HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সূফীবাদ কুরআন ও সুন্নাহ-এর মানদণ্ডে

লেখকঃ মুহাম্মাদ জামীল যাইনূ

সূফীবাদের তত্ত্বকথা
সূফীবাদ ইসলামী বিশ্বে প্রসার লাভ করেছে। আর মানুষেরা এর সাহায্যকারী কিংবা প্রতিরোধকারী দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কাজেই মুসলিম কীভাবে ‘হক’ চিনবে? সে কি সূফীদের সাহয্যকারী দলের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তাদের সাথেই চলবে? নাকি সে সূফীদের প্রতিরোধকারীদের একজন হবে এবং তাদেরকে বর্জন করে চলবে? (এই দ্বন্দ্ব নিরসনে) অবশ্যই কিতাব ও সহীহ সুন্নাহের দিকে ফিরে যেতে হবে, যাতে তদ্বিষয়ে সঠিক তথ্য অবগত হওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ﴾ [ النساء : ٥٩ ]

“অতঃপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্বে পতিত হও, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈদের যুগে ইসলাম সূফীবাদের নামও জানত না। অতঃপর একদল সাধক শ্রেণির আবির্ভাব ঘটল। আর তারা পশমী [ الصوف ‘আস-সৌফ’ থেকে সূফী শব্দটির উৎপত্তি। আর ‘সৌফ’ বলা হয় পশমী কাপড়কে। হিন্দুদের যোগী-সন্যাসীদের ন্যায় মুসলিমদের এক শ্রেণির সৌফ বা পশমী কাপড় পরে নিজেদের সাধু হিসেবে পরিচয় দিতে লাগে। তখন থেকেই ইসলাম বিকৃতকারী এই ধরণের সন্যাসীদের সূফী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বর্তমানে তা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় আকীদায় পরিণত হয়েছে। -অনুবাদক।] কাপড় পরিধান করল। তখন থেকে তাদের উপর এই নাম প্রসার লাভ করল।

কেউ কেউ বলেন, সূফী কথাটি ( الصوفيا ) ‘সূফিয়া’ শব্দ থেকে গৃহীত। যার অর্থ: হিকমত বা কৌশল। যখন ইউনানী (গ্রীক) দর্শন শাস্ত্রাবলীর অনুবাদ হয় (তখন থেকেই এই শব্দের প্রয়োগ হয়)। সূফীদের কেউ কেউ এও ধারণা করে থাকতেন যে, তা ‘সাফা’ ( الصفاء ) শব্দ থেকে চয়নকৃত; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা নয়। কেননা ( الصفاء ) শব্দটির প্রতি সম্বন্ধ করলে ( صفائى ) ‘সফাঈ’ হয়, সূফী হয় না। যেমন আবুল হাসান নদভী স্বীয় কিতাব ( ربانية لا رهبانية )-এ বলেন, আহা তারা যদি সূফী না বলে ‘তাযকিয়া’ বা “আত্মশুদ্ধি” কথাটি বলত, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُزَكِّيهِمۡ﴾ [ البقرة : ١٢٩ ]

“আর তিনি তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং পবিত্র করবেন (আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটাবেন)।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১২৯]

কাজেই এই নতুন নামের প্রকাশ মুসলিমদের মাঝে একটি ফিরকা (ফিতনা) মাত্র। তাছাড়া প্রথম যুগের সূফীদের থেকে শেষ যুগের সূফীরা অনেকাংশেই ভিন্ন। তাদের মাঝে এমন অনেক বিদ‘আতের প্রচলন ঘটেছে, যা এর পূর্বে ছিল না। তা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»

“তোমরা নবাবিষ্কৃত বিষয়াবলী থেকে সাবধান! কেননা সকল নবাবিষ্কৃত বিষয়ই বিদ‘আত। আর সকল বিদ‘আতের পরিণাম ভ্রষ্টতা।” [তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।]

ন্যায়-বিচার এই যে, আমরা সূফীবাদের শিক্ষাকে ইসলামের মানদণ্ডে ফেলব, যেন দেখতে পাই- তা ইসলামের কতখানি নিকটে অথবা কতখানি দূরে :

১- সূফীবাদের একাধিক ত্বরীকা রয়েছে। যেমন, তিজানিয়্যাহ, কাদেরীয়্যাহ, নাক্‌শবান্দীয়্যাহ, শাযলীয়্যাহ, রিফা‘ঈয়্যাহ ইত্যাদি। অনেক পথ, যাদের প্রত্যেকটি ‘হক’-এর ওপর আছে বলে দাবী করে এবং অন্যটিকে বাতিল জানে। অথচ ইসলাম দলবিভক্তি থেকে নিষেধ করে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَكُونُواْ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٣١ مِنَ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗاۖ كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٣٢﴾ [ الروم : ٣١، ٣٢ ]

“আর তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩১-৩২]

২- সূফীরা আল্লাহ ছাড়া নবী, ওলী ও জীবিত, মৃতদেরকে আহ্বান করে থাকে। তারা বলে, হে জীলানী! হে রিফা‘ঈ! হে ফরিয়াদ শ্রবণকারী আল্লাহর রাসূল! আপনি সাহায্য করুন। হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার ওপর ভরসাকারী। অথচ আল্লাহ অন্যকে আহ্বান করতে (অন্যের কাছে দো‘আ করতে) নিষেধ করেছেন। বরং একে শির্ক হিসেবে গণ্য করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦﴾ [ يونس : ١٠٦ ]

“আর আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডেকো না, যে তোমার ভালো করবে না এবং মন্দও করবে না। বস্তুত তুমি যদি এমনটি কর, তাহলে তুমিও (তখন) যালিমদের [আয়াতে উল্লিখিত, ( الظالمين ) দ্বারা ( المشركين ) বা মুশরিক জনতা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তুমি যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকো, তাহলে তখন তুমিও মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।] অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الدعاء هو العبادة» .

“দো‘আই ইবাদত।” (তিরমিযী, তিনি হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।

অতএব, সালাত যেমন ইবাদত দো‘আও অনুরূপ একটি ইবাদত। আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ডাকা জায়েয নয়, যদিও রাসূল বা ওলী হোন। আর তা শির্কে আকবর (বড় শির্ক)-এর একটি, যা আমল বাতিল করে দেয় এবং তাকে (মুশরিককে) চির জাহান্নামী করে।

৩- সূফীরা এই বিশ্বাস করে যে, তথায় আবদাল, কুতুব ও ওলী আউলিয়া রয়েছেন, যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা বিবিধ কর্ম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। অথচ পূর্বকালের মুশরিকরাও এ ধরনের জঘন্য শির্ক করতো না। জিজ্ঞাসাকালে প্রদত্ত আরবের মুশরিকদের জবাবের বিবরণ দিয়ে আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَن يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۚ فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُ﴾ [ يونس : ٣١ ]

“আর কে কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থা করেন? তখন তারা জবাবে বলবে, আল্লাহ।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৩]

আর সূফীরা বিপদ-মুসীবত আপতিত হলে আল্লাহ ছাড়া অন্যের আশ্রয় চেয়ে থাকেন। অথচ আল্লাহ বলেন,

﴿وَإِن يَمۡسَسۡكَ ٱللَّهُ بِضُرّٖ فَلَا كَاشِفَ لَهُۥٓ إِلَّا هُوَۖ وَإِن يَمۡسَسۡكَ بِخَيۡرٖ فَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٧﴾ [ الانعام : ١٧ ]

“আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো কষ্ট (ক্ষতি) দেন, তাহলে তিনি ব্যতীত তা অপসারণকারী কেউ নেই। পক্ষান্তরে তিনি যদি তোমার মঙ্গল করেন, তবে তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৭]

জাহেলী যুগে মুশরিকদের ওপর আপতিত বিপদ-মুসীবতের সময় তাদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে আল্লাহ বলেন,

﴿ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ ٱلضُّرُّ فَإِلَيۡهِ تَجۡ‍َٔرُونَ﴾ [ النحل : ٥٣ ]

“অতঃপর যখন তোমরা দুখ-কষ্টে পতিত হও, তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৩]

৪- সূফীদের এক শ্রেণি অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী। তাদের নিকট স্রষ্টা ও সৃষ্টি (খালেক ও মাখলুক) বলতে কিছু নেই। সবই সৃষ্টি সবই ‘ইলাহ’। এদের পুরোধা হচ্ছে সিরিয়ার দামেস্ক-এ সমাহিত ‘ইবন আরাবী’। সে বলে:

العبد رب والرب عبـــد يــا ليت شعري من المكلــف؟

إن قلت عبد فذاك حـــق أو قلت رب فأنَّى رب يكلف؟

“বান্দাই রব, আর রবই বান্দা, আহা যদি জানতাম কে মুকাল্লাফ (শরী‘আতের নির্দেশ মানতে বাধ্য)? যদি বলি বান্দা, তাহলে তা-ই সত্য। অথবা যদি বলি রব, তবে কোথায় সে রব যে মুকাল্লাফ (আদেশ পালনের জন্য বলা) হবে?” [আল-ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ লি ইবন আরাবী।]

৫- সূফীবাদ দুনিয়ার যাবতীয় উপায়-উপকরণ অবলম্বন ও আল্লাহর পথে জিহাদ ছেড়ে দিতে ও বৈরাগ্যতার পথে বেছে নিতে আহ্বান জানায়। অথচ মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَا﴾ [ القصص : ٧٧ ]

“আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তা দ্বারা পরকালের গৃহ অবলম্বন অনুসন্ধান কর এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না।” [সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭৭]

(আল্লাহ আরো বলেন,)

﴿وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن قُوَّةٖ﴾ [ الانفال : ٦٠ ]

“তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৬০]

৬- সূফীরা তাদের পীরদের (ধর্মগরু) কে ‘ইহসানের’ মঞ্জিল দিয়ে থাকে এবং আল্লাহর যিকরকালে তাদের পীর ও মুরব্বীদের ছবি কল্পনায় নিয়ে আসার জন্য (অনুসারী) সূফীদের প্রতি আহ্বান জানায়। এমনকি সালাত আদায়ের সময়েও (তারা তাদের পীরদেরকে সামনে কল্পনা করে। তাদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করে।) আমার নিকটে এক লোক ছিল, তাকে তার পীরের ছবি সালাতের সামনে রাখতে দেখেছি। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الإحسان أن تعبد الله كأنك تراه، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»

“ইহসান হচ্ছে- আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তুমি তাঁকে না দেখ, তাহলে (এই বিশ্বাস ষোল আনা রাখবে যে) তিনি তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮।]

৭- সূফীবাদ এই দাবী করে থাকে যে, আল্লাহর ইবাদত তাঁর জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে কিংবা জান্নাতের লোভে করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে তারা রাবে‘আহ আল-আদভীয়্যাহ-এর নিম্নোক্ত কথামালা দ্বারা দলীল হিসেবে সাক্ষ্য গ্রহণ করে:

اللهم إن كنت أعبدك خوفا من نارك فأحرقني فيها وإن كنت أعبد طمعا في جنتك فاحرمني منها .

“হে আল্লাহ! যদি তোমার জাহান্নামের আগুনের ভয়ে তোমার ইবাদত করে থাকি, তাহলে তুমি তাতে আমাকে পুড়িয়ে মার। আর যদি তোমার জান্নাতের আশায় তোমার ইবাদত করে থাকি, তাহলে আমাকে তুমি তা থেকে বঞ্চিত কর।”

আপনি শুনে থাকবেন যে, তারা আবদুল গনী আল-নাবলুসী-এর নিম্নোক্ত বাক্য দ্বারা কবিতা আবৃতি করে:

من كان يعبد الله خوفا من ناره فقد عبد النار ومن عبد الله طلبا للجنة فقد عبد الوثن .

“যে বক্তি আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর অগ্নির (জাহান্নামের) ভয়ে সে যেন আগুনেরই ইবাদত করল। আর যে ব্যক্তি জান্নাতের প্রার্থনায় আল্লাহর ইবাদত করল, সে যেন মূর্তির ইবাদত করল।”

অথচ মহান আল্লাহ নবীদের প্রশংসা করেন, যারা তাঁকে ডাকত তাঁর জান্নাত কামনা করে ও তাঁর আযাবকে ভয় করে। তিনি বলেন,

﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗا﴾ [ الانبياء : ٩٠ ]

“তারা সৎ কর্মে ঝাপিয়ে পড়ত। তারা আশা ভীতি [অর্থাৎ নবীগণ জান্নাতের আশায় ও জাহান্নামের ভয়ে আল্লাহকে ডাকতেন। আল্লাহ তাদের ডাক পছন্দ করেন ও তাদের প্রশংসা করেন। অথচ সূফীরা তার উল্টা বিশ্বাস করে থাকে।] সহকারে আমাকে ডাকত।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯০]

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলে কারীমকে সম্বোধন করে বলেন,

﴿قُلۡ إِنِّيٓ أَخَافُ إِنۡ عَصَيۡتُ رَبِّي عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ١٥﴾ [ الانعام : ١٥ ]

“আপনি বলুন! আমি আমার রবের অবাধ্য হতে ভয় পাই। কেননা আমি একটি মহা দিবসের শাস্তিকে ভয় করি।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫]

৮- অনেক সূফীবাদীরা ঢোল-বাদ্য বাজনা ও উচ্চস্বরে আল্লাহর যিকির করাকে বৈধ মনে করেন। অথচ মহান আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ﴾ [ الانفال :٢]

“মুমিন তো তারাই, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তর ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২]

তাছাড়া আপনি আরও দেখবেন, তারা ‘আল্লাহ’ শব্দের যিকির করে। এমন কি শেষ পর্যন্ত (আল্লাহ শব্দ ছেড়ে দিয়ে) আহ, আহ শব্দে পৌঁছে যায়। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أفضل الذكر لا إله إلا الله»

“সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোনো (হক) ইলাহ নেই- এই পুরো কালেমা। আর যিকির ও দো‘আর বেলায় তা উচ্চস্বরে করা আল্লাহর বাণী দ্বারা নিষেধ। অর্থাৎ চেচামেচি করে দো‘আ করা নিষেধ। আল্লাহ বলেন,

﴿ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةً﴾ [ الاعراف : ٥٥ ]

“তোমরা স্বীয় রবকে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৫]

সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম উচ্চস্বরে আল্লাহকে ডাকতেন। তা শুনতে পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,

«أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، إِنَّكُمْ لَيْسَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّكُمْ تَدْعُونَ سَمِيعًا قَرِيبًا، وَهُوَ مَعَكُمْ»

“হে মানবমণ্ডলী! তোমরা নিজেদের উপর দয়াবান হও। তোমরা কোনো বধীর ও গায়েব সত্তাকে ডাকছ না; বরং তোমরা তো অতি শ্রবণকারী-নিকটে থাকা সত্তাকে ডাকছ- যিনি তোমাদের সাথে আছেন। অর্থাৎ তিনি তাঁর শ্রবণশক্তি ও জ্ঞান নিয়ে তোমাদের সাথে আছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৪।]

৯- সূফীরা মদ ও নিশাযুক্ত দ্রব্যের নাম নিয়ে থাকে। ইবনুল ফারিদ্ব নামীয় জনৈক সূফী কবি বলেন,

شربنا على ذكر الحبيب مدامة

سكرنا بها من قبل أن يخلق الكرم

“প্রিয়তমের স্মরণে আমরা মুদামা নামীয় সরাব পান করলাম আর সম্মানিত সত্তার সৃষ্টির পূর্বে তদ্বারা আমরা নিশাযুক্ত হলাম।”

আমি তাদেরকে মুসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি-

هات كأس الراح واسقنا الأقداح

“রাহ্‌ নামক মদের গ্লাস দাও, আর আমাদেরকে পেয়ালা পেয়ালা ভরে পান করাও!”

আমি বলি, যে আল্লাহর ঘর আল্লাহর যিকির-এর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে হারাম মদ-এর নাম নিতে সূফীরা লজ্জা করে না? অথচ মহান আল্লাহ বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠﴾ [ المائ‍دة : ٩٠ ]

“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ- এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো- যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]

১০- সূফীরা যিকির-এর মজলিসে নারী ও বালকদের আসক্তি, প্রবৃত্তি এবং লাইলা- সু‘আদ এতদ্ভিন্ন প্রেমিকার নাম জপ্‌ করতে থাকে। মনে হয় তারা যেন গানের আসরে আছে। যেখানে আছে বাজনা, মদের আলোচনা, হাততালি ও চেচামেচি। আর তা সুবিদিত যে, ‘হাত তালিতো মুশরিকদের ইবাদত ও তাদের অভ্যাসের অন্তর্গত। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمۡ عِندَ ٱلۡبَيۡتِ إِلَّا مُكَآءٗ وَتَصۡدِيَةٗ﴾ [ الانفال : ٣٥ ]

“আর কা‘বার নিকট তাদের সালাত বলতে শিস দেওয়া আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোনো কিছুই ছিল না।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৫]

১১- সূফীরা যিকির-এর সময় বিভিন্ন ধরনের বাজনা ব্যবহার করে, যা শয়তানের গীত। একদা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার কন্যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার গৃহে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন তার নিকট দু’টি বালিকা দফ বাজাচ্ছে। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, শয়তানের গীত, শয়তানের গীত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন: হে আবু বকর! এদেরকে ছেড়ে দাও। কেননা তারা তো ঈদের দিনে আছে।”

আবু বকর-এর কথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায় দিলেন বটে; কিন্তু তাকে এই মর্মে সংবাদ দিলেন যে, বালিকাদের জন্য ঈদের দিনে এর অবকাশ রয়েছে। তবে সাহাবী ও তাবেঈন থেকে দফ ব্যবহারের কোনো প্রমাণ মিলে না; বরং তা সূফীদের সেই বিদ‘আতী কার্যক্রমের অন্তর্গত, যা থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,

«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»

“কেউ এমন কোনো কাজ করল, যাতে আমাদের কোনো নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।]

১২- কোনো কোনো সূফীরা লোহার খণ্ডাংশ দ্বারা নিজেদের দেহে প্রহার করে আর বলে: হে অমুক! অতঃপর শয়তানরা তার কাছে সহযোগিতার জন্য আসে। কেননা সেতো গাইরুল্লাহ নামে সাহায্য প্রার্থনা করেছে। এ সব সাহায্যকারী যে শয়তান এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী:

﴿وَمَن يَعۡشُ عَن ذِكۡرِ ٱلرَّحۡمَٰنِ نُقَيِّضۡ لَهُۥ شَيۡطَٰنٗا فَهُوَ لَهُۥ قَرِينٞ ٣٦﴾ [ الزخرف : ٣٦ ]

“যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমরা তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করে দিই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী।” [সূরা আয-যুখরুফ, আয়াত: ৩৬]

আর কোনো কোনো জাহিল ধারণা করে যে, এই কাজটি কারামত বা অলৌকিক কর্মের অন্তর্গত। হতে পারে এই কাজটির কর্তা একজন ফাসিক কিংবা সালাত পরিত্যাগকারী। তাই কী করে আমরা একে কারামত গণ্য করব? আর এ জাতীয় সম্পাদনকারী ‘হে অমুক’ বলে গাইরুল্লাহ’র সাহায্য প্রার্থনা করল। এ কাজটি তো শির্ক ও গোমরাহীর কাজ, যার সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَمَنۡ أَضَلُّ مِمَّن يَدۡعُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ﴾ [ الاحقاف : ٥ ]

“তার চেয়ে অধিক গোমরাহ কে (?) যে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে আহ্বান করে....।” [সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ৫]

এটি গোমরাহীর পথের একটি ক্রমধারা। যখন ব্যক্তি স্বয়ং তার জন্য এই পথ অবলম্বন করে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাতে থাকতে দেন। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿قُلۡ مَن كَانَ فِي ٱلضَّلَٰلَةِ فَلۡيَمۡدُدۡ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ مَدًّا﴾ [ مريم : ٧٥ ]

“(হে নবী আপনি) বলুন! তারা পথভ্রষ্টতায় আছে, দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে যথেষ্ট অবকাশ দিবেন....।” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৭৫]

১৩- সূফীবাদের অনেক তরীকা আছে। যেমন, তিজানিয়া, শায্‌লিয়া, নাক্‌শবন্দীয়া ইত্যাদি। অথচ ইসলামের মাত্র একটি তরীকা। এর প্রমাণে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদীসখানা প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেন,

«خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطًّا، ثُمَّ قَالَ : " هَذَا سَبِيلُ اللهِ " ، ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ قَالَ : " هَذِهِ سُبُلٌ - قَالَ يَزِيدُ : مُتَفَرِّقَةٌ - عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ " ، ثُمَّ قَرَأَ : ( وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ، فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ( [ الأنعام :153]»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য তাঁর হাত দ্বারা একটি সরল রেখা অংকন করলেন। অতঃপর বললেন, এটি আল্লাহর সোজা পথ। আর এর ডানে ও বামে আরও কয়েকটি রেখা টানলেন। এরপর বললেন: এ সমস্ত পথ, যার প্রতিটিতে শয়তান আছে এবং সেদিকে ডাকছে। অতঃপর আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী তিলাওয়াত করলেন:

﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ ذَٰلِكُمۡ وَصَّىٰكُم بِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٥٣﴾ [ الانعام : ١٥٣ ]

“আর নিশ্চয় এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তাহলে সেসব পথ তোমাদের তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও!” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৫৩] [(সহীহ) আহমদ ও নাসাঈ।]

১৪- সূফীবাদ কাশফ বা অন্তর্দৃষ্টি ও অদৃশ্য বিদ্যার দাবী করে। অথচ কুরআন তাদের এই দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [ النمل : ٦٥ ]

“বলুন! আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও জমীনের কেউ গায়েবের বিদ্যা জানে না।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬৫]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لا يعلم الغيب إلا الله»

“আল্লাহ ব্যতীত কেউ গায়েব জানে না।” [তাবরানী, হাদীসটি হাসান।]

১৫- সূফীদের বিশ্বাস যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাঁর নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর থেকে সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। অথচ আল-কুরআন তাদের এই দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন করতঃ বর্ণনা করে:

﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ﴾ [ الكهف : ١١٠ ]

“(হে নবী আপনি) বলুন! আমি তো কেবল তোমাদের মতো একজন মানুষ, আমার কাছে অহী করা হয়।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০]

আদম সৃষ্টি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,

﴿إِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي خَٰلِقُۢ بَشَرٗا مِّن طِينٖ ٧١﴾ [ص: ٧١ ]

“যখন আপনার রব ফিরিশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব।” [সূরা সোয়াদ, আয়াত: ৭১]

আর (যে হাদীস দ্বারা ‘নবী নূরের তৈরি’ দাবীকারীগণ দলীল পেশ করে থাকেন, তা হচ্ছে:)

أول ما خلق الله نور نبيك يا جابر

“হে জাবের! সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর তৈরি করেছেন।” এটি বানোয়াট ও বাতিল হাদীস।

১৬- সূফীবাদ এই ধারণা করে যে, পৃথিবীকে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর কুরআন তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যা দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦﴾ [ الذاريات : ٥٦ ]

“আমি জিন্ন ও ইনসানকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” [সূরা আল-জারিয়াত, আয়াত: ৫৬]

আর কুরআন তার ভাষায় রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্বোধন করে বলে:

﴿وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩﴾ [ الحجر : ٩٩ ]

“(হে মুহাম্মাদ!) আর আপনি আপনার রবের ইবাদত করুন, যতক্ষণ না আপনার কাছে নিশ্চিত বিষয় মৃত্যু আগমন করে।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯৯]

১৭- সূফীবাদ দুনিয়াতে আল্লাহর দীদার বা দর্শন বিশ্বাস করে থাকে। অথচ কুরআন তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর যবানীতে উল্লেখ করতঃ আল-কুরআনে বলা হয়েছে:

﴿رَبِّ أَرِنِيٓ أَنظُرۡ إِلَيۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِي﴾ [ الاعراف : ١٤٣ ]

“হে আমার রব! তোমার দীদার আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই, আল্লাহ বললেন: তুমি (দুনিয়াতে) কখনো আমাকে দেখতে পাবে না।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৪৩]

গাযালী স্বীয় ‘ইহ্‌ইয়াউ ঊলুমিদ দীন’ গ্রন্থে প্রেমিকদের ও তাদের অন্তর্দৃষ্টিসমূহের বিবরণ অনুচ্ছেদে এ ঘটনা উল্লেখ করেন যে, “আবু তুরাব (তার বন্ধুকে লক্ষ্য করে) একদিন বলেন, তুমি যদি আবু ইয়াযিদ আল-বুস্তামীকে (যিনি একজন সূফী সাধক ছিলেন তাকে) দেখতে! তখন তার বন্ধু তাকে বলল, আমি তা থেকে ব্যস্ত। অর্থাৎ তার আমার প্রয়োজন নেই। আমি তো আল্লাহকে দেখেছি। কাজেই আল্লাহে আমাকে আবু ইয়াযিদ থেকে অমুখাপেক্ষী করে দিয়েছেন। আবু তুরাব বলল, তুমি ধ্বংস হও! তুমি তো আল্লাহকে নিয়ে ধোকায় পড়ে আছ! যদি তুমি একবার আবু ইয়াযিদ আল-বুস্তামীকে দেখতে, তাহলে আল্লাহকে সত্তর (৭০) বার দেখার চেয়ে তা তোমার জন্য অধিক উপকারী হত!” অতঃপর গাযালী বলেন, এ ধরনের কাশ্‌ফ বিষয়ক ঘটনা অস্বীকার করা কোনো মুমিন ব্যক্তির জন্য উচিত নয়।

আমি (লেখক) গাযালীকে বলব: বরং তা অস্বীকার করা মুমিনের ওপর ওয়াজিব। কেননা তা মিথ্যা ও কুফর যা কুরআন, হাদীস ও সুস্থ্য বিবেক বিরোধী।

১৮- সূফীবাদ দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীদার বা দর্শনের দাবী ও ধারণা করে। অথচ কুরআন তাদের দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمِن وَرَآئِهِم بَرۡزَخٌ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ﴾ [ المؤمنون : ١٠٠ ]

“আর তাদের সামনে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত পর্দা অর্থাৎ বরযখের যিন্দেগী রয়েছে।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১০০]

অর্থাৎ তাদের সামনে পর্দা আছে। যা কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ার প্রত্যাবর্তন ও তাদের মাঝে অন্তরায় হবে।

আর (রাসূলের মৃত্যুর পর) কোনো সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাগ্রত অবস্থায় দেখেছেন- এই মর্মে আমাদের নিকট কোনো বর্ণনা আসে নি। তাহলে কি সূফীরা সাহাবী থেকে উত্তম? পবিত্রয় হে আল্লাহ! এ তো বড় অপবাদ।

১৯- সূফীবাদ ধারণা করে যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে ‘ইলম’ গ্রহণ করে। তারা বলে: “আমার কলব রবের নিকট থেকে বর্ণনা করে।”

দামেস্কে সমাহিত ইবন আরাবী স্বীয় আল-ফুসুস গ্রন্থে বলেন, আমাদের মাঝে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো বিশেষ লোক আছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হিকমত শিক্ষা করেন অথবা ইজতিহাদের সাহায্যে অর্জন করেন, যা তিনি মূল বিদ্যা হিসেবেও স্থির করেন। অথচ আমাদের মাঝে এমন খলীফা আছেন, যিনি আল্লাহ থেকে সরাসরি গ্রহণ করেন। কাজেই তিনি হলেন, আল্লাহর খলীফা।”

আমি বলি: এই কথা বাতিল; কুরআনের বিপরীত। কুরআনের মূল বক্তব্য এই যে, আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়েছেন- যাতে তিনি আল্লাহর আদেশাবলী মানুষের নিকট পৌঁছে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ بَلِّغۡ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ مِن رَّبِّكَ﴾ [ المائ‍دة : ٦٧ ]

“হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা পৌঁছে দাও!” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬৭]

আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি অর্জন করা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। সেটি একটি মিথ্যা ও অহেতুক কথা। অতঃপর মানুষ নিঃসন্দেহে আল্লাহর খলীফা হতে পারে না। কেননা আল্লাহ আমাদের থেকে গায়েব নয় যে, মানুষ তাঁর খলীফা হবে। অপর দিকে আমরা যখন অনুপস্থিত থাকি ও সফর করি, তখন তিনিই আমাদের খলীফা হন। অর্থাৎ আমাদের পরিবর্তে তিনি আমাদের পরিবারের দেখাশুনা করেন। এই মর্মে হাদীস এসেছে:

«اللهم أنت الصاحب في السفر، والخليفة في الأهل» .

“হে আল্লাহ! তুমিই (আমাদের) সফরের সাথী ও পরিবার পরিজনের খলীফা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৪২।]

২০- সূফীবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরূদ পাঠের অধিবেশনের নামে মীলাদ মাহফিল ও ইজতেমা অনুষ্ঠান করে। তারাতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা বিরোধী কাজ করে। সে কারণে তারা যিকির, গযল ও কবিতা আবৃত্তির সময় উচ্চস্বরে ডাকতে আরম্ভ করে যার মাঝে প্রকাশ্য শির্ক রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে তাদেরকে আমি বলতে শুনেছি:

المدد يا عريض الجاه المــدد ويا مفيض النور على الوجود المدد

يا رسول الله فـــرج كربنا مــــا رآك الكــــرب إلا وشرد

“সাহায্য চাই হে প্রশস্ত মর্যাদার অধিকারী সাহায্য চাই,

সকল কিছুতে নূরের বিতরণকারী ওহে সাহায্য চাই।

দূর করে দাও হে রাসূল! মোদের বিপদ।

তোমাকে দেখিবা মাত্রই পালায় বিপদ।”

আমি বলি: ইসলাম আমাদের প্রতি এ বিশ্বাস আবশ্যক করে দেয় যে, সকল কিছুতে আলো বিতরণকারী এবং বিপদগ্রস্তদের বিপদ দূরকারী একমাত্র মহান আল্লাহ।

২১- সূফীবাদ কবরবাসীদের নিকট বরকত চাওয়া অথবা কবরের চতুষ্পার্শ্বে তাওয়াফ করা অথবা কবরের কাছে যবেহ করার তীর্থ যাত্রা করে। তারাতো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর বিরোধী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ : المَسْجِدِ الحَرَامِ، وَمَسْجِدِي هَذَا، وَمَسْجِدِ الأَقْصَى» .

“তিনটি মসজিদ ছাড়া (পৃথিবীর কোথাও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর বৈধ নয়। মসজিদ ৩টি হচ্ছে আল-মাসজিদুল হারাম (কা‘বা ঘর), আমার এই মসজিদ (মসজিদে ননবী) ও আল-মাসজিদুল আক্বসা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৭।]

২২- সূফীবাদ তার পীর-মাশাইখের অনুসরণ আবশ্যক করে নেওয়ার বেলায় অত্যন্ত কট্টরপন্থী। যদিও তাদের সেসব শিক্ষা আল্লাহ ও তার রাসূলের কথার বিরোধী হয়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِ﴾ [ الحجرات : ١ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমার আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না।” [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত:১]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لاَ طَاعَةَ لأحد فِي مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي المَعْرُوفِ»

“আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো আনুগত্য নেই; আনুগত্য কেবল ভালো কাজে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭২৫৭ ও মুসলিম ১৮৪০।]

২৩- সূফীবাদ কোনো কাজে ইস্তেখারা বা কল্যাণ কামনার জন্য তাবিজের নক্‌শা, বিভিন্ন বর্ণ ও সংখ্যা এবং তাবিজ তুমার ইত্যাদি ব্যবহার করে। আমি বলি: ইস্তেখারার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর নামের সংখ্যার হিসাব করে কেন তারা কুসংস্কার, বিদ‘আত ও শরী‘আত বিগর্হিত বিষয়াদির প্রতি ঝুঁকে যায়? আর সহীহ বুখারীতে বর্ণিত ইস্তেখারার দো‘আ ছেড়ে দেয়। অথচ এ দো‘আটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে কুরআনের সূরার ন্যায় শিক্ষা দিতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজের পদক্ষেপ নেয়, তখন সে যেন দু’রাকাত নফল সালাত আদায় করে। অতঃপর বলে: (এই দো‘আ পাঠ করে)

«دعاء الاستخارة : «اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي - أَوْ قَالَ : فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ - فَاقْدُرْهُ لِي، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي - أَوْ قَالَ : فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ - فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ»

“হে আল্লাহ আমি তোমার ইলম-এর মাধ্যমে তোমার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। তোমার কুদরতের মাধ্যমে তোমার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং তোমার মহান অনুগ্রহের প্রার্থনা করছি। কেননা তুমি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন। তুমি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং তুমি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞানী। হে আল্লাহ! এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজের নাম নেবে) তোমার ইলম অনুযায়ী যদি আমার দীন, জীবিকা ও আমার কিাজের পরিণতির দিক দিয়ে কল্যাণকর হয় তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দাও। অতঃপর তাতে আমার জন্য বরকত দাও। পক্ষান্তরে যদি এই কাজটি তোমার ইলম অনুযায়ী আমার দীন, জীবিকা ও কাজের পরিণতির দিক দিয়ে ক্ষতিকর হয় তাহলে তুমি তা আমার নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দাও এবং আমাকে তা থেকে দূরে রাখো! আর যেখানেই কল্যাণ থাকুক না কেন, আমার জন্য সে কল্যাণ নির্ধারিত করে দাও! অতঃপর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখো!” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮২।]

২৪- সূফীবাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দুরূদসমূহের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করে না, বরং এমন সব দুরূদ নতুন করে আবিস্কার করে; যাতে প্রকাশ্য শির্ক রয়েছে এবং যা সেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুশী করবে না। যার প্রতি তারা তা পাঠ করে। লেবাননী সূফী পীরের রচিত ‘আফ্‌দালুস সালাওয়াতি’ কিতাবে পড়েছি, যাতে তিনি বলেন,

اللهم صل على محمد حتى تجعل منه الأحدية القيومية

“হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের প্রতি শান্তিধারা বর্ষণ করুন। এমনকি তাঁকে একত্ব ও চিরস্থায়ীত্বের স্তরে উন্নীত করে দিন।” নাউযুবিল্লাহ।

আমি বলি: ‘একত্ব চিরস্থায়ীত্ব’ আল্লাহর গুণাবলী ও নামসমূহের অন্যতম। অনুরূপভাবে ‘দালাইলুল খাইরাত’ গ্রন্থে বিদ‘আতী দুরূদসমূহ রয়েছে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাজি হবেন না।

২৫- হে মুসলিম ভাই! সূফীদের আকীদাহ ও আমলসমূহ ইসলামের মানদণ্ডে যাচাই করে দেখেছি যে, সূফীবাদ ইসলাম থেকে বহু দূরে। আর নিঃসন্দেহে সুস্থ্য বিবেক এই সমস্ত বিদ‘আত, ভ্রষ্টতা ও শরী‘আত বিগর্হিত কার্য্যাদি (যাতে শির্ক ও কুফুরী রয়েছে) বর্জন করবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন