hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

কতিপয় দীনী বিষয় যা একজন মুসলিমের জানা প্রয়োজন

লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইবন আব্দুল আযীয আল-মাদানী

দলীলসহ ইসলামের পাঁচটি রুকন
মানব সমাজের সমূহ কল্যাণ একমাত্র সত্য দীন পালনের ওপরই নির্ভরশীল। আর এর প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা এতো বেশি যতটুকু না তাদের প্রয়োজন খাদ্য, পানি ও বায়ুর প্রতি। কারণ, মানুষের কর্মকাণ্ড তো সাধারণত দু’ ধরনের। তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে অথবা অকল্যাণ। আর সর্বদা নিরেট কল্যাণ সংগ্রহ করা ও সমূহ অকল্যাণ থেকে রক্ষা পাওয়ার শিক্ষাই তো যে কোনো সত্য ধর্ম দিয়ে থাকে। আমাদের ধর্মের আবার তিনটি স্তর রয়েছে। ইসলাম, ঈমান ও ইহসান। ইসলাম বলতে ধর্মের কিছু প্রকাশ্য মৌলিক কর্মকাণ্ডকেই বুঝানো হয়, যা আমাদের দীনের জন্য পাঁচটি। আর ঈমান ও ইহসান বলতে ধর্মের কিছু অপ্রকাশ্য মৌলিক কর্মকাণ্ডকেই বুঝানো হয়, যা আমাদের দীনের জন্য পর্যায়ক্রমে ছয়টি ও দু’টি। সংখ্যার দিক দিয়ে মুসলিম ধার্মিকের সংখ্যা বেশি। তারপর মুমিন এবং তারপর মুহসিন। আর বিশেষত্বের দিক দিয়ে সব চাইতে ব্যাপক হচ্ছে মুহসিন। তারপর মুমিন এবং তারপর মুসলিম। কারণ, যে মুহসিন সে অবশ্যই মুমিন ও মুসলিম। আর যে মুমিন সে অবশ্যই মুসলিম। এর বিপরীতে যে কোনো মুসলিম সে মুমিন কিংবা মুহসিন নাও হতে পারে। তেমনিভাবে যে কোনো মুমিন সে মুহসিন নাও হতে পারে।

ইসলাম মানে আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর আনুগত্য প্রতিষ্ঠা এবং শির্ক ও মুশরিক, কুফুর ও কাফির থেকে অবমুক্তির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সামনে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ وَإِلَى ٱللَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٢٢﴾ [ لقمان : ٢٢ ]

“কেউ যদি সৎ কর্মপরায়ণ হয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকট একান্তভাবে আত্মসমর্পণ করে তাহলে সে যেন দৃঢ়ভাবে এক মজবুত হাতল হস্তে ধারণ করলো। কারণ, সকল কর্মকাণ্ডের পরিমাণ তো একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই এখতিয়ারে”। [সূরা লোকমান, আয়াত: ২২]

ইসলামের রুকন পাঁচটি:

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ »

“ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পাঁচটি বস্তুর ওপর”। সেগুলো হলো:

ক. এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।

খ. সালাত কায়েম করা।

গ. যাকাত আদায় করা।

ঘ. হজ করা।

ঙ. রমাযানের সাওম পালন করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬।]

উক্ত রুকনগুলো সংক্ষেপে নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১. শাহাদাতাইন:

আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে এ কথা কায়মনোবাক্যে স্বীকার করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোনো মাবূদ নেই। তিনি ছাড়া দুনিয়াতে আর যত ব্যক্তি বা বস্তুর পূজা করা হচ্ছে তা সবই বাতিল। এর আবার দু’টি রুকন রয়েছে যা হলো:

ক. আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত যে আর কেউ নেই এ কথা বিশ্বাস করা। অন্য কথায়, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য যে কোনো বস্তু বা ব্যক্তির ইবাদাতকে অস্বীকার করা।

খ. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই যে ইবাদতের উপযুক্ত এ কথা মনেপ্রাণে স্বীকার ও বিশ্বাস করা।

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া যে, তিনি যে কোনো ব্যাপারেই যা সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে ধারণা করা। তিনি যা আদেশ করেছেন তা যথাসাধ্য পালন করা। তিনি যা করতে নিষেধ করেছে তা হতে একেবারেই বিরত থাকা। একমাত্র তাঁর নির্দেশিত শরী‘আত অনুসারেই আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করা।

২. যথাযথভাবে পাঁচ বেলা সালাত নিয়মিত কায়েম করা:

প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর ওপরই এ সালাতগুলো পড়া ফরয। নিরাপদ ও আতঙ্কিতাবস্থায়, সুস্থ ও অসুস্থাবস্থায়, নিজ এলাকা ও অন্য যে কোনো জায়গায় তথা সর্বাবস্থায় তা পড়তে হয়। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী সংখ্যা ও ধরনে শরী‘আতে কিছু ছাড় রয়েছে। সালাত হচ্ছে নূর, ধর্মের বিশেষ স্তম্ভ, আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার মাঝে সম্পর্কোন্নয়নের একটি বিশেষ মাধ্যম। সালাতের যেমন একটি বাইরের দিক তথা দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সাজদাহ এমনকি আরো অন্যান্য কথা ও কাজ রয়েছে তেমনিভাবে তার একটি ভিতরের দিক তথা অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার মহত্ব, মর্যাদা, আনুগত্য, ভয়, ভালোবাসা, প্রশংসা, কৃতজ্ঞতা, নম্রতা ইত্যাদিও রয়েছে। এর বাহ্যিক দিকটুকু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সম্পাদন করেছেন সেভাবেই করতে হয়। আর এর অভ্যন্তরীণ দিকটুকু আল্লাহ তা‘আলার প্রতি খাঁটি ঈমান, বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও বিনম্রতার মাধ্যমেই সংঘটিত হয়।

সালাত একজন নিষ্ঠাবান সালাত আদায়কারীকে যে কোনো অপকর্ম থেকে দূরে রাখে এবং তার সকল পাপ মোচনের একটি বিশেষ কারণ হয়।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ قَالوا : لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ قَالَ : فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا»

“তোমাদের কি মনে হয়, যদি তোমাদের কারোর ঘরের দরজার পার্শ্বে একটি নদী থাকে আর সে তাতে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে তা হলে তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে কি? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না। তার শরীরে সত্যিই কোনো ময়লা থাকবে না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তেমনিভাবে কেউ দৈনিক পাঁচ বেলা সালাত পড়লে আল্লাহ তা‘আলা তার সকল গুনাহ মুছে দিবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৭।]

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতেরই হিসাব হবে। যে ব্যক্তি নিজের ওপর দৈনিক পাঁচ বেলা সালাত ফরয হওয়া তথা এর বাধ্যবাধকতা অস্বীকার করলো সে তো অবশ্যই কাফির। এতে কোনো আলিমের কোনো ধরনের দ্বিমত নেই। তবে কেউ অলসতা করে সালাত পড়া ছেড়ে দিলে সে এ ব্যাপারে ইতোপূর্বে না জেনে থাকলে তাকে তা জানানো হবে আর জেনে থাকলে তাকে তিন দিন তাওবার সুযোগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাওবা না করলে তার উপর মুরতাদ হিসেবে (সরকারী আদেশে) ফৌজদারী দন্ডবিধি কার্যকর করা হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَإِخۡوَٰنُكُمۡ فِي ٱلدِّينِۗ﴾ [ التوبة : ١١ ]

“অতএব, তারা যদি তাওবা করে নেয় এবং সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদেরই মুসলিম ভাই”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১]

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ»

“কোনো ব্যক্তি এবং কুফর ও শির্কের মাঝে ব্যবধান শুধু সালাত না পড়ারই। যে সালাত ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেলো”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮২।]

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ»

“যে নিজ ধর্ম পরিবর্তন করলো তাকে তোমরা হত্যা করো”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০১৭।]

৩. সক্ষম হলে যাকাত দেওয়া:

সম্পদ তখনই কারোর ফায়েদায় আসবে যখন তাতে তিনটি শর্ত পাওয়া যাবে। সেগুলো হলো:

ক. সম্পদগুলো হালাল হওয়া।

খ. সম্পদগুলো আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য থেকে বিমুখ না করা।

গ. তা থেকে আল্লাহর অধিকার আদায় করা।

যাকাতের শাব্দিক অর্থ: প্রবৃদ্ধি, বেশি ও অতিরিক্ত। আর যাকাত বলতে বিশেষ কিছু সম্পদের নির্দিষ্ট একটি বাধ্যতামূলক অংশকে বুঝায় যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিছু সংখ্যক বিশেষ লোকদেরকে অবশ্যই দিতে হয়।

যাকাত মূলতঃ মক্কায় ফরয করা হয়েছে, তবে এর নিসাব (যতটুকু সম্পদ হলে যাকাত দিতে হয়), যে যে সম্পদে যাকাত দিতে হয়, যাকাত ব্যয়ের ক্ষেত্র ইত্যাদি দ্বিতীয় হিজরী সনে নির্ধারিত হয়। যাকাত ইসলামের তৃতীয় একটি বিশেষ রুকন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيۡهِمۡۖ إِنَّ صَلَوٰتَكَ سَكَنٞ لَّهُمۡۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ١٠٣﴾ [ التوبة : ١٠٣ ]

“(হে নবী!) তুমি ওদের ধন-সম্পদ থেকে সাদাকা তথা যাকাত গ্রহণ করো। যা তাদেরকে পাক ও পবিত্র করবে। উপরন্তু তাদের জন্য দো‘আ করো। নিশ্চয় তোমার দো‘আ তাদের জন্য শান্তির কারণ হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তো সত্যিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাত”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১০৩]

যাকাতে বাহ্যত সম্পদ কমলেও বস্তুতঃ তাতে বরকত হয় ও পরিমাণে তা অনেক গুণ বেড়ে যায়। উপরন্তু যাকাত আদায়কারীর ঈমান উত্তরোত্তর বেড়ে যায় এবং তার মধ্যে ধীরে ধীরে দানের অভ্যাস গড়ে উঠে। তেমনিভাবে যাকাত আদায়ে গুনাহ মাফ হয় এবং তা জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি বিশেষ মাধ্যম। উপরন্তু যাকাত আদায় করলে যাকাত আদায়কারীর অন্তর কার্পণ্য ও দুনিয়ার অদম্য লোভ-লালসা থেকে মুক্ত হয়। গরীবদের সাথে ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। সম্পদ বিপদাপদ থেকে রক্ষা পায় ইত্যাদি ইত্যাদি।

যে যে বস্তুতে যাকাত আসে: স্বর্ণ-রূপা, টাকা-পয়সা, গরু, ছাগল, উট, জমিনে উৎপন্ন ফসলাদি ও শস্য যা মাপা ও ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রহ করা যায় এবং ব্যবসায়ী পণ্য।

স্বর্ণ ৮৫ গ্রাম ও রূপা ৫৯৫ গ্রাম হলে এবং তার ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে শতকরা ২.৫% হারে তার যাকাত দিতে হয়। তেমনিভাবে টাকা-পয়সা উপরোক্ত স্বর্ণ কিংবা রূপার কোনো একটির পরিমাণে পৌঁছলে শতকরা ২.৫% হারে তারও যাকাত দিতে হয়। তেমনিভাবে গরু, উট কিংবা ছাগল পুরো বছর অথবা বছরের বেশিরভাগ সময় চারণভূমিতে চরে খেলে গরু ত্রিশটি হলে তা থেকে একটি এক বছরের গরু, ছাগল চল্লিশটি হলে তা থেকে একটি ছাগল এবং উট পাঁচটি হলে একটি ছাগল দিতে হয়। অনুরূপভাবে ফসলাদি ও শস্য ৭৫০ কিলো হলে এবং তা বিনা সেচে উৎপন্ন হলে তা থেকে দশ ভাগের এক ভাগ আর সেচ দিতে হলে তা থেকে বিশ ভাগের এক ভাগ দিতে হয়। আর যে কোনো ব্যবসায়ী পণ্য স্বর্ণ কিংবা রূপার কোনো একটির পরিমাণে পৌঁছুলে শতকরা ২,৫% হারে তারও যাকাত দিতে হয়।

যারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত: ফকীর, মিসকীন, যাকাত উসুল ও সংরক্ষণকারী, যাদের অচিরেই মুসলিম হওয়ার আশা করা যায়, কেনা গোলাম যে টাকার বিনিময়ে নিজকে স্বাধীন করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, ঋণ আদায়ে অক্ষম এমন ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথের যোদ্ধা, দা‘ঈ ও সম্বলহারা মুসাফির।

৪. রামাযান মাসে সিয়াম পালন:

অন্তরের বিশুদ্ধতা ও প্রশান্তি নিজ প্রভুর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যেই নিহিত। আর বেশি খানাপিনা, বেশি কথা, বেশি ঘুম ও অন্য মানুষের সঙ্গে বেশি মেলামেশা এ পথে বিরাট বাধা। তাই আল্লাহ তা‘আলা মাঝে মাঝে বেশি খানাপিনা থেকে মানুষকে দূরে রাখার জন্য এ জাতীয় সাওমর ব্যবস্থা করেন। সিয়ামের শাব্দিক অর্থ সংযম, উপবাস ইত্যাদি। আর সাওম বলতে খানাপিনা, সহবাস ও অন্যান্য সাওম ভঙ্গকারী বস্তুসমূহ হতে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্য ডুবা পর্যন্ত সাওমর নিয়্যাতে ও সাওয়াবের আশায় বিরত থাকাকে বুঝায়। সাওম আল্লাহভীতি শিক্ষা দেয় এবং তা সাওম পালনকারীর মধ্যে ধীরে ধীরে নিজ কুপ্রবৃত্তি দমন, গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো দায়িত্ব পালন, অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া ও কষ্টের কাজে ধৈর্য ধারণের মতো ভালো ভালো অভ্যাস গড়ে তোলায় বিশেষ সহযোগিতা করে।

সাওম দ্বিতীয় হিজরী সনে ফরয করা হয়। রামযান মাস হচ্ছে মাসগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। সাওমর প্রতিদান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ হাতেই দিবেন। কেউ খাঁটি ঈমান নিয়ে একমাত্র সাওয়াবের আশায় পুরো মাস সাওম থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন এবং সে জান্নাতে “রাইয়ান” নামক গেইট দিয়ে ঢুকার সুযোগ পাবে যা একমাত্র সাওমদারদের জন্যই নির্ধারিত। উপরন্তু রামাযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোর একটি রাত শবে ক্বদররূপে সংঘটিত হতে পারে যা হাজার মাস তথা ৮৩ বছর ৪ মাসের চাইতেও উত্তম। উক্ত রাতে কেউ খাঁটি ঈমান নিয়ে একমাত্র সাওয়াবের আশায় নফল সালাত ও দো‘আয় ব্যস্ত থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। তবে সে রাতে নিম্নোক্ত দো‘আটি বেশি বেশি বলার চেষ্টা করবে:

«اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي»

“হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু। অন্যকে ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন”। [তিরমিযী, হাদীস ৩৫১৩; ইবন মাজাহ, হাদীস ৩৮৫০।]

রামাযানের সাওম মুসলিম, সাবালক, জ্ঞান সম্পন্ন, সাওম রাখতে সক্ষম, নিজ এলাকায় অবস্থানরত এমন প্রতিটি পুরুষ ও মহিলার ওপরই ফরয, তবে মহিলাদেরকে এরই পাশাপাশি ঋতুস্রাব, প্রসবোত্তর স্রাব থেকেও মুক্ত থাকতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে যেমনিভাবে তা ফরয করা হয়েছে পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩]

কেউ দিনের বেলায় ইচ্ছাকৃত, সাওমের কথা মনে রেখে, জেনেশুনে যে কোনো খাদ্যপানীয় গ্রহণ করলে, সহবাস করলে, যে কোনোভাবে বীর্যপাত করলে অথবা খাদ্যের কাজ করে এমন কোনো ইঞ্জেকশন গ্রহণ করলে তার সাওম ভেঙ্গে যাবে। তেমনিভাবে মহিলাদের ঋতুস্রাব ও প্রসবোত্তর স্রাব হলেও সাওম ভেঙ্গে যায়। অনুরূপভাবে মুরতাদ (দীন ইসলাম ত্যাগকারী) হলেও। উক্ত যে কোনো কারণে সাওম ভেঙ্গে গেলে তার পরিবর্তে আরেকটি সাওম কাযা দিতে হবে। তবে সাওমের দিনে সহবাস করলে কাযা, কাফ্ফারা উভয়টিই দিতে হবে। উপরন্তু সে মহাপাপীরূপেও বিবেচিত হবে। আর কাফ্ফারা হচ্ছে একটি কেনা গোলাম স্বাধীন করা। তা সম্ভবপর না হলে দু’ মাস লাগাতার সাওম রাখা। আর তাও সম্ভবপর না হলে ষাট জন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো। তাও সম্ভবপর না হলে আর কিছুই দিতে হবে না।

৫. সক্ষম হলে হজ করা:

হজ হচ্ছে মুসলিম ঐক্য ও ইসলামী ভাতৃত্বের এক বিশেষ নিদর্শন। হজ ধৈর্য শেখারও এক বিশেষ ক্ষেত্র। তেমনিভাবে হজ বেশি বেশি সাওয়াব কামানো এবং নিজের সকল গুনাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে মাফ করানো এমনকি তা জান্নাত পাওয়ারও একটি বিশেষ মাধ্যম। উপরন্তু হজের মাধ্যমে বিশ্বের সকল ধনী মুসলিমগণ একে অন্যের সাথে পরিচিত হয়ে তাদের সার্বিক অবস্থা জানতে পারেন।

হজ ইসলামের একটি বিশেষ রুকন। যা নবম হিজরী সনে ফরয করা হয়। অতএব, তা মুসলিম, সাবালক, স্বাধীন, জ্ঞান সম্পন্ন, হজ করতে সক্ষম এমন প্রতিটি পুরুষ ও মহিলার ওপরই ফরয, যা দ্রুত জীবনে একবারই করতে হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧﴾ [ ال عمران : ٩٧ ]

“আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার উদ্দেশ্যে এ ঘরের হজ করা সে সকল লোকের ওপর অবশ্যই কর্তব্য, যারা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সেখানে পৌঁছুতে সক্ষম। কেউ তা করতে অস্বীকার করলে তার এ কথা অবশ্যই জানা উচিৎ যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রতি অমুখাপেক্ষী”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯]

মহিলাদের হজের সক্ষমতার মধ্যে তাদের সাথে নিজ স্বামী কিংবা অন্য যে কোনো মাহরাম (যে পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উক্ত মহিলার জন্য হারাম) থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কোনো মহিলা হজ কিংবা উমরাকালীন সময়ে ঋতুবতী অথবা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাবে উপনীত হলে গোসল করে হজ কিংবা উমরাহ’র ইহরাম করবে এবং এমতাবস্থায় সে তাওয়াফ ছাড়া হজের অন্যান্য কাজ করবে অতঃপর পবিত্র হলে গোসল করে হজের বাকি কাজগুলো সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাবে। আর উমরাহ’র সময় ইহরাম অবস্থায় থাকবে এবং পবিত্র হওয়ার পর গোসল করে উমরাহ’র কাজগুলো সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাবে।

হজ বা উমরাহ করে নফল উমরাহ’র নিয়্যাতে মক্কা থেকে বের হবে না, বরং সে ইচ্ছে করলে হারাম এলাকায় থেকে বার বার নফল তাওয়াফ করবে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জন্যই তান‘ঈমে গিয়ে উমরাহ করার অনুমতি দিলেন কারণ, তিনি ঋতুবতী হওয়ার দরুন হজের উমরাহ করতে পারেন নি।

বাচ্চা যদি বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন হয় তা হলে সে সাবালক হওয়ার পূর্বেই নফল হজের ইহরাম করে তা সম্পন্ন করতে পারে। তেমনিভাবে কোনো অভিভাবক তার ছোট বাচ্চার পক্ষ থেকেও নিজ ইহরামের পাশাপাশি তার জন্যও ইহরামের নিয়্যাত করে তাকে সাথে নিয়ে হজ বা উমরাহ’র কাজগুলো যা সে বাচ্চা আংশিক বা পুরোপুরি করতে পারছে না তা সম্পন্ন করবে এবং সে অভিভাবকই তার সাওয়াব পাবে, তবে নাবালক ছেলের কোনো হজ ও উমরাহ ফরয হিসেবে ধর্তব্য হবে না। সাবালক হওয়ার পর তাকে তা আবারো ফরয হিসেবে করতে হবে।

হারাম এলাকায় যেমন সালাতের সাওয়াব বাড়িয়ে দেওয়া হয় তেমনিভাবে তাতে গুনাহ’র ভয়ানকতাও বেড়ে যায়। তাতে কোনো মুশরিক বা কাফির ঢুকতে পারে না। তাতে যুদ্ধ শুরু করা ও “ইযখির” ছাড়া অন্য কোনো উদ্ভিদ ও গাছপালা কাটা হারাম। কারোর কোনো হারানো জিনিস প্রচারের নিয়্যাত ছাড়া রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নেওয়া হারাম। উপরন্তু তাতে কোনো প্রাণীকে শিকারের জন্য ধাওয়া করা ও তাকে হত্যা করা হারাম।

হজ ও উমরাহ, সালাত ও ইসলামের অন্যান্য রুকনগুলো বিস্তারিত বিশুদ্ধ বইপত্র কিংবা বিজ্ঞ আলিম থেকে জেনে নিবেন। এ স্বল্প পরিসরে তা বিস্তারিত উল্লেখ করা যাচ্ছে না।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন