মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
চতুর্থ পরিচ্ছেদ: আল-কুরআনের সাথে সুন্নাহর সম্পর্ক:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/359/18
কুরআনুল করীম আল্লাহ তা’আলার বাণী যা সরাসরি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে জিবরীলের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ওহী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। অপর পক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ আল্লাহ তা’আলার বাণী না হলেও তা ওহী হতে মুক্ত নয়, বরং তাও ওহী এর অন্তর্ভুক্ত, আল্লাহ তা’আলাই সে স্বীকৃতি দিয়েছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন: ﴿وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [ النجم : ٣، ٤ ] “আর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না বরং যা ওয়াহী করা হয় তাই বলেন [সূরা আন্-নজম: ৩-৪]।”
অতএব আল কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে তেমন কোন দূরত্ব নেই বরং ওয়াহীর সূত্রে এক অপরের সাথে সম্পৃক্ত ও পরিপূরক। তাইতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: إِنِّيْ أُوْتِيْتُ الكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ “আমাকে কিতাব [কুরআন] এবং এর সাথে অনুরূপ [সুন্নাহ] দেয়া হয়েছে”। [আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬০৪] সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর সম্পর্ক হল অতি গভীর। এ বিষয়টি আলোকপাত করতে গিয়ে ইসলামী গবেষকগণ সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেন যে, কুরআনের সাথে সুন্নাহর সম্পর্কের তিনটি অবস্থা রয়েছে।
প্রথম অবস্থা: কুরআন ও সুন্নাহর হুবহু মিল থাকবে। যেমন- হাদিসে এসেছে,
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلاً
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি হল পাঁচটি- [১] সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই এবং সাক্ষ্য প্রদান করা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রাসূল। [২] সালাত কায়েম করা, [৩] যাকাত আদায় করা, [৪] রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং [৫] সামর্থ্য বান ব্যক্তির বাইতুল্লায় হজ্জ সম্পদান করা। [বুখারি: ৮ মুসলিম: ১৬]
“তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর”। [সূরা আল-বাকারাহ: ৮৩] তিনি আরও বলেন: ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ ١٨٣﴾ [ البقرة : ١٨٣ ] “হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর [রমাযান মাসের] রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল”। [আল-বাকারাহ: ১৮৩] তিনি আরও বলেন, ﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧﴾ [ ال عمران : ٩٧ ] “আল্লাহর উদ্দেশ্যে [কাবা] গৃহে হজ সম্পাদন করা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের অপরিহার্য কর্তব্য”। [আল-ইমরান: ৯৭]
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু-এর বর্ণিত হাদিসে যেমন, সালাত, যাকাত, সাওম ও হজ্জ মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে ঠিক তেমনি কুরআনুল করীমের আয়াতসমূহে উক্ত বিষয়গুলি মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে। সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে এ ক্ষেত্রে হুবহু মিল রয়েছে। পার্থক্য শুধু এটাই কুরআনে বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হয়েছে আর হাদিসে আরও বিস্তারিত করে আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় অবস্থা: দ্বিতীয় অবস্থা হল সুন্নাহ কুরআনের মুতলাক [সাধারণ] হুকুমকে মুকাইয়াদ [সীমাবদ্ধ] হিসেবে, মুজমাল [সংক্ষিপ্ত] হুকুমকে মুফাস্সাল [বিস্তারিত] হিসেবে এবং ‘আম [ব্যাপক] হুকুমকে খাস [নির্দিষ্ট] হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। যেমন- সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ, পারস্পারিক আদান-প্রদান ও বেচা-কেনা ইত্যাদি বিষয়গুলি সংক্ষিপ্তভাবে কুরআনে এসেছে, কিন্তু তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে বিস্তারিত আকারে আলোচিত হয়েছে। মূলত: অধিকাংশ হাদীসই হল কুরআনের সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলি বিস্তারিত বর্ণনার ক্ষেত্র। পাঠকের কাছে এ বিষয়টি আরও পরিস্কার হওয়ার জন্য নিম্নে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল।
[১] কুরআনের মুজমাল [সংক্ষিপ্ত] বিষয়গুলি সুন্নাহ মুফসসাল [বিস্তারিত] ভাবে বর্ণনা দিয়েছে।
ইমাম মারওয়াযী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইসলামের ফরয মূলনীতিগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়া তা জানা ও আমল করা কখনও সম্ভব নয়, যেমন- সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ ও জিহাদ ইত্যাদি।
এখানে শুধুমাত্র মুজমাল [সংক্ষিপ্ত]ভাবে সালাত কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্ণনা করা হয়নি তার নির্দিষ্ট সময়গুলি, নির্দিষ্ট রাকাতের সংখ্যাগুলি ও আরও অন্যান্য বিষয়গুলি। কিন্তু তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদিসে। ফরয সালাতের সময় কখন, যোহরের সময় কখন, আসর, মাগরিব ও এশার সময় কখন? কোন সালাত কত রাকাত, সুন্নাত ও ফরয কত রাকাত? জুমার সালাত কি নিয়মে, ঈদের সালাত কি নিয়মে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত কি নিয়মে? সুন্নাত সালাত কি নিয়মে? রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ কি নিয়মে এবং কখন কোন কিরাত ও দু’আ পাঠ করতে হবে ইত্যাদি সব বিষয়গুলি নিখুঁতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নাহর মধ্যে, এমনকি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে তাহা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেন, صلوا كما رأيتموني أصلي “তোমরা ঠিক সেই নিয়ম পদ্ধতিতে সালাত সম্পাদন কর, যেভাবে আমাকে সম্পাদন করতে দেখেছ।”
এখানে শুধু যাকাত আদায় এর বিধান মুজমাল [সংক্ষিপ্ত]ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু কোন কোন সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে? কোন সময়ে ও কোন নিয়মে তা বিস্তারিত কোন বর্ণনা কুরআনুল করীমে আসেনি, বরং এ সমস্ত মুজমাল [সংক্ষিপ্ত] বিধান মুফাসসাল [বিস্তারিত]ভাবে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে। কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে এবং কি পরিমাণ সম্পদে, কোন সময় ও নিয়মে যাকাত দিতে হবে সবই সবিস্তারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নায় বর্ণনা করে দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন:
“পাঁচ উকিয়া তথা ৫২.১/২ তলার কম রৌপ্য হলে কোন যাকাত নেই, পাঁচ আওসুক তথা প্রায় ১৭ মনের কম ফসল হলে কোন যাকাত নেই, পাঁচটি উটের কম হলে কোন যাকাত নেই, ছাগল ৪০টির কম হলে কোন যাকাত নেই, গুরু ৩০টির কম হলে কোন যাকাত নেই”। [(বুখারী, ১৪৮৪ মুসলিম, ৯৭৯ নাসাঈ]।] ইত্যাদি যাকাতের খুঁটিনাটি সব বিধান বিস্তৃতভাবে সুন্নাহয় বর্ণনা করা হয়েছে।
[গ] আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ “তোমাদের উপর রমাযানের রোযা ফরয করা হয়েছে”। [সূরা আল-বাকারাহ্: ১৮৩]
কিন্তু রমাযান মাস কিভাবে শুরু হবে? সাওম অবস্থায় কি কি নিষিদ্ধ? ফরয সাওমের নিয়ম কি? নফল সাওমের নিয়ম কি? ইত্যাদি বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি, পক্ষান্তরে সাওম সম্পর্কীয় যাবতীয় বিধি-বিধান যেমন- চাঁদ দেখেই সাওম শুরু করতে হবে আবার চাঁদ দেখেই সাওম শেষ হবে, এবং কি করলে সাওম সুন্দর হয়, কি করলে নষ্ট হয় ইত্যাদি বিষয়গুলি সবিস্তারে সুন্নায় আলোচনা করা হয়েছে।
[ঘ] আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, ﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ ٩٧﴾ [ ال عمران : ٩٧ ] “আল্লাহর উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের কাবা গৃহে হজ সম্পাদন করা অবশ্য কর্তব্য [সূরা আল-ঈমরান: ৯৭]।”
হজের বিধান কুরআন মাজিদে মুজমাল [সংক্ষিপ্ত]ভাবে এসেছে, এর বিস্তারিত বর্ণনা যেমন- কোথা হতে ইহরাম বাঁধবে, কিভাবে ইহরাম বাঁধবে, হজের দিনগুলিতে মক্কায়, মিনায়, আরাফায় কি কি কাজ করতে হবে তা কুরআন মাজিদে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়নি বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নায় সকল ক্ষেত্রের সকল সুন্নাত, ওয়াজিব ও ফরযসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের সকল কর্মক্ষেত্রে সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন: لتأخُذُوْا عَنِّى مَنَاسِكَكُم “তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজের বিধি-বিধান শিখে নাও।”
অতএব এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা হতে প্রতিয়মান হল যে, কুরআন ও সুন্নাহর গভীর সম্পর্ক হল- কুরআন এর বিস্তারিত রূপ দানকারী হচ্ছে সুন্নাহ্। সুন্নাহ্ ব্যতীত কুরআনকে ভালভাবে জানা ও মানা সম্ভব নয়।
[১] কুরআনের মুতলাক [সাধারণ] বিষয়গুলি সুন্নাহ্ মুকাইয়াদ [সীমাবদ্ধ] করে বর্ণনা করেছে।
অর্থাৎ কুরআনুল করীমে কতকগুলি বিধান এমন সাধারণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে কোন রকম সীমা বা নির্ধারিত পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি ফলে কার্যক্ষেত্রে তা পালন করা বা মেনে চলা কঠিন হয়ে যায়, এমন বিষয়গুলি সুন্নাহর মাধ্যমে মুকাইয়াদ বা সীমাবদ্ধ ও নির্ধারিত পরিমাণে করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে কার্যক্ষেত্রে তা খুবই সহজসাধ্যে পরিণত হয়েছে।
[ক] যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﴿فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ ٦﴾ [ المائدة : ٦ ] “তোমরা তোমাদের চেহারা ও দুই হাত তা [মাটি] দ্বারা মাসাহ কর”। [সূরা আল-মায়িদা: ৬]
কুরআনে তায়াম্মুমের বিধানে দুই হাত মাসাহর বিষয়টি মুতলাক [সাধারণ]ভাবে রেখে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ কোন সীমা বা নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং এখানে হাত দ্বারা আঙ্গুলের মাথা হতে কাঁধ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশকে বুঝাবে। পক্ষান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ্ উক্ত অসীম ও অনির্দিষ্ট পরিমাণকে সীমাবদ্ধ [মুকাইয়াদ] করে দিয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, একদা এক ব্যক্তি ওমার রাদিআল্লাহু আনহু-এর নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমার গোসল ফরয হয়ে গেছে কিন্তু আমি পানি পাচ্ছি না এমতাবস্থায় কি করব? তখন আম্মার বিন ইয়াসির রাদিআল্লাহু আনহু ওমারকে রাদিআল্লাহু আনহু বললেন: আপনার কি আমাদের ঐ ঘটনা স্মরণ হচ্ছে না, যখন আপনি এবং আমি এক সাথে সফরে ছিলাম [পানি না পাওয়ায়] আপনি সালাত আদায় করলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম অতঃপর [এর মাধ্যমে পবিত্র হয়ে] সালাত আদায় করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন: না তোমরা যেরূপ করেছ তা ঠিক হয়নি বরং এরূপ করাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল বলে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় দুই হাত মাটিতে মারলেন, তাতে ফুঁ দিলেন, অতঃপর দুই হাত দিয়ে চেহারা এবং দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ্ করলেন।”
আয়াতে মুতলাকভাবে বর্ণিত হাত মাসাহের বিধানকে সুন্নাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুকাইয়াদ [সীমিত] করে বর্ণনা দিয়েছে। অর্থাৎ তায়াম্মুমে হাত মাসাহের পরিমাণ হল কব্জি পর্যন্ত যা কুরআনের বর্ণনায় উল্লেখ নেই।
[খ] কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, ﴿وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا ٣٨﴾ [ المائدة : ٣٨ ] “পুরুষ ও নারী যারা চুরি করে তোমরা তাদের হাত কেটে ফেল [সূরা আল-মায়িদাহ্: ৩৮]।”
কুরআন মাজীদে হাত কাটার বিধানটি মুতলাক [সাধারণ] বা অনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। হাত দ্বারা কোনটি উদ্দেশ্য ডান না বাম? কতটুকু পরিমাণ কব্জি পর্যন্ত, না কনুই পর্যন্ত, না কাঁধ পর্যন্ত? তা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়নি, বরং সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোরের হাত কাটার বিধানটিকে মুকাইয়্যাদ [সীমাবদ্ধ] ও নির্দিষ্ট করে বর্ণনা দিয়েছে।
সুতরাং কুরআনের মুতলাক বিষয়সমূহ যা পালন করা কঠিন হয়ে যায় সেগুলি সুন্নাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুকাইয়্যাদ [সীমাবদ্ধ]ভাবে বর্ণনা দিয়ে মানুষের জন্য পালনে সহজ সাধ্য করে দিয়েছে।
[২] কুরআনের ‘আম [ব্যাপক] বিধানগুলি সুন্নাহ্ খাস [নির্দিষ্ট] করে বর্ণনা দিয়েছে। অর্থাৎ কুরআনুল করীমে অনেক বিধি-বিধান ‘আম [ব্যাপক]ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা কার্যক্ষেত্রে পালন করা দুষ্কর হয়ে যায় ঐ সব ‘আম বিধানগুলিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ্ খাস অর্থাৎ আমলের পরিধিকে নির্দিষ্ট করে বর্ণনা দিয়েছে, যা মানুষের জন্য পালনে খুবই সহজসাধ্য হয়ে গেছে। কুরআনের এরূপ বিধানকে মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা খাস বা নির্দিষ্টকরণে সকল আলিম সমাজ একমত। আর খবরে ওয়াহিদ হাদিস দ্বারাও কুরআনের আম হুকুমকে খাস করা যায় এটাই প্রসিদ্ধ চার ইমামের মত বলে উল্লেখ করেছেন ইমাম সাইফুদ্দীন আল আমেদী স্বীয় আল ইহ্কাম গ্রন্থে।
পবিত্র কুরআনের আম [ব্যাপক] হুকুমকে সহীহ সুন্নাহর দ্বারা খাস [নির্দিষ্ট] করার কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে পেশ করা হল:
[ক] আল্লাহ তা’আলার বাণী, ﴿ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَآءَ ذَٰلِكُمۡ ٢٤ ﴾ [ النساء : ٢٤ ] “আর তা ছাড়া [বাকী সকল নারীদেরকে বিবাহ করা] তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে”। [সূরা আন-নিসা: ২৪]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আলুসী বলেন: “এ আয়াতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, পূর্ববর্তী আয়াতে যে সমস্ত নারীদের বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে তারা ব্যতীত অন্য সকল নারীকে পৃথক পৃথক অথবা একসাথে বিবাহ করা বৈধ”।
অতএব কুরআনুল করীমের এ হুকুমটি হল আম বা ব্যাপক যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত ব্যক্তি ও নিয়ম ছাড়া অন্য সকল ব্যক্তি [নারী] ও নিয়মে বিবাহ করা বৈধ। মূলত: এ ব্যাপক হুকুমে বৈধ হলেও হাদিস দ্বারা একটি বিশেষ হুকুমকে নির্দিষ্ট করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মহিলাকে তাঁর ফুপীসহ এবং কোন মহিলাকে তার খালা সহ একত্রে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারি, হাদিস: ৫১০৮, মুসলিম: 1408]
সুতরাং, এ হাদিস দ্বারা কুরআনের ব্যাপক বৈধতা হুকুমের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট হুকুমকে অবৈধ বলে খাস করা হল। এ হাদিস না হলে কুরআনের আম [ব্যাপক] হুকুমের দ্বারা কোন মহিলাকে তার ফুপীসহ এবং কোন মহিলাকে তার খালাসহ একত্রে বিবাহ করা বৈধ ছিল। কিন্তু হাদিস সে ব্যাপকতার মধ্য হতে এ খাস [নির্দিষ্ট] হুকুমটিকে অবৈধতার বিধান দিয়েছে। কারণ হাদিসও আল্লাহ তা’আলার ওহীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, প্রমাণিত হয় সুন্নাহ্ হল কুরআনের পরিপূরক, সুন্নাহ ছাড়া শুধু কুরআন দ্বারাই ইসলাম পূর্ণভাবে মানা সম্ভব নয়।
[খ] আল্লাহ তা’আলার বাণী, ﴿يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِيٓ أَوۡلَٰدِكُمۡۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِۚ ١١﴾ [ النساء : ١١ ] “আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর অংশের সমান [সূরা নিসা, আয়াত: ১১]।”
এ আয়াতের ব্যাপক ভাষা হতে বুঝা যায় যে, প্রতিটি পিতা-মাতা স্বীয় সন্তানদেরকে রেখে যাওয়া সম্পদের ওয়ারিশ বানাতে পারে। অনুরূপভাবে সকল প্রকার সন্তান পিতা-মাতার সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারে। মূলত: হাদিস উক্ত আম [ব্যাপক] বিষয়টিকে খাস [নির্দিষ্ট] করে দিয়েছে, অর্থাৎ শুধু পিতা হলেই সন্তানকে ওয়ারিশ বানাতে পারবে না, অনুরূপ সন্তান হলেই পিতা-মাতার ওয়ারিশ হতে পারবে না, বরং কতগুলো বাধা রয়েছে, সে সব বাধামুক্ত পিতা-পুত্ররাই শুধু ওয়ারিশ বানাতে পারবে এবং ওয়ারিশ হতে পারবে। পবিত্র কুরআনে উক্ত বাধাসমূহ আলোকপাত করা হয়নি বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে উক্ত বাধাসমূহ আলোকপাত করা হয়েছে, বাধাসমূহ নিম্নরূপ:
১. রিসালাত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لاَ نُوْرِثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةً » “আমরা [নবী-রাসূল] কাউকে কোন ওয়ারিশ বানাই না বরং যা রেখে যাই তা সাধারণ দান [হিসাবে বায়তুল মালে জমা হবে]।”। [বুখারি, হাদিস: ৪০৩৫,] অর্থাৎ নবী-রাসূলগণ কাউকে ওয়ারিছ বানান না এবং তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পদের কেউ ওয়ারিশ হওয়ার দাবী করতে পারে না। «»
২. ধর্মের ভিন্নতা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لاَ يَرِثُ المُسْلِمُ الكَافِرَ وَلاَ الكَافِرُ المُسْلِمَ»
“কোন মুসলমান কাফির এর ওয়ারিশ হতে পারে না অনুরূপভাবে কোন কাফির মুসলমানের ওয়ারিশ হতে পারে না।” [বুখারি: ৬৭৬৪] অর্থাৎ সন্তান যদি মুসলমান হয় তাহলে কাফির পিতার ওয়ারিশ হতে পারবে না, অথবা সন্তান যদি কাফির হয় তাহলে মুসলমান পিতার ওয়ারিশ হতে পারবে না, অনুরূপভাবে পিতা-মাতাও সন্তানদের ওয়ারিশ বানাতে পারবে না।
৩. হত্যা ঘটিত কারণ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «لاَ يَرِثُ الْقَاتِلُ شَيْئًا» “হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির কোন সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারবে না।” [আহমদ: ৩৪৬, ইবনু মাযা: ২৬৪৫] অর্থাৎ হত্যাকারী যদি সন্তান হয় আর নিহত ব্যক্তি যদি পিতা-মাতা হয় তাহলে হত্যাকারী সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারবে না।
অতএব পবিত্র কুরআনে পিতা-মাতাকে স্বীয় সন্তানদের ওয়ারিশ বানানোর যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে বিধানটি আম [ব্যাপক], যাহা হতে হাদিসে উল্লেখিত তিনটি বিষয়- রিসালাত, ধর্মের ভিন্নতা ও হত্যা খাস, অর্থাৎ ইহা ওই আম হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এ তিনটি ক্ষেত্রে কোন পিতা-মাতার অঢেল সম্পদ থাকলেও স্বীয় সন্তানদের ওয়ারিশ বানাতে পারবে না।
[গ] আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﴿وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا ٣٨﴾ [ المائدة : ٣٨ ] “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও”। [সূরা আল-মায়িদাহ: ৩৮]
এ আয়াতে চুরি করা বা চোর শব্দটি আম [ব্যাপক] ভাবে এসেছে, অর্থাৎ চুরি করলেই তার হাত কাটতে হবে। চাই নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ চুরি করুক বা তার চেয়ে কম করুক, অনুরূপভাবে সংরক্ষিত সম্পদ হতে চুরি করুক বা অসংরক্ষিত সম্পদ হতে চুরি করুক, মোট কথা কুরআনের আয়াতে এমন আম বা ব্যাপকভাবে নির্দেশ এসেছে যাতে প্রমাণিত হয় যে, যে কোন চোর যে ভাবেই চুরি করুক না কেন সকল ক্ষেত্রে সকল চোরের হাত কাটতে হবে। মূলত: এ ব্যাপক [আম] বিধানটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট [খাস] হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র ওই চোরের হাত কাটা হবে, যে সংরক্ষিত ও নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ চুরি করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক চতুর্থাংশ দিনার সমপরিমাণ বা ততোধিক সম্পদ চুরি করা ছাড়া কোন চোরের হাত কাটা যাবে না”। [মুসলিম, হাদিস: ১৩২২, নাসায়ী, হাদিস: ৪৯৪৬]
পবিত্র কুরআনের নির্দেশে চুরি কৃত মালের পরিমাণ অনির্দিষ্ট থাকলেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় হাদিসে তাহা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ১/৪ দিনার এর কম পরিমাণ সম্পদ চুরি করে তাহলে তার হাত কাটা যাবে না। অনুরূপভাবে কুরআনের নির্দেশে সম্পদ সংরক্ষিত বা অসংরক্ষিত কোন নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় নাই, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি ফসল সংরক্ষণ করার পর চুরি করে, আর চুরিকৃত সম্পদ ঢালের সমমূল্য হয় তাহলে ওই চোরের হাত কাটা হবে।” [আবু দাউদ: ১৭১০]
এ হাদিসে মূলত: কুরআনের আম [ব্যাপক] হুকুমটি সুন্নাহর মাধ্যমে দুই ভাবে [পরিমাণ ও সংরক্ষণে] খাস [নির্দিষ্ট] হয়ে গেল।
অতএব কুরআন ও সুন্নাহর সম্পর্কের দ্বিতীয় অবস্থা হল সুন্নাহ কুরআনের মুতলাক [সাধারণ] হুকুমকে মুকাইয়াদ [সীমাবদ্ধ] হিসাবে, মুজমাল [সংক্ষিপ্ত] হুকুমকে মুফাসসাল [বিস্তারিত] হিসাবে এবং ‘আম [ব্যাপক] হুকুমকে খাস [নির্দিষ্ট] হিসাবে বর্ণনা করে থাক।
সুন্নাহ কুরআনুল করীমের গোপন রহস্য বর্ণনাকারী। মূলত: এটা আল্লাহ তা‘আলারই উদ্দেশ্য, এ জন্যেই তিনি স্বীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
“আর আপনার প্রতি উপদেশ বাণী [কুরআন] অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে আপনি তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিতে পারেন, ফলে তারা চিন্তা গবেষণা করবে”। [সূরাহ আন-নাহল: ৪৪]
এ আয়াত স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, সুন্নাহ হল পবিত্র কুরআনের বর্ণনা দানকারী। অতএব সুন্নাহ ব্যতীত কুরআন মেনে চলা অসম্ভব, এ জন্যই অনেক ইসলামী মনীষীগণ ইসলাম জানা ও মানার ক্ষেত্রে কুরআনের আগে সুন্নাহকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত হল সাহাবায়ে কিরামের উপদেশাবলি, ইমাম আল খতীব আল বাগদাদী স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন: একদা সাহাবী ঈমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু কিছু ব্যক্তিসহ [শিক্ষার আসরে] বসে ছিলেন। শ্রোতাদের মধ্য হতে একজন বলে ফেললেন, আপনি আমাদেরকে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু শোনাবেন না। তিনি [সাহাবী] বললেন, নিকটে আস, অতঃপর বললেন, তুমি কি মনে কর, যদি তোমাদেরকে শুধু কুরআনের উপরই ছেড়ে দেয়া হয়? তুমি কি যোহরের সালাত চার রাকা’আত, আসর চার রাকাত, মাগরিব তিন রাক’আত, প্রথম দুই রাক’আতে কিরাত পাঠ করতে হয় ইত্যাদি সব কিছু কুরআনে খুঁজে পাবে? অনুরূপভাবে কাবার তাওয়াফ সাত চক্কর এবং সাফা মারওয়ার তাওয়াফ ইত্যাদি কি কুরআনে খুঁজে পাবে? অতঃপর বললেন: হে মানব সকল! তোমরা আমাদের [সাহাবীদের] নিকট হতে সুন্নাহর আলোকে এ সব বিস্তারিত বিধি-বিধান জেনে নাও। আল্লাহর কসম করে বলছি! তোমরা যদি সুন্নাহ মেনে না চল, তাহলে অবশ্যই ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।”
অতএব সঠিক পথ প্রাপ্ত হতে হলে কুরআনের সাথে কুরআনের রহস্য বর্ণনাকারী ইসলামের পূর্ণতা রূপ দানকারী সুন্নাহকে অবশ্যই আঁকড়ে ধরতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন!
তৃতীয় অবস্থা: তৃতীয় অবস্থা হল এমন সব বিষয় যাহা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন বর্ণনা আসেনি, সে সব বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিস হালাল-হারামের হুকুম বর্ণনা করে দিয়েছে, যেমন- কোন মহিলাকে তার খালাসহ অথবা ফুঁপিসহ একত্রে দুজনকে বিবাহ করা হাদিসে হারাম করা হয়েছে। বিবাহিত ব্যভিচারীকে রজম করার বিধান এবং দাদীর জন্য মিরাছী অংশ ইত্যাদি হুকুম গুলি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কোন নির্দেশনা নেই, অথচ হাদিসে তার বৈধতা ও অবৈধতা বর্ণনা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের সাথে সুন্নাহর সম্পর্কের যে তিনটি অবস্থা রয়েছে তন্মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থায় সকল আলেম সমাজ একমত কিন্তু এ তৃতীয় অবস্থা সম্পর্কে কিছু আলেম সমাজ দ্বিমত পোষণ করেছেন। তবে হাদিসে ওই সব বিধান পাওয়াটাকে কেউ অস্বীকার করেন নি। তাই অধিকাংশ আলেম সমাজ তৃতীয় অবস্থা সম্পর্কে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
ইমাম ইবনুল কাইয়ূম [রাহিমাহুল্লাহ] কুরআনের সাথে সুন্নাহর সম্পর্কের তিনটি অবস্থা বর্ণনা করার পর বলেন: কুরআনের চেয়ে হাদিসে যে সব বিধান অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে [অর্থাৎ, তৃতীয় অবস্থাটি] এটা মূলত: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতেই ওই সব বিধান প্রবর্তিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর [সুন্নাহর] আনুগত্য অপরিহার্য, কোন ক্রমেই তাহা অমান্য করা যাবে না। আর এটা কুরআনের উপর কোন বাড়াবাড়িও নয়, বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য বিষয়ক আল্লাহর নির্দেশ পালনেরই অন্তর্ভুক্ত। এ ক্ষেত্রে যদি তাঁর আনুগত্য না করা হয়, তাহলে তাঁর আনুগত্যের কোন অর্থই হয় না এবং তাঁর আনুগত্যের স্বতন্ত্রতা বর্জিত হয়। আর কুরআনের সাথে মিলে যাওয়া বিষয় ছাড়া কুরআনের অতিরিক্ত বিষয়ে যদি তাঁর আনুগত্য স্বীকার করা না হয় তাহলে তাঁর আনুগত্যের বিশেষত্ব কোথায়? অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করল সে প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তা’আলারই আনুগত্য করল”। [সূরা আন-নিসা, ৮০]
অতএব কোন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে কিভাবে সম্ভব যে, তিনি কুরআনের চেয়ে অতিরিক্ত বিধান সম্বলিত হাদিস গ্রহণ করবেন না? তিনি কি কোন মহিলাকে স্বীয় খালা বা ফুপীর সাথে একত্রে দু’জনের বিবাহ নিষিদ্ধের হাদিস, রক্ত বা বংশীয় ভাবে যা হারাম হয় দুগ্ধ পানের মাধ্যমে তাহা হারামের হাদিস, খিয়ারে শর্তের হাদিস, শুফায়ার হাদিস, স্বগৃহে বসবাস কালে বন্ধকের হাদিস গ্রহণ করেন না? অথচ এ সবই কুরআনের চেয়ে অতিরিক্ত বিধান সম্বলিত হাদিস [অর্থাৎ এ বিধানগুলি কুরআনে বর্ণিত হয়নি শুধু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে]। অনুরূপভাবে দাদীর মিরাছের হাদিস, বিবাহিত কৃতদাসের স্বাধীনতার হাদিস, মেয়েদের ঋতু অবস্থায় রোযা, সালাত নিষিদ্ধের হাদিস, রোযা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মিলন ঘটলে কাফফারা ওয়াজিবের হাদিস, বিধবা মহিলার ইদ্দত পালন কালে শোক পালনের হাদিস গ্রহণ করেন না? অথচ এসব হাদিসই কুরআনের অতিরিক্ত বিধান সম্বলিত হাদিস”। বস্তুত: কুরআনের নির্দেশেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ ও নিষেধ মেনে চলা অপরিহার্য চাই তা কুরআনে থাকুক আর নাই থাকুক।
কুরআনের নির্দেশ: ﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ٧ ﴾ [ الحشر : ٧ ] “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের যা দিয়েছেন তোমরা তা গ্রহণ কর এবং যা হতে বারণ করেছেন তা হতে বিরত থাক।” [[সূরা আল-হাশর, ৭]]
কুরআনের অন্যত্র এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সকল সিদ্ধান্ত [বিধি-বিধান] সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়া ছাড়া ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয়, তা কুরআনে আছে বা নাই? এ প্রশ্নের কোন সুযোগ নেই।
“তোমার রবের কসম তারা কখনও ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ফায়সালা কারী হিসাবে মেনে নেয়। অতঃপর তোমার ফায়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কোন দ্বিধা-সংকোচ থাকবে না এবং সন্তুষ্টচিত্তে তা গ্রহণ করে নিবে [[সূরা আন-নিসা, ৬৫]]।”
অতএব কুরআনের নির্দেশেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা কিছু নিয়ে এসেছেন [কুরআন ও সকল প্রকার সহীহ হাদিস] সবই প্রতিটি মু’মিন নর-নারীর গ্রহণীয় ও পালনীয় বিষয়, আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন। আমীন!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/359/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।