HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

ইবাদত-বন্দেগীতে মধ্যপন্থা অবলম্বন

লেখকঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
ইবাদত-বন্দেগীতে মধ্যপন্থা অবলম্বন

আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

সম্পাদানা : ইকবাল হোছাইন মাছুম

ভূমিকা
ইসলাম হল মধ্যপন্থার ধর্ম। কোন কিছুতে বাড়াবাড়ি নেই এখানে।

সৃষ্টিকর্তা মহান রাববুল আলামীন আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য মানবের সৃষ্টি। ধরাপৃষ্ঠে তাদের আগমন এ উদ্দেশ্যেই। কিন্তু এ ইবাদত করতে যেয়ে আমাদের অনেকে এর নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে যাই। ভারসাম্য রাখতে পারি না। নিজের শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখি না। ভুলে যাই পরিবার-পরিজন ও অন্যান্য মানুষদের প্রতি আমার দায়িত্ব- কর্তব্য। আমার ইবাদত-বন্দেগী দেখে অন্যরা মনে করে এ যদি হয় ইসলাম, তাহলে আমরা অনেক ভাল আছি। আমাদের ভাগ্য ভাল আমাদের জীবনে ইসলাম আসেনি।

এ বিষয়টি কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আলোচনা করা হচ্ছে।

কুরআনের আলোকে আলোচনা।
আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

ত্বা-হা। আমি তোমার উপর কুরআন এ জন্য নাযিল করিনি যে তুমি দু:খ-কষ্ট ভোগ করবে। (সূরা ত্বা-হা, আয়াত: ১-২)

(আরবি)

আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং কঠিন চান না। (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

আয়াত দু’টো থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল:
এক. আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআন নাযিল করেছেন, ইসলামকে ধর্ম হিসাবে মনোনীত করেছেন তার অনুসারীদের থেকে দু:খ কষ্ট দুর করার জন্য। তাদের দুর্ভোগ বা কষ্টে নিপতিত করার জন্য নয়।

দুই. আল্লাহ রাববুল আলামীন তার ধর্ম পালনকে কঠিন করতে চান না। তিনি সহজ করতে চান। কাজেই মানুষের উচিত হবে এমন কোন কাজ ও কথা না বলা যাতে ধর্মকে কঠিন মনে হয়। বা অন্য ধর্মের মানুষের কাছে কঠিনভাবে উপস্থাপিত হয়।

তিন. দ্বিতীয় আয়াতটি যদিও নাযিল হয়েছে সফরে রোজা না রাখার অনুমতি সম্পর্কে তবুও এর শিক্ষা সাধারণভাবে সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(আরবি)

ধর্মের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। (সূরা আল-হজ্জ, আয়াত: ৭৮)

(আরবি)

আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না। (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ৬)

চার. ইসলাম মধ্যপন্থার ধর্ম। কোন ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা যাবে না, তেমনি ছাড়াছাড়িও করা যায় না। এটাকে বলা হয়, ইফরাত ও তাফরীত। উভয়টাই পরিত্যাজ্য। আর এ মধ্যপন্থার নির্দেশ প্রতিটি ক্ষেত্রেই। যেমন আললাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের গুণাবলি উল্লেখ করতে যেয়ে বলেছেন :

(আরবি)

আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। (সূরা আল ফুরকান, আয়াত: ৬৭)

এমনিভাবে এ মধ্যপন্থা জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে।

সহীহ হাদীসের আলোকে আলোচনা। হাদীস - ১
1 - عن عائشةَ رضي اللَّهُ عنها أَن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم دخَلَ عليْها وعِنْدها امْرأَةٌ قال : منْ هَذِهِ ؟ قالت : هَذِهِ فُلانَة تَذْكُرُ مِنْ صَلاتِهَا قالَ : « مَهُ عليكُمْ بِما تُطِيقُون ، فَوَاللَّه لا يَمَلُّ اللَّهُ حتَّى تَمَلُّوا وكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ إِلَيْهِ ما داوَمَ صَاحِبُهُ علَيْهِ » متفقٌ عليه .

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে প্রবেশ করলেন তখন একজন মহিলা তাঁর ঘরে বসা ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, মেয়েটি কে? আয়েশা বললেন, অমুক মেয়ে। সে তার নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাখো! তোমরা যা সামর্থ রাখো সেটা তোমাদের দায়িত্বে। আল্লাহ তাআলার শপথ! তোমরা ক্লান্ত হলেও আল্লাহ তাআলা ক্লান্ত হন না। আর তার নিকট অধিক পছন্দনীয় দ্বীন (ইবাদত-বন্দেগী) ছিল, সম্পাদনকারী যা নিয়মিতভাবে সম্পাদন করে। (বুখারী ও মুসলিম)

হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে যার যার সামর্থের মধ্যে থেকে। আল্লাহ রাববুল আলামীন সামর্থের বাহিরে কোন কিছু করার জন্য আদেশ দেন না।

দুই. মানুষ ইবাদত-বন্দেগী অধিক পরিমাণে করতে করতে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম ব্যহত হয়। এ রকম করতে নিষেধ করা হয়েছে।

তিন. মানুষ ইবাদত-বন্দেগী করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ইবাদতের বিনিময় প্রদানে কখনো ক্লান্ত হবেন না।

চার. এক দিন বা একটি রাত সম্পূর্ণ জাগ্রত থেকে শত শত রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে অল্প আদায় করা উত্তম। সকল ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য।

পাঁচ. যদি ঘরে কোন অপরিচিত নারী বা পুরুষ আসে তবে গৃহকর্তার উচিত হবে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা: সে কে? কি বলে? কেন এসেছে? ইত্যাদি। এটা পরিবারের প্রতি যত্নবান হওয়ার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কারণ, ঘরে সাধারণত শিশু ও মেয়েরা বেশী থাকে। অপরিচিত কোন লোক এসে তাদের কোন বিষয়ে বিভ্রান্ত করতেই পারে। পরিবারের কর্তা যদি এটার খোঁজ খবর রাখেন তাহলে অনেক অনাকাঙ্খিত বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায়। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিসালাতের বিশাল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পূর্ণভাবে পালন করেছেন। তাই আমরা এ হাদীসে দেখলাম, একজন মেয়ে ঘরে আসল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন।

হাদীস - ২
2 - وعن أَنسٍ رضي اللَّه عنه قال : جاءَ ثَلاثةُ رهْطِ إِلَى بُيُوتِ أَزْواجِ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يسْأَلُونَ عنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، فَلَمَّا أُخبِروا كأَنَّهُمْ تَقَالَّوْها وقالُوا : أَين نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قَدْ غُفِر لَهُ ما تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ وما تَأَخَّرَ . قالَ أَحَدُهُمْ : أَمَّا أَنَا فأُصلِّي الليل أَبداً ، وقال الآخَرُ : وَأَنا أَصُومُ الدَّهْرَ أبداً ولا أُفْطِرُ ، وقالَ الآخرُ : وأَنا اعْتَزِلُ النِّساءَ فلا أَتَزوَّجُ أَبداً، فَجاءَ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم إلَيْهمْ فقال : « أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كذا وكذَا ؟، أَما واللَّهِ إِنِّي لأَخْشَاكُمْ للَّهِ وَأَتْقَاكُم له لكِني أَصُومُ وَأُفْطِرُ ، وَأُصلِّي وَأَرْقُد، وَأَتَزَوّجُ النِّسَاءَ، فمنْ رغِب عن سُنَّتِي فَلَيسَ مِنِّى» متفقٌ عليه .

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনজন লোক নবী কারীম সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের ঘরে আসল। তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে জানতে চাইল। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হল, তখন তারা যেন এটাকে অপ্রতুল মনে করল। আর বলল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় আর আমরা কোথায়? তাঁর আগের পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তাদের একজন বলল, আমি সম্পূর্ণ রাত নামাজ পড়তে থাকব। আরেকজন বলল, আমি সারা জীবন রোজা রাখব। কখনো রোজা ছাড়ব না। আরেকজন বলল, আমি মেয়েদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখব, কখনো বিয়ে করব না। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। আর বললেন, তোমরা তো এ রকম সে রকম কথা বলেছ। আল্লাহর কসম! তোমাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশী ভয় করি। তাঁর সম্পর্কে বেশী তাকওয়া (সতর্কতা) অবলম্বন করি। কিন্তু আমি রোজা রাখি আবার রোজা ছেড়ে দেই। আমি নামাজ পড়ি আবার নিদ্রা যাই। আর বিয়ে শাদীও করি। যে আমার আদর্শ (সুন্নাত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আমার দলভুক্ত নয়। (বুখারী ও মুসলিম)

হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত-বন্দেগীর ধরণ, পদ্ধতি ও পরিমাণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন। আমাদেরও জানার জন্য চেষ্টা করা উচিত। তাদের জানার উদ্দেশ্য ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর অনুসরণ।

দুই. ইসলামে কোন ধরনের বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম-নিদ্রা, বিয়ে-শাদী, পরিবার পরিজন ইত্যাদি সবকিছু নিয়েই ইসলামী জীবন। এগুলো বাদ দিয়ে বা এগুলোকে অবজ্ঞা করে যদি কেউ শুধু ইবাদত-বন্দেগী করে ইসলাম পালন করতে চায় সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতভুক্ত বলে গণ্য হবে না।

তিন. দুনিয়ার সকল কাজ-কর্ম, অন্যের অধিকার আদায় করার সাথে সাথে সাধ্য সামর্থানুযায়ী ইবাদত-বন্দেগী সম্পাদন করার নাম হল মধ্যপন্থা অবলম্বন। এটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ। তাই দুনিয়াদারী ছেড়ে ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত হওয়া বা ইবাদত-বন্দেগী বাদ দিয়ে দুনিয়ারীতে লিপ্ত হয়ে যাওয়া কখনো মধ্যপন্থা বলে গণ্য হবে না। দু’টোই চরমপন্থা।

চার. নিজেদের প্রতি বাড়াবড়ি করার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বোঝাই বাড়িয়েছে। যেমন দেখুন, আল কুরআনে সূরা বাকারার ৬৭ আয়াত থেকে ৭১ আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাইলের একটি বাড়াবাড়ির বিষয় আলোচনা করেছেন। তাদের বলা হল একটি গাভী জবেহ করতে। কিন্তু তারা প্রশ্ন করতে থাকল, গাভীটি কি ধরনের হবে ? তার রং কি রকম হবে? তার বয়স কত হবে ইত্যাদি। পরিণামে তাদের এ বাড়াবাড়ির ফলটা তাদেরই ভোগ করতে হল কঠিন ভাবে।

হাদীস - ৩.
3 - وعن ابن مسعودٍ رضي اللَّه عنه أن النبيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : « هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ » قالَهَا ثلاثاً ، رواه مسلم .

ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অযথা কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি এ কথাটি তিন বার বলেছেন। (মুসলিম)

১০
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. ইবাদত-বন্দেগীতে কঠোরতা অবলম্বন, এমনিভাবে ইসলামী বিধি-বিধানের মধ্যে নিজেদের খেয়াল-খুশীমত কঠোরতা ও চরমপন্থার প্রবর্তন হল ধ্বংসের কারণ। যারা এগুলোতে লিপ্ত হবে তারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনবে।

দুই. এ বিষয়টি এতটা ঘৃণিত যে, এতে যারা লিপ্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে বদদুআ করেছেন।

তিন. এ জন্য সকল ইসলামী বিধি বিধানের ব্যাখ্যা ও ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ করা উচিত। যুক্তি-কিয়াস ও কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী তাকলীদ বর্জন করা দরকার। কারণ এগুলো মানুষকে কখনো কঠোরতা আবার কখনো সীমাহীন উদারতার দিকে ধাবিত করে।

চার. ইসলামে মধ্যমপন্থার মানদন্ড হল, আল-কুরআন ও সহীহ হাদীস।

পাঁচ. এ হাদীসটির প্রেক্ষাপট হল, সাহাবীদের একটি দল রমজান মাসে সফর অবস্থায় অত্যন্ত কষ্ট করে সিয়াম পালন করে যাচ্ছিল। অথচ আল্লাহ তাদের রোজা না রাখারও অনুমতি দিয়েছিলেন। তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বর্ণিত উক্তিটি করেন।

বিষয়টি অন্য হাদীসে এভাবে এসেছে :

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم خرج عام الفتح إلى مكة في رمضان . فصام حتى بلغ كراع الغميم . فصام الناس . ثم دعا بقدح من ماء فرفعه . حتى نظر الناس إليه . ثم شرب . فقيل له بعد ذلك : إن بعض الناس قد صام . فقال : " أولئك العصاة . أولئك العصاة "

الراوي : جابر بن عبدالله المحدث : مسلم - المصدر : صحيح مسلم - الصفحة أو الرقم : 1114 خلاصة حكم المحدث : صحيح

রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা অভিযানে বের হলেন। তিনি রোজা অবস্থায় কারা আল গামীমে পৌঁছলেন। তার সাথের সাহাবীগণও রোজা রেখেছিল। তিনি একটি পানির পাত্র এনে তা উঁচু করে ধরলেন - যাতে লোকেরা দেখতে পায় - অত:পর তা থেকে পান করে রোজা ভেঙ্গে ফেললেন। এরপর তাকে বলা হল, এখনো অনেকে রোজা রেখে দিয়েছে। তিনি বললেন: তারাই অবাধ্য। তারাই অবাধ্য। (বর্ণনায় : মুসলিম)

এ হাদীসে আমরা দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি দেয়ার পরও যারা রোজা ধরে রেখেছিল, তাদের তিনি অবাধ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু কেন? তারা তো ভাল কাজই করেছিল। রোজা রাখার জন্য কষ্ট করে যাচ্ছিল। কারণ, এটা ছিল একটি কঠোরতা। একটি বাড়াবাড়ি। এটা কখনো মধ্যপন্থা ছিল না।

১১
হাদীস - ৪.
4 - عن أَبِي هريرة رضي اللَّه عنه أن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ ، ولنْ يشادَّ الدِّينُ إلاَّ غَلَبه فسدِّدُوا وقَارِبُوا وَأَبْشِرُوا ، واسْتعِينُوا بِالْغدْوةِ والرَّوْحةِ وشَيْءٍ مِن الدُّلْجةِ » رواه البخاري .

وفي رواية له « سدِّدُوا وقَارِبُوا واغْدوا ورُوحُوا ، وشَيْء مِنَ الدُّلْجةِ ، الْقَصْد الْقصْد تَبْلُغُوا » .

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অবশ্যই আল্লাহর দীন (ধর্ম) সহজ। যে ব্যক্তি এ দীনকে কঠিন করেছে তার উপর তা (কঠোরতা) চেপে বসেছে। অতএব তোমরা সোজা পথে চল। মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর সকাল, সন্ধ্যায় শেষ রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা কর। (বুখারী)

বুখারীর অন্য একটি বর্ণনায় আছে, তোমরা সহজ পথে চল। মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। সকাল, সন্ধ্যায় ও রাতের শেষাংশে ইবাদত কর। আর মধ্যপন্থা! মধ্যপন্থা!! তাহলে উদ্দেশ্যে পৌছতে পারবে।

১২
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. আল্লাহ তাআলার মনোনীত ধর্ম ইসলাম পালন করা সহজ। কিন্তু যারা এটাকে কঠিন করতে চায় এটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। এর একটি উদাহরণ আমরা ১৫০ নং হাদীসে দেখতে পাই। যেখানে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস প্রতিদিন রোজা রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মাসে মাত্র তিন দিন রোজা রাখার পরামর্শ দিলেন। তিনি আরো বেশী করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। ফলে সেটা তার উপর আরোপিত হয়ে গেল। পরবর্তী জীবনে এটা তার অনুতাপের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

দুই. কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ যেটাকে যেভাবে পালন করতে বলেছে সেটা সেভাবে আদায় করার নাম হল মধ্যম পন্থা। যাকে ফরজ বলেছে সেটা ফরজ। যাকে মুস্তাহাব বলেছে সেটা মুস্তাহাব। যার সম্পর্কে কোন নির্দেশ আসেনি সেটা না ফরজ হবে, না মুস্তাহাব। ইসলাম যে ছাড় বা সুবিধা দিয়েছে সেটা গ্রহণ করা কর্তব্য। এটাই হল সহজ-সরল ও মধ্যমপন্থা। এ পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই হাদীসে।

তিন. মধ্যমপন্থা অবলম্বন ও তার গুরুত্ব বুঝাবার জন্য বার বার নির্দেশ দিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ মধ্যমপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে মুসলমানগণ তাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।

১৩
হাদীস - ৫.
5 - وعن أَنسٍ رضي اللَّهُ عنه قال : دَخَلَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم الْمسْجِدَ فَإِذَا حبْلٌ مَمْدُودٌ بَيْنَ السَّارِيَتَيْنِ فقالَ : « ما هَذَا الْحبْلُ ؟ قالُوا ، هَذا حبْلٌ لِزَيْنَبَ فَإِذَا فَترَتْ تَعَلَقَتْ بِهِ . فقال النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « حُلّوهُ ، لِيُصَلِّ أَحدُكُمْ نَشَاطَهُ ، فَإِذا فَترَ فَلْيرْقُدْ » متفقٌ عليه .

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন, একটি রশি দুটো খুটির মাঝ খানে বাঁধা আছে। তিনি বললেন: এ রশিটা কিসের জন্য? সাহাবীগণ বললেন, এটা যয়নবের রশি। তিনি যখন নামাজ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন এ রশিতে ঝুলে থাকেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটা খুলে ফেল। তোমাদের প্রত্যেকের উচিত উদ্যমসহকারে নামাজ পড়া। আর যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন ঘুমিয়ে পড়বে। (বুখারী ও মুসলিম)

১৪
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিলেন ও কঠোরতা পরিহার করতে বললেন। মধ্যমপন্থা অবলম্বন না করে নিজের প্রতি কঠোরতা আরোপ করার একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে এ হাদীসে। উম্মুল মুমিনীন যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা নিজের নিদ্রাভাব দূর করার জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। যাতে তিনি বেশী করে নামাজ আদায়ে সক্ষম হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কাজকে অনুমোদন দিলেন না। যখন কারো নিদ্রা আসে তখন নিদ্রা যাওয়াটা হল তার কর্তব্য। নফল নামাজের জন্য নিজেকে এতটা কষ্ট দেয়া ঠিক নয়।

দুই. আমরা অনেককে দেখি নামাজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে যান তারপরও নামাজ অব্যাহত রাখেন। এরূপ করাটা ঠিক নয়। ঘুমের ঘোরে নামাজ, প্রার্থনা বা ইবাদত-বন্দেগী করতে নিষেধ করা হয়েছে। পরবর্তী হাদীসটি তার একটি দৃষ্টান্ত।

তিন. মেয়েদের মসজিদে গমনাগমন ও অবস্থান করার অনুমোদন প্রমাণ করে এ হাদীস।

১৫
হাদীস - ৬.
6 - وعن عائشة رضي اللَّه عنها أن رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : « إِذَا نَعَسَ أَحدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّي ، فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ ، فإِن أَحدَكم إِذَا صلَّى وهُو نَاعَسٌ لا يَدْرِي لعلَّهُ يذهَبُ يسْتَغْفِرُ فيَسُبُّ نَفْسَهُ » . متفقٌ عليه .

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারোর নামাজ পড়ার সময় তন্দ্রা আসলে ঘুমিয়ে পড়া উচিত। যতক্ষণ না তন্দ্রাভাব দূর হয়ে যায়। কেননা তন্দ্রা অবস্থায় নামাজ পড়তে থাকলে সে হয়ত ইস্তেগফার করতে যেয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে। (বুখারী ও মুসলিম)

১৬
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. চোখে তন্দ্রা নিয়ে নামাজ পড়া ঠিক নয়।

দুই. শরীর ও চোখের অধিকার হল নিদ্রা যাওয়া। এ অধিকার হরণ করা উচিত নয়। শরীরের চাহিদা পূরণে যত্নবান হওয়া উচিত।

তিন. চোখে ঘুম নিয়ে নামাজ পড়লে মুখ থেকে এমন কথা বের হয়ে যেতে পারে যা নামাজের জন্য ক্ষতিকর।

চার. ইবাদত-বন্দেগীতে নিজের উপর কঠোরতা চাপিয়ে নেয়া উচিত নয়। বরং মধ্যপন্থা অবলম্বন করা উচিত।

১৭
হাদীস - ৭.
7 - وعن أَبِي عبد اللَّه جابر بن سمُرَةَ رضي اللَّهُ عنهما قال : كُنْتُ أُصَلِّي مَعَ النبيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم الصَّلَوَاتِ ، فَكَانَتْ صلاتُهُ قَصداً وخُطْبَتُه قَصْداً » رواه مسلم .

জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামাজ আদায় করতাম। তার নামাজ ছিল মধ্যম ধরনের আর খুতবাও ছিল মধ্যম ধরনের। (মুসলিম)

১৮
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. নামাজ ও খুতবা দীর্ঘ করা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রেও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত।

১৯
হাদীস - ৮.
8 - وعن أَبِي جُحَيْفَةَ وَهبِ بْنِ عبد اللَّه رضي اللَّهُ عنه قال : آخَى النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم بَيْن سَلْمَانَ وأَبِي الدَّرْدَاءِ ، فَزَارَ سلْمَانُ أَبَا الدَّرْدَاءِ ، فَرَأَى أُمَّ الدَّرْدَاء مُتَبَذِّلَةً فقالَ : ما شَأْنُكِ؟ قالَتْ : أَخْوكَ أَبُو الدَّرداءِ ليْسَ له حَاجةٌ فِي الدُّنْيَا . فَجَاءَ أَبُو الدرْدَاءِ فَصَنَعَ لَه طَعَاماً ، فقالَ لَهُ : كُلْ فَإِنِّي صَائِمٌ ، قالَ : ما أَنا بآكلٍ حَتَّى تأْكلَ ، فَأَكَلَ ، فَلَّمَا كانَ اللَّيْلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّرْداءِ يقُوم فقال لَه : نَمْ فَنَام ، ثُمَّ ذَهَبَ يَقُوم فقالَ لَه : نَمْ ، فَلَمَّا كان من آخرِ اللَّيْلِ قالَ سلْمانُ : قُم الآنَ، فَصَلَّيَا جَمِيعاً ، فقالَ له سَلْمَانُ : إِنَّ لرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا ، وَإِنَّ لنَفْسِكَ عَلَيْكَ حقًّا ، ولأهلِك عَلَيْكَ حَقًّا ، فَأَعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّه ، فَأَتَى النَّبِيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم فَذَكر ذلكَ لَه ، فقالَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « صَدَقَ سلْمَانُ » رواه البخاري .

আবু জুহাইফা ওহাব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ও আবু দারদার মাঝে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিলেন। একদিন সালমান আবু দারদার সাথে সাক্ষাতের জন্য গেলেন। তখন উম্মে দারদা (আবু দারদার স্ত্রী) কে অতি সাধারণ পোশাকে দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তোমার এ অবস্থা কেন? সে বলল, তোমার ভাই আবু দারদার দুনিয়ার কোন প্রয়োজন নেই। এরপর আবু দারদা আসলেন। তিনি সালমানের জন্য খাবার প্রস্ত্তত করে তাকে বললেন, তুমি খাও, আমি রোজা রেখেছি। সালমান বললেন, তুমি না খেলে আমি খাব না। তখন আবু দারদাও খেলেন। অত:পর যখন রাত হল, আবু দারদা নামাজে দাড়াতে গেলে সালমান তাকে বললেন, তুমি এখন ঘুমাও। আবু দারদা ঘুমালেন। তারপর তিনি উঠে আবার নামাজ পড়তে চাইলেন। এবারও সালমান তাকে বললেন, তুমি ঘুমাও। এরপর যখন রাতের শেষ প্রহর আসল, তখন সালমান তাকে বললেন, এখন উঠ। তারপর দুজনেই নামাজ পড়লেন। সালমান তাকে বললেন: নিশ্চয় তোমার উপর তোমার রব (আল্লাহ তাআলা)-এর হক (পাওনা) আছে। তোমার উপর তোমার নিজের হক আছে। তোমার দায়িত্বে পরিবারের হক আছে। অতএব প্রত্যেক পাওনাদারের হক (অধিকার) আদায় কর। এরপর আবু দারদা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে সালমানের কথাগুলো বললেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সালমান সঠিক কথা বলেছে। (বুখারী)

২০
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. যে সকল মুসলমান নিজ মাতৃভূমি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় গিয়েছিলেন তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একেক জনকে স্থানীয় একজনের সাথে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সম্পর্ক করে দেয়া হয়েছে। নিজেদের দু:খ-দুর্দশা পরস্পরের মধ্যে ভাগাভাগি করার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

দুই. আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি এত মনোযোগী ছিলেন যে, নিজের শরীর-স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিজনের প্রতি যথাযথ যত্ন নিতে পারতেন না। তার এ অবস্থাটা ইসলামী আদর্শের অনুকূল ছিল না। তাই সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এটির সংশোধনের চেষ্টা করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীর আলোকে। এটি হল একে অপরকে হকের দিকে আহবান করার একটি ইসলামী চরিত্র। প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হল, সে তার ভাইকে ইসলামের আলোকে সংশোধন করার আদর্শ লালন করবে।

তিন. সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার অধিকার (পাওনা) , নিজের অধিকার, নিজের স্ত্রী-সন্তানদের অধিকারগুলো আদায় করা ইসলামেরই নির্দেশ।

চার. সকলের পাওনা বা অধিকারগুলো আদায় করে ইবাদত-বন্দেগীর দায়িত্ব পালন করে জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা কর্তব্য। এর নাম হল ধর্মে মধ্যপন্থা অবলম্বন।

পাঁচ. প্রয়োজনে অপরিচিত বা অনাত্মীয়া নারীর সাথে কথা বলা যায়। এমনিভাবে নারী, ভিন পুরুষের সাথে কথা বলতে পারে।

ছয়. যদি দেখা যায় কোন ব্যক্তির কষ্ট হচ্ছে তাহলে মুস্তাহাব আমল থেকে তাকে বিরত রাখা যায়।

সাত. শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের ফজিলত প্রমাণিত। সাহাবায়ে কেরামও নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন।

২১
হাদীস - ৯.
9 - وعن أَبِي محمد عبدِ اللَّهِ بن عمرو بنِ العاص رضي اللَّه عنهما قال : أُخْبرَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم أنِّي أَقُول : وَاللَّهِ لأَصومَنَّ النَّهَارَ ، ولأَقُومنَّ اللَّيْلَ ما عشْتُ ، فَقَالَ رسُول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «أَنْتَ الَّذِي تَقُول ذلك ؟ فَقُلْت له : قَدْ قُلتُه بأَبِي أَنْتَ وأُمِّي يا رسولَ اللَّه . قَالَ : « فَإِنكَ لا تَسْتَطِيعُ ذلِكَ ، فَصُمْ وأَفْطرْ ، ونَمْ وَقُمْ ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاثَةَ أَيَّامٍ فَإِنَّ الْحسنَةَ بعَشْرِ أَمْثَالهَا ، وذلكَ مثْلُ صِيامٍ الدَّهْرِ قُلْت : فَإِنِّي أُطيق أفْضَلَ منْ ذلكَ قالَ : فَصمْ يَوْماً وَأَفْطرْ يَوْمَيْنِ ، قُلْت : فَإِنِّي أُطُيق أفْضَلَ مِنْ ذلكَ ، قَالَ : « فَصُم يَوْماً وَأَفْطرْ يوْماً ، فَذلكَ صِيَام دَاود صلى الله عليه وسلم، وَهُو أَعْدَل الصِّيَامِ » . وَفي رواية : « هوَ أَفْضَلُ الصِّيامِ » فَقُلْتُ فَإِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلكَ ، فقال رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « لا أَفْضَلَ منْ ذلك» وَلأنْ أَكْونَ قَبلْتُ الثَّلاثَةَ الأَيَّامِ الَّتِي قال رسولُ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم أَحَبُّ إِليَّ منْ أَهْلِي وَمَالِى .

وفي روايةٍ : « أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيْلَ ؟ » قلت : بلَى يَا رسول اللَّهِ . قال : « فَلا تَفْعل : صُمْ وأَفْطرْ ، ونَمْ وقُمْ فَإِنَّ لجَسَدكَ علَيْكَ حقًّا ، وإِنَّ لعيْنَيْكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لزَوْجِكَ علَيْكَ حَقًّا ، وَإِنَّ لزَوْركَ عَلَيْكَ حَقًّا ، وإِنَّ بحَسْبكَ أَنْ تَصْومَ فِي كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أَيَّامٍ ، فَإِنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنةٍ عشْرَ أَمْثَالِهَا ، فَإِذن ذلك صِيَامُ الدَّهْرِ» فشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ ، قُلْتُ : يا رسول اللَّه إِنّي أَجِدُ قُوَّةً، قال : « صُمْ صِيَامَ نَبِيِّ اللَّهِ داوُدَ وَلا تَزدْ عَلَيْهِ» قلت : وما كَان صِيَامُ داودَ؟ قال : « نِصْفُ الدهْرِ » فَكَان عَبْدُ اللَّهِ يقول بعْد مَا كَبِر : يالَيْتَنِي قَبِلْتُ رُخْصةَ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم .

وفي رواية : « أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّك تصُومُ الدَّهْرِ ، وَتْقَرَأُ الْقُرْآنَ كُلَّ لَيْلَة ؟ » فَقُلْتُ : بَلَى يا رسولَ اللَّهِ ، ولَمْ أُرِدْ بذلِكَ إِلاَّ الْخيْرَ ، قَالَ : « فَصُمْ صَوْمَ نَبِيِّ اللَّهِ داودَ ، فَإِنَّه كَانَ أَعْبَدَ النَّاسِ ، واقْرأْ الْقُرْآنَ في كُلِّ شَهْرٍ » قُلْت : يَا نَبِيِّ اللَّهِ إِنِّي أُطِيق أَفْضل مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ : « فَاقْرَأه فِي كُلِّ عِشرِينَ » قُلْت : يَا نبيِّ اللَّهِ إِنِّي أُطِيق أَفْضَل مِنْ ذَلِكَ ؟ قَالَ : «فَاقْرَأْهُ فِي كُلِّ عَشْر » قُلْت : يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنِّي أُطِيق أَفْضلَ مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ : « فَاقْرَأْه في كُلِّ سَبْعٍ وَلاَ تَزِدْ عَلَى ذَلِكَ » فَشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ ، وقَالَ لِي النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « إِنَّكَ لاَ تَدْرِي لَعلَّكَ يَطُول بِكَ عُمُرٌ قالَ : فَصِرْت إِلَى الَّذِي قَالَ لِي النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم فَلَمَّا كَبِرْتُ وَدِدْتُ أنِّي قَبِلْت رخْصَةَ نَبِيِّ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم .

وفي رواية : « وَإِنَّ لوَلَدِكَ علَيْكَ حَقًّا » وفي روايةٍ : لا صَامَ من صَامَ الأَبَدَ » ثَلاثاً . وفي روايةٍ : « أَحَبُّ الصَّيَامِ إِلَى اللَّه تَعَالَى صِيَامُ دَاوُدَ ، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى صَلاةُ دَاوُدَ : كَانَ يَنَامُ نِصْفَ اللَّيلِ ، وَيَقُومُ ثُلُثَهُ ، وَيَنَامُ سُدُسَهُ ، وَكَانَ يَصُومُ يوْماً ويُفْطِرُ يَوْماً ، وَلا يَفِرُّ إِذَا لاقَى » .

  وفي رواية قَالَ : أَنْكَحَنِي أَبِي امْرَأَةً ذَاتَ حسَبٍ ، وكَانَ يَتَعَاهَدُ كَنَّتهُ أي : امْرَأَة ولَدِهِ فَيسْأَلُهَا عَنْ بَعْلِهَا ، فَتَقُولُ لَهُ : نِعْمَ الرَّجْلُ مِنْ رجُل لَمْ يَطَأْ لنَا فِرَاشاً ولَمْ يُفتِّشْ لنَا كَنَفاً مُنْذُ أَتَيْنَاهُ فَلَمَّا طالَ ذَلِكَ عليه ذكَرَ ذلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم . فقَالَ : « الْقَني به » فلَقيتُهُ بَعْدَ ذلكَ فَقَالَ : « كيفَ تَصُومُ ؟ » قُلْتُ كُلَّ يَوْم ، قَالَ : « وَكيْفَ تَخْتِم ؟ » قلتُ : كُلَّ لَيلة ، وذَكَر نَحْوَ مَا سَبَق وكَان يقْرَأُ عَلَى بعْض أَهْلِه السُّبُعَ الَّذِي يقْرؤهُ ، يعْرضُهُ مِن النَّهَارِ لِيكُون أَخفَّ علَيِهِ بِاللَّيْل ، وَإِذَا أَراد أَنْ يَتَقَوَّى أَفْطَر أَيَّاماً وَأَحصَى وصَام مِثْلَهُنَّ كَراهِيةَ أَن يتْرُك شيئاً فارقَ علَيهِ النَّبِي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم .

كُلُّ هذِه الرِّوَايات صحيِحةٌ مُعْظَمُهَا فِي الصَّحيحيْنَ وقليلٌ منْهَا في أَحَدِهِما .

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সংবাদ দেয়া হল যে, আমি বলেছি, আল্লাহর কসম! আমি যতদিন জীবিত থাকব ততদিন লাগাতার দিনে রোজা রাখব আর রাতে নামাজ পড়ব। তিনি শুনে বললেন: তুমি নাকি এ রকম কথা বলেছ? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! -আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক- আমি এ রকম কথা বলেছি। তিনি বললেন: ‘তুমি এরূপ করতে সমর্থ হবে না। কাজেই রোজা রাখবে আবার রোজা ত্যাগ করবে। তেমনি নিদ্রা যাবে আবার রাত জেগে নামাজ পড়বে। আর প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোজা রাখ। কারণ নেক আমলে দশ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। আর এ রকম রোজা রাখলে তা সারা বছর রোজা রাখা বলে গণ্য হবে।’

আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী সামর্থ রাখি। তিনি বললেন: ‘তাহলে একদিন রোজা রাখবে আর দুদিন রোজা ছেড়ে দেবে।’ আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী করার সামর্থ রাখি। তিনি বললেন: ‘তাহলে একদিন রোজা রাখবে আর একদিন রোজা ছেড়ে দেবে।’ আর এটা হচ্ছে দাউদ আলাইহিস সালামের রোজা। এটা হল ভারসাম্যপূর্ণ রোজা।

অন্য বর্ননায় আছে: আর এটাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ রোজা। অতপর আমি বললাম, আমি এর চেয়ে বেশী সামর্থ রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘এ পদ্ধতির চেয়ে আর কোন শ্রেষ্ঠ রোজা নাই।’

হায়! আমি যদি সেদিন তিন দিনের রোজার বিষয়টি গ্রহণ করে নিতাম। যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, তাহলে তা আমার পরিবার পরিজন ও ধন-সম্পদের চেয়ে বেশী প্রিয় হত।

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন: ‘আমাকে কি এ খবর দেয়া হয়নি যে, তুমি প্রতিদিন রোজা রাখ আর রাতভর নামাজ পড়?’ আমি উত্তর দিলাম, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, এমনটি করবে না। রোজা রাখবে আবার রোজা ছেড়ে দেবে। ঘুমাবে আবার ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়বে। কারণ তোমার উপর তোমার শরীরের হক (পাওনা) আছে। তোমার উপর তোমার চোখের হক আছে। তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। তোমার উপর তোমার সাক্ষাতপ্রার্থীদের হক আছে। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা তোমার জন্য যথেষ্ট। কারণ প্রতিটি নেক আমলের বিনিময়ে দশগুণ সওয়াব পাবে। আর এটা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য হবে। আমি নিজের উপর কঠোরতা আরোপ করলাম। ফলে আমার উপর কঠোরতা চেপে বসল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি নিজের মধ্যে শক্তি-সামর্থ অনুভব করছি। তিনি বললেন, তাহলে আল্লাহর নবী দাউদের মত রোজা রাখ। এর বেশী করতে যেও না।

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বৃদ্ধ হওয়ার পর বলতেন , হায়! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ছাড় দিয়েছিলেন, আমি যদি তা গ্রহণ করতাম!

আরেকটি বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আমাকে কি খবর দেয়া হয়নি যে তুমি সারা বছর রোজা রাখ আর সারা রাত কুরআন পাঠ কর?’ আমি বললাম, হ্যাঁ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এর মাধ্যমে শুধু সওয়াবের আশা করি। তিনি বললেন: ‘তাহলে তুমি আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালামের রোজা রাখবে। কারণ তিনি ছিলেন, মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় ইবাদতকারী। আর প্রতি মাসে একবার কুরআন পাঠ (খতম) করবে। এর বেশী করবে না।’ এভাবে আমি নিজেই নিজের উপর কঠোরতা আরোপ করতে চেয়েছি। আর আমার উপর তা চেপে বসেছে। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন: ‘তুমি জান না, সম্ভবত তোমার বয়স দীর্ঘ হবে।’

আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন আমি এখন সেখানে পৌঁছে গেছি। আমি বার্ধক্যে পৌঁছে গেলাম। তখন আমার মনে হল, যদি আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেয়া সুবিধা গ্রহণ করতাম।

অন্য একটি বর্ণনায় আছে, ‘তোমার কাছে তোমার সন্তানের পাওনা আছে।’

আরেকটি বর্ণনায় আছে, যে প্রতিদিন রোজা রাখে সে যেন কোন রোজা রাখল না। তিনি এ কথাটি তিন বার বলেছেন।

অন্য একটি বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় রোজা হচ্ছে দাউদ আলাইহিস সালামের রোজা। আর পছন্দের নামাজ হচ্ছে দাউদ আলাইহিস সালামের নামাজ। তিনি অর্ধেক রাত ঘুমাতেন এবং রাতের এক তৃতীয়াংশ ইবাদত করতেন আবার এক ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন । তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন রোজা ছেড়ে দিতেন। শত্রুর মোকাবেলায় পিছু হটতেন না।

আরেকটি বর্ণনায় আছে, আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমার পিতা একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দেন। আর তিনি (আমার পিতা) পুত্রবধুকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। আমার স্ত্রী তার জবাবে বলত, সে খুব ভাল লোক। আমার আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত সে আমার সাথে বিছানায় শয়ন করেনি আর পর্দাও খোলেনি। আমার এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে আমার পিতা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলেন। তিনি বললেন, ‘তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।’ এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলাম। তিনি বললেন: ‘তুমি কিভাবে রোজা রাখ? আমি বললাম, প্রতিদিন। তিনি বললেন: ‘কুরআন কিভাবে খতম কর? আমি বললাম, প্রতি রাতে। এরপর তিনি পুরো ঘটনা বর্ণনা করলেন যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আর তিনি যা পড়তেন তার এক সপ্তামাংশ পরিবারের কাউকে দিনে শুনিয়ে দিতেন। যাতে রাতে তার বোঝা হালকা হয়ে যায়। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু যখন দেহে শক্তি সঞ্চয় করার ইচ্ছা করতেন তখন কয়েকটি দিন হিসাব করে রোজা ছেড়ে দিতেন। এবং পরে সে দিনগুলোর রোজা কাজা করে নিতেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছ থেকে আসার পর তার সাথে ওয়াদাকৃত কোন কিছুকে ত্যাগ করা তিনি অপছন্দ করতেন।

উপরোক্ত প্রতিটি বর্ণনা সহীহ। অধিকাংশ বর্ণনা বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন। আর অল্প কিছু বর্ণনা বুখারী ও মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন।

২২
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এ দীনকে কঠিন করেছে তার উপর তা (কঠোরতা) চেপে বসেছে। আমরা এ হাদীসে এর বাস্তব উদাহরণ দেখতে পাই। প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু জীবনের প্রতিটি দিন রোজা রাখতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে তাকে মাসে তিনদিন রোজা রাখতে পরামর্শ দিলেন। তিনি আরো বেশী করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ফলে আরো বেশী তার উপর অরোপিত হল। শেষ জীবনে এটা তার কষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল।

দুই. মাসে তিন দিন রোজা রাখা সুন্নাত। এ রোজা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাখতে হয়। এগুলোকে আইয়ামে বীজের রোজা বলে। এই তিন দিন রোজা রাখলে দশগুণ হয়ে ত্রিশ দিন রোজা রাখার সওয়াব হবে।

তিন. দাউদ আলাইহিস সালামের রোজা সম্পর্কে জানা গেল। তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন রোজা ছাড়তেন। যারা বেশী নফল রোজা রাখতে চায় এ পদ্ধতিতে রোজা রাখাই তাদের জন্য উত্তম।

চার. প্রতিদিন নফল রোজা রাখা ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।

পাঁচ. প্রতি রাতে কুরআন খতম করতেন, এ কথার অর্থ হল: তখন তার কাছে কুরআন যতটুকু সংকলিত ছিল ততটুক পাঠ করে শেষ করতেন। তখনতো কুরআন নাযিল শেষ হয়নি। তাই সম্পূর্ণ কুরআন খতম করার প্রশ্ন আসে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি মাসে একবার কুরআন খতম করার অনুমতি দিয়েছেন।

ছয়. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শেষ বয়সে এসে যে সকল আমল করতে ক্লান্তিবোধ করতেন সেগুলো তার জন্য ওয়াজিব ছিল না। কিন্তু তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এ সকল ইবাদত-বন্দেগী করার ওয়াদা করেছিলেন বলে এগুলো ত্যাগ করতে পারেননি। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- কে কিভাবে অনুসরণ করেছেন আর আনুগত্যের নজীর কিভাবে স্থাপন করেছেন, তার বাস্তব একটি উদাহরণ এ হাদীস।

সাত. ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত হয়ে পরিবার-পরিজনের অধিকার আদায় ও তাদের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে অবহেলা করার অবকাশ নেই। যদি অবহেলা করা হয় তাহলে ইবাদত বন্দেগীতে মধ্যপন্থা নয়, চরমপন্থা গ্রহণ করা হল।

আট. উম্মতের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মায়া-মমতা কত বেশী ছিল তা অনুমান করা যায় এ হাদীস দিয়ে। উম্মতের কষ্ট হবে বলে তিনি বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করতে অনুমতি দিতেন না।

২৩
হাদীস - ১০.
10 - وعن أَبِي ربْعِيٍّ حنْظَلةَ بنِ الرَّبيع الأُسيدِيِّ الْكَاتِب أَحدِ كُتَّابِ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : لَقينَي أَبُو بَكْر رضي اللَّه عنه فقال : كَيْفَ أَنْتَ يا حنْظلَةُ ؟ قُلْتُ : نَافَقَ حنْظَلَةُ ، قَالَ : سُبْحانَ اللَّه ما تقُولُ ؟، : قُلْتُ : نَكُونُ عِنْد رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يُذكِّرُنَا بالْجنَّةِ والنَّارِ كأَنَّا رأْيَ عين ، فَإِذَا خَرجنَا مِنْ عِنْدِ رسولِ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم عافَسنَا الأَزْوَاجَ وَالأَوْلادَ وَالضَّيْعاتِ نَسينَا كَثِيراً قال أَبُو بكْر رضي اللَّه عنه : فَواللَّهِ إِنَّا لنَلْقَى مِثْلَ هَذَا فانْطلقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْر حتى دخَلْنَا عَلى رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم . فقُلْتُ نافَقَ حنْظَلةُ يا رسول اللَّه ، فقالَ رسولُ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « ومَا ذَاكَ ؟» قُلْتُ : يا رسولَ اللَّه نُكونُ عِنْدكَ تُذَكِّرُنَا بالنَّارِ والْجنَةِ كَأَنَّا رأْيَ العَيْنِ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسنَا الأَزوَاج والأوْلاَدَ والضَّيْعاتِ نَسِينَا كَثِيراً . فقال رسولُ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : «وَالَّذِي نَفْسِي بِيدِهِ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي، وَفِي الذِّكْر، لصَافَحتْكُمُ الملائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُم وفي طُرُقِكُم ، وَلَكِنْ يا حنْظَلَةُ ساعةً وساعةً » ثَلاثَ مرَّاتٍ ، رواه مسلم .

আবু রিবয়ী হানযালা ইবনুর রাবী আল উসাইদী রাদিয়াল্লাহু আনহু - যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন লেখক- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, হানযালা তুমি কেমন আছ ? আমি বললাম, হানযালা তো মুনাফেক হয়ে গেছে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সুবহানাল্লাহ! কি বলছ তুমি? আমি বললাম, যখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে থাকি তখন তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করে আমাদের উপদেশ দেন। আমরা যেন তখন তা আমাদের চোখের সামনে দেখতে পাই। কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছ থেকে বের হয়ে স্ত্রী, সন্তান, ধন-সম্পদে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন ভুলে যাই অনেক কথা। আবু বকর এ কথা শুনে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমার অবস্থাও তো এ রকম! এরপর আমি ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হলাম। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে আবার কী?

আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যখন আপনার কাছে অবস্থান করি তখন আপনি জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করে আমাদের উপদেশ দেন। তখন আমরা যেন তা চোখের সামনে দেখতে পাই। কিন্তু যখন আপনার কাছ থেকে বের হয়ে স্ত্রী, সন্তান, সম্পদের মাঝে ব্যস্তত হয়ে পড়ি তখন অনেক কথা ভুলে যাই। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা আমার কাছে থাকাকালীন যে অবস্থায় থাক, সে রকম যদি সর্বদা থাকতে এবং আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত হতে তাহলে ফেরেশ্তাগণ তোমাদের বিছানায়, তোমাদের রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত। কিন্তু হানযালা! এক সময় এ রকম, আরেক সময় ও রকম। এ কথাটি তিনি তিন বার বললেন। (মুসলিম)

২৪
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. মানুষের অন্তর পরিবর্তনশীল। রাতে যা সে চিন্তা দিনে সেটাকে অবাস্তব বলে ভাবে। একটি দীনী পরিবেশে থাকাকালে মনের অবস্থা এক রকম থাকে আবার বাইরে আসলে দুনিয়ার ঝামেলায় পূর্বের সেই অনুভূতি আর থাকে না। সাহাবী হানযালা রাদিয়াল্লাহু আনহু মানুষ হিসাবে তার এ অবস্থা স্বাভাবিক। কিন্তু এ অবস্থাটা তাকে নাড়া দিয়েছে। তিনি মনের এ পরিবর্তনকে মুনাফেকী ভাব বলে মনে করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে অনুভুতি প্রকাশ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চিকিৎসা করেছেন। বলেছেন, চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। এটাই ঈমানদার মানুষের স্বাভাবিক অবস্থা।

দুই. নিজেদের সংশোধনের জন্য মনের অনুভূতিগুলো উস্তাদ-শিক্ষাগুরু ও মুরববীদের কাছে বর্ণনা করা দোষের কিছু নয়।

তিন. সর্বদা ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকা ইসলামের আদেশ নয়। ইসলামের আদেশ হল, কতক্ষণ পার্থিব প্রয়োজনে কাজ করবে আর কতক্ষণ ইবাদত বন্দেগী করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষায় : কখনো এ রকম আর কখনো ও রকম (সাআতান ওয়া সাআহ)। এটাকে ইবাদত বন্দেগীতে মধ্যপন্থা বলা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে বলেছেন।

চার. সাহাবাদের কাছে পার্থিব উন্নতি-অবনতি থেকে পারলৌকিক ও ধর্মীয় অগ্রগতি ও অবনতির গুরুত্ব ছিল বেশী। নিজেদের ঈমানী কোনো সমস্যাকে তারা সবকিছুর চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিতেন।

২৫
হাদীস - ১১.
11 - وعن ابن عباس رضي اللَّه عنهما قال : بيْنما النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يَخْطُبُ إِذَا هُوَ بِرجُلٍ قَائِمٍ ، فسأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا : أَبُو إِسْرائيلَ نَذَر أَنْ يَقُومَ فِي الشَّمْس وَلا يقْعُدَ ، ولا يستَظِلَّ ولا يتَكَلَّمَ ، ويصومَ ، فَقالَ النَّبِيُّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم : « مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ ولْيَستَظِلَّ ولْيُتِمَّ صوْمَهُ » رواه البخاري .

ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাড়িয়ে আছে। অতপর তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবীগণ বললেন, এ ব্যক্তি হল আবু ইসরাইল। সে মানত করেছে যে, রোদে দাড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়ায় যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে বললেন: তোমরা তাকে নির্দেশ দাও সে যেন কথা বলে, ছায়াতে যায়, বসে এবং তার রোজা পূর্ণ করে। (বুখারী)

২৬
হাদীস থেকে শিক্ষা ও মাসায়েল :
এক. যদি কেউ এমন মানত করে যা নিজের জীবন বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর তা আদায় করা যাবে না। যেমন আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। সাথে সাথে সে রোজা রাখার মানত করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে শুধু রোজা রাখতে বললেন আর বাকীগুলো পালন করতে নিষেধ করলেন। এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে কোন বৈধ বিষয়কে নিজের জন্য অবৈধ করা যায় না। তিমনি অবৈধ কোন কিছুকে বৈধ করা যায় না। যেমন কেউ মানত করল আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয়।

দুই. যা মানত করা হয় তা যদি সওয়াবের বিষয় হয় তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক কোন বিষয় হয় তবে তা আদায় করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

من نذر أنْ يطيع الله فليطعه ، ومن نذر أن يعصي الله فلا يعصه » .

যে আল্লাহ হুকুম মান্য করার মানত করেছে সে যেন তা করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানীর মানত করেছে সে যেন তা না করে।

তিন. কোন বিষয়ে মানত করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কিন্তু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। মানত পূরণ করতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।

চার. ইবাদত বন্দেগী, মানতের নামে নিজের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করা উচিত নয়। এটি একটি চরমপন্থা। ইসলামের মধ্যপন্থার পরিপন্থী। আবু ইসরাইল যে ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা আর কথা না বলার যে মানত করেছিল সেটা মধ্যপন্থার বিপরীত ছিল। তাই তা পরিত্যাগ করতে নির্দেশ দেয়া হল।

পাঁচ. খুতবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।

ছয়. খুতবার সময় প্রয়োজনে খতীব কথা বলতে পারেন। কাউকে কোন কিছুর আদেশ বা কোন কাজ থেকে নিষেধ করতে পারেন।

বি:দ্র: - হাদীসগুলো ইমাম নববী রহ. কর্তৃক সংকলিত রিয়াদুস সালেহীন থেকে সংগৃহিত

সমাপ্ত

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন