মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
জাতীয়তাবাদ মানে এমন একটি মতবাদ যা মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে স্বজাতিচেতনা কিংবা স্বজাতিপ্রীতি ধারণ করার আহ্বান জানায়। এতে সত্য কিংবা ন্যায়ের কোনো ধার ধারা হয় না, বরং তাতে সাধারণত মানুষের যে কোনো সমষ্টিগত জীবনে বিশেষত রাজনৈতিক জীবনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামতকেই সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয়। চাই তা সঠিক হোক কিংবা বেঠিক।
মূলতঃ উক্ত মতবাদটি খ্রিস্টানদেরই সৃষ্ট একটি মতবাদ। মুসলিম রাষ্ট্র সমূহে যার বিপুল বিস্তারের মাধ্যমে তারা ইসলামকেই ধ্বংস করার মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বলতে হয়, এ ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় তারা প্রায় অধিকাংশটুকুই সফলকাম। ধারণা করা হয়, তারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপেও সফল হতো যদি না মহান আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে কিয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতেন। এ জন্যই তো বর্তমান যুগের খ্রিস্টান মোড়লরা এ সহজবোধ্য ও প্রকৃতিগত চেতনাটুকুকে সর্বদা এ বিশ্বের বুকে অটুট রাখার জন্য যে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে চাকচিক্যময় ধোঁকাপূর্ণ খেয়ালী কথার ফুলঝুরির মাধ্যমে অনবরত সাহস ও মনোবল যোগিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এ প্রচেষ্টায় যেমন দীন ইসলাম ধীরে ধীরে বিশ্বের বুকে তার অদম্য শক্তি হারাবে, টিকে থাকবে শুধু তার নামটুকু তেমনিভাবে কোনো এলাকায় কারোর জন্য তাদের খ্রিস্টধর্মের এমনকি অন্য যে কোনো ধর্মের গতিরোধ করাও কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এদের খপ্পরে আজ আরব-অনারব তথা বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিমই নিপতিত। এতে করে বিশ্বের সকল ইসলাম বিদ্বেষী ও কাফির শক্তি খুবই আনন্দিত।
আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী প্রতিটি মুসলিমের জানা উচিৎ যে, এ জাতীয়তাবাদের ডাক হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিমকে ধ্বংস করার জন্য মহা ষড়যন্ত্রমূলক একটি পরিকল্পিত অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর প্রকাশ্য অন্যায়মূলক জাহেলী যুগের বাতিল ডাক, যা নিম্নোক্ত কয়েকটি পয়েন্টের মাধ্যমে সবার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
১. মুসলিম বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের যে কোনো জাতীয়তাবাদী ডাক মুসলিমদের আন্তর্জাতিক মহা ঐক্যের গোড়ায় একটি মারাত্মক কুঠারাঘাত। যা বিশ্বের সকল মুসলিমকে অঞ্চল ও ভাষাগতভাবে ভিন্ন ভিন্ন জাতি-সত্তায় রূপান্তরিত করে। তখন তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য অন্য যে কোনো মুসলিম জাতির সাথে শত্রুতা পোষণ করে। আর যে কোনো চিন্তা-চেতনা মুসলিমদের মধ্যে দলাদলি কিংবা ফাটল সৃষ্টি করে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কারণ, ইসলাম সর্বদা তার অনুসারীদেরকে মহান ঐক্যের দিকেই ডাকে, দলাদলির দিকে নয়।
“তোমরা সবাই এক হয়ে এক আল্লাহর রজ্জু শক্ত হাতে ধারণ করো। কখনো নিজেদের মধ্যে দলাদলি করো না”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩]
২. ইসলাম জাহেলী যুগের সকল প্রকারের ডাক প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি জাহিলী যুগের সকল কর্মকাণ্ড এবং চাল-চরিত্রকেও। তবে ইসলাম কিছু কিছু ক্ষেত্রে জাহিলী যুগের কিছু উন্নত চরিত্র ও কর্মকাণ্ডকে সাপোর্ট করে। যা নিজ নিজ জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। আর নিঃসন্দেহে এ জাতীয়তাবাদী ডাক হচ্ছে জাহিলী ডাক।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, ইসলাম ও কুরআনের ডাক ছাড়া যে কোনো ডাক চাই তা যে কোনো বংশের দিকে হোক অথবা যে কোনো অঞ্চল, জাতি, মাযহাব ও তরীকার দিকে তা সবই জাহিলী ডাক। বরং যখন একদা এক যুদ্ধে জনৈক মুহাজির সাহাবী জনৈক আনসারী সাহাবীর পেছনে তার হাত দিয়ে আঘাত করে, তখন আনসারী সাহাবী সকল আনসারীগণকে ডাক দিয়ে বললোঃ হে আনসারীগণ! তোমরা কোথায়? দ্রুত আমার সহযোগিতায় নেমে আসো। তখন মুহাজির সাহাবীও বললো: হে মুহাজিরগণ! তোমরা কোথায়? দ্রুত আমার সহযোগিতায় নেমে আসো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় ডাক শুনে বললেন:
“এ কি হচ্ছে। জাহিলী ডাক শোনা যাচ্ছে কেন? সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! জনৈক মুহাজির সাহাবী জনৈক আনসারী সাহাবীর পেছনে তার হাত দিয়ে আঘাত করে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ জাতীয় ডাক ছাড়ো। কারণ, তা একটি অতি ঘৃণ্য ডাক”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮৪।]
৩. যে কোনো জাতীয়তাবাদী ডাক সে জাতির কাফির ও মুশরিকদেরকে ভালোবাসার একটি বিরাট মাধ্যম। কারণ, সময় সময় জাতীয়তাবাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের বিশেষ সাহায্য-সহযোগিতা নিতে হয়। যার কারণে তারা একদা নিজের প্রাণের বন্ধুতে রূপান্তরিত হয়। এ দিকে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা শরী‘আতের দৃষ্টিতে ঈমান বিধ্বংসী একটি বিশেষ কারণ।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদেরকে নিজেদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদের মধ্যেই পরিগণিত হবে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা যালিম সম্প্রদায়কে কখনোই সঠিক পথ দেখান না। যাদের অন্তরে মুনাফিকির ব্যাধি রয়েছে তুমি তাদের অনেককেই দেখবে তারা কাফিরদের প্রতি দ্রুত দৌড়ে যায়। তারা বলেঃ আমাদের ভয় হচ্ছে আমাদের ওপর কোনো বিপদ এসে পড়ে না কি? আশা তো অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদেরকে পূর্ণ বিজয় দিবেন অথবা তিনি নিজ পক্ষ থেকে কোনো সুবিধা বের করে দিবেন। তখন তোমরা নিজেদের অন্তরে লুক্কায়িত মনোভাবের জন্য লজ্জিত হবে”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৫১-৫২]
আল্লাহ তা‘আলার উক্ত ফরমান কতই না সুন্দর, সুস্পষ্ট ও অত্যন্ত সত্য। বর্তমান যুগের জাতীয়তাবাদী চিন্তাশীল অনেকেই এমন ধারণা করে যে, আমরা যদি কাফির তথা ইয়াহূদী, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, অগ্নিপূজক, ধর্ম বিদ্বেষী ও মুসলিম সবাই মিলে জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা নিয়ে একই ব্যানারের অধীনে একতাবদ্ধ না হই তাহলে একদা শত্রু পক্ষ আমাদেরকে খেয়ে ফেলবে, আমাদের সকল সম্পদ তারা ছিনিয়ে নিবে এবং আমাদের ওপরসমূহ বিপদ নেমে আসবে।
এ জন্যই তো দেখা যায়, যে কোনো ধর্ম, মত ও পন্থার অধিকারী ব্যক্তিবর্গ উক্ত জাতীয়তাবাদের ব্যানারের অধীনে সবাই একে অপরের খাঁটি বন্ধু, অথচ এ চেতনা সরাসরি কুরআন ও শরী‘আত পরিপন্থী এবং এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার দেওয়া সুস্পষ্ট সীমারেখার সরাসরি লঙ্ঘন। শরী‘আত বলে: ঈমানদার সে যে কোনো দেশ ও বর্ণের হোক না কেন তাকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে এবং কাফির সে যে কোনো দেশ ও বর্ণের হোক না কেন তাকে অবশ্যই শত্রু ভাবতে হবে।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুকে কখনো বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছো, অথচ তারা তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। উপরন্তু তারা রাসূল ও তোমাদেরকে নিজ এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে এ কারণে যে, তোমরা নিজ প্রভুর ওপর ঈমান এনেছো। তোমরা যদি সত্যিই আমার পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে থাকো এবং একমাত্র আমার সন্তুষ্টিই তোমাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তা হলে আর এমন করতে যেয়ো না। আমি দেখছি, তোমরা গোপনে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছো, অথচ আমি তোমাদের প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সবই জানি। যে ব্যক্তি এমন করবে সে অবশ্যই সত্য পথভ্রষ্ট”। [সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ১]
“তুমি আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো সম্প্রদায়কে এমন পাবে না যে, তারা আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের প্রকাশ্য বিরোধীদেরকে ভালোবাসবে। যদিও তারা তাদের বাপ-দাদা, ছেলে-সন্তান, ভাই-বোন কিংবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হোক না কেন। এ জাতীয় মানুষদের অন্তরেই আল্লাহ তা‘আলা ঈমানকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন নিজ রহমত ও সাহায্য দিয়ে। আর তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে অনেকগুলো নদ-নদী। সেখানে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সর্বদা সন্তুষ্ট থাকবেন এবং তারাও থাকবে তাঁর ওপর সর্বদা সন্তুষ্ট। এরাই হলো একান্ত আল্লাহর দল। আর আল্লাহর দলই তো হবে সর্বদা সফলকাম”। [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ২২]
“তোমাদের জন্য ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তারা নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিলো: তোমরা এবং আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে তোমরা যে মূর্তি সমূহের ইবাদাত করছো তা হতে আমরা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত পবিত্র। তোমাদেরকে আমরা এ মুহূর্তে বয়কট করছি এবং আজ হতে চিরকালের জন্য আমাদের ও তোমাদের মাঝে বলবৎ থাকবে শত্রুতা ও বিদ্বেষ যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনো”। [সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ৪]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিনদেরকে ছেড়ে কখনো কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি এরই মাধ্যমে নিজেদের শাস্তির জন্য আল্লাহ তা‘আলার হাতে কোনো সুস্পষ্ট সাক্ষ্য তুলে দিতে চাও”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪৪]
এ দিকে মুসলিমদের শত্রুর বিপক্ষে কাফির ও মুশরিকদের সহযোগিতা তাদের জন্য কখনোই নিরাপদ নয়। এ জন্যই তো আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধে জনৈক মুশরিক বারবার তাঁর সহযোগিতা করতে চাইলেও তিনি তা গ্রহণ করেন নি যতক্ষণ না সে মুসলিম হয়।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর অভিমুখে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে তিনি “ওয়াবারাহ” তথা বর্তমানের “হার্রাহ গারবিয়্যাহ” নামক এলাকায় পৌঁছুলে তাঁর নিকট জনৈক প্রসিদ্ধ বীর উপস্থিত হয়। যাকে দেখে সাহাবীয়ে কিরাম অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। উক্ত ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো: আমি আপনার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে এসেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি কি আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলে বিশ্বাসী? সে বললো: না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি চলে যাও। আমি কখনোই কোনো মুশরিকের সহযোগিতা নিতে পারি না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ কথা শুনে লোকটি চলে গেলো। তিনি বলেন, যখন আমরা (সাহাবায়ে কিরাম) “শাজারাহ” নামক এলাকায় পৌঁছলাম তখন লোকটি আবারো এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একই প্রস্তাব করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাকে একই উত্তর দিলেন। এরপর লোকটি চলে গেলো। ইতোমধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “বাইদা”’ নামক এলাকায় পৌঁছলে লোকটি আবারো এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একই প্রস্তাব করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি কি আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলে বিশ্বাসী? সে বললো: হ্যাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তাহলে তুমি আমাদের সাথে চলতে পারো। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৮১৭।]
তাদেরকে আমরা কিভাবেই বা বিশ্বাস করবো, অথচ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে তথা মুসলিমদেরকে ছেড়ে অন্য কাউকে খাঁটি বন্ধু কিংবা পরামর্শদাতারূপে গ্রহণ করো না। কারণ, তারা তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এতটুকুও সঙ্কোচবোধ করবে না। তোমাদের বিপর্যয়ই তাদের একান্ত কাম্য। ইদানিং তাদের মুখ থেকেই শত্রুতা প্রকাশ পেয়েছে। এ থেকে আন্দায করা যায়, তাদের অন্তরে লুকায়িত শত্রুতা আরো কতোই না ভয়ানক। আমি তোমাদের জন্য আমার সকল নিদর্শন সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছি। যদি তোমরা সত্যিই বুদ্ধিমান হয়ে থাকো তা হলে তোমরা তা অবশ্যই বুঝবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৮]
কাফির ও মুশরিকরা কখনো মুসলিমদের পক্ষ হয়ে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও তা কখনোই মুসলিমদের জন্য সামগ্রিক অর্থে কোনো ধরনের কল্যাণই বয়ে আনবে না। উপরন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোনো ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করলে তা একান্ত ক্ষতিরই কারণ হবে।
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফিরদের আনুগত্য করো তা হলে তারা তোমাদেরকে অবশ্যই পেছনের দিকে ফিরিয়ে নিবে। তখন তোমরা নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং আল্লাহ তা‘আলাই তোমাদের একমাত্র অভিভাবক এবং তিনিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী”।
“যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো তা হলে তারা তোমাদের কোনো লাভ তো করতোই না বরং তারা তোমাদের মাঝে আরো ফাসাদ বাড়িয়ে দিতো। আর এ ব্যাপারে তারা এতটুকুও ত্রুটি করতো না। তারা তো তোমাদের মাঝে সর্বদা ফিতনাই কামনা করে। উপরন্তু তোমাদের মাঝে রয়েছে তাদের বহু গোয়েন্দা। মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলা এ জাতীয় যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৪৭]
বস্ত্ততঃ মুমিন মুমিনেরই বন্ধু এবং কাফির কাফিরেরই বন্ধু। কাফির কখনো মুমিনের বন্ধু হতে পারে না। কুরআন নির্দেশিত উক্ত নিয়ম ভঙ্গ করলে সমাজে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই হবে না। উপরন্তু এ জাতীয় মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার রহমত বঞ্চিত হবে।
“মুমিন পুরুষ ও নারীরা একে অপরের বন্ধু। তারা একে অপরকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের আনুগত্য করবে। এঁদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অতিশয় পরাক্রমশালী অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৭১]
“এ দিকে কাফিররা একে অপরের বন্ধু। তোমরা যদি উপরোক্ত শত্রুতা ও মিত্রতার বিধান কার্যকর না করো, তাহলে এ পৃথিবীতে কঠিন ফিতনা ও মহা বিপর্যয় সৃষ্টি হবে”। [সূরা আনফাল, আয়াত: ৭৩]
বর্তমান বিশ্বে আল্লাহ তা‘আলার দেওয়া উক্ত বিধান কার্যকর না হওয়ার দরুনই আজ দেখা যাচ্ছে হরেক রকমের ফিতনা-ফাসাদ ও রং বেরংয়ের মহা বিপর্যয়। মুসলিমদের মধ্যেই আজ দেখা যাচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে প্রচুর সন্দেহ-সংশয়। আজ তারা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যজ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে। উপরন্তু তারা দিনদিন বাতিল ও বাতিলপন্থীদের প্রতি ধাবিত হচ্ছে। আরো কতো কি।
এ যুগে নামধারী আলিমদেরকে কিনতে পাওয়া যায়। তাই আজ বাতিল পন্থীরা এদের মাধ্যমে নিজেদের বাতিলকে সমাজে সহজভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কুরআন ও হাদীসের ঠুনকো লেবেল লাগানোয় ব্যস্ত। এ জন্যই দেখতে পাবেন, আজ দুনিয়ার বুকে এমন কোনো বাতিল পন্থী নেই যাদের সাথে নামধারী কোনো না কোনো আলিম সম্পৃক্ত নয়। তাই আলিম নামধারী কোনো না কোনো ব্যক্তি নিম্নোক্ত আয়াত থেকে খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্বের বৈধতা খোঁজার চেষ্টা করতে পারে।
“তুমি দুনিয়ার মানুষদের মাঝে মুমিনদের সাথে অধিক শত্রুতা পোষণকারী পাবে ইয়াহূদী ও মুশরিকদেরকে। আর মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব রাখার অধিকতর নিকটবর্তী পাবে ওদেরকে যারা নিজেদেরকে খ্রিস্টান বলে দাবি করে। আর তা এ কারণে যে, তাদের মধ্যে রয়েছে কিছু জ্ঞানপিপাসু ও সংসারত্যাগী এবং তারা অহঙ্কারীও নয়”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৮২]
তারা বলতে পারে, উক্ত আয়াত খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব জায়িয হওয়া প্রমাণ করে।
মনে রাখতে হবে, কোনো আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া জাহান্নামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই উক্ত আয়াতকে অন্যান্য আয়াত ও হাদীসের সাথে মিলালে যে মর্ম উদঘটিত হয় তা হচ্ছে, খ্রিস্টানদের কেউ কেউ উন্মুক্ত পড়াশুনা, নম্রতা ও সংসারত্যাগী স্বভাব ও মনোভাবের দরুন খাঁটি ঈমানদার ও মুসলিমদের উন্নত চরিত্র তথা মানবতাবোধে অভিভূত হয়ে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ার নিকটবর্তী হতে পারে। যা ইয়াহূদী ও মুশরিকদের থেকে কখনোই কল্পনা করা যায় না। উক্ত আয়াতের অর্থ এটা নয় যে, খ্রিস্টানরা মুমিনদের বন্ধু হয়ে যাবে, না মুমিনগণ খ্রিস্টানদের বন্ধু হবে। এমনকি যদিও ধরা হয় যে, খ্রিস্টানদের কেউ মুমিনদেরকে ভালোবাসলো কিংবা তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করলো তারপরও কোনো মু’মিনের জন্য জায়িয হবে না তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো। যা অন্যান্য আয়াত কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
তেমনিভাবে কোনো না কোনো ব্যক্তি নিম্নোক্ত আয়াত থেকেও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্বের বৈধতা খোঁজার চেষ্টা করতে পারে।
“দীন নিয়ে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদেরকে নিজ এলাকা থেকে বের করে দেয় নি তাদের প্রতি দয়া ও ইনসাফের আচরণ করতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে নিষেধ করেন নি। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ইনসাফকারীদেরকে ভালোবাসেন”। [সূরা আল-মুমতাহিনাহ, আয়াত: ৮]
তারা বলতে পারে, উক্ত আয়াত তাতে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব জায়িয হওয়া প্রমাণ করে।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তা‘আলারসমূহ বাণী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরসমূহ বিশুদ্ধ হাদীস মিলেই তো ইসলামী শরী‘আত। তাই যে কোনো বিষয়ে শরী‘আতের পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিকোণ জানার জন্য সে বিষয়ে নাযিলকৃত আল্লাহ তা‘আলারসমূহ বাণী এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরসমূহ বিশুদ্ধ হাদীস পরস্পর মিলিয়ে দেখতে হবে। সুতরাং উক্ত আয়াতকে অন্যান্য আয়াত ও হাদীসের সাথে মিলালে যে মর্ম উদঘটিত হয় তা হচ্ছে, কাফিররা মুসলিমদের সাথে কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হলে অথবা মুসলিমদের পক্ষ থেকে তাদের জান ও মালের কোনো ধরণের নিরাপত্তা দেওয়া হলে কিংবা তাদেরকে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে শর্তসাপেক্ষ বসবাস করার অনুমতি দেওয়া হলে মুসলিমরা তাদের সাথে দয়া ও ইনসাফের আচরণ করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীতেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। আস্মা’ বিন্ত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একদা আমার আম্মাজান মুশরিক থাকাবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলে আমি এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আমার মা তো ঈমানদার নন, অথচ তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন দুনিয়ার কোনো সুবিধা হাসিলের জন্য। এমতাবস্থায় আমি কি তাঁর সাথে আত্মীয়তার বন্ধন সুলভ আচরণ করতে পারি? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তুমি তোমার মায়ের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন সুলভ আচরণ করতে পারো। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০৩।]
একদা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে নববীর গেইটে একটি সিল্কের পোশাক বিক্রি হতে দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি এ পোশাকটি কিনে জুমার দিন কিংবা বাইরের কোনো প্রতিনিধি দল আপনার নিকট আসলে তাদের সামনে তা পরে বেরুতেন তাহলে আপনাকে খুবই সুন্দর লাগতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ জাতীয় পোশাক এমন লোকরাই পরে যাদের আখিরাতে কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছে নেই তথা কাফির-মুশরিক। কিছু দিন পর এ জাতীয় কিছু পোশাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলে তিনি তার একটি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কে দান করলেন। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে এ জাতীয় পোশাক পরাতে চাচ্ছেন, অথচ আপনি এ ব্যাপারে ইতোপূর্বে যা বলার বলেছেন তথা তা পরা হারাম করে দিয়েছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি তো তোমাকে তা পরতে দেইনি। অতএব, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু উক্ত পোশাকটি মক্কায় বসবাসরত তার এক মুশরিক ভাইকে দিয়ে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৬৮।]
বরং কাফিরদের সাথে এ জাতীয় দয়াময় আচরণ তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের প্রতি উৎসাহিত করবে। উপরন্তু তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা পাবে এবং তাদের মধ্যকার গরিব-দুঃখীদের প্রয়োজনও পূরণ হবে। তবে তা কখনোই তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা বুঝায় না।
৪. জাতীয়তাবাদী চেতনা শরী‘আত বিরোধী হওয়ার আরেকটি মূল কারণ হচ্ছে, এ জাতীয় চেতনা কুরআনের আইন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বিশেষ বাধা সৃষ্টি করে। কারণ, কোনো জাতীয়তাবাদী হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান কখনো নিজেদের রাষ্ট্রে ইসলামী আইন বাস্তবায়নে রাজি হবে না। তখন বাধ্য হয়ে উক্ত জাতীয়তাবাদী সরকার সবাইকে খুশি রাখার জন্য নিজেদের মানব রচিত বিধানের আলোকেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। আর মানব রচিত বিধানের আলোকে বিচার কার্য পরিচালনা করা মূলতঃ কুফুরীই বটে।
“অতএব, আপনার রবের কসম! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারে না যতক্ষণ না তারা আপনাকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিরোধের বিচারক বানিয়ে নেয় এবং আপনার সকল ফায়সালা নিঃসঙ্কোচে তথা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৫]
“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করে না সে তো ফাসিক”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৭]
সুতরাং যে রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি আল্লাহ তা‘আলার বিধান অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করে না এবং তা পছন্দও করে না সে রাষ্ট্র কাফির, যালিম ও ফাসিক রাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচিত হবে। প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যই কর্তব্য হবে এ জাতীয় রাষ্ট্রের প্রশাসনের সাথে শত্রুতা পোষণ করা। উপরন্তু এ জাতীয় রাষ্ট্রের প্রশাসনের সাথে বন্ধুত্ব করা হারাম যতক্ষণ না তারা আল্লাহ তা‘আলার বিধান বাস্তবায়ন করবে ও তার ওপর সন্তুষ্ট থাকবে।
“তোমাদের জন্য ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ; তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলোঃ তোমরা এবং আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে তোমরা যে মূর্তি সমূহের ইবাদাত করছো তা হতে আমরা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র। তোমাদেরকে আমরা অস্বীকার করছি এবং আজ হতে চিরকালের জন্য আমাদের ও তোমাদের মাঝে বলবৎ থাকবে শত্রুতা ও বিদ্বেষ যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনবে”। [সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত: ৪]
কেউ বলতে পারে, আমরা যদি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলিমের মাঝে কোনো ধরনের ব্যবধান সৃষ্টি না করে শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদের ব্যানারে সবাই একত্রিত হই তা হলে আমরা একদা এক অভূতপূর্ব শক্তিতে রূপান্তরিত হবো। তখন সবাই আমাদেরকে এক বাক্যে ভয় পাবে এবং আমাদের হৃতসমূহ অধিকার তারা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবে।
কেউ আরো বলতে পারে, আমরা যদি সত্যিকারার্থে শুধুমাত্র ইসলামকেই আকড়িয়ে ধরি এবং এরই ব্যানারে সবাই সঙ্ঘবদ্ধ হই তাহলে কাফিররা একদা আমাদের প্রতি যথেষ্ট শত্রুতা পোষণ করবে এবং তারা সর্বদা আমাদের জন্য অকল্যাণই ডেকে আনবে। কারণ, তখন তারা এ কথা ভেবে অবশ্যই ভয় পাবে যে, একদা হয়তো-বা আমরা তাদের সাথে ধর্মীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বো যাতে করে আমরা আমাদের সেই পূর্ব ঐতিহ্য ফিরিয়ে পেতে পারি।
মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই যদি নিরেট ইসলাম ও কুর’আনের ব্যানারে একতাবদ্ধ হই এবং আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধান এ জমিনের বুকে বাস্তবায়ন করি উপরন্তু কাফিরদের থেকে একেবারে ভিন্ন হয়ে তাদের প্রতি প্রকাশ্য শত্রুতা ঘোষণা দিয়ে নিজেদের স্বকীয় অস্তিত্ব দেখাতে পারি তা হলে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। তখন তিনি আমাদেরকে তাদের সকল ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদের অন্তরে আমাদের প্রতি প্রচুর ভয় ঢুকিয়ে দিবেন। আর তখন তারা অবশ্যই আমাদেরকে ভয় করবে এবং আমাদের সকল অধিকার পূর্ণাঙ্গরূপে ফিরিয়ে দিবে যেমনিভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলো সে যুগের কাফিররা আমাদের পূর্ব পুরুষ মুসলিমদেরকে। সে যুগে দুনিয়ার বুকে ইয়াহূদী-খ্রিস্টান কম ছিলো না। তবে তখন মুসলিমরা কখনোই তাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতায়নি এবং নিজেদের যে কোনো ব্যাপারে তাদের কোনো সহযোগিতা কামনা করেনি। বরং তারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকেই বন্ধু ও অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছিলো এবং সর্ব ব্যাপারে তাঁরই সাহায্য কামনা করেছিলো তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদেরকে শত্রুর ওপর জয়ী করেছেন। কুরআন, হাদীস ও ইসলামী ইতিহাস এর চাক্ষুষ প্রমাণ, যা মুসলিম এবং কাফির সবাই স্বীকার করতে বাধ্য।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিনে মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করতে বের হয়েছেন। মদীনায় তখন অনেক ইয়াহূদী ছিলো। কিন্তু তিনি তখন তাদের কারোর সহযোগিতা নেননি, অথচ তখন মুসলিমদের সংখ্যা খুবই কম ছিলো এবং অন্যের সহযোগিতা নেওয়ারও তখন বিশেষ প্রয়োজন ছিলো। তবুও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সহযোগিতা নেন নি। এমনকি তিনি উ’হুদের যুদ্ধেও ইয়াহূদীদের কোনো সহযোগিতা নেন নি, অথচ তখন মুনাফিকদের সর্দারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা নেওয়ার বিশেষ প্রস্তাব এসেছিলো; কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিমদের জন্য কোনো কাফিরের সহযোগিতা নেওয়া ঠিক নয় এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদেরকে মুসলিম সেনা বাহিনীতে জায়গা দেওয়াও জায়িয নয়। কারণ, তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া নিশ্চিত নয়। বরং তারা যে কোনো সূত্রে মুসলিমদের সাথে মিশে গেলে মারাত্মক ফাসাদ সৃষ্টি হবে। মুসলিমদের চরিত্র বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং কাফিররা মুসলিমদের মাঝে ইসলামের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করারও সুযোগ পাবে। যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের নিয়মে চলা নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করে না সত্যিকারার্থে অন্য কোনো পদ্ধতি তাদেরকে কোনো ধরণের লাভই দিতে পারবে না।
এ দিকে সকল মুসলিম শুধুমাত্র ইসলামের ব্যানারেই সঙ্ঘবদ্ধ হলে কাফিররা যে তাদের সাথে কঠিন বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করবে তা স্বাভাবিক যা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন এবং এরই ভিত্তিতে তিনি তাদেরকে সহযোগিতা করবেন। কারণ, মুসলিমরা কাফিরদেরকে শত্রু বানিয়েছে তো একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য এবং তাঁরই দীন ও শরী‘আতকে রক্ষা ও দুনিয়ার বুকে বিজয়ী করার জন্য।
মনে রাখতে হবে, কাফিররা কখনোই মুসলিমদের সাথে তাদের শত্রুতা বন্ধ করবে না যতক্ষণ না মুসলিমরা তাদের মতোই কাফির হয়ে যায় এবং তাদের দলে যোগ দেয়। আর কোনো মুসলিমের এমন পথ অবলম্বন করা মহা ভ্রষ্টতা ও প্রকাশ্য কুফুরী বৈ কি। তেমনিভাবে তা দুনিয়া ও আখিরাতে সকল শাস্তি ও দুর্ভোগের কারণ।
“ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা কখনোই তোমার ওপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ করবে। তুমি মুসলিমদেরকে বলে দাও, আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত হিদায়াতই সঠিক হিদায়াত। তুমি যদি তোমার নিকট আসা সত্য জ্ঞানের অনুসারী না হয়ে তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো তা হলে তুমি নিজকে আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে রক্ষা করার মতো কাউকে বন্ধু ও সাহায্যকারীরূপে পাবে না”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১২০]
“তারা কখনোই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করা বন্ধ করবে না যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে ধর্মচ্যুত করতে পারে। যদি তাদের পক্ষে তা করা সম্ভবপর হয়। তোমাদের মধ্যে যারা ধর্মচ্যুত হয়ে কাফির অবস্থায় মারা যাবে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সকল আমল নিষ্ফল বলে গণ্য হবে। উপরন্তু তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১৭]
“আমরা তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি সুস্পষ্ট একটি শর‘ঈ বিধানের ওপর। সুতরাং তুমি তারই অনুসরণ করবে। কখনো মূর্খদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। কারণ, তারা কখনোই তোমাকে আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না। বরং যালিমরা একে অপরের বন্ধু। তবে আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র আল্লাহভীরুদেরই বন্ধু”। [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ১৮-১৯]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে এ জাতীয়তাবাদী চেতনার মহামারী থেকে রক্ষা করুন। আমীন। সুম্মা আমীন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/23/15
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।