মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মানুষ বলতেই এ দুনিয়াতে কেউ একাকী বসবাস করতে পারে না। তাই আমাদের সকলকেই মানুষ হিসেবে নিজ সামাজিক জীবনে একে অপরের সাথে মিলেমিশেই থাকতে হয়। এই সুবাদে সমাজের ধনী ও শক্তিশালীরা গরিব ও দুর্বলদের অধিকার নষ্ট করতেই পারে। তেমনিভাবে সমাজের গরীব ও দুর্বলরা সমাজের শক্তিশালী শ্রেণী কর্তৃক নির্যাতিত এবং নিপীড়িতও হতে পারে। তাই ইসলামী শরী‘আত সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট অধিকার চিহ্নিত করেছে যা কারো কর্তৃক দলিত হলে যে কোনো যুগের ইসলামী প্রশাসন কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে তা উদ্ধার করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতিবেশী বলতে এমন সকল ব্যক্তিকে বুঝানো হয় যিনি বাসস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মক্ষেত্রের দরুন আপনার পাশেই অবস্থান করছেন।
প্রতিবেশী আবার তিন প্রকার:
ক) যে কোনো মুসলিম আত্মীয় প্রতিবেশী। যে ব্যক্তি ইসলাম, আত্মীয়তার বন্ধন ও প্রতিবেশী হওয়ার দরুন আপনার কাছ থেকে সর্বমোট তিনটি অধিকার পাবে। মুসলিম, আত্মীয় ও প্রতিবেশী হওয়ার অধিকার।
খ) যে কোনো মুসলিম অনাত্মীয় প্রতিবেশী। যে ব্যক্তি ইসলাম ও প্রতিবেশী হওয়ার দরুন আপনার কাছ থেকে সর্বমোট দু’টি অধিকার পাবে। মুসলিম ও প্রতিবেশী হওয়ার অধিকার।
গ) যে কোনো অমুসলিম কাফির প্রতিবেশী। যে ব্যক্তি শুধুমাত্র প্রতিবেশী হওয়ার দরুন আপনার কাছ থেকে একটিমাত্র অধিকার পাবে। শুধু প্রতিবেশী হওয়ার অধিকার।
ইসলামে প্রতিবেশীর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যা নিম্নে প্রদত্ত হলো:
১. আল্লাহ তা‘আলা প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি সযত্ন হতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন,
“তোমরা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করো। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। আরো ভালো ব্যবহার করো আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সাথি কিংবা সফরসঙ্গী, পথিক ও গোলাম অথবা অধিনস্থ কাজের লোকের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অহঙ্কারী আত্মাভিমানীকে ভালোবাসেন না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম বারবার আমাকে প্রতিবেশীর প্রতি যত্নবান হতে অসিয়ত করছিলেন। এমনকি আমার মনে হচ্ছিলো তিনি প্রতিবেশীকে আমার ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২৫।]
২. প্রতিবেশীর প্রতি দুর্ব্যবহার করা জাহেলী যুগের অভ্যাস যা পরিবর্তনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন। এ ব্যাপারটি সুস্পষ্টভাবে জানা যায় হযরত জাফর ইবন আবু তালিবের বর্ণনা থেকে যখন তিনি সম্রাট নাজ্জাশীর সামনে তখনকার যুগের নব ধর্ম তথা ইসলামের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন,
“হে রাষ্ট্রপতি! আমরা তো ছিলাম একদা জাহিল সম্প্রদায়। মূর্তি পূজা করতাম। মৃত পশু খেতাম। সর্ব প্রকার অশ্লীল কাজে লিপ্ত ছিলাম। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতাম। প্রতিবেশীদের সাথে দুর্ব্যবহার করতাম। আমাদের মধ্যকার শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বলের অধিকার হরণ করতো। আমরা এমতাবস্থায় ছিলাম। একদা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের মাঝে এমন এক ব্যক্তিকে রাসূল হিসেবে পাঠিছেন যার বংশ, সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা ও সাধুতা সম্পর্কে আমরা ইতোপূর্বেই অবগত ছিলাম। তিনি আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার দিকে ডাকলেন তাঁর একক ইবাদত ও তিনি ভিন্ন অন্য যে পাথর ও মূর্তির ইবাদত আমরা ও আমাদের পূর্বপুরুষরা করতাম তা পরিহার করতে। তিনি আমাদেরকে সত্য কথা বলা, আমানতদারিতা ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা, প্রতিবেশীর সাথে ভালো ব্যবহার করা, হারাম কাজ ও রক্তপাত বন্ধ করতে আদেশ করেন এবং অশ্লীলতা, মিথ্যা কথা, এতিমের সম্পদ খাওয়া ও সতী-সাধ্বী মহিলাকে অপবাদ দিতে নিষেধ করেন”। [আহমাদ, হাদীস নং ১৭৪০।]
৩. প্রতিবেশীর প্রতি দয়া ও তার অধিকার রক্ষা করলে যেমন প্রতিবেশীর নিকট শ্রেষ্ঠ হওয়া যায় তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলার নিকটও। আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“কেউ তার সাথির নিকট শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকটও সে একজন শ্রেষ্ঠ সাথীরূপে বিবেচিত। আর কেউ তার প্রতিবেশীর নিকট শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকটও সে একজন শ্রেষ্ঠ প্রতিবেশী”। [তিরমিযী, হাদীস ১৯৪৪।]
৪. প্রতিবেশীর প্রতি দয়া ও তার অধিকার রক্ষা করা গুনাহ মাফের একটি বিশেষ মাধ্যম।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
“কোনো মুসলিম মারা গেলে তার নিকটতম প্রতিবেশী তিনটি ঘর যদি তার ব্যাপারে সত্যিকারার্থে ভালো হওয়ার সাক্ষ্য দেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি লোকটি সম্পর্কে তার দৃশ্যমান ব্যাপারসমূহে আমার বান্দার সাক্ষ্য গ্রহণ করলাম। আর তার অদৃশ্যমান ব্যাপারসমূহ আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। যা একমাত্র আমিই জানি। আর কেউ জানে না”। [আহমাদ, হাদীস ৮৯৭৭।]
৫. প্রতিবেশীর প্রতি দয়া ও তার অধিকার রক্ষা করলে দুনিয়াতে মানুষের ভূয়সী প্রশংসা পাওয়া যায়। আর এর বিপরীতে পাওয়া যায় সমূহ লাঞ্ছনা ও তিরস্কার।
স্বনামধন্য বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ইবন ইসহাক রহ. বলেন, একদা হাসসান ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু এক আরব গোত্রের নিন্দা করতে গিয়ে বলেন। যারা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু সাহাবীগণকে ‘রাজী’ নামক কুপ এলাকায় হত্যা করেছিলো। তিনি বলেন,
“তোমার যদি মনে চায় কারোর নিরেট গাদ্দারি সম্পর্কে জানতে তা হলে তুমি রাজী’ নামক কুপ এলাকায় গিয়ে বনী লেহইয়ান সম্পর্কে লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করো। তখন তুমি জানতে পারবে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা প্রতিবেশীর অধিকার আত্মসাৎ করে। এমনকি কুকুর, বানর ও মানুষ সবই তাদের নিকট সম-মর্যাদার। কখনো কোনো ছাগল কথা বলতে পারলে সেই তাদের মাঝে বক্তা হিসেবে খ্যাতি পাবে। উপরন্তু সে ছাগলই হবে তাদের মধ্যকার একজন সম্মানী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি”। [আর-রাওযুল-উনফ ৩/৩৭৪।]
৬. প্রতিবেশীর সাথে কোনো দোষ করা অত্যন্ত ভয়ানক অন্যান্যর সাথে একই দোষ করার চাইতে।
মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল নিজ সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তোমরা ব্যভিচার সম্পর্কে কি বলো? সাহাবীগণ বললেন: আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল তা হারাম করে দিয়েছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকবে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা অত্যন্ত ভয়ানক অন্য দশটি মহিলার সাথে ব্যভিচার করার চাইতে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, তোমরা চুরি সম্পর্কে কি বলো? সাহাবীগণ বললেন: আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল তা হারাম করে দিয়েছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত হারাম থাকবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিজ প্রতিবেশীর ঘর থেকে চুরি করা অত্যন্ত ভয়ানক অন্য দশটি ঘর থেকে চুরি করার চাইতে”। [আহমাদ, হাদীস নং ২৩৯০৫।]
৭. কারোর প্রতিবেশী নেককার হওয়া তার মহা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিপরীতে কারোর প্রতিবেশী বদকার হওয়া তার মহা দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।
সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“চারটি জিনিস সৌভাগ্যের: নেককার স্ত্রী, প্রশস্ত ঘর, নেককার প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন। আর চারটি জিনিস হচ্ছে দুর্ভাগ্যের: বদকার প্রতিবেশী, বদকার স্ত্রী, সংকীর্ণ ঘর ও আরামহীন বাহন”। [ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৪০৩২।]
উপরোক্ত বিষয়সমূহ থেকে শরী‘আতে প্রতিবেশীর প্রতি গুরুত্বের ব্যাপারটি সবার নিকট সুস্পষ্ট হয়ে যায়। এবার আমাদের জানতে হবে যে, শরী‘আত প্রতিবেশীকে এমন কিছু অধিকার দিয়েছে যার প্রতি সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি সচেতন হলে সমাজে পরস্পর প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। উপরন্তু সে সমাজ হবে ইসলামের দৃষ্টিতে একটি আদর্শ সমাজ। নিম্নে প্রতিবেশীর অধিকারগুলো সংক্ষিপ্তাকারে উদ্ধৃত হলো।
১. প্রতিবেশীকে যে কোনোভাবে কষ্ট না দেওয়া। এটি একজন প্রতিবেশীর একান্ত প্রাপ্য। সুতরাং কেউ ঈমানের দাবি করে নিজ প্রতিবেশীকে যে কোনোভাবে কষ্ট দিতে পারে না।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“জনৈক ব্যক্তি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! জনৈকা মহিলা বেশি বেশি নফল সালাত, নফল সাওম ও নফল সাদাকা করে, অথচ সে নিজ মুখ দিয়ে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে জাহান্নামী। লোকটি আবারো বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! জনৈকা মহিলা খুব কমই নফল সালাত, নফল সাওম ও নফল সাদাকা করে, সে কিছু পনিরের টুকরো সাদাকা করে। তবে সে নিজ মুখ দিয়ে কোনো প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সে জান্নাতী”। [আহ্মাদ্, হাদীস ৯৬৭৩]
প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া অনেকভাবেই হতে পারে। তার প্রতি হিংসা করা, তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ও তাকে নিচু মনে করা, তার লুক্কায়িত ব্যাপারগুলো জন সমক্ষে প্রচার করা, তার ব্যাপারে মিথ্যা বলা, তার থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়া, তার ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি করা, তার দোষে খুশি হওয়া, তাকে নিজ বাসস্থানে ও গাড়ি রাখার জায়গায় কোণঠাসা করা। তার ঘরের দরজায় ময়লা ফেলা, তার ঘরের মহিলাদের দিকে উঁকি মেরে তাকানো, বড় বা বিশ্রী আওয়াজ দিয়ে তাকে কষ্ট দেওয়া। এমনকি তার সন্তানের ব্যাপারে তাকে কষ্ট দেওয়া।
কেউ নিজ প্রতিবেশী কর্তৃক কষ্ট পেলে ধৈর্য ধরবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে তার প্রতিবেশীর ব্যাপারে তাকে কষ্ট দেওয়ার অভিযোগ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: চলে যাও। ধৈর্য ধরো। লোকটি আবারো দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার এসে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অভিযোগ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: চলে যাও। নিজের ঘরের সামানগুলো রাস্তায় বের করো। লোকটি তাই করলে মানুষ তাকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে তার প্রতিবেশীর কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারটি সবাইকে জানালে সবাই তাকে লা’নত তথা অভিসম্পাত দিতে শুরু করে। তারা বলতে থাকেঃ আল্লাহ তা‘আলা তার এ ক্ষতি করুক, ও ক্ষতি করুক। অতঃপর তার প্রতিবেশী তার কাছে এসে বললো: তুমি ঘরে ফিরে যাও। বাকি জীবন তুমি আমার পক্ষ থেকে এমন কিছু দেখবে না যাতে তুমি মনে কষ্ট পাও। [আবু দাউদ, হাদীস ৫১৫৩।]
২. প্রতিবেশীকে মাঝে মধ্যে কোনো কিছু হাদিয়া তথা উপঢৌকন দেওয়া। কারণ, হাদিয়া হচ্ছে ভালোবাসার প্রমাণ। এর মাধ্যমে মানুষে মানুষে দূরত্ব কমে যায় এবং পরস্পর সম্প্রীতি ফিরে আসে।
আবু শুরাইহ আদাওয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“হে আবু যর! যখন তুমি ঝোল জাতীয় কোনো কিছু পাকাবে তখন তাতে পানি একটু বেশী করে দিবে এবং নিজ প্রতিবেশীদের একটু খবরাখবর নিবে তথা তাদেরকে তা থেকে সামান্য কিছু হলেও দিবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২৫।]
অতঃপর আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু যতদিন দুনিয়াতে বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে একদা একটি ছাগল যবাই করা হয়েছিলো। ঘরে এসে তিনি যখন তা জানতে পারলেন তখন তিনি নিজ ঘরের লোকদেরকে বললেন: তোমরা কি আমাদের ইয়াহূদী প্রতিবেশীকে তা থেকে কিছু হাদিয়া দিয়েছিলে? তোমরা কি আমাদের ইয়াহূদী প্রতিবেশীকে তা থেকে কিছু হাদিয়া দিয়েছিলে? আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন,
“জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম বারবার আমাকে প্রতিবেশীর প্রতি যত্নবান হতে অসিয়ত করছিলেন। এমনকি আমার মনে হচ্ছিলো তিনি প্রতিবেশীকে আমার ওয়ারিশ বানিয়ে দিবেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬২৫।]
সকল প্রতিবেশীকে সর্বদা হাদিয়া দেওয়া সম্ভব না হলে নিজের নিকটতম প্রতিবেশীকেই হাদিয়া দিবে।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম: আমার তো দু’জন প্রতিবেশী রয়েছে জিনিস কম হলে আমি তাদের কাকে সর্বপ্রথম হাদিয়া দেবো? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِلَى أَقْرَبِهِمَا مِنْكِ بَابًا»
“তাদের মধ্যে যার ঘরের দরজা তোমার সব চাইতে নিকটে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৫৯।]
হাদিয়া শুধু ফকীর প্রতিবেশীকেই দিবে তা নয়। বরং ধনী-গরিব সকল প্রতিবেশীকেই হাদিয়া দিবে।
সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাদিয়া দিতেন, অথচ তিনি চাইলে আল্লাহ তা‘আলা উহুদ পাহাড়কে স্বর্ণ বানিয়ে দিবেন বলে একদা প্রস্তাব করেছেন, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেন নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন সুযোগ পেলেই সাহাবীগণকে হাদিয়া দিতেন তেমনিভাবে তারাও তাঁকে হাদিয়া দিতেন। এমনকি হাদিয়ার ওপর নির্ভর করেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ মাসের পর মাস অতিবাহিত করতেন।
একদা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার ভাগ্নে উরওয়াহ রহ.-কে বললেন:
“আল্লাহ তা‘আলার কসম! হে আমার ভাগ্নে! আমরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। এমনকি আমরা দু’ চান্দ্রমাস পেরিয়ে তৃতীয় মাসে উপনীত হতাম, অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো স্ত্রীর ঘরেই চুলায় আগুন জ্বলতো না তথা খানা পাকানো হতো না। উরওয়াহ বলেন, আমি বললাম: হে আমার খালা! তখন আপনারা কি খেয়ে জীবন যাপন করতেন। তিনি বললেন: দু’টি কালো জিনিস খেয়ে। তার একটি হলো খেজুর। আর অপরটি পানি। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু আনসারী প্রতিবেশী ছিলেন। যাদের ছিলো কিছু দুগ্ধবতী ছাগল। তারা মাঝে মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ছাগলের দুধ পাঠাতেন। আর তা আমরা পান করতাম”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৭২।]
এটিই হচ্ছে প্রতিবেশীকে হাদিয়া দেওয়ার সুন্নাত। তা না হলে একদা আপনার প্রতিবেশীই কিয়ামতের দিন আপনার বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে বিচারের জন্য দাঁড়িয়ে যাবেন।
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“বহু প্রতিবেশী তো এমন রয়েছে যারা নিজ প্রতিবেশীকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার সামনে ধরে বলবে, হে আমার রব! এ লোকটি আমার চোখের সামনে তার বাড়ির গেইটটি বন্ধ করে দিলো। সে আমাকে এতটুকুও দয়া করে নি। সে আমাকে কিছুই দেয় নি”। [সহীহ বুখারী, আল-আদাবুল-মুফরাদ, হাদীস নং ১১১।]
৩. নিজের জন্য যা ভালোবাসবে নিজ প্রতিবেশীর জন্যও তা ভালোবাসবে। সর্বদা তার কল্যাণ কামনা করবে। তাকে কোনো ভাবেই হিংসা করবে না।
আনাস্ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন তথা আল্লাহ তা‘আলার কসম! কোনো বান্দা সত্যিকারার্থে মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার প্রতিবেশী কিংবা যে কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তা ভালোবাসবে যা নিজের জন্য সে ভালোবাসে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫।]
৪. যথাসাধ্য নিজ প্রতিবেশীর পার্থিব যে কোনো প্রয়োজন পূরণে তাকে সহযোগিতা করবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমাদের কেউ তার প্রতিবেশীকে তার নিজ দেওয়ালে প্রয়োজনে কোনো কাঠের টুকরো গাড়তে চাইলে তাকে তাতে কোনো বাধা দিবে না। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি কেন তোমাদেরকে এ কাজে অনীহা প্রকাশ করতে দেখছি? আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই কাঠের টুকরোগুলো তোমাদের কাঁধে নিক্ষেপ করবো”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬০৯।]
সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম নিজ প্রতিবেশীর সহযোগিতার ব্যাপারে এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যার দরুন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ভূয়সী প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি একদা আশআরী গোত্রের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বলেন,
“আশআরী গোত্রের লোকদের এমন সুন্দর অভ্যাস যে, তারা যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের নিজেদের মধ্যকার খাদ্য দ্রব্য শেষ হওয়ার উপক্রম হলে অথবা মদীনায় তাদের পরিবারবর্গের খাদ্য দ্রব্য কমে গেলে তারা নিজেদের নিকট মজুদ থাকা সকল খাদ্য দ্রব্য একটি কাপড় বা চাদরে একত্রিত করে কোনো বাটি বা পাত্র দিয়ে নিজেদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নেয়। তারা আমার এবং আমিও তাদেরই একজন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৮৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫০০।]
৫. নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রী, সন্তান ও সম্মানের হিফাযত করবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“সে ব্যক্তি জান্তাতে যাবেনা যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬।]
আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম: কোনো গুনাহ আল্লাহ তা‘আলার নিকট সব চাইতে বেশি মারাত্মক? তিনি বললেন:
“কোন বস্তু বা ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলার সমকক্ষ বা শরীক বানানো; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বললাম: অতঃপর কি? তিনি বললেন: নিজ সন্তানকে হত্যা করা তোমার সাথে খাবে বলে। আমি বললাম: তারপর কি? তিনি বললেন: নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৭৭, ৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৬।]
৬. নিজ প্রতিবেশীর দুঃখে দুঃখী হবে এবং তাকে কোনোভাবেই চিন্তিত ও ব্যথিত করবে না। বিশেষ করে প্রতিবেশীটি বেশি বয়স্ক হলে।
ইমাম যাহাবী বলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবন হামিদ বায্যার থেকে শুনেছি তিনি বলেন, আমরা একদা আবু হামিদ আমাশীকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আমি বললাম: আপনি কেমন আছেন? তিনি বললেন: আমি তো ভালোই আছি। তবে আমার প্রতিবেশী আবু হামিদ জালূদী আমাকে চিন্তিত করেছে। সে গতকাল আমার সাক্ষাতে আসলো। তখন আমি আরো বেশি অসুস্থ ছিলাম। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো: হে আবু হামিদ! আমি খবর পেয়েছি “যানজাওয়াই” মারা গেছে। আমি বললাম: আল্লাহ তা‘আলা তাকে দয়া করুন। সে আবারো বললো: আমি আজ “মুআম্মিল্ ইবন হাসানের নিকট গিয়েছিলাম। তখন সে তার শেষ নিঃশ্বাসটুকু ত্যাগ করছিলো। সে আবারো বললো: হে আবু হামিদ! আপনার বয়স কতো? আমি বললাম: আমার বয়স ৮৬ বছর। তখন সে বললো: তাহলে আপনি আপনার পিতার চাইতেও বেশি বয়স পেয়েছেন। আমি বললাম: আমি তো আল-’হামদুলিল্লাহ সুস্থই আছি। আমি তো গত রাত এ এ কাজ করেছি। আজও এ এ কাজ করেছি। তখন সে লজ্জিত হয়ে চলে গেলো। [সিয়ারু আলামিন-নুবালা: ১৪/৫৫৪।]
আমরা আজ থেকে চেষ্টা করবো আমাদের প্রতিবেশীর প্রতিটি অধিকার আদায় করতে এবং তার সাথে থাকা পূর্বেকার সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যেতে। আর সব সময় এ চেষ্টা করবো যে, যেন নিজ প্রতিবেশীর সাথে এমন কোনো কিছু না ঘটে যাতে করে আমাদের মধ্যকার সুসম্পর্কটুকু নষ্ট না হয়ে যায়। এমনকি কারোর সঙ্গে তার প্রতিবেশীর ঝগড়া হলে তা অতি সত্বর মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করবো। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে এভাবে বাকি জীবনটুকু পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/23/16
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।