hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সুন্নাহের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

২২
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: সুন্নতের তাজিম ও তার উপর আমল করা ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাদের পরবর্তীদের বর্ণনা:
সুন্নতের তাজীম ও তার উপর আমল করা ওয়াজিব হওয়া বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাদের পরবর্তীদের কিছু কথা আলোচনা করা হল। যেমন, বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর পর আরবের কিছু লোক মুরতাদ হল। আবু বকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহু সাহসিকতার সাথে বললেন, আল্লাহর কসম যে ব্যক্তি সালাত ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তার কথা শুনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আপনি তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন, অথচ রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করে বলেন, أمِرْتُ أَنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتى يَقُولُوا لا إِلهَ إِلا الله فَإِذا قَالوها عَصَمُوا مِني دِمَاءَهُم وَأَموَالَهُم إِلا بحقَّها “আমাকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ না বলা পর্যন্ত মানুষের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যখন সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার জান মাল নিরাপদ তবে ঈমানের দাবী অনুযায়ী”।

তার কথা শোনে আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, যাকাত কি আল্লাহর হক নয়? আল্লাহর কসম যদি একটি রশিও যা রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে যাকাত হিসেবে প্রদান করা হত তা দিতে যদি কেউ অস্বীকার করে, আমি অস্বীকার করার কারণে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারপর ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, আমি বুঝতে পারলাম, আল্লাহ তা’আলা আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু এর অন্তরকে যুদ্ধের জন্য খুলে দিয়েছেন এবং এটিই হক। সাহাবীরা তার আহ্বানে সাড়া দিলেন, তারা মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তাদের পুনরায় ইসলামের দিকে ফিরিয়ে আনেন। আর যারা মুরতাদ হওয়ার উপর অবিচল থাকে তাদের তিনি হত্যা করেন। এ ঘটনার মধ্যে সুন্নতের তাজীম করা ও তার উপর আমল করা জরুরি হওয়া বিষয়ে সু-স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

একজন দাদী আবু বকরের নিকট এসে সে তার উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, আবু বকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কোন অংশ বর্ণিত হয় নাই। আর রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য কোন অংশ বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নাই। তবে আমি মানুষকে জিজ্ঞাসা করব, তারপর তিনি সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করেন, তখন একজন সাহাবী সাক্ষ্য দিল যে, নবী করীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাদিকে সুদুস-ছয় ভাগের একভাগ দিয়েছেন। তারপর তিনি দাদির জন্য সুদুস-ছয় ভাগের একভাগের ফায়সালা করেন।

ওমর রাদিআল্লাহু আনহু তার আমেলদের-কর্মকর্তাদের আল্লাহর কিতাব দ্বারা মানুষের মাঝে বিচার ফায়সালা করার নির্দেশ দিতেন। যখন আল্লাহর কিতাবে ফায়সালা খুঁজে না পেতেন, তখন আল্লাহর রাসূলের সূন্নাত দ্বারা ফায়সালা করার নির্দেশ দিতেন। যখন গর্ভের সন্তানকে তাদের কারো কোন কু-কর্মের কারণে মৃত অবস্থায় প্রসব করে তখন তার বিধান কি বিষয়টি সম্পর্কে তার নিকট কোন সমাধান না থাকাতে তিনি সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করেন। তখন মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ রাদিআল্লাহু আনহু ও মুগীরা ইবনে শুবা রাদিআল্লাহু আনহু দাড়িয়ে বললেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে একটি চিত কপাল বিশিষ্ট গোলাম আযাদ করা অথবা একজন বাদির আযাদ করার ফায়সালা করেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীর ঘরে মহিলার ইদ্দত পালন করার বিষয় ওসমান রাদিআল্লাহু আনহু এর অজানা থাকাতে ফায়সালা দেয়া তার নিকট কঠিন মনে হল, তখন রবিয়া বিনতে মালেক বিন সিনান আবু সাঈদ রাদিআল্লাহু আনহু এর বোন সে বলল, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে স্বামীর ঘরে ইদ্দত পালন করার নির্দেশ দেন। তারপর ওসমান রাদিআল্লাহু আনহু মহিলার কথা অনুযায়ী বিষয়টির ফায়সালা করেন। অনুরূপভাবে ওলিদ বিন উকবার উপর মদ পান করার অপরাধে হদ কায়েম করার ফায়সালা সুন্নাত দ্বারাই করেন। আলী রাদিআল্লাহু আনহু এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌঁছল যে, ওসমান রাদিআল্লাহু আনহু হজ্জে তামাত্তু হতে নিষেধ করেন, আলী রাদিআল্লাহু আনহু হজ ও ওমরা উভয়ের এহরাম বাধেন এবং বলেন, আল্লাহর রাসূলের সূন্নাতকে আমি কারো কথায় ছাড়বো না। এক লোক আবু বকর ও ওমর রাদিআল্লাহু আনহু কথা দ্বারা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের নিকট তামাত্তু হজ বিষয়ে দলীল পেশ করলে, ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি আশংকা করছি তোমাদের উপর আসমান থেকে পাথরের বৃষ্টির মত বিপর্যয় নেমে আসার। আমি তোমাদেরকে বলি আল্লাহর রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আর তোমরা বল আবু বকর ও ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন। যদি সুন্নাতের বিপরীতে আবু বকর ও ওমরের কথা দিয়ে দলীল পেশ করলে, তার উপর শাস্তির আশংকা করা হয়, তাহলে যারা আবু বকর ও ওমর থেকে নীচের লোক তাদের কথায় অথবা নিজের মতামত ও ইজতিহাদের ভিত্তিতে আল্লাহর রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সূন্নাতকে ছেড়ে দেন তাদের পরিণতি কি হতে পারে। যখন কিছু লোক আব্দুল্লাহ বিন ওমরের নিকট সূন্নাত বিষয়ে বিতর্ক করল, তখন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু তাদের বললেন, আমরা কি ওমরের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশিত নাকি আবু বকরের আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশিত।

ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু যখন হাদিস আলোচনা করিতেছিল, তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি আমাদের আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে হাদিস বর্ণনা করেন। এ কথা শোনে তিনি খুব ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বলেন, সূন্নাত আল্লাহর কিতাবেরই ব্যাখ্যা যদি সূন্নাত না হত, তাহলে আমরা জোহরের সালাত চার রাকাত, মাগরিবের সালাত তিন রাকাত, ফজরের সালাত দুই রাকাত জানতে পারতাম না। যাকাতের বিধান বিস্তারিত জানতে পারতাম না এবং শরিয়তের অন্যান্য বিষয়গুলো জানার সুযোগ হত না।

সাহাবীদের থেকে সুন্নতের তাজীম ও তার উপর আমল করা ওয়াজিব হওয়া ও তার বিরোধিতা করার পরিণতি বিষয়ে বর্ণনা অনেক। যেমন, আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিআল্লাহু আনহু যখন এ হাদিস বর্ণনা করেন,

لا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ তোমরা আল্লাহর বন্দীদের মসজিদে গমনে বাধা দিও না, [বুখারি, আল-জুমআ, হাদিস: ৮৫৮, মুসলিম, সালাত, হাদিস: ৪৪২, তিরমিযি, জুমআ, হাদিস: ৫৭০, নাসায়ী, মাসাজেদ, ৭০৬, আবু দাউদ, সালাত হাদিস: ৫৬৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬, আহমদ: ১৬/২, দারমী, ৪৪২।] তখন তার ছেলেরা বলল, আল্লাহর কসম, আমরা তাদের মসজিদে গমনে বাধা দিব। তাদের কথা শোনে আব্দুল্লাহ খুব ক্ষুব্ধ হলেন এবং তাদের কঠিন বকা দিলেন এবং বললেন, আমি তোমাদের বলছি আল্লাহর রাসূল বলছে আর তোমরা বলছ আমরা অবশ্যই তাদের বাধা দেব।

রাসূলের সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল যখন তার কতক আত্মীয়দের দেখতে পেলেন, তারা খজফ করছেন, তিনি তাদের নিষেধ করলেন এবং তাকে তিনি বলেন, نهى الخذف وقال إٍنه لا يصيد صيدًا ولا ينكأ عدوا ولكنه يكسر السن ويفقأ العين “রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করে এবং তিনি বলেন, এতে কোন শিকারীকে শিকার করা যায় না, কোন দুশমণকে প্রতিহত করা যায় না বরং তাতে দাঁত আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং চোখ নষ্ট হয়”। [বুখারি, আদব-হাদিস: ৫৮৬৬, মুসলিম, শিকার ও জবেহ অধ্যায় হাদিস: ১৯৫৪, নাসায়ী কাসামাহ, হাদিস: ৪৮১৫, ইবনে মাজাহ, শিকার অধ্যায়, ৩২২৭, আহমদ, হাদিস ৫৬/৫, দারমী মুকাদ্দিমা, হাদিস: ৪৪০] তারপর তাদের আবারও পাথর নিক্ষেপ করতে দেখে বলেন, আমি তোমাদের সাথে কখনোই কথা বলব না। আমি তোমাদেরকে খবর দিলাম আল্লাহর রাসূল পাথর নিক্ষেপ করেছেন তারপরও তোমরা পাথর নিক্ষেপ কর?।

ইমাম বাইহাকী রাহিমাহুল্লাহ আইয়ুবে সুখতিয়ানি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন তুমি কোন ব্যক্তিকে সূন্নাত সম্পর্কে আলোচনা শোনাও, তখন সে বলে, তুমি আমাকে কুরআনের আলোচনা শোনাও, মনে রাখবে লোকটি গোমরাহ।

আল্লামা আওযায়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সূন্নাত হল, আল্লাহর কিতাবের বিচারক অথবা সূন্নাত আল্লাহর কিতাবের বিধান সমূহের সম্পূরক অথবা যে সব বিধান আল্লাহর কিতাবে নাই সে সব আহকামের বর্ণনা। যেমন, আল্লাহর বাণী-

﴿وَأَنزَلۡنَآ إِلَيۡكَ ٱلذِّكۡرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيۡهِمۡ وَلَعَلَّهُمۡ يَتَفَكَّرُونَ ٤٤﴾ [ النحل : ٤٤ ]

আর রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী أَلا إِني أوتِيتُ الكِتابَ ومثلَه مَعَهُ ، “মনে রাখবে আমাকে কিতাব দেয়া হয়েছে, এবং তার সাথে তার মত আরও দেয়া হয়েছে”। [তিরমিযি, ইলম অধ্যায়, হাদিস ২৬৬৪, আবুদ দাউদ, সূন্নাহ আধ্যায়, হাদিস: ৪৬০৪, ইবনু মাযাহ, মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১২] তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।

ইমাম বাইহাকী রাহিমাহুল্লাহ আমের আশ-শাআবী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি কতক লোককে বলেন, إِنما هلكتم في حين تركتم الآثار অর্থাৎ সহীহ হাদিস সমূহ।

ইমাম বাইহাকী রাহিমাহুল্লাহ আওযায়ী রাহিমাহুল্লাহ থেকে আরও বর্ণনা করেন, তিনি তার কতক সাথীকে বলেন, যখন তোমাদের নিকট রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন হাদিস পৌঁছে, তখন আর কোন কথা বলা থেকে তুমি বিরত থাক। কারণ, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে মুবাল্লিগ ছিলেন।

ইমাম বাইহাকী রাহিমাহুল্লাহ বিশিষ্ট ইমাম সূফিয়ান বিন সাঈদ রাহিমাহুল্লাহ থেকে আরও বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইলমই হল, হাদিসের ইলম।

ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের দিক ইশারা করে বলেন, একমাত্র এ কবর ওয়ালা ছাড়া আমরা সবাই বিতর্কিত।

ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদিস সামনে আসে তখন তা মাথা ও চোখের উপর।

ইমাম আবু শাফী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও আমি যদি সে অনুযায়ী আমল না করি, তবে মনে রাখবে, আমি তোমাদের সাক্ষ্য করে বলছি, আমার জ্ঞান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমি যখন কোন কথা বলি, আর হাদিস আমার কথার বিপক্ষে তাহলে আমার কথাকে তোমরা দেয়ালের ওপাশে নিক্ষেপ কর।

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ তার কতক সাথীকে বলেন, তোমরা আমার তাকলীদ করো না, মালেক রাহিমাহুল্লাহ ও শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ তাকলীদ করো না, তোমরা আমরা যেখান থেকে গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে গ্রহণ কর। তিনি আরও বলেন, আমি সে সব লোকদের বিষয়ে আশ্চর্য বোধ করি, যারা হাদিসের সনদ সম্পর্কে জানে হাদিসটি সহীহ কিনা তাও জানে তারপরও সুফিয়ানের নিকট যায় তার মতামতের জন্য। অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣﴾ [ النور : ٦٣ ]

তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে। [সূরা নূর, আয়াত: ৬৩]

তিনি আরও বলেন, তোমরা কি জান ফিতনা কি? ফিতনা হল আল্লাহর সাথে শিরক করা, হতে পারে যখন কোন ব্যক্তি রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কথাকে প্রত্যাখ্যান করবে, তখন তার অন্তরে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি বক্রতা ডেলে দেয়া হবে, তখন সে ধ্বংস হবে। আল্লাহ তা’আলার বাণী- হে মুমিনগণ, তো

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [ النساء : ٥٩ ]

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের, অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টত্বর [-(সূরা আন-নিসা: ৫৯];]।” বিষয়ে বিশিষ্ট তাবেয়ী মুজাহিদ বিন জাবার হতে ইমাম বাইহাকী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর দিকে প্রত্যর্পণ অর্থ আল্লাহর কিতাবের দিক প্রত্যর্পণ অনুরূপ আল্লাহর রাসূলের দিক প্রত্যর্পণ অর্থ সুন্নতের দিক প্রত্যর্পণ।

ইমাম বাইহাকী যুহরী রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা নকল করেন, তিনি বলেন, আমাদের পূর্বের আলেমগণ বলতেন, সূন্নাতকে আঁকড়ে ধরা নাজাত। আল্লামা ইবনে কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় কিতাব রাওজাতুন নাজেরে উসুলুল আহকাম বর্ণনায় লেখেন, দলীল হিসেবে দ্বিতীয় মূলনীতি হল, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সূন্নাত। আর রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা প্রমাণ কারণ, তার মুজিযাসমূহ তিনি সত্যবাদী তার প্রমাণ। আর আল্লাহ তা’আলা তার অনুকরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর যারা তার আদেশের বিরোধিতা করেন, তাদের সতর্ক করেছেন।

হাফেজ ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ আল্লাহ তা’আলার বাণী-

﴿فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٦٣ ﴾ [ النور : ٦٣ ]

তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌছার ভয় করে। [সূরা নূর, আয়াত: ৬৩] র তাফসীরে বলেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমর এর অর্থ তার প্রদর্শিত পথ, তার অনুসৃত পদ্ধতি, তার দেখানো নিয়ম, তার সূন্নাত ও তার শরীয়ত। সুতরাং যে কোন কথা ও কর্ম তার কথা ও কর্মে সাথে তুলনা করা হবে, যে কথা ও কর্ম তার কথার সাথে মিলবে তা গ্রহণ করা হবে আর যে কথা ও কর্ম তার সাথে মিলবে না তার কথা ও কর্ম তা প্রত্যাখ্যান করা হবে, সে যেই হোক না কেন। যেমন, বুখারি মুসলিম সহ বিভিন্ন হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلًا ليسَ عَليهِ أَمْرُنا فَهُوَ رَدّ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে, যার উপর আমার নির্দেশনা নাই তা প্রত্যাখ্যাত”। [বুখারি সুলাহ অধ্যয়ি, হাদিস: ২৫৫০, মুসলিম বিচার ফায়সালাহ অধ্যায়, হাদিস: ১৭১৮, আবু দাউদ সূন্নাহ অধ্যায়, হাদিস, ৪৬০৬, ইবনু মাযাহ; মুকাদ্দিমাহ, হাদিস: ১৪, আহমদ, হাদিস: ২৫৬/৬]

যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে বা গোপনে রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনিত দ্বীনের বিরোধিতা করে, সে যেন ভয় করে এবং সতর্ক হয়, আল্লাহর এ বাণী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ তাদের অন্তরে ফিতনা অর্থাৎ কুফর, নেফাক বা বিদআত ডেলে দেয়া হতে পারে। অথবা أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ দুনিয়াতে তার কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে। যেমন, তাদের হত্যা করা হতে পারে, অথবা বন্দী করা হতে পারে, অথবা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করা হতে পারে।

যেমন, ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ একটি হাদিস বর্ণনা তিনি বলেন, আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু আমাদের হাদিস বর্ণনা করেন, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

مثَلي وَمثَلُكمْ كمَثَلِ رجلٍ اسْتَوْقَدَ نارًا فَلمّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهَا جَعَلَ الفراشُ وهَذِهِ الدّوابُّ اللائِي يَقَعْنَ في النَّار يَقَعْنَ فِيهّا وَجَعَلَ يَحْجُزُهُنّ وَيَغْلِبْنَهُ فَيَقْتحِمْنَ فِيَها قَالَ فَذَلِك مَثَلي وَمَثَلَكمْ أَنا آخُذُ بحَجْزِكُم عَن النَّار هَلُمّ عَن النارِ فَتَغْلِبُوني وَتقْتَحِمُونَ فِيهَا

আমার দৃষ্টান্ত ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মত, যে আগুন জ্বাললও, তারপর যখন আগুনের আশ-পাশ আলোকিত হল, তখন কৃট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড় যে গুলো আগুনের মধ্যে ঝাপ দেয়, তাতে তারা পড়তে আরম্ভ করল। আর লোকটি তাদের বাধা দিল, কিন্তু তারা তাকে পরাহত করল এবং আগুনেই পুড়ে মারা যাচ্ছিল। রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দৃষ্টান্ত লোকটির মতই; আমি তোমাদের কোমর ধরে তোমাদের আগুন থেকে দূরে সরাবো, বলতে থাকব, আগুন! আগুন! কিন্তু তোমরা আমাকে পরাহত করবে, ফলে তোমরা আগুনেই জ্বলবে। [বুখারি, রিকাক অধ্যায়, হাদিস: ৬১১৮, মুসলিম, ফাযায়েল অধ্যায়, হাদিস: ২২৪৪, তিরমিযি, আমসাল অধ্যায়, হাদিস: ২৮৭৪, আহমদ, হাদিস: ৩১২/২] বুখারি ও মুসলিম হাদিসটিকে আব্দুর রাজ্জাকের হাদিস থেকে গ্রহণ করেন। আল্লামা সুয়ুতী রাহিমাহুল্লাহ তার স্বীয় রিসালা মিফতাহুল জান্নাহ ফিল ইহতিজাজ বিসসূন্নাহ কিতাবে লেখেন-

তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন, যে ব্যক্তি রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস চাই তা তার কথা হোক বা কর্ম দলীল হওয়াকে অস্বীকার করল, সে কুফরি করল, সে ইসলামের বন্ধন থেকে বের হয়ে গেল। তার হাসর ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের সাথে হবে অথবা কাফের ফিরকার সাথে হবে।

সুন্নতের গুরুত্ব, সুন্নতের উপর আমল করা ওয়াজিব হওয়া এবং সুন্নতের বিরোধিতা করা হতে সাবধানতা অবলম্বন করা বিষয়ে সাহাবী তাবেয়ী ও তাদের পরবর্তী আহলে ইলম থেকে অসংখ্য বাণী বর্ণিত। আশা করি, আমরা এখানে যে সব আয়াত, হাদিস ও বাণী উল্লেখ করেছি, তা হকের অনুসন্ধান কারীর জন্য যথেষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য তাওফিক কামনা করি, এমন সব আমলে যা তাকে খুশি করে আর নিরাপত্তা কামনা করি তার বিক্ষুব্ধ হওয়া কারণ সমূহ হতে। আর আল্লাহ কাছে আমাদের কামনা তিনি যেন আমাদের সবাইকে সঠিক পথের হিদায়েত দেন। নিশ্চয় তিনি শ্রবণকারী ও নিকটবর্তী।

الله وسلم على عبده ورسوله نبينا محمد وعلى آله وأصحابه وأتباعه بإحسان

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন