hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাক্বদীরঃ আল্লাহ্‌র এক গোপন রহস্য

লেখকঃ আব্দুল আলীম ইব্‌ন কাওসার

২০
তাক্বদীর সম্পর্কিত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাঃ এক. আল্লাহ কর্তৃক মন্দ ও অকল্যাণ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি?
আমরা আগেই বলেছি, ‘আল্লাহ্‌র ইচ্ছা এবং সন্তুষ্টি-ভালবাসা’ এতদুভয়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। যেমন: অসুস্থ ব্যক্তি ওষুধ তেতো এবং দুর্গন্ধ হওয়া সত্ত্বেও ইচ্ছা করেই তা সেবন করে, অথচ সে এই ওষুধ সেবনে সন্তুষ্ট থাকে না। এখানে দেখা গেল, সে অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও ইচ্ছা করে এই তেতো ওষুধ সেবন করল একটি মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে; আর তা হচ্ছে রোগমুক্তি। সেজন্য আল্লাহ কর্তৃক কোন কিছুর ইচ্ছা পোষণ এবং উহাকে সৃষ্টির অর্থ এই নয় যে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে ভালবাসেন এবং তার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট থাকেন।

আল্লাহ ইচ্ছা করে সৃষ্টি করেন অথচ ভালবাসেন না-এর একটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। একজন শিক্ষক যখন তাঁর ছাত্রদেরকে পরীক্ষা করার জন্য এমসিকিউ (MCQ) পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরী করেন, তখন চারটি অপশনের সবগুলি ইচ্ছা করে তৈরী করা সত্ত্বেও কিন্তু সবগুলিকে তিনি পছন্দ করেন না; বরং তিনি পছন্দ করেন মাত্র একটি অপশনকে। সেজন্য কোন ছাত্র শিক্ষকের পছন্দসই উত্তরটির বৃত্ত ভরাট না করলে তিনি খুশীও হন না এবং কোন নম্বরও দেন না। এই উদাহরণে দেখা গেল, শিক্ষক অপছন্দ সত্ত্বেও ইচ্ছা করেই একটি মহৎ উদ্দেশ্যে ভুল অপশনগুলি রাখেন। কিন্তু সেজন্য তিনি মোটেও দোষী নন; বরং তিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। ভুলভ্রান্তির সব দায়িত্ব এককভাবে ছাত্রকেই বহন করতে হয়। কেননা শিক্ষক ছাত্রকে যথারীতি পাঠদান সত্ত্বেও সে সঠিক উত্তরটি চয়ন করতে ভুল করেছে। [. কাশফুল গায়ূম আনিল ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/১৯-২০।]

পক্ষান্তরে আল্লাহ কর্তৃক কোন কিছু অপছন্দের অর্থ এই নয় যে, তাতে ইরাদাহ কাউনিইয়াহ নেই। বরং তিনি কিছু কিছু জিনিসকে অপছন্দ করা সত্ত্বেও ইচ্ছা করে তাকে সৃষ্টি করে থাকেন। এক্ষণে প্রশ্ন হল, পছন্দ করেন না, ভালবাসেন না- এমন জিনিসকে আল্লাহ কেন সৃষ্টি করেন?

জানা আবশ্যক যে, আল্লাহ্‌র প্রত্যেকটি কাজে হিকমত এবং কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে, মানুষ সবকিছুর রহস্য জানতে পারবে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে সবকিছুর রহস্য অবগত করান না। বরং মানুষের কিছু কিছু বিষয়ের হিকমত জানা থাকলেও বেশীর ভাগই থাকে অজানা। এমনকি ফেরেশতামণ্ডলী এবং নবী-রাসূল (আলাইহিমুস সালাম)গণের ক্ষেত্রেও তাই। যেমনঃ ফেরেশতামণ্ডলীর নিকট মানব সৃষ্টির রহস্য গোপন ছিল এবং তাঁরা মনে করেছিলেন, এতে কোন কল্যাণ নেই। তাইতো মহান আল্লাহ সেদিন ফেরেশতামণ্ডলীকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,

﴿إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ﴾ [ سورة البقرة : 30]

‘আমি যা জানি, তোমরা তা জান না’ (বাক্বারাহ ৩০)। অতএব কোন কিছুর রহস্য জানা থাক বা না থাক একজন মুমিনকে দৃঢ় বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ্‌র সব কাজেই কল্যাণ এবং হিকমত রয়েছে। [. ড. মুহাম্মাদ রবী‘ হাদী মাদখালী, আল-হিকমাতু ওয়াত-তা‘লীলু ফী আফ‘আলিল্লাহ, (মাকতাবাতু লীন, প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৮ইং), পৃ: ২০৭।]

এবার আমরা মূল জবাবে ফিরে আসি, অকল্যাণ কোন কিছুকে সৃষ্টির মধ্যে প্রভূত কল্যাণ এবং হিকমত নিহিত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, ঈমান আল্লাহ্‌র নিকট প্রিয়। কিন্তু কুফর তাঁর নিকট অপ্রিয়। অথচ অপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও অনেক কল্যাণকে কেন্দ্র করে তিনি এই কুফরও সৃষ্টি করেছেন। কারণ কুফর না থাকলে ঈমান চেনা যেত না। কুফর না থাকলে আল্লাহ কর্তৃক বান্দাকে প্রদত্ত ঈমান নামক নে‘মতের মর্যাদা মানুষ জানতে পারত না। কুফর না থাকলে ভাল কাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধের মূলনীতি ইসলামে থাকত না। কুফর না থাকলে জিহাদ থাকত না। কুফর না থাকলে জাহান্নাম সৃষ্টি নিরর্থক হয়ে যেত। কারণ জাহান্নাম তো কাফেরদেরই আবাসস্থল। এক কথায়, কুফর এবং পাপাচার না থাকলে শরী‘আত তথা ইসলামেরই প্রয়োজন পড়ত না। আর ইসলাম না থাকলে মানুষ সৃষ্টিই অনর্থক হয়ে যেত। [. শারহুল আক্বীদাতিল ওয়াসেত্বিইয়াহ, ২/১৯১, ২১৬-২১৮।]

অনুরূপভাবে বালা-মুছীবতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেন। আল্লাহ বলেন,

﴿وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً   ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ﴾ [ سورة الأنبياء : 35]

‘আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি। আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (আম্বিয়া ৩৫)। বিপদাপদ দিয়ে আল্লাহ মুমিনের অন্তঃকরণ পরিচ্ছন্ন করে দেন। কারণ বিপদাপদ, রোগ-বালাই ইত্যাদি না থাকলে মানুষ অবাধ্য, অহংকারী এবং উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যেত। দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি হত। বিপদাপদের মাধ্যমে সুখ-স্বাচ্ছন্দ এবং সুস্থতার প্রকৃত মর্যাদা অনুধাবন করা যায়। কারণ কোন কিছুকে বুঝতে হলে তার বিপরীত জিনিস দিয়ে বুঝতে হয়। [. আল-ঈমান বিল ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/১১২।]

উদাহরণস্বরূপ আরো বলা যায়, যাবতীয় মন্দ কাজের মূল হোতা ইবলীস। তাহলে তাকে কেন সৃষ্টি করা হল?

জবাবে বলব, এর পেছনে আল্লাহ্‌র অনেক হিকমত রয়েছে। আমরা নীচে সেগুলির কয়েকটি উল্লেখ করছি:

* বিশেষত মানব এবং জিন জাতিকে পরীক্ষা করার জন্য। তাদের মধ্যে কে ভাল আর কে ভাল নয়, তা যাচাই-বাচাই করা ইবলীস সৃষ্টির অন্যতম লক্ষ্য। [. আল-হিকমাতু ওয়াত-তা‘লীলু ফী আফ‘আলিল্লাহ/২০৫।]

* বিপরীতমুখী বিষয়গুলি সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ্‌র অসীম ক্ষমতা প্রকাশ। আল্লাহ যাবতীয় অকল্যাণের মূলোৎস ইবলীস নামক এই নিকৃষ্টতম সত্ত্বাটিকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি এর বিপরীতে যাবতীয় কল্যাণের মূল সর্বোচ্চ সম্মানিত ফেরেশতা জিবরীল (‘আলাইহিস্‌সালাম)কেও সৃষ্টি করেছেন। এতে মহান আল্লাহ্‌র সীমাহীন ক্ষমতাই প্রকাশ পায়। যেমনিভাবে রাত-দিন, গরম-ঠাণ্ডা, আগুন-পানি, অসুখ-সুস্থতা, হায়াত-মউত, সুন্দর-অসুন্দর ইত্যাদি সৃষ্টিতে মহান আল্লাহ্‌র অপরিসীম ক্ষমতা প্রকাশ পায়। কারণ বিপরীতমুখী বিষয়গুলির অপরটি না থাকলে আল্লাহ্‌র হিকমত নষ্ট হয়ে যেত, তাঁর পূর্ণাঙ্গ আধিপত্য স্পষ্ট হত না। [. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহেমাহুল্লাহ), মাদারিজুস্‌ সালেকীন, তাহক্বীক্ব: ইমাদ আমের (কায়রো: দারুল হাদীছ, প্রকাশকাল: ২০০৩ইং), ২/১৬১।]

* এর মাধ্যমে আল্লাহ ইবাদতের ক্ষেত্রে তাঁর বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চান। কারণ তারা প্রতিনিয়ত ইবলীসের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্‌র আনুগত্য এবং ইবলীস থেকে তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে তারা ইবলীসকে ক্রোধান্বিত করবে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে তার কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবেন এবং এর মাধ্যমে তারা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক প্রভূত কল্যাণ অর্জন করবে। কিন্তু ইবলীস না থাকলে এগুলি সম্ভব হত না।

অনুরূপভাবে আল্লাহকে ভালবাসা, তাঁর উপর ভরসা, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন, বালা-মুছীবতে ধৈর্য্যধারণ ইত্যাদি আল্লাহ্‌র প্রিয়তর ইবাদত; কিন্তু সেগুলি প্রবৃত্তি এবং শয়তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছাড়া সম্ভয় নয়। ফলে ইবলীস সৃষ্টির কারণেই উক্ত ইবাদতগুলি বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। [. আল-হিকমাতু ওয়াত-তা‘লীলু ফী আফ‘আলিল্লাহ/২০৫; হালিল ইনসান মুসাইয়্যার আও মুখাইয়্যার?/১৮-২৩।]

* এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র বহু নিদর্শন প্রকাশ। কারণ যালেম এবং পাপী-তাপী কর্তৃক কুফর ও মন্দ কর্ম সংঘটিত হলে আল্লাহ্‌র অনেক নির্দশন প্রকাশ পায়। যেমনঃ ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি। এছাড়া ছামূদ জাতি এবং লূত্ব (‘আলাইহিস্‌সালাম)-এর ক্বওমকে সমূলে ধ্বংস, ইবরাহীম (‘আলাইহিস্‌সালাম)-এর জন্য আগুনের শীতল এবং শান্তিময় রূপ ধারণ, মূসা (‘আলাইহিস্‌সালাম)-এর হাতে সংঘটিত নানা নিদর্শনও ইবলীস সৃষ্টির মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। [. মাদারিজুস্‌ সালেকীন, ২/১৬৩।]

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহ কর্তৃক বালা-মুছীবত সৃষ্টির উদ্দেশ্য বুঝলাম; কিন্তু আল্লাহ কেন পাপ সৃষ্টি করেছেন? জবাবে বলব, এর পেছনে অনেক রহস্য নিহিত আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

১. আল্লাহ তওবাকারীকে ভালবাসেন। পাপ না থাকলে সেটি সম্ভব হত না।

২. আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান। তিনি পাপীকে ক্ষমা করেন, তার কৈফিয়ত শোনেন। কিন্তু পাপ না থাকলে সেটি সম্ভব হত কি?

৩. পাপ থাকার কারণে বান্দা আল্লাহ কর্তৃক তার নিজের হেফাযতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে। কেননা আল্লাহ যদি তাকে পাপাচার থেকে রক্ষা না করেন, তাহলে তার বাঁচার কোন উপায় নেই, তার ধ্বংস অনিবার্য।

৪. এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, গোপনীয়তা রক্ষা, অসীম ধৈর্য্যের কথা জানতে পারে। কারণ আল্লাহ চাইলে বান্দার গোপন পাপাচার ফাঁস করে দিতে পারেন, তাকে দ্রুত শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দিতে পারেন।

৫. পাপের মাধ্যমে বান্দা তওবা কবূলের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের কথা জানতে পারে। কেননা আল্লাহই তাকে তওবা করার তাওফীক্ব দান করেছেন; অতঃপর তার তওবা কবূলও করেছেন। আল্লাহ্‌র ক্ষমা, অনুগ্রহ ছাড়া বান্দার মুক্তির কোন পথ নেই।

৬. পাপ থাকার কারণে বান্দা শয়তানের সাথে সার্বক্ষণিক যুদ্ধ করতে পারে এবং সে তাকে ক্রোধাণ্বিত করতে পারে। কারণ শয়তান বান্দাকে দিয়ে সর্বদা পাপ কাজ করিয়ে নিতে চায়; কিন্তু বান্দা যখন পাপ বর্জন করে চলতে পারে, তখন শয়তান রাগাণ্বিত এবং ব্যর্থ হয়ে যায়।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহেমাহুল্লাহ) এছাড়াও আরো অনেকগুলি হিকমতের কথা উল্লেখ করেছেন। [. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ, (বৈরূত: দারুল কুতুবিল ইলমিইয়াহ, প্রকাশকাল: ১৯৯৮ ইং), ২/২৯৭-৩১২।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন