মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
‘অতএব, যার ইচ্ছা, সে বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা, সে অমান্য করুক’ (কাহ্ফ ২৯)। তারা বলে, এখানে আল্লাহ বান্দাকে ভাল-মন্দ যে কন একটি করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন এবং এর উপর ভিত্তি করেই তিনি তাদেরকে জান্নাত অথবা জাহান্নাম দিবেন। [. ড. ইসমাঈল ক্বারনী, আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার ইন্দাল মুসলিমীন: দিরাসাহ ওয়া তাহলীল, (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিইয়াহ, প্রথম প্রকাশ: ২০০৬ইং), পৃ: ১৯৮; আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/৩৩৮।]
জবাবঃ উক্ত আয়াত বান্দার ইচ্ছাশক্তি প্রমাণ করে একথা যেমন ঠিক, তেমনি আরো অনেক আয়াত আছে, যেগুলি কখনও এককভাবে আল্লাহ্র ইচ্ছা প্রমাণ করে, আবার কখনও একই সাথে বান্দা এবং আল্লাহ্র ইচ্ছা উভয়ই প্রমাণ করে। আরো প্রমাণ করে যে, বান্দার ইচ্ছা আল্লাহ্র ইচ্ছার অধীনে। কিন্তু সেগুলিকে তারা গ্রহণ করে নি। আর সে কারণেই বান্দার ইচ্ছাশক্তি প্রমাণকারী আয়াতসমূহকে ক্বাদারিইয়াহরা গ্রহণ করে; কিন্তু আল্লাহ্র ইচ্ছা প্রমাণকারী আয়াতসমূহকে তারা বর্জন করে। পক্ষান্তরে জাবরিইয়াহরা আল্লাহ্র ইচ্ছা প্রমাণকারী আয়াতসমূহকে তাদের পক্ষের দলীল হিসাবে গ্রহণ করে; কিন্তু বান্দার ইচ্ছাশক্তি প্রমাণকারী আয়াতসমূহকে তারা বর্জন করে। ফলে উভয় গ্রুপ কুরআনের আয়াতসমূহকে তির্যক দৃষ্টিতে দেখার কারণে পথভ্রষ্ট হয়েছে। [. আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/, পৃ: ৩৪৮; আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার ইন্দাল মুসলিমীন: দিরাসাহ ওয়া তাহলীল/১৯৮।] অর্থাৎ উভয় গ্রুপ তার প্রতিপক্ষের বাদ দেওয়া দলীলসমূহকে নিজের পক্ষের দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং প্রতিপক্ষের গৃহীত দলীলসমূহের মস্তিষ্কপ্রসূত ও বিভ্রান্তিকর জবাব প্রদানের চেষ্টা করেছে। সেজন্য দেখা গেছে, উভয় গ্রুপ পরস্পরের দলীলের জবাব দিতে গিয়ে বড় বড় ভলিউম রচনা করেছে।
কিন্তু আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা উভয় চরম পন্থার মধ্যমপন্থী। তারা উভয় প্রকার দলীলের মধ্যে সঠিক সমন্বয় করতে সমর্থ হয়েছে। তারা বলেছে, বান্দার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি আছে, কিন্তু তা আল্লাহ্র ইচ্ছার অধীনে। আর শরঈ যেকোন বিধিবিধানের ক্ষেত্রে এটিই হচ্ছে মধ্যমপন্থী এবং চূড়ান্ত পদ্ধতি। একটি গ্রহণ করা আরেকটি বাদ দেওয়া ন্যায় সঙ্গত কোন পদ্ধতি নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
‘তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস করবে এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস করবে? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করবে, পার্থিব জীবনে তাদের জন্য লাঞ্ছনা ছাড়া কিছুই নেই। (শুধু কি তাই!) বরং ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোরতম শাস্তির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে’ (বাক্বারাহ ৮৫)।
২. যেসব আয়াত ঘোষণা করে যে, বান্দা নিজেই ঈমান আনে, কুফরী করে, আনুগত্য করে, অবাধ্য হয়; সেগুলিকে তারা তাদের দলীল হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। যেমনঃ আল্লাহ বলেন,
‘কেমন করে তোমরা আল্লাহ্র সাথে কুফরী কর? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন’ (বাক্বারাহ ২৮)। উক্ত আয়াত এবং এজাতীয় আরো বহু আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, বান্দা নিজেই ঈমান আনে, কুফরী করে ইত্যাদি। এসব কাজ যদি প্রকৃতপক্ষে বান্দারই না হত, তবে ঈমান না আনার কারণে আল্লাহ তাকে নিন্দা এবং ভর্ৎসনা করতেন না। [. আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/৩৩৮-৩৩৯।]
জবাবঃ আমরাও স্বীকার করি, বান্দা নিজেই হয় ঈমান বেছে নেয়, না হয় কুফরী বেছে নেয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সে নিজেই ঐ কুফরী বা ঈমানের স্রষ্টা; বরং আল্লাহই সেগুলির প্রকৃত স্রষ্টা আর বান্দা স্বেচ্ছায় যে কোন একটির বাস্তবায়নকারী মাত্র। সৃষ্টি এবং বাস্তবায়নের মধ্যে আকাশ-যমীন পার্থক্য রয়েছে। [. প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৬০।]
৩. যেসব আয়াত ভাল-মন্দ আমলের প্রতিদান প্রমাণ করে, সেগুলিকে তারা দলীল হিসাবে পেশ করে। যেমনঃ
‘কেউ জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের কি চোখ-জুড়ানো প্রতিদান লুক্কায়িত আছে’ (সাজদাহ ১৭)। বান্দা নিজেই যদি নিজের কর্ম সৃষ্টি না করত, তাহলে কুরআন-হাদীছের এ জাতীয় বক্তব্য মিথ্যা হয়ে যেত। [. ক্বাযী আব্দুল জব্বার, শারহুল উছূলিল খামসাহ, তাহক্বীক্ব: ড. আব্দুল কারীম উছমান, (কায়রো: মাকতাবাতু ওয়াহ্বা, প্রকাশকাল: ১৯৬৫ ইং), পৃ: ৩৬১।]
জবাবঃ এসব আয়াতের এমন মস্তিষ্ক প্রসূত ব্যাখ্যা করার কারণে ক্বাদারিইয়াহ এবং জাবরিইয়াহ উভয় দলই পথভ্রষ্ট হয়েছে। মনে রাখতে হবে, কুরআন-হাদীছে আমল করে জান্নাতে যাওয়া এবং না যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘হাঁ-বোধক’ এবং ‘না-বোধক’ দুই ধরনের বক্তব্য এসেছে। উল্লেখিত আয়াতটি ‘হাঁ-বোধক’ বক্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। ‘না-বোধক’ বক্তব্যের উদাহরণ হচ্ছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
«لَنْ يَنْجُوَ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِعَمَلِهِ «
‘তোমাদের কেউ কস্মিনকালেও তার আমলের বিনিময়ে মুক্তি পাবে না’। [. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮১৬, ‘মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য’ অধ্যায়, ‘আমলের বিনিময়ে কেউ কস্মিনকালেও জান্নাতে প্রবেশ করবে না; বরং আল্লাহ্র অনুগ্রহে প্রবেশ করবে’ অনুচ্ছেদ।] উক্ত আয়াত এবং এ জাতীয় অন্যান্য আয়াতের ‘বা’ (ب) বর্ণটি ‘কারণ’ ( سبب ) অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ তোমরা তোমাদের আমলের কারণে জান্নাতে যাবে। আর কারণ এবং ফলাফল দু’টিই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। কেননা তিনিই অনুগ্রহ করে বান্দার হেদায়াতের পথ সহজ করে দেন। সুতরাং কেবলমাত্র আল্লাহ্র রহমতেই জান্নাতে প্রবেশ সম্ভব।
পক্ষান্তরে উক্ত হাদীছ এবং এ জাতীয় অন্যান্য হাদীছের ‘বা’ বর্ণটি ‘বিনিময়’ অথবা মূল্য ( عوض أو ثمن ) অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ কস্মিনকালেও তোমাদের কেউ শুধুমাত্র তার আমলের বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কেননা কারো আমল তার জান্নাতে প্রবেশের মূল্য স্বরূপ কখনই হবে না। বান্দা যতই আমল করুক জান্নাতের নে‘মতসমূহের তুলনায় তার আমল কিছুই নয়। বান্দা সারা জীবন যদি ছালাত আদায় করে, ছিয়াম পালন করে, অন্যান্য নেকীর কাজ করে এবং যাবতীয় পাপাচার বর্জন করে চলে, তথাপিও সে আল্লাহ প্রদত্ত একটি নে‘মতের মূল্য দিতে পারবে না। তাহলে সে তার সামান্য আমলের বিনিময়ে জান্নাতের মত এত বড় নে‘মত কিভাবে ক্রয় করবে?! [. ইবনু আবিল ইয্য, জামে‘ শুরূহিল আক্বীদাতিত ত্বহাবিইয়াহ, ২/১১০৯; হাফেয হাকামী, আ‘লামুস্ সুন্নাতিল মানশূরাহ লি‘তিক্বাদিত ত্বয়েফাতিন নাজিয়াতিল মানছূরাহ, তাহক্বীক্ব: আহমাদ মাদখালী, (রিয়ায: মাকতাবাতুর রুশ্দ, প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৮ইং), পৃ: ১৪৭।]
কেউ কেউ বলছেন, যারা জান্নাতে যাবে, তারা আল্লাহ্র রহমতেই জান্নাতে যাবে। কিন্তু জান্নাতে জান্নাতীদের মর্যাদার কমবেশী হবে তাদের আমল অনুযায়ী। [. ড. ইবরাহীম ইবনে আমের রুহায়লী, আল-মুখতাছার ফী আক্বীদাতি আহলিস সুন্নাতি ফিল ক্বাদার, (কায়রো: দারুল ইমাম আহমাদ, প্রথম প্রকাশ: ২০০৭ ইং), পৃ: ৩৫।] ইবনে উয়ায়নাহ (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাঁদের মতে, কেউ জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে আল্লাহ্র ক্ষমার কারণে, জান্নাতে প্রবেশ করবে তাঁর রহমতে এবং জান্নাতে মর্যাদার কমবেশী হবে আমল অনুযায়ী’। [. ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদিল আরওয়াহ্ ইলা বিলাদিল আফরাহ, (কায়রো: মাকতাবাতুল মুতানাব্বী, তা. বি.), পৃ: ৬৪।]
৪. নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) কর্তৃক তাঁদের পাপ স্বীকার সম্বলিত আয়াতসমূহঃ যেমনঃ মহান আল্লাহ আদম (‘আলাইহিস্সালাম)-এর বক্তব্য তুলে ধরে বলেন,
﴿قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا﴾ [ سورة الأعراف : 23]
‘তারা উভয়ে বলল, হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি যুলম করেছি’ (আ‘রাফ ২৩)। আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিমুস সালাম) সম্পর্কে বলেন,
‘তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা! আমি তো নিজের উপর যুলম করে ফেলেছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’ (ক্বাছাছ ১৬)। ক্বাদারিইয়াহরা বলে, এ জাতীয় আয়াত প্রমাণ করে, ভাল-মন্দ কর্মের স্রষ্টা বান্দা নিজেই। আর সেকারণেই নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) তাঁদের পাপ স্বীকার করে নিয়েছেন। [. আল-ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/৩৩৯-৩৪০।]
জবাবঃ নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম) কর্তৃক পাপ সংঘটিত হওয়ার কারণে তাঁরা তা স্বীকার করে নিয়েছেন এবং আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। কিন্তু সেগুলি যে আল্লাহ্র সৃষ্ট নয়, তার দলীল কোথায়? [. প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৬১।]
এ জাতীয় আরো অনেক আয়াত দ্বারা ক্বাদাইরিইয়াহরা তাদের বিভ্রান্ত মতবাদ টিকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু সঠিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সেগুলির প্রত্যেকটি তাদের বিপক্ষে।
৫. তারা যু্ক্তি পেশ করে, আল্লাহ যদি বান্দার কর্মের স্রষ্টা হতেন, তাহলে আল্লাহ কর্তৃক বান্দাকে প্রদত্ত সুখ অথবা শাস্তি দু’টিই অন্যায় প্রমাণিত হত। কারণ আল্লাহ কিভাবে কোন বান্দাকে পাপের জন্য শাস্তি দিতে পারেন, অথচ তিনিই ঐ পাপ সৃষ্টি করেছেন! আল্লাহ কখনই যুলম করতে পারেন না।
অনুরূপভাবে আল্লাহ মানুষের কর্মের স্রষ্টা হলে তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন না। বান্দা কর্তৃক ঘটিত অপরাধের জন্য তিনি তাদেরকে ভর্ৎসনা করতেন না এবং সৎকাজের জন্য প্রশংসাও করতেন না। [. ক্বাসেম ইবনে ইবরাহীম রস্সী, কিতাবুল আদ্ল ওয়াত তাওহীদ ওয়া নাফয়ুত তাশবীহ আনিল্লাহ, তাহক্বীক্ব: ড. মুহাম্মাদ আম্মারাহ, (কায়রো: দারুশ শুরূক্ব, দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৯৮৮ইং), ১/১৪৫। উল্লেখ্য যে, ‘রাসাইলিল্ আদ্ল ওয়াত-তাওহীদ’ নামে একটি সংকলনে মু‘তাযেলী-যায়দী মতবাদের পৃষ্ঠপোষক ক্বাযী আব্দুল জব্বার (মৃত: ৪১৫ হি:), ক্বাসেম ইবনে ইবরাহীম রস্সী (মৃত: ২৪৬ হি:), ইয়াহ্ইয়া ইবনে হুসাইন (মৃত: ২৯৮ হি:), শরীফ মুর্তাযা (মৃত: ৪৩৬ হি:) প্রমুখের লেখনী একত্রিত করা হয়েছে। অতএব, কিতাবুল আদ্ল ওয়াত তাওহীদ ওয়া নাফয়ুত তাশবীহ আনিল্লাহ, শারহুল উছূলিল খামসাহ এবং আর-রদ্দু আলাল মুজবিরাতিল-ক্বাদারিইয়াহ গ্রন্থত্রয় সুন্নী গ্রন্থ নয়। কিন্তু বিভ্রান্ত ফের্কাসমূহের অনুসারীদের কতিপয় যুক্তি সরাসরি তাদের গ্রন্থ থেকে নেওয়ার মানসেই আমরা উক্ত গ্রন্থগুলিকে রেফারেন্স বুক্স হিসাবে ব্যবহার করেছি।]
জবাবঃ অকাট্য দলীল দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, মহান আল্লাহই বান্দার কর্মের মূল স্রষ্টা। অনুরূপভাবে অকাট্যভাবে আরো সাব্যস্ত হয়েছে যে, মানুষকে দায়িত্বভার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে এবং ইহলৌকিক জীবনের আমল মোতাবেক পারলৌকিক জীবনে ভাল বা মন্দ যে কোন একটি প্রতিদান সে পাবে। আল্লাহ তাকে শুধু দায়িত্বভার দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং তাকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, কর্মশক্তি এবং বিবেক-বুদ্ধি প্রদান করেছেন। সাথে সাথে নবী-রাসূল (আলাইহিমুস সালাম) প্রেরণ এবং আসমানী কিতাব অবতীর্ণের মাধ্যমে তাকে ভাল-মন্দ দু’টি পথ বাৎলে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে কোন কাজে বাধ্য করেননি এবং স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন যে, তিনি কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলম করেন না। এরশাদ হচ্ছে,
﴿وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ﴾
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দাদের প্রতি সামান্যতম যুলমকারী নন’ (আলে-ইমরান ১৮২, হজ্জ ১০, আনফাল ৫১)। অন্য আয়াতে এসেছে,
﴿وَمَا أَنَا بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ﴾ [ سورة ق : 29]
‘আমি বান্দাদের প্রতি সামান্যতম যুলমকারী নই’ (ক্বাফ ২৯)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
﴿وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ﴾ [ سورة فصلت : 46]
‘আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি বিন্দুমাত্র যুলমকারী নন’ (ফুছছিলাত ৪৬)। হাদীছে ক্বুদসীতে আল্লাহ বলেন,
‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের উপর যুলমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব, তোমরা পরস্পরে যুলম করো না’। [. ছহীহ মুসলিম/১০৪০, হা/২৫৭৭, ‘সদাচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা এবং শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘যুলম হারাম’ অনুচ্ছেদ।] সুতরাং ভাল-মন্দ উভয় আল্লাহ্র সৃষ্টি হলেও মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে যে কোন একটি বেছে নেয়। তাহলে উপরোক্ত উদ্ভট যুক্তি খাড়া করার কোন সুযোগই থাকে না এবং থাকে না আল্লাহ কর্তৃক বান্দাকে দায়িত্বভার প্রদান এবং বান্দার কর্ম সৃষ্টির মধ্যে কোন বৈপরীত্বও। [. ইবনুল ক্বাইয়িম, মুখতাছারুছ্ ছওয়ায়েক্বিল মুরসালাহ আলাল জাহ্মিইয়াতি ওয়াল মু‘আত্ত্বেলাহ, সংক্ষেপণ: মুহাম্মাদ ইবনুল মাওছেলী, (রিয়ায: মাকতাবাতুর রিয়ায আল-হাদীছাহ, তা. বি.), ১/৩২৫-৩২৬।]
৬. ক্বাদারিইয়াহরা বলে, মানুষের কর্মের মধ্যে অন্যায়-অত্যাচার মিশ্রিত থাকে। সুতরাং আল্লাহ যদি বান্দার কর্মের স্রষ্টা হন, তবে তাঁর অত্যাচারী হওয়া অপরিহার্য হয়ে যাবে! [. শারহুল উছূলিল খামসাহ/৩৪৫।]
জবাবঃ আমাদেরকে ‘সৃষ্টি ( خلْق ) এবং সৃষ্টবস্তু ( مخلوق )’-এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। এতদুভয়ের মধ্যকার পার্থক্য বুঝলে অনেক সংশয় এবং অস্পষ্টতা দূর হয়ে যাবে। এই পার্থক্য না করার কারণে ক্বাদারিইয়াহ-জাবরিইয়াহ দু’টি ফের্কাই পথভ্রষ্ট হয়েছে। সৃষ্টি করা হচ্ছে আল্লাহ্র সত্ত্বাগত ছিফাত বা বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সৃষ্টবস্তু আল্লাহ্র সত্ত্বাগত বৈশিষ্ট্য নয়; বরং তা তাঁর সত্ত্বা থেকে বিচ্ছিন্ন। সুতরাং মানুষের কর্ম আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট এবং তাঁর সত্ত্বা থেকে বিচ্ছিন্ন। কিন্তু সৃষ্টি নামক ক্রিয়াটি আল্লাহ্র সত্ত্বাগত বৈশিষ্ট্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আল্লাহ তার সৃষ্টবস্তুর মধ্যে নানা আকৃতি, গন্ধ, রং ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনিও ঐসব বিশেষণে বিশেষিত। অতএব বান্দা কর্তৃক ঘটিত অন্যায়-অত্যাচার, মিথ্যা ইত্যাদি আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট হলেও সেগুলি বান্দারই বৈশিষ্ট্য; আল্লাহ্র পবিত্র সত্ত্বা এমন বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। [. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ৮/১২৩।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/44/14
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।