হতে তার নাম মুছে ফেলব’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘লাওহুল মাহদী’ ১ম পৃ:) আর একবার সে ঘোষণা দিল: কাদিয়ানী ধর্মের জন্য সকলের কিছু দান করা উচিত। কারণ, টাকা পয়সা ছাড়া কোন কাজ করা সম্ভব নহে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে, মুসা আলাইহিস সালাম ঈসা আলাইহিস সালাম এবং অন্য সকল নবীর যুগে এভাবে দানের টাকা একত্রিত করা হয়েছে। তাই এ দিকে আমার জামাতের লক্ষ্য করা কর্তব্য এবং সম্ভাব্য দান সমূহ একত্রিত করা উচিত’। (গোলামের ঘোষণা যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘বদরে প্রকাশিত’ ৯ই জুলাই, ১৯০৩ খৃ:) ‘‘খেদমতে ইসলাম’’ নাম দেওয়ার কারণে লোকেরা তার কাছে বড় বড় অঙ্কের টাকা পাঠাতে শুরু করে। কিন্তু এ টাকা গুলো কোথায় ব্যয় করা হল ? এ প্রশ্নের উত্তরে একজন বিশিষ্ট কাদিয়ানী নেতা বলে: একদা আমি, খাজা কামালুদ্দীন (কাদিয়ানীদের অন্যতম নেতা) ও অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী (লাহোর কাদিয়ানী জামাতের আমীর) চাঁদা আদায় করতে গেলাম। রাস্তায় অধ্যাপক খাজা কামালুদ্দীন আলোচনা করতে লাগলেন যে প্রথম প্রথম আমরা লোকজনকে বলতামঃ আম্বিয়া এবং সাহাবাগণের মত জীবন অবলম্বন করা আমাদের উচিত এবং তারা যেরূপ কাজ করে গেছেন তদ্রুপ আমাদের কাজ করা উচিত। তারা মোটা কাপড় পরিধান করতেন এবং মোটা ভাত খেতেন। আর, আল্লাহর রাস্তায় তাদের ধন সম্পদ ব্যয় করতেন। আমরা এ সকল কথা বলতাম এবং লোকজন থেকে এমনকি আমাদের মহিলাদের থেকেও চাঁদা আদায় করে কাদিয়ানে পাঠাতাম। কিন্তু এর পর যখন আমাদের স্ত্রী গণ ও অন্যান্যদের স্ত্রী গণ কাদিয়ানে গেলেন, তখন তারা ওখানকার অবস্থা দেখে রাগান্বিত হয়ে ফিরে আসলেন এবং বললেন তোমরা বড়ই মিথ্যাবাদী। আমরা নিজ চোখে নবী ও সাহাবীদের জীবন যাপন দেখে এসেছি, তাদের স্ত্রী ও মহিলাদের দেখলাম খুবই প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। বাহিরে এর দশ ভাগের এক ভাগও দেখা যায় না। অথচ টাকা পয়সা তাদের জন্য পাঠান হয় না বরং আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য পাঠান হয়। আমরা চাইলে এ সম্পদ নিজেদের জন্য ব্যয় করতে পারতাম। কেননা, আমাদের এ সম্পদ হালাল উপায়ে আমরাই অর্জন করেছি । সুতরাং এরপর আর কিছুই আমরা দান করব না। (কাদিয়ানী মুফতি ছরওয়ার শাহ লিখিত ‘কাশফুল ইখতিলাফ’ ১৩ পৃ:) গোলাম পুত্র এ বাস্তব সত্যকে কাদিয়ানী প্রদত্ত তার জুম আর খুতবায় স্বীকার করেছে যে, ‘‘লুদিয়ান নিবাসী’’ (ভারতের একটি শহর) এক ব্যক্তি একদা বলেছে আমরা অতি কষ্টে এবং দুরবস্থায় কাদিয়ানে চাঁদা পাঠাই, আর সেখানে এ টাকা গুলো গোলাম আহমদের স্ত্রীর অলংকারাদি এবং পোশাক পরিচ্ছেদে ব্যয় করা হয়। সুতরাং এ সমস্ত চাঁদা দিয়ে লাভ কি? যখন এ সংবাদ মাসীহে মাওউদের কাছে পৌঁছোল তখন সে বলল: এর পর আমাদের কাছে কিছু প্রেরণ করা ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম। অতঃপর আমরা দেখব এতে আমাদের কি ক্ষতি হয়। (গোলাম পুত্র ও তার খলীফা মাহমুদ আহমদের ভাষণ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল ফজলে’ প্রকাশিত, ৩১ আগস্ট ১৯৩৮ খৃ:) একবার যখন ভন্ডনবী কাদিয়ানীর উপর এ আপত্তি উঠল যে, ধর্মের নামে যে সমস্ত চাঁদা আদায় করা হয়, তা সে তার নিজের ও তার স্ত্রী গণের জন্য ব্যয় করে ফেলে। তাই , লোক সম্মুখে এর হিসাব প্রকাশ করা উচিত। উত্তরে সে বলল- আমি কোন ব্যবসায়ী নই যে, আমার নিকট উহার হিসাব রাখব এবং জমিয়তের কোষাধ্যক্ষও নই যে, উহার হিসাব দিব আমি জমিনে আল্লাহর প্রতিনিধি। তাই, আমার নিকট এ জিজ্ঞাসা করা সম্ভব নয় যে, আমি উহা কোথায় খরচ করেছি এবং কোথায় ব্যয় করেছি। সত্যিকারের ঈমানদার তারাই, যারা তাদের সম্পদ আমাকে দান করার পর তাদের বুঝে আসুক বা না আসুক আমাকে জিজ্ঞাসা করে না । আপত্তি উত্থাপন করা ঈমান চলে যাওয়ার কারণ বলে মনে করি। (গোলাম কাদিয়ানীর ঘোষণার সারাংশ যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল ফজলে’ প্রকাশিত, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬ খৃ:)
এ সকল অভিযোগ কারী গণ কাদিয়ানীদের বড় বড় নেতা ছিলেন। গোলাম পুত্র মাহমুদ আহমদ বর্ণনা দিচ্ছে যে, জনাব গোলাম তার মৃত্যুর পূর্বে বলেছেন অধ্যাপক খাজা কামালুদ্দীন ও শেখ মুহাম্মদ আলী আমার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করে এবং আমাকে অপবাদ দেয় যে, আমি অন্যায় ভাবে লোকের সম্পদ ভক্ষণ করি। এটা তাদের জন্য উচিত নহে। এমনকি অদ্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী (কাদিয়ানী নেতা) আমার নিকট একটি পত্র পাঠিয়েছে, যাতে সে বলেছে যে, নিয়মিত খরচতো অল্পই হচ্ছে। তবে অবশিষ্ট সম্পদ যা হাজার হাজার টাকা হবে তা কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে? তারপর অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বললেন: তারা বলে যে, আমরা হারাম ভক্ষণ করছি অথচ এসব টাকা পয়সার সহিত তাদের কোন সম্পর্ক নেই।যদি আমি তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি তবে তাদের কাছে এসব সম্পদ এমনকি একটি পয়সাও আসবে না। (নুরুদ্দীনের নিকট গোলাম পুত্রের লিখিত পত্র যা মুহাম্মদ আলী কাদিয়ানীর লিখিত ‘হাকীকতুল এখতেলাফ’ নামক পুস্তকের অন্তর্ভুক্ত, ৫০ পৃ:)
এসব লেন-দেনের ব্যাপারে সে এতই নীচে নেমেছে যে, একদা সে ঘোষণা দিল, পঞ্চাশ খন্ডের একখানা পুস্তক সে ছাপাতে চায়। যে ব্যক্তি অগ্রিম টাকা পাঠাবে, তার কাছে অর্ধেক মূল্যে কিতাব পাঠান হবে। ফলে, অনেক সাদা সিদে লোক এর দ্বারা প্রতারিত হয়ে পঞ্চাশ খন্ডের টাকা পাঠিয়ে দিল। কিন্তু তার মৃত্যু পর্যন্ত এ পুস্তকের মাত্র পাঁচ খন্ড ব্যতীত আর ছাপা হয়নি। যখন লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করল যে, আপনি আমাদের কাছে পঞ্চাশ খন্ড ছাপাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং এর মূল্যও গ্রহণ করেছেন। উত্তরে সে এমন কথা বলল যা বিবেকবানদের উপদেশ বটে।তার উত্তরের বিবরণ হল এই হ্যাঁ, আমি পঞ্চাশ খন্ড ছাপাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সত্য কিন্তু পাঁচ ও পঞ্চাশের মধ্যে মাত্র একটি বিন্দুর পার্থক্য। কাজেই আমি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিনি। (গোলামের ‘বারাহীনে আহমদীয়ার’ ভূমিকা ৫ম খন্ড ৭পৃঃ)
যখন লোকজন তাদের অবশিষ্ট মূল্য ফেরত চাইল তখন উত্তরে সে বলল: এটা আল্লাহর দেওয়া সম্পদ। এর একটি পয়সাও আমি কাউকে ফেরত দেব না, অনুরূপভাবে আমি কাউকে এ প্রশ্নের জবাবও দেব না। কেহ যদি আমার নিকট এর হিসাব চায় তবে সে যেন এরপর আর আমাকে কিছুই না দেয়। (গোলামের ঘোষণা যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল হিকমে’ প্রচারিত এবং ২১ মার্চ ১৯০৫ ইং প্রকাশিত।) তার পুত্র বশীর আহমদ বলেছে: আমাকে আব্দুল্লাহ আল সিন্নূর কাদিয়ানী বলেছে: এক ব্যক্তি জনাব গোলামের নিকট এসে একটা ফতওয়া চাইল যে, তার ভগ্নী কিছু সম্পদ রেখে গেছে, সে একজন বেশ্যা নারী ছিল, বেশ্যা বৃত্তির দ্বারা সম্পদ উপার্জন করত। হযরত তাকে উত্তর দিলেন: এ যুগে এ সম্পত্তি ইসলামের সেবায় ব্যয় করা যেতে পারে। (গোলাম পুত্র বশীর আহমদের লিখিত সিরাতুল মাহদী, ৩৪০ পৃ:) উল্লেখযোগ্য যে, গোলামের যুগে তার দৃষ্টিতে সে ছাড়া আর কেহই ইসলামের খাদেম ছিল না।
তার মিথ্যাচার সমূহ:
ভন্ডনবী কাদিয়ানী মিথ্যা সম্পর্কে বলে: ‘মিথ্যা হল সকল ঘৃণ্য বস্ত্তর মূল’। (গোলামের উক্তি যা ‘তাবলীগে রেসালাতের’ অন্তর্ভুক্ত ৭ম খন্ড, ২৮ পৃ:) সে আরো বলে: মিথ্যা বলা মুরতাদ (ধর্মান্তরিত) হওয়ার চেয়ে কম অপরাধ নহে।(গোলামের ‘‘আরবাঈনের’’ হাসিয়া, ৩ নম্বর ২৪ পৃ:) কিন্তু সে নিজেই মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত ছিল। তার সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা যে, তিনি তাকে রাসূল বানিয়েছেন এবং তার কাছে ওহী পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি কয়েকটা প্রবন্ধে অনেক আলোচনা করেছি। তাই আমি এখানে আর দীর্ঘায়িত করতে চাই না ।
অপর একটি প্রধান মিথ্যা হল: কুরআনের নাম নিয়ে এমন কথা বলে যা কুরআনে নেই। সে বলেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
(গোলাম কাদিয়ানীর ‘নুরুল হক’ ১ম খন্ড ৪৬ পৃ:) অথচ কুরআনের কোথাও এ ভাষ্য পাওয়া যায় না। গোলাম এ এবারতের অনেকবার পুনরাবৃত্তি করেছে , কেননা, সে ‘ফরইয়াদ দরদে বালাগ’ নামক তার পুস্তকে এ এবারতকে কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে চারবার উল্লেখ করেছে, ৮,১০,১৭,২৩, পৃ:। তার ঘোষণাবলীতেও তা উল্লেখিত রয়েছে, যা ‘তাবলীগে রেসালতের’ অন্তর্ভুক্ত ৩য় খন্ড ১৯৪ পৃ: এবং ৭ম খন্ড ৩৯পৃঃ)
সে আর এক স্থানে বলেছে: কুরআনে আছে, (গোলাম কাদিয়ানীর ‘হাকীকতুল ওহী’ ১৫৪ পৃ:) আর এটাও কুরআন সম্পর্কে তার একটা স্পষ্ট মিথ্যা। সে তার কিতাব ‘তাজকেরাতুশ শহাদাতাইন’ এ বলেছে: ‘দেখুন, কুরআনে করীমে আল্লাহপাক কি বলেন:
(গোলাম কাদিয়ানীর ‘তাজকেরাতুশ শহাদাতাইন’ ৩৪ পৃ:)এ এবারত সমূহ তার পুস্তকাদিতে এরূপই পাওয়া যায়। অথচ এ গুলো অনেকবার মুদ্রিত হয়েছে। এর দ্বারা শুধু তার এটাই উদ্দেশ্য যে, মানুষের মনে এ সন্দেহ সৃষ্টি করা যে, কুরআনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কুরআনের উপর যেমন মিথ্যা-রোপ করেছে তদ্রুপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরও মিথ্যা-রোপ করেছে। সে লিখেছে : রাসূলুল্লাহকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কিয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? উত্তরে তিনি বললেন: সমস্ত মানব জাতীর উপর আজকের দিন হতে একশত বৎসরের মধ্যে কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘এযালাতুল আওহাম’ ২৫৩ পৃ:) অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও এমন উক্তি করেন নি যে, সমস্ত মানব জাতীর উপর একশত বৎসরের মধ্যে ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। কেহই তা প্রমাণ করতে পারবে না। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরো মিথ্যা আরোপ করে বলেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যখন কোন শহরে বালা-মছিবত অবতীর্ণ হয়, শহরবাসীর জন্য তৎক্ষণাৎ এ শহর ত্যাগ করা উচিত। নচেৎ তারা আল্লাহর সাথে যুদ্ধকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (মুরিদগণের প্রতি গোলামের ঘোষণা যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল-হিকমে’ প্রচারিত, ২৪ আগস্ট, ১৯০৭ খৃ:) এটা রাসূলুল্লাহর নামে একটি মিথ্যা ও জঘন্য অপবাদ।
সে অন্য এক স্থানে এ মিথ্যা উক্তি করেছে: ছহীহ হাদীসে আছে যে, মাসীহে মাওউদ শতাব্দীর প্রান্তে অবতীর্ণ হবেন এবং তিনি চৌদ্দ শতাব্দীর ইমাম হবেন’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘নুসরতুল হকের’ পরিশিষ্ট ১৮৮পৃঃ)
সকল নবীর উপর সে অপবাদ দিয়ে বলেছে: পূর্ববর্তী সকল নবীর ওহী একবাক্যে বলে যে,মাসীহে মাওউদ চৌদ্দ শতাব্দীতে জন্ম গ্রহণ করবেন এবং তিনি পাঞ্জাবেই জন্ম গ্রহণ করবেন। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আরবাঈন’ ২৫ নম্বর,২৩ পৃ:) এটা স্পষ্ট মিথ্যা এবং প্রকাশ্য অপবাদ। কারণ সকল নবীতো দুরের কথা একজন নবীর নিকট ও এ অর্থে কোন ওহী পাওয়া যায় না। আল্লাহর নবী ঈসার আলাইহিস সালাম উপর সে মিথ্যা-রোপ করেছে যে, ‘তিনি গালি গালাজে অভ্যস্ত ও কুচরিত্রবান ছিলেন। ধৈর্য না থাকার কারণে তিনি সাধারণ বিষয়ে রাগান্বিত হয়ে উঠতেন’ আরো সে কটাক্ষ করে বলে: ‘ঈসা আলাইহিস সালাম মিথ্যায় অভ্যস্ত ছিলেন’। (গোলাম কাদিয়ানীর জমীমায়ে আঞ্জামে আথমের টিকা, ৫পৃঃ)
তার উপর আরো মিথ্যা-রোপ করে বলে: ‘ঈসা আলাইহিস সালাম পুরুষত্ব হতে বঞ্চিত ছিলেন, যা মানুষের জন্য অতি উঁচু প্রশংসনীয় গুণ’। (মাকতুবাতে আহমদিয়া, যা গোলাম কাদিয়ানীর চিঠি পত্রের সমষ্টি, ৩য় খন্ড, ২৮পৃঃ।)
ঈসার আলাইহিস সালাম উপর সে আরো মিথ্যা-রোপ করে বলেছে: ঈসা আলাইহিস সালাম যাদুকর ছিলেন যা কিছু তার থেকে প্রকাশ পেয়েছে তা এ যাদুর বলেই প্রকাশ পেয়েছে’। (গোলামের ‘এজালাতুল আওহাম’ ৩০৯ পৃ:)
ঈসা আলাইহিস সালাম এর উপর তার মিথ্যাসমূহ পূর্ববর্তী ‘নবুয়তের দাবিদার....... অবমাননা’ শীর্ষক তৃতীয় প্রবন্ধে উল্লেখ করেছি। সে ঈসার আলাইহিস সালাম প্রতি বিদ্বেষ রাখত, বিশেষ করে এ উদ্দেশ্যে যে, সে যেন ঈসার আলাইহিস সালাম চারিত্রিক গুণাবলি ধ্বংস করে দিতে পারে, যাতে লোকজন তার দোষত্রুটির উপর আপত্তি উত্থাপন করতে না পারে।
নবী রাসূলগণের উপর তার মিথ্যাচার আরো অনেক রয়েছে। আমরা এখানে এতটুকুই উল্লেখ করা যথেষ্ট মনে করি।
তার মিথ্যাচারের আরো কয়েকটি নমুনা হল এই: ‘গত কয়েক বছরে আমার হাতে লক্ষাধিক লোক বয়আত করেছে।’ (গোলাম কাদিয়ানীর ‘তুহফাতুন নদওয়া’) কাদিয়ানী ম্যাগাজিনে গোলামের ঘোষণা প্রচারিত হয়েছে, এ পর্যন্ত আমার হাতে প্রায় এক লক্ষ লোক তওবা করেছে ।’ (কাদিয়ানী ম্যাগাজিন রিভিউ অব রিলিজিউন্স, সেপ্টেম্বর ১৯০২ খৃ:) এর সাড়ে তিন বৎসর পর সে লিখেছে, ‘আমার হাতে প্রায় ৪লক্ষ লোক তওবা করেছে।’ (তজল্লিয়াতে এলাহিয়া, ৩পৃঃ, ৩রা মার্চ ১৯০৬ খৃ: মুদ্রিত।) একই বক্তব্য তার ‘হাকীকতুল ওহী’ নামক পুস্তকে উল্লেখ করেছে। ‘আমি হাজারো শুকরিয়া আদায় করছি যে, এ পর্যন্ত আমার হাতে চার লাখ লোক কুফুর ও পাপাচার হতে তওবা করেছে’। (গোলামের ‘হাকীকতুল ওহীর’ পরিশিষ্ট ১১৭ পৃ:) তার মৃত্যুর চৌদ্দ বছর পর তার পুত্র ও তার খলীফা ঘোষণা করেছে যে, কাদিয়ানীর সংখ্যা চার পাঁচ লাখে পৌঁছে গেছে। (কাদিআনী পত্রিকা ‘আল-ফজল ২৬ জুন, ১৯২২ খৃ:) কিন্তু সরকারী আদম শুমারী ভন্ডনবী কাদিয়ানী ও তার পুত্রের ভাষ্য মিথ্যা প্রতিপন্ন করে দেয়। তার ছেলে এই বলে স্বীকার করেছে. ‘সরকারী আদম শুমারী অনুযায়ী পাঞ্জাবে কাদিয়ানীদের সংখ্যা ছাপ্পান্ন হাজার এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে কাদিয়ানীদের সংখ্যা বিশ হাজার বলে অনুমান করা যায়। এমনি ভাবে আমাদের সংখ্যা ছিয়াত্তর হাজারে দাঁড়ায়’। (গোলাম পুত্র এবং কাদিয়ানীদের খলীফা মাহমুদ অহমদের ভাষণ যা কাদিয়ানী পত্রিকা আল-ফজলের অন্তর্ভুক্ত, ২১ জুন১৯৩৪ খৃ:)
সুতরাং তার মিথ্যা সুস্পষ্ট। ১৯০৬ সালে গোলাম বলছে যে তার জামাতের লোক সংখ্যা চার-লাখ। কিন্তু আঠারো বৎসর পরের আদম শুমারী বলছে যে, গোলাম পুত্রের উক্তি অনুযায়ী নারী ও শিশু সহ তাদের সংখ্যা ছিয়াত্তর হাজারের অধিক নহে। হায় লজ্জা, হায় শরম। এমনিভাবে ১৮৯৯ সনে সে যে উক্তি করেছে উহাও মিথ্যা। সে বলেছে: ‘আমার তিন হাজারের অধিক ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত ও সত্য প্রমাণিত হয়েছে।’ ‘‘হাকীকতুল মাহদী’’ ৮পৃঃ ১৮৯৯ সালে মুদ্রিত। কিন্তু দুই বৎসর পর যে নিজেকে মিথ্যা প্রমাণিত করে লিখেছে: আমি নিজে দেখেছি যে, এ পর্যন্ত আমার একশত পঞ্চাশটি ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে। (এজালাতুল গালতা’ ৭ পৃ: ১৯০১ সালে মুদ্রিত।)
তার অপর একটি মিথ্যাচার হল, সে লিখেছে: ‘‘আমার মোজেজা সমূহ এক মিলিয়নেরও অধিক।’’ (গোলাম কাদিয়ানী রচিত ‘তাজকেরাতুশ শাহাদাতাইন’ ৪১ পৃ:) সুতরাং মিথ্যা ও অপবাদ জনাব গলিম কাদিয়ানীর স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও সে বলে যে, মিথ্যা ধর্মান্তরিত হওয়ার চেয়ে কম অপরাধ নহে। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আরবাঈন’ কিতাবের হাসিয়া ৩৫ নম্বর ২৪ পৃ:।) সে আরো বলে: ‘অপবাদকারীর উপর আল্লাহর লা’নত এবং আল্লাহর কাছে তার কোন মর্যাদা নেই।’ (গোলামের ‘নুসরতুল হক’ ১০ পৃ:)
এইতো হল কাদিয়ানীর কথা। অপর দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘যার মধ্যে এ চারটি স্বভাব রয়েছে সে খাঁটি মুনাফিক, আর যার মধ্যে এর একটি রয়েছে তার মধ্যে নেফাকের একটি চরিত্র রয়েছে, যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে:( ১) যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে খিয়ানত করে, (২) যখন কথা বলে তখন সে মিথ্যা বলে, (৩) যখন অঙ্গিকার করে তখন ভঙ্গ করে (৪) এবং যখন ঝগড়া করে তখন গালি-গালাজ করে। [১ বুখারী ও মুসলিম।]
ভন্ডনবী কাদিয়ানীর মধ্যে এ সকল চরিত্রের সব গুলোই বর্তমান ছিল। যেমন আমি এর বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আসলাম।
তার তথাকথিত ইলহাম সমূহ
তার চরিত্রের বর্ণনা প্রসঙ্গে আমরা তার কিছু এলহামের উল্লেখ করতে চাই। যাতে পাঠক জানতে পারবেন যে, এ সমস্ত ওহী কোন ধরনের এবং এর উদ্দেশ্যই বা কি? আল্লাহর কালাম কি অর্থহীন হওয়া যুক্তি সংগত? যেভাবে ভন্ডনবী কাদিয়ানী গোলাম আহমদ এর চিত্র তুলে ধরেছে। গোলাম আহমদ বলে: ‘আমার কাছে ইলহাম আসছে- ১১ ইনশাআল্লাহ’। (গোলাম কাদিয়ানীর ‘আল- বুশরা’ ২য় খন্ড,৬৫পৃঃ।) এরপর সে বা তার অন্য কোন অনুসারী এর কোন ব্যাখ্যা দেয় নি যে, ‘১১ ইনশাআল্লাহ’ এর কি অর্থ? সে আরো বলেছে: তার কাছে ইলহাম আসছে- ‘উপযুক্ত ব্যক্তি’ (আল-বুশরা’ ২য় খন্ড, ৮৪ পৃ:) উপযুক্ত ব্যক্তিটি কে? এর কোন পরিচয় নেই। আরো বলেছে: আক্ষেপ অত্যন্ত আক্ষেপ’। (গোলামের ইলহামাতের সমষ্টি ‘আল-বুশরা’ ২য় খন্ড ৫৭ পৃ:) আরো একটি এলহাম: ‘‘চৌধরী রস্তম আলী’’ (আল-বুশরা ২য় খন্ড, ৮৮পৃঃ যা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘বদরের অন্তর্ভুক্ত, ১ম খন্ড, ৩২ গৃঃ) আরো একটি ইলহাম: ‘ফজলুর রহমান দরজা খুলেছে’। (আল- বুশরা, ২য় খন্ড, ৯০ পৃ:) এবং ‘তুমি আমার সন্তানদের সমতুল্য’। (আরবাঈন, হাসিয়া, ২৩ পৃ: ৪ নম্বর।)
এই হল ইলহামাতের নমুনা। জানি না, এ গুলোর অর্থ কি? আরো অদ্ভুত কথা হল, গোলাম আহমদ নিজেই এগুলোর অর্থ জানে না। এরূপ ইলহামাত গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নিকট অনেক আছে। বরং অধিকাংশ ইলহামাত এ ধরনেরই।
তার পরিণতি ও মৃত্যু:
গোলামের মৃত্যু তার মিথ্যার উপর মোহর মেরে দিয়েছে। সে আল্লাহর রাসূল, কুরআন ও নবীগণের উপর মিথ্যারোপের কারণে সে নিজের উপর লা’নত টেনে এনেছে। আলেমগণ তার সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তাকে সংশোধন করার ও ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনার নিষ্ফল চেষ্টা চালিয়েছেন। যখন তারা কুফুরের উপর তার জেদ ও দৃঢ়তা, ধর্মান্তরিত হওয়া ও নবুয়তের মিথ্যাবাদীর উপর অনঢ় দেখতে পেলেন, তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করলেন এবং তার সঙ্গে মুনাজারা করলেন। তার মিথ্যা দাবির অসারতা প্রকাশ করেন। দলীল প্রমাণ পেশ করার সকল প্রচেষ্টা সমাপ্ত হওয়ার পর সকলেই ঐক্যমতে তার কুফুর এবং মিথ্যাচারের ফতওয়া প্রদান করলেন। এ সকল আলেমের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় হলেন ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের পক্ষে প্রতিরোধকারী ও ইসলামের তরফ থেকে মুনাজারায় অগ্রগামী মহান শেখ আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী। তার এবং গোলাম কাদিয়ানীর মধ্যে অনেকগুলো বিতর্ক এবং লিখিত ও মৌখিক বাহাছ-মুবাহাছা হয়েছে। তবে, বিজয় সর্বদা এই আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তি [১ আল্লামা রশীদ রেজা তার প্রশিদ্ধ ‘আল মানার’ ম্যাগাজিনে শায়খ ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকে এই নামে অভিহিত করেছেন।] ও ইসলামের বীর পুরুষের পক্ষেই ছিল। এর ফলে ভন্ডনবী কাদিয়ানী রাগে জ্বলে উঠে এবং ১৯০৭ খৃষ্টাব্দের ১৫ই এপ্রিলে একটি প্রচার পত্র বিলি করে। এতে নিম্নোক্ত কথাগুলো লেখা ছিল: ‘‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং তাঁর সম্মানিত রাসূলের প্রতি দরুদ পড়ি। ‘‘লোকেরা তোমাকে সংবাদ জিজ্ঞাসা করে ইহা কি সত্যি? তুমি বলে দাও, হ্যাঁ, আল্লাহ আমার প্রভু-প্রতিপালকের! নিশ্চয়ই এটা সত্য । [২ সুরা ইউনুস-৫৩]
উস্তাদ ছানাউল্লাহর প্রতি প্রেরিত। যে হেদায়েতের অনুসারী তার উপর ছালাম। আপনাদের ম্যাগাজিন আহলে হাদীসে দীর্ঘদিন যাবৎ আমাকে মিথ্যাবাদী ও ফাসেক বলা হচ্ছে এবং সর্বদা এ ম্যাগাজিনে আমাকে মালাউন, কাজ্জাব, দাজ্জাল ও মুফসেদ নামে অভিহিত করেছেন । বিশ্বে প্রচার করেছেন যে, আমি অপবাদকারী, মিথ্যুক, দাজ্জাল এবং আমার মাসীহিয়তের দাবিতে আমি মিথ্যাবাদী। আমি আপনার কাছ থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছি এবং ধৈর্য ধারণ করেছি। কিন্তু যখন আমি দেখলাম যে, আমি সত্য প্রচারের জন্য আদিষ্ট, আর আপনি আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিশ্বকে আমার দিকে অগ্রসর হতে বাধা প্রদান করছেন। সুতরাং এখন আমি দোয়া করছি যে, যদি আমি মিথ্যাবাদী ও অপবাদকারী হই, যেমন আপনি আপনার ম্যাগাজিনে প্রচার করছেন, তাহলে যেন আপনার জীবদ্দশাই আমি ধ্বংস হয়ে যাই। কেননা, আমি জানি যে, কোন মিথ্যাবাদী ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বেশি দিন বাঁচে না। বরং সে তার শত্রুর জীবদ্দশায়ই লাঞ্ছিত ও অপদস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। আর, তার মৃত্যুতে আল্লাহর বান্দাগণের উপকার নিহিত রয়েছে। কারণ, সে আর তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে পারবে না। আর, যদি আমি মিথ্যাবাদী ও অপবাদকারী না হয়ে থাকি এবং আল্লাহর সাথে কথা বলার মর্যাদা লাভ করে থাকি এবং আমি প্রতিশ্রুত মাসীহ মর্যাদা লাভ করে থাকি এবং আমি প্রতিশ্রুত মাসীহ হই, তা হলে আমি দোয়া করছি তুমি যেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী অবিশ্বাসীদের পরিণাম হতে মুক্তি লাভ না কর। আমি ঘোষণা করছি, যে শাস্তি শুধু আল্লাহর নিকট থেকে হয় যেমন প্লেগ ও কলেরা, উহাদ্বারা যদি তুমি আমার জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ না কর তবে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি না বরং বরকতময় মহান আল্লাহর নিকট থেকে প্রকাশ্য মীমাংসা চেয়েছি। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, হে আমার প্রভু, যিনি সবকিছু দেখেন, মহাশক্তি ধর, সর্বজ্ঞানী, যিনি সবকিছুর খবর রাখেন। হে অন্তরের রহস্য জ্ঞাত, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে মিথ্যুক ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী হয়ে থাকি এবং রাত দিন তোমার উপর অপবাদ দিয়ে থাকি, তবে, হে আল্লাহ, উস্তাদ ছানাউল্লাহর জীবনেই আমাকে ধ্বংস করে দাও এবং তাকে ও তার জামাতকে আমার মৃত্যুর দ্বারা আনন্দিত কর। আমীন। হে আল্লাহ! আর আমি যদি সত্য হই এবং ছানাউল্লাহ বাতিল পন্থী ও আমার উপর তার আরোপিত অপবাদ সমূহে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকেন, তবে, তাকে আমার জীবিতাবস্থায় ঘাতক ব্যাধি যেমন প্লেগ, কলেরা ইত্যাদি দ্বারা ধ্বংস করে দিন। আমীন। হে প্রভু! আমি বড় কষ্ট পেয়েছি এবং ছবর করেছি। কিন্তু এখন আমি দেখছি যে, তিনি সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন এবং আমাকে চোর, জবর দখলকারী যাদের দ্বারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের চেয়েও অধিক অপরাধী মনে করেন। আর, আমাকে আল্লাহর সৃষ্টির হেয় ব্যক্তি বলে ধারণা করেন। তিনি দুর-দূরান্তে প্রচার করেছেন যে, আমি বাস্তবে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, লুণ্ঠনকারী, লোভী, মিথ্যাবাদী, অপবাদকারী ও ঘৃণ্য ব্যক্তি। যদিও এসব কথার প্রতিক্রিয়া হয়নি। আমি এতে ধৈর্য ধারণ করেছি, কিন্তু আমি দেখছি যে, ছানাউল্লাহ এ সকল অপবাদ দ্বারা আমার দাওয়াতকে এবং আমার নির্মিত ইমারতকে ধ্বংস করতে চায়। তুমিই আমার প্রভু, তুমিই আমাকে প্রেরণ করেছ। এজন্য হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতার আঁচল ধরে তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি। আপনি আমার ও ছানাউল্লাহর মধ্যে ঠিক ফয়সালা করে দিন। আর, যে মিথ্যাবাদী ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী তাকে সত্যবাদীর জীবিতাবস্থায়ই ধ্বংস করে দিন। অথবা, তাকে মৃত্যু সমতুল্য বিপদে পতিত করুন। হে আমার প্রিয় প্রভু, আপনি এটাই করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
‘‘হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার কওমের মধ্যে সঠিক ফয়সালা করে দিন। আর আপনি হলেন উত্তম ফয়সালাকারী’’। (সুরা আল-আরাফ-৮৯)
পরিশেষে, আমি উস্তাদ ছানাউল্লাহর কাছে আশা করব, তিনি যেন, এ প্রচার পত্রটি তার ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। এরপর তার যা ইচ্ছা এর সাথে যুক্ত করতে পারেন। এখন ফয়সালা আল্লাহর হাতে ন্যস্ত। লেখক, আল্লাহুস সামাদ এর বান্দাহ গোলাম আহমদ আল মাসীহুল মাওউদ। আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুন এবং সাহায্য করুন।(গোলাম কাদিয়ানীর ঘোষণা যা ১৫ এপ্রিল ১৯০৭ খৃ: প্রচারিত এবং ‘তাবলীগে রেসালত’ ১০ খন্ড ১২০ পৃ: অন্তর্ভুক্ত, কাসেম কাদিয়ানী কর্তৃক সজ্জিত মাজমুয়াতু এলানাতিল গোলাম’।) এ দোআতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সত্যবাদীর জীবিতাবস্থায় মিথ্যাবাদীর মৃত্যু কামনা করে। অর্থাৎ যদি গোলাম আহমদ সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে তার জীবিতাবস্থায় শেখ ছানাউল্লাহ মৃত্যু বরণ করবেন। (আর, যদি শেখ ছানাউল্লাহ গোলাম আহমদকে মিথ্যুক বলার ক্ষেত্রে সত্যবাদী হয়ে থাকেন তা হলে তার জীবদ্দশায় গোলাম আহমদ মারা যাবে।) এ ঘোষণা ও দেয়ার দশ দিন পর গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পত্রিকায় প্রকাশ করল: ‘ছানাউল্লাহ সম্পর্কে য বলা হয়েছে তা আমার নিজের পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে। আজ রাতেই এ দোয়া সম্পর্কে আমার নিকট এলহাম হয়েছে- ‘উজিবু দাওয়াতাদ দায়ী’ এ এলহামের অর্থ হল এই যে, আমার প্রার্থনা গৃহীত হয়ে গেছে’। (কাদিয়ানী পত্রিকা ‘বদর’ ২৫ এপ্রিল ১৯০৭ খৃ: প্রকাশিত।) কার্যত: তার এ প্রার্থনা গৃহীত হয়ে যায়। এবং তার ও ছানাউল্লাহর মধ্যে সঠিক ফয়সালা হয়ে যায়। গণনা অনুযায়ী তিন মাস দশদিন পর আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও ফয়সালা এমন ভয়ানক আকারে তার কাছে পৌঁছোল, যা সে শ্রদ্ধেয় শেখ ছানাউল্লাহর জন্য আকাঙ্ক্ষা করছিল । হ্যাঁ, ঐ অবস্থায় এবং ঐ রোগেই সে আক্রান্ত হল। এর বিবরণের প্রতি পাঠক মহোদয়ের মনোযোগ আকর্ষণ করছি: গোলাম পুত্র ও কাদিয়ানীদের বিশিষ্ট নেতা বশীর আহমদ গোলামের জীবন বৃত্তান্তে লিখছে: আমার মা আমাকে বলেছেন, জনাবের (গোলামের) খাওয়ার পর পরই পায়খানায় যাওয়ার প্রয়োজন হল, এরপর একটু নিদ্রা গেলেন, আবার পায়খানায় যাবার প্রয়োজন হল। অতঃপর আমাকে অবহিত না করেই আরো দু এক বার গেলেন। তারপর আমাকে জাগালেন। তখন আমি দেখতে পেলাম যে তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এমনকি, তিনি তার খাট পর্যন্ত হেঁটে যেতে সক্ষম হন নি। এজন্য আমার খাটেই বসে পড়লেন। তখন আমি তার শরীর মলতে ও দাবাতে লাগলাম। একটু পরেই আবার পায়খানার প্রয়োজন অনুভব করলেন, কিন্তু এবার পায়খানায় যেতে না পেরে খাটের নিকটেই প্রয়োজন সেরে নিলেন। প্রয়োজন সেরে একটু বিশ্রাম নিলেন। অতঃপর বমি আসল। বমি করার পর চিৎ হয়ে পড়লেন। খাটের কাঠের সাথে তার মাথার টক্কর লাগে এবং তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। (গোলাম পুত্র বশীর আহমদের ‘সিরাতে মাহদী’ ১০৯ পৃ:) তার শ্বশুর লিখেছে: যে রাত্রে জনাব (গোলাম) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, সে রাত্রে আমি আমার কামরায় ঘুমিয়েছিলাম। যখন তার রোগের অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করল তখন গৃহের লোকজন আমাকে জাগাল, আমি তার নিকট গিয়ে তার কষ্ট দেখতে পেলাম। আমাকে তিনি এ বলে সম্বোধন করলেন: আমি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। অতঃপর, তিনি আর কোন কথা স্পষ্ট করে বলতে পারেন নি। এমনকি, পরদিন সকাল দশটার পর মারা যান। (গোলাম কাদিয়ানীর শ্বশুরের ‘হায়াতে নাসির’ ১৪ পৃ:।)
যখন কলেরায় আক্রান্ত হল তখন তার মৃত্যুর পূর্বে তার মুখ দিয়ে পায়খানা নির্গত হচ্ছিল। সে প্রয়োজন সারতে পায়খানায় বসা ছিল, এমতাবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে’’। অনুরূপভাবে মুহাম্মদ ইসমাঈল কাদিয়ানীর বর্ণনা কাদিয়ানী পত্রিকায় প্রচারিত হয়: ‘‘বিরুদ্ধবাদীরা বলে যে, মৃত্যু কালে মাসীহে মাওউদের মুখ দিয়ে পায়খানা বের হচ্ছিল। (মুহাম্মদ ইসমাঈলকাদিয়ানীর বর্ণনা কাদিয়ানী পত্রিকা ‘পয়গামে সুলাহ’ এর মধ্যে ৩রা মার্চ ১৯৩৯ খৃ:) মোটকথা, মৃত্যু আসল, কিন্তু কি অবস্থায় আসল? এমন অবস্থা যা শুনলেই প্রাণ শিহরিয়া উঠে। সে ২৬ মে ১৯০৮ খৃ: সকাল সাড়ে দশ ঘটিকায় মারা যায়। (কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল হিকম’ ২৮ মে ১৯০৮ খৃ: এবং ‘সীরতে মাহদী’ প্রভৃতি কাদিয়ানী পুস্তকাবলী।) মোটকথা, সে মারা যায় এবং ছানাউল্লাহ জীবিতই রইলেন । এমনকি তার মৃত্যুর পর প্রায় চল্লিশ বৎসর জীবিত থেকে কাদিয়ানীদের প্রাসাদ ধূলিসাৎ এবং তাদের মূলোৎপাটন করছিলেন। এমনিভাবে, আল্লাহ তা‘আলা এ মিথ্যাবাদীকে তার জীবনের শেষ মুহূর্তেও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছেন। দুনিয়াতে শাস্তি দিয়েছেন এবং পরকালে রয়েছে তার জন্য আরো কঠোর ও সবল শাস্তি। মহান আল্লাহ সত্যই বলেছেন- ‘‘ওর চেয়ে বড় জালিম আর কে? যে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে অথবা বলে: আমার উপর ওহী এসেছে, অথচ তার কাছে কোন ওহী আসেনি, এবং যে বলে আল্লাহ যেরূপ নাজিল করেছেন আমিও তদ্রুপ নাজিল করতে পারি। যদি আপনি দেখতে পেতেন! এ জালিমরা যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় পতিত হয়, আর, ফেরেস্তারা তাদের হস্ত সম্প্রসারণ করে বলে, তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে, কেননা, তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অসত্য কথা বলতে এবং অহংকার ভরে আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করতে’’। [১ সুরা আল আনআম-৯৩]
লক্ষণীয় বিষয়, ভন্ডনবী গোলাম লাহোরে মৃত্যু বরণ করে। তারপর তার লাশ কাদিয়ানে হস্তান্তরিত করা হয়। (‘সীরতুল মাহদী’ ‘হায়াতে নবী’ প্রভৃতি।) এভাবে তার মৃত্যুর পরেও সাব্যস্ত হয় যে, সে নবুয়তের দাবিতে মিথ্যাবাদী। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তাঁর নবীকে সেই স্থানেই মৃত্যুদান করেন, যেখানে তার সমাধিস্থ হওয়া আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। [২ তিরমিজী।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/699/8
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।