HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ইসলাম
লেখকঃ মাওলাই মোস্তাফা বারজাওয়ী
বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কর্তৃক ভূমির অনিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজের পরিধি হ্রাস পাচ্ছে। তদুপরি দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরগুলোতে শুষ্ক ভূমি ও মরুকরণ বৃদ্ধি পাবে। ইসলাম পরিবেশের ওপর অনাচারকে হারাম ঘোষণা করেছে। যে আচরণের মাধ্যমে মানুষ সামগ্রিকভাবে পরিবেশের নিরাপত্তায় হুমকি হয় তাও নিষিদ্ধ করেছে।
পরিবেশের প্রতি তারাই প্রথম নজর দিয়েছেন ভেবে পশ্চিমা ও তাদের গুণমুগ্ধ মুসলিমরা গর্ব বোধ করেন। কিন্তু যিনি চিন্তা ও গবেষণার নির্মোহ দৃষ্টিতে আল্লাহর কিতাব এবং হাবীব মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর প্রতি তাকাবেন, তিনি দেখবেন ইসলামই তার বিধানাবলির মাধ্যমে সর্বপ্রথম পরিবেশের খুঁটিনাটিসহ প্রতিটি বিষয়ে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে। সকাল সন্ধ্যায় যার পতাকা উড়িয়ে যাচ্ছে পরিবেশবাদী নানা সংগঠন ও আন্তঃসরকারি সংস্থাগুলো। তিবলিস সম্মেলন, রিও ডি জেনেরো সম্মেলন এবং কিয়োটো ও জোহানসবার্গ সামিটসহ একের পর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ফলাফল যা ছিল তাই। আল্লাহ ঐ কবির প্রতি করুণা করুন যিনি বলেছেন,
أَعْمَى يَقُودُ بَصِيرًا لاَ أَبَا لَكُمُ
قَدْ ضَلَّ مَنْ كَانَتِ العُمْيَانُ تَهْدِيهِ
“অন্ধ নেতৃত্ব দিচ্ছ দৃষ্টিবানকে, তোমাদের তাকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নাই,
সে তো পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে অন্ধরা যাকে পথ দেখায়।”
আমি নিজের বিস্ময় গোপন রাখতে পারছি না যে মুসলিমের সন্তানরাও এখন পরিবেশগত শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে। ইসলাম যার সূচনা করেছিল এবং তার সীমারেখা নির্ধারণ করেছিল। যাতে করে আমরা তা অতিক্রম করে বা মাড়িয়ে পরিবেশ বিপর্যয় না ঘটাই। কেননা ‘পরিবেশগত শিক্ষা’ এবং পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা কাজে আসবে না। সভা, সম্মেলন ও মানব রচিত আইনগুলোও ফল দেবে না। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও পারবে না পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে। যাবত না মানুষের মধ্যে আল্লাহর বড়ত্ব ও তাঁর ভয় সঞ্চারিত হয়। শুধু পরিবেশ দূষণ নয়; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য।
ইবনুল জাওযী রহ. ‘ছিফাতুস সাফওয়া’ নামক গ্রন্থে একটি চমৎকার ঘটনা উল্লেখ করেছেন। (মানুষের আল্লাহভীতির গভীরতা সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন।) নাফে রহ. বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সঙ্গে একবার মদীনার এক প্রান্তে গেলাম। তাঁর সঙ্গে কয়েকজন সঙ্গী ছিল। তারা একটি দস্তরখান বিছালো। ইত্যবসরে সেদিক দিয়ে একজন রাখাল অতিক্রম করল। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, এসো হে রাখাল, এ দস্তরখান থেকে আহার কর। সে বলল, আমি রোযাদার। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, এমন তীব্র গরমের দিনে তুমি এই গিরিপথে ছাগলের পেছনে ছুটছ! পাহাড়ের পাদদেশে ছাগল চড়াচ্ছ অথচ তুমি সাওম পালনকারী?!
রাখাল বলল, আমার বিরাণ দিনগুলো আমি এভাবেই কাটাই। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ কথা শুনে অভিভূত হয়ে গেলেন। তোমার মেষপাল থেকে কোনো ছাগল বিক্রি করার অনুমতি আছে কি? আমরা যা জবাই করব অতঃপর এর গোশত খাওয়াব তোমাকে। ফলে তুমি তা দিয়ে ইফতার করবে আর তোমাকে তার মূল্য দিয়ে দেব? সে বলল, এসব আমার নয়; আমার মুনিবের।
তিনি বললেন, তুমি যদি তোমার মুনিবের কাছে বল ছাগলটি নেকড়ে খেয়ে ফেলেছে তাহলে সে তোমাকে কী বলবে বলে মনে কর? রাখাল তখন নড়ে উঠে আসমানের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল, তাহলে আল্লাহ আর কৈ রইলেন?! বর্ণনাকারী বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন পুনঃপুনঃ বলতে লাগলেন, রাখল বলল তাহলে আল্লাহ কৈ রইলেন?
তাঁকে এ বাক্য এতটা মুগ্ধ করল যে তিনি মদীনায় গিয়ে রাখালের মুনিবের কাছে লোক পাঠালেন। মালিকের কাছ থেকে রাখাল ও তার ছাগল কিনে নিলেন। অতঃপর তাকে মুক্ত করে দিলেন আর ছাগলটি তাকে দান করে দিলেন। [ছিফাতুস সাফওয়া: ২/১৮৮।] গল্পটি আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃষ্ট দাসত্বের এক অনুপম দৃষ্টান্ত।
যাহোক পরিবেশ বলতে কী বুঝায়? প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা বা পরিবেশ দূষণ দ্বারা উদ্দেশ্য কী? এর ধরণগুলো কী কী? আর এর পরিবেশের ওপর খামখেয়ালির রাশ টানতে এবং তা বিস্তারের সীমা সংকুচিত করতে ইসলামের প্রবর্তিত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী মূলনীতিগুলো কী?
أَعْمَى يَقُودُ بَصِيرًا لاَ أَبَا لَكُمُ
قَدْ ضَلَّ مَنْ كَانَتِ العُمْيَانُ تَهْدِيهِ
“অন্ধ নেতৃত্ব দিচ্ছ দৃষ্টিবানকে, তোমাদের তাকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নাই,
সে তো পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে অন্ধরা যাকে পথ দেখায়।”
আমি নিজের বিস্ময় গোপন রাখতে পারছি না যে মুসলিমের সন্তানরাও এখন পরিবেশগত শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে। ইসলাম যার সূচনা করেছিল এবং তার সীমারেখা নির্ধারণ করেছিল। যাতে করে আমরা তা অতিক্রম করে বা মাড়িয়ে পরিবেশ বিপর্যয় না ঘটাই। কেননা ‘পরিবেশগত শিক্ষা’ এবং পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা কাজে আসবে না। সভা, সম্মেলন ও মানব রচিত আইনগুলোও ফল দেবে না। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও পারবে না পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে। যাবত না মানুষের মধ্যে আল্লাহর বড়ত্ব ও তাঁর ভয় সঞ্চারিত হয়। শুধু পরিবেশ দূষণ নয়; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য।
ইবনুল জাওযী রহ. ‘ছিফাতুস সাফওয়া’ নামক গ্রন্থে একটি চমৎকার ঘটনা উল্লেখ করেছেন। (মানুষের আল্লাহভীতির গভীরতা সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন।) নাফে রহ. বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সঙ্গে একবার মদীনার এক প্রান্তে গেলাম। তাঁর সঙ্গে কয়েকজন সঙ্গী ছিল। তারা একটি দস্তরখান বিছালো। ইত্যবসরে সেদিক দিয়ে একজন রাখাল অতিক্রম করল। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, এসো হে রাখাল, এ দস্তরখান থেকে আহার কর। সে বলল, আমি রোযাদার। আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, এমন তীব্র গরমের দিনে তুমি এই গিরিপথে ছাগলের পেছনে ছুটছ! পাহাড়ের পাদদেশে ছাগল চড়াচ্ছ অথচ তুমি সাওম পালনকারী?!
রাখাল বলল, আমার বিরাণ দিনগুলো আমি এভাবেই কাটাই। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ কথা শুনে অভিভূত হয়ে গেলেন। তোমার মেষপাল থেকে কোনো ছাগল বিক্রি করার অনুমতি আছে কি? আমরা যা জবাই করব অতঃপর এর গোশত খাওয়াব তোমাকে। ফলে তুমি তা দিয়ে ইফতার করবে আর তোমাকে তার মূল্য দিয়ে দেব? সে বলল, এসব আমার নয়; আমার মুনিবের।
তিনি বললেন, তুমি যদি তোমার মুনিবের কাছে বল ছাগলটি নেকড়ে খেয়ে ফেলেছে তাহলে সে তোমাকে কী বলবে বলে মনে কর? রাখাল তখন নড়ে উঠে আসমানের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল, তাহলে আল্লাহ আর কৈ রইলেন?! বর্ণনাকারী বলেন, ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন পুনঃপুনঃ বলতে লাগলেন, রাখল বলল তাহলে আল্লাহ কৈ রইলেন?
তাঁকে এ বাক্য এতটা মুগ্ধ করল যে তিনি মদীনায় গিয়ে রাখালের মুনিবের কাছে লোক পাঠালেন। মালিকের কাছ থেকে রাখাল ও তার ছাগল কিনে নিলেন। অতঃপর তাকে মুক্ত করে দিলেন আর ছাগলটি তাকে দান করে দিলেন। [ছিফাতুস সাফওয়া: ২/১৮৮।] গল্পটি আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃষ্ট দাসত্বের এক অনুপম দৃষ্টান্ত।
যাহোক পরিবেশ বলতে কী বুঝায়? প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা বা পরিবেশ দূষণ দ্বারা উদ্দেশ্য কী? এর ধরণগুলো কী কী? আর এর পরিবেশের ওপর খামখেয়ালির রাশ টানতে এবং তা বিস্তারের সীমা সংকুচিত করতে ইসলামের প্রবর্তিত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী মূলনীতিগুলো কী?
ক. আরবী ‘বীআ‘’ বা পরিবেশের শাব্দিক অর্থ: স্থান বা বাসস্থান। আর ‘বিআ’’, ‘বাআ‘’ ও ‘মাবাআ‘’ শব্দগুলো গোত্রের বাসস্থান অর্থে ব্যবহৃত হয়। উপত্যকা বা পর্বতচূড়ার যেখানে তারা সংঘবদ্ধভাবে আশ্রয় নেয়। এ থেকেই যে পানির স্থানে উটকে বসানো হয় বা যেখানে সে রাত কাটায় তাকে ‘মাবাআ‘’ বলা হয়। [ইবন মানযূর, লিসানুল আরব: ১/৩৮২।]
খ. ইসলামে ‘বিআ‘’ বা পরিবেশ বলতে কী বুঝায়: এটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যা জীবনের সকল পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে। পরিবেশ কখনো আরও ব্যাপকার্থে আমাদের ভারকারী যমীন এবং আমাদের ছায়াদানকারী আসমানকেও অন্তর্ভুক্ত করে। আবার কখনো তা সংকুচিত অর্থে মানুষের ঘরকে এবং তার কাজ ও বাসস্থান বুঝায়। এক কথায় পরিবেশ হলো, ‘মানুষের চারপাশের সবকিছু। সৃষ্টিজগতের সবকিছু। পানি ও বাতাস এবং প্রাণীজগৎ ও জড়জগতের সব। এই সে প্রকৃতির আঙ্গিনা যেখানে মানুষ তার জীবন ও নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এসবের মধ্যে মানুষ তাকে একটি ‘সুদৃঢ় পরিবেশে’ রূপ দিতে পারে। যার পরিমণ্ডলে মানুষ তার নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রাযুক্তিক পরিবেশ গড়ে তোলে।’
আর পরিবেশের রয়েছে মহান স্রষ্টা এবং মহাপ্রজ্ঞাবান পরিচালক আল্লাহ প্রবর্তিত একটি সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ সূক্ষ্ম ব্যবস্থা। আল্লাহ বলেন,
﴿صُنۡعَ ٱللَّهِ ٱلَّذِيٓ أَتۡقَنَ كُلَّ شَيۡءٍۚ﴾ [ النمل : 88]
“আল্লাহর কাজ, যিনি সব কিছু দৃঢ়ভাবে করেছেন।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৮]
কিন্তু মানুষের হাতই পরিবেশের সব সুন্দরকে ম্লান করে। সবুজ ও সজীবতার বিনাশ ঘটায়। ধ্বংসের এই আকৃতিকেই পবিত্র কুরআন ‘বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে এবং অধুনা বিজ্ঞান ‘দূষণ’ নামে অভিহিত করেছে।
পরিবেশের শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং পৃথিবীর জীবনকে অসম্ভব ও ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এমন যে কোনো অনাচারের বিরুদ্ধেই ইসলাম সোচ্চার। তা রোধে ইসলাম নানা উপায় ও প্রকৃতির শিক্ষার প্রবর্তন করেছে। বরং তার জন্য এমন সব বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছে, অন্য যে কোনো সনদ বা ধর্ম কিংবা সংগঠনে যার পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ রূপ খুব কমই দেখা যায়।
শিক্ষা: এটি মানুষের সেই স্বভাব বা প্রকৃতি জন্মক্ষণ থেকেই যা সে তার সঙ্গে নিয়ে আসে। ইসলামের উচ্চ মূল্যবোধ বপনের মাধ্যমে এর গঠন আরও পূর্ণতা পায়। অতএব, যে পরিবেশে আত্মীয়তা বা অঙ্গীকারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হয় না, ধর্মীয় বিধি-নিষেধের প্রতি কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয় না, সেখানে সুস্থ সমাজের সকল উপাদান বিলীন হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفٗاۚ فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ لَا تَبۡدِيلَ لِخَلۡقِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٠﴾ [ الروم : ٣٠ ]
“অতএব, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩০]
(ঐশ্বরিক) রব্বানী বিধি: এটি হলো স্বয়ংক্রিয় কর্মকাণ্ড। আর আল্লাহর কিতাব এবং হাবীব মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ উদ্ভূত বিধানাবলিকে কার্যে রূপান্তরিত করতে প্রয়োজন আল্লাহর বাধ্য ও অনুগত বিনীত বান্দার। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ»
“নিশ্চয় দুনিয়া সবুজ লোভনীয় বস্তু। আল্লাহ তোমাদেরকে এতে তাঁর প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। কারণ, তিনি দেখবেন তোমরা কী আমল করো।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১২৪।]
অতএব, দীন ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে জীবন ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যত্ন নেবার ক্ষেত্রে ইসলামী শরী‘আহ মুসলিমদের এক শিক্ষা ভাণ্ডার। একটি পথ ও পন্থা। আর পরিবেশ সংক্রান্ত যত সনদ, সংগঠন ও আইন বেরিয়েছে, পরিবেশ রক্ষায় যত আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সবই ইসলামী শরী‘আর প্রতিফলন ঘটায়। যে ইসলাম উদ্বুদ্ধ করে পরিবেশ সংরক্ষণে, পরিবেশে সুন্দর আচরণে, পরিবেশ রক্ষায় এবং মানুষ ও জীবের কল্যাণে এর বিকাশ ও উন্নয়ন সাধনে।
খ. ইসলামে ‘বিআ‘’ বা পরিবেশ বলতে কী বুঝায়: এটি একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ যা জীবনের সকল পর্যায়কে অন্তর্ভুক্ত করে। পরিবেশ কখনো আরও ব্যাপকার্থে আমাদের ভারকারী যমীন এবং আমাদের ছায়াদানকারী আসমানকেও অন্তর্ভুক্ত করে। আবার কখনো তা সংকুচিত অর্থে মানুষের ঘরকে এবং তার কাজ ও বাসস্থান বুঝায়। এক কথায় পরিবেশ হলো, ‘মানুষের চারপাশের সবকিছু। সৃষ্টিজগতের সবকিছু। পানি ও বাতাস এবং প্রাণীজগৎ ও জড়জগতের সব। এই সে প্রকৃতির আঙ্গিনা যেখানে মানুষ তার জীবন ও নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এসবের মধ্যে মানুষ তাকে একটি ‘সুদৃঢ় পরিবেশে’ রূপ দিতে পারে। যার পরিমণ্ডলে মানুষ তার নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রাযুক্তিক পরিবেশ গড়ে তোলে।’
আর পরিবেশের রয়েছে মহান স্রষ্টা এবং মহাপ্রজ্ঞাবান পরিচালক আল্লাহ প্রবর্তিত একটি সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ সূক্ষ্ম ব্যবস্থা। আল্লাহ বলেন,
﴿صُنۡعَ ٱللَّهِ ٱلَّذِيٓ أَتۡقَنَ كُلَّ شَيۡءٍۚ﴾ [ النمل : 88]
“আল্লাহর কাজ, যিনি সব কিছু দৃঢ়ভাবে করেছেন।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৮৮]
কিন্তু মানুষের হাতই পরিবেশের সব সুন্দরকে ম্লান করে। সবুজ ও সজীবতার বিনাশ ঘটায়। ধ্বংসের এই আকৃতিকেই পবিত্র কুরআন ‘বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে এবং অধুনা বিজ্ঞান ‘দূষণ’ নামে অভিহিত করেছে।
পরিবেশের শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং পৃথিবীর জীবনকে অসম্ভব ও ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এমন যে কোনো অনাচারের বিরুদ্ধেই ইসলাম সোচ্চার। তা রোধে ইসলাম নানা উপায় ও প্রকৃতির শিক্ষার প্রবর্তন করেছে। বরং তার জন্য এমন সব বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছে, অন্য যে কোনো সনদ বা ধর্ম কিংবা সংগঠনে যার পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ রূপ খুব কমই দেখা যায়।
শিক্ষা: এটি মানুষের সেই স্বভাব বা প্রকৃতি জন্মক্ষণ থেকেই যা সে তার সঙ্গে নিয়ে আসে। ইসলামের উচ্চ মূল্যবোধ বপনের মাধ্যমে এর গঠন আরও পূর্ণতা পায়। অতএব, যে পরিবেশে আত্মীয়তা বা অঙ্গীকারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হয় না, ধর্মীয় বিধি-নিষেধের প্রতি কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয় না, সেখানে সুস্থ সমাজের সকল উপাদান বিলীন হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَقِمۡ وَجۡهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفٗاۚ فِطۡرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِي فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيۡهَاۚ لَا تَبۡدِيلَ لِخَلۡقِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٠﴾ [ الروم : ٣٠ ]
“অতএব, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” [সূরা আর-রূম, আয়াত: ৩০]
(ঐশ্বরিক) রব্বানী বিধি: এটি হলো স্বয়ংক্রিয় কর্মকাণ্ড। আর আল্লাহর কিতাব এবং হাবীব মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ উদ্ভূত বিধানাবলিকে কার্যে রূপান্তরিত করতে প্রয়োজন আল্লাহর বাধ্য ও অনুগত বিনীত বান্দার। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللَّهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ»
“নিশ্চয় দুনিয়া সবুজ লোভনীয় বস্তু। আল্লাহ তোমাদেরকে এতে তাঁর প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। কারণ, তিনি দেখবেন তোমরা কী আমল করো।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭১২৪।]
অতএব, দীন ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে জীবন ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যত্ন নেবার ক্ষেত্রে ইসলামী শরী‘আহ মুসলিমদের এক শিক্ষা ভাণ্ডার। একটি পথ ও পন্থা। আর পরিবেশ সংক্রান্ত যত সনদ, সংগঠন ও আইন বেরিয়েছে, পরিবেশ রক্ষায় যত আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সবই ইসলামী শরী‘আর প্রতিফলন ঘটায়। যে ইসলাম উদ্বুদ্ধ করে পরিবেশ সংরক্ষণে, পরিবেশে সুন্দর আচরণে, পরিবেশ রক্ষায় এবং মানুষ ও জীবের কল্যাণে এর বিকাশ ও উন্নয়ন সাধনে।
ইসলামের সৌন্দর্যের আরেকটি দিক হলো তা মানুষের মধ্যে তার চারপাশের জীব ও জড়জগতের প্রতি ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যের আবেগ সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যেমন কুরআনে কারীমে এসেছে:
﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا طَٰٓئِرٖ يَطِيرُ بِجَنَاحَيۡهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمۡثَالُكُمۚ ﴾ [ الانعام : ٣٨ ]
“আর যমীনে বিচরণশীল প্রতিটি প্রাণী এবং দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মতো এক একটি জাতি।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৮]
তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমন সৃষ্টিজীব ও জগতের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও অকৃত্রিম মমতা প্রকাশ করেছেন। গাযওয়ায়ে তাবূক থেকে মদীনায় ফেরার পথে যখন তিনি মদীনার নিকটবর্তী হন এবং জাবালে উহুদ যখন তাঁর সামনে উদ্ভাসিত হয় তিনি কী দরদ মাখা ভাষায়ই না তাঁর আবেগ প্রকাশ করেন! তিনি তখন বলেন,
«هَذِهِ طَابَةُ وَهَذَا أُحُدٌ جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ» .
“এটি হলো ‘তাবা’। এটি হলো উহুদ। এমন পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৩৭।] (মদীনার নামগুলোর একটি ‘তাবা’)
শুধু তাই নয়; সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমও দেখিয়েছেন পরিবেশের প্রতি দরদ ও মমতা। যেমন আমরা দেখতে পাই মক্কা এবং এর উপত্যকা, ঝর্ণাধারা, পাহাড়-পর্বত ও বৃক্ষ-লতার প্রতি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভালোবাসা। প্রকৃতির মায়ায় জড়িয়ে তিনি আবৃতি করেন,
أَلاَ لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ
وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مَجَنَّةٍ وَهَلْ يَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ .
“হায় আমি এমন তৃণভূমিতে রাত কাটাতাম, আমার পাশে থাকত ইযখির ও জলীল ঘাস।
আমি যদি কোনোদিন মাজিন্না কূপের কাছে অবতরণ করতাম, আমি কি শামা ও তাফিল কূপ দেখতে পাব?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯২৬।]
বরং স্থান পরিবেশও যেমন দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সংবাদ দিয়েছেন- কাউকে শরীক না করে কেবল আল্লাহর জন্য সাজদাকারী বান্দার বিচ্ছেদে সে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। সাঈদ ইবন মুসায়্যিব রহ. থেকে বর্ণিত, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«إِذَا مَاتَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ ، بَكَى عَلَيْهِ مُصَلاَّهُ مِنَ الأَرْضِ ، وَمَصْعَدُ عَمَلِهِ مِنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ، ثُمَّ قَرَأَ : { فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ» .
“যখন নেককার বান্দা মারা যায়, তার জন্য তার সাজদার মাটি এবং আসমান ও যমীনে তার আমল ওঠার স্থান ক্রন্দন করে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন, ‘অতঃপর আসমান ও যমীন তাঁদের জন্য কাঁদে নি এবং তারা অবকাশপ্রাপ্ত ছিল না”। [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ২৯; কানযুল উম্মাল: ৪২৯৬৬; মুসনাদ ইবনুল জা‘দ: ২৩০৫।]
﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا طَٰٓئِرٖ يَطِيرُ بِجَنَاحَيۡهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمۡثَالُكُمۚ ﴾ [ الانعام : ٣٨ ]
“আর যমীনে বিচরণশীল প্রতিটি প্রাণী এবং দু’ডানা দিয়ে উড়ে এমন প্রতিটি পাখি, তোমাদের মতো এক একটি জাতি।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৩৮]
তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমন সৃষ্টিজীব ও জগতের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও অকৃত্রিম মমতা প্রকাশ করেছেন। গাযওয়ায়ে তাবূক থেকে মদীনায় ফেরার পথে যখন তিনি মদীনার নিকটবর্তী হন এবং জাবালে উহুদ যখন তাঁর সামনে উদ্ভাসিত হয় তিনি কী দরদ মাখা ভাষায়ই না তাঁর আবেগ প্রকাশ করেন! তিনি তখন বলেন,
«هَذِهِ طَابَةُ وَهَذَا أُحُدٌ جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ» .
“এটি হলো ‘তাবা’। এটি হলো উহুদ। এমন পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৪৩৭।] (মদীনার নামগুলোর একটি ‘তাবা’)
শুধু তাই নয়; সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমও দেখিয়েছেন পরিবেশের প্রতি দরদ ও মমতা। যেমন আমরা দেখতে পাই মক্কা এবং এর উপত্যকা, ঝর্ণাধারা, পাহাড়-পর্বত ও বৃক্ষ-লতার প্রতি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভালোবাসা। প্রকৃতির মায়ায় জড়িয়ে তিনি আবৃতি করেন,
أَلاَ لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ
وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مَجَنَّةٍ وَهَلْ يَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ .
“হায় আমি এমন তৃণভূমিতে রাত কাটাতাম, আমার পাশে থাকত ইযখির ও জলীল ঘাস।
আমি যদি কোনোদিন মাজিন্না কূপের কাছে অবতরণ করতাম, আমি কি শামা ও তাফিল কূপ দেখতে পাব?” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯২৬।]
বরং স্থান পরিবেশও যেমন দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সংবাদ দিয়েছেন- কাউকে শরীক না করে কেবল আল্লাহর জন্য সাজদাকারী বান্দার বিচ্ছেদে সে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। সাঈদ ইবন মুসায়্যিব রহ. থেকে বর্ণিত, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«إِذَا مَاتَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ ، بَكَى عَلَيْهِ مُصَلاَّهُ مِنَ الأَرْضِ ، وَمَصْعَدُ عَمَلِهِ مِنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ ، ثُمَّ قَرَأَ : { فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ» .
“যখন নেককার বান্দা মারা যায়, তার জন্য তার সাজদার মাটি এবং আসমান ও যমীনে তার আমল ওঠার স্থান ক্রন্দন করে। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন, ‘অতঃপর আসমান ও যমীন তাঁদের জন্য কাঁদে নি এবং তারা অবকাশপ্রাপ্ত ছিল না”। [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ২৯; কানযুল উম্মাল: ৪২৯৬৬; মুসনাদ ইবনুল জা‘দ: ২৩০৫।]
সমস্যা নিরসনে আলিম ও উসূলবিদগণ এমন সব মূলনীতি উদ্ভাবন করেছেন যা কেবল এই অধুনাকালে মানুষের সামনে আসছে। যেমন, পরিবেশ সংক্রান্ত মূলনীতিগুলো নিম্নরূপ: ‘যা ছাড়া ওয়াজিব সম্পন্ন হয় না, তাও ওয়াজিব’, ‘যা হারাম পর্যন্ত নিয়ে যায়, তাও হারাম’, ‘ক্ষতিকে তার অনুরূপ বা ততোধিক বড় ক্ষতি দিয়ে ঠেকানো যায় না’ এবং ‘লাভ বয়ে আনার চেয়ে ক্ষতি ঠেকানো অগ্রগণ্য’ ইত্যাদি। [মুহাম্মদ মারছি, আল-ইসলাম ওয়াল বীআ’, প্রথম সংস্করণ, রিয়াদ, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা: ৬২।]
লিখিত প্রচারমাধ্যমগুলো পরিবেশের জন্য সবচে ক্ষতিকর যার প্রচলন ঘটিয়েছে তা হলো, একটি রাষ্ট্র নিজের মাটিতে পারমানবিক আবর্জনা পুতে না ফেলে বরং অব্যাহতভাবে সাহায্য সরবরাহের মাধ্যমে ইহুদী অস্তিত্বের রাষ্ট্রকে স্বাভাবাকিকরণ করেছে। এই অশুভ শক্তি যা পৃথিবীর উর্বরতাকে বিনষ্ট করতে পারে। যা নানা মহামারী, হত্যা ও লড়াইয়ের কারণ। এটিকে প্রতিহত করা কি শত্রু রাষ্ট্রের জন্য ভিক্ষা করার চেয়ে অগ্রাধিকার পাবার দাবী রাখে না।? ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নাই, ক্ষতি সাধন করাও নাই’। সাইয়েদ রশীদ রেযা রহ. সূরা আল-মায়েদাহ’র তাফসীরে এর সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ ‘ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ক্ষতি দূর করা’।
এ সংক্রান্ত আরও কিছু চমৎকার মূলনীতির উল্লেখ করা যায়। যেমন, ‘অক্ষমতায় ওয়াজিব মাফ করা হয়’, ব্যক্তি স্বার্থের আগে গোষ্ঠী স্বার্থ’, ‘হিতকর বিষয়াদির ক্ষেত্রে অনুমতিই মূল আর অনিষ্টকর বিষয়ে নিষেধই মূল’, ‘অসুবিধা হেতু যা জায়েয, অসুবিধা দূর হলে তার অনুমতিও বাতিল হয়ে যায়’।
অথচ কিছু জাগতিক বিদ্যা অকল্যাণ ও অশুভ বিদ্যার রূপ পরিগ্রহ করেছে। মন্দকে চিনতে হয় তা থেকে বাঁচতে আর ভালোকে জানতে হয় তা আহরণে। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহ আনহু যথার্থ বলেছেন। তিনি বলেন,
«يجب أن يُعْرَف الشَّر، كما يعرف الخير؛ فالذي لا يعرف الشَّرَّ أَحْرى أن يقعَ فيه» .
“মন্দকে চেনাও জরুরী, যেমন জানতে হয় ভালোকে। কারণ যে মন্দ সম্পর্কে জানে না, সে তো তার শিকার হওয়াই স্বাভাবিক।”
লিখিত প্রচারমাধ্যমগুলো পরিবেশের জন্য সবচে ক্ষতিকর যার প্রচলন ঘটিয়েছে তা হলো, একটি রাষ্ট্র নিজের মাটিতে পারমানবিক আবর্জনা পুতে না ফেলে বরং অব্যাহতভাবে সাহায্য সরবরাহের মাধ্যমে ইহুদী অস্তিত্বের রাষ্ট্রকে স্বাভাবাকিকরণ করেছে। এই অশুভ শক্তি যা পৃথিবীর উর্বরতাকে বিনষ্ট করতে পারে। যা নানা মহামারী, হত্যা ও লড়াইয়ের কারণ। এটিকে প্রতিহত করা কি শত্রু রাষ্ট্রের জন্য ভিক্ষা করার চেয়ে অগ্রাধিকার পাবার দাবী রাখে না।? ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নাই, ক্ষতি সাধন করাও নাই’। সাইয়েদ রশীদ রেযা রহ. সূরা আল-মায়েদাহ’র তাফসীরে এর সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ ‘ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ক্ষতি দূর করা’।
এ সংক্রান্ত আরও কিছু চমৎকার মূলনীতির উল্লেখ করা যায়। যেমন, ‘অক্ষমতায় ওয়াজিব মাফ করা হয়’, ব্যক্তি স্বার্থের আগে গোষ্ঠী স্বার্থ’, ‘হিতকর বিষয়াদির ক্ষেত্রে অনুমতিই মূল আর অনিষ্টকর বিষয়ে নিষেধই মূল’, ‘অসুবিধা হেতু যা জায়েয, অসুবিধা দূর হলে তার অনুমতিও বাতিল হয়ে যায়’।
অথচ কিছু জাগতিক বিদ্যা অকল্যাণ ও অশুভ বিদ্যার রূপ পরিগ্রহ করেছে। মন্দকে চিনতে হয় তা থেকে বাঁচতে আর ভালোকে জানতে হয় তা আহরণে। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহ আনহু যথার্থ বলেছেন। তিনি বলেন,
«يجب أن يُعْرَف الشَّر، كما يعرف الخير؛ فالذي لا يعرف الشَّرَّ أَحْرى أن يقعَ فيه» .
“মন্দকে চেনাও জরুরী, যেমন জানতে হয় ভালোকে। কারণ যে মন্দ সম্পর্কে জানে না, সে তো তার শিকার হওয়াই স্বাভাবিক।”
ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ‘২০০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্যারিস সম্মেলনে’ পরিবেশ বিজ্ঞানীরা মিলিত হন। তারা তিনটি ফলাফলে উপনীত হন। যাতে বিশ্বের নানা দেশের পাঁচ শতাধিক বিজ্ঞানী একমত হন:
১. বর্তমানে দূষণের মাত্রা এমন হারে বেড়েছে মানব ইতিহাসে যার তুলনা মেলে না। এর ফলে জলে ও স্থলে পরিবেশ বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করছে। স্থলে যেমন, ভূমিতে পচন, ওজন স্তরে দূষণ ও গোলযোগ এবং উদ্ভিদ জগতে অনাচার। ফলে ধরিত্রীর ওপর উদ্ভিদ জগতের ভারসাম্য ব্যাহত হয়েছে। আর জলে যেমন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ওজন স্তর গলতে শুরু করেছে। এর ফলে সামুদ্রিক জগত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং সেখানেও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞানী ড. জাফ্রি শ্যানটন বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলে এমন হারে কার্বন বেড়ে গেছে যা আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ দেখুন কিভাবে এই বিজ্ঞানী পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর তাপমাত্রা এই শতাব্দীতে তিন ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে তা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন হারিকেন, মরুকরণ বৃদ্ধি ও অ্যাসিড বৃষ্টি ইত্যাদি ডেকে আনবে।
২. ৫০০ বিজ্ঞানীই একমত হয়েছেন যে পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য মানুষই দায়ী। তারা বলেন, মানুষের বাড়াবাড়ি এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে তাদের বেপরোয়া মানসিকতার কারণে - যেমন পরিবেশ ও তার নিয়মের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা, দূষণ ঘটানো ও প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের বাড়াবাড়ি। এসবই বায়ুমণ্ডলে দ্রুত কার্বনের মাত্রা বৃদ্ধি করছে। যার ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে।
৩. সভা শেষে বৈজ্ঞানিকরা বিশ্বের সকল দেশের উদ্দেশে একটি সতর্কবার্তা ও জরুরী আহ্বান জানান। জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে ব্যাপক দূষণের ফলে সৃষ্ট ভবিষ্যৎ বিপদগুলো এড়াতে হলে দূষণ রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবার কথা বলেছেন তারা। [পরিবেশ দূষণ: একটি কুরআনী মু‘জিজা, সূত্র: মাওসূ‘আতুল ই‘জাযুল ইলমী ফিল-কুরআনী ও ওয়াস-সুন্নাহ।]
১. বর্তমানে দূষণের মাত্রা এমন হারে বেড়েছে মানব ইতিহাসে যার তুলনা মেলে না। এর ফলে জলে ও স্থলে পরিবেশ বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করছে। স্থলে যেমন, ভূমিতে পচন, ওজন স্তরে দূষণ ও গোলযোগ এবং উদ্ভিদ জগতে অনাচার। ফলে ধরিত্রীর ওপর উদ্ভিদ জগতের ভারসাম্য ব্যাহত হয়েছে। আর জলে যেমন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ওজন স্তর গলতে শুরু করেছে। এর ফলে সামুদ্রিক জগত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং সেখানেও পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞানী ড. জাফ্রি শ্যানটন বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলে এমন হারে কার্বন বেড়ে গেছে যা আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ দেখুন কিভাবে এই বিজ্ঞানী পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর তাপমাত্রা এই শতাব্দীতে তিন ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে তা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন হারিকেন, মরুকরণ বৃদ্ধি ও অ্যাসিড বৃষ্টি ইত্যাদি ডেকে আনবে।
২. ৫০০ বিজ্ঞানীই একমত হয়েছেন যে পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য মানুষই দায়ী। তারা বলেন, মানুষের বাড়াবাড়ি এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে তাদের বেপরোয়া মানসিকতার কারণে - যেমন পরিবেশ ও তার নিয়মের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা, দূষণ ঘটানো ও প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের বাড়াবাড়ি। এসবই বায়ুমণ্ডলে দ্রুত কার্বনের মাত্রা বৃদ্ধি করছে। যার ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে।
৩. সভা শেষে বৈজ্ঞানিকরা বিশ্বের সকল দেশের উদ্দেশে একটি সতর্কবার্তা ও জরুরী আহ্বান জানান। জল, স্থল ও অন্তরীক্ষে ব্যাপক দূষণের ফলে সৃষ্ট ভবিষ্যৎ বিপদগুলো এড়াতে হলে দূষণ রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবার কথা বলেছেন তারা। [পরিবেশ দূষণ: একটি কুরআনী মু‘জিজা, সূত্র: মাওসূ‘আতুল ই‘জাযুল ইলমী ফিল-কুরআনী ও ওয়াস-সুন্নাহ।]
৮
শরী‘আর দৃষ্টিকোণে পরিবেশের প্রতি অনাচার বলতে কী বুঝায়? এর প্রকারগুলো কী? এবং ইসলাম কীভাবে মানুষের আচরণকে শুদ্ধ ও পরিশীলিত করেছে?বিশৃঙ্খলা: বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে পরিবেশগত বিশৃঙ্খলা একটি ব্যাপক শব্দ। দূষণ, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং সব ধরনের সীমা লঙ্ঘনই এর আওতাভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে পরিবেশের ওপর অনাচার এমন একটি ব্যাপক ধারণা যা দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং সব ধরনের সীমা লঙ্ঘনকে অন্তর্ভুক্ত করে। অনাচারের মধ্যে রয়েছে শুষ্কতা তথা মরুকরণ। ইদানীং যা ভূপৃষ্ঠে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কর্তৃক ভূমির অনিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজের পরিধি হ্রাস পাচ্ছে। তদুপরি দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরগুলোতে শুষ্ক ভূমি ও মরুকরণ বৃদ্ধি পাবে।
ইসলাম পরিবেশ বা প্রকৃতিতে যে কোনো অনাচারকে হারাম ঘোষণা করেছে। যার মাধ্যমে মানুষ সামগ্রিকভাবে পরিবেশের নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করে তাও নিষিদ্ধ করেছে। চাই তা যুদ্ধক্ষেত্রে বিষাক্ত পদার্থ নিক্ষেপের মাধ্যমে হোক, যা মানুষের বসবাসের পৃথিবীর সৌন্দর্যের নিদর্শনগুলোকে বিনষ্ট করে। কারণ পরিবেশের শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়া সরাসরি সম্মিলিত মানবতার ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের হুমকি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠﴾ [ الشمس : ٩، ١٠ ]
“নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে কলুষিত করেছে।” [সূরা আশ-শামস, আয়াত: ০৯-১০]
নিচের বাণীটির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে তাঁরঅবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي ٱلۡأَرۡضِ لِيُفۡسِدَ فِيهَا وَيُهۡلِكَ ٱلۡحَرۡثَ وَٱلنَّسۡلَۚ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلۡفَسَادَ ٢٠٥ ﴾ [ البقرة : ٢٠٥ ]
“আর যখন সে ফিরে যায়, তখন যমীনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্লাহ ফাসাদ ভালোবাসেন না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٖ مَّشۡرَبَهُمۡۖ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ مِن رِّزۡقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٦٠ ﴾ [ البقرة : ٦٠ ]
“তোমরা আল্লাহর রিযিক থেকে আহার কর এবং পান কর আর তোমরা ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৬০]
বরং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রবণতার মৌলিক নিয়ম হলো আল্লাহর টেনে দেওয়া সীমা অতিক্রম করা, যা ধ্বংস ও বিনাশের দিকে নিয়ে যায়। বরং তা মানুষের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যদি না আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে না রাখেন। এ কথাই বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِى حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَعْلاَهَا ، فَكَانَ الَّذِى فِى أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَ فِى أَعْلاَهَا ، فَتَأَذَّوْا بِهِ ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِينَةِ ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِى ، وَلاَ بُدَّ لِى مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُ وَ أَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ»
“আল্লাহ তা‘আলার হুকুম পালনকারী ও তাঁর আল্লাহ নির্দেশ অমান্যকারীর দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তিদের ন্যায় যারা একটি বড় জাহাজে আরোহণ করেছে। লটারির মাধ্যমে জাহাজের তলা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতঃপর কিছু লোক জাহাজের উপর তলায় আর কিছু লোক জাহাজের নিচ তলায় অবস্থান নিয়েছে। নিচ তলার লোকদের যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন তারা ওপরে আসে এবং ওপর তলায় অবস্থানকারীদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে। তারা ভাবল যদি আমরা আমাদের (নিচের) অংশে ছিদ্র করে নেই (যাতে ওপরে যাওয়ার পরিবর্তে ছিদ্র থেকেই পানি নেওয়া যায়) এবং আমরা উপরের লোকদের কষ্ট না দেই (তবে কতই না উত্তম হয়)। এমতাবস্থায় যদি উপরস্থ লোকেরা নিচের লোকদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেয় এবং তাদেরকে তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে নিবৃত না করে (আর তারা ছিদ্র করে ফেলে) তবে সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা তাদের হাত ধরে ফেলে (যে, ছিদ্র করিতে দেব না) তবে তারা নিজেরাও বাঁচবে এবং অন্য মুসাফিরগণও বেঁচে যাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৮৬।]
অপব্যয় ও অপচয়: এ উভয় নিন্দনীয় প্রবণতাকে সত্য ধর্ম ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। আর এটিই বিশৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলাকারীদের শিক্ষার মূল অংশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿...... وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا ٢٦ إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا ٢٧﴾ [ الاسراء : ٢٦، ٢٧ ]
“.......আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৬-২৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا وَتَصَدَّقُوا فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ ، وَلاَ مَخِيلَةٍ» .
“তোমরা আহার করো, পান করো, পরিধান করো এবং সদাকা করো, অপচয় ও অহংকার করা ছাড়া”। [সহীহ বুখারী, পোশাক অধ্যায়।]
‘তালাওউছ’ বা দূষণের আভিধানিক অর্থ: লিসানুল আরব নামক (আরবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য) অভিধানে ‘লাওছ’ শব্দের অধীনে বলা হয়েছে, ‘তালাওউছ’ শব্দের অর্থ মলিন বা কদর্য হওয়া। যেমন বলা হয়, খড়ের দ্বারা মাটি এবং চুন দ্বারা বালি দূষিত হয়েছে। বলা হয়, সে তার কাপড়কে মাটি দ্বারা দূষিত করেছে। আরও বলা হয়, পানি দূষিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দূষিত করার অর্থ কদর্য করা। [ইবন মানযূর, লিসানুল আরব: ৩/৪০৮-৪০৯।]
‘তালাওউছ’ বা দূষণের পারিভাষিক অর্থ: মানুষ কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশ অভ্যন্তরে কোনো শক্তি বা দ্রব্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটানো, শেষাবধি যা ক্ষতিকর প্রভাব রাখে এবং মানুষের সুস্থতাকে হুমকির সম্মুখীন করে। যা জীবনীশক্তির উৎসসমূহ কিংবা পরিবেশের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটায়। পরিবেশের সঠিক উপভোগকে করে প্রভাবিত। এবং পরিবেশের অন্য বৈধ ব্যবহারগুলোকেও করে বাধাগ্রস্ত। [মুহাম্মদ মারছি, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১০৫।]
দূষণ বলতে আরও বুঝায়: পরিবেশের কিছু উপাদানকে স্তূপীকৃত করার প্রক্রিয়াকে যা এ পরিবেশ বা তৎসংশ্লিষ্ট নানা জীবন্ত উপাদানকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। যেমন, মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ। [ড. আবদুল কারীম আলী আবদু রাব্বিহী, ‘মুকাদ্দামা ফী ইকতিসাদিয়্যাতিল বিআ’, সিলসিলাতু আলামিন বিআ’।]
সাধারণভাবে দূষণ বলতে বুঝায়: পরিবেশ মণ্ডলের নান্দনিকতায় বিকৃতি ঘটানো। চাই তা বিশৃঙ্খলা, অপচয়, অপব্যয়, বিনাশ ও কলুষিত বা যা-ই করার মধ্য দিয়েই হোক না কেন।
তবে পরিবেশগত ভারসাম্য পরিভাষাটি যাকে অধিকাংশ বাস্তুবিদই মনে করেন একটি সমসাময়িক অর্থ, এর প্রচলন দুই বিশ্বযুদ্ধের পর। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই আহ্বান এ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নি, যা আমাদের মহান শরী‘আত প্রবর্তন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী:
﴿مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ ﴾ [ المائدة : ٣٢ ]
“যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩২]
এখন আপনারা যুক্তরাষ্ট্র নামক ওই দেশটির প্রতি দৃষ্টি দিন যারা নিজেদেরকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবী করে এবং বানোয়াট ও অসত্য তথ্যের মাধ্যমে তা প্রচারের চেষ্টা করে। হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের দিক থেকে এই দেশটিই কিনা সারা বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। ক্যাটরিনা নামক ঘূর্ণিঝড় আমেরিকার বর্ণবাদী মানসিকতার কুৎসিত চেহারা তুলে ধরেছে। এ ঝড়ের সময় কৃষ্ণাঙ্গদের জড়ো করা হয় স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে। পক্ষান্তরে শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ ও অক্ষত এলাকায়।
ঠিকই বলে কোথায় স্বর্গ আর কোথায় মর্ত্য। কোথায় আসমানী ধর্ম আর কোথায় শয়তানী ধর্ম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُورٗا يَمۡشِي بِهِۦ فِي ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ لَيۡسَ بِخَارِجٖ مِّنۡهَاۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلۡكَٰفِرِينَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٢٢﴾ [ الانعام : ١٢٢ ]
“যে ছিল মৃত, অতঃপর আমরা তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য নির্ধারণ করেছি আলো, যার মাধ্যমে সে মানুষের মধ্যে চলে, সে কি তার মতো যে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারে না? এভাবেই কাফিরদের জন্য তাদের কৃতকর্ম সুশোভিত করা হয়।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২২]
আর কবি কত চমৎকারই না বলেছেন,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ السَّيْفَ يَنْقُصُ قَدْرُهُ
إِذَا قِيلَ إِنَّ السَّيْفَ أَمْضَى مِنَ العَصَا
‘তুমি কি দেখ নি তরবারির মর্যাদা কমে যায়,
যদি বলা যে সে লাঠির চেয়েও বেশি কার্যকর।’
শুধু আয়াতই নয় একাধিক হাদীস রয়েছে শান্তি ও পরিবেশগত বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। এসব জানার পর পাশ্চাত্য ও সংগঠিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? ইসলাম কি সন্ত্রাসের ধর্ম নাকি শান্তির? আর জীবনের নিরাপত্তা এবং নূর ও হিদায়াতের দীনের প্রচার ভূপৃষ্ঠের সকল মানুষের মধ্যে নাকি দৃষ্টিশক্তিবান অন্ধদের মধ্যে?
রাবা‘ ইবন রাবী‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى غَزْوَةٍ فَرَأَى النَّاسَ مُجْتَمِعِينَ عَلَى شَىْءٍ فَبَعَثَ رَجُلاً فَقَالَ : « انْظُرْ عَلَى مَا اجْتَمَعَ هَؤُلاَءِ؟ » . فَجَاءَ فَقَالَ : عَلَى امْرَأَةٍ قَتِيلٍ فَقَالَ : « مَا كَانَتْ هَذِهِ لِتُقَاتِلَ » . قَالَ وَعَلَى الْمُقَدِّمَةِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَبَعَثَ رَجُلاً فَقَالَ : « قُلْ لِخَالِدٍ لاَ تَقْتُلَنَّ امْرَأَةً وَلاَ عَسِيفًا» .
“এক (তাবূক) যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। এ যুদ্ধে তিনি তাঁর সাহাবীদের কোনো জিনিসকে কেন্দ্র করে একত্রিত হতে দেখলেন। তিনি একজনকে পাঠালেন এবং বললেন, ‘এরা কিসের ওপর এভাবে একত্রিত হয়েছে?’ তিনি এসে বললেন, একজন নিহত মহিলার সামনে। তিনি বললেন, ‘এ তো হত্যাযোগ্য ছিল না।’ বর্ণনাকারী বলেন, অগ্রবর্তী দলে ছিলেন খালেদ ইবন অলীদ। তিনি তাঁর কাছে একজনকে পাঠালেন এবং বলে দিলেন, ‘তুমি খালেদকে বলবে সে যেন কোনো নারী বা শ্রমিককে হত্যা না করে।” [আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৬৬৯; বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা, হাদীস নং ১৮৫৭০।]
এদিকে মুতার যুদ্ধে রওনা হবার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন:
«وَلاَ تَقْتُلُوا امْرَأَةً وَلاَ صَغِيرًا ضَرَعًا وَلاَ كَبِيرًا فَانِيًا وَلاَ تَقْطَعُنَّ شَجَرَةً وَلاَ تَعْقِرُنَّ نَخْلاً وَلاَ تَهْدِمُوا بَيْتًا» .
“তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না, আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩১।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ إذَا بَعَثَ جُيُوشَهُ ، قَالَ : لاَ تَقْتُلُوا أَصْحَابَ الصَّوَامِعِ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো বাহিনী প্রেরণ করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।” [ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ, হাদীস নং ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়।]
আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও একই পথে হাঁটেন। তাঁর খিলাফতকালের প্রথম যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণকালে তিনি এর সেনাপতি উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর উদ্দেশে বলেন,
«يا أيها الناس، قفوا، أوصيكم بعشر فاحفظوها عني : لا تخونوا ولا تغلوا ولا تغدروا، ولا تمثلوا ولا تقتلوا طفلاً صغيراً، ولا شيخاً كبيراً ولا امرأة، ولا تعزقوا نخلاً ولا تحرقوه، ولا تقطعوا شجرة مثمرة، ولا تذبحوا شاة ولا بقرة، ولا بعيراً إلا لمآكله . وسوف تمرون بأقوام قد فرغوا أنفسهم في الصوامع فدعوهم وما فرغوا أنفسهم له» .
“হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) বিকৃত করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে।” [মুখতাসারু তারীখি দিমাশক: ১/৫২; তারীখুত তাবারী।]
এই অমূল্য উপদেশগুলোকে ইসলামের জিহাদের আদবের ক্ষেত্রে সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। এর সবগুলোই পরিবেশ সংরক্ষণের বিধানসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে। এমনকি অসুবিধাজনক অবস্থাতেও। ইয়াহূদী অস্তিত্ব রাষ্ট্র কি মুসলিমের দেশ জবর দখলে, তাদের সম্মান হরণে এ ধরনের নীতি ও আদর্শ উপস্থাপন করতে পারবে? তারা কি দুগ্ধপোষ্য শিশুকে হত্যা করে না? নুয়ে পড়া বৃদ্ধের জীবন হরণ করে না?
আর যুদ্ধক্ষেত্রেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে পরিবেশ ও এর উপাদানসমূহ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তাহলে তো স্বাভাবিক অবস্থায় এসব রক্ষায় তাঁর উদ্বুদ্ধকরণের কথা বলাই বাহুল্য। এ কারণেই সুন্নতে নববীকে দেখা যায় পরিবেশ রক্ষার পুনঃপৌনিক আহ্বানে ভরপুর।
সামান্য ধারণা দেবার জন্য কিছু বলা যাক। দেখুন আল-কুরআনুল কারীম কোনো ভেষজপ্রস্তুত বিদ্যা বা চিকিৎসা শাস্ত্রে গ্রন্থ নয়। কোনো প্রকৌশল বিদ্যা বা বিজ্ঞান গ্রন্থও নয়। তথাপি ইসলাম এসেছে দীন ও দুনিয়া তথা ইহ ও পরকাল উভয়টার জন্য। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَا مِنۡ غَآئِبَةٖ فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٍ ٧٥﴾ [ النمل : 75]
“আর আসমান ও যমীনে এমন কোন গোপন বিষয় নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৭৫]
ভূপৃষ্ঠে একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে এর অবতরণ। যে সমাজটি পরিবেশ, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সামরিক এমনকি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও হবে পূর্ণাঙ্গ।
বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে পরিবেশের ওপর অনাচার এমন একটি ব্যাপক ধারণা যা দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং সব ধরনের সীমা লঙ্ঘনকে অন্তর্ভুক্ত করে। অনাচারের মধ্যে রয়েছে শুষ্কতা তথা মরুকরণ। ইদানীং যা ভূপৃষ্ঠে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ কর্তৃক ভূমির অনিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে সবুজের পরিধি হ্রাস পাচ্ছে। তদুপরি দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরগুলোতে শুষ্ক ভূমি ও মরুকরণ বৃদ্ধি পাবে।
ইসলাম পরিবেশ বা প্রকৃতিতে যে কোনো অনাচারকে হারাম ঘোষণা করেছে। যার মাধ্যমে মানুষ সামগ্রিকভাবে পরিবেশের নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করে তাও নিষিদ্ধ করেছে। চাই তা যুদ্ধক্ষেত্রে বিষাক্ত পদার্থ নিক্ষেপের মাধ্যমে হোক, যা মানুষের বসবাসের পৃথিবীর সৌন্দর্যের নিদর্শনগুলোকে বিনষ্ট করে। কারণ পরিবেশের শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়া সরাসরি সম্মিলিত মানবতার ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের হুমকি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠﴾ [ الشمس : ٩، ١٠ ]
“নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তাকে কলুষিত করেছে।” [সূরা আশ-শামস, আয়াত: ০৯-১০]
নিচের বাণীটির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে তাঁরঅবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,
﴿وَإِذَا تَوَلَّىٰ سَعَىٰ فِي ٱلۡأَرۡضِ لِيُفۡسِدَ فِيهَا وَيُهۡلِكَ ٱلۡحَرۡثَ وَٱلنَّسۡلَۚ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلۡفَسَادَ ٢٠٥ ﴾ [ البقرة : ٢٠٥ ]
“আর যখন সে ফিরে যায়, তখন যমীনে প্রচেষ্টা চালায় তাতে ফাসাদ করতে এবং ধ্বংস করতে শস্য ও প্রাণী। আর আল্লাহ ফাসাদ ভালোবাসেন না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২০৫]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٖ مَّشۡرَبَهُمۡۖ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ مِن رِّزۡقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٦٠ ﴾ [ البقرة : ٦٠ ]
“তোমরা আল্লাহর রিযিক থেকে আহার কর এবং পান কর আর তোমরা ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৬০]
বরং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রবণতার মৌলিক নিয়ম হলো আল্লাহর টেনে দেওয়া সীমা অতিক্রম করা, যা ধ্বংস ও বিনাশের দিকে নিয়ে যায়। বরং তা মানুষের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যদি না আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে না রাখেন। এ কথাই বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِى حُدُودِ اللَّهِ وَالْوَاقِعِ فِيهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوا سَفِينَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِى أَعْلاَهَا ، فَكَانَ الَّذِى فِى أَسْفَلِهَا يَمُرُّونَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِينَ فِى أَعْلاَهَا ، فَتَأَذَّوْا بِهِ ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِينَةِ ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِى ، وَلاَ بُدَّ لِى مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوهُ أَهْلَكُوهُ وَ أَهْلَكُوا أَنْفُسَهُمْ»
“আল্লাহ তা‘আলার হুকুম পালনকারী ও তাঁর আল্লাহ নির্দেশ অমান্যকারীর দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তিদের ন্যায় যারা একটি বড় জাহাজে আরোহণ করেছে। লটারির মাধ্যমে জাহাজের তলা নির্ধারণ করা হয়েছে। অতঃপর কিছু লোক জাহাজের উপর তলায় আর কিছু লোক জাহাজের নিচ তলায় অবস্থান নিয়েছে। নিচ তলার লোকদের যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন তারা ওপরে আসে এবং ওপর তলায় অবস্থানকারীদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করে। তারা ভাবল যদি আমরা আমাদের (নিচের) অংশে ছিদ্র করে নেই (যাতে ওপরে যাওয়ার পরিবর্তে ছিদ্র থেকেই পানি নেওয়া যায়) এবং আমরা উপরের লোকদের কষ্ট না দেই (তবে কতই না উত্তম হয়)। এমতাবস্থায় যদি উপরস্থ লোকেরা নিচের লোকদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দেয় এবং তাদেরকে তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে নিবৃত না করে (আর তারা ছিদ্র করে ফেলে) তবে সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা তাদের হাত ধরে ফেলে (যে, ছিদ্র করিতে দেব না) তবে তারা নিজেরাও বাঁচবে এবং অন্য মুসাফিরগণও বেঁচে যাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৮৬।]
অপব্যয় ও অপচয়: এ উভয় নিন্দনীয় প্রবণতাকে সত্য ধর্ম ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। আর এটিই বিশৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলাকারীদের শিক্ষার মূল অংশ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿...... وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا ٢٦ إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا ٢٧﴾ [ الاسراء : ٢٦، ٢٧ ]
“.......আর কোনোভাবেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৬-২৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا وَتَصَدَّقُوا فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ ، وَلاَ مَخِيلَةٍ» .
“তোমরা আহার করো, পান করো, পরিধান করো এবং সদাকা করো, অপচয় ও অহংকার করা ছাড়া”। [সহীহ বুখারী, পোশাক অধ্যায়।]
‘তালাওউছ’ বা দূষণের আভিধানিক অর্থ: লিসানুল আরব নামক (আরবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য) অভিধানে ‘লাওছ’ শব্দের অধীনে বলা হয়েছে, ‘তালাওউছ’ শব্দের অর্থ মলিন বা কদর্য হওয়া। যেমন বলা হয়, খড়ের দ্বারা মাটি এবং চুন দ্বারা বালি দূষিত হয়েছে। বলা হয়, সে তার কাপড়কে মাটি দ্বারা দূষিত করেছে। আরও বলা হয়, পানি দূষিত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে দূষিত করার অর্থ কদর্য করা। [ইবন মানযূর, লিসানুল আরব: ৩/৪০৮-৪০৯।]
‘তালাওউছ’ বা দূষণের পারিভাষিক অর্থ: মানুষ কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবেশ অভ্যন্তরে কোনো শক্তি বা দ্রব্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটানো, শেষাবধি যা ক্ষতিকর প্রভাব রাখে এবং মানুষের সুস্থতাকে হুমকির সম্মুখীন করে। যা জীবনীশক্তির উৎসসমূহ কিংবা পরিবেশের শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটায়। পরিবেশের সঠিক উপভোগকে করে প্রভাবিত। এবং পরিবেশের অন্য বৈধ ব্যবহারগুলোকেও করে বাধাগ্রস্ত। [মুহাম্মদ মারছি, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ১০৫।]
দূষণ বলতে আরও বুঝায়: পরিবেশের কিছু উপাদানকে স্তূপীকৃত করার প্রক্রিয়াকে যা এ পরিবেশ বা তৎসংশ্লিষ্ট নানা জীবন্ত উপাদানকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। যেমন, মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ। [ড. আবদুল কারীম আলী আবদু রাব্বিহী, ‘মুকাদ্দামা ফী ইকতিসাদিয়্যাতিল বিআ’, সিলসিলাতু আলামিন বিআ’।]
সাধারণভাবে দূষণ বলতে বুঝায়: পরিবেশ মণ্ডলের নান্দনিকতায় বিকৃতি ঘটানো। চাই তা বিশৃঙ্খলা, অপচয়, অপব্যয়, বিনাশ ও কলুষিত বা যা-ই করার মধ্য দিয়েই হোক না কেন।
তবে পরিবেশগত ভারসাম্য পরিভাষাটি যাকে অধিকাংশ বাস্তুবিদই মনে করেন একটি সমসাময়িক অর্থ, এর প্রচলন দুই বিশ্বযুদ্ধের পর। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই আহ্বান এ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে নি, যা আমাদের মহান শরী‘আত প্রবর্তন করেছে। যার মধ্যে রয়েছে নিম্নোক্ত আল্লাহর বাণী:
﴿مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ ﴾ [ المائدة : ٣٢ ]
“যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩২]
এখন আপনারা যুক্তরাষ্ট্র নামক ওই দেশটির প্রতি দৃষ্টি দিন যারা নিজেদেরকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবী করে এবং বানোয়াট ও অসত্য তথ্যের মাধ্যমে তা প্রচারের চেষ্টা করে। হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের দিক থেকে এই দেশটিই কিনা সারা বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। ক্যাটরিনা নামক ঘূর্ণিঝড় আমেরিকার বর্ণবাদী মানসিকতার কুৎসিত চেহারা তুলে ধরেছে। এ ঝড়ের সময় কৃষ্ণাঙ্গদের জড়ো করা হয় স্থানীয় একটি স্টেডিয়ামে। পক্ষান্তরে শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ ও অক্ষত এলাকায়।
ঠিকই বলে কোথায় স্বর্গ আর কোথায় মর্ত্য। কোথায় আসমানী ধর্ম আর কোথায় শয়তানী ধর্ম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَوَ مَن كَانَ مَيۡتٗا فَأَحۡيَيۡنَٰهُ وَجَعَلۡنَا لَهُۥ نُورٗا يَمۡشِي بِهِۦ فِي ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ لَيۡسَ بِخَارِجٖ مِّنۡهَاۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلۡكَٰفِرِينَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٢٢﴾ [ الانعام : ١٢٢ ]
“যে ছিল মৃত, অতঃপর আমরা তাকে জীবন দিয়েছি এবং তার জন্য নির্ধারণ করেছি আলো, যার মাধ্যমে সে মানুষের মধ্যে চলে, সে কি তার মতো যে ঘোর অন্ধকারে রয়েছে, যেখান থেকে সে বের হতে পারে না? এভাবেই কাফিরদের জন্য তাদের কৃতকর্ম সুশোভিত করা হয়।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২২]
আর কবি কত চমৎকারই না বলেছেন,
أَلَمْ تَرَ أَنَّ السَّيْفَ يَنْقُصُ قَدْرُهُ
إِذَا قِيلَ إِنَّ السَّيْفَ أَمْضَى مِنَ العَصَا
‘তুমি কি দেখ নি তরবারির মর্যাদা কমে যায়,
যদি বলা যে সে লাঠির চেয়েও বেশি কার্যকর।’
শুধু আয়াতই নয় একাধিক হাদীস রয়েছে শান্তি ও পরিবেশগত বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। এসব জানার পর পাশ্চাত্য ও সংগঠিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? ইসলাম কি সন্ত্রাসের ধর্ম নাকি শান্তির? আর জীবনের নিরাপত্তা এবং নূর ও হিদায়াতের দীনের প্রচার ভূপৃষ্ঠের সকল মানুষের মধ্যে নাকি দৃষ্টিশক্তিবান অন্ধদের মধ্যে?
রাবা‘ ইবন রাবী‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى غَزْوَةٍ فَرَأَى النَّاسَ مُجْتَمِعِينَ عَلَى شَىْءٍ فَبَعَثَ رَجُلاً فَقَالَ : « انْظُرْ عَلَى مَا اجْتَمَعَ هَؤُلاَءِ؟ » . فَجَاءَ فَقَالَ : عَلَى امْرَأَةٍ قَتِيلٍ فَقَالَ : « مَا كَانَتْ هَذِهِ لِتُقَاتِلَ » . قَالَ وَعَلَى الْمُقَدِّمَةِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَبَعَثَ رَجُلاً فَقَالَ : « قُلْ لِخَالِدٍ لاَ تَقْتُلَنَّ امْرَأَةً وَلاَ عَسِيفًا» .
“এক (তাবূক) যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। এ যুদ্ধে তিনি তাঁর সাহাবীদের কোনো জিনিসকে কেন্দ্র করে একত্রিত হতে দেখলেন। তিনি একজনকে পাঠালেন এবং বললেন, ‘এরা কিসের ওপর এভাবে একত্রিত হয়েছে?’ তিনি এসে বললেন, একজন নিহত মহিলার সামনে। তিনি বললেন, ‘এ তো হত্যাযোগ্য ছিল না।’ বর্ণনাকারী বলেন, অগ্রবর্তী দলে ছিলেন খালেদ ইবন অলীদ। তিনি তাঁর কাছে একজনকে পাঠালেন এবং বলে দিলেন, ‘তুমি খালেদকে বলবে সে যেন কোনো নারী বা শ্রমিককে হত্যা না করে।” [আবূ দাউদ, আস-সুনান, হাদীস নং ২৬৬৯; বাইহাকী, আস-সুনান আল-কুবরা, হাদীস নং ১৮৫৭০।]
এদিকে মুতার যুদ্ধে রওনা হবার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন:
«وَلاَ تَقْتُلُوا امْرَأَةً وَلاَ صَغِيرًا ضَرَعًا وَلاَ كَبِيرًا فَانِيًا وَلاَ تَقْطَعُنَّ شَجَرَةً وَلاَ تَعْقِرُنَّ نَخْلاً وَلاَ تَهْدِمُوا بَيْتًا» .
“তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না, আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৩১।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ إذَا بَعَثَ جُيُوشَهُ ، قَالَ : لاَ تَقْتُلُوا أَصْحَابَ الصَّوَامِعِ» .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো বাহিনী প্রেরণ করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।” [ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ, হাদীস নং ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়।]
আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও একই পথে হাঁটেন। তাঁর খিলাফতকালের প্রথম যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণকালে তিনি এর সেনাপতি উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর উদ্দেশে বলেন,
«يا أيها الناس، قفوا، أوصيكم بعشر فاحفظوها عني : لا تخونوا ولا تغلوا ولا تغدروا، ولا تمثلوا ولا تقتلوا طفلاً صغيراً، ولا شيخاً كبيراً ولا امرأة، ولا تعزقوا نخلاً ولا تحرقوه، ولا تقطعوا شجرة مثمرة، ولا تذبحوا شاة ولا بقرة، ولا بعيراً إلا لمآكله . وسوف تمرون بأقوام قد فرغوا أنفسهم في الصوامع فدعوهم وما فرغوا أنفسهم له» .
“হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) বিকৃত করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে।” [মুখতাসারু তারীখি দিমাশক: ১/৫২; তারীখুত তাবারী।]
এই অমূল্য উপদেশগুলোকে ইসলামের জিহাদের আদবের ক্ষেত্রে সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। এর সবগুলোই পরিবেশ সংরক্ষণের বিধানসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে। এমনকি অসুবিধাজনক অবস্থাতেও। ইয়াহূদী অস্তিত্ব রাষ্ট্র কি মুসলিমের দেশ জবর দখলে, তাদের সম্মান হরণে এ ধরনের নীতি ও আদর্শ উপস্থাপন করতে পারবে? তারা কি দুগ্ধপোষ্য শিশুকে হত্যা করে না? নুয়ে পড়া বৃদ্ধের জীবন হরণ করে না?
আর যুদ্ধক্ষেত্রেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে পরিবেশ ও এর উপাদানসমূহ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেছেন তাহলে তো স্বাভাবিক অবস্থায় এসব রক্ষায় তাঁর উদ্বুদ্ধকরণের কথা বলাই বাহুল্য। এ কারণেই সুন্নতে নববীকে দেখা যায় পরিবেশ রক্ষার পুনঃপৌনিক আহ্বানে ভরপুর।
সামান্য ধারণা দেবার জন্য কিছু বলা যাক। দেখুন আল-কুরআনুল কারীম কোনো ভেষজপ্রস্তুত বিদ্যা বা চিকিৎসা শাস্ত্রে গ্রন্থ নয়। কোনো প্রকৌশল বিদ্যা বা বিজ্ঞান গ্রন্থও নয়। তথাপি ইসলাম এসেছে দীন ও দুনিয়া তথা ইহ ও পরকাল উভয়টার জন্য। আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَا مِنۡ غَآئِبَةٖ فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٍ ٧٥﴾ [ النمل : 75]
“আর আসমান ও যমীনে এমন কোন গোপন বিষয় নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৭৫]
ভূপৃষ্ঠে একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে এর অবতরণ। যে সমাজটি পরিবেশ, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সামরিক এমনকি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও হবে পূর্ণাঙ্গ।
এ সম্বন্ধে কুরআন ও সুন্নাহতে অসংখ্য বক্তব্য রয়েছে। যা স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতন হতে বলে। শুরুতেই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে সুস্থতা চেয়ে দু‘আর। তারপর সুস্থতা আনয়ন এবং শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখার সকল উপায় ও উপকরণ অর্জনের তাকিদ দেওয়া হয়েছে। তারপর অসুস্থ হলে রোগের ব্যাপারে ইতিবাচক মানসিকতা পোষণের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় সজাগ থাকতে বলেছে। যাতে অন্যদের মাঝে এ রোগ সংক্রমিত না হয়। একদিকে ব্যক্তি পর্যায়ে ইসলাম মহামারির স্থান থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলেছে। অন্যদিকে সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থে রোগী নিজ শহরে থেকে আত্মোৎসর্গকারীকে আল্লাহর রাস্তায় ‘শাহাদত’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কারণ, মহামারির সংক্রমণ থেকে মুসলিম সমাজকে সুরক্ষা করা ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে বড়।
নিশ্চিত করে বলা যায় চিকিৎসা শাস্ত্রের পূর্ণতার প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর রাখেন মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُونُ فَيَمْكُثُ فِى بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إِلاَّ مَا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ ، إِلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيدٍ»
“যে ব্যক্তি মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ধৈর্য ধারণ করবে এবং আরোগ্য লাভের প্রত্যাশায় আপন শহরেই অবস্থান করবে এ কথা জেনে যে তার তো কেবল তা-ই হবে আল্লাহ তার জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন, তবে সে শহীদের নেকী লাভ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৭৪; মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৫২১২।]
উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَدْخُلُوهَا ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا» .
“যখন তোমরা কোনো এলাকায় মহামারির কথা শোনো, তখন তোমরা তাতে প্রবেশ করো না। আর তোমার অবস্থান এলাকায় যদি মহামারি দেখা দেয় তবে তা থেকে বের হয়ো না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১১০।]
আর বাস্তবতার ময়দানে চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রস্তর যিনি প্রথম প্রয়োগ ঘটান তিনি হলেন খলীফায়ে রাশেদ উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু।
এছাড়াও আছে আন্তর্জাতিক স্তরে সাদা বিষ তথা মাদক এবং লাল বিষ তথা এইডস বিস্তার সমস্যার আকার বৃদ্ধি। কারণ নানা ধরনের মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সার্বিকভাবে যার ফলে চুরি, ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের ফাঁদে পড়ার আগেই তাই পবিত্র কুরআন সতর্ক করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ وَأَحۡسِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٩٥ ﴾ [ البقرة : ١٩٥ ]
“আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৫]
একই কথা প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঘুম হারাম করা সমস্যা ব্যভিচারের ক্ষেত্রে। আর আল্লাহর এই বাণীর চেয়ে সুন্দরভাবে এ ব্যাপারে আর কেউ সতর্ক করে নি। আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [ الاسراء : ٣٢ ]
“আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২]
একই ধরনের সতর্কীকরণ লক্ষণীয় নিচের হাদীসে। আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا» .
“যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্য ব্যভিচারের আত্মপ্রকাশ ঘটবে, তখন তাদের মাঝে প্লেগ এবং ক্লেশ ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে দেখা যায় নি।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০১৯; তাবরানী, হাদীস নং ৪৬৭১।]
আর মানুষের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ইসলাম স্নায়ুবিক চাপ বাড়ার রাস্তা বন্ধের শিক্ষা দান করেছে। আর তা আল্লাহ এবং তাঁর ভাগ্যলিপির ওপর ঈমান আনয়ন, রোগ-শোক ও বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ, হতাশা ও আত্মহত্যা হারামকরণ, জীবনের গ্লানির বোঝা লাঘবে মানুষকে সহযোগিতা ও দয়ার নির্দেশ দান এবং সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টির সব উৎস যেমন জুয়া, সুদ, ফটকাবাজী এবং নিন্দনীয় বিনোদন ও শোরগোল নিষিদ্ধের মাধ্যমে।
ইসলাম একইভাবে ইসলামী পরিবেশের সুস্থতা ও তার পবিত্রতা রক্ষায় নানা আদেশ দিয়েছে। যেমন, শরীর, হাত, দাঁত, নখ ও চুলের পবিত্রতা, পোশাক এবং খাদ্য ও পানীয়ের পবিত্রতা, সড়ক, বাড়ি ও নগরের পরিচ্ছন্নতা এবং নদী ও টিউবওয়েল ইত্যাদির পানির বিশুদ্ধতা।
‘জর্জ বার্নার্ড শ’ তার ‘চিকিৎসকের বিস্ময়’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘ব্রিটেন যখন মুসলিম বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপন শুরু করল, তখন তারা আইল্যান্ডের মানুষদের ইসলাম ত্যাগে বাধ্য করল। তারা এ উদ্দেশ্যে সফল হতে না হতেই তাদের মাঝে এই (ইসলাম) ধর্মের পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা ত্যাগ হেতু মারাত্মক মহামারি দেখা দিতে শুরু করল। যা তাদের অনেকের মৃত্যু ডেকে আনল।
সাধারণত ইসলামই সেই শিক্ষাসমূহের আবির্ভাব ঘটিয়েছে যাকে ‘প্রতিষেধক ঔষধ’ বলা হয়। হ্যাঁ রোগের পঙ্কে জড়ানো এবং তাতে পচে যাবার আগে বিভিন্ন ধরণের রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইসলাম।
নিশ্চিত করে বলা যায় চিকিৎসা শাস্ত্রের পূর্ণতার প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর রাখেন মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মা আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُونُ فَيَمْكُثُ فِى بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إِلاَّ مَا كَتَبَ اللَّهُ لَهُ ، إِلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيدٍ»
“যে ব্যক্তি মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে ধৈর্য ধারণ করবে এবং আরোগ্য লাভের প্রত্যাশায় আপন শহরেই অবস্থান করবে এ কথা জেনে যে তার তো কেবল তা-ই হবে আল্লাহ তার জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন, তবে সে শহীদের নেকী লাভ করবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৭৪; মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৫২১২।]
উসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَدْخُلُوهَا ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا» .
“যখন তোমরা কোনো এলাকায় মহামারির কথা শোনো, তখন তোমরা তাতে প্রবেশ করো না। আর তোমার অবস্থান এলাকায় যদি মহামারি দেখা দেয় তবে তা থেকে বের হয়ো না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১১০।]
আর বাস্তবতার ময়দানে চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রস্তর যিনি প্রথম প্রয়োগ ঘটান তিনি হলেন খলীফায়ে রাশেদ উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু।
এছাড়াও আছে আন্তর্জাতিক স্তরে সাদা বিষ তথা মাদক এবং লাল বিষ তথা এইডস বিস্তার সমস্যার আকার বৃদ্ধি। কারণ নানা ধরনের মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সার্বিকভাবে যার ফলে চুরি, ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের ফাঁদে পড়ার আগেই তাই পবিত্র কুরআন সতর্ক করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ وَأَحۡسِنُوٓاْۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٩٥ ﴾ [ البقرة : ١٩٥ ]
“আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৯৫]
একই কথা প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঘুম হারাম করা সমস্যা ব্যভিচারের ক্ষেত্রে। আর আল্লাহর এই বাণীর চেয়ে সুন্দরভাবে এ ব্যাপারে আর কেউ সতর্ক করে নি। আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢﴾ [ الاسراء : ٣٢ ]
“আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২]
একই ধরনের সতর্কীকরণ লক্ষণীয় নিচের হাদীসে। আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ، حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا، إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ، وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا» .
“যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্য ব্যভিচারের আত্মপ্রকাশ ঘটবে, তখন তাদের মাঝে প্লেগ এবং ক্লেশ ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে দেখা যায় নি।” [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪০১৯; তাবরানী, হাদীস নং ৪৬৭১।]
আর মানুষের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাস্থ্য রক্ষায় ইসলাম স্নায়ুবিক চাপ বাড়ার রাস্তা বন্ধের শিক্ষা দান করেছে। আর তা আল্লাহ এবং তাঁর ভাগ্যলিপির ওপর ঈমান আনয়ন, রোগ-শোক ও বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ, হতাশা ও আত্মহত্যা হারামকরণ, জীবনের গ্লানির বোঝা লাঘবে মানুষকে সহযোগিতা ও দয়ার নির্দেশ দান এবং সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টির সব উৎস যেমন জুয়া, সুদ, ফটকাবাজী এবং নিন্দনীয় বিনোদন ও শোরগোল নিষিদ্ধের মাধ্যমে।
ইসলাম একইভাবে ইসলামী পরিবেশের সুস্থতা ও তার পবিত্রতা রক্ষায় নানা আদেশ দিয়েছে। যেমন, শরীর, হাত, দাঁত, নখ ও চুলের পবিত্রতা, পোশাক এবং খাদ্য ও পানীয়ের পবিত্রতা, সড়ক, বাড়ি ও নগরের পরিচ্ছন্নতা এবং নদী ও টিউবওয়েল ইত্যাদির পানির বিশুদ্ধতা।
‘জর্জ বার্নার্ড শ’ তার ‘চিকিৎসকের বিস্ময়’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘ব্রিটেন যখন মুসলিম বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপন শুরু করল, তখন তারা আইল্যান্ডের মানুষদের ইসলাম ত্যাগে বাধ্য করল। তারা এ উদ্দেশ্যে সফল হতে না হতেই তাদের মাঝে এই (ইসলাম) ধর্মের পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা ত্যাগ হেতু মারাত্মক মহামারি দেখা দিতে শুরু করল। যা তাদের অনেকের মৃত্যু ডেকে আনল।
সাধারণত ইসলামই সেই শিক্ষাসমূহের আবির্ভাব ঘটিয়েছে যাকে ‘প্রতিষেধক ঔষধ’ বলা হয়। হ্যাঁ রোগের পঙ্কে জড়ানো এবং তাতে পচে যাবার আগে বিভিন্ন ধরণের রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইসলাম।
ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তদীয় ‘তিব্বে নববী’ বা ‘নববী মেডিসিন’ গ্রন্থে একটি অধ্যায়ই রচনা করেছেন মহামারি ও সেসব রোগ সম্পর্কে বায়ু দূষণের মাধ্যমে যার বিস্তার বা সংক্রমণ ঘটে। আর সেসব সংগ্রহ করেছেন তিনি ওহী মারফত প্রাপ্ত (কুরআন ও হাদীসের) বাণী থেকে। পরিবেশ সম্মেলন বসার শত বছর আগে তিনি তা রচনা করেছেন। তিনি রহ. বলেন, ‘উদ্দেশ্য হলো: মহামারীর সক্রিয় কারণ ও পূর্ণ হেতুগুলোর অন্যতম বায়ু দূষণ। আর বায়ুর উপাদান দূষণ মহামারির প্রকোপকে অনিবার্য করে। এদিকে বায়ু দূষণ হয় খারাপ অবস্থা প্রবল হবার প্রভাবে তার কোনো উপাদান মন্দে রূপান্তরিত হলে। যেমন, পচন, দুর্গন্ধ ও বিষাক্ত হওয়া। চাই তা বছরের যে কোনো সময় হোক না কেন। যদিও প্রায় ক্ষেত্রে এর উদ্ভব ঘটে গ্রীষ্ম ও বসন্তের শেষভাগে।’ [ইবনুল কাইয়্যেম: ‘আত-তিব্ব আন-নাববী’, দারু মাকতাবা হিলাল, বৈরুত, পৃষ্ঠা: ১০৮।]
প্রশ্ন হলো তাঁকে এ জ্ঞান কে শেখালো? এটা নিশ্চয় আল্লাহ শিখিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহই তিনি যিনি তাঁকে সাহায্য করেছেন শরী‘আর ইলমসমূহে গভীরতা অর্জনে এবং সেই মৌলিক নীতিমালা ও মূলনীতি উদ্ভাবনে যা তখনো ধ্বংস হবে না যখন দুনিয়ার লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে ইবন খালদূন পরিবেশ দূষণের কারণ হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন অধিক মৃত্যু ও মড়ককে। পাশাপাশি তিনি তার ‘আল-মুকাদ্দিমা’ নামক অমর গ্রন্থে এর অনেকগুলো কারণ নির্দেশ করেছেন। সেসবের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি। তিনিও তাতে উল্লেখ করেছেন যে এর বেশিরভাগের মূলে রয়েছে বায়ু দূষণ। যার কারণ এর বয়োবৃদ্ধি এবং আর্দ্রতা ও বিকৃতি। এ জন্য তিনি বলেন, মানুষের বিচক্ষণতার অংশ হলো বাড়ি-ঘরে মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা। যাতে বাতাস তরঙ্গায়িত হতে পারে। যাতে করে বাতাসে বিদ্যমান বিকৃতি ও পচন থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকর উপাদানগুলো উড়ে যেতে পারে। [ইবন খালদূন, ‘আল-মুকাদ্দিমা’: ২/৭৭১-৭৭২।]
সম্প্রতি বিশ্বের শ্বাস-বিশ্বাস ‘গ্রিনহাউজ এফেক্ট’কে তীব্র করে তুলেছে। গাড়ি-ঘোড়া ও শিল্পকারখানা থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে আটকে যাচ্ছে। এতে করে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জল, স্থল ও অন্তরীক্ষ দূষিত হয়ে পড়ছে। বাতাসে কার্বনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিবেশে এই দূষণের জন্য মানুষই মূলত দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন। মানুষই এর প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ব্যাহত করেছে।
বায়ু দূষণের প্রতিই ইঙ্গিত করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমূল্য বাণী। আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِىَ زَانِيَةٌ» .
“যে কোনো মহিলা সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করে। অতঃপর মানুষের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার সুবাস পায়, সে একজন ব্যভিচারিণী।” [নাসাঈ, হাদীস নং ৫১৪৩। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
সত্যিই (নারীর সুগন্ধি ব্যবহার) এমন এক দূষণ যা খাঁটি মুত্তাকীদের ঈমানের স্বচ্ছতাকে কর্দমাক্ত করে এবং মনুষ্যরূপী নেকড়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ঐ বস্তুগুলোও দৈনন্দিন জীবনের বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে আলিমগণ যেসব হারাম হবার বিষয়ে একমত। যেমন ধূমপান প্রবণতা। অনেক মানুষকে দেখবেন পাবলিক স্পেসগুলোয় দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট জ্বালিয়ে মজা নিচ্ছেন। অথচ তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট বড় উপস্থিত সবাই। কারণ, নিয়মিত ধূমপানের চেয়ে প্যাসিভ স্মোকিং মানুষের জন্য আরও ক্ষতিকর।
অপরদিকে সুগন্ধির প্রতি দুর্বলতা, সুগন্ধি ছড়ানো এবং অন্যকে তা উপহার প্রদান পরিবেশের সৌন্দর্যায়নে ভূমিকা রাখে। মুসলিমের ঘ্রাণেন্দ্রিয় যেমন নান্দনিক আচরণ ও সুরভিত কাজে অভ্যস্ত তেমনি তা একইসঙ্গে দূষিত পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে। চাই যেখানেই দূষণ হোক না কেন। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عُرِضَ عَلَيْهِ رَيْحَانٌ فَلاَ يَرُدُّهُ فَإِنَّهُ خَفِيفُ الْمَحْمِلِ طَيِّبُ الرِّيحِ» .
“যার সামনে সুগন্ধি উপস্থাপন করা হয় সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কারণ, তা বহনে হালকা এবং বাতাসকে সুবাসিত করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৩৫।]
প্রশ্ন হলো তাঁকে এ জ্ঞান কে শেখালো? এটা নিশ্চয় আল্লাহ শিখিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহই তিনি যিনি তাঁকে সাহায্য করেছেন শরী‘আর ইলমসমূহে গভীরতা অর্জনে এবং সেই মৌলিক নীতিমালা ও মূলনীতি উদ্ভাবনে যা তখনো ধ্বংস হবে না যখন দুনিয়ার লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে ইবন খালদূন পরিবেশ দূষণের কারণ হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন অধিক মৃত্যু ও মড়ককে। পাশাপাশি তিনি তার ‘আল-মুকাদ্দিমা’ নামক অমর গ্রন্থে এর অনেকগুলো কারণ নির্দেশ করেছেন। সেসবের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি। তিনিও তাতে উল্লেখ করেছেন যে এর বেশিরভাগের মূলে রয়েছে বায়ু দূষণ। যার কারণ এর বয়োবৃদ্ধি এবং আর্দ্রতা ও বিকৃতি। এ জন্য তিনি বলেন, মানুষের বিচক্ষণতার অংশ হলো বাড়ি-ঘরে মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা। যাতে বাতাস তরঙ্গায়িত হতে পারে। যাতে করে বাতাসে বিদ্যমান বিকৃতি ও পচন থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকর উপাদানগুলো উড়ে যেতে পারে। [ইবন খালদূন, ‘আল-মুকাদ্দিমা’: ২/৭৭১-৭৭২।]
সম্প্রতি বিশ্বের শ্বাস-বিশ্বাস ‘গ্রিনহাউজ এফেক্ট’কে তীব্র করে তুলেছে। গাড়ি-ঘোড়া ও শিল্পকারখানা থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে আটকে যাচ্ছে। এতে করে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জল, স্থল ও অন্তরীক্ষ দূষিত হয়ে পড়ছে। বাতাসে কার্বনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিবেশে এই দূষণের জন্য মানুষই মূলত দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন। মানুষই এর প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ব্যাহত করেছে।
বায়ু দূষণের প্রতিই ইঙ্গিত করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমূল্য বাণী। আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِىَ زَانِيَةٌ» .
“যে কোনো মহিলা সুগন্ধি বা পারফিউম ব্যবহার করে। অতঃপর মানুষের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার সুবাস পায়, সে একজন ব্যভিচারিণী।” [নাসাঈ, হাদীস নং ৫১৪৩। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]
সত্যিই (নারীর সুগন্ধি ব্যবহার) এমন এক দূষণ যা খাঁটি মুত্তাকীদের ঈমানের স্বচ্ছতাকে কর্দমাক্ত করে এবং মনুষ্যরূপী নেকড়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ঐ বস্তুগুলোও দৈনন্দিন জীবনের বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে আলিমগণ যেসব হারাম হবার বিষয়ে একমত। যেমন ধূমপান প্রবণতা। অনেক মানুষকে দেখবেন পাবলিক স্পেসগুলোয় দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নির্বিকার ভঙ্গিতে সিগারেট জ্বালিয়ে মজা নিচ্ছেন। অথচ তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট বড় উপস্থিত সবাই। কারণ, নিয়মিত ধূমপানের চেয়ে প্যাসিভ স্মোকিং মানুষের জন্য আরও ক্ষতিকর।
অপরদিকে সুগন্ধির প্রতি দুর্বলতা, সুগন্ধি ছড়ানো এবং অন্যকে তা উপহার প্রদান পরিবেশের সৌন্দর্যায়নে ভূমিকা রাখে। মুসলিমের ঘ্রাণেন্দ্রিয় যেমন নান্দনিক আচরণ ও সুরভিত কাজে অভ্যস্ত তেমনি তা একইসঙ্গে দূষিত পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করে। চাই যেখানেই দূষণ হোক না কেন। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ عُرِضَ عَلَيْهِ رَيْحَانٌ فَلاَ يَرُدُّهُ فَإِنَّهُ خَفِيفُ الْمَحْمِلِ طَيِّبُ الرِّيحِ» .
“যার সামনে সুগন্ধি উপস্থাপন করা হয় সে যেন তা প্রত্যাখ্যান না করে। কারণ, তা বহনে হালকা এবং বাতাসকে সুবাসিত করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৩৫।]
শরী‘আর যে নীতিমালার ভিত্তি স্থাপন করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার একটি হলো ‘ক্ষতি করাও নাই, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াও নাই’। তেমনি তিনি পথ থেকে ময়লা, আবর্জনা, ছাল-বাকল পরিষ্কার করা এবং পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলাও নেকী ও ছাওয়াবের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ فِى الطُّرُقَاتِ » . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَنَا بُدٌّ مِنْ مَجَالِسِنَا نَتَحَدَّثُ فِيهَا . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- «فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ» . قَالُوا وَمَا حَقُّهُ قَالَ «غَضُّ الْبَصَرِ وَكَفُّ الأَذَى وَرَدُّ السَّلاَمِ وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىُ عَنِ الْمُنْكَرِ» .
“সাবধান, তোমরা রাস্তায় বসবে না। সাহাবীগণ বললেন, রাস্তায় না বসে তো আমাদের উপায় নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যদি বসা ছাড়া রাস্তায় থাক তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তার হক কী? তিনি বললেন. ‘দৃষ্টি অবনত রাখা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, সালামের উত্তর দেওয়া এবং সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৮৫।]
আর ‘কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা’ এমন এক ব্যাপক নির্দেশ রাস্তা ব্যবহারকারী প্রতিটি মানুষের জন্য কষ্টদায়ক সব কিছু যার অন্তর্ভুক্ত। অন্য হাদীসে রয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ» .
‘ঈমানের তেহাত্তর বা তেষট্টিটি শাখা রয়েছে। ওসবের মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলা এবং সর্বনিম্নটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬২।]
«إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ فِى الطُّرُقَاتِ » . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا لَنَا بُدٌّ مِنْ مَجَالِسِنَا نَتَحَدَّثُ فِيهَا . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- «فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجْلِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهُ» . قَالُوا وَمَا حَقُّهُ قَالَ «غَضُّ الْبَصَرِ وَكَفُّ الأَذَى وَرَدُّ السَّلاَمِ وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىُ عَنِ الْمُنْكَرِ» .
“সাবধান, তোমরা রাস্তায় বসবে না। সাহাবীগণ বললেন, রাস্তায় না বসে তো আমাদের উপায় নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা যদি বসা ছাড়া রাস্তায় থাক তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তার হক কী? তিনি বললেন. ‘দৃষ্টি অবনত রাখা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, সালামের উত্তর দেওয়া এবং সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২২৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৮৫।]
আর ‘কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা’ এমন এক ব্যাপক নির্দেশ রাস্তা ব্যবহারকারী প্রতিটি মানুষের জন্য কষ্টদায়ক সব কিছু যার অন্তর্ভুক্ত। অন্য হাদীসে রয়েছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ» .
‘ঈমানের তেহাত্তর বা তেষট্টিটি শাখা রয়েছে। ওসবের মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলা এবং সর্বনিম্নটি হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬২।]
এর দ্বারা উদ্দেশ্য অপ্রিয় শব্দ যা মানুষের কষ্ট বা উদ্বেগের কারণ হয়। আর আওয়াজ বা শব্দ মানুষের অপ্রিয় হবার কারণ তার তীব্রতা ও উচ্চতা। শুনতে অভ্যস্ত এমন স্বাভাবিক ও চির-চেনা আওয়াজ না হলেই মানুষ এমন বোধ করে। [যাইনুল আবিদীন আল-‘আলওয়ানী: ‘আল-ইসলাম ওয়াল-বিআ’, মাজাল্লাতুত-তুরাছ আল-আরাবী, সংখ্যা: ১০১, ষষ্ঠদশ বর্ষ, ২০০৬।]
এটা কারো অজানা নয় যে চিৎকার ও শোরগোল চিন্তাকে বিক্ষিপ্ত করে। মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়। নিশ্চিন্ত, শান্তভাব ও সুচিন্তার নেয়ামতকে ধ্বংস করে। এবং মানুষের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজে বাধার সৃষ্টি করে। অতএব, শান্ত অবস্থা প্রিয়তা ইসলামী সভ্যতার একটি লক্ষণ এবং অন্যতম মূল্যবোধ। এ এমন মূল্যবোধ আমাদের সত্য ধর্ম যার প্রতি এবং যাতে আহ্বানের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। পবিত্র কুরআনে ও সুন্নতে নববীর অনেক স্থানে আমরা যার প্রমাণ দেখতে পাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱقۡصِدۡ فِي مَشۡيِكَ وَٱغۡضُضۡ مِن صَوۡتِكَۚ إِنَّ أَنكَرَ ٱلۡأَصۡوَٰتِ لَصَوۡتُ ٱلۡحَمِيرِ ١٩﴾ [ لقمان : ١٩ ]
‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নিচু কর। নিশ্চয় সব চাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৯]
একইভাবে মানুষের জন্য এমনভাবে গৃহ নির্মাণ জায়েয নয় যা অন্যের বসবাসের জন্য হুমকি হতে পারে। তেমনি টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদির অতিমাত্রায় আওয়াজ করাও বৈধ নয়। কারণ তা প্রতিবেশীর শান্তি বিনষ্ট করে কিংবা তাকে ঘাবড়ে দেয়। এবার আমাদের সেই বিয়ের অনুষ্ঠানাদির কথা চিন্তা করুন। বরং আরও বিপদ হলো মুসলিম দেশগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন উৎসবাদি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ অপচয় করা হয় এবং অসুস্থ লোক বরং সাধারণ লোকদের স্বস্তিও কেড়ে নেয়া হয়। এক আল্লাহ ছাড়া এসব অভিযোগ শোনার আর কেউ নেই।
এটা কারো অজানা নয় যে চিৎকার ও শোরগোল চিন্তাকে বিক্ষিপ্ত করে। মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়। নিশ্চিন্ত, শান্তভাব ও সুচিন্তার নেয়ামতকে ধ্বংস করে। এবং মানুষের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজে বাধার সৃষ্টি করে। অতএব, শান্ত অবস্থা প্রিয়তা ইসলামী সভ্যতার একটি লক্ষণ এবং অন্যতম মূল্যবোধ। এ এমন মূল্যবোধ আমাদের সত্য ধর্ম যার প্রতি এবং যাতে আহ্বানের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। পবিত্র কুরআনে ও সুন্নতে নববীর অনেক স্থানে আমরা যার প্রমাণ দেখতে পাই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱقۡصِدۡ فِي مَشۡيِكَ وَٱغۡضُضۡ مِن صَوۡتِكَۚ إِنَّ أَنكَرَ ٱلۡأَصۡوَٰتِ لَصَوۡتُ ٱلۡحَمِيرِ ١٩﴾ [ لقمان : ١٩ ]
‘আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নিচু কর। নিশ্চয় সব চাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল গাধার আওয়াজ।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৯]
একইভাবে মানুষের জন্য এমনভাবে গৃহ নির্মাণ জায়েয নয় যা অন্যের বসবাসের জন্য হুমকি হতে পারে। তেমনি টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদির অতিমাত্রায় আওয়াজ করাও বৈধ নয়। কারণ তা প্রতিবেশীর শান্তি বিনষ্ট করে কিংবা তাকে ঘাবড়ে দেয়। এবার আমাদের সেই বিয়ের অনুষ্ঠানাদির কথা চিন্তা করুন। বরং আরও বিপদ হলো মুসলিম দেশগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন উৎসবাদি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ অপচয় করা হয় এবং অসুস্থ লোক বরং সাধারণ লোকদের স্বস্তিও কেড়ে নেয়া হয়। এক আল্লাহ ছাড়া এসব অভিযোগ শোনার আর কেউ নেই।
সকল ধর্মের পরিসমাপ্তকারী হিসেবে ইসলাম প্রতিটি মানুষকে পরিবেশ সংরক্ষণে তাগিদ দিয়েছে। তাদেরকে পরিবেশে দূষণ ও বিপর্যয় না ঘটাবার আহ্বান জানিয়েছে। আর এরই অংশ হিসেবে মুসলিম এবং অন্য সবার জন্য পানির প্রবাহে মূত্রত্যাগ বা মলত্যাগ বা ময়লা নিক্ষেপ অথবা মৃত প্রাণী কিংবা কারখানা বা শহরের বর্জ্য নিক্ষেপ হারাম করেছে। যাতে তা দূষিত না হয়, যা মানুষ বা আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টিজীবের ক্ষতি সাধন করে। এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলাচলের রাস্তা এবং যে কোনো জলাধারে মলত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপ তিনি বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করতেও বারণ করেছেন। দেখুন সহীহ মুসলিম, পবিত্রতা অধ্যায়: ‘বদ্ধ জলে প্রস্রাব নিষেধ’ অনুচ্ছেদ। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِى الْمَاءِ الدَّائِمِ الَّذِى لاَ يَجْرِى ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ» .
“তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে মূত্রত্যাগ না করে যা প্রবাহিত হয় না অতঃপর তাতে গোসল করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৪; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৯।]
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, মা‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اتَّقُوا الْمَلاَعِنَ الثَّلاَثَ الْبَرَازَ فِى الْمَوَارِدِ وَقَارِعَةِ الطَّرِيقِ وَالظِّلِّ» .
“তোমরা অভিশাপ ডেকে আনার তিন কাজ থেকে বিরত থাক। চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার মোড়ে অথবা ছায়ায় পেশাব করা থেকে।” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৮।]
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এ সিদ্ধান্তে উপনীত যে অনেক রোগ যা দূষিত পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। বিশেষত সেই রোগগুলো যা নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট থেকে সৃষ্টি হয় অনেক। অসুস্থ ব্যক্তির মল বা তার মূত্র থেকে তা সংক্রমিত হয়। এসবের অগ্রভাগে রয়েছে সান্নিপাতিক জ্বর বা টাইফয়েড (Typhoid), হেমাচুরিয়া (hematuria) (মূত্রের সঙ্গে রক্তপড়া) ও এ্যানকাইলোস্টমা (Ancylostoma) (ফিতাকৃমি টাইপের যা মানুষের রক্ত খেয়ে ফেলে)। আরও নানা ধরনের ক্রিমি। সান্নিপাতিক জ্বর বা টাইফয়েডের অণুগুলো মানুষের অন্ত্র, রক্ত ও প্রস্রাবে ঠাঁই নেয়। ফলে পানির সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির পেশাব বা পায়খানার সংযোগ ঘটলে সহজেই তা পানির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আর জীবাণু ছড়ানোর আগে অগ্রিম ব্যবস্থা হিসেবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা আমাদের সচেতন করে। আমি তো আরও অভিভূত হয়ে যাই পানির বিশুদ্ধতা বজায় রাখা এবং মানুষকে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে ইসলামের আগ্রহ লক্ষ্য করে। যে রোগগুলো পরিচ্ছন্নতার অবিদ্যমানতার সুযোগে ছড়িয়ে পড়ে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلاَ يَغْمِسْ يَدَهُ فِى الإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلاَثًا فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِى أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ» .
“তোমাদের কেউ যখন নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তবে সে যেন তার হাত কোনো পাত্রে না ঢুকায়, যাবত না সে তা তিনবার ধৌত করে। কারণ, সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৫।]
এ বিষয়ে আরও বিস্ময়ের দেখা পাই যখন পানি ও বায়ু দূষণ জনিত রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষকে রক্ষায় নিম্নোক্ত বাণীটির কথা চিন্তা করি। জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«غَطُّوا الإِنَاءَ وَأَوْكُوا السِّقَاءَ فَإِنَّ فِى السَّنَةِ لَيْلَةً يَنْزِلُ فِيهَا وَبَاءٌ لاَ يَمُرُّ بِإِنَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ غِطَاءٌ أَوْ سِقَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ وِكَاءٌ إِلاَّ نَزَلَ فِيهِ مِنْ ذَلِكَ الْوَبَاءِ» .
“তোমরা পাত্র ঢাক এবং মশকের (মুখ) বন্ধ করো। কারণ, বছরে একটি রাত থাকে যাতে মহামারি নামে। তা এমন কোনো না ঢাকা পাত্র এবং না বাঁধা মশকের সামনে যায় না যাতে সে অবতরণ করে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭৪।]
সত্য প্রকাশিত হবার পর মিথ্যা ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে? এ কোন মিরাকল? মানুষের জীবনের মূল্য এবং তার নিরাপত্তার গুরুত্ব এর চেয়ে বেশি আর কোথায় পাবেন? হ্যাঁ, ইসলামই একমাত্র সেই ধর্ম যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইবাদতের অংশ হিসেবে গণ্য করে। বরং একে দীনের মূলসমূহের মধ্যেই গণনা করে। (হে আমাদের রব, আমাদের অজ্ঞান ভাইয়েরা যা করছে তার জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন না।)
অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুপস্থিতি এবং শক্তিমান কর্তৃক টিকে থাকার শ্লোগানকে দত্তক গ্রহণ মানুষকে নদী, সমুদ্রে ও ভূমিতে বিষাক্ত পদার্থ, শিল্পকারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত মেডিসিন বর্জ্য নিক্ষেপে বাধ্য করছে। পানির উৎসগুলো দূষিত হবার ফলে যা মানুষের ক্ষতি বয়ে আনছে। তবে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুই দু’টি পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকা ইতিহাসের সব চেয়ে বড় অপরাধটিই করেছে। যার ফলে সামুদ্রিক সম্পদসমূহ দূষিত হয়ে পড়ে। যাকে জাপানের মৌলিক খাদ্য উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। আর আমেরিকা ইরাকের দজলা ও ফোরাতে যা করছে তাতেই বা পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ কত? সুতরাং দয়াময় আল্লাহর দীন কোথায় আর কোথায় সেই সন্ত্রাসী ?
«لاَ يَبُولَنَّ أَحَدُكُمْ فِى الْمَاءِ الدَّائِمِ الَّذِى لاَ يَجْرِى ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ فِيهِ» .
“তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে মূত্রত্যাগ না করে যা প্রবাহিত হয় না অতঃপর তাতে গোসল করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৪; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩৯।]
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, মা‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اتَّقُوا الْمَلاَعِنَ الثَّلاَثَ الْبَرَازَ فِى الْمَوَارِدِ وَقَارِعَةِ الطَّرِيقِ وَالظِّلِّ» .
“তোমরা অভিশাপ ডেকে আনার তিন কাজ থেকে বিরত থাক। চলাচলের রাস্তায়, রাস্তার মোড়ে অথবা ছায়ায় পেশাব করা থেকে।” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ২৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩২৮।]
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এ সিদ্ধান্তে উপনীত যে অনেক রোগ যা দূষিত পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। বিশেষত সেই রোগগুলো যা নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা প্যারাসাইট থেকে সৃষ্টি হয় অনেক। অসুস্থ ব্যক্তির মল বা তার মূত্র থেকে তা সংক্রমিত হয়। এসবের অগ্রভাগে রয়েছে সান্নিপাতিক জ্বর বা টাইফয়েড (Typhoid), হেমাচুরিয়া (hematuria) (মূত্রের সঙ্গে রক্তপড়া) ও এ্যানকাইলোস্টমা (Ancylostoma) (ফিতাকৃমি টাইপের যা মানুষের রক্ত খেয়ে ফেলে)। আরও নানা ধরনের ক্রিমি। সান্নিপাতিক জ্বর বা টাইফয়েডের অণুগুলো মানুষের অন্ত্র, রক্ত ও প্রস্রাবে ঠাঁই নেয়। ফলে পানির সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির পেশাব বা পায়খানার সংযোগ ঘটলে সহজেই তা পানির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আর জীবাণু ছড়ানোর আগে অগ্রিম ব্যবস্থা হিসেবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা আমাদের সচেতন করে। আমি তো আরও অভিভূত হয়ে যাই পানির বিশুদ্ধতা বজায় রাখা এবং মানুষকে রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে ইসলামের আগ্রহ লক্ষ্য করে। যে রোগগুলো পরিচ্ছন্নতার অবিদ্যমানতার সুযোগে ছড়িয়ে পড়ে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلاَ يَغْمِسْ يَدَهُ فِى الإِنَاءِ حَتَّى يَغْسِلَهَا ثَلاَثًا فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِى أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ» .
“তোমাদের কেউ যখন নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তবে সে যেন তার হাত কোনো পাত্রে না ঢুকায়, যাবত না সে তা তিনবার ধৌত করে। কারণ, সে জানে না রাতে তার হাত কোথায় ছিল।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৫।]
এ বিষয়ে আরও বিস্ময়ের দেখা পাই যখন পানি ও বায়ু দূষণ জনিত রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষকে রক্ষায় নিম্নোক্ত বাণীটির কথা চিন্তা করি। জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«غَطُّوا الإِنَاءَ وَأَوْكُوا السِّقَاءَ فَإِنَّ فِى السَّنَةِ لَيْلَةً يَنْزِلُ فِيهَا وَبَاءٌ لاَ يَمُرُّ بِإِنَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ غِطَاءٌ أَوْ سِقَاءٍ لَيْسَ عَلَيْهِ وِكَاءٌ إِلاَّ نَزَلَ فِيهِ مِنْ ذَلِكَ الْوَبَاءِ» .
“তোমরা পাত্র ঢাক এবং মশকের (মুখ) বন্ধ করো। কারণ, বছরে একটি রাত থাকে যাতে মহামারি নামে। তা এমন কোনো না ঢাকা পাত্র এবং না বাঁধা মশকের সামনে যায় না যাতে সে অবতরণ করে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭৪।]
সত্য প্রকাশিত হবার পর মিথ্যা ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে? এ কোন মিরাকল? মানুষের জীবনের মূল্য এবং তার নিরাপত্তার গুরুত্ব এর চেয়ে বেশি আর কোথায় পাবেন? হ্যাঁ, ইসলামই একমাত্র সেই ধর্ম যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইবাদতের অংশ হিসেবে গণ্য করে। বরং একে দীনের মূলসমূহের মধ্যেই গণনা করে। (হে আমাদের রব, আমাদের অজ্ঞান ভাইয়েরা যা করছে তার জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন না।)
অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুপস্থিতি এবং শক্তিমান কর্তৃক টিকে থাকার শ্লোগানকে দত্তক গ্রহণ মানুষকে নদী, সমুদ্রে ও ভূমিতে বিষাক্ত পদার্থ, শিল্পকারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত মেডিসিন বর্জ্য নিক্ষেপে বাধ্য করছে। পানির উৎসগুলো দূষিত হবার ফলে যা মানুষের ক্ষতি বয়ে আনছে। তবে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুই দু’টি পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করে আমেরিকা ইতিহাসের সব চেয়ে বড় অপরাধটিই করেছে। যার ফলে সামুদ্রিক সম্পদসমূহ দূষিত হয়ে পড়ে। যাকে জাপানের মৌলিক খাদ্য উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। আর আমেরিকা ইরাকের দজলা ও ফোরাতে যা করছে তাতেই বা পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ কত? সুতরাং দয়াময় আল্লাহর দীন কোথায় আর কোথায় সেই সন্ত্রাসী ?
আসমানী সতর্কীকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে জমির উর্বরতা ও তার ফসল দান ক্ষমতা বিনাশকারী প্রতিটি পদক্ষেপ থেকে সতর্ক করা থেকে। জমির উর্বর শক্তি বৃদ্ধির জন্য মহান এই ধর্ম মানুষকে যেসব কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করে তার অন্যতম হলো কৃষি কাজ। যা পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার মৌলিক উৎস। ইসলাম একে স্বতন্ত্র গুরুত্ব দিয়েছে এবং একে ইবাদত হিসেবে গণ্য করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাগ্রহে কৃষি কাজ ও বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যাতে উদ্ভিদ সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হয়। যেমন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ» .
“যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে আর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তবে তা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৫৫।] ইমাম বুখারী তদীয় সহীহ গ্রন্থের ‘ক্ষেত ও চাষাবাদ’ অধ্যায়ের ‘রোপিত গাছ বা ক্ষেত থেকে খেলে তার ফযীলত’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে হাদীসটি সংকলন করেছেন।
অপর হাদীসে রয়েছে, জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَحْيَا أَرْضًا مَيْتَةً فَهِىَ لَهُ» .
“যে ব্যক্তি কোনো মৃত (অনাবাদী) ভূমিকে জীবিত (চাষযোগ্য) করবে, সেই তা তারই জন্য।” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৩০৭৫; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৪৩১০।]
অপরদিকে অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করা থেকে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন হুবশী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ قَطَعَ سِدْرَةً صَوَّبَ اللَّهُ رَأْسَهُ فِى النَّارِ» .
“যে ব্যক্তি (বিনা প্রয়োজনে) গাছ কাটবে আল্লাহ তার মাথাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৫২৪১।]
তবে যদি গাছটি হয় এমন স্থানে যা মানুষের প্রয়োজনে কাটার প্রয়োজন হয় তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নাই। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَقَدْ رَأَيْتُ رَجُلاً يَتَقَلَّبُ فِى الْجَنَّةِ فِى شَجَرَةٍ قَطَعَهَا مِنْ ظَهْرِ الطَّرِيقِ كَانَتْ تُؤْذِى النَّاسَ» .
‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে সে ওই গাছের (আশ্রয়ে) চলাচল করছে যা সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল যা মানুষকে কষ্ট দিত।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৮৩৭।]
আবার ফসল ও ফল রক্ষায় তিনি কাজে লাগানোর মতো না হবার আগে ফসল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। যাতে সে ফসল বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যেমন ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّه صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ بَيْعِ الثِّمَارِ حَتَّى يَبْدُوَ صَلاَحُهَا نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُبْتَاعَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপযুক্ত হবার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই তিনি বারণ করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৯৩।]
অপর বর্ণনায় রয়েছে আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَهَى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتَّى يَزْهُوَ وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتَّى يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُشْتَرِىَ .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন যাবত না তার ফল প্রকাশিত হয়, মুকুল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন যাবত না তার সাদা দানা বের হয় এবং তা নষ্ট হবার সম্ভাবনা দূর হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই তিনি বারণ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৪৩।]
ইসলাম গবাদি পশুর নাগাল থেকে শস্য ও ফল-ফলাদি রক্ষায় প্রয়োজনীয় শর্তাদিও প্রবর্তন করেছে। [ড. মুস্তাফা ‘আলওয়ানী: ‘আল-ইসলাম ওয়াল বিআ’, মাজাল্লাতুত-তুরাছিল আরাবী, সংখ্যা: ১০১, ষষ্ঠদশ বর্ষ, ২০০৬।]
«مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ طَيْرٌ أَوْ إِنْسَانٌ أَوْ بَهِيمَةٌ إِلاَّ كَانَ لَهُ بِهِ صَدَقَةٌ» .
“যদি কোনো মুসলিম কোনো গাছ রোপণ করে অথবা ক্ষেতে ফসল বোনে আর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ প্রাণী খায়, তবে তা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৫৫।] ইমাম বুখারী তদীয় সহীহ গ্রন্থের ‘ক্ষেত ও চাষাবাদ’ অধ্যায়ের ‘রোপিত গাছ বা ক্ষেত থেকে খেলে তার ফযীলত’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে হাদীসটি সংকলন করেছেন।
অপর হাদীসে রয়েছে, জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَحْيَا أَرْضًا مَيْتَةً فَهِىَ لَهُ» .
“যে ব্যক্তি কোনো মৃত (অনাবাদী) ভূমিকে জীবিত (চাষযোগ্য) করবে, সেই তা তারই জন্য।” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৩০৭৫; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৪৩১০।]
অপরদিকে অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন করা থেকে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন হুবশী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ قَطَعَ سِدْرَةً صَوَّبَ اللَّهُ رَأْسَهُ فِى النَّارِ» .
“যে ব্যক্তি (বিনা প্রয়োজনে) গাছ কাটবে আল্লাহ তার মাথাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন।” [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ৫২৪১।]
তবে যদি গাছটি হয় এমন স্থানে যা মানুষের প্রয়োজনে কাটার প্রয়োজন হয় তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নাই। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَقَدْ رَأَيْتُ رَجُلاً يَتَقَلَّبُ فِى الْجَنَّةِ فِى شَجَرَةٍ قَطَعَهَا مِنْ ظَهْرِ الطَّرِيقِ كَانَتْ تُؤْذِى النَّاسَ» .
‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখেছি জান্নাতে সে ওই গাছের (আশ্রয়ে) চলাচল করছে যা সে রাস্তার মোড় থেকে কেটেছিল যা মানুষকে কষ্ট দিত।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৮৩৭।]
আবার ফসল ও ফল রক্ষায় তিনি কাজে লাগানোর মতো না হবার আগে ফসল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। যাতে সে ফসল বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যেমন ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللَّه صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ بَيْعِ الثِّمَارِ حَتَّى يَبْدُوَ صَلاَحُهَا نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُبْتَاعَ»
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপযুক্ত হবার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই তিনি বারণ করেছেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২১৯৩।]
অপর বর্ণনায় রয়েছে আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَهَى عَنْ بَيْعِ النَّخْلِ حَتَّى يَزْهُوَ وَعَنِ السُّنْبُلِ حَتَّى يَبْيَضَّ وَيَأْمَنَ الْعَاهَةَ نَهَى الْبَائِعَ وَالْمُشْتَرِىَ .
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন যাবত না তার ফল প্রকাশিত হয়, মুকুল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন যাবত না তার সাদা দানা বের হয় এবং তা নষ্ট হবার সম্ভাবনা দূর হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই তিনি বারণ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৪৩।]
ইসলাম গবাদি পশুর নাগাল থেকে শস্য ও ফল-ফলাদি রক্ষায় প্রয়োজনীয় শর্তাদিও প্রবর্তন করেছে। [ড. মুস্তাফা ‘আলওয়ানী: ‘আল-ইসলাম ওয়াল বিআ’, মাজাল্লাতুত-তুরাছিল আরাবী, সংখ্যা: ১০১, ষষ্ঠদশ বর্ষ, ২০০৬।]
উপরে আমরা যে হাদীসগুলো উল্লেখ করলাম এগুলো ছাড়াও কুরআনের অনেক আয়াত এবং অনেক হাদীস বৃক্ষ রোপণে উৎসাহিত করে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ نَصَبَ شَجَرَةً فَصَبَرَ عَلَى حِفْظِهَا وَالْقِيَامِ عَلَيْهَا حَتَّى تُثْمِرَ كَانَ لَهُ فِي كُلِّ شَيْءٍ يُصَابُ مِنْ ثَمَرَتِهَا صَدَقَةٌ عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ»
“যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে আর ফলদার হওয়া পর্যন্ত তার দেখাশোনা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা আক্রান্ত হয় তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তাকে সদাকার নেকী লেখা হয়।” [মুসনাদ আহমদ: ১৬৭০২; শু‘আবুল ঈমান: ৩২২৩।]
«مَنْ نَصَبَ شَجَرَةً فَصَبَرَ عَلَى حِفْظِهَا وَالْقِيَامِ عَلَيْهَا حَتَّى تُثْمِرَ كَانَ لَهُ فِي كُلِّ شَيْءٍ يُصَابُ مِنْ ثَمَرَتِهَا صَدَقَةٌ عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ»
“যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে আর ফলদার হওয়া পর্যন্ত তার দেখাশোনা ও সংরক্ষণে ধৈর্য ধারণ করে, তার প্রতিটি ফল যা আক্রান্ত হয় তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তাকে সদাকার নেকী লেখা হয়।” [মুসনাদ আহমদ: ১৬৭০২; শু‘আবুল ঈমান: ৩২২৩।]
ড. মুস্তাফা আস-সিবাঈ রহ. আমাদের সামনে প্রাণীর প্রতি সহমর্মিতার এক অনন্য দিক তুলে ধরেছেন, মুসলিম ফিকহবিদগণ যা নির্ধারণ করেছেন। তা হলো প্রাণীদের মালিকের ওপর প্রাণীর খরচাদি ওয়াজিব। যদি তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন, তবে তাকে বাধ্য করা হবে। তিনি প্রাণীকে বিক্রি করবেন নয়তো তার ওপর খরচ করবেন অন্যথায় তাকে এমন স্থানে ছেড়ে দেবেন যেখানে তার খাদ্য ও থাকার জায়গা পাবে। [ড. মুস্তাফা আস-সিবাঈ, ‘মিন রাওয়ায়ি‘ হাযারাতিনা’, পৃষ্ঠা: ১১৩।]
তাছাড়া সাধারণভাবে ইসলাম জীবনের সকল ক্ষেত্রে নম্রতার নীতিতে নির্ভর করে। কোমলতাকে মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য বানায়। এমন উপকরণ বানায় যা ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আমলকে সৌন্দর্য দান করে। এ সম্পর্কেই সেই হাদীস আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِى الأَمْرِ كُلِّهِ» .
“হে আয়েশা, নিশ্চয় আল্লাহ নরম আচরণকারী, সব জিনিসের মধ্যেই তিনি নরম আচরণ ভালোবাসেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০২৭।] আরেক হাদীসে রয়েছে,
«إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِى عَلَى الرِّفْقِ مَا لاَ يُعْطِى عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لاَ يُعْطِى عَلَى مَا سِوَاهُ» .
“নিশ্চয় আল্লাহ নরম আচরণকারী, তিনি নরম আচরণকেই ভালোবাসেন এবং নরম আচরণের মাধ্যমে তিনি এত দেন যা তিনি কঠোর আচরণকারীকে বা নরম আচরণকারীকে ছাড়া অন্য কাউকে দেন না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৬৬।]
আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ فِى شَىْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ شَانَهُ» .
“যে জিনিসেই নরম আচরণ থাকুক না কেন, তা তাকে সৌন্দর্য দান করে। আর যা থেকেই তা তুলে নেওয়া হোক না কেন তা তাকে অসম্মানিত করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৬৭।]
প্রাণীকুলের প্রতি দয়া ও মমতা করা যে এক ধরনের ইবাদত সে সম্পর্কে প্রচুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যা কখনো সর্বোচ্চ নেকীতে পৌঁছায় এবং মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রাপ্তির সবচে জোরাল কারণ হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَّ امْرَأَةً بَغِيًّا رَأَتْ كَلْبًا فِى يَوْمٍ حَارٍّ يُطِيفُ بِبِئْرٍ قَدْ أَدْلَعَ لِسَانَهُ مِنَ الْعَطَشِ فَنَزَعَتْ لَهُ بِمُوقِهَا فَغُفِرَ لَهَا» .
“একজন কুলটা মহিলা কোনো এক গরমের দিনে একটি কুকুর দেখল একটি কূপের উপর পিপাসার তাড়নায় তার জিহ্বাকে বের করে দিয়েছে। সে গিয়ে তার মোজা দিয়ে পানি তুলে তাকে খাওয়াল। অতঃপর এ জন্যই তাকে ক্ষমা করা হয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৯৭।]
চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ তা‘আলা একটি ইতর প্রাণীর প্রতি দয়া করার উসীলায় পতিতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন!
ইসলামী শরী‘আহ যে পরিমাণ প্রাণীর প্রতি দয়া দেখিয়েছে, প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধকে ইবাদত গণ্য করেছে, ঠিক সেভাবেই আবার প্রাণীর প্রতি অনাচার এবং তাকে কষ্ট দেওয়াকে গর্হিত পাপ ও কঠিন গুনাহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِى هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ لاَ هِىَ أَطْعَمَتْهَا وَسَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلاَ هِىَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ» .
“এক মহিলাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে এই অপরাধে যে, সে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। আর সে মারা গিয়েছিল। ফলে সে এ কারণে জাহান্নামে যায়। তাকে আটক রেখে না সে দানা পানি দিয়েছে। আর না তাকে ছেড়ে দিয়েছে যাতে সে মাটির কীট-মূষিকাদি থেকে খেতে পারে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮৯।]
উপসংহার: হে মুসলিমগণ, আমরা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব এবং পৃথিবীকে আবাদ করার দায়িত্ব থেকে মুক্ত হব না। যেমন, আমাদের রব আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ وَٱسۡتَعۡمَرَكُمۡ فِيهَا﴾ [ هود : ٦١ ]
“তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে এবং সেখানে তোমাদেরকে আবাদকারী বানিয়েছে।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬১]
নাকি আমরা নগর-শহর এবং বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি উৎকর্ষ পরিহার করে মরুভূমি এবং অসভ্য প্রকৃতিতে বসবাস করব। কখনো নয়; আমাদের দায়িত্ব হবে প্রকৃতির সঙ্গে মমতা ও সুবিবেচনার সাথে আচরণ করা। যেমন আমরা এই মাত্র বলে এলাম। অতএব, আমরা পরিবেশ ধ্বংস করব না। পরিবেশ নিয়ে খেলব না। কিংবা আমরা তাকে এমনভাবে বিনাশ করব না যে তাকে আর নতুনভাবে জীবিত না করা যায়। যাকে বলা হয় টেকসই উন্নয়ন। পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলোকেও উপেক্ষা করব না। কারণ, এতে সব কিছুই পরিমিত ও যথাযথ পরিমাণে প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكُلُّ شَيۡءٍ عِندَهُۥ بِمِقۡدَارٍ ٨﴾ [ الرعد : ٨ ]
“আর তাঁর কাছে প্রতিটি বস্তু নির্দিষ্ট পরিমাণে রয়েছে।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ০৮]
তিনি আরও বলেন,
﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : ٤٩ ]
“নিশ্চয় আমরা সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী।” [সূরা আল-কামার, আয়াত: ৪৯] আল্লাহ আমাদের সকলকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হবার তাওফীক দিন। আমীন।
তাছাড়া সাধারণভাবে ইসলাম জীবনের সকল ক্ষেত্রে নম্রতার নীতিতে নির্ভর করে। কোমলতাকে মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য বানায়। এমন উপকরণ বানায় যা ঈমানকে শক্তিশালী করে এবং আমলকে সৌন্দর্য দান করে। এ সম্পর্কেই সেই হাদীস আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِى الأَمْرِ كُلِّهِ» .
“হে আয়েশা, নিশ্চয় আল্লাহ নরম আচরণকারী, সব জিনিসের মধ্যেই তিনি নরম আচরণ ভালোবাসেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০২৭।] আরেক হাদীসে রয়েছে,
«إِنَّ اللَّهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ وَيُعْطِى عَلَى الرِّفْقِ مَا لاَ يُعْطِى عَلَى الْعُنْفِ وَمَا لاَ يُعْطِى عَلَى مَا سِوَاهُ» .
“নিশ্চয় আল্লাহ নরম আচরণকারী, তিনি নরম আচরণকেই ভালোবাসেন এবং নরম আচরণের মাধ্যমে তিনি এত দেন যা তিনি কঠোর আচরণকারীকে বা নরম আচরণকারীকে ছাড়া অন্য কাউকে দেন না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৬৬।]
আরেক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ فِى شَىْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ شَانَهُ» .
“যে জিনিসেই নরম আচরণ থাকুক না কেন, তা তাকে সৌন্দর্য দান করে। আর যা থেকেই তা তুলে নেওয়া হোক না কেন তা তাকে অসম্মানিত করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৬৭।]
প্রাণীকুলের প্রতি দয়া ও মমতা করা যে এক ধরনের ইবাদত সে সম্পর্কে প্রচুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যা কখনো সর্বোচ্চ নেকীতে পৌঁছায় এবং মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রাপ্তির সবচে জোরাল কারণ হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَّ امْرَأَةً بَغِيًّا رَأَتْ كَلْبًا فِى يَوْمٍ حَارٍّ يُطِيفُ بِبِئْرٍ قَدْ أَدْلَعَ لِسَانَهُ مِنَ الْعَطَشِ فَنَزَعَتْ لَهُ بِمُوقِهَا فَغُفِرَ لَهَا» .
“একজন কুলটা মহিলা কোনো এক গরমের দিনে একটি কুকুর দেখল একটি কূপের উপর পিপাসার তাড়নায় তার জিহ্বাকে বের করে দিয়েছে। সে গিয়ে তার মোজা দিয়ে পানি তুলে তাকে খাওয়াল। অতঃপর এ জন্যই তাকে ক্ষমা করা হয়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৯৭।]
চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ তা‘আলা একটি ইতর প্রাণীর প্রতি দয়া করার উসীলায় পতিতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন!
ইসলামী শরী‘আহ যে পরিমাণ প্রাণীর প্রতি দয়া দেখিয়েছে, প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধকে ইবাদত গণ্য করেছে, ঠিক সেভাবেই আবার প্রাণীর প্রতি অনাচার এবং তাকে কষ্ট দেওয়াকে গর্হিত পাপ ও কঠিন গুনাহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِى هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ لاَ هِىَ أَطْعَمَتْهَا وَسَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلاَ هِىَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ» .
“এক মহিলাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে এই অপরাধে যে, সে একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। আর সে মারা গিয়েছিল। ফলে সে এ কারণে জাহান্নামে যায়। তাকে আটক রেখে না সে দানা পানি দিয়েছে। আর না তাকে ছেড়ে দিয়েছে যাতে সে মাটির কীট-মূষিকাদি থেকে খেতে পারে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৪৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮৯।]
উপসংহার: হে মুসলিমগণ, আমরা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব এবং পৃথিবীকে আবাদ করার দায়িত্ব থেকে মুক্ত হব না। যেমন, আমাদের রব আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ وَٱسۡتَعۡمَرَكُمۡ فِيهَا﴾ [ هود : ٦١ ]
“তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে এবং সেখানে তোমাদেরকে আবাদকারী বানিয়েছে।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬১]
নাকি আমরা নগর-শহর এবং বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও কারিগরি উৎকর্ষ পরিহার করে মরুভূমি এবং অসভ্য প্রকৃতিতে বসবাস করব। কখনো নয়; আমাদের দায়িত্ব হবে প্রকৃতির সঙ্গে মমতা ও সুবিবেচনার সাথে আচরণ করা। যেমন আমরা এই মাত্র বলে এলাম। অতএব, আমরা পরিবেশ ধ্বংস করব না। পরিবেশ নিয়ে খেলব না। কিংবা আমরা তাকে এমনভাবে বিনাশ করব না যে তাকে আর নতুনভাবে জীবিত না করা যায়। যাকে বলা হয় টেকসই উন্নয়ন। পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি-বিধানগুলোকেও উপেক্ষা করব না। কারণ, এতে সব কিছুই পরিমিত ও যথাযথ পরিমাণে প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَكُلُّ شَيۡءٍ عِندَهُۥ بِمِقۡدَارٍ ٨﴾ [ الرعد : ٨ ]
“আর তাঁর কাছে প্রতিটি বস্তু নির্দিষ্ট পরিমাণে রয়েছে।” [সূরা আর-রা‘দ, আয়াত: ০৮]
তিনি আরও বলেন,
﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : ٤٩ ]
“নিশ্চয় আমরা সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী।” [সূরা আল-কামার, আয়াত: ৪৯] আল্লাহ আমাদের সকলকে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হবার তাওফীক দিন। আমীন।
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন