মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
দ্বিতীয় স্তর: আল্লাহ তাঁর চিরন্তন জ্ঞান অনুযায়ী লাউহে মাহ্ফূযে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সবই লিখে রেখেছেন এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করাঃ [. আব্দুল আযীয মুহাম্মাদ, আল-কাওয়াশেফুল জালিইয়াহ আন মা‘আনিল ওয়াসেত্বিইয়াহ, (রিয়ায: মাকতাবাতুর রিয়ায আল-হাদীছাহ, ষষ্ঠ প্রকাশ: ১৯৭৮ইং), পৃ: ৬২০।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/44/8
অর্থাৎ আমাদেরকে দৃঢ় বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ লাউহে মাহফূযে তাঁর চিরন্তন জ্ঞান মোতাবেক সৃষ্টিজগতের সবকিছুর তাক্বদীর কলম দ্বারা বাস্তবেই লিখে রেখেছেন; তাঁর চিরন্তন জ্ঞানের কোন কিছুই এই লেখনী থেকে বাদ পড়ে নি। আর লাউহে মাহ্ফূযের এই লিখন ছিল আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে। তখন আল্লাহ কলম সৃষ্টি করে তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে সবকিছু লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। [. আল-ই‘তিক্বাদুল ওয়াজিব নাহ্ওয়াল ক্বাদার/১১।]
ইবনে তায়মিইয়াহ (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অতঃপর তিনি লাউহে মাহ্ফূযে সৃষ্টির তাক্বদীর লিখেন। সর্বপ্রথম তিনি কলম সৃষ্টি করে তাকে বলেন, লিখ। সে বলে, আমি কি লিখব? আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, তার সবই লিখ’। [. মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ৩/১৪৮।]
‘যমীনে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর এমন কোন মুছীবত আসে না, যা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই। নিশ্চয়ই এটি আল্লাহ্র পক্ষে সহজ’ (আল-হাদীদ ২২)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনিল আছ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, ‘আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ‘আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ সবকিছুর তাক্বদীর লিখে রেখেছেন। তিনি বলেন, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে’। [. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৩ ‘তাক্বদীর’ অধ্যায়, ‘আদম এবং মূসা (আঃ)-এর বিতর্ক’ অনুচ্ছেদ,।]
ইমরান ইবনে হুছাইন (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ ছিলেন; তাঁর পূর্বে কিছুই ছিল না। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে। অতঃপর আল্লাহ আসমান-যমীন সৃষ্টি করলেন এবং লাউহে মাহ্ফূযে সবকিছু লিখে রাখলেন’। [. ছহীহ বুখারী, ৪/৩৮৭, হা/৭৪১৮, ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, ‘তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে এবং তিনিই আরশের সুমহান অধিপতি’ অনুচ্ছেদ।]
তাক্বদীর লিপিবদ্ধের পাঁচটি পর্যায়ঃ
প্রথম পর্যায়ঃ আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ লাউহে মাহ্ফূযে সবকিছুর তাক্বদীর লিখে রাখেন। লাউহে মাহ্ফূযে বান্দার ভাগ্যে ভাল বা মন্দ যা-ই লিখে রাখা হয়েছে, তা-ই সে পাবে। ইমরান ইবনে হুছাইন (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)-এর হাদীছদ্বয়ে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ আল্লাহ বনী আদমকে তাদের পিতা আদম (‘আলাইহিস্সালাম)-এর পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করে তাদের নিকট থেকে এমর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তারা যেন তাঁর সাথে শিরক না করে। এসময় তিনি তাদের সবাইকে দু’বার দু’মুষ্টিতে নিয়েছিলেন এবং এক মুষ্টিকে জান্নাতবাসী আর অপর মুষ্টিকে জাহান্নামবাসী হিসাবে লিখে রেখেছিলেন। এই লিখন ছিল লাউহে মাহ্ফূযে লিখনের পরের স্তরে। [. সুনানে আবূ দাঊদ, হা/৪৭০৩, ‘সুন্নাহ’ অধ্যায়, ‘তাক্বদীর’ অনুচ্ছেদ; ছালেহ ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে মুহাম্মাদ আলুশ্-শায়খ, জামে‘উ শুরূহিল আক্বীদাতিত্-ত্বহাবিইয়াহ, ১/৫৬৯।]
‘আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি; যাতে ক্বিয়ামতের দিন এ কথা না বলতে পার যে, আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে বেখবর। ’ (আল-আ‘রাফ ১৭২)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ অন্ধকারে তাঁর সৃষ্টিকে সৃষ্টি করে স্বীয় নূরের আলোচ্ছটা দিলেন। ঐদিন যাকে আল্লাহ্র নূরের আলোচ্ছটা স্পর্শ করেছে, সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে, যাকে স্পর্শ করেনি, সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। সেজন্যই তো আমি বলি, কলম শুকিয়ে গেছে’। [. জামে‘ তিরমিযী, হা/২৬৪২, ঈমান অধ্যায়, ‘এই উম্মতের মধ্যে বিভক্তি’ অনুচ্ছেদ, ইমাম তিরমিযী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]
মনে রাখতে হবে, একদলকে জান্নাতী এবং অপর দলকে জাহান্নামী হিসাবে লিখে দেওয়া অথবা একদলকে আল্লাহ্র নূরের আলোচ্ছটা স্পর্শ করা এবং আরেক দলকে স্পর্শ না করার বিষয়টি এলোপাতাড়ি কোন বিষয় নয়; বরং আল্লাহ্র চিরন্তন জ্ঞান, ইচ্ছা এবং তাঁর পরিপূর্ণ ন্যায় ও ইনছাফের উপর ভিত্তি করেই তা সংঘটিত হয়েছে।
তৃতীয় পর্যায়ঃ মানুষ মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় আল্লাহ্র নির্দেশে ফেরেশতা এসে তার আয়ূ, কর্ম, রিযিক্ব এবং সে সৌভাগ্যবান নাকি দুর্ভাগা, তা লিখে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
‘তোমাদের যে কাউকে চল্লিশ দিন ধরে তার মায়ের পেটে একত্রিত করা হয়, তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে জমাটবদ্ধ রক্ত হয় এবং তারপর অনুরূপ চল্লিশ দিনে সে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। অতঃপর চারটি বিষয়ের নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ তার কাছে ফেরেশতা পাঠান এবং তার রিযিক্ব, দুনিয়াতে তার অবস্থানকাল, তার আমলনামা এবং সে দুর্ভাগা হবে না সৌভাগ্যবান হবে তা লিখে দেওয়ার জন্য তাঁকে বলা হয়’। [. ছহীহ বুখারী, ২/৪২৪, হা/৩২০৮, ‘সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়, ‘ফেরেশতামণ্ডলীর বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ।]
লাউহে মাহ্ফূযের লিখন ছিল সমগ্র সৃষ্টিকুলের; কিন্তু মায়ের পেটের এই লিখন শুধুমাত্র মানুষ জাতির জন্য নির্দিষ্ট। [. জামে‘উ শুরূহিল আক্বীদাতিত্-ত্বহাবিইয়াহ, ১/৫৬৯-৫৭০; আব্দুল্লাহ জিবরীন, আত-তা‘লীক্বাতুয্ যাকিইয়াহ আলাল আক্বীদাতিল ওয়াসেত্বিইয়াহ, (রিয়ায: দারুল ওয়াত্বান, প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৮ইং), ২/১৫৭।]
চতুর্থ পর্যায়ঃ প্রত্যেক ক্বদরের রাতে ঐ বছরের সবকিছু লেখা হয়। লাউহে মাহফূযের লিখন অনুযায়ী আল্লাহ ফেরেশতামণ্ডলীকে ঐ বছরের সবকিছু লিখতে নির্দেশ দেন। ইহাকে বাৎসরিক তাক্বদীর বলা হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়’ (দুখান ৩-৪)। [. প্রাগুক্ত।]
ইবনে আব্বাস বলেন, ক্বদরের রাতে লাউহে মাহফূযের লিখন অনুযায়ী ঐ বছরের জন্ম, মৃত্যু, রিযিক্ব, বৃষ্টি ইত্যাদি সবকিছু আবার লেখা হয়। এমনকি ঐ বছর কে হজ্জ করবে আর কে করবে না, তাও লিখে রাখা হয়। [. ইমাম ক্বুরত্বুবী, আল-জামে‘ লিআহকামিল ক্বুরআন, (কায়রো: দারুল কুতুবিল মিছরিইয়াহ, দ্বিতীয় প্রকাশ: ১৯৬৪ইং), ৬/১২৭।]
পঞ্চম পর্যায়ঃ পূর্বের লিখিত তাক্বদীর অনুযায়ী প্রত্যেক দিন সবকিছুকে নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা হয়। ইহাকে প্রাত্যহিক তাক্বদীর বলে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ﴾ [ سورة الرحمن : 29]
ইবনে জারীর (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলে ছাহাবায়ে কেরাম তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রত্যেক দিন তিনি কি করেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কাউকে ক্ষমা করেন, কারো বিপদাপদ দূর করেন, কারো মর্যাদা বৃদ্ধি করেন আবার কারো মর্যাদার হানি করেন। [. ইবনে জারীর ত্ববারী, তাফসীরে ত্ববারী (জামেউল বায়ান ফী তা’বীলিল ক্বুরআন), তাহক্বীক্ব: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুহসিন তুর্কী, (দারু হাজার/হিজর, প্রথম প্রকাশ: ২০০১ইং), ২২/২১৪, বর্ণনাটি ‘হাসান’ (মা‘আরেজুল ক্ববূল-এর ৩/৯৩৯ পৃষ্ঠার টীকা দ্র:)।]
তাক্বদীর লিপিবদ্ধের এই পাঁচটি পর্যায়ের শেষোক্ত চারটি পর্যায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বান্দার বিভিন্ন বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতামণ্ডলীকে তাঁদের স্ব-স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করা [. সাঈদ ইসমাঈল, কাশফুল গায়ূম আনিল ক্বাযা ওয়াল ক্বাদার, (প্রকাশকাল: ১৪১৭হি:), পৃ: ৩১-৩২; মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ১/২৪০।] এবং এগুলি লাউহে মাহফূযে লিখিত তাক্বদীরের বাইরে নয়; বরং এগুলি লাউহে মাহফূযের তাক্বদীরেরই অন্তর্ভুক্ত। [. আব্দুর রাযযাক ইবনে আব্দুল মুহসিন আল-বাদ্র, তাযকিরাতুল মু’তাসী শারহু আক্বীদাতিল হাফেয আব্দিল গাণী আল-মাক্বদেসী (কুয়েত: গিরাস ফর প্রিন্টিং এণ্ড ডিস্ট্রিবিউশন, প্রথম প্রকাশ: ২০০৩ইং), পৃ: ১৫৩; আল-ঈমানু বিল-ক্বাযা ওয়াল-ক্বাদার/২৫২।]
শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিইয়াহ (রহেমাহুল্লাহ) বলেন, ফেরেশতামণ্ডলীকে আল্লাহ তাক্বদীরের যেসব বিষয়ে অবহিত করান, তাঁরা কেবল সেগুলিই জানেন; সেগুলির বাইরে কিছুই জানেন না। যেমন: বান্দার মৃত্যু, রিযিক্ব, সে সৌভাগ্যবান নাকি দুর্ভাগা ইত্যাদি। [. ফাতাওয়া ইবনে তায়মিইয়াহ, ১৪/৪৮৮-৪৯২।]
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।