hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সহিহ বুখারী

৬২. সাহাবীগণের মর্যাদা

صحيح البخاري

৬২/ পরিচ্ছেদঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের ফযীলত। [১]

মুসলিমদের মধ্য হতে যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গ লাভ করেছেন অথবা তাঁকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিনি দেখেছেন তিনি তাঁর সাহাবী।

৩৬৫০

সহিহ হাদিস
حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ، حَدَّثَنَا النَّضْرُ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي جَمْرَةَ، سَمِعْتُ زَهْدَمَ بْنَ مُضَرِّبٍ، سَمِعْتُ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ ـ رضى الله عنهما ـ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ‏"‏‏.‏ قَالَ عِمْرَانُ فَلاَ أَدْرِي أَذَكَرَ بَعْدَ قَرْنِهِ قَرْنَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا ‏"‏ ثُمَّ إِنَّ بَعْدَكُمْ قَوْمًا يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذُرُونَ وَلاَ يَفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السِّمَنُ ‏"‏‏.‏

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ আমার যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। ‘ইমরান (রাঃ) বলেন, তিনি তাঁর যুগের পর দু’যুগ অথবা তিনি যুগ বলেছেন তা আমার স্মরণ নেই। অতঃপর এমন লোকের আগমন ঘটবে যারা সাক্ষ্য প্রদানে আগ্রহী হবে অথচ তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে তাদেরকে কেউ বিশ্বাস করবে না। তারা মানত করবে কিন্তু তা পূরণ করবে না। তারা হবে চর্বিওয়ালা মোটাসোটা। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৭৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৫)

৩৬৪৯

সহিহ হাদিস
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ حَدَّثَنَا أَبُوْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيُّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ فَيَغْزُوْ فِئَامٌ مِنْ النَّاسِ فَيَقُوْلُوْنَ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيُفْتَحُ لَهُمْ ثُمَّ يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ فَيَغْزُوْ فِئَامٌ مِنْ النَّاسِ فَيُقَالُ هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيُفْتَحُ لَهُمْ ثُمَّ يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ فَيَغْزُوْ فِئَامٌ مِنْ النَّاسِ فَيُقَالُ هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيُفْتَحُ لَهُمْ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লোকেদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের জন্য বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন? তাঁরা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর জনগণের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য লাভ করেছেন? তখন তারা বলবেন, হাঁ আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি আল্লাহর রসূল(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণের সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য প্রাপ্ত হয়েছেন? বলা হবে আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৭৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৪)
* সহাবায়ি কিরাম [রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম] এর মর্যাদা বিষয়কঃ

এখান থেকে কয়েক পৃষ্ঠা পরেই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সম্মানিত সহাবীদের মান-মর্যাদা বিষয়ক আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। যাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কয়েকজন বিশিষ্ট সহাবী ও সমগ্র সহাবায়ে কেরামদের মর্যাদা, তাঁদের প্রতি সাধারণ মু’মিন মুসলমানদের ভক্তি-শ্রদ্ধা, মর্যাদাবোধ ইত্যাদি বিষয়ে একান্ত আবশ্যিক আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সমগ্র সহাবীগণই সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার হকদার। সমগ্র সহাবীদের মধ্যে ৪ খলীফা মর্যাদা পাওয়ার দিক দিয়ে অন্যান্য সহাবীদের চেয়ে বেশী হকদার এ কথা প্রত্যেক বিবেকবান লোক স্বীকার করতে একান্ত বাধ্য। উক্ত সার্বজনীন স্বীকৃত ইসলামী শরীয়াতের রীতি-নীতি প্রাথমিক যুগের মুসলিম মনীষীগণ যেমন শ্রদ্ধা ভরে মেনে নিয়েছিলেন, তেমনি পরবর্তী যুগের ইসলামী মনীষীগণও উপরোক্ত বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে আসছেন। রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহাবীগণ সকলেই দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন ইনসাফকারী। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক সহাবীদেরকেই ইনসাফকারী বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। যথা নবাী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين الهمديين وكلهم عدول متفق عليه

তোমাদের উপর আমার রেখে যাওয়া সুন্নাহ্ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শনকারী খলীফাগণের সুন্নাত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং উক্ত খলীফাগণের প্রত্যেকেই ইনসাফকারী। অন্যত্র আছে, যার সানাদও সহীহ বটে, আর তা এই যে, আমার সব সহাবীই ইনসাফকারী। ইমাম বুখারীর বর্ণনায় উক্ত সহীহ বুখারীর মধ্যেই كتاب فضائل الصحابة নামক অধ্যায়ের ৩৬৬৫ নং হাদীসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তোমরা (পরবর্তীকালে) আমার সহাবীদেরকে গালি-গালাজ করো না।

عن أبي سعيد الخدري (رض) قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لا تسبوا أصحابي

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিশ্বখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম ইবনু হাজার আস্কালানী বলেছেন, যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে নিজ চোখে দেখেনি, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য যাদের হয়নি, এমন সকলের জন্যেই উপরোক্ত নিষেধবাণী প্রযোজ্য হবে। (ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা)

প্রকাশ থাকে যে, পরবর্তীকালে খারিজী, রাফিজী, মু’তাজিলা, জায়েদিয়া, আশারিয়া, ইসমা‘ঈলিয়া তথা শিয়া মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার বশবর্তী হয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহাবীদের বিরুদ্ধে অনেক অনেক অপবাদ দেয়ার মতো ধৃষ্টতা ও অপরাধপূর্ণ সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে মুসলিম জাতিকে পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা দিয়েছে। যা প্রতিটি বিবেকবান মুসলমানের নিকট অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত বটে।

শার‘ঈয়তের বিধিবিধানকে সস্পষ্ট করার জন্য এবং সঠিকভাবে মান্য করার জন্য সাহাবীগণ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াকে তার উপর বহাল থাকতে হবে। যেমন কুরআন একত্রিকরণ, খালীফাহ নির্ধারণ, ‘উসমান < কর্তৃক তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজারের মধ্যে জুমু‘আহর দিন দ্বিতীয় আযান চালু করা। (বর্তমানে মাইকের আযান দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত বিধায় এখন এ আযান নিষ্প্রয়োজন।

বুখারী كتاب فضائل الصحابة পর্বে সহীহ সানাদে হাদীসসমূহে আছে, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) একজন স্বীয় ঘরে অবস্থান করছিলেন, এমন সময় আবূ মূসা আল আশআরী বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-কে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আবূ বাকর অনুমতি চায় (প্রবেশের জন্য)। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেন, তাঁকে অনুমতি দেয়া হলো এবং তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। অতঃপর ‘উমার অনুমতি চাইলে তাঁকেও এমনই বলে সুসংবাদ দেয়া হলো। (বুখারী হাঃ ৩৬৭৩, বিস্তারিত বাখ্যা- ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা)

এভাবেই ৪ খলীফাহ সহ জলীলুল ক্বদর কয়েকজন সহাবী সম্পর্কে আল্লাহ্‌র রসূল বিভিন্ন সময় অনেক সুসংবাদ জাতীয় ভবিষদ্বাণী করেছেন আল্লাহর আদেশক্রমে। এ জাতীয় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সহাবীদের সংখ্যা ১০ জন।

এতদ্ব্যতীত অন্যান্য সহাবীদের ব্যাপারেও নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) স্বীয় পবিত্র মুখে চমৎকার মন্তব্য ক’রে তাদেরকে বিশ্ববাসীর নিকট সম্মানিত করেছেন। সুতরাং সহাবীদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক। অতীব পরিতাপের ও দুঃখের বিষয় এই যে, শিয়া মাযহাবের লোকজন ইসলামের উক্ত সম্মানিত ১ম থেকে ৩য় খলীফা দেরকে জবরদস্তিমূলক খিলাফত দখলকারী, অন্যায়কারী, অত্যাচারী পর্যন্ত বলার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। পক্ষান্তরে ‘আলী এর প্রতি অতিরিক্ত মর্যাদা দিতে গিয়ে তারা তাঁকে পায় নবুয়্যাতের কাছাকাছি বা সম মর্যাদায় নিয়ে গেছে। আর কেউ কেউ শিয়াদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে গিয়ে মহামতি ইমাম হুসাইন কে গদীলোভী, অযথা রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিনষ্টকারী হিসেবে আখ্যায়িত করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইমাম হাসান, হুসাইন আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, আর আহলে বাইতদের প্রতি মুহাব্বাত রাখার নির্দেশ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনেও তাদের পবিত্রতা এভাবে ঘোষিত হয়েছে

(إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْراً) (الأحزاب: من الآية৩৩)

সবশেষে সহাবীদের ব্যাপারে সমীহ ভাবপ্রদর্শন ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব।

ফাযীলাত।১

১ সহাবায়ি কিরাম [রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম] এর মর্যাদা বিষয়ক ঃ

এখান থেকে কয়েক পৃষ্ঠা পরেই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর সম্মানিত সহাবীদের মান-মর্যাদা বিষয়ক আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। যাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর কয়েকজন বিশিষ্ট সহাবী ও সমগ্র সহাবায়ে কেরামদের মর্যাদা, তাঁদের প্রতি সাধারণ মু’মিন মুসলমানদের ভক্তি-শ্রদ্ধা, মর্যাদাবোধ ইত্যাদি বিষয়ে একান্ত আবশ্যিক আলোচনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর সমগ্র সহাবীগণই সম্মান ও মর্যাদা পাওয়ার হকদার। সমগ্র সহাবীদের মধ্যে ৪ খলীফা মর্যাদা পাওয়ার দিক দিয়ে অন্যান্য সহাবীদের চেয়ে বেশী হকদার এ কথা প্রত্যেক বিবেকবান লোক স্বীকার করতে একান্ত বাধ্য। উক্ত সার্বজনীন স্বীকৃত ইসলামী শরীয়াতের রীতি-নীতি প্রাথমিক যুগের মুসলিম মনীষীগণ যেমন শ্রদ্ধা ভরে মেনে নিয়েছিলেন, তেমনি পরবর্তী যুগের ইসলামী মনীষীগণও উপরোক্ত বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করে আসছেন। রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর সহাবীগণ সকলেই দ্বীনের ব্যাপারে ছিলেন ইনসাফকারী। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) প্রত্যেক সহাবীদেরকেই ইনসাফকারী বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। যথা নবাী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ইরশাদ করেছেন ঃ عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين الهمديين وكلهم عدول متفق عليه

তোমাদের উপর আমার রেখে যাওয়া সুন্নাহ্ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শনকারী খলীফাগণের সুন্নাত অবশ্যই গ্রহণযোগ্য এবং উক্ত খলীফাগণের প্রত্যেকেই ইনসাফকারী। অন্যত্র আছে, যার সানাদও সহীহ বটে, আর তা এই যে, আমার সব সহাবীই ইনসাফকারী। ইমাম বুখারীর বর্ণনায় উক্ত সহীহ বুখারীর মধ্যেই كتاب فضائل الصحابة নামক অধ্যায়ের ৩৬৬৫ নং হাদীসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, তোমরা (পরবর্তীকালে) আমার সহাবীদেরকে গালি-গালাজ করো না।

عن أبي سعيد الخدري (رض) قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لا تسبوا أصحابي

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ বুখারীর বিশ্বখ্যাত ভাষ্যকার ইমাম ইবনু হাজার আস্কালানী বলেছেন, যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-কে নিজ চোখে দেখেনি, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য যাদের হয়নি, এমন সকলের জন্যেই উপরোক্ত নিষেধবাণী প্রযোজ্য হবে। (ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ৪২ পৃষ্ঠা)

প্রকাশ থাকে যে, পরবর্তীকালে খারিজী, রাফিজী, মু’তাজিলা, জায়েদিয়া, আশারিয়া, ইসমা‘ঈলিয়া তথা শিয়া মাযহাবের লোকজন নিজেদের ভ্রান্ত-ধারণার বশবর্তী হয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-এর সহাবীদের বিরুদ্ধে অনেক অনেক অপবাদ দেয়ার মতো ধৃষ্টতা ও অপরাধপূর্ণ সমালোচনায় লিপ্ত হয়ে মুসলিম জাতিকে পারস্পরিক বিভেদ ও বিচ্ছেদের প্ররোচনা দিয়েছে। যা প্রতিটি বিবেকবান মুসলমানের নিকট অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিতও বটে।

শার‘ঈয়তের বিধিবিধানকে সস্পষ্ট করার জন্য এবং সঠিকভাবে মান্য করার জন্য সাহাবীগণ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াকে তার উপর বহাল থাকতে হবে। যেমন কুরআন একত্রিকরণ, খালীফাহ নির্ধারণ, ‘উসমান (রাঃ) কর্তৃক তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজারের মধ্যে জুমু‘আহর দিন দ্বিতীয় আযান চালু করা। (বর্তমানে মাইকের আযান দূর দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত বিধায় এখন এ আযান নিষ্প্রয়োজন।

বুখারী كتاب فضائل الصحابة পর্বে সহীহ সানাদে হাদীসসমূহে আছে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) একজন স্বীয় ঘরে অবস্থান করছিলেন, এমন সময় আবূ মূসা আল আশআরী বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-কে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আবূ বাকর অনুমতি চায় (প্রবেশের জন্য)। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেন, তাঁকে অনুমতি দেয়া হলো এবং তাঁকে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে দাও। অতঃপর ‘উমার < অনুমতি চাইলে তাঁকেও এমনই বলে সুসংবাদ দেয়া হলো। (বুখারী হাঃ ৩৬৭৩, বিস্তারিত বাখ্যা- ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ২৫ পৃষ্ঠা)

এভাবেই ৪ খলীফাহ সহ জলীলুল ক্বদর কয়েকজন সহাবী সম্পর্কে আল্লাহ্‌র রসূল বিভিন্ন সময় অনেক সুসংবাদ জাতীয় ভবিষদ্বাণী করেছেন আল্লাহর আদেশক্রমে। এ জাতীয় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সহাবীদের সংখ্যা ১০ জন।

এতদ্ব্যতীত অন্যান্য সহাবীদের ব্যাপারেও নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) স্বীয় পবিত্র মুখে চমৎকার মন্তব্য ক’রে তাদেরকে বিশ্ববাসীর নিকট সম্মানিত করেছেন। সুতরাং সহাবীদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে সতর্কতা অবলম্বন আবশ্যক। অতীব পরিতাপের ও দুঃখের বিষয় এই যে, শিয়া মাযহাবের লোকজন ইসলামের উক্ত সম্মানিত ১ম থেকে ৩য় খলীফাদেরকে জবরদস্তিমূলক খিলাফত দখলকারী, অন্যায়কারী, অত্যাচারী পর্যন্ত বলার মতো ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। পক্ষান্তরে ‘আলী (রাঃ) এর প্রতি অতিরিক্ত মর্যাদা দিতে গিয়ে তারা তাঁকে পায় নবুয়্যাতের কাছাকাছি বা সম মর্যাদায় নিয়ে গেছে। আর কেউ কেউ শিয়াদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে গিয়ে মহামতি ইমাম হুসাইন <-কে গদীলোভী, অযথা রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিনষ্টকারী হিসেবে আখ্যায়িত করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইমাম হাসান, হুসাইন (রাঃ) আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, আর আহলে বাইতদের প্রতি মুহাব্বাত রাখার নির্দেশ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনেও তাদের পবিত্রতা এভাবে ঘোষিত হয়েছে

(إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْراً) (الأحزاب: من الآية৩৩)

সবশেষে সহাবীদের ব্যাপারে সমীহ ভাবপ্রদর্শন ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব।

৩৬৫১

সহিহ হাদিস
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيْرٍ أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ عَنْ مَنْصُوْرٍ عَنْ إِبْرَاهِيْمَ عَنْ عَبِيْدَةَ عَنْ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ يَجِيءُ قَوْمٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِيْنَهُ وَيَمِيْنُهُ شَهَادَتَهُ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ وَكَانُوْا يَضْرِبُوْنَنَا عَلَى الشَّهَادَةِ وَالْعَهْدِ وَنَحْنُ صِغَارٌ

আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার উম্মাতের সর্বোত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ (সাহাবীগণ)। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী যুগ। অতঃপর এমন লোকদের আগমন হবে যাদের কেউ সাক্ষ্য দানের পূর্বে কসম এবং কসমের পূর্বে সাক্ষ্য দান করবে। ইব্রাহীম (নাখ্‌য়ী; রাবী) বলেন, ছোট বেলায় আমাদের মুরুব্বীগণ আল্লাহ্‌র নামে কসম করে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য এবং ওয়াদা-অঙ্গীকার করার কারণে আমাদেরকে মারধর করতেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৭৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৬)
৬২/ পরিচ্ছেদঃ মুহাজিরগণের গুণাবলী ও ফযীলত।

তাদের মধ্য হতে আবূ বক্‌র ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবূ কুহাফা তায়মী (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণীঃ এ সম্পদ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য . . . (আল-হাশর ৮) এবং মহান আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন। (আত্-তাওবাহ ৪০) ‘আয়িশা, আবূ সা’ঈদ ও ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবূ বাক্‌র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাওর গুহায় ছিলেন।

৩৬৫৩

সহিহ হাদিস
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سِنَانٍ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ قَالَ قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا فِي الْغَارِ لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ نَظَرَ تَحْتَ قَدَمَيْهِ لَابْصَرَنَا فَقَالَ مَا ظَنُّكَ يَا أَبَا بَكْرٍ بِاثْنَيْنِ اللهُ ثَالِثُهُمَا

আবূ বাক্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা যখন গুহায় আত্মগোপন করেছিলাম তখন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, যদি কাফিররা তাদের পায়ের নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবূ বাক্‌র, ঐ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা আল্লাহ্ যাঁদের তৃতীয় জন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৮)

৩৬৫২

সহিহ হাদিস
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ رَجَاءٍ حَدَّثَنَا إِسْرَائِيْلُ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنْ الْبَرَاءِ قَالَ اشْتَرَى أَبُوْ بَكْرٍ مِنْ عَازِبٍ رَحْلًا بِثَلَاثَةَ عَشَرَ دِرْهَمًا فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ لِعَازِبٍ مُرْ الْبَرَاءَ فَلْيَحْمِلْ إِلَيَّ رَحْلِيْ فَقَالَ عَازِبٌ لَا حَتَّى تُحَدِّثَنَا كَيْفَ صَنَعْتَ أَنْتَ وَرَسُوْلُ اللهِ حِيْنَ خَرَجْتُمَا مِنْ مَكَّةَ وَالْمُشْرِكُوْنَ يَطْلُبُوْنَكُمْ قَالَ ارْتَحَلْنَا مِنْ مَكَّةَ فَأَحْيَيْنَا أَوْ سَرَيْنَا لَيْلَتَنَا وَيَوْمَنَا حَتَّى أَظْهَرْنَا وَقَامَ قَائِمُ الظَّهِيْرَةِ فَرَمَيْتُ بِبَصَرِيْ هَلْ أَرَى مِنْ ظِلٍّ فَآوِيَ إِلَيْهِ فَإِذَا صَخْرَةٌ أَتَيْتُهَا فَنَظَرْتُ بَقِيَّةَ ظِلٍّ لَهَا فَسَوَّيْتُهُ ثُمَّ فَرَشْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيْهِ ثُمَّ قُلْتُ لَهُ اضْطَجِعْ يَا نَبِيَّ اللهِ فَاضْطَجَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ انْطَلَقْتُ أَنْظُرُ مَا حَوْلِيْ هَلْ أَرَى مِنْ الطَّلَبِ أَحَدًا فَإِذَا أَنَا بِرَاعِيْ غَنَمٍ يَسُوقُ غَنَمَهُ إِلَى الصَّخْرَةِ يُرِيْدُ مِنْهَا الَّذِيْ أَرَدْنَا فَسَأَلْتُهُ فَقُلْتُ لَهُ لِمَنْ أَنْتَ يَا غُلَامُ قَالَ لِرَجُلٍ مِنْ قُرَيْشٍ سَمَّاهُ فَعَرَفْتُهُ فَقُلْتُ هَلْ فِيْ غَنَمِكَ مِنْ لَبَنٍ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ فَهَلْ أَنْتَ حَالِبٌ لَنَا قَالَ نَعَمْ فَأَمَرْتُهُ فَاعْتَقَلَ شَاةً مِنْ غَنَمِهِ ثُمَّ أَمَرْتُهُ أَنْ يَنْفُضَ ضَرْعَهَا مِنْ الْغُبَارِ ثُمَّ أَمَرْتُهُ أَنْ يَنْفُضَ كَفَّيْهِ فَقَالَ هَكَذَا ضَرَبَ إِحْدَى كَفَّيْهِ بِالْأُخْرَى فَحَلَبَ لِيْ كُثْبَةً مِنْ لَبَنٍ وَقَدْ جَعَلْتُ لِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِدَاوَةً عَلَى فَمِهَا خِرْقَةٌ فَصَبَبْتُ عَلَى اللَّبَنِ حَتَّى بَرَدَ أَسْفَلُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَوَافَقْتُهُ قَدْ اسْتَيْقَظَ فَقُلْتُ اشْرَبْ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَشَرِبَ حَتَّى رَضِيْتُ ثُمَّ قُلْتُ قَدْ آنَ الرَّحِيْلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ بَلَى فَارْتَحَلْنَا وَالْقَوْمُ يَطْلُبُوْنَنَا فَلَمْ يُدْرِكْنَا أَحَدٌ مِنْهُمْ غَيْرُ سُرَاقَةَ بْنِ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ عَلَى فَرَسٍ لَهُ فَقُلْتُ هَذَا الطَّلَبُ قَدْ لَحِقَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَلَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا (التوبة : 40)

বারাআ (ইব্‌নু ‘আযিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) ‘আযিব (রাঃ) এর নিকট হতে তের দিরহামের একটি হাওদা কিনলেন। আবূ বকর (রাঃ) ‘আযিবকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে হাওদাটি আমার নিকট পৌঁছে দিতে বল। ‘আযিব (রাঃ) বললেন, আমি বারাকে বলব না যতক্ষণ আপনি আমাদেরকে সবিস্তারে বর্ণনা করে না শুনাবেন যে, আপনি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী করেছিলেন যখন আপনারা মক্কা হতে বেরিয়ে পড়েছিলেন? আর মক্কার মুশরিকগণ আপনাদের পিছু ধাওয়া করেছিল।
আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমরা মক্কা হতে বেরিয়ে সারা রাত এবং পরের দিন দুপুর পর্যন্ত অবিরত চললাম। যখন ঠিক দুপুর হয়ে গেল, এবং উত্তাপ তীব্র হলো আমি চারদিকে চেয়ে দেখলাম কোথাও কোন ছায়া দেখা যায় কিনা, যেন আমরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারি। তখন একটি বড় আকারের পাথর চোখে পড়ল। এই পাথরটির পাশে কিছু ছায়াও আছে। আমি সেখানে আসলাম এবং ঐ ছায়াপূর্ণ জায়গাটি সমতল করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বিছানা করে দিলাম এবং বললাম, হে আল্লাহ্‌র নবী! আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন। তিনি শুয়ে পড়লেন। আমি চারদিকের অবস্থা দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম, আমাদের খোঁজে কেউ আসছে কিনা? ঐ সময় আমি দেখতে পেলাম, একজন মেষ পালক তার ভেড়া ছাগল হাঁকিয়ে ঐ পাথরের দিকে আসছে। সেও আমাদের মত ছায়া খোঁজ করছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে যুবক! তুমি কার রাখাল? সে একজন কুরাঈশের নাম বলল, আমি তাকে চিনতে পারলাম। আমি তাকে শুধালাম, তোমার বক্‌রীর পালে দুধেল বকরী আছে কি? সে বলল, হাঁ আছে। আমি বললাম। তুমি কি আমাদেরকে দুধ দোহন করে দিবে? সে বলল, হাঁ, দিব। আমি তাকে তা দিতে বললে তৎক্ষণাৎ সে বক্‌রীর পাল হতে একটি বক্‌রী ধরে নিয়ে এল এবং পিছনের পা দু’টি বেঁধে নিল। আমি তাকে বললাম, বকরীর স্তন দু’টি ঝেড়ে মুছে ধূলাবালি হতে পরিষ্কার করে নাও এবং তোমার হাত দু’টি পরিষ্কার কর। তিনি এক হাত অন্য হাতের উপর মেরে (পরিষ্কারের ধরণ) দেখালেন। অতঃপর সে আমাদেরকে পাত্র ভরে দুধ এনে দিল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি চামড়ার পাত্র সঙ্গে রেখে ছিলাম যার মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা ছিল। আমি দুধে অল্প পানি মিশিয়ে দিলাম যেন দুধের নিম্নভাগও ঠান্ডা হয়ে যায়। অতঃপর আমি দুধ নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে দেখলাম তিনি জেগেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি দুধ পান করুন। তিনি দুধ পান করলেন। আমি খুশী হলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের রওয়ানা হওয়ার সময় হয়েছে কি? তিনি বললেন, হাঁ হয়েছে। আমরা রওয়ানা দিলাম। মক্কাবাসী মুশরিকরা আমাদের খোঁজে ছুটাছুটি করছে। কিন্তু সুরাকা ইব্‌নু মালিক ইব্‌নু জু’শাম ছাড়া আমাদের সন্ধান তাদের অন্য কেউ পায়নি। সে ঘোড়ায় চড়ে আসছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! খোঁজকারী আমাদের দেখা পেয়ে গেল। তিনি বললেন, চিন্তা করো না, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আমাদের সঙ্গে আছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৭)
৬২/ পরিচ্ছেদঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ আবূ বাক্‌র (রাঃ) এর দরজা বাদ দিয়ে সব দরজা বন্ধ করে দাও।

এ বিষয়ে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

৩৬৫৪

সহিহ হাদিস
حَدَّثَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا أَبُوْ عَامِرٍ حَدَّثَنَا فُلَيْحٌ قَالَ حَدَّثَنِيْ سَالِمٌ أَبُوْ النَّضْرِ عَنْ بُسْرِ بْنِ سَعِيْدٍ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ خَطَبَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم النَّاسَ وَقَالَ إِنَّ اللهَ خَيَّرَ عَبْدًا بَيْنَ الدُّنْيَا وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ فَاخْتَارَ ذَلِكَ الْعَبْدُ مَا عِنْدَ اللهِ قَالَ فَبَكَى أَبُوْ بَكْرٍ فَعَجِبْنَا لِبُكَائِهِ أَنْ يُخْبِرَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ عَبْدٍ خُيِّرَ فَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ الْمُخَيَّرُ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ أَعْلَمَنَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ أَمَنِّ النَّاسِ عَلَيَّ فِيْ صُحْبَتِهِ وَمَالِهِ أَبَا بَكْرٍ وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيْلًا غَيْرَ رَبِّيْ لَاتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ وَلَكِنْ أُخُوَّةُ الْإِسْلَامِ وَمَوَدَّتُهُ لَا يَبْقَيَنَّ فِي الْمَسْجِدِ بَابٌ إِلَّا سُدَّ إِلَّا بَابَ أَبِيْ بَكْرٍ

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সাহাবীদের উদ্দেশ্যে খুৎবার কালে বললেন, আল্লাহ্ তাঁর এক প্রিয় বান্দাকে পার্থিব ভোগ বিলাস এবং তাঁর নিকট রক্ষিত নি’মাতসমূহ এ দু’য়ের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দান করেছেন এবং ঐ বান্দা আল্লাহ্‌র নিকট রক্ষিত নিয়ামতসমূহ বেছে নিয়েছে। রাবী বলেন তখন আবূ বকর (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। তাঁর কান্না দেখে আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বান্দার খবর দিচ্ছেন যাকে এভাবে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে (তাতে কান্নার কী কারণ থাকতে পারে?) কিন্তু পরে আমরা বুঝতে পারলাম, ঐ বান্দা স্বয়ং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) আমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ দিয়ে, তার সঙ্গ দিয়ে আমার উপর সর্বাধিক ইহসান করেছে সে ব্যক্তি হল আবূ বকর (রাঃ)। আমি যদি আমার রব ছাড়া অন্য কাউকে আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে অবশ্যই আবূ বাক্‌রকে করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার দ্বীনী ভ্রাতৃত্ব, আন্তরিক ভালোবাসা আছে। মাসজিদের দিকে আবূ বাকরের দরজা ছাড়া অন্য কোন দরজা খোলা রাখা যাবে না। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৮৯)
৬২/ পরিচ্ছেদঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরেই আবূ বকরের মর্যাদা।

৩৬৫৫

সহিহ হাদিস
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا نُخَيِّرُ بَيْنَ النَّاسِ فِيْ زَمَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَنُخَيِّرُ أَبَا بَكْرٍ ثُمَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ثُمَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে সাহাবীগণের পারস্পরিক মর্যাদা নির্ণয় করতাম। আমরা সর্বাপেক্ষা মর্যাদা দিতাম আবূ বকর (রাঃ)-কে তাঁরপর ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-কে, অতঃপর ‘উসমান ইব্‌নু আফ্‌ফান (রাঃ)-কে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৩৮৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৩৯০)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন