মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
তিন. পাপ কাজ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়ার বিধান কি?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/44/22
তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনার অর্থ এই নয় যে, পাপী পাপকর্ম করে অথবা ইসলামের ফরয-ওয়াজিব ছেড়ে দিয়ে তাক্বদীরের দোহাই দিবে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিইয়াহ (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, কেউ পাপ করে তাক্বদীরের দোহাই দিতে পারে না। এ বিষয়ে সকল মুসলিম, প্রত্যেকটি ধর্মের অনুসারী এবং সকল বিবেকবান মানুষ একমত। কেননা পাপ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া যদি বৈধ হত, তবে যে কেউ হত্যা, লুণ্ঠন, ফেৎনা-ফাসাদ সৃষ্টির পর তাক্বদীরের দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যেত। আমরা তাক্বদীরের দোহাই প্রদানকারীকে যদি জিজ্ঞেস করি, তোমার উপর অত্যাচার করে কেউ যদি তাক্বদীরের দোহাই দেয়, তাহলে কি তুমি তাকে ছেড়ে দিবে? সে কখনই তাকে ছেড়ে দিবে না। অতএব স্বাভাবিক এই বিবেকই প্রমাণ করে যে, পাপ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া চলবে না। [. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ৮/১৭৯।]
শায়খ উছায়মীন [. শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছায়মীন জগদ্বিখ্যাত একজন আলেমে দ্বীন। ১৩৪৭ হিজরীর ২৭ই রামাযান সঊদী আরবের উনায়যা নগরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নানার কাছে তিনি ক্বুরআন শিক্ষা করেন এবং ১১ বছর বয়স না হতেই তিনি পবিত্র ক্বুরআন হেফয শেষ করেন। তাঁর পিতার দিক-নির্দেশনা মোতাবেক তিনি দ্বীনী ইলম শিক্ষায় ব্রতী হন। তাঁর শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে আল্লামা আব্দুর রহমান সা‘দী উল্লেখযোগ্য। কর্ম জীবনে তিনি ছাত্রদের অত্যন্ত প্রিয় এবং যোগ্য শিক্ষক ছিলেন। ১৪০২ সাল থেকে মৃত্যু অবধি হজ্জ মৌসুমে ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে তিনি কা‘বা শরীফ এবং মসজিদে নববীতে দারস দিতেন। শায়খ উছায়মীন সরকারী অনেকগুলি বড় বড় পদ অলংকৃত করেন। ‘শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন’, ‘আশ্-শারহুল মুমতে‘ আলা যাদিল মুসতাক্বনে’, ‘মাজমু‘উ ফাতাওয়া ইবনে উছায়মীন’ সহ প্রায় ৯৩টি মহা মূল্যবান গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। ১৪২১ হিজরীর ১৫ই শাওয়াল জেদ্দায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কা‘বা শরীফে তাঁর জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন (আল-ক্বাছীম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শারী‘আহ’ অনুষদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত ‘আর-রুওয়াদ’ গ্রন্থের ৪১-৫১ পৃষ্ঠা দৃষ্টব্য)।] (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, কেউ অন্যায়-অপকর্ম করে তাক্বদীরের দোহাই দিতে পারে না। কিছু কিছু অপরাধীকে তার অপরাধ প্রবণতা থেকে ফিরে আসতে বললে সে বলে, এটি আল্লাহ আমার তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন; তুমি কি আমার প্রতি আল্লাহ্র সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে চাও?! কেউ কেউ আবার আদম এবং মূসা (আলাইহিমাস সালাম)-এর ঘটনাটি দ্বারা নিজের পক্ষে দলীল গ্রহণ করতে চায়! ঘটনাটি এরূপ: আদম এবং মূসা (আলাইহিমাস সালাম)-এর মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়। তখন মূসা (‘আলাইহিস্সালাম) তাকে বলেন, আপনি আমাদের পিতা, আপনি আমাদেরকে হতাশ করে জান্নাত থেকে বের করে এনেছেন?! আদম (‘আলাইহিস্সালাম) মূসা (‘আলাইহিস্সালাম) কে বললেন, তুমি মূসা! তোমাকে আল্লাহ তার সাথে কথা বলার জন্য নির্বাচন করেছেন। তিনি তোমার জন্য নিজ হাতে তাওরাত লিখে দিয়েছেন। আমাকে সৃষ্টির চল্লিশ বছর পূর্বে আল্লাহ আমার ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তুমি কি সে বিষয়ে আমাকে ভর্ৎসনা করছ?! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আদম (‘আলাইহিস্সালাম) মূসা (‘আলাইহিস্সালাম)-এর উপর বিজয়ী হয়ে গেলেন’। [. বুখারী, ৪/২১২, হা/৬৬১৪, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায়, ‘আদম এবং মূসা (আঃ) বিতর্ক করেছিলেন’ অনুচ্ছে; মুসলিম, হা/২৬৫২, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায়, ‘আদম এবং মূসা (আঃ)-এর বিতর্ক’ অনুচ্ছেদ।]
এই ঘটনার আলোকে সে বলে, আদম (‘আলাইহিস্সালাম) এখানে তাক্বদীরের দোহাই দিলেন এবং মূসা (‘আলাইহিস্সালাম)ও অমনি চুপ করে গেলেন, অথচ তাঁরা দুজনই নবী! তাহলে তুমি কেন আমার কাজের প্রতিবাদ করছ?
আমরা জবাবে বলব, আদম (‘আলাইহিস্সালাম) অপরাধ করেছিলেন এবং এই অপরাধের কারণে জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তওবা করেছিলেন এবং আল্লাহ তাঁর তওবা কবূলও করেছিলেন। আর তওবাকারী পাপ-পঙ্কিলতা মুক্ত মানুষের মত। আর একথা অসম্ভব যে, মূসা (‘আলাইহিস্সালাম)-এর মত একজন নবী তওবা করার পরও আদম (‘আলাইহিস্সালাম) কে তিরস্কার করবেন। সেজন্য তিনি ঐ অপরাধ কর্মের কারণে তাঁকে তিরস্কার করেন নি; বরং ঐ অপরাধের কারণে যে মুছীবত নেমে এসেছে, সেই মুছীবতকে তিনি তিরস্কার করেছিলেন। আর অনাঙ্খিত বিপদাপদ আসলে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া যায়; কিন্তু অপরাধ করে দেওয়া যায় না। সেজন্য মূসা (‘আলাইহিস্সালাম) বলেন নি যে, আপনি কেন আল্লাহ্র নির্দেশের খেলাপ করেছিলেন? বরং তিনি বলেছিলেন, আপনি আমাদের এবং আপনার নিজেকে কেন জান্নাত থেকে বের করেছিলেন? মহান আল্লাহ বলেন,
‘এখন মুশরিকরা বলবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ-দাদারা শিরক করত এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে’ (আন‘আম ১৪৮)।
এখানে তারা তাদের অপরাধ কর্মের পক্ষে তাক্বদীর দিয়ে দলীল পেশ করলে আল্লাহ তাদেরকে বললেন, ‘এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে’। একথা বলে আল্লাহ প্রমাণ করলেন, তাদের তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া ছিল বাতিল। কেননা এমন দোহাই দেওয়া গ্রহণযোগ্য হলে তাদেরকে আল্লাহ্র শাস্তি ভোগ করতে হত না।
কেউ যদি বলে, আল্লাহ নিজেই তো এরশাদ করেছেন,
﴿وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكُوا﴾ [ سورة الأنعام : 107]
‘যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তারা শিরক করত না’ (আন‘আম ১০৭)। তাহলে এর জবাব কি হবে? আমরা বলব, কেউ যদি কাফের সম্পর্কে বলে, আল্লাহ চাইলে সে শিরক করত না, তাহলে তা জায়েয। তবে কোন মুশরিক যদি বলে, আল্লাহ চাইলে আমরা শিরক করতাম না, তাহলে তা মস্ত বড় ভুল হবে। উভয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর নিকট চোর তাক্বদীরের দোহাই দিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি বলেছিলেন, তাক্বদীরে আছে বলেই আমিও তোমার হাত কেটে দিলাম।
এবার আসুন! আমরা যুক্তির বিচারে বিষয়টি বিশ্লেষণ করি: আমরা ঐ ব্যক্তিকে বলব, পাপ কাজটি করার আগে কি তুমি জানতে যে, আল্লাহ তোমার জন্য পাপ লিখে রেখেছেন? সে বলবে, না। তখন আমরা তাকে বলব, কেন তুমি ধরে নিচ্ছ না যে, আল্লাহ তোমার জন্য পাপ নয়; বরং পূণ্যের কাজই লিখে রেখেছেন এবং সেই অনুযায়ী কেন তুমি নেকীর কাজটি করছ না? তোমার সামনে তো দু’টি দরজাই খোলা। যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তুমি কল্যাণ প্রাপ্ত হবে, সে দরজা দিয়ে কেন তুমি প্রবেশ করতে চাইছ না?
আমরা তাকে আরো বলব, তোমাকে যদি বলা হয়, মক্কায় যাওয়ার দু’টি রাস্তা: একটি সহজ-সরল ও নিরাপদ এবং অপরটি কঠিন ও ভীতিকর; এক্ষণে তুমি কি নিরাপদ রাস্তাটি গ্রহণ করবে না? সে বলবে, অবশ্যই। তখন আমরা তাকে বলব, তাহলে ইবাদতের ক্ষেত্রে কেন তুমি নিরাপদ রাস্তাটি রেখে কণ্টকাকীর্ণ রাস্তা বেছে নিচ্ছ?
আমরা তাকে আরো বলব, সরকার যদি দু’টি চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি দেন: একটি বেশী বেতনের এবং অপরটি কম বেতনের; তুমি কোন্টি বেছে নিবে? নিশ্চয় বেশী বেতলওয়ালা চাকুরীটিই তুমি বেছে নিবে। একথা প্রমাণ করে যে, তুমি বৈষয়িক জীবনে ভালটাই তালাশ করছ, কিন্তু ধর্মীয় জীবনে কেন তুমি তা করছ না?! তোমার পক্ষ থেকে একই সময়ে বিপরীতমুখী দু’টি অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে কেন?
অতএব, তাক্বদীরের দোহাই দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার কোনই সুযোগ নেই। [. প্রাগুক্ত, ২/২২৬-২২৭।]
তবে পাপ করে তওবা করার পর তাক্বদীরের কথা বলা যেতে পারে। যেমনঃ যদি পাপ করার পর তওবাকারীকে কেউ জিজ্ঞেস করে, তুমি কেন এই পাপ করেছ?, তাহলে সে বলতে পারে, তাক্বদীরে ছিল বলে ঘটে গেছে; কিন্তু আমি আল্লাহ্র কাছে তওবা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আমি এমনটি আর করবো না। [. শিফাউল আলীল/৩২; মুহাম্মাদ ইবনে উছায়মীন, তাক্বরীবুত্ তাদ্মুরিইয়াহ, (দাম্মাম: দারু ইবনিল জাওযী, প্রথম প্রকাশ: ১৪১৯ হি:), পৃ: ১০২।]
অনুরূপভাবে অনাকাঙ্খিত বালা-মুছীবত এলে তখন তাক্বদীরের কথা বলা যায়। যেমনঃ দরিদ্রতা, অসুস্থতা, কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুবরণ, শস্য-ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। সুতরাং কেউ অসুস্থ হলে সে বলতে পারে, আল্লাহ্র তাক্বদীর অনুযায়ীই এই অসুখ হয়েছে। তবে তাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। [. আল-ঈমান বিল ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার/৮৫।]
আমরা আমাদের বক্তব্যের পক্ষে আরো কয়েকটি দলীল পেশ করছিঃ
‘সুসংবাদদাতা এবং ভীতি-প্রদর্শনকারী হিসাবে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে মানুষের জন্য আল্লাহ্র প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন অবকাশ না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশীল, প্রাজ্ঞ’ (নিসা ১৬৫)।
পাপ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া যদি বৈধ হত, তাহলে রাসূলগণ (আলাইহিমুস সালাম) কে পাঠানোর কোন প্রয়োজনই পড়ত না।
২. পাপ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া বৈধ হলে ইবলীসের পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করা হত। আল্লাহ ইবলীসের উক্তি তুলে ধরে বলেন,
‘সে বলল, আপনি আমাকে যেহেতু বিভ্রান্ত করেছেন, সেহেতু আমিও তাদের জন্য আপনার সরল পথে ওঁৎ পেতে বসে থাকবো’ (আ‘রাফ ১৬)।
৩. পাপ কাজ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া জায়েয হলে ইসলামী শরী‘আতই তছনছ হয়ে যেত। আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধের কোন মূল্যই থাকত না।
৪. তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া বৈধ হলে জাহান্নামীরা দোহাই দিত। কেননা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে; তদুপরিও তারা তাক্বদীরের দোহাই দিবে না। বরং তারা বলবে,
﴿رَبَّنَا أَخِّرْنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ﴾ [ سورة إبراهيم : 44]
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে সামান্য মেয়াদ পর্যন্ত সময় দিন, যাতে আমরা আপনার আহবানে সাড়া দিতে পারি এবং রাসূলগণের অনুসরণ করতে পারি’ (ইবরাহীম ৪৪)। এজাতীয় আরো অনেক কথাই বলবে তারা, কিন্তু তাক্বদীরের দোহাই দিবে না।
৫. তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া যদি সিদ্ধ হত, তবে তওবা, ইস্তেগফার, দো‘আ, জিহাদ, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ ইত্যাদির কোন প্রয়োজনই পড়ত না।
৬. আমরা তাকে বলব, তুমি বিয়ে করো না। কেননা আল্লাহ তাক্বদীরে রাখলে ঠিকই সন্তান হবে। আর না রাখলে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। খানা-পিনা ছেড়ে দাও। কেননা আল্লাহ তাক্বদীরে রাখলে এমনিতেই তোমার ক্ষুধা এবং তৃষ্ণা মিটে যাবে, অন্যথায় কখনই তা সম্ভব নয়। তোমাকে কোন হিংস্র প্রাণী কামড়াতে আসলে তুমি পালাবে না। কারণ তাক্বদীরে থাকলে সে তোমাকে কামড়াবে অন্যথায় নয়।
সে আমাদের এসব কথায় একমত হবে? যদি একমত হয়, তাহলে বুঝতে হবে, তার বিবেক-বুদ্ধি নষ্ট হয়ে গেছে। আর যদি সে দ্বিমত পোষণ করে, তাহলে বুঝতে হবে, সে আর তাক্বদীরের দোহাই দিচ্ছে না।
৭. পাপ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া সিদ্ধ হলে বিশ্বব্যাপী ফেৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ত। শরী‘আতের দণ্ডবিধির কোনই প্রয়োজন পড়ত না। কোর্ট-কাচারী, বিচারক ইত্যাদির কোন দরকারই হত না।
এরকম আরো অনেক দলীল রয়েছে, যেগুলি অকাট্য প্রমাণ করে, পাপ করে তাক্বদীরের দোহাই দেওয়া আদৌ বৈধ নয়। [. প্রাগুক্ত, পৃ: ৮১-৮৫।]
আমরা একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, যা আলোচ্য বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করবে ইনশাআল্লাহ। ঘটনাটি এরূপ: জাবরিইয়াহ মতবাদে বিশ্বাসী এক লোক যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম করে তাক্বদীরের দোহাই দিত। তার এক বন্ধু তাকে নছীহত করত; কিন্তু তা তাকে কোনই ফায়দা দিত না। তার বন্ধু তাকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।
লোকটি প্রচুর সম্পদের মালিক ছিল। একেক প্রকার সম্পদ একেক জন মানুষ দেখাশুনা করত। বন্ধুর উপস্থিতিতে হঠাৎ একদিন গরু, ছাগল, উট ইত্যাদি দেখাশুনার দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকটি এসে মালিককে বলল, আপনার সব পশু ক্ষুধায় মারা গেছে। কারণ যেখানে সেগুলিকে চরাতে নিয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে একটি ঘাসও ছিল না। মালিক বলল, জানা সত্ত্বেও তৃণ-লতাহীন ময়দানে তুমি সেগুলিকে কেন চরাতে নিয়ে গেলে? সে বলল, তাক্বদীরে ছিল বলেই এমনটি ঘটে গেছে। মালিক রাগে ফেটে পড়ল।
দেখতে দেখতে ব্যবসার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিটি এসে বলল, আপনার ব্যবসার সব মাল ডাকাতি হয়ে গেছে। কারণ ডাকাতির ভয় থাকা সত্ত্বেও আমি অমুক রাস্তা দিয়েই আসছিলাম। জাবরিইয়াহ মতবাদে বিশ্বাসী মালিক বলল, জেনেশুনে কেন তুমি ভয়-ভীতিপূর্ণ রাস্তা বেছে নিলে, অথচ তোমার সামনে নিরাপদ রাস্তাও ছিল? লোকটি আগের লোকটির মত একই জবাব দিল। মালিকের রাগ আরো প্রচণ্ড আকার ধারণ করল।
এরপর তার ছেলে-মেয়ে লালন-পালনে নিয়োজিত ব্যক্তিটি এসে বলল, আমি ওদেরকে সাঁতার শিখানোর জন্য অমুক কূপে নামিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সবাই ডুবে মারা গেছে। মালিক বলল, তুমি জান যে, তারা ভাল সাঁতার জানে না এবং ঐকূপের গভীরতাও অনেক, অথচ তারপরেও তুমি একাকি কেন তাদেরকে কূপে নামিয়ে দিলে? লোকটি বলল, তাক্বদীরে থাকলে কিবা করার আছে। মালিক নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হল।
এবার মালিকের বন্ধু মুখ খুলল আর বলল, তুমি খামাখা কেন এই লোকগুলির উপর রাগ করছ? কেন তুমি তাদের কৈফিয়তে খুশী থাকতে পারছ না? অথচ কত অপকর্ম করে তুমি তোমার প্রভূর সামনে এমন কৈফিয়তই পেশ করেছ?! তোমার প্রভূর সাথে তোমার কৈফিয়ত যদি গৃহীত হয়, তবে এদের কৈফিয়তও গ্রহণ করতে হবে। আর যদি তাদের কৈফিয়ত ঠাট্টার শামিল হয়, তাহলে কেন তুমি তোমার প্রভূর সাথে ঠাট্টা কর?!
তখন জাবরিইয়াহ মতবাদে বিশ্বাসী ঐ মালিকের হুঁশ ফিরল এবং বলে উঠল, আমি সেই মহান আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করছি, যিনি আমাকে আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। আজকের ঘটনা থেকে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি দৃঢ় বিশ্বাস করছি এবং ঘোষণা করছি যে, আজ আমার যেসব ক্ষতি হয়েছে, সেগুলি হেদায়াতপ্রাপ্তির এই নে‘মতের তুলনায় অতি নগণ্য। যেমননিভাবে মহান আল্লাহ বলেন,
‘তোমরা এমন কিছু বিষয় অপছন্দ কর, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। পক্ষান্তরে তোমরা এমন কিছু পছন্দ কর, যা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না’ (বাক্বারাহ ২১৬)। [. আদ্-দুররাতুল বাহিইয়াহ শারহুল ক্বাছীদাতিত্ তায়িইয়াহ ফী হাল্লিল মুশকিলাতিল ক্বাদারিইয়াহ/৮৯-৯১।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/44/22
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।