মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুহাম্মাদ ইবন সুলাইমান আল-জাযূলী প্রণীত ‘দালাইলুল খাইরাত’ কিতাবখানা ইসলামী বিশ্বে ব্যাপক প্রসারিত। বিশেষতঃ মসজিদসমূহে তা বিদ্যমান। মুসলিমগণ বেশি পরিমাণে তা পাঠ করে থাকেন। বরং কখনও তারা কুরআনের উপরে একে প্রধান্য দেন। আর জুমু‘আর দিনে তো কোনো কথাই নেই।
অর্থনৈতিক ও দুনিয়াবী স্বার্থের লোভে প্রকাশকগণ এর প্রকাশে মেতে ওঠেন। আখিরাতের যে ক্ষতি তাদের পাবে- সেদিকে তারা কোনো নজর দেন না। আমার কাছে যে কপিখানা আছে, তার কভারে লিখা আছে : “আল-হারামাইন প্রেস প্রকাশনা ও বিতরণ সিঙ্গাপুর, জিদ্দা।”
যদি কোনো বিবেকবান স্বীয় ধর্মীয় বিধি বিধানের সম্যক জ্ঞানী মুসলিম কিতাবখানার পাতা উল্টান, তাহলে তাতে শরী‘আত বিরোধী অনেক বড় বড় বিষয় দেখতে পাবেন। তন্মধ্যে বিশেষ কতিপয় বিরোধিতা নিম্নরূপ :
১- লেখক কিতাবখানার ভূমিকার ১২ পৃষ্ঠায় বলেন, “আমি সুমহান হযরতের সাহায্য প্রার্থনা করি....।” এর দ্বারা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করেন।
আমি বলি : এ কথাটি কুরআনুল কারীমের বিপরীত যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে সাহায্য কামনা জায়েয করে না। আল্লাহ তাঁর প্রজ্ঞাময় কিতাবে বলেন,
“অবশ্যই হ্যাঁ, যদি তোমরা সবর কর এবং তাকওয়া অবলম্বন থাকো! আর তারা যদি তখনই তোমাদের ওপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের রব চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফিরিশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১২৫] (সুতরাং সাহায্য কেবল আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে, রাসূলের কাছে নয়। [সম্পাদক])
অনুরূপভাবে ‘দালাইলুল খাইরাত’ কিতাবের উপরোক্ত কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীরও বিপরীত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا سألت فاسأل الله، وإذا استعنت فاستعن بالله»
“যখন তুমি প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই করবে। আর যখন কোনো বিষয়ে সাহায্য চাইবে, তখন আল্লাহর নিকটেই সাহায্য চাইবে।” [তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১৬ (হাসান সহীহ)।]
২- আবুল হাসান আশ-শাযলী নসর বলেন, তা ৭নং টীকায় লিখিত আছে :
يا هو، يا هو، يا هو، يا من بفضله نسألك العجل
“ওহে তিনি, ওহে তিনি, ওহে তিনি, ওহে যার অনুগ্রহ দ্বারা (কামনা করা হয়), আমরা তোমার নিকট দ্রুততা কামনা করি।”
আমি বলি : ‘তিনি’ শব্দটি আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং এটি একটি সর্বনাম যা তার পূর্ববর্তী শব্দের প্রতি প্রত্যাবর্তন করে। সে কারণ এর পূর্বে ( يا ) ‘হে’ সূচক অব্যয় দ্বারা আহ্বান করা জায়েয নয়। যেমনটি সূফীরা করে থাকে। এটি তাদের পক্ষ থেকে একটি বিদ‘আত। আল্লাহর নামসমূহে তারা এমন কিছু বাড়িয়ে থাকেন যা তাঁর (নামসমূহের) মধ্যে নেই।
৩- অতঃপর লেখক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন কিছু নাম ও গুণের কথা উল্লেখ করেন, যা আল্লাহ ব্যতীত কারো জন্য শোভা পায় না। এটি পরিস্কার যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতেই তাঁর নামসমূহের কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“নিশ্চয় আমার কতিপয় নাম রয়েছে : আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমদ, আমি মাহী অর্থাৎ আমি সেই ব্যক্তি যে, আমার দ্বারা আল্লাহ কুফুরী মিশিয়ে দেন। আর আমি আল-হাশির, অর্থাৎ আমি সেই ব্যক্তি যে, আমার পদদ্বয়ের উপর মানুষের হাশর ঘটানো হবে। আর আমি আল-আক্বিব। যার পরে আর কোনো (নবী) নেই। আর আল্লাহ তাঁর নাম রেখেছেন রা‘উফুর রাহীম।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫৪।]
আবূ মূসা আশ‘আরী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাঁর নিজর কতিপয় নাম জানালেন। অতঃপর তিনি বলেন,
৪- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামসমূহ যা ‘দালাইলুল খাইরাত’ কিতাবে লেখক উল্লেখ করেছেন, তা (উক্ত কিতাবের) ৩৭-৩৮ পৃষ্ঠা দ্রঃ। (আর তা হচ্ছে) মুইয়ি, মুনাজ্জি, নাসির, গাউস, গিয়াছ, সা-হিবুল ফারাজ, কাশিফুল কার্ব ও শাফী।” অর্থাৎ জীবনদাতা, নাজাতদাতা, সাহায্যকারী, ফরিয়াদ শ্রবণকারী, মুক্তিদাতা, বিপদ দূরকারী ও শেফাদাতা।”
আমি বলি : এই সকল নাম ও গুণাবলি আল্লাহ ছাড়া আর কারোর জন্য শোভা পায় না। অতএব, হায়াতদাতা, নাজাতদাতা, সাহায্যদাতা, আশ্রয়দাতা, রোগমুক্তিকারী বিপদ-আপদ দূরকারী ও মুক্তিদানকারী হলেন একমাত্র পবিত্র সত্তা আল্লাহ তা‘আলা। আল-কুরআন সে দিকেই নির্দেশনা দিয়েছে। ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের বাচনিক উদ্ধৃতি উল্লেখ করতঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। যিনি আমাকে আহার ও পানীয় দান করেন। আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনি আমাকে আরোগ্য দান করেন। যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, তিনিই আবার পূনর্জীবন দান করবেন।” [সূরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ৭৮-৮১]
আর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে বলে দেওয়ার জন্য তার রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আদেশ করেন:
“বলুন! আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ-ই একমাত্র একক ইলাহ।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০]
আমি বলি : ‘দালাইলুল খাইরাত’ প্রণেতা কুরআনের খেলাফ করেছেন এবং আসমা ও সিফাতের বেলায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সমান করে দেখেছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা থেকে মুক্ত। যদি তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা শুনতেন, তাহলে এর প্রবক্তাকে শির্কে আকবর তথা বড় শির্ককারী হিসেবে হুকুম দিতেন।
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আগমন করে তাঁকে বলল :
ما شاء الله وشئت
“আল্লাহ যা চান এবং আপনিও যা চান।” তখনই লোকটিকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করেছে? বল! আল্লাহ এককভাবে যা চান।” [নাসাঈ (সনদ হাসান)।]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“মারইয়াম তনয় ঈসাকে নিয়ে খৃস্টানরা যেভাবে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে বাড়াবাড়ি করো না। আমি তো কেবল একজন বান্দা। অতএব, তোমরা বল: আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪৫।]
এখানে বাড়াবাড়ি দ্বারা উদ্দেশ্য প্রশংসার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা। আর কিতাব ও সুন্নাতে যা বর্ণিত হয়েছে সেই আলোকে প্রশংসা করা বৈধ।
৫- অতঃপর লেখক স্বীয় গ্রন্থের ৪১-৪২ পৃষ্ঠায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো কিছু নাম উল্লেখ করেছেন। যেমন, মুহাইমিন, জব্বার ও রূহুল কুদুস। অথচ রাসূলের জন্য এ ধরনের সিফাত কুরআন অস্বীকার করে।
কুরআনে তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্বোধন করে বলা হয়েছে :
“বলুন! একে ‘রূহুল কুদুস’ তথা পবিত্র ফিরিশতা তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্যসহ নাযিল করেছেন।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১০২]
৬- অতঃপর গ্রন্থ প্রণেতা এমন কিছু গুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা রাসূল তো দূরের কথা এ কাজ মুসলিমকেও শোভা পায় না। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন শ্রেষ্ঠ মানুষ। লেখক রাসূলের নাম ও গুণ সম্পর্কে বলেন, উহাইদ, আজীর ও জারছুমা। [দালাইলুল খাইরাত/৭৭-১১৫।]
গ্রন্থের শুরুতে লেখক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঊলুহিয়্যাতের দরজায় পৌঁছে দিলেন। যেমন, মুইয়ি, নাসির, শাফি ও মুনজি ইত্যাদি গুণ বৈশিষ্ট্য যা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। আর এখানে এসে রাসূলকে নিকৃষ্ট জীবাণু ও ভাড়াটে পর্যায়ে নামিয়ে দিলেন- নাউযুবিল্লাহ। এ ধরনের হীন কথায় দেহ কেঁপে যায় ও মন শিউরে ওঠে। মানুষের কাছে তা বিদিত যে, সেটি (জরছুমা) হচ্ছে ক্ষতিকর মিল রোগের ন্যায় একটি জীবাণু, যা প্রতিষেধকের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে একেবারেই পবিত্র ও মুক্ত। তিনি তো উম্মতের কল্যাণ করেছেন। রিসালাতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন এবং তিনি তাঁর শিক্ষা দ্বারা মানুষকে যুলুম, শির্ক ও বিভক্তি থেকে উদ্ধার করে ন্যায় নিষ্ঠা ও তাওহীদের প্রতি পরিচালিত করেছেন। আর যদি জীবাণু দ্বারা তিনি মূল কারণও উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন, তবুও তা সঠিক নয়।
৭- অতঃপর এ অবান্তর কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য এমন মিথ্যা সিফাত সাব্যস্ত করতে ফিরে এসেছেন যাতে রয়েছে এমন শির্ক, যা আমল বাতিল করে দেয়। তিনি তার কিতাবের ৯০ পৃষ্ঠায় বলেন,
اللهم صل على من تفتقت من نوره الأزهار، واخضرت من بقية ماء وضوءه الأشجار .
“হে আল্লাহ! ঐ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যার নূরে ফুলসমূহ সুশোভিত হয়ে উঠেছে এবং তাঁর অযুর অবশিষ্ট পানি দ্বারা সবুজ শ্যামল হয়ে উঠেছে বৃক্ষরাজি।”
অথচ মহান আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন বৃক্ষরাজি। আর তিনি তার ফুলসমূহ করেছেন সুশোভিত ও তাতে সবুজ রঙ দান করেছেন।
৮- অতঃপর গ্রন্থের ১০০ পৃষ্ঠায় বলেন, সকল কিছুর অস্তিত্বের মূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যদি তিনি তদ্বারা উদ্দেশ্য করেন- সকল অস্তিত্ব সম্পন্ন বিষয়াদি আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাহলে তা মিথ্যা। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,
“আমি জিন্ন এবং ইনসান জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]
৯- অতঃপর গ্রন্থের ১৮৯ পৃষ্ঠায় লেখক বলেন,
اللهم صل على محمد ما سجعت الحمائم، وحمت الحوائم، وسرحت البهائم، ونفعت التمائم .
“হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ-এর প্রতি কবুতর ঝাঁকের বাকুম বাকুম ডাকের, ঘুরঘুরকারী পাখীসমূহ ডিমের তা প্রদান, চতুষ্পদ জন্তুর বিচরণশীলতা ও তাবিজ-তুমারের উপকার পরিমাণ শান্তিধারা বর্ষণ করুন।”
এ ধরনের কথাগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর বিরোধী। যেখানে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাবিজ-ক্ববজ থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
«من تعلق تميمة فقد أشرك»
“যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলালো, সে শির্ক করলো।” [আহমদ, সহীহ।]
আর তামিমাহ বা তাবিজ বলা হয় কু-দৃষ্টি প্রতিরোধের জন্য পশুর চামড়া বা কাগজের টুকরা ইত্যাদির ন্যায় যা কিছু সন্তানের শরীরে গাড়ি অথবা বাড়িতে লটকানো হয়। সেটি শির্কের অন্তর্গত। আর লেখকের কথা কুরআনের বিপরীত। কুরআন বলে : উপকার করা বা ক্ষতি সাধন করা আল্লাহর তরফ থেকে হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৭]
১০- ‘দালাইলুল খাইরাত’ গ্রন্থ প্রণেতা আল-জাযুলী আরও বলেন,
اللهم صل على محمد حتى لا يبقى من الصلاة شيء، وارحم محمدا حتى لا يبقى من الرحمة شيئ، وبارك على محمد حتى لا يبقى من البركة شيء، وسلم على محمد حتى لا يبقى من السلام شيء .
“হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের প্রতি এমনভাবে সালাত পেশ কর, যাতে সালাতের কিছু অবশিষ্ট না থাকে। মুহাম্মাদের প্রতি এমনভাবে রহমত নাযিল কর, যাতে রহমতের কিছু অবশিষ্ট না থাকে। মুহাম্মাদের প্রতি এমন বরকত দাও, যাতে বরকতের কিছু বাকি না থাকে। আর মুহাম্মাদের প্রতি এমন সালাম/শান্তিধারা বর্ষণ কর, যাতে শান্তিধারার কিছুই বাকি না থাকে।” [ঐ ৬৮ পৃষ্ঠা।]
এটা ভ্রান্ত কথা; যা কুরআনের খেলাফ। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“বলুন! আমার রবের কথা লিখার জন্য যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগে সে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে। যদিও আমরা এনে দেই অনুরূপ আরো একটি সমুদ্র।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১০৯]
১১- গ্রন্থের শেষে গ্রন্থকার সালাতুল মাশিশিয়া নামে এক প্রকার দুরূদ-এর কথা উল্লেখ করেন, যা ২৫৯-২৬০ পৃষ্ঠার টীকায় রয়েছে। এর উদ্ধৃতি এই :
اللهم صل على من منه إنشقت الأسرار، وانفلقت الانوار، وفيه ارتقت الحقائق ..... ولا شيء إلا هو به منوط إذا لولا الواسطة لذهب كما قيل الموسوط .
“হে আল্লাহ! ঐ নবীর প্রতি শান্তিধারা বর্ষণ করুন, যার অনুগ্রহে গোপন রহস্যসমূহ বিদীর্ণ হয়েছে। আলোসমূহ উদ্ভাসিত হয়েছে এবং সত্যসমূহ পূর্ণতা লাভ করেছে। তিনি (রাসূল) ব্যতীত কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। আর (আল্লাহ) তাঁর ওপর নির্ভরশীল। যদি তাঁর মাধ্যম না হতো, তাহলে যেমন বলা হয় যার (নিকট পৌঁছার) জন্য মাধ্যম স্থির করা হয়, সে বিলীন হয়ে যেত।”
আমি বলি: প্রথমাংশের কথাটি বাতিল। আর শেষাংশটি জ্ঞানহীনের প্রলাপ। অতঃপর গ্রন্থের ২৬ পৃষ্ঠায় এই দো‘আর অবশিষ্টাংশে বলেন,
وزج بي في بحار الأحدية، وانشلني من أوحال التوحيد، وأغرقني في عين بحر الوحدة، حتي لا أرى ولا أسمع ولا أحس إلا بها .
“আমাকে একত্বের সাগরে ভাসিয়ে দাও। আমাকে তাওহীদের ময়লা-আবর্জনা থেকে উঠিয়ে নাও এবং আমাকে একত্বের সমুদ্র ঝরণায় ডুবিয়ে দাও! যেন আমি তা ব্যতীত আর কিছু না দেখি, না শুনি ও না অনুভব করি।”
লক্ষ্য করুন হে মুসলিম ভাই! এ দো‘আতে দু’টি বিষয় রয়েছে :
এক- তার কথা (আমাকে তাওহীদের ময়লা থেকে উঠিয়ে নাও!) তবে কি তাওহীদের ময়লা-আবর্জনা আছে? নিশ্চয় ইবাদত ও দো‘আয় আল্লাহর তাওহীদ পরিচ্ছন্ন তাতে কোনো প্রকার ময়লা ও আবর্জনা নেই। যেমনটি ইবন মাশীশ ধারণা করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে নবী অথবা ওলীদের ন্যায় গাইরুল্লাহর নিকট দো‘আ চাওয়ার মাঝে কদর্য ও ময়লা রয়েছে। আর এটিই শির্কে আকবার তথা বড় শির্কের অন্তর্গত। যা আমল পণ্ড করে এবং সম্পাদনকারীকে চির জাহান্নামী করে দেয়।
দুই- তার কথা : (আমাকে নিয়ে একত্বের সাগরে ভাসিয়ে দাও। আর আমাকে একত্বের সমুদ্র ঝরণায় ডুবিয়ে দাও!)
এটি এক শ্রেণির সূফীদের অদ্বৈতবাদী বিশ্বাস। যা তাদের পুরোধা দামেস্কে সমাহিত ইবন আরাবী তার ‘আল-ফুতুহাত আল-মাক্কিয়্যাহ’ গ্রন্থে ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন,
العبد رب والرب عبــد يا ليت شعري مـــن المكلف؟
إن قلت عبد فذاك حق أو قلت رب فاني رب يكلف؟
“বান্দাই রব, আর রবই বান্দা, আহা যদি জানতাম কে মুকাল্লাফ (শরী‘আতের নির্দেশ মানতে বাধ্য)? যদি বলি বান্দা, তাহলে তা-ই সত্য। অথবা যদি বলি রব, তবে কোথায় সে রব যে মুকাল্লাফ (আদেশ পালনের জন্য বলা) হবে?””
লক্ষ্য করুন! কীভাবে সে বান্দাকে রব আর রবকে বান্দা স্থির করল? ইবন আরাবী ও ইবন মাশীশ-এর (সূফীদ্বয়ের) নিকট রব ও বান্দা উভয়ই সমান। যা ‘দালাইলুল খাইরাত’ গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছে।
“হে আল্লাহ! আপনি (মুহাম্মাদ-এর) ওপর সালাত পেশ করুন, যিনি মেঘমালা বিদূরণকারী, আঁধারকে আলোকময়কারী, নি‘আমতের মালিক ও রহমতদাতা।”
আমি বলি: এটি প্রশংসার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি, যা ইসলাম মেনে নেবে না।
১৩- আলী ইবন সুলতান মুহাম্মাদ আলক্বারী (সূফী) স্বীয় ‘আল-হিযবুল আজম’ নামীয় কাব্যগুচ্ছে (যা ‘দালাইলুল খাইরাত/১৫-এর টীকায় ছাপা আছে) বলেন,
اللهم صل على سيدنا محمد السابق للخلق نوره .
“হে আল্লাহ! আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি শান্তিধারা বর্ষণ করুন, যার নূর সৃষ্টির অগ্রবর্তী।”
আমি বলি: এটি বাতিল কথা। নিম্নোক্ত হাদীসটি একে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। হাদীসে বর্ণিত হচ্ছে :
«إن أول ما خلق الله القلم»
“নিশ্চয় আল্লাহ সর্বপ্রথম ক্বলব সৃষ্টি করেন।” [আহমদ, (আলবানী সহীহ বলেছেন)।]
পক্ষান্তরে “সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন হে জাবের!” হাদীসখানা মুহাদ্দিসদের নিকট মিথ্যা, বানোয়াট ও বাতিল।
১৪- ‘দালাইলুল খাইরাত’ গ্রন্থের কোনো কোনো সংখ্যার শেষ ক্বাসীদা/কবিতায় এসেছে :
يا أبى خليل شيخنا وملاذنا قطب الزمان هو المسمى محمد
“হে বাবা! গুরুধন কুতুবে যমান
তিনি তো গুরু মুহাম্মাদ আমাদের আশ্রয়স্থান।”
কবি বলেন, নিশ্চয় সে তার সূফী শাইখ মুহাম্মাদের কাছে আশ্রয় চায় ও বিপদ-আপদে তাঁরই দিকে সে প্রত্যাবর্তন করে। আর তা সুস্পষ্ট শির্ক। কেননা মুসলিম আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে না এবং বিপদে কারোর দিকে প্রত্যাবর্তন করে না। নিসন্দেহে আল্লাহ চিরঞ্জীব ও ক্ষমতাবান। পক্ষান্তরে তা (ঐ কবির) সূফী শাইখ মৃত অক্ষম; কোনো উপকার সাধন ও ক্ষতি করতে পারেন না।
সে এও ধারণা করে যে, তার শাইখ ‘কুতুবুয যামান’। এটা সূফীদের বিশ্বাস। তারা বলেন, পৃথিবীতে কতক কুতুব আছেন, তারা পৃথিবীর বিষয়াদি আবর্তন-বিবর্তন ঘটান। এমনকি (এই সূফীরা) তাদের কুতুবদের পৃথিবী নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। অথচ পূর্ব যুগের মুশরিকরা পর্যন্ত এই বিশ্বাস পোষণ করত যে, পৃথিবীর নিয়ন্ত্রক/পরিচালক একমাত্র আল্লাহ।
“বলুন! আসমান ও যমীন থেকে কে তোমাদেরকে রুযী দান করে অথবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তাছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভিতর থেকে এবং মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন। আর কে কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থা করেন? তখন তারা বলে উঠবে : আল্লাহ।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩১]
১৫- ‘দালাইলুল খাইরাত’ গ্রন্থে সহীহ দো‘আও বর্ণিত আছে। তবে তাতে বিদ্যমান পূর্বোল্লিখিত বড় বড় ধ্বংসাত্মক (আকীদা-বিশ্বাস) পাঠকের আকীদায় বিপর্যয় ঘটিয়ে দেবে। যদি সে তা বিশ্বাস করে। কাজেই সঠিক দো‘আসমূহ তার উপকারে আসতে পারে এমনটি ভাবা যায় না। আর কিতাবে তো অনেক অনেক ভুলভ্রান্তি আছে। কেউ যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে উস্তাদ মুহাম্মাদ মাহদী ইস্তাম্বুলী প্রণীত ‘কুতুবুন লাইসাত মিনাল ইসলাম’ গ্রন্থখানা পাঠ করে দেখতে পারেন। সে গ্রন্থটিতে তিনি ‘দালাইলুল খাইরাত’ ক্বাসীদায়ে বুরদাহ, মাওলিদুল আরূস, ত্বাবাকাতুল আউলিয়া লিশ শা‘রাণী ও তাইয়্যাতু ইবনিল ফারিদ্ব, আনওয়ারুল কুদসিয়্যাহ, আত-তানভির ইসকাতি তাদবীর, মি‘রাজ ইবন আব্বাস ও আল-হিকামু লি ইবন আতাউল্লাহ আল-ইস্কান্দরী ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ যা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে লেখক চেয়েছেন। কেননা তাতে মুসলিমদের আকীদায় ক্ষতিকর প্রভাবকারী এমন সব বিষয় আছে।
১৬- হে মুসলিম ভাই! এসব কিতাব পাঠ থেকে বিরত হোন। আপনি শাইখ ইসমাঈল আল-ক্বাজী প্রণীত ও মুহাদ্দিস আলবানী কর্তৃক তাহকীককৃত, ফযলুস সালাত আলান নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিতাবখানা পাঠ করুন। অনুরূপভাবে খাইরুদ্দীন ওয়ায়িলী প্রণীত ‘দলীলুল খাইরাত’ নামক একটি নতুন কিতাব রয়েছে। সেখানে লিখক বিশুদ্ধ দুরূদ ও দো‘আসমূহ সংকলন করেছেন। ‘দালাইলুল খাইরাত’ যা আপনাকে শির্ক ও গুনাহে পতিত করবে- তা থেকে আপনার জন্য এটিই যথেষ্ট হবে।
اللهم أرنا الحق وارزقنا اتباعه وحببنا فيه وأرنا الباطل باطلا وارزقنا اجتنابه وكرهنا فيه وصلى الله على محمد وعلى آله وسلم .
সমাপ্ত
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/710/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।